০৬-০৭-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - মায়া ও রাবণের সাথে থাকতে-থাকতে তোমরা দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়েছো, পবিত্র চারাগাছ থেকে অপবিত্র হয়েছো, কিন্তু এবার আবারও পবিত্র হও"
প্রশ্ন:-
প্রত্যেক বাচ্চার মনেই নিজের প্রতি কি এমন বিস্ময় জাগে ? আর কি কারণে বাবারও বিস্ময় জাগে বাচ্চাদের প্রতি ?
উত্তর:-
বাচ্চাদের বিস্ময় জাগার কারণ - পূর্বে আমরা কি ছিলাম, প্রকৃত অর্থে আমরা কার বাচ্চা ছিলাম, বাবার এমন অবিনাশী উত্তরাধিকার যার কাছ থেকে পেয়েছিলাম, সেই বাবাকেই আমরা ভুলে গেলাম বা কিভাবে ! রাবণ এসে আমাদেরকে এমন কুহেলিকা বিস্তার করে দিল যে, রচনা তার প্রকৃত রচয়িতা আর রচনাকেই ভুলে গেল। আর বাচ্চাদের প্রতি বাবার বিস্ময় জাগার কারণ- যে বাচ্চাদেরকে বাবা এত উন্নত করে গড়ে তোলেন, অবিনাশী রাজ্য-ভাগ্যের অধিকার প্রদান করেন, সেই বাচ্চারা কি করে বাবার এত গ্লানি করতে পারে ! রাবণের সংস্পর্শে এসেই বাচ্চারা তাদের সবকিছুই খুইয়েছে।
ওঁম্ শান্তি !
বাচ্চারা, কি ভাবছো তোমরা ? পুরুষার্থের ক্রমানুসারে প্রত্যেক জীব-আত্মার মনে নিজের প্রতি বিস্ময় জাগে এই ভেবে যে, সত্যি, আমরা কি ছিলাম পূর্বে, প্রকৃত অর্থে কার সন্তান আমরা, যার থেকে এমন অবিনাশী উত্তরাধিকার অনায়াসেই পেয়ে এসেছি - এমন বাবাকেই আমরা ভুলে গেলামই বা কিভাবে ! যেখানে সতোপ্রধান দুনিয়ায় সমগ্র বিশ্বের মালিক ছিলাম, কতই অগাধ সুখে ছিলাম আমরা, সেই আমাদেরই পরে আবার অধোগতির সিঁড়ি বেয়ে অবনমন। আসলে, রাবণ এসে এতই কুয়াশাচ্ছন্ন করে দিলো যে, প্রকৃত অর্থে আমরা যার রচনা, সেই রচয়িতা বাবাকেই বেমালুম ভুলে গেলাম। এই কুহেলিকাই মানুষকে তার সঠিক পথ থেকে দিকভ্রষ্ট করে দেয়। তাই আমরাও তেমনি ভুলে গেছিলাম - কোথায় আমাদের প্রকৃত নিবাস, কোথায়ই বা বাস করতাম আমরা। বাবা এখন ওঁনার আপন সন্তানদের দেখতে পেয়ে বলছেন- তোমরা তো আমার সেইসব বাচ্চা, যাদেরকে আজ থেকে ৫-হাজার বছর-পূর্বে আমি রাজ্য-ভাগ্যের অধিকারী করে গেছিলাম। কত সুখে আর আনন্দেই না ছিলে তোমরা। কিন্তু কোথায় এখন তোমাদের সেই সুখ আর আনন্দ ! কি করেই বা এই রাবণের রাজত্বে এসে পড়লে তোমরা। অন্যের রাজত্বে যখন, তখন তো খুবই দুঃখ-কষ্টে আছো তোমরা। একেবারেই ভবঘুরে হয়ে পরেছো তোমরা। আর অন্ধশ্রদ্ধার অন্ধকারে বাবাকে খুঁজেছো তোমরা, তাই তো তাকে খুঁজে পাওনি এতদিন। ফলে তাকে তোমরা নুড়ি-পাথরের সাথে এক করে ফেলেছো। এমনটা হলে তাকে আর খুঁজে পাবেই বা কি প্রকারে ? এইভাবে অর্ধ-কল্প ধরে বিপথগামী হয়ে আশাহত হয়ে পড়েছো তোমরা। নিজেদের অজ্ঞানতার কারণে এই রাবণ-রাজ্যে তোমাদের কতই না দুঃখ-কষ্টে পড়তে হয়েছে। ভক্তি-মার্গে আসার কারণেই ভারত আজ এত গরীব হয়ে পড়েছে। বাচ্চাদেরকে দেখে বাবার মনে হয়, ভক্তি-মার্গে এসে একেবারে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে বাচ্চারা। কিন্তু এই অর্ধ-কল্প যে ভক্তি-মার্গেরই - কিন্তু তা হয় কেন ? আসলে তা হয় আবার ভগবানের সাথে মিলিত হবার জন্য। কারণ, ভক্তির পরেই তো তার ফল দেবেন ভগবান। কিন্তু কি সেই ফল ? তা কিন্তু কেউই জানে না, এই বিষয়ে সবাই তখন বোকা হয়ে যায়। কিন্তু এইসব বিষয়গুলো তোমাদের মন-বুদ্ধিতে অবশ্যই থাকা উচিত - পূর্বে তোমরা কি ছিলে, কিভাবে নিজেরা নিজেদের রাজ্যপাঠ পরিচালনা করতে, তারপরে কিভাবেই বা অধোগতির সিঁড়ি বেয়ে নামতে-নামতে রাবণের রাজ্যে এসে শিকলে বাঁধা পড়লে। যেখানে কেবল অপরম্অপার দুঃখ আর দুঃখ। অথচ, শুরুতে তোমরা ছিলে অপরম্অপার সুখের মধ্যে। তোমাদের মনে তা আসা উচিত, নিজেদের রাজ্যে তোমরা কত অপার সুখের মধ্যে ছিলে, কিন্তু অপরের রাজ্যে এসে কতই না দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। যেমন লোকেরা ভাবে, ইংরেজদের রাজত্বে তাদের কতই না দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
বাচ্চারা, তোমরা এখন এই ঈশ্বরীয় পাঠশালায় বসে আছো। তোমাদের মনে একথা অবশ্যই আসা উচিত, প্রকৃত অর্থে তোমরা কে ও কার সন্তান ছিলে ? বাবা তোমাদেরকে সমগ্র বিশ্বের যে রাজ্য-ভাগ্য প্রদান করেছিলেন, তা খুইয়ে এখন কি করে এই রাবণ-রাজ্যের শৃঙ্খলে এভাবে বাঁধা পড়লে ? যেখানে এত দুঃখ-কষ্ট দেখতে হয়, কত খারাপ কাজ করতে হয়। সৃষ্টিও দিন-প্রতিদিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়ে চলেছে। তেমনি লোকেদের সংস্কারও দিন-প্রতিদিন আরও বেশী ক্রিমিনাল হয়ে যাচ্ছে। এমত অবস্থায় তো তোমাদের সেই আসল স্মৃতিতে আসা উচিত। বাবাও তা পরখ করেন, কে কেমন পবিত্র চারাগাছ। যাদেরকে বাবা রাজ্য-ভাগ্য প্রদান করেছিলেন, তারাও বাবার এমন মহান কর্তব্যকেই (অকুপেশনকেই) ভুলে গেল কি করে। এখন আবার যদি তোমরা এই তমোপ্রধান অবস্থা থেকে সতোপ্রধান অবস্থায় আসতে চাও, তবে এই বাবাকে তেমন ভাবে স্মরণ করতে পারলে তোমাদের সব পাপ ভষ্ম হয়ে পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু এই স্মরণের যোগেই যে টিকে থাকতে পারো না তোমরা। বারবার বলতে থাকো- বাবা ভুল হয়ে যায়। আরে, স্মরণের যোগ না করলে তোমাদের পাপ ভস্মীভূত হবে কি প্রকারে ? একেই তোমরা বিকারের দ্বারা পতিত হয়ে আছো, দ্বিতীয়তঃ এতদিন কতকিছু বলে বাবার এত সম্মাহানি ঘটিয়েছ। মায়ার পাল্লায় পড়ে তোমাদের এতই অধঃপতন হয়েছে, যে বাবা তোমাদেরকে আকাশচুম্বী শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন, তাকেই তোমরা নুড়ি-পাথরের সাথে তুলনা করেছো। যদিও মায়ার সঙ্গে থাকার কারণেই এমন কাজ করেছো তোমরা। কিন্তু এখন তো সেসব তোমাদের বুদ্ধিতে রাখা উচিত। পাথরের মতন একেবারে নিরেট-নির্বোধ হওয়া উচিত নয় মোটেই। যেখানে বাবা রোজ-রোজ মুরলীতে কত সুন্দর-সুন্দর পয়েন্ট শোনাচ্ছেন তোমাদেরকে।
বাচ্চারা, বম্বেতে এখন তোমাদের যেমন অনেক বড় সংগঠন হয়েছে, সেখানে তোমরা বলতে পারো, বাবা বলছেন- "ওহে ভারত-বাসীরা, আমিই তোমাদেরকে (স্বর্গের) রাজ্য-ভাগ্যের অধিকার দিয়ে থাকি। একদা তোমরাই সেই স্বর্গ-রাজ্যর দেবতা ছিলে। কিন্তু তোমরা এই রাবণ-রাজ্যে এলেই বা কীভাবে ? অবশ্য ড্রামার চিত্রপটে এমনই রয়েছে।" বাচ্চারা, তোমরা রচয়িতা আর তাঁর রচনার আদি-মধ্য-অন্তকে ভালভাবে বুঝতে পারলে, তবেই তো উচ্চ পদের অধিকারী হতে পারবে। আমাকে স্মরণ করলেই তোমাদের সব বিকর্ম বিনাশ হবে। যদিও তোমরা সবাই বসে আছো এখানে, কিন্তু তোমাদের অনেকরই বুদ্ধি ঘুরছে এদিকে-ওদিকে। বুদ্ধিতে একথা ধারণ করা উচিত - পূর্বে তোমরা কোন্ রাজত্বে ছিলে আর এখন রাবণ-রাজ্যে অর্থাৎ অপরের রাজ্যে এসে পড়েছো। ফলে কতই না দুঃখ-কষ্টের কবলে পড়েছো তোমরা। যেখানে শিবালয়ে অর্থাৎ স্বর্গ-রাজ্যে তোমরা খুবই সুখে ছিলে। এখানে তো বাবাকেই আসতে হয়েছে, তোমাদেরকে এই বেশ্যালয় থেকে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু তোমরা নিজেরাই তো তেমন ভাবে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী নও। বাবা জানাচ্ছেন- একবার শিবালয়ে পৌঁছে গেলে সেখানে আর এই বিষের জ্বালায় জ্বলতে হবে না, যেহেতু বিষ জাতীয় কোনও কিছুই নেই সেখানে। এখানকার মতন খারাপ খাওয়া-দাওয়া সেখানে পাবেই না। যেহেতু সেটা যে সমগ্র নতুন বিশ্বের মালিক লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্য। কিন্তু সেসব এখন গেল কোথায় ? তোমরা আবারও সেই রাজ্য-ভাগ্যের পদ লাভ করতে চলেছো, কত সহজ সরল পদ্ধতিতে। এসব কথাই ব্যাখ্যা করে বোঝাচ্ছেন বাবা। সবাই তো আর একই প্রকারের সমান মানের সেবাধারী হয় না। রাজধানীও স্থাপিত হয় ক্রমানুসারে। ঠিক যেমনটি হয়েছিলো ৫-হাজার বছর পূর্বে। অতএব, এবার তোমাদেরকে সতোপ্রধান যে হতেই হবে। যেহেতু বাবা জানাচ্ছেন, পুরোনো এই দুনিয়া এখন একেবারেই তমোপ্রধান। পুরোপুরি পুরোনো হলে, বাবাকে তো তখন আসতেই হবে। এই বাবা ছাড়া আর কেউই যে সেই প্রকৃত জ্ঞান বোঝাতে পারে না।
বাচ্চারা, ভগবান স্বয়ং এসে এনার (ব্রহ্মার) রথের সাহায্যে তোমাদেরকে এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন। এ'কথা স্মরণে থাকলে তবেই তোমরা এই বিশেষ জ্ঞান নিজেরা যেমন বুদ্ধিতে ধারণ করতে পারবে, আবার অন্যদেরকেও তা শুনিয়ে নিজেদের মতন করে গড়ে তুলতে পারবে। এবার বাবা বোঝাচ্ছেন - ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে ক্রিমিনাল স্বভাবের, অনেক কষ্টে তার সংশোধন হয়েছে। এখন আর তোমাদের দৃষ্টি-ভঙ্গীতেও কোনও ক্রিমিনালিটি নেই। ক্রিমিনালিটির প্রধানটি হলো কাম-বিকারের ক্রিমিনালিটি। যা ছাড়ানোটা খুবই মুস্কিলের ব্যাপার। যেহেতু এর সাথেই থাকে ৫-বিকার। অবশ্য ক্রোধের ক্রিমিনালিটিও কম কিছু নয়। বসে থেকেই যেন ভুতের বশীভূত হয়ে যাও। এটাও ক্রিমিনালিটির আর এক রূপ। যতক্ষণ না সিভিলাইজড্ হতে পারছো, ততক্ষণ কোনও ফলই পাবে না। উল্টে শতগুণ পাপের বোঝা চাপবে ঘাড়ে। যার ফল স্বরূপ আরও ঘন ঘন ক্রোধ বাড়তে থাকবে। তাই তো বাবা বোঝাচ্ছেন - আগে তোমাকে এমন ভাবধারায় উপনীত হতে হবে, এখন আর তুমি রাবণের রাজত্বে নেই, তুমি ঈশ্বরের তত্ত্বাবধানে ওঁনার কাছেই বসে আছো। অতএব বিকারগুলিকে ঝেড়ে ফেলার প্রতিজ্ঞা করতে হবে নিজেদেরকেই। একথা বাবা স্বয়ং জানাচ্ছেন। যার জন্য দরকার বাবাকে স্মরণ করা আর নিজেকে ক্রোধমুক্ত করা। অর্ধ-কল্প ধরে এই ৫-বিকার তোমাকে ক্রমান্বয়ে অধোগতির নিম্নস্তরে নামিয়ে এনেছে। অথচ একদা তোমরাই ছিলে সর্ব্বোচ্চ স্তরের। ফলে সবচেয়ে বেশী পতন হয়েছে তোমাদেরই। এই ৫-বিকারের ভূতের কারণেই তোমাদের এত অধঃপতন। কিন্তু এখন শিবালয়ে যাবার প্রস্তুতিতে এই বিকারগুলির নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। সুতরাং এই বেশ্যালয় থেকে মনকে সরিয়ে নিতে থাকো। বাবাকে স্মরণ করতে থাকলে সেই অন্তিম ইচ্ছাই ফলীভূত হবে। তবেই তোমরা তোমাদের প্রকৃত গৃহে পৌঁছাতে পারবে। এমন সঠিক দিশা আর কেউই দেখাতে পারবে না। ভগবান উবাচ - "আমি তো কখনোই একথা বলিনি যে, আমি সর্বব্যাপী। আমি কেবল তোমাদের রাজযোগ শিখিয়েছি আর বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলেছি। সেখানে পৌঁছোবার পর এই জ্ঞানের আর প্রয়োজন পড়ে না। যেহেতু আমার অবিনাশী উত্তরাধিকার পেয়ে তখন তোমরা মনুষ্য থেকে দেবতা হয়ে যাও। তার জন্য কোনও প্রকারের হঠ-যোগ ইত্যাদির প্রয়োজন নেই। কেবলমাত্র নিজেকে আত্মা মনে করবে। তোমার শরীরকে কেনই বা তুমি (আত্মা) ভাববে ? এই দেহের ভাব (দেহ-অভিমান) থাকলে জ্ঞানের ধারণা যেমন জন্মায় না, তেমনি তা সঠিক ভাবে বুঝতেও পারে না। যদিও সবকিছুই ভবিতব্য। কিন্তু, তোমাদের এই ধারণা তো হয়েছে, এতদিন তোমরা ছিলে রাবণ-রাজ্যে - আর এখন পুরুষার্থ করছো রাম-রাজ্যে যাওয়ার লক্ষ্যে। আর বর্তমানে তোমরা রয়েছো পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে।
বাচ্চারা, তোমাদেরকে ঘর-সংসার গৃহস্থালিতেই থাকতে হবে। তোমরা এত অধিক সংখ্যায় এখানে থাকবেই বা কোথায় ! ব্রাহ্মণ হলেও সবাই তো আর ব্রহ্মার কাছেই থাকতে পারবে না। থাকতে তো হবে যার যার নিজের ঘর-বাড়িতেই। কেবলমাত্র এই জ্ঞানকে বুঝে নিয়ে বুদ্ধিতে ধারণ করতে হবে যে, এখন আর তোমরা শূদ্র নও, প্রকৃত ব্রাহ্মণ হয়েছো। যদিও ব্রাহ্মণদের টিকির আকার যথেষ্টই ছোট। ঘর-সংসার গৃহস্থালিতে থেকেই শরীর নির্বাহের জন্য যে যার কাজ-কর্ম, ব্যাবসা-বাণিজ্য, ইত্যাদি করার সাথে সাথে বাবাকেও স্মরণ করতে হবে। ভাবতে হবে, পূর্বে কি ছিলাম আর কি হয়েছি এখন। আমরা এখন অপরের রাজ্যে অবস্থান করছি। যেখানে আমরা কতই না দুঃখ-কষ্টে ছিলাম। কিন্তু এখন বাবা এসে আবার আমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের প্রকৃত গৃহে। গৃহস্থ ব্যাবহারে থেকেই, যার যার নিজের অবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। শুরুতে কত বড় বড় (ধনী) বৃক্ষই তো এসেছিলো, তাদের মধ্যে কেউ গেছে চলে, কেউ বা থেকে গেছে। তেমনি তোমাদের বুদ্ধিতেও এমন চিন্তাই যেন হয়, পূর্বে তোমরা কত সুন্দর নিজেদের রাজত্বে ছিলে, আর এখন কোথায় এসে পড়েছো। কিন্তু এরপর অবশ্য নিজেদের রাজ্যেই ফিরে যাবে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ লিখে জানাও, বলো বাবা, অমুক বি.কের উপস্থিতি ও ধারণা পূর্বে খুবই ভাল ছিল, কিন্তু আজকাল আর সে আসছে না। বাবা জানান- না আসার কারণ, হয়তো সে বিকারের কবলে পড়েছে কিম্বা জ্ঞানের কোনও ধারণাই সে ধারণ করতে পারেনি। ফলে উন্নতির পরিবর্তে অধঃপতন হতে হতে কানাকড়ি-মূল্য পদপ্রাপ্তি হবে তার। কোথায় রাজা হওয়া আর কোথায় নীচু পদ পাওয়া। যদিও সেখানে সবাই সুখী থাকবে, কিন্তু পুরুষার্থ করে উচ্চ পদে আসীন হওয়া অন্য কথা। তবে এদের মধ্যে বড় কে হতে পারে ? তার দ্বারা সবাই বুঝতে পারে। এই পুরুষার্থের দ্বারাই যে যার নিজের পদ পেয়ে থাকে। তোমরা সবাই এখন সেই পুরুষার্থের মধ্যেই আছে। এমনকি ভূপালের রাজা কিং মহেন্দ্রও এখন মনোযোগের সাথে পুরুষার্থ করে চলেছে। এখানকার কিং ওখানকার কিং-এর তুলনায় যেন পাই-পয়সা। তোমরা সবাই যে সেই সূর্য-বংশী রাজধানীতেই যাবে। তাই পুরুষার্থ এমন হওয়া উচিত, যাতে মালার পুঁতি হয়ে বিজয় মালাতেই স্থান পেতে পারো। তাই তো বাবা বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন - মাঝে মাঝে নিজেরাই নিজের মনের কাছে তা যাচাই করে দেখো, নিজের দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোনও ক্রিমিনাল ভাব নেই তো ? যদি তা সিভিলাইজ হয়ে যায় তো অতি উত্তম। যদিও বিকারের বশবর্তী আর হচ্ছো না, তবুও তোমার দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু কিছু না কিছু প্রতারণা করতেই থাকে তোমারই সাথে। যার প্রথমটি হলো কাম-বিকার। এই ক্রিমিনাল দৃষ্টি খুবই খারাপ। তাই তো এর নাম হয়েছে 'ক্রিমিনাল দৃষ্টি-ভঙ্গি'! অপরদিকে ভাল দৃষ্টির নাম 'সিভিল দৃষ্টি-ভঙ্গি'! অসীম জগতের বাবা তো তার বাচ্চাদেরকে ভাল করেই জানেন - কারা কি কি কর্ম করতে পারে। কে কতটা পরিমাণে সেবার কাজে লিপ্ত থাকে। কার কার ক্রিমিনাল দৃষ্টি-ভঙ্গির এখনও কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই তো এখনও পর্যন্ত এমন অনেক গোপন খবর বাবার কাছে আসে। সময় এলে তারা নিজেই বাবাকে সেই সঠিক তথ্য লিখে জানাবে এবং তারা নিজেরাই তা অনুভব করবে, আমরা এতদিন ধরে বাবাকে এমন মিথ্যা কথা বলে এসেছি, তাই তো আমাদের আজ এত অধঃপতন হয়েছে। আসলে জ্ঞানকে সেভাবে বুদ্ধিতে ধারণ করতে পারেনি যে। আর এই কারণেই তাদের অবস্থারও উন্নতি হয়নি। যেহেতু বাবার কাছে তারা গোপন করেছে। যদিও অনেকেই এমন গোপন করে থাকে। কিন্তু অবিনাশী সার্জন বাবার কাছে এই ৫-বিকারের প্রকৃত অবস্থাকে গোপন করা উচিত নয় মোটেই। সবকিছুই ওনাকে সত্যি সত্যি বলা উচিত। তোমাদের কার বুদ্ধি কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে, কার বুদ্ধি আবার শিববাবার প্রতি টিকে থাকে না। তোমরা যদি তোমাদের সেইসব দুর্বলতাগুলিকে না জানাও, সেগুলো তো আরও বাড়তেই থাকবে।
এবার বাবা বোঝাচ্ছেন - বাচ্চারা, দেহী-অভিমানী হও। নিজেদেরকে কেবলমাত্র আত্মা ভাবো। অর্থাৎ আত্মারা সবাই ভাই-ভাই! এই তোমরাই যখন ভাই-ভাই স্থিতিতে ছিলে, তখন তোমরা যেমন ছিলে পূজ্য-স্বরূপ, তেমনি ছিলে সুখী। যখন থেকে পূজারী-স্বরূপে এসেছো, তখন থেকেই তোমাদের এতসব দুঃখ-কষ্ট। সত্যি এ কি হাল হয়েছে তোমাদের। লোকেরা বলে যে যুগ-যুগ ধরে এই গৃহস্থ-আশ্রম প্রথা চলে আসছে পরম্পরায়। আবার এও বলে যে, কেন রাম-সীতার কি কোনো বাচ্চা ছিল না! -তা ছিল অবশ্যই, কিন্তু সেই সময়কালে কাম-বিকারের দ্বারা বাচ্চার জন্ম হতো না। সেই দুনিয়া ছিল সম্পূর্ণ নির্বিকারী দুনিয়া। সেই দুনিয়ায় কোনও প্রকার ভ্রষ্টাচারের অংশ মাত্রও ছিল না। কোনও বিকারই ছিল না। যেহেতু সেটা রাবণ-রাজ্য ছিল না - তা ছিল রাম-রাজ্য। রাম-রাজ্যে তো আর রাবণের প্রবেশ ঘটে না। সত্যি, মানুষেরা এখন এতই ভ্রষ্ট-বুদ্ধির হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের এমন অবস্থা কে করলো ? শিববাবা বলছেন- "আমি তো তোমাদের সতোপ্রধান বানিয়েছিলাম। তোমাদেরকে ভব-সাগরও পার করে দিয়েছিলাম। তবে তোমাদেরকে এমন তমোপ্রধান বানালো কে ? অবশ্যই সেই রাবণ। যা তোমরা এখন ভুলে গেছো। উপরন্তু লোকেরা বলে যে- যা চলছে, এসবকিছুই পরম্পরায় চলে আসছে। আরে, সেই পরম্পরাটা কোন্ সময় থেকে ? সেই সময়কালের কোনও হিসেব তো জানাও! অবুঝের মতন তারা যা বলে তার প্রকৃত তথ্যটাই যে জানে না তারা। তাই তো বাবা তোমাদেরকে এমন যুক্তি ও তথ্য প্রমাণ দিয়ে জানাচ্ছেন । একদা কত সুন্দর রাজ্য-ভাগ্যের অধিকারী বানিয়ে গেছিলেন বাবা। তোমরা ভারতবাসীরা তখন কতই না সুখ-শান্তিতে ছিলে। ভারত-ভূখণ্ড ছাড়া অন্য কোনও খণ্ড ছিল না দুনিয়ায়। খ্রিস্টানেরাও তা স্বীকার করে- সেই সময়কালটা ছিল স্বর্গ-রাজ্য। সেই সব দেবতাদের চিত্র ও মূর্তিগুলি এখনও বর্তমান। যার থেকে পুরানো আর কিছুই নেই। সবচেয়ে পুরানো যা, তা হলো লক্ষ্মী-নারায়ণ ও তাদেরই ব্যবহৃত সামগ্রী। অবশ্য পুরানো হিসাবে ধরতে গেলে শ্রীকৃষ্ণকেই ধরতে হয়। আবার নূতন হিসাবে ধরতে গেলে সেই শ্রীকৃষ্ণকেই ধরতে হয়। পুরানো অর্থাৎ যা অতীতে হয়ে গেছে, তেমনি তোমরাও একদা সৌম্য উজ্জ্বল-গৌর-বর্ণের ছিলে, আর এখন হয়েছো কদাকার শ্যাম-বর্ণের। সেই সুপ্ত স্মৃতিতেই তো কৃষ্ণকে দেখে ভারতবাসীরা এত উল্লসিত হয়। তাই সেই শ্যাম-বর্ণের কৃষ্ণকে কেমন সুন্দর করে দোলনায় দোলায়। লোকেরা তো জানেই না সেই সৌম্য গৌর-বর্ণের মানুষেরা ছিলেন কোন সময়কালে। অথচ সুপ্ত মনে তা থাকার কারণে কৃষ্ণকে খুব ভালবাসে। কিন্তু রাধা তবে কি দোষ করলো সেক্ষেত্রে ?
এবার বাবা বলছেন- বাচ্চারা, তোমরা এখানে সৎ-দের সঙ্গে অর্থাৎ সৎসঙ্গে বসে আছো। বাইরে বেরিয়ে কুসঙ্গে মিশলেই সবকিছুই ভুলে যাও। মায়া যে প্রবল শক্তিশালী। এমনকি হাতীকেও সে অনায়াসে গিলে নেয়। তার হাত থেকে নিস্তার পাবার জন্য সবাই পালাতে চায়। নিজের মধ্যে সামান্য অহংকার এলেও আরও সর্বনাশ করে দেয়। অসীম জগতের এই বাবা অবশ্য তোমাদের তা বোঝাতে থাকবে বারে-বারে। অতএব তোমরা নিরাশ হয়ো না। বাবা এমন কেন বলেন, যাতে আমার মান-সম্মানে আঘাত লাগে। এবার বাবা বলছেন- আরে, তোমাদের সেই মান-সম্মান তো রাবণ-রাজ্যেই হারিয়ে গেছে। তোমরা তো তখনই সবকিছু হারিয়ে বসে আছো, যখন থেকে তোমরা দেহ-অভিমানে এসেছো, পথভ্রষ্ট হয়েছো। ক্রোধ, লোভ - এগুলি যে ক্রিমিনাল দৃষ্টি-ভঙ্গি। যেমন, চোখ দিয়ে কিছু দেখলে আর তা পছন্দ হলো, সেটাও এক প্রকারের লোভ। এখন বাবা স্বয়ং এসে ওনার বাগান পরিদর্শন করছেন- কোন বাগানে কিরকম কি ফুল আছে। এই বাগান থেকে আবার যাবেন অন্য বাগানে, সেখানকার ফুল দেখতে। শিববাবাকে ফুল দিয়েই তো পূজা করে লোকেরা। কিন্তু উঁনি তো নিরাকার অর্থাৎ চৈতন্য ফুল। তোমরাও নিজেরা পুরুষার্থ করে তেমনই চৈতন্য ফুল হও। তাই বাবা বলছেন - মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, যা হয়ে গেছে তা ভুলে গিয়ে ড্রামাকে জানো। পুরানো কিছু যেন চিন্তায় না আসে। তোমরা এখন পুরুষার্থের মধ্যে আছো, এর জন্য কত কষ্টও করতে হয় তোমাদের, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না, যেহেতু এই জ্ঞান যে তোমরা তেমন ভাবে বুদ্ধিতে ধারণ করো না। অবশ্য প্রজাও তো চাই। অল্প-বিস্তর শুনলে ও জানলে তারা তো প্রজাই হবে। এমন প্রজার সংখ্যাই তো অধিক হবে। এই বিশেষ জ্ঞান একবার ধারণ করতে পারলে তার আর বিনাশ হয় না। আগ্রহ ভরে মাত্র একবার শুনলেও-শিববাবার প্রতি ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাতেও তারা অন্তত পক্ষে প্রজা তো হতে পারবে। তোমাদের মনে এই স্মৃতি আসা উচিত, পূর্বে তোমরা কোন রাজ্যে ছিলে, যা আবারও পেতে চলেছো। এই কারণেই সম্পূর্ণভাবে নিজেকে পুরুষার্থের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হবে। একেবারে সঠিক ভাবে সেবাকার্য চলছে । *আচ্ছা !*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. শিবালয়ে যেতে হলে বিকারগুলিকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। বর্তমানের এই বেশ্যালয় থেকে ধীরে ধীরে মনকে সরিয়ে ফেলতে হবে। শূদ্রের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
২. যা হয়ে গেছে তা ড্রামার ভবিতব্য ভেবে সে বিষয়ে কোনও চিন্তা-ভাবনা করবে না। কখনও অহংকারের বশীভূত হবে না। সংশোধনের কোনও শিক্ষা পেলে নিরাশ হবে না তাতে।
বরদান:-
নিশ্চয়ের ফাউন্ডেশন দ্বারা সম্পূর্ণতা পর্যন্ত পৌঁছে নিশ্চিন্ত নিশ্চয়বুদ্ধি হও
নিশ্চয় ব্রাহ্মণ জীবনের সম্পন্নতার ফাউন্ডেশন। আর এই ফাউন্ডেশন পোক্ত হলে সহজে আর তীব্র গতিতে সম্পূর্ণতা পর্যন্ত নিশ্চিত পৌঁছানো যায়। যে যথার্থ নিশ্চয়-বুদ্ধির, সে সদা নিশ্চিন্তে থাকে। এই নিশ্চয়তাই নিজের আত্ম-স্বরূপকে জানা, মান্য করা আর সেই অনুসারে চলা এবং বাবা যেমনই হোক্, যে রূপে, যে ভাবেই উঁনি ওঁনার কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করুন না কেন- তাকেই যথার্থ ভাববে। এমন নিশ্চয়-বুদ্ধিধারীরাই বিজয়ী হয়।
স্লোগান:-
নিজের সময়, সুখ ও প্রাপ্তির ইচ্ছা সবাইকে যে দান করতে পারে - সে মহাদানী।