১৭-০৮-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - স্মরণে যোগযুক্ত থাকার সাথে সাথে জ্ঞানের পঠন-পাঠনের প্রতিও সম্পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে। স্মরণের যোগে যেমন পবিত্র হওয়া যায়, জ্ঞানের পাঠেও তেমনি সমগ্র বিশ্বের মালিক হতে পারো"
প্রশ্ন:-
স্কলারশিপ নিতে চাইলে কি প্রকারের পুরুষার্থ অবশ্যই করতে হবে ?
উত্তর:-
স্কলারশিপ নিতে চাইলে জাগতিক সবকিছুর আকর্ষণতে মন থেকে এমন ভাবে ঝেড়ে ফেলতে হবে যে, ধন-সম্পদ, ছেলে-মেয়ে, ঘর-সংসার ইত্যাদি কিছুই যেন স্মরণে না আসে। মনেতে কেবলমাত্র শিববাবাই স্মরণে আসবে, এছাড়া জাগতিক যা কিছু সবকিছুকেই সম্পূর্ণভাবে স্বাহা করতে হবে - তবেই উচ্চ পদের প্রাপ্তি হবে। বুদ্ধিতে এই আসক্তির-ঘোর থাকা আবশ্যক যে, আমি কত উচ্চ-স্তরের পরীক্ষায় পাশ হতে চলেছি। আমার এই জ্ঞানের পাঠ কত উন্নত স্তরের আর তা পড়াচ্ছেন দুঃখহর্তা-সুখকর্তা বাবা, যিনি 'মোস্ট-বিলাভড্' (অতি প্রিয়র থেকেও প্রিয়তম) বাবা তিনি স্বয়ং।
ওঁম্ শান্তি!
ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের বোঝাচ্ছেন, স্বয়ং বাবা যেখানে বি.কে-দেরকে এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন, সেখানে তোমাদের কত গর্ববোধ করা উচিত। আসলে পাঠ কিন্তু পড়ে আত্মা। যা আত্মার মধ্যেই সংস্কারে পরিণত হয়, আর দেহ তো ভস্মে পরিণত হয়। সে উদ্দেশ্যেই পরমাত্মা বাবা আত্মারূপী সন্তানদের এই পাঠ পড়াতে আসেন। আত্মারা তা উপলব্ধিও করে যে, আত্মারাই এই পাঠ পড়ে এবং যোগও শেখে। তাই তো বাবা বলতে থাকেন- "যদি স্মরণে যোগযুক্ত হয়ে থাকো, ধীরে ধীরে তোমাদের পাপ ভস্ম হতে থাকবে।" পতিত-পাবন তো এই এক এবং একমাত্র বাবা। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরকে 'পতিত-পাবন' বলা যাবে না মোটেই। তবে কি লক্ষ্মী-নারায়ণকে বলা যাবে ? --অবশ্যই নয়। পতিত-পাবন যে কেবলমাত্র একজন'ই। এই একজনই সমগ্র দুনিয়াকেই পবিত্র-পাবন করে গড়ে তোলেন। যিনি বি.কে.-দের অতি আপন বাবা। বাচ্চারা, তোমরা তো জানো, তোমাদের বাবা হলেন 'মোস্ট-বিলাভড্' (প্রিয়তমের থেকেও অতি প্রিয়)। ভক্তি-মার্গে থাকাকালীন যাকে তোমরা এতদিন স্মরণ করে এসেছো এই বলে যে- "ওগো বাবা এবার তুমি আসো, এসে আমাদের দুঃখ-কষ্ট নিবারণ করে সুখ প্রদান করো।" সৃষ্টি-জগৎ কিন্তু সেই একই থাকে। চিত্রনাট্যের নিয়ম অনুসারে সবাইকেই এই চক্রে আসতে হয়। বাবা এই ৮৪-জন্মের চক্রকেও বিস্তারে বুঝিয়ে দেন বাচ্চাদেরকে। আত্মাই নিজের সংস্কারকে সাথে করে নিয়ে যায়। আত্মারা তা জানে বর্তমানের এই মৃত্যুলোক থেকে অমরলোকে অথবা নরক থেকে স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছানোর জন্য এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ মনোযোগ সহকারে তাকে পড়তেই হবে। তাই তো বাবা স্বয়ং আসেন ওনার প্রিয় বি কে.-বাচ্চাদেরকে আবারও সমগ্র বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলতে। সত্যি, এ যে অনেক বড় পরীক্ষায় পাশ করতে হয় বি.কে.-দেরকে। যেহেতু উচ্চতমেরও উচ্চের এই বাবা স্বয়ং এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ান বি.কে.-দেরকে। আর তাই তো সামনে বসে বাবা যখন পড়াতে থাকেন, তখন যেন কেমন একটা নেশার ঘোর অনুভব হয় তোমাদের । ক্রমে ক্রমে বাবা সেই নেশার ঘোর আরও বাড়িয়ে তোলেন। অমরলোকের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই এত দূর-দেশ থেকে এখানে আসেন বাবা। যেহেতু এই দুনিয়ায় এমন একজনও নেই যে এই কাজ করতে পারে। বর্তমানে তোমরা যেমন দেবতাদের সামনে মাথা নুইয়ে শ্রদ্ধা জানাও, তোমরাও তেমন উপযুক্ত হয়ে দেবতা হলে সবাই তোমাদের সম্মুখে মাথা নোয়াবে। তোমাদেরকে ঠিক তেমন করেই সমগ্র বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলতেই বাবা এখন আবার এসেছেন। অতএব তোমাদের কতই না নেশার ঝোঁক থাকা উচিত। তবে এমনটা হলে চলবে না যে, এখানে থাকাকালীন নেশার ঝোঁক রইলো আর বাইরে বেরোলেই তা কমে গেলো। বাচ্চারা বলছে - "বাবা, আমরা যে আপনাকে ভুলে যাই, তাই তো আপনাকে এই পতিত দুনিয়ায় এসে, পতিত শরীরে অবস্থান করে আমাদেরকে পড়িয়ে বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলতে হয়।" বাবা জানাচ্ছেন- "বাচ্চারা, তোমরাই সমগ্র বিশ্বের মালিক হতে পারো-এ যে তোমাদের অনেক বড় লটারি প্রাপ্তির মতন। যদিও এখন তোমরা গুপ্তই থাকো। অতএব এমন উচ্চস্তরের এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ কত মনোযোগ সহকারে কত সুন্দর রীতিতে পঠন-পাঠন করা উচিত। কেবলমাত্র স্মরণের যোগেই তা সম্পূর্ণ হয় না, পঠন-পাঠনও সমভাবে করা আবশ্যক। আর এই কারণেই তোমাদের মন-বুদ্ধিতে এই ধারণা যেন সর্বদাই চলতে থাকে, কি করে এই ৮৪-জন্মের চক্র ঘোরাতে হয়।
বাচ্চারা, তোমরা নিশ্চয় অনুভব করতে থাকো যে, বাবা তোমাদের মধ্যে খুব প্রবলভাবে জ্ঞানের নেশা জাগাতে থাকেন। তাই তো তোমাদের মতন এত উন্নত ব্যাক্তিত্ত্বের আর কেউ হতেই পারে না। এরই ফল স্বরূপ তোমরা সাধারণ মনুষ্য থেকে দেবতা হতে পারো। যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মালিক তোমরা বি.কে.-রা ছাড়া আর কেউই কি এমনটা হতে পারে ? খ্রিস্টানরা কত চেষ্টা করে সমগ্র বিশ্বের মালিক হতে, কিন্তু অবিনাশী ড্রামার নিয়ম অনুসারে তোমরা বি.কে.-রা ছাড়া আর কেউই বিশ্বের মালিকানা পেতে পারে না। অন্যদেরকে এমন উন্নত স্তরের করে গড়ে তোলারও তো তেমন কোনও বাবার প্রয়োজন, কিন্তু তেমন ক্ষমতা সম্পন্ন আর তো কেউ নেই। অতএব বাচ্চারা, তোমাদের বুদ্ধিও তেমনই উন্নত হওয়া দরকার। এই জ্ঞান অমৃতের মাত্রা (ডোজ) ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়। কোনও এক পর্যায়ে থেমে থাকলে চলবে না অথবা এমনটা ভাবলে চলবে না যে, আমি তো বাবাকে এতই স্মরণ করি। যদিও এই স্মরণের দ্বারা পবিত্র হতে পারবে, কিন্তু পদ প্রাপ্তির কথাও তো ভাবতে হবে। ঠেলায় পড়ে পবিত্র তো সব বি.কে.-কে হতেই হবে। কিন্তু বাবা স্বয়ং যেখন এসেছেন এখানে বি.কে.-দেরকে সমগ্র বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলতে ......! যদিও সব আত্মারা অবশ্যই পৌঁছবে শান্তিধামে। সেখানে গিয়ে কি আর সবাই কেবল বসেই থাকবে ? তা হলে সে তো আর কোনও কাজেরই হলো না, আসল কাজের হলো সে, যে আবারও আসবে নতুন দুনিয়ার স্বর্গ-রাজ্যে রাজত্ব করতে। মূল কথাই হলো, তোমরা এখানে এসেছো স্বর্গ-রাজ্যে রাজত্ব করার লক্ষ্যে বাবার থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার পাওয়ায় জন্য। যদিও সেই বাদশাহী পূর্বেও তোমরা পেয়েছিলে, কিন্তু মায়া তোমাদের কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নিয়েছে। অতএব তোমাদের এখন আবার এমন হতে হবে যে, মায়া আর রাবণকে হারিয়ে জয় তোমাদের পেতেই হবে। সেই উদ্দেশ্যেই তো বাবা বি.কে.-দেরকে আগামী বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলছেন। অতএব এখন তোমাদের রাবণকে হারিয়ে জয় পেতেই হবে, যেহেতু রাবণ-রাজ্যে থাকতে থাকতে তোমরা যে বিকারী হয়ে গেছো। উদাহরণ স্বরূপ মনুষ্য-কূলকে বাঁদরের সাথে তুলনা করা হয়। যেহেতু সবচাইতে বিকারী স্বভাব বাঁদরের। কিন্তু দেবতারা তো সম্পূর্ণ নির্বিকারী। যদিওসেই দেবতারাই ৮৪-জন্ম নিতে নিতে পতিতে পরিণত হয়।
বাবা এবার বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন, তাদের কাছে যা ধন-সম্পদ, বাচ্চা-কাচ্চা, শরীর ইত্যাদি যা কিছুই আছে, সে সবকিছু থেকেই আকর্ষণ সরিয়ে ফেলতে হবে। এমনটা হওয়া মোটেই চলবে না যে, ব্যবসায়ীরা যেমন অর্থ উপার্জনের জন্য কেবল অর্থের পিছনেই ছুটে মরে। অথচ যার অল্প অর্থ আছে, সে কিন্তু তেমনটা করে না। সবকিছুই তো রাবণের এই কয়েদখানাতেই পড়ে থাকবে। কোটি-কোটির মধ্যে কেউ কেউ এমন হবে যারা এই সবকিছুর আকর্ষণ মুক্ত হয়ে বাঁদর থেকে দেবতায় পরিণত হবে। আর যারা বিত্তশালী লাখপতি তারা তাদের ধন-সম্পত্তি আগলে রাখতে রাখতেই প্রাণ হারাবে। সারাক্ষণই তারা কেবল ঘর-বাড়ি, ধন-দৌলত, বাচ্চা-কাচ্চা, ইত্যাদি ইত্যাদি স্মরণ করতে থাকে। আমৃত্যু এইসব স্মরণ করতে করতেই তাদের প্রাণ যায়। তাই বাবা জানাচ্ছেন, অন্তিমদশায় নিজেকে কিম্বা অন্য কিছুই যেন মনেতে না আসে। কেবলমাত্র পরমাত্মাকে স্মরণে রাখলেই জন্ম-জন্মান্তরের পাপ ভষ্ম হয়ে যায়। বিত্তশালীদের ধন-সম্পদ ইত্যাদি সবকিছুই তো এই মাটীতেই মিশে যাবে, যেহেতু তা অসৎ উপায়ে বা অসৎ উদ্দেশ্যে উপার্জিত। ফলে তা কোনও সৎ-কার্যে কাজে লাগে না। বাবা জানাচ্ছেন - উনি তো 'গরীব নওয়াজ' দীনের বন্ধু, তাই উঁনি কেবল গরীবদেরকেই সম্পত্তিবান বানান আর বিত্তশালীদের গরীব বানিয়ে ছাড়েন। এই প্রক্রিয়াতেই দুনিয়ারও বদল হয়। সত্যি, বিত্তবানদের কতই না অর্থের নেশা - কেউ বলে, আমার এত ধন-দৌলত-সম্পত্তি আছে, কারও এরোপ্লেন থাকার অহংকার, কারও দামী মোটরগাড়ীর আবার কারও বা বিশাল মহলের .......! বাবাকে স্মরণ করার জন্য এরা যতই মাথা ঠুকুক না কেন, কিন্তু এদের ক্ষেত্রে স্মরণের যোগ মোটেই টেঁকে না। নিয়মেও তাই বলে অর্থাৎ কোটি কোটির মধ্যে এক-দুজনই কেবল তা পারবে। বাকী অন্যেরা তাদের ধন-সম্পদকেই স্মরণ করবে। যদিও বারবার বাবা বলতে থাকেন, দেহ সহিত দেহের সম্বন্ধের বা জাগতিক যা কিছু দৃশ্যত, এমন সবকিছুই ভুলে যাও। কারণ এইসবের মধ্যে আটকে পড়লে আর উচ্চ পদে আসীন হতে পারবে না। তাই তো বাবা এভাবে তোমাদেরকে পুরুষার্থ করিয়ে চলেছেন। এখানে তোমরা এসেছো নর থেকে নারায়ণ হতে, অতএব এর জন্য সম্পূর্ণভাবে যোগের পুরুষার্থ করে যেতে হবে। না কোনও পার্থিব বস্তু, না ধন-দৌলত, না বাচ্চা-কাচ্চা, ইত্যাদি কোনও কিছুই যেন স্মরণে না থাকে, কেবলমাত্র এক ও একমাত্র শিববাবা ছাড়া। তবেই তুমি উচ্চ থেকেও অতি উচ্চের স্কলারশিপের মতন এত উন্নত পুরস্কার পাবে। লোকেরা তো বিশ্বশান্তির জন্য কত প্রকারের উপদেশ শুনিয়ে পাই পয়সার মেডেল পেয়ে তাতেই কত খুশী হয়ে যায়। কিন্তু তোমরা কেমন পুরস্কার পাও ? তোমাদের পুরস্কার হলো সমগ্র বিশ্বের মালিকানা। তবে তা পেতে গেলে এমনটা হলে চলবে না যে, মাত্র ৫-৬ ঘন্টা স্মরণে রইলে আর তাতেই লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন হয়ে যাবে। না তত সহজ অবশ্যই নয়, এর জন্য খুব কঠিন পুরুষার্থ করতে হয়। খেয়াল রাখবে কেবলমাত্র এক ও একমাত্র শিববাবাই যেন স্মরণে থাকে, অন্য কিছুই যেন আর স্মরণে না আসে। যেহেতু এখন তোমরা মহান, নামী-দামী দেবতা হতে চলেছো।
এবার বাবা ব্যাখ্যা করে বোঝাচ্ছেন, একদা তেমরাই সেই পূজ্য স্বরূপ দেবতা ছিলে, মায়া তোমাদেরকে পতিত পূজারি বানিয়েছে। লোকেরা অনেকেই প্রশ্ন করে, ব্রহ্মাকে কি তোমরা দেবতা বলে মান্য করো - নাকি ভগবান হিসাবে মান্য করো ? তখন তাদেরকে উত্তর দেবে, বি কে-রা এমন কথা তো কখনোই বলে যে ব্রহ্মা ভগবান। সর্বপ্রথম এখানে এসে তোমরা বিস্তারে জানো-বোঝো। বাচ্চারা, তোমাদের কাছে তো খুব ভালো-ভালো চিত্রাদি আছে, এর মধ্যে প্রথম হলো ত্রিমূর্তি, গোলা (সৃষ্টি-চক্র), কল্প-বৃক্ষ এগুলি এক নম্বরের। এগুলিই শুরুর চিত্র, বোঝাবার জন্য যা খুবই কাজের। পারলে বিলেত থেকে লক্ষ্মী-নারায়ণের চিত্রও আনিয়ে নাও, যেহেতু সেখানকার লোকেরা তা ভালভাবে বুঝে উঠতে পারে না। তবে মুখ্য চিত্রগুলি হলো- ত্রিমূর্তি, গোলা আর ঝাড়। এগুলিতে বোঝানো হয়েছে কারা কারা কখন কখন আসে এই বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চে। কখন অবলুপ্তি ঘটে আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের। এরপর কখন আবার শুরু হয় এক ধর্ম স্থাপনার কার্য, যখন অন্য সব ধর্মের নাশ হয়। কল্প-বৃক্ষের সবচেয়ে উপরে শীর্ষে থাকেন শিববাবা এরপর ব্রহ্মা যিনি আবার বিষ্ণুও। আবার বিষ্ণু থেকেই ব্রহ্মা। এগুলিরই ব্যাখ্যা চিত্রায়িত হয়েছে ঐ চিত্রে। এছাড়া সূক্ষ্ম-বতন তো কেবল সাক্ষাৎকারের জন্য। বাবা স্বয়ং এসবের রচয়িতা। প্রথমে রচনা করেন সূক্ষ্ম-বতন তারপরে স্থুল-বতন। অতএব ব্রহ্মা মোটেই দেবতা নয়, দেবতা হলেন বিষ্ণু। তোমাদের যে সাক্ষ্যাৎকার হয়, তা কেবল তোমাদেরকে বোঝাবার জন্য। প্রজাপিতা ব্রহ্মা তো এখানেই বসে আছেন তেমাদের সামনেই। আর ব্রহ্মার সাথে যারা অর্থাৎ তোমরা সেই ব্রাহ্মণেরা যারা আগামীতে দেবতা হতে চলেছো। দেবতারা সব সময়েই সুসজ্জিত থাকে। তাদেরকেই অ্যাঞ্জেল বা পরী বলা হয়। সেই ফরিস্তা হবার পরেই তারপর তারা দেবতার পদ পায়। তাদের জন্ম হয় গর্ভ-মহলে। এইভাবেই পরিবর্তন হতে থাকে দুনিয়ার। তোমাদের এই বিশেষ জ্ঞানের যতই অগ্রগতি হতে থাকবে, সবকিছু ততই তোমরা প্রত্যক্ষ করতে থাকবে। এই ভাবেই ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। খুবই অল্প সময় আর অবশিষ্ট আছে। তোমরা এখানে এসেছো সাধারণ নর থেকে দেবতা নারায়ণ হতে। অকৃতকার্য হলে তখন তো অতি সাধারণ প্রজা হতে হবে। সাধু-সন্ন্যাসীরাও যার সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারে না। তারা তো প্রকৃত রামের (শিববাবার) প্রকৃত অবস্থাকেই ভুলে গেছে। তাই তো কীর্তন করে- "রাম রাজা, রাম প্রজা, রাম-ই সাহুকার ........ ★টীকা ⤵...। বাস্তবে যদি এমনটাই হয়, তবে সেই রাম রাজ্যে এমন অধর্ম হয় কি প্রকারে। -এমনই হয় ভক্তি-মার্গে। তাই তো তারা নিজেরাই বলে- এই মায়ার রাজ্যে কেবলই মিথ্যা, যেমন পঞ্চতত্ত্বের এই শরীরও মিথ্যা, মিথ্যা এই দুনিয়ার সবকিছুই......! আসলে মায়া, বলা হয় ৫-বিকারকে, তা কিন্তু ধন নয়। ধনকে সম্পত্তি বলা হয়। লোকেরা তো তেমন স্পষ্ট ভাবে জানেই না, মায়া আসলে কি। বাবা এগুলিই ব্যাখ্যা করে বোঝাচ্ছেন ওঁনার মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চাদেরকে।
এবার বাবা বাচ্চাদের বলছেন- "আমি পরমপিতা পরম-আত্মা, বাচ্চারা তোমাদেরকে আমি আমার থেকেও উন্নত স্তরের করে গড়ে তুলে সমগ্র বিশ্বের মালিক বানাই। তোমরাও সেই লক্ষ্যেই এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ছো। সত্যি, কত উন্নত স্তরের পঠন-পাঠন এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ। যে পাঠের দ্বারা কত সহজেই সাধারণ মনুষ্য থেকে দেবতা হওয়া যায়। মনুষ্যকুল কলিযুগে - আর দেবতাকুল সত্যযুগে। এই দু'য়ের মাঝে অর্থাৎ বর্তমানে পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে তোমাদের অবস্থান, যে সময়কালে তোমরা এখন মনুষ্যকুল থেকে দেবতাকুলে পরিবর্তিত হতে যাচ্ছো।" কত সহজ-সরল উপায়ে বাচ্চাদের তা বুঝিয়ে দেন বাবা। তবে তার জন্য বাচ্চাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে এবং অন্যদেরকেও এই জ্ঞান শুনিয়ে প্রজা বানাতে হবে। প্রতি কল্পেই তো কত অনেক প্রজা তৈরি করো, যারা সত্যযুগের বাসিন্দা হয়। এখন যদিও সত্যযুগ নয় যা অতীতে ছিল, কিন্তু সত্যযুগ তো আসবেই। তখন লক্ষ্মী-নারায়ণ সমগ্র বিশ্বের মালিক হয়। তারই চিত্র রয়েছে তোমাদের সামনে। এরপর বাবা জানাচ্ছেন, এই জ্ঞানের পাঠ যা তোমাদের এখন দেওয়া হচ্ছে, পরে তা প্রায় লোপ হয়ে যায়, এরপর যখন দ্বাপরযুগ অর্থাৎ ভক্তি-মার্গ শুরু হয়, তখনই হয় রাবণ রাজ্যের উপস্থিতি। এই সৃষ্টি চক্র কিভাবে চক্রাকারে ঘুরে চলেছে তার রহস্য তোমরা বিলেত-বিদেশেও ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারো। অবশ্য লক্ষ্মী-নারায়ণের চিত্রের সাথে অন্য ধর্মের কোনও যোগসূত্র নেই। এর জন্যই বাবা বলেন- ত্রিমূর্তি আর কল্প-বৃক্ষের ঝাড়ই মুখ্য চিত্র। বোঝাবার জন্য খুবই সুন্দর এই দুটি চিত্র। এই কল্প-বৃক্ষের ঝাড় আর সৃষ্টি-চক্রের গোলাতেই বুঝে যাবে কোন কোন ধর্মের প্রবেশকাল কখন, খ্রিস্টান ধর্ম কখন আসে দুনিয়ায়। সৃষ্টি চক্রের অর্ধেকটায় সেইসব ধর্মগুলি আর প্রথম অর্ধেকটায় তোমরা অর্থাৎ সূর্যবংশী-চন্দ্রবংশীরা। মোট ৫-হাজার বছরের এই অবিনাশী ড্রামা। যা রচিত হয়েছে জ্ঞান, ভক্তি আর বৈরাগ্যে। জ্ঞান অর্থাৎ দিন আর ভক্তি হলো রাত। এরপর আসে অসীম জগতের বৈরাগ্য। তোমরা তো জেনেছো, এই পুরানো দুনিয়া এবার বিনাশ হতে চলেছে। অতএব একে ভুলে থাকাই মঙ্গল। প্রকৃত পতিত-পাবন কে ? - তাও বুঝিয়ে প্রমান করতে হবে তোমাদেরই। লোকেরা তো দিনরাত গাইতেই থাকে- "পতিত পাবন সীতা রাম।" গান্ধীজী গীতা পাঠ করতেন, তাই উনিও গাইতেন - হে পতিত পাবন সীতাদের রাম।" তোমরা আত্মারা সবাই প্রকৃত অর্থে সীতা অর্থাৎ বধূর মতন প্রেমিকা৷ আর পরমাত্মা বাবা হলেন স্বামী। তারপরে লোকেরা বলে- "রঘুপতি রাঘব রাজা রাম।" কিন্তু এই রাজা রাম তো ত্রেতা যুগের এক রাজা। সবকিছুকে তালগোল পাকিয়ে একটা কুণ্ডলী বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাতেই সবাই তালি বাজিয়ে এক সুরে তা গাইতে থাকে। বাচ্চারা, তোমরাও পূর্বে তাই করতে, যখন তোমরা ভক্তি-মার্গে ছিলে। ব্রহ্মাবাবাও এক বছর কেবলমাত্র খাদি-র কাপড়চোপড় পড়েছিলেন। যেহেতু উনিও তখন গান্ধীজীর অনুগামী হয়েছিলেন। সবকিছুইতেই ব্রহ্মাবাবার অনুভব আছে। তাই তো উনি যেমন প্রথমে আবার তেমনই শেষে অবস্থান করেন। এবার আবার প্রথম স্থানে আসবেন। লোকেরা তোমাদের কাছে জানতে চায় যে, চতুর্দিকে ব্রহ্মার এত ছবি কেন ? তাদেরকে বোঝাতে হবে, ব্রহ্মার অবস্থান যে কল্পবৃক্ষের উপরিভাগে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সেই উনিই আবার এই পতিত দুনিয়ার একেবারে শেষভাগের নীচেও অবস্থান করছেন। যেমন শ্রীকৃষ্ণকে দেখানো হয়েছে একেবারে উপরিভাগে। দুই বিড়ালের লড়াই-ঝগড়ার মাঝে আসল মাখনটা যে কৃষ্ণই খেয়ে নেয়। মাতাদের অনেক সাক্ষাৎকার হয়, তাই মাতাদের ধারণা কৃষ্ণের মুখে মাখনের গোলা অথবা পূর্ণ-চন্দ্র। বাস্তবে তা হলো বিশ্বের বাদসাহী- যা তারা মুখের ভিতরে দেখে থাকে। তেমনি দুই-বিড়াল যখন লড়াই-ঝগড়াতে ব্যস্ত থাকে, মাঝখান থেকে আসল মাখনটা তোমরা দেবতারাই পেয়ে যাও। এই মাখন অর্থাৎ বিশ্বের বাদশাহীরূপী মাখন। আজকাল কত উন্নত প্রযুক্তির ব্যোম্ ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। এমন ব্যোমও তৈরি হতে চলেছে, যা বিস্ফোরণ হলেই অগুনিত লোক মারা পড়বে। তবে তখন এমনটা হবে না যে, তারা চিৎকার করারও সুযোগ পাবে। যেমন হিরোশিমা-নাগাসাকিতে যে ব্যোম বিস্ফোরণ হয়েছিল, তাতে ঘায়েল হয়ে এখনও অনেক বেঁচে আছে। তাই বাবা বোঝাচ্ছেন -"মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা, অর্ধ কল্প তোমরা কতই না সুখে থাকো। কোনও প্রকারের লড়াই-ঝগড়া ইত্যাদির নামগন্ধও পর্যন্ত থাকে না সেখানে। এসবের শুরু হয়েছে অনেক পরে। ওখানে এসব কিছুই থাকে না তেমনি আগামীতেও থাকবে না। সৃষ্টি-চক্রের আবর্তন এভাবে পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। খুব সহজ-সরল ভাবে সুন্দর রীতিতে বাবা তা বুঝিয়ে দেন। বাচ্চাদের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ধারণা যাদের সুন্দর হয়, তারা ঈশ্বরীয় সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করে। বর্তমানের এই দুনিয়া হলো ছিঃ ছিঃ-এর দুনিয়া। একে বিষয় অর্থাৎ বিষ-ময় বৈতরণী নদী বলা হয়। তাই তো বাবা সামনে বসে বাচ্চাদেরকে তা বোঝাচ্ছেন - তোমরা নিজেদেরকে অতটা উন্নত ভাবো না, যতটা উন্নত বাবা তোমাদেরকে ভাবেন। অতএব বাচ্চারা- তোমাদেরও তেমনই নেশার ঘোর থাকা উচিত, যেহেতু তোমরা যে অনেক উচ্চ-কুলের সন্তান। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. তোমার বুদ্ধিকে আরও উন্নত করার জন্য রোজ জ্ঞান অমৃতের ডোজ্ নিতে হবে। স্মরণের যোগের সাথে সাথে পঠন-পাঠনের প্রতিও সম্পূর্ণভাবে যত্নবান হওয়া আবশ্যিক, যেহেতু এই জ্ঞান পাঠের দ্বারাই উচ্চপদ প্রাপ্তি হয়।
২. তোমরা বি.কে.-রা উচ্চ থেকেও অতি উচ্চ কুলের, যেখানে স্বয়ং ভগবান তোমাদের এই জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন - এই নেশার ঘোরেই সর্বদা থাকা উচিত। জ্ঞান ধারণ করে ঈশ্বরীয় সেবাকার্যে নিযুক্ত হওয়া উচিত।
বরদান:-
সেবার সাথে সাথে অসীম জগতের (বেহদের) বৈরাগ্য বৃত্তি সাধনার উত্থান ঘটিয়ে সফলতার প্রতিমূর্তি হও
সেবার দ্বারাই খুশী আর শক্তি প্রাপ্ত হয়। কিন্তু সেই সেবাতে যদি বৈরাগ্য বৃত্তি না থাকে, তাই নিজের ভিতরের বৈরাগ্য বৃত্তিকে জাগিয়ে তোলো। যেমন ভাবে সেবার প্ল্যানকে প্র্যাকটিক্যালে উত্থান ঘটাতে পারলে তবেই সফলতা আসে৷ এমন ভাবেই বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তির উত্থান ঘটাও। যতই সাধনের প্রয়োগ করো না কেন, কিন্তু বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তির সাধনা তাতে মিশতে পারে না৷ সাধন আর সাধনার ব্যালেন্স হলে তবেই সফলতার মূর্তি-স্বরূপ হতে পারবে।
স্লোগান:-
অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারাই পরমাত্ম প্রেমের লক্ষণ ।