১৪-০৪-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ০৭-০৫-৮৪ মধুবন


ব্যালেন্স (ভারসাম্য ) বজায় রাখলে ব্লেসিংসের প্রাপ্তি হয়

আজ প্রেমস্বরূপ, স্মরণস্বরূপ বাচ্চাদের অনুরাগ এবং স্মরণের রিটার্ণ দেওয়ার জন্য প্রেমের সাগর বাবা ভালোবাসার এই আনন্দ সমাবেশে এসেছেন l এই আত্মিক ভালোবাসার সম্মেলন আত্মিক সম্বন্ধের মিলন সমাবেশ, যা সারা কল্পে শুধুমাত্র এই সময়েই অনুভব করা যাবে l এই এক জন্ম ব্যতীত আর কখনও রূহানী বাবার রূহানী স্নেহ তোমরা পাবে না l এই রূহানী ভালোবাসা রূহদের (আত্মাদের) প্রকৃত আরাম দেয় l তাদের সত্যের পথ দেখায় l প্রকৃত প্রাপ্তিসকল অর্জন করতে তাদের সমর্থ বানায় l এভাবে কি কখনও সঙ্কল্পে এসেছে যে এই জাগতিক সৃষ্টিতে এই জন্মে, এমন সহজ বিধিতে আত্মা এবং পরমাত্মার সামনাসামনি মিলন হবে ? যেমন তোমরা বাবার সম্বন্ধে শুনেছ যে তিনি উঁচু থেকে উঁচুতম এবং তিনি অতীব তেজোময়, তিনি সর্বেসর্বা, ঠিক তেমনই আবার তোমরা ভেবেছ তাঁর সাথে মিলনের বিধি কঠিন হবে আর অনেক অভ্যাসেরও প্রয়োজন, এইরকম ভাবতে ভাবতে তোমরা হতাশ হয়ে গেছিলে, কিন্তু বাবা নিরাশ বাচ্চাদের আশাবাদী বানিয়েছেন l নিরুৎসাহ বাচ্চাদের শক্তিশালী বানিয়েছেন l তারা জিজ্ঞাসা করে, কবে আমরা তাঁর সঙ্গে মিলিত হব, তিনি তাদের এখন মিলনের অনুভব করিয়েছেন l তিনি তাদের তাঁর সমস্ত প্রপার্টির অধিকার দিয়েছেন l এখন তোমরা আত্মারা নিজের অধিকার জানো, তাই না ! তোমরা সেটা ভালোভাবে জানো নাকি এখনো তোমাদের জানতে হবে ?



আজ বাপদাদা বাচ্চাদের দেখে মনখোলা অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা করছিলেন, সব বাচ্চাদের অবিচল বিশ্বাস আছে, ভালোবাসাও আছে, স্মরণের একাগ্রতা আছে, সেবার উদ্যমও আছে l লক্ষ্যও শ্রেষ্ঠ l তাদের যেকোনো কাউকে জিজ্ঞাসা করো তারা কি হতে চায়, প্রত্যেকে বলবে যে তারা লক্ষ্মী-নারায়ণ হতে যাচ্ছে l তারা কেউ বলবে না যে তারা রাম-সীতা হবে l তারা ১৬ হাজারের মালা হতেও পছন্দ করবে না l সকলের ১০৮-এর মালার দানা হওয়ার আগ্রহ থাকে l সেবাতে, পড়াতে প্রত্যেকে নিজেকে কারও থেকে কম যোগ্য মনে করে না l তবুও সদা একরস স্থিতি, সদা উড়তি কলার অনুভূতি, সদা একের মধ্যে আত্মহারা হয়ে, দেহ আর দেহের অল্পকালের সমস্ত প্রাপ্তি থেকে সদা স্বতন্ত্র হয়ে বিনাশী সকল ব্যাপারে বোধশক্তি রহিত হয়ে এইরকম প্রতিনিয়ত স্থিতিশীল অনুভব করে নম্বরানুক্রমে হয়ে যায় l এটা কেন ? বাপদাদা এর বিশেষ কারণ দেখেছেন l কি কারণ দেখেছেন ? শুধু একটা শব্দের কারণ l



তোমরা সবকিছু জানো আর সবকিছু সকলে প্রাপ্তও করেছ, তোমাদের বিধিরও জ্ঞান আছে, সিদ্ধিরও জ্ঞান আছে l কর্ম এবং তার ফল, উভয় সম্পর্কেও তোমাদের জ্ঞান আছে, কিন্তু তোমরা জানোনা কিভাবে সবসময় ব্যালেন্স বজায় রাখতে হয় l এই ব্যালেন্সের ঈশ্বরীয় নীতি সঠিক সময়ে প্রতিপালন না করতে পারায় প্রতিটা সঙ্কল্পে, প্রতিটা কর্মে বাপদাদা তথা সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মাদের শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ, ব্লেসিংস প্রাপ্ত হয় না l পরিশ্রম করতে হয় l সহজভাবে সফলতা অনুভব হয় না l কোন ব্যাপারে ব্যালেন্সে ভুল হয়ে যায় ? এক হলো স্মরণ আর সেবা l স্মরণে থেকে সেবা করা - এটা হলো স্মরণ আর সেবার ব্যালেন্স l কিন্তু তোমরা সেবায় ব্যস্ত থাকলে, স্মরণ করা সময়ের উপরে নির্ভর করে, যদি তোমাদের সময় থাকে তখনই তোমরা বাবাকে স্মরণ করো, নয়তো সেবাকেই স্মরণ মনে করা, একে বলা হয় ইমব্যালেন্স l একটা কথা বলতে হয় যে সেবাই স্মরণ আর স্মরনেই সেবা l বিধিতে এই সামান্য পার্থক্য সিদ্ধির বদল ঘটায় l তারপরে যখন তোমাকে স্মরণের পার্সেন্টেজের রেজাল্ট বলা হয়, তুমি কি বলো ? সেবায় এত বিজি ছিলে যে কোনও কিছুই তোমার মনে ছিল না l অথবা বলো, সেবা তো বাবারই ছিল, সুতরাং যেভাবেই হোক বাবাকেই তো স্মরণ করেছি l যতই হোক, সেবাতে সময় আর নিষ্ঠা যতটা ছিল ততটাই স্মরণের অনুভূতি ছিল ? সেবাতে তোমাদের যেমন স্বমান ছিল, ঠিক তেমনই নম্রতা ছিল ? এই ব্যালেন্স ছিল ? অনেক বড়, খুব ভালো সেবা করেছ - এটা মনে করা অবশ্যই ভালো স্বমান, কিন্তু স্বমান অনুযায়ী বিনয়নম্রচিত্ত হতে হবে l করানোর মালিক অর্থাৎ করাবনহার বাবা নিমিত্ত হয়ে তোমাদের মাধ্যমে সেবা করিয়েছেন l এটাই হলো নির্মান ভাব অর্থাৎ নিরহঙ্কার হওয়া l তোমরা নিমিত্ত হয়েছ, ভালো সেবা হয়েছে, বৃদ্ধি হয়েছে এবং তোমরা সফলতা স্বরূপ হয়েছ, এই স্বমান তো ভালো, কিন্তু শুধু স্বমান নয়, নির্মান ভাবেরও ব্যালেন্স হতে হবে, এই ব্যালেন্স তোমাদের সহজভাবে সদাই সফলতা স্বরূপ বানিয়ে দেয় l স্বমানও অবশ্যই প্রয়োজন; দেহভাব নয় বরং স্বমান l যাই হোক, সেবা আর নিরহঙ্কার, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যালেন্স না হওয়ার কারণে স্বমান দেহ-অভিমানে বদলে যায় l সেবা হয়েছে এবং তা' যখন সফলও হয়েছে তখন খুশি তো হওয়াই উচিৎ l "বাহ্ বাবা তুমি আমাকে নিমিত্ত বানিয়েছ, এটা আমি করিনি !" এই আমিত্ব ভাব স্বমান বদল করে দেহ-অভিমানে নিয়ে আসে l যারা স্মরণ আর সেবার ব্যালেন্স রেখে চলে তারা স্বমান আর বিনম্র ভাবেরও ব্যালেন্স বজায় রাখে l সুতরাং তোমরা বুঝেছ কোন ব্যাপারে ব্যালেন্স টলমল করে ?



একইভাবে তোমরা দায়িত্বের মুকুটধারী হওয়ার কারণে সব কার্যে দায়িত্বসমূহ তোমাদের প্রতিপালন করতে হবে l লৌকিক বা অলৌকিক কাজকর্ম হোক, অথবা ঈশ্বরীয় সেবার কর্মকাণ্ড l উভয় কার্যসমূহের দায়িত্ব পালনে যতটা ঘনিষ্ঠ ততটাই স্বতন্ত্র হতে হবে তোমাদের l এই ব্যালেন্স হতে দাও l দায়িত্বসমূহ পালন করা আবশ্যক, কিন্তু যত বেশি দায়িত্ব, ততই তোমাদের ডবল-লাইট হতে হবে l দায়িত্ব পালন করাকালীন দায়িত্বের ভার থেকে বিযুক্ত থাকো, একেই বলে বাবার অনুরাগী হওয়া l ঘাবড়ে যেও না, কি করবো, কতো দায়িত্ব ! এটা করা উচিৎ কি উচিৎ না ! কি করবো, এটা করা বা ওটা করা খুব মুশকিল ! এইরকম অনুভব অর্থাৎ বোঝা থাকা l সুতরাং ডবল লাইট হওয়া তো হলো না, তাই না ! ডবল লাইট অর্থাৎ স্বতন্ত্র l কোনও দায়িত্বের দোটানা'র ভার হতে দিও না l একে বলা হয় বিযুক্ত অথচ অতি নিকট হওয়ার ব্যালেন্স রক্ষাকারী l



দ্বিতীয়তঃ, পুরুষার্থ করাকালীন সামনে এগিয়ে যেতে যেতে পুরুষার্থের মাধ্যমে যা প্রাপ্তি হয়, তার অনুভব করতে করতে সেই প্রাপ্তিতে তোমরা খুশি আর নেশায় মেতে ওঠ l সেটা এই, আমি সবকিছু পেয়েছি, সবকিছুর অনুভব করেছি l মহাবীর, মহারথী হয়ে গেছি l আমি জ্ঞানী হয়েছি, যোগীও হয়েছি, সেবাধারীও হয়েছি l এই প্রাপ্তি খুব ভালো, কিন্তু এই প্রাপ্তির নেশায় অসতর্কতাও উপস্থিত হয় l এর কারণ কি ? তোমরা জ্ঞানী হয়েছ, যোগী হয়েছ, সেবাধারী হয়েছ কিন্তু প্রতি পদে কি তোমরা উড়তি কলার অনুভব করেছ ? যতদিন জীবন, ততদিন প্রতি পদে উড়তি কলায় উড়তে হবে l এই লক্ষ্যে থেকে আজ তোমরা যা করেছ তা'তে নতুনত্ব এসেছে নাকি যত পর্যন্ত পৌঁছেছ সেই সীমাই সম্পূর্ণতার সীমা মনে করে নিয়েছ ! পুরুষার্থ করার ক্ষেত্রে তোমাদের প্রাপ্তির নেশা এবং খুশিও থাকতে হবে, কিন্তু প্রতি পদে উন্নতি বা উড়তি কলার অনুভবও আবশ্যক l যদি এই ব্যালেন্স না থাকে, তখন অসতর্কতা তোমাকে ব্লেসিংস অনুভব করতে দেবে না l অতএব, পুরুষার্থী জীবনে যতটা পেয়েছ, তার নেশাও থাকতে হবে আর প্রতিটা পদে উন্নতির অনুভবও থাকতে হবে, একেই বলা হয় ব্যালেন্স l এই ব্যালেন্স সদা হতে দাও l এমন ভেবনা যে তোমরা সবকিছু জেনে গেছ, অনুভাবী হয়ে গেছ, খুব ভালোভাবে চলছ আর তোমরা ভালো হয়ে গেছ l এতো খুব ভালো কিন্তু তোমাদের এখনো আরও উন্নতি করতে হবে l এইরকম বিশেষ কর্ম করে সকল আত্মাদের সামনে নিমিত্ত এক্সাম্পল হতে হবে l এটা ভুলোনা l বুঝেছ কোন কোন বিষয়ে ব্যালেন্স রাখতে হবে ? এই ব্যালেন্স দ্বারা তোমরা নিজে থেকেই ব্লেসিংস লাভ করতে থাকো l সুতরাং বুঝেছ তোমরা, নম্বরানুক্রম কেন হয় ? কেউ কেউ একরকম বিষয়ের ব্যালেন্স সম্পর্কে অমনোযোগী হয় তো কেউ কেউ অন্য কোনো বিষয়ে !



বম্বে (মুম্বাই) নিবাসী তোমরা তো অমনোযোগী নও ? সব পরিস্থিতিতে তোমরা ব্যালেন্স রাখো, তাই না ? ব্যালেন্সের কলায় তোমরা পারদর্শী, তাই না ! ব্যালেন্সও এক কলা l তোমরা এই কলায় দক্ষ, নয় কি ? বম্বেকে বলাই হয়ে থাকে - সম্পত্তি সম্পন্ন দেশ l সুতরাং ব্যালেন্সের সম্পত্তি আর ব্লেসিংসের সম্পত্তিতেও তোমরা সম্পন্ন, তাই না ! নরদেসাবরের■ ব্লেসিংস আছে তোমাদের l বম্বে নিবাসীরা কোন বিশেষত্ব প্রত্যক্ষ করাবে? বম্বেতে মাল্টি-মিলিওনার্স অনেক আছে, তাই না ! সুতরাং যারা বম্বের তাদের এমন আত্মাদের বিশেষভাবে এটা অনুভব করানো প্রয়োজন যে *রূহানী অবিনাশী পদমাপদম পতি সর্ব আকরের (খনি) মালিক* -এর অর্থ কি ! তাদেরকে এই অনুভব করাও l তারা তো শুধুমাত্র বিনাশী ধনের মালিক, এমন লোককে এই অবিনাশী ধনভাণ্ডারের মহত্ত্ব শুনিয়ে তাদের অবিনাশী সম্পত্তি সম্পন্ন বানাও l তাদের উপলব্ধি হতে দাও এই ধনভাণ্ডারসমূহ অবিনাশী শ্রেষ্ঠ ধনের ভাণ্ডার l এইরকম সেবাই তো করছ, তাই না ! যাদের সম্পত্তি আছে তাদের নজরে তোমরা যে অবিনাশী সম্পদশালী শ্রেষ্ঠ আত্মা তা' তাদের অনুভূত হতে দাও l তোমরা বুঝেছ ? এমন ভেবনা যে এদের তো পার্টই নেই l অন্তে এদেরও জাগ্রত হওয়ার পার্ট আছে l তারা তোমাদের সম্বন্ধে আসবে না, কিন্তু সম্পর্কে আসবে, সুতরাং এখন সময় এসেছে এমন আত্মাদেরও জাগিয়ে তোলার l অতএব, জাগাও, জাগাও, খুব ভালোভাবে তাদের জাগরিত করো, কারণ সম্পত্তির নেশার ঘুমে তারা নিদ্রিত l যারা নেশার ঘোরে থাকে তাদেরকে বারবার জাগাতে হয় l তাদের শুধু একবার সচেতন করলে তারা নিদ্রা থেকে জেগে উঠবে না l সুতরাং এখন নেশার ঘুমে আচ্ছন্ন আত্মাদের অবিনাশী সম্পত্তির অনুভবের সাথে পরিচয় করাও l বুঝেছ তোমরা ? বম্বে থেকে আগত তোমরা মায়াজিৎ হয়েছ, তাই না ! মায়াকে তোমরা সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছ, নয় কি ! তাকে তোমরা অতলে নিপাতিত করেছ নাকি এখনো সে উপরিতলেই আছে ? যদি কোনকিছু উপরিভাগে থাকে তবে তরঙ্গ তাকে আবার তীরে ফিরিয়ে আনে, কিন্তু অতল তলে নিক্ষেপ করলে স্বাহা হয়ে যায় অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায় l সুতরাং মায়া আর তীরে ফিরে আসতে পারে না, তাই না ? বম্বে নিবাসীদের সব পরিস্থিতিতে এক্সাম্পল হতে হবে l প্রতিটা বিশেষত্বে এক্সাম্পল l যেমন, বম্বের সৌন্দর্য দেখতে সবাই দূর-দূরান্ত থেকে আসে, সেইরকম দূর-দূরান্ত থেকে তারা তোমাদের দেখতে আসবে l সকল গুণের প্র্যাকটিক্যাল স্বরূপের এক্সাম্পল হয়ে ওঠ l জীবনে যদি সরলতা দেখতে চাও, তবে এই সেন্টারে গিয়ে এই পরিবারকে দেখ l যদি ব্যালেন্স দেখতে চাও তো এই বিশেষ আত্মাদের দেখ l তোমরা তো এমনই চমৎকার করো, তাই না ! বম্বে থেকে আগত যারা তাদের ডবল রিটার্ণ দিতে হবে l এক, জগৎ অম্বা মায়ের থেকে তোমরা পালনা লাভ করেছ আর দুই, ব্রহ্মাবাবার থেকে বিশেষ পালনা l জগৎ অম্বা মায়ের বিশেষ পালনাও বম্বে থেকে আগত যারা তারা লাভ করেছে l সুতরাং বম্বেকে কতো রিটার্ণ দিতে হবে, তাই না ? প্রতিটা স্থানে, প্রত্যেক বিশেষ আত্মা দ্বারা বাবার, মায়ের এবং বিশেষ আত্মার বিশেষত্ব প্রত্যক্ষ হওয়া উচিৎ, একেই বলা হয় রিটার্ণ করা l আচ্ছা - স্বাগত ! স্বাগত বাবার ঘরে তথা তোমাদের ঘরে l



বাবা সদা বাচ্চাদের দেখে পুলকিত হন l প্রত্যেক বাচ্চা বিশ্বের দীপক l তোমরা শুধু কুলদীপকই নও, বরং বিশ্বদীপক তোমরা ! তোমরা প্রত্যেকে বিশ্ব কল্যাণ হেতু নিমিত্ত হয়েছ, সুতরাং তোমরা তো বিশ্বের দীপকই হলে, নয় কি ? বাস্তবে, সমগ্র বিশ্ব এক অসীম কুল l সেক্ষেত্রে তোমাদের অসীম কুলের দীপকও বলা যেতে পারে l যেমনই হোক, তোমরা সীমিত কুলের দীপক নও l তোমরা অসীম কুলের দীপকই বলো বা বিশ্বদীপকই বলো, তোমরা এইরকমই, তাই না ! সদা জাগ্রত দীপক l টিমটিমে আলোক তো তোমরা নও, তাই না ! ক্ষীণভাবে জ্বলা লাইটের দিকে দেখলে চোখ নষ্ট হয়ে যায়, তোমরা সেটা পছন্দ করনা, তাই না ! সুতরাং তোমরা সদা প্রজ্জ্বলিত দীপ, তাই নয় কি ? বাপদাদা সদা এমন প্রদীপ্ত দীপক দেখে উৎফুল্ল হন l বুঝেছ তোমরা ! আচ্ছা !

যারা সদা প্রতিটা কর্মে ব্যালেন্স বজায় রাখে, সদা বাবার থেকে ব্লেসিংস লাভ করে, প্রতি পদে উড়তি কলার অনুভব করে, সদা ভালোবাসার সাগরে ডুবে থাকে, সমান স্থিতিতে স্থিত থাকে, পদ্মাপদম সেই শ্রেষ্ঠ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*দাদীদের সাথে:-* সবাই তোমরা মুকুটধারী আত্মা, তাই না ! সদা যত বড় তোমাদের মুকুট ততই হালকা থেকেও হালকা l তোমরা এইরকম মুকুটভূষিত, এই মুকুট ধারণ করে সব কর্ম করতে করতেও মুকুটধারী হয়ে থাকতে পারো l সময় অনুসারে রত্ন বিজড়িত মুকুট তোমরা ধারণ করো আর অপসারণ করো, কিন্তু এই মুকুট এমন যে একে অপসারিত করার কোনো প্রয়োজনই হয় না l নিদ্রিত অবস্থায়ও মুকুটধারী আর যখন জেগে উঠছ তখনও তোমরা মুকুটধারী l এই অনুভব তোমাদের আছে, তাই না ! মুকুট হালকা, তাই নয় কি ? কোনরকমভাবে ভারী নয় তো ! নাম মহান, ওজন হালকা, তাই না ? সুখদায়ী মুকুট, এই মুকুট এমনই যেমন খুশি তেমন দেয় l বাবা তোমাদের এমন ভাবে মুকুটভূষিত করেন, যাতে জন্ম জন্ম ধরে তোমাদের মুকুট প্রাপ্ত হতে থাকে l এমন মুকুটধারী বাচ্চাদের দেখে বাপদাদা উৎফুল্ল হন l বাপদাদা রাজ্যাভিষেক দিবস এখন থেকেই উদযাপন করে সদাকালের জন্য এই ধারা নিয়ম বানিয়ে দিয়েছেন l সত্যযুগেও রাজ্যাভিষেক দিবস উদযাপিত হবে l সঙ্গমযুগে যে রাজ্যাভিষেক দিবস পালিত হয়েছে, তারই স্মারকচিহ্ন চিরকাল (অবিনাশী ) চলতে থাকবে l সাকার বতন থেকে বানপ্রস্থ নিয়ে বাবা অব্যক্ত বতনে সেবাধারী, স্বয়ং বাবা সাকার বতন থেকে বানপ্রস্থী হয়ে মুকুট আর সিংহাসন বাচ্চাদের দিয়ে অব্যক্ত বতনে চলে গেছেন l সুতরাং সেটাই তো রাজ্য অভিষেক দিবস হলো, তাই না ! বিচিত্র ড্রামা, নয় কি ! যদি বাবা যাওয়ার আগেই তোমাদের জানিয়ে দিতেন তবে তা' ওয়ান্ডারফুল ড্রামা হতো না l এমন বিচিত্র এই ড্রামা যে ছবি তোলা সম্ভবপর নয় l বিচিত্র বাবার বিচিত্র পার্ট, তোমাদের বুদ্ধিতে সঙ্কল্পের মাধ্যমেও যাঁর চিত্র তোমরা তুলতে পারো না l একেই বলে বিচিত্র, এইজন্য বিচিত্র রাজ্যাভিষেক হয়েছে l যে মহাবীর বাচ্চারা তাদের রাজ্যাভিষেক দিবসে সম্মানিত হবে, বাপদাদা সদা সেই মহাবীর বাচ্চাদের মুকুটভূষিত দেখেন l তাঁর সাহচর্য দেওয়ার সময় যখন উপস্থিত, তখন বাপদাদা গুপ্ত হয়ে যাননি, বরং সাকার দুনিয়া থেকে নিভৃতে অব্যক্ত দুনিয়ায় উদিত হয়েছেন l সাথে থাকার, একসাথে ফিরে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা তো আছেই, এই প্রতিজ্ঞা কখনও খন্ডিত হতে পারে না, এইজন্য তো ব্রহ্মাবাবা প্রতীক্ষা করছেন l নয়তো, তিনি তো কর্মাতীত হয়ে গেছেন, তিনি সেখানে চলে যেতেই পারতেন l তাঁর তো কোনও বন্ধন নেই, তাই না ? কিন্তু স্নেহের বন্ধন আছে l স্নেহের বন্ধনের কারণে তোমাদের সাথে ফিরে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে বাবাকে তোমাদের জন্য প্রতীক্ষা করতেই হবে l তাঁকে সাহচর্যের দায়িত্ব পূরণ করতে হবে এবং তোমাদের সাথে একসঙ্গে ঘরে ফিরে যেতে হবে l তোমরা এইরকম অনুভবই তো করো, তাই না ? আচ্ছা প্রত্যেকে বিশেষ l যদি বাবা প্রত্যেকের বিশেষত্ব বলেন তবে কতো হবে, মালা হয়ে যাবে, এইজন্য তাদের তাঁর হৃদয়েই রাখেন, বর্ণন করেন না l আচ্ছা !

বরদান:-

ব্যর্থ বোল বা অন্যদের ডিস্টার্ব করে এমন বোল থেকে মুক্ত ডবল লাইট অব্যক্ত ফরিস্তা ভব

অব্যক্ত ফরিস্তা হতে হলে ব্যর্থ বোল, যা কারও পছন্দ নয়, সেই সমস্ত ব্যর্থ বোল সদাকালের জন্য সমাপ্ত করো l পরিস্থিতি হয়তো দু'কথার কিন্তু সেটাই টেনে লম্বা করে বলতে থাকা, এটাও ব্যর্থ l যা চারটি বাক্যে সাধিত হতে পারে, সেটা ১২-১৫ বাক্যে ব'লোনা l কম বলো, ধীরে বলো ...এই স্লোগান গলায় পুরে রাখো l ব্যর্থ বলা বা ডিস্টার্বিং শব্দ থেকে মুক্ত হও, তবেই অব্যক্ত ফরিস্তা হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য লাভ করবে l

স্লোগান:-

যে পরমাত্ম-ভালোবাসায় আত্মসমর্পণ করে দেয়, সফলতা তার গলার মালা হয়ে যায় l