০৯-০৫-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - শিববাবা হলেন ওয়ান্ডারফুল বাবা, টিচার আবার সদগুরুও। ওঁনার কোনও বাবা নেই, কারও কাছ থেকে কিছু শেখারও প্রয়োজন পড়ে না কখনো। কোনও গুরু-গোঁসাইয়ের দরকারও নেই ওঁনার। তোমাদের ঠিক তেমনই ওয়ান্ডার হয়ে স্মরণ করতে হবে ওঁনাকে"

প্রশ্ন:-

স্মরণের যোগে কি এমন নবীনত্ব থাকলে, সহজেই পবিত্র হতে পারে আত্মা ?

উত্তর:-

স্মরণের যোগে বসে যখন এমন ভাবে বাবার শক্তিকে গ্রহন করতে থাকো, যেন বাবা তোমাকে দেখছে আর তুমি বাবাকে দেখছো - এমন স্মরণের যোগেই আত্মা পবিত্র হয়। এই স্মরণের যোগ খুবই সহজ। কিন্তু বাচ্চারা মুহূর্ত-মুহূর্তেই তা ভুলে যায় যে তারা আত্মা, শরীর নয়। একমাত্র দেহী-অভিমানী বাচ্চারাই স্মরণের যোগে স্থিত হতে পারে।

ওঁম্ শান্তি!

মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চাদের এই এই দৃঢ় বিশ্বা (নিশ্চয়তা) থাকে যে, ইনিই আমাদের অসীম জগতের বাবা। ওঁনার কোনও বাবা হয় না। দুনিয়াতে এমন কেউ নেই, যার বাবা থাকে না। প্রত্যেকটি কথাই খুব ভালভাবে বুঝতে হবে, যেহেতু এই জ্ঞানের পাঠ যিনি পড়াচ্ছেন, তিনি কখনই কোনও প্রকারের পাঠ পড়েন না। কিন্তু মনুষ্য মাত্রই কখনও না কখনও কোনও না কোনও পাঠ তো অবশ্যই পড়েন। স্বয়ং কৃষ্ণও পাঠ পড়েছেন। বাবা বলেন- "আমার পড়ার আছেই বা কি? আমি তো এখানে পড়াতেই এসেছি। আমি কখনও কোথাও কোনও পাঠ পড়ি না। কোথা থেকেও কোনো শিক্ষাও নিই না। কখনও কোনও গুরু-গোঁসাইও করি না।" -- অবিনাশী ড্রামার প্লান অনুসারে স্বতঃতই উচ্চতমেরও উচ্চের এই বাবার মহিমা অবশ্যই হয়। তাই তো ওঁনার উদ্দেশ্যেই বলা হয় উচ্চ থেকেও উচ্চ, সর্ব্বোচ্চ হলেন ভগবান। সর্ব্বোচ্চ থেকে উচ্চতর আর কিছুই হতে পারে না। না পিতার বেলায়, না শিক্ষকের বেলায় আর না তো গুরুর বেলায়। আমাদের এই অসীম বেহদের বাবার না থাকে কোনও পিতা, না কোনও টিচার আর না কোনও গুরু-গোঁসাই। ইঁনি স্বয়ং একদিকে যেমন বাবা, তেমনি শিক্ষক আবার গুরু-ও নিজেই। এই বিষয়টি খুব ভালভাবে রপ্ত করতে হবে। এমনটা কোনও মনুষ্য বা ব্যক্তি হতে পারে না। এমন ভাবধারায় আশ্চর্যের সাথে বাবা, টিচার ও সদগুরু এই তিনটি সম্পর্কের সাথে যোগযুক্ত হতে হবে। জগতের লোকেরা ওঁনাকেই 'গড-ফাদার' বলে ডাকে। একমাত্র উনিই যেমন নলেজফুল টিচার, তেমনি উনি সুপ্রিম গুরুও বটে। এমনটি কেবল এই একজনই, অন্য কোনও মনুষ্য এমনটা হতে পারে না। কিন্তু পাঠ পড়াবার জন্য ওঁনাকে কোনও মনুষ্য শরীরকে আধার করতে হয়। যেহেতু পড়াবার জন্য মুখের প্রয়োজন। বাচ্চাদেরও প্রতি মুহূর্তে নিজেদের স্মৃতিতে তা স্মরণে রাখতে হবে, তবেই তো জীবনতরী পার করতে পারবে। বাবাকে স্মরণ করতে পারলেই বিকর্মগুলি ভষ্ম হয়ে যাবে। বুদ্ধিতে যদি থাকে সুপ্রিম টিচার পড়াচ্ছেন, তবেই সমগ্র জ্ঞান বুদ্ধিতে ধরতে পারবে। উনি আবার সদগুরুও। যিনি তোমাদের এই রাজযোগ শেখান। অতএব কেবলমাত্র এই একজনের সাথেই যোগযুক্ত হতে হবে। সকল আত্মাদেরই এই একই বাবা। তাই তো উনি সকল আত্মাদের বলেন- "মামেকম্ স্মরণ করো" (কেবলমাত্র আমাকেই স্মরণ করো) । যাবতীয় যা কিছু তা এই আত্মারাই করে থাকে ! এই শরীর রূপী মোটর-গাড়ীকেও চালায় আত্মা। শরীরকে 'রথ'-ই বলো বা অন্য কিছু, চালায় এই আত্মা। সকল আত্মারই এক ও অভিন্ন পিতা এই বাবা। তোমরা আত্মারা নিজেরাই নিজেদের মুখ দিয়ে তা বলো- "আমরা আত্মারা ভাই-ভাই। আমরা সবাই সেই একই বাবার সন্তান, অর্থাৎ সম্পর্কে আমরা ভাই-ভাই।" এরপর যখন বাবা স্বয়ং আসেন এই প্রজাপিতা ব্রহ্মার শরীরে, তখন থেকে তোমরা আবার ভাই-বোন হয়ে যাও। যেহেতু প্রজাপিতা ব্রহ্মার মুখ-বংশাবলী, তাই ভাই-বোনের সম্পর্ক। আর ভাই-বোন সম্পর্কের মধ্যে কখনও বিবাহ হয় না। বাস্তবে তোমরা সবাই প্রজাপিতা ব্রহ্মার 'ব্রহ্মাকুমার' ও 'ব্রহ্মাকুমারী' ! নিজেদের মধ্যে ভাই-বোন বোধ থাকলে, যেমনি তোমরা বাবার প্রিয় সন্তান হও তেমনি আবার ঈশ্বরীয় সম্প্রদায় ভুক্ত হও সেই একই কারণে। তাই তো তোমরা জোরের সাথে বলতে পারো, একমাত্র বি.কে.-রাই সরাসরি ঈশ্বরীয় সম্প্রদায়ের। ঈশ্বরই আমাদের বাবা, যিনি স্বয়ং বি.কে.-দেরকে সবকিছু শেখান। ওঁনার কোনও প্রয়োজন পড়ে না কারও কাছ থেকে কিছু শেখার। যেহেতু উনি সদাকালের সর্ব বিষয়েই স্বয়ং-সম্পূর্ণ। যার কলা গুণ ও শক্তি কখনই কমে না। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে তা কম হতে থাকে। তাই তো বি.কে.-রা এমন উদাত্ত হয়ে শিববাবার এত মহিমা করে। শিববাবা বলাটা খুবই সহজ, অর্থাৎ যিনি পতিত-পাবন বাবা। কিন্তু কেবল ঈশ্বর বললে, তা সেইভাবে মানানসই হয় না। বাবা বললেই তোমাদের মুখে তা ভাল মানায়। কিন্তু কিভাবে এই বাবা এসে পতিতদেরকে পবিত্র বানান। লৌকিকে যেমন পিতা (বাবা) থাকে, তেমনি পারলৌকিকেও বাবা থাকেন। যে পারলৌকিক বাবাকে সবাই সবাই স্মরণ করে। যেহেতু লোকেরা পতিত হয়ে পড়ে তাই বাবাকে স্মরণ করে। পবিত্র হয়ে গেলে আর পতিত-পাবন বাবাকে স্মরণ করার দরকার হয় না। এবার বোঝো, এই অবিনাশী ড্রামার চিত্রনাট্য কেমন। পতিত-পাবন বাবাকে স্মরণ করা মানে নতুন পবিত্র দুনিয়ার অধিকারী হওয়া।



শা্স্ত্রগুলিতে লেখা আছে দেবতাদের আর অসুরদের মধ্যে ভীষণ লড়াই হয়েছিল। বাস্তব কিন্তু এমনটা নয়। বাচ্চারা, তোমরা এখন বুঝতে পারছো, তোমরা এখন না তো দেবতা আর না অসুর। এই দুইয়ের মধ্যে তোমাদের অবস্থান। ফলে যেন যাঁতাকলের মতন নিয়তই পিষছো তোমরা। অবিনাশী নাটকের এই দৃশ্য বড়ই রোমাঞ্চকর। এই নাটকে কেবল মজা আর মজা। জাগতিক ড্রামাগুলি সব এই জগতের হদের ড্রামা। কিন্তু বি.কে.-দের তো অসীম জগতের বেহদের ড্রামা। লোকেরা তা বুঝতে পারবে না। এমন কি দেবতারাও নয়। এখন তোমরা কলিযুগ থেকে বেরিয়ে এসেছো। নিজেরাই তা অনুভব করতে পারো এবং অন্যদেরকেও তা বোঝাতে সক্ষম। একবার এই ড্রামাকে বুঝতে পারলে সম্পূর্ণ ড্রামা-ই তোমার বুদ্ধিতে এসে যাবে। বাবা তাই তোমাদেরকে বুঝিয়ে দেন, মনুষ্য সৃষ্টি রূপী এই কল্প-বৃক্ষকে। যার বীজ থাকে একেবারে উপরে। তাই তো একে বিরাট রূপ-ও বলা হয়। বাবা স্বয়ং বসে নিজের বি.কে.-বাচ্চাদেরকে এগুলি ব্যাখ্যা করে বোঝান। জাগতিক মানুষেরা যা কিছুই জানেই না। কিন্তু শিববাবা এই ভাষা শিখলেন কার থেকে? যেখানে ওঁনার কোনও টিচার নেই, আর কি ভাষাই বা শিখলেন তিনি ? তবে নিশ্চয়ই যে রথে ওনার অবস্থান হয়, তার ভাষাতেই উঁনি কর্ম-কর্তব্য নির্বাহ করেন। শিববাবার নিজের কোনও ভাষাই নেই। কারও থেকে কিছু পড়া বা শেখার প্রয়োজনও নেই ওঁনার। ওঁনার কোনও টিচার হয় না। এমনকি কৃষ্ণও কিন্তু শিক্ষার্থী। কৃষ্ণের যেমন মাতা-পিতা আছে, তেমনি আছে টিচার। তবে কৃষ্ণের কোনও গুরু-গোঁসাইয়ের দরকার পড়ে না, যেহেতু উনি সদগতি পেয়ে থাকেন। এসব তোমরা বি.কে.-রাই জানো। তোমরাই সর্বোচ্চ ব্রাহ্মণ-একথা সর্বদাই স্মৃতিতে রাখবে। যেহেতু তোমাদের পাঠ পড়ান স্বয়ং বাবা (যিনি ভগবান বা পরমাত্মা), তাই তোমরাই প্রকৃত ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা ..... একথা তো যথেষ্টই ক্লিয়ার। এসব কথা বাবা তোমাদেরকে কত আগেই জানিয়েছেন। একমাত্র উনিই সর্বজ্ঞ। তোমাদের ভাবনাতেও তা আসবে না, উনি আরও কি কি জানেন। একমাত্র উনিই যে নলেজফুল। সমগ্র সৃষ্টি জগতের আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান ওঁনার জানা। যেমন বীজ-এর জানা থাকে সমগ্র বৃক্ষের ব্যাপারটা। এ তো জড় বীজের ক্ষেত্রে আর তোমরা হলে চৈতন্য-বীজ। একমাত্র তোমরাই পারো সৃষ্টির কল্পবৃক্ষের জ্ঞান অন্যদেরকে বোঝাতে। বাবা স্বয়ং যেখানে বলছেন - উনিই সেই বিভিন্ন প্রকার মনুষ্য সৃষ্টির বীজ। যদিও সবাই মানুষ কিন্তু বিভিন্নতা তো আছে। কোনও আত্মার শরীরের সাথে অন্য কোনও আত্মার শরীর হুবহু এক হয় না। যেমন দুজন অভিনয়কারী হুবহু এক হয় না। আর এটা তো অসীম বেহদের ড্রামা। প্রকৃত অর্থে শরীরধারী মানুষদের কিন্তু অ্যাক্টর বলা চলে না, অ্যাক্টিং করে তো আত্মা। কিন্তু লোকেরা শরীরধারী মানুষকেই অ্যাক্টর বলে। তোমরা বি.কে.-রা জানো যে, আত্মারা অ্যাক্টিং করে। আত্মাই মানুষকে যেমন ইচ্ছা তেমন নাচায়। যেমন মানুষেরা বাঁদর নাচায়। আত্মা শরীরকে নাচায়, অ্যাক্টিং করায় - এই ভাবেই আত্মা তার কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করে। একথা তো খুব সহজেই বোঝা যায়। অসীম জগতের বাবাও তেমনি আসেন ওঁনার কর্ম-কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে। এমনটা নয় যে তিনি আসবেন না। তাই তো 'শিব-জয়ন্তী' উৎসব পালন করা হয়। বাবা তখনই আসেন, যখন দুনিয়ার পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়ে। ভক্তি-মার্গে লোকেরা কৃষ্ণকে স্মরণ করতে থাকে, কিন্তু কৃষ্ণ আসবেই বা কি প্রকারে? কলিযুগ কিম্বা সঙ্গমে কৃষ্ণের সেই রূপ এই চর্ম-চক্ষু দ্বারা তো আর দেখা যাবে না। তবে তাকে ভগবান বলবো কিভাবে? কৃষ্ণ তো সত্যযুগের প্রথম রাজকুমার। তার যেমন বাবা থাকে, তেমনি টিচারও থাকে, কিন্তু গুরুর প্রয়োজন পড়ে না ওনার, যেহেতু উনি সদগতি পেয়ে থাকেন। সদগতির অর্থ স্বর্গ-রাজ্য। অর্থাৎ যেখানে হিসেব-নিকেশ একদম ক্লিয়ার থাকে। বাচ্চারা, তোমরা তো জানো মনুষ্য সর্বাধিক ৮৪-জন্ম পায়। তোমরা সেই হিসাব বোঝাতেও পারো কারা কত জন্ম পেতে পারে। দৈবী-ঘরাণার যারা তারাই আসবে সর্বাগ্রে। প্রথম ধাপে তাদেরই জন্ম হয়। তারপর একের পর এক তার পিছনেই আসতে থাকে। এসবের জ্ঞান তো আছেই তোমাদের। অবশ্য তোমাদের মধ্যেও কেউ খুব ভালভাবে বোঝো, কেউ বা..! যেমন জাগতিক পড়াশোনাতেও হয়ে থাকে। যদিও এই জ্ঞানের পাঠ খুবই সহজ। কিন্তু এই পাঠে এক গুপ্ত সমস্যা হলো, যখনই তোমরা বাবাকে স্মরণ করতে বসো, মায়া সেখানেই তোমাদের জন্য বিঘ্ন সৃষ্টি করে। আর এটাই মায়া-রাবণের হিংসার কারণ। তোমরা রামকে স্মরণ করলেই রাবণের হিংসা হয়। আর তা এই কারণেই যে, রাবণ রাজত্বের ক্রীতদাস হয়েও রামকে কেন স্মরণ করবে? যদিও এ সবই অবিনাশী ড্রামার চিত্রনাট্যে চিত্রিত হয়ে আছে বহু পূর্বেই। তা কোনও নতুন ঘটনা নয়।



কল্প-পূর্বে যার যেমন রোল ছিলো, এখনও সে তেমনটাই করবে। এই যে এখন তোমরা যেমন পুরুষার্থ করছো, কল্প-পূর্বেও তেমনটাই করেছিলে। আবারও তেমনই করছো। ড্রামার পটচিত্র এভাবেই ঘুরতে থাকে। যা কখনই বন্ধ থাকে না। যেমন ঘড়ির কাঁটা টিক্-টিক্ করে ঘুরতেই থাকে। এই ৫-হাজার বছরের ড্রামাকেই বাবা বোঝাচ্ছেন। অজ্ঞনী শাস্ত্রকারেরা শাস্ত্রগুলিতে কত উল্টোপাল্টা সব লিখে রেখেছে। বাবা কিন্তু একথা কখনই বলেন না যে, ভক্তিকে ত্যাগ করো। কারণ কেউ যদি জ্ঞানের পথে চলতে না পারে, তবে তার জ্ঞান-মার্গও গেলো-আবার ভক্তি-মার্গও গেলো। অর্থাৎ একুল-ওকুল দু-কুলই গেলো। তার জীবনটাই তখন বেকার হয়ে যায়। তাই তো এমন লোকও দেখা যায়, সে ভক্তি বা এমন ধারার কোনও কিছুতেই নেই। এভাবেই জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। কেউ বা আবার বলে-ভগবানই নানা রূপ ধারণ করে আসে। বাবা বলেন- আরে, এ যে অসীম-বেহদের অবিনাশী অনাদি ড্রামা, যার রচনা সেই অনাদি-অনন্ত কালে। যা বারবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। তাই এই ড্রামাকে বলা হয় 'অনাদি অবিনাশী ওয়ার্লড ড্রামা'! বাচ্চারা, এসব কেবল তোমরা বি.কে.-রাই বুঝতে পারবে। কুমারীরা যা খুব সহজে বুঝতে পারে। আর মাতারা সিঁড়ি বেয়ে যতটা নেমে গেছে, ততটা আগে উঠতে হবে। কুমারীদের কোনও বন্ধন থাকে না। তাই নিশ্চিন্ত হয়ে বাবার একান্ত আপন হতে পারে। তোমাদের লৌকিক সম্বন্ধগুলিকে ভুলে গিয়ে পারলৌকিক সম্বন্ধে যুক্ত হতে হবে। কলিযুগ তো দুর্গতির যুগ। ড্রামা অনুসারে কেবল অধোগতি আর পতন।



ভারতবাসীরা বলে যে, দুনিয়াতে যা কিছুই আছে সবই ঈশ্বরের দান। ঈশ্বরই সবকিছুর মালিক। তবে প্রকৃত অর্থে তুমি কে? আসলে তোমরা হলে আত্মা। অর্থাৎ যা কিছু, সবই পরমাত্মার বা ঈশ্বরের। এমনকি এই দেহ ইত্যাদি যা কিছু তাও। সবকিছু তো পরমাত্মারই দান। একথা অবশ্য ঠিকই বলে। বলার বেলায় বলে, সবকিছুই ঈশ্বরের দান। আচ্ছা, তবে ওনার দেওয়া জিনিষের উপর অন্যায় ভাবে অধিকার করা কি উচিত? কিন্তু তাতেও বুঝ মানে না লোকেরা। উল্টে তারা চলে রাবণের মত অনুসারে। তাই বাবা বোঝাচ্ছেন, বাচ্চারা তোমরা হলে ট্রাষ্টি। কিন্তু রাবণ সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে তোমাদের সেই ট্রাস্টি ভাব নিজেদেরকেই ধোকা দিচ্ছে। মুখে বলো এক কথা, কিন্তু কাজের বেলায় অন্য। বাবা যা কিছু দিয়েছেন, তা যদি উনি নিয়ে নেন, সেক্ষেত্রে দুঃখ হবার কোনও কারণ তো নাই। এইসব বিষয়ের উপর মমত্ব মেটানোর জন্যই বাবা ওঁনার একান্ত আপন বি.কে.-দের তা বোঝাচ্ছেন। বাবা তো এখন এসেছেন। তোমরাই তো কতভাবে বাবাকে ডেকেছো, বাবা আমাদেরকে তোমার সাথে নিয়ে চলো। রাবণের এই রাজ্যে আমরা যে বড়ই দুঃখী। তুমি এসে আমাদেরকে পবিত্র বানাও। যেহেতু একথা তোমরা জানো যে, পবিত্র হতে না পারলে আপন ঘরে ফিরে যেতে পারবে না। তাই -"আমাদের নিয়ে চলো বাবা"। কিন্তু কোথায় ? -আপন ঘরে নিয়ে চলো। সবাই আপন ঘরে ফিরতে চায়। যেমন কৃষ্ণের ভক্তরা তারা তাদের কৃষ্ণপুরী বৈকুন্ঠে যেতে চায়। তাই সর্বদা তাদের মনে কেবল সত্যযুগই স্মরণে থাকে। এটা খুবই ভাল। মানুষ মরলে তো আর স্বর্গে যায় না। স্বর্গ-রাজ্য তো সত্যযুগের। আর নরক-রাজ্য কলিযুগে। তাই এখন কারও পুনর্জন্ম হলে তা তো নরকেই হবে। বর্তমানের এই যুগটা তো আর সত্যযুগ নয়। এটাই হলো ওয়ান্ডার অফ ওয়ার্লড্ - সত্যি কি আশ্চর্যের। লোকেরাই তা বলে, বোঝেও, তবুও যখন কেউ মারা যায় তার পাত্র-মিত্র, আত্মীয়-স্বজন তখন কিন্তু তা বোঝে না। একমাত্র এই বাবার কাছেই মনুষ্যের ৮৪-জন্মের সেই চক্রের জ্ঞান আছে, যা তিনি জানাচ্ছেন। তোমরা যে নিজেদেরকে দেহ ভাবে রাখো, তা খুবই ভুল পদ্ধতি। তাই বাবা বারবার বলেন- "দেহী-অভিমানী হও।" কৃষ্ণ কিন্তু 'দেহী-অভিমানী' বা এমন কিছু হতে বলে না। যেহেতু কৃষ্ণের নিজের দেহ আছে। কিন্তু (নিরাকার) শিববাবার নিজের কোনও দেহ নেই। বর্তমানে ব্রহ্মাবাবার রথে (শরীরে) অবস্থান করছেন উঁনি। এই একই রথ যেমন ব্রহ্মাবাবার তেমনি আবার শিববাবারও। দুজনের আত্মাই একই রথে। বাবা এই শরীর লোন (ভাড়া) নিয়েছেন। বাবা নিজেই তা বলেন- "এনার শরীরকেই আমি আধার বানাই, যেহেতু আমার নিজের কোনও দেহ নাই। আর এমনটা না হলে তোমাদেরকে এই জ্ঞানের পাঠ পড়াবোই বা কি প্রকারে।" বাবা বসে বসে রোজই এই প্রয়াস চালিয়ে যান, বাচ্চারা নিজেদেরকে যেন কেবল আত্মা-স্বরূপে ভেবে বাবাকেও যেন আত্মা-স্বরূপেই দেখো। শরীরের ভাবকেই যেন ভুলে যাও। আমিও যেমন তোমাদেরকে আত্মা হিসাবে দেখবো, তোমরাও তেমনি আমাকে আত্মা হিসাবেই দেখবে। এই পদ্ধতিতে যতই বাবাকে দেখতে থাকবে, ততই পবিত্র হতে থাকবে। পবিত্র হওয়ার জন্য এছাড়া আর অন্য কোনও উপায়ও নেই। আর যদি অন্য কোনও পদ্ধতি জানা থাকে তো বলো, যার দ্বারা আত্মা পবিত্র হতে পারে? আত্মা তো আর গঙ্গাজলের দ্বারা পবিত্র হতে পারবে না।



প্রথমেই বাবার পরিচয় জানাতে হবে। ইনি এমন বাবা, যা দ্বিতীয়টি আর হয় না। লোকেদের মনের নাড়ীর ধরণ আন্দাজ করে এমন ভাবে বোঝাও, যেন তারা বিস্ময় হয়ে শুনতে থাকে! তারা যেন বুঝতে পারে জগতের একমাত্র সত্য যিনি তিনি পরমাত্মা। বাচ্চারা, এবার বাবা তোমাদেরকে ওনার নিজের পরিচয় জানাচ্ছেন - "প্রকৃত অর্থে আমি কে ? -তা তো তোমাদের জানা আছে। এই বিশ্ব-নাটকের ইতিহাসও রিপিট হয়। যারা এই কুলের তারা অবশ্যই আসবে এই পরিবারে। অন্যেরা যে যার নিজের নিজের ধর্ম অনুসারে সেইসব পরিবারে যাবে। আর যারা অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছিলো তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় নিজের নিজের ধারায় যুক্ত হবে। তা বোঝার সুবিধার্থে নিরাকারী কল্পবৃক্ষের ছবি বানিয়ে তাতে দেখানো হয়েছে। এসব কেবল বি.কে.-রাই বুঝতে পারে, অন্যদের মধ্যে দু-একজনই তা বুঝতে পারবে। যেমন ৭-৮ জনের মধ্যে এক বা দুইজনই এমন হবে, যারা ভাববে সত্যি এই জ্ঞান তো খুবই সুন্দর। আর এই পরিবারের যে হবে, তার মনে সন্দেহের ঝড়-তুফান কম বইবে। মনে আগ্রহ জাগবে, ভাববে যাই আবার গিয়ে সেই জ্ঞানের কথা শুনি। কেউ কেউ আবার সঙ্গদোষের কারণে আসা বন্ধ করে দেয়। কোথাও কোনও পার্টি-জলসা হচ্ছে দেখলে, সেখানে গিয়েই আটকে পড়ে। আর তা দেখার জন্য কতই না হুড়োহুড়ি। তারপরে আবার নিজেরাই বলে- আমরা ভুল করে ফেলেছি। -একথা বারে বারেই ভুলে যাও প্রকৃত অর্থে তোমরা আত্মা, শরীর নয়। বাবা বিলক্ষণ জানেন বাচ্চারা কাম-বিকারের চিতায় বসতে বসতে এমন কালো হয়ে গেছে। কবর যে তৈরি হয়েই আছে, তাই তো তোমরা এমন কালো হচ্ছো। তাদের উদ্দেশ্যেই বাবা বলেন-আমার বাচ্চারা সব জ্বলে-পুড়ে খাক্ হয়ে গেছে। এসব হলো অসীম-বেহদের কথা। বাবার ঘরে অর্থাৎ ব্রহ্মলোকে পৌঁছবার জন্য কত কোটি-কোটি আত্মারা রয়েছে। আসলে তারা ব্রহ্মলোকের বাসিন্দা। আর এই অসীম-বেহদের বাবা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের জন্য। চাইলে তোমরাও সেই অসীম-বেহদে যেতে পারো। তোমরা তো জানো, নতুন দুনিয়া স্থাপনার পর বাবা আবার চলে যাবেন, তারপর তোমরা সেখানে নিজেদের রাজত্ব স্থাপন করবে। আর অন্য আত্মারা চলে যাবে শান্তিধামে। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত! আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. রাবণ তোমাদের প্রতি অর্থাৎ অ্যাক্টরদের প্রতি যতই ঈর্ষা করুক, বিঘ্নের সৃষ্টি করুক, যত প্রকারের ঝড়-ঝঞ্ঝা তুফানের সৃষ্টি করুক না কেন, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের পুরুষার্থের প্রতি তৎপর হতে হবে। প্রত্যেক অ্যাক্টরেরই যার যার নিজের নিজের পার্ট রয়েছে ড্রামা অনুসারে। এই অনাদি ড্রামা যে পূর্ব-নির্দ্ধারিত।

২. রাবণের মতে চলে ঈশ্বরের অবিশ্বাসের পাত্র হয়ো না। সবকিছু থেকে আসক্তি ছেড়ে সম্পূর্ণরূপে ট্রাস্টি হয়ে থাকতে হবে।

বরদান:-

মন্দের মধ্যেও ভালোকে অনুভব করে নিশ্চয়বুদ্ধি বেফিকির বাদশাহ হও

সর্বদা এই স্লোগান যেন স্মরণে থাকে যে, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে, আগামীতে যা হতে চলেছে - তা ভালোই হবে। মন্দকে মন্দ হিসাবে দেখো না। কিন্তু মন্দের মধ্যেও ভালোকে অনুভব করে, সেই মন্দ থেকে নিজের শিক্ষা নাও। যে কোনও পরিস্থিতিতে "কি হবে" -এই সংকল্প যেন না আসে। বরঞ্চ তইক্ষণাৎ এমনটা ভাববে- "যা হবে ভালোই হবে।" অতীতে যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। সর্বদাই এমন ভালোর ভাবনা যার, সে সদা বেফিকির বাদশাহ। নিশ্চয়বুদ্ধির অর্থই হলো বেফিকির বাদশাহ।

স্লোগান:-

যে নিজেকে এবং অপরকে যথাযুক্ত সন্মান দেয় - তারই রেকর্ড সদা উত্তম থাকে।