২৭-০১-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ১৫-০৪-৮৪ মধুবন
স্নেহী, সহযোগী, শক্তিশালী বাচ্চাদের তিন অবস্থা
বাপদাদা স্নেহী, সহযোগী এবং শক্তিশালী সকল বাচ্চাকে লক্ষ্য করছেন l স্নেহী বাচ্চাদের মধ্যেও আবার স্নেহের বিভিন্নতা আছে l *এক, অন্যদের শ্রেষ্ঠ জীবন দেখে এবং অন্যদের পরিবর্তন দেখে প্রভাবিত হয়ে স্নেহী হওয়া l দ্বিতীয়তঃ, অন্য কোনও গুণের, তা' সুখ বা শান্তির যে কোনটার সামান্য অনুভবের স্পর্শ পাওয়ার পরে স্নেহী হওয়া l তৃতীয়তঃ, যারা সঙ্গ অর্থাৎ সংগঠন এবং শুদ্ধ আত্মাদের আনুকূল্য অনুভব করে স্নেহী আত্মা l চতুর্থতঃ, পরমাত্মার প্রতি অনুরাগ আছে এমন স্নেহী আত্মারা* l স্নেহী সবাই কিন্তু তাদের স্নেহ নম্বরানুক্রমিক l প্রকৃত স্নেহী আত্মা অর্থাৎ বাবাকে যথার্থরূপে জেনে স্নেহী হওয়া l
একইভাবে, সহযোগী আত্মাদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের *সহযোগী আত্মা* আছে l *এক, ভক্তির সংস্কার অনুযায়ী যারা সহযোগী* l এখানে সব বিষয় ভালো, স্থান ভালো, এই সমস্ত লোকের জীবন ভালো, ভালো স্থানের জন্য কিছু করে ভালো ফল লাভ করে, এই ভাবনার আধারে আকৃষ্ট হয়ে সহযোগী হওয়া অর্থাৎ তাদের তন, মন, ধন অল্পবিস্তর ব্যবহার করে তারা সহযোগী হয় l *দুই, জ্ঞান বা যোগের ধারণার দ্বারা কিছু প্রাপ্তি লাভের আধারে* সহযোগী হওয়া l *তিন, এক বাবা দ্বিতীয় কেউ নয় l শুধুই এক বাবা, সর্বপ্রাপ্তির এক স্থান* l বাবার কার্যই আমার কার্য l এইভাবেই নিজের বাবা, নিজের ঘর, নিজের কার্য, শ্রেষ্ঠ ঈশ্বরীয় কার্য মনে করে সদা সহযোগী হওয়া l সুতরাং, প্রভেদ তো হয়েই গেল, তাই না !
একইভাবে *শক্তিশালী আত্মাদের* মধ্যেও বিভিন্নরকম স্টেজ আছে l *শুধু জ্ঞানের আধারে, 'আমি শক্তিস্বরূপ আত্মা, সর্বশক্তিমান বাবার বাচ্চা', এটা জেনে শক্তিশালী স্থিতিতে স্থিত হওয়ার চেষ্টা করে* l যতোই হোক, এটা শুধু তাদের জানা পর্যন্ত, সেই কারণে যে সময়ে তাদের স্মৃতিতে জ্ঞানের এই পয়েন্টস থাকে, সেই সময় তাদের পাওয়ারফুল পয়েন্ট থাকার ফলে অল্প সময়ের জন্য তারা শক্তিশালী হয়, কিন্তু পয়েন্ট ভুলে যাওয়ার সাথে সাথে তারা তাদের পাওয়ার হারিয়ে ফেলে l মায়ার সামান্যতম প্রভাব জ্ঞান ভুলিয়ে দিয়ে তাদের শক্তিহীন করে দেয় l *দুই, যারা জ্ঞান চিন্তন করে, জ্ঞানের বর্ণন করে, অন্যদের শক্তিশালী বিষয়ে শোনায়, সেই সময় সেবার ফল লাভ করার কারণে নিজেকে সেই সময় শক্তিশালী অনুভব করে, কিন্তু সেটা শুধু তাদের চিন্তন করাকালীন অথবা বর্ণন করাকালীন, সদা নয়* l এক, তাদের চিন্তনের স্থিতি, দুই, তাদের বর্ণনের স্থিতি l *তিন, যারা সদা শক্তিশালী আত্মা* l তারা শুধু চিন্তন অথবা বর্ণন করেনা বরং মাস্টার সর্বশক্তিমান স্বরূপ হয়ে যায় l প্রতিমূর্তি হওয়া অর্থাৎ সমর্থ হওয়া l তাদের প্রতিটা কর্ম, প্রতিটা পদক্ষেপ আপনা থেকেই শক্তিশালী হয় l তারা স্মৃতিস্বরূপ হয়, সেইজন্য তাদের সদা পাওয়ারফুল স্থিতি থাকে l শক্তিশালী আত্মা সদা নিজেকে সর্বশক্তিমান বাবার সাথে কম্বাইন্ড অনুভব করবে এবং সদা সুরক্ষার ছত্রছায়ারূপে শ্রীমতের হাত অনুভূত হবে l শক্তিশালী আত্মা সদা দৃঢ়তার চাবির অধিকারী হওয়ার কারণে সাফল্য-ভান্ডারের মালিক রূপে অনুভব করে l সদা সর্বপ্রাপ্তির দোলায় দুলতে থাকে l সদা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের মনে গীত গাইতে থাকে l সদা রূহানী নেশাতে থাকার কারণে তারা সহজভাবে পুরানো দুনিয়ার আকর্ষণের ঊর্ধ্বে থাকে l তাদের পরিশ্রমের দরকার হয় না l শক্তিশালী আত্মার সব কর্ম, বোল আপনা থেকেই সহজে সেবা করাতে থাকে l স্ব পরিবর্তন অথবা বিশ্ব পরিবর্তন শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাদের সাফল্য নিশ্চিত, তারা সদা এই অনুভব করে l কোনও কার্যের ক্ষেত্রে কি করবো, কি হবে এই সঙ্কল্প মাত্র তাদের থাকবে না l নিজেদের জীবনে তারা সদা সফলতার মালা পড়ে থাকে - আমি বিজয়ী, আমি বিজয়মালার অংশ l বিজয় জন্মসিদ্ধ অধিকার, এই অটল নিশ্চয় নিজে থেকেই সবসময় থাকে l বুঝেছো তোমরা ! এখন নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, আমি কে ? শক্তিশালী আত্মারা মাইনরিটিতে অর্থাৎ সংখ্যাল্প l সুতরাং এখন কি করবে ? শক্তিশালী হও l সঙ্গমযুগের শ্রেষ্ঠ সুখ অনুভব করো l বুঝেছো তোমরা ! এই ব্যাপারে শুধু অবধান নয় অর্থাৎ মনোযোগ দিয়ে শুধু শোনা নয়, অর্জনকারী হতে হবে l আচ্ছা -
তোমরা নিজের ঘরে এসেছ বা বাবার ঘরে এসেছ, এখানে পৌঁছে গেছ, এটা দেখে বাপদাদা খুশি হয়েছেন l তোমরাও খুব খুশি হয়েছো, তাই না ! এই খুশি সদা বজায় রাখতে হবে, শুধু মধুবনে নয়, বরং সারা সঙ্গমযুগ এই খুশি যেন তোমাদের সঙ্গে থাকে l বাচ্চাদের খুশিতে বাবাও খুশি l কতো দূর-দূরান্ত থেকে, কতো কী সহন করে অবশেষে তোমরা পৌঁছেই গেছ ! ঠান্ডা-গরম, খাদ্যাভ্যাস সবকিছু সহন করে তোমরা পৌছেছ l ধূলো-ঝড়ও হয়েছে l পুরানো দুনিয়ায় এইসব তো হয়েই থাকে l তবুও তোমরা আরাম পেয়েছ, তাই না ! আরাম করেছ ? যদি তিনফুট নাও হয়, অন্ততঃ দু'ফুট জায়গা তো তোমরা পেয়েছ l তবুও নিজের বাড়ি দাতার বাড়ি, মিষ্টি লাগে, তাই না! ভক্তিমার্গের যাত্রা থেকে তো ভালো স্থান ! সুরক্ষার ছত্রছায়ায় তোমরা এসে গেছ l ভালোবাসার পালনায় এসেছ l এই যজ্ঞের শ্রেষ্ঠ ভূমিতে পৌঁছান, যজ্ঞের প্রসাদের অধিকারী হওয়া, কতো মহত্বপূর্ণ ! এক কণার অনেক মূল্য ! এটা তো সবাই জান, তাই না! তারা প্রসাদের এক কণা পাওয়ার জন্য তৃষ্ণার্ত, সেক্ষেত্রে এখানে তোমরা পেট ভরে ব্রহ্মা-ভোজন পাবে l সুতরাং কতো ভাগ্যবান তোমরা ! এই মাহাত্ম্যের সাথে ব্রহ্মা-ভোজন খাও, তবে সবসময়ের জন্য মনও মহৎ হয়ে যাবে l
আচ্ছা- সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এসেছে পাঞ্জাব থেকে l এইবার এত বেশি কেন এখানে দৌড়ে এসেছে ? এর আগে কখনো এত সংখ্যক আসেনি l এখন তোমরা সচেতন হয়েছ ! তবুও পাঞ্জাবে তারা সৎসঙ্গ এবং অমৃতবেলার গুরুত্ব কিভাবে দেয়, বাপদাদা সেই শ্রেষ্ঠ বিশেষত্ব দেখেন l খালি পায়েই তারা কিভাবে অমৃতবেলায় পৌঁছে যায়! বাপদাদাও পাঞ্জাব নিবাসী বাচ্চাদেরকে, যারা অমৃতবেলার গুরুত্বকে বোঝে, তা দেখে তাদেরকে মহান দৃষ্টিতে দেখেন l পাঞ্জাব নিবাসী বাচ্চারা সদা সঙ্গের আধ্যাত্মিক (রূহানী) রঙে রঙিন হয়ে থাকে l তারা সদা সত্যের সঙ্গে থাকে l তোমরা তো সেইরকমই, তাই না ? পাঞ্জাবের তোমরা সবাই অমৃতবেলায় শক্তিধর হয়ে মিলনের উদযাপন করো ? তোমরা যারা পাঞ্জাবের, তাদের অমৃতবেলার বিষয়ে অলসতা নেই তো ? তোমরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হও না, তাই না ? অতএব, সবসময় পাঞ্জাবের বিশেষত্ব মনে রেখো l আচ্ছা -
*ইস্টার্ন জোন থেকেও এসেছে l ইস্টের বিশেষত্ব কি ? (সানরাইজ) সূর্য সদা ইস্টে উদয় হয় l সূর্য অর্থাৎ আলোক পুঞ্জ l সুতরাং যারা ইস্টার্ন জোনের, তারা মাস্টার জ্ঞান সূর্য l সকলে তোমরা অন্ধকার নিরসন করে আলো দাও, তাই না* ? এই বিশেষত্ব তোমাদের আছে, তাই নয় কি ? কখনও তোমরা মায়ার অন্ধকারে প্রবিষ্ট হও না l অন্ধকার নিরসনকারী মাস্টার দাতা হয়ে গেছ, তাই না! সূর্য দাতাই হয়, নয় কি?
সুতরাং সকলে তোমরা মাস্টার সূর্য অর্থাৎ মাস্টার দাতা হয়ে বিশ্বকে আলোকিত করার কার্যে ব্যাস্ত থাকো, তাই না! যারা বিজি থাকে, যাদের কোনরকম ফুরসৎ থাকে না, তাদের জন্য মায়ারও কোনো সময় হয় না l তাহলে ইস্টার্ন জোনের সবাই তোমরা কি মনে কর ? ইস্টার্ন জোনে মায়া আসে ? যদি বা আসে, তবে নমস্কার করতে আসে, নাকি তোমাদের মিকি মাউস বানায়? মিকি মাউসের খেলা তোমাদের ভালো লাগে ? *ইস্টার্ন জোনের গদি বাবার গদি l তাহলে সেটা রাজগদিই তো হয়ে গেল, নয় কি* ? সুতরাং, যাদের রাজগদি থাকে তারা রাজা হবে নাকি মিকি মাউস ? সুতরাং, সকলে তোমরা জ্ঞানসূর্য ? জ্ঞানসূর্য ওখানেই তো উদয় হয়েছেন, তাই না ?
ইস্ট থেকেই উদিত হয়েছে l তোমাদের বিশেষত্ব বুঝেছো তোমরা ? শিব বাবার সম্ভূত হওয়ার (কলকাতায় ব্রহ্মা বাবার হিরে জহরতের দোকান ছিল) শ্রেষ্ঠ গদির(ব্রহ্মা তনে) অর্থাৎ বরদানী স্থানের শ্রেষ্ঠ গদির শ্রেষ্ঠ আত্মা তোমরা l *এই বিশেষত্ব অন্য কোনও জোনে নেই* l সুতরাং সদা নিজের বিশেষত্ব বিশ্ব সেবায় নিয়োজিত কর l কোন্ বিশেষত্ব দেখাবে ? সদা মাস্টার জ্ঞানসূর্য l সদা আলো প্রদানকারী মাস্টার দাতা l আচ্ছা- তোমরা মিলন উদযাপন করতে এসেছ, সদাসর্বদা শ্রেষ্ঠ মিলনের উদযাপন করো l মেলা অর্থাৎ মিলনোৎসব l এক সেকেন্ডও মিলন মেলা থেকে নিজেকে বঞ্চিত কোরো না l এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পূর্বে নিরন্তর যোগীর অনুভব পাকা করে যেও l আচ্ছা -
সদা এক বাবার স্নেহে থাকা স্নেহী আত্মাদের, প্রতি পদে ঈশ্বরীয় কার্যের সহযোগী আত্মাদের, সদা শক্তিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, সদা বিজয়ের অধিকার অনুভবকারী বিজয়ী বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
*গ্রুপের সাথে* :- এক বল, এক ভরসায় সদা উন্নতি করতে থাকো l সদা এক বাবার হয়ে নিরন্তর বাবার শ্রীমৎ তোমাদের অনুসরণ করে চলতে হবে l এই পুরুষার্থ দ্বারা সদা অগ্রচালিত হও l শ্রেষ্ঠ জ্ঞানের প্রতিমূর্তি এবং মহান যোগী হওয়ার অনুভব করো l গভীরে প্রবিষ্ট হও l যত তোমরা জ্ঞানের গভীরে যাবে, ততই মূল্যাতীত অনুভবের রত্ন প্রাপ্ত করবে l একাগ্র বুদ্ধি হও l যেখানে একাগ্রতা আছে, সেখানে সর্বপ্রাপ্তির অনুভব আছে l অল্পকালীন প্রাপ্তিতে আকৃষ্ট হয়োনা l অবিনাশী প্রাপ্তি কর l বিনাশী বিষয়ে আকৃষ্ট হয়োনা সদা নিজেকে অবিনাশী ভান্ডারের মালিক মনে করে বেহদে গমন কর l সীমিত পরিসরের (হদে ) মধ্যে থেকো না l অসীম (বেহদের) আনন্দ আর সীমিত (হদের) আকর্ষণের আনন্দের মধ্যে রাত-দিনের ফারাক ! সেইজন্য সচেতন হয়ে বুঝেসুঝে সবকিছু করো এবং তোমার বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ শ্রেষ্ঠ বানাও l
*বাছাই করা বিশেষ অব্যক্ত মহাবাক্য - প্রীতবুদ্ধি বিজয়ী রত্ন হও*
প্রীত বুদ্ধি অর্থাৎ যে সদা অলৌকিক অব্যক্ত স্থিতিতে আল্লাহর দিকেই থাকে l যাদের প্রতিটি সঙ্কল্প, প্রতিটি কার্য অলৌকিক হয়, ব্যক্ত দেশ আর কর্তব্য-কর্মে থেকেও কমল পুষ্পসম নির্লিপ্ত এবং এক বাবার নিকটতম প্রিয় হয়ে থাকা, এটাই প্রীত বুদ্ধি হওয়া l প্রীত বুদ্ধি অর্থাৎ বিজয়ী l তোমাদের স্লোগানও তো এটাই, *বিনাশকালে প্রীতবুদ্ধি বিজয়ী (বিজয়ন্তী) আর বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি বিনাশী (বিনশ্যন্তি)* l যখন এই স্লোগান অন্যকে শোনাও যে বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি হয়ো না, প্রীত বুদ্ধি হও, তখন নিজেকেও দেখ, সবসময় আমি প্রীত বুদ্ধি থাকি ? বিপরীত বুদ্ধিতে থাকি না তো কখনো ?
যাদের প্রীত বুদ্ধি থাকে, তারা কখনো শ্রীমতের বিপরীত একটা সঙ্কল্পও করতে পারে না l যদি তোমার কোনও সঙ্কল্প, বচন অথবা কর্ম শ্রীমতের বিপরীতে হয়, তবে তোমাকে প্রীত বুদ্ধির বলা হবে না l সুতরাং, চেক করো, 'আমার প্রতিটা সঙ্কল্প, বচন কি শ্রীমৎ অনুসারে হয় ?' প্রীত বুদ্ধি অর্থাৎ বুদ্ধির আকর্ষণ বা একনিষ্ঠা নিরন্তর এক প্রীতমের সাথে যুক্ত থাকবে l যখন তোমার একের জন্য প্রীতি তথা অনুরাগ থাকবে, তখন অন্য কোনও ব্যক্তি বা বৈভবের প্রতি তোমার প্রীতি থাকবে না, কারণ প্রীত বুদ্ধি অর্থাৎ সদা বাপদাদাকে নিজের সমুখে অনুভব করা l যারা সদাসর্বদা বাবার সামনে থাকে তারা কখনো অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না l
যাদের প্রীত বুদ্ধি থাকে, তাদের মুখ থেকে, হৃদয় থেকে সদাই এই বোল নির্গত হবে - 'তোমার সাথে আহার করি, তোমার সাথে বসি, তোমার সাথেই কথা বলি, তোমার থেকেই শুনি, তোমার সাথে আমার সর্ব-সম্বন্ধ পরিপূর্ণ করি, আমার সর্বপ্রাপ্তি তোমার থেকে' l এমনকি, যখন তারা ভাষায় প্রকাশ করে না, তাদের নয়ন আর মুখমন্ডল বলে l সুতরাং, চেক করো, 'বিনাশ কালে এইভাবে আমি প্রীত বুদ্ধি হয়েছি অর্থাৎ আমি কি একনিষ্ঠ, একরস স্থিতিতে স্থিত হয়েছি ?'
সূর্যকে দেখলে যেমন তার রশ্মিও অবশ্যই তোমার সামনে প্রতিভাত হয়, ঠিক একইভাবে তুমি যদি নিরন্তর জ্ঞানসূর্য বাবার সামনে থাকো, অর্থাৎ তুমি যদি প্রকৃতই প্রীতবুদ্ধি হও, তবে জ্ঞানসূর্যের সর্ব গুণের কিরণ নিজের মধ্যে অনুভব করবে l এইরকম প্রীত বুদ্ধি বাচ্চাদের মুখমন্ডলে অন্তর্মুখীতার ঝলক এবং সেইসঙ্গে সঙ্গমযুগ ও ভবিষ্যতের সবরকম স্বমানের নেশা থাকে l
যদি সদা এই স্মৃতি থাকে যে তোমার দেহ যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে, তবে এই বিনাশকাল স্মৃতিতে থাকায় নিজে থেকেই তোমার প্রীতবুদ্ধি বিকশিত হবে l যখন বিনাশকাল উপস্থিত হয়, তখন অজ্ঞানীও (বাবার জ্ঞান যে পায়নি ) বাবাকে স্মরণ করার অবশ্যই চেষ্টা করে, কিন্তু তাঁর পরিচয় না থাকার কারণে তাঁর সাথে প্রীতি জুড়তে তারা অপারগ হয় l যদি সদা তোমরা এটা স্মৃতিতে রাখো যে এই মুহূর্তই অন্তিম মুহূর্ত, তখন এটা স্মরণ হওয়ার কারণে আর কিছুই স্মরণে আসবে না l
যাদের সবসময় প্রীত বুদ্ধি থাকে তাদের মন্সাতেও ব্যর্থ সঙ্কল্প বা বিকল্প শ্রীমতের বিরুদ্ধে যায় না l যাদের এমন প্রীত বুদ্ধি থাকে তারা বিজয়ী রত্ন হয় l কোথাও কোনভাবে কোনও দেহধারীর প্রতি প্রীতির উন্মেষ ঘটতে দিও না, নয়তো, তুমি বিপরীত বুদ্ধির লিস্টে এসে যাবে l যে বাচ্চারা প্রীত বুদ্ধি হয়ে প্রীতির সম্পর্ক সবসময় প্রতিপালন করে, তাদের সদাকালের জন্য বিশ্বে সবরকম সুখের প্রাপ্তি হয় l বাপদাদা প্রীতির দায়িত্ব পালনকারী এমন বাচ্চাদের দিনরাত গুণগান করেন l অন্য সকলকে মুক্তিধামে বসিয়ে, প্রীতির দায়িত্ব পালন করে এমন বাচ্চাদের তিনি বিশ্বের রাজ্যভাগ্য প্রাপ্ত করান l
এক বাবার সাথে তোমাদের হৃদয়ের প্রকৃত প্রীতি হতে দাও, তবে মায়া কখনো ডিস্টার্ব করবে না l তার ডিস্ট্রাকশন (বিনাশ) হয়ে যাবে l যাই হোক, যদি হৃদয়ের প্রকৃত প্রীতি না থাকে, যদি শুধু বাবার হাত ধরে থাকো, কিন্তু তাঁর আনুকূল্য লাভ না করো, তাহলে মায়া দ্বারা তোমাদের আঘাত হতে থাকবে l যখন মরজীবা হয়েছ (পুরানো জীবনে নতুন জীবন পেয়েছ), নতুন জন্ম, নতুন সব সংস্কার ধারণ করেছো, তবে পুরানো সংস্কাররূপী বস্ত্রের প্রতি প্রীতি কেন ? যে জিনিস বাবার প্রিয় নয়, সেই জিনিস বাচ্চাদের কি প্রিয় হওয়া উচিৎ ? এইজন্য প্রীত বুদ্ধি হয়ে ভিতরের দুর্বলতা, ঘাটতি, শক্তির অভাব এবং কোমলতার পুরানো হিসেবনিকেশ সদাকালের জন্য সমাপ্ত করে দাও l রত্নখচিত বস্ত্র সরিয়ে পুরানো জরাজীর্ণ বস্ত্রের প্রতি প্রীতি রেখো না l
কোনো কোনো বাচ্চা বাবার সাথে প্রীতির সম্পর্কে জুড়ে যায়, কিন্তু নম্বরানুক্রমে তা' পালন করে l সেই দায়িত্ব পালন অনুযায়ী তাদের লাইন বদল হয়ে যায় l তাদের লক্ষ্য এক থাকে, কিন্তু যোগ্যতার তারতম্য ঘটে l যদি এক সম্বন্ধে তোমার দায়িত্ব পরিপূরণে কিছু ঘাটতি থেকে যায়, মনে করো, শতকরা পঁচাত্তর ভাগ সম্বন্ধ বাবার সাথে আর পঁচিশ ভাগ সম্বন্ধ কোনো এক আত্মার সাথে, তবুও যারা দায়িত্ব পালন করে তাদের লিস্টে তুমি আসতে পারবে না l দায়িত্ব পরিপূরণ করার অর্থ দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা l যে কোনও পরিস্থিতি হোক না কেন, তা' তোমার মন, তন বা সম্পর্কের, কিন্তু কোনও আত্মা তোমার সঙ্কল্পেও স্মরণে না আসে l সঙ্কল্পে যদি কোনো আত্মার স্মৃতি আসে, তবে সেই সেকেন্ডেরও হিসেব তৈরি হয়, এটাই কর্মের গুহ্য গতি !
কোনো কোনো বাচ্চা এখনো পর্যন্ত প্রীতির সম্বন্ধ জুড়তে চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেইজন্য তারা বলে যোগ লাগাতে তারা অপারগ l যাদের অল্প সময়ের জন্য যোগযুক্তি ঘটে আর তারপরে ভেঙে যায়, তাদের ক্ষেত্রে বলা হবে, তাদের প্রীতি বিকাশশীল l যারা প্রীতি প্রতিপালন করে তারা প্রীতিতে হারিয়ে যায় l তারা দেহের এবং দেহ-সম্বন্ধীয় সকলের ক্ষেত্রে বোধাতীত অবস্থায় উপনীত হয় l সুতরাং, তোমরাও বাবার সাথে এমন প্রীতি লালন করো, তবে দেহ আর দেহের সম্বন্ধ স্মরণে আসবে না l
*বরদানঃ- সময় আর সঙ্কল্পরূপী ভান্ডারের প্রতি অ্যাটেনশন দিয়ে জমার হিসেব বর্ধিত করে পদমাপদমপতি হও*
বাস্তবে, তোমাদের অনেক ভান্ডার আছে, কিন্তু সময় আর সঙ্কল্প - বিশেষ এই দুই ভান্ডারের প্রতি তোমাদের অ্যাটেনশন দিতে হবে l প্রতি মুহূর্তে সঙ্কল্প শ্রেষ্ঠ আর শুভ হতে দাও, তোমাদের জমার হিসেব বাড়তে থাকবে l এই সময় এক জমা করলে লক্ষ -কোটি (পদম) লাভ করবে l এটাই হিসেব l এই ব্যাঙ্ক তোমাদের একের লক্ষ-কোটি গুণ (পদমগুন ) ফিরিয়ে দেয় l অতএব, যা কিছুই হোক, এমনকি তোমাদের যদি কিছু ত্যাগও করতে হয়, তপস্যা করতে হয়, নিরহঙ্কারী (নির্মান) হতে হয়, যা কিছুই ঘটে যাক, এই দু'টো বিষয়ে অ্যাটেনশন দাও, তবে পদমাপদমপতি হয়ে যাবে l
বরদান:-
সময় আর সঙ্কল্পরূপী ভান্ডারের প্রতি অ্যাটেনশন দিয়ে জমার হিসেব বর্ধিত করে পদমাপদমপতি হও
বাস্তবে, তোমাদের অনেক ভান্ডার আছে, কিন্তু সময় আর সঙ্কল্প - বিশেষ এই দুই ভান্ডারের প্রতি তোমাদের অ্যাটেনশন দিতে হবে l প্রতি মুহূর্তে সঙ্কল্প শ্রেষ্ঠ আর শুভ হতে দাও, তোমাদের জমার হিসেব বাড়তে থাকবে l এই সময় এক জমা করলে লক্ষ -কোটি (পদম) লাভ করবে l এটাই হিসেব l এই ব্যাঙ্ক তোমাদের একের লক্ষ-কোটি গুণ (পদমগুন ) ফিরিয়ে দেয় l অতএব, যা কিছুই হোক, এমনকি তোমাদের যদি কিছু ত্যাগও করতে হয়, তপস্যা করতে হয়, নিরহঙ্কারী (নির্মান) হতে হয়, যা কিছুই ঘটে যাক, এই দু'টো বিষয়ে অ্যাটেনশন দাও, তবে পদমাপদমপতি হয়ে যাবে l
স্লোগান:-
মনোবল দ্বারা সেবা করলে তার প্রালব্ধ তোমরা অনেক গুণ বেশি লাভ করবে l