০৬-০৯-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদেরকে বাবার সমান ঈশ্বরীয় সেবাধারী হতে হবে, সঙ্গমযুগে বাবা তোমাদের অর্থাৎ বাচ্চাদের সেবা করার জন্যই আসেন"
প্রশ্ন:-
এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগটাই হলো সব থেকে সুন্দর এবং কল্যাণময় - কীভাবে ?
উত্তর:-
এই সময়েই তোমরা বাচ্চারা, অর্থাৎ স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়েই উত্তম হও। কলিযুগের অন্তিম এবং সত্যযুগের আদিকালের মধ্যবর্তী সময়েই এই সঙ্গমযুগ হয়। এই সময়েই বাবা তোমাদের মতো বাচ্চাদের জন্য ঈশ্বরীয় বিশ্ববিদ্যালয় খোলেন, যেখানে তোমরা মানুষ থেকে দেবতা হও। এইরকম বিশ্ববিদ্যালয় গোটা কল্পে আর কখনো থাকবে না। এই সময়েই সকলের সদগতি হয়ে যায়।
ওম্ শান্তি।
আত্মিক পিতা বসে থেকে তাঁর আত্মিক সন্তানদেরকে বোঝাচ্ছেন। এখানে বসে থেকেই তোমরা বাবাকে স্মরণ করো। কারণ তিনি হলেন পতিত-পাবন। তোমাদের লক্ষ্যই হলো তাঁকে স্মরণ করে পবিত্র সতোপ্রধান হওয়া। তবে কেবল সতো অবস্থায় পৌঁছানো আমাদের লক্ষ্য নয়। সতোপ্রধান হওয়ার জন্য বাবাকে স্মরণ করতে হবে। সুইট হোমকেও স্মরণ করতে হবে, কারণ আমাদেরকে সেখানে যেতে হবে। তারপর সম্পত্তিও প্রাপ্ত করতে হবে। তাই স্বর্গধামকেও স্মরণ করতে হবে। বাচ্চারা জানে যে আমরা এখন বাবার বাচ্চা হয়েছি। বরাবরের মতো এবারও আমরা বাবার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরুষার্থের ক্রম-অনুসারে স্বর্গে যাব। অন্যান্য সকল জীবাত্মারা শান্তিধামে চলে যাবে। ঘরে তো অবশ্যই যেতে হবে। বাচ্চারা এটাও জেনেছে যে এখন এটা হলো রাবণ রাজ্য। তাই এর সাথে তুলনা করে সত্যযুগের নাম দেওয়া হয়েছে রাম-রাজ্য। ধীরে ধীরে দুই কলা কম হয়ে যায়। ওদেরকে সূর্যবংশী এবং তারপরে এদেরকে চন্দ্রবংশী বলা হয়। খ্রিস্টানদের যেমন একটাই রাজবংশ হয়, সেইরকম এরাও একটাই রাজবংশ। কিন্তু ওদের মধ্যে সূর্যবংশী এবং চন্দ্রবংশী রয়েছে। দুনিয়ার কোনো শাস্ত্রে এইসব কথা লেখা নেই। বাবা স্বয়ং বসে থেকে এইসব বিষয় বোঝাচ্ছেন। এটাকেই জ্ঞান বা নলেজ বলা হয়। একবার স্বর্গ স্থাপন হয়ে গেলে আর জ্ঞানের প্রয়োজন হবে না। পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই বাচ্চাদেরকে এই নলেজ শেখানো হয়। *তোমাদের সেন্টারে অথবা মিউজিয়ামে অবশ্যই বড় বড় হরফে লিখে রাখা উচিত যে - বোনেরা এবং ভাইয়েরা, এটা হলো পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ যেটা কেবল একবার আসে। যদি কেউ পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগের অর্থ বুঝতে না পারে তবে লিখে দিতে হবে যে কলিযুগের অন্তিম এবং সত্যযুগের আদিকালের মধ্যবর্তী সময়কেই সঙ্গমযুগ বলা হয়। এই সঙ্গমযুগ হলো সবথেকে সুন্দর এবং কল্যাণময়। বাবা বলছেন, আমিও এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই আসি। তিনি এসে সঙ্গমযুগের অর্থ বুঝিয়েছেন। বেশ্যালয়ের সমাপ্তি এবং শিবালয়ের শুভারম্ভের মধ্যবর্তী সময়কেই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ বলা হয়। এখানে সবাই বিকারগ্রস্ত। কিন্তু ওখানে সবাই নির্বিকারী হবে। নিশ্চয়ই নির্বিকারীকেই উত্তম বলা যাবে। এই সময় স্ত্রী-পুরুষ উভয়ই উত্তম হয়ে যায়। তাই পুরুষোত্তম বলা হয়। বাবা এবং তোমরা বাচ্চারা ছাড়া আর কেউই এটা জানে না যে এই সময়টাকে সঙ্গমযুগ বলা হয়। এটা কারোর মাথাতেই আসে না যে কখন পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ হয়। এখন বাবার আগমন হয়েছে। তিনি হলেন মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ। এটা কেবল তাঁরই মহিমা। তিনি হলেন জ্ঞানের সাগর, আনন্দের সাগর। তিনিই হলেন পতিত-পাবন। জ্ঞানের দ্বারা তিনি সদগতি করেন। তোমরা কখনোই বলবে না যে ভক্তির দ্বারা সদগতি হয়। জ্ঞানের দ্বারা-ই সদগতি হয় এবং সত্যযুগেই সদগতি হয়। সুতরাং তিনি নিশ্চয়ই কলিযুগের অন্তিম এবং সত্যযুগের আদিকালের সঙ্গমে আসবেন। বাবা কত স্পষ্টভাবে বোঝাচ্ছেন। অনেক নুতন বাচ্চা আসে। যেভাবে আগের কল্পে এসেছিল, সেইভাবে আসতে থাকে। এইভাবেই রাজধানী স্থাপিত হবে। তোমরা বাচ্চারা বুঝতে পেরেছো যে আমরাই হলাম সত্যিকারের ঈশ্বরীয় সহযোগী। তিনি নিশ্চয়ই একজনকে পড়াবেন না। প্রথমে একজন শিক্ষালাভ করে, তারপর এনার দ্বারা তোমরাও পড়ো এবং অন্যদেরকেও পড়াও। তাই এত বড় বিশ্ব বিদ্যালয় খুলতে হয়েছে। সমগ্র দুনিয়াতে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের কথা দুনিয়ার কেউই জানে না। তোমরা বাচ্চারা এখন জেনেছ যে গীতা জ্ঞান দাতা শিববাবা এসে এই বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপন করেন। নুতন দুনিয়ার মালিক অর্থাৎ দেবী-দেবতাদেরকে তৈরি করেন। এখন যেসকল আত্মা তমোপ্রধান হয়ে গেছে, তাদেরকেই এখন সতোপ্রধান হতে হবে। এখন তো সকলেই তমোপ্রধান হয়ে গেছে। হয়তো কোনো কুমার, কুমারী কিংবা সন্ন্যাসী পবিত্র থাকে, কিন্তু সেইরকম পবিত্রতা এখন আর নেই। কোনো আত্মা যখন প্রথম এখানে আসে, তখন সে পবিত্র থাকে। তারপর অপবিত্র হয়ে যায়। কারণ তোমরা জানো সবাইকেই সতোপ্রধান থেকে সতো, রজো এবং তমো অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্তিমে সবাই তমোপ্রধান হয়ে যায়। এখন স্বয়ং বাবা সম্মুখে বসে থেকে বোঝাচ্ছেন যে এই বৃক্ষ এখন অতি বৃদ্ধাস্থায় এসে পৌঁছেছে। খুব পুরাতন হয়ে গেছে। তাই এখন এর বিনাশ হওয়া প্রয়োজন।
এটা বিভিন্ন ধর্মের বৃক্ষ। তাই বলা হয় বিরাট লীলা। কত বড় অসীম জগতের বৃক্ষ। ওই বৃক্ষ তো জড় বৃক্ষ, বীজ পুঁতলে গাছ বের হয়। এটা হল বিভিন্ন ধর্মের অদ্ভুত চিত্র। আসলে তো সকলেই মানুষ, কিন্তু ওদের মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য। তাই একে বিরাট লীলা বলা হয়। কিভাবে ক্রম অনুসারে সকল ধর্মের উৎপত্তি হয়, সেটাও তোমরা জেনেছ। সবাইকে এখন যেতে হবে, তারপর আবার আসতে হবে। এটা একটা পূর্ব-নির্মিত নাটক। এই নাটক আসলে নির্দিষ্ট নিয়মে আবদ্ধ। সেই নিয়ম অনুসারে এত ছোট আত্মা এবং পরমাত্মার মধ্যে কত ভূমিকা ভরা থাকে। পরম আত্মাকে এক সঙ্গে পরমাত্মা বলা হয়। তোমরা ওঁনাকে বাবা বলো। কারণ তিনি হলেন সকল আত্মার পরম পিতা। বাচ্চারা জানে যে আত্মাই বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। দুনিয়ার মানুষ এইসব বিষয় জানে না। ওরা তো বলে দেয় যে আত্মার ওপরে কোনো প্রলেপ পড়ে না। বাস্তবে এটা একেবারেই ভুল ধারণা। বড় বড় হরফে লিখে দিতে হবে যে আত্মা কখনোই নির্লেপ (আত্মাতে কোনো দাগ লাগে না এ'কথা ঠিক নয়) নয়। আত্মাই ভাল কিংবা খারাপ যে'রকম কর্ম করে, সেই অনুসারে সে ফল ভোগ করে। খারাপ সংস্কারের কারণে যখন পতিত হয়ে যায়, তখন দেবতাদের সামনে গিয়ে ওদের গুণগান করে। এখন তোমরা ৮৪ জন্ম সম্বন্ধে জেনে গেছ। দুনিয়ার কোনো মানুষ এটা জানে না। তোমরা যখন ওদেরকে যুক্তি সহকারে ৮৪ জন্মের কথা শোনাও, তখন ওরা প্রশ্ন করে যে শাস্ত্রে কি সব মিথ্যা লেখা আছে ? কারণ ওরা শুনেছে যে মনুষ্য আত্মা ৮৪ লক্ষ যোনিতে ভ্রমন করে। বাবা এখন বসে থেকে এইসব বিষয় বোঝাচ্ছেন। বাস্তবে গীতা-ই হলো সকল শাস্ত্রের শিরোমণি। বাবা আমাদেরকে ৫ হাজার বছর আগে যে রাজযোগ শিখিয়েছিলেন, সেটাই এখন পুনরায় শেখাচ্ছেন।
তোমরা জানো যে আমরা পবিত্র ছিলাম, পবিত্র গৃহস্থ ধর্ম ছিল। এখন এটাকে আর ধর্ম বলা যাবে না। সকলে অধার্মিক বা বিকারগ্রস্ত হয়ে গেছে। তোমরা বাচ্চারা এখন এই খেলাটা বুঝতে পেরেছ। এটা একটা সীমাহীন নাটক যেটা প্রত্যেক ৫ হাজার বছর অন্তর পুনরাবৃত্ত হয়। লক্ষ লক্ষ বছরের বিষয় হলে তো কেউ কিছু বুঝতেই পারবে না। এটা তো যেন গতকালের কথা। তোমরা গতকাল শিবালয়ে ছিলে, এখন বেশ্যালয়ে রয়েছ, আবার আগামীকাল শিবালয়ে থাকবে। সত্যযুগকে শিবালয় বলা হয়। ত্রেতাযুগকে সেমি বলা হয়। এতগুলো বছর তোমরা ওখানে থাকবে। পুনর্জন্ম তো নিতেই হবে। এটা হলো রাবণ রাজ্য। অর্ধেক কল্প তোমরা পতিত হয়ে ছিলে, এখন বাবা বলছেন- ঘর গৃহস্থে থেকেও কমল পুষ্পের মতো পবিত্র হও। কুমার এবং কুমারীরা তো পবিত্রই আছে। সেক্ষেত্রে ওদেরকে বোঝাতে হবে যে এইরকম (অপবিত্র) গৃহস্থ ধর্ম পালন করে কি লাভ যার জন্য পুনরায় পবিত্র হওয়ার পুরুষার্থ করতে হবে। ভগবানুবাচ হল - পবিত্র হও। অসীম জগতের পিতার উপদেশ তো পালন করা উচিত। তোমরা তো ঘর গৃহস্থে থেকেও কমল ফুলের মতো পবিত্র থাকতে পারো। তাহলে তোমাদের সন্তানদের মধ্যে পতিত হওয়ার অভ্যাস কেন তৈরি করো ? স্বয়ং বাবা এখন ২১ জন্মের জন্য পতিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করছেন। এক্ষেত্রে (পবিত্র হওয়ার জন্য) সামাজিক লজ্জা কিংবা কুল মর্যাদাও ত্যাগ করতে হয় । এটা তো অসীম জগতের বিষয়। সকল ধর্মেই অনেকেই কুমার (ব্যাচেলার) হয়ে জীবন যাপন করে। কিন্তু এই রাবণের রাজ্যে সুরক্ষিত ভাবে কুমার অবস্থায় জীবন যাপন করা খুবই মুশকিল। বিদেশেও অনেক মানুষ এইরকম অবিবাহিত থাকে, কিন্তু পরবর্তীকালে জীবনে একজন সাথী প্রয়োজন হলে বিয়ে করে নেয়। ওরা কোনো খারাপ দৃষ্টি রেখে বিয়ে করে না। দুনিয়াতে এইরকম অনেক মানুষ রয়েছে। যাকে বিয়ে করে, সে তার সম্পূর্ণ দেখাশোনা করে এবং মৃত্যুর সময়ে তাকে কিছু সম্পত্তি দিয়ে যায়। কিছু সম্পত্তি দান করে দেয়। মৃত্যুর আগে ট্রাস্ট কমিটি গঠন করে যায়। বিদেশে এইরকম অনেক বড় বড় ট্রাস্ট রয়েছে যারা এদেশেও সেবা করে। কিন্তু এদেশে এইরকম কোনো ট্রাস্ট নেই যারা বিদেশেও সেবা করে। এখানে তো গরিব মানুষরা রয়েছে। ওরা কিভাবে সাহায্য করবে ? বিদেশে মানুষের কাছে অনেক অর্থ রয়েছে। ভারত তো গরিব দেশ। ভারতবাসীর অবস্থা খুবই করুণ। ভারত কতই না সম্পত্তিবান ছিল। গতকালের কথা। মানুষ নিজেই বলে যে ৩ হাজার বছর আগে স্বর্গ ছিল। বাবা-ই স্বর্গ স্থাপন করেন। তোমরা জানো যে তিনি ওপর থেকে নিচে এসে পতিতদেরকে পবিত্র বানান। তিনি হলেন জ্ঞানের সাগর, পতিত-পাবন, সকলের সদগতি দাতা। অর্থাৎ তিনিই সবাইকে পবিত্র বানান। তোমরা বাচ্চারা জানো যে সকলেই আমার মহিমা করে। তোমাদেরকে পবিত্র বানানোর জন্য আমি এই পতিত দুনিয়াতেই আসি। তোমরা পবিত্র হয়ে গেলে প্রথমে পবিত্র দুনিয়াতেই আসবে। প্রথমে অনেক সুখ ভোগ করো, তারপরে রাবণ রাজ্যে অধঃপতন হয়। হয়তো মহিমা করে বলে যে পরমপিতা পরমাত্মা হলেন জ্ঞানের সাগর, শান্তির সাগর এবং পতিত-পাবন। কিন্তু তিনি কখন পবিত্র বানানোর জন্য আসবেন সেটা তো কেউই জানে না। বাবা বলছেন, তোমরা তো আমার মহিমা করো, তাই না ? এখন আমি স্বয়ং এসে তোমাদেরকে আমার পরিচয় দিচ্ছি। প্রত্যেক ৫ হাজার বছর পরে এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই আমি আসি। কীভাবে আমি আসি - সেটাও বোঝাচ্ছি। ছবিও রয়েছে। সূক্ষ্মবতনে তো ব্রহ্মা থাকে না। ব্রহ্মা এবং ব্রাহ্মণ উভয়েই এখানেই রয়েছে। ব্রহ্মাকেই গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার বলা হয়। পরবর্তীকালে তার বংশ তৈরি হয়। মনুষ্য সৃষ্টির বৃক্ষ তো ব্রহ্মা থেকেই শুরু হয়। যেহেতু তিনি প্রজাপিতা, সুতরাং তাঁর নিশ্চয়ই প্রজাও থাকবে। বিকারের দ্বারা তো জন্ম হতে পারে না। নিশ্চয়ই দত্তক নেওয়া সন্তান। যেহেতু তিনি গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার, সুতরাং তিনি নিশ্চয়ই দত্তক নেবেন। তোমরা সকলে দত্তক নেওয়া সন্তান। এখন তোমরা ব্রাহ্মণ হয়েছ, এরপর তোমরা দেবতা হবে। শুদ্র থেকে ব্রাহ্মণ, তারপর ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা - এটা হলো ডিগবাজির খেলা। বিরাট রূপের চিত্রও রয়েছে। ওখান থেকে তো সবাইকেই এখানে অবশ্যই আসতে হবে। যখন সকলে চলে আসে, তখন রচয়িতাকেও আসতে হয়। তিনি হলেন রচয়িতা এবং নির্দেশক। তিনি অভিনয়ও করেন। বাবা বলছেন - হে আত্মারা, তোমরা এখন আমাকে জেনেছ। তোমরা আত্মারা সবাই আমার সন্তান। তোমরা প্রথমে সত্যযুগে শরীর ধারণ করে অনেক সুখের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলে। এরপর ৮৪ জন্ম নিয়ে তোমরা অনেক দুঃখী হয়ে গেছ। যেকোনো নাটকের রচয়িতা, পরিচালক এবং প্রযোজক থাকে। এটা হলো অসীম জগতের নাটক। এই অসীম জগতের নাটকটাকে কেউই জানে না। ভক্তিমার্গে এমন সব কথা লিখে দিয়েছে যেগুলো মানুষের বুদ্ধিতে ভালোভাবে বসে গেছে।
বাবা এখন বলছেন – মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা, এগুলো সব ভক্তিমার্গের শাস্ত্র। ভক্তিমার্গের অনেক সামগ্রী রয়েছে। যেভাবে ছোট একটা বীজ থেকে কত বড় বৃক্ষ উৎপন্ন হয়, সেইরকম ভক্তিরও অনেক বিস্তার। জ্ঞান হলো বীজ। এতে কোনো সামগ্রীর প্রয়োজন নেই। বাবা তো কেবল বলছেন – নিজেকে আত্মা অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করো। এছাড়া আর কোনো ব্রত পালন করতে হবে না। এগুলো সব বন্ধ হয়ে যাবে। তোমাদের সদগতি হয়ে গেলে এগুলোর আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না। তোমরাই একসময়ে অনেক ভক্তি করেছ। এখন তোমাদেরকে তার ফল দেওয়ার জন্য এসেছি। দেবতারা তো শিবালয়ে ছিল। তাই তো মন্দিরে গিয়ে ওদের গুণগান করে। বাবা বলছেন – মিষ্টি বাচ্চারা, আমি ৫ হাজার বছর আগেও তোমাদেরকে বুঝিয়েছিলাম যে নিজেকে আত্মা অনুভব করো। সকল শারীরিক সম্বন্ধ ভুলে গিয়ে আমাকে অর্থাৎ কেবল বাবাকে স্মরণ করলে সেই যোগ অগ্নির দ্বারা তোমাদের সকল পাপ নাশ হয়ে যাবে। এখন বাবা যা কিছু বোঝাচ্ছেন, সেগুলো তিনি প্রত্যেক কল্পেই বোঝান। গীতাতেও কিছু ভালো কথা রয়েছে। "মন্মনাভব" অর্থাৎ আমাকে স্মরণ করো। শিববাবা বলছেন, আমি এখন এখানে এসেছি। আমি কার শরীরে প্রবেশ করি, সেটাও বলছি। ব্রহ্মার দ্বারা সকল বেদ-শাস্ত্রের সারকথা তোমাদেরকে শোনাচ্ছি। চিত্রতেও দেখানো হয় কিন্তু অর্থ কিছুই বোঝে না। তোমরাই এখন বুঝেছ যে শিববাবা কিভাবে ব্রহ্মার দ্বারা সকল বেদ-শাস্ত্রের সারকথা শোনান। ৮৪ জন্মের এই নাটকের রহস্যও তোমাদেরকে বোঝানো হয়। এনার অনেক জন্মের অন্তিম জন্মে আমি আসি। ইনিই এরপর এক নম্বর রাজকুমার হয়ে যান এবং তারপর আবার ৮৪ জন্ম গ্ৰহণ করে। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
*ধারণার জন্য মুখ্যসার :-*
১. এই রাবণ রাজ্যে থেকেও পতিত সামাজিক লজ্জা এবং কুল মর্যাদাকে ত্যাগ করে অসীম জগতের পিতার কথা মেনে চলতে হবে। ঘর গৃহস্থে কমল ফুলের মতো থাকতে হবে।
২. এই অদ্ভুত বিরাট লীলাকে সঠিকভাবে জানতে হবে। এতে যে আত্মারা অভিনয় করছে, তারা কেউই নির্লেপ নয়। ভালো কিংবা খারাপ কর্ম করে এবং তার ফলও ভোগ করে। এই রহস্যটা ভালো করে বুঝে শ্রেষ্ঠ কর্ম করতে হবে।
বরদান:-
আধ্যাত্মিক (রুহানি) অথরিটির সাথে নিরহংকারী হয়ে সত্য জ্ঞানের প্রত্যক্ষ স্বরূপ দেখিয়ে সত্যিকারের সেবাধারী ভব*
কোনো বৃক্ষ যখন ফলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, তখন সেই বৃক্ষ ঝুঁকে যায় অর্থাৎ নির্মাণ হওয়ার সেবা করে। সেইরকম যেসব বাচ্চার এইরকম রুহানি অথরিটি রয়েছে, তারা বিশাল অথরিটির সাথে সাথে নির্মান এবং সকলের স্নেহের পাত্র হবে। যাদের সাময়িক সময়ের অথরিটি থাকে ওরা অহংকারী হয় কিন্তু যাদের সত্যতার অথরিটি থাকে তারা অথরিটির সাথে নিরহংকারীও হয় – এটাই হল সত্য জ্ঞানের প্রত্যক্ষ স্বরূপ। যে সত্যিকারের সেবাধারী, তার বৃত্তিতে যতটা অথরিটি থাকবে, বাণীতেও ততটাই স্নেহ এবং নম্রতা থাকবে।
স্লোগান:-
ত্যাগ বিনা ভাগ্য লাভ হয় না।