২০-০১-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত-বাপদাদা" রিভাইসঃ ১২-০৪-৮৪ মধুবন


ব্রাহ্মণ জীবনের ফাউন্ডেশন - পবিত্রতা

আজ, বাপদাদা সব হোলিহংস বাচ্চাকে লক্ষ্য করছেন, সকল হোলিহংস কতোখানি হোলি হয়েছে আর কতোখানি তারা হংস হয়েছে ! তারা কি পরিমাণ পবিত্রতা অর্থাৎ হোলি হওয়ার শক্তি কতোখানি তাদের জীবনে অর্থাৎ তাদের সঙ্কল্পে, উচ্চারিত বোলে এবং কর্মে, সম্বন্ধে, সম্পর্কের মধ্যে রেখেছে ! সমস্ত সঙ্কল্প কি হোলি অর্থাৎ পবিত্রতার শক্তিসম্পন্ন ? অপবিত্র সঙ্কল্প রয়েছে এমন কোনও আত্মাকে, পবিত্রতার সঙ্কল্প দ্বারা পরখ এবং পরিবর্তন করতে পারো তোমরা ? পবিত্রতার শক্তি দিয়ে যে কোনও আত্মার দৃষ্টি, বৃত্তি আর কৃতি বদল করতে সমর্থ তোমরা ? এই মহান শক্তির সামনে অপবিত্র সঙ্কল্প আক্রমণও করতে পারে না l যতোই হোক, তোমরা যখন নিজের সঙ্কল্পে, বোলে এবং কর্মে পরাস্ত হও, তখনই অন্য ব্যক্তি এবং ভাইব্রেশনের মধ্য দিয়ে তোমাদের পরাজয় হয় l কারও সঙ্গে সম্বন্ধ-সম্পর্কে পরাভূত হওয়া প্রমাণ করে যে বাবার সাথে সর্ব সম্বন্ধ জুড়তে তোমরা নিজেরা ব্যর্থ (পরাজিত ) হয়েছো, এইজন্য অন্য সম্বন্ধ-সম্পর্ক দ্বারা তোমরা পরাজিত হও l পবিত্রতার ক্ষেত্রে পরাস্ত হওয়ার বীজ হলো কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তির গুণ, স্বভাব, ব্যক্তিত্ব বা বিশেষত্ব দ্বারা প্রভাবিত হওয়া l এইরকম ব্যক্তি বা তার শারীরিক উপস্থিতিতে প্রভাবিত হলে, সেটা তার প্রভাবে আচ্ছন্ন বা বশীভূত হওয়া নয়, বরং ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া l ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশেষত্ব, গুণ বা স্বভাব বাবার দেওয়া বিশেষত্ব অর্থাৎ ঈশ্বরীয় (দাতা) দান l কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া অর্থাৎ প্রবঞ্চিত হওয়া l প্রবঞ্চিত হওয়ার অর্থই হলো দুঃখ নেওয়া l অপবিত্রতার শক্তি হলো মরীচিকার মতো ভ্রমিত হওয়ার শক্তি, যা সম্পর্ক বা সম্বন্ধের মধ্যে দিয়ে সহজেই অনুভব করা যায়, এতে তোমরা আকৃষ্ট হও l তোমরা ভাবো যে তোমরা ভালোত্বে প্রভাবিত হচ্ছ, এই কারণে তোমরা এই শব্দগুলোও উচ্চারণ করো বা ভাবো যে এনাকে আমার খুব ভালো লাগে বা এনার গুণ, স্বভাব আমার খুব পছন্দের l এনার জ্ঞান ভালো লাগে l এনার যোগ করানো ভালো লাগে l এনার থেকে আমি শক্তি, সহযোগ, স্নেহ পাই l তোমাদের স্বল্পকালীন প্রাপ্তি হয়, কিন্তু তোমরা প্রবঞ্চিত হও l তোমরা দাতাকে, অর্থাৎ বীজকে, ফাউন্ডেশনকে ভুলে গেছ আর রঙ-বেরঙের ডাল ধরে দুলছো, সুতরাং তোমাদের অবস্থা কি হবে ? বিনা ফাউন্ডেশনে শাখা তোমাদের দোলাবে নাকি পতন ঘটাবে ? যতোক্ষণ পর্যন্ত বীজ অর্থাৎ দাতা, বিধাতার থেকে সর্ব সম্বন্ধ, সর্বপ্রাপ্তির মাধুরী অনুভব না করবে ততক্ষণ কখনও ব্যক্তি দ্বারা, কখনও বৈভব দ্বারা, কখনও ভাইব্রেশন এবং বায়ুমন্ডল প্রভৃতি বিভিন্ন শাখা থেকে মরীচিকার মতো স্বল্পকালীন প্রাপ্তিতে তোমরা অবিরত ভুলপথে চালিত হবে l এইভাবে প্রভাবিত হওয়া অর্থাৎ অবিনাশী প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়া l যখন তোমাদের পবিত্রতার শক্তি থাকবে তখন যে স্থিতি চাইবে, যা কিছু প্রাপ্তি চাইবে, যে কার্যে সফলতা চাইবে, সেই সবকিছু তোমাদের সামনে যখনই চাইবে দাসীর মতো উপস্থিত হবে l এমনকি, কলিযুগের অন্তেও রজোপ্রধান পবিত্রতার শক্তি ধারণ করা নামধারী সব মহাত্মার সামনে প্রকৃতির দাসী হওয়ার প্রমাণ দেখছো l তাদের মহাত্মা নাম এখনো পর্যন্ত চলছে, এখনও তারা পূজনীয় l অপবিত্র সব আত্মা তাদের কাছে মাথা নোয়ায় l সুতরাং ভাবো, শেষ পর্যন্ত পবিত্রতার শক্তির কতো মহত্ত্ব এবং ঈশ্বরের থেকে প্রাপ্ত সতঃপ্রধান পবিত্রতা কতো শক্তিশালী হবে ! এই শ্রেষ্ঠ পবিত্রতার শক্তির সামনে অপবিত্রতা শুধু ঝুঁকেই থাকেনা, তোমাদের পদতলে থাকে l অপবিত্রতারুপী আসুরিক শক্তি, শক্তিস্বরূপের পদতলে দেখানো হয়েছে l যেকোন কিছু, যা বশ্যতাপূর্বক তোমাদের পদতলে, কিভাবে তা'তোমাদের পরাস্ত করবে!



ব্রাহ্মণ জীবনে পরাভূত হলে বলা হবে নামে মাত্র (নামধারী) ব্রাহ্মণ, এতে অমনোযোগী হয়ো না l ব্রাহ্মণ জীবনের ফাউন্ডেশন হলো পবিত্রতার শক্তি l যদি ফাউন্ডেশন দুর্বল হয় তবে প্রাপ্তির একুশ তলা বিল্ডিং কিভাবে টিকবে ? যদি ফাউন্ডেশন নড়বড়ে হয় তাহলে প্রাপ্তির অনুভব সবসময় হবে না অর্থাৎ না তোমরা অনড় থাকতে পারবে আর না বর্তমান যুগ এবং জন্মের মহান প্রাপ্তির অনুভব করতে পারবে l যুগের এবং এই শ্রেষ্ঠ জন্মের মহিমা করা জ্ঞানী ভক্ত হয়ে যাবে অর্থাৎ তোমাদের প্রতীতি থাকবে কিন্তু তুমি নিজে তা' হবে না, একে বলা হয় জ্ঞানী ভক্ত l যদি ব্রাহ্মণ হয়ে সর্বপ্রাপ্তির এবং সর্বশক্তির বরদান অথবা উত্তরাধিকার অনুভব না করা যায় তবে তাকে কি বলবে ?বঞ্চিত আত্মা নাকি ব্রাহ্মণ আত্মা ? পবিত্রতার ভিন্ন ভিন্ন রূপ ভালোভাবে জানো, নিজের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখো l শুধু অন্যদিকে নজর ঘোরানোই নয়, নিমিত্ত হওয়া আত্মাদের, এমনকি বাবার সাথেও তোমরা চাতুরীর চেষ্টা করো l সবসময় এটা হচ্ছে, এইরকম কে হয়েছে ? অথবা বলো, এটা অপবিত্রতা নয়, মহত্ত্ব, এটা সেবার সাধন l আমি প্রভাবিত হইনি, আমি শুধু সহযোগিতা নিচ্ছি l তিনি সহযোগী, সেইজন্য আমি প্রভাবিত l বাবাকে বিস্মৃত হওয়ার সাথে সাথে মায়ার গোলায় তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত হও l অথবা, নিজে রেহাই পাওয়ার জন্য তোমরা বলো, আমি এটা করিনি, অন্যজন করেছে l যেমনই হোক, যদি তোমরা বাবাকে বিস্মৃত হও, তাহলে তাঁকে তাঁর ধর্মরাজ রূপে সাক্ষাৎ করবে l বাবার সাথে সুখের সম্বন্ধ কখনো অনুভব করতে পারবে না l অতএব, কোনকিছু লুকিও না, রেহাই পেতে কোনো অজুহাত দেখিও না ! অন্যকে দোষারোপ কোরোনা l মরীচিকার আকর্ষণে প্রবঞ্চিত হয়োনা l পবিত্রতার এই ফাউন্ডেশনে, বাপদাদা ধর্মরাজের মাধ্যমে শতগুনে, লক্ষ কোটি গুনে (পদমগুন ) সাজা দিয়ে থাকেন l এর থেকে কোনও ছাড় নেই, এতে তিনি সদয় হতে পারেন না, এর কারণ তুমি বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গেছো তবেই তো কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছো l পরমাত্ম-প্রভাব থেকে বেরিয়ে আত্মাদের প্রভাবে প্রভাবিত হওয়া অর্থাৎ তুমি বাবাকে জানতে পারোনি, চিনতে পারোনি l এমন আত্মাদের সামনে তিনি বাবা রূপে নয়, বরং ধর্মরাজ রূপে সামনে থাকেন l যেখানে পাপ, সেখানে বাবা নেই l সুতরাং কখনো অনবধান হয়োনা l এটাকে ছোট ব্যাপার হিসেবে গণ্য কোরোনা l অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অর্থ কামনা থাকা, অর্থাৎ কাম বিকারের অংশ থাকা l কামনা ব্যতীত তুমি প্রভাবিত হতে পারবে না l সেই কামনাও কাম বিকার l *মহাশত্রু* l এটা দুই রূপে আসে l কামনা, হয় তোমাকে প্রভাবিত করবে অথবা তোমার মর্মান্তিক যন্ত্রণার কারণ হবে l সুতরাং, যেমন তোমরা স্লোগান দাও, *কাম বিকার নরকের দ্বার,* ঠিক সেভাবেই এখন তোমাদের জীবনে এই ধারণা রাখো, যেকোন রকমের স্বল্পকালীন কামনা মরীচিকার মতো প্রবঞ্চক অর্থাৎ কৌশলে ভুলপথে চালিত করে l কামনা অর্থাৎ ভুলপথে চালিত হওয়া l অতএব, কড়া নজর রেখে এই কাম অর্থাৎ কামনার ক্ষেত্রে কালীরূপ হও l স্নেহীরূপ হয়োনা আর বলোনা, সে অসহায়, ভালো, তার মধ্যে এটা সামান্য কিছুই আছে, ঠিক হয়ে যাবে l না ! বিকর্মের ক্ষেত্রে বিকরাল (ভয়ঙ্কর) রূপ ধারণ করো; অন্যের জন্য নয়, বরং নিজের জন্য, তবেই বিকর্ম বিনাশ করে ফরিস্তা হতে পারবে l যদি যোগ লাগাতে অসমর্থ হও তো চেক করো, নিশ্চয়ই কোনও লুকানো বিকর্ম তোমাকে এর নিজের দিকে আকর্ষণ করছে l ব্রাহ্মণ আত্মা যোগ লাগাতে অপারগ, এটা হতেই পারে না l ব্রাহ্মণের অর্থই হলো তুমি একের, তোমরা সবাই এক l সুতরাং কোথায় যাবে তোমরা ? যদি কিছু নাই থাকে তাহলে কোথায় যাবে ? আচ্ছা !



শুধু ব্রহ্মচর্য নয়, কাম বিকারের অন্য আরও ছোট ছোট বাচ্চা আছে l বাপদাদা একটা ব্যাপারে খুব আশ্চর্য হন l ব্রাহ্মণ বলে যে অন্য ব্রাহ্মণ আত্মার প্রতি তার ব্যর্থ দৃষ্টি, বৃত্তি বিদ্যমান l এটা কুল কলঙ্কিত করার বিষয় l তুমি বলবে বোন অথবা ভাই, এছাড়া কি করার আছে তোমার ! লৌকিক ভগিনীর প্রতি যদি কোনরকম কুদৃষ্টি যায়, অপবিত্র সঙ্কল্প ওঠে, তবে তাকে কুলকণ্টক বলা হয় l তাহলে এখানে কি বলা হবে ? এক জন্মের নয়, বরং জন্মের পর জন্ম কুলদূষক l রাজ্যভাগ্যের পদাঘাতকারী l এইরকম লক্ষ-কোটি (পদমগুন) বিকর্ম কখনো কোরোনা l এটা শুধু বিকর্ম নয়, মহা বিকর্ম, এইজন্য ভাবো, বোঝো এবং সতর্ক হও l এই পাপই তোমাকে যমদূতের মতো জড়িয়ে থাকবে l এখন যদিও ভাবছো যে তোমরা খুব মজায় আছো, কে বা দেখছে, কে বা জানছে ! যাই হোক, পাপের ওপরে পাপ জমা হয়ে যাচ্ছে আর এই পাপই তোমায় গ্রাস করবে l বাপদাদা জানেন, এই পাপের রেজাল্ট কতো কঠিন ! যেমন কেউ শরীর ছাড়ার সময় শারীরিক যন্ত্রনা ও কষ্টভোগে তার শরীর ছাড়ে, ঠিক তেমনই পাপের কারণে বুদ্ধি মানসিক যন্ত্রনা ও কায়ক্লেশে শরীর ছাড়বে l সামনে সবসময় পাপের এই যমদূত থেকে যাবে l অন্তিম অতি কঠিন, সেইজন্য বর্তমান সময়ে ভুলেও এমন পাপ কোরোনা l বাপদাদা শুধু তাঁর সমুখে বসা বাচ্চাদের বলছেন না, বরং চতুর্দিকের বাচ্চাদের সমর্থ বানাচ্ছেন l তিনি তোমাদের অবহিত করাচ্ছেন, দক্ষ বানাচ্ছেন l বুঝেছো তোমরা ? এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে l আচ্ছা l



যারা নিজেদের প্রতি ইশারা বুঝে, সদা নিজেদের পাপপূর্ণ সঙ্কল্প (বিকল্প ) এবং বিকর্মের জন্য কালীরূপ ধারণ ক'রে, বিভিন্ন ভাবে প্রবঞ্চিত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করে, দুঃখ থেকে নিজেদের পরিত্রাণ করে, এমন শক্তিশালী আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*বাছাই করা বিশেষ অব্যক্ত মহাবাক্য*

*ব্রহ্মাবাবার কদমে কদম রেখে (অনুকরণ, অনুসরণ, অনুগমন করে ) ব্রহ্মাচারী হও*



ব্রহ্মাচারী অর্থাৎ ব্রহ্মাবাবার আচরণ অনুসরণ করা l তোমাদের সঙ্কল্প, বোল আর কর্মরূপী কদম ব্রহ্মাবাবার কদমে ন্যাচারালভাবে রেখে চলতে হবে, যাকে বলা হয় ফুটস্টেপ l প্রতিটা পদক্ষেপে ব্রহ্মাবাবার আচরণ যেন প্রতীয়মান হয় অর্থাৎ এই মন, বাণী, কর্মের কদম ব্রহ্মাচারীর মতো হবে, যারা এইরকম ব্রহ্মাচারী তাদের সবসময় অন্তর্মুখী মনে হবে এবং তাদের চেহারায় ও আচরণে অতীন্দ্রিয় সুখ প্রতিভাত হবে l ব্রহ্মাচারী তারাই যাদের প্রতিটা কর্ম ব্রহ্মাবাবার কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করায় l তাদের বোল, ব্রহ্মাবাবার বোল সমান হয়, ব্রহ্মাবাবা সবকিছু যেভাবে করেছেন অর্থাৎ তাঁর ওঠা-বসা, দেখা, চলা, এইসবের সাথে তাদেরও সবকিছু করার পদ্ধতি একইরকম হয় l ব্রহ্মাবাবা যে নিজ সংস্কার তৈরি করেছিলেন, তাঁর শরীর ত্যাগের অন্তিম সময়েও সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন - নিরাকারী, নির্বিকারী, নিরহঙ্কারী হতে - তোমরা সব ব্রাহ্মণের এটাই ন্যাচারাল সংস্কার হবে, একমাত্র তখনই তোমাদের বলা হবে ব্রহ্মাচারী l তোমাদের স্বভাব-সংস্কারে বাবাসম হওয়ার নবীনত্ব থাকতে হবে l এটা তোমার সংস্কার, এই বলে নিজের অপরাধ ইত্যাদি মার্জনা কোরোনা, বরং যা বাবার স্বভাব, তোমারও সেই একইরকম স্বভাব হতে দাও l



পবিত্রতার ব্রত শুধুমাত্র ব্রহ্মচর্যের ব্রত নয়, বরং ব্রহ্মাবাবা সমান পবিত্রতার ভাইব্রেশন তোমাদের প্রতিটা বোলে সমাহিত হতে হবে l প্রতিটা বোল মহাবাক্য হতে হবে, সেইসব সাধারণ হবে না, অলৌকিক হবে l তোমাদের প্রতিটা সঙ্কল্পে পবিত্রতার মহত্ত্ব থাকা প্রয়োজন, প্রতিটা কর্মে কর্ম আর যোগ অর্থাৎ কর্মযোগী রূপে অনুভূত হতে হবে, একেই বলা হয়ে থাকে ব্রহ্মচারী এবং ব্রহ্মাচারী l তোমরা সবাই যেমন দেখেছো বা শুনেছো কিভাবে ব্রহ্মাবাবা সাধারণ তনে থাকা সত্ত্বেও তাঁর পুরুষোত্তম রূপ নয়নগোচরে আসতো l এমনকি, এখনও অব্যক্ত রূপে, সাধারণ থাকাকালীন তাঁর পুরুষোত্তম হওয়ার ঝলক তোমরা দেখতে পাও ! এইভাবে ফলো ফাদার l এমনকি, সাধারণ কর্ম যদিও বা করো, কিন্তু স্থিতি মহান হতে দাও l চেহারায় শ্রেষ্ঠ জীবনের প্রভাব প্রতীয়মান হতে দাও l তোমাদের সার্বিক আচরণে যেন সবার মধ্যে বাবাকে দেখার অনুভব হয়, একেই বলা হয় ব্রহ্মাচারী l



মুরলির প্রতি ব্রহ্মাবাবার বিশেষ অনুরাগ ছিলো, সেই কারণে তিনি মুরলিধর হয়েছিলেন l ভবিষ্যৎ শ্রীকৃষ্ণ রূপেও তাঁকে *'মুরলি'* বাদনরত দেখানো হয়েছে সুতরাং, যার জন্য বাবার প্রীতি ছিলো তার সঙ্গে প্রীতিযুক্ত থাকাই অনুরাগের লক্ষণ l একেই বলে ব্রহ্মাবাবার প্রিয় অর্থাৎ ব্রহ্মাচারী হওয়া l যে কোনো কর্ম করার পূর্বে, কোনো উক্তির পূর্বে, সঙ্কল্পের পূর্বে তোমরা চেক করো যে সেইসব ব্রহ্মাবাবা সমান হয়েছে কিনা l তারপরে সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করো, মুখনিঃসৃত বোল এবং কর্ম কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা ফলপ্রসূ করে তোলো l এমন ব'লোনা যে এইরকম তো ভাবিনি, অথচ হয়ে গেল l ব্রহ্মাবাবার এটাই বিশেষত্ব ছিলো, কোনকিছু বলার পূর্বে সেই বিষয়ে আগে ভাবতেন, তারপরে সেটা বলতেন বা অভ্যাসে পরিণত করতেন - এইভাবে যারা ফলো ফাদার করে তারাই ব্রহ্মাচারী হয় l



ব্রহ্মাবাবা দৃঢ় বিশ্বাস (নিশ্চয়) এবং আধ্যাত্মিক (রূহানী) নেশার আধারে নিয়তি-নির্দেশের জ্ঞাতা হয়ে সেকেন্ডে সবকিছু সফল করেছিলেন l তিনি নিজের জন্য কিছু রাখেননি, বরং সমস্ত কিছু সময়োপযোগী করে তুলেছিলেন অর্থাৎ প্রয়োজনের সাধন বানিয়েছিলেন l যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ তোমরা দেখেছিলে, অন্তিম দিন পর্যন্ত তিনি তন দ্বারা পত্র লিখে সেবা করেছেন, মহাবাক্য বলেছেন l তোমরা দেখেছিলে, অন্তিম দিনেও সময়, সঙ্কল্প এবং শরীর পরিস্থিতির উপযোগী করেছিলেন l সুতরাং, ব্রহ্মাচারী হওয়া অর্থাৎ যে সবকিছু কালোপযোগী করে তোলে l কালোপযোগী করার অর্থই হলো শ্রেষ্ঠ অভিপ্রায়ে ব্যবহার করা l যেমন ব্রহ্মাবাবা সদা প্রসন্নতা এবং গাম্ভীর্য, উভয় ক্ষেত্রে ব্যালেন্সের একরস স্থিতি বজায় রেখেছেন, সেইভাবে তোমরাও *ফলো ফাদার* l না কখনো কোনো বিষয়ে কনফ্যুজ্ হওয়া (তালগোল পাকিয়ে ফেলা) আর নাই কখনো কোনো ব্যাপারে মুড চেঞ্জ করা l সদাসর্বদা সকল কর্মে ফলো ব্রহ্মাবাবা করতে হবে, তবেই বলা হবে ব্রহ্মাচারী l



ব্রহ্মাবাবার সবচেয়ে প্রিয় স্লোগান ছিলো, *কম খরচ বালা-নশীন* অর্থাৎ কম খরচে অধিক লাভ l সুতরাং কম খরচে প্রসিদ্ধি লাভ করে দেখাও l খরচা কম হবে, কিন্তু কম ব্যয়ে যে প্রাপ্তি হবে তা' অতীব সুন্দর হবে l কম খরচে অনেক কার্য সম্পন্ন করতে তোমাদের সমর্থ হওয়া প্রয়োজন l এর অর্থ তোমরা এনার্জি অথবা সঙ্কল্প অধিক ব্যয় হতে দিও না l তোমরা অবশ্যই বেশি শব্দ ব্যয় কোরো না, কিন্তু তোমাদের সেই কম কথায় স্পষ্টভাব বেশি থাকতে হবে, সঙ্কল্প কম হবে কিন্তু তা' শক্তিশালী হতে দাও l একেই বলা হয়ে থাকে ব্যয় কম, সিদ্ধি লাভ বেশি অর্থাৎ ইকনমির অবতার l

ব্রহ্মাবাবা যেমন *'এক বাবা, দ্বিতীয় কেউ নয়'* অর্থাৎ এক এবং অদ্বিতীয় বাবার হয়ে প্র্যাকটিক্যালে তাঁর কর্মের মাধ্যমে দেখিয়েছেন l ঠিক একইভাবে যারা ব্রহ্মা বাবা সম হয়েছে, তাদেরও ফলো করতে হবে l ব্রহ্মাবাবার সমান এই দৃঢ় সঙ্কল্প থাকতে হবে যে কখনও ভগ্নোৎসাহ হবে না, বরং সদা খুশি মনে থাকবে l এমনকি মায়া যদি তোমাকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টাও করে, তবুও তুমি অস্থির হয়ো না l মায়া যদি হিমালয় যেমন বড়ো আকার ধারণ করে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই সময় রাস্তা খোঁজার চেষ্টা কোরো না, শুধু উড়ে যাও l যাদের উড়তি কলার স্থিতি তাদের ক্ষেত্রে পাহাড়ও এক সেকেন্ডে তুলোর মতো হয়ে যাবে l

সাকার ব্রহ্মা বাবার থেকে তোমরা পিওরিটির পার্সোনালিটি স্পষ্টরূপে অনুভব করতে l এটা তপস্যার অনুভবের লক্ষণ l একইভাবে, এই পার্সোনালিটি এখন তোমাদের মুখে এবং চেহারার মাধ্যমে অন্যদের অনুভব হতে দাও l ব্রহ্মাবাবা সাকার রূপে কর্মযোগী হওয়ার সিম্বল l যতোই কেউ দায়িত্বশীল হোক না কেন, ব্রহ্মাবাবা যেমন দায়িত্ব কারও ওপর নেই l সুতরাং, ব্রহ্মাবাবা যেমন তাঁর দায়িত্ব পালন করাকালীন কর্মযোগী থেকেছেন, নিজেকে করনহার মনে করে কর্ম করেছেন, করাবনহার মনে করেননি l এইভাবে *ফলো ফাদার* l যতোই মহান কার্য তোমরা করো, এমন মনে করো যে নৃত্যগুরু যেভাবে তোমাদের নাচাচ্ছেন তোমরা সেই অনুযায়ী নেচে যাচ্ছ, তাহলে আর ক্লান্ত হবে না, বিভ্রান্ত (কনফ্যুজ্) হবে না, বরং এভার হ্যাপি থাকবে l

বরদান:-

সত্যতার শক্তি দিয়ে সদা খুশিতে নেচে শক্তিশালী মহান আত্মা ভব

বলা হয়, *"সচ তো বিঠো নচ"* অর্থাৎ সত্য যেখানে, আত্মা নাচে সেখানে। যারা সত্যবাদী অর্থাৎ যাদের সত্যতার শক্তি থাকে তারা নিরন্তর নাচতে থাকবে, কখনো সতেজতা হারাবে না, বিভ্রান্ত হবে না, ভীত হবে না এবং তাদের দুর্বলতা অনুভূত হবে না l তারা খুশিতে সদাসর্বদা নাচতে থাকবে, শক্তিশালী হবে l তাদের সবকিছু মোকাবিলা করার শক্তি থাকবে l সত্য কখনও নড়বড়ে হয় না, অনড় হয় l সত্যের তরী হয়তো দুলবে, কিন্তু কখনও ডুবে যাবে না l সুতরাং, সত্যতার শক্তি ধারণ করে আত্মাই মহান হয় l

স্লোগান:-

ব্যস্ত মন-বুদ্ধিকে সেকেন্ডে স্টপ করাই হল শ্রেষ্ঠ অভ্যাস l