২৬-১০-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - বুদ্ধিকে বিশুদ্ধ বানাতে চাইলে এক ও একমাত্র বাবার স্মরণেই থাকো, এই স্মরণের যোগের দ্বারাই আত্মা বিশুদ্ধ হয়"
প্রশ্ন:-
বর্তমান এই সময়ে মানুষ তার নিজের সময় ও অর্থকে কিভাবে সফল করায় ব্যস্ত ?
উত্তর:-
মানুষ যখন শরীর ত্যাগ করে, তার পিছনে কতই না টাকা-পয়সা ইত্যাদির খরচ হতেই থাকে। কিন্তু যে শরীর ত্যাগ করে চলেই গেছে, সেই ব্যক্তির তো আর কোনও মূল্যই রইলো না, অর্থাৎ তার মৃত্যুর পর যা কিছুই করা হোক না কেন, তা কেবল নিজেদের সময় আর ধন-সম্পদের অপব্যয় করা মাত্র।
ওঁম্ শান্তি!
আধ্যাত্মিক পিতা ওঁনার আধ্যাত্মিক সন্তানদেরকে সামনে বসিয়ে বোঝাচ্ছেন- ইনি অর্থাৎ ব্রহ্মা-ও সেই একই কথা বলছেন, অর্থাৎ বাপ ও দাদা দু'জনে একই কথা বলছেন। তেমনি দাদা-ও বলেন- আধ্যাত্মিক পিতা বি কে বাচ্চাদেরকে এই বিশেষ জ্ঞান শোনাচ্ছেন- যা অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের। বাস্তবে সত্যযুগের শুরু থেকে ত্রেতার অন্তিম পর্যন্ত যা যা ঘটেছিলো, সেটাই মুখ্য বিষয়। এছাড়া দ্বাপর আর কলিযুগে কে কে কখন কখন আসে, কি কি হয়, হিস্ট্রি-জিওগ্র্যাফিতে সেসব তো অনেক তথ্যই থাকে। কিন্তু সত্যযুগ-ত্রেতার কোনও হিস্ট্রি-জিওগ্রাফিই নেই। অথচ অন্য যুগগুলির হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি আছে। তাছাড়া দেবী-দেবতাদের অবস্থান সময়কে লক্ষ-লক্ষ বছর আগেকার ঘটনা বলে উল্লেখ আছে শাস্ত্রে। এটাই হলো অসীম জগতের প্রকৃত তথ্যের সাথে জাগতিক তথ্যের তফাৎ, যা একেবারেই অজ্ঞানী নির্বোধের মতন কথা। পূর্বে তোমরাও অসীমের এইসব প্রকৃত তথ্যের জ্ঞানের অভাবে অজ্ঞানী ও নির্বোধ ছিলে। কিন্তু এখন ধীরে-ধীরে অল্প-অল্প বুঝদার হচ্ছো। তোমাদের মধ্যে এমনও অনেকে আছো, যারা এখনও সঠিক ভাবে তা বুঝে উঠতে পারোনি। এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠে অনেক কিছুই বোঝার আছে। যেমন, বাবা তোমাদেরকে এই আবুর মহিমা যা কিছু বুঝিয়েছেন, বুদ্ধিতে সেগুলি অবশ্যই ধারণ করতে হবে। এই বিষয়টা অবশ্যই খেয়াল রাখবে, তোমরা এখন সেখানেই বসে আছো। তোমাদেরই স্মরণিক এই দিলওয়ারা মন্দির তৈরি হয়েছিলো, কিন্তু তা কবে এবং কত বছর বাদে তৈরি হয়েছিল ? লোকেরা বলে থাকে তা প্রায় ১২৫০ বছর হবে। তবে আর বাকী কত বছর রইলো ? - ৩৭৫০ বছর। তারাও তো এখনকারই স্মরণিক এবং বৈকুন্ঠের স্মরণিক বানিয়েছে ! মন্দিরগুলির মধ্যেও প্রতিযোগিতা হয়। তাই তো একটিকে অপরটির থেকে আরও সুন্দর বানানো হয়। কিন্তু এখন লোকেদের কাছে তেমন পয়সাকড়ি কোথায় যে আরও সুন্দর করে বানাবে। একদা এদের কাছেই অনেক ধন-সম্পদ ছিলো। তাই তো সোমনাথ মন্দিরের মতন রত্নরাজি ও মণিমুক্তোয় ঠাঁসা এত সুন্দর ও এত বড় মন্দির বানাতে পেরেছিলো। এখন আর যা বানাবার সামর্থই নেই। যদিও আগ্রা ইত্যাদি স্থানে এমন কিছু কিছু বানাচ্ছে, কিন্তু সেইসব কোনো কাজের নয় । মানুষ এখন একেবারেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে। যদি চায়ও, তেমন বানাতে বানাতেই বিনাশপর্বও শুরু হয়ে যাবে। এসব কথা বি.কে.-রা ছাড়া অন্যেরা কেউ বুঝবেই না। তাই তো তারা একবার ভাঙ্গে একবার গড়ে। মন্দির গড়ার জন্য বেকার পয়সাকড়ি খরচ করে। প্রকৃত অর্থে সেইসব পয়সাকড়ি জলেই যায়। অর্থাৎ সময়ের অপচয়, সম্পদের অপচয় আর এনার্জিরও অপচয়।
কেউ যখন মারা যায়, লোকেরা তার জন্যও অনেক সময় ও অর্থ অপচয় করে। আমরা কিন্তু কিছুই করতে পারি না। আত্মা যখন শরীর ত্যাগ করে চলেই গেছে, তখন শবদেহের আর কাজই বা কি। যেমন সাপ তার খোলস ছাড়লে সেই খোলস আর কি কাজেই বা লাগে। সেই খোলসের আর কোনও মূল্যই থাকে না। কিন্তু ভক্তি-মার্গে ভাবে শরীর রূপী খোলসেরও মূল্য আছে। তাই তো তারা জড় চিত্রকেও কত ভক্তিভরে পূজা-অর্চনা করে। কিন্তু তারা তা জানে না যে, কবে থেকে এবং কিভাবে এই ধারার প্রচলন হলো। একেই বলা হয় ভূতের পুজা। লোকেরা তো আবার ৫-তত্ত্বরও পুজা করে। উদাহরণস্বরূপ ভাবো, লক্ষ্মী-নারায়ণ রাজত্ব করেন স্বর্গ-রাজ্যে। তখন তাদের আয়ু হয় ১৫০ বছরের। তারাও সেই বয়সকালে নিজেরাই স্ব-ইচ্ছায় নিজেদের শরীর ত্যাগ করে। যেহেতু তখন তাদের শরীর আর কোনো কাজেরই থাকে না। তাই অযথা তা রেখেই বা আর কি লাভ ! আত্মা শরীর ত্যাগ করলে সেই শরীরকে চণ্ডালের হাতেই দিয়ে দেওয়া উচিত। চণ্ডালই তার নিয়ম নীতি অনুসারে যা কিছু করার করে, সেই শরীরকে পুড়িয়ে দেবে। এমন নয় যে সেই ভস্ম নিয়ে চর্তুদিকে ছড়িয়ে নাম প্রচার করবে। এমন কিছুই করা হয় না সেখানে। কিন্তু এখানে তো কত কিছুই না করে ! ব্রাহ্মণ-পুরোহিত সমেত কত লোককে ভোজন করায়, এটা করে, ওটা করে, এমন কত কিছুই তো করে। সেখানে কিন্তু এসব কিছুই হয় না। শব দেহ তো আর কোনও কাজেরই নয় । তাই তা জ্বালিয়ে দেয়। কেবলমাত্র প্রতিচ্ছবি বা চিত্রই থেকে যায়। তাও তা একেবারে হুবহু হয় না। তেমনি এই যে আদিদেবের প্রস্তর মূর্ত্তি তাও কিন্তু হুবহু নয়। এই পাথরের মূর্ত্তি ইত্যাদি তৈরি করতে শুরু করে, যখন থেকে ভক্তি-মার্গে পূজার প্রচলন হয়। যারা আসলে ছিল, তাদের শব দেহ তো সেই যুগেই দাহ হয়ে গেছে, ভক্তি মার্গ শুরু হলে (তাদেরই জড় চিত্র) তখনই এসব বানানো হয়। বাচ্চারা, এসব বিষয়ে তোমাদেরও তো কত প্রকারের ভাবনা চলে। আবুর মহিমাগুলি খুব ভাল করে গুছিয়ে যুক্তিপূর্ণ ভাবে তা প্রচার করতে হবে। তোমরা ভাগ্যবান, সেই আবুতেই বসে আছো এখন। এখানে বসেই বাবা সমগ্র বিশ্বকে নরক-রাজ্য থেকে স্বর্গ-রাজ্য বানান। অতএব এমন পুণ্যস্থানই তো সবার থেকে উচ্চতমেরও উচ্চ অর্থাৎ সর্ব্বোচ্চ তীর্থস্থানই হলো। যা অন্যদের ভাবনাতে নেই, একমাত্র এই শিববাবারই এই ভাবনা। তাই তো শিববাবার প্রতি তোমাদের এত আস্থা। যেখানেই যাও না কেন, শিববাবার মন্দির অবশ্যই থাকবে সেখানে। এমনকি অমরনাথেও সেই শিববাবারই মন্দির। বলা হয় অমরনাথে বসে শংকর পার্বতীকে অমরকথা শুনিয়েছিলেন। আসলে সেই কথা যে কি কথা লোকেরা তার যথার্থ মর্মার্থটাই জানে না। তা কিন্তু কোনও ধর্মকথা নয় মোটেই। যা এখন তোমরা বি.কে.-রা বুঝেছো। অথচ পূর্বে তোমরাও কিন্তু তা জানতে না।
এখন বাবা স্বয়ং এই আবুর কতই না মহিমার কথা শোনান। সব তীর্থগুলির মধ্যে মহান তীর্থস্থান হলো এই আবু-তীর্থ। তার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাগুলিই বাবা শোনাচ্ছেন তোমাদেরকে ! যদিও বাবা এত সুন্দর করে তা বোঝান, কিন্তু একমাত্র অনন্য বাচ্চারাই তাদের বুদ্ধিতে তা ধারণ করতে পারে। এই মুহূর্তে দেহ-অভিমান প্রবল পরিমাণে রয়েছে । কিন্তু জ্ঞান তো আরও অনেক ধারণ করতে হবে। আর এই জ্ঞানের সূক্ষ্মতাও যে অনেক গভীর, যা তোমাদেরকে ধারণও করতে হবে। তোমাদের মধ্যে অনেকেই খুব কষ্ট করে তবেই যোগযুক্ত হতে পারো। যোগের সাথে সাথে জ্ঞানও তো দরকার। কেবলমাত্র যোগযুক্ত হতে পারলেই তো চলবে না, তার সাথে অবশ্যই জ্ঞানেরও প্রয়োজন আছে। দিল্লীতে এমনই "জ্ঞান-বিজ্ঞান ভবন" আছে। কিন্তু সেই নাম-করণের পিছনে যে প্রকৃত ভাবটা, সেটাই জানে না লোকেরা। অথচ, জ্ঞান বিজ্ঞানের এই ধারণা তো এক সেকেন্ডেই হতে পারে। যার অন্তর্নিহিত অর্থ শান্তিধাম আর সুখধাম। কিন্তু মানুষের মধ্যে তা বোঝার মতো বুদ্ধির বড়ই অভাব । তাই তারা তার মর্মার্থ বুঝতেই পারে না। চিন্ময়ানন্দ ইত্যাদির মতন বিখ্যাত সাধু-সন্ন্যাসীরাও, যারা গীতার ব্যাখ্যা শুনিয়ে থাকে, যাদের বহু সংখ্যক অনুগামীও রয়েছে । সবার উর্ধ্বে মহান জগৎ-গুরু যে কেবল একজনই অর্থাৎ এই বাবা। যিনি পিতা আর টিচারের থেকেও অনেক উর্ধ্বে । স্ত্রী যেমন নিজের স্বামী ব্যতীত অন্য কোনও পুরুষকে আর পতি রূপে গ্রহন করে না, তেমনি গুরুও কেবল একজনকেই করা উচিত। যদি এই একমাত্র গুরুর সম্পর্কে থাকো, তবে এঁনার দ্বারা সদগতি হবেই হবে। সেক্ষেত্রে অন্য গুরুর আর প্রয়োজনই নেই। যেখানে তোমাদের সদগুরু তো কেবলমাত্র এই অসীমের বাবা। আবার উনিই সবার সদগতিদাতা। তবুও অনেকে এই বিষয়ে একেবারেই কিছু বুঝতে চায় না। আবারও বাবা বোঝাচ্ছেন- তোমাদের জন্যই রাজধানী স্থাপনের কার্য চলছে, যেখানে বাচ্চাদের অবস্থান হবে তাদের পুরুষার্থের ক্রমানুসারে। এই বিশাল কথার মর্মার্থের সামান্যতম অংশও অনেকের বুদ্ধিতে ঢোকে না। অবশ্য ড্রামাতে তার ভূমিকা তেমনই রয়েছে। টিচার তো কেবল বোঝাতেই পারে, আর যার শরীরের সাহায্য নিয়ে এসব বোঝাচ্ছেন, তিনিও তা বুঝতে পারছেন। যেমন ★"গুড় জানে আর গুড়ের বস্তা জানে"। গুড় শিববাবাকে বলা হয়। তিনি সবার অবস্থার কথাই জানেন। ক্লাসে পড়াবার সময় সবই বুঝতে পারেন, কে কেমন পঠন-পাঠন করছে। কে কি রকম সেবা কার্য করছে। বাবার এই সেবার কার্যে কে কতটা নিজের জীবনকে সফল করতে পারছে। ব্রহ্মাবাবা যে লক্ষ্মী-নারায়ণের মতনই হতে চলেছেন, তা কিন্তু এমনিতেই নয়- এর জন্য উনি ওনার ঘরদুয়ার পরিবার পরিজন, সংসার ইত্যাদি সবকিছু দিয়েই উনি ওনার পুরুষার্থ করেছেন। বাবার এই বিশেষ জ্ঞান অতি উন্নত স্তরের জ্ঞান। কেউ যদি বাবার এই জ্ঞানের অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তবে সে একদম পাথর তুল্য তুচ্ছই হয়ে যাবে। তাই বাবা বোঝাচ্ছেন- এটা ইন্দ্রসভা। শিববাবা স্বয়ং এখানে বসে জ্ঞানের বর্সা করেন। আবার শাস্ত্রেও তা লেখা আছে, অবজ্ঞাকারীরা একেবারে পাথরের মতন নির্বোধ হয়ে যায়। তাাই তো বাবা সবাইকে তা লিখেও জানান- সাথে করে যাকে নিয়ে আসছো, আগে তাকে পরখ করে নাও। এমনটা যেন না হয়, কোনও বিকারী অপবিত্র আত্মা এখানে এসে বসে পড়লো। এক্ষেত্রে যে ব্রাহ্মণী তাকে নিয়ে আসবে, তাকেই দোষী ভাবা হবে। এমন কাউকে মোটেই আনবে না এখানে। এ বিষয়ে যথেষ্ট দ্বায়িত্ববান হতে হবে। যেহেতু এই বাবা যে উচ্চতমেরও উচ্চের অর্থাৎ সর্ব্বোচ্চ। যিনি তোমাদের সমগ্র বিশ্বের বাদশাহী দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে তো অবশ্যই ওঁনাকে খুবই সম্মান দেওয়া উচিত।
বাচ্চারা, তোমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছো যারা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণেই ব্যস্ত থাকো, অথচ বাবাকেই স্মরণ কর না। তারাই প্রতি মুহূর্তে হোঁচট খেতে থাকো। তাদের উদ্দেশ্যে বাবা জানান- বর্তমান সময়কালটা যে অসুরদের আসুরী-দুনিয়া। একমাত্র বি.কে.-রাই দৈবী-দুনিয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠছো। তাই তোমাদের এইম-অবজেক্টও তেমনই হওয়া উচিত। একেবারে লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন সুযোগ্য হয়ে উঠতে হবে। এখানে দেব-দেবীদের যেসব চিত্রগুলি আছে, তাদের সবার বায়োগ্রাফিগ্রাফি তোমরা বি.কে.-রাই তা জানো। লোকেদের তা বোঝাতে গিয়ে কতই না পরিশ্রম করতে হয় তোমাদেরকে। বোঝাতে গিয়ে তোমরাও বুঝতে পারবে, কে বুদ্ধিমান আর কে কিছুই বুঝতে পারছে না। তেমনি তোমরা বি.কে.-রাও যে যেমন এই বিশেষ জ্ঞানকে ধারণ করতে পেরেছো, সে সেই অনুসারেই তেমন ভাবেই সেবা করে চলেছো। বোঝাবার সময় মুখ্য কথাটি হলো, গীতার ভগবান কে ? মাত্র এই একটাই সূর্যবংশী দেবী-দেবতাদের শাস্ত্র। এক-এক বংশের জন্য পৃথক পৃথক শাস্ত্র নয়। ব্রাহ্মণ্যধর্মের জন্যেও সেই একই শাস্ত্র। এটাই মূল বোঝার ব্যপার। আর এই জ্ঞান-মার্গে চলতে চলতে যদি কেউ বিকারের বশবর্তী হয়ে পড়ে, তবে তার যাবতীয় জ্ঞান মুহূর্তেই জোয়ারে ভেসে গিয়ে একেবারে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়বে। অনেক জ্ঞানধারী বি.কে.রা বিকারের বশবর্তী হয়ে একেবারে পাথর-তুল্য নির্বোধ হয়ে গেছে। তাই এসব বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকা দরকার। বাবা যেসব কথা জানাচ্ছেন- তা খুব ভালভাবে চর্বিত-চর্বন করে হজম করতে হবে। এখানে তোমরা খুব সহজ ভাবেই সবকিছু করতে পারো। যেহেতু এখানে কোনও জাগতিক ব্যাবসা-বানিজ্য ইত্যাদি কিছুই করতে হয় না, তেমনি কোনও প্রকারের ঝগড়াঝাটি ইত্যাদিও হয় না। কিন্তু বাইরে থাকলে তো কত প্রকারের চিন্তা ইত্যাদি চলতেই থাকে।মায়ার ঝড়-ঝাপটাও চলতেই থাকে, কিন্তু এখানে সেসব কিছুই নেই। এখানকার পরিবেশে বেশ নির্জন নিঃসঙ্গতায় থাকতে পারো। বাবা স্বয়ং বাচ্চাদের পুরুষার্থ করান। ব্রহ্মাবাবা নিজেও একজন পুরুষার্থী। পুরুষার্থ করবার জন্য অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগান বাবা। তাই এইসব বিষয়গুলিতে বিচার-সাগর মন্থন করা উচিত তোমাদের। এখানে স্বয়ং বাবা বাচ্চাদের সামনে উপস্থিত থাকেন। যেমন আঙ্গুলের সাহায্যে গোবর্ধন পর্বতকে তুলে ধরতে কৃষ্ণের সহযোগী হয়েছিলে তোমরা, তেমনি সম্পূর্ণভাবে বাবার পূর্ণ সহযোগী আত্মাদেরকেই প্রকৃত সেবাধারী বলা যাবে। ঝিমিয়ে পড়া বাচ্চারা যেমন নিজের ক্ষতি করে, তেমনি তারা ডিস্-সার্ভিস্ও করে, যা বিঘ্ন স্বরূপও বটে। একথাও তো তোমরা জানো- মহারারাজা-মহারাণী যারা হবে, তাদের সেবার জন্য দাস-দাসীরও প্রয়োজন। তারাও তো তোমাদের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ হবে। সব কিছুই হবে পঠন-পাঠন ধারণের ক্রমিক অনুসারে। তোমাদের এই পতিত পুরোনো শরীরকে রাজি-খুশীতেই পরিত্যাগ করা উচিত। এতে মনে দুঃখ-কষ্ট আসা উচিত নয়। পুরুসার্থের জন্য সময় তো অনেকটাই পাচ্ছো। জ্ঞান তো এক সেকেন্ডের ব্যপার। বুদ্ধিতে একথা যেন খেয়ালে থাকে অবিনাশী উত্তরাধিকার একমাত্র শিববাবার থেকেই পাওয়া যাবে। খুব অল্প জ্ঞান শুনলেও, শিববাবাকে স্মরণ করতে পারলেই, তবুও তুমি শিবালয়ে (স্বর্গ-রাজ্যে) প্রবেশ করতে পারবে। প্রজা তো অনেক দরকার, এখন সেই রাজধানী তৈরি হচ্ছে সূর্যবংশী-চন্দ্রবংশীদের জন্য। একবার বাবার সন্তান বি.কে. হবার পর, তোমার কোনও আচরণে যদি বাবার কোনও গ্লানি হয়, তবে তোমার মাথায় সেই পাপের ভীষণ বোঝা চাপবে। একদম রসাতলেই চলে যাবে। তাই তো বাবা বোঝাচ্ছেন- যে আত্মাধারীরা নিজেই নিজের পূজা করায়, আগামীতে সে আর পূজ্য হতেই পারবে না কোনো ভাবেই। সবার সদগতিদাতা-কল্যাণকারী তো কেবল এই একজনই- যিনি শিববাবা।
মানুষ তো "শান্তি" কথাটার প্রকৃত অর্থই জানে না। হঠযোগ, প্রাণায়াম ইত্যাদি এসব করাকেই শান্তি ভাবে তারা। অথচ এসব করা যেমন কষ্টসাধ্য তেমনই ভুল পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য অনেকের ব্রেইন খারাপও হয়ে যায়। অবিনাশী কিছুই প্রাপ্তি হয় না এসবের দ্বারা। যা হয়, তা কেবল অল্প সময়ের শান্তি। যেমন জাগতিক সুখ অল্পকালের, কাক বিষ্ঠার মতন সুখ, তেমনই ঐ শান্তি অতি স্বল্প সময়ের জন্যই। জাগতিক যা কিছু সবই অল্প সময়ের জন্যই। কিন্তু এই বাবা তোমাদেরকে যা কিছুই দিচ্ছেন, সেই সুখ-শান্তি আগামী ২১-জন্মের জন্য। কোনও কোনও আত্মা আবার একেবারে শেষ মুহূর্তের আগে পর্যন্ত শান্তিধামেই থাকে। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চে যার যেমন ভূমিকা থাকে সেই অনুসারে। ফলে তারা সুখধামের অপার-সুখকে অনুভব করতে পারে না। এসবও আবার হয় সেই ক্রমিক নম্বর অনুসারেই। যদিও দাসদাসী রূপে আগেই চলে আসে অনেকে, কিন্তু রাজমহলের ভিতরের সেই সুখ-শান্তি তো তারা অনুভব করতে পারে না। যেহেতু ভিতরে প্রবেশ করতেই পারে না তারা। এমনকি কৃষ্ণেরও দর্শন পায় না তারা। সবারই নিজের নিজের মহল থাকে। দর্শনের জন্যও নির্দিষ্ট সময় থাকে। যেমন ধরো, খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ যখন আসে, তখন কত অনেক লোক সেখানে যায় তাকে দর্শন করার জন্য। এমন অনেকেই আছে যাদের খুব প্রভাব থাকে। তাদের কাছে লক্ষ লক্ষ মানুষ যায় কেবলমাত্র দর্শন করতে। কিন্তু এখানে তোমরা এই শিববাবার দর্শন করাবেই বা কি ভাবে ? এটাই মূল বোঝার বিষয়।
বাচ্চারা দুনিয়াবাসীরা কিভাবে জানতে পারবে যে, এই আবু-তীর্থই সবচেয়ে মহান তীর্থস্থান। দিলওয়ারা মন্দিরের মতো আশেপাশে আরো মন্দির থাকতে পারে সেগুলোও তোমাদের গিয়ে দেখা উচিত। সত্যি, কি সুন্দর এর স্থাপত্য শিল্প। শিল্পকলা দেখলেই সব স্পষ্ট হয়ে যায়, ফলে কাউকে আর সেই বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান শোনাবার প্রয়োজনই নেই। তখন হয়তো উল্টে তারাই তোমাদেরকে জ্ঞান দিতে শুরু করবে। কতকিছুই বলতে থাকবে, এটা করা উচিত ছিল, ওটা করা উচিত ছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা তো আর জানে না যে বি.কে.দের এই বিশেষ জ্ঞানের পঠন-পাঠন কে করান। প্রত্যেককে পৃথক পৃথক ভাবে বোঝাতে গেলে যে অনেক পরিশ্রম হবে। এ নিয়ে একটি প্রচলিত কাহিনিও আছে। এক রাখাল বালক রোজই চিৎকার করতো, বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে....! তেমনি তোমরাও বলে থাকো, মৃত্যু যে শিয়রে দাঁড়িয়ে, (অর্থাৎ এই কল্পের আয়ু প্রায় শেষ) কিন্তু লোকেরা তা মানতেই চায় না। তারা ভাবে কলিযুগ তো এখনও আরও ৪০ হাজার বছর চলবে, তবে এখনই তার বিনাশ হবে কেন ? কিন্তু তোমরা জানো, মরণ তো আসবেই আসবে এবং সবাইকে নিয়েও যাবে। নতুন যুগ সত্যযুগে কোনও প্রকারের ময়লা-আবর্জনা থাকে না। এখনকার গরু আর সেখানকার গরুর মধ্যেও আকাশ-পাতাল তফাৎ। কৃষ্ণ সেখানে রাখাল বালক হয়ে গরু চড়ায় না। হেলিকপ্টারে করে দুধ আসে তার জন্য। এখনকার মতন এমন নোংরা-আবর্জনা সব দূর হয়ে যাবে। ঘরের সামনে কোনও প্রকারেরই নোংরা আবর্জনা বিন্দুমাত্রও থাকবে না। সেখানে যে কেবলই অপরমঅপার সুখ আর সুখ। অতএব এর জন্য তো তেমন গতিতেই পুরুষার্থও করা দরকার। কত ভাল ভাল মেধাবী বাচ্চারা আসে সেন্টারগুলিতে। যা দেখে বাবাও কত খুশী হন। তারাও তাদের পুরুষার্থের ক্রমিক অনুসারে তেমন ভাল ভাল ফুলের মতন বিকশিত হয়ে ওঠে। ফুলের মতন বাচ্চারা নিজেদেরকেও ফুলের মতন সুন্দর ও পবিত্র ভাবে। দিল্লিতেও বাচ্চারা খুব সুন্দরভাবে রাত-দিন সেবার কার্যেই ব্যস্ত থাকে। তাদের জ্ঞানের ধারণাও তেমনি উন্নত স্তরের। অথচ বি.কে. হবার পূর্বে এসব কিছুই জানতো না তারা। অতএব, তোমাদেরও অনেক বেশী করে পুরুষার্থ করতে হবে এখন থেকে। বাবার কাছে সব খবরই পৌঁছায়। বাবা কারও খবর শোনেন আবার কারও নয়, যেহেতু তাদের মধ্যে বিশ্বাস ঘাতকও থাকে কেউ কেউ। ফার্স্ট-ক্লাস বাচ্চাদের মধ্যেও কেউ কেউ বিশ্বাস ঘাতক হয়ে যায়। তেমনি কোনো কোনো থার্ড-ক্লাস বাচ্চাও । সামান্য জ্ঞান লাভ করলেই সে নিজেকে ভাবে আমি তো শিববাবারও বাবা হয়ে গেছি। তখন তাদের এই বোধটাও থাকে না যে, কে এই জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. সমগ্র বিশ্বের বাদশাহী প্রদানকারী এই বাবার প্রতি অনেক অনেক সম্মান রাখতে হবে। বাবার এই সেবাযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত করে জীবনকে সফল বানাতে হবে। পঠন-পাঠনের প্রতি পুরোপুরি মনোযোগ দিতে হবে।
২. বাবা যে জ্ঞান শোনাবেন তার বিচার সাগর মন্থন করতে হবে। কখনই কোনও কারণেই যেন বিঘ্নকারী হয়ে উঠো না। কোনও প্রকারের ডিস-সার্ভিস করবে না। অহংকারের বশবর্তী হবে না।
বরদান:-
নিরাকার আর সাকার এই উভয় রূপের স্মরণিককে বিধিপূর্বক উদযাপনকারী শ্রেষ্ঠ আত্মা ভব
দীপমালা (দীপাবলি) হলো অনেক অবিনাশী জাগ্রত দীপকের স্মরনিক। তোমরা হলে স্ফুলিঙ্গরূপী আত্মা, যাদের আলোর ঝলক প্রদীপের শিখার মতন। তাই সেই স্ফুলিঙ্গ রূপী দিব্য জ্যোতির স্মরণিক রূপে স্থুল দীপকের জ্যোতিকে দেখানো হয়। অর্থাৎ একদিকে যেমন নিরাকারী আত্মার রূপের স্মরণ আসে, অপরদিকে তোমাদেরই আগামীতে যে সাকার দিব্য রূপের স্বরূপ, তা লক্ষ্মীর রূপেই স্মরণে আসে। এমন দীপমালাই দেব-পদ প্রাপ্ত করতে পারে। অতএব তোমরাই হলে সেই শ্রেষ্ঠ আত্মা, যারা নিজেদের স্মরণিককে নিজেরাই পালন করছো।
স্লোগান:-
নেগেটিভকে পজিটিভে পরিবর্তন করার জন্য নিজের ভাবনাগুলিকে শুভ এবং শাশ্বত বানাও।