২৯-১০-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - উঠতে বসতে বুদ্ধিতে জ্ঞান টপ টপ করে পড়তে থাকলে, তবে অপার খুশীতে থাকবে"
প্রশ্ন:-
যাদের বুদ্ধিতে বাবার স্মরণ স্থায়ী থাকে না, বুদ্ধি এদিকে-ওদিকে ঘুর-পাক খেতে থাকে, তাদের সঙ্গ থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে চলতে হবে। তাদের অঙ্গের সাথে নিজেদের অঙ্গও স্পর্শ হতে দিতে নেই, কারণ যারা স্মরণে থাকে না, তারা বায়ুমন্ডলকে খারাপ করে দেয়"
উত্তর:-
যখন তারা জানতে পারবে যে, এদের পড়ান স্বয়ং ভগবান, তখন তাদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাবে আর অনুশোচনা করবে যে আমরা উদাসীন থেকেছি, পড়াশুনা করিনি ।
ওম্ শান্তি।
জ্ঞানই না হলে তো খুশীও থাকতে পারে না। বাবা বলেন দেহ সহ সব কিছু ছেড়ে নিজেকে আত্মা মনে করো, তুমি আত্মা আমার অর্থাৎ বাবার সাথে যোগ যুক্ত হও। এ হলো পরিশ্রমের ব্যাপার। পবিত্র হয়েই পবিত্র দুনিয়াতে আসতে হবে। তোমরা মনে করো আমরাই (বাচ্চারাই) বাদশাহী নিই, আবার হারিয়ে ফেলি। এটা তো হলো খুবই সহজ। উঠতে, বসতে, চলতে ভিতরে ভিতরে বর্ষিত হওয়া চাই, যেমন বাবার কাছে জ্ঞান আছে। বাবা এসেছেনই পঠন-পাঠন করিয়ে দেবতা করে তুলতে। তাই এতো অপার খুশী বাচ্চাদের যে থাকা উচিত, তাই না ! নিজেকে জিজ্ঞাসা করো এমন অপার খুশী আছে ? বাবাকে এতো স্মরণ করা হয় ? চক্রেরও সমস্ত নলেজ বুদ্ধিতে আছে, তো এতো খুশী থাকতে হবে । বাবা বলেন, আমাকে স্মরণ করো আর খুশিতে থাকো। তোমাদের পড়াশুনা করানোর জন্য কে আছেন দেখো ! যখন সকলে সে'কথা জানবে সকলের মুখই ফ্যাকাসে হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তাদের বুঝতে কিছু দেরী আছে। এখন দেবতা ধর্মের এতো মেম্বার্স তো হয়নি। সব রাজত্ব স্থাপন হয়নি। কতো প্রচুর পরিমান মানুষকে বাবার পবিত্র সংবাদ দিতে হবে ! অসীম জগতের পিতা আবারও আমাদের স্বর্গের বাদশাহী দিচ্ছেন। তোমরাও সেই বাবাকে স্মরণ করো। অসীম জগতের পিতা তো অবশ্যই অসীম জগতের সুখ দেবেন, তাই না ! বাচ্চাদের ভিতরে তো অপরিসীম জ্ঞানের খুশী থাকা চাই আর যতো বাবাকে স্মরণ করতে থাকবে তো আত্মা পবিত্র হতে থাকবে।
বাচ্চারা, ড্রামার প্ল্যান অনুসারে তোমরা জানো যতো সার্ভিস করে প্রজা তৈরী করবে তো যার কল্যাণ হয় তাদের আবার আশীর্বাদও প্রাপ্ত হয়। গরিবের সার্ভিস করছো। নিমন্ত্রণ দিতে থাকো। তোমরা ট্রেনেও অনেক সার্ভিস করতে পারো। এতো ছোট ব্যাজেও কতো নলেজ সমাহিত হয়ে আছে। এই অধ্যয়ণের সমস্ত সারমর্ম এই ব্যাজে আছে। ব্যাজেস তো খুবই ভালো-ভালো প্রচুর তৈরী করা উচিত যা কাউকে উপহারও দেওয়া যায়। কাউকে বোঝানো তো খুবই সহজ। কেবল মাত্র শিববাবাকে স্মরণ করো।শিববাবার থেকেই উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয় বলে বাবা আর বাবার উত্তরাধিকার, স্বর্গের বাদশাহী, কৃষ্ণপুরীকে স্মরণ করো। মানুষের মত তো কতো বিভ্রান্তকর। কিছুই বোঝে না। বিকারের জন্য কতো জ্বালাতন করে। কাজের অন্তে কতো মারা যায়। কোনো কথাই বোঝে না। সকলের বুদ্ধি একদম উধাও হয়ে গেছে, বাবাকে জানেই না। এটাও ড্রামাতে পূর্ব নির্ধারিত। সবার মেন্টাল নিঃশেষ হয়ে গেছে- মানসিক শক্তি শেষ হয়ে গেছে। বাবা বলেন - বাচ্চারা, তোমরা পবিত্র হলে তো এভাবে স্বর্গের মালিক হয়ে যাবে, কিন্তু বোঝেই না। আত্মার সমস্ত শক্তি চলে গেছে। কতো বোঝানো হয় তবুও পুরুষার্থ করতে আর করাতে হবে। পুরুষার্থতে ক্লান্ত হতে নেই। হার্টফেলও হতে দিতে নেই। এতো পরিশ্রম করেছি, ভাষণ দ্বারা একজনও বের হয়নি। কিন্তু তোমরা যা শুনিয়েছিলে, সেটা যারাই শুনেছে তার মাধ্যমে ছাপ তো পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সকলে অবশ্যই জানবে। তোমাদের অর্থাৎ বি. কে যারা তাদের অপরিসীম মহিমা উদ্ভাসিত হতে চলেছে। কিন্তু এক্টিভিটিস দেখে তো যেন একদম অবুঝ মনে হয়। কোনো রিগার্ডই নেই, সম্পূর্ণ পরিচয় নেই। বুদ্ধি বাইরে ঘোরা-ফেরা করে থাকে। বাবাকে স্মরণ করলে সাহায্যও পাওয়া যাবে। বাবাকে স্মরণ করে না তো তবে সে হলো পতিত। তোমরা পবিত্র হচ্ছো। যারা বাবাকে স্মরণ করে না তাদের বুদ্ধি কোথাও না কোথাও ঘোরা-ফেরা করতে থাকে। তাই তাদের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে মিলিত হতে নেই (অর্থাৎ বেশী কাছাকাছি আসতে নেই), কারণ স্মরণে না থাকার জন্য তারা বায়ুমন্ডলকে খারাপ করে দেয়। পবিত্র আর অপবিত্র একত্রিত হতে পারে না, সেইজন্য বাবা পুরানো সৃষ্টিকে নিঃচিহ্ণ করে দেন। প্রতি নিয়ত আইনও কঠোর রকম তৈরী হচ্ছে। বাবাকে স্মরণ না করলে লাভের পরিবর্তে আরোই লোকসান করা হবে। পবিত্রতার সমস্ত কিছু নির্ভর করে স্মরণের উপর। এক জায়গায় বসার ব্যাপার নেই। এখানে একসাথে বসার চেয়ে ভালো হবে একাকী পাহাড়ীতে গিয়ে বসলে। যে স্মরণ করে না সে হলো পতিত। তার সঙ্গ করতে নেই। চলন থেকেই বোঝা যায়। স্মরণ ব্যাতীত তো পবিত্র হতে পারে না। প্রত্যেকের উপর প্রচুর পাপের বোঝা আছে- জন্ম-জন্মান্তরের। তারা স্মরণ ব্যাতীত কীভাবে যাত্রায় বের হবে। তারা যদিও হলো পতিত।
বাবা বলেন বাচ্চারা, আমি তোমাদের জন্য সমস্ত দুনিয়াকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গ যেন না হয়। কিন্তু এতো বুদ্ধিও নেই যে বুঝবে কার সঙ্গ করা উচিত। তোমাদের প্রীত পবিত্রর সাথে পবিত্রর হওয়া উচিত। এই বুদ্ধিটারও দরকার হয়। সুইট বাবা আর সুইট রাজধানী ছাড়া আর কিছু স্মরণে আসবে না। এতো সব ত্যাগ করা কোনো মাসীর বাড়ী না। বাবার তো বাচ্চাদের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা। বাচ্চারা, তোমরা পবিত্র হয়ে গেলে পবিত্র দুনিয়ার মালিক হয়ে যাবে। আমি তোমাদের জন্য পবিত্র দুনিয়ার স্থাপনা করছি। এই পতিত দুনিয়াকে একদম নিশ্চিহ্ন করে দেবো। এখানে এই পতিত দুনিয়াতে প্রতিটা জিনিস তোমাদের দুঃখ দেয়। আয়ুও কম হতে থাকে, একে বলা হয় ওয়ার্থ নট পেনী ( মূল্যহীন)। কড়ি আর হীরেতে পার্থক্য তো আছে যে না! তাই তোমাদের অর্থাৎ বাচ্চাদের কতো খুশী থাকা উচিত। গাওয়াও হয় সত্যতা থাকলে মন যেন নৃত্য করে (সচ্ তো বিঠো নাচ)। তোমরা সত্যযুগে খুশীতে নৃত্য করো। এখানকার কোনো বস্তুর প্রতিই আকর্ষণ যেন না থাকে। এসব তো দেখেও দেখতে নেই, চোখ খোলা থাকলেও যেন নিদ্রিত, কিন্তু সেই সাহস, সেই স্থিতি থাকা চাই। এটা তো সুনিশ্চিত যে এই পুরানো দুনিয়া থাকবেই না। খুশীর পারদ এতোটা উপরে উঠে থাকা চাই। চিমটি কাটা উচিত- আরে, আমরা শিববাবাকে স্মরণ করলে তো বিশ্বের বাদশাহী প্রাপ্ত করব। হঠযোগেও বসতে নেই। খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করার সময়, কর্ম করার সময় বাবাকে স্মরণ করো। এটাও জানো রাজধানী স্থাপন হচ্ছে। বাবা কি আর বলবেন যে দাসী হও ! বাবা তো বলবেন পবিত্র হওয়ার জন্য পুরুষার্থ করো। বাবা পবিত্র হওয়ার জন্য পুরুষার্থ করান, তোমরা আবার পতিত হয়ে যাও, কতো মিথ্যা পাপ করো। সর্বক্ষণ শিববাবাকে স্মরণ করলে সব পাপ পরিত্যাগ হয়ে যাবে। এটা বাবার যজ্ঞ যে! খুবই মহান যজ্ঞ। সেই লোকেরা যজ্ঞ রচনা করে- লক্ষ টাকা খরচ করে। এক্ষেত্রে তো তোমরা জানো সমগ্র দুনিয়া এতে স্বাহা (পরিত্যাগ) হয়ে যায়। বাইরে থেকে আওয়াজ এলে ভারতেও বিস্তৃত হবে। এক বাবার সাথে বুদ্ধির যোগ থাকলে পাপ খন্ডন হবে আর তারপর উচ্চ পদও প্রাপ্ত হবে। বাবার তো কর্তব্য হলো বাচ্চাদের পুরুষার্থ করানো। লৌকিক বাবা তো বাচ্চাদের সেবা করে, সেবা নেয়ও। এই বাবা তো বলেন আমি তোমাদের অর্থাৎ বাচ্চাদের ২১ জন্মের উত্তরাধিকার দিই, তাই এমন বাবাকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে, যাতে পাপ খন্ডন হবে। এছাড়া জলে কি আর পাপ খন্ডন হয়! জল তো যেখানে-সেখানে আছে। বিদেশেও তো অনেক নদী আছে, তবে কি এখানের নদী গুলি পবিত্র করার, বিদেশের নদী গুলি পতিত করে তোলার ? মানুষের কোনো বোধই নেই। বাবার তো করুণা হয়। বাবা বোঝান- বাচ্চারা উদাসীন থেকো না। বাবা এতো ফুল তৈরী করেন তো পরিশ্রম করা উচিত। নিজের প্রতি করুণা করতে হবে। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার:-
১. এখানকার কোনো বস্তুর প্রতিই আকর্ষণ যেন না আসে। দেখেও যেন দেখো না। চোখ খোলা থেকেও যেমন নিদ্রার ঘোর থাকে, ঐরকম খুশির নেশা উঠে থাকবে।
২. সব কিছু নির্ভর করে পবিত্রতার উপর, সেই জন্য সতর্কতার প্রয়োজন। যেন পতিতের অঙ্গের সাথে অঙ্গ না স্পর্শ হয়। সুইট বাবা আর সুইট রাজধানীছাড়া আর কিছু যেন স্মরণে না আসে।
বরদান:-
সেবার দ্বারা মেওয়া (ফল) প্রাপ্ত করার সর্ব পার্থিব জগতের চাহিদার উর্ধ্বে সদা সম্পন্ন আর সমান ভব
সেবার অর্থ হলো মেওয়া দেয় যা। যদি কোনো সেবা অসন্তুষ্ট করে তো সেই সেবা, সেবা নয়। এইরকম সেবা যদিও ছেড়ে দাও কিন্তু সন্তুষ্টতা ছেড়ো না। যেমন শারীরিক ভাবে তৃপ্ত যারা, সর্বদা সন্তুষ্ট থাকে, সেরকম মনের দিক থেকে যারা তৃপ্ত তারাও সন্তুষ্ট হবে। সন্তুষ্টতা হলো তৃপ্তির নিশানি। তৃপ্ত আত্মার ভিতরে পার্থিব জগতের কোনোই ইচ্ছা, মান, সম্মান, স্যালভেশন (পরিত্রাণ), সুবিধার খিদে থাকে না। তারা পার্থিব সকল চাহিদার উর্ধ্বে সদা সম্পন্ন আর সমান হবে।
স্লোগান:-
সত্যিকারের অন্তর থেকে নিঃস্বার্থ সেবাতে এগিয়ে যাওয়া অর্থাৎ পূণ্যের খাতা জমা হওয়া।