০৯-০৬-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ১০-১২-৮৪ মধুবন


পুরানো হিসেবের সমাপ্তির লক্ষণ

*(1984 সালের 2nd. December, ভারতের ভূপালে একটা ফ্যাক্টরি থেকে 40 টন মারাত্মক গ্যাস (মিথাইল আইসসায়ানেট ) লিক করে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল, সেই আকস্মিক ঘটনার পরে বাপদাদা এই মুরলি শুনিয়েছিলেন)*



আজ বাপদাদা সাকার তনের আধার নিয়ে সাকার দুনিয়ায়, সাকার রূপধারী বাচ্চাদের সাথে মিলনের জন্য এসেছেন l বর্তমান সময়ে দুনিয়ার অস্থিরতার মাঝে অর্থাৎ দুঃখের বাতাবরণে ছেয়ে থাকা দুনিয়ায় বাপদাদা তাঁর অনড় অটল বাচ্চাদের দেখছেন l যারা চঞ্চল পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের বাঁচিয়ে স্বতন্ত্র ও বাবার অনুরাগী হয়ে থেকেছে, তিনি সেই কমল পুষ্পসকলকে দেখছেন l ভয়ের বাতাবরণের মাঝে থেকেও যারা শক্তির প্রতিমূর্তি, তিনি সেই ভয়শূন্য বাচ্চাদের দেখছেন l এই বিশ্বের পরিবর্তক বেফিকর (নিশ্চিন্ত) বাদশাহদের দেখছেন l তোমরা এমন নিশ্চিন্ত বাদশাহ যে চতুর্দিকের চিন্তাযুক্ত বায়ুমন্ডলের সামান্যতম অংশমাত্র প্রভাবও তোমাদের উপর পড়তে পারে না l বর্তমান সময়ে বিশ্বের মেজরিটি আত্মাদের মধ্যে ভয় আর চিন্তা এই দুইই বিশেষরূপে ঢুকে গেছে l কিন্তু যতটা তারা উদ্বেগে আছে, চিন্তায় আছে, তোমরা ততটাই শুভচিন্তক হয়েছ l তোমরা চিন্তা পরিবর্তন করে শুভ চিন্তকের পরম ভাবনাস্বরূপ হয়ে গেছ l ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার পরিবর্তে সুখগীত গাইছ l এতটা পরিবর্তন তোমরা অনুভব করছ, তাই না ! সদা শুভ চিন্তক হয়ে শুভ ভাবনা, শুভ কামনার সাথে মানসিক সেবার মাধ্যমেও সবাইকে অনবরত সুখ শান্তির অঞ্জলি দাও, তাই না ! অকাল মৃত্যু হয়েছে এমন আত্মাদের, অকালমূর্ত হয়ে শান্তি আর শক্তির সহযোগ দাও, কেননা, এই বর্তমান সময় অকালমৃত্যুরই সীজন l ঠিক যেমন হঠাৎ করে প্রবল সামুদ্রিক ঝড়, প্রবল বায়ুতাড়িত ঝঞ্ঝা ধেয়ে আসে, একইভাবে এই অকালমৃত্যুর ঝড় হঠাৎ করেই ক্ষিপ্রবেগে একসাথে অনেককে নিয়ে যায় l অকালমৃত্যুর এই ঝড় তো এখন শুরু হয়েছে l বিশেষভাবে ভারতে, সিভিল ওয়ার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এগুলোই প্রতি কল্প পরিবর্তনের নিমিত্ত হয় l বিদেশের পরিবর্তনের রূপরেখা আলাদা রকম l কিন্তু ভারতে এই দুটো ঘটনাই বিশেষ নিমিত্ত হয়, এবং এই উভয় ক্ষেত্রেই রিহার্সাল দেখছ l একই সময়ে উভয়েই একসাথে নিজের নিজের ভূমিকা পালন করছে l



তোমরা বাচ্চারা জিজ্ঞাসা করেছ, কিভাবে এবং কেন একই সময়ে একসাথে এত মৃত্যু হয় ! এর কারণ কি ? এটা তো জান তোমরা আর অনুভবও কর যে সম্পূর্ণতার জন্য সময় সমাসন্ন l সকল আত্মাদের, দ্বাপরযুগ বা কলিযুগ থেকে কৃত বিকর্ম বা পাপের হিসেব যা এখনও বাকি রয়েছে, সেইসব এখন পূর্ণরূপে সমাপ্ত হতে হবে, কারণ সবাইকে এখন ঘরে ফিরে যেতে হবে l দ্বাপর থেকে কৃত কর্ম বা বিকর্ম এই দুইয়ের ফল যদি এক জন্মে সমাপ্ত না হয়, তবে পরবর্তী জন্মেও চুকিয়ে দেওয়ার বা প্রাপ্তির হিসেব চলতে থাকে l কিন্তু এখন লাস্ট সময় এবং পাপের হিসেব বেশি, সেইজন্য এখন তাড়াতাড়ি জন্ম তাড়াতাড়ি মৃত্যু - এই সাজা দ্বারা অনেক আত্মাদের পুরানো হিসেব শেষ হয়ে যাচ্ছে l সুতরাং বর্তমান সময়ে মৃত্যুও যন্ত্রণাদায়ক এবং মেজরিটির জন্মও অনেক দুঃখ আর কষ্টের সাথে হচ্ছে l না আছে সহজ মৃত্যু, না আছে জন্ম l সুতরাং যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু আর দুঃখময় জন্ম, এটা তাড়াতাড়ি হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে ফেলার সাধন l যেমন পুরানো দুনিয়ায় পিঁপড়ে, ডেঁয়ো পিঁপড়ে, মশা ইত্যাদি মারার জন্য উপাদান (সাধন) ব্যবহৃত হয়, এইভাবেই সেই সব সাধন দ্বারা একইসাথে পিঁপড়ে বা মশা বা অনেক রকমের কীটাণুর একসাথে বিনাশ হয়ে যায়, তাই না ! একইভাবে আজকের সময় মানুষও মশা আর পোকামাকড় সদৃশ অকাল মৃত্যুর কবলে পড়ছে l মানুষ আর পোকামাকড়ের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই l এইসব হিসেব-নিকেশের কারণ এবং সেগুলো সদাকালের জন্য অবসান ঘটাতে অর্থাৎ সম্পূৰ্ণ বা শেষ করতে হবে এমন কারণে একসাথে অকাল মৃত্যুর ঝড় সময় সময়ে আসছে l



একইভাবে ধর্মরাজপুরীতেও শাস্তির পার্ট অন্তে স্থির করা হয়েছে l কিন্তু সেই শাস্তি আত্মা নিজেই নিজে ভোগ করে এবং হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে দেয় l এমনকি আত্মাদের অনেক রকম কর্মের হিসেবের মধ্যেও তিন রকম আছে যা বিশেষ -একটা হিসেব আত্মাকে নিজেকে যেটা ভুগতে হবে, যেমন, অসুস্থতা l আত্মা নিজে নিজেই শারীরিক রোগের মাধ্যমে তাদের হিসেব চুকায় l আরেকটা হলো, যেকোন রকম ভূত-প্রবিষ্ট হওয়ার প্রভাব থেকে দুর্বল মস্তিষ্ক হওয়া l এই সমস্ত শাস্তি দ্বারা আত্মা স্বয়ং কর্মের হিসেব ভোগ করে l দ্বিতীয় হিসেব হলো, সম্পর্ক সম্বন্ধ দ্বারা দুঃখ পাওয়া l এটা তো বুঝতে পার কিভাবে হয় ! আর তৃতীয় হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা হিসেব- নিকেশ চুকে যাওয়া l অতএব, তিন রকমের আধারে হিসেব-নিকেশ চুকানো হয় l সুতরাং কিছু কর্মের হিসেব ধর্মরাজপুরীতে সম্বন্ধ আর সম্পর্ক দ্বারা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা চুকানো যাবে না ; সেগুলো এখানে সাকার দুনিয়ায় হবে l সকলের সমস্ত পুরানো হিসেব শেষ হতেই হবে, সেইজন্য এই হিসেব-নিকেশ চুকানোর মেশিনারি এখন তীব্রগতিতে চলছে l বিশ্বে এইসব হওয়ারই আছে l বুঝেছ তোমরা ! এইসব হলো কর্মের গতির হিসেবনিকেশ l এখন নিজেকে নিজে চেক কর- আমি ব্রাহ্মণ আত্মার তীব্রগতির তীব্র পুরুষার্থ দ্বারা সব পুরানো হিসেব-নিকেশ চুকে গেছে নাকি এখনও কিছু বোঝা রয়ে গেছে? পুরানো হিসেব এখনও কিছু বাকি আছে বা সমাপ্ত হয়ে গেছে, এর বিশেষ লক্ষণ জানো তোমরা ? যদি তোমার কোনও স্বভাব-সংস্কার শ্রেষ্ঠ পরিবর্তন বা শ্রেষ্ঠ কর্ম করার ক্ষেত্রে বিঘ্ন উৎপন্ন করে বা তুমি যতটা চাইছ বা ভাবছ সেই অনুপাতে করতে পারছ না, আর এই বোল বার হয় অথবা মনে সঙ্কল্প আসে যে বুঝতে পারছি না, না চাইতেও কেন এমন হয়ে যায়, যদি তোমার নিজের ইচ্ছা শ্রেষ্ঠ হয়, তোমার সাহস এবং উদ্যম থাকে, আর তবুও তুমি যদি কোন কিছু দ্বারা প্রভাবিত অনুভব কর, যদি বলো যে এই রকম তো করার ছিল না, এই ব্যাপারে তুমি ভাবনি অথচ হয়ে গেল ! একে বলা হয় পুরানো স্বভাব-সংস্কারের পরবশ বা সঙ্গদোষের পরবশ বা কোন বায়ুমন্ডল ও ভাইব্রেশনের পরবশ হওয়া l যখন এই তিন ধরনের যেকোন একটা পরবশ স্থিতিতে তোমরা প্রভাবিত হও, তখন না চাইতেও কিছু হওয়া, কিছু করার জন্য ভাবলেও সেটা না হওয়া বা কোনকিছু দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে সাফল্য প্রাপ্তিতে অপারগ হওয়া - এই সব লক্ষণ হলো, বিগত সব পুরানো হিসেবের বোঝার l এই লক্ষণ দ্বারা নিজেকে চেক কর, কোনও রকম বোঝা উড়তি কলার অনুভব থেকে তোমাকে নীচে নামিয়ে আনছে না তো ! হিসেব চুকে যাওয়া অর্থাৎ সকল প্রাপ্তির অনুভবে উড়তি কলা l যদি মাত্র কখনো কখনো প্রাপ্তি ঘটে, তখন এই *'কখনো কখনো* মানেই এখনও হিসেব বাকি থেকে গেছে l সুতরাং এই বিধিতে নিজেকে চেক কর l দুঃখময় দুনিয়ায় তো দুঃখজনক ঘটনাবহুল পাহাড়ের বিস্ফোরণ অবশ্যই হবে l এইরকম সময়ে সেফটির সাধনই হলো, "বাবার ছত্রছায়া" l ছত্রছায়া তো তোমাদের আছেই, তাই না ! আচ্ছা !



তোমরা সবাই মিলন মেলা উদযাপন করতে এসেছ l এই মিলনমেলায় হয়তো কতো যন্ত্রণাময় সীন হবে, কিন্তু যদি তোমরা মেলাতে থাক, তবে এটা খেলা মনে হবে l তোমরা ভীত হবে না l মিলনের গীত গাইতে থাকবে, খুশিতে নাচবে l অন্যদেরও তোমরা সাহসের সহযোগ দেবে l স্থূল নৃত্য নয়, বরং খুশিতে নাচা l তোমরা সদা মেলা উদযাপন কর, তাই না ? তোমরা থাকই মিলন মেলায় l তবুও মধুবনের মেলায় এসেছ , বাপদাদাও এই মেলা উদযাপনকারী বাচ্চাদের দেখে উৎফুল্ল হন l মধুবনের অলঙ্করণ মধুবনে পৌঁছে গেছে l আচ্ছা !



এইভাবে যারা সদা নিজের হিসেবনিকেশ চুকিয়ে অন্যদেরও তাদের হিসেব-নিকেশ চুকানোয় সমর্থ বানায়, সেই শক্তিস্বরূপ আত্মাদের, দুঃখ ও যন্ত্রণাময় বায়ুমন্ডলের মাঝেও সদা স্বতন্ত্র এবং বাবার প্রিয় হয়ে থাকা রূহানী কমল পুষ্পদামকে, যারা সকল আত্মার প্রতি শুভ এবং পরম ভাবনা রাখে, সেই শ্রেষ্ঠ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*টিচার্স বোনেদের সাথে :-* তোমরা সেবাধারী, টিচার নও l সেবাতে ত্যাগ, তপস্যা সমাহিত l সেবাধারী হওয়া অর্থাৎ খনির অধিকারী হওয়া l সেবা এমন জিনিস যাতে প্রতি সেকেন্ডে তোমরা পরিপূর্ণ থাক l এতটাই পরিপূর্ণ হও যে তোমরা অর্ধেক কল্প ধরে খেতেই থাকবে l পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই- এইরকম সেবাধারী l এমনকি, তোমরা রূহানী সেবাধারী রূহের অর্থাৎ আত্মিক স্থিতিতে স্থিত হয়ে আত্মার সেবা কর, একে বলা হয় রূহানী সেবাধারী l এইরকম রূহানী সেবাধারীদের বাপদাদা সদা রূহানী গোলাপের টাইটেল দেন l সুতরাং তোমরা সকলেই সেই রূহানী গোলাপ, যারা কখনো সতেজতা হারিয়ে ফেলে না l সদা নিজের রূহানিয়তের (আত্মিক ভাবের) সৌরভে সবাইকে রিফ্রেশ করে l



সেবাধারী হওয়াও অতি শ্রেষ্ঠ ভাগ্য l সেবাধারী অর্থাৎ বাবা সমান l যেমন বাবা সেবাধারী সেইরকম তোমরাও নিমিত্ত সেবাধারী l বাবা অসীম জগতের শিক্ষক, তোমরাও নিমিত্ত শিক্ষক l সুতরাং বাবা সমান হওয়ার ভাগ্যপ্রাপ্ত তোমরা l সদা এই শ্রেষ্ঠ ভাগ্য দ্বারা অন্যদেরও অবিনাশী ভাগ্যের বরদান দিতে থাক l সারা বিশ্বে এইরকম শ্রেষ্ঠ ভাগ্য খুব কম আত্মাদেরই আছে l এই বিশেষ ভাগ্য স্মৃতিতে রেখে সমর্থ হয়ে অন্যদেরও সমর্থ বানাতে থাক l উড়াতে থাক l সদা নিজেকে অগ্রচালিত করে অন্যকেও অগ্রচালিত কর l আচ্ছা !



*বাছাই করা অব্যক্ত মহাবাক্য - মায়াজিৎ হওয়ার সাথে সাথে প্রকৃতিজিৎ হও*



তোমরা বাচ্চারা মায়াজিৎ হচ্ছ, কিন্তু তোমাদের প্রকৃতিজিৎও হতে হবে, কারণ প্রকৃতি এখন অতিমাত্রায় আন্দোলিত হবে l কখনো সমুদ্রের জল নিজের প্রভাব দেখাবে তো কখনো ধরিত্রী নিজের প্রভাব দেখাবে l যদি প্রকৃতিজিৎ হও, তবে প্রকৃতির কোনরকম চাঞ্চল্য তোমাদের নড়াতে পারবে না l সদা সাক্ষী হয়ে সব খেলা দেখতে থাকবে l যতটা তোমরা নিজের ফরিস্তা স্বরূপে অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ স্টেজে থাকবে, ততই নিজে থেকেই তোমরা চঞ্চলতার ঊর্ধ্বে থাকবে l প্রকৃতিজিৎ হওয়ার আগে কর্মেন্দ্রিয়জিৎ হও তারপরে প্রকৃতিজিৎ তথা কর্মাতীত স্থিতির আসনধারী তথা বিশ্ব রাজ্য অধিকারী হতে পারবে l সুতরাং নিজেকে জিজ্ঞাসা কর, "জী হুজুর", "জী হাজির" বলে কিনা ! অর্থাৎ হ্যাঁ আমার প্রভু, আমি সর্বদা তোমার সামনে উপস্থিত আছি- এমন বলে ? তোমাদের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী কৌশলে কখনো ভুলপথে চালিত করে না তো !



তোমরা সব বাচ্চার কাছে পবিত্রতার মহান শক্তি আছে, যা নিজেই পবিত্র মন্সা অর্থাৎ শুদ্ধ বৃত্তি দ্বারা প্রকৃতিকেও পরিবর্তন করতে পার l মন্সা পবিত্রতার শক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ - প্রকৃতিরও পরিবর্তন l সুতরাং স্ব-পরিবর্তন দ্বারা প্রকৃতি এবং ব্যক্তির পরিবর্তন করত পার l তমোগুণী মানবাত্মার এবং তমোগুণী প্রকৃতির বায়ুমন্ডল, ভাইব্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ সাধন ঈশ্বরীয় আচরণ বিধি l ঐশ্বরিক নিয়মনীতির মধ্যে থাকলে তবে পরিশ্রম থেকে তোমরা রেহাই পেয়ে যাবে l পরিশ্রম তখনই করতে হয় যখন তোমরা তোমাদের সঙ্কল্প, বোল বা কর্মের ঈশ্বরীয় আচরণ বিধির সীমারেখার বাইরে পা বাড়াও l

তোমরা সদা পূর্বজ হওয়ার পজিশনে থেকে সঙ্কল্প দ্বারা পাঁচ বিকারকে অর্ডার কর যে অর্ধেক কল্পের জন্য তোমরা বিদায় নাও, প্রকৃতিকে বলো, সতঃপ্রধান হয়ে সকলকে সুখ দাও এবং সে তোমার অর্ডার অনুযায়ী

সবকিছু করবে l প্রকৃতি তোমায় ছলনা করতে পারবে না l যতই হোক, সবার আগে স্ব-এর অধিকারী হও, এমনকি তোমার স্বভাব-সংস্কারেরও অধীন হবে না l যখন তোমার সব অধিকার থাকবে, তখন সবকিছু তোমার অর্ডার অনুযায়ী কাজ করবে l যেমন সায়েন্সের শক্তি দ্বারা প্রকৃতি অর্থাৎ তত্ত্বকে আজও নিজেদের কন্ট্রোলে রাখছে, সুতরাং তোমরা সব ঈশ্বরীয় সন্তান, মাস্টার রচয়িতা, মাস্টার আলমাইটি অথরিটির সামনে এই প্রকৃতি আর পরিস্থিতি দাসী হতে পারে না ? যখন সায়েন্সের আনবিক শক্তি মহান কার্য করতে পারে, তবে আত্মিক শক্তি, পরমাত্ম শক্তি কি না করতে পারে, সহজেই প্রকৃতি আর পরিস্থিতির রূপ আর গুণ পরিবর্তন করতে পারে l সকল বিঘ্ন থেকে, সবরকম পরিস্থিতি থেকে অথবা তমোগুণী প্রকৃতির বিপর্যয় থেকে সেকেন্ডে বিজয়ী হওয়ার জন্য শুধুমাত্র একটা ব্যাপারে নিশ্চয় আর নেশায় থাক, *"বাহ্ আমি" , আমি শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ আত্মা"* -এই স্মৃতিতে থাকলে, তোমরা সমর্থস্বরূপ হয়ে যাবে l



যখনই প্রকৃতি দ্বারা কোনো পেপার আসে, কেন এমন হলো ? এটা কি ....এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে চঞ্চল হয়ো না l অস্থিরতায় আসা অর্থাৎ ফেল হওয়া l যা কিছুই হোক, ভিতর থেকে এই আওয়াজ বার হওয়া উচিৎ *'বাহ্ সুইট ড্রামা !'* 'হায় কি হলো' দুর্ভাগ্যসূচক সামান্যতম সঙ্কল্পও হবে না l ড্রামার জ্ঞান দ্বারা নিজেকে এমন শক্তিশালী বানাও l মায়াজিৎ এবং প্রকৃতিজিৎ হওয়ার জন্য গুটিয়ে নেওয়ার শক্তিকে ধারণ করো, এর জন্য দেখেও দেখো না, শুনেও শুনো না ! এক মুহূর্তে সাকার হওয়া, আর পরমুহূর্তে আকারী এবং পরবর্তীতে নিরাকারী হওয়ার অভ্যাস কর, প্রকৃতির চঞ্চল অবস্থা দেখে প্রকৃতিপতি হয়ে এবং নিজের ফুল স্টপ প্রয়োগের স্থিতি দ্বারা প্রকৃতির চঞ্চলতা স্টপ কর l তমোগুণী স্টেজ সতোগুণী স্টেজে পরিবর্তন করার অভ্যাস বাড়াও l



সঙ্গমযুগেই প্রকৃতি তার সহযোগী হওয়ার পার্ট আরম্ভ করে দেবে l সবদিক থেকে প্রকৃতিপতি এবং মাস্টার প্রকৃতিপতির সাদর অভ্যর্থনা করবে l সব দিক থেকে সে ধন্যবাদ দেবে এবং নিজেকে অফার করবে অর্থাৎ সবকিছু সম্পাদন করার প্রস্তাব সে নিজেকে দেবে l এই কারণে প্রকৃতির সব তত্ত্বকে দেবতা রূপে দেখানো হয়েছে l দেবতা অর্থাৎ দাতা, যে দেয় l সুতরাং অন্তিমে এই সব প্রকৃতির তত্ত্ব তোমাদের সকলকে সহযোগ দিয়ে দাতা হয়ে যাবে l চতুর্দিকে কোন তত্ত্ব দ্বারা যতই উথালপাথাল হোক, কিন্তু সর্বত্র তোমরা সব প্রকৃতির মালিককে প্রকৃতি দাসী হয়ে সেবা করবে l তোমরা শুধু প্রকৃতিজিৎ হয়ে যাও l তারপরে এই প্রকৃতি তার মালিকদের সহযোগের মালা পরাবে l যেখানে তোমরা সব প্রকৃতিজিৎ ব্রাহ্মণের পা পড়বে, যে স্থানে থাকবে সেখানে কোনও ক্ষতি হতে পারে না l তারপরে সবাই তোমাদের দিকে স্থূল-সূক্ষ্ম সাহচর্য নিতে দৌড়ে আসবে l তোমাদের স্থান অ্যাসাইলাম হয়ে যাবে l আর সবার মুখ থেকে "হে প্রভু, তোমার লীলা অপরমপার" - এই বোল বার হবে l ধন্য তোমরা, ধন্য তোমরা, তোমরা সবাই পেয়েছ, আমরা জানি না ! আমরা সবকিছু হারিয়েছি l" এই আওয়াজ চারিদিকে গুঞ্জরিত হবে l আচ্ছা - ওম্ শান্তি l

বরদান:-

এক বাবাকে আপন সংসার বানিয়ে সদা একের আকর্ষণে থেকে কর্মবন্ধন মুক্ত ভব

সদা এই অনুভবে থাক, *এক বাবা দ্বিতীয় কেউ নেই* l শুধুমাত্র এক বাবাই আমার সংসার এবং কোনো আকর্ষণ নেই, কোনো কর্মবন্ধন নেই l নিজের কোনো দুর্বল সংস্কারেরও বন্ধন না থাকে l যাদের কারও ওপরে *আমিত্বের* অধিকার থাকে, তাদের ক্রোধ বা অভিমান আসে - এটাও কর্মবন্ধন l কিন্তু যখন বাবা-ই আমার সংসার, এই স্মৃতি তোমাদের থাকে, তখন সব 'আমার আমার' *এক আমার বাবাতে* সমাহিত হয়ে যায় এবং কর্মবন্ধন থেকে সহজেই মুক্ত হয়ে যায় l

স্লোগান:-

মহান আত্মা তারাই, যাদের দৃষ্টি এবং বৃত্তি অসীম জগতের l