০৩-১০-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা মাতা পিতার কাছে অসীম সুখ পাওয়ার জন্য এসেছ, বাবা তোমাদেরকে গভীর দুঃখ থেকে মুক্ত করে অসীম সুখের জগতে নিয়ে যান"
প্রশ্ন:-
কেবল বাবা-ই রিজার্ভে থাকেন, পুনর্জন্ম নেন না - কেন ?
উত্তর:-
কারণ তোমাদেরকে তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান বানানোর জন্য তো কাউকে প্রয়োজন। যদি বাবাও পুনর্জন্ম নিয়ে নেন, তবে তোমাদেরকে কালো থেকে গৌরবর্ণ কে বানাবে ? এইজন্যই বাবা রিজার্ভে থাকেন।
ওম্ শান্তি।
আত্মিক পিতা তাঁর মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি সন্তানদেরকে বোঝাচ্ছেন। তিনি একাধারে বাবা এবং মাতা-পিতা। তোমরাই তো গাইতে - 'তুমিই মাতা-পিতা, আমরা তোমার বালক…', সকলেই এইভাবে ডাকে। কাকে ডাকছে ? পরমপিতা পরমাত্মাকে। কিন্তু ওরা জানে না যে তাঁর কৃপায় কখন কিভাবে অসীম সুখের প্রাপ্তি হয়েছিল। অসীম সুখ বলতে কি বোঝায় সেটাও ওরা জানে না। এখন তোমরা এখানে সামনে বসে আছো। তোমরা জানো যে, এই দুনিয়ায় কত গভীর দুঃখ। এটা হলো দুঃখধাম। ওটা হলো সুখধাম। কারোর বুদ্ধিতেই আসে না যে, আমরা ২১ জন্ম ধরে স্বর্গে অনেক সুখে থাকি। তোমাদেরও আগে এই অনুভব ছিল না। এখন তোমরা বুঝেছ যে আমরা সেই পরমাত্মা, মাতা-পিতার সামনে বসে আছি। তোমরা জানো যে, আমরা ২১ জন্মের জন্য স্বর্গের বাদশাহী পাওয়ার জন্যই এখানে আসি। বাবাকেও জেনেছি এবং বাবার কাছ থেকে সমগ্র সৃষ্টিচক্রকেও বুঝে নিয়েছি। আমরা আগে অসীম সুখের মধ্যে ছিলাম, পরবর্তী কালে দুঃখী হয়ে গেছি। এটাও ক্রমানুসারে প্রত্যেকের বুদ্ধিতে থাকে। এটা তো স্টুডেন্টদের সবসময়ই মনে থাকা উচিত। কিন্তু বাবা দেখেন, প্রতি মুহূর্তেই ভুলে যাওয়ার জন্য বাচ্চারা ঝিমিয়ে যায়। অতি স্পর্শকাতর অবস্থা হয়ে যায়। মায়া আক্রমণ করে। যতটা খুশিতে থাকার কথা, ততটা খুশি থাকে না। ক্রমানুসারে বিভিন্ন পদমর্যাদা রয়েছে। স্বর্গে তো চলে যায়, কিন্তু সেখানেও তো রাজা থেকে শুরু করে কাঙাল সকলেই থাকবে। একজন হবে গরিব প্রজা, একজন ধনী প্রজা। স্বর্গ এবং নরক উভয় স্থানেই এইরকম উচ্চ-নীচ থাকে। তোমরা বাচ্চারা এখন জেনেছ যে আমরা অসীম সুখলাভের জন্য পুরুষার্থ করছি। সবথেকে বেশি সুখ তো এই লক্ষ্মী-নারায়ণই ভোগ করে। মুখ্য বিষয় হলো পবিত্রতা। পবিত্রতা না থাকলে শান্তি এবং সমৃদ্ধির প্রাপ্তি হয় না। এক্ষেত্রে আচার-আচরণ খুব ভালো হওয়া প্রয়োজন। পবিত্রতার দ্বারা-ই মানুষের আচার-আচরণ পরিশোধিত হয়। পবিত্রতা থাকলেই তাকে দেবতা বলা হয়। তোমরা এখানে দেবতা হওয়ার জন্যই এসেছ। দেবতারা সর্বদা সুখী ছিল। কোনো মানুষ সর্বদা সুখী থাকে না। সুখী কেবল দেবতারাই হয়। দেবতারা পবিত্র ছিল বলেই তোমরা এদেরকে পূজা করতে। পবিত্রতাই হল মুখ্য বিষয়। এর জন্যই যত বিঘ্ন আসে। *সকলেই চায় দুনিয়ায় শান্তি স্থাপন হোক। কিন্তু বাবা বলছেন - পবিত্রতা ব্যতীত শান্তি কখনোই আসবে না। প্রথম এবং প্রধান বিষয় হলো পবিত্রতা। পবিত্রতার দ্বারা-ই আচার-ব্যবহার শুধরাবে।* পতিত হয়ে গেলে পুনরায় আচরণ বিগড়ে যায়। *বুঝতে হবে যে এখন যদি আমরা দেবতা হতে চাই, তবে পবিত্রতা অবশ্যই প্রয়োজন।* দেবতারা পবিত্র ছিল বলেই তো অপবিত্র মানুষ ওদের কাছে গিয়ে মাথা ঠোকে। মুখ্য বিষয় হলো পবিত্রতা। ভক্তরা ব্যাকুল ভাবে ডাকে - হে পতিত-পাবন, আমাদেরকে এসে পবিত্র বানাও। বাবা বলছেন - কাম বিকার বিরাট বড় শত্রু, একে পরাজিত করো। এর ওপরে বিজয়ী হলেই তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। তোমরা যখন পবিত্র এবং সতোপ্রধান ছিলে, তখন শান্তিও ছিল আর সুখও ছিল। বাচ্চারা, এখন তোমাদের স্মরণে এসেছে যে, এইসব তো গতকালের কথা। তোমরা যখন পবিত্র ছিলে, তখন অসীম সুখ-শান্তি সবকিছু ছিল। এখন পুনরায় তোমাদেরকে এইরকম লক্ষ্মী-নারায়ণ হতে হবে। এরজন্য প্রথম এবং মুখ্য বিষয় হলো সম্পূর্ণ নির্বিকারী হওয়া। এইরকম গায়নও রয়েছে। এটা হলো জ্ঞান যজ্ঞ, এতে তো অবশ্যই বিঘ্ন আসবে। পবিত্রতার জন্য কতই না সমস্যা হয়। আসুরি এবং দৈবী - এই দুই সম্প্রদায়ের কথা বলা হয় । তোমাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে সত্যযুগে এইরকম দেবী-দেবতারা ছিল। হয়তো মানুষের মতোই দেখতে, কিন্তু ওদেরকে দেবতা বলা হয়। ওটা সম্পূর্ণ সতোপ্রধান দুনিয়া। ওখানে কোনো কিছুর এতটুকু অপ্রতুলতা থাকবে না। সবকিছু পারফেক্ট হবে। *বাবা যেহেতু পারফেক্ট, তাই তিনি বাচ্চাদেরকেও পারফেক্ট বানান। যোগবলের দ্বারা তোমরা কত পবিত্র এবং বিউটিফুল হয়ে যাও। যে যাত্রী এখানে এসে তোমাদেরকে শ্যাম থেকে সুন্দর বানান, তিনি সর্বদাই সুন্দর। ওখানে ন্যাচারাল বিউটি থাকে, কাউকে সুন্দর করার প্রয়োজন হয় না। সতোপ্রধান অবস্থায় সকলেই খুব সুন্দর হয়। ওরাই পরবর্তী কালে তমোপ্রধান হওয়ার জন্য শ্যাম হয়ে যায়। শ্যাম-সুন্দর নামও রয়েছে। কৃষ্ণকে কেন শ্যাম-সুন্দর বলা হয় ? বাবা ছাড়া কেউ কখনো এর অর্থ বলতে পারবে না। বাবা অর্থাৎ ভগবান যেসব কথা শোনান, সেগুলো অন্য কেউ শোনাতে পারবে না। ছবিতে তো দেবতাদেরকে স্ব-দর্শন দিয়ে দিয়েছে।
বাবা বোঝাচ্ছেন - মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা, দেবতাদের তো স্ব-দর্শন চক্রের প্রয়োজন নেই। এইসব শঙ্খ ইত্যাদি নিয়ে ওরা কি করবে ? তোমরা ব্রাহ্মণ বাচ্চারাই হলে স্ব-দর্শন চক্রধারী। তোমাদেরকেই শঙ্খধ্বনি করতে হবে। তোমরাই জানো যে বিশ্বে এখন কিভাবে শান্তি স্থাপন হচ্ছে। এর সঙ্গে আচার-আচরণও ভালো হতে হবে। ভক্তিমার্গেও তোমরা দেবতাদের কাছে গিয়ে তোমাদের চাল-চলনের বর্ণনা করো। কিন্তু দেবতারা তোমাদের চাল-চলনকে শুধরে দেয় না। অন্য কেউ শুধরে দেয়। তিনি হলেন নিরাকার শিববাবা। তাঁর কাছে গিয়ে কখনো এইরকম গুণগান করা হয় না যে তুমি সর্বগুণ সম্পন্ন… ইত্যাদি। শিবের মহিমা সম্পূর্ণ আলাদা। দেবতাদের জন্য ঐরকম মহিমা করে। কিন্তু আমরা এইরকম কিভাবে হয়ে গেলাম ? আত্মা-ই তো পবিত্র কিংবা অপবিত্র হয়। তোমরা আত্মারা এখন পবিত্র হচ্ছ। যখন আত্মা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে, তখন এই পতিত শরীর আর থাকবে না। পবিত্র শরীর ধারণ করবে। কিন্তু এখানে তো পবিত্র শরীর পাওয়া সম্ভব নয়। প্রকৃতি সতোপ্রধান হলেই পবিত্র শরীর পাওয়া সম্ভব। নুতন দুনিয়াতে সবকিছুই সতোপ্রধান হয়। এখন পঞ্চতত্ত্ব তমোপ্রধান হয়ে গেছে বলে কত বিপর্যয় হয়। কীভাবে মানুষের প্রাণ যায়। তীর্থযাত্রায় যাওয়ার সময়ে কোনও অ্যাক্সিডেন্ট হলে কতজন মারা যায়। মানুষ, পৃথিবী - জল ইত্যাদির কতো ক্ষতি করে। এইসব তত্ত্বগুলো তোমাদেরকে সাহায্য করে। বিনাশের সময়ে হঠাৎ বন্যা কিংবা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসবে। এইসব বোমা বানানো তো ড্রামাতেই রয়েছে। এগুলোকে ঐশ্বরিক বিপর্যয় বলা যাবে না। এগুলো মনুষ্য সৃষ্ট। ভূমিকম্প মনুষ্য সৃষ্ট নয়। *সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয় একসাথে সংগঠিত হবে এবং পৃথিবীকে হাল্কা করবে*। তোমরা জানো যে বাবা কিভাবে আমাদেরকে একেবারে হাল্কা বানিয়ে সাথে করে নুতন দুনিয়াতে নিয়ে যান। মাথা হাল্কা হয়ে গেলে আরও প্রাণোজ্জ্বল হয়ে যায়। তোমাদেরকে বাবা একদম হালকা বানিয়ে দেন। সব দুঃখ দূর হয়ে যায়। এখন তোমাদের সকলের মাথা খুব ভারী আছে। এরপর সবাই হালকা, শান্ত এবং সুখী হয়ে যাবে। সকল ধর্মাবলম্বীদেরই খুশি হওয়া উচিত যে, বাবা এসেছেন সকলের সদগতি করার জন্য। যখন স্থাপনার কার্য সম্পূর্ণ হয়ে যাবে তখন সকল ধর্মের বিনাশ হয়ে যাবে। আগে তোমাদের বুদ্ধিতে এইসব চিন্তা ভাবনা আসত না। এখন বুঝতে পারছো। ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপন হওয়ার গায়ন আছে। বাকি সকল ধর্মের বিনাশ হবে। কেবল বাবা-ই এই কর্তব্য করেন। কেবল শিববাবা ছাড়া অন্য কেউই এটা করতে পারবে না। অন্য কারোর এইরকম অলৌকিক জন্ম এবং অলৌকিক কর্তব্য হওয়া সম্ভব নয়। বাবা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই তাঁর কর্তব্য হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি হলেন করন করাবনহার। তোমরা অন্যকে জ্ঞান শোনাও যে, এখন এই দুনিয়া থেকে পাপ আত্মাদের বোঝা দূর করতে বাবা অবতীর্ণ হয়েছেন। গায়ন আছে - অনেক ধর্মের বিনাশ এবং এক ধর্ম স্থাপন করার জন্য বাবাকে আসতে হয়। তোমাদেরকে এখন কত শ্রেষ্ঠ মহাত্মা বানিয়ে দিচ্ছেন। দেবতারা ছাড়া আর কেউই মহাত্মা নয়। এখানে তো অনেককেই মহাত্মা বলা হয়। কিন্তু কেবল মহান আত্মাকেই মহাত্মা বলা যায়। কেবল স্বর্গকেই রামরাজ্য বলা যাবে। ওখানে রাবণ রাজ্য থাকবেই না। তাই বিকারের চিন্তাও আসবে না। সেইজন্য ওই দুনিয়াকে সম্পূর্ণ নির্বিকারী বলা হয়। যত বেশি সম্পূর্ণ হবে, তত অধিক সময় সুখ ভোগ করবে। যারা অপূর্ণ রয়ে যাবে তারা অতটা সুখ পাবে না। স্কুলেও কেউ সম্পূর্ণ, কেউ অপূর্ণ হয়। তফাৎটা চোখেই দেখা যায়। হয়তো সকলেই ডাক্তার। কিন্তু কারোর খুব অল্প উপার্জন, কারোর আবার বিপুল উপার্জন। সেইরকম সকলেই দেবতা হবে। কিন্তু পদমর্যাদার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকবে। বাবা এসে তোমাদেরকে অতি শ্রেষ্ঠ পাঠ পড়াচ্ছেন। কৃষ্ণকে কখনো ভগবান বলা যাবে না। কৃষ্ণকেই তো শ্যাম-সুন্দর বলা হয়। শ্যামবর্ণের কৃষ্ণ মূর্তিও দেখানো হয়। কিন্তু কৃষ্ণ মোটেই শ্যাম বর্ণের হয় না। নাম রূপ তো পাল্টে যায়। আত্মা শ্যামবর্ণ হয়ে যায় এবং তখন নাম, রূপ, দেশ, কাল সবকিছুই বদলে যায়। এখন তোমাদেরকে বোঝানো হচ্ছে এবং তোমরাও বুঝতে পেরেছ যে, আমরা কিভাবে শুরু থেকে আমাদের কৃত কর্মের ভূমিকা পালন করছি। আগে দেবতা ছিলাম। এখন দেবতা থেকে অসুর হয়ে গেছি। বাবা ৮৪ জন্মের রহস্যও বুঝিয়েছেন। অন্য কেউ এটা জানে না। বাবা এসেই সকল রহস্য বোঝান। বাবা বলছেন - আমার সন্তান, আমার দুলাল, তোমরা তো আমার সাথে ঘরেই ছিলে, তাই না ? তোমরা তো সবাই ভাই-ভাই। তোমরা আত্মারা সেখানে ছিলে। কোনো শরীর ছিল না। কারোর সাথে কোনো সম্বন্ধ ছিল না। বাবা কখনো পুনর্জন্ম নেন না। তিনি ড্রামা অনুসারে রিজার্ভ থাকেন। তাঁর ভূমিকাটাই এইরকম। তোমরা কত সময় ধরে ব্যাকুল ভাবে ডেকে এসেছ সেটাও বাবা বলেছেন। এমন নয় যে দ্বাপরযুগ থেকেই ব্যাকুল ভাবে ডাকতে শুরু করেছ। না, অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তোমরা ব্যাকুল ভাবে ডাকতে শুরু করেছ। তোমাদেরকে বাবা সুখী বানাচ্ছেন অর্থাৎ সুখের উত্তরাধিকার দিচ্ছেন। তোমরাও বলছ - বাবা, আমরা তোমার কাছে অনেক বার এসেছি, প্রত্যেক কল্পেই এসেছি। এই ভাবেই চক্র আবর্তিত হতে থাকে। প্রত্যেক ৫ হাজার বছর পর বাবা তোমাদের সম্মুখে আসেন এবং তোমরা এই উত্তরাধিকার পেয়ে যাও। সকল দেহধারী-ই স্টুডেন্ট। যিনি শিক্ষক, তিনিই কেবল বিদেহী। এটা ওঁনার নিজের শরীর নয়। উনি নিজে বিদেহী। এখানে এসে শরীর ধারণ করেন। কারন শরীর না থাকলে বাচ্চাদেরকে পড়াবেন কিভাবে? তিনি সকল আত্মার পিতা। ভক্তিমার্গে সকলেই তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকে, রুদ্র মালা জপ করে। উপরে রয়েছে ফুল আর যুগল দানা। যুগল দানা গুলো একই রকমের হয়। ফুলটিকে প্রণাম করা হয় কেন ? তোমরা এখন এটাও বুঝতে পেরেছ যে, ওটা আসলে কার মালা জপ করে। দেবতাদের মালা জপ করে নাকি তোমাদের মালা জপ করে ? ওটা দেবতাদের মালা, নাকি তোমাদের ? ওটাকে দেবতাদের মালা বলা যাবে না। ব্রাহ্মণদেরকেই তো বাবা বসে থেকে শিক্ষা দিচ্ছেন। ব্রাহ্মণ থেকে তোমরা দেবতা হয়ে যাও। এখন পড়াশুনা করছো, এরপর দেবতা হবে। তোমরা এখন বাবার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে, পরিশ্রম করে দেবতা হয়ে যাও। তাই ওটা তোমাদের মালা। তবে প্ৰকৃত মহত্ত্ব শিক্ষকের। বাবা বাচ্চাদের কতই না সেবা করেছেন।। ওখানে তো কেউ একবারের জন্যও বাবাকে স্মরণ করবে না। ভক্তিমার্গে তোমরা মালা জপ করতে। এখন ওই ফুল স্বয়ং তোমাদেরকে ফুলের মতো বানাচ্ছেন, অর্থাৎ নিজের মালার দানা বানাচ্ছেন। তোমরা ফুল হয়ে যাও। তোমরা আত্মার জ্ঞানও প্রাপ্ত করছ। গোটা সৃষ্টির আদি, মধ্য, অন্তিমের জ্ঞান তোমাদের বুদ্ধিতে রয়েছে। তোমাদের-ই গুণগান করা হয়। তোমরা ব্রাহ্মণরাই প্রথমে নিজেদের মতো ব্রাহ্মণ বানাও এবং তারপর স্বর্গবাসী দেবী-দেবতা বানাও। দেবতারা তো স্বর্গে থাকবে। তোমরা দেবতা হয়ে গেলে, ওখানে তোমাদের কাছে অতীত-বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জ্ঞান থাকবে না।
এখন তোমরা, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ বাচ্চারাই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জ্ঞান লাভ করেছ। অন্য কেউ এই জ্ঞান পায় না। তোমরা খুব ভাগ্যবান। কিন্তু এরপরেও মায়া ভুলিয়ে দেয়। এই বাবা (ব্রহ্মা বাবা) তোমাদেরকে শিক্ষা দেন না। ইনি তো একজন মানুষ, ইনি নিজেও পড়ছেন। ইনি তো সবথেকে শেষে ছিলেন। যিনি নম্বর ওয়ান পতিত, তিনিই পুনরায় নম্বর ওয়ান পবিত্র হন। অনেক সুখী হয়ে যান। এইম অবজেক্ট তো সামনেই রয়েছে। বাবা তোমাদেরকে কত শ্রেষ্ঠ বানাচ্ছেন। আয়ুষ্মান ভব, পুত্রবান ভব…। এইসবও ড্রামাতেই রয়েছে। বাবা বলছেন, আমি আশীর্বাদ করলে তো সবাইকেই করব (অর্থাৎ তিনি কাউকে আশীর্বাদ দেন না। তাঁর কাজ হল পড়ানো) । বাচ্চারা, আমি তো কেবল তোমাদেরকে পড়াতে এসেছি। এই শিক্ষার দ্বারা-ই তোমরা সকল আশীর্বাদ পেয়ে যাও। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্যসার :-
১. বাবা যেমন পারফেক্ট (নিখুঁত), সেইরকম নিজেকেও নিখুঁত বানাতে হবে। পবিত্রতাকে ধারণ করে নিজের আচার-আচরণ শোধরাতে হবে। সত্যিকারের সুখ-শান্তি অনুভব করতে হবে।
২. সৃষ্টির আদি, মধ্য এবং অন্তিমের জ্ঞান বুদ্ধিতে রেখে ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা বানানোর সেবা করতে হবে। নিজের শ্রেষ্ঠ ভাগ্যকে কখনো ভুলে গেলে চলবে না।
বরদান:-
সুযোগ-সুবিধার উপকরণ গুলির মধ্যে থেকেও পদ্ম ফুলের মতো অলিপ্ত অথচ প্রিয় হয়ে অসীম জগতের বৈরাগী ভব
সুযোগ-সুবিধার উপকরণ গুলি যদি পেয়ে থাকো, তবে সেগুলিকে বড়ো মানসিকতার সাথে ব্যবহার করো। এইসব উপকরণ বা সাধন তো তোমাদের জন্যই। কিন্তু সাধনার যেন অবনতি না হয়। পুরোপুরি ব্যালেন্স রাখতে হবে। সুযোগ-সুবিধার উপস্থিতি কোনো খারাপ ব্যাপার নয়, ওগুলো তো তোমাদের কর্ম এবং যোগের ফল। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার উপকরণ গুলির মধ্যে থেকেও পদ্ম ফুলের মতো অলিপ্ত অথচ প্রিয় হও। সেগুলি ব্যবহার করো, কিন্তু তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ো না। সুযোগ-সুবিধার উপস্থিতি যেন সীমাহীন বৈরাগ্য বৃত্তিকে ঢিলে না করে দেয়। এটাকে প্রথমে নিজের মধ্যে ধারণ করো, তারপরে সমগ্র বিশ্বের বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দাও।
স্লোগান:-
সবথেকে বড়ো সেবা হলো কোনো নাজেহাল ব্যক্তিকে তার স্বমানে স্থিত করে দেওয়া।