২৮-০৬-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা হলে পরস্পরের আত্মিক ভ্রাতা, তোমাদের মধ্যে একে-অপরের প্রতি সুন্দর ভালোবাসা থাকা উচিত, তোমরা প্রেমে পরিপূর্ণ গঙ্গা হও, কখনো লড়াই-ঝগড়া করবে না"
প্রশ্ন:-
কোন্ কোন্ বাচ্চা আত্মিক পিতার কাছে অতীব প্রিয় হয় ?
উত্তর:-
১) যে শ্রীমৎ অনুসারে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণ করছে। ২) যে ফুল হয়ে গেছে, কখনো কাউকে কাঁটা ফোটায় না, নিজেদের মধ্যে খুব ভালোবাসা সহকারে থাকে, কখনো কোনো ব্যাপারে অভিমান বা মুখ গোমড়া করে না - সেইরকম বাচ্চারাই বাবার কাছে প্রিয় হয়। যারা দেহ-অভিমানের বশীভূত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করে, নুন-জলের মতো আচরণ করে, তারা বাবার সম্মান নষ্ট করে। তারা হল বাবার নিন্দা করানোর নিমিত্ত নিন্দুক।
ওম্ শান্তি।
আত্মিক সন্তানদের কাছে যেমন আত্মিক পিতা অতীব প্রিয় অনুভূত হয়, সেইরকম আত্মিক পিতার কাছেও আত্মিক সন্তানেরা খুবই প্রিয়। কারণ তারা শ্রীমৎ অনুসারে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণ করছে। যারা কল্যাণ করে, তারা সবাই প্রিয় হয়। তোমরাও পরস্পরের ভাই-ভাই। তাই তোমরাও একে অপরের কাছে প্রিয়। দুনিয়ার লোকেদের সাথে তো অতটা প্রীতি থাকবে না, যতটা বাবার বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে থাকবে। তোমাদের মধ্যে অনেক ভালোবাসা থাকা উচিত। যদি এখানে এসেও ভাইয়ের সাথে ভাই লড়াই-ঝগড়া করতে থাকো কিংবা নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা না থাকে, তবে সেটাকে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বলা যাবে না। তোমাদের নিজেদের মধ্যে অনেক ভালোবাসা থাকা উচিত। বাবারও তো আত্মাদের সাথেই প্রীতি রয়েছে, তাই না? তাই আত্মাদেরও নিজেদের মধ্যে সুন ভালোবাসা থাকা উচিত। সত্যযুগে সকল আত্মাই একে অপরের কাছে প্রিয় হয়। কারণ তখন দেহ-অভিমান থাকবে না। তোমার ভাইরা, পিতাকে স্মরণ করে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণ করো। নিজের কল্যাণের সাথে সাথে ভাইদেরও কল্যাণ করতে হবে। সেইজন্যেই বাবা দেহ-অভিমানী থেকে দেহী-অভিমানী বানাচ্ছেন। দুনিয়ায় তো লৌকিক ভাইরা সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু করে দেয়। এখানে কোনো লড়াই ঝগড়ার ব্যাপার নেই। প্রত্যেককে ডাইরেক্ট কানেকশন রাখতে হয়। এইসব হল অসীম জগতের বিষয় । যোগবলের দ্বারা বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার নিতে হবে। লৌকিক বাবার কাছ থেকে স্থূল উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। এখানে তো আত্মিক পিতার কাছ থেকে আত্মা রূপী সন্তানেরা আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার নেয়। প্রত্যেককে সরাসরি বাবার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার নিতে হবে। যে যত ইন্ডিভিজুয়াল বাবাকে স্মরণ করবে, সে তত উত্তরাধিকার পাবে। যদি বাবা দেখে যে বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে লড়াই ঝগড়া করছে, তখন বাবা বলেন - তোমরা কি অনাথ? আত্মিক ভাইদের কখনোই ঝগড়া করা উচিৎ নয়। যদি ভাই-ভাই হয়েও নিজেদের মধ্যে লড়াই ঝগড়া করতে থাকো, ভালোবাসা না থাকে, তাহলে তো তোমরা রাবণের সন্তানের মতো হয়ে গেলে। তখন তাদেরকে আসুরি সন্তান বলা হবে। এইভাবে দেহ-অভিমানী হয়ে লড়াই করলে তো দৈব সন্তান আর আসুরি সন্তানের মধ্যে কোনো তফাৎ-ই থাকবে না। আত্মা কখনো আত্মার সাথে লড়াই করে না। তাই বাবা বলছেন - মিষ্টি বাচ্চারা, নিজেদের মধ্যে "নুনপানি"-র মতো আচরণ করো না। এইরকম ঘটনা ঘটে বলেই তো বাবাকে এত বোঝাতে হয়। এরপর বাবা বলে দেবেন যে এই বাচ্চা তো দেহ-অভিমানী, রাবণের সন্তান। যেহেতু নিজেদের মধ্যে নুনপানির মতো আচরণ করে তাই আমার বাচ্চা নয়। ২১ জন্ম ধরে তোমরা ক্ষীরখণ্ডের মতো থাকো। এখন তোমাদেরকে দেহী-অভিমানী হয়ে থাকতে হবে। যদি নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হয়, তাহলে সেই সময়ে নিজেকে রাবণ সম্প্রদায় বলে মনে করো। নিজেদের মধ্যে এইরকম নুনপানির মতো আচরণ করলে তো বাবার নাম বদনাম করো। হয়তো মুখে নিজেকে ঈশ্বরীয় সন্তান বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু আসুরি গুণ থাকার অর্থ হল সে অবশ্যই দেহ-অভিমানী। যে দেহী-অভিমানী, তার মধ্যেই ঐশ্বরিক গুণ থাকে। এখানে তোমরা ঐশ্বরিক গুণ ধারণ করলেই বাবা তোমাদেরকে সাথে করে নিয়ে যাবেন। তারপর সেই সংস্কার-ই সাথে করে নিয়ে আসবে। বাবা বুঝতে পারেন যে বাচ্চারা দেহ-অভিমানের বশীভূত হয়ে নুনপানির মতো আচরণ করে। ওদেরকে কখনোই ঈশ্বরীয় সন্তান বলা যাবে না। এইভাবে নিজের অনেক ক্ষতি করে ফেলে। মায়ার বশীভূত হয়ে যায়। নিজেদের মধ্যে নুনপানির মতো আচরণ করে। *এখন তো গোটা দুনিয়াটাই নুনপানির (মতপার্থক্য) দুনিয়া। ঈশ্বরীয় সন্তানরাও যদি নুনপানি হয়ে থাকে, তাহলে আর পার্থক্য কি থাকল* ? তারা তো বাবার নিন্দা করানোর নিমিত্ত হয়ে যায়। যাদের দ্বারা বাবার নিন্দা হয়, যারা নুনজলের মতো আচরণ করে, তারা কখনোই টিকতে পারবে না। তাদেরকে নাস্তিক বললেও ভুল হবে না। যেসব বাচ্চারা আস্তিক হওয়ার যোগ্য, তারা কখনোই নিজেদের মধ্যে লড়াই করবে না। তোমাদের কখনোই নিজেদের মধ্যে লড়াই করা উচিত নয়। এখানেই তোমাদেরকে প্রেমপূর্ণ ভাবে থাকা শিখতে হবে। এরপর ২১ জন্ম তোমরা প্রেমপূর্ণ ভাবেই থাকবে। বাবার বাচ্চা হয়েও যদি পরস্পরের মধ্যে বনিবনা না হয়, তবে তাদেরকে আসুরি সন্তান বলা উচিৎ। *বাবা বাচ্চাদেরকে বোঝানোর জন্যেই মুরলি শোনান। কিন্তু দেহ-অভিমানের কারনে অনেকে বুঝতেই পারে না যে বাবা আমাকেই এই কথাগুলো বলছেন।* মায়া অতি প্রবল। যেমন ইঁদুর যখন কিছু কাটে তখন বোঝা যায় না, সেইরকম মায়াও মিষ্টিভাবে ফুঁ দেয় আর কাটতে থাকে। বোঝাই যায় না। যারা আসুরি সম্প্রদায়ের, তারা নিজেদের মধ্যে অভিমান করে থাকে। অনেক সেন্টারেই বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে নুনপানির মতো আচরণ করে। এখনো তো কেউই পারফেক্ট হয়নি। তাই মায়াবী প্রতিবন্ধকতা আসতেই থাকে। নিজের অজান্তেই মায়া মাথা মুড়িয়ে দেয়। নিজের অন্তরকে প্রশ্ন করো - আমাদের কি নিজেদের মধ্যে প্রেমভাব রয়েছে ? যেহেতু তোমরা প্রেমের সাগরের সন্তান, তাই প্রেমে ভরপুর গঙ্গা হওয়া উচিত। লড়াই-ঝগড়া করা, উল্টো-পাল্টা কথা বলা, এর থেকে তো কিছু না বলা অনেক ভালো। হিয়র নো ইভিল…। যদি কারোর মধ্যে ক্রোধের অংশ থাকে, তাহলে সেখানে ততটা ভালোবাসা থাকা সম্ভব নয়। সেইজন্যেই বাবা প্রতিদিনের দিনলিপি চেক করতে বলেন। আসুরি চালচলন যদি না শোধরাও, তাহলে তার ফল কি হবে ? কেমন পদ পাবে ? বাবা বোঝাচ্ছেন, যদি কোনো সেবা না করো, তাহলে তোমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে, পদ কম হয়ে যাবে। সাক্ষাৎকার তো সকলের হবে। তোমাদেরও সাক্ষাৎকার হবে যে কে কতটা পড়াশুনা করেছ। তারপর তোমরা ট্রান্সফার হয়ে নুতন দুনিয়ায় আসবে। অন্তিমে সবকিছুর সাক্ষাৎকার হবে। কে কত নম্বর পেয়ে পাশ করেছে ? তখন কাঁদবে, কপাল চাপড়াবে, শাস্তি পাবে, আফসোস করবে যে আমি তখন বাবার কথা শুনিনি। বাবা তো বারবার বুঝিয়েছিলেন যে কোনো আসুরি গুণ যেন না থাকে। যার মধ্যে দিব্যগুণ রয়েছে, তাকে অন্যদেরকেও নিজের মতো বানাতে হবে। বাবাকে স্মরণ করা তো খুবই সহজ। অল্ফ আর বে। অল্ফ মানে বাবা আর বে মানে বাদশাহী (উত্তরাধিকার)। সুতরাং বাচ্চাদের মধ্যে নেশা থাকা উচিত। কিন্তু নিজেদের মধ্যে নুনপানির মতো আচরণ করলে কিভাবে বোঝা যাবে যে সে ঈশ্বরীয় সন্তান। বাবা তো বুঝে যাবেন যে এ আসলে আসুরি সন্তান, মায়া এর নাক-কান পাঁকড়ে ধরেছে। সে নিজে বুঝতেও পারে না। তার তখন টালমাটাল অবস্থা হয়ে যায়। পদও কম হয়ে যায়। তোমাদের মতো বাচ্চাদের কর্তব্য হল ওদেরকে ভালবাসার সাথে বোঝানো, প্রেমের দৃষ্টি দেওয়া। বাবা তো প্রেমের সাগর। তাই বাচ্চারাও আকৃষ্ট হয়। তোমাদেরকেও এইরকম প্রেমের সাগর হতে হবে।
বাবা বাচ্চাদেরকে খুব ভালোবাসার সাথে বোঝাচ্ছেন, সঠিক মতামত দিচ্ছেন। ঈশ্বরীয় মত প্রাপ্ত করে তোমরা ফুলের মতো হয়ে যাও। তোমাদেরকে সকল গুণ দিয়ে দেন। *দেবতাদের মধ্যে অনেক ভালোবাসা থাকে, তাই না ? ঐরকম অবস্থা তো তোমাদেরকে এখন তৈরি করতে হবে*। এখন তোমাদের মধ্যে জ্ঞান রয়েছে। এরপর দেবতা হয়ে গেলে আর এই জ্ঞান থাকবে না। ওখানে সকলের মধ্যে দিব্য প্রেম থাকবে। সুতরাং, এইসময়েই বাচ্চাদেরকে দিব্যগুণ ধারণ করতে হবে। এখন তোমরা পূজনীয় হওয়ার জন্য পুরুষার্থ করছ। এখন তোমরা সঙ্গমযুগে রয়েছ। বাবা এই ভারতেই আসেন। এখানেই শিবজয়ন্তী পালিত হয়। কিন্তু তিনি আসলে কে ? তিনি এখানে কখন কিভাবে আসেন ? এসে কোন্ কর্তব্য করেন ? এইগুলো কিছুই জানে না। তোমরা বাচ্চারা এখন এইগুলো পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে জেনেছ। যে জানে না, সে কাউকে বোঝাতেও পারবে না। তার পদ কম হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও কারো কারো চালচলন খারাপ হয় আবার কারোর চালচলন খুব ভালো হয়। কেউ প্রেজেন্ট থাকে, কেউ অ্যাবসেন্ট থাকে। *এখানে সে-ই সর্বদা প্রেজেন্ট থাকে, যে সর্বদা বাবাকে স্মরণ করে, স্ব-দর্শন চক্র ঘোরায়। বাবা বলেন, উঠতে বসতে সর্বদা স্ব-দর্শন চক্রধারী হয়ে থাকো। ভুলে গেলেই অ্যাবসেন্ট হয়ে যাও। সর্বদা প্রেজেন্ট থাকলেই উঁচু পদ পাবে। ভুলে গেলে পদও কমে যাবে*। বাবা জানেন যে এখনও কিছু সময় রয়েছে। যারা উঁচু পদ পাবে, তাদের বুদ্ধিতে অবশ্যই এই চক্র আবর্তিত হয়। বলা হয় - শিববাবার স্মৃতিতে মুখে জ্ঞান অমৃত নিয়ে দেহত্যাগ করা উচিৎ। কিন্তু কোনো কিছুর প্রতি প্রীতি থাকলে, অন্তিমে সেটা স্মরণে আসবে। খাবারের প্রতি লোভ থাকলে, অন্তিমে সেইসব স্মরণে আসবে, খাওয়ার ইচ্ছা হবে। তখন পদ কমে যাবে। বাবা বলেন, স্ব-দর্শন চক্রধারী হয়ে দেহত্যাগ করো। অন্য কোনোকিছু যেন স্মরণে না আসে। কোনো সম্বন্ধ ছাড়া যেভাবে আত্মা এসেছিল, সেইভাবেই ফিরতে হবে। লোভও কিছু কম নয়। যদি লোভ থাকে, তাহলে অন্তিমে সেইসব জিনিসের স্মৃতি আসবে। যদি প্রাপ্ত না হয়, তবে সেই বাসনা নিয়ে দেহত্যাগ করবে। সুতরাং বাচ্চারা, তোমাদের মধ্যে লোভ থাকা ঠিক নয়। বাবা তো অনেক কিছুই বোঝান। কিন্তু যে বোঝার, কেবল সে-ই বুঝবে। বাবার স্মৃতিকে একেবারে অন্তরে গেঁথে দাও - 'বাবা, ও বাবা'। মুখে বাবা-বাবা বলতে হবে না। অজপাজপ যেন সর্বদা চলতে থাকে। বাবার স্মৃতিতে, কর্মাতীত অবস্থায় দেহত্যাগ করলেই উঁচু পদ পাবে। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্যসার :-
১. প্রেমে ভরপুর গঙ্গা হতে হবে। সবার প্রতি প্রেমপূর্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কখনোই মুখ দিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলা উচিৎ নয়।
২. কোনো জিনিসের প্রতি লোভ থাকা উচিত নয়। স্ব-দর্শন চক্রধারী হয়ে থাকতে হবে। অভ্যাস করতে হবে যাতে অন্তিমে কোনো কিছু (জাগতিক) স্মরণে না আসে।
বরদান:-
ব্রাহ্মণ জীবনে শ্রেষ্ঠ স্থিতি রূপী মেডেল প্রাপ্ত করে বেগমপুরের বাদশাহ ভব
তোমরা সবাই নিজের স্থিতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বানানোর জন্যেই ব্রাহ্মণ হয়েছ। ব্রাহ্মণ জীবনে এই শ্রেষ্ঠ স্থিতিই হল তোমাদের সম্পত্তি । এটাই হল ব্রাহ্মণ জীবনের মেডেল। যে এই মেডেল প্রাপ্ত করে, সে সর্বদা অচল-অটল, একরস অবস্থায় থাকে। সে সর্বদাই নিশ্চিন্ত এবং বেগমপুরের বাদশাহ হয়ে যায়। সে সকল ইচ্ছা থেকে মুক্ত, 'ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা' স্বরূপ হয়ে যায়।
স্লোগান:-
দেহ-অভিমানকে নাশ করলেই সকল পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই মিটে যাবে।