২৭-০২-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - নিজের রোজকার মান-তালিকা (চার্ট) সামনে রাখলে বুঝতে পারবে, এগোচ্ছ নাকি পিছিয়ে পড়ছো। দেহ-অভিমান পিছিয়ে দেয় আর দেহী-অভিমানী স্থিতি এগোতে সাহায্য করে

প্রশ্ন:-

সত্যযুগের শুরুতে আসা আত্মারা আর দেরীতে আসা আত্মাদের মধ্যে মুখ্য প্রভেদগুলি কি কি ?

উত্তর:-

শুরুতে আসা আত্মাদের মধ্যে সুখ প্রাপ্তির আগ্রহ থাকবে, যেহেতু সত্যযুগের শুরুতে আদি সনাতন ধর্মের রাজত্বকালে- কেবলই সুখ আর সুখ। দেরীতে আসা আত্মাদের মধ্যে সেই সুখ পাওয়ার আগ্রহ আসবে না। তারা চাইবে- কেবল শান্তি আর শান্তি। অথচ, চাইলে প্রত্যেক আত্মাই অসীম (বেহদের) এই বাবার কাছ থেকে সেই সুখ ও শান্তির আশীর্বাদী-বর্সা পেতে পারে।

ওঁম্ শান্তি!

'ভগবানুবাচঃ' অর্থাৎ শিববাবা বলছেন ! যখন ভগবানুবাচ বলা হয়, তখন বাচ্চাদের মন-বুদ্ধিতে কৃষ্ণের কথা আসে না। কেবল শিববাবাই স্মরণে আসে। বাচ্চাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাবার পরিচয় জানানো। যেহেতু এই বাবার থেকেই ওয়ারিশনের আশীর্বাদী-বর্সা পায় বাচ্চারা। অথচ, তোমরা কিন্তু একথা বলতে পারো না যে, তোমরা শিববাবারই অনুগামী (ফলোয়ার্স)। কিন্তু শিববাবার সন্তান অবশ্যই, অনুগামী নও। সর্বদাই নিজেকে ওঁনার বাচ্চা হিসাবে গণ্য করবে। লোকেরা কিন্তু জানেই না যে উঁনি, একাধারে যেমন বাবা, তেমনি আবার টিচার এবং সদগুরুও বটে। বাচ্চারা, তোমাদের মধ্যেও অনেকে তা ভুলে যাও। একথা স্মরণে থাকার অর্থ সৌভাগ্যের প্রপ্তি। অলৌকিক এই বাবাকে ভুলে গেলেই, লৌকিক দেহ-সম্বন্ধের স্মরণে এসে যাও। বাস্তবে তোমাদের বুদ্ধি থেকে অন্য সবকিছুই ঝেড়ে ফেলা উচিত। একমাত্র এই বাবাই যেন স্মরণে থাকে। তোমরাই তো তা বলে থাকো- "ত্বমেব মাতাশ্চঃ পিতা ত্বমেব ......!" সেক্ষেত্রে অন্য কেউ স্মরণে এলে তো আর এমনটা বলা যাবে না যে, সদগতি অভিমুখে এগোচ্ছো। দেহ-অভিমান তো কেবল দুর্গতিই আনে। সদগতির প্রাপ্তি হয় দেহী-অভিমানী হতে পারলে। আর এই কারণেই কখনও ঊর্ধ্বগতি, আবার কখনও নিম্নগতি হয় তোমাদের। কখনও সামনের দিকে এগিয়ে যাও, তো কখনও পিছনের দিকে। তোমাদের বেশীর ভাগই এই দেহ-অভিমানে চলে আসে। তাই তো বাবা বারবার সতর্ক করে বলেন মান-তালিকা (চার্ট) রাখলে তবেই তা বুঝতে পারবে, তুমি কতটা এগোতে পারলে বা কতটা পিছিয়ে পড়লে। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই যে স্মরণের-যোগের উপর। এই কারণেই তা উপর-নীচ হয়। ফলে বাচ্চারা তোমরাও জ্ঞানের মার্গে চলতে চলতে হাঁফিয়ে পড়ো, আর ক্রন্দনের স্বরে বলতে থাকো- "বাবা আমাদের যে এই দশা।" বাবাকে স্মরণ করতেই যে ভুলে যাও তোমরা। তাই দেহ-অভিমানে এসেই পিছিয়ে পড়ো তোমরা। ফলে কিছু না কিছু পাপ-কর্মও হয়ে যায়। যা কিছু প্রাপ্তি, তা তো হয় এই যোগ-বলের মাধ্যমেই। স্মরণের যোগে আয়ু বৃদ্ধি হয় বলেই তো "যোগ" শব্দটির এত খ্যাতি। যোগের তুলনায় জ্ঞান তো খুবই সহজ। এমনও অনেকে আছে, যার তেমন জ্ঞানও নাই, যোগের অভ্যাসও নাই, তারা কেবলই লোকসানের খাতায়। অনেকে আবার এমনও আছে যারা একদমই পুরুষার্থ করে না। ক্রমিক অনুসার হয় জ্ঞানের পঠন-পাঠনের উপর। পাঠের ধরণ দেখেই বোঝা যায় কে কতদূর এগোবে, আর অন্যদের প্রতি কতটা সেবা করতে পারবে। সবাইকেই শিববাবার পরিচয় অবশ্যই জানাতে হবে। বাচ্চারা, তোমরা তো জেনেছো, বেহদের এই আশীর্বাদী-বর্সা একমাত্র এই বেহদের বাবার কাছেই পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রধান হলেন মাতা-পিতা আর তোমরা বি.কে.-বাচ্চারা। এটা একটা ঈশ্বরীয় পরিবার। অন্যদের বুদ্ধিতে তা আসবেই না, তারাও কিন্ত সেই একই শিববাবারই সন্তান। অথচ, অবিনাশী উত্তরাধিকার তাদেরও নেওয়া উচিত, একমাত্র এই বাবার স্মরণে থেকে। শিববাবা নিরাকার- এই সূত্র ধরে বাবার পরিচয় জানাও। যেহেতু উনি অসীমের বাবা, তাই উনি সর্বত্র, একথা বলা যায় না মোটেই। তা হলে ওঁনার অবিনাশী সম্পদ পাবে কি করে ? পবিত্রই বা হবে কিভাবে ? তাই তো বাবা বারবার সতর্ক করে বলেন -"মন্মনাভব, আর আমাকে স্মরণ করো।" লোকেরা তো এসবের কিছুই বোঝে না। বাস্তবে কৃষ্ণকেও সবাই সঠিকভাবে জানে না। ময়ূরপঙ্খী মুকুটধারী বর্তমানের এই দুনিয়ায় আসবেই বা কোথা থেকে ? এসব অনেক উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানের কথা। এত উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান যেখানে, তা বুঝতে কিছু অসুবিধা তো হবেই। এর নাম হল সহজ রাজযোগ । বাবার থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার নেওয়াও কিন্তু যথেষ্টই সহজ ব্যাপার। তবুও কেন যে বাচ্চারা তা কঠিন ভাবে ? আসলে তারা যে বাবাকে স্মরণই করে না।



বাবা বাচ্চাদেরকে দুর্গতি আর সদগতির রহস্যও বুঝিয়েছেন । বর্তমানে সব কিছুই দুর্গতিতেই যাচ্ছে । মনুষ্য মতই মানুষকে দুর্গতি তে নিয়ে যাচ্ছে । তোমাদের হল ঈশ্বরীয় মত। সেইজন্য বাবা এই বৈপরীত্য (কনট্রাস্ট) বোঝানোর জন্য চিত্র বানিয়েছেন । প্রত্যেকে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করো - আমরা নরকবাসী নাকি স্বর্গ বাসী ? সত্যযুগ এখন কোথায়? লোকেরা তো এসবের কিছুই জানে না। সত্যযুগকে তারা অলীক-কল্পনা বলেই ভাবে। এসব নিয়ে অনেক মতও আছে। আর এই অনেক মতের কারণেই এত দুর্গতি। সদগতি হয় এক (ঈশ্বরীয়) মতের দ্বারা। এ নিয়ে আবার স্লোগানও আছে- "মনুষ্যই মনুষ্যকে দুর্গতিতে নিয়ে যায়। একমাত্র ঈশ্বরই সবার সদগতিদাতা।" এর মানে এসে দাঁড়াল, তোমরা যা বলছ, তা সত্য এবং শুভ। আর তাই তো তোমরা বাবার কত মহিমাও করো। উনি সবারই বাবা, সবারই সদগতি একমাত্র উনিই করেন। বাবা অনেকবার বুঝিয়েছেন, প্রভাতফেরী বের করে লোকেদের জানাও- এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে হেভেনলী গড-ফাদার এই পদ প্রাপ্ত করাচ্ছেন, এখন নরকেরও অন্তিম কাল আসতে চলেছে । যদিও এভাবে বোঝাতে পরিশ্রমও করতে হয় যথেষ্ট। এরোপ্লেন থেকেও প্রচারপত্র ছড়াতে পারো। আমরা সবাই সেই এক বাবার-ই মহিমা করি, যিনি সবারই সদগতিদাতা। সেই বাবা স্বয়ং এখন বলছেন- বাচ্চারা, আমি তোমাদের কেবল সদগতি-ই করি, কিন্তু তোমাদের এমন দুর্গতি করেন কে ? একথা তো বলাই হয়, কল্পের শুরুর অর্ধেকটা স্বর্গ-রাজ্য আর শেষের অর্ধেকটা নরক-রাজ্য। রাবণ-রাজ্য অর্থাৎ আসুরী-রাজ্য, যার গতিমুখ কেবলই নিম্নে, আর রাবণের এই উল্টো মতেই চলছে দুনিয়া। পতিত-পাবন তো কেবল একমাত্র এই বাবা, যার থেকে বি.কে.-রা নতুন বিশ্বের অধিকারীর পদ পায়। অতএব এই শরীরের মোহ থেকে নিজেকে বের করে আনো। কিন্তু হংস আর বক একসাথে থাকলে মোহ থেকে বেরোবেই বা কিভাবে ? প্রত্যেকের অবস্থাই বিবেচনা করা হয় । সাহস তখনই আসতে পারে, যখন কেউ নিজের জীবিকা নিজেই নির্বাহ করতে সক্ষম থাকে, তখন অযথা ঝঞ্ঝাটের মধ্যে থাকবে কেন। পেট আর কতটুকু খাদ্য চায় ? মাত্র দুটো রুটি হলেই আর চিন্তা কীসের । কেবল এই পণ-‌ই করা উচিত, বাবাকেই স্মরণ করতে হবে। যার দ্বারা সকল বিকর্ম বিনাশ হয়ে যাবে । তার অর্থ এই নয় যে সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দাও। কাজকর্ম না করলে পয়সা আসবে কোথা থেকে ? বি.কে. হয়ে তো আর ভিক্ষা করা যাবে না।



এটা তো তোমাদের নিজের বাবার ঘর, শিববাবার ভাণ্ডার। এখান থেকে তোমরা খেতেই পারো। কিন্তু সেবা-কার্য না করেই যদি খাও, সেটাও তো ভিক্ষারই সামিল। তাছাড়াও যার ফল স্বরূপ আগামী ২১-জন্ম কঠিন সেবা করতে হবে। রাজা থেকে শুরু করে নিঃস্ব পর্যন্ত সবাই এখানে আছে। সেখানেও আছে, কিন্তু সেখানে সদা সুখ আর এখানে সদা দুঃখ। কিন্তু পদ-মার্যদা বলেও তো একটা ব্যাপার থাকে। অতএব বাবার সাথে সম্পূর্ণ যোগ রাখতে হবে। সেবাও করতে হবে। নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, এই যজ্ঞে কতটা সেবা করছি ? একথা তো জানাই আছে, ঈশ্বরের কাছে সবকিছুরই হিসাব থাকে। তাকে সাক্ষী হয়ে দেখা হয় যে এমন চাল-চলনে কেমন পদের প্রাপ্তি হবে ? একথা তো বুঝতেই পার, বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চললে কত উচ্চ-পদের অধিকারী হওয়া যায়, আর তা না হলে কত নিম্নমানের পদপ্রাপ্তি হয়- এসব যথেষ্ট বোঝার ব্যাপার। প্রদর্শনীতে তোমাদের নিকট যে কোনও ধর্মেরই যে কেউ আসুক না কেন, তাদেরকে জানাবে, অসীমের এই বাবার কাছ থেকে অসীম সুখ-শান্তির অবিনাশী উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। অসীম এই বাবা-ই যে একমাত্র শান্তিদাতা। আর তাই তো ওঁনাকেই বলা হয় "শান্তি-দেবা" (শান্তির দেবতা)! কোনও জড় চিত্র তো আর শান্তি দিতে পারে না। বাবা জানাচ্ছেন- বাচ্চারা, তোমাদের (আত্মার) প্রকৃত স্বধর্ম হলো শান্ত! তাই তো তোমরা শান্তিধামেই যেতে চাও। তোমরা যখন বলতে থাকো- "শিববাবা আমাদের শান্তি দাও", বাবা দেবেন না কেন ? বাবা তাঁর বাচ্চাদেরকে অবিনাশী উত্তরাধিকার দেবেন না কেন । সুখের জন্য আকুতি জানায়। তিনি তো বাচ্চাদের জন্য স্বর্গ স্থাপন করেন, তাহলে সুখ দেবেন না কেন । তাঁকে স্মরণ না করলে, ওঁনার কাছে না চাইতে উনি দেবেনই বা কিভাবে ? শান্তির-সাগর তো একমাত্র বাবা-ই তাই না ! তোমরা সুখ চাও, বাবা বলেন, শান্তির পরেই সুখ আসবে। *শুরুর দিকে যারা আসবে, তারাই সেই সুখ পাবে। যারা দেরীতে আসে, তারা তো তা জানেই না সুখ চাইতে হয় কিভাবে৷ তাই তারা কেবল মুক্তি-ই চাইবে* । যদিও সবাই প্রথমে মুক্তিতে যাবে । সেখানে তো দুঃখই থাকবে না।



তোমরা জানো, প্রথমে আমরা মুক্তিধাম গিয়ে তারপর জীবন-মুক্তিতে আসব । অন্যেরা তখন যাবে মুক্তিতে (মুক্তিধামে)। একেই বলা হয় কর্ম-ফলের হিসেব-নিকেশের সময় (কয়ামত) । সবাইকেই হিসেব মিটিয়ে দিতে হয়। এমনকি জন্তু-জানোয়ারদেরও হিসেব-নিকেশ হয়। যেসব জন্তু-জানোয়ার রাজ-রাজাদের কাছে থাকে, তাদের কত সুন্দর ভাবে পালন করা হয়। ঘোড়দৌড়-এর ঘোড়াদের কত যত্ন সহকারে পালন করা হয়, যেহেতু খুব দ্রুততম ঘোড়াদের দ্বারা অনেক অর্থও উপার্জন হয়। এমন ঘোড়ার মালিকেরা তো ঘোড়াকে ভালবাসবেই। এও অবিনাশী নাটকে লিপিবদ্ধ রয়েছে । কিন্তু সেখানে (স্বর্গে) এসব হয় না। রেস (ঘোড়দৌড়) ইত্যাদি শুরু হয় অনেক পরের দিকে। এসবই হল পূর্ব থেকে রচিত খেলা । তোমরা এখন সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তকেও জানো। আদিতে মানুষের সংখ্যা থাকবে খুবই কম। তোমরা বি.কে.-রা তখন সমগ্র বিশ্বেই রাজত্ব করতে থাকবে। এখনই প্রত্যেকে তোমরা নিজেরাই নিজেদের পদ প্রাপ্তির আন্দাজ করতে পারবে। আমরা কি অনেকের কল্যাণ করছি ? এতেই পরিশ্রম তো করতেই হয়, কেননা তোমরা যে বাবাকে পেয়েছ.! জগতের লোকেরা তো লড়াই-ঝগড়াতেই ব্যস্ত থাকে। বিনাশের উদ্দেশ্যে কত কি না বানিয়েই চলেছে তারা। এমন এমন সব বোম্ব বানিয়েছে যার দ্বারা সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। শেষ সময়ে যখন সব কিছুতেই আগুন লাগলে কি আর কিছু বাঁচে। আর তা নিভানোর জন্যও কেউ থাকবে না। এমন কত বোম্ব নিয়তই বানিয়ে চলেছে। বোম্ব-এর মধ্যে আবার গ্যাস, বিষ এমন কত কি না দিচ্ছে তারা৷ হাওয়ায় তা ছড়িয়ে গিয়ে সবাই শেষ হয়ে যাবে। মৃত্যু এখন তোমাদের দোরগোড়ায় ! তাই তো বাবা বলছেন-"অবিনাশী উত্তরাধিকার" নিতে চাইলে, এক্ষুণি তা নিয়ে নাও। এরজন্য অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। খুব বেশী পয়সা-কড়ি রোজগারের দিকে ব্যস্ত হয়ো না। এমনিতেই কত দিকের চিন্তা করতে হয় তোমাদের। যদিও সেসব থেকে মুক্ত করিয়েছেন বাবা। বর্তমানের এই দুনিয়াটাই হল ছিঃ ছিঃ দুনিয়া। অতএব বি.কে.-দের উচিত কেবলমাত্র বাবাকে স্মরণ করতে থাকা, যাতে তোমাদের বিকর্মগুলি বিনাশের পর বাবার কাছ থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার নিতে পারো। খুব প্রেমের সাথে স্মরণ করতে হবে বাবাকে। লক্ষ্মী-নারায়ণের চিত্র দেখলেই মন খুশীতে নেচে ওঠে। এমন হওয়ার আগ্রহ ও লক্ষ্য রাখতে হবে। যদিও এতদিন দেবতা হিসাবে তাদেরকে পূজো করে এসেছ, কিন্তু একথা এতদিন জানা ছিল না যে, তোমরাও তেমনটা হতে পারো৷ যারা এতদিন ছিল পূজারী, তারাই হতে চলেছে পূজ্য। বাবা এসেই এসব পূজা-অর্চনা করা ছাড়িয়ে দিয়েছেন। বাবা তোমাদের বিনাশের সাক্ষাৎকার করিয়েছেন না ! আগামীতে আমরাই বিশ্বের মালিক হতে চলেছি। বর্তমান দুনিয়ার যা কিছু, সব কিছুরই বিনাশ হতেই হবে, তবে কেন না বাবার স্মরণেই থাকি। আর অন্তরে কেবল ওঁনার মহিমাই গাইতে থাকি - বাবা, তুমি কত মিষ্টি বাবা।



তোমরা তো জানো, আমাদের, অর্থাৎ সব আত্মাদের একই বাবা। অবিনাশী উত্তরাধিকার একমাত্র ওঁনার থেকেই পাওয়া যায়। যখন তোমরা ভক্তি-মার্গে ছিলে, তখনও ওঁনাকেই স্মরণ করতে। তিনি হলেন পরমধাম নিবাসী, সেই চিত্রও আছে তোমাদের কাছে। উনি যদি না আসতেন, তবে সেই চিত্র তোমরা পেতে কিভাবে ? ওঁনার জন্মদিনও তো তোমরা পালন করো 'শিব-জয়ন্তী' হিসাবে। ওঁনাকেই বলা হয় 'পরমপিতা-পরমাত্মা'! অন্যদেরকে হয় মনুষ্য বা দেবতা বলা হয়। কল্পের শুরুতে থাকে আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম, পরে অন্যান্য ধর্মগুলির বিস্তার হতে থাকে ধীরে ধীরে। অতএব, এমন বাবাকে কত প্রেম-পূর্বক স্মরণ করা উচিত। ভক্তি-মার্গে থাকাকালীন তো কত উচ্চ স্বরে বাবাকে আহ্বান করতে। যদিও সেসব শব্দগুচ্ছের মর্মার্থ কিছুই বুঝতে না তোমরা। যেমন মনে আসত- তেমন মহিমা করতে। কত প্রকারের স্তুতিবাক্য। বাবার আর কি বা স্তুতি করবে ! তুমিই কৃষ্ণ, তুমিই ব্যাসদেব, তুমিই অমুক, তুমিই তমুক - এ তো গ্লানি করাই হল, তাই না ! এভাবেই বাবার কতো অপকার করেছে। বাবা বলেন- ড্রামানুসারেই এরা বাবার এমন অপকার করলেও বাবা এসে কিন্তু তাদের সবারই উপকার করেন, সবারই সদগতি করেন। নতুন দুনিয়া স্থাপনের উদ্দেশ্যই তো বাবার আগমন। সৃষ্টি চক্রের এই খেলাটাই যে এমন হার-জিতের খেলা। ৫-হাজার বছরের এই ড্রামা সেভাবেই রচিত হয়েছে। যেখানে সামান্যতমও হের-ফের হয় না। অবিনাশী এই ড্রামার রহস্যগুলি একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই বোঝাতে পারে না। মানুষের তো হরেক রকমের মত ক্রমশ বেরোতেই থাকে । যার সাথে দেবতা মত মেলে না। মানুষ যে যার মতন করে মত প্রকাশ করে। এবার তোমাদের আর অন্য কাউকে স্মরণ করতে হবে না। আত্মা যেন তার প্রকৃত বাবা পরমাত্মাকেই স্মরণ করতে থাকে। যদিও এতে পরিশ্রম তো আছে। ভক্তিতে ভক্তরাও তো কত পরিশ্রম করে। কত শ্রদ্ধা সহকারে তারা ভক্তি করে। ভক্তদের যেমন ভক্তিতে পরিশ্রম, জ্ঞানেও ঠিক তেমনই পরিশ্রম। ভক্তিতেও কি তোমাদের কম পরিশ্রম ? যেই গুরুরা বলল, রোজ ১০০-বার মালা জপ করো, অমনি ঘরে মালা জপত করতে বসে যায় । মালা জপতে জপতে ঘন্টাও অতিবাহিত হয়ে যায়। অনেকে আবার রাম-নাম জপতে থাকে। আর এখানে কেবল বাবার স্মরণে থাকতে হয়। অবশ্য খুব প্রেম-পূর্বক স্মরণ করতে হয়। সত্যি, কত মিষ্ট এই বাবা। কেবলমাত্র এটুকুই বলেন, ওঁনাকে স্মরণ করতে আর দৈবী-গুণ ধারণ করতে। নিজে ধারণ করলে তবে তো অন্যদেরকেও দিশা দেখাবে ! বাবার মতন মিষ্টি আর কেউই হতে পারে না। সম্পূর্ণ কল্প অতিবাহিত হবার পর এমন মিষ্ট বাবাকে আবার পাও তোমরা। তবুও কেমন করে যে, এমন মিষ্টি বাবাকেও ভুলে যাও। বাবা স্বয়ং যেখানে স্বর্গ-রাজ্যের রচয়িতা, তাই তোমরাও অবশ্যই সেই স্বর্গের মালিক হবে। আত্মার কালিমা-জংকে ভষ্ম করার জন্য বাবাকে স্মরণ করো। স্মরণ না করতে পারার পিছনে কি এমন অসুবিধা রয়েছে বলো ! কি এমন কারণ রয়েছে যে বাবাকে স্মরণ করতে কি কি অসুবিধা হয়? *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন, স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. শরীর নির্বাহের জন্য কর্ম তো অবশ্যই করবে, কিন্তু খুব বেশী ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটে নিজেকে জড়াবে না। ব্যাবসা-বানিজ্য, চাকরী-বাকরী ইত্যাদি নিয়ে এত বেশী চিন্তাগ্রস্থ হয়ো না, যাতে বাবাকেই স্মরণ করতে ভুলে গেলে।

২. মানুষের অনেক মতকে ঝেড়ে ফেলে একমাত্র বাবার মতানুসারেই চলতে হবে। একমাত্র এই বাবার মহিমার কীর্তণ করতে হবে। একমাত্র এই বাবাকেই ভালবাসতে হবে। (মন থেকে) অন্য সবার প্রতি মোহ মুছে ফেলতে হবে।

বরদান:-

জ্ঞানের প্রকাশ ও শক্তি দ্বারা ভুলকে সঠিকে পরিবর্তনকারী 'জ্ঞানী আত্মা' ভব

কথিত আছে, প্রকৃত জ্ঞানই হলো আলো এবং শক্তি। যেখানে জ্ঞানের আলো বা প্রকাশ থাকে- এটা ভুল বা এটা ঠিক, এটা অন্ধকার আর এটা আলো, এটা ব্যর্থ আর এটা সমর্থ -- ভুলকে যে চিহ্নিত করতে পারবে সে ভুল কাজ বা কোনো ব্যর্থ সংকল্পের বশীভূত হবে না। 'জ্ঞানী আত্মা' অর্থাৎ যে বুঝদার, জ্ঞান স্বরূপ। সে এমনটা কখনোই বলবে না যে, এমনটা হওয়া উচিত .....বরং তার কাছে ভুলকে সঠিকে পরিবর্তন করার শক্তি থাকে ।

স্লোগান:-

যে সদা অন্যের শুভ-চিন্তক হয়ে শুভ-চিন্তায় থাকে, সে হয়ে ওঠে ব্যর্থ-চিন্তন মুক্ত।