০৮-০৬-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - স্মরণের যোগ আর এই জ্ঞানের পাঠেই তোমরা ডবল মুকুট পেয়ে থাকো, অতএব নিজের নিজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে দৈবী-গুণগুলি ধারণ করো"
প্রশ্ন:-
বিশ্ব-রচয়িতা এই বাবা বি.কে. বাচ্চাদের প্রতি কি প্রকারে সেবা করেন ?
উত্তর:-
(১) অসীম-জগতের বাবা অসীম-জগতের অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রদানের মাধ্যমে বিশেষ এই সেবা করেন, বাচ্চাদের সুখ-শান্তির লক্ষ্যে। বাবার মতন এমন নিষ্কামী সেবা আর কেউই করতে পারে না। (২) অসীম জগতের বাবা অন্যের সিংহাসন ভাড়া নিয়ে, বি.কে.-দেরকে বিশ্ব-অধিকারী সিংহাসনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন, অথচ যিনি নিজে কোনও প্রকারের আসনে বিরাজমান হন না, কিন্তু বাচ্চাদেরকে ময়ূর-সিংহাসনে বসান। এদিকে লোকেরা তো বাবার কত প্রকারের জড় মন্দির তৈরী করে, কিন্তু তাতে তারা বাবার বিষয়ে আর কি বা জানতে পারে! প্রকৃত মজা তো সেই বাচ্চারাই পায় - যারা স্বর্গ-রাজ্যের রাজ্য-ভাগ্য পায়।
ওঁম্ শান্তি!
মিষ্টি-মিষ্টি আত্মারূপী বাচ্চাদের প্রতি আত্মাদের বাবা পরমাত্মা বলছেন- বাচ্চারা, তোমরা নিজেদেরকে আত্মা মনে করে বাবা অর্থাৎ পরমাত্মাকে স্মরণ করো। ওঁম্ শান্তির প্রকৃত অর্থ তো তোমাদের জানা আছে। বাবা যেমন ওঁম্ শান্তি বলেন - বাচ্চারাও তেমনি ওঁম্ শান্তি বলে। যেহেতু আত্মার স্বধর্মই হলো শান্তি ! তোমরা জানো, এখানে এসেছো শান্তিধাম থেকে। প্রথমে তোমরা যাও সুখধাম, তারপর ৮৪-বার পুনর্জন্ম নিতে নিতে এই দুঃখধামে পৌঁছাও- তা নিশ্চয় স্মরণে আছে। তোমাদের এই ৮৪-জন্ম হয় "জীব-আত্মা" রূপে। বাবা কিন্তু এমন জীব আত্মা হন না। উনি জানান- "অস্থায়ী রূপে আমি (বাবা) এনার (ব্রহ্মার) শরীরকে আধার বানাই। তা না হলে এই জ্ঞানের পাঠ পড়াবো কিরূপে ? প্রতিমুহূর্তেই বারে বারে এই কথা বলে বাচ্চাদের সতর্ক করবো কিভাবে - "মন্মনাভব"! ফলে তোমরাও তোমাদের (সুখের) রাজ্যকে স্মরণ করতে থাকো। আর সেকেন্ডেই তোমরা সমগ্র বিশ্বের মালিক হতে পারো।" অসীম জগতের বাবা যেখানে, সেখানে তো অসীম জগতের খুশীই তো হবে, যেহেতু তা অসীম জগতের অবিনাশী উত্তরাধিকার। আবার যেহেতু উনি আত্মাদের বাবা, তাইনসহজ দিশাই দেখাবেন উঁনি। এবার বাবা বলছেন - "এখন এই দুঃখ-ধামকে তোমরা মন-বুদ্ধি থেকে ঝেড়ে ফেলো। নতুন স্বর্গ-রাজ্যের স্থাপনা হতে চলেছে যে। সেখানকার মালিক হবার জন্য একমাত্র পরমাত্মাকেই স্মরণ করো, তবেই তোমাদের পাপের কালিমা ভষ্ম হবে। আবারও তোমরা সতোপ্রধান হয়ে যাবে। একেই সহজ যোগ বলা হয়।" লৌকিকে যেমন বাচ্চারা তাদের লৌকিক বাবাকে কত সহজেই স্মরণ করে। ঠিক তেমন ভাবেই অসীম-জগতের এই পারলৌকিক বাবাকে স্মরণ করতে হয়। তবেই বাবা দুঃখ-কষ্টের দুনিয়া থেকে উদ্ধার করে সুখধামে পৌঁছে দেন। যেখানে দুঃখের নামগন্ধও নেই। কত সহজ-সরল ভাবে বোঝাচ্ছেন, নিজেদের ধাম শান্তিধামকে স্মরণ করতে। পরমাত্মা বাবার গৃহই তো (আত্মা) বাচ্চাদের গৃহ। সেই শান্তিধাম আর নতুন জগতকেই (সুখধাম) স্মরণ করো- যা আগামীতে তোমার নতুন রাজধানী।
বাচ্চারা, এই বাবা তোমাদের প্রতি কত নিষ্কাম সেবা করেন। তোমাদের কত সুখের ব্যবস্থা করেন, যদিও এখন ওঁনার বাণপ্রস্থ অবস্থা। এর পরে পরমধামে বসে বিশ্রাম নিতে থাকেন। প্রকৃত অর্থে তোমরাও কিন্তু পরমধামের বাসিন্দা। যাকে আবার নির্বাণধাম, বাণপ্রস্থ-ধাম ইত্যাদিও বলে। বাবা এখানে আসেন বাচ্চাদেরকে সেবা ও সাহায্য করতে -অর্থাৎ অসীম জগতের অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রদান করতে। ব্রহ্মা নিজেও এই বাবার কাছ থেকে সেই একই অবিনাশী উত্তরাধিকার নিয়ে থাকেন। বাবা অর্থাৎ 'শিববাবা' হলেন উচ্চতমেরও উচ্চে- যিনি 'ভগবান'। এই ভগবান শিব-বাবার আবার মন্দিরও আছে। ওঁনার কিন্তু কোনও বাবা এবং টিচার নেই। অথচ সমগ্র সৃষ্টি-জগতের আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান কেবলমাত্র ওঁনার কাছেই আছে। কিন্তু উনি তা পেলেন কোথা থেকে ? উনি কি কোনও বেদ-শাস্ত্র ইত্যাদির অধ্যায়ন করেছেন ? - না! এই বাবা স্বয়ং জ্ঞানের-সাগর, সুখ ও শান্তির-সাগর। বাবার মহিমা আর দৈবী-গুণধারী মানুষের মহিমার মধ্যে বিস্তর তফাৎ। বাচ্চারা, তোমরা সেই দৈবী-গুণগুলি ধারণ করেই দেবতা হও। দেবতা হবার পূর্বে তোমরা থাকো আসুরী গুণধারী। তোমাদের অসুর থেকে দেবতা করে গড়ে তোলা - এটাই তো এই বাবার বিশেষ কর্ম-কর্তব্য। আর তা হবার জন্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তো তোমাদের সামনেই থাকে। অতএব এর জন্য তোমাদেরকেই সেইসব শ্রেষ্ঠ কর্মগুলি করতে হবে। কর্ম-অকর্ম-বিকর্মের গতি-প্রকৃতি, কিম্বা যে কোনও কিছুই বোঝার জন্য এক সেকেন্ডই যথেষ্ট।
এবার বাবা বলছেন - মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, কর্মফলের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট তো সবাইকে করতেই হয়। এই পার্ট অনাদি, অবিনাশী। এই সুখ-দুঃখের খেলা খেলতে এমন আরও অনেকবার খেলেছো তোমরা। এই ভাবেই কতবার বিশ্বের মালিকও হয়েছো। সত্যি, এই বাবা তোমাদেরকে কত উন্নত করে গড়ে তোলেন। যিনি পরমাত্মা অর্থাৎ সুপ্রিম-সোল। ওঁনার আকারও তোমাদের আত্মার মতনই অতি ক্ষুদ্র। এমন বাবা আবার জ্ঞানেরও সাগর। বাবা তোমাদেরকে ওঁনার নিজের মতন করেই গড়ে তোলেন। তাই তো তোমরাও প্রেমের-সাগর, সুখের-সাগর হতে পারো। দেবতাদের নিজেদের মধ্যে কি সুন্দর প্রেম-প্রীতির সংস্কার ও সদ্ভাব। কোনও সময়েই-কোনও কারণে ঝগড়াঝাঁটি হয় না। যেহেতু বাবা এসে ওঁনার নিজের মতন করেই গড়ে তোলেন। এমনটা আর কেউই যে পারে না৷ তোমাদের এই খেলা চলে কেবল এই স্থুল-জগতেই। যার শুরুতে থাকে আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম, তারপর ইসলামী ধর্ম, পরে বৌদ্ধ...ইত্যাদিরা। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই নাট্যশালায় এভাবেই সবাই আসতে থাকে, যার যার নিজের নিজের ক্রমিক অনুসারে। কিন্তু ৮৪-বার জন্ম পাও কেবল তোমরা বি.কে.-রাই। প্রবাদও আছে - আত্মা আর পরমাত্মা পৃথক থাকে বহুকাল (আবার তাদের মিলন হয় যখন মিলে দালাল[ব্রহ্মা])। তাই বাবা বলছেন - আমার মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের নাটকে শুরুর পার্টধারী তোমরাই। আমি তো অল্প সময়ের জন্য এখানে এসে ওনার শরীরে প্রবেশ করি। এনার এই (বাণপ্রস্থের) শরীর পুরানো জুতার মতন। যেমন পুরুষদের এক স্ত্রী মারা গেলে বলে যে, পুরোনো জুতো চলে গেল, অতএব এবার আমাকে আবার আর একটা নতুন জুতা নিতে হবে। তেমনই ওনার বর্তমান এই শরীরটাও যে পুরানো। তবুও উনি যে পুরো ৮৪-জন্ম নিয়েছেন। "ততত্বম্ " (তেমনই কেবল তোমরা বি.কে.-রাই)। অগত্যা আমি এসে এনার এই পুরোনো রথকেই আধার বানাই। পবিত্র দুনিয়ায় কিন্তু আমাকে আসতেই হয় না। যখন তোমরা পতিত হয়ে আমাকে আহ্বান করতে থাকো -"বাবা তুমি এসে আমাদেরকে পবিত্র বানাও। তখন তোমাদের সেই কাতর ডাকে অবশেষে আমি এসে তোমাদের সেই আশা ফলীভূত করি। আর সেই বিশেষ সময়টা হলো, যখন এই পুরোনো দুনিয়ার বিনাশের সময় অতি নিকটবর্তী হয়, তখনই আমি আসি। কারণ এই ব্রহ্মার দ্বারাই যে সেই স্থাপনা কার্য চলবে। যার প্রকৃত অর্থ হলো (বি.কে.) ব্রাহ্মণদের দ্বারা। তাই তো কল্পবৃক্ষের মাথাতেই ব্রাহ্মণ, তারপরে ক্ষত্রিয় ....... এমন ভাবেই (বাজোলী) -এই ডিগবাজীর খেলার মতন ক্রমান্বয়ে চলতেই থাকে। অতএব বাচ্চারা, এখন দেহ-অভিমান ভুলে গিয়ে দেহী-অভিমানী হতে হবে তোমাদের।
বাচ্চারা, পুরো কল্পে তোমাদের ৮৪-বারের জন্মচক্রে আসতে হয়, কিন্তু মাত্র ১-বার এনার (ব্রহ্মার) শরীরকে আধার বানাবার জন্য ভাড়া দিয়ে লোন নিতে হয় আমাকে। কোনও ঘর-বাড়ি ইত্যাদির মালিকও নই আমি। সময়ানুযায়ী এই আধারকেও ছেড়ে দেই আমি, যেহেতু ওনাকে যে তার ভাড়া দিতে হয় আমাকে। বাবা আরও বলছেন-এই ঘর-বাড়ী ব্যবহারের জন্যও ভাড়া মেটাতে হয় ওনাকে। যেহেতু উনি অসীম জগতের বাবা, তাই ভাড়াও তেমনই দেন উঁনি। উনিও (ব্রহ্মা) তেমনি ময়ূর সিংহাসন পান ! এসব বলার কারণ, তোমাদেরকে তা বোঝাবার জন্য। বাবা তোমাদেরকে এমনই সুন্দর ও সহজ-সরল ভাবে সবকিছুই বোঝান, যাতে বাচ্চারা সহজেই বিশ্ব-সিংহাসনের অধিকারী হতে পারে। বাবা স্বয়ং জানাচ্ছেন - উনি এসব কোনও প্রকারের অধিকারই ভোগ করেন না। উপরন্তু তিঁনি বাচ্চাদেরকে এমন সিংহাসনে বাসান- যাকে ময়ূর-সিংহাসন বলা হয়। তাই তো এই শিববাবার এমন মহিমাকে স্মরণীয় করার উদ্দ্যেশে সোমনাথের মন্দির। বাবা বলেন-এসবে আমার কোনও রুচি নেই। সেখানে তো শিবের জড়-পুতুল রাখা আছে। আসল মজা তো তোমরা বাচ্চারা পাও, যখন স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছাও তোমরা। যদিও আমি নিজে সেই স্বর্গ-রাজ্যে যাই না। এরপর ভক্তিমার্গের শুরু হলে তোমরা কত মন্দির-সৌধ, অট্টালিকা ইত্যাদি কতকিছু বানিয়ে কত খরচও করো। কিন্তু চোরেরা এসে সেসব লুটপাট করে নিয়ে যায়। রাবণের এই রাজ্যে তোমাদের ধন-দৌলত ইত্যাদি সবকিছুই নিঃস্ব হয়ে যায়। কোথায় এখন সেই রত্ন - খোঁদিত ময়ূর সিংহাসন ? বাবা বলেন, তোমরা তো আমার স্মৃতিতে কত অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করেছিলে, কিন্তু মহম্মদ গজনী এসে সবকিছুই লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভারতের মতন এত সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ দ্বিতীয়টি আর ছিল না। এত অধিক ও সুন্দর তীর্থস্থান -এমনটি আর অন্য কোনও দেশ করে উঠতে পারেনি। কিন্তু সর্বত্রই সেগুলি এখন হিন্দু ধর্মের তীর্থস্থান হয়েছে। বাস্তবে এই বাবাই তো সবার সদগতিদাতা - তাই তীর্থ তো কেবল ওঁনার স্থানেই হওয়া উচিত। কিন্তু এসব তো তেমনি হবে, যেমনটা আছে সেই অবিনাশী ড্রামার চিত্রপটে। যা বুঝতে পারলে এসব খুব সহজ মনে হবে৷ অবশ্য সেই বোধেরও তারতম্য আছে, জ্ঞানের ক্রমিক অনুসারে। এখন তোমাদের জন্য নতুন রাজধানী স্থাপনের কার্য চলছে।
স্বর্গ-রাজ্যের মালিক লক্ষ্মী-নারায়ণ। যারা উত্তম থেকেও অতি উত্তম-পুরুষ, অর্থাৎ যাদেরকে দেবতা বলা হয়। দেবতা অর্থে যারা দৈবী-গুণগুলির সব বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ। এই উচ্চ দেবতা ধর্মের আত্মারা কিন্তু প্রবৃত্তি-মার্গের। সেই সময়কালের যারা (দেবতারা), অর্থাৎ তোমরা তখনও প্রবৃত্তি-মার্গেরই হও। কারণ, বাবা যে তোমাদেরকে ডবল মুকুটধারী করে গড়ে তোলেন। পরে রাবণ তোমাদের সেই মুকুট ছিনিয়ে নেয়। আর এখন তো তোমাদের কোনও মুকুটই নেই- না আছে পবিত্রতার মুকুট আর না আছে ধন-রত্নের মুকুট। তোমাদের এই দু-ধরণের মুকুটই রাবণ ছিনিয়ে নিয়েছে। বাবা এসে আবার তোমাদেরকে সেই দুই-মুকুটের ব্যবস্থা করেন, স্মরণের যোগ আর এই জ্ঞানের পাঠ দ্বারা। সেই সুপ্ত স্মৃতিতেই তো তোমরা এমন ভাবে বাবাকে বলতে থাকো- "ও গড্-ফাদার একমাত্র তুমিই আমাদের সঠিক দিশার গাইড-নির্দেশক, আমাদেরকে মুক্ত করো। গাইড বাবার বাচ্চা হওয়ার কারণে তোমাদেরকেও পাণ্ডা বলা হয়। আত্মারাই পাণ্ডব, কৌরব আর যাদবের ভূমিকায়। তোমরাই বাবাকে বলো- "আমাদের এই দুঃখ-কষ্টের দুনিয়া থেকে মুক্ত করে তোমার সাথে নিয়ে চলো। এই বাবাই সেই সত্যখণ্ডের স্থাপনা করেন, যা স্বর্গ-রাজ্য নামে পরিচিত। আর রাবণ সেই রাজ্যকেই মিথ্যাখণ্ডে পরিবর্তন করে। যেমন, রাবণ-রাজ্যের লোকেরা বলে- "কৃষ্ণ ভগবান উবাচ" আর বাবা বলেন- "শিব ভগবান উবাচ"! সর্বাগ্রে ভারতবাসীরাই এই উল্টো নামের উল্লেখ করে যা পরবর্তীতে সমগ্র দুনিয়াই সেই উল্টো ধারণাকেই প্রচার করে। কিন্ত কৃষ্ণ যে দেহধারী। বিদেহী কেবল এই এক ও একমাত্র শিববাবা। বাচ্চারা, এই বাবার থেকেই তোমাদের সেই শক্তি প্রাপ্ত হয়, যে শক্তিতে তোমরা সমগ্র বিশ্বের মালিক হতে পারো। তখন আকাশ থেকে ধরিত্রী সর্বত্রই তোমাদের অধিকারে। তখন অন্য কারও ক্ষমতা থাকে না যে, তোমাদের থেকে তা ছিনিয়ে নিতে পারে, কল্প শুরুর এক-চতুর্থাংশ সময়ে। এরপর তাদের বৃদ্ধির ফলে তারা সংখ্যায় যখন কোটি কোটি হয়, তখন তারা সৈন্য-সামন্ত, লোক-লস্কর নিয়ে এসে তোমাদের উপর বিজয় লাভ করে।
বাবা বাচ্চাদের জন্য কত অপার সুখের ব্যবস্থা করেন। তাই তো ওনাকে বলা দুঃখ-হর্তা, সুখ-কর্তা। সেই বাবা স্বয়ং এখন তোমাদের সামনে বসে কর্ম-অকর্ম-বিকর্মের গতি-প্রকৃতির দর্শণগুলি বোঝাচ্ছেন তোমাদেরকে। যেমন রাবণ-রাজ্যে কর্ম হয়ে যায় বিকর্ম, তেমনি সত্যযুগের কর্মও হয় অকর্ম। তোমরা এখন যে সদগুরুকে পেয়েছো, ওনাকেই বলা হয় পতিদেরও পতি। কারণ সব পতিরাই যে এই পতিকে স্মরণ করে। তাই তো বাবা বলছেন - "সত্যি, কি ওয়ান্ডারফুল ড্রামা এটা। এই ক্ষুদ্র এক আত্মার মধ্যে কত অবিনাশী পার্ট ভরা থাকে। যা কখনো মুছে যায় না। তাই তো এই ড্রামাকে বলা হয় 'অনাদি-অবিনাশী ড্রামা।'' গড্ অর্থাৎ ভগবান তো মাত্র একজনই। এর রচনা, কিম্বা সিঁড়ি অথবা চক্র - এগুলি সবই এক ধারায়। লোকেরা এই রচনাকে যেমন জানে না, তেমনি এর রচয়িতাকেও কেউ জানে না। এমন কি ঋষি-মুণীরাও জানান-তারাও তা জানে না। তোমরা বি.কে.-রা অবস্থান করছো বর্তমানের সঙ্গমযুগে। মায়ার সাথে যুদ্ধ কেবল তোমরাই করো। মায়া কিন্তু তোমাদের ছাড়তেই চায় না। অনেক বাচ্চাই বলে - বাবা, মায়া থাপ্পড় মেরেছে। তখন বাবা বলেন- বাচ্চারা, তোমাদের এত কষ্টে অর্জিত পুণ্য এভাবে নষ্ট করে দিলে! যেখানে ভগবান স্বয়ং তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন, সেখানে তো নিয়ম মেনে খুব মনোযোগ সহকারে পঠন-পাঠন করা উচিত তোমাদের। যেহেতু, এমন উন্নত পাঠ পড়ার সুযোগ আবার পাবে পুরো ৫-হাজার বছর বাদে। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ স্মরণ ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. এই দুঃখ-ধামের বুদ্ধির যোগ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন দুনিয়ার স্থপতি এই বাবাকে স্মরণ করতে করতে সতোপ্রধান হতে হবে।
২. বাবার মতন প্রেমের সাগর, শান্তি আর সুখের সাগর হতে হবে। কর্ম-অকর্ম আর বিকর্মের গতি-প্রকৃতিগুলি জেনে সদা শ্রেষ্ঠ কর্মই করতে হবে।
বরদান:-
যেমনই বায়ুমন্ডলই হোক, মন-বুদ্ধিকে সেকেন্ডেই একাগ্র করে সর্বশক্তি সম্পন্ন হও
বাপদাদা সব বাচ্চাকেই সর্ব-শক্তির অবিনাশী উত্তরাধিকার দেন। স্মরণের যোগে শক্তির অর্থ হলো, মন-বুদ্ধিকে যখন যেখানে যেমন চাইবে সেখানে তেমনই লাগাতে পারবে। বায়ুমন্ডল যেমনই হোক না কেন, তারই মাঝে নিজের মন-বুদ্ধিকে সেকেন্ডেই একাগ্র করে নেবে। পরিস্থিতি যতই অস্থির হোক না কেন, বায়ুমন্ডল যতই তমোগুণী হোক, মায়া যতই তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করুক না কেন, তবুও সেকেন্ডের মধ্যেই একাগ্র হতেই হবে - এমন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকলে তবেই তাকে বলা যাবে সর্বশক্তি সম্পন্ন।
স্লোগান:-
বিশ্ব কল্যাণের দ্বায়িত্ব আর পবিত্রতার লাইট-এর মুকুটধারীরাই ডবল মুকুটধারী হয়।