29-12-2019 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
27-03-85 মধুবন
কর্মাতীত অবস্থা
আজ বাপদাদা চতুর্দিকের বাচ্চাদের দেখতে বিশেষ পরিক্রমণে বেরিয়েছেন l যেমন তোমরা
সবাই ভক্তিমার্গে বহুবার পরিক্রমা করেছ l তাইতো বাপদাদাও আজ চারিদিকের প্রকৃত
ব্রাহ্মণদের সব স্থান পরিক্রমা করেছেন l বাচ্চাদের সকলের স্থানও দেখেছেন আর স্থিতিও
দেখেছেন l সব স্থানই তাদের নিজ নিজ নিয়মে সেজে ছিল l কেউ স্থূল সাধনে আকৃষ্ট করেছিল,
কেউ তপস্যার ভাইব্রেশন দ্বারা আকৃষ্ট করেছিল l কেউ ত্যাগ আর শ্রেষ্ঠ ভাগ্য অর্থাৎ
তারা তাদের সরলতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের বায়ুমন্ডল দ্বারা আকৃষ্ট করেছিল l কেউ কেউ
সাধারণ রূপে প্রতীয়মান ছিল l ঈশ্বরীয় স্মরণের বিভিন্নরকম সব স্থান তিনি দেখেছেন l
বাবা কি স্থিতি দেখেছেন ? এক্ষেত্রেও বাবা ব্রাহ্মণ বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের স্থিতি
দেখেছেন l সময়ানুসারে বাচ্চারা কতখানি প্রস্তুতি নিয়েছে, সেটা দেখার জন্য
ব্রহ্মাবাবা গিয়েছিলেন l ব্রহ্মাবাবা বলেন, বাচ্চারা এভার রেডি, সব বন্ধন থেকে
মুক্ত এবং তারা যোগযুক্ত ও জীবনমুক্ত l শুধু সময়ের অপেক্ষা l তোমরা কি এতখানিই
প্রস্তুত ? এটাই কি যে তোমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা
করছ ? বাপদাদার আধ্যাত্মিক বার্তালাপ হচ্ছিল l শিববাবা বলেন, চতুর্দিকে ঘুরে তো
দেখেছ, বাচ্চারা কতখানি বন্ধনমুক্ত হয়েছে ! যোগযুক্ত কতখানি হয়েছে ? কারণ
বন্ধনমুক্ত আত্মাই জীবনমুক্ত হওয়ার অনুভব করতে পারে l সীমিত পরিসরের কোনও আনুকূল্যে
না থাকা অর্থাৎ বন্ধন থেকে সরে যাওয়া l যদি কোনপ্রকার ছোট বড়, স্থূল বা সূক্ষ্ম
মন্সায় অথবা কর্মে সীমিত পরিসরের কোনও সহায়তা থাকে তবে সেইসব বন্ধন থেকে তোমরা সরে
যেতে পার না l সুতরাং, এটাই দেখার জন্য বিশেষভাবে ব্রহ্মাবাবাকে আজ পরিক্রমা
করিয়েছেন l তিনি কি দেখেছেন ?
মেজরিটি বড় বড় বন্ধন থেকে মুক্ত l স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান যে বন্ধন বা রস্যি তা' থেকে
তোমরা সরে এসেছ l যতই হোক, এখনও কিছু কিছু এমন অতি সূক্ষ্ম বন্ধন বা রস্যি আছে যা
গভীর আর সূক্ষ্ম বুদ্ধি ব্যতীত দেখতে বা জানতে পারা যায় না l যেমন আজকালকার
সায়েন্টিস্টরা সূক্ষ্ম বস্তুগুলোকে পাওয়ারফুল গ্লাসের মাধ্যমে দেখতে পারে l
স্বাভাবিকভাবে তারা সেগুলো দেখতে পারবে না l একইভাবে, বুদ্ধিবৃত্তির সূক্ষ্ম শক্তি
দ্বারা সেই সূক্ষ্ম বন্ধন দেখতে পার বা তীব্র এবং সূক্ষ্ম বুদ্ধি দ্বারা সেই সব
জানতে পার l যদি উপরিগতভাবে দেখে, তাহলে তারা না দেখার বা না জানার কারণে নিজেকে
বন্ধনমুক্তই ভাবতে থাকে l ব্রহ্মাবাবা সেই সমস্ত সূক্ষ্ম সহায়তা চেক করেছেন l
দু'ধরনের সহায়তা তিনি সবচেয়ে অধিক দেখেছেন -
এক তো সেবার সাথীদের সহায়তার অতি সূক্ষ্ম রূপ দেখেছেন, এর মধ্যেও অনেক রকম দেখেছেন
l সেবার সহযোগী হওয়ার কারণে, সেবায় বৃদ্ধি করার নিমিত্ত হওয়ার কারণে অথবা বিশেষ কিছু
বিশেষত্বের বা বিশেষ গুণের কারণে, বিশেষ কোনও সংস্কারের সাদৃশ্য হওয়ার কারণে, অথবা
সময় সময়ে কোন এক্সট্রা সহায়তা দেওয়ার কারণে, এইরকম কারণের জন্য, বাহ্যিকরূপে সেবার
সহযোগী সাথী, কিন্তু বিশেষ অধীনতা থাকার কারণে সূক্ষ্ম মোহের রূপ তৈরি হয় l এর
পরিণাম কি ? এটাই তোমরা ভুলে যাও যে এইসবই বাবার দান l তোমরা ভাবো অমুকে খুব ভালো
সহযোগী, অসাধারণ বিশেষত্ব এবং গুণবান, কিন্তু মাঝেমধ্যে তোমরা ভুলে যাও যে বাবাই
তাকে সেইরকম ভালো বানিয়েছেন l এমনকি, সঙ্কল্পেও যদি তোমাদের বুদ্ধি কোনও আত্মার
প্রতি নির্ভরশীল হয়, তাহলে সেই নির্ভরশীলতা সহায়ক হয়ে যায় l সুতরাং, সাকার রূপে
সহযোগী হওয়ার কারণে সঠিক সময়ে বাবার পরিবর্তে সে স্মরণে আসবে l দু'-চার মিনিটও যদি
সেই স্থূল সহায় তোমার স্মৃতিতে আসে, তবে সেই সময় বাবার সহায়তা তোমার মনে পড়বে ?
দ্বিতীয়তঃ, যদি দু'চার মিনিটের জন্যও স্মরণের যাত্রার লিঙ্ক ভেঙে যায় অর্থাৎ ছেদ পড়ে
তাহলে ভেঙে যাওয়ার পরে তা' আবার জুড়তে তোমাদের পরিশ্রম করতে হয়, যেহেতু এটা আর
অবিরত হবে না, কারণ বিরতি হয়ে গেছে, তাই না ! হৃদয়ে দিলারামের বদলে আর কারও দিকে যে
কোনও কারণে হৃদয় নির্ভর করে, 'এর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে', 'এর সাথে বসতে ভালো লাগে
l' "এর সাথেই" এরূপ বলা অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে কিছু ঠিক নেই l "এর সাথেই" - এই ধরনের
ভাবনা থাকা অর্থাৎ কিছুর অনুপস্থিতি l কার্যতঃ, সবাইকে ভালো লাগে, কিন্তু এনাকে বেশি
ভালো লাগে ! সবার প্রতি আধ্যাত্মিক স্নেহ থাকা, কথা বলা, সেবায় সহযোগ নেওয়া বা দেওয়া,
এইসব আলাদা ব্যাপার l তাদের বিশেষত্ব দেখ, তাদের গুণ দেখ কিন্তু মাঝখানে 'এনারই এই
গুণ খুব ভালো' এই শব্দগুলো রেখো না l জোরপূর্বক 'ই' এই শব্দ বলা সবকিছু পণ্ড করে
দেয়, একেই বলে মোহবশ আকৃষ্ট হওয়া l তারপরে, বাহ্যিকরূপ সেবা হতে পারে, জ্ঞান হতে
পারে, যোগ হতে পারে, কিন্তু যখন বলো, এনার সাথে-'ই' যোগ করতে চাই, শুধুমাত্র এনার'ই'
যোগ ভালো, এই যে 'ই' শব্দ এটা প্রয়োগ করা উচিত নয় l শুধুমাত্র ইনি'ই' সেবাতে সহযোগী
হতে পারেন, এই সাথী'ই' চাই - সুতরাং বুঝেছ অধীনতার লক্ষণ কি ! সেইজন্য এই 'ই' শব্দ
সরিয়ে দাও l সবাই ভালো l তাদের বিশেষত্ব দেখ, সহযোগী হও, তাদের সহযোগী বানাও, যদিও
প্রথমে অল্পমাত্রায় হয়, পরে বাড়তে বাড়তে ভয়ঙ্কর আকার হয়ে যায় l তারপরে নিজেই তার
থেকে বেরোতে চাইলেও বের হতে পার না, কারণ সূতা মজবুত হয়ে যায়, প্রথমে খুব সূক্ষ্ম
হয়, পরে মজবুত হয়ে যায়, তখন সেটা ভাঙা কঠিন হয়ে যায় l এক এবং একমাত্র সহায় বাবা l
কোনও মানব আত্মা সহায় নয় l বাবা যাকেই নিমিত্ত সহযোগী বানান, কিন্তু যিনি নিমিত্ত
বানালেন তাঁকে ভুলে যেও না l বাবা বানিয়েছেন l বাবা মাঝখানে আছেন, সেইজন্যই যেখানে
বাবা থাকবেন, সেখানে পাপ হবে না ! বাবা মাঝখানের থেকে সরে গেলে পাপ কৃত হয় l সুতরাং,
প্রথম বিষয় হলো এই সহায়ের l
দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, তোমরা কোন না কোন সাকার সাধনকে তোমাদের সহায়ক বানিয়েছ, সাধন
আছে তো সেবা আছে l সাধনে সামান্য নিচে-ওপরে হলে তখন সেবাও নিচে-ওপরে হয় l সাধন সমূহ
কার্যে প্রয়োগ করা আলাদা ব্যাপার l কিন্তু সাধনের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে সেবা করার
অর্থ সাধনকে সহায় বানানো l সেবার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধন, সেইজন্য সেই সাধন সমূহ
সেইভাবেই কার্যে ব্যবহার কর, সাধনকে আধার বানিও না l আধার কেবলমাত্র এক বাবা, সাধন
তো বিনাশী l বিনাশী সাধনকে আধার বানানো অর্থাৎ সাধন যেমন বিনাশী, সেইরকম স্থিতিও
কখনো খুব উঁচু, কখনো মধ্যম, কখনো নিচে পরিবর্তিত হতে থাকবে l অবিনাশী একরস স্থিতি
থাকবে না l সুতরাং, দ্বিতীয়তঃ, বিনাশী সাধনকে তোমাদের সহায়, আধার বানিও না l সেগুলো
নিমিত্ত মাত্র, সেবার জন্য l সেবার্থে ব্যবহার কর আর স্বতন্ত্র হয়ে যাও l সাধনের
আকর্ষণে মনকে আকৃষ্ট হতে দিও না l সুতরাং, বাবা দেখেছেন, এই দুই ধরনের সহায়কে
সূক্ষ্মরূপে তোমাদের আধার বানিয়েছ l যখন কর্মাতীত অবস্থায় তোমাদের পৌঁছাতেই হবে,
তখন সকল ব্যক্তি, বস্তু, কর্মবন্ধন থেকে অতীত হওয়া, সবকিছুর ঊর্ধ্বে অর্থাৎ সবকিছু
থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে কর্মাতীত অবস্থা বলে l কর্মাতীত হওয়ার অর্থ এই নয় যে কর্ম
থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়, বরং যেকোন কর্মের বন্ধন থেকে স্বতন্ত্র হওয়া l স্বতন্ত্র
হয়ে কর্ম করা অর্থাৎ কর্ম থেকে পৃথক হওয়া l কর্মাতীত অবস্থা অর্থাৎ বন্ধনমুক্ত,
যোগযুক্ত, জীবনমুক্ত অবস্থা l
আর বিশেষভাবে বাবা দেখেছেন, সময় সময়তে কিছু বাচ্চা তাদের পরখ করার শক্তিতে দুর্বল
হয়ে যায় l তারা পরখ করতে অপারগ বলেই তারা প্রবঞ্চিত হয় l পরখ করার শক্তি দুর্বল হয়ে
যাওয়ার কারণ বুদ্ধির অনুরাগ-প্রীতি একনিষ্ঠ নয় l যেখানে একাগ্রতা সেখানে পরখ করার
শক্তি স্বতঃই বৃদ্ধি পায় l একাগ্রতা অর্থাৎ এক বাবার সাথে একমনা হয়ে মগ্ন থাকা l
একাগ্রতার লক্ষণ, সদা উড়তি কলার একরস স্থিতি অনুভূত হবে l একরসের অর্থ এই নয় যে
একরস তখনই হবে যখন সদা একই গতি হবে l একরস অর্থাৎ সদা উড়তি কলার উপলব্ধি - তা'তে
একরস হওয়া l যা গতকাল ছিল, তার থেকে আজ পার্সেন্টেজে বৃদ্ধির অনুভব হওয়া l একেই বলা
হয়ে থাকে, উড়তি কলা l সুতরাং, স্ব-উন্নতির জন্য, সেবার উন্নতির জন্য পরখ করার শক্তি
অতি আবশ্যক l পরখ করার শক্তি দুর্বল হওয়ার কারণে নিজের দুর্বলতাকে দুর্বলতা মনে করে
না l আরও এই যে, তোমাদের দুর্বলতা আড়াল করার জন্য, হয় তোমরা নিজেদের সঠিক প্রমাণ
করবে অথবা জিদ করবে l এই দুটো জিনিস হ'লো কিছু আড়াল করার বিশেষ উপায় l ভিতরে কখনো
কখনো উপলব্ধিও হবে, কিন্তু তবুও সম্পূৰ্ণভাবে পরখ করার শক্তি না হওয়ার কারণে নিজেকে
সদা রাইট এবং চতুর প্রমাণ করার চেষ্টা করবে l বুঝেছ ! তোমাদের কর্মাতীত তো হতে হবে,
তাই না ! নম্বরও নিতে হবে, নয় কি ? অতএব, নিজেকে চেক কর l খুব ভালোভাবে যোগযুক্ত হয়ে
পরখ করার শক্তি ধারণ কর l তোমাদের বুদ্ধি একাগ্র হতে দাও, আর তারপরে নিজেকে চেক কর
l তখন, সূক্ষ্ম দুর্বলতা যা-কিছু আছে, তা' স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হবে l এমন যেন না
হয় যে তোমরা ভাববে, 'আমি একেবারে রাইট, খুব ভালো এগিয়ে চলেছি l আমিই কর্মাতীত হব l'
অন্যথায়, যখন সময় আসবে সেই সূক্ষ্ম বন্ধনগুলো তোমাকে উড়তে দেবে না, সেইসব নিজের দিকে
তোমায় টানবে l তখন সেই সময়ে তুমি কি করবে ? বাঁধা আছে এমন ব্যক্তি উড়তে চাইলে সে কি
উড়তে পারবে নাকি নিচে নেমে আসবে ! সুতরাং, এই সূক্ষ্ম বন্ধন যেন সময়ে তোমাদের নম্বর
নেওয়াতে বা বাবার সাথে ঘরে যেতে অথবা এভাররেডি হওয়াতে বাধা না হতে পারে l এই কারণে
ব্রহ্মাবাবা চেক করতেন l যাকে তোমরা সহায় ভাবছ সে সহায় নয়, বরং তা' রয়্যাল সুতো l
যেমন সোনার হরিণের উদাহরণ আছে l সীতাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল ! সুতরাং, সোনার হরিণ
বন্ধন, এইসব বন্ধনকে সোনা মনে করা অর্থাৎ তোমার শ্রেষ্ঠ ভাগ্যকে হারিয়ে ফেলা l ওইসব
সোনা নয়, ওগুলো মানেই হারানো l তিনি রামকে হারিয়েছিলেন, অশোক বাটিকা হারিয়েছিলেন l
ব্রহ্মাবাবার বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা আছে, সেইজন্য ব্রহ্মাবাবা সদা
বাচ্চাদের নিজের সমান বন্ধনমুক্ত এভাররেডি দেখতে চান l বন্ধনমুক্ত হওয়ার সুন্দর
দৃশ্য তোমরা তো দেখেছ, তাই না ! এভাররেডি হতে তিনি কতো সময় নিয়েছিলেন ? তিনি কি
কোনও বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ? তিনি কি কাউকেও স্মরণ করেছেন 'অমুকে কোথায় ?' অমুক তো
সেবার সাথী l তিনি কি স্মরণ করেছেন ? তাহলে তোমরা এভাররেডি হওয়ার পার্ট, কর্মাতীত
স্টেজের পার্ট দেখেছ, তাই না ! বাচ্চাদের জন্য তাঁর যতখানি গভীর ভালোবাসা ছিল,
ততটাই স্বতন্ত্র হয়েও প্রিয় ছিলেন, দেখেছ না তোমরা ? তিনি ডাক পেয়েছেন আর চলে গেছেন
l নয়তো, বাচ্চাদের প্রতি ব্রহ্মাবাবার সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা ছিল, নয় কি ! যতটা
প্রিয় ততটা স্বতন্ত্র l তোমরা দেখেছ তাঁকে সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ! যে কোনো
জিনিস বা ভোজন যখন প্রায় তৈরি হয়ে যায়, পাত্রের কিনারা ছেড়ে দেয়, তাই না ! সুতরাং
সম্পূৰ্ণ হওয়া অর্থাৎ কিনারা ছেড়ে দেওয়া l কিনারা ছেড়ে দেওয়া অর্থাৎ সরে থাকা l
সহায় একই, অবিনাশী সহায় l কোনও ব্যক্তিকে, কোনও বৈভব বা বস্তুকে সহায় বানিও না l
একেই বলা হয়, কর্মাতীত l কখনো কোনকিছু লুকিও না l কোনকিছু আড়াল করলে তা' আরও বৃদ্ধি
পেতে থাকে l পরিস্থিতি বড় হয় না, কিন্তু সেটা তোমরা যত আড়াল কর ততই সেই পরিস্থিতি
বড় করে ফেল l যতটা নিজেকে রাইট প্রমাণ করতে চেষ্টা কর ততই সেই বিষয় আরও বড় করে দাও
l যত জিদ কর, ততই সেই পরিস্থিতি বড় হয় l অতএব, সেই পরিস্থিতিকে বড় না করে সেটা ছোট
আকার থাকতেই সমাপ্ত কর, তবে সহজ হবে আর তোমরা খুশি হবে l এই পরিস্থিতি হয়েছে, কিন্তু
আমি তা' পরাস্ত করেছি, এক্ষেত্রেও আমি বিজয়ী হয়েছি, তাহলেই তোমাদের এই খুশি হবে l
বুঝেছ ! বিদেশিদের কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ৰ করার উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে, তাই না !
সেইজন্য ডবল বিদেশি বাচ্চাদের ব্রহ্মাবাবা বিশেষ সূক্ষ্ম পালনা করছেন l এই
প্রতিপালন ভালোবাসার, কোনরকম সংশোধন বা শিক্ষা হেতু নয় l বুঝেছ ! কারণ ব্রহ্মাবাবা
তোমরা সব বাচ্চাকে বিশেষ আহ্বানের মাধ্যমে রচনা করেছেন l ব্রহ্মার সঙ্কল্প দ্বারা
তোমরা রচিত হয়েছ l বলা হয়, ব্রহ্মা তাঁর সঙ্কল্প দ্বারা সৃষ্টি রচনা করেছেন l
ব্রহ্মার সঙ্কল্প দ্বারা ব্রাহ্মণদের এই এত বড় সৃষ্টি রচনা হয়েছে l সুতরাং
ব্রহ্মাবাবার সঙ্কল্প শক্তির আহ্বানে রচিত তোমরা বিশেষ আত্মা l তাইতো তোমরা বিশেষ
প্রিয় হয়েছ, তাই না ! ব্রহ্মাবাবা উপলব্ধি করেন, তোমাদের ফাস্ট পুরুষার্থ করে
ফার্স্ট আসার উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে l বাপদাদা বিদেশি বাচ্চাদের বিশেষত্বের দ্বারা
সবকিছু অলঙ্করণ করার বার্তালাপ করছিলেন l তোমরা কোশ্চেনও করবে, আবার উপলব্ধিও করবে
তাড়াতাড়ি, বিশেষ বোধশক্তিসম্পন্ন তোমরা, সেইজন্য বাবা তাঁর মতো সব বন্ধন থেকে
স্বতন্ত্র থেকেও প্রিয় হওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিচ্ছেন l এমন নয় যে যারা সামনে আছে শুধু
তাদের বলছেন, সব বাচ্চাকে বলছেন l বাবার সব ব্রাহ্মণ বাচ্চা, তা' দেশেরই হোক বা
বিদেশের, সদা সব বাচ্চাই তাঁর সামনে আছে l আচ্ছা - আজ বাবা মনখোলা ও অন্তরঙ্গ
আলাপ-আলোচনা করেছেন l তোমাদের বলা হয়েছিল, বিগত বছরের তুলনায় এই বছরের রেজাল্ট খুব
ভালো l এতে প্রমাণ হয় তোমরা উন্নতিশীল l উড়তি কলায় আরোহণকারী আত্মা তোমরা l যে
যোগ্য প্রতীয়মান হয়, তাকেই সম্পূৰ্ণ যোগী হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়ে থাকে l আচ্ছা !
সদা কর্মবন্ধনমুক্ত, যোগযুক্ত আত্মাদের, সদা এক বাবাকে তাদের সহায় বানায় এমন
বাচ্চাদের, সদা সূক্ষ্ম দুর্বলতা থেকেও যে বাচ্চারা সরে আসে, সদা একাগ্রতার দ্বারা
পরখ করার শক্তিশালী বাচ্চাদের, সদা ব্যক্তি বা বস্তুর বিনাশী সহায়তা থেকে সরে আসা
বাচ্চাদের, এইভাবে বাবা সমান জীবনমুক্ত কর্মাতীত স্থিতিতে স্থিত বাচ্চাদের বাপদাদার
স্মরণ-স্নেহ এবং নমস্কার !
নির্মলশান্তা দাদীর সাথে :-
তুমি তো সদাই বাবার সাথে আছ l যারা আদি থেকে বাবার সাথে সাথে চলছে, তাদের সদা
সাহচর্যের অনুভব কখনও কম হতে পারে না l এই প্রতিজ্ঞা শৈশব থেকেই l তো সদা তোমাদের
সাথে আছেন আর তোমরা সদা সাথে চলবে l অতএব, এটা সদা সঙ্গের প্রতিজ্ঞাই বলো বা বরদান
বলো, তোমরা তা' লাভ করেছ l তা' সত্ত্বেও যেভাবে বাবা প্রীতি-ভালোবাসার দায়িত্ব
পরিপূর্ণ করতে অব্যক্ত থেকে ব্যক্ত রূপে আসেন, একইভাবে, তোমরা বাচ্চারা তোমাদের
ভালোবাসার দায়িত্ব পালন করতে এখানে পৌঁছে যাও l এইরকমই তো হয়, তাই না ! কেবল
সঙ্কল্পেই নয়, বরং স্বপ্নেও যাকে বলে সাবকন্সিয়াস (অবচেতন)... সেই স্থিতিতেও বাবার
সাহচর্য কখনও ছেড়ে যেতে পারে না l এমনই মজবুত সম্বন্ধ তোমরা গড়ে তুলেছ l কতো জন্মের
এই সম্বন্ধ ! সমগ্র কল্পের l সম্বন্ধ এই জন্মের হিসাবে সমগ্র কল্পই থাকবে l শুধু এই
অন্তিম জন্মে কোনো কোনো বাচ্চা সেবার জন্য চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে l যেমন এরা সবাই
বিদেশে পৌঁছে গেছে, তোমরা সিন্ধে পৌঁছে গেছ l কেউ কেউ এক জায়গায় আর অন্যেরা আরেক
জায়গায় পৌঁছেছে l যদি এরা বিদেশে না পৌঁছাত, তাহলে এত সেন্টার কীভাবে খুলত ! আচ্ছা,
তুমি সদা সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা পালনকারী পরদাদী l বাপদাদা বাচ্চাদের সেবার
উদ্যম-উৎসাহ দেখে খুশি হন l বরদানী আত্মা হয়েছ l দেখো, এখন থেকেই ভিড় জড়ো হতে শুরু
হয়ে গেছে l যখন আরও বৃদ্ধি হবে তখন কতো ভিড় হবে ! এই বরদানী রূপের বিশেষত্বের ভিত
প্রস্তুত হচ্ছে l যখন ভিড় হয়ে যাবে তখন কি করবে ! তুমি বরদান দেবে, দৃষ্টি দেবে l
এখন থেকেই চৈতন্য মূর্তি প্রসিদ্ধ হবে l যেমন শুরুতে তোমাদের সবাইকে লোকে দেবী-দেবতা
বলত... অন্তেও তোমাদের চিনতে পেরে দেবী-দেবতা বলবে l 'জয় দেবী, জয় দেবী' অর্থাৎ দেবী
জ্ঞানে তারা এখান থেকেই জয়জয়কার শুরু করে দেবে l আচ্ছা !
বরদান:-
ঈশ্বরীয় বিধান জেনেবুঝে বিধি দ্বারা সিদ্ধি প্রাপ্ত
ক'রে ফার্স্ট ডিভিশনের অধিকারী ভব
সাহসের এক কদম তো সহায়তার লক্ষ-কোটি কদম তোমরা লাভ
কর - ড্রামাতে বিধির এই বিধান স্থিরীকৃত আছে l যদি এই বিধি, বিধান না হতো, তবে সবাই
বিশ্বের প্রথম রাজা হয়ে যেত l নম্বরানুক্রমিক হওয়ার বিধান এই বিধির কারণেই তৈরি হয়
l সুতরাং তোমরা প্রত্যেকে যে যতটা পার সাহস রাখ আর সহায়তা প্রাপ্ত কর l তোমরা
সারেন্ডার হও বা গার্হস্থ্য জীবনে থাক, তোমাদের অধিকার সমান, কিন্তু সঠিক বিধি
প্রয়োগে তোমরা সফলতা লাভ করো অর্থাৎ বিধি দ্বারা সিদ্ধি l এই ঈশ্বরীয় বিধান বুঝে
অমনোযোগিতার খেলা সমাপ্ত করো, তবেই ফার্স্ট ডিভিশনের অধিকার প্রাপ্ত হবে l
স্লোগান:-
সঙ্কল্পের খাজানার প্রতি ইকনমির অবতার হও l