30.12.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
সবকিছুই স্মরণের উপর নির্ভরশীল, স্মরণ করলেই তোমরা মিষ্টি হয়ে যাবে, এই স্মরণের
যাত্রাতেই তোমাদেরকে মায়ার সাথে যুদ্ধ করতে হয়"
প্রশ্নঃ -
এই নাটকে কী
এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা তোমাদের কাছে অত্যন্ত বিচার্য বিষয় ? যেটা কেবলমাত্র
বাচ্চারা, তোমরাই জানো ?
উত্তরঃ -
তোমরা জানো যে
নাটকে যে ঘটনা একবার অভিনীত হয়ে যায়, তা আর দ্বিতীয়বার হয় না। সমগ্র বিশ্বে যা
কিছু ঘটনা অভিনীত হচ্ছে তা সর্বদা প্রথমবারই হচ্ছে, তোমরা বিচার করো যে, সত্যযুগ
থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কিভাবে একের পর এক দিন অতীত হয়ে গেছে, সমস্ত
ক্রিয়া-কলাপ পরিবর্তিত হয়ে গেছে, আত্মার মধ্যে ৫ হাজার বছরের ক্রিয়া-কলাপ রেকর্ড
হয়ে আছে, যেটা কখনোই পরিবর্তিত হতে পারে না। এই ছোট কথাটিও বাচ্চারা, তোমাদের ছাড়া
আর কারোর বুদ্ধিতে আসতেই পারে না।
ওম্ শান্তি ।
আত্মিক বাবা
আত্মিক বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করছেন যে, "মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা নিজেদের
ভবিষ্যতের পুরুষোত্তম মুখমণ্ডল, পুরুষোত্তম শরীর দেখতে পাচ্ছো? এটা হল পুরুষোত্তম
সঙ্গম যুগ, তাইনা! তোমরা অনুভব করো যে, আমরা পুনরায় নতুন জগৎ সত্যযুগে এঁনার বংশে
জন্মগ্রহণ করবো। যেটাকে সুখধামও বলা হয়।" সেখানে যাওয়ার জন্যই তোমরা এখন
পুরুষোত্তম তৈরি হচ্ছো। যোগে বসে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে চিন্তন করতে হবে। লৌকিকে
ছাত্র-ছাত্রীদের বুদ্ধিতে এটা থাকে যে, পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে আমরা এই (ডাক্তার,
ইঞ্জিনিয়ার প্রভৃতি) হব। সেইরকম তোমরাও যখন যোগে বসো, তখন এই বিষয়ে চিন্তা করো
যে, এই পড়াশোনা করে আমরা বিষ্ণুর রাজ্যে জন্মগ্রহণ করবো। তোমাদের বুদ্ধি এখন
অলৌকিক হয়ে গেছে। অন্যান্য অজ্ঞানী মানুষদের বুদ্ধিতে এইসব বিষয়ে কোনো
বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। এটা কোন সাধারন সৎসঙ্গ নয়। যখন যোগে বসো তখন এটাই মনে করো
যে, যাঁকে সমগ্র জগৎবাসী শিব ভগবানরূপে পূজা-অর্চনা করেন, আমি তাঁর সাথে বসে আছি।
শিব বাবা হলেন রচয়িতা। তিনি এই সৃষ্টি রূপী রচনার আদি-মধ্য-অন্ত জানে। তিনি আমাদের
এই জ্ঞান প্রদান করেন। যেন মনে হয়, আগামীকালের কথা শোনাচ্ছেন। এখন এখানে বসে আছো,
কিন্তু বুদ্ধিতে তো এটাই স্মরণে আছে না, যে, আমরা এখানে এসেছি নবরূপে জন্ম নিতে
অর্থাৎ এই পুরনো শরীরকে পরিবর্তন করে দিব্য শরীর ধারণ করতে। আত্মা-ই বলে যে, এটা হলো
আমাদের পুরনো তমোপ্রধান শরীর। এই পুরনো শরীরকে বদল করে নতুন শরীরে প্রবেশ করবো।
আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হল খুব সহজ। জ্ঞানদাতা শিক্ষক, ছাত্রের তুলনায় অবশ্যই
কৌশলী হবেন, তাই না। শিক্ষক আমাদের শিক্ষা দেন, আবার ভালো কর্ম করতেও শেখান। এখন
তোমরা বুঝে গেছো যে আমাদেরকে উঁচুর থেকে উঁচু স্থানে নিবাসকারী ভগবান পড়াচ্ছেন তো
অবশ্যই দেবী দেবতা বানাবেন, তাই না! এই জ্ঞান হলো নতুন জগতের জন্য। অন্য কোন অজ্ঞানী
আত্মার বুদ্ধিতে এই নতুন জগৎ সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। এই লক্ষী-নারায়ন
নতুন জগতের মালিক ছিলেন। দেবী-দেবতারাও পুরুষার্থ অনুসারে নম্বরক্রমে তৈরি হবেন,
তাইনা! সবাই একরকম তো হবে না, কেননা রাজধানী স্থাপন হচ্ছে। তোমাদের বুদ্ধিতে এ
সমস্ত বিষয়ে চিন্তন যেন সর্বদা চলতে থাকে। আমি আত্মা এখন পতিত থেকে পবিত্র হওয়ার
জন্য বাবাকে স্মরণ করছি। আত্মা তার নিজের অতি প্রিয় মিষ্টি বাবাকে স্মরণ করে। বাবা
স্বয়ং বলেন যে তোমরা আমাকে স্মরণ করলে পবিত্র সতোপ্রধান অবশ্যই হয়ে যাবে। সবকিছুই
নির্ভর করছে স্মরণে যাত্রার উপর। *বাবা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবেন যে, "বাচ্চারা
সারাদিনের মধ্যে আমাকে কতটা সময় স্মরণ করেছো?"* স্মরণের যাত্রাতেই মায়ার সাথে
যুদ্ধ করতে হয়। মায়ার সাথে কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়, তাও তোমরা এখন জেনে গেছো। এটা
কেবল যাত্রা নয়, এটা সুক্ষম যুদ্ধও বটে। তাই যোগে বসে খুব সতর্ক থাকতে হবে। জ্ঞান
শোনা বা বোঝার সময় যেন কোন প্রকারের মায়ার ঝঞ্ঝাট না আসে। বাচ্চারাও বলে যে, "বাবা
আমি তোমাকে স্মরণ করি, কিন্তু মায়ার একটাই তুফান আমাকে নিচে ফেলে দেয়।" সর্বপ্রথম
তুফান হলো দেহ-অভিমানের। তারপর যথাক্রমে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ আসে। বাচ্চারা বলে যে
বাবা আমি অনেক চেষ্টা করি যাতে তোমাকে স্মরণ করার সময় কোন বিঘ্ন না আসে, কিন্তু
তবুও মায়া বিঘ্ন ঘটিয়ে দেয়। কখনো কখনো লোভের তুফান এসে যায়। আবার বাচ্চারা কখনো
বলে যে, "বাবা আজ আমার স্থিতি খুব ভাল ছিল, সারাদিন কোনো তুফান আমায় বিঘ্নিত করতে
পারেনি, আজ সারাদিন খুব খুশিতে ছিলাম, বাবাকে খুব ভালোবাসার সাথে স্মরণ করেছি,
প্রেমের অশ্রুতে মনের তৃষ্ণা মিটিয়েছি। বাবার স্মরণে থাকলে খুব মিষ্টি হয়ে যাবে।
তোমরা এটা বুঝে গেছো যে, মায়ার কাছে পরাজিত হতে হতে আজ তোমরা কোথায় এসে পৌঁছেছো।
অন্য কেউ এসব কথা বুঝবে না। তারা তো কল্পের আয়ু লক্ষ বছর বলে দিয়েছে আর তারা এটাও
মনে করে যে,- "এসব পরম্পরা ক্রমে চলে আসছে..।" তোমরা বলো যে, "আমরা এখন পুনরায়
মানুষ থেকে দেবতা তৈরি হচ্ছি।" এই জ্ঞান বাবাই এসে প্রদান করেন। অনন্য বাবা, যাঁর
কোন চিত্র নেই অর্থাৎ বিচিত্র, তিনিই এই অনন্য জ্ঞান প্রদান করেন। 'বিচিত্র' শব্দটি
নিরাকার শিববাবাকেই বলা হয়ে থাকে। নিরাকার, যাঁর কোনো আকার নেই, তিনি কীভাবে এই
জ্ঞান দিতে পারেন? বাবা নিজেই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি কিভাবে এই শরীরের মধ্যে
প্রবেশ করেন। তবুও মানুষ এই কারণে বিভ্রান্ত হয় যে, তিনি কি কেবলমাত্র এঁনার
শরীরেই প্রবেশ করেন ? কিন্তু নাটকে এই শরীরই নিমিত্ত হয়। একটুও পরিবর্তন হয় না। এ
সমস্ত কথা তোমরা ভালোভাবে বুঝে অন্যদেরকে বোঝাও। আত্মাই পড়াশোনা করে। আত্মাই কিছু
শেখে বা শেখায়। আত্মাই হল চরম সত্য এবং চৈতন্য স্বরূপ। আত্মা হলো অবিনাশী। শরীর হল
বিনাশী। আমরা আত্মারা নিজের পরমপিতা পরমাত্মার থেকে রচয়িতা আর রচনার
আদি-মধ্য-অন্তের, ৮৪ জন্মের জ্ঞান গ্রহণ করছি। জ্ঞান কে গ্রহণ করছে? আমরা আত্মারা।
তোমরা আত্মারই জ্ঞান সাগর বাবার থেকে মূলবতন, সূক্ষ্মবতনকে জেনেছো। সাধারণ মানুষ এটা
জানেই না যে, আমাদের নিজেদেরকে আত্মা মনে করতে হয়। তারা তো নিজেদেরকে 'শরীর' ভেবে
নিম্ন মস্তক হয়ে ঝুলে আছে। গীত আছে - আত্মা হলো সত্য, চৈতন্য এবং আনন্দ স্বরূপ।
সবথেকে বেশি মহিমা পরমাত্মাকেই করা হয়। এক বাবার কত মহিমা হয়। তিনি হলেন দুঃখ
হর্তা, সুখ কর্তা। তোমরা মশা-মাছি প্রভৃতি কীটপতঙ্গদের তো এত মহিমা করো না, যে তারা
দুঃখহর্তা-সুখকর্তা, জ্ঞানের সাগর। না, তা হয় না। কারণ এগুলি হল শুধুমাত্র বাবার-ই
মহিমা। তোমরা বাচ্চারাও হলে মাস্টার দুঃখহর্তা, সুখকর্তা। তোমাদের মধ্যেও এই জ্ঞান
ছিল না, একদম শৈশব বুদ্ধি (বেবী বুদ্ধি) ছিল। শৈশবে বাচ্চাদের মধ্যে কোনো বিষয়ের
জ্ঞান থাকে না, আর কোনো অপগুণও থাকেনা। এইজন্য বাচ্চাদের মহাত্মা বলা হয়, কেননা
তারা পবিত্র হয়। যত ছোট বাচ্চা ততটাই পুষ্পসম। একদম কর্মাতীত অবস্থায় থাকে।
কর্ম-অকর্ম-বিকর্ম সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান থাকেনা। এই জন্যই তারা পুষ্পসম হয়।
সবাইকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে, যেরকম এক বাবা সবাইকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বাবা
এসেছেন সবাইকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে সুগন্ধি ফুল তৈরি করতে। কেউ কেউ আবার দুঃখদায়ী
কন্টক-ই থেকে যায়। পাঁচ বিকারে বশীভূত আত্মাদেরকে দুঃখদায়ী কন্টক বলা হয়। প্রথম
নম্বরের কন্টক হল দেহ-অভিমানের। যার থেকে অন্যান্য কন্টকের জন্ম নেয়। কন্টকময়
জঙ্গল খুব দুঃখ প্রদান করে। জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কন্টক থাকে, তাই না!
এইজন্য একে দুঃখধাম বলা হয়। নতুন জগতে কন্টক থাকে না, সেজন্য তাকে সুখধাম বলা হয়।
শিববাবা ফুলের বাগান তৈরি করেন, আর রাবণ সেই বাগানকে কন্টকময় জঙ্গলে পরিণত করে দেয়।
এইজন্য রাবণকে কন্টকের ঝাড়ের মধ্যে জ্বালানো হয়, আর বাবাকে পুষ্পাঞ্জলী দেওয়া হয়।
এসব কথা বাবা জানে আর বাচ্চারা জানে, আর কেউ জানেনা।
বাচ্চারা, তোমরা জানো যে, অবিনাশী নাটকে একই পার্ট দুই বার প্লে হতে পারে না।
তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে, সমগ্র জগতে যে অভিনয় চলছে, একজনের ভূমিকা অপর জনের থেকে
নতুন। । তোমরা ভেবে দেখো, সত্যযুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কিভাবে একের পর এক দিন
পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সমস্ত কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায়। ৫ হাজার বছরের এই
কার্যকলাপের রেকর্ড আত্মার মধ্যেই ভরা আছে। সেটা কখনোই পরিবর্তিত হয় না। প্রত্যেক
আত্মার মধ্যে নিজের নিজের পাঠ ভরা আছে। এই ছোটো কথাটিও কারোর বুদ্ধিতে আসে না। এই
নাটকের অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে তোমরা বাচ্চারাই জানো। এটা হল বিশ্ববিদ্যালয়,
তাই না! পবিত্র হয়ে বাবাকে স্মরণ করার পড়া বাবা পড়াচ্ছেন। এই কথাটি কোনদিন
ভেবেছিলে যে, বাবা এসে এরকম পতিত থেকে পবিত্র করার পড়া আমাদের পড়াবেন! এই পড়াশোনা
করেই আমরা বিশ্বের মালিক তৈরি হবো! ভক্তিমার্গের গ্রন্থগুলি আলাদা রকমের, এগুলোকে
পড়াশোনা বলা যায় না। জ্ঞান ছাড়া সদ্গতি কিভাবে হবে? বাবা ছাড়া জ্ঞান কোথা থেকে
আসবে, যার দ্বারা তোমাদের সদ্গতি হবে? যখন তোমাদের সদ্গতি হবে, তখন কি তোমরা ভক্তি
করবে? না। সেখানে থাকবেই অপার সুখ। তাই ভক্তি কি জন্য করবে! এখানকার জ্ঞান এখনই
তোমরা প্রাপ্ত করো। সমস্ত জ্ঞান আত্মার মধ্যে থাকে। আত্মার কোন ধর্ম হয় না। আত্মা
যখন শরীর ধারণ করে তখন বলে অমুক ব্যক্তি এই ধর্মের। আত্মার ধর্ম কি? এক তো, আত্মা
হলো বিন্দু স্বরূপ আর শান্ত স্বরূপ, শান্তিধামে থাকে।
এখন বাবা তোমাদের বোঝাচ্ছেন যে, সমস্ত বাচ্চাদের-ই বাবার উপর সমান অধিকার আছে। অনেক
বাচ্চা আছে, যারা অন্য অন্য ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে গেছে, তারাও আবার সেখান থেকে
বেরিয়ে এসে তাদের নিজের আসল ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। যারা দেবী-দেবতা ধর্মকে
ছেড়ে অন্য ধর্মে চলে গেছে, তারা পুনরায় তাদের নিজেদের আসল ধর্মে ফিরে আসবে। তোমরা
প্রথমে প্রথমে বাবার পরিচয় দাও। এই কথাটিতেই সবাই বিভ্রান্ত হয়ে আছে। বাচ্চারা,
তোমরা বোঝাও যে, এখন আমাদেরকে কে পড়াচ্ছেন? অসীম জগতের বাবা। কৃষ্ণ তো হলেন দেহধারী।
এঁনাকে অর্থাৎ ব্রহ্মা বাবাকে দাদা বলা হয়। তোমরা সবাই ভাই-ভাই হলে, তাইনা! বাকি
সবকিছুই নির্ভর করছে তোমাদের স্থিতির উপর। ভাইয়ের শরীর কেমন আছে, বোনের শরীর কেমন
আছে। আত্মা হলো একটা ছোট্ট তারার মতো। এত সব জ্ঞান একটা ছোট তারার মধ্যেই আছে।
তারা(star), শরীর ছাড়া কথা বলতে পারে না। তারা-কে (আত্মা) নিজের চরিত্রে অভিনয়
করার জন্য অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রাপ্ত হয়। তোমাদের, অর্থাৎ তারাদের (stars) জগত হলো
একদম আলাদা। আত্মা এখানে এসে পুনরায় শরীর ধারণ করে। শরীর ছোট কিংবা বড় হয়।
আত্মাই নিজের বাবাকে স্মরণ করতে থাকে। তাও আবার, যতক্ষণ শরীরের মধ্যে থাকে। ঘরের
মধ্যে কি আত্মা বাবাকে স্মরণ করবে? না। সেখানে কিছুই মনে থাকবেনা। আমি কোথায় আছি?
আত্মা আর পরমাত্মা দুজনেই যখন শরীর ধারণ করে তখনই আত্মাদের সঙ্গে পরমাত্মার মিলন
মেলা হয়ে থাকে। গীতও আছে যে, আত্মা আর পরমাত্মা আলাদা ছিল বহু সময়.....। কত সময়
আলাদা ছিল? স্মরণে আছে কতটা সময় তোমরা এক পরস্পরের থেকে আলাদা ছিলে? এক সেকেন্ড এক
সেকেন্ড করে ৫ হাজার বছর অতীত হয়ে গেছে। আবার পুনরায় প্রথম নম্বর থেকে শুরু হবে।
এটা হলো একদম নির্ভুল হিসাব। এখন যদি তোমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে যে তিনি কবে জন্ম
নিয়েছেন, তাহলে তোমরা নির্ভুল উত্তর দিতে পারবে। শ্রীকৃষ্ণই প্রথম নম্বরে জন্ম
নিয়েছেন। শিববাবার তো কোন মিনিট, সেকেন্ড বের করা যায় না। কৃষ্ণের জন্মতিথি,
তারিখ, মিনিট, সেকেন্ড বের করা সম্ভব। মানুষের ঘড়িতে হয়তো কখনো কখনো নির্দিষ্ট
সময়ের আগুপিছু হতে পারে, কিন্তু শিব বাবার অবতরণের সময় কাল একদম নির্ভুল হয়। জানা
যায় না যে তিনি কখন এসেছেন? এরকম নয় যে, সাক্ষাৎকার হয়েছে, তবেই তিনি এসেছেন। না।
অনুমান করা যেতে পারে। মিনিট, সেকেন্ডের হিসাব বলা সম্ভব নয়। তার অবতরণ হল অলৌকিক
ঘটনা। তিনি আসেনই অসীম জগতের রাত্রিকালে। বাকি অন্য যাদের অবতরণ হয়, তাদের বিষয়ে
সমস্ত তথ্য জানা সম্ভব। আত্মা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। প্রথমে ছোট শরীর ধারণ করে।
তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শরীরের সাথে সাথে আত্মাও ভূমিষ্ঠ হয়। এই সমস্ত
কথাগুলিকে বিচার সাগর মন্থন করে পুনরায় অন্যদেরকে বোঝাতে হবে। এই জগতে অনেক মানুষ
আছে কিন্তু কারোরই এক পরস্পরের সঙ্গে চরিত্রের মিল নেই। এই রঙ্গমঞ্চ হল অনেক বড় ।
যেরকম বড় বড় হলঘর হয়, যেখানে অসীম জগতের নাটক পরিচালিত হয়।
বাচ্চারা, তোমরা এখানে এসেছো নর থেকে নারায়ণ হওয়ার জন্য, বাবা যে নতুন জগতের রচনা
করেন, সেখানে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ নেওয়ার জন্য। বাকি এই যে পুরনো জগত আছে, সেটাতো বিনাশ
হয়ে যাবে। বাবার দ্বারা নতুন জগতের স্থাপনা হচ্ছে। বাবাকে পুনরায় পালনাও করতে হয়।
যখন এই শরীর ছেড়ে সত্যযুগের নতুন শরীর ধারণ করবে তখনই তোমাদের পালনা দেবেন। তার আগে
এই পুরনো জগতের বিনাশ তো অবশ্যই হতে হবে। খড়ের গাদায় আগুন তো লাগবেই। কেবলমাত্র
এই ভারতবর্ষই থাকবে। বাকি সমস্ত দেশ জলের তলায় চলে যাবে। ভারতবর্ষেরও খুব অল্প অংশ
থাকবে। তোমরা এখন খুব পরিশ্রম করছো, যেন বিনাশের পর তোমাদের শাস্তি না খেতে হয়,
সেজন্য। আর যদি কুকর্ম বিনাশ না হয়, তাহলে শাস্তি তো খেতেই হবে আর শ্রেষ্ঠ পদও
তোমরা পাবে না। তোমাদেরকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে, তোমরা কার কাছে যাও ? তখন বলবে,
শিব বাবার কাছে, যিনি ব্রহ্মার শরীরে এসেছেন। এই ব্রহ্মা কোনো শিব নয়। বাবাকে জানলে
বাবার প্রতি ভালবাসাও থাকবে। বাবা বলেন, "বাচ্চারা - তোমরা অন্য কোনো দেহধারীর প্রতি
ভালোবাসা রেখো না, সকল দেহধারীর প্রতি ভালোবাসাকে (প্রীতি রাখো) চূর্ণ করে এক বাবার
সঙ্গে ভালোবাসা বজায় রাখো।* যেরকম প্রেমিক-প্রেমিকা হয়, এটাও সেই রকম। ১০৮ জন
প্রেমিকা স্বচ্ছ হৃদয় দিয়ে বাবাকে ভালোবাসে, তার মধ্যেও আটজন হল অত্যন্ত স্বচ্ছ
হৃদয়যুক্ত প্রেমিকা। ৮ দানারও মালা হয়। ৯ রত্নের প্রচলন আছে। ৮ রত্ন আর নয় নম্বর
হলো বাবা। মুখ্য হলো আট দেবতারা। তারপর ১৬১০৮ রাজা-রানীর কুটুম্ব হয়, ত্রেতার অন্ত
পর্যন্ত। বাবা তো হাতের উপর স্বর্গ দেখিয়েছেন। বাচ্চারা তোমাদের এই কারণে নেশা হওয়া
উচিত যে, তোমরা সৃষ্টির মালিক হতে চলেছো। বাবার সাথে এইরকম ব্যবসা করতে হবে। কথিত
আছে কোন ধনী ব্যবসায়ীই এই ব্যবসা করতে পারে। এরকম কোনো ব্যবসা আছে কি ? তাই
বাচ্চারা, তোমরা এখন খুশিতে থাকো কারণ তোমরা বাবার কাছে এসেছো। সবার উপরে থাকেন বাবা।
এই জগতের কারোরই এই বিষয়ে কিছুই জানা নেই। তারা বলে যে, তিনি তো অন্ত সময়ে আসবেন।
এখন এটাই হলো কলিযুগের অন্ত সময়, সেই গীতা মহাভারতের সময়, সেই যাদব বর্গ যারা
মিসাইল তৈরি করেছিলেন, সেই কৌরবের রাজ্য আর তোমরা হলে পাণ্ডব ।
তোমরা এখন ঘরে বসে নিজের উপার্জন করছো। ঘরে বসেই ভগবানকে পেয়ে গেছো। এজন্য বাবা
বলেন যে যতটা সম্ভব নিজে উপার্জন করে নাও। এই জীবন হলো হীরার মত মূল্যবান, এখন একে
কড়িতে বদলে হারিয়ে ফেলো না। এখন তোমরা এই সমগ্র জগতকে রামরাজ্য তৈরি করছো। তোমরা
এখন শিব বাবার থেকে শক্তি প্রাপ্ত করছো। এখন তো অনেকের অকালে মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে।
বাবা বুদ্ধির তালা খুলে দেন, আর মায়া বুদ্ধির তালা বন্ধ করে দেয়। এখন মাতারা,
তোমরাই জ্ঞানের কলস প্রাপ্ত করেছো। অবলাদের শক্তি প্রদানকারী হলেন তিনি। এটাই হল
জ্ঞান অমৃত। শাস্ত্রের জ্ঞানকে কোনো অমৃত বলা হয়না। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
কেবলমাত্র এক বাবার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সুগন্ধি ফুল হতে হবে। নিজের মিষ্টি বাবাকে
স্মরণ করে দেহ-অভিমানের কন্টককে পুড়িয়ে দিতে হবে।
২ ) এই হিরে সম জন্মে অবিনাশী উপার্জন জমা করতে হবে। কড়িতে রূপান্তরিত করে একে
হারিয়ে ফেলো না। এক বাবাকেই স্বচ্ছ হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হবে। একজনের সঙ্গেই থাকতে
হবে।
বরদান:-
পুরানো স্বভাব সংস্কারের বোঝা গুলিকে সমাপ্ত করে ডবল লাইট ফরিস্তা ভব
যখন বাবার হয়ে গেছো,
তো সমস্ত বোঝা বাবাকে দিয়ে দাও। পুরানো সংস্কারের অল্প একটু বোঝাও যেন পড়ে না থাকে,
তা না হলে উপর থেকে নিচে পড়ে যাবে। উড়তি কলার অনুভব করতে পারবে না। এইজন্য বাপ-দাদা
বলেন যে, "সবকিছুই আমাকে দিয়ে দাও।" এইসব হল রাবণের সম্পত্তি, নিজেদের কাছে রাখলে
দুঃখই পাবে। অর্থাৎ অল্প একটুও যেন রাবণের সম্পত্তি কিছু না থাকে। সমস্ত পুরানো খাতা
সমাপ্ত করো, তখন বলা যাবে ডবল লাইট ফরিস্তা।
স্লোগান:-
নির্ভয় আর হর্ষিতমুখ হয়ে অসীম জগতের খেলাগুলিকে দেখো, তো দোলাচলের মধ্যে আসবে না।