২০-০২-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - নিজেদের হার-জিতের ইতিহাসকে স্মরণ করো। (ড্রামার) এ হল সুখ-দুঃখের খেলা। যেখানে তিন-চতুর্থাংশ (৩/৪) সুখ আর এক-চতুর্থাংশ (১/৪) দুঃখ। সুখ আর দুঃখ সমান-সমান মোটেই নয়"
প্রশ্ন:-
বেহদের এই ড্রামা খুবই বিস্ময়ের - কিন্তু তা কি কারণে ?
উত্তর:-
বেহদের এই ড্রামা এতই বিস্ময়কর যে, প্রতিটি সেকেণ্ডেই সমগ্র সৃষ্টি জগতে যা কিছু ঘটছে, হুবহু আবারও তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং হবে। এই অবিনাশী ড্রামা ঠিক যেন উঁকুনের চালে চলতে থাকে আর ঘড়ির কাঁটার মতন টিক্-টিক্ করতে থাকে, যার একটি টিক্ অপর টিক্-এর সাথে মেলে না। এই কারণেই ড্রামা খুব বিস্ময়কর। ভাল বা মন্দ, যার যেমন পার্টই থাকুক না কেন - তা কিন্তু পূর্বেই নির্ধারিত। -এই কথার মর্মার্থ কেবল তোমরা বি.কে.-রাই সঠিক বুঝতে পারো।
ওঁম্ শান্তি!
এই 'ওঁম্ শান্তি'-র যথার্থ অর্থ বাচ্চাদেরকে বোঝানোই আছে। তোমরা এখন আত্ম-অভিমানী হওয়ার অভ্যাস করছ। আত্মা নিজেই নিজের পরিচয়ে জানায় -"আমি আত্মা!" আত্মার স্বধর্ম হল শান্ত থাকা। সব আত্মাদেরই এবার ঘরে ফেরার পালা। আত্মাদেরকে তাদের নিজের ঘরে ফিরে যাবার কথা জানায় কে ? অবশ্যই তা আত্মাদের প্রকৃত পিতা পরম-আত্মা। বলেন- "ওহে আত্মারা, এবার এই পুরানো দুনিয়া বিনাশের সময়।" প্রায় সকল পার্টধারীই এখন এখানে এসে পৌঁছেছে। খুবই অল্প সংখ্যক আত্মা রয়েছে ওখানে। কিন্তু এখন যে সবারই ঘরে ফেরার পালা। আবারও যে যার যার নিজের কর্ম-কর্তব্যের পার্টের পুনরাবৃত্তি হবে। বাচ্চারা, আসলে পূর্ব কল্পে তোমরাই ছিলে সেই আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের। সত্যযুগের শুরুতেই তোমরা আসো দুনিয়ায়, কিন্তু বার-বার জন্ম নিতে নিতে এখন তোমরা অপরের শাসনাধীন (রাবণের) রাজ্যে এসে পড়েছ। যা কেবলমাত্র তোমাদের আত্মাই তা উপলব্ধি করতে পারে, অন্যদের আত্মা তা পারে না। যদিও তোমরা সকলেই সেই একই পিতার সন্তান। তাই তো মিষ্টি-মিষ্টি বি.কে. বাচ্চাদেরকে বাবা বলেন - বাচ্চারা, নিজেদের রাজ্য-ভাগ্য পদ খুইয়ে, তোমরা এখন অপরের অর্থাৎ রাবণের রাজ্যে এসে পড়েছ। ৫-হাজার বর্ষ পূর্বে সত্যযুগে তোমরাই ছিলে দেবী-দেবতা ধর্মের বাহক। কল্পের অর্ধেকটা তোমাদেরই হাতে ছিলো শাসন ক্ষমতা, এরপর নিয়মানুসারের অধোগতিতে কেবলই নীচের দিকে এসে পৌঁছেছ। অবশ্য এমনটা হতেই হয়- সত্যযুগ থেকে ত্রেতায়, তারপর দ্বাপর ও কলিযুগে তো আসতেই হয় - তা ভুললে কিন্তু চলবে না। অতএব নিজেদের সেই হার-জিৎ-এর ইতিহাসকে স্মরণ করার চেষ্টা করো। বাচ্চারা, তোমরা এও জানো, সত্যযুগে তোমরা থাকো সতোপ্রধান, সুখধাম-বাসী। বারবার জন্ম নিতে নিতে এখন এই জরাজীর্ণ দুঃখধামে এসে পড়েছ। তোমরা অর্থাৎ আত্মারা এখন আবার আত্মাদের পিতা পরমাত্মা বাবার শ্রীমৎ পাচ্ছ। যে আত্মারা এতদিন তাদের প্রকৃত পিতা পরমাত্মার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল বহুকাল। সর্বপ্রথম তোমরাই সেই বিচ্ছিন্ন হওয়া বাচ্চা, কর্মফল অনুযায়ী যারা এসেছিলে সুখের দুনিয়ায় নিজেদের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করতে। পরে তোমাদের রাজ্য-ভাগ্য কেড়ে নেওয়া হয়। এরপরেই দুঃখের দুনিয়ায় দুঃখের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করতে হয় তোমাদেরকেই। এবার আবার নিজেদেরকেই তার অধিকারী হতে হবে, পূর্ব সেই রাজ্য-ভাগ্য পদের, যে দুনিয়া কেবলই সুখ ও শান্তির।
লোকেরা অর্থাৎ আত্মারা চায় বিশ্বে যেন শান্তি স্থাপন হয়। কিন্তু বিশ্ব এখন এতই তমোপ্রধান যে কারণে বিশ্বে এত অশান্তি। শান্তি আর অশান্তি, সুখ আর দুঃখ - এটাই তো জাগতিক খেলা। অবশ্য তোমরা তা জানো, ৫-হাজার বর্ষ পূর্বে এই বিশ্বেই সুখ-শান্তি বিরাজ করতো। আত্মাদের প্রকৃত বাসস্থান মূল-বতন কিন্তু সদাকালের শান্তিধাম, তাই সেখানে অশান্তির কোনও প্রশ্নই নেই। সত্যযুগ হলো শান্তির-বিশ্ব। তারপর নিয়মের অধোগতিতে ধীরে ধীরে তা হয়ে ওঠে অশান্তির-বিশ্ব। সমগ্র বিশ্বই এখন চায়, বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হোক। বিশ্ব কিন্তু "ব্রহ্ম-মহতত্ত্ব"-রই এক অংশ। ব্রহ্ম-মহতত্ত্বকেই "ব্রহ্মাণ্ড" বলা হয়। যেখানে আত্মারা নিবাস করে। আত্মাদের স্বধর্মই হলো শান্ত থাকা। শরীর থেকে আত্মা বেরিয়ে গেলেই তা শান্তরূপ হয়ে যায়। আবার নতুন শরীর পেলে তারপর কথাবার্তা-চলাফেরা করতে পারে। বাচ্চারা, এখানে তোমাদের আসার উদ্দেশ্য কি? উত্তরে তোমরা জানাও-"বাবা, তুমি আমাদের শান্তিধাম, সুখধামে নিয়ে চলো।" শান্তিধাম কিম্বা মুক্তিধামে তো আর সুখ-দুঃখের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করতে হয় না। সত্যযুগ হলো সুখধাম আর কলিযুগ হলো দুঃখধাম। কিন্তু এই অধোগতি নিয়ম কি প্রকারের, ৮৪-জন্মের সিঁড়ির চিত্রে তা প্রদর্শিত হয়েছে। যদিও এই ৮৪-সিঁড়ি বেয়ে তোমরা ধীরে ধীরে নেমে আসো, কিন্তু চড়ার বেলায় মুহূর্তেই তা চড়তে পারো। চড়তে গেলে পবিত্র হতেই হয় আর পতিত হলেই নিম্নগতি। বাবা না এলে বাচ্চারা পবিত্র হতে পারে না যে। তাই তো পবিত্র হবার জন্য এত কাতর হয়ে বাবাকে ডাকতে থাকো-"বাবা তুমি এসো, আমাদেরকে পবিত্র করে গড়ে তোলো।"
প্রথমে তোমাদের যেতে হয় পবিত্র শান্তিধামে। সেখান থেকে আসতে হয় সুখধামে। আগে সুখ - পরে দুঃখ। সুখের ভাগই বেশী। সমান-সমান হলে তো আর মজা নেই সেখানে। তা তখন মূল্যহীন হয়ে যায়। তাই বাবা বোঝাচ্ছেন, এই ড্রামার তিন-চতুর্থাংশ (৩/৪) হলো সুখ আর বাকী এক-চতুর্থাংশ (১/৪) নানাপ্রকার দুঃখের। তাই এই ড্রামাকে বলা হয় সুখ-দুঃখের খেলা। বাবা এও জানেন, একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই বি.কে.দেরকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। তাই তো বাবা নিজেই বাচ্চাদেরকে নিজের পরিচয় জানিয়ে সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের বিষয়টাও উপস্থাপন করেছেন। বাচ্চাদেরকে নাস্তিক থেকে আস্তিক বানিয়েছেন। তিন-লোকের বিষয়েও জানিয়েছেন। ভারতবাসীরা তো কল্পের আয়ুও জানে না। যা একমাত্র তোমরাই বোঝো। তাই আবারও বাবা তোমাদেরকে কত সুন্দর করে এত উন্নত জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন। যেহেতু এটা অপরের রাজ্য, তাই বাবা আসেন গুপ্ত বেশে। অর্থাৎ ইনি গুপ্ত-বাবা। লোকেরা কেবল নিজেদের দেহকেই জানে, আত্মাকে জানেই না। অথচ আত্মা অবিনাশী আর দেহ বিনাশী। বি.কে.-দের কিন্তু আত্মা আর আত্মার বাবা পরমাত্মাকে ভোলা উচিত নয় মোটেই। এও স্মরনে রাখতে হবে, অবিনাশী উত্তরাধিকার এই বাবার থেকেই পেয়ে থাকো তোমরা। কিন্তু তা পাওয়া যায় পবিত্র হতে পারলেই। এই রাবণ রাজ্যে থাকতে থাকতে তোমরা পতিত হয়ে পড়েছ, তাই তো বাবাকে এভাবে ডাকতে থাকো তোমরা। এখন তোমাদের দুই বাবা। সকল আত্মারই সেই একই বাবা, যিনি পরমপিতা পরমাত্মা। (অর্থাৎ আত্মা-আত্মা ভাই-ভাই) তাই ভাই কখনও বাবা হতে পারে না। যখন-যখন ভারতে অতি মাত্রায় ধর্মের গ্লানি হয়, তখন সব ধর্মাবলম্বীরাই এক ও অভিন্ন এই পারলৌকিক বাবাকে ভুলে যায়। আর ঠিক তখনই বাবাকে আসতে হয় এই দুনিয়ায়। এটা এক ধরণের খেলা। ড্রামাতে যা কিছুই ঘটছে, ড্রামার প্রতিটি দৃশ্যেরই তা পুনরাবৃত্তি হয় আবার। তোমরা আত্মাধারীরা তোমাদের কর্মফলের কর্ম-কর্তব্য সম্পূর্ণ করতে অনেক বারই আসো আর যাও। এই অবিনাশী নাটকের চিত্রপট উঁকুনের মতন ধীরে ধীরে চলতেই থাকে। যা কখনই থামে না। টিক্-টিক্ করে চলতেই থাকে। কিন্তু একটি ঘটনার সাথে অন্যটির হুবহু মিল হয় না কখনই। সত্যি, কি আশ্চর্যের এই নাটক। প্রতি সেকেন্ডেই যা কিছু ঘটে চলেছে তারই আবার পুনরাবৃত্তি হয়। যে যেই ধর্মের প্রচারক সে সেই ধর্মের মুখ্য পার্টধারী। এইভাবেই সবাই যে যার নিজের ধর্মের স্থাপনা করে, কিন্তু কেউই তাদের নিজেদের রাজধানী স্থাপন করে না। এক ও একমাত্র পরমপিতা পরমাত্মাই যেমনি নিজের ধর্ম স্থাপনা করেন তেমনি আবার নিজস্ব রাজধানী ও রাজকুলও তৈরী করেন। অন্য ধর্মস্থাপকেরা ধর্ম স্থাপন করার পরেই তার অনুগামীরা আসতে থাকে। কিন্তু সবাইকে একসাথে জড়ো করে (শান্তিধামে) নিয়ে যান কে? --একমাত্র এই বাবা। কারও আবার অল্প কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করেই রেহাই। যেমন- পোঁকা-মাকড়, জীব-জন্তুরা, জন্মের কিছু দিন পরেই মারা যায়। তাই তাদেরকে এই অবিনাশী ড্রামার অংশ হিসাবে গণ্য করা হয় না। (পার্টধারীর) মনোযোগ কোন্ দিকে যায় ? প্রথমে তো রচয়িতার দিকেই, যাকে সবাই ডাকতে থাকে- "ও গড-ফাদার, হে পরমপিতা-পরমাত্মা।" যেহেতু উনিই সকল আত্মাদের প্রকৃত পিতা। কল্প শুরর প্রথমেই আসে আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম। সৃষ্টি-চক্রের অসীম-বেহদের এই কল্প-বৃক্ষের বিস্তারও অনেক। কত মত-মতান্তর, কত বিভিন্নতা, কতকিছুই উঠে আসে এতে। যা গুণে শেষ করা যায় না। মূল-শিকড়টাই যে নেই এখন, অন্যগুলির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে কোনওক্রমে। তাই বাবা বলছেন- "মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, আমি তখনই আসি যখন অনেক ধর্মের সমাবেশ হয়, কোনও একটি ধর্মের নয়। কল্প-বৃক্ষের মূল ভিত তো এখন প্রায় লোপ পেয়েছে। যা কেবল ছবির মতন দাঁড়িয়ে আছে মাত্র।" আদি সনাতন ধর্ম যখন ছিল, তখন কেবল একটি মাত্রই ধর্ম ছিল দুনিয়ায়। অন্যান্য ধর্মগুলি ধীরে ধীরে পরে আসতে থাকে। ত্রেতাযুগে এমন অনেকেই আসে যারা (সত্যযুগের) স্বর্গে আসতে পারে না।
বাচ্চারা, তোমরা এখন পুরুষার্থ করছ নতুন দুনিয়ার স্বর্গ-রাজ্য (স্বর্ণযুগের সত্যযুগ) যাবার লক্ষ্যে। বাবা জানাচ্ছেন সেই স্বর্গ-রাজ্যে তোমরা তখনই আসতে পারবে, যখন বাবার সাথে স্মরণের যোগের দ্বারা পবিত্র হতে পারবে ও দৈবগুণগুলি ধারণ করতে পারবে। কল্প-বৃক্ষের ডাল-পালাও তো অনেক। কিন্তু বি.কে.-রা তো জানতে পেরেছ, তোমরাই ছিলে স্বর্গ-রাজ্যের সেই আদি-সনাতন দেবী-দেবতা। যে স্বর্গ-রাজ্যের অস্তিত্ব লোপ হয়ে এখন তা নরক-রাজ্যে পর্যবসিত হয়েছে। তাই তো বাবা এমন প্রশ্নাবলী তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা নিজেরাই নিজের অন্তর-মনের কাছে জানতে চাও, তোমরা কি সেই সত্যযুগের স্বর্গবাসী ছিলে, নাকি ছিলে কলিযুগী নরকবাসী ? সত্যযুগ থেকে অধঃপতন হতে হতে কলিযুগে এসে পড়েছে ? এরপর উর্ধ্বমার্গে যাবে কিভাবে ? তাই তো বাবা তোমাদের এই পাঠ পড়াচ্ছেন। কিভাবে তমোপ্রধান অবস্থা থেকে সতোপ্রধান অবস্থায় আসা যাবে। নিজেকে আত্মা ভেবে, বাবাকে স্মরণ করতে থাকলে, সেই যোগ-অগ্নির দ্বারা তোমাদের পাপ ভষ্ম হয়ে বেরিয়ে যাবে। গত কল্পেও তোমাদেরকে এই একই জ্ঞান শিখিয়ে দেবতা করে গড়ে তুলেছিলেন এই বাবা-ই। সেই তোমাদেরই যে এখন তমোপ্রধান অবস্থা। বাচ্চাদেরকে সতোপ্রধান বানাবার নিমিত্তে অবশ্যই কেউ (বাবা) আসবেই। পতিত-পাবন কোনও মনুষ্য তো আর তা করতে পারে না। --"হে পতিত-পাবন", "হে ভগবান" -এইসব শব্দবন্ধ যখনই ব্যবহার করো, বুদ্ধি কিন্তু তখন উপরের দিকেই যায়। একমাত্র উনিই হলেন নিরাকার। অন্যান্যরা সবাই তো পার্টধারী। আর পার্টধারীদের পুনর্জন্মে আসতেই হয়। একমাত্র বাবাই পুনর্জন্ম রহিত। ড্রামার চিত্রপট এভাবেই রচিত, যা কেউই তা জানে না। ইতিপূর্বে তোমরাও তা জানতে না। তা সঠিক ভাবে জানার পরেই তোমাদেরকে স্বদর্শন-চক্রধারী বলা হয়। তখন তোমরা অর্থাৎ আত্মারা, আত্মার স্ব-ধর্মে স্থিত হতে পারো। অতএব নিজেদের মধ্যে এই নিশ্চয়তা আনো-আমি আত্মা। বাবা তো তোমাদেরকে বুঝিয়েছেন, এই সৃষ্টি-চক্রের আবর্তনের বিষয়টা। তাই তো বি.কে.-দের বলা হয় "স্বদর্শন চক্রধারী"! যে জ্ঞান আর কারও জানা নেই। এতে তোমাদের কত খুশী হওয়া উচিত। বাবা স্বয়ং তোমাদের টিচারও। সত্যি কত মিষ্ট এই বাবা। ওঁনার মতন মিষ্ট-স্বভাবের এমনটি আর কেউ হয় না। তোমরা সেই পারলৌকিক বাবার বাচ্চা। বাস্তবে তোমরা আত্মারা পরলোকবাসী। তোমাদের এই বাবাও পরমধাম নিবাসী। যেমন লৌকিক বাবা বাচ্চার জন্ম দিয়ে তাকে লালন-পালন করে, পরে তার সবকিছুই (সম্পত্তি) সন্তানকে দিয়ে দেন, যেহেতু সন্তানই তার উত্তরাধিকারী, আর এটাই জাগতিক নিয়ম। তেমনি এই বাবা, তোমরা যারা বেহদের বাবার বাচ্চা হও। এখন তো তোমাদের সবার নির্বাণধামে ফিরে যাবার পালা। সেই দুনিয়া হল সাইলেন্সের দুনিয়া। এর নীচে মুভির দুনিয়া আর এই দুনিয়াটা হল টকীর দুনিয়া। বাচ্চারা যখন সূক্ষ্মবতনে যায়, তখন তাদের তা সাক্ষাৎকারও হয়। তখন কিন্তু আত্মা বেরোয় না।
ড্রামাতে যা নির্দিষ্ট হয়ে আছে, প্রতি সেকেণ্ড বাই সেকেণ্ড তারই পুনরাবৃত্তি হয়। কিন্তু কোনও এক সেকেন্ডের ঘটনার সাথে অন্য কোনও সেকেন্ডের হুবহু মিল হয় না। যে যেমন তার কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করে, ভাল বা খারাপ, তা করে ড্রামার চিত্রপট অনুসারেই। যেমন সত্যযুগের পার্ট খুবই ভাল, কিন্ত কলিযুগের পার্ট ততোধিক খারাপ। এই কলিযুগেই মানুষের যত দুঃখ-কষ্ট। সত্যযুগের রামরাজ্যে এমন ছিঃ ছিঃ ঘটনা ঘটেই না। রাম-রাজ্য আর রাবণ-রাজ্যের সময়-কালেরও বিস্তর তফাৎ। কিন্তু লোকেদের ড্রামা সম্বন্ধে ধারণা না থাকার কারণে বলে যে, সুখ-দুঃখ সব পরমাত্মারই দান। তারা যেমন শিববাবাকে জানে না, তেমনি রাবণকেও জানে না তারা। অথচ প্রতি বছরই শিবজয়ন্তী পালন করে আবার রাবণের পুত্তলিকাকেও জ্বালিয়ে থাকে। এখন বেহদের বাবা স্বয়ং এসে নিজেই নিজের পরিচয় জানিয়ে বলছেন-বাচ্চারা, "নিজেদেরকে আত্মা ভেবে একমাত্র এই প্রকৃত বাবাকে (আমাকে) স্মরণ করো" । তোমাদের এই বাবা খুবই মিষ্টি বাবা। কিন্তু বাবা নিজে তো আর নিজের মহিমার কীর্তন করবে না। যে সুখ অনুভব করবে, সেই তো মহিমা প্রচার করবে। উত্তরাধিকারে তোমরা বাচ্চারা বাবার থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার পেয়ে থাক। বাবা যে প্রেমের-সাগর। ফলে তোমরাও সত্যযুগের উপযুক্ত এত সুন্দর ও মিষ্ট হয়ে ওঠো। কেউ যদি বলে, সেখানেও তো কাম-বিকার ইত্যাদি থাকবে। তাদেরকে বলবে, সেটা তো আর রাবণের রাজ্য নয়, রাবণের আবির্ভাব হয় দ্বাপর যুগ থেকে। তোমাদেরকে কত সুন্দর রীতিতে তা বুঝিয়ে দেন। সৃষ্টির হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি অন্যেরা তো জানেই না। যা বাবার কাছ থেকে এখন তোমারা জানতে পারছো। ফলে তোমরাই দেবতা হতে পারো। দেবতাদের থেকে উন্নত আর কেউই নয়। যা হবার জন্য কোনও গুরু ধরার প্রয়োজন নেই। জগতে অনেক প্রকারের গুরু আছে। কিন্তু সদগুরু তো কেবল এই একজনই। শিখ ধর্মাবলম্বীরা বলে থাকে "সদ্গুরু অকাল (অবিনশ্বর)"! একমাত্র সদ্গুরুই অকাল! (অর্থাৎ কাল বা মৃত্যু নেই যার) যেহেতু উনি কালেরও কাল মহাকাল। কাল (যম) তো কেবল একজনকেই নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এই বাবা মহাকাল, সবাইকে একসাথে নিয়ে যান। পবিত্র বানিয়ে প্রথমে সবাইকে শান্তিধাম আর সুখধামে নিয়ে যান। আর যদি কেউ বাবার বাচ্চা হবার পরেও মায়ার সাথেও সম্পর্ক রাখে, তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, সদ্গুরুর নিন্দুকেরা কোনও পদই পায় না। স্বর্গ-রাজ্যের পুরো সুখ তো পায়ই না, সামান্য প্রজার পদ পায়। তাই তো বাবা সতর্ক করে বলেন- "বাচ্চারা, তোমাদের কারণে আমার যেন কোনও নিন্দা না হয়। যেখানে আমি তোমাদের স্বর্গ-রাজ্যের মালিক করে গড়ে তুলি ও দৈবীগুণ ধারণ করাই।
বাচ্চারা, তোমাদের কারণে কেউ যেন কোনও প্রকারের দুঃখ না পায়। এখানে আমার আসার উদ্দেশ্যই হলো, তোমাদেরকে সুখধামের মালিক বানানো। তোমাদের এই বাবা যে প্রেমের সাগর, আর মানুষেরা তো কেবল দুঃখ দেবার সাগর। একে অপরের প্রতি কাম-বিকারের দাঁ-কাটারী চালিয়ে দুঃখ দিতেই ব্যস্ত। সেখানে কিন্তু এসবের প্রচলন নেই, যেহেতু তা হলোই রাম-রাজ্য। যোগ-বলের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয় সেখানে। এই যোগ-বলের দ্বারা তোমরা সমগ্র বিশ্বেকেই পবিত্র বানাও। তোমরা এমনই যোদ্ধা - যাদের এমন গুপ্তবেশ। তোমরাই হতে পারো খুব সুনামের ও সম্মানের অধিকারী। আবার ভক্তি-মার্গেও তোমরাই দেবীদের কত মন্দির নির্মাণ করো। কথিত আছে, অমৃত-কলস তো মাতাদের মাথার উপরেই রাখা হয়। অথচ লোকেরা ভাবে তা গৌ-মাতা। আসলে তা হলো জ্ঞানের বিষয়, যেখানে জলের প্রশ্ন নেই। তোমরা বি.কে.-রা হলে শিব-শক্তি-সেনা। লোকেরা তোমাদেরকেই নকল করে নিজেরাই গুরু সেজে বসে থাকে। আর তোমরা বসো সত্যের নৌকায়। তারা তো গীতও গায়, "ও মাঝি, ভবসাগর পার করে দাও" । এদিকে তোমরা তো পার করাবার কান্ডারীকেও পেয়ে গেছ। যিনি এই বেশ্যালয়ের দুনিয়া থেকে শিবালয়ে পৌঁছে দেন তোমাদের। ওনাকে আবার বাগানের মালীও বলা হয়। যেহেতু উঁনি কাঁটার জঙ্গলকে ফুলের বাগানে রূপান্তরিত করেন। যেখানে কেবলই সুখ আর সুখ। আর এই দুনিয়াটা কেবলই দুঃখ-কষ্টের।
বাবা যে প্রচারপত্র ছাপাতে বলেছেন, তাতে তো স্পষ্টই লেখা আছে - তোমরা নিজেরাই নিজেদের অন্তরের কাছে জানতে চাও, মনে-প্রাণে তোমরা স্বর্গবাসী নাকি নরকবাসী ? এভাবে নিজেরাই নিজেদের অনেক প্রশ্ন করতে পারো। লোকেরা যে বলে ভ্রষ্টাচারে ভরে গেছে দুনিয়াটা, অর্থাৎ এই দুনিয়াই পূর্বে কখনও শ্রেষ্ঠাচারী ছিল, অর্থাৎ যে সময়কালটা ছিল দেবতাদের রাজত্বের। বর্তমানে যার কোনও অস্তিত্বই নেই। সেই দেবী-দেবতা ধর্ম যখন প্রায় লোপ পায়, তখনই ভগবানকে আসতে হয়। উনি আসেন আবার এক-ধর্মের স্থাপনা করতে। যার মর্মার্থ, তোমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য সেই স্বর্গ-রাজ্যের স্থাপনা করছো, বাবার শ্রীমৎ অনুসারে। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন, স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. বাবার মতন প্রেমের সাগর হতে হবে, দুঃখের সাগর নয়। সন্তানের কর্মের জন্য বাবার নিন্দা হয়, এমন কোনও কার্য করবে না। খুবই মিষ্ট ও সুন্দর স্বভাবের হতে হবে।
২. যোগবলের দ্বারা নিজে পবিত্র হয়ে অপরকেও তেমনই তৈরী করতে হবে। কাঁটার জঙ্গলকে ফুলের বাগান বানাবার সেবা করতে হবে। সদা এই খুশীতেই থাকতে হবে যে, আমাদের এই মিষ্টি বাবা, একাধারে যেমন বাবা তেমনি আবার টিচারও বটে। ওঁনার মতন মিষ্ট-স্বভাবের এমনটি আর কেউই নেই জগতে।
বরদান:-
বিশেষত্বের সংস্কারগুলিকে স্বাভাবিক চরিত্র বানিয়ে পূর্বের সাধারণত্বকে সমাপ্ত করে মরজীবা ভব
যার যেমন স্বভাব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সে তেমন করেই নিজের কাজ করে। এর জন্য আলাদা করে ভাবনা-চিন্তা করতে হয় না, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই তা হয়ে যায়। তেমনই এমন মরজীবা জন্মধারী ব্রাহ্মণদের স্বভাবই হলো বিশেষ আত্মার বিশেষত্ব সম্পন্ন। এই বিশেষত্বের সংস্কার তখন সাধারণ স্বভাব হয়ে যায়, আর প্রত্যেকেরই মনে হয় যেন-এটাই তো আমাদের প্রকৃত স্বভাব। সাধারণত্ব এখন অতীত (বি.কে.-দের)। পূর্বে যা স্বভাব ছিল নতুন জন্ম নেবার পর এখন আর তা নেই। এই নতুন জন্মের স্বভাবের বিশেষত্ব, যা সাধারণত্ব নয় মোটেই।
স্লোগান:-
রয়েল (মহান) সে, যে জ্ঞান-রত্ন নিয়ে খেলে, পাথর নিয়ে নয়।