২৬-০৯-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা বাবার কাছে এসেছ নিজেদের চরিত্র সংশোধন করার জন্য, তোমাদের চরিত্র এখন দৈবীগুণ সম্পন্ন করে তুলতে হবে"
প্রশ্ন:-
বাচ্চারা, তোমাদের চোখ বন্ধ করে বসার জন্য কেন নিষেধ করা হয় ?
উত্তর:-
কেননা দৃষ্টি দ্বারা মোহিত করেন যিনি সেই বাবা তোমাদের সম্মুখে । যদি চোখ বন্ধ থাকে তবে মোহিত হবে কীভাবে । স্কুলে চোখ বন্ধ করে বসতে নেই । চোখ বন্ধ থাকলে আলস্য আসবে । তোমরা বাচ্চারা তো এই স্কুলে ঈশ্বরীয় পঠন-পাঠন করছ, এই পঠন-পাঠন হল সোর্স অফ ইনকাম । পদ্ম গুণ সম (লক্ষ কোটি গুণ) লক্ষ উপার্জন প্রাপ্তি হচ্ছে, উপার্জন করতে গিয়ে আলস্য, উদাসীনতা আসা উচিত নয়* ।
ওম্ শান্তি ।
মিষ্টি মিষ্টি আত্মা রূপী (রূহানী) বাচ্চাদেরকে বাবা বোঝাচ্ছেন । বাচ্চারা তো জানে রূহানী বাবা পরমধাম থেকে এসে আমাদের পড়াচ্ছেন । কি পড়াচ্ছেন ? বাবার সাথে আত্মার যোগযুক্ত হওয়ার পদ্ধতি শেখাচ্ছেন, যাকে স্মরণের যাত্রা বলা হয় । বাবা এও বলেছেন ‐‐ বাবাকে স্মরণ করতে করতে মিষ্টি আত্মা রূপী বাচ্চারা তোমরা পবিত্র হয়ে নিজেদের পবিত্র শান্তিধামে পৌছে যাবে । কত সহজভাবে বুঝিয়েছেন । নিজেকে আত্মা মনে করে যদি নিজের প্রিয় অনন্ত জগতের পিতাকে স্মরণ করো, তবে তোমাদের জন্ম-জন্মান্তরের যে পাপ সঞ্চিত হয়ে আছে, তা ভস্মীভূত হতে থাকবে । একেই বলা হয় যোগ অগ্নি । এ হলো ভারতের প্রাচীন রাজযোগ, যা বাবা প্রতি ৫ হাজার বছর পরে এসে শিখিয়ে থাকেন । অনন্ত জগতের পিতা এই ভারতে, সাধারণ শরীরে ( ব্রহ্মা বাবা) প্রবেশ করে তোমাদের, অর্থাৎ বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে বলেন । এই স্মরণ দ্বারাই তোমাদের জন্ম-জন্মান্তরের পাপ কেটে যাবে। কেননা বাবা হলেন পতিত-পাবন এবং সর্বশক্তিমান । তোমাদের আত্মা রূপী ব্যাটারি এখন তমোপ্রধান হয়ে গেছে । যা সতোপ্রধান ছিল এখন তাকে পুনরায় সতোপ্রধান কীভাবে করে তুলবে, যাতে তোমরা সতোপ্রধান দুনিয়াতে যেতে পার বা শান্তিধামে ঘরে ফিরে যেতে পার । বাচ্চাদের এটা খুব ভালোভাবে স্মরণে রাখা উচিত । বাবা বাচ্চাদের এই ডোজ দিচ্ছেন, এই স্মরণের যাত্রা তোমরা উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে করতে পার । যতটা সম্ভব গৃহস্থ ব্যবহারে থেকে পদ্মফুলের মতো পবিত্র থাকতে হবে । বাবাকে স্মরণ করতে হবে আর সাথে সাথে দৈবীগুণও ধারণ করতে হবে। কেননা, দুনিয়াতে বসবাসকারীদের হল আসুরি চরিত্র । তোমরা বাচ্চারা এখানে এসেছ দৈবী চরিত্র গড়ে তুলতে । এই লক্ষী-নারায়ণের চরিত্র খুব মিষ্টি ছিল । ভক্তি মার্গে ওদেরই মহিমা গাওয়া হয়েছে । ভক্তি মার্গ কবে থেকে শুরু হয়েছে, এটা কারও জানা নেই । এখন তোমরা বুঝেছ আর রাবণ রাজ্য কবে থেকে শুরু হয়েছে, এটাও এখন জেনেছ । বাচ্চারা, তোমাদের এই সম্পূর্ণ নলেজ বুদ্ধিতে ধারণ করতে হবে । যখন জান যে আমরা জ্ঞানের সাগর রূহানী বাবার সন্তান, এখন রূহানী বাবা আমাদের শিক্ষা প্রদান করতে এসেছেন । এটাও জান যে ইনি কোনও সাধারণ পিতা নন । ইনি হলেন অসীম জগতের রূহানী পিতা যিনি আমাদের পড়াতে এসেছেন । ওঁনার নিবাস স্থান হল ব্রহ্মলোকে । সবার লৌকিক পিতা তো এখানেই । বাচ্চাদের এটা দৃঢ়তার সাথে নিশ্চয় হওয়া উচিত ‐- আমরা আত্মাদের শিক্ষা প্রদানকারী পরমপিতা পরমাত্মা, যিনি অনন্ত অসীম জগতের পিতা। ভক্তি মার্গে লৌকিক পিতা থাকা সত্বেও পরমপিতা পরমাত্মাকে আহ্বান করে । ওঁনার যথার্থ নাম শিব । বাবা স্বয়ং বুঝিয়ে বলেন ‐‐ মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা, আমার একটাই নাম শিব। যদিও অনেক নামে অনেক মন্দির নির্মাণ করেছে, কিন্তু সেসবই হলো ভক্তি মার্গের সামগ্রী। আমার একটাই যথার্থ নাম, তা হল শিব । তোমরা বাচ্চাদের আত্মা-ই বলা হয়, শালিগ্রাম বললেও কোনও ভুল নেই । অসংখ্য শালিগ্রাম আছে, কিন্তু শিব একজনই । তিনি হলেন অসীম জগতের পিতা, বাকি সবাই তাঁর সন্তান । এর আগে তোমরা ছিলে লৌকিক (হদের) সন্তান, লৌকিক পিতার কাছে থাকতে । জ্ঞান তো ছিল না । সুতরাং অনেক রকমের ভক্তি করতে । অর্ধকল্প ধরে ভক্তি করেছ, দ্বাপর থেকে ভক্তি শুরু হয়। রাবণ রাজ্যও ঐ সময় থেকে শুরু হয়েছে । এ হলো অতি সহজ বিষয় । কিন্তু এতো সহজ কথাও খুব কম জনই বুঝতে পারে । রাবণ রাজ্য কবে থেকে শুরু হয়েছিল, এটাও কেউ জানে না । তোমরা মিষ্টি বাচ্চারা জান-‐ বাবাই হলেন জ্ঞানের সাগর । যা ওঁনার কাছে আছে তাই তিনি এসে বাচ্চাদের দিয়ে থাকেন । শাস্ত্র তো ভক্তি মার্গের জন্য ।
এখন তোমরা বুঝেছ ‐‐ জ্ঞান, ভক্তি তারপর হলো বৈরাগ্য । এই ৩ টিই হলো প্রধান । সন্ন্যাসীরা ও জানে জ্ঞান ভক্তি আর বৈরাগ্য । কিন্তু সন্ন্যাসীদের হলো নিজেদের সসীম বৈরাগ্য । ওরা অনন্ত জগতের বৈরাগ্য সম্পর্কে শেখাতে অপারগ । দুই প্রকারের বৈরাগ্য আছে ‐- এক হলো সীমিত বৈরাগ্য, অপরটি হলো অনন্ত জগতের বৈরাগ্য । ওটা হলো হঠযোগী সন্ন্যাসীদের বৈরাগ্য । এ হলো অনন্ত জগতের বৈরাগ্য । তোমাদের হলো রাজযোগ, ওরা ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে চলে যায়, সুতরাং ওদের সন্ন্যাসী নাম দেওয়া হয় । হঠযোগী ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যায় পবিত্র থাকার জন্য । এটাও ভালো । বাবা বলেন ‐- ভারত তো পবিত্র ছিল । এর মতো পবিত্র খন্ড আর কিছু হয় না । ভারতের এতো উচ্চ মহিমার কথা ভারতবাসীরা নিজেরাই জানে না । বাবাকে ভুলে যাওয়ার কারণে সব কিছু ভুলে যায় অর্থাত্ নাস্তিক আর অনাথ হয়ে যায় । সত্যযুগে কত সুখ-শান্তি ছিল । এখন কত দুঃখ-অশান্তি ! মূলবতন-ই তো হল শান্তিধাম, যেখানে আমরা আত্মারা বাস করি । আত্মারা নিজের ঘর থেকে এখানে আসে অসীম জগতের ভূমিকা পালন করতে । এখন হলো পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগ, যখন অনন্ত জগতের পিতা আসেন নতুন দুনিয়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য । বাবা এসে উত্তম থেকে উত্তম (শ্রেষ্ঠতম) করে তোলেন । ওঁনাকে উচ্চতমের থেকেও উচ্চ - ভগবান বলা হয় । কিন্তু তিনি কে, কাকে বলা হয়, এসব কিছুই জানে না । একটা বড় লিঙ্গ রেখে দিয়েছে । ভেবেছে এই লিঙ্গই নিরাকার পরমাত্মা । আমরা আত্মাদের পিতা তিনি -- মানুষ এটাও বোঝে না, শুধুই পূজা করে। সবসময় শিববাবা বলেন, রুদ্র বাবা বা বাবুলনাথ বাবা বলবে না । তোমরা লিখেও থাক শিববাবা স্মরণ আছে ? এই স্লোগান ঘরে-ঘরে লাগানো উচিত- শিববাবাকে স্মরণ করলে পাপ ভস্ম হবে। কেননা পতিত-পাবন একজনই - বাবা । এই পতিত দুনিয়াতে একজনও পবিত্র হতে পারে না। আবার পবিত্র দুনিয়াতেও একজনও পতিত থাকে না । শাস্ত্রে তো সব জায়গায়ই পতিত বলে লেখা আছে । ত্রেতাতেও বলে দেয় রাবণ ছিল, সীতাকে হরণ করা হয়েছিল । কৃষ্ণের সাথেও কংস, জরাসন্ধ, হিরণ্যকশিপু ইত্যাদি দেখানো হয়েছে । কৃষ্ণের উপর কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে । সত্যযুগে এসব হতেই পারে না । কত মিথ্যে কলঙ্ক দেওয়া হয়েছে । বাবার উপরও কালিমা লেপন করেছে, দেবতাদের উপরেও কালিমা লেপন করা হয়েছে । সবারই গ্লানি করতে থাকে । সুতরাং এখন বাবা বলছেন, এ হলো স্মরণের যাত্রা, আত্মাকে পবিত্র করে তোলার । পবিত্র হয়ে তারপর পবিত্র দুনিয়াতে যেতে হবে । বাবা ৮৪ চক্রও ব্যাখ্যা করেছেন । এখন তোমাদের এটা হল অন্তিম জন্ম, তারপর ঘরে ফিরে যেতে হবে । ঘরে তো শরীর যাবে না । সব আত্মাকে যেতে হবে। সেইজন্য মিষ্টি মিষ্টি আত্মা রূপী বাচ্চারা, নিজেকে আত্মা মনে করে বসো, নিজেকে দেহ মনে কোরো না । সত্সঙ্গে তোমরা দেহ-অভিমানী হয়ে বসো । এখানে বাবা বলেন - দেহী -অভিমানী হয়ে বসো । যেমন আমার মধ্যে সংস্কার আছে - আমি জ্ঞানের সাগর, শান্তির সাগর ইত্যাদি... বাচ্চারা, তোমাদেরও এমন হতে হবে । তিনি অসীম জগতের পিতা এবং সীমিত জগতের পিতার মধ্যে বৈসাদৃশ্যও ব্যাখ্যা করেছেন । অনন্ত জগতের পিতা বসে তোমাদের সম্পূর্ণ জ্ঞান বুঝিয়ে বলেন । আগে তোমরা জানতে না। এখন সৃষ্টি চক্র কীভাবে ঘোরে, এর আদি-মধ্য-অন্ত এবং চক্রের আয়ু কত সব বুঝিয়ে দেন। ভক্তি মার্গে তো কল্পের আয়ু লক্ষ বছর শুনিয়ে ঘোর অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হয়েছে । অবনতির দিকেই নেমে এসেছে । বলাও হয়ে থাকে যত আমরা ভক্তি করব ততই পিতাকে টানব । বাবা এসে আমাদের পবিত্র করে তোলেন । বাবাকে টেনে আনে ( আহ্বান করে ,ডাকে) কেননা পতিত হয়ে বড়ই দুঃখী হয়ে পড়ে । তারপর বলে আমরা বাবাকে আহ্বান করি। বাবাও তখন দেখেন বাচ্চারা সম্পূর্ণ দুঃখী হয়ে তমোপ্রধান হয়ে গেছে, ৫ হাজার বছর পূর্ণ হওয়ার পর তবেই তিনি আসেন । এই ঈশ্বরীয় পঠন-পাঠন পুরানো দুনিয়ার জন্য নয় । তোমাদের আত্মা তা ধারণ করে সাথে নিয়ে যাবে । যেমন আমি জ্ঞানের সাগর, তোমরাও তেমনি জ্ঞানের নদী । এই নলেজ এই দুনিয়ার জন্য নয় । এই দুনিয়া তো ছিঃছিঃ, শরীরও ছিঃছিঃ হয়ে গেছে, একে তো ত্যাগ করতে হবে। শরীর তো এখানে পবিত্র হতে পারে না । আমি হলাম আত্মাদের পিতা । আত্মাদের পবিত্র করে তুলতে এসেছি । এইসব বিষয় মানুষ তো কিছুই জানে না । সম্পূর্ণ পাথর বুদ্ধি পতিত হয়ে গেছে। আর সেইজন্যই গেয়ে ওঠে পতিত-পাবন.....। আত্মাই পতিত হয়ে গেছে । আত্মাই সবকিছু করে। ভক্তিও আত্মাই করে, শরীরও আত্মাই ধারণ করে।
এখন বাবা বলেন, আমি তোমাদের, অর্থাৎ আত্মাদের নিয়ে যেতে এসেছি । আমি অনন্ত জগতের পিতা, আত্মারা তোমাদের আহ্বান শুনেই এসেছি, তোমরা কতো ডেকেছ । এখনও পর্যন্ত আহ্বান করে বলে ‐- হে পতিত-পাবন, ও গডফাদার তুমি এসে যদি এই পুরানো দুনিয়ার দুঃখ থেকে, শয়তান থেকে মুক্ত করো, তবে আমরা সবাই ঘরে ফিরে যাব । আর তো কেউ জানেই না-‐ আমাদের ঘর কোথায়, ঘরে কিভাবে যাব, কবে যাব । মুক্তিতে যাওয়ার জন্য কত মাথা ঠোকে, কত গুরু করে । জন্ম-জন্মান্তর ধরে মাথা ঠুকে এসেছে । ঐ সব গুরুরা জীবন মুক্তির সুখকে তো জানেই না । ওরা শুধুই মুক্তি চায় । বলেও থাকে বিশ্বে শান্তি কিভাবে হবে ? সন্ন্যাসীরাও মুক্তিকেই জানে, জীবন মুক্তিকে জানেনা । কিন্তু মুক্তি-জীবনমুক্তি দুইয়েরই অবিনাশী উত্তরাধিকার বাবা-ই প্রদান করে থাকেন । তোমরা যখন জীবনমুক্তিতে থাক বাকি সবাই মুক্তিধামে চলে যায় । এখান তোমরা বাচ্চারা নলেজ গ্রহণ করছো, তা হওয়ার জন্য । তোমরাই সবচেয়ে বেশি সুখ দেখেছ তারপর সবচেয়ে বেশী দুঃখও তোমরা দেখেছ । আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের তোমরাই ছিলে, তারপর ধর্ম-ভ্রষ্ট, কর্ম-ভ্রষ্ট হয়ে গেছ । তোমরা পবিত্র প্রবৃত্তি মার্গের ছিলে, এই লক্ষী-নারায়ণও পবিত্র প্রবৃত্তি মার্গের । ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া এটা সন্ন্যাসীদের ধর্ম । সন্ন্যাসীরা প্রথমে খুব ভালো ছিল, তোমরাও প্রথমে ভালো ছিলে, এখন তমোপ্রধান হয়ে গেছ । বাবা বলেন এটাই ড্রামার খেলা । বাবা বোঝান -- এই ঈশ্বরীয় পঠন-পাঠন হলো নতুন দুনিয়ার জন্য । পতিত শরীর, পতিত দুনিয়ায় ড্রামানুসারে আমাকে আবার ৫ হাজার বছর পরে আসতে হয় । না কল্প লক্ষ বছরের, না আমি সর্বব্যাপী । তোমরা তো আমার গ্লানি করে আসছ, তারপরও আমি তোমাদের উপকার করি । শিববাবার যত গ্লানি করা হয়েছে, তেমনটা আর কারও ক্ষেত্রে হয়নি। যে বাবা তোমাদের বিশ্বের মালিক করে তোলেন তাঁকেই তোমরা বলো সর্বব্যাপী । যখন গ্লানির সীমা অতিক্রম করে, তখনই আমি এসে উপকার করি । এ হলো পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগ, কল্যাণকারী যুগ । যখন তোমাদের পবিত্র করে তুলতে আসি। পবিত্র বানানোর জন্য কত সহজ উপায় বলে দেন । তোমরা ভক্তি মার্গে অনেক ধাক্কা খেয়েছ, পুকুরেও স্নান করতে গেছ । ভেবেছ এর দ্বারাই পবিত্র হয়ে যাব । এখন কোথায় সেই জল আর কোথায় পতিত-পাবন পিতা । ওসব হলো ভক্তি মার্গ, এ হলো জ্ঞান মার্গ । মানুষ কত ঘোর অন্ধকারে পড়ে আছে । কুম্ভকর্ণের ঘুমে শুয়ে আছে । এ তো তোমরা জান ‐- গাওয়াও হয়ে থাকে বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি বিনাশ ডেকে আনে । এখন তোমাদের নম্বরানুসারে পুরুষার্থ অনুযায়ী প্রীতবুদ্ধি । এখনও সম্পূর্ণ প্রীত বুদ্ধি নয়, কেননা মায়া প্রতি মুহূর্তে ভুল করিয়ে দেয় । এ হলো ৫ বিকারের লড়াই । পাঁচ বিকারকে রাবণ বলা হয় । রাবণের উপর গাধার মস্তক দেখানো হয়েছে ।
বাবা এও বুঝিয়েছেন -- স্কুলে কখনও চোখ বন্ধ করে বসা উচিত নয় । ওটা তো ভক্তি মার্গে বলা হয় যে চোখ বন্ধ করে ভগবানের স্মরণে বসো । এখানে তো বাবা বলেন এটা হল স্কুল । শুনেওছ দৃষ্টি দ্বারা মোহিত করে সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে যান। তাই তো বলা হয় ইনি জাদুগর । সে তো গানও আছে । দেবতারাও দৃষ্টি দ্বারা মোহিত হয়ে যায় । দৃষ্টি দ্বারা মানুষকে দেবতা করে তোলেন যিনি, তিনি তো জাদুগরই হলেন, তাই না । বাবা বসে আত্মা রূপী ব্যাটারি চার্জ করছেন আর বাচ্চারা চোখ বন্ধ করে বসে থাকলে তাকে কি বলবে ! স্কুলে চোখ বন্ধ করে বসতে নেই । নয়তো আলস্য আসে, পড়াশোনা হল সোর্স অফ ইনকাম । লক্ষ কোটি গুণ (পদ্ম গুণ সম) উপার্জন । উপার্জন করতে বসে কখনও হাই তুলতে নেই । আত্মাদের এটা সংশোধন করা উচিত । এটাই প্রধান লক্ষ্য যা সম্মুখে রয়েছে (সামনের লক্ষ্মী-নারায়ণের ছবি) । তাদের রাজধানী দেখতে হলে দিলওয়ারা মন্দিরে যাও । ওটা হলো জড়, আর এ হলো (মধুবন) চৈতন্য দিলওয়ারা মন্দির । এখানে দেবতারাও আছে, স্বর্গও আছে (যদিও এখন তারা পুরুষার্থী রূপে রয়েছে) । সবার সদ্গতি দাতা আবুতেই আসেন, সেইজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থ হলো আবু । ধর্ম স্থাপক বা গুরু যারাই আছে, সবারই সদ্গতি বাবা এখানে এসেই করেন । এটাই হল সবচেয়ে বড় তীর্থ, কিন্তু গুপ্ত রূপে । একে কেউ-ই জানে না । আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার:-
১. যে সংস্কার বাবার মধ্যে আছে, সেই সংস্কারই ধারণ করতে হবে । বাবার সমান জ্ঞানের সাগর হতে হবে । দেহী-অভিমানী হয়ে থাকার অভ্যাস করতে হবে ।
২. আত্মা রূপী ব্যাটারিকে সতোপ্রধান করে তোলার জন্য চলতে-ফিরতে স্মরণের যাত্রায় থাকতে হবে । দৈবী চরিত্র ধারণ করতে হবে । খুব মিষ্টি হতে হবে (আচার ব্যবহারে)।
বরদান:-
জ্ঞান ধন দ্বারা প্রকৃতির সব সাধন (সুযোগ সুবিধার সব উপকরণ) প্রাপ্তকারী পদ্ম পদম পতি ভব
জ্ঞান ধন (সম্পদ) স্বাভাবিকভাবেই স্থূল ধনের প্রাপ্তি করিয়ে থাকে । যেখানে জ্ঞান ধন আছে, সেখানে প্রকৃতিও দাসী হয়ে যায় । জ্ঞান ধন দ্বারা প্রকৃতির সব সাধন স্বাভাবিক ভাবেই প্রাপ্ত হতে থাকে আর সেইজন্যই জ্ঞান ধন সর্ব ধনের ( সর্ব সম্পদের) রাজা । যেখানে রাজা আছে সেখানে সর্ব স্বাচ্ছন্দ্য স্বয়ংক্রিয় ভাবেই প্রাপ্ত হয় । এই জ্ঞান ধনই পদ্ম পদমপতি বানাতে পারে, পরমার্থ আর তার ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই প্রাপ্ত করিয়ে থাকে । জ্ঞান ধনের মধ্যে এতটাই শক্তি আছে যে অনেক জন্মের জন্য রাজারও রাজা ( সম্রাট) বানিয়ে দেয় ।
স্লোগান:-
আমি আত্মা "কল্প-কল্পের বিজয়ী"‐- এই আধ্যাত্মিক (রূহানী) নেশা জাগলে মায়াজীত হতে পারবে ।