30.11.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
বাবা এসেছেন তোমাদেরকে ভক্তি-স্বরূপ আত্মা থেকে জ্ঞান-স্বরূপ আত্মা বানাতে, অর্থাৎ
পতিত থেকে পবিত্র বানাতে"
প্রশ্নঃ -
জ্ঞানবান
বাচ্চারা সদা কি এমন চিন্তায় রত থাকে ?
উত্তরঃ -
আমি এক অবিনাশী
আত্মা, আমার এই শরীর বিনাশী। আমিই ৮৪-বার শরীর ধারণ করি। এটাই আমার অন্তিম জন্ম।
আত্মার আকার কখনও ছোট-বড় হয় না। ছোট-বড় হয় শরীর। যদিও চোখ থাকে শরীরে কিন্তু
দৃষ্টি-শক্তি আসে আসে আত্মা থেকেই। (অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে আত্মাই তা দেখে থাকে তার
দৃষ্টি কোণ থেকে)! পরমাত্মা বাবা আত্মাদের এই জ্ঞান প্রদান করে তৃতীয় নেত্রের
উন্মোচন ঘটান। কিন্তু যতক্ষণ না উনি কোনও শরীরকে আধার বানান, ততক্ষণ পর্যন্ত এই
বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াতে পারেন না। জ্ঞানবান বাচ্চারা সদা এমন ধারার চিন্তনই করতে
থাকে।
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চারা,
প্রকৃত অর্থে কে বলছেন এসব কথা ? --আত্মা ! অবিনাশী আত্মাই এসব বলছে এই শরীর দ্বারা।
অর্থাৎ আত্মা আর শরীরের মধ্যে বিস্তর তফাৎ। এই বিশাল কাঠামোর শরীর গঠিত হয় ৫-তত্ত্বের
দ্বারা। শরীর যতই ছোট হোক না কেন, আত্মার আকার থেকে তা অনেক গুণ বড়। শুরুতে এই শরীর
থাকে খুব ছোট আকারের এক পিণ্ডের মতন। যখন তা একটু বড় আকারের হয়, তখন তাতে আত্মার
প্রবেশ ঘটে। আকার বড় হতে হতে ক্রমে তা এত বড় আকারের হয়ে ওঠে। আত্মা হলো চৈতন্য। এই
আত্মা যতক্ষণ না সেই শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে, ততক্ষণ শরীর কোনও কাজেরই নয়। আত্মা
আর শরীরের মধ্যে বিস্তর তফাৎ । কথা বলা, চলা-ফেরা -- এসব আসলে আত্মারই সক্রিয়তা।
যদিও তা অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর মতন। আত্মা কখনও ছোট-বড় হয় না, তার বিনাশও নেই৷
পরম-আত্মা বাবা স্বয়ং বাচ্চাদেরকে তা জানাচ্ছেন- উনি নিজেও অবিনাশী আত্মা এবং যে
শরীরে অবস্থান করছেন তা কিন্তু বিনাশী। সেই (ব্রহ্মার) শরীরে উনি প্রবেশ করেন ওনার
কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করার জন্য। বাচ্চারা, যা এখন তোমরা বি.কে -রা চিন্তন
প্রক্রিয়ায় আনতে পারো। ইতিপূর্বে তোমরা যেমন আত্মাকে জানতে না, তেমনি পরমাত্মাকেও
জানতে না। কেবল কথার কথা বলতে শুধু - "হে পরমপিতা পরমাত্মা!" যদিও বহুপূর্বে তোমরা
নিজেদেরকে আত্মাই ভাবতে, কিন্তু পরবর্তীতে কেউ কেউ তোমাদেরকে বুঝিয়েছে, তোমরা
নিজেরাই পরমাত্মা। কিন্তু কারা এমন ভুল কথা বুঝিয়েছে ? ভক্তি-মার্গের গুরুরা এবং
অজ্ঞানী পণ্ডিতদের লেখা শাস্ত্রগুলি। কিন্তু সত্যযুগে এমন ধরনের কথা কেউ বলবে না।
এখন বাবা এসে তোমাদেরকে সেসব বুঝিয়ে জানাচ্ছেন - তোমরা আত্মাধারীরা পরমাত্মা বাবার
সন্তান। আত্মা হলো ন্যাচারাল আর শরীর আন-ন্যাচারাল, যা মাটি (তত্ত্ব) দ্বারা গঠিত।
যতক্ষণ শরীরে আত্মার অবস্থান থাকে, ততক্ষণ তোমরা বলতে পারো, চলতে পারো, নানাবিধ
কর্ম করতে পারো। বাচ্চারা, তোমরা এসব জানতে পারছো, যেহেতু এখন আত্মাদের বাবা
পরমাত্মা স্বয়ং এসে তোমাদেরকে তা বোঝাচ্ছেন।
বাচ্চারা, নিরাকার শিববাবা এই সঙ্গমযুগেই এসে এনার (ব্রহ্মার) শরীর সাহায্যে
তোমাদেরকে শোনাচ্ছেন এসব। চোখ তো শরীরেই থাকে, কিন্তু জ্ঞান-চক্ষুর উন্মোচন ঘটান
বাবা। যে আত্মার সেই জ্ঞান-চক্ষু থাকে না, তাকে অজ্ঞানী-চক্ষু বলা হয়। বাবার
কর্তব্য আত্মাদেরকে সেই জ্ঞান-চক্ষুর উন্মোচন ঘটানো। যেহেতু সর্বপ্রকার ভূমিকা পালন
করে এই আত্মারাই। আত্মাই সেসব কর্ম-কর্তব্য করে এই শরীর দ্বারা। এবার তোমরা বুঝতে
পারছো, বাবা কেন এনার শরীরকে আধার বানিয়েছেন। বাবা স্বয়ং নিজেই এসব রহস্যগুলি
উন্মোচন করছেন তোমাদের কাছে। যেমন, সৃষ্টি চক্রের আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলি
জানাচ্ছেন, তেমনি বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই অবিনাশী নাটকের সম্পূর্ণ জ্ঞানও জানাচ্ছেন
তোমাদের। যা ইতিপূর্বে জানতেই না তোমরা। হ্যাঁ, একে অবশ্যই নাটক বলা হবে। সৃষ্টি
চক্রের চিত্রপটের চক্র ক্রমান্বয়ে ঘুরেই চলেছে। কিন্তু তা কিভাবে ? -যা কারও জানা
নেই। রচয়িতা আর ওনার রচনার আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান, যা কেবল তোমরা বি.কে -রাই পাচ্ছো
এখন। বাকীরা সবাই তো ভক্তি-মার্গের। তাই বাবা এসে বি.কে.-দেরকেই "জ্ঞানী আত্মা" করে
গড়ে তোলেন। পূর্বে তোমরা ভক্তি মার্গে থাকাকালীন "ভক্ত আত্মা"-ছিলে। যেহেতু তোমরা
আত্মারা তখন ভক্তিতেই ছিলে। সেখানে এখন তোমরা আত্মারা সেই বিশেষ জ্ঞান শুনে-জ্ঞানে
গুণান্বিত হয়ে "জ্ঞানী আত্মা হচ্ছো।" ভক্তিকে অন্ধকার বলা হয়। তাই এমনটা দাবী করা
যাবে না যে, ভক্তিতে ভগবানকে পাওয়া যায়। এবার বাবা জানাচ্ছেন- বাবার এই
কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা ভক্তির সময়ে যেমন থাকে, তেমনি থাকে জ্ঞানের সময়েও। এখন তোমরা
বুঝতে পারছো, যখন তোমরা ভক্তি করতে, তখন কেন প্রকৃত সুখ ছিলো না তোমাদের। প্রকৃত
বাবাকে খুঁজতে গিয়ে ভক্তি-মার্গে কেবলই ধাক্কা-হোঁচট খেয়েছো তোমরা। এখন বুঝতে পারছো,
এই যে হোম-যজ্ঞ, তপ-তপস্যা, দান-পুণ্য ইত্যাদি যা কিছুই করেছো - ভগবানকে খুঁজেতে
গিয়ে কেবলই ধাক্কা-হোঁচট ইত্যাদি খেতে খেতে তোমরা হয়রান হয়ে গেছো। যেহেতু সময়কালটা
তমোপ্রধানের, তাই কেবলই তমোপ্রধান হয়েছো আর আত্মা অবনমনের গতিতে নামতেই থেকেছে।
মিথ্যার জগতে আজে-বাজে করতে করতে কেবলই মিথ্যা আর ছিঃ-ছিঃ হয়েছো। এইভাবেই তোমরা
পতিত হয়ে পরেছো। ভক্তি-মার্গে তোমরা যে ধারায় ভক্তি করে এসেছো, তাতে কিন্তু পবিত্র
হওয়া যায় না মোটেই। পবিত্র না হয়ে কেউ পবিত্র দুনিয়ায় পৌঁছোতে পারেন না আর তা বানাতে
পারেন একমাত্র ভগবান, অর্থাৎ একমাত্র বাবা ছাড়া আর কেউই তা পারেন না। এর অর্থ এমনটা
নয় যে, পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত ভগবানের সাথে মিলন হবে না। পতিতরাই যে ভগবানকে ডাকতে
থাকে- "হে ভগবান, তুমি এসো। এসে আমাদেরকে পবিত্র করো।" পতিতরাই তো ভগবানের সাথে
মিলিত হবে পবিত্র হবার জন্য। পবিত্র হলে তো আর ওনার প্রয়োজন পড়বেই না। তেমনি
সত্যযুগে পবিত্র হবার জন্য লক্ষ্মী-নারায়ণকে ভগবানের সাথে মিলিত হবার প্রয়োজন হয়
না। ভগবান আসেন অপবিত্র পতিতদেরকে পবিত্র বানাতে। সম্পূর্ণ পবিত্র হবার পর এই
ছিঃ-ছিঃ শরীর ত্যাগ করতেই হয়। যেহেতু পবিত্র আত্মারা এই তমোপ্রধান দুনিয়ায় আর থাকতে
পারে না। বাবাও তেমনি তোমাদেরকে পবিত্র বানিয়ে গুপ্ত হয়ে যান। অবিনাশী এই ড্রামাতে
বাবার কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা এমনই ওয়ান্ডারফুল।
বাচ্চারা, আত্মাকে যেমন এই চর্ম-চক্ষুতে দেখা যায় না, তেমনি পরম-আত্মার
সাক্ষ্যাৎকার হলেও তা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারা যায় না। আত্মাদের বেলায় অবশ্য বোঝা
যায় - এটা অমুকের আত্মা, তমুকের আত্মা, যেহেতু তাদেরকে স্মরণে রাখো তোমরা। তোমাদের
তেমনই আগ্রহ হয়, যেমন চৈতন্যে অমুকের সাক্ষাৎকার হয়। যদিও তা তো কোনও কাজেরই নয়।
আচ্ছা চৈতন্য অবস্থায় তখন তোমরা কি দেখতে পাও ? তার ফলে কি লাভ হয় ? জাস্ট
সাক্ষ্যাৎকার হলো আবার গুপ্ত হয়ে গেলো। যা অল্প সময়ের ক্ষণ-ভঙ্গুর সুখের আশা পূর্ণ
করে। যাকে বলা হয়- "অল্প কালের ক্ষণ ভঙ্গুর সুখ।" সাক্ষ্যাৎকারের ইচ্ছা হয়েছিলো -
তা পূর্ণ হলো, এই যা। কিন্তু এখানকার মূল কথাই হলো- পতিত থেকে পবিত্র হওয়া। আর
সম্পূর্ণ পবিত্র হতে পারলেই দেবতা হতে পারবে অর্থাৎ স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছাতে পারবে।
অজ্ঞানী পণ্ডিতদের দ্বারা লিখিত শাস্ত্রগুলিতে কল্পের আয়ু লক্ষ-লক্ষ বছর বলে
লিপিবদ্ধ আছে। সেই হিসাবে কলিযুগের আয়ু এখনও আরও ৪০-হাজার বছর অবশিষ্ট। বাবা তার
প্রকৃত তথ্যে জানাচ্ছেন যে, সম্পূর্ণ কল্পের আয়ু মোট ৫-হাজার বছর। এই ভাবেই (ভুল
তথ্যে) মানুষেরা ঘোর অন্ধকারে ডুবে আছে। একেই বলা হয়- "ঘোর অন্ধকার!" কারও মধ্যে এই
সাধারণ জ্ঞান-টুকুও নেই। যেহেতু তারা ভক্তিতেই মজে আছে। রাবণের উপস্থিতির সময়ে
ভক্তিও তার সাথে সাথে হাজির হয়। তেমনি বাবার যখন আগমন ঘটে, বাবার সাথে সাথে জ্ঞানও
তখন হাজির হয়। বাবার এই বিশেষ জ্ঞান কেবলমাত্র এই (পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ) সনয়কালে
সারা কল্পে একবারই পাওয়া যায়। বারবার বহুবার তো আর পাওয়া যায় না। সেখানে (স্বর্গ-রাজ্যে)
তোমাদের কেউ জ্ঞান দিতে আসে না, যেহেতু তার প্রয়োজন নেই। জ্ঞান তো কেবল তারই
প্রয়োজন, যে অজ্ঞান জগতে থাকে। অথচ, অজ্ঞান জগতের কেউই এই প্রকৃত বাবাকে জানে না।
তাই তো বাবাকে গালি না দিয়ে থাকতেই পারে না তারা। বাচ্চারা, তোমরা বি.কে.-রা এখন তা
বুঝতে পেরেছো। তাই তো তোমরা জোরের সাথে বলো- "ঈশ্বর মোটেই সর্বব্যাপী নন। উনি (পরমাত্মা)
আমাদের অর্থাৎ আত্মাধারীদের বাবা।" কিন্তু লোকেরা বলে- "না তা নয়, পরমাত্মা তো
নুড়ি-পাথরেও অবস্থান করছে।" কিন্তু বি.কে.-রা তা স্পষ্ট রূপে জানো, ভক্তি-মার্গ যে
একেবারেই উল্টো জ্ঞান-মার্গ থেকে। ভক্তি-মার্গের লোকেদের এই সামান্য জ্ঞানটুকুও নেই।
জ্ঞান আর ভক্তি এই দুয়ের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত দিশায়। ভক্তরা তাদের ইচ্ছামতন
ভগবানের নাম যেমন বদলে দেয়, তেমনি মানুষের নামেরও বদল আনে।
বাচ্চারা, সর্বপ্রথম দেবতা, তারপর ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। যারা দৈবী-গুণ ধারণ করে
তারা যেমন মানুষ, তেমনি আসুরী গুণধারী যারা তারাও মানুষ। যদিও একেবারে ছিঃ-ছিঃ
পর্যায়ের তারা। তাই তো গুরু নানাক-জী বলেছেন- "অশোখ চোর ........... " (বেশীরভাগ
লোকই দুর্বৃত্ত পরায়ন, ন্যায়হীন হয়ে এই সংসারে অসৎ উপায়ে উপার্জন করে)!" কিন্তু
তাদেরকে একথা বলতে গেলে উল্টে তৎক্ষণাৎ সে তোমাকে অপদস্ত ও গালি-গালাজ করবে। তাই তো
তাদের উদ্দেশ্যে বাবা বলেন- "এরা সব আসুরী সম্প্রদায়ের।" বাবা তোমাদেরকে একেবারে
ক্লিয়ার করে সবকিছু বুঝিয়ে দেন। কারা রাবণ সম্প্রদায়ের আর কারা রাম সম্প্রদায়ের।
যেমন গান্ধীজী বলতেন, উনি রাম-রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু রামরাজ্যে যে সবাই
নির্বিকারী। তেমনি রাবণ-রাজ্যে সবাই বিকারী। ফলে রাবণ রাজ্যকে বলা হয় বেশ্যালয়। যা
ভয়ংকর দাবানলের রৌরব-নরক। মানুষেরা এখন বিষয় বৈতরণী নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। মনুষ্য
আর জানোয়ার সবার চরিত্র এক সমান। মনুষ্যের মধ্যে এখন এমন কোনও গুণ অবশিষ্ট নেই যে
তার মহিমা করা যাবে। একমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই ৫-বিকারকে জয় করে মনুষ্য থেকে দেবতায়
পরিণত হতে চলেছো। এছাড়া বাকী যা কিছু অবশিষ্ঠ থাকবে সে সবই শেষ হয়ে যাবে।
দেবতাদের অবস্থান সত্যযুগে। বর্তমানের এই কলিযুগ হলো অসুরদের। অসুরদের চিহ্নগুলি কি
কি ? ৫-বিকারে আক্রান্ত। দেবতারা হলো সম্পূর্ণ নির্বিকারী আর অসুরেরা সম্পূর্ণ
বিকারী। দেবতারা দিব্য গুণের ১৬-কলা সম্পূর্ণ আর অসুরদের গুণ ও শক্তির কোনও কলাই
নেই। পূর্বে যেটুকু ছিলো, তা একদম শেষ হয়ে গেছে। বাবা স্বয়ং বসে সেগুলিই বোঝাচ্ছেন
তোমাদের। বাবা আসেন এই পুরোনো আসুরী দুনিয়াকে পরিবর্তন করতে। বর্তমানের এই
বেশ্যালয়কে শিবালয় করে গড়ে তুলতে। লোকেরা আবার এই দুনিয়াতেই "ত্রিমূর্তি-হাউস", "ত্রিমূর্তি
রোড", ....... কত কিছু নাম রাখে, যা পূর্বে ছিল না। কিন্তু প্রকৃত তার কি নাম হওয়া
উচিত ? আসলে এই দুনিয়াটা কার ? তা তো পরমাত্মার ! পরমাত্মার এই দুনিয়ার প্রথম
অর্দ্ধকল্প থাকে পবিত্র, দ্বিতীয় অর্দ্ধকল্প অপবিত্র। এসবেরই রচনাকার এই বাবা। তবে
তা কি দাঁড়ালো - ওনারই পুরে দুনিয়া। তাই তো বাবা বলছেন- "আমিই এসবের মালিক, আমিই
সেই বীজরূপ, আমি চৈতন্য স্বরূপ আবার আমিই জ্ঞানের-সাগর। একমাত্র আমার মধ্যেই যাবতীয়
জ্ঞান রয়েছে, যা আর কাওর মধ্যেই নেই। এখন তোমরা বুঝতে পারছো, এই সৃষ্টি চক্রের
আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান একমাত্র এই বাবার মধ্যেই আছে। অন্যেরা যা কিছু বলে, তা কেবল
গাল-গল্প মাত্র।" এই আজগুবি গাল-গল্প খুবই খারাপ, তাই তো তাদের প্রতি বাবার এত
অভিযোগ। একদা তোমরাই এই বাবাকে নুড়ি-পাথর, কুকুর-বিড়াল ইত্যাদি সবকিছুই ভেবে বসেছিলে।
যার ফলে তোমাদের এখন এত দুর্দশা ।
নতুন দুনিয়ার মানুষ আর পুরোনো দুনিয়ার মানুষের মধ্যে রাত-দিনের তফাৎ। শেষের
অর্ধ-কল্প থেকে অপবিত্র মানুষেরা পবিত্র দেবতাদের উদ্দেশ্যে মাথা ঝুকিয়ে প্রণাম করতে
থাকে। এবার বাবা বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন- ভক্তি-মার্গের শুরুর প্রথম দিকে, সর্ব প্রথম
পূজা শুরু হয় শিববাবার। এই শিববাবাই আবার তোমাদের পূজ্য বানায়। আর রাবণ সেই পূজ্য
থেকে পূজারী বানায় তোমাদের। ড্রামার প্লান অনুযায়ী বাবা এসে আবার তোমাদের পূজ্য করে
গড়ে তোলেন। এইসবের পরিপ্রেক্ষিতেই রাবণ ইত্যাদি নাম এসেছে। দশহরা উৎসব পালন করতে
গিয়ে বাইরের কত লোককেই তো ডাকতে হয়। কিন্তু এসবের যথার্থ মর্মার্থ কিছুই জানে না
তারা। ফলে দেবতাদেরও কত নিন্দা-গ্লানি করে তারা। অথচ বাস্তবে যা সত্য নয়। যেমন তারা
বলে- ঈশ্বর নাম-রূপ থেকে অস্তিত্বহীন (ন্যারা) ৷ ঠিক এভাবেই কত প্রকারের নাটকও
প্রস্তুত করে তারা, যার বাস্তবতা নেই আদৌ। মানুষের বুদ্ধি-সুদ্ধি এমনই। তাই তো
মনুষ্য মতকে আসুরী মত বলা হয়। কিন্তু স্বর্গ-রাজ্য হয়- যেমন রাজা-রাণী প্রজারাও
তেমনই। সবাই একই সংস্কারের। এই দুনিয়াকে বলা হয় 'ডেভিল ওয়ার্ল্ড' অর্থাৎ শয়তানের
দুনিয়া। এখানে একে অপরকে গালি-গালাজ করতেই থাকে। তাই তো বাবা বোঝাচ্ছেন- বাচ্চারা,
তোমরা যখন এখানে বসবে, তখন নিজেদেরকে কেবল আত্মা ভেবে বাবাকে স্মরণ করতে থাকবে। যখন
তোমরা অজ্ঞানী ছিলে, তখন ভাবতে পরমাত্মা অনেক উপরে কোথাও থাকেন। কিন্তু এখন তোমরা
জানতে পেরেছো, উপরে কোনও বাবা নেই, তিনি স্বয়ং এখন তোমাদের কাছে এসেছেন। তোমরাই তো
বাবাকে ডেকে এনেছো এখানে। যিনি এনার (ব্রহ্মার) শরীরে অবস্থান করছেন। যখন তোমরা
নিজেদের সেন্টারে বসবে, তখন ভাববে, শিববাবা স্বয়ং এনার শরীরে অবস্থান করে আছেন।
ভক্তি-মার্গের লোকেরা ভাবে, পরমাত্মা কেবল উপরেই থাকেন। তাই উপরের দিকে তাকিয়ে তারা
বলতে থাকে- হে ভগবান...তুমি কোথায়, যেখানে তোমাকে অর্থাৎ প্রকৃত বাবা পরমাত্মাকে
স্মরণ করতে পারবো। আর এখানে বসে তোমরা কি করো ? তোমরা নিশ্চিত জানো যে, পরমাত্মা
স্বয়ং এখানে ব্রহ্মার শরীরে অবস্থান করছেন। ফলে তোমাদেরও এখানে বসেই সেভাবে স্মরণ
করতে হবে ওনাকে। যেহেতু উনি তো আর উপরে নেই এখন। এখন উনি এখানে। অতি মহার্ঘ এই
পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে ওনাকে যে আসতেই হয় এখানে। বাবাও তাই বলছেন, ওনার আসার কারণই
হলো- তোমাদেরকে অতি উন্নত স্তরের করে গড়ে তোলার জন্যই। তোমরা বি.কে.-রা বাবার অতি
আপন বাচ্চারা, এখানেই স্মরণ করবে আর ভক্তরা স্মরণ করবে উর্দ্ধমার্গে। এমনকি তোমরা
বি.কে.-রা যদি বিলেতেও থাকো তবুও ভাববে যে, শিববাবা এই ব্রহ্মার শরীরেই অবস্থান
করছেন। কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকার জন্য কোনও একটা শরীরের আশ্রয় তো নিতেই হবে। তা
যেখানেই বসো না কেন, মধুবনের এই বাবাকেই তো স্মরণ করবে। শিববাবাকে স্মরণ করতে গেলে,
এই ব্রহ্মা বাবার শরীর নজরে তো আসবেই। কিন্তু এমন অনেক বুদ্ধিহীন আছে, তারা কোনও
মতেই ব্রহ্মাকে মেনে নেয় না। বাবা অবশ্য এমন কথা বলেন না যে, ব্রহ্মাকে স্মরণ করো।
কিন্তু ব্রহ্মা ছাড়া শিববাবাকে স্মরণ করবেই বা কি প্রকারে ? যেখানে বাবা স্বয়ং
জানাচ্ছেন উনি অবস্থান করছেন এই ব্রহ্মার শরীরেই। অতএব এই ব্রহ্মার মাধ্যমেই বাবাকে
স্মরণ করলে বাবা (শিববাবা) আর দাদা (ঠাকুর দাদা = ব্রহ্মা) দু'জনকেই স্মরণ করা হয়ে
যায়। তোমাদের বুদ্ধিতে এই জ্ঞান তো আছে। ব্রহ্মার নিজের আত্মা আছে ব্রহ্মার শরীরেই।
যেখানে পরমাত্মা শিববাবার নিজের কোনও শরীর নেই। তাই তো শিববাবা ব্রহ্মার এই
প্রকৃতিকে আধার বানায়৷ এখানে অবস্থান করেই বাবা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের আর সৃষ্টির
আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলিকে তোমাদেরকে বোঝান। বাবা ছাড়া আর কেউই ব্রহ্মাণ্ডের এইসব
জ্ঞানগুলিকে জানেই না। ব্রহ্ম-তত্ত্ব যেখানে, সেখানেই আত্মারা আর পরমাত্মা বাস করে।
অর্থাৎ সুপ্রিম বাবা পরমাত্মা আর নন্-সুপ্রিম আত্মারা থাকে যেখানে। ব্রহ্মতত্ত্ব বা
ব্রহ্মলোক অর্থাৎ শান্তিধাম। শান্তিধাম নামটাই কত মধুর। এইসব তথ্য তোমাদের বুদ্ধিতে
বিরাজমান এখন। প্রকৃত অর্থে আমরা সেই ব্রহ্মমহাতত্ত্ব বা ব্রহ্মলোকের স্থায়ী
বাসিন্দা। তাকেই আবার নির্বাণধাম (শব্দহীন ধাম) ও বাণপ্রস্থও বলা হয়। এইসব তথ্যগুলি
এখন তোমাদের বুদ্ধিতে পাকা হয়ে গেছে।
যখন ভক্তি থাকে তখন জ্ঞানের নামগন্ধও থাকে না। বর্তমান সময় তোমাদের জন্য পুরুষোত্তম
সঙ্গমযুগ অর্থাৎ পরিবর্তনের সময়কাল। পুরোনো দুনিয়ায় অসুরদের বাস আর নতুন দুনিয়ায়
দেবতাদের বাস। তাই তো পরিবর্তনের করার জন্য এই কল্যাণকারী পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে
বাবাকে আসতে হয়। সত্যযুগে এসবের কিছুই মনে থাকবে না তোমাদের। যেমনি কলিযুগী বুদ্ধি
হওয়ার জন্য এখন সব বিষয়েই অজ্ঞানী তোমরা। তেমনি আবার নতুন পবিত্র দুনিয়ায় প্রবেশের
পর এই পুরোনো দুনিয়ার কিছুই আর মনে থাকে না। যেমন এখন তোমরা পুরোনো দুনিয়ায় আছো,
সেই নতুন দুনিয়ার কিছুই মনে নেই তোমাদের। সেই নতুন দুনিয়া কবে কখন ছিলো তার কিছুই
এখন মনে নেই তোমাদের। অথচ লোকেরা তো তাদের খেয়াল খুশী মতো যুগের আয়ুকে লক্ষ-লক্ষ
বছর বলে। তোমরা বি.কে.-রাই কেবল জানো, প্রতি কল্পের পরিবর্নের সময়ে এমন সঙ্গম যুগেই
বাবা আসেন। তিনি এসে এই অদ্ভুত কল্প-বৃক্ষের রহস্যগুলি উন্মোচন করেন। সৃষ্টির এই
পটচিত্রের চক্র কিভাবে অনবরত তার নিজের নিয়মে ঘুরে চলেছে সে বিষয়েও ব্যাখ্যা করে
বোঝান তোমাদের । তেমনি তোমাদেরও উচিত সেগুলি আবার অন্যদেরকে বোঝানো। এক-একজনকে আলাদা
আলাদা করে বোঝাতে গেলে অনেক সময়ের দরকার, তাই বাবার কাছ থেকে তোমরা যা শুনছো, সেটাই
অন্যদেরকে শোনাবে। তাতেই অনেকে তা বুঝতে পারবে। খুব মিষ্টি করে বোঝাতে হবে সবাইকে।
যেমন করে তোমরা প্রদর্শনী ও অন্যত্র বুঝিয়ে থাকো। বিশেষ করে শিব-জয়ন্তীতে অনেককে
আমন্ত্রণ করে যুক্তি সহযোগে খুব সুন্দর রীতিতে অনেককে বোঝাতে হবে। এটা অবশ্যই বোঝাতে
হবে বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই নাটকের খেলার অবধি কত। (৫-হাজার বছর) একমাত্র তোমরা
বি.কে.-রাই তার সঠিক সময় বর্ণনা করে বোঝাতে পারবে। এইসব 'টপিক'-গুলো যা তোমরা শিখেছো,
সেগুলিই আবার অন্যদেরকে বোঝাবে। বাবা যেসব বিষয়গুলি তোমাদের বোঝান, সেগুলির ধারণা
ধারণ করেই তো তোমরা দেবতা হয়ে ওঠো। আবার তোমরা যেমন দেবতা হয়ে ওঠো, অন্যদেরকেও তেমনি
করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। টিচার রূপী বাবা তোমাদের এমন শিক্ষাই দেন, তোমরা যাতে
কারও কোনও গ্লানি না করো তোমরা। অন্যদেরকে যে বিশেষ জ্ঞানের কথা বোঝাও তা হলো 'সদগতির-মার্গ'!
সবাইকে ভবসাগর পার করার সদগুরু একমাত্র এই বাবা। এমন ধরনের প্রধান প্রধান
পয়েন্টগুলির উপর তাদেরকে বোঝাও। এইসব বিষয়গুলির উপর এই বিশেষ জ্ঞান একমাত্র এই বাবা
ছাড়া আর কেউই তা দিতে জানে না। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
পূজারী থেকে পূজ্য হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নির্বিকারী হতে হবে। জ্ঞানবান হয়ে নিজের
পরিবর্তন নিজেকেই করতে হবে। স্বল্প সময়ের সুখের পিছনে দৌড়াবে না।
২) বাবা আর দাদা (শিব ও ব্রহ্মা) দু'জনকেই স্মরণ করতে হবে। ব্রহ্মার মাধ্যম ছাড়া
শিববাবা স্মরণে আসে না। ভক্তি-মার্গে থাকাকালীন যাকে উর্দ্ধপানে স্মরণ করতে, তিনিই
যখন ব্রহ্মার শরীরে অবস্থান করছেন এখন তাই দুজনকেই স্মরণ করতে হবে।
বরদান:-
জাগতিক কামনাগুলি থেকে মুক্ত থেকে সর্বপ্রকারের প্রশ্নের উর্ধ্বে থাকা প্রসন্নচিত্ত
আত্মা ভব
ব্যাখ্যা :- যে
জাগতিক কামনাগুলি থেকে মুক্ত থাকতে পারে, তার চেহারাতে প্রসন্নতার ঝলক দেখা যায়।
প্রসন্নচিত্ত আত্মা কোনও কিছুতেই প্রশ্ন-চিত্ত হয় না। সে সদা নিঃস্বার্থ আর সদা
সবাইকে নির্দোষ ভাববে, কারও প্রতি দোষারোপ করবে না। যেমনই পরিস্থিতি আসুক না কেন,
কোনও আত্মা যদি পূর্বের কর্মফলের হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে নেওয়ার জন্য তার মোকাবিলা
করার জন্য মুখোমুখি হয়, কিম্বা শরীরের কর্মভোগ মোকাবিলা করতে হয়, তবুও সন্তুষ্টতার
কারণে সে সদা প্রসন্নচিত্তই থাকবে।
স্লোগান:-
অ্যাটেনশনের সাথে কোন্ গুলি ব্যর্থ, তার চেকিং করো, কিন্তু অমনোযোগী হয়ে নয়।