২৮-০৯-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - বাবার শ্রীমত অনুসারে চলে আত্মার প্রকৃত সৌন্দর্যচর্চার শৃঙ্গার করবে, পর-চিন্তনের বশে এসে নিজের শৃঙ্গারকে বিকৃত কোরো না এবং এই মূল্যবান সময়ের অপচয় কোরো না"
প্রশ্ন:-
বাচ্চারা, তোমরা বাবার থেকেও বুদ্ধিমান জাদুকর হয়ে ওঠো - কিভাবে ?
উত্তর:-
এখানে বসেই তোমরা নিজেদেরকে লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন উন্নত আত্মিক সৌন্দর্যচর্চার শৃঙ্গার করো। আবার এখানে বসেই তোমরা নিজেদের পরিবর্তন ঘটাচ্ছ - এটাই হলো বিশেষ জাদুকরী। কেবলমাত্র অল্ফ্ -কে (পরমাত্মা) স্মরণ করলেই তোমাদের সেই শৃঙ্গার হয়ে যায়। যে শৃঙ্গারে কোনও হাত-পায়ের কসরত করার প্রয়োজন নেই, যা শুধুমাত্র মনের বিচার-বুদ্ধির ব্যাপার । এই বিশেষ যোগের দ্বারাই তোমরা নির্মল, স্বচ্ছ ও সুশোভন হয়ে ওঠো। তোমাদের আত্মা আর শরীর কাঞ্চন হয়ে ওঠে। সত্যি কি চমৎকার - তাই না!
ওঁম্ শান্তি!
আধ্যাত্মিক জাদুকর স্বয়ং বসে ওঁনার আধ্যাত্মিক বাচ্চাদেরকে অর্থাৎ যারা বাবার থেকেও বুদ্ধিমান জাদুকর, তাদেরকে বোঝাচ্ছেন - বাচ্চারা, কি করছো তোমরা এখানে ? এখানে বসে কিন্তু কোনো রূপ শব্দ করা বা এদিক-ওদিক তাকানো এমন কিছুই করা চলবে না। এই বাবা অর্থাৎ প্রেমিক সাজন, তিনি ওঁনার প্রেমিকা সজনীদের এই পদ্ধতির কথা শোনাচ্ছেন। প্রেমিক সাজন বলছেন - এখানে বসে কি করছো তোমরা ? অর্থাৎ তোমরা নিজেরা লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন শৃঙ্গারে সুসজ্জিত হচ্ছো। লোকেরা কিএকথা বিশ্বাস করবে কেউ ? এখানে তোমরা সবাই যারা বসে আছো, তা কিন্তু তোমাদের নিজেদের পুরুষার্থের ক্রমানুসারেই - তাই না ? তাই বাবা জানাচ্ছেন- এইভাবেই আত্মিক শৃঙ্গারে সুসজ্জিত হয়ে উঠতে হবে তোমাদের। আগামী ভবিষ্যতের জন্য তোমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য - 'অমরপুরী'। যতক্ষণ এখানে বসে থাকো, ততক্ষণ তোমরা কি করো ? তোমরা ততক্ষণ স্বর্গ-রাজ্যের শৃঙ্গারের জন্য পুরুষার্থ করছো । তবে তাকে কি বলবে তোমরা ? এখানে বসেই তোমরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করছো। তাই তো বাবা তোমাদেরকে উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে 'মন্মনাভব'-এর চাবি দিয়েছেন। অতএব এই এক ও একমাত্র নির্দেশ ছাড়া আর অন্য কোনও অপ্রয়োজনীয় কথা শুনে বা শুনিয়ে সময়ের অপব্যবহার কোরো না মোটেই। তোমরা যে যার নিজেদের শৃঙ্গারেই ব্যস্ত থাকবে। অন্য কে কি করলো বা করলো না - তাতে তোমাদের কি আসে যায় ! তোমরা যে যার নিজেদের পুরুষার্থে মনোযোগী হও। এটাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। এসব নতুন কথা কেউ শুনলে পড়ে সে আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে কেউ বা নিজের শৃঙ্গারে ব্যস্ত, আবার কেউ বা অন্যর শৃঙ্গার ক্ষতির চেষ্টায় রত। তারা কেবল পরিচিন্তন ও অন্যান্য বিষয়ে নিজেদের এই অমূল্য সময়কে হেলায় অপব্যয় করে। তাই বাবা বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন - তোমরা কেবল নিজের প্রতি লক্ষ্য রাখো, নিজেরা কি করছো। বাবা তো খুব সংক্ষেপে মাত্র একটি শব্দের যুক্তি বলে দিচ্ছেন - 'মন্মনাভব'! এখানে বসেই তোমাদের মন-বুদ্ধিতে সমগ্র সৃষ্টি-চক্র কি সুন্দর ভাবে ঘোরাতে পারো তোমরা। তোমরা বি.কে.-রাই আবার সমগ্র বিশ্বকেও শৃঙ্গার করাও। অতএব তোমরা কত পদ্মাপদম্ লক্ষ-কোটিগুণ ভাগ্যশালী। এখানে বসেই তোমরা কত মহান কার্য করো। যার জন্য কোনও হাত-পায়ের কসরতও করতে হয় না তোমাদের। কেবলমাত্র মন-বুদ্ধিতে সংকল্প করলেই তা কার্যকরী হয়। তাই তো তোমরাও বলো- এখানে বসেই সমগ্র বিশ্বের মহান থেকে মহানতর শৃঙ্গার একমাত্র বি.কে.-রাই করতে পারে। অতএব এই "মন্মনাভব" মন্ত্র কতই না উন্নত। এইভাবে যোগযুক্ত হতে পারলেই তোমাদের পাপগুলিও ভস্ম হয় এবং তোমরাও সৌম্য হতে হতে কি সুন্দর সুশোভন হয়ে ওঠো। যদিও এখনও তোমাদের আত্মা কিছুটা পতিত অবস্থায়। তাই নিজেদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো, তোমাদের সেই কদর্য ভাবকে। যা একদা কতই না সৌম্য ও সুন্দর ছিলো, কিন্তু আজ তার কি কদর্য অবস্থা। অবশ্য এখন আবার তোমাদের আত্মা আর কায়া উভয়ই পবিত্র হতে হতে কাঞ্চন হয়ে যাবে। সত্যি কি আশ্চর্যের ! অতএব তেমনই আগ্রহের সাথে নিজেদের শৃঙ্গার করে দৈবীগুণ গুলি ধারণ করতে হবে। বাবা তো সব বাচ্চাদেরকে একই দিশা দেখান- "আল্ফ আর বে" (আল্লাহ আর বাদশাহী) ! কিন্তু শৃঙ্গারের ক্ষেত্রে কেবল পরমাত্মা 'অল্ফ'-এর বিষয়। অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে এক নাগাড়ে যদি বাবাকে স্মরণ করতে থাকো, তাতেই তোমাদের সর্বপ্রকার শৃঙ্গার পুরো হয়ে এক অপূর্ব পরিবর্তন আসবে তোমাদের মধ্যে ।
বাচ্চারা, বাবার থেকেও বড় জাদুকর তোমরা। বাবা তোমাদের যুক্তি বুঝিয়ে দেন যে, এমন ভাবে এইসব করতে পারলে তোমাদের সেই শৃঙ্গার হবে। নিজেরা যদি নিজেদের শৃঙ্গার তেমন ভাবে না করো, তবে তো সেই অবহেলায় নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করবে। একথা তো অবশ্যই বুঝতে পারো। ভক্তি-মার্গে থাকাকালীন তোমরা কত কিছুই না করেছো, সেইসব শৃঙ্গারে তোমরা নিজেরাই নিজেদের কতই না ক্ষতি করেছো। একদা কি ছিলে আর আজ কি হয়েছো ! অবশ্য এখন কেবলমাত্র একটি শব্দে বাবাকে স্মরণ করলেই তোমাদের এই অলৌকিক শৃঙ্গার হয়ে যায়। বাবা বাচ্চাদেরকে কত সহজ-সরল ভাবে তা বুঝিয়ে কত সতেজ করো দেন । বাচ্চারা, তোমরা যখন এখানে এসে বসো, তখন তোমরা কি করো ? --এখানে বসে তোমরা স্মরণের যাত্রা করো। কিন্তু কারও মনে যদি এদিক-ওদিকের খেয়াল আসে, তবে কি আর তা শৃঙ্গার হয় ! নিজেকে যেমন শৃঙ্গার করতে হবে তেমনি অন্যকেও সেই দিশা দেখাতে হবে। বাবা আসেন-ই তোমাদেরকে তেমন ভাবে শৃঙ্গার করে সৌম্য সুন্দর বানাতে। শিববাবা, সত্যিই কি আশ্চর্য আপনার কর্ম-কর্তব্য, আপনি আমাদের এত সুন্দর করে জ্ঞান আর যোগ শিখিয়ে সুসজ্জিত করেন ! উঠতে-বসতে-চলতে-ফিরতে আমাদের নিজেদের শৃঙ্গার নিজেকেই করতে হবে। কেউ কেউ আবার নিজেদের শৃঙ্গার যেমন করে, তেমনি অপরের শৃঙ্গারও করে। তবে এমনও অনেকে আছে, সে যেমন নিজের শৃঙ্গার করে না আবার অপরের শৃঙ্গারে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে থাকে। বাজে কথা শুনিয়ে অপরের শৃঙ্গারের স্থিতিকে নষ্ট করে দেয়। নিজে যেমন শৃঙ্গার থেকে বঞ্চিত হয়, অপরকেও তা থেকে বঞ্চিত করায়। অতএব খুব মনোযোগ সহকারে শুনে নিজের মন-বুদ্ধিতে তা বিচার করবে বাবা কি কি যুক্তিগুলি জানাচ্ছেন৷ ভক্তি-মার্গের শাস্ত্রগুলিতে এইসব যুক্তিগুলি পাবে না কোথাও। শাস্ত্র ইত্যাদি তো কেবল ভক্তি-মার্গের জন্য। লোকেরা যখন বলবে- বি.কে.-রা শাস্ত্র ইত্যাদি মানে না কেন ? প্রত্যুত্তরে তাদেরকে বলবে, যুক্তিযুক্ত যা কিছুই আছে, সবকিছুই মানে বি.কে.-রা। অর্ধকল্প তো ভক্তি-মার্গেই ছিলাম, এতদিন তো শাস্ত্রই অধ্যায়ন করে এসেছি, শাস্ত্রকে তো অস্বীকার করছি না। যদিও এই ভক্তিমার্গ আর জ্ঞানমার্গের মধ্যে রাত-দিনের তফাৎ। যেমন প্রতিদিনই আমরা দেখি রাত আর দিনকে। তেমনই জ্ঞানমার্গ হলো অসীমের দিনের আলোর মতো আর ভক্তিমার্গ হলো অসীমের রাত অর্থাৎ অন্ধকার। অতএব দুটোকেই যে মানতে হয়।
বাবা বলেন - মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, তোমরা নিজেদের শৃঙ্গারে মনোযোগ দাও। মহা মূল্যবান এই সময়ের অপচয় কোরো না মোটেই৷ অবশিষ্ট সময় আর অল্পই আছে। অতএব তোমাদের বুদ্ধিও যেন বিশাল হয়। নিজেদের মধ্যে যেন খুব সুন্দর প্রেম-সদ্ভাব বজায় থাকে। সময়ের অপব্যবহার একেবারেই করবে না, যেহেতু সময় তোমাদের জন্য মহা মূল্যবান। তোমরা বি.কে.-রাই কানাকড়ি তুল্য থেকে হীরের মতন অমূল্য হয়ে ওঠো। অযথাই এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ শুনছো না তোমরা। এই বিশেষ জ্ঞান তো আর কোনো ধর্মীয় গল্প-গাঁথা নয়। একমাত্র এই বাবা-ই তা শোনাতে পারেন। বুদ্ধিমান জ্ঞানী-গুণীরা তো আর বেশী কিছু বলেন না। একমাত্র এই বাবা-ই যিনি সেকেন্ডেই জীবন মুক্তির দিশা দেখাতে পারেন। এই যে লক্ষ্মী-নারায়ণের চিত্র, যাকে লোকেরা এত ভক্তি ভরে পূজার্চনা করে, তাদেরকে এমন সুন্দর করে শৃঙ্গার করিয়েছে কে ? - যিনি সুন্দরতমের থেকেও অতি সুন্দর করে শৃঙ্গার করাতে পারেন, তিনি একমাত্র এই বাবা। আর তাই তো ওনারা এমন সুন্দর লক্ষ্মী-নারায়ণ হতে পেরেছেন, যাকে আজও সবাই পূজা করে। যে যত উন্নত স্তরের, তার মন্দিরও তত উঁচু এবং তার শৃঙ্গারও ততোধিক সুন্দর। পূর্বে এইসব দেবতাদের চিত্রগুলিতে হীরের হারও পড়ানো হতো। সেসবের অনুভব আছে ব্রহ্মাবাবার। তিনি নিজেও হীরের হার বানিয়েছিলেন লক্ষ্মী-নারায়ণের জন্য। বাস্তবে, ওনার মতন এমন নিখুঁত কারিগরি আর কেউই ছিল না। তোমরা বি.কে.-রাও এখন তেমনই কারিগর হয়ে উঠছো, অবশ্য নিজেদের পুরুষার্থ অনুসারেই।
আবারও বাবা বলছেন- বাচ্চারা, তোমরা নিজেদের সময়ের অপচয় যেমন করবে না, তেমনি অন্যের সময়েরও যেন অপচয় না হয় তোমাদের কারণে। বাবা যেসব যুক্তিগুলো বলেন, তা তো খুবই সহজ-সরল। বাবাকে স্মরণ করলেই পাপ ভস্ম হয়ে যায়। এই স্মরণের যোগ ছাড়া যে শৃঙ্গার হয় না। তোমাদের যে লক্ষ্মী-নারায়ণের মতনই হতে হবে। আর সেই কারণেই দৈবী স্বভাবগুলি ধারণ করতেই হবে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তোমাদের মধ্যে অনেকেই পাথরের মতন বুদ্ধি অর্থাৎ নির্বোধ হওয়ার কারণে সবাইকে তা বোঝাতে হচ্ছে। অথচ মূল ব্যপারটা কিন্তু এক সেকেন্ডের। এবার বাবা বলছেন- মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, তোমরা তোমাদের অতি আপন এই বাবাকে ভুলে যাওয়ার কারণেই, শৃঙ্গার নষ্ট হয়ে যায়। তাই তো বাবা জানাচ্ছেন- চলতে, ফিরতে, উঠতে, বসতে শৃঙ্গার করতেই থাকো। কিন্তু মায়া-ও কম যায় না। কোনও কোনও বাচ্চা যেমন লিখে জানায়- বাবা, আপনার মায়া আমাদের খুবই জ্বালাতন করে। উত্তরে বাবা জানান- আরে, মায়া আবার আমার হলো কি প্রকারে ? মায়া তো এই অবিনাশী নাটকের চিত্রনাট্যের অংশ বিশেষ। আমার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্যই হলো তোমাদেরকে মায়ার হাত থেকে বাঁচানো। সেক্ষেত্রে আমার মায়া হয় কি প্রকারে ? বর্তমান সময়কালটা যে সর্বত্রই মায়ার রাজত্ব। যেমন রাত আর দিনের উপর কারও কর্তৃত্ব চলে না, তেমনই এই রাজত্ব চলে অসীমের রাত আর দিনের হিসাবে। এক সেকেন্ডের হের-ফের হয় না এতে। বাচ্চারা, পুরুষার্থের ক্রমিক অনুসারে তোমরাও নিজেদেরকে ঠিক তেমন ভাবেই শৃঙ্গার করে চলেছো। বাবা বলেন - চক্রবর্তী রাজা হতে চাইলে নিজেদের স্ব-দর্শণ চক্রকে সর্বদাই ঘোরাতে থাকো। যদিও ঘর-গৃহস্থে থেকেও মন-বুদ্ধিতে এসব রেখেই যাবতীয় কর্ম-কর্তব্য করতে হবে। আত্মাতেই যে মন-বুদ্ধির অবস্থান। অবশ্য এখানে বর্হিজগতের কোনও কিছুই করতে হয় না তোমাদের। তোমরা এখানে আসো নিজেদেরকে শৃঙ্গার করে সতেজ হওয়ার জন্য। অর্থাৎ 'রিফ্রেশ হোমে'। বাবা সবাইকে একই পদ্ধতিতে একই পাঠ পড়ান। এখানে বাবার সম্মুখে এলেই রোজই নতুন নতুন পয়েন্ট শুনতে পাও, তারপর বাড়িতে ফিরতে ফিরতেই মাথা থেকে সব কিছুই বেরিয়ে যায় - যা বাবার কাছ থেকে শুনেছিলে। এখান থেকে বেরোতে না বেরোতেই সেই বুদ্ধির ঝুড়ি আবার খালি হয়ে যায়। ফলে যা কিছু শুনলে, তার মনন-চিন্তন-মন্থন আর হয়ে ওঠে না। এখানে অনেক জায়গা আছে যা শান্ত পরিবেশ, সেখানেও বসতে পারো তোমরা। বাইরে তো কেবল ছারপোকার সমাবেশ, একে অপরের সাথে মারপিট করে রক্ত পান করতেই ব্যস্ত তারা।
এভাবে বাবা বাচ্চাদের বোঝাতেই থাকেন - "বাচ্চারা, তোমাদের জন্য এই সময়টা খুবই মূল্যবান। অতএব, সময়ের অপচয় কোরো না মোটেই। নিজেদেরকে শৃঙ্গার করার জন্য অনেক প্রকার যুক্তিই তো পেলে তোমারা। আমি এসেছি সবাইকে উদ্ধার করার জন্য। আমার আসার কারণ-ই হলো, তোমাদেরকে বিশ্বের বাদশাহী প্রদান করা। সুতরাং এখন থেকে তোমরা লাগাতার একমাত্র আমাকেই স্মরণ করতে থাকো, সময়ের অপচয় কোরো না। যাবতীয় কর্ম-কর্তব্য করার সাথে সাথে বাবাকেও স্মরণ করতে থাকো। এত সব আত্মাধারী প্রিয়তমাদেরই (আশিক) এই এক ও একমাত্র প্রিয়তম (মাশুক) হলেন পরমপিতা পরমাত্মা।" যদিও জাগতিক অনেক প্রকার গল্প-গাঁথা ইত্যাদির কথা শোনায় লোকেরা। বাবা বলছেন- "এখন সে সবকিছুই ভুলে যাও তোমরা। ভক্তিমার্গে থাকাকালীন এই তোমরাই আমাকে কত স্মরণ করেছো, এবং অনেক প্রতিজ্ঞাও করেছো - বাবা আমরা তো আপনারই একান্ত-আপন, একমাত্র আপনার হয়েই থাকবো আমরা। এত অনেক সংখ্যার প্রেমিকাদের (আত্মাদের) এই এক ও একমাত্র প্রিয়তম হলেন - শিববাবা। ভক্তি-মার্গের লোকেরা যে বলে থাকে, আত্মা ব্রহ্মে লীন হয়ে যায় - তা একেবারেই বাজে কথা। কোনও মানুষেরই মোক্ষ প্রাপ্তি হয় না। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এটা একটা অবিনাশী নাটক। সবাই এখানে নিজ-নিজ কর্মফল অনুযায়ী নিজেদের কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করতে আসে এবং তাতে বিন্দুমাত্রও তফাত হয় না। বাবা জানাচ্ছেন- তাই কেবলমাত্র এই এক ও একমাত্র 'অল্ফ' - কে(পরমাত্মা) স্মরণ করতে পারলেই তোমাদের শৃঙ্গার হয়ে যায়। তোমরা এখন তেমনই শৃঙ্গার করে চলেছো। এখনও তোমাদের সুপ্ত-স্মৃতিতে তা আছে- অনেক বারই এমন ভাবেই তোমরা সুসজ্জিত হয়েছো। বাচ্চারা, এই তোমরাই বলেছিলে- বাবা, প্রতি কল্পেই যেন ঠিক এমন ভাবেই তুমি আসবে আর আমরা আত্মাধারীরাও ঠিক এমন ভাবেই তোমার (অর্থাৎ পরমাত্মার) কাছ থেকে আবারও তা শুনবো। কত গুহ্য রহস্যময় পয়েন্ট এগুলি। বাবা স্বয়ং কত সুন্দর যুক্তি দিয়ে সহজ-সরল পদ্ধতিতে তা বুঝিয়ে দেন। তাই তো এমন বাবার প্রতি পূর্ণ রূপে সমর্পিত হতে হয়। জাগতিক প্রেমিক-প্রেমিকারা সবাই একই প্রকারের হয় না। কিন্তু অসীমের এই এক ও একমাত্র পরমাত্মা প্রেমিক বাবা, সব আত্মাধারী প্রেমিকার জন্য একই প্রকার। যা জাগতিক কোনও বিষয় নয়। আর তা ঘটে একমাত্র এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই, যখন বাবার কাছ থেকে সেইসব যুক্তিগুলি পাওয়া যায়। তাই, যেখানেই যাও না কেন তোমরা, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরা-ফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি যে কোনও কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকায় ব্যস্ত থাকো না কেন, নিজেকে সর্বদাই শৃঙ্গার করতে থাকবে। সব আত্মারাই যে সেই এক প্রেমিক পরমাত্মার প্রেমিকা। ব্যস্, কেবলমাত্র ওঁনাকেই স্মরণ করতে থাকো।
কোনও কোনও বাচ্চা আবার বাবাকে বলে- আমি তো ২৪-ঘন্টাই পরমাত্মাকে স্মরণ করি। কিন্তু বাস্তবে তো তা সম্ভব নয়, ২৪-ঘন্টাই স্মরণে থাকা। খুব বেশী হলে তা দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। এর থেকে বেশী লিখলে বাবা তা মানেন না। বাচ্চারা, তোমরা যদি অন্যদেরকেও তা স্মরণ করাতে না পারো, তবে কিভাবে বাবা ভাববেন যে তোমরা বাবাকে স্মরণ করছো ? এটা তো কোনও কষ্টসাধ্য কাজ নয় ! এর জন্য কোনও খরচাপাতিও লাগে না। একেবারেই কিছু লাগে না। কেবলমাত্র বাবাকে স্মরণ করতে থাকো আর নিজেদের পাপের বোঝা ভস্ম করে হাল্কা হতে থাকো। যার জন্য প্রয়োজন দৈবী-গুণগুলি ধারণ করা। যারা পতিত, তারা না পারবে শান্তিধামে পৌঁছাতে আর না পারবে সুখধামে যেতে। তাই বাবা বলছেন- বাচ্চারা, নিজেদেরকে আত্মা স্বরূপে ভাই-ভাই ভাবো। তোমাদের ৮৪-জন্মের কর্ম-কর্তব্য ভূমিকার সম্পূর্ণ এই জন্মটাই। এই পুরোনো শরীরকে এবার ছাড়তে হবে। একবার ভাবো, এই অবিনাশী নাটক কিভাবে বানানো হয়েছে। অবশ্য তা তোমরা বুঝতে পারবে যার যার নিজেদের পুরুষার্থের ক্রমানুসারে। দুনিয়ায় কেউই এসবের কিছুই বোঝে না। প্রত্যেকেই নিজেদের কাছে জানতে চাও- তোমরা নিজেরা কি সম্পূর্ণভাবে বাবার শ্রীমত অনুসারে চলছো ? শ্রীমত অনুসারে চললে, তবেই তো নিজেদের শৃঙ্গার ভালো হবে। একে অপরকে উল্টো-পাল্টা শুনিয়ে কিম্বা শুনে নিজেদের শৃঙ্গারকে যেমন নষ্ট করে দাও, তেমনি আবার অপরের শৃঙ্গারকেও নষ্ট করে দাও। বাচ্চাদের কেবল এই নেশার ঘোরই থাকা উচিত, কিভাবে নিজেরা শৃঙ্গারধারী হয়ে উঠবে। এছাড়া অন্য সবকিছুই তো ঠিকঠাকই আছে তোমাদের। পেট পালনের জন্য কয়েকটা রুটির জোগাড় তো অনায়াসেই হয়ে যাবে। পেট আর কতটুকুই বা খায়। যদিও তোমরা এক বিশেষ প্রকারের সন্ন্যাসী কিন্তু তার সাথে সাথে আবার রাজযোগীও বটে। অর্থাৎ না অতি উচ্চ স্তরের আর না তো নিম্ন স্তরের। খাওয়া-দাওয়া তো করবেই কিন্তু কোনও খাবারের প্রতিই যেন স্বভাবে আসক্তি না আসে। একথাই তোমরা একে অপরকে স্মরণও করাবে- শিববাবা স্মরণে আছে তো ? বাবার অবিনাশী উত্তরাধিকারের কথা মনে আছে তো ? সমগ্র বিশ্বের বাদশাহী পাবার শৃঙ্গারকে স্মরণে আছে তো ? এবার নিজেই ভেবে দেখো, এখানে বসেই তোমরা কি অমূল্য সম্পদ অর্জন করছো। যে অর্জনের দ্বারা তোমরা অপার সুখের অধিকারী হতে পারো। কেবলমাত্র স্মরণের যাত্রাতেই তোমাদের এই বিশাল প্রাপ্তিযোগ, যার জন্য তেমন কোনও কষ্টও হয় না। অথচ ভক্তি-মার্গে লোকেরা কতই না ঠোকর ও ধাক্কা খায়। বাবা এখন এসেছেন তোমাদেরকে সেই শৃঙ্গার করাতে। সুতরাং তা খুব মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করো। ভুলে যেও না যেন। মায়াই তোমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেয়, ফলে তোমাদের সময়ের অপচয় হয়ে যায়।
বাচ্চারা বর্তমানের এই সময়টা তোমাদের জন্য খুবই মূল্যবান। এই বিশেষ পঠন-পাঠনের বিশেষ পুরুষার্থের দ্বারাই সাধারণ মানুষ কত উন্নত স্তরে পৌঁছে যায়। বাবা কিন্তু তোমাদের আর অন্য কোনও কষ্টের কাজ দেন না। উনি কেবল বলেন, ওঁনাকে স্মরণ করতে। আর এর জন্য কোনও পুঁথি ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে না। বাবাও কি কোনও বই-পুস্তকের ব্যাবহার করেন ? না। তাই বাবা জানাচ্ছেন - উনি এসে এই প্রজাপিতা ব্রহ্মার দ্বারা বি.কে.-দেরকে দত্তক নেন। যেহেতু উনি প্রজাপিতা। যেহেতু এত অনেক সংখ্যায় ('কুখ-বংশাবলী' - কুখ = হিন্দি শব্দ কোখ = গর্ভ) বাচ্চাকে তো শারীরিক ভাবে জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ প্রজারও প্রয়োজন। তাই এভাবে বি.কে.-দেরকে দত্তক নেন ব্রহ্মা। তোমরা অবিনাশী উত্তরাধিকার পাবে কিন্তু (শিব) বাবার কাছ থেকে। বাবা ব্রহ্মার দ্বারা তিনিই বি.কে.-দেরকে দত্তক বানান। সেই কারণেই ওঁনাকে বলা হয় 'মাতা-পিতা'! তোমরা তো জানোই, একেবারে সঠিক সময়েই বাবা আসেন এখানে। ওঁনার আসা ও ফিরে যাওয়া একেবারেই সঠিক সময় অনুসারেই। জাগতিক দুনিয়ার পরিবর্তন তো হতেই থাকে। বাবা কত সুন্দর ভাবে তোমাদেরকে প্রাজ্ঞ বুদ্ধিধারী করে গড়ে তোলেন বি.কে.-দেরকে। অতএব এমন বাবার শ্রীমত অনুসারে অবশ্যই চলা উচিত। এই বিশেষ পাঠের স্টুডেন্ট যারা, পাঠের বিষয়-বস্তুগুলিকে নিজেদের বুদ্ধিতে ধারণ করে, তার মনন-চিন্তন-মন্থন চালাতে হবে সারাদিন ধরে। এই সংস্কার নিয়েই যে যেতে হবে তোমাদের। যেমন পরমাত্মা বাবার কাছে ওঁনার নিজের সংস্কার থাকে, তেমনি তোমাদের আত্মাতেও নিজের নিজের সংস্কার ভরা থাকে। এরপর আবার যখন আসবে, তখন সেই সংস্কার নিয়ে কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করবে। অবশ্য এসবই হবে যার যার নিজের নিজের পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে। সুতরাং তোমরা নিজেরাই নিজের মনের কাছে জানতে চাও - নিজেদেরকে শৃঙ্গার করার লক্ষ্যে কে কতটা পরিমাণে পুরুষার্থ করছো। নিজেদের এই অমূল্য সময়কে নষ্ট করে দিচ্ছো না তো ? বাবা তো সতর্ক করতেই থাকেন- "অযথা বহির্জগতের বাতাবরণে মিশে গিয়ে নিজের সময়ের অপচয় কোরো না।" একমাত্র বাবার শ্রীমতকেই স্মরণ ও ধারণ করতে থাকবে। মনুষ্য-মত অবশ্যই বর্জণ করবে। তোমরা তো একথাও জানতে না, বর্তমানে তোমরা এক অতি পুরানো দুনিয়ায় অবস্থান করছো। বাবার কাছ থেকেই তোমরা তা জানতে পারছো, পূর্বে কি ছিলে তোমরা। বর্তমানের এই পুরাতন দুনিয়া যে অপার দুঃখের দুনিয়া। এখানেই তোমাদের কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করতে হয় অবিনাশী ড্রামার চিত্রপট অনুসারে। তোমাদের যা কিছু বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, তা হয় ড্রামা অনুসারেই। তাই তো বাবা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে বলছেন -বাচ্চারা, এই অবিনাশী ড্রামার চিত্রনাট্য 'জ্ঞান' আর 'ভক্তির' একটা খেলা মাত্র। খুবই চমৎকার এই ড্রামা। এত ক্ষুূদ্র আত্মার মধ্যে সমগ্র কল্পের অবিনাশী ভূমিকা ভরা আছে আত্মায়, যা নিরন্তর চলতেই থাকে। *আচ্ছা !*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. অন্য সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রেখে কেবলমাত্র এই নেশাতেই মগ্ন থাকতে হবে যে, আমিও কিভাবে লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন নিজেকে সুসজ্জিত (শৃঙ্গারধারী) করতে পারবো ?
২. নিজের প্রতি এই প্রশ্নগুলি করতে হবে :-(ক) আমি কি শ্রীমত অনুসারে চলে 'মন্মনাভব'-র চাবি দ্বারা নিজের শৃঙ্গার ঠিকঠাক ভাবে করছি ? (খ) উল্টো-পাল্টা কথাবার্তা শুনে বা শুনিয়ে শৃঙ্গারের স্থিতি নষ্ট করছি না তো ? (গ) প্রেম ও সদ্ভাবের স্বভাব নিয়ে সবার সাথেই মিলেমিশে আছি তো ? নিজের এই অমূল্য সময়কে কোথাও অপচয় করছি না তো ? (ঘ) দৈবী-গুণগুলি কি নিজের স্বভাবে ধারণ করতে পেরেছি ?
বরদান:-
স্ব-পরিবর্তনের দ্বারা বিশ্ব-পরিবর্তনের কার্যে ব্রতী হয়ে মনের মতন সফলতা প্রাপ্ত করে সিদ্ধি-স্বরূপ হও
বি.কে.-রা প্রত্যেকেই স্ব-পরিবর্তনের দ্বারা বিশ্ব-পরিবর্তনের সেবায় রত। সবার মনেই এই উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ভরপুর যে, বর্তমানের এই পৃথিবীর পরিবর্তন আনতেই হবে আর তা নিশ্চয়ও রয়েছে - পরিবর্তন হবেই হবে। যেখানে এমন দৃঢ় প্রত্যয় - সেখানেই তো উৎসাহ-উদ্দীপনা। স্ব-পরিবর্তনের দ্বারাই বিশ্ব-পরিবর্তনের এই কার্যেই মনের মতন সফলতা প্রাপ্ত হয়। আর তখনই সেই সফলতা আসে, যখন একই সময়ে একসাথে তিনটি অর্থাৎ বৃত্তি, ভাইব্রেশন আর বাণী শক্তিশালী হয়।
স্লোগান:-
কথায় মধ্যে যদি স্নেহ আর সংযম থাকে, তবেই সেই বাণীতে এনার্জি জমা হয়।