২৭-০৩-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের এখন বানপ্রস্থ অবস্থা, অতএব এখন এই শব্দের জগৎ ছাড়িয়ে শব্দহীন জগতে আপন ঘরে ফিরতে হবে তোমাদের, তাই স্মরণের যোগ অভ্যাসে পবিত্র হও"

প্রশ্ন:-

উচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোন্ কোন্ বিষয়ের প্রতি অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে ?

উত্তর:-

দৃষ্টি-কোণের প্রতি সতর্ক হও, যা সবচেয়ে বড় প্রবঞ্চক। ক্রিমিনাল দৃষ্টি খুবই ক্ষতিকারক, তাই যতটা সম্ভব নিজেকে আত্মা ভেবে বাবাকে স্মরণ করো। ভাই-ভাই দৃষ্টির অভ্যাস করো। খুব ভোরে উঠে একান্তে বসে নিজেই নিজের সাথে কথা বলো। স্বয়ং ভগবানের আদেশ- "মিষ্টি বাচ্চারা, মহাশত্রু কাম-বিকার থেকে সতর্ক হও।"

ওঁম্ শান্তি!

মিষ্টি-মিষ্টি আত্মা রূপী বাচ্চারা, তোমরা একথা তো অবশ্যই বুঝেছো যে, কোনও মানুষ এই জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন না এখানে। স্বয়ং ভগবান এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন তোমাদের। কিন্তু ভগবানেরও তো পরিচয় চাই। যার নাম এত শ্রেষ্ঠ, তবুও বলা হয় নাম রূপের ঊর্ধ্বে তিনি। বাস্তবে নাম রূপের ঊর্ধ্বেই উঁনি। কত ক্ষুদ্র এক বিন্দু। তেমনি আত্মাকেও তো বলা হয় অতি ক্ষুদ্র এক তারার মতন। আকাশের তারারা কিন্তু ক্ষুদ্র নয়। কেবলমাত্র এই আত্মাই অতি ক্ষুদ্র তারার মতন। বাবাও তেমনি এক বিন্দুর মতন। বাবা হলেন সদাকালের পবিত্র। ওঁনারই এতসব মহিমা - জ্ঞানের সাগর, শান্তির সাগর ...! এ বিষয়ে অবশ্য কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। মূল কথাই হলো পবিত্রতার। কাম-বিকারের কারণেই যত ঝগড়া-ঝাঁটি। তাই তো পবিত্র হওয়ার জন্য মানুষ পতিত-পাবন বাবাকে ডাকতে থাকে। অতএব অবশ্যই পবিত্র হওয়া উচিত, এ বিষয়েও কোনো দ্বিমতই নেই। যা কিছু অতীতে ঘটেছে, যত কিছুই বিঘ্ন পড়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি - এসবও নতুন কিছুই নয়। অবলাদের প্রতি এমন অত্যাচার চলতেই থাকে। অন্য কোনও সৎসঙ্গে এসবের কোনও চর্চাই হয় না। তাই সেসব জায়গায় কোনও হাঙ্গামাও হয় না। এখানে বাইরের হাঙ্গামা যা হয়, তা কেবল এই বিষয় নিয়েই। যেহেতু বাবা এসে পবিত্র বানান, তাতেই এত হাঙ্গামা। কিন্তু বাবা তো কেবল এখানে বসে জ্ঞানের পাঠ পড়ান। বাবা জানান, উনি আসেন এই বানপ্রস্থ সময়কালে। বানপ্রস্থ অবস্থার প্রকৃত নিয়মকানুন এখান থেকেই শুরু হয়। তাই বানপ্রস্থ অবস্থার যারা তারা তো এই বানপ্রস্থ অবস্থাতেই থাকবে।



বাণীর ঊর্ধ্বে (শব্দহীন জগতে) পৌঁছবার জন্য পুরোপুরি বাবার স্মরণে থেকে পবিত্র হতে হবে। পবিত্র হওয়ার এই একটাই মাত্র উপায়। আপন ঘরে ফিরতে হলে পবিত্র তো হতেই হবে। সবাইকেই যে ফিরতে হবে। এমন নয় যে দু-চার জনকে যেতে হবে! সমগ্র পতিত দুনিয়ারই পরিবর্তন হবে যে। এই অবিনাশী ড্রামা কারও জানা নেই। সত্যযুগ থেকে কলিযুগ পর্যন্ত ড্রামার বিস্তৃত চিত্রনাট্যের চিত্রপট। তাই বাবা বলছেন- নিজেকে আত্মা ভেবে পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করে অতি অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। তবেই তুমি শান্তিধাম আর সুখধামে পৌঁছাতে পারবে। একথা তো প্রচলিতই আছে, গতি আর সদগতিদাতা সেই একজনই। সত্যযুগের জনসংখ্যা হবে যথেষ্টই কম, যারা সম্পূর্ণ পবিত্র হতে পারবে। কলিযুগে অনেক ধর্ম হওয়ার কারণে অপবিত্র হয়ে পড়ে। এ তো খুবই সহজ কথা, যা আগেই জানিয়ে দেন বাবা। বাবা একথাও জানেন, আগামীতে ভীষণ হাঙ্গামাও হবে। পূর্বেই যদি তিনি তা নাই বা জানবেন, তবে কেনই বা এমন যুক্তির রচনা করবেন তিনি! -- আগে নিজের বাড়ী থেকে সম্মতির চিঠি নিয়ে আসো যে তোমাদেরকে পাঠাচ্ছে এই জ্ঞান অমৃত পান করার জন্য। পূর্বেই তিনি জানতেন, ড্রামার চিত্রপটে এমন ঝগড়াঝাটির কথাও লিপিবদ্ধ আছে। অনেকেই অতি অল্প সময়েই খুব আশ্চর্য জনক ভাবে খুব ভালভাবে এই জ্ঞানকে বুঝে যায়, অন্যদেরকেও সেই জ্ঞান শুনিয়ে উপযুক্ত করে তোলে-- তবুও অহো মায়া, তাকেও তুমি তোমার দিকে ছিনিয়ে নিলে? এসবও ড্রামাতে পূর্ব নির্ধারিত হয়ে আছে যে। যা ভবিতব্য তাকে তো কেউ আটকাতে পারে না। লোকেরা কেবল তা বলতেই পারে, কিন্তু এসবের মর্মার্থ কিছুই বুঝতে পারে না। বাচ্চারা- জ্ঞানের এই পাঠ অতি উন্নত স্তরের। চোখে দেখাও যে কেমন ধোকা দিতে পারে - তা বলার নয়। বর্তমানের দুনিয়াটাই যে তমোপ্রধান। কলেজে পাঠের নিমিত্তে গিয়েও অনেকে খারাপ হয়ে যায়। এমন ঘটনা বিদেশে তো আর কথাই নাই। কিন্তু সত্যযুগে এমন কিছুই হয় না। অথচ, সাধারণ অজ্ঞানী লোকেরা সত্যযুগের আয়ুকে লাখ-লাখ বছর বলে থাকে। তখন এই বাবা বলেন- সেই হিসেবে বাবা বলেন- এই তো মাত্র কয়েকদিন আগেই তোমাদেরকেই রাজ্য-ভাগ্যের অধিকার দিয়ে গেছিলাম, যা সবকিছুই তোমরা এখন খুইয়ে দিয়েছ। (ঠিক যেমন ভাবে লৌকিকে বাবারা বলেন) তোমাদের এত সম্পত্তি দেওয়া সত্ত্বেও সবই খুইয়ে দিলে? এমনও অনেক বাচ্চা হয় যারা মুহূর্তেই বিশাল সম্পত্তিও উড়িয়ে দেয়। তেমনি অসীম বেহদের এই বাবা বলছেন- আমি তো তোমাদেরকে এত বিপুল ধন-সম্পদ দিয়ে গেছিলাম, তোমাদেরকে কত যোগ্য করে গড়ে তুলে বিশ্বের মালিক বানিয়েছিলাম, কিন্তু অবিনাশী ড্রামার চিত্রপট অনুযায়ী এখন তোমাদের কি ভীষণ দুর্দশা। তোমরা তো আমারই সেই বাচ্চারা, যারা সর্ব ক্ষেত্রেই এত সমৃদ্ধ ছিলে। এসব হলো বেহদের কথা, যা কেবলমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই এর ব্যাখ্যা করতে পারবে। যেমন এক লোকগাথা আছে, এক রাখাল বালক রোজই চিৎকার করতো, বাঘ এসেছে-বাঘ এসেছে, যদিও বাস্তবে কোনও বাঘ আসতই না। এরপর একদিন কিন্তু সত্যি-সত্যিই বাঘ এল। তেমনি তোমরাও রোজ-রোজ লোকেদের শোনাও- বিনাশ কিন্তু এখন দোরগোড়ায়। লোকেরা বলে- কই বিনাশ তো হল না? তোমরা কিন্তু নিশ্চিত জানবে, অতি অবশ্যই বিনাশ তো একদিন হবেই হবে। তারাও তোমাদের এই কথাকে রাখালের ঐ লোকগাথার মতন ভাবে। তাদের উদ্দেশ্যে বেহদের বাবা বলেন- এমন ভাবাটা লোকেদের কোনও দোষ নেই। কল্প পূর্বেও তো এমনটাই হয়েছিল। যা মাত্র ৫-হাজার বছর পূর্বের কথা।



বাবা তো অনেকবারই বলেছেন- একথাও তোমরা বার-বার লিখে জানাতে থাকো যে, ৫-হাজার বছর পূর্বেও হবহু এমনই মিউজিয়াম খোলা হয়েছিল, ভারতে দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপনের উদ্দেশ্যে। খুব পরিস্কার ভাষায় তা লিখলেই লোকেরাও আসবে তা বোঝার জন্য আর এও মেনে নেবে অসীম বেহদের বাবা স্বয়ং এখন এসেছেন। এই বাবার অবিনাশী উত্তরাধীকার মানেই তো স্বর্গ-রাজ্য অধিকারের বাদশাহী। এই ভারতই একদা স্বর্গ-রাজ্য ছিল। নতুন দুনিয়ায় সর্বাগ্রে স্বর্গ-রাজ্যের সূচনা হয় নতুন ভারতেই। সেই স্বর্গ-রাজ্য থেকে এখন যা নরক-রাজ্য। বেহদের এই অবিনাশী ড্রামা অনেক বড়। সবাই এই ড্রামার অভিনয়কারী। সর্বাধিক ৮৪-জন্মের পার্ট সম্পন্ন করে এখন আপন ঘরে ফেরার পালা। পূর্বে এই তোমরাই যেখানে সবকিছুরই মালিক ছিলে, এখন সেই তোমাদেরই এমন কাঙাল দশা আজ। অতএব এবার বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চললে আবারও তেমনই মালিক হবে। একথা তোমরা বি.কে.-রাই জানো, কল্প-কল্প ধরে এই শ্রীমৎ অনুসারে তোমরাই ভারতকে স্বর্গ-রাজ্য বানাও। এর জন্য অবশ্যই তোমাদের পবিত্র হতে হয়। আর এই পবিত্র হওয়ার ব্রতে ব্রতী হও বলেই নানা প্রকার অত্যাচারও হয় তোমাদের উপর। এবার বাবা বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন - অনেকেই এমন আছে, যারা বাইরে বেরোলেই বোধবুদ্ধিহীন হয়ে যায়। আশ্চর্যবৎ শুনন্তী, কথন্তী, জ্ঞান দেবন্তী, কিন্তু অহো মম মায়া, পূর্বে তারা যেমন ছিলো - আবারও তার চাইতেও খারাপ স্থিতিতে পৌঁছে যায় তারা। যেই কাম-বিকারের খপ্পরে পড়লো, অমনি তাদের চূড়ান্ত অধঃপতন!



এই বাবা অর্থাৎ (পরমাত্মা) শিববাবাই ভারতকে শিবালয় বানান। তাই ওনার বি.কে. বাচ্চাদেরও উচিত তেমন সুন্দর ভাবে পুরুষার্থ করা। বেহদের এই বাবা যে খুবই মিষ্ট। যদি সবাই একথা জেনে যায়, তবে তো দলে দলে আসতে থাকবে এখানে। ফলে পড়াশোনার পবিবেশও নষ্ট হবে। পড়ার জন্য তো একান্ত পরিবেশের দরকার। খুব ভোরবেলায় সুন্দর শান্তির পরিবেশ থাকে। তখন তোমরা শান্ত মনে নিজেদেরকে আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ করতে বসবে। স্মরণের যোগ ছাড়া বিকর্ম বিনাশ হবে কিভাবে? তোমাদের কেবল এই একটা বিষয়েই লক্ষ্য রাখতে হবে। এখন তোমরা পতিত কাঙালে পরিণত হয়েছ, তাই তোমাদেরকেই ভাবতে হবে আবারও পবিত্র দ্বিমুকুটধারী কিভাবে হতে পারবে। কত সহজ-সরল ভাবে এসব কথা বোঝাচ্ছেন বাবা। হাঙ্গামা তো হতেই থাকবে। কিন্তু তাতে ভয় পেলে চলবে না। তোমাদের এই বাবা অতি সাধারণ। পোশাকও সব পূর্বের মতনই। কোনো পরিবর্তন নেই। সন্ন্যাসীরা তো তাদের ঘর-সংসার ছেড়ে গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করে। কিন্তু এনার সেই পুরোনো পোশাকই। পার্থক্য কেবল এটাই যে এনার মধ্যে বাবার প্রবেশ ঘটে। যেমন ভাবে লৌকিক বাবা তার সন্তানকে স্নেহ-আদরে লালনপালন করে, ইনিও ঠিক তেমনই করেন। তা কোনো অহংকারের ব্যাপার নয়। এনার চাল-চলনও অতি সাধারণ। তবে থাকার জন্য ঘরবাড়ি তো বানাতেই হবে। অবশ্য তা সাধারণ ঘরবাড়িই। বেহদের এই বাবা তোমাদের পড়ান। চুম্বকের মতন আকর্ষণকারী এই বাবা। তা কি কম কথা! কন্যারা পবিত্র হলে তখন তারা কত সুখ-ভোগ ও আনন্দে থাকে। লোকেরা বলে থাকে, এদের মধ্যে বিশেষ কোনও শক্তি আছে, কিন্তু শক্তি কাকে বলে, যথার্থ রূপে তা তারা জানে না। বাবা হলেন সর্বশক্তিমান, উনি সবাইকে এমন বানান। কিন্তু সবাই তো আর একই প্রকার হতে পারে না। তা হলে তো চেহারার অবয়বও একই প্রকার হতো। পদও সবার একই হতো। অবিনাশী এই ড্রামার চিত্রপট যে পূর্বেই তৈরি হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ৮৪-জন্মে ৮৪-অবয়ব পাও তোমরা। ঠিক যেমনটি পেয়েছিলে কল্প পূর্বে, তেমনটি পেতে থাকবে আবারও। এতে কোনও পার্থক্য হয় না। এইসব বিষয়গুলো জেনে ধারণা করে তা ধারণ করতে হয়। বিনাশ তো অতি অবশ্যই হবে। বর্তমান বিশ্বে শান্তি কেউ পেতেই পারো না। লোকেরা নিজেদের মধ্যেই তো লড়াই ঝগড়াতে ব্যস্ত। এদিকে মৃত্যু যে শিয়রে। আবারও ড্রামা অনুসারে এক ধর্মের অর্থাৎ এক ও অভিন্ন আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের স্থাপনা হবে। অতএব অন্য সবগুলি ধর্মের বিনাশ তো হতেই হবে। তাই তো সেই নিমিত্তে লোকেরা কত প্রকারের অ্যাটমিক বোম্ব ইত্যাদি বানিয়েই চলেছে। এর সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগও তো থাকবে। বড়বড় পাথরও পড়বে উপর থেকে, ঘরবাড়ি সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে তাতে। যতই শক্তপোক্ত বাড়িঘর বানাও না কেন, তার ভিতও যতই শক্তিশালী করো না কেন, যাতে ভূমিকম্পেও তা অটুট থাকে -কিন্তু তবুও থাকবে না কোনও কিছুই। এমনটাই তো বলা আছে, যা কিছুই তৈরী করো না কেন, ১০০-তলাও বানাও না কেন - তবুও বিনাশ তো হবেই হবে। বর্তমান দুনিয়ার কিছুই যে অবশিষ্ট থাকবে না।



বাবা বলছেন, বি.কে. বাচ্চারা তোমরা এখানে এসেছ বাবার কাছ থেকে স্বর্গ-রাজ্যের অবিনাশী উত্তরাধিকার নিতে। বিদেশে দেখো নিত্য-নতুন কতকিছুই হচ্ছে। একে বলা হয় রাবণের পম্প (আড়ম্বর)। তার সাথে আবার মায়াও বলে-আমিও কিছু কম নই। কিন্তু সেখানে তো তোমাদের সব হীরে-জহরতের মহল থাকে। থাকে খাঁটি সোনার সব জিনিসপত্র। এখানকার মতন সেখানে দোতলা-তিনতলা বাড়ী বানাবার প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য জমিতেও কোনও কিছু খরচ করতে হয় না। সব কিছুতেই ভরপুর থাকে। অতএব বাচ্চারা তোমাদেরও অনেক বেশী করে পুরুষার্থ করা উচিত। সবাইকে বাবার আগমনের বার্তা জানাতে হবে। অনেক ভাল ভাল ঘরের বাচ্চারাও পাণ্ডার মতন এখানে আসে, (জ্ঞান ও যোগে) সতেজ হবার জন্য। এ সবই ঘটে ড্রামার চিত্রপট অনুসারে। আবারও তারাই আসবে। অনেকেই তো আসে এখানে, জানিনা তাদের সবার সাথে আমার (ব্রহ্মার) দেখা হবে কিনা? কিম্বা এরা সবাই এই জ্ঞান মার্গে চলতে পারবে কিনা? আসে তো অনেক অনেক সংখ্যায়, আশ্চর্যবৎ তারা আবার পালিয়েও যায় এখান থেকে। পরে চিঠি লিখে জানায়-বাবা আমার অধঃপতন হয়েছে। --আরে, এত পরিশ্রমের পুণ্য অর্জন, তা এভাবে খোয়ালে! আবার তো আর সেই একই উচ্চতায় উঠতেই যে পারবে না তুমি। যা কিনা অবজ্ঞার চরম দশা। জাগতিক লোকেরা অর্ডিন্যান্স বের করে - অমুক সময়ে কেউ যেন ঘর থেকে না বেরোয়। অন্যথায় গুলিতে মৃত্যুও হতে পারে। তেমনি এই বাবাও বলেন- কাম-বিকারে গেলেই তুমিও তেমনি গুলি বিদ্ধ হবে। এ যে ভগবানের আদেশ। অতএব সাবধানে তো থাকতেই হবে।



আজকাল আবার পেটে গ্যাস ইত্যাদি হলে বসে বসেই অনেকের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যায়। এসবও ড্রামার চিত্রপটে খোঁদিত আছে। অন্তিম পর্বে হাসপাতাল ইত্যাদিও এসব আর কিছুই থাকবে না। আত্মা ঝট্পট এক শরীর ত্যাগ করে অপর শরীর গ্রহণ করবে। সব দুঃখ-কষ্টেরও অবসান ঘটবে। সেই দুনিয়াতেও এসব নাই। আত্মারা সেখানে স্বতন্ত্র। সেখানে যার যখন আয়ুষ্কাল সম্পূর্ণ হয়, তখন আত্মা দেহত্যাগ করে। সেখানে কাল (মৃত্যু) বলে কেনও শব্দই নেই। যেখানে রাবণ নেই, সেখানে কাল-ও নেই। কাল রাবণের দূত, ভগবানের নয়। ভগবানের বাচ্চারা খুবই মিষ্ট স্বভাবের। বাবা কখনো বাচ্চাদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। ড্রামার চিত্রপট অনুসারে কল্পের (তিন-চতুর্থাংশ) চার ভাগের তিন ভাগই সুখ পেয়ে থাকো তোমরা বি.কে.-রাই। তাই যে বাবা তোমাদেরকে এত সুখ প্রদান করেন, ওনার শ্রীমৎ অনুসারে তো অবশ্যই চলা উচিত। এটাই যে তোমাদের অন্তিম জন্ম। তাই বাবা জানাচ্ছেন, ঘর-পরিবারে গৃহস্থ ব্যবহারে থেকেই এই অন্তিম জন্মে তোমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। একমাত্র এই বাবাকে স্মরণ করলেই বিকর্মের বিনাশ হয়। জন্মজন্মান্তরের পাপের বোঝা যে তোমাদের মাথায়। অতএব এই তমোপ্রধান অবস্থা থেকে সতোপ্রধান অবস্থায় অবশ্যই আসতে হবে তোমাদের। বাবা হলেন সর্বশক্তিমান, সব ক্ষমতার অধিকারী (অথরিটি)। যারা শাস্ত্র ইত্যাদি পড়েন, তাদেরকেও অথরিটি বলা হয়। সেই হিসাবে তোমাদের এই বাবা সবারই অথরিটি। --আমি এসেই এই ব্রহ্মার দ্বারা সব শাস্ত্রের সার শোনাই তোমাদের। অতএব নিজেকে আত্মা মনে করে আমাকে স্মরণ করলে তোমাদের পাপের বিনাশ হবে। জলে স্নান করলে তুমি পবিত্র হবে কি প্রকারে ? তার কোথাও কোথাও আবার এক গণ্ডুষ জলে স্নান করেই, তাকেই আবার তীর্থ-স্থানের তকমা দেয় অনেকেই। একেই বলা হয় তমোপ্রধানের নিশ্চয়তা। আর তোমাদের এসব হলো সতোপ্রধানের নিশ্চয়তা। তাই বাবা বলছেন, এসবে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন, স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. ভগবান যেভাবে পবিত্র হওয়ার জন্য আদেশ করেছেন, কখনো তার অবজ্ঞা করবে না। খুব সতর্ক থাকতে হবে এসব বিষয়ে। পবিত্র হয়ে বাপ আর দাদা উভয়ের পালনার রিটার্ন পবিত্র হয়ে দেখাতে হবে।

২. ড্রামার ভবিতব্য অটল-নির্ধারিত, এমনটা জেনে সদা নিশ্চিন্তে থাকবে। বিনাশের পূর্বেই বাবার বার্তা সবার কাছেই পৌঁছে দিতে হবে।

বরদান:-

এক "বাবা" শব্দের স্মৃতিতে স্মরণ আর সেবায় থেকে প্রকৃত যোগী ও প্রকৃত সেবাধারী হও

বাচ্চারা, তোমরা মুখে আর মনে বারবার বাবা শব্দ উচ্চারণ করে থাকো, বাচ্চা বলেই বাবা শব্দ মনে আসা বা ভাবাটাই হল যোগ আর মুখে বারবার বলতে থাকা - বাবা এভাবেই বলেছেন, বাবা একথা বলেছেন - এটাই হল সেবা। কিন্তু এই বাবা শব্দ কেউ অন্তর থেকে বলে, কেউ বলে জ্ঞানের আধারে। যে অন্তর থেকে বলে, তার অন্তরে সদা প্রত্যক্ষ প্রাপ্তি স্বরূপ খুশী আর শক্তির প্রাপ্তি হয়, আর বুদ্ধির আধারে যারা, তারা তা বলার সময় যে খুশী পায়, তা সদাকালের নয়।

স্লোগান:-

পরমাত্মা রূপী অগ্নিশিখার প্রতি যারা সম্পূর্ণ রূপে সমর্পিত হয়, তারাই প্রকৃত বহ্নি-পতঙ্গ ।