০৭-০৭-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ২৬-১২-৮৪ মধুবন
সত্যতার শক্তি
আজ সর্বশক্তিমান বাবা দুই সত্ত্বাকে বিশেষভাবে দেখছেন l এক, রাজ্য সত্ত্বা, দুই, ঈশ্বরীয় সত্ত্বা l উভয় সত্ত্বার এখন সঙ্গমযুগে বিশেষ পার্ট চলছে l রাজ্য সত্ত্বা অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে l ঈশ্বরীয় সত্ত্বা সদা অনড় অবিনাশী l ঈশ্বরীয় সত্ত্বাকে সত্যতার শক্তি বলা হয়, কারণ যিঁনি দেন তিনি সত্য বাবা, সত্য শিক্ষক, সদগুরু l সেইজন্য সত্যতার শক্তি সদা শ্রেষ্ঠ l তোমরা সত্যতার শক্তি দ্বারা সত্যযুগ, সত্যভূমি স্থাপন করেছ l সত্যের অর্থ অবিনাশীও l সুতরাং সত্যতার শক্তি দ্বারা তোমরা অবিনাশী উত্তরাধিকার লাভ কর l এই একটা পাঠ তোমাদের অবিনাশী পদ প্রাপ্ত করতে সমর্থ বানায়, যার জন্য তোমরা অবিনাশী বরদান প্রাপ্ত করেছ l কেউ এই প্রাপ্তি তোমাদের থেকে নিতে পারে না l যাদের সত্যতার শক্তি আছে, সারা বিশ্ব ভক্তিমার্গের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের অবিনাশী গায়ন এবং পূজন করে আসছে, এর অর্থ তোমাদের গায়ন এবং পূজনও অবিনাশী সত্য হয়ে যায় l সত্য অর্থাৎ নিত্য সত্য l সুতরাং সবচেয়ে আগে কি জেনেছ ? তোমরা নিজেদের সত্য আত্মা বলে জেনেছ l বাবার সত্য পরিচয় জেনেছ l এই সত্য পরিচয় চিনতে পারা ও জানার মধ্য দিয়ে সত্য জ্ঞানের দ্বারা সত্যতার শক্তি অবশ্যম্ভাবীরূপে সত্য হয়ে যায় l সত্যতার শক্তি দ্বারা অসত্য রূপী অন্ধকার, অজ্ঞান রূপী অন্ধকার নিজে থেকেই সমাপ্ত হয়ে যায় l অজ্ঞান সদা অসত্য, জ্ঞান সত্য ; সত্য বলেই ভক্তরা বাবার মহিমা গায়, *সত্যম্, শিবম্, সুন্দরম্* অর্থাৎ তুমি সত্য, তুমি কল্যাণময়, তুমি সুন্দর l সত্যতার শক্তি সহজেই তোমাদের প্রকৃতিজিৎ, মায়াজিৎ বানিয়ে দেয় l সবাই নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা কর, আমি বাবার বাচ্চা হলে কতখানি সত্যতার শক্তি আমি ধারণ করেছি ?
কারও মধ্যে সত্যতার শক্তি থাকার লক্ষণ হলো, সে সদা নির্ভীক হবে l তোমরা মুরলিতে যেমন শুনেছ, *"সচ তো বিঠো নচ"(যেখানে সত্য, সেখানে আত্মা নাচে)* অর্থাৎ যার মধ্যে সত্যতার শক্তি আছে সে সদা ভাবনাহীন এবং চিন্তা ও ভয়মুক্ত হওয়ার কারণে সেই আত্মা খুশিতে নাচে l যেখানে ভয়ের চিন্তা আছে সেখানে খুশিতে তোমরা নাচতে পার না ; এমনকি নিজেদের দুর্বলতার চিন্তা হলেও l নিজের সংস্কার বা সঙ্কল্প দুর্বল হলে, সত্য মার্গ হওয়ার কারণে তোমাদের মনে নিজস্ব সেই দুর্বল ভাবনার চিন্তা অবশ্যই চলে l দুর্বলতা অবশ্যই তোমাদের মনে চঞ্চল স্থিতি উৎপন্ন করে। যতই নিজেকে তুমি লুকাতে চেষ্টা কর বা সময় অনুযায়ী অল্পকালের অথবা পরিস্থিতি অনুযায়ী আর্টিফিসিয়াল হাসি ফুটিয়ে তোল না কেন, সত্যতার শক্তি কিন্তু তোমার দুর্বলতার উপলব্ধি তোমাকে অবশ্যই করাবে l বাবার থেকে এবং নিজের থেকে কোনো কিছুই লুকিয়ে থাকতে পারে না l অন্যদের থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে l কিছুটা হলেও তোমাদের মনে নাড়া দেয় না যে তা নয়, কিন্তু আলস্য বশতঃ তোমরা তাতে তেমন গুরুত্ব না দিলেও সত্যতার শক্তি মনের মধ্যে বিভ্রমরূপে, উদাসীনতার রূপে, ব্যর্থ সঙ্কল্পের রূপে নিশ্চয়ই আসে, কারণ সত্যতার সামনে অসত্য থাকতে পারে না l ভক্তিমার্গে তারা ছবিতে দেখিয়েছে, সাগর মাঝে সাপের ওপরে (কৃষ্ণ) নাচ করছে l এটা সাপই, কিন্তু তাঁর সত্যতার শক্তি দ্বারা সাপও স্টেজ হয়ে যায় - যার ওপরে তিনি নাচেন l যতই ভয়ানক পরিস্থিতি হোক, মায়ার ভয়ঙ্কর রূপ হোক, তোমাদের সম্বন্ধ-সম্পর্ক মর্মান্তিক পীড়ার কারণ হোক, বায়ুমন্ডল যতই বিষাক্ত হোক কিন্তু যার সত্যতার শক্তি আছে, সেই সবকিছুই খুশিতে নাচ করার স্টেজ বানিয়ে দেয় l সুতরাং, এই ছবি কার ? এই ছবি তোমাদের সকলের, তাই না ? তোমরা সবাই কৃষ্ণ হতে যাচ্ছ l এক্ষেত্রে তো সবাই তোমরা হাত ওঠাও, নয় কি ? *রাম চরিত্রে অর্থাৎ রামের দৈবী কাজকর্মে এইসব উল্লেখ নেই l তা'তে এক মুহূর্ত বিচ্ছেদ, পরমুহূর্তে খুশি l সুতরাং, যে আত্মারা কৃষ্ণ হয়, এমন স্থিতিরূপী স্টেজে সদা নাচতে থাকে l প্রকৃতির কোনও তত্ত্ব বা মায়া বা ব্যক্তি, বৈভব এমন আত্মাকে টলাতে পারে না* l তারা মায়াকেই তাদের স্টেজ বা শয্যা বানিয়ে দেবে l সেই ছবিও তো তোমরা দেখেছ, তাই না ! সাপকে তিনি শয্যা বানিয়েছেন অর্থাৎ তিনি বিজয়ী l অতএব, সত্যতার শক্তির লক্ষণ হলো, যেখানে সত্য সেখানে আত্মা নাচে, এটাই ছবি l যাদের সত্যতার শক্তি আছে তারা কখনও ডুবতে পারে না l ডামাডোল অবস্থাকেও তাদের খেলা বলে অনুভব হবে l আজকাল তারা ইচ্ছা করেই এমন খেলা বানায় যেখানে তোমরা উপর-নিচে দুলবে, তাই নয় কি ? খেলাটা তো হল নীচে পড়ার, কিন্তু সেটা খেলা হওয়ার কারণে তারা নিজেদের বিজয়ী অনুভব করে l যতই উথাল পাথাল হোক, কিন্তু যে খেলা করছে সে এটাই মনে করবে সে জয় অর্জন করেছে l তাহলে কি তোমরা নিজেদের এইরকম সত্যতার শক্তি অর্থাৎ জয়ের বরদান প্রাপ্তকারী মনে কর ? নিজেদের বিজয়ী স্বরূপ সদা অনুভব কর ? যদি এখনও পর্যন্ত কোন চাঞ্চল্য বা ভয় আছে, তো সত্যের সঙ্গে অসত্য এখনও থেকে গেছে, সেইজন্যই চঞ্চলতা উৎপন্ন হচ্ছে l সুতরাং, চেক কর - সঙ্কল্প, দৃষ্টি, বৃত্তি, বোল আর সম্বন্ধ-সম্পর্কে সত্যতার শক্তি অটল কিনা ! আচ্ছা - আজ মিলনে অনেক বাচ্চা আছে, সেইজন্য এই সত্যতার শক্তিতে ব্রাহ্মণ জীবনে বিশেষত্ব সম্পন্ন হয়ে কিভাবে তোমরা চলতে পার তার বিস্তার সম্পর্কে বাবা তোমাদের পরে বলবেন l বুঝেছ ?
ডবল বিদেশি বাচ্চারা ক্রিসমাস পালন করেছে নাকি আজও ক্রিসমাস ? ব্রাহ্মণ বাচ্চাদের জন্য সঙ্গমযুগই উৎসব উদযাপনের যুগ l সুতরাং নাচো, গাও, খুশিতে রোজ উদযাপন কর l কল্পের হিসেবে সঙ্গমযুগ মাত্র অল্প দিনের সমান, সেইজন্য সঙ্গমযুগের প্রতিটা দিন বড় দিন l আচ্ছা !
সত্যতার শক্তি স্বরূপ, সত্য বাবার দ্বারা সত্য বরদান বা উত্তরাধিকার লাভ করে, সদা সত্যতার শক্তি দ্বারা বিজয়ী আত্মাদের, প্রকৃতিজিৎ, মায়াজিৎ, খুশিতে নাচে, এইরকম সকল সত্য বাচ্চাদের সত্য বাবা, শিক্ষক এবং সদগুরুর স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
*দাদী চন্দ্রমণিজী বাপদাদার থেকে ছুটি নিয়ে পাঞ্জাব যাচ্ছেন*
তোমরা পাঞ্জাব নিবাসী বাচ্চারা তথা মধুবন নিবাসী বাচ্চারা স্মরণ - স্নেহ স্বীকার কর l সব বাচ্চা সদাই নিশ্চিন্ত বাদশাহ হচ্ছে, তাই না ! কেন ? যোগযুক্ত বাচ্চারা সদা সুরক্ষিত ছত্রছায়ায় থাকে l তোমরা যোগী বাচ্চারা পাঞ্জাবে থাক না, বরং বাপদাদার ছত্রছায়ায় থাক l পাঞ্জাবেই থাক বা যে কোনখানে, যে বাচ্চারা সদা সুরক্ষিত ছত্রছায়ায় থাকে তারা সদা সেফ থাকে l যদি ডামাডোলের মধ্যে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়, তবে তারা কোন না কোনভাবে আঘাত পাবে l যেমনই হোক, তোমরা অনড় থাকলে, যদি বিক্ষোভ-স্থানেও থাক, তোমাদের কেশাগ্রও স্পর্শ হতে পারে না, সেইজন্য এখনও বাপদাদার হাত আছে, সাথ আছে, সুতরাং নিশ্চিন্ত বাদশাহ হয়ে থাক আর এইরকম অতি অশান্ত বাতাবরণে শান্তির কিরণ ছড়িয়ে দাও l যারা হতাশাগ্রস্ত তাদের ঈশ্বরীয় সাহচর্যের আশা দাও l যাদের টালমাটাল অবস্থা তাদের অবিনাশী সাহচর্যের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে অটল বানাও l পাঞ্জাব থেকে আগতদের এই বিশেষ সেবা করতে হবে l তোমাদের আগেও বলা হয়েছিল, যারা পাঞ্জাব থেকে আগত, তাদের ভালো চান্স আছে বাবার নাম মহিমান্বিত করার l যখন চারিদিকে মানুষের কোনও সহায় নজরে আসে না, সেই সময় তাদের অনুভব করাও যে তোমরাই সেই শ্রেষ্ঠ আত্মা, যারা মনের আরাম দেয়, মনোশান্তির সহায় হয় l অশান্তির সময়েই শান্তির গুরুত্ব, সুতরাং এমন টাইমে তাদের এটা অনুভব করাতে হবে, এটাই প্রত্যক্ষতার এক নিমিত্ত আধার হয়ে যায় l অতএব, পাঞ্জাবের নিমিত্ত আত্মারা, তোমরা ভয় পাবে না। বরং এমন সময়ে মানুষ যেন অনুভব করে সবাই তাদের ভয় দেখাতে পারে কিন্তু তোমরা তাদের সহায় হবে l মিটিংয়ে এইরকমই প্ল্যান বানাও যেখানে অশান্ত আত্মাদের সংগঠনে গিয়ে তাদের শান্তির অনুভব করাবে l এমনকি যদি দুই একজন আত্মাকেও যদি শান্তির অনুভূতি করাতে পার, তবে সেই দুই একজন আত্মার থেকেই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়বে আর সরবে আওয়াজ শোনা যাবে l তোমরা মিটিং করছ, এটা খুব ভালো, তোমরা সাহসী, প্রবল উদ্যমী আর সদাই প্রতিটা কার্যে সহযোগী, স্নেহী এবং একসাথে থেকেছ আর একসাথেই থাকবে l পাঞ্জাবের নম্বর পিছনে নয় সামনে l
*পাঞ্জাব এ শের* বলা হয়, শের অর্থাৎ বাঘ কখনও পিছনে থাকে না, সামনে থাকে l তোমাদের যে প্রোগ্রামই দেওয়া হোক, "হাঁ জী, হাঁ জী" বলো অর্থাৎ বিনীতভাবে সম্মতিসূচক জবাব দাও, তবেই অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যাবে l আচ্ছা !
*সব বাচ্চার সাথে মিলনের পরে প্রাতঃ ৫ : ৩০ মিনিটে বাপদাদা সদগুরুবারের স্মরণ-স্নেহ দিয়েছেন -*
চতুর্দিকে সত্যবাবার, সত্যশিক্ষকের, সদগুরুর অতি নিকটস্থ, স্নেহী এবং সদা সাথী বাচ্চারা সদগুরুবারের অনেক অনেক স্মরণ - স্নেহ গ্রহণ কর l আজ সদগুরুবারের দিনে বাপদাদা সবাইকে সদা সফলতা স্বরূপ হও, সদা সাহস আর প্রবল উদ্যমে থাক, সদা বাবার সুরক্ষিত ছত্রছায়ায় সেফ থাক, সদা একবল এক ভরসায় স্থিত থেকে সাক্ষী হয়ে সব দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রসন্ন থাক, এইরকম বিশেষ স্নেহ ভরা বরদান দিচ্ছেন l এই সবই বরদান স্মৃতিতে রেখে সদা সমর্থ থাক, এটা সদা স্মরণে থাকুক আর সদা স্মরণে থাক l আচ্ছা - সবাইকে গুড মর্নিং আর সদা প্রতিদিনের অভিনন্দন l আচ্ছা !
*বাছাই করা বিশেষ অব্যক্ত মহাবাক্য - স্মরণ জ্বালাস্বরূপ বানাও*
বাবা সমান পাপ কাটেশ্বর বা পাপহরণী তখনই হতে পারবে, যখন তোমাদের স্মরণ জ্বালাস্বরূপ হবে l এইরকম স্মরণই তোমাদের দিব্য-দর্শন মূর্তি প্রত্যক্ষ করাবে l সেইজন্য কোনও সময় স্মরণ সাধারণ হতে দিও না l সদা তীব্র জ্বালাস্বরূপ ও শক্তিশালী স্মরণে থাক l স্নেহের সাথে শক্তির কম্বাইন্ড রূপ হতে হবে l
বর্তমান সময়ে জ্বালাস্বরূপের সংগঠিত রূপের আবশ্যকতা আছে l জ্বালাস্বরূপের স্মরণই শক্তিশালী বায়ুমন্ডল বানাবে এবং নির্বল আত্মাসকল শক্তিসম্পন্ন হবে l সব বিঘ্নের সহজ অবসান ঘটবে এবং পুরানো দুনিয়ার বিনাশ-অগ্নি জ্বলে উঠবে l
সূর্য যেমন সারা বিশ্বকে আলোকিত করে এবং অনেক বিনাশী প্রাপ্তির অনুভূতি করায়, ঠিক একইভাবে তোমরা বাচ্চারা নিজেদের মহান তপস্বী রূপ দ্বারা প্রাপ্তির কিরণের অনুভূতি করাও l সেইজন্য প্রথমে তোমাদের জমার হিসেব বাড়াও l যেমন সূর্যের কিরণ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক একইভাবে তোমরা মাস্টার সর্বশক্তিমান হওয়ার স্টেজে থাকলে শক্তি এবং বিশেষত্বের কিরণ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে অনুভূত হবে l
জ্বালারূপ হওয়ার মুখ্য এবং সহজ পুরুষার্থ হলো, সদা এই গভীর আকুলতা থাকবে যে এখন ঘরে ফিরে যেতে হবে এবং সবাইকে আমার সাথে নিয়ে l এই স্মৃতির সাথে তোমরা নিজে থেকেই সর্ব-সম্বন্ধ এবং প্রকৃতির সমস্ত আকর্ষণের ঊর্ধ্বে থাকবে অর্থাৎ সাক্ষী হয়ে যাবে l সাক্ষীদ্রষ্টা হয়ে যাওয়ায় সহজেই বাবার সাথী অথবা বাবার সমান হয়ে যাবে l
জ্বালাস্বরূপ স্মরণ অর্থাৎ লাইট হাউস্ এবং মাইট হাউস্ স্থিতিকে বুঝে এই পুরুষার্থ বজায় রাখ l জ্ঞান স্বরূপ হওয়াতে বিশেষভাবে অনুভাবী হয়ে শক্তিশালী হও l এর মাধ্যমে তোমরা সব শ্রেষ্ঠ আত্মার শুভ বৃত্তি ও কল্যাণ বৃত্তি এবং শক্তিশালী বাতাবরণ দ্বারা হতাশাগ্রস্ত, লক্ষ্যহীন হয়ে ঘুরে বেড়ানো, মর্মপীড়ায় আর্তনাদকারী। এমন অনেক আত্মাকে আনন্দ, শান্তি আর শক্তির অনুভূতি করানোয় সমর্থ হবে l
অগ্নিতে কোনো জিনিস ফেললে যেমন তার রঙ, রূপ, গুণ সব বদলে যায়, একইভাবে যখন বাবার স্মরণের একাগ্রতার অগ্নিতে পড় তখন তোমাদের রূপান্তর ঘটে ! মানুষ থেকে ব্রাহ্মণ হও, আবার ব্রাহ্মণ থেকে ফরিস্তা তথা দেবতা হয়ে যাও l কাঁচা মাটি যেমন ছাঁচে ঢেলে আগুনে ফেললে ইঁট তৈরি হয়, একইভাবে তোমরাও রূপান্তরিত হও l এই কারণে স্মরণকে জ্বালারূপ বলা হয় l
তোমরা সেবাধারী, স্নেহী, তোমাদের এক বল ভরসা, এই সবই তো ঠিক আছে কিন্তু মাস্টার সর্বশক্তিমানের স্টেজ অর্থাৎ স্টেজে থাকাকালীন লাইট হাউস্ মাইট হাউসের স্টেজ থাকা l তোমাদের স্মরণ যদি তীব্র জ্বালারূপ নেয়,তাহলে সবাই পতঙ্গের মতো তোমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াবে l
জ্বালা স্বরূপ স্মরণের জন্য মন এবং বুদ্ধি উভয়েরই পাওয়ারফুল ব্রেক প্রয়োজন এবংঘোরানোর জন্য শক্তির হালও প্রয়োজন l এর থেকে বুদ্ধির শক্তি বা অন্য যেকোন এনার্জি ওয়েস্ট (waste/নষ্ট) না হয়ে জমা হয়ে যাবে l তোমরা যত জমা করবে ততই পরখ করার এবং নির্ণয় করার শক্তি বাড়বে l সেইজন্য এখন অনবরত সঙ্কল্পের বিস্তার গুটিয়ে নিতে থাক অর্থাৎ অন্তর্লীন করার শক্তি ধারণ কর l যেকোন কার্য করাকালীন বা কথা বলতে বলতে মাঝে-মধ্যে সঙ্কল্পের ট্রাফিক স্টপ কর l এক মিনিটের জন্যেও মনের সঙ্কল্পকে স্টপ কর, শরীর দ্বারা কোন কর্ম করাকালীন মাঝখানে স্টপ করতে হলেও সেটা স্টপ করে এই প্র্যাকটিস কর, তবেই বিন্দুরূপের পাওয়ারফুল স্টেজে স্থিত হতে পারবে l যেমন অব্যক্ত স্থিতিতে থেকে সব কার্য করা সরল হয়ে যাচ্ছে, ঠিক একইভাবে বিন্দুরূপ স্থিতিতে স্থিত হওয়াও সহজ হয়ে যাবে l
কোনও কীটাণু মেরে ফেলার জন্য ডাক্তাররা লেজার রশ্মি দেয় l এইভাবে স্মরণের শক্তিশালী কিরণ এক সেকেন্ডে অনেক বিকর্ম রূপী কীটাণু ভস্ম করে দেয় l বিকর্ম ভস্ম হয়ে গেলে তখন আবার নিজেকে হালকা আর শক্তিশালী অনুভব করবে l
তোমরা তো নিরন্তর সহজ যোগী, শুধু তোমাদের স্মরণের স্টেজকে মাঝে-মাঝে পাওয়ারফুল বানানোর জন্য তোমাদের অ্যাটেনশনে ফোর্স হতে দাও l যখন তোমরা সম্পূৰ্ণরূপে পবিত্রতা ধারণ করবে, তখন তোমাদের শ্রেষ্ঠ সঙ্কল্পের শক্তি একনিষ্ঠার অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করবে, সেই অগ্নিতে সব আবর্জনা ভস্ম হয়ে যাবে l তারপরে যা ভাববে সেটাই হবে, বিহঙ্গ মার্গের সেবা নিজে থেকেই হয়ে যাবে l
যেমন দেখানো হয় দেবতাদের স্মারকচিহ্নে, তাদের জ্বালারূপের দ্বারা অসুরদের ভস্ম করে দিয়েছে l অসুর নয় বরং তারা আসুরিক শক্তি ধ্বংস করেছে l এটা এখনকার স্মৃতিচিহ্ন l এখন জ্বালামুখী হয়ে আসুরিক সংস্কার, আসুরিক স্বভাব সবকিছু ভস্ম কর l প্রকৃতি এবং আত্মাদের মধ্যে যে তমোগুণ আছে সেসবের ভস্মকারী হও l এটা অনেক বড় কাজ, তখনই সম্পন্ন হবে যখন তোমরা এটা দ্রুতগতিতে করবে l
যে কোনও হিসেব, সেটা এই জন্মেরই হোক, বা গত জন্মের, একাগ্রতার অগ্নি স্বরূপ স্থিতি ব্যতীত ভস্ম হয় না l সদা অগ্নিস্বরূপ স্থিতি অর্থাৎ জ্বালারূপের শক্তিশালী স্মরণ, বীজরূপ, লাইট হাউস্, মাইট হাউস্ স্থিতিতে পুরানো হিসেব-নিকেশ ভস্ম হয়ে যাবে এবং নিজেকে নিজে ডবল লাইট অনুভব করবে l শক্তিশালী জ্বালাস্বরূপের স্মরণ তখনই থাকবে, যখন স্মরণের লিঙ্ক সদা জুড়ে থাকবে l যদি বারবার লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে সেটা জুড়তে সময়ও লাগে, পরিশ্রমও হয় এবং শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে তোমরা দুর্বল হয়ে যাও l
স্মরণকে শক্তিশালী বানানোর জন্য বিস্তারে যেতে থাকাকালীন সারের স্থিতির অভ্যাস যেন কম না হয়, বিস্তারে সার ভুলে যেও না l ভোজনপান কর, সেবা কর কিন্তু স্বতন্ত্র হওয়া ভুলো না l সাধনা অর্থাৎ শক্তিশালী স্মরণ l নিরন্তর বাবার সঙ্গে হৃদয়ের সম্বন্ধ l সাধনা শুধুমাত্র যোগের জন্য বসা, একে সাধনা বলে না, বরং যেমন শারীরিকভাবে তোমরা বসো, সেইরকমই তোমাদের হৃদয়, মন এবং বুদ্ধি এক বাবার দিকে হতে দাও এবং বাবার সাথে ব'সো l একমাত্র এমনই একনিষ্ঠা যোগাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করবে l
বরদান:-
নিজেদের বোলের গুরুত্বকে বুঝে তার ইকনমি করে মহান আত্মা ভব
মহান আত্মাদের যেমন বলা হয় - *সত্য বচন মহারাজ l* সুতরাং তোমাদের বোল সদা সত্য বচন হবে অর্থাৎ কোনো না কোনো প্রাপ্তি লাভে সবাইকে সমর্থ বানাবে l ব্রাহ্মণের মুখ থেকে কখনও কারও জন্য অভিশাপের বোল বের হওয়া উচিৎ নয়, সেইজন্য যুক্তিযুক্ত বলো আর প্রয়োজনীয় বোল বলো l বোলের ভ্যাল্যু বোঝ l শুভ শব্দ, সুখদায়ী শব্দ বলো, হাসি ঠাট্টার বোল বলবে না। বোলের ইকনমি করলে (বিচক্ষণতার সাথে শব্দ প্রয়োগ করলে) তোমরা মহান আত্মা হয়ে যাবে l
স্লোগান:-
যদি শ্রীমতের হাত সদা সাথে থাকে তো সম্পূর্ণ যুগ হাতে হাত দিয়ে চলতে থাকবে l