14.12.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
বাবার কাছে তোমরা আসো ক্লান্তি দূর করে সতেজ হতে, বাবার সাথে মিলনের পর
ভক্তি-মার্গের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়"
প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা, কি
পদ্ধতিতে বাবা তোমাদের ক্লান্তি দূর করে সতেজ বানায় ?
উত্তরঃ -
১) এই বিশেষ
জ্ঞানের বাণী শ্রীমৎ শুনিয়েই তরতাজা করে তোলেন।
২) বাচ্চারা, স্মরণে যোগযুক্ত হলেই তোমরা সতেজ হয়ে ওঠো। বাস্তবে সত্যযুগই হলো
প্রকৃত বিশ্রাম-ধাম। যেখানে অপ্রাপ্ত বস্তু বলে কোনও কিছুই থাকে না, যা প্রাপ্তির
জন্য পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।
৩) বি.কে.-দের প্রকৃত বিশ্রাম হয় শিববাবার কোলে এলে। তখন যেন সব ক্লান্তিই দূর হয়ে
যায়।
ওম্ শান্তি ।
সামনে বসে
বাচ্চাদেরকে বাবা যেমন বোঝাচ্ছেন তার সাথে সাথে দাদা (ব্রহ্মা) -ও কিন্তু বোঝাচ্ছেন,
যেহেতু বাবা যে এই দাদার শরীরেই অবস্থান করে বোঝাতে থাকেন। যেমন ভাবে তোমরা তা বুঝতে
থাকো, ঠিক তেমনি ভাবে দাদা-ও তা বুঝতে থাকেন। এই দাদাকে কিন্তু ভগবান বলা চলবে না-
অর্থাৎ যা ভগবান উবাচঃ বা এগুলি সব ঈশ্বরীয় বর্ণন এইসব। বাচ্চারা, তোমাদেরকে বাবা
কি বোঝাচ্ছেন ? -- দেহী-অভিমানী হতে। যেহেতু নিজেকে কেবলমাত্র আত্মা অনুভব করতে না
পারলে পরমপিতা পরমাত্মাকে স্মরণ করতেই পারবে না। যেহেতু বর্তমান সময়ে সব আত্মাই যে
পতিত হয়ে আছে। এই পতিত অবস্থায় থাকাকালীনকে মনুষ্য বলা হয়, আর পবিত্র হলে তাকে বলা
হয় দেবতা। যে কেউই কত সহজ-সরল ভাবে একথা যেমন নিজে বুঝতে পারে তেমনি সে অপরকেও
বোঝাতে পারে। এই মনুষ্যরাই তো বাবাকে ডাকতে থাকে- "পতিতদের পবিত্র বানাবার একমাত্র
কারিগর বাবা, তুমি এসো।" কিন্তু দেবী-দেবতারা কখনই তা বলবে না। অর্থাৎ পতিত-দের সেই
কাকুতি-মিনতি ডাকে সাড়া দিয়েই এই ধরাধামে আসেন পতিত-পাবন বাবা। তারপর আত্মাদের
পবিত্র করে গড়ে তোলার পর তাদের জন্য আবার নতুন পবিত্র দুনিয়া স্থাপন করে দেন।
পরমাত্মা বাবাকে ডাকে আত্মাধারী বাচ্চারা। শরীর নয় কিন্তু। এই পারলৌকিক বাবা যিনি
সদাকালের পবিত্র, তাই তো সবাই ওনাকেই স্মরণ করে। বর্তমানের এই দুনিয়াটা একেবারেই
পুরোনো পতিত দুনিয়া। বাবা এসে সেই দুনিয়াকেই নতুনভাবে আবার পবিত্র পাবন দুনিয়া করে
গড়ে তোলেন। অনেকে এমনও বলে- এই পুরোনো পতিত দুনিয়াতেই তো অপার সুখ। কত ধন-সম্পদে
পরিপূর্ণ আমার এই সংসার। যেহেতু তাদের ধারণা, এই সংসারটাই তাদের স্বর্গ-রাজ্য। ফলে
তারা আর কিভাবেই বা স্বীকার করবে তোমাদের যথার্থ যুক্তিগুলি। একেবারেই অবুঝেরা
কলিযুগী এই দুনিয়াকেই স্বর্গ-রাজ্য ভেবে আনন্দ পায়। সত্যি কি করুণ জীর্ণদশা অবস্থা
হয়েছে এই দুনিয়ার। তবুও অবুঝ মানুষ ভাবে, তারা যেন স্বর্গ-রাজ্যেই বাস করছে। যে
বি.কে.-রা এই অবস্থাকে বিশ্লেষণ করে অপরকে বোঝাতে পারে না, বাবা তাদের উদ্দেশ্যেই
বলেন-তোমরা কি পাথরের মতন নির্বোধ বাচ্চা ? পরশ-বুদ্ধির বুদ্ধিমান বি.কে. হলে সে
অবশ্যই অন্যদেরকেও তা বুঝিয়ে নিজেদের মতন করে গড়ে তুলতে পারবে। অতএব খুব মনোযোগ
সহকারে পুরুষার্থ করা উচিত - এতে লজ্জার ব্যাপার নেই। কিন্তু অর্ধ-কল্প ধরে মানুষেরা
যে উল্টো বুদ্ধির পাঠশালায় পড়ে আসছে, তা তো আর এত সহজে ভুলতে পারবে না। তেমনি
যতক্ষণ না পর্যন্ত যথার্থ রীতিতে প্রকৃত বাবাকে সে নিজেই সঠিকভাবে জানতে না পারবে,
ততক্ষণ সে অন্যকেও জানতেও পারবে না বাবার এই শক্তি যে কি বিশাল শক্তি।
এবার বাবা বলছেন- বাচ্চারা, এইসব বেদ-উপনিষদ-ইত্যাদি শাস্ত্রের দ্বারা মানুষের কোনও
উন্নতি হয় না বা পরিবর্তনও আসে না। বরঞ্চ দিন-প্রতিদিন তারা আরও অবনতির দিকেই এগোতে
থাকে। যেভাবে সতোপ্রধান লোকেরা আজ তমোপ্রধানে পরিণত হয়েছে। অথচ কারও মাথায় এই
বুদ্ধিটুকুও নেই, তারাই একদা সতোপ্রধান দেবী-দেবতা ছিলো, আর কি ভাবেই বা আজ তারা এত
নিম্নবর্গের হলো। এসবের কোনো ধারণাই নেই তাদের। তাই তো ৮৪-বার জন্মের বদলে ৮৪-লক্ষ
বার জন্মের কথা বলে। [এই ভাবেই লক্ষ্যকে লক্ষ (উদ্দেশ্যকে সংখা) ভেবে নিয়েছে] এমন
ধারার বুদ্ধি যাদের, তারা আর কি বা জানতে পারবে! এদিকে এই বিশেষ জ্ঞানের আলো
একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই জানে না। ফলে সবাই এদিক-ওদিক, একে-অন্যকে অনুসরণ করে
চতুর্দিকে, দোরে-দোরে, মন্দিরে-মসজিদে ঘুরে-ঘুরে কেবলই ধাক্কা-হোঁচটই খেয়েছে ফলে
অধঃপতন হতে-হতে একেবারে তলদেশে এসে পৌঁছেছে। এইভাবে তারা তাদের সব শক্তি হারিয়ে
একেবারেই শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। এমন কি তাদের বুদ্ধির শক্তিও এমন লোপ পেয়েছে যে, তারা
তাদের প্রকৃত বাবাকেও যর্থার্থ রূপে চিনতে পারছে না। তাই তো স্বয়ং বাবাকেই আসতে হয়
তাদের বুদ্ধির তালা খোলার জন্য। যার পর তারা আবার উজ্জীবিত ও সতেজ হয়ে ওঠে। আপন
বাচ্চারাই বাবার কাছে আসে উজ্জীবিত ও সতেজ হতে। ঠিক যেমন বাড়ীতে ফিরতে পারলেই
বিশ্রাম নেওয়া হয়। ভক্তি-মার্গে যারা এত পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে, বাবার
সাক্ষাতেই তাদের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই তো সত্যযুগকে বলা হয় "বিশ্রম-পুরী"।
তোমরা প্রকৃত বিশ্রাম যেখানে পাও। সেখানে এমন কোনও অপ্রাপ্ত-বস্তু থাকবে না, যা
প্রাপ্তির জন্য তোমাদের পরিশ্রম করতে হবে। একদিকে এই বাবা যেমন তোমাদেরকে উজ্জীবিত
করে তোলেন, অপরদিকে দাদাও তেমনি সতেজ করে তোলেন। শিববাবার কোলে স্থান পেয়ে কতই না
বিশ্রাম অনুভূত হয়। বিশ্রাম অর্থাৎ নির্বাক-নীরবতা। মানুষেরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে,
তখন তারা বিশ্রমেই যায়। কেউ হেথায় আবার কেউ হোথায় যায় বিশ্রাম নিতে। কিন্তু সেই
বিশ্রাম তো আর প্রকৃত বিশ্রাম নয়। কিন্তু এখানে বাবা তোমাদেরকে কত সুন্দর এই বিশেষ
জ্ঞান শুনিয়ে উজ্জীবিত ও সতেজ করে তোলেন। বাবাকে স্মরণ করলেও কি সুন্দর রিফ্রেশ হওয়া
যায়, যেহেতু সেই দিশাতেই তমোপ্রধান অবস্থা থেকে সতোপ্রধানের দিশায় যাওয়া যায়। এখানে
বাবার কাছে আসার মূল উদ্দেশ্যই হলো সতোপ্রধান হওয়ার পুরুষার্থ করা। তাই তো বাবা
বারবার বলেন- মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, বাবাকে স্মরণ করো। বাবা বাচ্চাদের ব্যাখ্যা
করে বোঝাচ্ছেন- বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই অবিনাশী নাটকের সৃষ্টি-চক্র কিভাবে তার নিজ
নিয়মে প্রতি নিয়তই ঘুরে চলেছে। কিভাবেই বা আত্মারা কোথায় আর কখন বিশ্রাম পায়।
বাচ্চারা, তোমাদের প্রধান কর্তব্য হলো, বাবার বাণীগুলি প্রত্যেকের কাছেই পৌঁছে দেওয়া।
বাবা জানাচ্ছেন- মনোযোগ সহকারে বাবাকে স্মরণ করলে তবেই বাবার অবিনাশী সম্পদের
উত্তরাধিকারী হতে পারবে। একমাত্র এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই নতুন দুনিয়ায়
স্বর্গ-রাজ্য রচিত হয়। যেখানে তোমরা বি.কে.-রাই সেই স্বর্গ-রাজ্যের মালিক হবে। এরপর
দ্বাপরে মায়া-রাবণ দ্বারা শাপিত হও তোমরা, যার ফলে তোমাদের পবিত্রতা, সুখ-শান্তি,
ধন-দৌলত ইত্যাদি সবকিছুই নিঃশেষ হয়ে যায়। এই ভাবেই ধীরে ধীরে কি করে একেবারেই
নিঃস্ব হয়ে পড়ো, তারই ব্যাখ্যা করে বোঝান এই বাবা। বর্তমানের দুনিয়াটা যেখানে
দুঃখধাম, সেখানে বিশ্রামের শান্তি থাকবেই বা কি প্রকারে। প্রকৃত বিশ্রাম পাওয়া যায়
সুখধামে - যেখানে কেবলই বিশ্রাম আর বিশ্রাম। ভক্তির ধারায় চলতে চলতে মানুষেরা এত
ক্লান্ত হয়ে পড়ে। জন্ম-জন্মান্তর ধরে এই ভক্তি করতে করতে চূড়ান্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
যেন একেবারে দীনদরিদ্র কাঙাল হয়ে পড়ে। বাচ্চাদেরকে সামনে বসিয়ে এই রহস্যগুলিকেই
যথার্থ রীতিতে বোঝাতে থাকেন বাবা। নতুন বাচ্চারা যারা এসে যোগ দেয় এখানে, তাদেরকে
আরও সবিস্তারে সহজ-সরল ভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হয়। যেহেতু প্রতিটা বিষয়েই তো
লোকেরা কত চিন্তা-ভাবনা করে। অনেকে তো এমনও ভাবে - এখানে কোনও জাদু করা হয় না তো !
তাদের উদ্দেশ্যে বাবা বলেন- আরে, এতদিন ধরে তোমরাই তো বলে আসছো "ভগবান জাদুকর",
বাবাও সেই সুরে সুর মিলিয়ে বলেন- "আমিই সেই চিরকালেরই জাদুকর। কিন্তু তোমরা যে
জাদুর কথা বলছো, সে জাদুকর নইকো আমি। সে জাদুতে তো মানুষকে ভেড়া বানিয়ে দেয়। বুদ্ধি
খরচ করে তা বুঝতে হবে - কোন্ জাদুতে ভেড়া বানানো হয়। যেমন প্রচলিত গানে আছে- "সুরমণ্ডলের
অর্থাৎ দেবতাদের সভার দিব্যতা, আর অহংকারী দেহ-অভিমানী ভেড়া'রা কি বা মর্ম বুঝবে
তার ......! যেমনটা হয়ে আছে বর্তমানের এই দুনিয়া। অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধি যেন
ভেড়া-ছাগলের মতন। যা বর্তমান যুগের এক বাস্তব রূপ। একেবারেই যুগোপযোগী গান এটা।
এমনকি কল্পের এই অন্তিম সময়েও মানুষেরা তা বুঝতে পারছে না।
চণ্ডীকা দেবীর উৎসবে অনেক বড় আকারের মেলা বসে। কিন্তু সেই চণ্ডী আসলে কে ? তাকে
আবার 'দেবী' বলা হয়। কিন্তু স্বর্গ-রাজ্যে এমন কোনও নাম হয় না। সত্যযুগে কত সুন্দর
সুন্দর নামের বাহার। সত্যযুগী সম্প্রদায়কে শ্রেষ্ঠাচারী বলা হয়। কিন্তু কলিযুগী
সম্প্রদায় একেবারে ছিঃ ছিঃ উপাধিতে ভূষিত। যেমন বর্তমানের মানুষদের শ্রেষ্ঠ বলা চলে
না। শ্রেষ্ঠ হলো দেবী-দেবতারা। তাই তো প্রচলিত আছে- মনুষ্য থেকে দেবতা বানাতে সময়
লাগে না ভগবানের। কিন্তু মনুষ্য থেকে দেবতা আবার দেবতা থেকে মনুষ্য - তা হয় কিভাবে,
সেই রহস্যই তোমাদের বোঝাচ্ছেন বাবা। দেবতাদের রাজ্যকে দেবলোক আর এই মনুষ্য রাজ্যকে
মনুষ্যলোক বলা হয়। দেবতাদের দিন অর্থাৎ আলোর প্রকাশ আর বর্তমান সময় হলো রাত অর্থাৎ
যা অন্ধকার তমসায় আচ্ছন্ন। জ্ঞান অর্থাৎ আলো আর ভক্তি অর্থাৎ অন্ধকার। তাই তো বলা
হয় অজ্ঞানতার তন্দ্রায় বর্তমানের দুনিয়াটা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তেমরাও এখন তা বুঝতে
পারছো। পূর্বে তোমরাও এসব জানতে না, তাই তোমরা "নেতী-নেতী"- অর্থাৎ আমরা সঠিক জানি
না - এমনটাই বলে এড়িয়ে যেতে। সেই তোমরাই এখন উপলব্ধি করতে পারছো, পূর্বে তোমরা
নাস্তিক ছিলে। অসীমের বাবাকেই জানতে না। যিনি তোমাদের অবিনাশী প্রকৃত বাবা। একমাত্র
তিনিই সকল আত্মাদের প্রকৃত বাবা। এবার নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে নিশ্চয়তা এসেছে, তোমরা
সেই অসীমের বাবার একান্ত আপন বাচ্চা। বাবাও তেমনি বাচ্চাদেরকে যে জ্ঞান প্রদান করেন,
তা হলো গুপ্ত-জ্ঞান! যে জ্ঞান কোনও মনুষ্য আত্মা থেকে পাওয়া যায় না। কেমন মজার
ব্যাপার - আত্মা যেমন গুপ্ত, জ্ঞানও তেমনি গুপ্ত। অথচ জ্ঞান ধারণ করছে আত্মা। (পরম)
আত্মা ব্রহ্মার মুখ দ্বারা এই জ্ঞান যেমন শোনাচ্ছেন, তেমনি তোমরা আত্মাধারীরাও
গুপ্ত বাবাকে গুপ্ত রূপেই স্মরণ করো।
বাবা বলছেন- ওহে বাচ্চারা, দেহ-অভিমানী হয়ো না তোমরা। দেহ-অভিমানে এলে যেমন আত্মার
শক্তি হ্রাস হয়, তেমনি আবার আত্ম-অভিমানে থাকতে পারলে আত্মাতে শক্তি সঞ্চয় হতে থাকে।
তাই তো বাবা বলেন- অবিনাশী নাটকের চিত্রপটের রহস্যকে ভালভাবে বুঝে, সেই অনুসারে চলা
উচিত। এই অবিনাশী নাটকের রহস্য যে সঠিকভাবে বুঝতে পারে, সে সর্বদাই হাসি-খুশীতে
থাকতে পারে। মানুষেরা উপরে যাবার জন্য কতই না প্রচেষ্টা করে, তাদের ধারণা উপরেও
এমনই কোনো দুনিয়া আছে - যা শাস্ত্র ইত্যাদিতে পড়াশুনা করে জেনেছে তারা। তাই সেখানে
গিয়ে দেখার আগ্রহ তাদের। সেখানে আবার নতুন দুনিয়া স্থাপনের চেষ্টাও করে তারা। যেহেতু
এই দুনিয়ায় এখন এত অধিক জনবিস্ফোরণ। অথচ এই ভারতেই একদা যখন আদি সনাতন দেবী-দেবতা
ধর্মের রাজত্ব ছিলো, তখন আর কোনও খণ্ড বা দেশই ছিলো না দুনিয়ায়, তবুও জনসংখ্যা খুবই
কম ছিল। পরে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। একবার ভেবে দেখো, যখন অল্প সংখ্যক এই দেব-দেবীদের
রাজত্ব ছিল, যমুনার তীরবর্তীতে, সেই পরীস্তান রাজ্য, যেখানে রাজত্ব করতেন
লক্ষ্মী-নারায়ণ। কত সুন্দর শোভাযুক্ত, সতোপ্রধান দুনিয়া ছিল তা। যা ছিল জাগতিক
সৌন্দর্যে অতি চমৎকার। তেমনি সতোপ্রধান আত্মাদের চেহরাতেও ছিল তেমনই সৌম্যভাব আর
উজ্বলতা। যেমন শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় তাকে কত সুন্দর দেখানো হয়। সমগ্র ঘরটাই যেন
আলোর জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে যায়। বাচ্চাদেরকে সামনে বসিয়ে এগুলিই ব্যাখ্যা করে
বোঝান এই বাবা। সেই পরীস্তানে পৌছবার লক্ষ্যেই তোমরা এখন পুরুষার্থ করে চলেছো। এমনটা
মোটেই নয় যে কোনও বিশেষ জলাশয়ে ডুব দিলেই তোমরা পরী বা অ্যাঞ্জেল হয়ে যাবে। সেইসব
জলাশয়গুলির যেসব নাম রাখা হয়েছে, সেগুলিও সব মিথ্যা নাম। যেমন, লক্ষ-লক্ষ বছর বললেই
তখন সবাই ভাবে, এত পুরোনো স্মৃতি তা তো ভুল হবেই এবং লোপও পাবে। তোমরা বি.কে.-রা
কিন্তু অভুল হয়ে গড়ে উঠছো, অবশ্য তা হচ্ছো যার যার নিজের নিজের পুরুষার্থের ক্রম
অনুসারে। একথা নিয়ে তোমাদের মনে জানার আগ্রহ জাগে, এত ক্ষুদ্র আত্মায় এত বিশাল এই
দেহের ৮৪-জন্মের কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করা হয়, কিন্তু তা কিভাবে। একবার
লক্ষ্য করে দেখো আত্মা শরীর ত্যাগ করার পর সেই শরীরের কি করুণ দশাটাই না হয়। যেহেতু
আত্মাই যে সর্বপ্রকার কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করে। এটাই মূল বিষয় - দুনিয়ার
সমস্ত আত্মারই তার নিজের নিজের কর্মফল অনুযায়ী কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা পালন করতে হয়।
এতে কারও ক্ষেত্রেই বিন্দুমাত্রও হেরফের হয় না। প্রতি কল্পেই হুবহু সেই ভূমিকা
আবারও পুনরায় পালন করতে হয়। এতেও কোনও সন্দেহ নাই। একের সাথে অন্যের বুদ্ধির
তারতম্য হয়, যেহেতু মন ও বুদ্ধির সম্পর্ক তো আত্মার সাথেই। যে বাচ্চাদের মনে এই
সংকল্প থাকে যে, স্কলারশিপ পেতেই হবে, তার মন তেমনই আনন্দ ও খুশীতে ভরপুর থাকে।
তেমনি এখানেও যে যত তাড়াতাড়ি আসে, তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যও ততটাই প্রতিফলিত হচ্ছে
দেখে, সেও তেমন খুশীতে থাকে।
বাচ্চারা, তোমরা জেনেছো যে, লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন দেবী-দেবতা হবার লক্ষ্যেই
বি.কে.-দের এই বিশেষ পঠন-পাঠন। একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া জগতে আর এমন কোনও
স্কুল নেই যেখানে আগামী জন্মের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে নিজেরাই দেখতে পায়। কিন্তু তোমরা
তা দেখতেও পাও, তোমরাই সেই লক্ষ্মী-নারায়ণের মতনই গড়ে উঠছো। তাই তো তোমরা বর্তমানের
এই পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগে এই বিশেষ পাঠ পড়ছো, যাতে তোমরা লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন হয়ে
উঠতে পারো। তোমাদের এই পাঠও তেমনি গুপ্ত-পাঠ। অতএব, এমন উন্নত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
জেনে কতই না খুশীর জোয়ার বইতে থাকে তোমাদের মনে। যে খুশীর কোনও কুল-কিনারা নেই।
সত্যি, স্কুল বা পাঠশালা তো এমনই হওয়া উচিত। যদিও এই স্কুল একেবারেই গুপ্ত কিন্তু
তা খুবই কাজের। যত উন্নত এই শিক্ষা, ততটাই সুযোগ সুবিধা এখানে। যদিও তা মাটিতে বসেই
অধ্যায়ন করতে হয় তোমাদেরকে। পাঠ পড়ে তো আত্মা - তা সে মাটিতে বসেই হোক্, কিম্বা
সিংহাসনে বসেই হোক। তবুও আনন্দে তোমাদের মন নাচতে থাকে এই ভেবে যে, এই পাঠে
কৃতকার্য হতে পারলে তো কেল্লাফতে। এখন যখন বাবা স্বয়ং এসে তার আপন বাচ্চাদেরকে
নিজের পরিচয় দিয়ে বলছেন- তোমাদেরকে পড়াবার জন্যই আমি এনার (ব্রহ্মার) শরীরে প্রবেশ
করি। দেবতাদের তো আর পড়াতে হবে না বাবার। দেবতাদের মধ্যে সেই জ্ঞান কোথায় ?
মানুষেরাই হতবুদ্ধি হয়ে জানতে চায়, আচ্ছা দেবতাদের মধ্যে কি এসব জ্ঞান আছে ? বাবা
জানান- এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠেই তো তারা দেবতা হয়েছে। দেবতা হবার পর তাদের আর
জ্ঞানের দরকার বা কি আছে ? যেমন লৌকিক পড়াশোনায় কেউ ব্যরিস্টার হবার পর তখন তো সে
তার পেশায় অর্থ উপার্জনেই ব্যস্ত থাকবে, তখন কি আর ব্যরিস্টারি পাঠের দরকার পড়বে
তার ? *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
অবিনাশী ড্রামার রহস্যগুলিকে যথার্থ রূপে বুঝে সদা হাসি-খুশীতে থাকতে হবে। প্রতি
কল্পেই, ড্রামার প্রত্যেকটি ভূমিকা পালনকারী, তারা যার যার নিজস্ব ভূমিকা হুবহু
পালন করে।
২) এইম-অবজেক্টকে (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) সামনে রেখে, খুশীর জোয়ারে নাচতে থাকো। সদা
বুদ্ধিতে যেন একথা স্মরণে থাকে যে, এই বিশেষ পাঠের দ্বারাই তুমি লক্ষ্মী-নারায়ণের
মতন হতে চলেছো।
বরদান:-
ব্রাহ্মণ জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডই সুখময় স্থিতির অনুভবকারী হয়ে সম্পূর্ণ পবিত্র
আত্মা হও
ব্যাখ্যা :- সুখ ও
শান্তির জননী বলা হয় পবিত্রতাকে। যে কোনও প্রকারের অপবিত্রতা দুঃখ আর অশান্তির
অনুভব করায়। প্রকৃত ব্রাহ্মণ জীবন হলো, যে প্রতিটি সেকেন্ডই সুখময় স্থিতিতে থাকতে
পারে। যদিও কখনও কোনো দুঃখের পরিস্থিতি আসে, কিন্তু যেখানে পবিত্রতার শক্তি থাকে
সেখানে দুঃখের অনুভব হতেই পারে না। পবিত্র আত্মাধারীরা মাস্টার সুখ-কর্তা হয়ে দুঃখকে
ঈশ্বরীয় সুখের বায়ুমন্ডলে পরিবর্তন করে দেয়।
স্লোগান:-
সাধনের প্রয়োগের দ্বারা সাধনার উদ্যমকে বাড়িয়ে তোলাই হলো বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তি।