14.09.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা ‐-
যখন তোমরা নম্বরানুসারে সতোপ্রধান হয়ে উঠবে, তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা বিনাশের
তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে আর এই পুরানো দুনিয়ার সমাপ্তি ঘটবে"
প্রশ্নঃ -
কোন্
পুরুষার্থীদের বাবার অবিনাশী উত্তরাধিকার সম্পূর্ণ রূপে প্রাপ্ত হয় ?
উত্তরঃ -
সম্পূর্ণ
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করতে হলে সর্বপ্রথম বাবাকে নিজের উত্তরাধিকারী বানাও অর্থাত্
তোমাদের কাছে যা কিছু আছে, সে সমস্ত কিছু বাবাকে অর্পণ কর । বাবাকে নিজের সন্তান
বানিয়ে নাও তবেই সম্পূর্ণ উত্তরাধিকারী হতে পারবে । ২) সম্পূর্ণ পবিত্র হলে তবেই
পুরো উত্তরাধিকারী হতে পারবে । সম্পূর্ণ পবিত্র না হলে সাজা খেয়ে ছোটখাটো পুরস্কার
টুকুই শুধু প্রাপ্ত হবে ।
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চাদের,
শুধুমাত্র একজনের স্মরণে বসলেই হবে না । তিনজনের স্মরণে বসতে হবে । যদিও তিনি একজনই
কিন্তু তোমরা জান উনি যেমন পিতা, তেমনি শিক্ষক এবং সদ্গুরু। তিনি আমাদের সবাইকে নিয়ে
যেতে এসেছেন, এই নতুন কথা তোমারই বুঝেছ । বাচ্চারা জানে ওরা ( লৌকিক) যারা ভক্তি
শেখায়, শাস্ত্র শোনায়, তারা সবাই মানুষ । এনাকে তো মানুষ বলা যায় না, তাই না ! ইনি
হলেন নিরাকার, নিরাকার আত্মাদের বসে পড়াচ্ছেন । আত্মা শরীর দ্বারা শুনছে । এই জ্ঞান
বুদ্ধিতে থাকা উচিত, এখন তোমরা অনন্ত জগতের বাবার স্মরণে বসেছ । অনন্ত জগতের পিতা
বলেন ‐‐ রূহানী বাচ্চারা, আমাকে স্মরণ করলে তোমাদের পাপ বিনষ্ট হবে। এখানে শাস্ত্র
ইত্যাদির কোনও প্রশ্নই নেই । তোমরা জান বাবা আমাদের রাজযোগ শেখাচ্ছেন । তিনি একজন
মহান শিক্ষক, উচ্চ থেকেও উচ্চতর, সুতরাং পদও উচ্চই প্রাপ্ত করান । যখন তোমরা
নম্বরানুসারে পুরুষার্থ অনুযায়ী সতোপ্রধান হয়ে উঠবে, তখনই আবার লড়াই হবে, প্রাকৃতিক
দুর্যোগ আসবে । স্মরণ অবশ্যই করতে হবে । বুদ্ধিতে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা উচিত । শুধু
একবারই বাবা পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগে এসে বোঝান, নব নির্মিত দুনিয়ার জন্য। ছোট
বাচ্চারাও বাবাকে স্মরণ করে । তোমরা তো বিচক্ষণ, তোমরা জানে যে বাবাকে স্মরণ করলে
বিকর্ম বিনাশ হবে আর উচ্চ পদও প্রাপ্ত করতে পারবে । তোমরা এটাও জানো এই
লক্ষী-নারায়ণ নতুন দুনিয়াতে যে পদ প্রাপ্ত করেছে তা শিববাবার কাছ থেকেই পেয়েছে । এই
লক্ষী-নারায়ণই আবার ৮৪ জন্ম পরিক্রমা করে এখন ব্রহ্মা - সরস্বতী হয়েছে । এরাই আবার
লক্ষ্মী-নারায়ণ হবে । এখন পুরুষার্থ করছে । সৃষ্টির আদি, মধ্য, অন্তের জ্ঞান
তোমাদের আছে । এখন তোমরা অন্ধ শ্রদ্ধা নিয়ে দেবতাদের সামনে মাথা নত করবে না ।
দেবতাদের সামনে মাথা নত করে মানুষ নিজেকে পতিত বলে প্রমাণ করে । ওরা বলে তুমি
সর্বগুণ সম্পন্ন, আমি পাপী বিকারী, আমার কোনও গুণ নেই । তোমরা যাদের মহিমা করতে,
এখন তোমরা নিজেরাই সেটা হয়ে উঠছ । বাচ্চারা জিজ্ঞাসা করে ‐- বাবা, এই শাস্ত্র
ইত্যাদি কবে থেকে পড়া শুরু হয়েছে ? বাবা বলেন - যখন থেকে রাবণ রাজ্য শুরু হয়েছে । এ
সবই হলো ভক্তি মার্গের সামগ্রী । তোমরা যখন এখানে এসে বসেছ, সুতরাং সম্পূর্ণ জ্ঞান
বুদ্ধিতে ধারণ হওয়া উচিত। আত্মা এই সংস্কার নিয়ে যাবে ( জ্ঞানের)। ভক্তির সংস্কার
নিয়ে যাবে না । ভক্তির সংস্কার নিয়ে জন্মানো মানুষ পুরানো দুনিয়াতে মানুষের কাছেই
জন্ম নেবে । এরও প্রয়োজন আছে । তোমাদের বুদ্ধিতে এই জ্ঞানের চক্র ঘোরা উচিত । সাথে
সাথে বাবাকেও স্মরণ করা উচিত । উনিই আমাদের পিতা । বাবাকে স্মরণ করলে বিকর্ম বিনাশ
হবে । বাবা আমাদের শিক্ষক, সুতরাং ঈশ্বরীয় পঠন-পাঠন বুদ্ধিতে ধারণ হবে আর সৃষ্টি
চক্রের জ্ঞানও বুদ্ধিতে আছে, যার জন্য তোমরা চক্রবর্তী রাজা হতে পারবে । ( স্মরণের
যাত্রা চলছে)
ওম্ শান্তি । ভক্তি আর জ্ঞান । বাবাকে বলা হয় জ্ঞানের সাগর । উনি ভক্তি সম্পর্কে
সম্পূর্ণ জ্ঞাত । ভক্তি কবে থেকে শুরু হয়েছে, কবে সম্পূর্ণ হবে, মানুষ এসব কিছুই
জানে না । বাবা এসেই বুঝিয়ে বলেন । সত্যযুগে তোমরা দেবী-দেবতা বিশ্বের মালিক ছিলে।
ওখানে ভক্তির নাম মাত্র নেই । একটাও মন্দির ছিল না । সব দেবী-দেবতারাই ছিল । পরবর্তী
সময়ে যখন অর্ধেক দুনিয়া পুরানো হয়ে যায় অর্থাত্ ২৫০০ বছর সম্পূর্ণ হয়ে যায় অথবা
ত্রেতা আর দ্বাপরের সঙ্গম শুরু হয় তখনই রাবণের প্রবেশাধিকার ঘটে । সঙ্গম তো অবশ্যই
প্রয়োজন । ত্রেতা আর আর দ্বাপরের সঙ্গমে রাবণের আবির্ভাব হয় আর তখনই দেবী-দেবতারা
বাম মার্গে নামতে থাকে । তোমরা ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ-ই জানে না । বাবাও আসেন
কলিযুগের অন্তে আর সত্যযুগ শুরুর সঙ্গমে আর রাবণ আসে ত্রেতা আর দ্বাপরের সঙ্গমে। ঐ
সঙ্গমকে কল্যাণকারী বলা হয় না । তাকে তো অকল্যাণকারী-ই বলা হবে । বাবার নাম-ই হলো
কল্যাণকারী । দ্বাপর থেকে অকল্যাণকারী যুগ শুরু হয় । বাবা হলেন চৈতন্য বীজরূপ ।
ওঁনার সম্পূর্ণ ঝাড়ের নলেজ আছে । ঐ বীজ যদি চৈতন্য হতো তবে বোঝাত ‐- আমার থেকে এই
ঝাড় কিভাবে নির্গত হয় । কিন্তু জড় হওয়ার কারণে বলতে পারেন না । আমরা বুঝতে পারি বীজ
বপন করার আগে গাছ ছোটই বের হয় । তারপর বড় হয়ে ফল দেওয়া শুরু করে । কিন্তু চৈতন্য
যিনি, তিনিই সবকিছু বলতে পারেন । দুনিয়াতে দেখো মানুষ আজকাল কত কি করছে । কত কি
আবিষ্কার করছে । চাঁদে যাওয়ারও চেষ্টা করছে । এই সব কথাই তোমরা এখন শুনছ । কত লক্ষ
মাইল উচ্চতায় চাঁদ, সেখানে চলে যাচ্ছে, পরীক্ষা করে দেখার জন্য চাঁদ বস্তুটি
প্রকৃতপক্ষে কি ? সমুদ্রেও চলে যাচ্ছে, পরীক্ষা করছে। কিন্তু অন্ত (শেষ) পাওয়া
সম্ভব নয়, শুধু জল আর জল । এরোপ্লেনে চড়ে অনেক উচ্চতায় উঠে যাচ্ছে, তার মধ্যে এতটাই
পেট্রোল ঢালা হয় যাতে সে আবার ফিরে আসতে পারে । আকাশ অনন্ত তাই না, সাগরও অনন্ত ।
যেমন বাবা অনন্ত জ্ঞানের সাগর, আর সেটা হলো জলের অনন্ত সাগর । আকাশ তত্ত্ব অনন্ত,
ধরিত্রীও অনন্ত, চলতেই থাকো। সাগরের নীচে ধরিত্রী । পাহাড় কার উপর দাড়িয়ে আছে ?
ধরিত্রীর উপর । এই ধরিত্রী খনন করলে পাহাড় বেড়িয়ে আসে, তার নীচ থেকে আবার জলও বেড়িয়ে
আসে । সাগরও ধরিত্রীর উপর । সাগরের অন্ত পাওয়া সম্ভব নয় যে কতদূর পর্যন্ত জল আছে,
কতদূরে ধরিত্রী আছে ? পরমপিতা পরমাত্মা যিনি অনন্ত অসীম জগতের পিতা, ওঁনার জন্য
অনন্ত বলা যাবে না । মানুষ যদিও বলে থাকে ঈশ্বর অনন্ত, মায়াও অনন্ত । কিন্তু তোমরা
বাচ্চারা জান ঈশ্বর কখনোই অনন্ত হতে পারেন না । এই আকাশ অনন্ত, ৫ তত্ত্ব, আকাশ, বায়ু,
অগ্নি, জল, মাটি তমোপ্রধান হয়ে পড়ে । আত্মাও তমোপ্রধান হয়ে যায় । তারপর বাবা এসে
সতোপ্রধান করে তোলেন । কত ছোট্ট আত্মা, ৮৪ জন্ম ভোগ করে । এই চক্র ক্রমান্বয়ে
ঘুরতেই থাকে । এ হলো অনাদি নাটক, এর কোনও শেষ নেই । পরম্পরা থেকে চলে আসছে । কবে
থেকে শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে বলো, এর অন্তও আছে । এইসব কথাই বোঝাতে হবে‐‐ কবে থেকে
নতুন দুনিয়া শুরু হয়, কিভাবে পুরানো হয় । এই ৫ হাজার বছরের চক্র ঘুরতেই থাকে । এখন
তোমরা জেনেছ, ওরা তো নানা গল্প জুড়ে দিয়েছে । শাস্ত্রেও লিখেছে সত্যযুগের আয়ু লক্ষ
বছরের । মানুষ এসব শুনতে শুনতে একেই সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছে । তারা এটা জানেই
না যে ‐- ভগবান কবে এসে নিজের পরিচয় দেবেন ? না জানার কারণে বলে থাকে কলিযুগের আয়ু
৪০ হাজার বছর, এখনও বাকি আছে । যতক্ষণ তোমরা না বুঝিয়ে বলবে । এখন তোমরা নিমিত্ত
হয়েছ বোঝাবার জন্য যে কল্পের আয়ু ৫ হাজার বছরের, লক্ষ বছরের নয় ।
ভক্তি মার্গে কতরকম সামগ্রী, পয়সা থাকলেই মানুষ খরচ করে। বাবা বলেন, আমি তোমাদের কত
ধন ঐশ্বর্য দিয়ে যাই । অসীম জগতের পিতা যখন নিশ্চয়ই অনন্ত উত্তরাধিকারই দেবেন । এর
দ্বারা সুখও প্রাপ্তি হয়, আয়ুও বৃদ্ধি হয় । বাবা বাচ্চাদের বলেন ‐‐ আমার প্রিয়
বাচ্চারা, আয়ুষ্মান ভব ( দীর্ঘজীবী হও)। ওখানে তোমাদের আয়ু ১৫০ বছরের হয়, কখনও কাল
খায় না (অকালে মৃত্যু হয় না) । বাবা বর দেন, তোমাদের দীর্ঘজীবী করে তোলেন । তোমরা
অমর হও । ওখানে কখনও অকাল মৃত্যু হয় না । ওখানে তোমরা খুব সুখে থাক তাই বলা হয়
সুখধাম । ওখানে আয়ুও বৃদ্ধি হয়, ধন সম্পদও অগাধ থাকে, সবাই খুব সুখে থাকে । কাঙাল
থেকে মুকুটধারী হয়ে ওঠো । তোমাদের বুদ্ধিতে আছে ‐‐ বাবা আসেন দেবী-দেবতা ধর্মের
স্থাপনা করতে। নিশ্চয়ই ছোট ঝাড় হবে । ওখানে এক ধর্ম, এক রাজ্য, এক ভাষা । তাকেই বলে
বিশ্বে শান্তি বিরাজ করছে । সম্পূর্ণ বিশ্বে আমরাই ভুমিকা পালন করে থাকি । এই দুনিয়া
সেটা জানে না। যদি জেনেই থাকে তবে বলুক কবে থেকে আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করে আসছি?
এখন তোমাদের, অর্থাৎ বাচ্চাদের বাবা বোঝাচ্ছেন । গীতও আছে না ‐- বাবার থেকে যা পাওয়া
যায়, তা আর কারোর থেকে পাওয়া যায় না । পৃথিবী, আকাশ, সম্পূর্ণ বিশ্বের রাজধানী তিনি
দিয়ে থাকেন । এই লক্ষী-নারায়ণও বিশ্বের মালিক ছিলেন, তারপর যে রাজারা এসেছে তারা
ভারতের ছিল । গীতও আছে বাবা যা দিয়ে থাকেন, তা আর কেউ দিতে পারেনি । বাবা এসেই
প্রাপ্তি করান । সুতরাং এই সমস্ত জ্ঞান বুদ্ধিতে থাকা উচিত যাতে তোমরা যে কোনও
আত্মাকে বোঝাতে পার । এটাই ভালো করে বুঝতে হবে। কে বোঝাতে পারবে ? যে বন্ধনমুক্ত হবে
। বাবার কাছে যখন কেউ আসে বাবা জিজ্ঞাসা করেন ‐‐ ক'টি সন্তান আছে ? উত্তরে বলে ৫ টি
সন্তান নিজের আর ষষ্ঠ সন্তান শিববাবা, সুতরাং সবচেয়ে বড় সন্তান হবে, তাই না ।
শিববাবার হয়ে গেলে উনিও নিজের সন্তান বানিয়ে বিশ্বের মালিক করে তোলেন । বাচ্চারা
উত্তরাধিকারী হয়ে যায় । এই লক্ষী-নারায়ণও শিববাবার সম্পূর্ণ উত্তরাধিকারী ।
পূর্বজন্মে শিববাবাকে সবকিছু সমর্পণ করে দিয়েছিলেন । সুতরাং উত্তরাধিকার তো
বাচ্চাদের অবশ্যই পাওয়া উচিত । বাবা বলেন ‐- আমাকেই উত্তরাধিকারী বানাও, দ্বিতীয়
কেউ নয় । বাচ্চারা বলে -- বাবা এই সবকিছুই তোমার, আর যা কিছু তোমার, সবই আমাদের ।
তুমি আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বের বাদশাহী উত্তরাধিকারী হিসেবে দিয়ে থাক। কেননা আমাদের
যা কিছু ছিল সব তোমাকে দিয়েছি (তন,মন,ধন )। ড্রামায় নির্ধারিত রয়েছে, তাইনা ।
অর্জুনকে যেমন বিনাশের দৃশ্য যেমন দেখানো হয়েছে, তেমনই চতুর্ভুজও দেখানো হয়েছে ।
অর্জুন তো অন্য কেউ নয়, ব্রহ্মাবাবার সাক্ষাত্কার হয়েছিল । তিনি দেখেছিলেন, রাজত্ব
প্রাপ্তি হচ্ছে, তবে কেন শিববাবাকে উত্তরাধিকারী করব না । তারপর উনিও আমাকে তাঁর
উত্তরাধিকারী বানান । এই লেনদেন খুব ভালো । কখনও কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি ।
গুপ্ত ভাবে সবকিছু দান করেছেন । একেই বলে গুপ্ত দান । কেউ জানতেই পারল না, এর কি
হয়েছে। কেউ কেউ ভাবল বৈরাগ্য এসেছে, তাই সন্ন্যাসী হয়ে গেছে । সুতরাং এই বাচ্চারাও
বলে ‐- ৫ সন্তান নিজের, আরেকজন সন্তান আমাদের শিববাবা। ব্রহ্মা বাবাও সবকিছুই বাবার
সম্মুখে দান করেছেন, যাতে অনেক আত্মার সেবা হয় । বাবাকে দেখে সবারও একই ইচ্ছে হয় আর
তারাও ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসে । তখন থেকেই হাঙ্গামা শুরু হয় । ওরা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে
আসার মতো সাহস দেখিয়েছে । শাস্ত্রেও লেখা আছে, ভট্টি তৈরি হয়েছিল। কেননা তাদের
একান্তে থাকা প্রয়োজন ছিল । বাবা ছাড়া আর কেউ যেন স্মরণে না আসে, মিত্র-সম্বন্ধী
ইত্যাদি কেউ-ই যেন স্মরণে না আসে। কেননা আত্মা পতিত হয়ে গেছে, তাকে পবিত্র হতে হবে।
বাবা বলেন গৃহস্থ পরিবারে থেকেও পবিত্র হও । পবিত্র থাকাতেই যত বিঘ্ন সৃষ্টি হয় ।
বলা হয় এই জ্ঞান স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে। কেননা একজন যদি পবিত্র হয়
আর অপরজন যদি না হয় তবে মারামারি লেগে যায় । অনেকেই মার খেয়েছে, কেননা হঠাত্-ই নতুন
কথা বাবা এসে বলেছেন । সবাই অবাক হয়ে গেল, ভাবতে লাগল কি এমন ঘটেছে যে সবাই সেখানে
ছুটে ছুটে যাচ্ছে । মানুষের মধ্যে তো বিচক্ষণতা নেই, শুধু বলত- নিশ্চয়ই কোনো শক্তি
আছে! এমন তো এর আগে কখনও হয়নি যে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে চলে যাবে । অবিনাশী
ড্রামায় এসবই শিববাবার ঈশ্বরীয় কার্যকলাপ। কেউ তো একেবারে খালি হাতেই চলে গেছে, এও
একটা খেলা । ঘরবাড়ি সব ছেড়ে চলে এসেছে, পিছনের আর কিছুই স্মরণে থাকে না । অবশিষ্ট
রইলো এই শরীর, যার উপরেই কাজ করতে হবে (কর্মেন্দ্রিয়কে কন্ট্রোলে আনা, সংযমী হওয়া)।
আত্মাকে স্মরণের যাত্রা দ্বারাই পবিত্র করে তুলতে হবে, তবেই পবিত্র আত্মারা ফিরে
যেতে পারবে । স্বর্গে অপবিত্র আত্মারা ফিরে যেতে পারে না । নিয়ম নেই । মুক্তিধামে
যেতে পবিত্রতা প্রয়োজন । পবিত্র থাকার জন্য কতরকম বিঘ্ন আসে । কোনো সৎসঙ্গ ইত্যাদি
স্থানে যেতে হলে কোনও রকম বাধা নিষেধ থাকে না । যেখানে খুশি চলে যেতে পারে। এখানে
পবিত্রতার কারণে বিঘ্ন আসে । এটা তো বোঝা গেছে-‐ পবিত্র হওয়া ছাড়া পরমধাম ঘরে ফেরা
যাবে না । ধর্মরাজের সাজা খেতে হবে । তারপর অল্প-স্বল্প পদ প্রাপ্ত হবে । সাজা না
খেয়ে গেলে পদও ভালো প্রাপ্তি হবে । এই সবকিছুই বোঝার বিষয় । বাবা বলেন – মিষ্টি
বাচ্চারা, তোমাদের আমার কাছে আসতে হবে । এই পুরানো শরীর ছেড়ে পবিত্র আত্মা হতে হবে
। তারপর ৫ তত্ত্ব যখন সতোপ্রধান হয়ে যাবে, তখন তোমরাও সতোপ্রধান শরীর ধারণ করতে
পারবে । সমস্ত কিছুই উথালপাথাল হয়ে নতুন হয়ে যাবে । যেমন বাবা ব্রহ্মা বাবার মধ্যে
এসে বসেন, তেমনি আত্মাও কোনও কষ্ট ছাড়াই গর্ভ মহলে প্রবেশ করবে । তারপর যখন সময় হবে
বাইরে বেড়িয়ে আসবে। ঠিক যেন বিচ্ছুরিত আলোর মতো, কেননা আত্মা পবিত্র । এইসব কিছুই
ড্রামায় নির্ধারিত । আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
আত্মাকে পবিত্র করে তোলার জন্য একান্তে ভাট্টিতে যোগ যুক্ত হতে হবে । এক বাবা ছাড়া
দ্বিতীয় কোনও মিত্র-সম্বন্ধী যেন স্মরণে না আসে ।
২ ) বুদ্ধিতে সম্পূর্ণ জ্ঞান ধারণ করে, বন্ধনমুক্ত হয়ে অন্যদের সার্ভিস করতে হবে ।
বাবার সাথে প্রকৃত লেনদেন করা উচিত । যেমন বাবা সবকিছু গুপ্ত ভাবে করেছেন, তেমনই
গুপ্ত ভাবে দান করতে হবে ।
বরদান:-
নিমিত্ত আর নির্মাণ ভাব দ্বারা সেবা করতে সমর্থ শ্রেষ্ঠ সফলতার প্রতিমূর্তি ভব
সেবাধারী
অর্থাত্ সদা বাবার সমতুল্য নিমিত্ত আর নির্মাণে সমর্থ স্বরূপ হওয়া । নির্মাণ ভাব হল
শ্রেষ্ঠ সফলতার সাধন । যেকোনও সেবায় সফলতা পাওয়ার জন্য নম্র ভাব আর নিমিত্ত ভাব
ধারণ কর। এর ফলে সেবা করতে সবসময় আনন্দ অনুভব করবে । সেবা করতে কখনও ক্লান্তি আসবে
না । যে কোনও সেবাই কর না কেন, এই দুই বিশেষত্ব দ্বারা সেবা করলে সফলতা স্বরূপ হয়ে
যাবে ।
স্লোগান:-
সেকেন্ডে বিদেহী (অশরীরী) হওয়ার অভ্যাস করলে সূর্য বংশে যেতে পারবে ।