১৭-০১-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - আনন্দে তোমাদের রোমাঞ্চিত হওয়া হওয়া উচিত- এমনই মিষ্টি বাবাকে পেয়েছো তোমরা, যার না আছে কোনও চাহিদা উপরন্তু মহান দাতা আর বদলে সামান্যতম কিছু পাবার আশা-আকাঙ্খাও রাখেন না
প্রশ্ন:-
বাবার আশ্চর্যজনক পার্ট কি ? ১০০% শতাংশ নিষ্কামী বাবা কোন্ কামনায় আসেন এই সৃষ্টি-জগতে ?
উত্তর:-
বাবার আশ্চর্যজনক পার্ট হলো বাচ্চাদেরকে জ্ঞানের পাঠ পড়ানো ও সেবা-শুশ্রূষা এবং পালন করতেই ওঁনার আসা। কত আদরের সুরে এত মিষ্টি করে বলেন-"মিষ্টি বাচ্চারা, অমুক কাজটা করো।" এত অমূল্য জ্ঞান-রত্ন শোনান, বদলে সামান্য কিছুও নেন না। ১০০% শতাংশ নিষ্কামী বাবার একটাই কামনা- "আমি গিয়ে বাচ্চাদেরকে সঠিক দিশা জানাবো। সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের খবরা-খবর শোনাব। যাতে বাচ্চারা গুণবান হতে পারে....", এটাই বাবার কামনা।
ওঁম্ শান্তি!
মিষ্টি-মিষ্টি ঈশ্বরীয় বাচ্চারা, তোমরা এমন ঈশ্বরীয় পিতা পেয়েছে, যিনি কোনও কিছুই নেন না, কিছুই খান না পান করেন না। বাবার না আছে কোনও আশা-আকাঙ্খা, না আছে কোনও চাহিদা। অথচ, মনুষ্য মাত্রই কোনও না কোনও আশা-চাহিদা অবশ্যই থাকে। কেউ চায় ধনবান হতে, কেউ অন্য কিছু হতে। কিন্তু বাবার যে আশা-আকাঙ্খাই নেই, উনি অভোক্তা। এক সাধু বলতেন-"আমিও কিছু খান-পান করি না।" বাবাকে নকল করত। সমগ্র বিশ্বে একমাত্র এই বাবা- যিনি কিছুই নেন না। বাচ্চাদের তা লক্ষ্য রাখা উচিত, কেমন বাবার বাচ্চা তোমরা। কিভাবে বাবা এসে ওঁনার শরীরে প্রবেশ করেন। ওঁনার নিজের আশা-আকাঙ্খা বা চাহিদা নেই। উনি নিজে গুপ্ত। ওঁনার জীবন কাহিনী ও কর্ম-কর্তব্য কেবল তোমরা বাচ্চারাই জানো। এই বাচ্চাদের মধ্যেও আবার অল্প সংখ্যকই সম্পূর্ণ রীতিতে বাবাকে জানে। তোমাদের হৃদয়ে এই ভাব আসা উচিত - সত্যি, এমন বাবার সান্নিধ্য পেয়েছি, যিনি না তো কিছু খান বা পান করেন, না কিছু নেন। বাস্তবে, কোনও কিছুরই যে প্রয়োজন নেই ওঁনার। এমনটা আর কারও ক্ষেত্রেই হয় না। একমাত্র এই নিরাকার যিনি উচ্চতমেরও উচ্চে অর্থাৎ "ভগবান"। তাই একমাত্র ওঁনাকেই স্মরণ করে সকলে। উনি যেমন 'অভোক্তা-বাবা', তেমনি 'অভোক্তা-টিচার', তেমনি আবার 'অভোক্তা-সদগুরু'ও বটে। কিছুই নেন না তিনি, নিয়ে তা করবেনই বা কি? সত্যি খুব আশ্চর্য জনক বাবা উনি। নিজের কোনও আশা-আকাঙ্খা নেই। যা কোনও মানুষেরই হয় না। মানুষের তো খাদ্য-বস্ত্র ইত্যাদি অনেক কিছুরই প্রয়োজন, কিন্তু বাবা বলেন-"আমার কোনও কিছুরই প্রয়োজন নেই। আমাকে ডাকো তাই আসি পতিতদের পবিত্র বানাবার জন্য। আমি নিরাকার। কারও কোনও কিছুই নিই না আমি। আমি কেবল এনার(ব্রহ্মার) শরীরে প্রবেশ করি। যাখান-পান তা তো এনার আত্মাই করে। আমার আত্মার কোনও আশা-আকাঙ্খাও নেই। আমি আসি কেবলমাত্র আমার কর্ম-কর্তব্য ও সেবা করতে।" ভাববার মতন কথা, কি রমনীয় আশ্চর্যের খেলা এটা। এত সন্তানের একমাত্র বাবা, যিনি আবার সবারই প্রিয়। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র আশা-আকঙ্খা নেই। কেবলমাত্র এসে বাচ্চাদেরকে জ্ঞানের পাঠ পড়ান, সাথে পালনও করেন। আদরের সুরে বলেন-"মিষ্টি বাচ্চারা অমুকটা করো।" এত অমূল্য জ্ঞানের পাঠ পড়ান উনি। যার জন্য কিছুই নেন না উনি। যেহেতু 'করন-করাবনহার-বাবা' উনি।
শিববাবার উদ্দেশ্যে কিছু দিয়ে যদি ভাবো, উনি তা দিয়ে কি বা করবেন, উনি কি টোলী বানিয়ে খাবেন? কিন্তু শিববাবার শরীরই তো নেই, কিছু খাবেই বা কি ভাবে ? কিন্তু দেখো কত প্রকারের সেবা করতে থাকেন উনি। সবাইকে কত ভালো ভালো শ্রীমৎ প্রদান করে কত সুন্দর ফুলের মতন মানব করে গড়ে তোলেন উনি। বাচ্চারা, এটা খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। বাবা স্বয়ং দাতা। এমনই মহান দাতা উনি, যার নিজের কোনও আশা-আকাঙ্খা থাকে না। যদিও এ বিষয়ে ব্রহ্মার অবশ্য যোগসূত্র আছে, যেহেতু এত অনেক বি.কে.-র লালন-পালন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হয় ওনাকেই, যদিও অর্থ-কড়ি যা কিছুই আসে, তা শিববাবার উদ্দেশ্যেই আসে। ব্রহ্মাবাবার যা কিছু ছিল সবই এই রুদ্র যজ্ঞে স্বাহা করে দিয়েছেন উনি। বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চলে ভবিষ্যতের লক্ষ্যে নিজের সবকিছু এভাবেই সফল করেছেন উনি। বাবা ১০০% শতাংশই নিষ্কামী। ওঁনার আগ্রহ, কিভাবে বাচ্চাদেরকে সঠিক দিশা দেখানো যায়, এখানে পৌঁছে কতক্ষণে বাচ্চাদেরকে আদি-মধ্য-অন্তের বিস্তারিত তথ্যগুলি জানাবেন, যা সবারই অজানা। যা একমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই তা জানো। এই যে বাবা যে টিচার রূপে তোমাদের পড়ান, এর জন্য উনি কোনও বেতন-ভাতাও নেন না। এছাড়া শিববাবার উদ্দেশ্যে যা আসে, তা তো বাচ্চারাই নিয়ে থাকে। অর্থাৎ তা তোমাদের রিটার্ন -গিফ্ট। বাবার মনে কেবলই এই ইচ্ছা- বাচ্চারা যেন 'নর থেকে নারায়ণ'-এমন ভাবে গড়ে ওঠে! তাই তো ড্রামা অনুসারে তেমন ভাবেই তোমাদেরকে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ান। ওঁনার নিজের উচ্চাসনের জন্য কোনও উচ্চশা নেই। সব কিছুই নির্ভর করে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ে দৈবী-গুণ ধারণের উপর। তার সাথে অবশ্যই কর্তব্য অন্যদেরকেও তেমনি করে গড়ে তোলা। বাবা কেবল সাক্ষী হয়ে দেখতেই থাকেন, ড্রামা অনুসারে কল্প পূর্বে যে যেমন পার্ট করেছিল, সে তেমনই করে চলেছে৷ বাচ্চাদের বাবা তাই বলেন - তোমরা কেবল সাক্ষী হয়ে সবকিছু দেখতে থাকো, আর নিজেরা মনোযোগ সহকারে পঠন-পাঠন করতে থাকো। লক্ষ্য রাখবে, নিজে পুরোপুরি শ্রীমৎ অনুসারে চলছো কিনা। অন্যদেরকেও নিজের মতন করে গড়ে তোলার সেবা সঠিক ভাবে করতে পারছো কিনা। এসব কিছু বাবা বলছেন ব্রহ্মার মুখ-মণ্ডলকে লোন নিয়ে। আত্মা চৈতন্য স্বরূপ। মৃত-ব্যক্তি তো আর কথা বলতে পারে না। তাই তিনি অবশ্যই কোনও চৈতণ্যের মধ্যেই আসবেন। বাবা নিষ্কামী, কোনও আশা-আকাঙ্খাই নেই ওঁনার। লৌকিক বাবারা ভাবে, আমার বাচ্চা বড় হয়ে আমার দেখাশোনা করবে, খাওয়াবে-দাওয়াবে, কিন্তু এই পারলৌকিক বাবার কোনও আশা-আকাঙ্খাই নেই। ইনি জানেন, ড্রামার চিত্রপট অনুসারে ওঁনাকে আসতেই হবে, বাচ্চাদেরকে জ্ঞানের পাঠ পড়াতে হবে। এসবই যে পূর্ব নির্ধারিত। লোকেরা এই অবিনাশী ড্রামার বিষয়ে কিছুই জানে না। কিন্তু বি.কে.-দের তা নিশ্চয় আছে, বাবা স্বয়ং বি.কে.-দেরকে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ান। বি.কে.দের সাথে সাথে ব্রহ্মাবাবাও তা পড়তে থাকেন। তিনিই সবচেয়ে মনোযোগী হয়ে এই পাঠ পড়েন। তাই তিনিই শিববাবার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী।
বাবা বলেন - আমার কাছে তো কোনও স্থুল ধন-সম্পদ থাকে না। বাচ্চারা তোমরাই তা দাও আবার তোমরাই নাও। এখন দু'মুঠো দিলে তার বদলে ভবিষ্যতে অনেক প্রাপ্তি। আর যে দেয় না সে পায়ও না। এছাড়া জ্ঞানের পাঠে যে মনোযোগী, সে হয় উচ্চ পদের অধিকারী। যদিও তা সংখ্যায় অনেক কম, যারা মনে করে আমরা আগামী নতুন দুনিয়ার জন্য এই পাঠ পড়ছি। একথা স্মরণে থাকা মানেই 'মন্মনা ভব'! কিন্তু বেশীর ভাগই যারা এই পার্থিব দুনিয়ায় নানা কারণেই সময়ের অপচয় করে। কত উন্নত এই পাঠ পড়াচ্ছেন বাবা, কিভাবে এবং কেনই বা তা পড়াচ্ছেন, কত উন্নত পদ পেতে হবে আমাকে, এসব কিছুই ভুলে যায় তারা। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটিতেই সময় নষ্ট করে। উঁচু ক্লাসের বিদ্যার্থীরা কখনই নিজেদের সময়ের অপচয় করে না। তারা যেমন মনোযোগ সহকারে পাঠ পড়ে তেমনি শ্রীমৎ অনুসারেও চলে। শ্রীমৎ অনুসারে অবশ্যই চলতে হবে যে। যারা তা চলে না, এমন অবাধ্য বাচ্চাদের বাবা বলেন- "শ্রীমৎ দেওয়া হয়, বাবাকে স্মরণ করতে বলা হয়, তবুও তোমরা ভুলে যাও কি করে? এটাই তোমাদের দুর্বলতা। মায়া তোমার নাক-কানমোলা দিয়ে, তোমার মাথার উপরে বসে তোমাকেই যে দংশাতে থাকে। একেই (সংকেতে)বলা হয় যুদ্ধের ময়দান। অনেক ভাল ভাল বাচ্চাকেও এভাবে পরাজিত করে মায়া। কিন্তু তখন কার নাম বদনাম হয় ? অবশ্যই তা শিববাবার। প্রবাদ আছে - যার দ্বারা গুরুর নিন্দা হয়, সে আর কোথাও স্থান পায় না। যারা মায়ার কাছে পরাজিত হয়, তারা কোথাও স্থান পাবে কীভাবে । নিজের কল্যাণের জন্য এসব বুদ্ধিতে ধারণ করতে হবে অবশ্যই আর ভাবতে হবে কতটা পুরুষার্থ করলে বাবার থেকে ওয়ারিশনের অশীর্বাদী-বর্সা পাওয়া যাবে। বড়-বড় মহারথীদের মতন তৈরী হয়ে, অন্যদেরও দিশা দেখাও। সেবার নিমিত্তে বাবা কত সহজ সব যুক্তিও বলে দেন। বাবা বলেন - "এতদিন তোমরা আমাকে ডেকেছো, এখন আমি তোমাদের বলছি - আমাকে স্মরণ করলেই তোমরা পবিত্র হবে।" পবিত্র দুনিয়ার চিত্র তো রয়েছেই তোমাদের সামনে। এটাই মুখ্য বিষয়। সেটাই লক্ষ্য ও অভিপ্রায় তোমাদের। এমন নয় যে ডাক্তারি পড়তে হলে ডাক্তারকে স্মরণ করতে হবে। ব্যারিস্টারী পড়তে হলে ব্যারিস্টারকে স্মরণ করতে হবে। বাবা বলেন, একমাত্র আমাকেই স্মরণ করো, আমিই তোমাদের সব মনঃকামনা পূর্ণ করে দিই । কেবল আমাকে স্মরণ করলেই হবে। যদিও মায়া খুবই বাধার সৃষ্টি করবে, এটাও যে এক ধরনের যুদ্ধ। আর এমন নয় যে মুহূর্তেই জিতে গেলে। এযাবৎ কেউই মায়ার সাথে যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি। সেই বিজয় পেলে তো জগৎজীত হয়ে যাবে। লোকেরা গীত গায়- "গোলাম আমি, আমি তো তোমার গোলাম..... ।" কিন্তু এখানে তো মায়াকেই গোলাম বানাতে হয়। সেখানে মায়ার দুঃখ দেবার প্রশ্নই নেই। বর্তমানের দুনিয়াটাই যে অতি নোংরা। একে অপরকে দুঃখকষ্ট দিতেই ব্যস্ত। কিন্তু এই বাবা কতই না মিষ্ট স্বভাবের, যার নিজের জন্য কোনও আশা-আকাঙ্খাই রাখেন না। এমন বাবাকেও কেন তোমরা স্মরণ করো না। কেউ কেউ আবার বলে- "আমি কেবল শিববাবাকেই শ্রদ্ধা করি, কিন্তু ব্রহ্মাবাবাকে নয়।" কিন্তু এনারা দু'জন তো একত্রিত। কেনা-বেচার মাঝে দালাল না থাকলে ব্যাবসা চলবে কিভাবে? ব্রহ্মাবাবার শরীর শিববাবার রথ, যার নাম 'ভাগ্যশালী-রথ' বা 'ভাগীরথ'! তোমরা এও জানো যে, এটিই নম্বর ওয়ান রথ, যার স্থান সর্বোচ্চে। যেমন ক্লাসে মনিটরকে ছাত্রেরা সবাই মান দেয়। তেমনি এই ব্রহ্মাও বাবার এক-নম্বর হারানিধি বাচ্চা। তেমনি সেখানেও সব রাজারা এনাকেই (শ্রীনারায়ণকে) সম্মান জানাবেন। এই বোধ এলে, তখন সম্মান জানাবার বুদ্ধি আসবে ৷ এখানে ওনাকে সম্মান দেখাবার সংস্কার থাকলে তবেই তো ওখানেও তা থাকবে। আর তা না থাকলে, প্রাপ্তিই বা হবে কি প্রকারে। এমন কি তা না থাকলে, শিববাবাকেও যে স্মরণ করতে পারবে না। যেখানে বাবা বারবার জানাচ্ছেন, স্মরণের যোগের মাধ্যমেই তোমরা ভব-সাগর পার হতে পারবে। সেখানেই যে তোমাদের অসীম-বেহদের রাজ্য-ভাগ্য। অতএব এমন বাবাকে কত অধিক মনোযোগ সহকারে স্মরণ করা উচিত। তোমাদের অন্তরের মণিকোঠায় এঁনার জন্য কত অধিক প্রেম থাকা দরকার। ব্রহ্মাবাবাকেই দেখো, বাবার সাথে ওনার কত গভীর ভালবাসা। ভালবাসা থাকলেই তো 'সোনার-পাত্র' (আধার) হতে পারবে। এমন সোনার আধারের বাচ্চাদের চাল-চলনও হয় তেমনি ফাস্ট ক্লাস। অবিনাশী ড্রামার চিত্রপট অনুসারে রাজধানী স্থাপনের কার্য চলছে, সেখানেও তো বিভিন্ন (পদের) প্রকারের প্রয়োজন।
বাবা বোঝাচ্ছেন- "বাচ্চারা, কখনও যেন তোমাদের মনে ক্রোধ না আসে। সেবা-কার্য যদি সঠিক ভাবে না করো, তবে তোমাদের এই অমূল্য সময় কেবল অপচয় হবে। শিববাবার এই রুদ্র যজ্ঞের সেবা না করলে, তোমরা পাবেই বা কি ? যারা সেবাধারী বাচ্চা, উচ্চ পদের অধিকারী কেবল তারাই হয়। নিজের কল্যাণ করার জন্য তোমার নিজেরই তাতে আগ্রহ থাকতে হবে। তা না হলে নিজেই নিজের পদ-ভ্রষ্ট হবে। যেমন ছাত্র মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করলে টিচার খুশী হয়। ভাবে, এই ছাত্রের দ্বারা আমার সুনাম হবে। তাই ছাত্রকে পুরস্কৃতও করে। ফলে পিতা, টিচার ইত্যাদি সবাই খুশী হয়। ভাল স্বভাবের সুপুত্রের জন্য মা-বাবাও অনেক ত্যাগ স্বীকার করে। বাচ্চা খুব ভাল সেবা করলে, তা শুনে বাবা খুশী হয়। আর যে বাচ্চা অনেকের সেবা করে, তার তেমন খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়ে, উচ্চ-পদও প্রাপ্তি হয়। যে বাচ্চা রাতদিন কেবল সেবার কথাই ভাবতে থাকে, খাওয়া দাওয়ার কথাও মনে থাকে না তার। বোঝাতে বোঝাতে গলা শুকিয়ে যায়। এমনই হারানিধি সেবাধারী বাচ্চারাই উঁচু পদের দাবীদার। এছাড়া এই প্রপ্তি যে ২১-জন্মের প্রাপ্তি, তাও আবার কল্প-কল্প ধরে। যখন ফল প্রকাশ হবে তখনই সবাই তা বুঝতে পারবে, কে কেমন সেবা করেছে, কতজনকে দিশা দেখিয়েছে। এর জন্য স্বভাব-চরিত্র সংশোধনেরও প্রয়োজন, যে হিসাবে তাদের পদ-প্রাপ্তিও হয়।কেউ "মহারথী"(হাতীর পিঠে আসীন) , কেউ "অশ্বারোহী" কেউ বা "পদাতিক" সৈন্য। যারা তেমন সেবা-কার্য করে না, তারা নিজেদেরকে পদাতিক ভাববে। এমন ভাবার কারণ নেই যে, তুমি ভাববে, আমি তো ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করেছি, সুতরাং আমি তো উঁচু পদই পাবো, এই ধারণা একেবারেই ভুল। সবকিছুই নির্ভর করছে সেবা আর জ্ঞানের পাঠের উপর।
বাবা তো কতভাবেই বোঝাতে থাকেন - বাচ্চারা, মনোযোগ সহকারে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ে উঁচু পদ লাভ করো। কল্প কল্পের জন্য নিজের এমন ক্ষতি করো না। যদিও বাবা তা বুঝতে পারেন, কোন্ বাচ্চা নিজের ক্ষতি করে চলেছে, যা সে নিজে বুঝতে পারছে না। সে এই খুশীতেই থাকে, সে যখন টাকা-পয়সা দিয়েছে, মালার সামনের সারিতেই স্থান হবে তার। টাকা-পয়সা যা কিছুই দাও না কেন, জ্ঞান ধারণ না করলে, যোগের অভ্যাসে অভ্যাসী হতে না পারলে - তুমি কোনও কাজের নও। তোমার মধ্যে যদি দয়া-ক্ষমা ভাব না থাকে, তবে আর বাবাকে কি বা অনুসরণ করলে। বাবা তো এসেছেন বাচ্চাদেরকে শ্রীমতের অলংকারে অলংকৃত করতে। যে বাচ্চা অনেককে বাবার জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পারে, বাবাও তাকে অনেক কিছুই সমর্পণ করেন। স্থূল সেবাও তো অনেক প্রকার। ভাণ্ডারের সেবাধারীদের অনেক মহিমা করেন বাবা, এছাড়াও অনেক আত্মার আশীর্বাদও পায় তারা। যে যতটা সেবা করে, ততটাই সে নিজের কল্যাণই করে। হাড়-মাস এক করেও অনেকে এই সেবা করে। পুণ্যার্জন তো নিজেরই হয়। তারা মনেপ্রাণে হৃদয় দিয়েই সেই সেবা করে। আর যে খিচ্-খিচ্ করে, সে তার নিজের ভাগ্যকেই খারাপ করে। যার মধ্যে লোভ থাকে, এসব তারাই করে। তোমাদের সবারই এখন বানপ্রস্থ অবস্থা। তাই সবাইকেই বাণী (কথাবার্তা) বলা থেকে বিরত থাকতে হয়। প্রত্যেকেরই নিজের কাছ থেকে নিজের জেনে নেওয়া উচিত, দিনভর আমি কতটা সেবা করতে পেরেছি। এমনও অনেক বাচ্চা আছে, যে সেবা করতে না পারলে মনে স্বস্তি পায় না। কারও কারও উপর আবার গ্রহের প্রকোপ পড়ে, বুদ্ধি ও জ্ঞানের পাঠ গ্রহনের উপর। বাবা তো সবাইকে একই সমান পড়ান, কিন্তু বুদ্ধি এক-একজনের এক-একরকম। তবুও পুরুষার্থ তো সবাইকেই করতে হবে। তা না হলে কল্প-কল্প ধরে এমনই পদের প্রাপ্তি হতে থাকবে। পরে যখন ফল প্রকাশ হবে, সব কিছুরই সাক্ষাৎকার হবে তখন। সাক্ষাৎকারের পরেই সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শাস্ত্রেও আছে, অন্তিমকাল এমন আফসোসের হয়, ভাবে কেন যে এভাবে সময়ের অপচয় করলাম। এভাবেই কল্প-কল্পান্তর ধরে ধোঁকা খেয়ে আসছো। তাই বাবা ক্রমাগত সতর্ক করতে থাকেন। শিববাবার তো কেবল এই আকাঙ্খা যে, বাচ্চারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে উঁচু পদের দাবীদার হোক। এছাড়া আর কিছুই চান না উনি। জাগতিক কোনও কিছুই ওঁনার প্রয়োজনে লাগে না। বাবা বোঝাচ্ছেন- বাচ্চারা, অন্তর্মুখী হও। এই দুনিয়া যেখানে বহির্মুখী, সেখানে তোমাদের হতে হবে অন্তর্মুখী। নিজের অবস্থাকে উপলব্ধি করে নিজেই নিজেকে সংশোধিত করার পুরুষার্থ করতে হবে। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. সাক্ষী হয়ে নিজেই নিজের পার্টকে দেখো - আমি খুব মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করে অপরকেও তেমনি ভাবে পড়াতে পারছি কি না ? অন্যকেও নিজের মতন করে গড়ে তোলার সেবা করতে পারছি কি না ? জাগতিক কথাবার্তায় নিজের এই অমূল্য সময়কে অপচয় কোরো না।
২. অন্তর্মুখী হয়ে নিজেই নিজেকে সংশোধিত করতে হবে। নিজের কল্যাণের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। সেবার মধ্যেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। বাবার মতন দয়াবান ও ক্ষমাশীল হতে হবে অবশ্যই।
বরদান:-
সফল করার বিধিতে সফলতার বরদান প্রাপ্তকারী বরদানের প্রতিমূর্তি ভব
সঙ্গমযুগের বাচ্চাদের জন্য আশীর্বাদী-বর্সার সাথে সাথে এই বরদানও প্রাপ্তি হয়- "সফল করো আর সফলতা পাও"! সফল করা হলো 'বীজ' আর সফলতা তার 'ফল'। বীজ যদি ভাল হয়, ফল পাওয়া যাবে না, এমনটা হতেই পারে না। ঠিক যেমন অন্যকেও বলে থাকো - সময়, সংকল্প, সম্পত্তি সবকিছুই সফল করো। একই ভাবে নিজেরও রত্ন-ভাণ্ডারের (খাজানার) লিস্টকে চেক করে দেখো, কোন্ রত্ন সফল হলো আর কোনটা ব্যর্থ। এইভাবে সফল করতে থাকলে সর্বপ্রকার রত্ন-ভাণ্ডারে সম্পন্ন হয়ে বরদানী মূঢ়ত হতে পারবে।
স্লোগান:-
পরমাত্ম পুরস্কার পেতে চাইলে ব্যর্থ আর নেগেটিভকে বর্জন করো।