১৩-১০-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ২১-০২-৮৫ মধুবন


শীতলতার শক্তি

আজ জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান চন্দ্রমা তাঁদের লাকি আর লাভলি নক্ষত্রদের দেখছেন l এই আধ্যাত্মিক তারামন্ডল সারা কল্পে কেউ দেখতে সক্ষম নয় l তোমরা সব আধ্যাত্মিক নক্ষত্র আর জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান চন্দ্রমা এই অতি মনোরম এবং অনন্যসুলভ তারামন্ডল দেখছ l যাদের সায়েন্সের শক্তি আছে, তারা এই আধ্যাত্মিক তারামন্ডল দেখতে অপারগ l যাদের সাইলেন্সের শক্তি আছে তারা এই তারামন্ডল দেখতে এবং জানতে পারে l তাইতো, আজ তারামন্ডল পরিক্রমণ করাকালীন ভিন্ন ভিন্ন তারাগণ দেখে বাপদাদা পুলকিত হচ্ছেন, কীভাবে প্রত্যেক নক্ষত্র জ্ঞান সূর্যের থেকে সত্যতার লাইট আর মাইট নিয়ে বাবা সমান সত্যতার শক্তিসম্পন্ন সত্য স্বরূপ হয়ে উঠেছে l আর জ্ঞান চন্দ্রমার থেকে শীতলতার শক্তি ধারণ করে চন্দ্রমা সমান শীতল স্বরূপ হয়েছে l এই দুই শক্তি সত্যতা আর শীতলতা সদা সহজেই তোমাদের সফলতা প্রাপ্ত করতে সমর্থ বানায় l একদিকে সত্যতার শক্তির অতি মহান নেশা, অপরদিকে যতটা উঁচু নেশা ততটাই শীতলতার আধারে তোমরা যে কোনও রকম অশুদ্ধ নেশাযুক্ত বা ক্রোধিত আত্মাকে শীতল বানাতে পার l 'আমি আমি' - এই আমিত্ব বোধের যে কোনরূপ অহংকারের নেশা অন্যদের হতে পারে, কিন্তু তোমাদের শীতলতার শক্তি দ্বারা 'আমি আমি' বলার পরিবর্তে তারা 'বাবা বাবা' বলতে শুরু করে l শীতলতার শক্তি দ্বারা সত্যতা প্রমাণ করলে সিদ্ধি প্রাপ্তি হয় l নয়তো, যখন শীতলতার শক্তি ব্যতীত তোমরা সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা কর, আর তা' প্রমাণ হলেও অজ্ঞানী যারা, তারা তোমাদের প্রমাণ করার লক্ষ্যকে জিদ মনে করে l সেইজন্য সত্যতা আর শীতলতা উভয়ই সমানভাবে একসঙ্গে প্রয়োজন, কারণ আজকের বিশ্বে প্রত্যেক মানুষ কোনও না কোন অগ্নিতে জ্বলছে l এইরকম অগ্নিতে জ্বলন্ত আত্মাকে প্রথমে শীতলতার শক্তি দ্বারা অগ্নিকে শীতল কর। শুধুমাত্র শীতলতার আধারে তারা সত্যতাকে জানতে পারবে l



শীতলতার শক্তি অর্থাৎ আত্মিক স্নেহের শক্তি l চন্দ্রমা মা স্নেহের শীতলতা দ্বারা যে কোনও ভ্রষ্ট বাচ্চাকে পরিবর্তন করে দেন l সুতরাং স্নেহ অর্থাৎ শীতলতার শক্তি যে কোনও অগ্নিদগ্ধ আত্মাকে শীতল বানিয়ে সত্যতা ধারণ করানোর যোগ্য করে তোলে l সর্বাগ্রে চন্দ্রমার শীতলতার মাধ্যমে তোমরা যোগ্য হও, পরে জ্ঞান সূর্যের সত্যতার শক্তিতে যোগী হয়ে যাও ! সুতরাং জ্ঞান চন্দ্রমার শীতলতার শক্তি বাবার সামনে আসার যোগ্য বানায় l যোগ্য না হলে তোমরা যোগীও হতে পারবে না l সুতরাং, সত্যতা জানার আগে তোমাদের শীতল হতে হবে l সত্যতা ধারণ করার জন্য শক্তি প্রয়োজন l সুতরাং, যে আত্মার শীতলতার শক্তি আছে, সে তার সঙ্কল্পের গতিতে, বোলে, সম্পর্কে সব পরিস্থিতিতে শীতল হবে l সঙ্কল্পের গতি ফাস্ট (দ্রুত) হওয়ার কারণে অনেক ওয়েস্টও হয় আর কন্ট্রোল করতেও সময় নষ্ট হয় l তারপরে, সেই সমস্ত যখনই তোমরা কন্ট্রোল করতে বা পরিবর্তন করতে চাও, তা'তে আরও সময় আর শক্তি বেশি লাগাতে হয় l যথার্থ গতিতে যারা চলে অর্থাৎ যারা শীতলতার শক্তির প্রতিমূর্তি হয়ে থাকে, তারা ব্যর্থ থেকে রক্ষা পায় l অ্যাক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা পায় l এটা কেন, কি, এইরকম নয় ওইরকম - ফাস্ট স্পিডের এই ব্যর্থ থেকে তারা রেহাই পায় l ঠিক যেমন বৃক্ষের ছায়া যে কোনও পথিককে আরাম দেয়, সহযোগী হয়, একইভাবে শীতলতার শক্তিও অন্য আত্মাদের নিজের শীতলতার ছায়া দিয়ে সদা সহযোগের আরাম দেয় l সবাই আকৃষ্ট হবে এবং উপলব্ধ হবে এই আত্মার কাছে গিয়ে কয়েক মুহূর্ত তার শীতলতার ছায়ায় শীতলতার সুখ, আনন্দ নিই l যেমন চারিদিকে খুব কড়া রোদ থাকলে তোমরা ছায়াবৃত স্থানই খুঁজবে, তাই না ! ঠিক একইভাবে আত্মাদের নজর বা আকর্ষণ এইরকম আত্মাদের দিকে যায় l এখন বিশ্বে বিকার অগ্নি আরও তীব্র হতে চলেছে l আগুন লাগলে যেমন মানুষ চিৎকার করে, শীতলতার আশ্রয় খোঁজে, নয় কি ! সেরকমই এই মানব আত্মারা হতাশায় তোমরা সব শীতল আত্মাদের কাছে আসবে l শীতলতার কয়েক ফোঁটা দিয়ে আমাদের সিঞ্চন কর - এইভাবে তারা চিৎকার করবে l একদিকে বিনাশ অগ্নি, অন্যদিক বিকার অগ্নি ; তৃতীয় দিক - তাদের দেহ আর দেহগত সম্বন্ধ, পদার্থের মোহাগ্নি ; চতুর্থ দিক - অনুশোচনার অগ্নি l চতুর্দিকে তোমরা আগুন ব্যতীত আর কিছুই দেখবে না l সুতরাং, এইরকম সময়ে তারা তোমরা সব শীতলতার শক্তিদের কাছে দৌড়ে দৌড়ে আসবে, 'সেকেন্ডের জন্যও আমাদের শীতল কর l' এইরকম সময়ে শীতলতার শক্তি নিজেদের মধ্যে এত জমা হওয়া প্রয়োজন, যাতে চারিদিকের অগ্নিতাপে তোমরা আক্রান্ত না হও l চারদিকের অগ্নি নিবারণ করে শীতলতার বরদাত্রী শীতলা হও l যদি চার প্রকার অগ্নির সামান্যতম অংশও থাকে, তবে সেই সামান্য থেকে যাওয়া অগ্নির অংশ চতুর্দিকে আগুন ছড়িয়ে দেবে, ঠিক যেমন ভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে l সুতরাং, এটা চেক কর l



বিনাশ জ্বালার অগ্নি থেকে রক্ষা পাওয়ার সাধন নির্ভীকতার শক্তি l নির্ভীকতা বিনাশ জ্বালার প্রভাবে তোমাদের অস্থির হতে দেয় না, চঞ্চলতার মধ্যে নিয়ে আসে না l বিনাশ জ্বালায় ভয়ভীত আত্মাদের তোমরা নির্ভীকতার আধারে শীতলতার শক্তি দেবে l তারপরে, সেই আত্মারা ভয়-অগ্নি থেকে রক্ষা পেয়ে শীতলতার কারণে খুশিতে নাচবে l বিনাশ দেখেও স্থাপনার দৃশ্যও দেখবে l তাদের এক নয়নে মুক্তি-সুইট হোম, আরেক নয়নে জীবনমুক্তি অর্থাৎ স্বর্গ সমাহিত হয়ে থাকবে l তারা শুধু দেখবে নিজের ঘর নিজের রাজ্য l লোকে হায় হায় করবে, চিৎকার করবে, 'সবকিছু শেষ হয়ে গেল, আমি মরে যাচ্ছি !' আর তোমরা বলবে, 'নিজের মিষ্টি ঘরে, নিজের রাজ্যে যাচ্ছি l' নাথিং নিউ ! 'আমাদের ঘর, আমাদের রাজ্য' - তোমরা এই ঘুঙুর পরবে ; এই খুশিতে তোমরা নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে একসাথে ঘরে ফিরবে l লোকে আর্তনাদ করবে, আর তোমরা একসাথে ফিরে যাবে l শুনেই তোমরা খুশি হচ্ছ, তবে সেই সময় কত খুশি হবে ! তাহলে, চার অগ্নি থেকে তোমরা শীতল হয়ে গেছ, হয়েছ না ? তোমাদের তো শোনানো হয়েছে, বিনাশ জ্বালা থেকে রক্ষা পাওয়ার সাধন নির্ভীকতা l একইভাবে, বিকারের অংশমাত্র থেকে বাঁচার সাধন - নিজেদের আদি অনাদি বংশ স্মরণ করা l *অনাদি বাবার বংশভূত আমি সতঃপ্রধান আত্মা l আদি বংশভূত আমি দেব আত্মা l* দেব আত্মা ১৬ কলা সম্পন্ন, সম্পূৰ্ণ নির্বিকারী l সুতরাং অনাদি আদি বংশ স্মরণ করলে বিকারের অংশমাত্রেরও সমাপ্তি ঘটবে l



একইভাবে, তৃতীয় অগ্নি হলো দেহের প্রতি এবং দেহ সম্বন্ধীয়দের এবং স্থূল পদার্থের প্রতি মমত্ব-অগ্নি l এই অগ্নি থেকে রক্ষা পাওয়ার সাধন - বাবাকে তোমাদের জগৎ বানিয়ে নেওয়া l বাবাই যদি হন সারা সংসার, তবে সবকিছু অসার হয়ে যায় l কিন্তু কার্যত তোমরা কী কর, সেটা বাবা পরে অন্যদিন শোনাবেন l বাবাই সংসার, এটা স্মরণে থাকলে, না থাকবে দেহ, না থাকবে সম্বন্ধ আর না থাকবে স্থূল পদার্থ l সবকিছুর অবসান !



চতুর্থ বিষয় - অনুশোচনার অগ্নি l এর সহজ সাধন সর্বপ্রাপ্তি স্বরূপ হওয়া l অপ্রাপ্তি অনুশোচনা করায় l প্রাপ্তি অনুশোচনার অবসান ঘটায় l এখন সব প্রাপ্তি সামনে রেখে চেক কর, কোনও প্রাপ্তির অনুভব থেকে বঞ্চিত হওনি তো ! প্রাপ্তির লিস্ট আছে তো, তাই না ! অপ্রাপ্তি সমাপ্ত অর্থাৎ অনুতাপ সমাপ্ত l এখন এই চার বিষয়কে চেক কর, তবেই শীতলতা স্বরূপ হয়ে যাবে l অন্যদের তাপ শীতল করে শীতল যোগী বা শীতলা দেবী হয়ে যাবে l সুতরাং বুঝেছ শীতলতার শক্তি কী ! সত্যতার শক্তি সম্বন্ধে তোমাদের আগেই বলা হয়েছে l বাবা পরেও তোমাদের বলবেন l সুতরাং, শুনেছ তোমরা, বাবা তারামন্ডলে কী দেখেছেন ! বাবা তোমাদের অন্য সময়ে বলবেন l আচ্ছা -



সদা চন্দ্রমা সমান শীতলতার শক্তিস্বরূপ বাচ্চাদের, সত্যতার শক্তি দ্বারা যারা সত্যযুগ নিয়ে আসে, সদা শীতলতার ছায়ায় সকলকে হৃদয়ের আরাম দেয় এমন বাচ্চাদের, সদা চতুর্দিকের অগ্নি থেকে সেফ থাকে, শীতল যোগী শীতলা দেবী সেই বাচ্চাদের জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান চন্দ্রমার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*বিদেশি টিচার্স ভাই বোনেদের সাথে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার*

এটা কোন্ গ্রুপ ? (রাইটহ্যান্ড সেবাধারীদের) আজ বাপদাদা তাঁর ফ্রেন্ডস-এর সাথে মিলিত হতে এসেছেন l ফ্রেন্ডসের সম্পর্ক অতি মনোরম l বাবা যেমন সদা বাচ্চাদের স্নেহে সমাহিত হয়ে আছেন, ঠিক একইভাবে বাচ্চারাও বাবার স্নেহে সমাহিত হয়ে আছে l সুতরাং এটা লাভলীন গ্রুপ অর্থাৎ স্নেহে নিমজ্জিত হওয়া গ্রুপ l ভোজনপান করতে করতে, চলতে ফিরতে কোথায় লীন হয়ে থাক ? তোমরা ভালোবাসায় ডুবে থাক, তাই না ? ভালোবাসায় নিমজ্জিত থাকার স্থিতি সদা সব পরিস্থিতিতে সহজেই বাবা সমান বানিয়ে দেয়, কারণ বাবার ভালোবাসায় লীন হলে তাঁর সঙ্গের রঙে তোমরা রঙিন হবে, তাই না ? পরিশ্রম বা যে কোন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার সহজ সাধন লাভলীন থাকা অর্থাৎ ভালোবাসায় নিমজ্জিত হওয়া l ভালোবাসায় নিমজ্জমান হওয়ার এই স্থিতি ভাগ্যের ব্যাপার (লাকি) l তোমাদের এই স্থিতিতে মায়া আসতে পারে না l সুতরাং, এই গ্রুপ বাপদাদার অতি স্নেহী, কাছের এবং সমান l তোমাদের সঙ্কল্প আর বাবার সঙ্কল্পে ফারাক নেই l তোমরা এত কাছের, নয় কি ? আর শুধুমাত্র তখনই বাবা সমান বিশ্ব কল্যাণকারী হতে পার l যা বাবার সঙ্কল্প তা' বাচ্চাদের সঙ্কল্প l যা বাবার বোল, তা' বাচ্চাদের l তাহলে তোমার প্রতিটা কর্ম কেমন হওয়া উচিত ? (আয়না) সুতরাং তোমাদের সব কর্ম এমন আয়না হতে দাও যাতে বাবা প্রতীয়মান হন l এমনই গ্রুপ, তাই না ? অনেক রকম আয়না হয়, দুনিয়াতেও এমন অনেক আয়না বানানো হয়, যাতে ছোট জিনিস বড় আর বড় জিনিস ছোট দৃশ্যগোচর হয় l সুতরাং, তোমাদের প্রতিটা কর্মরূপী দর্পণ কী দেখাবে ? সবকিছু যেন ডবল দেখা যায়, তুমি আর বাবা l তোমার মধ্যে বাবাকে প্রতীয়মান হতে দাও l তোমরা ব্রহ্মা বাবার মধ্যে সদা ডবল দেখেছ, দেখেছ না ? একইভাবে, তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যে বাবাকে প্রতীয়মান হতে দাও l তাহলে ডবল তো দেখা যাচ্ছে, তাই না ? তোমরা কি এমনই আয়না ? তোমরা সব সেবাধারী বিশেষ কোন্ সেবার নিমিত্ত ? বাবাকে প্রত্যক্ষ করারই বিশেষ সেবা l সুতরাং, নিজেদের প্রতিটা কর্ম, বোল, সঙ্কল্প দ্বারা বাবাকে দেখানো l এইরকম কার্যে সদা থাক তো ! কখনও কোন আত্মা যদি আত্মাকে দেখে ভাবে যে সেই আত্মা খুব ভালো বলে, খুব ভালো সেবা করে, খুব ভালো দৃষ্টি দেয়, তাহলে সেটা বাবাকে দেখছে না, সেই আত্মাকেই দেখছে l সুতরাং এটাও রং l তোমাকে দেখে তাদের মুখ থেকে বের হতে দাও 'বাবা', শুধুমাত্র তখনই বলা হবে পাওয়ারফুল দর্পণ l এককভাবে আত্মা প্রতীয়মান হবে না, বাবাকেও প্রতীয়মান হতে দাও l একেই বলে যথার্থ সেবাধারী l বুঝেছ তোমরা ! তোমাদের প্রতিটা সঙ্কল্পে, বোলে যতটা 'বাবা বাবা' হবে, অন্যরা সেই অনুপাতেই তোমাদের মাধ্যমে বাবাকে দেখতে সমর্থ হবে l আজকাল, সায়েন্সের সাধন দ্বারা এমন অনেক জিনিস দেখা যায়, যা প্রথমে দৃশ্যগোচর হয় আর পরে তা' অন্তর্হিত হয় আর সেই জায়গায় অন্য কিছু দেখা যায় l ঠিক একইভাবে, যখন তারা তোমাদের দেখে, তখন তোমাদের সাইলেন্সের শক্তি তোমাদের অন্তর্হিত করে দেয় এবং বাবাকে প্রত্যক্ষ করায় l সেবা এইরকমই শক্তিশালী হতে হবে l বাবার সঙ্গে যখন আত্মার সম্বন্ধ জুড়ে যায়, আত্মারা সদা শক্তিশালী হয়ে ওঠে l যদি আত্মার সঙ্গে সম্বন্ধ জুড়ে যেত তবে সবসময়ের জন্য শক্তিশালী হতে পারত না l বুঝেছ তোমরা ! সেবাধারীদের বিশেষ সেবা কী ? তোমাদের নিজেদের দ্বারা বাবাকে দেখানো l যখনই তারা তোমাদের দিকে দেখবে, তারা যেন 'বাবা' 'বাবা' গীত গাইতে পারে l এইরকম সেবা তো কর, তাই না ! আচ্ছা -



অমৃতবেলায় সবাই *দিলখুশ* মিঠাই খাও ? সেবাধারী আত্মারা রোজ দিলখুশ মিঠাই খেলে, তারা অন্যদেরও খাওয়াতে পারবে l তখন নিরুৎসাহিত হওয়ার পরিস্থিতি তোমাদের কাছে আসবে না l জিজ্ঞাসু এমন বিষয় নিয়ে আসবে না l নয়তো এতেও তোমাদের সময় দিতে হয়, তাই না ! তখন সেই সময় বেঁচে যাবে আর অন্য অনেককে দিলখুশ মিষ্টি সেই সময়ে খাওয়াতে থাকবে l আচ্ছা-



তোমরা সবাই প্রফুল্লহৃদয় (দিলখুশ) থাক ? কোনও সেবাধারী কখনও রোদন কর না তো ! কখনো কখনো মনও কাঁদে, শুধু চোখের কান্না নয় l তাহলে তোমরা কান্নাকাটি কর না, তাই না ! আচ্ছা তোমরা কী অভিযোগ কর ? তোমরা বাবার কাছে অভিযোগ কর ? 'কেন আমার সঙ্গে এমন হয় ? আমারই পার্ট কেন এইরকম ? শুধু আমারই সংস্কার কেন এইরকম ? কেন আমি এমন জিজ্ঞাসু পাই না ? অথবা এমন দেশই বা কেন আমায় দেওয়া হ'লো ! তোমরা এইরকম অনুযোগ কর না তো ? অভিযোগ অর্থাৎ ভক্তির অংশ l যেমনই হোক, কিন্তু পরিবর্তন করাই সেবাধারীদের বিশেষ কর্তব্য l দেশ হোক বা জিজ্ঞাসু (শিক্ষার্থী), কিংবা নিজের সংস্কার বা সাথী, অভিযোগ করার পরিবর্তে পরিবর্তনের কার্যে নিজেকে নিযুক্ত কর l সেবাধারী কখনও অন্যদের দুর্বলতার দিকে দেখে না l যদি অন্যদের দুর্বলতা দেখ, তাহলে নিজেও দুর্বল হয়ে যাবে, সেইজন্য সদা প্রত্যেকের বিশেষত্ব দেখ l বিশেষত্ব ধারণ কর l বিশেষত্বেরই বর্ণন কর l এটাই সেবাধারীর উড়তি কলার বিশেষ সাধন l বুঝেছ তোমরা ! আর কি করে সেবাধারী ? খুব ভালো ভালো প্ল্যান তৈরি করে, তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনাও খুব ভালো l বাবা আর সেবার প্রতি প্রবল স্নেহও থাকে l এখন কি করতে হবে ?



এখন বিশ্বে বিশেষ দু'টো সত্ত্বা আছে - ১) রাজ্য সত্ত্বা ২) ধর্ম সত্ত্বা l ধর্ম নেতা আর রাজ্য নেতা l আলাদা আলাদা অক্যুপেশনের লোক হলেও সত্ত্বা এই দুইয়েরই সাথে l সুতরাং এই দুই সত্ত্বা যেন এখন এমন স্পষ্ট অনুভব হয় যে ধর্মসত্ত্বাও সত্ত্বাহীন হয়ে গেছে আর রাজ্য সত্ত্বার লোকেও যেন অনুভব করে যে তাদের মাত্র নামেই রাজ্য সত্ত্বা আছে কিন্তু সত্যিই এখন কোনও সত্ত্বা নেই l কীভাবে তোমরা তাদের এই অনুভব করাবে, সেই সাধন কি ? যে ধর্ম নেতা বা রাজ্য নেতারা আছে তাদের *পবিত্রতা এবং একতা'র* অনুভব করাও l এই দু'টো জিনিসের অভাবে উভয় সত্ত্বাই দুর্বল l সুতরাং যখন তারা পিওরিটি কী, ইউনিটি কী -এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাবে, বুঝতে পারবে তারা দুর্বল আর তোমরা শক্তিশালী l এটা বিশেষভাবে মনন কর l ধর্মসত্ত্বার তারা যে সত্ত্বাহীন, তা' উপলব্ধি করানোর বিশেষ উপায়, পবিত্রতা প্রমাণ করা l আর যাদের রাজ্য সত্ত্বা, তাদের সামনে একতা প্রমাণ করা l এই টপিক মনন কর l প্ল্যান তৈরি কর আর তাদের কাছে পৌঁছে দাও l এই দুই শক্তিকে প্রমাণ করলে ঈশ্বরীয় সত্ত্বার ধ্বজা তোমরা সহজেই ওড়াতে পারবে l এখন এই দুই দিকেই বিশেষ অ্যাটেনশন প্রয়োজন l অভ্যন্তরীণভাবে তারা এটা বোঝে, কিন্তু এখনও বাহ্যিক দাম্ভিকতা আছে l তোমাদের পিওরিটি আর ইউনিটির শক্তি যেমন যেমন বাড়তে থাকবে, তারা তোমাদের কাছের সম্বন্ধে আসতে থাকবে আর তারা নিজেরাই এই সবকিছুর বর্ণন করতে শুরু করবে l বুঝেছ ! যখন তোমরা উভয় সত্ত্বাকেই দুর্বল প্রতিপন্ন করবে অর্থাৎ যুক্তি দ্বারা নিজেদের মত সমর্থন করতে পারবে, তখনই প্রত্যক্ষতা হবে l আচ্ছা !



এমনিতে সেবাধারী গ্রুপ তো সদাই সন্তুষ্ট l তোমরা নিজের প্রতি, সাথীদের প্রতি, সেবার প্রতি সর্বপ্রকারে সন্তুষ্ট যোগী l এই সন্তুষ্টতার সার্টিফিকেট তো তোমরা নিয়েছ, তাই না ! বাপদাদা, নিমিত্ত দাদী দিদিরা সবাই তোমাদের সার্টিফিকেট দেবেন, 'হ্যাঁ এরা সন্তুষ্ট যোগী l' ঘুরতে-ফিরতে তোমরা সার্টিফিকেট লাভ কর l আচ্ছা, কখনো মুড অফ কর না তো ? কখনো সেবায় ক্লান্ত হয়ে মুড অফ হয় না তো ? 'কি করার আছে, এত তাড়াহুড়োরই বা কি আছে ? এইরকম ভাবো না তো !

সুতরাং, এখন এইসব ব্যাপারগুলো নিজের মধ্যে চেক কর l যদি কিছুর ঘাটতি থাকে তো নিজেকে চেঞ্জ করে নাও, কারণ সেবাধারী অর্থাৎ যে স্টেজে সব কর্ম করে l স্টেজে থাকাকালীন তোমাদের সদা শ্রেষ্ঠ আর যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে l এমন কখনও ভেবো না, 'আমি অমুক দেশে সেন্টারে বসে আছি', কিন্তু তোমরা বিশ্বের স্টেজে বসে আছ l এই স্মৃতিতে থাকলে প্রতিটা কর্ম নিজে থেকেই শ্রেষ্ঠ হবে l তোমাদের যারা ফলো করছে তারা অনেক, অতএব, যদি তোমরা সদা বাবাকে ফলো কর, তখন যারা তোমাদের ফলো করছে তারা বাবাকেও ফলো করবে l সুতরাং ইনডিরেক্টলি তাদের বাবাকেই ফলো করা হবে, কারণ তোমাদের প্রতিটা কর্ম হয় ফলো ফাদার করে, অতএব, সদা এই স্মৃতি রাখ l আচ্ছা- তোমাদের ভালোবাসার কারণে তোমরা পরিশ্রমের ঊর্ধ্বে l

বরদান:-

এক বাবাকে কম্প্যানিয়ন (সব সময়ের সাথী) বানিয়ে বা তাঁর কম্পানীতে থেকে সম্পূৰ্ণ পবিত্র আত্মা ভব

সম্পূর্ণ পবিত্র আত্মা সে, যার সঙ্কল্প এবং স্বপ্নেও ব্রহ্মচারীর পবিত্রতা ধারণ হয়েছে, যে প্রতি পদে ব্রহ্মাবাবার আচরণ অনুসরণ করে l পবিত্রতার অর্থ, সদা বাবাকে কম্প্যানিয়ন বানানো এবং বাবার কম্পানীতেই থাকা l সংগঠনের কম্পানী, পরিবারের স্নেহের মর্যাদা আলাদা ব্যাপার, কিন্তু এটা শুধুমাত্র বাবার জন্য সংগঠনের স্নেহের কম্পানী তোমরা লাভ করেছ, বাবা যদি না হতেন তবে ফ্যামিলি কোথা থেকে আসত ! বাবা বীজ, বীজকে কখনও ভুলো না l

স্লোগান:-

কারও প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে, জ্ঞানের প্রভাবে অন্যকে প্রভাবান্বিত কর l