২২-০৭-১৯ প্রাতঃ মুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -- ভাই-বোনের পরিচয় বোধ থেকেও বের হয়ে একে অপরকে ভাই-ভাই নিশ্চয় করো তাহলে সিভিল আই (সাম্য দৃষ্টি) হয়ে যাবে, আত্মা যখন সিভিল-আইজ্ড হয় তখন কর্মাতীত হতে পারে"
প্রশ্ন:-
নিজের অবগুণ দূর করতে কোন্ যুক্তিটি অবলম্বন করা উচিত ?
উত্তর:-
নিজের চরিত্রের রেজিস্টার রাখো। তাতে রোজকার পোতামেল অর্থাৎ কর্মের চার্ট নোট করো। রেজিস্টার রাখলে নিজের অবগুণ গুলি সহজেই বের করতে পারবে। অবগুণ দূর করতে করতে সেই অবস্থায় পৌঁছাতে হবে যখন একমাত্র বাবা ব্যতীত কেউ স্মরণে থাকবে না। কোনও পুরানো বস্তুর প্রতি আকর্ষণ থাকবে না। অন্তরে কোনো কিছুর চাহিদা থাকবে না ।
ওম্ শান্তি ।
এক হল মানব বুদ্ধি, দ্বিতীয় হল ঈশ্বরীয় বুদ্ধি, তারপরে হবে দৈব বুদ্ধি। মানব বুদ্ধি হল অসুরী বুদ্ধি। ক্রিমিনাল আইজ্ড (বিকর্মী দৃষ্টি) কিনা। এক হয় সিভিল আইজ্ড, দ্বিতীয় হল ক্রিমিনাল-আইজ্ড। দেবতারা হলেন ভাইসলেস অর্থাৎ পবিত্র, সিভিল আইজ্ড এবং এইখানে কলিযুগী মানুষ হল ভিসাস অর্থাৎ অপবিত্র ক্রিমিনাল-আইজ্ড। তাদের চিন্তন ইত্যাদি অপবিত্র হবে। ক্রিমিনাল-আইজ্ড মানুষ রাবণের জেলে বাস করে। রাবণ রাজ্যে সবাই হল ক্রিমিনাল আইজ্ড, একজনও সিভিল আইজ্ড নেই। এখন তোমরা হলে পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগে। এখন বাবা তোমাদের ক্রিমিনাল-আইজ্ড থেকে পরিবর্তন করে সিভিল-আইজ্ড বানাচ্ছেন। ক্রিমিনাল-আইজ্ড অনেক প্রকারের হয় - কেউ সেমি, কেউ আবার অন্যরকম। যখন সিভিল আইজ্ড হয়ে যাবে তখন কর্মাতীত অবস্থা হবে তখন ব্রাদরলি আইজ্ড অর্থাৎ ভাই-ভাইয়ের দৃষ্টি হয়ে যাবে। আত্মা, আত্মার দর্শন করে, শরীর তো থাকেই না, তাহলে ক্রিমিনাল-আইজ্ড হবে কিভাবে ! তাই বাবা বলেন নিজেদেরকে ভাই-বোনের পরিচয় বোধ থেকেও বের করো। একে অপরকে ভাই-ভাই নিশ্চয় করো। এই কথাটিও খুব গুহ্য। কখনও কারো বুদ্ধিতে আসবে না। সিভিল-আইজ্ড কথাটির অর্থ কারো বুদ্ধিতে আসতে পারে না। যদি এসে যায় তাহলে তো উঁচু পদের অধিকারী হবে। বাবা বোঝান নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করো, শরীরের কথা ভুলতে হবে। এই শরীর টিও ত্যাগ করতে হবে বাবার স্মরণে। আমি আত্মা বাবার কাছে যাই। দেহ অভিমান ত্যাগ করে পবিত্র স্বরূপ প্রদানকারী বাবার স্মরণেই এই শরীর ত্যাগ করতে হবে। ক্রিমিনাল-আইজ্ড হলে অন্তরে নিশ্চয়ই অনুতাপ হবে। লক্ষ্য খুবই উঁচুতে। বাচ্চারা যতই ভালো হোক তবুও একটু আধটু দোষ ত্রুটি তো নিশ্চয়ই হয় কারণ মায়া আছে তাইনা। কর্মাতীত তো কেউ হতে পারে না। কর্মা তীত অবস্থা শেষে প্রাপ্ত করবে তখন সিভিল-আইজ্ড হতে পারবে। তখন সেই আত্মিক ভ্রাতৃ প্রেম (রূহানী ব্রাদারলি লাভ) থাকে। রূহানী ব্রাদারলি লাভ থাকলে ভালো, তাহলে দৃষ্টি ক্রিমিনাল হয় না, ফলে উঁচু পদের অধিকারী হতে পারে। বাবা মুখ্য উদ্দেশ্যটি সম্পূর্ণ ভাবে বলে দেন। বাচ্চারা বুঝতে পারে আমাদের মধ্যে এই এই অবগুণ আছে। রেজিস্টার রাখলে অবগুণের জ্ঞান থাকবে। কেউ রেজিস্টার না রেখেও শুধরে যাবে, এমনও হতে পারে। কিন্তু যারা কাঁচা তাদের অবশ্যই রেজিস্টার রাখা উচিত। কাঁচা তো অনেকেই, কেউ তো লিখতেও জানে না। অবস্থা তোমাদের এমন হওয়া উচিত যে অন্য কেউ যেন স্মরণে না আসে। আমরা আত্মারা দেহ ছাড়াই আসি, এখন অশরীরী স্বরূপে ফিরতে হবে। এই নিয়ে একটি কাহিনী আছে - সে বলল তোমরা লাঠি হাতে নিও না, নইলে শেষ সময়ে লাঠির কথাও স্মরণে আসবে। কোনো জিনিসে মায়া রাখবে না। অনেকের পুরানো জিনিসের প্রতি মায়া থাকে। যেন কিছু স্মরণে না আসে একমাত্র বাবা ছাড়া। এই লক্ষ্য কতখানিই উঁচু । কোথায় পাথর রূপী শিবের ভক্তি আর কোথায় শিববাবাকে স্মরণ করা। চাওয়ার ইচ্ছা থাকা উচিত নয়। প্রত্যেককে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা সার্ভিস অবশ্যই করা উচিত। যদিও গভর্নমেন্টের সার্ভিস ৮ ঘন্টার হয় কিন্তু পাণ্ডব গভর্নমেন্টের সার্ভিস মিনিমাম ৫-৬ ঘন্টা অবশ্যই করো। পতিত মানুষ কখনও বাবাকে স্মরণ করতে পারবে না। সত্যযুগ হল পবিত্র দুনিয়া (ভাইসলেস ওয়ার্ল্ড)। দেবী-দেবতাদের মহিমা গাওয়া হয় - সর্বগুণ সম্পন্ন, ১৬ কলা সম্পূর্ণ, সম্পূর্ণ নির্বিকারী.....। বাচ্চারা তোমাদের অবস্থা উপরাম থাকা উচিত। কোনও পুরানো ছিঃ ছিঃ বস্তুর প্রতি মায়া থাকা উচিত নয়। শরীরের প্রতিও যেন আকর্ষণ না থাকে, এতখানি যোগী স্বরূপ হতে হবে। যখন সত্য প্রকৃত যোগী হবে তখন সর্বদা ফ্রেশ থাকবে। তোমরা যত সতোপ্রধান হতে থাকবে, খুশীর পারদ ততই ঊর্ধ্বে থাকবে। ৫ হাজার বছর পূর্বেও এমন খুশীর অনুভূতি ছিল। সত্যযুগেও সেই খুশীর অনুভূতি থাকবে। এখানেও খুশীতে থাকবে তারপরে এই খুশী সঙ্গে নিয়ে যাবে। অন্তিম কালে যেমন মতি তেমন গতি বলা হয়। এখন আছে মত, তারপরে স্বর্গে গতি থাকবে। এইরূপ বিচার সাগর মন্থন করতে হয়।
বাবা তো হলেন দুঃখ হর্তা (হরণকারী), সুখ কর্তা (সুখ প্রদানকারী)। তোমরা বলো আমরা বাবার সন্তান, তাই কাউকে দুঃখ দেওয়া উচিত নয়। সবাইকে সুখের রাস্তা বলা উচিত। যদি সুখ দান না কর তাহলে নিশ্চিত দুঃখ দেবে। এ হল পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগ, যখন তোমরা পুরুষার্থ কর সতোপ্রধান হওয়ার জন্যে। পুরুষার্থীও হয় নম্বর অনুসারে। বাচ্চারা যখন সার্ভিস করে তখন বাবা তাদের মহিমা বর্ণনা করেন যে, অমুক আত্মা রূপী বাচ্চা হল যোগী । যারা সার্ভিসেবল বাচ্চা, তারা ভাইসলেস লাইফে আছে। যে আত্মাদের একটুও বিকল্প আসে না তারা শেষ সময়ে কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করবে। তোমরা ব্রাহ্মণরাই সিভিল-আইজ্ড হচ্ছ। মানুষকে কখনও দেবতা বলা যাবে না। যারা ক্রিমিনাল-আইজ্ড হবে তারা নিশ্চয়ই পাপ কর্ম করবে। সত্যযুগী দুনিয়া হল পবিত্র দুনিয়া। এটা হল পতিত দুনিয়া। এর অর্থও তারা বোঝে না। যখন ব্রাহ্মণ হয় তখন বুঝতে পারে। তারা বলে জ্ঞান তো খুবই ভালো, যখন সময় পাব তখন আসব। বাবা বোঝেন কখনোই আসবে না। এইরূপ বাবার অপমান করা হল। তিনি মানুষ থেকে দেবতা করেন, অতএব অবিলম্বে জ্ঞান অর্জন করা উচিত, তাইনা। আগামী কালের অপেক্ষায় থাকলে মায়া নাক দিয়ে ধরে নর্দমায় ফেলে দেবে অর্থাৎ পতিত বানাবে। কাল-কাল করতে করতে কাল খেয়ে নেবে অর্থাৎ মৃত্যু হবে। শুভ কাজে দেরি করা উচিত নয়। কাল রূপী মৃত্যু তো মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক মানুষ হঠাৎ মারা যায়। এখনই বম্ব পড়লে কত মানুষ মারা যাবে! ভূমিকম্প হয়, তো আগে থেকেই বোঝা যায় কি। ড্রামা অনুযায়ী ন্যাচারাল ক্যালামিটিজ হবেই, যা কেউ জানতে পারে না। অনেক ক্ষতি হয়। তখন গভর্নমেন্ট রেলের ভাড়া ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়। মানুষকে তো যেতেই হয়। চিন্তা করতে থাকে - কীভাবে আমদানি বৃদ্ধি করা যায় যাতে মানুষ দিতে পারে। আনাজের দাম কত বেড়ে গেছে। অতএব বাবা বসে বোঝাচ্ছেন - সিভিল-আইজ্ডকে বলা হবে পবিত্র আত্মা। এই দুনিয়া তো হল ক্রিমিনাল-আইজ্ড। তোমরা সবাই সিভিল-আইজ্ড হচ্ছ। এতেই পরিশ্রম আছে, উঁচু পদের অধিকারী হওয়া মাসির বাড়ি যাওয়ার মতন সরল কাজ নয়। যে যত সিভিল-আইজ্ড হবে, ততই উঁচু পদের অধিকারী হবে। তোমরা তো এখানে এসেছ নর থেকে নারায়ণ হতে। কিন্তু যারা সিভিল-আইজ্ড হয় না, তারা জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। তারা পদ মর্যাদাও কম প্রাপ্ত করবে। এই সময় সব মানুষের হল ক্রিমিনাল-আইজ্ড। সত্যযুগে হয় সিভিল-আইজ্ড।
বাবা বোঝান - মিষ্টি বাচ্চারা, তোমরা দেবী-দেবতা স্বর্গের মালিক হতে চাও তো খুব খুব সিভিল-আইজ্ড হও। নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে বাবাকে স্মরণ করো, তবে ১০০ শতাংশ সোল কনসাস হতে পারবে। কাউকে এর অর্থ বুঝিয়ে দিতে পারো। সত্যযুগে পাপের কোনও কথা হয় না। দেবতারা হলেন সর্বগুণ সম্পন্ন, সম্পূর্ণ সিভিল-আইজ্ড। চন্দ্রবংশীদেরও দুই কলা কম থাকে। চাঁদের আকার শেষের দিকে সরু রেখা রয়ে যায়। একেবারে শূন্য হয়ে যায় না। বলা হবে প্রায় লুপ্ত হয়েছে। মেঘের আড়ালে দেখা যায় না। সেইরকম বাবা বলেন তোমাদের আত্মা রূপী জ্যোতি একেবারে নিভে যায় না, কিছু লাইট তো থাকে। সুপ্রিম ব্যাটারি থেকে তোমরা আবার পাওয়ার নাও। স্বয়ং এসে শেখান যে তোমরা আমার সঙ্গে কিভাবে যোগ যুক্ত হতে পারো। টিচার যখন পড়ান তখন বুদ্ধিযোগ টিচারের সঙ্গে থাকে, তাইনা। টিচারের মতানুযায়ী পড়বে। আমরাও পড়াশোনা করে টিচার বা ব্যারিস্টার হব, এতে কৃপা বা আশীর্বাদ ইত্যাদির কোনও কথা থাকে না। মাথা নোয়ানোর কোনও দরকার নেই। হ্যাঁ, হরি ওম্ বা রাম-রাম বলে অভিবাদন করলে তার উত্তর তো দিতে হয়। এইরূপ ব্যবহার করা অর্থাৎ সম্মান দেওয়া । অহংকার দেখাবে না। তোমরা জানো আমাদের তো এক পিতাকেই স্মরণ করতে হবে। কেউ ভক্তি ছাড়লে ঝামেলা হয়ে যায়। ভক্তি করা ত্যাগ করলে তাকে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী বলা হয়। ঈশ্বরে অবিশ্বাসী এই কথাটি তোমাদের ও তাদের বলাতে অনেক পার্থক্য আছে। তোমরা বলো তারা পিতার পরিচয় জানে না, তাই অবিশ্বাসী, অনাথ, তাই সর্বদা লড়াই ঝগড়া করে। প্রতিটি ঘরে অশান্তি। ক্রোধের চিহ্ন হল অশান্তি। স্বর্গে অপার শান্তি আছে। মানুষ বলে ভক্তি করে খুব শান্তি প্রাপ্ত হয়, কিন্তু অল্পকালের জন্য। সদাকালের জন্য শান্তি চাই, তাই না। তোমরা সনাথ থেকে অনাথ হও তখন শান্তি থেকে অশান্তিতে প্রবেশ কর। অসীম জগতের পিতা অসীম সুখের উত্তরাধিকার প্রদান করেন। পার্থিব জগতের পিতার কাছে পার্থিব জগতের সুখের অধিকার প্রাপ্ত হয়। সেসব বাস্তবে হল দুঃখের, কাম রূপী কাটারীর উত্তরাধিকার, যাতে অসীম দুঃখ আছে তাই বাবা বলেন - তোমরা আদি-মধ্য-অন্ত দুঃখ পাও।
বাবা বলেন আমি পতিত পাবন পিতা, আমায় স্মরণ করো, একেই বলা হয় সহজ স্মরণ ও সহজ জ্ঞান, সৃষ্টি চক্রের। তোমরা নিজেদের আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের নিশ্চয় করলে স্বর্গে অবশ্যই আসবে। স্বর্গে সবাই সিভিল-আইজ্ড ছিল, দেহ-অভিমানীকে ক্রিমিনাল-আইজ্ড বলা হয়। সিভিল-আইজ্ড আত্মায় কোনও বিকার থাকে না। বাবা কত সহজ করে বোঝান। কিন্তু বাচ্চাদের এইটুকু স্মরণ থাকে না। কারণ তারা হল এখন ক্রিমিনাল-আইজ্ড। তাই ছিঃ ছিঃ পুরানো দুনিয়ার কথাই স্মরণে আসে। বাবা বলেন এই দুনিয়াকে ভুলে যাও। আচ্ছা !
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন গুডমর্নিং। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্যে মুখ্য সার :-
১. এমন যোগী হতে হবে যে শরীরের প্রতি যেন একটুও আকর্ষণ না থাকে। কোনোরকম ছিঃ ছিঃ বস্তুর আসক্তি থাকবে না। অবস্থা এমন উপরাম থাকবে। খুশীর পারদ যেন সদা ঊর্ধে থাকে।
২. কাল অর্থাৎ মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে, তাই শুভ কাজে দেরি করবে না। আগামী কালের জন্যে অপেক্ষা করবে না।
বরদান:-
রোগ-কনসাস হওয়ার পরিবর্তে খুশীর অনুভব দ্বারা হিসেব নিকাশ মেটাতে সক্ষম সোল কনসাস ভব
দেহটি তো সবারই পুরানো। প্রত্যেকের ছোট বড় কিছু না কিছু রোগ আছেই। কিন্তু মনে যদি দেহের প্রভাব পড়ে তাহলে ডবল রুগী হয়ে যাবে। তাই মনে কখনো রোগের সঙ্কল্প আসা উচিত নয়, তখন বলা হবে সোল-কনসাস। রোগের সম্মুখীন হয়ে চিন্তিত হবে না। একটু ওষুধ রূপী ফল খেয়ে রোগকে বিদায় দিও। খুশী মনে হিসাব নিকাশ মিটিয়ে নিও।
স্লোগান:-
প্রতিটি গুণ, প্রতিটি শক্তির অনুভব করা অর্থাৎ অনুভাবী মূর্তি হওয়া ।