২০-০৭-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি ! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - কলঙ্গীধর (ময়ূর পুচ্ছের মুকুটধারী/অযথা কুৎসায় আরোপী) হওয়ার জন্যও নিজের অবস্থাকে অচল-অটল বানাও। তোমার উপরে যতই কলঙ্ক লাগতে থাকবে, ততই তুমি আরও কলঙ্গীধর হতে থাকবে"

প্রশ্ন:-

বাবার কি আজ্ঞা (আদেশ) বাচ্চাদের প্রতি ? কোন্ প্রধান আজ্ঞা অনুসারে চলতে থাকা বাচ্চারা বাবার হৃদয় সিংহাসনে স্থান পায় ?

উত্তর:-

বাবার আজ্ঞা হলো - মিষ্টি বাচ্চারা, কারও সাথেই তোমরা বিবাদ-বিসম্বাদে যাবে না। শান্তিতে থাকতে হবে তোমাদের। কারও যদি তোমার কথা ভালো নাও লাগে, তবুও চুপ হয়ে থাকো। একে-অপরকে জ্বালাতন করবে না। বাপদাদার হৃদয় সিংহাসনে তখনই স্থান পাবে, যখন আর কোনও বিকারের ভুত থাকবে না তোমার ভিতরে। মুখ থেকে যেন কখনও কটূবাক্য বের না হয়। মিষ্টি-মধুর বাক্য বলার ধারণাতেই যেন নিজের জীবন গড়ে ওঠে।

ওঁম্ শান্তি!

ভগবান উবাচঃ - "আত্ম-অভিমানী ভব"। অবশ্যই শুরুতেই একথা বলতে হবে। এটাই বাচ্চাদের প্রতি বাবার সতর্কতা। বাবা জানাচ্ছেন, উনি যেমন বাচ্চা বাচ্চা বলে বি.কে.-দের বলতে থাকেন, তখন কিন্তু কেবল আত্মাকেই (আত্মিক-স্বরূপ) দেখেন। শরীর তো পুরানো জুতোর মতন। যা কোনওমতেই সতোপ্রধান হতে পারে না। অবশ্য সতোপ্রধান শরীর থাকে সত্যযুগে। আর সেই লক্ষ্যেই এখন তোমাদের আত্মা সতোপ্রধানের পুরুষার্থ করছে। বর্তমানের এই শরীর তো অনেক অনেক পুরানো। তাই এখন তোমাদের আত্মাতেই (সংস্কারের) পরিবর্তন আনতে হবে। অতএব পবিত্র যে হতেই হবে। তবেই তো সত্যযুগে পবিত্র শরীর পাবে। আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য এক ও একমাত্র এই বাবাকেই স্মরণ করতে হবে। তবেই তো বাবা সেই আত্মাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। কেবল নজর দিয়ে দেখলেই আত্মা শুদ্ধ হয়ে যায় না। আত্মা যতই বাবা পরমাত্মাকে স্মরণ করতে থাকবে, ততই আত্মা শুদ্ধ হতে থাকবে। এই স্মরণ করাটাই তোমাদের প্রধান কর্ম-কর্তব্য। এভাবে বাবাকে স্মরণ করতে করতেই সতোপ্রধান হতে হবে। স্বয়ং বাবা এসেছেন সেই দিশা দেখাতে। (এই কল্পের) অন্তিম সময় পর্যন্ত তোমাদের এই শরীর পুরোনোই থাকবে। আর কর্মের জন্য কেবল কর্ম-ইন্দ্রিয়। যার সংযোগ রয়েছে আত্মার সাথে। যখন আত্মা সুন্দর ফুলের মতন পবিত্র হয়, প্রতিটি বিষয়েই তখন তার সবকিছুই খুব সুন্দর হয়। স্বর্গ-রাজ্যে তো পশু-পাখিদের স্বভাবও খুব ভাল থাকে। আর বর্তমানের এই দুনিয়ায়, মানুষদের দেখলেই পাখিরাও পর্যন্ত উড়ে পালায়। কিন্তু সেখানে (সত্যযুগে) কত সুন্দর সুন্দর পশু-পাখি, তারা চলে তাদের নিয়মে, তোমার সামনে-পিছনেও ঘুরে বেড়াবে। আবার এমন নয় যে তারা ঘরের ভিতরে ঢুকে ঘর-দুয়ার নোংরা করবে। এমনটা মোটেই নয়, সবকিছুই খুব সুন্দর নিয়মে চলার দুনিয়া সেটা। আগামীতে সে সবেরও সাক্ষাৎকার হবে তোমাদের। যদিও এখনও কিছু সময় বাকি আছে বিনাশের।



যেমন স্বর্গ-রাজ্যের মহিমা অপরম্অপার, তেমনি বাবার মহিমাও অপরম্অপার। আবার বাবার যা কিছু সম্পত্তি সে সবের মহিমাও অপরম্অপার। অতএব বি.কে. বাচ্চাদেরও মনে-প্রাণে তার মত্ততা তো আসবেই। এবার বাবা খুব গুহ্য-বাণী শোনাচ্ছেন - "আমিও সেইসব বাচ্চাদের অটোমেটিক্যালি স্মরণ করি, যারা তেমন সুন্দরভাবে সেবার কার্য করে। আত্মার সাথেই যে মন ও বুদ্ধির সংযোগ। আর তাই তো তোমরা নিজেরাই তা বুঝতে পারো, তোমরা খুব সুন্দর ফার্স্ট ক্লাস সেবা করছো, নাকি সেকেন্ড ক্লাস সেবা করছো। সেই বোঝার মধ্যেও আবার তোমাদের ক্রমিক অনুসারেই তা তেমনটাই বুঝতে পারো। তোমাদের মধ্যে কেউ মিউজিয়াম-এর তৈরীতে ব্যস্ত, কেউ বা আবার প্রেসিডেন্ট, গভর্নর, ইত্যাদি-দের কাছে যাও। সেখানে গিয়ে অবশ্যই খুব সুন্দর ভাবে তাদেরকে বুঝিয়েও আসো। তোমাদের সবার মধ্যেই কোনও না কোনও বিশেষ গুণ তো আছেই। যার ভিতরে খুব ভাল গুণ গুলির সমাহার থাকে, তখন তাকে বলা হয়, কি সুন্দর এই গুণবান বি.কে। সেবাধারী বাচ্চারা সর্বদাই মিষ্টি মিষ্টি কথাই বলে। তাদের মুখ থেকে কখনও কটু বচন বের হয় না। কেউ কটু-বচন বললেই ভাববে, এর ভিতরে এখনও বিকারের ভুত আছে। এই ভুতেদের মধ্যে প্রধান ভূত হলো দেহ-অভিমান৷ যার পিছন-পিছন অন্য ভূতগুলিও প্রবেশ করে।



সাধারণ লোকেদের অনেকেরই চাল-চলন থাকে খুব খারাপ স্বভাবের। বাবা জানাচ্ছেন - এতে তাদের বিশেষ দোষ নেই। কিন্তু বি.কে. দেরকে অবশ্যই যথেষ্ট পুরুষার্থ করে এমন হতে হবে- পূর্ব-কল্পে ঠিক যেমনটি হয়েছিলে তোমরা। অর্থাৎ যতটা সম্ভব নিজেদেরকে আত্মা মনে করে পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করবে। দেখবে তাতেই ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বেরই কন্ট্রোলিং-এর রশি তোমার হাতেই এসে যাবে। এটাই যে কল্প-চক্রের অবিনাশী ড্রামার অবিনাশী নিয়ম। যার প্রতিটি মুহূর্তই একেবারে সঠিক দিশায় চলতে থাকে। এখন খুব কম সময়ই অবশিষ্ট আছে তোমাদের কাছে। তারা (ইংরেজরা) স্বাধীনতা হস্তান্তর করতে গিয়ে, গোটা দেশটাকেই দু’টুকরো করে ফেললো। তার সাথে এমন কিছু করে গেল যে, ভারতবাসীদের নিজেদের মধ্যেই সবসময় ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। অবশ্য এসব না করলে তাদের অস্ত্র-শস্ত্র বিক্রি হবে কি করে! ব্যবসার নিয়মই যে এটা। ওরা যে এই চালাকি করে - তা করে ড্রামা অনুসারেই। আর এই কারণেই দেশগুলিকে টুকরো টুকরো করার প্রয়াস ওদের। যাতে তারা নিজেদের মধ্যেই এ নিয়ে ঝগড়াঝাটিতেই ব্যস্ত থাকে। কেউ একজন বলে ঐ খণ্ডটা আমার, অপরজনও সেই একই কথা বলে। ফলে ঝগড়াঝাটি লাগাতার চলতেই থাকে। যেহেতু সুনির্দিষ্ট ভাবে সেসব ভাগাভাগি করে দেয়নি যে। যেমন একদিকে জলের অভাবে কৃষি কার্য ভাল হয়ই না, অপরদিকে আবার জলের অগাধ প্রাচুর্য। ফলে ভাই-ভাইদের মধ্যে এমন সিভিল ওয়ারের (গৃহযুদ্ধ) লড়াই-ঝগড়া লেগেই থাকে। সর্বত্রই এমন ধরণের ঝগড়াঝাটি হতেই থাকে। আবার যেহেতু তোমরা বি.কে. হয়েছো, তোমাদেরকেও অনেক ধরনের গালি-গালাজ সহ্য করতে হয়। তাই তো বাবা এভাবে তোমাদেরকে কলঙ্গীধর করে গড়ে তোলেন। তোমরা যেমন গালি-গালাজ সহ্য করো, বাবাও তেমনি গালি-গালাজ সহ্য করেন। কিন্তু তোমরা তো জানো, সেইসব অভাগাদের এটা জানা নেই যে, আগামীতে তোমরা বি.কে.-রাই সমগ্র বিশ্বের মালিক হতে চলেছো। ৮৪-জন্মের ব্যাপারটা খুবই সহজ বিষয়। একদা যে থাকে পূজ্য, পরবর্তীতে সে আবার পূজারি - যা কেবল বি.কে.-রাই হয়। অথচ, একথা কিন্তু লোকেদের বুদ্ধির ধারণাতেই আসবে না। অবশ্য ড্রামার চিত্রনাট্যেও তাদের রোলটাই যে এমনটাই রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বাবা আর কি বা করতে পারেন তাদের জন্য। কতকিছুতেই তারা যতই মাথা ঠুকুক না কেন, উন্নতির সোপানে চড়তেই পারে না। সেক্ষেত্রে অবশ্য চেষ্টা করা যেতে পারে কিন্তু ভাগ্যকে তো আর বদলানো যায় না। এদিকে রাজধানী স্থাপনের কার্যও চলছে, সেখানেও তো সর্ব প্রকারের প্রজারই প্রয়োজন। একথা ভেবে শান্ত থাকাই শ্রেয়। কারও সাথে বাদ-বিতণ্ডায় গিয়ে লাভ নেই। বরঞ্চ ভালবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে তাকে - এইসব করো না মোটেই। যদিও আত্মাই এসবকিছু শোনে, তবুও কাউকে ভাল কিছু বললেও অযথাই সে অশান্ত হয়ে যায়। যার ফলে তাদের আরও অধঃপতন হয়। তখন কিন্তু তাদেরকে আর বোঝাতে যাবে না। আবার কেউ বা শান্ত হয়ে শুনবে, এমন অনেক ভালো আত্মাও থাকবে। কিন্তু অশান্ত আত্মারা নিজেরা যেমন অশান্তিতে থাকে, তেমনি তারা একে-অপরকে অশান্তিও দেয়। অন্তিম সময় পর্যন্ত তাদের এমন অবস্থা চলতেই থাকবে। আর মায়ার প্রকোপও দিন-প্রতিদিন আরও কঠোর রূপে তা বাড়তেই থাকবে। এমন কি মহারথীদের সাথে মায়াও লড়বে মহারথী হয়েই। মায়ার তুফান এলে তখন আবার তাদেরও বাবাকে স্মরণ করার (পুরুষার্থ) অভ্যাসের গতি তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। একেবারে অচল-অটল হয়ে থাকে তখন। তাদের তো জানাই আছে, মায়া তাদেরকে হয়রান করবেই। সুতরাং ভয় পেতে নেই বি.কে.-দের। কলঙ্গীধর (বি.কে.) যখন হয়েইছো, নানা প্রকারের কলঙ্ক তো লাগবেই - এতে হতাশ হবে না মোটেই। সংবাদপত্রেও যদি পবিত্রতা অথবা অন্য কিছু নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যদি কেউ লেখে, তাতেও হতাশ হবে না। তবে তখন কিন্তু অবলাদের প্রতি অত্যাচার আরও বাড়াবে এই অকাসুর, বকাসুর রাক্ষসেরা। পুতনা-সুর্পনাখার মতন স্ত্রী-ও তাদেরই।



বাচ্চারা, শুরুতেই বাবার মহিমা এভাবে শোনাতে হবে যে, অসীম জগতের বাবা স্বয়ং বলেন- "প্রকৃত অর্থে তোমরা আত্মা।" এই বিশেষ জ্ঞান একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। যে জ্ঞান রচয়িতা ও তার রচনার জ্ঞান। এই জ্ঞানের পাঠ-ই প্রকৃত পাঠ। যার দ্বারা তোমরা স্বদর্শন চক্রধারী হয়ে চক্রবর্তী রাজা হতে পারো। চিত্রে (দেবতাদের) যে সব অলংকার দেখানো হয়, তা কিন্তু তোমাদেরই প্রতীকী, অর্থাৎ সেগুলির উপরেই বি.কে. ব্রাহ্মনদের পুরুষার্থ করতে হয়। তাই এই অলংকারগুলি বিষ্ণুর (লক্ষ্মী + নারায়ণ) হাতে দেখানো হয়েছে। যথার্থ অর্থে আত্মা কি বা পরমাত্মাই বা কি, একমাত্র পরমাত্মা ছাড়া এসব কিন্তু অন্য কেউ বলতেই পারবে না। আত্মা আসেই বা কোত্থেকে, কিভাবেই বা শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ! লোকেরা কখনও বলে চোখ থেকে বেরোয়, কভ্রূকূটি থেকে, আবার কখনও বলে মস্তক (ব্রহ্মতালু) থেকে। যা সঠিকভাবে কেউ জানে না। কিন্তু তোমরা বি.কে.-রা তা জানো। আত্মা এমন ভাবে শরীর ত্যাগ করে, বসে বসে বাবাকে স্মরণ করতে করতেই আত্মা শরীর ত্যাগ করে। আত্মা যখন পরমাত্মা বাবার কাছেই যাচ্ছে, তখন তো খুশী মনেই যেতে হবে সেখানে। অতএব পুরোনো এই শরীরকেও খুশী মনেই ত্যাগ করতে হবে। যেমন সাপের খোলস ছাড়ানোর মতন অবস্থা। জন্তু-জানোয়ারদের মধ্যে সে জ্ঞান আছে, অথচ, সাধারণ মানুষের মধ্যে সেটুকুও নেই। জাগতিক সাধু-সন্ন্যাসীরা কেবল দৃষ্টান্ত দিয়েই খালাস। তাই বাবা জানাচ্ছেন, বি.কে.-দের এমন হতে হবে যে, যেমন ভ্রমর কীটকে (মথকে) পতঙ্গতে (প্রজাপতিতে) পরিবর্তিত করে। তোমাদেরও তেমনি ভ্রমরের মতন মনুষ্য রূপী কীট-পতঙ্গদের প্রকৃত মানুষে পরিবর্তন করতে হবে। কেবল দৃষ্টান্ত দিয়েই থেমে থাকলে চলবে না, বাস্তবে তার রূপান্তরও করতে হবে। যেহেতু এখন তোমাদের আপন ঘরে ফেরার পালা। তোমরা অসীম জগতের বাবার কাছ থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার পাচ্ছো, অতএব তোমাদের মনে-প্রাণে এখন কতই না খুশী হওয়া উচিত। এই উত্তরাধিকার আসলে যে কি, অন্যেরা তো তা জানেই না। শান্তি সবাই পাবে, যেহেতু শান্তিধামে পৌঁছবে সবাই। এক ও একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই সবার সদগতি করতে পারে না। যুক্তি দিয়ে একথাও বোঝাতে হবে ভালভাবে। জাগতিক সাধু-সন্ন্যাসী, গুরুরা তো নিবৃত্তি-মার্গের, তাই তারা (অযথাই) ব্রহ্মে বিলীন হবার পুরুষার্থ করে। কিন্তু আমাদের এই বাবা তো সবাইকে গড়ে তোলেন প্রবৃত্তি-মার্গের। নিবৃত্তি-মার্গের যারা, তারা তো আর সত্যযুগের স্বর্গ-রাজ্যে স্থান পায় না। আর সেই জ্ঞানও কাউকে জানাতে পারে না। এসব যে অতি গুহ্য রহস্য। যা জানার জন্য প্রথমে তাদের 'অল্ফ্ আর বে'-এর পাঠ পড়তে হবে। তাদেরকে জানাও, তাদের দুই বাবা - একজন এই জগতের জাগতিক বাবা এবং অন্যজন অসীম জগতের বাবা। জাগতিক বাবা জন্ম দেন কাম-বিকারের দ্বারা, যার নেপথ্যে কতই না দুঃখ-কষ্ট! কিন্তু সত্যযুগে তো অপার সুখ। সেখানে জন্ম প্রক্রিয়া যেন মাখনের মতন। কোনও দুঃখ-কষ্টের নাম-গন্ধও নেই। তার নামটাই যে স্বর্গ-রাজ্য। অসীম জগতের বাবার কাছ থেকে সেই অসীম বাদশাহীর অবিনাশী উত্তরাধিকারের পাওয়া যায়। অবিনাশী নাটকের চিত্রপটে - প্রথমে থাকে সুখ, পরে দুঃখ। তাই এমনটা বলা মোটেই সঠিক হবে না যে, প্রথমে দুঃখ পরে সুখ৷ যেমন আগে নতুন দুনিয়া স্থাপন হয় - পুরোনো দুনিয়া স্থাপন হতে পারে না মোটেই। প্রথমেই কি কেউ পুরোনো ঘর-বাড়ি বানাতে পারে ? (তা মেরামত করতে পারে কেবল) নতুন দুনিয়ায় রাবণের উপস্থিতিও থাকে না। তাই বাবা বলছেন - বাচ্চারা, তোমরা তোমাদের বুদ্ধিতে এসব ধারণ করে, এর স্বপক্ষে যুক্তিগুলিকেও ভাবো। অসীম জগতের বাবা তোমাদেরকে অগাধ অসীমের সুখ প্রদান করেন। কিন্তু সেই প্রদানের পদ্ধতিটা যে কি, এসো এবার তা জানাই। যদিও এসব বলার জন্য অনেক যুক্তির প্রয়োজন। তাদেরকে প্রথমে এই দুঃখ-ধামের দুঃখগুলিকে বর্ণনা করো। কত অগাধ দুঃখ এই দুঃখ-ধামে, যার কোনও সীমা পরিসীমা নেই অর্থাৎ অপরম্অপার। যেহেতু নামটাই যে দুঃখ-ধাম। এখানে যতই সুখভোগ ভাবো না কেন, তবুও একে কেউ সুখ-ধাম বলবেই না। যেমন সুখ-ধামে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই তো শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরকেও সুখ-ধাম বলা হয় এই জগতেও। যেহেতু উনি প্রকৃত সুখ-ধামের মালিক ছিলেন৷ তাই তার মন্দিরে এমন ধুমধাম সহকারে পূজার্চনা চলে। আর তোমাদের এই (ব্রহ্মা) বাবা লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দিরে গেলেই বলবেন -"বাহ্, আগামীতে আমি তো এমনই হতে চলেছি।" তাই উনি এই লক্ষ্মী-নারায়ণকে কেনই বা আর পূজার্চনা করবেন। যিনি স্বয়ং নম্বর ওয়ান, তিনি কেনই বা সেকেন্ড কিম্বা থার্ডকে পূজার্চনা করতে যাবেন। যেখানে উনি সূর্য-বংশীতে অবস্থান করবেন। যা সাধারণ লোকেদের এসব কোনও কিছুই জানা নেই। তারা তো হোলসেল সবাইকেই ভগবান বলে থাকে। সত্যি কত ঘোর অন্ধকারে আছে তারা। যেখানে তোমরা বি.কে.-রা কত সুন্দর রীতিতে এসবকিছুই জানো। যদিও তা জানতে সময় তো লাগবেই - কল্প-পূর্বে ঠিক যতটা সময় লেগেছিলো। তাড়াহুড়ায় কিছুই সিদ্ধ (প্রাপ্তি) হয় না। যেহেতু তোমাদের এই জন্ম হীরার জন্ম। দেবতাদেরও এমন হীরে জন্ম হয় না কিন্তু। তারা তো পুরুষোত্তম সঙ্গম-যুগের এমন ঈশ্বরীয় পরিবারের সদস্য হন না। একমাত্র বি.কে.-দের এই পরিবারই হলো ঈশ্বরীয় পরিবার। আর দেবতাদের পরিবারকে বলা হয় দৈবী-পরিবার। কত নতুন নতুন শব্দ জানছো তোমরা। যদিও এসব গীতাতেও আছে, কিন্তু তা এতই যৎসামান্য যে, যেমনটা রুটির আটা মাখার সময় তাতে এক চিমটি নুন মেশানো হয়, তেমনই। অজ্ঞানী শাস্ত্রকারেরাই এমনই মহা ভুল করেছে - গীতার বাণী প্রচারকের জায়গায় শ্রীকৃষ্ণের নাম লিখে। লোকেদের প্রশ্ন করবে, দেবতাদের ক্ষেত্রে তারা যেখানে দেবতা-ই বলে থাকে, আলাদা ভাবে সেখানে আবার কৃষ্ণকে ভগবান কেন বলে ? জানতে চাইবে বিষ্ণু তবে কে ? একমাত্র বি.কে.-রাই তা জানো। মানুষেরা কোনও কিছু না জেনে, না বুঝেই পূজার্চনা করে থাকে। সবচেয়ে প্রাচীন হলো দেবী-দেবতারা, অতীতে যারা স্বর্গ-রাজ্যে ছিলেন। সতো, রজো, তমোর প্রভাবে সবাইকেই আসতে হয়। বর্তমান সময়কালে সবাই তমোপ্রধান। এমন কত পয়েন্টই তো বাচ্চাদেরকে বোঝানো হয়। বি.কে.-দের এই ব্যাচের বিষয়টাও ব্যাখ্যা করে লোকেদের বোঝাতে পারো। বাবা আর এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াবার টিচারকে অবশ্যই স্মরণ করা উচিত। কিন্তু মায়ার দিক থেকেও এমন আকর্ষণ আসে, এ যেন ঠিক যেন দড়ি-টানাটানির খেলা। মুরলী থেকে এমনই নানা প্রকারের খুব ভাল ভাল পয়েন্ট বেরিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু নিজেরা তা না শুনলে, অন্যদেরকে তবে শোনাবেই বা কি করে। যেমন, মহারথীরা যখন তীর্থে বা ভ্রমণে বেরোয়, তখন তাদের মুরলী পড়াই মিস্ হয়ে যায়। পরেও সেই মিস্ হওয়া মুরলী আর পড়া হয়ে ওঠে না। যেহেতু তারা পূর্বের সেই জ্ঞানে যথেষ্টই ভরপুর থাকে। কিন্তু বাবা বলছেন- রোজই কত গুহ্য-গুহ্য কথা শোনানো হয় তোমাদের। সেগুলি শুধু শুনলেই চলবে না, তা ধারণও করতে হবে। ধারণা না হলে তো কাঁচাই থেকে যাবে জ্ঞানে। অনেক বাচ্চাই এই জ্ঞানের পয়েন্টগুলিকে বিচার সাগর মন্থন করে খুব সুন্দর সুন্দর পয়েন্ট-ও বের করে, তা আবার বাবাকে শোনায়। বাবা তা শুনে আবার অন্যদেরকেও অর্থাৎ যে যেই স্তরের বাচ্চা তাদেরকে তেমন করে তা শোনান। সেবাধারী বাচ্চারা এমন এমন পয়েন্ট-ও শোনায়, যা বাবা শোনাননি কখনো। যেহেতু সর্বদাই তারা সেবার মধ্যেই নিয়োজিত থাকে। এছাড়া ম্যাগাজিন-গুলিতেও অনেক ভাল ভাল পয়েন্টও থাকে।



বাচ্চারা, ধীরে ধীরে এইভাবেই তোমরা নতুন বিশ্বের মালিক হয়ে ওঠো। বাবা তোমাদেরকে কত উচ্চ স্তরের গড়ে তোলেন। তা নিয়ে আবার গীত-ও রচিত হয়েছে, সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ থাকবে তোমাদের হাতেই । যা অন্যেরা আর কেড়ে নিতে পারবে না। লক্ষ্মী-নারায়ণ যেমন ছিলেন সমগ্র বিশ্বের মালিক। তাদেরকেও তো এই বাবা-ই এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠে তেমন করে গড়ে তুলছিলেন। উদাহরণে একথাও জানাতে পারো তোমরা, কি করে সেই রাজ্য-পাটের অধিকারী হয়েছিল তারা। এসব কিন্তু মন্দিরের পূজারীরাও কিছুই জানে না, যা তোমরা জানো। অতএব তোমাদের নিজের মনে কতই না খুশীর জোয়ার বইতে থাকে। এটাও তোমাদের বোঝাতে হবে - ঈশ্বর মোটেই সর্বব্যাপী নয়। বর্তমান সময়কালে সর্বব্যাপী হলো ৫-বিকার। যে বিকার প্রত্যেকেরই মধ্যে কম-বেশী আছে। এই বিকারগুলিকেই বলা হয় মায়ার ৫-ভুত। সেই মায়া-ই সর্বব্যাপী বিরাজিত। অথচ লোকেরা বলে যে ঈশ্বর বিরাজ করছেন সর্বত্র। এটাই সবচেয়ে বড় ভুল। আচ্ছা, কি করে ঈশ্বর সর্বব্যাপী হতে পারে ? উনি তো অসীম জগতের অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রদান ও কাঁটাকে ফুলে পরিণত করার কর্ম-কর্তব্যেই ব্যস্ত থাকেন। এইভাবে বোঝানোর অভ্যাসে অভ্যাসী হতে হবে কিন্তু বাচ্চাদেরকে অর্থাৎ বি.কে.-দেরকে। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদের জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. যখন কেউ কোনও প্রকারের অশান্তি ছড়াচ্ছে বা জ্বালাতন করছে, তোমাকে তখন শান্ত থাকতে হবে। তাকে বোঝাবার পরেও যদি তাকে কোনও পরিবর্তনে না আনতে পারো, তখন ভাববে তা তারই ভাগ্য। যেহেতু এখন রাজধানী স্থাপনের কাজ চলছে।

২. বিচার সাগর মন্থন করে এই বিশেষ জ্ঞানের নতুন নতুন পয়েন্ট বের করার সেবা করতে হবে। রোজকার মুরলীতে বাবা যেসব গুহ্য গুহ্য কথাগুলি শোনান, তা যেন কখনো মিস্ (বাদ) করবে না।

বরদান:-

সময়ের সাথে সাথে প্রতিটি শক্তির অনুভবকে বাস্তব স্বরূপে এনে মাস্টার সর্বশক্তিমান ভব

এক্ষেত্রে মাস্টার শব্দটির প্রকৃত অর্থ হলো, যে শক্তিকে যে সময়ে আহ্বান করবে, সেই শক্তিকে ঠিক সেই সময়েই যেন বাস্তব স্বরূপে অনুভব করতে পারো। হুকুম করলে আর হাজির হলো। তবে এমনটা যেন না হয় যে, সহনশক্তিকে হুকুম করলে কিন্তু এলো মোকাবিলা (সামনা) করার শক্তি - এমনটা হলে তাকে মাস্টার বলা যাবে না। অতএব ট্রায়াল (যাচাই) করে দেখো, যখন যে শক্তি আবশ্যক, সেই সময়কালে ঠিক সেই শক্তি-ই কার্যে সহায়তা করছে কি না? এতে এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হলেও, বিজয়ের পরিবর্তে তা পরাজয়ে পরিণত হবে।

স্লোগান:-

বুদ্ধিতে যেমন ঈশ্বরীয় নেশা থাকবে, কর্মেও ঠিক তেমনই নম্রতা ‌থাকবে ।