04.09.2019 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা -- তোমরা হলে ধরনীর চৈতন্য নক্ষত্র, তোমাদের-কেই সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করতে হবে"

প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা, শিববাবা তোমাদের কায়া(শরীর) কিভাবে কাঞ্চনে (পবিত্র) পরিণত করেন ?

উত্তরঃ -
ব্রহ্মা মায়ের দ্বারা তোমাদের জ্ঞান-দুগ্ধ পান করিয়ে তোমাদের কায়া কাঞ্চনে(পবিত্র) পরিণত করে দেন, তাই তো তাঁর মহিমা-কীর্তন করা হয়, 'ত্বমেব মাতাশ্চ পিতা ত্বমেব......'। এখন তোমরা ব্রহ্মা মায়ের দ্বারা জ্ঞান-দুগ্ধ পান করছ, যার ফলে তোমাদের সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়ে যাবে। তোমরা কাঞ্চনে (পবিত্রস্বর্ণে) পরিণত হয়ে যাবে।

ওম্ শান্তি ।
আত্মাদের(রুহানী) পিতা বসে বোঝান, যেমন আকাশে নক্ষত্র রয়েছে তেমনই তোমাদের অর্থাৎ বাচ্চাদের উদ্দেশ্যেও গাওয়া হয় -- এরা ধরনীর নক্ষত্র। তাদের অর্থাৎ নক্ষত্রদেরও নক্ষত্র-দেবতা বলা হয়। কিন্তু তারা তো কোনো দেবতা নয়। তোমরা ওদের থেকে মহা বলবান। কারণ নক্ষত্র-রূপী তোমরা সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত কর। তোমরাই দেবতা হবে। তোমাদেরই উত্থান আর পতন হয়। তারা তো শুধু ব্রহ্মান্ডকে আলোকিত করে, তাদের কেউ দেবতা বলে না। তোমরাই দেবতা হচ্ছো। তোমরা সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করবে। এখন সমগ্র বিশ্বই ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন। প্রত্যেকেই অপবিত্র হয়ে পড়েছে। এখন বাবা তোমাদের অর্থাৎ মিষ্টি বাচ্চাদের দেবতা বানাতে আসেন। মানুষ তো সবকিছুকেই দেবতা মনে করে নেয়। এমনকি সূর্যকেও দেবতা বলে। কোথাও-কোথাও সূর্য-চিহ্নের পতাকাও উত্তোলন করে। আর নিজেদের সূর্যবংশীয় বলে। বাস্তবে তো তোমরাই সূর্যবংশী, তাই না। বাচ্চারা, তাই বাবা বসে তোমাদের বোঝান। ভারতই এখন ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন। এখন ভারতেই আলোর প্রয়োজন। বাচ্চারা, বাবা তোমাদেরকে জ্ঞান-অঞ্জন লাগিয়ে দিচ্ছেন। তোমরা অজ্ঞানতার নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলে, বাবা এসে তোমাদের পুনরায় জাগরিত করছেন। তিনি বলেন, ড্রামা প্ল্যান অনুসারে প্রতি কল্পের পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে আমি পুনরায় আসি। এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগের কথা কোনো শাস্ত্রে নেই। বাচ্চারা, এই যুগকে এখন কেবল তোমরাই জানো, কারণ নক্ষত্র-রূপী তোমরাই পুনরায় দেবতা হও। তোমাদেরই বলা হয় নক্ষত্র দেবতায় নমঃ। এখনই তোমরা পূজারী থেকে পূজ্য হচ্ছো। সেখানে তোমরা পূজ্য হয়ে যাও। এও তো বুঝতে হবে, তাই না। একে আধ্যাত্মিক পড়া(জ্ঞান) বলা হয়। এখানে কখনো কারোর মধ্যে লড়াই হয় না। টিচার সাধারণভাবে পড়ান আর বাচ্চারাও সাধারণ রীতিতে পড়ে। এখানে লড়াইয়ের (যুদ্ধ) কোনো প্রশ্নই ওঠে না। উনি কি এমনভাবে বলেন যে, আমি ভগবান, না বলেন না। বাচ্চারা, একমাত্র তোমরাই জানো যে, শিক্ষাদাতা হলেন নিরাকার (ইনকরপরিয়াল) শিববাবা। ওঁনার নিজস্ব শরীর নেই। তিনি বলেন, আমি এই রথকে ধার (লোন) হিসাবে নিই। ভাগীরথ কেন বলা হয় ? কারণ তিনি অত্যন্ত ভাগ্যশালী রথ। ইনিই পুনরায় বিশ্বের মালিক হন। তাহলে ভাগীরথই তো হলো, তাই না। তাই সবকিছুর অর্থ বুঝতে হবে, তাই না। এ হলো সর্বাপেক্ষা বৃহৎ জ্ঞান। দুনিয়ায় তো সব মিথ্যাই মিথ্যা, তাই না। কথিতও তো রয়েছে না --- সত্যের তরী হেলে-দোলে কিন্তু ডোবে না। আজকাল তো অনেকপ্রকারের ভগবান বেরিয়ে গেছে। নিজেকে তো বলেই, আবার নুড়ি-পাথরেও ভগবান আছে বলে দেয়। ভগবানকে চতুর্দিকে কত ছড়িয়ে দিয়েছে। বাবা বসে বোঝান, যেমন লৌকিক পিতাও বাচ্চাদের বোঝান, কিন্তু তিনি(লৌকিক পিতা) এমন হন না। যিনি বাবাও, টিচারও আবার তিনি গুরুও। প্রথমে বাবার কাছে জন্ম নেয়, একটু বড় হলে আবার টিচারও চাই পড়ানোর জন্য। আবার ৬০ বছর পর গুরুও চাই। ইনি তো হলেন একজনই, তিনি একাধারে পিতা, শিক্ষক সতগুরু। তিনি বলেন, আমি তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদের পিতা। পড়েও তো আত্মা। আত্মাকে তো আত্মাই বলা হয়। এছাড়া শরীরের তো বহু নাম রয়েছে। খেয়াল কর (ভেবে দেখ) এ হলো অসীম জগতের ড্রামা, যা পূর্ব-নির্ধারিত সেটাই রিপীট হচ্ছে....এ কোনো নতুন কথা নয়। এ হলো অনাদি পূর্ব-নির্ধারিত ড্রামা, যা আবর্তিত হতেই থাকে। সকল আত্মাই যখন হলো (ড্রামার) অভিনেতা। আত্মারা কোথায় থাকে ? বলে যে, আমরা নিজেদের গৃহ, পরমধামে থাকি আবার আমরা এখানে (সাকারলোকে) আসি। অসীম জগতের ভূমিকা(পার্ট) পালন করতে। বাবা তো সদা ওখানেই থাকেন। তিনি পুনর্জন্মে আসেন না। এখন তোমাদের রচয়িতা বাবা, তাঁর নিজের এবং রচনার সারমর্ম শোনান। *তোমাদেরকে বলেন, বাচ্চারা তোমরাই হলে স্বদর্শন-চক্রধারী। এর অর্থ আর কেউ-ই বুঝতে পারে না। কারণ তারা তো মনে করে স্বদর্শন চক্রধারী হলো বিষ্ণু, তাই তারা প্রশ্ন করে, কেন একথা আবার মনুষ্যদের উদ্দেশ্যে বলা হয় ? একথা একমাত্র তোমরাই জানো। যখন শূদ্র ছিলে তখনও মনুষ্যই ছিলে, এখন ব্রাহ্মণ হয়েছ এখনও মনুষ্যই রয়েছ আবার যখন দেবতা হবে তখনও মনুষ্যই থাকবে, কিন্তু শুধু চরিত্র বদলে যাবে। যখন রাবণ(বিকার) আসে তখন তোমাদের চরিত্র কত নষ্ট হয়ে যায়। সত্যযুগে এই বিকার থাকেই না*।

বাচ্চারা, এখন বাবা তোমাদের অমরকথা শোনাচ্ছেন। ভক্তিমার্গে তোমরা কত কথা শুনেছ। কথিত আছে, অমরনাথ পার্বতীকে কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে(পার্বতী) তো শঙ্করই কথা শোনাবে, তাই না। শিব কিভাবে শোনাবে ! কত অসংখ্য মানুষ যায় শুনতে। এ হলো ভক্তিমার্গের কথা, বাবা বসে বাচ্চাদের বোঝান। বাবা এমন কখনও বলেন না যে -- ভক্তি করা খারাপ। না, এ তো হলো ড্রামা যা অনাদি, এও বোঝান হয়, এখন বাবা বলেন যে, প্রথমত, নিজেকে আত্মা মনে কর। মুখ্যকথাই হলো এটা। ভগবানুবাচ -- "মনমনাভব" । এর অর্থ কি ? একথা বাবা বসে মুখ দ্বারা শোনান তাহলে ইনি(ব্রহ্মা) হলেন গোমুখ। এও বোঝান হয় 'ত্বমেব মাতাশ্চ পিতা...... ' -- এ ওঁনার উদ্দেশ্যেই বলা হয়। এই মাতার (ব্রহ্মা) দ্বারাই তোমাদের অ্যাডপ্ট (দত্তক নেওয়া) করেন। শিববাবা বলেন, এই মুখ দ্বারা তোমাদের সকলকে জ্ঞান-দুগ্ধ পান করাই আর তাতে তোমাদের যে পাপ বাকি রয়ে গেছে, তা ভস্মীভূত হয়ে যায়। তোমাদের আত্মা কাঞ্চনে (পবিত্র) পরিণত হয়। আর কায়াও কাঞ্চন-তুল্য পাওয়া যায়। আত্মারা সম্পূর্ণ পবিত্র কাঞ্চন-সম হয়ে যায় এবং পুনরায় ধীরে-ধীরে সিড়ি নামতে থাকে। এখন তোমার বুঝে গেছ যে, আমরা অর্থাৎ আত্মারাও কাঞ্চন-সম ছিলাম, আর শরীরও কাঞ্চন-সম ছিল, পুনরায় ড্রামা অনুসারে আমরা ৮৪-র চক্রতে আসি। এখন আর কাঞ্চন-সম নেই। এখন ৯ ক্যারেট বলা হবে, অল্প পারসেন্টেজ রয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা যাবে না। এর কিছু না কিছু রয়ে যায়। বাবা এই চিহ্নের কথাও বলেছেন। লক্ষ্মী-নারায়ণের চিত্র হল নম্বর ওয়ান। এখন তোমাদের বুদ্ধিতে সমগ্র চক্রই (জ্ঞান) এসে গেছে। বাবার পরিচয়ও এসে গেছে। যদিও তোমাদের আত্মা এখনও সম্পূর্ণরূপে শোনায় (পবিত্র) পরিণত হয়নি, কিন্তু বাবার পরিচয় তো বুদ্ধিতে রয়েছে, তাই না। বাবা কাঞ্চন-সম হওয়ার যুক্তি বলেন। আত্মায় যে খাদ পড়ে রয়েছে তা কিভাবে বের করা যাবে ? তারজন্য চাই স্মরণের যাত্রা। একে বলা হয় যুদ্ধক্ষেত্র। তোমরা প্রত্যেকেই হলে যুদ্ধের ময়দানের (এক-একজন) স্বাধীন যোদ্ধা। তাই এখন প্রত্যেকেই যত চাও তত পুরুষার্থ করতে পারো। পুরুষার্থ করাই হলো স্টুডেন্টদের কাজ। যেখানেই যাও, একে-অপরকে সাবধান কর -- "মনমনাভব" । শিববাবা স্মরণে রয়েছে তো ? একে-অপরকে সেই ইঙ্গিতই (স্মরণ করানো) দিতে থাকো। বাবার পড়াও হলো ইশারা, তবেই তো বাবা বলেন, এক সেকেন্ডে কায়া কাঞ্চনে পরিণত হয়ে যায়। আমি বিশ্বের মালিক বানিয়ে দিই। বাবার বাচ্চা হওয়া অর্থাৎ বিশ্বের মালিক হয়ে যাওয়া। পুনরায় বিশ্বে রাজত্ব করা (বাদশাহী)। তাতে উচ্চপদ অর্জন করা -- সেটাই হলো পুরুষার্থ করা। তাছাড়া জীবনমুক্তি তো হয় এক সেকেন্ডে। এটাই তো সঠিক, তাই না। প্রত্যেককেই নিজস্ব পুরুষার্থ করতে হবে। তোমরা বাবাকে স্মরণ করতে থাকো তাহলেই আত্মা পবিত্র হয়ে যাবে। সতোপ্রধান হয়ে সতোপ্রধান দুনিয়ার মালিক হয়ে যাবে। কতবার তোমরা তমোপ্রধান থেকে পুনরায় সতোপ্রধান হয়েছ ! এই চক্র আবর্তিত হতেই থাকে। এর কখনো অন্ত হয় না। বাবা বসে কত সঠিক রীতি অনুযায়ী বোঝান। তিনি বলেন, আমি প্রতি কল্পে আসি। তোমরা বাচ্চারা আমাকে ছিঃ ছিঃ দুনিয়ায় নিমন্ত্রণ কর। কিভাবে নিমন্ত্রণ কর ? তারা বলে যে, আমরা পতিত হয়ে গেছি, তুমি এসে পবিত্র বানাও। বাহ ! কেমন তোমাদের নিমন্ত্রণ। তোমরা বল যে, আমাদের শান্তিধাম-সুখধামে নিয়ে চল, তাহলে আমি তো তোমাদের আজ্ঞাকারী ভৃত্য(ওবিডিয়েন্ট স্টুডেন্ট)। এও ড্রামারই খেলা। তোমরা জানো -- আমরা প্রতি কল্পে সেই পড়াই পড়ি, আর সেই ভূমিকাই পালন করি। আত্মাই তার (নিজ) ভূমিকা পালন করে। এখানে বসেও বাবা আত্মাদের দেখেন। তিনি নক্ষত্রদের দেখেন। আত্মা কত ছোট। যেন নক্ষত্ররা জ্বল-জ্বল করছে। কোন-কোন নক্ষত্র অতি তীক্ষ্ণ(উজ্জ্বল), কোনটি আবার হাল্কা বা অনুজ্জ্বল। কোনটি আবার চন্দ্রমার অতি নিকটে থাকে। তোমরাও যোগবলের দ্বারা সঠিক রীতি অনুসারে পবিত্রতাকে ধারণ কর, তবেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। বাবাও বলেন, বাচ্চাদের মধ্যে যারা অতি ভাল অর্থাৎ উজ্জ্বল নক্ষত্র তাদেরকে ফুল দাও। বাচ্চারাও তো একে-অপরকে জানে, তাই না। কেউ-কেউ অতি তীক্ষ্ণ হয়, কেউ আবার অতি দুর্বল। সেইসব নক্ষত্রদের দেবতা বলা যেতে পারে না। তোমরাও হলে মানুষ কিন্তু তোমাদের আত্মাকে বাবা পবিত্র বানিয়ে বিশ্বের মালিক করে দেন। উত্তরাধিকারের আশীর্ব্বাদ-স্বরূপ তোমাদের কত শক্তি প্রদান করেন। বাবা তো সর্বশক্তিমান (অলমাইটি), তাই না। বাবা বলেন, বাচ্চারা আমি তোমাদের অনেক শক্তি প্রদান করি। গাওয়াও তো হয়, তাই না --- শিববাবা তুমি তো এখানে বসে আমাদের পড়াশোনা করিয়ে মনুষ্য থেকে দেবতা বানিয়ে দাও, বাঃ ! এমন তো আর কেউ বানায় না। পড়াই হলো উপার্জনের উৎস(সোর্স অফ ইনকাম), তাই না। সমগ্র আকাশ, পৃথিবী ইত্যাদি সবই আমাদের হয়ে যায়। কেউ তা ছিনিয়ে নিতে পারে না। একে বলা হয় সুদৃঢ় অখন্ড রাজ্য। যা কেউ খন্ডিত করে দিতে পারে না। কেউ জ্বালিয়ে দিতে পারে না। এমন বাবার শ্রীমতে তোমাদের চলা উচিৎ, তাই না। প্রত্যেককে তার নিজ পুরুষার্থ করতে হবে।

বাচ্চারা, মিউজিয়াম ইত্যাদি তৈরী করে -- এই চিত্রাদির মাধ্যমে সমগোত্রীয়দের (হামজিন্স) বোঝাও। বাবা ডায়রেক্শন দিতে থাকেন -- যে চিত্রের প্রয়োজন মনে করবে সেটাই তৈরী কর। বুদ্ধি তো সকলেরই কাজ করে। মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই এগুলো তৈরী করা হয়। তোমরা জানো যে, সেন্টারে কেউ এলে, তখন আমরা কি যুক্তি রচনা করব, যার ফলে লোকেরা নিজের থেকে এসেই এই মিষ্টি (জ্ঞান) গ্রহণ করবে ? কারও মিষ্টি (জ্ঞানদান) ভাল হয় তখন আবার (তাদের দ্বারা যারা এর স্বাদগ্রহণ করেছে) অ্যাডভার্টাইজ হয়ে যায়। তখন সকলেই একে-অপরকে বলবে যে, অমুক দোকানে যাও। এ তো অতীব ভাল নম্বর ওয়ান মিষ্টি(জ্ঞান)।এমন মিষ্টি আর কেউ দিতে পারে না। একজন যখন দেখে যায় তখন অন্যদেরও শোনায়। মনে তো থাকে যে সমগ্র ভারত কিভাবে গোল্ডেন এজে (সত্যযুগে) পরিণত হয়, তারজন্য কত বোঝান হয় কিন্তু প্রস্তরবুদ্ধি, তাই পরিশ্রম তো করতে হবে, তাই না। শিকার করাও শিখতে হয়, তাই না। সর্বপ্রথমে ছোট-ছোট শিকার শিখতে হয়। বড় শিকারের জন্য শক্তির প্রয়োজন, তাই না। কত বড়-বড় বিদ্বান-পন্ডিত রয়েছে। যাদের বেদ-শাস্ত্রাদি পড়া রয়েছে। নিজেদের কত বড় অথরিটি মনে করে। বেনারসে এরা কত বড়-বড় উপাধি পায়। তখন বাবা বুঝিয়েছিলেন, প্রথমে বেনারসে সকলকে জড়ো করে সার্ভিস কর। বড়দের(গণ্যমান্যব্যক্তিদের) থেকে যখন আওয়াজ উঠবে তখন অন্যরাও শুনবে। ছোটদের থেকে কেউ শোনে না। এইসব সিংহদের বোঝা উচিত যারা নিজেদেরকে শাস্ত্রের অথরিটি বা শাস্ত্রজ্ঞ মনে করে। কত বড়-বড় উপাধি দেওয়া হয়। শিববাবারও এত উপাধি (টাইটেল) নেই। এ হলো ভক্তিমার্গের রাজ্য, তাই তো পুনরায় হয় জ্ঞানমার্গের রাজ্য। জ্ঞানমার্গে ভক্তি হয় না। ভক্তিতে আবার জ্ঞান একদমই থাকে না। এ'কথা বাবা-ই বোঝান, বাবা দেখেনও এইভাবে, মনে করেন নক্ষত্ররা বসে রয়েছে। দেহ-ভান পরিত্যাগ করা উচিত । যেমনভাবে উপরে( আকাশে) নক্ষত্ররা জ্বল-জ্বল করছে তেমনই এখানেও (আত্মা-রূপী নক্ষত্ররা) জ্বল-জ্বল করছে। কেউ-কেউ অতি তীক্ষ্ণ প্রকাশময়। এঁরাই হলো ধরণীর নক্ষত্র, যাঁদের দেবতা বলা হয়। এ কত বড় অসীম ব্রহ্মান্ড। বাবা বোঝান, ওটা হলো পার্থিব জগতের দিন আর রাত। এ হলো আবার অসীম জগতের আধাকল্প রাত, আধাকল্প দিন। দিনে শুধু সুখই-সুখ। কোথাও ধাক্কা খাওয়ার প্রয়োজনই নেই। জ্ঞানে সুখ, ভক্তিতে দুঃখ রয়েছে। সত্যযুগে দুঃখের নামও থাকে না। ওখানে কাল (অকালমৃত্যু) হয়ই না। তোমরা কালের উপর বিজয়প্রাপ্ত কর। মৃত্যুর নামই থাকে না (যথা সময়ে মৃত্যু হয় বলে মৃত্যু ভয় থাকে না)। ওটা হলো অমরলোক। তোমরা জানো, বাবা আমাদের অমরকথা শোনাচ্ছেন অমরলোকে গমনের জন্য। মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা, এখন প্রথম থেকেই সমগ্র চক্রের জ্ঞান তোমাদের বুদ্ধিতে রয়েছে। তোমরা জানো আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের ঘর হলো ব্রহ্মলোক। ওখান থেকে নম্বরের ক্রমানুসারে (নিজ) ভূমিকা পালন করতে এখানে আসে। সেখানে অসংখ্য আত্মারা রয়েছে, বাবা কী এক-একজনকে আলাদা করে বসে বোঝাবেন, না বোঝাবেন না। তিনি সবকিছু সংক্ষেপে(সারমর্ম) বোঝান। সেখানে অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। বৃক্ষ যখন বৃদ্ধি পায় তখন তার অনেক শাখা-প্রশাখাও বেরোতে থাকে। এমন অনেকেই রয়েছেন যারা নিজেদের ধর্মকেও জানে না। বাবা এসে বোঝান যে, তোমরা আসলে দেবী-দেবতা ধর্মের কিন্তু এখন ধর্মভ্রষ্ট, কর্মভ্রষ্ট হয়ে গেছো।

বাচ্চারা, এখন তোমাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে, আমরা আসলে শান্তিধাম-নিবাসী, পরে আসি নিজ ভূমিকা পালন করতে। লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্য ছিল, তাদের ডাইনেস্টিও(রাজবংশ) ছিল। এখন আবার তোমরা সঙ্গমযুগে দাঁড়িয়ে রয়েছ। বাবা বলেন, তোমরা সূর্যবংশীয় ছিলে, পরে চন্দ্রবংশীয় হয়েছ। এছাড়া এর মাঝের যা কিছু, তা হলো বাই-প্লট্স। এ হলো অসীম জগতের খেলা। এ হলো কত ছোট বৃক্ষ । এ হলো ব্রাহ্মণকুল। পুনরায় কত বড় হয়ে যাবে, তখন তোমরা প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করতে বা মিলিত হতেও পারবে না। তোমরা সকলকে ঘেরাও কর(সেবা)। বাবা বলেন, বেনারস এবং দিল্লীতে প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে জড়ো করে সেবা কর। পুনরায় তিনি বলেন, তোমরা সমগ্র দুনিয়াকেই ঘেরাও করবে। যোগবলের দ্বারা তোমরা সমগ্র দুনিয়ায় এক রাজ্য স্থাপন কর। কত আনন্দ পাও। কেউ কোথায়, কেউ কোথায় চলে যেতে থাকে। এখন তোমাদের কথা কেউ শোনে না। যখন গণ্যমান্যরা আসবে, সংবাদপত্রে পড়বে তখন বুঝবে। এখন ছোট-ছোট শিকার হচ্ছে। বড়-বড় ধনী ব্যক্তিরা মনে করে এটাই আমাদের 'স্বর্গ'। গরীবরাই এসে উত্তরাধিকার নেয়। তারা বলে -- বাবা তুমি তো শুধু আমার, অন্য কেউ-ই আমার নয়, কিন্তু তা তো তখনই সম্ভব যখন সমগ্র দুনিয়ার থেকে মোহ কেটে যাবে, তাই না। আচ্ছা।

মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) আত্মাকে কাঞ্চন বানানোর জন্য একে-অপরকে সাবধান করতে হবে। "মনমনাভব"-র ইশারা (স্মরণ করানো) দিতে হবে। যোগবলের দ্বারা পবিত্র হয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হতে হবে।

২ ) এই অসীম জগতের পূর্ব-নির্ধারিত ড্রামাকে সঠিকভাবে বুঝে স্বদর্শন-চক্রধারী হতে হবে। জ্ঞান-অঞ্জন লাগিয়ে অজ্ঞানতার ঘন অন্ধকার থেকে বের করতে হবে।

বরদান:-
নিজের প্র্যাকটিক্যাল জীবনের প্রমাণ দ্বারা সাইলেন্সের শক্তির আওয়াজ ছড়িয়ে দেওয়া বিশেষ সেবাধারী ভব

ব্যাখা :- প্রত্যেককে সাইলেন্সের শক্তির অনুভব করাও -- এটাই হল বিশেষ সেবা। সায়েন্সের শক্তি যেমন বিখ্যাত, তেমনই সাইলেন্সের শক্তিও যেন খ্যাতনামা হয়ে যায়। সকলের মুখ থেকে যেন এই স্বরই নির্গত হয় যে, সায়েন্সের শক্তি অপেক্ষা সাইলেন্সের শক্তি উচ্চ। সেইদিনও আসবে। সাইলেন্সের শক্তির প্রত্যক্ষতা অর্থাৎ বাবার প্রত্যক্ষতা। সাইলেন্সের শক্তির প্র্যাকটিক্যাল প্রমাণ হলো তোমাদের সকলের জীবন। চলতে-ফিরতে প্রত্যেকে যেন শান্তির মডেল-রূপে প্রতিভাত হয়। তবেই বিজ্ঞানীদের নজরও শান্তিবাদীদের (সাইলেন্স) উপর পড়বে। এমন সেবা কর তবেই বলবে বিশেষ সেবাধারী।

স্লোগান:-
সেবা এবং স্থিতির ভারসাম্য (ব্যালেন্স) বজায় রাখো, তবেই সর্বজনের আশীর্ব্বাদ (ব্লেসিং) প্রাপ্ত হতে থাকবে।