13.09.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
স্মরণে যোগযুক্ত থাকার পুরুষার্থের পরিশ্রম তোমাদের সবারই করা উচিত, নিজেকে আত্মা
অনুভব করে আমাকে অর্থাৎ পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করলে আমিই তোমাদের সকল পাপ থেকে
মুক্ত করে দেবো"
প্রশ্নঃ -
সকলেরই
সদ্গতির স্থান কোথায় - যে মহত্ত্বের কথা সমগ্র দুনিয়াই জানবে ?
উত্তরঃ -
আবু পার্বত্য
অঞ্চলই সবার সদ্গতির স্থান। বোর্ডে তোমরা ব্রহ্মাকুমারীসের পাশে ব্র্যাকেট দিয়ে
লিখতে পারো - এটাই সর্বোত্তম তীর্থস্থান। সমগ্র দুনিয়ার সদগতি এখান থেকেই হয়।
সকলেরই সদ্গতিদাতা (একমাত্র এই) বাবা এবং আদম (ব্রহ্মা) এখানে বসেই সবার সদ্গতি
করেন। আদম অর্থাৎ তিনিও মানব, দেবতা নয়। এমনকি ওনাকে ভগবানও বলা চলে না ।
ওম্ শান্তি ।
দুবার ওঁম্
শান্তি বলার কারণ- প্রথমবার (নিরাকার) বাবার উদ্দেশ্যে, দ্বিতীয়বার (ব্রহ্মা) দাদার
উদ্দেশ্যে। একের (ব্রহ্মার) মধ্যেই যে দুই আত্মা। উনি হলেন 'পরম্ আত্মা', আর ইনি 'আত্মা'!
সেই উঁনিই তোমাদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছেন যে, উঁনি আসলে সুদূর পরমধামের বাসিন্দা।
ইনিও সেই একই কথা জানাচ্ছেন। তাই বাবা যেমন বলেন-- ওঁম্ শান্তি, ইনিও তেমনই বলেন --
ওঁম্ শান্তি। বাচ্চারাও তেমনি বলে-ওঁম্ শান্তি! অর্থাৎ যার প্রকৃত অর্থ আমরা আত্মারা
সবাই শান্তিধাম নিবাসী। বাচ্চারা, এখানে তোমরা সবাই একটুখানি আলাদা আলাদা ভাবে বসবে।
একজনের অঙ্গ যেন অপরজনের অঙ্গ স্পর্শ না করে। যেহেতু প্রত্যেকেরই নিজের নিজের অবস্থা
ও যোগের স্থিতির মধ্যে রাত-দিনের তফাৎ থাকে। কেউ হয়তো খুব ভাল যোগযুক্ত যোগী, কেউ
বা আবার একেবারেই স্মরণের যোগ করে না। এমন যে থাকে, একেবারেই স্মরণের যোগে বসে না -
সে অবশ্যই তমোপ্রধান পাপী-আত্মা। আর যে স্মরণের যোগে যোগী, সে হলো সতোপ্রধান
পুণ্য-আত্মা। এই দু'য়ের মধ্যে অনেকটাই তফাৎ ! বাড়ীতে যদিও একসাথেই থাকো, কিন্তু
পার্থক্য তো থাকবেই, এরই উদাহরণে ভগবতে (গীতায়) দেবতা ও অসুরের বর্ণনা করা হয়েছে।
যা কিন্তু আসলে এই বর্তমান সময় কালেরই ঘটনা। তাই বাবা স্বয়ং বসে বাচ্চাদেরকে
বোঝাচ্ছেন - এসব ঈশ্বরীয় চরিত্র, যা হল ভক্তি-মার্গের গল্প-গাঁথা। আসলে সত্যযুগে
তোমাদের এসব কিছুই মনে থাকে না, তখন ওখানে সব কিছুই ভুলে যাও, যা এই বিশেষ জ্ঞানের
পাঠ বাবা এখন পড়াচ্ছেন। সত্যযুগে তা একেবারেই ভুলে যাবে। এরপর দ্বাপর যুগে যখন
শাস্ত্র ইত্যাদি তৈরি হয়, তখন আবার রাজযোগ শেখানোর প্রচেষ্টা করো। কিন্তু রাজযোগ যে
আর কেউই শেখাতে পারে না। তখনই সম্ভব হয়, যখন বাবা স্বয়ং এসে তোমাদেরকে সামনে বসিয়ে
তা শেখান। একমাত্র বি.কে.-রাই জানো কি সুন্দর পদ্ধতিতে বাবা এই সহজ রাজযোগ শেখান।
যা আবার ৫-হাজার বছর পরে বাবা বাচ্চাদেরকে ঠিক এমন ভাবেই সম্মোধন করে বলবেন- "মিষ্টি-মিষ্টি
আত্মা রূপী সন্তানেরা"- না এখানে কোনও মানুষ কোনও মানুষকে বলতে যেমন সক্ষম হবে, না
কোনও দেবতা অন্য দেবতাদের তা বলতে পারবে। একমাত্র এই আধ্যাত্মিক বাবাই ওঁনার
আধ্যাত্মিক সন্তানদেরকে এমন ভাবে বলতে পারেন।
বাচ্চারা, একবার তোমরা তোমাদের কর্ম-কর্তব্যের যে পার্ট করো, আবার ৫-হাজার বছর বাদে
আবারও সেই একই পার্ট করতে হয় তোমাদের। যেহেতু অবনমনের সিঁড়ি বেয়ে নামতেই হয় তোমাদের।
এখন তোমাদের বুদ্ধিতে আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলি জানা আছে। তোমরা এও জানো কোনটা
শান্তিধাম অর্থাৎ দূরবর্তী সেই পরমধাম। তোমরা আত্মারা সেই নিরাকার দুনিয়ায় ভিন্ন
ভিন্ন ধর্মের অনুসারে থাকো সেখানে, অবশ্য তা ক্রমিক অনুসারেই। আকাশে তারাদের
অবস্থান যেভাবে দেখা যায়। তারারা সেখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছুই দেখা যায় না।
তার উপরে আর কিছুই নেই, সেখানে শুধুমাত্র ব্রহ্মতত্ত্বই আছে। আর এখানে তোমরা এই
পৃথিবী-তত্ত্বে অবস্থান করছো - এটাই তোমাদের কর্মক্ষেত্র। এখানে এসে শরীর ধারণ করে
তোমরা তোমাদের কর্ম-কর্তব্য পালন করো। এবার বাবা বোঝাচ্ছেন- তোমরা যখন আমার থেকে
তোমাদের অবিনাশী উত্তরাধিকার পাচ্ছো, তাই আগামী ২১-জন্ম তোমাদের কর্মগুলি অকর্ম হবে,
যেহেতু সেখানে রাবণের রাজত্ব থাকে না। একদা সেটাই ছিল ঈশ্বরীয় রাজ্য, যা এখন আবার
স্বয়ং ঈশ্বর তা স্থাপন করাছেন। এইভাবেই বাবা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে বলছেন - "নিরাকার
শিববাবাকে স্মরণ করলেই স্বর্গ-রাজ্যের অধিকার পাবে। যেহেতু সেই স্বর্গ-রাজ্য
নিরাকার শিববাবার দ্বারাই স্থাপিত হয়। অতএব তোমরা কেবলমাত্র শিববাবা আর সুখধামকেই
স্মরণ করবে। অবশ্য শুরুতে শান্তিধামকে স্মরণ করলে সম্পূর্ণ সৃষ্টিচক্রই স্মরণে আসবে।
বারবার তা মনে করাতে হয়, যেহেতু মুহূর্তে মুহূর্তেই তা ভুলে যাও তোমরা। ওহে মিষ্টি
মিষ্টি বাচ্চারা, নিজেদেরকে কেবলমাত্র আত্মা ভেবে পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করলে
তোমাদের পাপের কালিমাগুলি ভস্ম হয়ে যাবে।" বাবা স্বয়ং বাচ্চাদের কাছে প্রতিজ্ঞা
করছেন, এই স্মরণে যোগযুক্ত হতে পারলে, তবেই উঁনি তাকে পাপ থেকে মুক্ত করবেন। যেহেতু
একমাত্র এই বাবাই যে পতিত-পাবন, সর্বশক্তির অধিকারী। ওঁনাকেই 'ওর্য়াল্ড অলমাইটি
অথরিটি' বলা হয়। একমাত্র উনি সমগ্র সৃষ্টি রহস্যের আদি-মধ্য-অন্তকে জানেন। বেদ
ইত্যাদি শাস্ত্র গ্রন্থগুলির সবকিছুরই সার-জ্ঞান জানা আছে ওঁনার - তাই তো উনি বলতে
পারেন, এসবের মধ্যে কোনও সারবস্তুই নেই। এমনকি গীতাতেও কোনও সার নেই। যদিও এই গীতাই
হলো সর্ব শাস্ত্রগুলির শিরোমণি অর্থাৎ মা-বাবা। বাকী শাস্ত্রগুলি সবাই তো বাচ্চা
স্বরূপ। ঠিক যেমন, সর্বপ্রথমে প্রজাপিতা ব্রহ্মা, বাকীরা সবাই তার বাচ্চা স্বরূপ।
তাই প্রজাপিতা ব্রহ্মাকে আদম্ অর্থাৎ আদিপুরুষ বলা হয়। আদম্ অর্থাৎ মানব বা জীবাত্মা।
যেহেতু ইনি কেবল মানবাত্মা, অতএব এনাকে দেবতা বলা যাবে না। তাই আদম্ অর্থাৎ
আদিপুরুষ বলা হয়। অথচ ভক্তি-মার্গে আদিপুরুষ ব্রহ্মাকেও দেবতা বলা হয়। তাই তো বাবা
বসে তা বোঝাচ্ছেন, আদম্ অর্থাৎ মনুষ্য আত্মা, না তো দেবতা আর না ভগবান।
লক্ষ্মী-নারায়ণ কিন্তু দেবতা। স্বর্গ-রাজ্য হলো তাদের সেই ঈশ্বরীয় রাজ্য। যা
একেবারেই নতুন দুনিয়া। অর্থাৎ ওয়ান্ডার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, যা এক আশ্চর্য পৃথিবী।
এছাড়া বাকী যা কিছু তা তো মায়ার আশ্চর্য। দ্বাপরযুগের পরে মায়ার সেই ওয়ান্ডার চলতেই
থাকে। আর ঈশ্বরীয় ওয়ান্ডার হলো হেভেন বা স্বর্গ-রাজ্য, যা স্থাপন করেন স্বয়ং বাবা।
বর্তমানে বাবার দ্বারা তারই স্থাপনা কার্য চলছে !
এবার বাবা বলছেন- এই যে দিলওয়াড়া মন্দির রয়েছে, এর যথার্থ অর্থের মূল্যায়ন কেউ করতে
পারে না। লোকেরা কেবল তীর্থস্থান হিসাবেই যায় সেখানে। যদিও প্রকৃতপক্ষে এটাই কিন্তু
মহান তীর্থস্থান। বাচ্চারা, তোমরা তো বোর্ডে লেখো- "ব্রহ্মাকুমারী ঈশ্বরীয়
বিশ্ব-বিদ্যালয়, আবু পর্বত বা মাউন্ট আবু", এর সাথে ব্রাকেটে এ কথাও লেখা উচিত,
সর্বোত্তম তীর্থস্থান। কারণ, তোমরা জানো, সবার সদগতি তো এখান থেকেই হয়। যা সাধারণ
লোকেরা কেউই তা জানে না। ঠিক যেমন, সর্ব শাস্ত্রের শিরোমণি 'গীতা' - তেমনি সর্ব
তীর্থের শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান 'মাউন্ট আবু'। এমন লেখা লোকেরা পড়লে, লেখার প্রতি
মনোযোগ যাবে। সমগ্র বিশ্বের তীর্থের মধ্যে এটাই যে সবচেয়ে মহান তীর্থ। যেখানে
পরমাত্মা বাবা স্বয়ং বসে সবার সদগতি করেন। তীর্থস্থান তো অনেক আছে। গান্ধীজীর
সমাধিস্থলকেও অনেকে তীর্থস্থান মনে করে। তারা সেখানে গিয়ে ফুল ইত্যাদি অর্ঘ্য
প্রদান করে। এমনটা কেন করছে তা তারা সেভাবে ভাবে না। কিন্তু তোমরা বি.কে.-রা এখানে
বসেই তা জানো, এই কারণে তোমাদের মনে কতই না আনন্দ হওয়া উচিত। তোমরা বি.কে.-রা এখন
স্বর্গ-রাজ্য স্থাপনার কার্যে রত। বাবা বলছেন- "বাচ্চারা, তোমরা নিজেদেরকে
কেবলমাত্র আত্মা ভেবে আমাকে অর্থাৎ পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করতে থাকো। এই বিশেষ
জ্ঞানের পাঠ তো খুবই সহজ-সরল, যার জন্য কোনও প্রকারের খরচাপাতিও লাগে না। এই যে
তোমাদের মাম্মা, ওনার কি এক নয়া পয়সাও খরচা লেগেছিল ? একেবারেই বিনা খরচে এই বিশেষ
জ্ঞানের পাঠ পড়েই তো কত বুদ্ধিমান ও নম্বর ওয়ান হয়ে উঠেছিল। তিনি শ্রেষ্ঠ
রাজযোগিনীও হয়েছিলেন! মাম্মার মতন এমন তীক্ষ্ণ আর কেউই হয়ে উঠতে পারেনি।"
বাচ্চারা দেখো, তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদের সামনে বসে আত্মাদের বাবা (পরমাত্মা) এই
বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন। রাজ্য-ভাগ্যের যে প্রাপ্তি তা তো আত্মারাই পায়। আবার
সেই রাজ্যকে নিজেরাই খোয়ায় - তাও আত্মারাই। অতি ক্ষুদ্র এই আত্মা আবার কত প্রকারের।
এই আত্মাই কত বিশাল বিশাল কার্য করে। আত্মার নিকৃষ্ট থেকেও নিকৃষ্টতর কার্য হলো
কাম-বিকারের প্রভাবে আসা। এই আত্মার মধ্যেই ৮৪-জন্মের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট
নির্দিষ্ট থাকে। আবার এত ক্ষুদ্র আত্মার মধ্যে কতই না অদম্য শক্তি সঞ্চিত থাকে। আসলে
আত্মারাই কিন্তু সমগ্র বিশ্বে রাজত্ব করে। দেবতাদের আত্মাতেই এত বিশাল ক্ষমতা থাকে।
প্রত্যেক ধর্মের আত্মাদেরই তাদের নিজেদের নিজেদের পৃথক শক্তি ও ক্ষমতা থাকে। যেমন
খ্রিস্টান ধর্মের আত্মারা খুবই শক্তিশালী। আত্মাতে যে শক্তি থাকে, সেই শক্তির
দ্বারাই শরীর তার কর্ম করে। আত্মারাই এই জাগতিক দুনিয়ায় এসে বিশ্বের এই কর্মক্ষেত্রে
তার কর্ম-কর্তব্য করে। কিন্তু সেখানে (স্বর্গরাজ্যে) কোনও খারাপ কার্য করে না। আত্মা
তখনই বিকারের দিশায় যায় - যখন এই দুনিয়াটা হয়ে ওঠে রাবণ-রাজ্য। অথচ লোকেরা বলে এই
বিকারগুলি সদাকালের রীতিনীতি। তাদেরকে তোমরা বোঝাতে পারো - স্বর্গরাজ্য তো আর
রাবণরাজ্য নয়, তাই সেখানে বিকার থাকবেই বা কি করে ? সেখানকার সবকিছুই হয় যোগবলের
দ্বারা। ভারতের এই রাজযোগের খ্যাতি সমগ্র বিশ্বেই সমাদৃত। তাই তো আগ্রহভরে অনেকেই
তা শিখতে চায়। কিন্তু একমাত্র তখনই তা হতে পারবে যখন তোমরা বি. কে.-রা তাদেরকে তা
শেখাবে। এছাড়া অন্য কেউই তা পারবে না। যেমন এক মহর্ষি ছিলেন, তিনি কতই না
চেষ্টা-পরিশ্রম করতেন যোগ শেখাবার জন্য, কিন্তু দুনিয়ার হঠ-যোগীরা তো তা জানেই না,
এই বিশেষ রাজযোগ শেখাতে হয় কি প্রকারে। চিন্ময়ানন্দের কাছেও তো কত লোক যায়। তিনি যদি
একবার বলে দেন যে, প্রাচীন ভারতের প্রকৃত রাজযোগ যা একমাত্র বি.কে.-রা ছাড়া আর অন্য
কেউই তা শেখাতে পারবে না, তবে তা খুবই ভাল হতো। কিন্তু তেমন কোনও নিয়ম তো নেই, যে
এভাবে এই জ্ঞানের প্রচার হবে। কারণ সবাই তো আর তা বুঝবেও না। তাই তাদের কাছে খুবই
কষ্টের কাজ এটা। অবশ্য পরে মহিমা তো প্রচার হবেই, তখন অন্যেরাও বলবে - "হে প্রভু,
হে শিববাবা চমৎকার তোমার এই লীলা।" বাচ্চারা- এখন তোমরা বুঝতে পারছো, একমাত্র বি.কে.-রা
ছাড়া এই পরমাত্মা বাবার অর্থাৎ সুপ্রিম-বাবা, সুপ্রিম-টিচার ও সুপ্রিম-সদ্গুরু এই
তিন রূপ একত্রে - একথা আর কেউই বুঝতে পারে না। এখানে এমনও অনেকে আছে, জ্ঞানে চলতে
চলতে মায়া তাদেরকে এমন হয়রানি করে যে, তারাও একেবারেই অবুঝ হয়ে যায়। কিন্তু তোমাদের
লক্ষ্য তো অনেক উচ্চতর। এটা যে একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্র, তাই মায়া তোমাদের খুবই বিঘ্ন
সৃষ্টি করে। একদিকে লোকেরা বিনাশের প্রস্তুতি করেই চলেছে - আর তোমরা বি.কে.-রা ৫-বিকারকে
পরাজিত করার উদ্দেশ্যে পুরুষার্থ করে চলেছো। বি.কে.-দের পুরুষার্থের উদ্দেশ্য বিজয়
- আর অন্যদের পুরুষার্থের উদ্দেশ্য বিনাশ। দুটো প্রক্রিয়াই একসাথে চলছে। এখনও সময়
কিছু অবশিষ্ট আছে, যেহেতু তোমাদের রাজধানী এখনও স্থাপিত হয়নি। এখনও রাজা ও প্রজা
তৈরি করার কার্য চলছে। অর্ধ-কল্পের জন্য বাবার কাছ থেকে তোমরা বি.কে.-রা যে অবিনাশী
উত্তরাধিকার পাও তা এই সময় কালেই। মোক্ষ কিন্তু কেউই পায় না। যদিও লোকেরা বলে যে,
অমুক আত্মাধারী মোক্ষলাভ করেছে। কিন্তু মৃত্যুর পর কি সেই আত্মা তা অনুভব করতে পারে,
সে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে ? এসব গালগল্প মাত্র।
বাচ্চারা, তোমরা তো জানো, আত্মা যখন কোনও শরীর ত্যাগ করে, তারপর অবশ্যই সে অন্য
শরীর ধারণ করে। অর্থাৎ মোক্ষ কিন্তু হয় না। আবার এমনটাও হয় না যে, আত্মা জলের
বুদবুদের মতন হয়ে জলেই তা মিলিয়ে যায়। তাই বাবা বলছেন- এই যে শাস্ত্র ইত্যাদিতে যা
কিছু বর্ণিত এ সব ভক্তি-মার্গের উপকরণ মাত্র। বাচ্চারা, এখানে তোমরা সত্য বাবার
সামনে বসে যেমন প্রকৃত তথ্য জানতে পারছো, তেমনি আবার গরম গরম হালুয়াও খাচ্ছো। কিন্তু
সবচেয়ে বেশী গরম হালুয়া কে খায় ? --ব্রহ্মা। যেহেতু ব্রহ্মা একেবারেই বাবার পাশে বসে
থাকে। তাই সে তৎক্ষনাৎ তা শুনতে পায় আর নিজে ধারণও করে ফেলে। ফলে সে সবচেয়ে উচ্চ
পদও পায়। সূক্ষবতন ও বৈকুন্ঠের যে সাক্ষাৎকার হয় তোমাদের, তা তো এনার সাথেই। আবার
এখানেও তোমরা এনাকেই দেখছো তোমাদের এই চর্মচোখে। বাবা তো এখানে সবাইকেই পড়াচ্ছেন
একসাথে। স্মরণের পুরুষার্থেই যেটুকু পরিশ্রম। এই স্মরণের যোগে যোগযুক্ত হওয়াটাই
অনেকের পক্ষেই কষ্টসাধ্য মনে হয়। এক্ষেত্রে কেউ কোনও কৃপা করতে পারে না। বাবা
জানাচ্ছেন- যেহেতু আমি এনার (ব্রহ্মার) শরীরকে ধার নিয়েছি, সেই হিসেব-নিকেশ তো তাকে
মিটিয়ে দিতেই হবে। কিন্তু স্মরণে যোগযুক্ত হবার পুরুষার্থ তো এনাকেই (ব্রহ্মাকেই)
করতে হবে। তাই সেভাবেই বোঝাই একে - যেহেতু সে আমার পাশেই বসে। উনি বলেন- বাবাকে তো
আমি স্মরণ করি, কিন্তু তাতেও ভুলে যাই মাঝে মাঝে। সবচেয়ে বেশী পুরুষার্থের পরিশ্রম
তো এনাকেই করতে হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে যে শক্তিশালী মহরথী মহাবীর হয়, অর্থাৎ হনুমানের
মতন, মায়া তারই বেশী পরীক্ষা নেয় - যেহেতু মায়াও যে তেমনই শক্তিশালী বীর। যে যত
শক্তিশালী, মায়া তাকেই তত বেশী করে পরীক্ষা নেয়, তার উপরে মায়ার ঝড়-ঝাপটাও বেশী আসে।
অনেক বাচ্চা বাবাকে চিঠি লেখেন- বাবা আমার সাথে এমন এমন হয়। প্রতিত্তোরে বাবা
তাদেরকে জানান, এসব তো হবেই। তাই বাবা রোজই এসবের রহস্যগুলিকে ব্যাখ্যা করে সতর্ক
হতে বলেন। কেউ আবার লেখে- বাবা, মায়া খুব প্রবল ভাবে আমার জীবনে ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি
করে। কেউ কেউ আবার দেহ-অভিমানে এসে বাবাকে কিছুই জানায় না। তাদেরকে বাবা বলেন- তোমরা
নিজেদেরকে তো খুব বুদ্ধিমান মনে করো। কিন্তু আত্মা পবিত্র হবার পরেই তো শরীর পবিত্র
হবে। তবেই তো শরীরেও জৌলুস আসবে। শুরুতে এই বিশেষ জ্ঞানে জ্ঞানী হয় গরীবেরা। একথা
তো প্রচলিতই আছে বাবা হলেন গরীবের বন্ধু 'দীননাথ'! এছাড়া আর যারা আছে, তারাও আসবে
এই বিশেষ জ্ঞানে জ্ঞানী হতে, তবে একটু দেরীতে।
বাচ্চারা, তোমরা তো জানো, যতক্ষণ না পর্যন্ত বি.কে.-রা নিজেদের মধ্যে ভাই-বোনের
সম্পর্ককে পাকাপোক্ত করতে পারে - ততক্ষণ তাদের মধ্যে ভাই-ভাইয়ের ভাব আসে না। যতক্ষণ
তোমরা প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তান ততক্ষণ তোমাদের নিজেদের মধ্যে ভাই-বোন সম্পর্ক।
বাবা বলছেন- তোমাদেরকে কিন্তু ভাই-ভাই সম্পর্কে আসতেই হবে। এটাই তোমাদের প্রকৃত আদি
সম্পর্ক। উপরে (শান্তিধামে) গেলে সেখানেও তো একে অপরের সেই ভাই-ভাই সম্পর্কেই
মেলামেশা করবে। সত্যযুগে যখন আসবে, তখন আবার নতুন করে সম্পর্ক শুরু হবে। সেখানে এত
সব শালা, কাকা, মামা, ইত্যাদি অনেক সম্পর্ক হয় না। যেহেতু সম্বন্ধ খুব হাল্কা থাকে।
এইসব সম্বন্ধ ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই বাবা বলছেন- ভাই-বোন সম্পর্কও নয় -
নিজেদেরকে ভাই-ভাই সম্বন্ধ-সম্পর্কের অভ্যাসে অভ্যাসী হতে। ফলে নাম-রূপের অভ্যাস
থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। বাবা তো আত্মা-ভাইদেরকেই পড়াচ্ছেন। যখন প্রজাপিতার ব্রহ্মার
সম্পর্কে থাকবে, তখন ভাই-বোনের সম্বন্ধে থাকবে। কৃষ্ণ নিজেই তো এখন ছোট বাচ্চা। সে
কিভাবে তোমাদেরকে এই ভাই-ভাই সম্পর্কে আনবে ? গীতাতে কিন্তু এতসব কিছুরই উল্লেখ নেই।
অন্যান্য জ্ঞানের থেকে এই বিশেষ-জ্ঞান যে সম্পূর্ণ পৃথক। ড্রামার চিত্রনাট্যে কিন্তু
এমনটাই লেখা আছে। এক সেকেন্ডের পার্ট অন্য সেকেন্ডের সাথে মিল খায় না। এইভাবেই কত
মাস, কত ঘন্টা, কত দিন অতিবাহিত হতেই থাকে, যা আবার ৫-হাজার বছর পরে ঠিক এমন ভাবেই
আসতে থাকবে। অল্প বুদ্ধির বাচ্চারা তা সঠিক ভাবে ধারণা করে উঠতে পারে না, যদিও তা
খুবই সহজ। তাই বাবা জানাচ্ছেন- এবার নিজেকে আত্মা ভেবে মনোযোগ সহকারে অসীমের বাবাকে
স্মরণ করো - বর্তমানের এই পুরোনো দুনিয়া যে বিনাশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। বাবা আরও
জানাচ্ছেন- উঁনি কেবলমাত্র এই সঙ্গম যুগেই আসেন। তোমরা বি.কে.-রাই একদা দেবী-দেবতা
ছিলে। আর এও জানা আছে তোমাদের, যখন সেই দেবী-দেবতারা রাজত্ব করে তখন আর অন্য কোনও
ধর্মের অস্তিত্বই থাকে না। সেই দেবী-দেবতাদের রাজ্যের আজ আর কোনও অস্তিত্বই নেই। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
বর্তমানের এই সময়টা অন্তিম সময়কাল। এবার আপন ঘরে ফিরতে হবে। অতএব বুদ্ধি থেকে সবার
নাম-রূপ ঝেড়ে ফেলতে হবে। আমরা আত্মারা হলাম ভাই-ভাই - এই অভ্যাস করতে হবে।
দেহ-অভিমানে আসবে না ।
২) প্রত্যেকেরই নিজের নিজের স্থিতি ও যোগযুক্ত অবস্থা একের সাথে অপরের রাত-দিনের তফাৎ,
তাই প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক হয়ে বসবে। একের অঙ্গ যেন অন্যের অঙ্গ স্পর্শ না করে।
পুণ্যাত্মা হওয়ার লক্ষ্যে স্মরণে যোগযুক্ত হওয়ার পরিশ্রম তো করতেই হবে।
বরদান:-
স্মরণ
আর সেবার ব্যালেন্সের দ্বারা বাবার সহযোগী অনুভবের পাত্র হয়ে ব্যালেন্সিং আত্মা হও
ব্যাখ্যা:
যেখানে স্মরণ আর সেবার ব্যালেন্স অর্থাৎ সমতা থাকে, সেখানেই বাবার বিশেষ সহযোগ
অনুভব হয়। এই সহযোগ-ই হল আশীর্বাদ। যেহেতু বাপদাদা তাকে অন্য আত্মাদের মতন সাধারণ
আশীর্বাদ দেন না। বাপদাদা তো হলেনই অশরীরী, তাই বাপদাদার আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয় অতি
সহজেই, আর স্বতঃতই সহযোগ পাওয়া যায়। ফলে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যায়। এই সহযোগ-ই হল
বিশেষ আশীর্বাদ। এরূপ বিশেষ আশীর্বাদের পাত্র আত্মাদের এক কদমেই পদ্মাপদমের
পুণ্যার্জন জমা হয়ে যায়।
স্লোগান:-
সকাশ
দেওয়ার জন্য অবিনাশী সুখ-শান্তি আর প্রকৃত প্রেমের স্টক জমা করো।