২১-০৬-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - এই শরীর সহ যা কিছুই দৃশ্যমান, সে সবই বিনাশের অপেক্ষায়, তোমরা অর্থাৎ আত্মাদেরকে এখন আপন ঘরে ফিরতে হবে যে, অতএব এই পুরানো দুনিয়াকে ভুলে যাও"

প্রশ্ন:-

বাচ্চারা, তোমরা কোন্ এমন বাক্যের দ্বারা সবাইকে বাবার বার্তা শোনাতে পারো ?

উত্তর:-

সকলকেই শোনাও যে, অসীম জগতের বাবা অসীমের অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রদানের জন্যই এসেছেন। জাগতিক উত্তরাধিকারের সময় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে অর্থাৎ ভক্তি-মার্গের সময় সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই এবার এই রাবণ-রাজ্যও সমাপ্তির পথে। বাবা স্বয়ং এসেছেন তোমাদেরকে রাবণের ৫-বিকারের কয়েদ থেকে মুক্ত করতে। বর্তমানের এই সময়টা - পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ, এই সময়কালের মধ্যেই উপযুক্ত পুরুষার্থ করে দৈবী-গুণধারী হতে হবে তোমাদের। সঠিক ভাবে কেবলমাত্র এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগের ধারণা স্পষ্ট হলেই তুমি শ্রেষ্ঠ স্থিতিতে স্থিত হতে পারবে।

ওঁম্ শান্তি!

আধ্যাত্মিক বাচ্চারা, কি করছো তোমরা এখন ? - তোমরা এখন অব্যভিচারী স্মরণের যোগে বসে আছো। স্মরণের যোগ দুই প্রকারের ১) অব্যভিচারী স্মরণের যোগ, ২) ব্যভিচারী স্মরণের যোগ। অব্যভিচারী স্মরণের যোগ কিম্বা অব্যভিচারী ভক্তির শুরুতে সবাই কেবলমাত্র এক শিবকেই পূজা করে। যেহেতু তিনি উচ্চতমেরও উচ্চ অর্থাৎ ভগবান। উনি যেমন আত্মাদের বাবা, তেমনি আবার শিক্ষকও বটে। উনিই আত্মাদেরকে এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ান। কিন্তু কি সেই পাঠ ? যে পাঠের দ্বারা মনুষ্য দেবতায় পরিণত হয়। কিন্তু দেবতা থেকে এই মনুষ্য জন্মে আসতে হলে তোমাদেরকে ৮৪-জন্ম নিতে হয়। আর মনুষ্য থেকে দেবতা হতে সময় লাগে মাত্র এক-সেকেণ্ড। বাচ্চারা, তোমরা অবশ্য তা জেনেছো। এখন এখানে বসে তোমরা সবাই সেই বাবাকেই স্মরণ করছো। যে বাবা আবার তোমাদের টিচার আর সদগুরু। উনিই সেই সহজ রাজযোগ শেখান- যেখানে স্মরণ করতে হয় এক ও একমাত্র বাবাকেই। বাবা স্বয়ং তোমাদের বলছেন - "ওহে আত্মারা, হে আমার বাচ্চারা, দেহের সর্ব সম্বন্ধ ত্যাগ কর, এখন যে তোমাদের ঘরে ফেরার পালা। এই পুরানো দুনিয়ার পরিবর্তণ হতে চলেছে। এখানে এখন আর থাকা উচিত নয়। এই পুরনো দুনিয়া বিনাশের লক্ষ্যে কত প্রকার বারুদ ইত্যাদি তৈরিও হয়েছে। যার সাহায্যকারী রূপে আছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বিনাশ তো অবসম্ভাবী। তোমাদের আত্মাও তা জানে। বর্তমানে তোমরা রয়েছো পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে। আত্মারা এখন আপন ঘরে ফেরার প্রস্তুতিতে। তাই তো বাবা জানাচ্ছেন - এই পুরনো দুনিয়া আর পুরনো দেহকে ত্যাগ তো করতেই হবে। অতএব দেহ সহিত এই দুনিয়ায় যা কিছুই দৃশ্যমান, সে সব কিছুরই বিনাশ হবে। এই শরীরেরও শেষ হবে। যেহেতু সব আত্মাদেরকেই এবার ঘরে ফিরতে হবে যে। ঘরে ফিরে না গেলে যে নতুন দুনিয়ায় আসতে পারবে না। তাই তোমরা এখন পুরুষোত্তম হবার লক্ষ্যেই পুরুষার্থ করে চলেছো। দেবতারাই পুরুষোত্তম। আর সবচেয়ে উচ্চতমেরও উচ্চে হলেন নিরাকার বাবা। আবার মনুষ্য সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে উচ্চে দেবতারা। তারাও মনুষ্য কিন্তু দৈবী-গুণধারী। তারাই আবার পরবর্তীতে আসুরী গুণধারী হয়। এখন এই সময়কালটা হলো, আসুরী গুণধারী থেকে দৈবী গুণধারী হবার। যেহেতু সত্যযুগে যেতে হবে যে। কিন্তু কাদেরকে ? --তোমাদের অর্থাৎ বি. কে.-দেরকে। বাচ্চারা, তোমরা নিজেরা যেমন ভাবে পঠন-পাঠন করো, অন্যদেরও তেমনি করেই পড়াবে। সবাইকে অসীমের এই বাবার বার্তা জানাবে। বলবে - অসীম জগতের বাবা স্বয়ং এসেছেন অসীমের অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রদানের জন্য। অসীমের এই অবিনাশী উত্তরাধিকার পাওয়ার সুযোগ একেবারেই শেষের পর্যায়ে।



বাবা এবার বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন - "৫-বিকারের রাবণের কয়েদে এখন সব মানুষ । তাই সবারই জীবনে এত দুঃখ-কষ্ট। লোকেরা কেবল শুখনো রুটি-ই পায়। তাই বাবা এসে সবাইকে রাবণের কয়েদ থেকে মুক্ত করে সদাকালের সুখী করে গড়ে তোলেন। একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই পারে না মনুষ্যকে দেবতা করে গড়ে তুলতে। তোমরা বি.কে.-রাও এখানে এই ক্লাসে বসে আছো, মনুষ্য থেকে দেবতা হওয়ার লক্ষ্যে। কলিযুগ চলছে এখন। তাই দুনিয়ায় এত অনেক ধর্মের সমাহার। বাবা স্বয়ং তোমাদেরকে রচনা আর রচয়িতার পরিচয় জানাচ্ছেন, - এতদিন তোমরা যাকে কেবলমাত্র ঈশ্বর ও পরমাত্মা বলেই জানতে। ধারণাই ছিল না যে, প্রকৃত অর্থে তিনিই একধারে যেমন বাবা, তেমনি টিচার, আবার গুরুও বটে। তাই তো কেবলমাত্র উনিই এক ও একমাত্র সদগুরু। ওনাকেই আবার 'অকালমূর্ত'-ও বলা হয়। আর তোমরা হলে আত্মা ও জীব = জীবাত্মা। সেই 'অকালমূর্ত' ব্রহ্মার শরীর রূপী রথে অবস্থান করেন। যেহেতু ওঁনার কোনও জন্ম হয় না। অকালমূর্ত বাবা স্বয়ং এখন বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন - " আমার নিজের কোনও রথ (শরীর) হয় না, তবে কি ভাবেই বা তোমাদের পবিত্র করবো, এই কারণেই আমারও তো কোনও রথের দরকার। যদিও আমি 'অকালমূর্ত', তবুও কোথাও না কোথাও আমাকে তো অবস্থান করতেই হবে। কেবল মনুষ্যেরই থাকে 'অকাল সিংহাসন', (আত্মার অবস্থানের স্থল) যা আর কিছুতেই থাকে না। আত্মাদের প্রত্যেকেরই সেই আসন থাকে। 'অকালমূর্ত' আত্মা (পরমাত্মা) সেখানেই বিরাজিত হন। উনি সকল আত্মাদেরই বাবা। ওঁনাকেই বলা হয় 'মহাকাল', তাই ওঁনাকে পুনর্জন্মের চক্রে জন্ম নিতে হয় না। কিন্তু তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদের পুনর্জন্মের চক্রে আসতেই হয়। পুরো কল্পে আমি একবারই আসি এই সঙ্গমযুগে। ভক্তি-মার্গকে রাত আর জ্ঞান-মার্গকে দিন বলা হয়। একথা মনে গেঁথে নিতে হবে। মুখ্য দুটি শব্দ হলো - 'অল্ফ্' আর 'বে', বাবা আর বাদশাহী। বাবা আসেন সেই বাদশাহী দিতে। যে বাদশাহী নিতে গেলে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন। তাই বাবা এসে সেই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ান। যেহেতু এখানে পঠন-পাঠন হয়, তাই একে পাঠশালা বলা হয়।



ভগবান উবাচ, ভগবান স্বয়ং বলছেন- প্রকৃত অর্থে ভগবান তো নিরাকার। কিন্তু ওঁনারও তো (সন্তানদের প্রতি) কর্ম-কর্তব্যের পার্ট হওয়া উচিত। যদিও উনি উচ্চতমেরও উচ্চে অর্থাৎ ভগবান, যাকে সবাই স্মরণ করে। সে কথাই বাবা জানাচ্ছেন, ভক্তি-মার্গে এমন কোনও মনুষ্য নেই, যে বাবাকে স্মরণ করে না। অন্তর থেকে তারা ডাকতে থাকে বাবাকে।বলে -"হে ভগবান, ওহে মুক্তিদাতা, হে ঈশ্বর, ও গড-ফাদার ইত্যাদি ইত্যাদি।" যেহেতু উনি যে সব আত্মাদেরই ফাদার। তাই উনি অবশ্যই ওঁনার বাচ্চাদের অসীম জগতের অবিনাশী উত্তরাধিকারের সুখই প্রদান করবেন। যেমন জাগতিক পিতারা তার নিজের বাচ্চাদের জগতের সুখ দেন। কিন্তু লোকেরা তো জানেই না যে, অসীমের বাবা স্বয়ং এখন এখানেই এসেছেন। তাই বাবা তোমাদের জানাচ্ছেন - "বাচ্চারা, জাগতিক সবকিছু ঝেড়ে ফেলে এক ও একমাত্র এই বাবাকেই স্মরণ করতে থাকো।" বাবা আরও জানাচ্ছেন- "তোমরাই দেবী-দেবতা হয়ে নতুন দুনিয়ার বাসিন্দা হও। যে দুনিয়া অপার সুখের দুনিয়া। যেখানে অনন্ত সুখের কোনও সীমা-পরিসীমা থাকে না। যেমন নতুন ঘর-বাড়ীতে খুব আনন্দ হয়। যা পুরনো হলে আবার দুঃখের হয়। সেই কারণেই বাবা বাচ্চাদের জন্য নতুন করে সবকিছু তৈরি করে দেন। যেমন জাগতিক ক্ষেত্রে তোমাদের বুদ্ধির যোগেও থাকে সেই নতুন ঘর-বাড়ীর কথা মনে থাকে। যদিও তা জাগতিক। আর অবিনাশী উত্তরাধিকার সূত্রে অসীমের বাবার দেওয়া নতুন দুনিয়া তা অবশ্যই খুব সুন্দরই হবে। যেহেতু তা বানিয়ে দিচ্ছেন বাবা। বর্তমানের এই পুরোনো দুনিয়ায় যা কিছু দৃশ্যমান, সে সবই তো যাবে কবরের তলায়। যেহেতু পরীদের রাজ্য স্থাপিত হতে চলেছে। বর্তমানে তোমরা আছো সঙ্গমযুগে। তাই যেমন তোমরা কলিযুগকে দেখতে পাচ্ছো, তেমনি আবার সত্যযুগকেও দেখতে পাও। অতএব সাক্ষীভাবে এই সঙ্গমযুগে সব কিছুই দেখতে পাবে তোমরা। প্রদর্শনী বা মিউজিয়ামে যারা আসবে, তাদেরকেও তোমরা সঙ্গমযুগে এনে দাঁড় করাবে। তারাও যেন অনুভব করে, তাদের একদিকে কলিযুগ এবং অপরদিক সত্যযুগ, তারা যেন এই দুই যুগের মাঝখানে সঙ্গমযুগে রয়েছে। আর বাবা যে নতুন দুনিয়া স্থাপন করছেন সেটাও। সেই নতুন দুনিয়ার জনসংখ্যা যথেষ্টই কম। সেখানে আর অন্য কোনও ধর্মও নেই। শুরুতে কেবলমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই সেখানে পৌঁছতে পারো। সেই স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছবারই পুরুষার্থ করে চলেছো তোমরা। তাই তো পবিত্র হবার জন্য তোমরা আমাকেই ডাকতে থাকো - "ও বাবা, আমাদের পবিত্র বানিয়ে সেই পবিত্র দুনিয়ায় নিয়ে চলো তুমি।" তবে এমনটা বলো না যেন, শান্তিধামে নিয়ে চলো। পরমধামকেই বলা হয় 'সুইট-হোম'! প্রথমে তোমাদের যেতে হবে আপন ঘরে, যাকে মুক্তিধাম বলা হয়। যার নিমিত্তে সাধু-সন্ন্যাসীরা কত কিছুই বলে থাকে, কিন্তু সুখধামের বিষয়ে কিছুই জানাতে পারে না। যেহেতু তারা নিবৃত্তি-মার্গের। বাচ্চারা, তোমাদের তা বোঝানো হয়েছে, কোন্-কোন্ ধর্মের লোকেরা কখন-কখন আসবে এই বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চে! মনুষ্য সৃষ্টি রূপী কল্পবৃক্ষের শুরুর ফাউন্ডেশন তোমরা বি.কে.-রা। যার বীজকে বলা হয় বৃক্ষপতি। সেই বৃক্ষপতি বাবা স্বয়ং জানাচ্ছেন, উনি অবস্থান করেন সেই কল্পবৃক্ষের একেবারে শীর্ষে। সেই কল্পবৃক্ষে পচন ধরে যখন তা একেবারে ক্ষয়িষ্ণু হয়, তখনই বাবাকে আসতে হয় দেবতা ধর্ম স্থাপন করার জন্য। যেমন কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনে আশ্চর্যজনক যে বটবৃক্ষ আছে। আদি-মূল ফাউন্ডেশন ছাড়াই এত বিশাল সম্পূর্ণ বৃক্ষটি দাঁড়িয়ে আছে। তেমনি অসীম জগতের কল্পবৃক্ষেও তার মূল অর্থাৎ আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মও আজ আর নেই। অন্যান্য ধর্মগুলি কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে।



বাচ্চারা, প্রকৃত অর্থে তোমরা কিন্তু নিরাকারী মূলবতনের নিবাসী। এই সাকারী দুনিয়ায় এসেছো যে যার নিজের নিজের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট করতে। বাচ্চারা, একমাত্র তোমরাই অলরাউন্ডার পার্ট পার্টধারী। তাই কেবল তোমাদেরই ৮৪-জন্ম নেবার সৌভাগ্য হয় - যা পুরো কল্পে সর্বাধিক জন্ম। আর সর্বচেয়ে কম মাত্র এক-জন্ম। ৮৪-জন্মকে অজ্ঞানী লোকেরা আবার ৮৪- লাখ জন্ম বলে প্রচার করে। তাদের তো এই ধারণাটাও নেই, এই অবাস্তব কিভাবেই বা সম্ভব হতে পারে। বাবা এসে তোমাদেরকে এগুলিই ব্যাখ্যা করে যুক্তিসহ বোঝান- একমাত্র বি.কে.-রাই ৮৪-জন্ম পেতে পারে। তোমরা বি.কে.-রাই সর্বপ্রথম বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলে। আবার তোমরাই সর্বপ্রথম সত্যযুগের দেবী-দেবতা হও। যখন তোমরা এখানে নিজেদের পার্টে ব্যস্ত থাকো, তখন অন্য আত্মারা তবে কোথায় থাকে ? তা কেবল তোমরাই জানো- বাকী আত্মারা তখন থাকে শান্তিধামে। অর্থাৎ শান্তিধাম হলো পৃথক ধাম। আর সেই বাকী দুনিয়া হলো এই দুনিয়া। কর্ম-কর্তব্যের পার্ট এখানেই করতে হয়। নতুন দুনিয়ায় সুখের পার্ট আর পুরোনো দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্টের পার্ট। বিশ্ব রঙ্গমঞ্চের এই নাটকটাই যে এমনই সুখ আর দুঃখের খেলা নিয়ে রচিত। সুখের রাজ্য অর্থাৎ রামরাজ্য। এই দুনিয়ার লোকেরা কেউ তা জানে না, এই সৃষ্টি চক্র প্রতিনিয়ত তার নিজস্ব নিয়মে কিভাবে আবর্তিত হচ্ছে। না জানে এই বিশ্ব নাটকের রচয়িতাকে, না জানে সেই রচনার আদি-মধ্য-অন্তকে। জ্ঞানের-সাগর এক ও একমাত্র বাবাকেই বলা হয়। রচয়িতা আর রচনার আদি-মধ্য-অন্তের এই জ্ঞান কোনও শাস্ত্রেও নেই। যা কেবল বাবা ওনার বাচ্চাদেরকেই জানান। এই জ্ঞান পরে প্রায় লোপ পায়। সত্যযুগ থেকেই তার প্রভাব আর থাকে না।



ভারতের প্রাচীন এই সহজ রাজযোগের খ্যাতি ভুবন বিখ্যাত। গীতাতেও এই সহজ রাজযোগের উল্লেখ আছে। বাবা স্বয়ং তোমাদেরকে সেই সহজ রাজযোগের শিক্ষার মাধ্যমে স্বর্গ-রাজ্যের রাজত্বের আশীর্বাদক্রমে অবিনাশী উত্তরাধিকারী করে গড়ে তোলেন। কিন্তু ওদের রচনা থেকে সেই অবিনাশী উত্তরাধিকার পাওয়া যায় না। এই উত্তরাধিকার পাওয়া যায় কেবলমাত্র রচয়িতা বাবার কাছ থেকে। প্রত্যেকটি মানুষই যে ওঁনারই সৃষ্টি। সকল বাচ্চাদেরকে তিনিই রচনা করেন। একজন এই জগতের ব্রহ্মা আর একজন অসীম জগতের ব্রহ্মা। যিনি নিরাকার আত্মাদের পিতা। যেমন তোমাদের লৌকিক পিতা আর প্রজাপতি ব্রহ্মাও আবার পিতা। কিন্তু প্রজাপিতা তিনি কখন হবেন ? --তা কি সত্যযুগে ? -- না। এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই তা হয়ে থাকে। লোকেদের তো এটাই জানা নেই যে, কোন সময়কালকে সত্যযুগ বলা হয়। অজ্ঞানী শাস্ত্রকারেরা সত্যযুগ, কলিযুগ ইত্যাদির আয়ু লাখ-লাখ বছর বলে জানায়। বাবা স্বয়ং বলেন-১২৫০ বছরে হয় এক যুগ। (পুরো কল্প ১২৫০ x ৪ = ৫০০০ বছর) এতে আবার ৮৪-জন্ম বিস্তারের হিসাবও আছে। এছাড়া সিঁড়ির (উত্তরণ ও অবরোহন) হিসাবও আছে। অধোগতিতে কিভাবে নীচের দিকে নামতে থাকে, তারও। শুরুর ফাউন্ডেশনে থাকে দেবী-দেবতারা। এর পরের ধাপগুলিতে ইসলামী, বৌদ্ধ, ...... ইত্যাদিরা। সেই কল্পবৃক্ষের রহস্য তো তোমাদের জানানোই হয়েছে। একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই যা জানাতে পারে না। লোকেরা হয়ত তোমাদেরকে বলবে, কিভাবে এসব চিত্রাদি বানালে তোমরা ? কে শেখালো তোমাদের ? তাদেরকে বলবে- ধ্যানের মাধ্যে বাবা তোমাদেরকে তা দেখিয়েছেন। তবেই তো তোমরা তা বানাতে পেরেছো। তারপর বাবা স্বয়ং এনার (ব্রহ্মার) রথে অধিষ্ঠান হয়ে তা সংশোধন করে বলে দেন, এমন ভাবে বানাও। অর্থাৎ উনি নিজেই তার সংশোধন করেন।



কৃষ্ণকে শ্যাম-সুন্দর বলা হয়। কিন্তু লোকেরা তো জানেই না, কেন তা বলা হয় ? কৃষ্ণ যখন বৈকুন্ঠের মালিক ছিল - তখন ছিল সুন্দর গৌরবর্ণ, এরপর যখন গ্রাম্য বালক হলো - তখন সে অসুন্দর শ্যামবর্ণ। এই কারণেই কৃষ্ণকে শ্যাম-সুন্দর বলা হয়। উনিই কল্পে সর্বপ্রথম। ততত্বম্ - তোমাদের ক্ষেত্রেও এমনটাই হবে। শুরুতে থাকবে লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজত্ব। আচ্ছা, আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপনা কে করেন ? তা কারও জানা নেই। লেকেরা তো ভারত শব্দটিকেই ভুলে গেছে, তাই বলে যে হিন্দুস্থান হিন্দুদের দেশ। বাবা জানাচ্ছেন - উনি কিন্তু কেবলমাত্র ভারতেই আসেন। এই ভারতই একদা দেবতাদের রাজ্য ছিল, যা এখন প্রায় লোপ হয়ে গেছে। বাবার আসার কারণ হলো, আবারও তার স্থাপনা করা। কল্পের শুরুই হয় আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের। ধীরে ধীরে সেই কল্পবৃক্ষ (বিস্তার) বৃদ্ধি পেতে থাকে। নতুন-নতুন পাতা গজাতে থাকে, কত প্রকারের মঠ-মন্দির, কত প্রকারের পথ সংযুক্ত হয়ে তার শোভাবর্দ্ধন করে। তারপর কল্পের অন্তিমে যখন সম্পূর্ণ বৃক্ষে পচন ধরে একেবারে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা হয়, তখন আবারও বাবাকেই আসতে হয়। যদা যদা হি ধর্মস্য .......! আত্মা যেখানে নিজেই নিজেকে জানে না, সেক্ষেত্রে তো বাবাকেও জানবে না। তাই তো আত্মা নিজেই নিজেকে গালি-গালাজ করে। তেমনি আবার বাবাকে আর দেবতাদেরও গালি-গালাজ দেয়। আত্মারা তমোপ্রধান, অবুঝ হয়ে যাওয়ার কারণেই এই পতিত দুনিয়ায় বাবাকে আসতে হয়। এসে বাচ্চাদেরকে নব-জীবন দান করে অর্থাৎ মনুষ্য থেকে দেবতা করে গড়ে তোলেন। দীনবন্ধু-কৃপাসিন্ধু এই বাবা অর্দ্ধ-কল্পের জন্য সবার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন। মাতাদের বন্দনায় 'বন্দেমাতরম্' যা সবারই জানা। কিন্তু তা কোন্ মাতাদের উদ্দেশ্য গাওয়া হয়, যাদের এত বন্দনা করা হয় ? --তা হলে তোমরা ব্রহ্মাকুমারী কন্যারা ও মাতারা। যারা সমগ্র সৃষ্টিকে স্বর্গ-রাজ্য বানায়। যদিও পুরুষেরাও এতে সহযোগী, কিন্তু সংখ্যাধিক্য তো মাতাদেরই। তাই তো বাবা স্বয়ং মাতাদের এত মহিমা করেন। বাবা এসেই তো তোমাদেরকে অর্থাৎ বি.কে.-দেরকে এমন মহিমার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. অপার সুখের দুনিয়ায় পৌঁছাতে হলে, নিজে সঙ্গম যুগে অবস্থান করছো এমনটা ভাবতে হবে। সাক্ষীরূপে সবকিছু দেখলেও বুদ্ধির যোগ থাকবে নতুন দুনিয়ার প্রতি। বুদ্ধিতে যেন থাকে, এবার আমি নিজ নিকেতনে ফিরতে চলেছি।

২. সবাইকে নব-জীবনের দিশা দেখিয়ে মনুষ্য থেকে দেবতা বানানোর সেবা করতে হবে। অসীম জগতের বাবার থেকে এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ে, অন্যদেরকেও তা পড়াতে হবে। নিজে দৈবী-গুণ ধারণ করে অপরকেও তা ধারণ করাতে হবে।

বরদান:-

নিজের পজিশনের স্মৃতি দ্বারা মায়ার থেকে বিজয় প্রাপ্ত করে নিরন্তর যোগী ভব

জাগতিক স্থুল পজিশনে যেমন কেউ নিজের পজিশনকে ভোলে না, তেমনি বি.কে.-দেরও পজিশন (মর্যাদা) হলো - মাস্টার সর্বশক্তিমান। তা সদা স্মৃতিতে রেখে, রোজ অমৃতবেলায় সেই স্মৃতিকে ইমার্জ করলে নিরন্তর যোগী হয়ে উঠবে এবং যা সারাদিনই তোমাকে সাহায্য করতে থাকবে। ফলে মাস্টার সর্বশক্তিমানের সামনে মায়া আর আসতেই পারবে না৷ যখন তুমি তোমার নিজের স্মৃতিতে উঁচু স্টেজে থাকবে, মায়াকে তখন যেন পিঁপড়ে সদৃশ্য মনে হবে, ফলে অতি সহজেই মায়াকে পরাস্ত করতে পারবে।

স্লোগান:-

আত্মারূপী পুরুষকে যে শ্রেষ্ঠ রূপে গড়ে তুলতে পারে, সে প্রকৃত পুরুষার্থী।