৩০-০১-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা হল রাজঋষি । কিন্তু তা প্রাপ্ত করার জন্য পুরুষার্থ করতে হবে নিজেদেরকেই, আর তার সাথে আবশ্যিক দৈবী-গুণ ধারণ করা"

প্রশ্ন:-

উত্তম পুরুষ হওয়ার জন্য কি ধরণের পুরুষার্থের প্রয়োজন ? কোন্ বিষয়ের প্রতি খুব মনোযোগী হতে হবে ?

উত্তর:-

উত্তম পুরুষ হতে চাইলে পঠন-পাঠনের প্রতি মুখভার করে থাকা চলবে না। পড়াশোনার সাথে লড়াই-ঝগড়ার কোনও সম্পর্ক নেই। লেখাপড়া করলেই তো হতে পারবে নবাব....। অতএব নিজের উন্নতির চিন্তা মাথায় রাখবে সদা। চাল-চলন আচার-ব্যবহারেও যথেষ্ট সাবধানতা দরকার। তোমরাই দেবতা হতে চলেছ, তাই খুব রাজকীয় চাল-চলন হওয়া উচিত তোমাদের। খুবই মিষ্ট-স্বভাবের হতে হবে। মুখ থেকে এমন শব্দই যেন বেরোয়, যাতে সবার তা মিষ্ট লাগে। কেউ যেন দুঃখ না পায় তোমার কোনো কথায়।

ওঁম্ শান্তি!

মিষ্টি-মিষ্টি ঈশ্বরীয় সন্তানদের সামনে বসে বাবা বোঝাচ্ছেন এবং জিজ্ঞাসা করছেন - বাচ্চারা, বুদ্ধি তোমাদের কোথায় টিঁকে আছে ? লোকেদের বুদ্ধি যে সর্বদাই এদিক ওদিক ভ্রমিত হতে থাকে, কখনও এখানে - কখনও ওখানে। বাবা বলছেন - বুদ্ধির এই ঘোরা-ফেরাকে বন্ধ কর। বুদ্ধিকে এক দিশায় চালিত কর। অসীম-বেহদের বাবাকে স্মরণ করতে থাকো। তোমরা ঈশ্বরীয় সন্তানেরা তো জানো, বর্তমানে সমগ্র দুনিয়াটাই এখন তমোপ্রধান। এই আত্মারাই তাদের পুরুষার্থের ক্রমানুসারে একদা সতোপ্রধানই ছিল। আজ তাদেরই এমন তমোপ্রধান অবস্থা। তাই বাবা বলছেন- আবারও সতোপ্রধান হতে হবে। অতএব নিজের বুদ্ধিকে বাবার সাথে যোগযুক্ত করো। এখন যে আপন ঘরে ফিরে যাবার পালা, যা অন্যেরা একেবারেই তা জানে না। অন্যদেরকে এমনভাবে দিশা দেখাবার কেউ নেই যে বলবে, বাচ্চারা, তোমরা এই বাবাকে এভাবে স্মরণ করো। অথচ, কত সহজ ভাবে বোঝান তিনি। কেবলমাত্র বাবাকে স্মরণ করলেই বিকর্মগুলির বিনাশ হয়ে যায় - এমন ভাবে আর কেউই জোরের সাথে তা বলতে পারেন না, একমাত্র এই বাবা তা বলতে পারেন। যার শরীরে প্রবেশ করেন, তিনিও এসব কথাবার্তা শোনেন। পতিত থেকে পবিত্র হবার দিশা আর সেই অনুসারে চলার এমন সুন্দর মত (শ্রীমৎ) একমাত্র এই বাবাই দিয়ে থাকেন। বাবা বলেন- "ওহে বাচ্চারা, তোমরা বি.কে.-রাই একদা সম্পূর্ন সতোপ্রধান ছিলে, আবার ঠিক তেমনই হতে হবে। তোমরাই আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের ছিলে, কিন্তু ৮৪-জন্মের কর্ম-কর্তব্য করতে করতে এখন তোমরা কানা-কড়ির তুল্য হয়ে গেছো। তোমরা যেমন হীরে তুল্য ছিলে, আবারও তেমনটিই হতে হবে।



বাবা খুব সহজ কথাই শোনান- নিজেকে কেবল আত্মা মনে কর। আত্মারাই তো তাদের আপন ঘরে ফিরে যাবে, শরীর তো আর যাবে না। অতএব খুশী মনেই যাওয়া উচিত বাবার ঘরে। বাবা যে শ্রীমৎ দেন, তার দ্বারাই তোমরা শ্রেষ্ঠ হতে পারবে। একমাত্র পবিত্র আত্মারাই সেই মূল-বতনে গিয়ে, আবার ফিরে এসে নতুন শরীর ধারণ করে। এই বিষয়ে নিশ্চয়তা থাকলে, তবেই ভালোবাসায় মগ্ন থাকবে। দৈবী-গুণ ধারণ করলে তাতে যেমন উপকৃত, তেমনি লাভবানও হওয়া যায়। যে বি.কে.-রা খুব মনোযোগ সহকারে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ে, সে উচ্চপদের অধিকারী অবশ্যই হয়। জ্ঞানের পাঠ-ও যে পঠন-পাঠনই। তোমরা প্রতি কল্পে এভাবেই তা করে আসছ। তেমনি বাবাও কল্প-কল্প ধরে তোমাদের এভাবেই পড়িয়ে চলেছেন। যে সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, তা হল ড্রামা । ড্রামা অনুসারেই বাবার আর বাচ্চাদের পার্ট চলছে। বাবা তো সঠিক রায়-ই দেবেন, তাই না ! অবশ্য বাচ্চারাও তা উপলব্ধি করে বলেও দেয়- বাবা, আমরাই মুহূর্তে-মুহূর্তে তোমাকে ভুলে যাই।" এটাই হল মায়ার ঝড়-তুফান। মায়া বার বার বাচ্চাদের জ্ঞানের প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। বাবাকে বহ্নিশিখাও বলা হয়, সর্ব-শক্তিমান, অথরিটিও বলা হয় । যত বেদ এবং অন্যান্য শাস্ত্রাদি যা কিছু আছে, সবকিছুর সারকেই ব্যক্ত করেন তিনি। একমাত্র তিনিই এমন নলেজফুল, যিনি সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যকেই বোঝান । এই ব্রহ্মা-বাবাও ওঁনারই সন্তান, তিনি ওঁনার কাছ থেকে তা শুনে অন্যদেরকে তার ব্যাখ্যা শোনান। বাবা যখন কিছু শোনান, তখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে ব্রহ্মাবাবাও যে তা শোনেন। এতে মুষড়ে পড়ার কোনও ব্যাপার নেই। এই রাজযোগ খুবই সহজ। আর তোমরা হলে রাজঋষি, পবিত্র আত্মাকে ঋষি বলা হয়। আবার তোমাদের মতন এমন (গৃহী) ঋষি আর কেউ হতে পারে না। আত্মাকে উদ্দেশ্য করেই ঋষি বলা হয়, যা শারীরিক ব্যাপার নয়। এই আত্মাই হতে পারে ঋষি বা রাজঋষি। কিন্তু রাজ্য-ভাগ্যের পদ তোমরা পাও কোত্থেকে? তাও কিন্তু সেই বাবার থেকেই। অতএব বাচ্চারা, তোমাদের কত খুশীতে থাকা উচিত। তোমরা বি.কে -রা সরাসরি শিববাবার কাছ থেকে সেই রাজ্য-ভাগ্য লাভ করো। বাবা তোমাদেরকে সেই স্মৃতিই এনে দিচ্ছেন, একদা তোমরা বি.কে.-রাই সমগ্র বিশ্বের মালিক ছিলে, পুনর্জন্মের চক্রে ৮৪-বার জন্ম নিতে নিতে ক্রমান্বয়ে অবরোহনের নিয়মে নিম্নগতিতে এসে পৌঁছেছ। দেবতাদের চিত্রও রয়েছে। লোকেরা ভাবে, আত্মা যেহেতু জ্যোতি স্বরূপ, তাই হয়তো পরমাত্মার পরম-জ্যোতিতে তা বিলীন হয়ে যায়। বাবা বলেন, কোনও মনুষ্যের জ্যোতি অন্য কোনও জ্যোতির সাথে বিলীন হয় না। মুক্তি ও জীবনমুক্তিও কেউ পায় না। বাচ্চারা, সারাদিন তোমাদের মনে এইসবের বিচার-সাগর মন্থন করা উচিত। স্মরণের যোগে যত থাকতে পারবে, ততই আনন্দে থাকবে। সত্যি, এটাই ভাববার বিষয়, তোমাদেরকে এই জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন কে !



লোকেরা তো কৃষ্ণকে 'লর্ড-কৃষ্ণ'ও বলে। ভগবানকে 'লর্ড' বলা যায় না। ওঁনাকে গড-দের ফাদার) 'গড-ফাদার'-ই বলা হয়। তিনি হলেন 'হেভেনলী গড-ফাদার'! এখন তোমরা মনে-প্রাণে মানতে পারছ একমাত্র উনিই 'হেভেনলী গড-ফাদার'! হেভেন অর্থাৎ যিনি দৈবী-রাজধানীর স্থাপনা করছেন। সত্যযুগে আর অন্য কোনো ধর্ম থাকে না। চিত্রেও কেবল দেবতাদেরকেই দেখানো আছে। দেবতাদের ধর্মকেই প্রকৃত 'আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম' বলা হয়। দেবতারাই তখন সমগ্র বিশ্বের মালিক থাকে৷ যেই সময়-কালকে বলা হয় সত্যযুগ, আর তেমরা এখন অবস্থান করছো পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে। তোমরা এটাও বুঝে ফেলেছো, বাবা তোমাদেরকে রাইটিয়াস (পবিত্রতার সঠিক দিশায়) করে গড়ে তুলছেন, তোমরা সঠিক ভাবধারায় রাইটিয়াস হচ্ছো। আর বিকারকে আনরাইটিয়াস বলা হয়। দেবতারা পবিত্র থাকেন। তাই ওনাদের দেহের চতুর্দিকে আলোর আভা থাকে, যা দর্শায় পবিত্রতার চিহ্ন। তেমনি আনরাইটিয়াস অর্থাৎ যার প্রতিটি পদক্ষেপই বেঠিক। যেহেতু একদা যারা ছিল শিবালয়ে, তাদেরই পতনের ফলে, আজ তারা বেশ্যালয়ে। নতুন যারা তারা এর সঠিক অর্থ বুঝে উঠতে পারবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আরও বেশী বিস্তারে সুন্দর করে বাবার পরিচয় দিতে না পারবে, উনিই সেই 'হেভেনলী গড-ফাদার।' 'হেভেন' আর 'হেল' এই দুটি শব্দ হলো একে অপরের বিপরীত। যেমন সুখ আর দুঃখ, তেমনি স্বর্গ আর নরক। তোমরা জানো, একদা এই ভারত ভূ-খণ্ডেই ছিল অপার সুখ, যা এখন দুঃখের ভূখণ্ড। বাবা এসে আবার তাকে সুখের ভূখন্ডে পরিণত করেন৷ সেই দুঃখের দিন অবসান হলো বলে। বাবা দু-হাতে মুঠো করে নিয়ে আসেন সুখের উপহার। সবাইকে কত সুখ-শান্তি দেন, তাই তো সবাই এত বন্দনা করে বাবার। এমনকি ত্যাগী-সন্ন্যাসীরাও ওনার তপস্যা করে। ওনার প্রতি সবারই কিছু না কিছু আশা-আকাঙ্খা থাকে। অবশ্য সত্যযুগে এসবের প্রশ্নই ওঠে না। যেহেতু তখন আর অন্য কোনও ধর্মই থাকে না। তোমরা এখন সেই লক্ষ্যেই পুরুষার্থ করছো সেই নতুন দুনিয়ায় যাবার উদ্দেশ্যে। যেহেতু তোমরা তা জেনেছো, সেটাই প্রকৃত শান্তিধাম-সুখধাম। আর বর্তমানের দুনিয়াটা হল দুঃখধাম। তোমরা বি.কে.-রা আছো পুরুষোত্তম-সঙ্গমযুগে, অর্থাৎ উত্তম-পুরুষ হবার লক্ষ্যেই তোমাদের এই পুরুষার্থ। অতএব তা খুবই ভাল রীতিতে করা উচিত। জ্ঞানের এই পড়ায় কখনও বিমুখ হবে না যেন। কারও সাথে মনোমালিন্য হলেও অমূল্য এই জ্ঞানের পাঠ যেন ছেড়ে দিও না। পড়াশোনার সাথে লড়াই-ঝগড়ার কোনও সম্বন্ধ নেই। লেখাপড়া করলেই তো হতে পারবে নবাব....কিন্তু লড়াই-ঝগড়াতেই ব্যস্ত থাকলে তা হবে কি করে - তাতে তো তমোপ্রধান চাল-চলন এসে যাবে। প্রত্যেকেরই নিজের-নিজের চাল-চলনের উন্নতির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।



বাবা বলছেন- "হে আত্মারা, তোমরা এই নিরাকার পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করলেই তোমাদের যাবতীয় বিকর্মগুলির বিনাশ (ভষ্ম) হয়ে যাবে, তার সাথে সাথে দৈবী-গুণগুলিকেও ধারণ হবে । আর যদি লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন এত সুন্দর হতে চাও, তবে মনে রাখবে তাদেরও এমন ভাবেই গড়ে তুলেছিলেন এই বাবা-ই। বাবা জানাচ্ছেন, তোমরা বি.কে.-রাই তখন সেখানে রাজত্ব করেছিলে, যা আবারও তোমাদেরকেই তেমনি হতে হবে। এই রাজযোগ বাবা কেবল এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই শিখিয়ে থাকেন। কল্প কল্প ধরে তোমরাই তা হতে থাকো। কল্পের পুরো সময়টাই যেন কলিযুগ চলবে, এমনটা তো আর হতে পারে না। সৃষ্টি চক্রের আবর্তনের অবিনাশী নিয়মে কলিযুগের পর সত্যযুগ আসবেই। সত্যযুগে মানুষ সংখ্যায় থাকে অনেক কম। অতএব আবারও লোকসংখ্যা কম হতেই হবে। তা তো সহজেই বোঝা যায়। পূর্বে যেমনটা ঘটেছিল তেমনটাই শোনাচ্ছেন বাবা। খুব ছোট এই কাহিনি। যদিও বাস্তবে তা অনেক বড়, কিন্তু এই ছোট কাহিনিতেই মূল ধারণা এসে যায়। ৮৪-জন্মের কর্ম-কর্তব্যের রহস্যে মোড়া এই কাহিনি। যা ইতিপূর্বে তোমরাও জানতে না। যেহেতু এই জ্ঞানের পাঠ পড়ছো, তাই তোমরা তা বুঝতে পারছো ধীরে ধীরে। এই জ্ঞানের পাঠই যে সঙ্গমযুগের প্রকৃত পাঠ। অবিনাশী ড্রামার চিত্রপটও ঘুরতে-ঘুরতে আবারও সেই নির্দ্দিষ্ট স্থানে আসছে, যেখান থেকে আবার নতুন সত্যযুগের সূচনা হবে। অতএব এই পুরনো সৃষ্টিরও বদল হবে। কলিযুগের এই নোংরা-আবর্জনা জঙ্গলের বিনাশ হয়ে সত্যযুগী সুগন্ধী ফুলের বাগান স্থাপিত হবে। দৈবী-গুণকে ফুলের সাথে তুলনা করা হয়। আর কাঁটাকে বলা হয় আসুরী-গুণ। নিজেকে বিচার করে দেখতে হবে, আমার মধ্যে তেমন কোনও অবগুণ আর নেই তো। এখন তোমরা দেবতা হবার লক্ষ্যে যোগ্যতা অর্জন করছো, অতএব দৈবী-গুণগুলি অবশ্যই ধারণ করতেই হবে। বাবা, টিচার ও সদগুরু হয়ে এসেছেন তিঁনি, নিজেদের চরিত্রের সংশোধন তো করতেই হবে। লোকেরা বলে, মানুষের চরিত্র এখন একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে। অবশ্য ভাল-চরিত্র কাকে বলে, সেটা তাদের জানা নেই। তোমরা তাদের শেখাতে পারো, দেবতাদের চরিত্র কত সুন্দর ছিল। দেবতারা কখনই কারওকে কোনও প্রকার দুঃখ-কষ্ট দিত না। কোনও নারীর চাল-চলন খুব ভাল হলে লোকেরা বলে এই নারী যেন দেবীর প্রতিমূর্ত্তি। কি মিস্টি এর কথাবার্তা। তাই তো বাবা বলেন-যেখানে তোমাদেরকে দেবতা করে গড়ে তুলছি, সেখানে তোমাদেরও কত মিষ্ট-স্বভাবের হওয়া উচিত। দৈবী-গুণ ধারণ করা উচিত। আসলে, যে নিজে যেমন হয় সে অপরকেও তেমনই তো বানাবে। তেমনি তোমরাও সবাই টিচার-ই হবে। টিচারের সন্তান টিচার। তোমরাই আবার পাণ্ডব সেনাও। পাণ্ডাদের কর্ম-কর্তব্যই হলো সবাইকে সঠিক দিশা দেখানো। দৈবী-গুণ ধারণ করানো। ঘর-গৃহস্থীতে থেকে কর্ম-কর্তব্য পালন করা। ঘরে থেকেও নানাভাবে সেবাকার্য করা যায়। যে কেউ আসুক না কেন, তাকে এই জ্ঞানের শিক্ষা দিতে থাকবে। এমন অনেকেই আছে, যারা নিজেদের ঘরে গীতা পাঠশালা খুলে অনেককে এই জ্ঞানের পাঠ পড়িয়ে সেবা করেন। এমন নয় যে সবাইকে এখানে এসেই পড়তে হবে। এই সেবা কন্যাদের জন্য খুব সহজ। মাস দুই নানা জায়গায় ঘুরে, নিজের ঘরে গিয়ে থাক। নিজের ঘরের সন্ন্যাস (ত্যাগ) করতে নেই। যেমন ঘর থেকে ডেকে পাঠালে, তখন তো যেতেই হয়। ঘরে যেতে নিষেধ নেই তোমাদের। এতে কোনও লোকসানের ব্যাপারও নেই, উল্টে উদ্যম-উৎসাহ বাড়ে। তোমরা এখন যথেষ্ট বুদ্ধিমানও হয়েছ। বাড়ীর অন্যদেরকেও নিজের মতো করে গড়ে তুলে সাথে করে নিয়ে যাবে। এমন অনেকেই আছে, যারা ঘরে বসেই পাঠদানের সেবা করতে করতে বেশ চালাক-চতুর হয়ে ওঠে।



এবার বাবা মুখ্য বিষয়টি বোঝাচ্ছেন - নিজেকে আত্মা মনে করে পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করো। তোমার নিজের উন্নতি তোমাকেই করতে হবে। এখানে থেকে যেমনটা উন্নতি করতে পারবে, ঘর-গৃহস্থে থেকে তার চাইতেও বেশী উন্নতি হতে পারে। ঘরে যাওয়ার জন্য তোমাদের প্রতি কোনও বাধা-নিষেধ নেই। তাদেরও কল্যাণ করতে হবে যে। কল্যাণ ব্রতের যে ব্রতী হবে, সে এক জায়গায় থাকতেই পারবে না, সে তো সবারই কল্যাণ চাইবে। জ্ঞান আর যোগে পরিপক্ককে কেউ অপমান করতে পারে না। কিন্তু যোগের বল না থাকলে মায়া তাকে চড়-থাপ্পড়ও লাগায়। অতএব ঘর-গৃহস্থে থেকেও পদ্ম-ফুলের মতন পবিত্র থাকতে হবে অবশ্যই। বাবা তো সর্ব-প্রকারের স্বাধীনতা দেন ঘরে থাকার জন্য। এখানেই সবাই থাকবে কি করে। তোমরা যত বেশী সংখ্যায় আসবে, তোমাদের থাকার জন্য তত সংখ্যায় ঘরবাড়িও বানাতে হবে যে। অবশ্য পূর্ব কল্পে যেমনটি হয়েছিল, ঠিক তেমনটি ঘটে চলেছে পুনরায়। বি.কে.-র সংখ্যা বৃদ্ধি তো পেতেই থাকবে। ড্রামার বাইরে কিছুই যে হবে না। এই যে যুদ্ধ-বিগ্রহ বাধে, এত লোক মরে- এ সবই ঘটে ড্রামার চিত্রপট অনুসারে। যা অতীত হয়, পুনরায় সেই ঘটনাই ঘটে আবার। তেমনি বাবা-ও কল্প-কল্প ধরে যেমন ভাবে বুঝিয়েছেন, এখনও ঠিক তেমন ভাবেই তোমাদেরকে বোঝাচ্ছেন। যদিও লোকেরাও তাদের নিজেদের মতন করে অনেক কিছুই ভাবে, কিন্তু বাবা যে কর্ম-কর্তব্যের উদ্দেশ্যে এসেছেন তা তো করবেনই, ঠিক যেমনটি নিহিত রয়েছে অবিনাশী ড্রামায়। যা ড্রামা অনুসারে এক-চুলও এদিক-ওদিক হয় না। কল্প পূর্বে যারা যতখানি জ্ঞানের পাঠ নিয়েছিল, তারা ততটাই নেবে। প্রত্যেকেরই চাল-চলনের সাক্ষাৎকারও হতে থাকবে। দেখেই বোঝা যায় কে কেমন পড়ছে এবং কি ধরণের পদের-প্রাপ্তি হতে পারে তার। খুব সুন্দর সেবা-কার্য করতে করতে দুর্ঘটনায় মারা গেলে, খুব ভাল বংশে জন্ম হয় তার। খুব সুখেই থাকবে সে। অন্যদেরকে যত সুখ ও খুশী বিলিয়েছে, তা সবই পাবে সে। অর্জিত পুণ্য কখনও বিফলে যায় না। সত্যযুগে যে যেমন কর্ম করে জিতবে, তার তেমন ঘরেই জন্ম হবে। অনেককে খুশী করে থাকলে এমন ঘরে জন্ম হবে যেখানে সোনার চামচ মুখে পাবে। এর পরের ধাপে যারা-তাদের জন্য রূপার চামচ, তার পরের ধাপের জন্য পীতলের চামচ। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো। তুমি যেমন যোগী সেই হিসাবে রাজা, রাণী, প্রজা ইত্যাদি ইত্যাদি নানান রকমের হবে। মনোযোগ সহকারে পঠন-পাঠন না করলে, দৈবী-গুণ ধারণ না করলে পদের প্রাপ্তি কম তো হবেই। তোমার ভাল বা খারাপ কাজের ফল তো তুমিই পাবে। প্রত্যেকের আত্মাই তা উপলব্ধি করতে পারে, কে কেমন সেবা করছো। এই মুহূর্তেই যদি আত্মা তোমার শরীর ছেড়ে বেরিয়ে আসে, তবেই বা কেমন পদ পেতে পারো, তাও অনুভব করে তোমার আত্মা। তাই তো তোমরা এই জ্ঞানের পাঠ পড়ে নিজেদেরকে যথাযথ সংশোধন করার সুযোগ পাচ্ছো। কেউ কেউ আবার অবহেলায় তা নষ্ট করে বলতে থাকে ভাগ্যে যা আছে তাই তো হবে। যা নেই তার জন্য বৃথা চেষ্টা কেন। বাবা তোমাদের কত উন্নত করে গড়ে তুলছেন। এ ঠিক তেমনই, ভগবানের কাছে এসে কেউই যেমন খালি হাতে ফেরে না। সেই ভগবান স্বয়ং এখন বি.কে.-দের সামনে উপস্থিত। কারওকে মাত্র দুটি শব্দ শোনালেও, নিদেনপক্ষে প্রজাতে অবশ্যই স্থান হবে তার। আর যারা দেবী-দেবতা ধর্মের হবে, তারা তো দৌড়ে দৌড়ে আসতেই থাকবে। যারা পতিত তারাই নিজেদেরকে হিন্দু বলে পরিচয় দেবে। তোমাদের মন-বুদ্ধিতেও যেন এমনই ভাব থাকে যে, তোমরা বাবার (ভগবানের) কাছেই বসে আছো। বাবা যে জ্ঞানের-সাগর। একমাত্র উনিই সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে সৃষ্টির হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি বলতে পারেন, কিভাবে তার পুনরাবৃত্তি হয়।



টিচার কিন্তু স্টুডেন্ট-এর পড়ার ধরণ দেখেই বুঝতে পারেন, সে কত নম্বর পেয়ে পাশ করবে। প্রত্যেকেই নিজেরাও তা বুঝতে পারে। কেউ যেমন দৈবী-গুণ ধারণে কাঁচা, কেউ আবার যোগবলে, কেউ বা আবার জ্ঞানে কাঁচা থাকে। আর কাঁচা থাকলে তো পাশ করতে পারবে না। তবে তা বলে এমন নয় যে, আজ কাঁচা বলে আগামীতে পাক্কা-বাচ্চা হতে পারবে না। যে চাইবে সে লাফিয়ে লাফিয়েও (গ্যালপ করে) এগিয়ে যেতে পারে। সে নিজে থেকেই বুঝতে পারে আমি অমুক অমুক ক্ষেত্রে ফেল হতে পারি, অমুকে আমার থেকেও অনেক এগিয়ে, তখন সে তা শুধরে নিয়ে সেও এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দেহ-অভিমানে থাকলে সে কিছুই শিখতে পারবে না। আমি আত্মা এই ধারণায় একেবারে পাক্কা হতে হবে। সেই স্মৃতিই তো বাবা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তাই বাবা আবারও সেই একই কথা বলছেন-"আমাকে স্মরণ দ্বারা, তোমাদের বিকর্মগুলিকে বিনাশ করে দৈবীগুণগুলি ধারণ করো। নিজেরাই নিজেদের নাড়ী ধরে বুঝতে পারবে, কে কতটা কিসের উপযুক্ত হতে পেরেছো। বাচ্চারা, সৃষ্টিচক্রের আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান তোমরা পাচ্ছ।" রাজযোগের এই জ্ঞান একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই তা শেখাতে পারে না। সেইমতন বাচ্চারাও তা শিখছে। কোনও কোনও বাচ্চা বাবার কাছে জানতে চায়, এই ঈশ্বরীয় কুলে ব্রাহ্মণের সংখ্যা কত ? কিভাবে তার হিসেব পাবো। যেহেতু আসা-যাওয়া তো চলতেই থাকে। নতুনেরা অনেকে এসেই আবার চলেও যায়। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা ও সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. নিজের চরিত্রকে দৈব্যতা সম্পন্ন বানাও। দৈবী-গুণ ধারণ করে নিজের ও সকলের কল্যাণ করতে হবে। সবাইকে সুখ দিতে হবে।

২. সতোপ্রধান হওয়ার লক্ষ্যে বুদ্ধির যোগ একমাত্র বাবার সাথেই রাখতে হবে। বুদ্ধি যেন এদিক-ওদিক না যায়। বাবার সমান টিচার হয়ে সবাইকে সঠিক দিশা জানাতে হবে।

বরদান:-

খুশীর সম্পদে সম্পন্ন হয়ে দুঃখী আত্মাদেরকে খুশীর দান দিয়ে পুণ্য-আত্মা ভব |

এই সময় দুনিয়াতে চিরন্তন দুঃখ বিরাজমান কিন্তু বি.কে.-দের কাছে রয়েছে চিরন্তন খুশী । অতএব, দুঃখী আত্মাদেরকে খুশী দেওয়া - এটাই বড় পুণ্যের কাজ। লোকেরা তো খুশীর জন্য কত সময়, সম্পত্তি ইত্যাদি খরচ করে কিন্তু তোমরা তো অবিনাশী খুশীর খনি পেয়েছো। অতএব যা পেয়েছ অন্যদের তা বিতরণ করতে থাক। যত বিতরণ করবে ততই বাড়বে। তোমার সামনে যে-ই আসবে, সে যেন অনুভব করে, এনার নিশ্চয়ই এমন কোনও শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি হয়েছে যে কারণে তিনি এত খুশী ।

স্লোগান:-

অনুভবী আত্মা কখনও কোনও কথায় ধোকা খায় না, সে সদা বিজয়ী থাকে।