২১-০৫-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - প্রমাণ করে দেখাও যে, অসীম জগতের এই বাবাই তোমাদের প্রকৃত বাবা, প্রকৃত শিক্ষক ও প্রকৃত সদগুরুও । সুতরাং সর্বব্যাপী বা সবকিছুতেই ওঁনার অস্তিত্ব হতেই পারে না"

প্রশ্ন:-

বর্তমান সময়ে দুনিয়াতে এত দুঃখ-কষ্ট কেন, এই দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ কি ?

উত্তর:-

বর্তমানে সমগ্র দুনিয়াটাই রাহুর-দশার কবলে - আর এই কারণেই এত দুঃখ-কষ্ট। বাবা বৃহস্পতি যখন আসেন, তখন সবার উপরেই বৃহস্পতির কৃপা হয়। যেমন সত্যযুগ ও ত্রেতায় বৃহস্পতির দশা। তখন সেখানে রাবণের নাম-গন্ধও থাকে না, ফলে দুঃখ-কষ্টও হয় না। সেই বাবা এখানে এসেছেন সুখধাম স্থাপন করতে - যেখানে কোনও প্রকারেরই দুঃখ-কষ্ট হয় না।

ওঁম্ শান্তি!

মিষ্টি-মিষ্টি আত্মা রূপী সন্তানদের আত্মাদের পিতা অর্থাৎ এই বাবা বাচ্চাদের সামনে বসে বোঝাচ্ছেন- যেহেতু বাচ্চারা নিজেরাই তো জানে - প্রকৃত অর্থে তারা আত্মা, নিজেদের প্রকৃত গৃহ শান্তিধাম থেকে এত দূরে এখানে এসেছে তারা। এসেছে দেহরূপী এই শরীরে প্রবেশ করে, নিজেদের কর্ম-কর্তব্য এর ভূমিকা (পার্ট) করার জন্য। প্রকৃত অর্থে পার্ট যা করার তা তো করে "আত্মা"। তাই বাচ্চারা এখানে যখন বসে, নিজেকে আত্মা ভেবে বাবার স্মরণেই থাকে! যেহেতু বাবা বুঝিয়েছেন - বাচ্চারা, এই স্মরণের যোগের দ্বারাই তোমাদের জন্ম-জন্মান্তরের পাপ ভস্ম হয়। কিন্তু একে সেই যোগ বলা যায় না, অর্থাৎ, যে যোগ জাগতিক সন্ন্যাসীরা শিখিয়ে থাকে। জাগতিক স্টুডেন্ট আর টিচারের মধ্যে যে যোগ, বাচ্চাদের সাথে লৌকিক বাবার যে যোগ, ইত্যাদি। এখানকার এই যোগ হলো আত্মার সাথে পরমাত্মার যোগ অর্থাৎ বাবার সাথে বাচ্চার মিলন। যে মিলন কল্যাণকারী মিলন - অন্যগুলি অকল্যাণকারী। যেহেতু বর্তমান দুনিয়াটাই যে পতিত দুনিয়া। তাই যখন তোমরা প্রদর্শনী বা মিউজিয়ামে কাউকে বোঝাবে, তখন আত্মা আর পরমাত্মার পরিচয় দেওয়াটাই উচিত হবে। আত্মারা সবাই সন্তান আর উনি হলেন পরমপিতা পরম আত্মা। আর এই পারলৌকিক বাবা, যিনি থাকেন অসীমের পরমধামে। তাই বাচ্চারা তাদের লৌকিক বাবাকে পরমপিতা বলতে পারে না। দুঃখ কষ্টে পড়লেই লোকেরা পরমপিতাকেই স্মরণ করে বলে - "হে পরমপিতা পরমাত্মা!" পরমাত্মার নিবাসস্থল পরমধামে। বাচ্চারা, তোমরা আত্মা আর পরমাত্মার নাম নিয়েই এই জ্ঞানের পাঠ বোঝাবে, কিন্তু প্রারম্ভিক পর্যায়ে শুধুমাত্র এটুকুই বলবে না যে, তাদের দুই-বাবা। আর একথাও বোঝাতে হবে - এই বাবা এক অর্থে যেমন বাবা, তেমনি আবার শিক্ষকও - এটাই সঠিক ভাবে বোঝাতে হবে। এক ও একমাত্র উনিই সব আত্মাদেরই বাবা, অতএব আমরা আত্মাধারীরা সবাই একে অপরের ভাই।



ভক্তি-মার্গে ভক্তরাও এই ভগবান বাবাকেই স্মরণ করে। যেহেতু ভক্তির ফল ভগবান তো দেবেনই। তেমনি আবার একই বাবার কাছ থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকারও পাওয়া যায়। ভগবানই বি.কে. বাচ্চাদেরকে ভক্তির ফল দেন - কিন্তু কি দেন ? তিনি সমগ্র বিশ্বের মালিক বানিয়ে দেন। তাই তোমাদের শুধু এটুকুই প্রমাণ করে দেখালে হবে না যে, তিনি তোমাদের বাবা। উনি একাধারে যেমন বাবা, তেমনি আবার জ্ঞান শিক্ষার শিক্ষক এবং সদগুরুও বটে। এইভাবে বোঝাতে পারলে, সর্বব্যাপী চিন্তার অবসান হবে। তার সাথে একথাও যোগ করতে হবে, এই বাবা আবার জ্ঞান-সাগর। উনি এসে তোমাদেরকে রাজযোগের শিক্ষাও দেন। আরও বলবে- উনি যেমন জ্ঞান ও যোগের টিচার তেমনি আবার লৌকিক-অলৌকিক শিক্ষাতেও শিক্ষিত করে তোলেন। তবে কি ভাবেই বা উনি সর্বব্যপী হতে পারেন ? যেমন টিটার পৃথক সত্ত্বা আর স্টুডেন্ট পৃথক সত্ত্বা। যেমন বাবা আলাদা আর বাচ্চারা আলাদা। আত্মারাই তাদের বাবা পরমাত্মাকে যেমন স্মরণ করে, তেমনি আবার ওনার মহিমাও করে। এই বাবা-ই মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ। ইনি এসে বি.কে.-দের মনুষ্য সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান শোনান। এই বাবা-ই বি.কে. বাচ্চাদের জন্য স্বর্গ-রাজ্যের স্থাপনা করেন। ফলে একমাত্র বি.কে.-রা স্বর্গবাসী হতে পারে। উনি একথাও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন, কিভাবে ধরা হয় আমাদের দুই-বাবা। জগতে লৌকিক বাবা পালনা করে, কিন্তু পাঠের জন্য তো টিচারের কাছেই যেতে হয়। এরপর ৬০-বছর বয়েসে বাণপ্রস্থ অবস্থায় পৌঁছালে তখন আবার গুরু-গোঁসাইয়ের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ বাবা, টিচার, গুরু সবাই পৃথক পৃথক। কিন্তু এই বেহদের বাবা যে সকল আত্মাদের বাবা, যিনি আবার জ্ঞানের-সাগর, মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ, সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ, সুখের-সাগর, শান্তির-সাগর। অতএব এমন বাবার মহিমা চর্তুদিকে ছড়িয়ে দাও। যেহেতু এখন এত বিভিন্ন মতভেদের দরুন দুনিয়ার খুবই করুণ অবস্থা। আর বাবা যদি সর্বব্যাপীই হবেন, তবে আবার টিচার হয়ে বাচ্চাদের পড়ান কিভাবে ? অপরদিকে উনি যেখানে সদগুরুও, গাইড হয়ে দিশা দেখিয়ে সবাইকে আপন ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কিভাবে স্মরণে যোগ করতে হয়, তা শিখিয়ে দেন এই বাবা। ভারতের এই প্রাচীন যোগ পদ্ধতির খুবই খ্যাতি জগতে।



সবচেয়ে পুরানো হলো সত্যযুগ। বর্তমানে তোমরা রয়েছো পুরোনো ও নতুনের মাঝখানে। তোমরা বি.কে.-রাই জানো এখন থেকে ৫-হাজার বর্ষ পূর্বে এভাবেই বাবা এসে তোমাদেরকে আপন করে নিয়েছিলেন এবং উনিই তোমাদের টিচার ও সদগুরুও হয়েছিলেন। বাস্তবে উনি কেবল তোমাদেরই বাবা নন। উনি আবার এমনই টিচার যিনি জ্ঞানেরও সাগর। কত উন্নত এই টিচার তোমাদের শিক্ষা দেন ও পাঠ পড়ান। একমাত্র উনিই সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলি উন্মোচন করতে পারেন, যেহেতু উনি বীজরূপ অর্থাৎ (কল্পবৃক্ষের) বৃক্ষপতি। উনি এলে তবেই ভারতে বৃহস্পতির (সুফল) দশা শুরু হয়। সত্যযুগে দেবী-দেবতারা সবাই সদাকালের সুখে থাকে। যেহেতু সময়টা তখন বৃহস্পতির দশার। এরপর যখন দুনিয়া তমোপ্রধান হয়, তখন সবাই রাহুর কু-দশায় আক্রান্ত হয়। তবুও কিন্তু লোকেরা এই বৃক্ষপতিকে জানে না বা চেনে না। সেক্ষেত্রে ওনার অবিনাশী উত্তরাধিকার লোকেরা পাবেই বা কি প্রকারে!



বাচ্চারা, এখানে তোমরা যখন বসো, তখন নিশ্চয়ই অশরীরী ভাবেই বসো। এই জ্ঞান তো তোমাদের হয়েছে - আত্মা পৃথক সত্ত্বা আর তার ঘর (শরীর) পৃথক সত্ত্বা। যা ৫-তত্ত্বের দ্বারা গঠিত একটা পুতুল (শরীর)। তাতেই প্রবেশ করে আত্মা। সবারই যার যার নিজস্ব কর্ম-কর্তব্যের পার্ট খোঁদিত থাকে আত্মাতেই। সর্বাগ্রে এই মুখ্য কথাটাকেই বোঝাতে হবে যে, বাবা-ই হলেন সুপ্রিম বাবা, সুপ্রিম টিচার। লৌকিক বাবা, টিচার ও গুরু - এই তিনের পার্থক্য তুলনা করে বোঝালে মুহূর্তেই তা বুঝে যাবে, তারপর আর কোনও তর্কে যাবে না তারা। আত্মাদের বাবা পরমাত্মাই সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। এটাই ওঁনার বিশেষত্ব। একমাত্র উনিই তোমাদের বর্ণনা করতে পারেন সৃষ্টি রচনার আদি-মধ্য-অন্তের এই বিশেষ জ্ঞানের রহস্যগুলিকে। পূর্বে মুনি-ঋষিরাও স্বীকার করতেন, রচনা আর রচয়িতার আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান জানা নেই তাদের। যদিও তখন তারা সতো অবস্থাতেই ছিলেন। প্রতিটির ক্ষেত্রেই সতোপ্রধান - সতো - রজঃ - তমোতে আসতে হয়। নতুন অবস্থা থেকে পুরাতন অবস্থায় আসতেই হয়। কিন্তু বি.কে.-দের তো এই সৃষ্টি-চক্রের প্রকৃত আয়ু জানা আছে। মানুষ তো এটাই ভুলে গেছে কখন কোন্ সময়ে তাদের আয়ু কত হয়। শাস্ত্রাদি ইত্যাদি লেখা হয়, ভক্তি-মার্গের লোকেদের জন্য। যা জাগতিক গাল-গপ্পোতে ভরা। সব আত্মাধারীদের তো একই বাবা এবং সদগতিদাতাও সেই একজনই। গুরু-গোঁসাই অনেক হতে পারে, কিন্তু সদগতি করতে পারে কেবলমাত্র এই এক সদগুরুই। আর সেই সদগতি কিভাবে হয়-তা তোমরা বি.কে.-রা জানো। যারা সেই আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের হবে, তারাই সদগতি পায়। তারা সংখ্যায় কম সংখ্যকই হবে। বর্তমানে যেখানে এখন এত বিপুল সংখ্যার মানুষ। সেই রাজ্য হবে দেবী-দেবতাদের রাজ্য। যে রাজবংশ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সেই রাজবংশ চলবে, লক্ষ্মী-নারায়ণ প্রথম, লক্ষ্মী-নারায়ণ দ্বিতীয়...তৃতীয় - এইভাবে। প্রথম লক্ষ্মী-নারায়ণের সময়ে মনুষ্য সংখ্যা থাকবে খুবই কম। এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা কেবল তোমাদের মনেই আসতে পারে। একমাত্র তোমাদেরই এ বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাস আছে, এই এক ও একমাত্র ভগবানই (পরমাত্মা) সকল আত্মাদের প্রকৃত বাবা। তিনিই অসীম জগতের একমাত্র বাবা। জাগতিক (হদের) বাবার থেকে জাগতিক উত্তরাধিকার পাওয়া যায়, আর অসীম জগতের বাবার থেকে পাওয়া যায় অসীম অবিনাশী উত্তরাধিকার - অর্থাৎ আগামী ২১-জন্ম স্বর্গ-রাজ্যের বাদশাহী। এই ২১-জন্ম সম্পূর্ণ জীবন ভোগ করার পর যখন বৃদ্ধ অবস্থায় পৌঁছবে তারপরেই আত্মা শরীর ত্যাগ করবে। যেহেতু তাদের সেই আত্ম-জ্ঞানবোধ জাগ্রত থাকে। কিন্তু দেহ-অভিমান থাকার কারণে এখানে লোকেরা তা জানেই না, আত্মা এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর গ্রহণ করে। কিন্তু এই দেহ-অভিমানীদেরকে আত্ম-অভিমানী বানাবে কে ? এই দুনিয়ায় তো একজনও এমন নেই যিনি আত্ম-অভিমানী। একমাত্র এই বাবা এসেই তোমাদের আত্ম-অভিমানী বানিয়ে থাকেন।



বাচ্চারা, এখন তোমরা জানো, আত্মা এক বয়স্ক বড় শরীর ত্যাগ করে ছোট্ট শিশুর শরীরে প্রবেশ করে সেখানেই অবস্থান করে। উদাহরণ স্বরূপ সাপের কথা ভাবতে পারো। সাপ, ভ্রমর ইত্যাদির উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়, বর্তমান সময়ের এই জগতের লোকেদের জন্য। যা ভক্তি-মার্গের হিসেবে। বাস্তবে ভ্রমরী তো তোমরা ব্রাহ্মণী টিচারেরাই। বিষ্টার ক্রীড়াতুল্য মনুষ্যদেরকে ভুঁ-ভুঁ করে জ্ঞান শুনিয়ে, মনুষ্য থেকে দেবতুল্য করে গড়ে তোলো। যেহেতু বাবার জ্ঞানে জ্ঞানী এই টিচারেরা। বাবা যে জ্ঞানের-সাগর, শান্তির-সাগর। শান্তির কামনা তো সবাই করে, তাই তো বলতে থাকে ওহে শান্তির দেবতা......! কিন্তু কাকে ডাকতে থাকে তারা ? যিনি শান্তির দাতা অথবা শান্তির সাগর। ওঁনারই মহিমা কীর্তণ করে, অথচ না তাকে চেনে, না তার প্রকৃত অর্থ বোঝে। নিজেরাই তা স্বীকারও করে। বাবা বুঝিয়ে বলেন- এইসব বেদ, শাস্ত্র, ইত্যাদি সবকিছুই ভক্তি-মার্গের। গত ৬৩-জন্ম ধরে তোমরা ভক্তি-মার্গে ছিলে। ভক্তি-মার্গে কত অসংখ্য শাস্ত্রাদি। কিন্তু বাবা এখানে কোনও শাস্ত্রাদি পড়াতে আসেন না। তোমরা বাবাকে ডাকো, এসে পবিত্র বানাবার জন্য। বর্তমান দুনিয়াটা এতই তমোপ্রধান যে, একেবারেই নোংরা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। যা কোনও কাজেরই নয়। খুবই দুঃখ-কষ্টের দুনিয়া এটা। কিন্তু এমনটা হলো কিভাবে ? বাবা তো তোমাদের এত অঢেল সুখের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, তবুও তোমাদের এই পতন হলো কেন ? তাই তো বলা হয় জ্ঞান আর ভক্তির পার্থক্য। জ্ঞান শোনান বাবা আর ভক্তি শেখায় রাবণ। যদিও বাবা কিম্বা রাবণ কারওকেই চোখের দেখা দেখতে পাওয়া যায় না। এই চর্ম-চোখে দুজনের কারওকেই দেখা যায় না। কিন্তু বি.কে.-দের আত্মা তা উপলব্ধি করতে পারে। প্রকৃত অর্থে তোমরা যেহেতু আত্মা, সেই কারণে আত্মার বাবা (পরমাত্মা) থাকবে নিশ্চয়। তোমাদের এই বাবা আবার টিচারও- যা অন্য কোনও ক্ষেত্রে এমনটি হয় না।



তোমরা বি.কে.-রা যেহেতু সদগতি পাও ২১-জন্মের জন্য, ফলে তোমাদের কোনও গুরু-গোঁসাইয়ের প্রয়োজন পড়ে না। এই বাবা যেমন সবার বাবা, তেমনি পঠন-পাঠনের শিক্ষক আবার সদগতিদাতা সত্যগুরু অর্থাৎ সুপ্রিম গুরুও বটে। এই তিন কর্ম-কর্তব্য যিনি করেন, তাকে তো আর সর্বব্যাপী বলা যায় না। যেখানে উনি স্বয়ং সৃষ্টি জগতের আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলিও জানান। লোকেরা ওনাকেই স্মরণ করে বলে- হে পতিত-পাবন বাবা, সবার সদগতিদাতা, তুমি এসো, এসে সবার দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটিয়ে সুখের অবিনাশী উত্তরাধিকার দাও। হে গড-ফাদার, হে লিবারেটর (মুক্তিদাতা), আবার একবার আমাদের গাইড হয়ে সঠিক দিশায় সেখানে (আপন ঘরে) পৌঁছে দাও। এই রাবণ-রাজত্বের কয়েদ থেকে মুক্ত করো মোদের। রাবণ রাজ্য কোনও লঙ্কা-দেশ অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা নয়। তা তো সমগ্র ধরনী, অর্থাৎ সমগ্র দুনিয়াতেই এখন রাবণের রাজত্ব। রাম-রাজ্য সত্যযুগে। সত্যি, ভক্তি-মার্গে এসে লোকেরা কেমন হতবুদ্ধির হয়ে গেছে।



বাচ্চারা, তোমারা যে শ্রীমৎ পাচ্ছো- শ্রেষ্ঠ হবার জন্য। সত্যযুগে এই ভারতই যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল, তেমনই ছিল পূজ্য অর্থাৎ শ্রেষ্ঠাচারী। তাই তো এখনও পর্যন্ত সেইসব দেব-দেবীদের পূজা হয়। তখন ভারতে ছিল বৃহস্পতির দশা, অর্থাৎ সত্যযুগ। বর্তমানে ভারত এখন রাহুর দশার কবলে। তাই দেখো ভারতের কি করুণ অবস্থা এখন। সবকিছুতেই অন্যায়-অবিচারের উপরেই চলছে। আর এমনটা বানিয়েছে রাবণ। অথচ বলার সময় লোকেরা বলে, রামরাজ্য চাই, অথচ রয়েছে কিন্তু রাবণ-রাজ্যে, অর্থাৎ নরকে। রাবণ রাজ্যকেই নরক বলা হয়। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের অবিনাশী নাটকের পটচিত্রে কল্পের অর্দ্ধেক সময়টা স্বর্গ-রাজ্য, বাকী অর্দ্ধেকটা নরক, অর্থাৎ আধা-আধা। যা কেবল তোমরা বি.কে.-রা জানো। তোমরা এও জানো, রাম-রাজ্য কি আর রাবণ-রাজ্যই বা কি। তাই সর্বাগ্রে বুদ্ধিতে এই বিষয়ে নিশ্চয়তা আনতে হবে। একমাত্র পরমাত্মাই আমাদের বাবা আর বাকী আত্মাধারীরা সবাই ভাই-ভাই সম্পর্কের। অতএব বাবার অবিনাশী উত্তরাধীকার সবারই প্রাপ্য এবং তোমরা তা পেয়েওছিলে। এই বাবা-ই তোমাদেরকে অর্থাৎ বি.কে.-দের রাজযোগের শিক্ষার মাধ্যমে সেই সুখধামের মালিক বানিয়েছিলেন। বাকীরা গিয়েছিল শান্তিধামে। বাচ্চারা, তোমরা তো এও জানো, বৃক্ষপতি অর্থাৎ যিনি চৈতন্য স্বরূপ। যা সত্য-চিত্ত-আনন্দ স্বরূপ। আত্মা যেমন সত্য স্বরূপ তেমনি আবার চৈতন্য স্বরূপও। বাবাও তেমনি সত্য বাবা, চৈতন্য বাবা, যিনি আবার বৃক্ষপতিও। কল্পবৃক্ষের এই বৃক্ষ হলো ওলটানো বৃক্ষ। যার বীজ থাকে উপরিভাগে। বাবা স্বয়ং এসে তা বোঝান - বাচ্চারা, যখন তোমাদের তমোপ্রধান অবস্থা হয়, তখন বাবা আসেন তোমাদেরকে সতোপ্রধান বানাবার জন্য। এই একই হিস্ট্রি ও জিওগ্রাফি বারবার রিপিট হয়। কিন্তু অন্যদেরকে বোঝাবার সময় তোমরা হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি ইংরাজী শব্দ ব্যবহার করবে না। হিন্দিতে বলবে ইতিহাস-ভূগোল। যদিও ইংরাজী তো সবাই পড়তে পারে। অনেকেই ভাবে ভগবান গীতা-জ্ঞান শুনিয়েছিলেন সংস্কৃত ভাষায়। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তো সত্যযুগের প্রিন্স। তখন সেখানে সেই ভাষাই যে ছিলো, এমনটা কোথাও লেখা নেই কিন্তু। যদিও ভাষা তখনও ছিল। যখন যে রাজার রাজত্ব হয়, তখন সেই ভাষাই চলে। তেমনি সত্যযুগী রাজাদেরও যার যার নিজের ভাষাই চলবে। যার মধ্যে সংস্কৃত ভাষার উল্ল্যেখ নেই। সত্যযুগের রীতি-নীতি, আচার-আচরণ এক প্রকারের আর কলিযুগের মানুষদের রীতি-নীতি, আচার-আচরণ আর এক প্রকারের।



তোমরা বি.কে.-রা সবাই এক-একজন মীরা। যারা এই কলিযুগী লোকলজ্জা, আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, মর্যদাকে মোটেই পছন্দ কর না। আর কলিযুগী এইসব বিসর্জন দিতে গিয়ে কত ঝগড়ার সম্মুখীন হতে হয় তোমাদের। বাবা তোমাদেরকে শ্রীমৎ দেন, কাম-বিকার মহাশত্রু, অতএব এই বিকারকে জয়লাভ করতেই হবে তোমাদের। জগৎ-জিত্ হবার চিত্রকে সামনে রাখো। অসীম জগতের বাবার কাছ থেকে এমন উন্নত পরামর্শ পাও তোমরা কিভাবে বিশ্বে শান্তি স্থাপন হবে - তাই তো শান্তিদেবা বলার সাথে সাথে এই বাবার কথাই স্মরণে আসে। কারণ, কল্প-কল্প ধরে এই বাবা এসে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করেন। কল্পের প্রকৃত আয়ুকে অজ্ঞানী লোকেরা অনেক বেশী বাড়িয়ে বলাতে সাধারণ লোকেরা এখনও এমনও গভীর কুম্ভকর্ণের ঘুমে ঘুমিয়ে আছে।

অতএব বাচ্চারা, লোকেদের মধ্যে সর্বাগ্রে এই নিশ্চয়তার বীজ বপন করে পাক্কা করাও, এই বাবা যেমনি আমাদের প্রকৃত বাবা তেমনি আবার টিচারও। টিচারকে তো আর সর্বব্যাপী বলা যাবে না। একমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই জানো, কিভাবে বাবা এখানে এসে তোমাদেরকে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ান। তোমরা ওনার বায়োগ্রাফি অর্থাৎ জীবনচরিতের গুণাবলি ও কর্ম-কর্তব্যকে জানো। এখানে বাবার আসার মূল উদ্দেশ্যই হলো - বর্তমানের এই নরকের দুনিয়াকে স্বর্গ-রাজ্য বানানো। উনি যেমন টিচার, তেমনি আবার গাইডের মতন দিশা দেখিয়ে সাথে করে নিয়ে যান আপন ঘরে। আত্মারা অবিনাশী। এখানে কর্ম-কর্তব্যের পার্ট সম্পূর্ণ করে তবেই ঘরে ফেরে। কিন্তু তাদেরকে দিশা দেখিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তো গাইডেরও দরকার। তেমনি এই বাবা রাবণের হাত থেকে মুক্ত করে দুঃখ-কষ্টের লাঘব করেন, ও গাইডের মতন দিশা দেখিয়ে সবাইকে ফিরিয়েও নিয়ে যান। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা ও বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. কলিযুগী লোকলাজ, কলিযুগী কুলের মর্যদা ত্যাগ করে, ঈশ্বরীয় কুলের মর্যদাকে ধারণ করতে হবে। অশরীরী বাবা যা শোনাচ্ছেন, অশরীরী ভাবে তা শুনে সেই অভ্যাসে নিজেকে পাক্কা করতে হবে।

২. অসীম জগতের এই বাবা, একাধারে যেমন বাবা, তেমনই টিচার, আবার সদগুরুও বটে। এই তিনের বিচিত্র সমন্বয়কেই সবাইকে বোঝাতে হবে। এটাও প্রমাণ করে দেখাতে হবে যে, বেহদের এই বাবা সর্বব্যাপী মোটেই নয়।

বরদান:-

লৌকিক-অলৌকিক জীবনে সর্বদা স্বতন্ত্র থেকে পরমাত্মার সাথে থাকার অনুভবে নষ্টমোহা হও

সদা স্বতন্ত্র থাকার লক্ষ্যণ হলো প্রভু প্রেমের অনুভূতি। যত বেশী প্রেম-ততই ওঁনার সাথে থাকার অনুভূতি, সেক্ষেত্রে নিজেকে পৃথক মনে হবেই না। প্রেমের পরিভাষাই হলো- সদা সাথের সাথী। তাই বাবা স্বয়ং যেখানে সাথী, তখন নিজের সব রকমের বোঝা ওঁনাকে দিয়ে হাল্কা হয়ে যাও নিজে। এটাই নষ্টমোহ হওয়ার সহজ বিধি। কিন্তু পুরুষার্থের বিষয়ে "আমি" শব্দকে সদা বিশেষভাবে চিহ্নিত করবে। লৌকিক ও অলৌকিক জীবনে সদা স্বতন্ত্র থাকলে, তবেই সর্বদা বাবাকে সাথী হিসেবে অনুভব হবে।

স্লোগান:-

বিকাররূপী সাপগুলিকে নিজের শয্যা বানিয়ে নিতে পারলেই সহজযোগী হতে পারবে।