23.11.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
সঙ্গম যুগ হল ভাগ্যবান হওয়ার যুগ, এই সময়ে তুমি যতটা চাও ততটাই নিজের ভাগ্যের
নক্ষত্রকে ঝলমল করাতে পারো"
প্রশ্নঃ -
নিজের
পুরুষার্থকে তীব্র করার সহজ সাধন কি ?
উত্তরঃ -
বাবাকে অনুসরণ করতে থাকো, তাহলেই পুরুষার্থ তীব্র হয়ে যাবে। বাবাকেই দেখো, মাতা তো
গুপ্ত আছে। বাবাকে অনুসরণ করলেই বাবার সমান শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। এই জন্য সঠিকভাবে
অনুসরণ করতে থাকো।
প্রশ্নঃ -
বাবা কোন্
বাচ্চাদের বুদ্ধু মনে করেন ?
উত্তরঃ -
যে বাচ্চা
বাবার সাথে মিলন করার পরও খুশিতে থাকে না - সে তো বুদ্ধুই হল, তাইনা। এইরকম বাবা
যিনি বিশ্বের মালিক বানাচ্ছেন, তাঁর সন্তান হওয়ার পরও যদি খুশি না আসে তবে তো তাকে
বুদ্ধু বলা হবে, তাইনা।
ওম্ শান্তি ।
মিষ্টি-মিষ্টি
তোমরা বাচ্চারা হলে ভাগ্যবান নক্ষত্র। তোমরা জানো যে আমরা শান্তিধামকেও স্মরণ করি,
বাবাকে স্মরণ করি। বাবাকে স্মরণ করলে আমরা পবিত্র হয়ে ঘরে ফিরে যাবো। এখানে বসে এই
স্মরণ করতে থাকো তাইনা। বাবা আর অন্য কোন কষ্ট দেন না। জীবনমুক্তিকে তো কেউ জানেই
না। তারা তো সব পুরুষার্থ করে মুক্তির জন্য, কিন্তু মুক্তির অর্থ বোঝে না। কেউ বলে
আমি ব্রহ্মতে লীন হয়ে যাব, পুনরায় এই জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আর আসবো না। কিন্তু তার
এটা জানা নেই যে আমাদেরকে এই জন্ম-মৃত্যুর চক্রে অবশ্যই আসতে হবে। এখন তোমরা
বাচ্চারা এই সমস্ত কথাকে বুঝতে পারো। তোমাদের বাচ্চাদের এই বিষয়ে জ্ঞান আছে যে আমরা
হলাম স্বদর্শন চক্রধারী ভাগ্যবান নক্ষত্র। লাকি বলা হয় ভাগ্যবানকে। এখন তোমাদের
বাচ্চাদেরকে ভাগ্যবান তৈরি করছেন এক বাবা-ই। যেরকম বাবা সেরকমই তাঁর সন্তানরা তৈরি
হয়। কোন বাবা ধনী হয়, আবার কোন বাবা গরীবও হয়। তোমরা বাচ্চারা এটা জানো যে আমরা
এখন অসীম জগতের বাবাকে পেয়েছি, যে যতটা ভাগ্যবান হতে চায় সে হতে পারে, যত পরিমান
ধনী হতে চায় সে হতে পারে। বাবা বলেন যে, যা কিছু চাই সেটা পুরুষার্থের দ্বারা
প্রাপ্ত করো। সমস্ত কিছুই পুরুষার্থের উপর নির্ভরশীল। পুরুষার্থ করে যত উঁচু পদ নিতে
চাও, নিতে পারো। সর্বশ্রেষ্ঠ পদ হলো এই লক্ষ্মী-নারায়ণ। স্মরণের চার্টও অবশ্যই
রাখতে হবে, কেননা তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান অবশ্যই হতে হবে। বুদ্ধু হয়ে এইভাবে বসে
যেওনা। বাবা বোঝাচ্ছেন যে, পুরানো দুনিয়া এবার নতুন হতে চলেছে। বাবা আসেন-ই নতুন
সতোপ্রধান দুনিয়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি হলেন অসীম জগতের বাবা, অসীম জগতের
সুখদাতা। তিনি বোঝান যে, সতোপ্রধান হলেই তোমরা অসীম জগতের সুখ প্রাপ্ত করতে পারবে।
কেবল সতঃ হলে কম সুখ। রজঃ হলে তো তার থেকেও কম সুখ। সমস্ত হিসাব বাবা বলে দেন।
অগণিত ধন তোমরা প্রাপ্ত করো, অসীম সুখ প্রাপ্ত করো। অসীম জগতের বাবার থেকে আশীর্বাদ
প্রাপ্ত করা আর অন্য কোন উপায় নেই, এক বাবার স্মরণ ছাড়া। যত বাবাকে স্মরণ করবে,
স্মরণের দ্বারা আপনা হতেই দৈবগুন ধারণ হয়ে যাবে। সতোপ্রধান হওয়ার জন্য দৈবগুণও
অবশ্যই প্রয়োজন। নিজের নিরীক্ষণ নিজেকেই করতে হবে। যত শ্রেষ্ঠ পদ নিতে চাও নিতে
পারো, নিজের পুরুষার্থের দ্বারা। শিক্ষক তো বসেই আছেন। বাবা বলেন প্রতিকল্পে
তোমাদেরকে এই ভাবেই আমি বোঝাই। শব্দ তো কেবল দুটি - "মন্মনা ভব আর মধ্যাজী ভব"।
অসীম জগতের বাবাকে চিনতে পারো। সেই অসীম জগতের বাবা-ই অসীম জগতের জ্ঞান দান করেন।
পতিত থেকে পবিত্র হওয়ার রাস্তাও সেই অসীম জগতের বাবা-ই বলে দেন। তাই বাবা যা কিছু
বোঝাচ্ছেন সেসব কোনো নতুন কথা নয়। গীতাতে যা কিছু লেখা আছে তা আটাতে এক চিমটে
লবণের সমান। নিজেকে আত্মা মনে করো। দেহের সব ধর্ম ভুলে যাও। তোমরা অনাদি কালে অশরীরী
ছিলে, এখন অনেক মিত্র সম্বন্ধীর বন্ধনে এসে গেছো। সবাই হলো তমোপ্রধান। এখন পুনরায়
তোমাদের সতোপ্রধান হতে হবে। তোমরা জেনে গেছ যে তমোপ্রধান থেকে পুনরায় আমরা
সতোপ্রধান হচ্ছি। এই মিত্র সম্বন্ধী আদিও সব পবিত্র হবে। যতটা যে কল্পের আদিতে
সতোপ্রধান হয়েছিল, ততটাই পুনরায় হবে। তাদের পুরুষার্থ-ই সেইরকম হবে। এখন অনুসরণ
কাকে করতে হবে। গায়ন আছে "ফলো ফাদার"। যেরকম এই বাবাকে স্মরণ করো, পুরুষার্থ করো,
এঁনাকে অনুসরণ করো। পুরুষার্থ তো বাবা-ই করিয়ে নেন। তিনি তো নিজে পুরুষার্থ করেন
না, তিনি পুরুষার্থ করিয়ে নেন। আবার বলেন, মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা বাবাকে স্মরণ করো।
গুপ্ত মাতা-পিতা আছেন তাইনা। মাতা গুপ্ত আছেন, পিতাকে তো দেখা যায়। এটাই খুব ভালো
করে বুঝতে হবে। এইরকম শ্রেষ্ঠ পদ প্রাপ্ত করার জন্য বাবাকে খুব ভালো ভাবে স্মরণ করো,
যেরকম এই বাবাও স্মরণ করেন । এই বাবা-ই সব থেকে শ্রেষ্ঠ পদ প্রাপ্ত করবেন। উনি খুব
শ্রেষ্ঠ ছিলেন, ওঁনার অনেক জন্মের অন্তিম জন্মে আমি এসে প্রবেশ করি। এটাই ভালো ভাবে
স্মরণ করো, ভুলে যেও না। মায়া অনেককেই ভুলিয়ে দেয়। তোমরা বলো যে আমরা নর থেকে
নারায়ন হচ্ছি, তার জন্য বাবা যুক্তি বলে দেন। কিভাবে তোমরা হতে পারো। এটাও তো জানো
যে সবাই সঠিকভাবে অনুসরণ করে না। তোমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাবা বলে দেন - বাবাকে
অনুসরণ করো। এখনকার-ই গায়ন আছে। বাবাও এখন তোমাদের বাচ্চাদেরকে জ্ঞান প্রদান করেন।
সন্ন্যাসীদের অনুগামী বলা হয় কিন্তু সেটা তো ভুল তাইনা, অনুসরণ করেই না। তারা সব
হলো ব্রহ্ম জ্ঞানী, তত্ত্ব জ্ঞানী। তাদেরকে ঈশ্বর জ্ঞান প্রদান করেন না। তত্ত্ব অথবা
ব্রহ্মজ্ঞানী বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। কিন্তু তত্ব অথবা ব্রহ্ম তাদেরকে জ্ঞান
প্রদান করে না, সে সব তো হলো শাস্ত্রের জ্ঞান। এখানে তোমাদেরকে বাবা জ্ঞান প্রদান
করেন, যাঁকে জ্ঞানের সাগর বলা হয়। এটা ভালোভাবে নোট করো। তোমরা ভুলে যাও, এটা হল
হৃদয়ের মধ্যে ভালোভাবে ধারণ করার মতো কথা। বাবা প্রত্যেকদিন বলেন, মিষ্টি-মিষ্টি
বাচ্চারা, নিজেকে আত্মা মনে করে আমাকে অর্থাৎ এক বাবাকে স্মরণ করো, এখন বাড়ি ফিরে
যেতে হবে। পাপীরা তো ফিরে যেতে পারবে না। পবিত্র এই যোগবলের দ্বারা হতে হবে কিংবা
শাস্তি ভোগ করে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেকের হিসেব-নিকেশ সমাপ্ত অবশ্যই করতে হবে।
বাবা বুঝিয়েছেন যে তোমরা আত্মারা প্রকৃতপক্ষে পরমধামবাসী ছিলে, পুনরায় এখানে সুখ
আর দুঃখের অভিনয় করতে আসো। সুখের সময় হলো রামরাজ্যে আর দুঃখের সময় হলো রাবণ
রাজ্যে। রামরাজ্য স্বর্গ কে বলা হয়, সেখানে সম্পূর্ণ সুখ আছে। গীতও আছে স্বর্গবাসী
আর নরকবাসী। তাহলে এটা ভালোভাবে ধারণ করতে হবে। যত-যত তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হতে
থাকবে, ততই অন্তরে খুশি আসতে থাকবে। যখন রজো তে দ্বাপরে ছিলে, তখনও তোমাদের খুশী
ছিল। তোমরা তখন এতটা দুঃখী বিকারী ছিলে না। এখানে তো এখন সবাই বিকারী এবং দুঃখী হয়ে
গেছে। তুমি তোমার বয়ঃজ্যেষ্ঠদের দেখো, কিরকম বিকারী এবং মদাসক্ত আছে। মদ খুব খারাপ
জিনিস। সত্যযুগে তো সবাই শুদ্ধ আত্মা থাকবে তারপর নিচে নামতে-নামতে একদম ছি-ছি হয়ে
যায় এইজন্য একে দুঃখদায়ী নরক বলা হয়। মদ এমনই এক জিনিস যা ঝগড়া, মারামারি, ক্ষতি
করতে দেরী করে না। এই সময় মানুষের বুদ্ধি একদম ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। মায়া খুব খারাপ
আছে। বাবা হলেন সর্বশক্তিমান, সুখ দাতা। অন্যদিকে মায়া অনেক দুঃখ দেয়। কলিযুগে
মানুষদের অবস্থা দেখো কিরকম হয়ে গেছে, একদম জর্জরিত হয়ে যায়। কিছুই বোঝেনা, যেন
পাথর বুদ্ধি। এটাও নাটক তাইনা। কারোর ভাগ্যতে না থাকলে এইরকমই বুদ্ধি হয়ে যায়।
বাবা জ্ঞান তো খুব সহজ দেন। বাচ্চা-বাচ্চা বলে বোঝাতে থাকেন। মাতারাও বলে যে, আমার
পাঁচটি লৌকিক সন্তান আর একটি পারলৌকিক সন্তান। যিনি আমাকে সুখধামে নিয়ে যাওয়ার
জন্য এসেছেন। বাবাও বোঝেন তো বাচ্চারাও বোঝে। জাদুগর তাইনা। বাবা জাদুগর তো
বাচ্চারাও জাদুগর হয়ে গেছে। বলা হয় বাবা আমাদের বাচ্চাও আছেন। তাহলে বাবাকে
অনুসরণ করে এই রকম হওয়া চাই। স্বর্গতে এঁনার রাজ্য ছিল তাই না। শাস্ত্রতে এসব কথা
লেখা নেই। এই ভক্তি মার্গে শাস্ত্রের কথাও ড্রামাতে নিহিত আছে। পুনরায় হবে। এটাও
বাবা বোঝাচ্ছেন, পড়ানোর জন্য শিক্ষক তো চাই তাই না। শাস্ত্র কখনো শিক্ষক হতে পারে
না। তাহলে তো আর শিক্ষকের দরকারই হতো না। এই সমস্ত শাস্ত্র আদি সত্য যুগে হবে না।
বাবা বোঝাচ্ছেন যে, তোমরা আত্মাকে তো বুঝে গেছো তাইনা। আত্মাদের বাবাও অবশ্যই
থাকবেন। যখন কেউ আসে তখন সবাই বলে হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই, অর্থ কিছুই বোঝে না।
ভাই-ভাইয়ের অর্থ বুঝতে হবে তাই না। অবশ্যই তাদের বাবাও থাকবে। এত ছোট ছোট বিষয় কথা
তারা বুঝতে চায় না। ভগবানুবাচ এটা হল অনেক জন্মের অন্তিম জন্ম। এর অর্থ কত
পরিষ্কার। কেউ গ্লানি করেনা। বাবা তো রাস্তা বলে দেন। প্রথম নম্বর তথা শেষ। গোরা
থেকে শ্যাম বর্ণ হওয়া। তোমরাও বুঝে গেছো যে - আমরা গোরা ছিলাম পুনরায় এইরকম হব।
বাবাকে স্মরণ করলেই আমরা এরকম হতে পারবো। এটাই হল রাবন রাজ্য। রাম রাজ্যকে বলা হয়
শিবালয়। সীতার রাম, তাঁরা তো ত্রেতাযুগে রাজ্য করেছিলেন, এতেও বোঝার বিষয় আছে।
দু-কলা কম বলা হয়ে থাকে। সত্যযুগ হলো শ্রেষ্ঠ, তাকে স্মরণ করতে হয়, ত্রেতা যুগ আর
দ্বাপর যুগকে তত পরিমাণে স্মরণ করা হয় না। সত্যযুগ হলোই নতুন দুনিয়া আর কলিযুগ হল
পুরানো দুনিয়া। ১০০ শতাংশ সুখ আর ১০০ শতাংশ দুঃখ। ওই ত্রেতা আর দ্বাপর হল সেমি
এইজন্য মুখ্য সত্যযুগ আর কলিযুগ গাওয়া হয়। বাবা সত্যযুগ স্থাপন করছেন। এখন
তোমাদের কাজ হল পুরুষার্থ করা। সত্যযুগ নিবাসী হবে নাকি ত্রেতা নিবাসী হবে ? দ্বাপর
যুগে পুনরায় নিচে নামতে থাকবে। তবুও আছো তো দেবী দেবতা ধর্মেরই, তাই না। কিন্তু
পতিত হওয়ার কারণে নিজেদেরকে দেবী-দেবতা বলতে পারোনা। তাই বাবা মিষ্টি-মিষ্টি
বাচ্চাদের প্রত্যেকদিন বোঝান। মুখ্য কথাই হলো "মন্মনা ভব"। তোমরাই প্রথম নম্বরে আসো।
৮৪ জন্মের চক্র লাগিয়ে একদম শেষে আসো তারপর আবার প্রথম নম্বরে আসো তাই এখন অসীম
জগতের বাবাকে স্মরণ করতে হবে। তিনি হলেন অসীম জগতের বাবা। পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই
বাবা এসে ২১ জন্মের স্বর্গসুখ তোমাদেরকে প্রদান করেন। তোমরা সম্পন্ন হয়ে গেলে
স্ব-ইচ্ছায় শরীর ছাড়তে পারো। যোগবল আছে তাই না। এইরকমই ভবিতব্য হয়ে আছে, একেই বলা
হয় যোগবল। সেখানে জ্ঞানের-কথা কিছুই থাকবে না। আপনা থেকেই তোমরা বৃদ্ধ হয়ে যাও।
সেখানে কোন রোগাদি থাকবে না। খোঁড়া বা টেরা বাঁকা থাকবে না। সর্বদা সুস্থ থাকবে।
সেখানে দুঃখের নাম-নিশান থাকবে না। তারপর আস্তে আস্তে কলা কম হতে থাকে। এখন
বাচ্চাদেরকে পুরুষার্থ করতে হবে, অসীম জগতের বাবার কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ নিতে
হবে। সম্মানের সাথে পাশ করতে হবে, তাই না। সবাই তো আর শ্রেষ্ঠ পদ পেতে পারে না। যে
সেবা-ই করে না সে কিভাবে শ্রেষ্ঠ পদ পাবে। মিউজিয়ামে বাচ্চারা কত সেবা করে, বিনা
আহ্বানে মানুষজন আসতে থাকে। একেই বিহঙ্গ মার্গের সেবা বলা হয়ে থাকে। জানা নেই, এর
থেকেও যদি অন্য কোনো বিহঙ্গ মার্গের সেবা (তীব্রগতির) বেরিয়ে আসে। দু-চারটি মুখ্য
চিত্র অবশ্যই সাথে রাখবে। বড়-বড় ত্রিমূর্তি, কল্প বৃক্ষ (ঝাড়), গোলা (সৃষ্টি
চক্র), এবং সিঁড়ি-র ছবি এগুলি প্রত্যেক জায়গায় খুব বড় বড় করে রাখতে হবে। যখন
বাচ্চারা সচেতন হয়ে যাবে তখনই তো সেবা হবে তাই না। সেবা তো হতেই হবে। গ্রামে গিয়ে
সেবা করতে হবে। মাতা-রা হয়তো লেখাপড়া জানেন না কিন্তু বাবার পরিচয় দেওয়া তো খুব
সহজ বিষয়। আগে মহিলারা পড়াশোনা করার সুযোগ পেত না। মুসলমানের রাজ্যে এক চোখ খুলে
বাইরে বের হতো। এই বাবা খুব অনুভবী আছেন । বাবা বলেন আমি এসব কিছু জানি না । আমি তো
উপরে থাকি। এইসব কথা এই ব্রহ্মা তোমাদের শোনাচ্ছেন। ইনি অনুভাবী আছেন, আমি তো কেবল
"মন্মনা ভব"- র কথাই শোনাই, আর সৃষ্টি চক্রের রহস্যকে বোঝাই, যেটা ইনি জানেন না। ইনি
এঁনার অনুভব আলাদাভাবে বোঝাচ্ছেন, আমি এসব কথাতে যাই না। আমার পাঠ হলো শুধুমাত্র
তোমাদেরকে রাস্তা বলে দেওয়া। আমি তোমাদের বাবা, শিক্ষক এবং গুরু আছি। শিক্ষক হয়ে
তোমাদেরকে পড়াচ্ছি, বাকি এর মধ্যে কৃপা করা আদি কিছু কথাই নেই। পড়াই এবং সাথে করে
বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাই। এই পড়াশোনার দ্বারাই তোমাদের সদ্গতি প্রাপ্ত হয়। আমি আসি-ই
তোমাদেরকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শিবের বরযাত্রী বলা হয়। শঙ্করের
বরযাত্রী তো হয়না। শিবের বরযাত্রী হয়, সব আত্মারা বরের পিছনে পিছনে যায় তাই না।
এরা সব হলো ভক্তবৃন্দ, আমি হলাম ভগবান। তোমরা আমাকে আহ্বান করেছিলে পবিত্র হয়ে সাথে
নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাইতো আমি তোমাদের বাচ্চাদেরকে অবশ্যই সাথে করে নিয়ে যাবো।
হিসেব-নিকেশ সমাপ্ত করে তবেই যেতে হবে।
বাবা প্রতি ক্ষণে-ক্ষণে বলেন "মন্মনাভব"। বাবাকে স্মরণ করো, তাহলে উত্তরাধিকারও
অবশ্যই স্মরণে থাকবে। বিশ্বের বাদশাহী প্রাপ্ত হচ্ছে তাইনা। তার জন্য পুরুষার্থও
এইরকম করতে হবে। তোমাদের বাচ্চাদেরকে কোনরূপ কষ্ট প্রদান করি না। জানি তোমরা জীবনে
অনেক দুঃখ দেখেছো। এখন তোমাদেরকে কোনরকম দুঃখ দিই না। ভক্তিমার্গের আয়ুও খুব ছোট
হয়। অকালে মৃত্যু হয়ে যায়, কতই না হায়-হতাশ করতে থাকো। কতই না দুঃখ সহ্য করতে হয়।
মাথা খারাপ হয়ে যায়। এখন বাবা বোঝাচ্ছেন যে, কেবলমাত্র আমাকে স্মরণ করতে থাকো।
স্বর্গের মালিক হতে গেলে দৈবগুনও অবশ্যই ধারণ করতে হবে। পুরুষার্থ সর্বদা শ্রেষ্ঠ
হওয়ার জন্য করা হয়ে থাকে - আমি লক্ষীনারায়ন হবো। বাবা বোঝান যে আমি
সূর্যবংশী-চন্দ্রবংশী, এই দুটো ধর্ম স্থাপন করি। তারা পাস করতে পারে না, এইজন্য
ক্ষত্রিয় বলা হয়। যুদ্ধের ময়দান আছে তাইনা। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
সুখধামের অবিনাশী উত্তরাধিকার সম্পূর্ণরূপে প্রাপ্ত করার জন্য সঙ্গমযুগে আত্মিক
জাদুকর হয়ে বাবাকেও নিজের বাচ্চা বানিয়ে নিতে হবে। সম্পূর্ণ সমর্পন হয়ে যেতে হবে।
২) স্বদর্শন চক্রধারী হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান নক্ষত্র বানাতে হবে। বিহঙ্গ মার্গের
সেবার (তীব্র গতিতে) নিমিত্ত হয়ে শ্রেষ্ঠ পদ নিতে হবে। গ্রামে-গ্রামে গিয়ে সেবা
করতে হবে। সাথে-সাথে স্মরণের চার্টও অবশ্যই রাখতে হবে।
বরদান:-
দেহ আর দেহের দুনিয়ার স্মৃতি থেকে উঁচুতে থেকে সর্ব বন্ধন থেকে মুক্ত ফরিস্তা ভব
ব্যাখ্যা - যার কোনো
দেহ বা দেহধারীর সাথে সম্পর্ক অর্থাৎ মনের বন্ধন নেই, সে-ই ফরিস্তা হতে পারে।
ফরিস্তাদের পা সর্বদাই পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে থাকে। পৃথিবী থেকে উঁচুতে অর্থাৎ
দেহ ভাবের স্মৃতি থেকে অনেক উঁচুতে। যে দেহ আর দেহের দুনিয়ার স্মৃতি থেকে উঁচুতে
থাকে, সে-ই সর্ব বন্ধনগুলি থেকে মুক্ত হয়ে ফরিস্তা হতে পারে। এইরূপ ফরিস্তা-ই ডবল
লাইট স্থিতির অনুভব করতে পারে।
স্লোগান:-
বাণীর সাথে সাথে আচার-আচরণ আর চেহারা থেকেও বাবার সম গুণ দেখা প্রতিভাত হলে, তখনই
প্রত্যক্ষতা হবে।