21.12.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
আত্মা রূপী ব্যাটারীকে জ্ঞান এবং যোগের দ্বারা পরিপূর্ণ করে সতোপ্রধান করতে হবে, জলে
স্নান করিয়ে নয়"
প্রশ্নঃ -
বর্তমান সময়ে
সকল মনুষ্য আত্মাকে এইরকম ভবঘুরে কে বানিয়েছে ? সে কেন সবাইকে বিভ্রান্ত করে ভবঘুরে
বানিয়ে দেয় ?
উত্তরঃ -
রাবণ সবাইকে
ভবঘুরে বানিয়ে দেয়, কারণ সে নিজেও ঐরকম ভবঘুরে। ওর নিজের কোনো ঘর নেই, ওকে কেউ বাবা
বলে ডাকবেও না। বাবা তো পরমধাম অর্থাৎ ঘর থেকে এখানে আসেন নিজের সন্তানদেরকে সেই
ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখন তোমরা ঘরে ফেরার রাস্তা জেনে গেছ, তাই তোমরা আর
ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াও না। তোমরা বলো - আমরাই সবার আগে বাবার থেকে আলাদা হয়েছিলাম,
এখন আমরাই সবার আগে ঘরে ফিরব।*
ওম্ শান্তি ।
মিষ্টি মিষ্টি
বাচ্চারা এখানে বসে থাকার সময়ে বুঝতে পারে যে এনার মধ্যে শিববাবা এসেছেন এবং তিনি
যেভাবেই হোক আমাদেরকে সাথে করে ঘরে নিয়ে যাবেন। ওটা তো আত্মাদের বাড়ি, তাই না ? এটা
জেনে আত্মারা অবশ্যই খুশি হয় যে অসীম জগতের পিতা এসে আমাদেরকে ফুলের মতো বানাচ্ছেন।
কোনো সাজ-পোশাক পরাচ্ছেন না। এটাকে বলা হয় যোগবল অথবা স্মরণের শক্তি। টিচারের যেরকম
পদমর্যাদা, সেইরকম পদমর্যাদা তিনি অন্যান্য বাচ্চাদেরকেও দেন। পড়াশুনার দ্বারা-ই
স্টুডেন্ট বুঝতে পারে যে আমি এইরকম হব। তোমরাও এখন বুঝেছ যে আমাদের বাবা একাধারে
শিক্ষক এবং সদগুরু। এটা সম্পূর্ণ নুতন কথা। আমাদের বাবা-ই আমাদের শিক্ষক, আমরা
তাঁকেই স্মরণ করি। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে এইরকম বানাচ্ছেন। আমাদের অসীম জগতের
পিতা আমাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন। রাবণের কোনো ঘর নেই, ঘর আছে রামের।
শিববাবা কোথায় থাকেন ? তোমরা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেবে - পরমধামে। রাবনকে তো কেউ বাবা
বলে ডাকবে না। রাবন কোথায় থাকে কেউ জানে না। এইরকম কখনোই বলা যাবে না যে রাবন
পরমধামে থাকে। তার তো থাকার কোনো ঠিকানাই নেই। সে নিজেও ভবঘুরের মতো ঘুরতে থাকে আর
তোমাদেরকেও ভবঘুরে বানিয়ে দেয়। তোমরা কি কখনও রাবণকে স্মরণ করো ? কখনোই নয়। সে
তোমাদেরকে কত দিকভ্রান্ত করে দিয়েছে। শাস্ত্র পড়ো, ভক্তি করো… ইত্যাদি আরো কত কিছু।
বাবা বলছেন - এটাকেই ভক্তিমার্গ বা রাবন-রাজ্য বলা হয়। গান্ধীজিও বলত যে রামরাজ্য
হোক। এই রথেই তো আমাদের শিববাবা এসেছেন। তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা। সকল আত্মাকে
তিনি বাচ্চা-বাচ্চা বলে সম্বোধন করেন। এখন তোমাদের বুদ্ধিতে আত্মিক পিতা রয়েছেন, আর
আত্মিক পিতার বুদ্ধিতে রয়েছ তোমরা অর্থাৎ আত্মিক সন্তানেরা। কারন আমাদের মধ্যে
যোগাযোগ সেই মূলবতন থেকে। আত্মা পরমাত্মা অনেকদিন আলাদা থেকেছে। ওখানে তো আত্মারা
বাবার সাথে একসঙ্গে থাকে। তারপর নিজ নিজ ভূমিকা পালন করার জন্য আলাদা হয়ে যায়।
অনেকদিনের হিসাব মেটাতে হবে। বাবা নিজে বসে থেকে এইসব বলছেন। তোমরা এখন পড়ছ।
তোমাদের মধ্যেও আবার ক্রমানুসারে কয়েকজন ভালোভাবে পড়াশুনা করে। ওরাই সবার আগে আমার
কাছ থেকে আলাদা হয়েছিল। এখন ওরাই আমাকে বেশি করে স্মরণ করবে এবং তারপর সবার আগে
আমার কাছে আসবে।
বাবা নিজে বসে থেকে বাচ্চাদেরকে সৃষ্টিচক্রের গভীর রহস্য বোঝাচ্ছেন, যেগুলো অন্য
কেউ জানে না। এগুলো হলো গভীর অথবা গভীরতম রহস্য। তোমরা জানো যে বাবা ওপরে বসে থেকে
বোঝান না। তিনি এখানে এসে বলেন - আমি হলাম এই কল্পবৃক্ষের বীজ। এই মনুষ্য সৃষ্টির
বৃক্ষকেই কল্পবৃক্ষ বলা হয়। দুনিয়ার মানুষ তো কিছুই জানে না। কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে
আছে। বাবা এসে জাগাচ্ছেন। তোমাদের মতো বাচ্চাদেরকে জাগিয়েছেন, বাকিরা এখনো ঘুমিয়ে
আছে। তোমরাও কুম্ভকর্ণের মতো আসুরিক নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলে। বাবা এসেই জাগিয়েছেন -
বাচ্চারা, উঠে পড়ো, তোমরা অলসতা বশতঃ শুয়ে আছো। এটাকেই বলা হয় অজ্ঞান-নিদ্রা। ওইরকম
নিদ্রা তো সবাই করে। সত্যযুগেও করে। এখন সবাই অজ্ঞান নিদ্রাতে আচ্ছন্ন। বাবা এসে
জ্ঞান শুনিয়ে সবাইকে জাগাচ্ছেন। তোমরা বাচ্চারা এখন জেগেছ। তোমরা জানো যে বাবা
আমাদেরকে নিয়ে যেতে এসেছেন। এখন তো এই শরীর আর আত্মা দুটোই কোনো কাজের নয়। দুটোই
পতিত অথবা খাদ মিশ্রিত হয়ে গেছে। এটাকে ৯ ক্যারেট বলা যাবে। খাঁটি সোনা তো ২৪
ক্যারেটের হয়। বাবা এখন তোমাদেরকে ২৪ ক্যারেটের দুনিয়ায় নিয়ে যেতে চাইছেন।
তোমাদেরকেও (আত্মাদেরকে) খাঁটি গোল্ডেন এজেড বানিয়ে দিচ্ছেন। ভারতকে তো সোনার পাখি
বলা হত। এখন তো লোহা কিংবা নুড়ি-পাথরের পাখি বলা যাবে। তবে এখনো চেতনা রয়েছে। এগুলো
সব বোঝার বিষয়। যেভাবে আত্মাকে বুঝেছ, সেইভাবে বাবাকেও বোঝা যায়। বলা হয় চমকালো
তারার মতো। খুব ছোট তারা। ডাক্তাররাও অনেক চেষ্টা করেছে দেখার জন্য। কিন্তু এত
সূক্ষ্ম যে দিব্য দৃষ্টি ছাড়া একে দেখা সম্ভব নয়। কেউ বলে আত্মা চোখ দিয়ে বেরিয়ে
গেছে, কেউ বলে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু বেরিয়ে গিয়ে আত্মা কোথায় যায় ? অন্য
কোনো শরীরে গিয়ে প্রবেশ করে। এখন তো তোমরা আত্মারা ওপরে শান্তিধামে চলে যাবে। তোমরা
ভালোভাবে জেনে গেছ যে বাবা আমাদেরকে ঘরে নিয়ে যাবেন। একদিকে আছে কলিযুগ, আর অন্যদিকে
রয়েছে সত্যযুগ। এখন আমরা এদের সঙ্গমে দাঁড়িয়ে আছি। কত আশ্চর্যজনক, তাই না ? এখানে
কোটি কোটি মানুষ রয়েছে, আর সত্যযুগে কেবল ৯ লাখ! বাকি সবাই কোথায় গেল ? বিনাশ হয়ে
যায়। বাবা তো নুতন দুনিয়া স্থাপন করতেই আসেন। ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপন হয়। তারপর দুই
রূপের দ্বারা লালন-পালনও হবে। এমন নয় যে ৪ হাত বিশিষ্ট কোনো মানুষ থাকবে। তাহলে তো
কোনো সৌন্দর্যই থাকবে না। বাচ্চাদেরকেও বোঝানো হয় যে শ্রী লক্ষ্মী এবং শ্রী
নারায়নের কম্বাইন্ড রূপকে চতুর্ভুজ দেখানো হয়। শ্রী মানে শ্রেষ্ঠ। ত্রেতাযুগে দুই
কলা কম হয়ে যায়। বাচ্চারা এখন যেসব জ্ঞান শুনছে, সেগুলোকে মনে রাখতে হবে। দুটো
জিনিসই মুখ্য। বাবাকে স্মরণ করো। অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। বাবা-ই হলেন পতিত পাবন,
সর্ব-শক্তিমান। একটা গান আছে - বাবা, তুমি আমাদেরকে আকাশ পৃথিবী সবকিছু দিয়ে দিয়েছ।
এমন কোনো জিনিস নেই যেটা তুমি আমাদেরকে দাওনি। সমগ্র বিশ্বের রাজত্ব দিয়েছ।
তোমরা জানো যে এই লক্ষ্মী-নারায়ণ-ই একদিন বিশ্বের মালিক ছিল। তারপর ড্রামার চক্র
আবর্তিত হয়েছে। এখন পুরুষার্থের ক্রমানুসারে সম্পূর্ণ নির্বিকার হতে হবে। তোমরা জানো
যে বিকারগ্রস্ত থেকে নির্বিকার এবং নির্বিকার থেকে বিকারগ্রস্ত - অসংখ্য বার এই ৮৪
জন্মের ভূমিকা পালন করেছি। এর সংখ্যা গোনা সম্ভব নয়। জনসংখ্যাও হয়তো গোনা সম্ভব।
কিন্তু কতবার তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান আর সতোপ্রধান থেকে তমোপ্রধান হয়েছ তার হিসাব
বার করা সম্ভব নয়। বাবা বলেন - এটা ৫ হাজার বছরের চক্র। এটা ঠিক। লক্ষ বছরের চক্র
হলে তো মনে রাখাই সম্ভব নয়। এখন তোমরা গুণ ধারণ করছ। জ্ঞানের তৃতীয় নেত্রও তোমরা
পেয়ে যাও। এই আঁখি দিয়ে (চর্ম চক্ষু) তোমরা পুরাতন দুনিয়াটা দেখ। যে তৃতীয় নেত্র
তোমরা পেয়েছ, সেটা দিয়ে নুতন দুনিয়া দেখতে হবে। এই দুনিয়াটা তো কোনো কাজের নয়।
একেবারে পুরাতন দুনিয়া। নুতন আর পুরাতন দুনিয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তোমরা জানো যে
আমরাই নুতন দুনিয়ার মালিক ছিলাম। ৮৪ জন্ম নিতে নিতে এইরকম হয়ে গেছি। এইগুলো ভালোভাবে
মনে রাখতে হবে এবং তারপর অন্যকেও বোঝাতে হবে যে আমরা কিভাবে এইরকম হয়ে যাই। ব্রহ্মা
থেকে বিষ্ণু এবং বিষ্ণু থেকে ব্রহ্মা। ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য তো দেখতেই
পাও। বিষ্ণু কত সুসজ্জিত ভাবে বসে আছে আর ব্রহ্মা কত সাধারণ ভাবে বসে আছে। তোমরা
জানো যে এই ব্রহ্মাই ওইরকম বিষ্ণু হয়ে যাবে। এইগুলো কাউকে বোঝানো তো খুবই সহজ।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর শঙ্করের মধ্যে কি সম্মন্ধ ? তোমরা জানো যে বিষ্ণুর দুই রূপ -
লক্ষ্মী আর নারায়ন। এই বিষ্ণুই দেবতা থেকে ব্রহ্মা অর্থাৎ মানুষ হয়ে যায়। বিষ্ণু
সত্যযুগে থাকে আর ব্রহ্মা এখানে। বাবা বুঝিয়েছেন - ব্রহ্মা থেকে বিষ্ণু হতে তো এক
সেকেন্ড সময় লাগে। কিন্তু বিষ্ণু থেকে ব্রহ্মা হতে ৫ হাজার বছর সময় লাগে। এটা
তোমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেবল ব্রহ্মা তো এইরকম হবে না। বাবা ছাড়া এইসব বিষয় আর
কেউই বোঝাতে পারবে না। এখানে গুরু কোনো মানুষ নয়। এনার গুরুও শিববাবা, তোমাদের মতো
ব্রাহ্মণদের গুরুও শিববাবা। ওনাকে সদগুরু বলা হয়। তাই বাচ্চাদেরকে তো শিববাবাকেই
স্মরণ করতে হবে। 'শিববাবাকে স্মরণ করো' - এই কথাটা কাউকে বোঝানো তো খুবই সহজ।
শিববাবা নুতন স্বর্গ দুনিয়া স্থাপন করেন। শিববাবা হলেন ভগবান অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ।
তিনি আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের পিতা। সুতরাং ভগবান তাঁর সন্তানদেরকে বলছেন - আমাকে
অর্থাৎ নিজ পিতাকে স্মরণ করো। স্মরণ করা তো খুবই সহজ। বাচ্চার জন্ম হওয়ার পর তো তার
মুখ থেকে আপনা আপনি মা-মা শব্দ বেরিয়ে আসে। মা-বাবা ছাড়া আর কারোর কাছেই যায় না। মা
যদি মারা যায় তো অন্য ব্যাপার। প্রথমে তো মা আর বাবা, তারপরে অন্যান্য আত্মীয়-বন্ধু।
তাদের মধ্যেও আবার জোড়া-জোড়া হয়। কাকা-কাকিমা ইত্যাদি। কুমারী যখন বড় হয়ে যায় তখন
কেউ কাকিমা বলবে, কেউ মামিমা বলবে।
এখন তোমাদেরকে বাবা বোঝাচ্ছেন যে তোমরা সবাই ভাই-ভাই। অন্য সকল সম্বন্ধ ভুলিয়ে
দিচ্ছেন। ভ্রাতৃত্বের সম্বন্ধ স্মরণে থাকলে বাবার কথাও স্মরণে থাকবে। বাবা বলছেন -
বাচ্চারা, তোমরা কেবল আমাকে অর্থাৎ বাবাকে স্মরণ করো। বাবা কত শ্রেষ্ঠ, তিনি অসীম
জগতের পিতা। সেই সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা তোমাদেরকে অসীম জগতের উত্তরাধিকার দিতে এসেছেন।
প্রতি মুহূর্তে তিনি বলছেন - মন্মনা ভব। নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে বাবাকে স্মরণ
করো। এই কথাটা ভুলে যেও না। কিন্তু দেহ অভিমানের বশবর্তী হয়ে ভুলে যায়। প্রথমে তো
নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করতে হবে। আমরা আত্মারা হলাম শালিগ্রাম। আমাদেরকে তো কেবল
বাবাকেই স্মরণ করতে হবে। বাবা বুঝিয়েছেন - আমি হলাম পতিত-পাবন, আমাকে স্মরণ করলে
তোমাদের খালি ব্যাটারি ভর্তি হয়ে যাবে এবং তোমরা সতোপ্রধান হয়ে যাবে। জলের গঙ্গাতে
তো জন্ম জন্মান্তর ধরে ডুব দিয়েছ, কিন্তু পবিত্র হতে পারোনি। জল কিভাবে পতিত-পাবন
হবে ? জ্ঞানের দ্বারা-ই সদগতি হয়। এখন এটা হলো পাপাত্মাদের মিথ্যার দুনিয়া। পাপ
আত্মাদের সাথেই লেনদেন করতে হয়। কাজেকর্মে, কথাবার্তায় কিংবা মানসিক ভাবে সকলেই পাপ
আত্মা। তোমরা বাচ্চারা এখন বুঝতে পেরেছো। তোমরা বলো যে আমরা এইরকম লক্ষ্মী-নারায়ন
হওয়ার জন্য পুরুষার্থ করছি। এখন তোমাদের ভক্তি করা বন্ধ হয়ে গেছে। জ্ঞানের দ্বারা-ই
সদগতি হয়। এরা (দেবতারা) তো সদগতি সম্পন্ন, তাই না ? বাবা বুঝিয়েছেন - এই ব্রহ্মা
এখন অনেক জন্মের অন্তিম জন্মে রয়েছে। বাবা কত সহজ ভাবে বোঝান। তোমরা বাচ্চারা অনেক
পরিশ্রম করো। প্রত্যেক কল্পেই করো। এই পুরাতন দুনিয়াটাকে পরিবর্তন করে নুতন দুনিয়া
করতে হবে। ভগবানকে জাদুকর, রত্নাকর, সওদাগর বলা হয়। জাদুকর তো অবশ্যই। পুরাতন
দুনিয়াকে হেল থেকে পরিবর্তন করে হেভেন বানিয়ে দেন। তিনি এত বড় জাদুকর যে তোমরা
স্বর্গবাসী হয়ে যাও। তোমরা জানো যে এখন আমরা নরকবাসী। হেল আর হেভেন দুটো আলাদা
জিনিস। মোট ৫ হাজার বছরের চক্র। লক্ষ বছরের তো কোনো ব্যাপারই নেই। এইসব কথা গুলো
ভুলে যেওনা যেন। এগুলো হলো ভগবানুবাচ। কেউ না কেউ তো অবশ্যই আছে যার পুনর্জন্ম হয়
না। কৃষ্ণের তো শরীর আছে। শিববাবার কোনো শরীর নেই। কিন্তু এখানে এসে তোমাদেরকে
পড়ানোর জন্য, শোনানোর জন্য তাঁর তো একটা মুখের প্রয়োজন। ড্রামা অনুসারে তাঁর কাছেই
সকল জ্ঞান রয়েছে। দুঃখধামকে সুখধাম বানানোর জন্য তিনি গোটা কল্পে কেবল একবারই আসেন।
সুখ-শান্তির উত্তরাধিকার নিশ্চয়ই বাবার কাছ থেকেই প্রাপ্ত হয়েছিল। তাইতো মানুষ এগুলো
পেতে চায় এবং তারজন্য বাবাকে স্মরণ করে। দেখো, বাবা কত সহজভাবে জ্ঞান শোনান। এখানে
বসে থেকেও যদি বাবাকে কিংবা ডিগবাজি খেলাকে (সৃষ্টিচক্র) স্মরণ করো, তাহলে সেটাকেও
মন্মনা ভব বলা যাবে। বাবা-ই হলেন এই সকল জ্ঞানের দাতা। তোমরা বলো যে আমরা অসীমের
বাবার কাছে যাই। বাবা আমাদেরকে শান্তিধামে আর সুখধামে যাওয়ার রাস্তা বলে দেন। এখানে
বসে থেকেই ঘরকে স্মরণ করতে হবে। নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে বাবাকে, ঘরকে আর নুতন
দুনিয়াকে স্মরণ করতে হবে। এই পুরাতন দুনিয়ার তো বিনাশ হবেই। ভবিষ্যতে তোমরা
বৈকুণ্ঠকেও অনেক স্মরণ করবে। ঘনঘন বৈকুণ্ঠে চলে যাবে। শুরুর দিকে কন্যারা এইরকম
ঘনঘন বৈকুণ্ঠে চলে যেত। এইসব দেখে অনেক বড়োলোক বাড়ি থেকেও তাদের কন্যাদেরকে এখানে
পাঠিয়ে দিত। নামই রাখা হয়েছিল ওম্ নিবাস। অনেক বাচ্চা এসেছিল। কিন্তু তারপর ঝামেলা
হয়েছিল। বাচ্চাদেরকে পড়ানো হতো। অনেকে আপনাআপনি ধ্যানে চলে যেত। এখন এইসব
ধ্যান-সাক্ষাৎকারের পার্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানেই কবরস্থানের মতো বানিয়ে দিয়ে
সবাইকে শুইয়ে দেওয়া হত। তারপর বলা হত - শিববাবাকে স্মরণ করো। তখন ধ্যানে চলে যেত।
তোমরা বাচ্চারাও হলে জাদুকর। যেকোনো ব্যক্তিকে দৃষ্টি দেবে আর সে সঙ্গে সঙ্গে ধ্যানে
চলে যাবে। এটা খুবই সুন্দর জাদু। প্রচুর ভক্তি করলে যখন একেবারে প্রাণ ত্যাগ করতে
প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন এইরকম সাক্ষাৎকার হয়। এখানে বাবা নিজে এসেছেন। তোমাদের মতো
বাচ্চাদেরকে পড়িয়ে উঁচু পদ প্রাপ্ত করান। ভবিষ্যতে তোমরা বাচ্চারা অনেক কিছু
সাক্ষাৎকার করবে। এখনই যদি কেউ বাবাকে জিজ্ঞাসা করে তবে বাবা বলে দেবেন যে কে গোলাপ
ফুল, কে চাঁপা ফুল, কে টগর ফুল আর কে জবা ফুল। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন
স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন
নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
সকল দৈহিক সম্বন্ধ ভুলে গিয়ে নিশ্চিত ভাবে বুঝতে হবে যে, আমরা আত্মারা ভাই-ভাই,
বাবাকে স্মরণ করে সম্পূর্ণ উত্তরাধিকারের যোগ্য হতে হবে।
২ ) পাপ আত্মাদের সঙ্গে আর লেনদেন করা উচিত নয়। সবাইকে অজ্ঞান নিদ্রা থেকে জাগিয়ে
শান্তিধামে এবং সুখধামে যাওয়ার রাস্তা বলতে হবে।
বরদান:-
পদ্মফুলের চিহ্ন বুদ্ধিতে রেখে, নিজেকে উদাহরণ স্বরূপ মনে করে নির্লিপ্ত অথচ প্রিয়
ভব
যারা প্রবৃত্তিতে থাকে,
তাদের চিহ্ন হলো পদ্মফুল। তাই কমল হও এবং নির্মল করো। নির্মল না করলে কমল হতে পারবে
না। সুতরাং পদ্মফুলের চিহ্ন বুদ্ধিতে রেখে, নিজেকে উদাহরণ স্বরূপ মনে করো। সেবা করতে
করতেও নির্লিপ্ত অথচ প্রিয় হয়ে থাকো। কেবল প্রিয় হতে যেও না, নির্লিপ্ত থেকে প্রিয়
হও। কারণ ভালোবাসা কখনো কখনো আকর্ষণে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই যেকোনো সেবা করার সময়ে
নির্লিপ্ত অথচ বাবার প্রিয় হও।
স্লোগান:-
স্নেহের ছত্রছায়ার মধ্যে মায়া আসতেই পারে না।