২৮-১০-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -- বিশ্বের রাজত্ব বাহুবলের দ্বারা প্রাপ্ত করতে পারা যায় না, তারজন্য যোগবল চাই, এটাই নিয়ম বা আইন"
প্রশ্ন:-
শিববাবা নিজেই নিজের উপরে কি বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ?
উত্তর:-
বাবা বলেন - দেখো, কেমন বিস্ময় -- আমি তোমাদের পড়াই, অথচ এই আমি কারোর কাছে কখনো পড়িনি। আমার কোনো পিতা নেই, আমার কোনো টিচার নেই, গুরু নেই। আমি সৃষ্টি-চক্রে পুনর্জন্ম নিই না তথাপি তোমাদেরকে সব জন্মের কাহিনী শোনাই। আমি স্বয়ং ৮৪-র চক্রতে আসি না কিন্তু তোমাদেরকে সম্পূর্ণ সঠিকভাবে চক্রের জ্ঞান প্রদান করি।
ওম শান্তি।
বাচ্চারা, আত্মা-রূপী পিতা তোমাদের স্বদর্শন-চক্রধারী বানান অর্থাৎ তোমরা এই ৮৪-র চক্রকে জেনে যাও। পূর্বে জানতে না। এখন বাবার থেকে তোমরা জেনেছ। ৮৪ জন্মের চক্রে তোমরা অবশ্যই আসো। বাচ্চারা, আমি তোমাদেরকে ৮৪-র চক্রের নলেজ দিই। আমি স্বদর্শন-চক্রধারী, কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি ৮৪ জন্মের চক্রতে আসি না। তাই এতেই বুঝে যাওয়া উচিত যে, সম্পূর্ণ জ্ঞান শিববাবার কাছে রয়েছে। তোমরা জানো যে, আমরা ব্রাহ্মণরাই এখন স্বদর্শন-চক্রধারী, বাবা নন। তাহলে তাঁর মধ্যে এই অনুভব কোথা থেকে এলো ? আমরা তো অনুভব প্রাপ্ত করি, বাবা কোথা থেকে অনুভব করেন যে আমাদের শোনান ? প্র্যাকটিক্যাল অনুভব হওয়া উচিত, তাই না। বাবা বলেন, আমাকে জ্ঞানের সাগর বলা হয়, কিন্তু আমি তো ৮৪ জন্মের চক্রতে আসি না। তাহলে আমার মধ্যে এই জ্ঞান এল কোথা থেকে। টিচার যদি পড়ায় তবে অবশ্যই স্বয়ং সে তা পড়েছে, তাই না। শিববাবা এসব কীভাবে পড়েছে ? উনি কীভাবে ৮৪-র চক্রকে জেনেছেন, যখন তিনি স্বয়ং ৮৪ জন্মে আসেন না। বীজ-স্বরূপ হওয়ার কারণে বাবা সব জানেন। স্বয়ং ৮৪-র চক্রতে আসেন না। কিন্তু তোমাদের সবকিছু বোঝান, এও কত বিস্ময়কর। এমনও নয় যে, বাবা কোন শাস্ত্রাদি পড়েছেন। বলা হয় যে, ড্রামানুসারে তাঁর মধ্যে এই জ্ঞান ভরা রয়েছে, যা তিনি তোমাদের শোনান। তাই তিনি ওয়ান্ডারফুল টিচার, তাই না। বিস্ময় জাগা উচিত, তাই না। সেইজন্য তাঁর বড়-বড় নাম দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বর, প্রভু, অন্তর্যামী ইত্যাদি ইত্যাদি। তোমরা আশ্চর্য হয়ে যাও যে, ঈশ্বর কীভাবে সম্পূর্ণ এই জ্ঞানে ভরপুর হয়ে রয়েছেন । ওঁনার মধ্যে এই জ্ঞান এল কোথা থেকে, যা তিনি তোমাদেরকে বোঝান ? ওঁনার তো বাবা নেই, যার থেকে তাঁর জন্ম হয়েছে বা তিনি জ্ঞান প্রাপ্ত করেছেন। তোমরা সকলে হলে ভাই-ভাই। এক তিনিই তোমাদেরকে কেমন পিতা -- তিনি হলেন বীজ-স্বরূপ। কত নলেজ বাচ্চাদের শোনান। তিনি বলেন, ৮৪ জন্ম আমি নিই না, তোমরা নাও। তাহলে তো অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে, তাই না যে -- বাবা, তুমি কীভাবে জেনেছ। বাবা বলেন -- বাছা! অনাদি ড্রামানুসারে আমার মধ্যে প্রথম থেকেই সেই নলেজ রয়েছে যা তোমাদেরকে পড়াই, সেইজন্যই আমাকে সর্বোচ্চ ভগবান বলা হয়। স্বয়ং চক্রতে আসেন না কিন্তু ওঁনার মধ্যে সমগ্র সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান নিহিত রয়েছে। বাচ্চারা, তাই তোমাদের কত খুশী হওয়া উচিত। তিনি ৮৪ চক্রের নলেজ কোথা থেকে পেয়েছেন ? তোমরা তো বাবার থেকে পেয়েছ। সত্যিকারের জ্ঞান বাবার কাছেই রয়েছে। ওঁনাকে বলা-ই হয় নলেজফুল। তিনি কারোর কাছ থেকে পড়েনও নি। তাও তিনি সত্যি-সত্যিই (জ্ঞান) জানেন, তাই তাঁকে নলেজফুল বলা হয়। এ অতি বিস্ময়কর, তাই না, সেইজন্য একে সর্বোচ্চ জ্ঞান বা পড়া বলা হয়। বাবার উপর বাচ্চারা বিস্ময় প্রকাশ করে। ওঁনাকে কেন নলেজফুল বলা হয় -- এক হলো এ বোঝার মতন বিষয় আর অন্য কি বিষয় আছে ? এই যে চিত্র তোমরা দেখাও তখন কেউ-কেউ জিজ্ঞাসা করবে যে, ব্রহ্মার মধ্যেও নিজ আত্মা রয়েছে আর ইনি যখন নারায়ণ হবেন, তখন ওঁনার মধ্যেও নিজ আত্মা (নারায়ণের) থাকবে। দুটি আত্মা, তাই না। এক ব্রহ্মার, এক নারায়ণের আত্মা। কিন্তু বিচার করলে দেখবে, এই দুটি পৃথক আত্মা নয়। আত্মা একই। এ এক দেবতার উদাহরণ দেখান হয়েছে। ইনিই ব্রহ্মা তথা বিষ্ণু অর্থাৎ নারায়ণ হন, একেই বলা হয় রহস্যময় গুপ্ত কথা। বাবা অতি রহস্যময় জ্ঞান শোনান, যা বাবা ছাড়া আর কেউই শোনাতে পারে না। তাই ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর দুটি পৃথক আত্মা হয় না। ঠিক তেমনই সরস্বতী আর লক্ষ্মী -- এই দুজনেরই আত্মা দুটি না একটি ? আত্মা এক, শরীর দুটি। এই সরস্বতীই পুনরায় লক্ষ্মী হন, তাই আত্মা একটাই গোনা হবে। ৮৪ জন্ম এক আত্মাই নেয়। এ অতি বুঝবার মতো বিষয়। ব্রাহ্মণ তথা দেবতা, দেবতা তথা ক্ষত্রিয় হয়। আত্মা এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করে। আত্মা একই, এ এক উদাহরণ দেখান হয় -- কীভাবে ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা হয়। আমরা তথা..... তথা আমরা-র অর্থ কত সঠিক। এগুলোকে বলা হয় রহস্যময় গুপ্ত কথা। সর্বপ্রথমে একথা বোঝা উচিত যে, আমরা হলাম এক পিতার সন্তান। আসলে সব আত্মারাই পরমধাম নিবাসী। এখানে নিজ ভূমিকা পালন করতে এসেছে। এ হলো এক খেলা। বাবা আমাদের এই খেলার খবর শোনান। বাবা সত্য-সত্যই সবকিছু জানেন। ওঁনাকে কেউ শেখায়নি। এই ৮৪-র চক্রকে সে-ই জানেন যিনি এইসময় আমাদের শোনাচ্ছেন। পুনরায় তোমরা ভুলে যাও। তাহলে এর শাস্ত্র কীভাবে তৈরী হতে পারে। বাবার কোন শাস্ত্র পড়া নেই, তবে তিনি এসে কীভাবে নতুন-নতুন কথা শোনান, আধাকল্প হলো ভক্তিমার্গ। এই কথা শাস্ত্রতেও নেই। ড্রামানুসারে এই শাস্ত্রও ভক্তিমার্গে রচিত হয়েছে। তোমাদের বুদ্ধিতে ড্রামার আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কত বড় নলেজ (ভরা) রয়েছে। ওঁনাকে অবশ্যই মানবশরীরের আধার নিতে হবে। শিববাবা এই ব্রহ্মার শরীরে বসে এই সৃষ্টিচক্রের জ্ঞান শোনান। মানুষ তো গল্প-কাহিনী বানিয়ে সৃষ্টির আয়ুই কত লম্বা করে দিয়েছে। নতুন দুনিয়াই পরে পুরানো দুনিয়া হয়। নতুন দুনিয়াকে বলা হয় স্বর্গ, পুরানোকে বলে নরক। দুনিয়া তো সেই একই রয়েছে। নতুন দুনিয়ায় থাকে দেবী-দেবতারা, ওখানে অপার সুখ। সমগ্র সৃষ্টি নতুন হয়ে যায়, এখন একে পুরানো বলা হয়। নাম-ই হলো আয়রণ এজে'ড ওয়ার্ল্ড। যেমন নতুন দিল্লী আর পুরানো দিল্লী বলা হয়। বাবা বোঝান, মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা নতুন দুনিয়ায় নতুন দিল্লী হবে। এরা তো পুরানো দুনিয়াতেই নতুন দিল্লী রয়েছে বলে। একে নতুন দিল্লী কীভাবে বলবে! বাবা বোঝান, নতুন দুনিয়ায় নতুন দিল্লী হবে। সেখানে এই লক্ষ্মী-নারায়ণ রাজত্ব করবে। তাকে বলা হবে সত্যযুগ। তোমরা এই সমগ্র ভারতেই রাজত্ব করবে। তোমাদের সিংহাসন (রাজধানী) যমুনার তীরেই হবে। পরবর্তীকালে রাবণ-রাজ্যেও সিংহাসন এখানেই রয়েছে। রাম-রাজ্যের রাজগদিও এখানেই হবে। নাম দিল্লী হবে না। তাকে পরিস্থান বলা হয়। পুনরায় যে যেমন রাজা হবে সে তেমনই নিজের রাজ্যের নাম রাখবে। এখন তোমরা সকলেই পুরানো দুনিয়ায় রয়েছ। নতুন দুনিয়ায় যাওয়ার জন্য এখন তোমরা পড়ছ। পুনরায় মানুষ থেকে দেবতা হচ্ছো। যিনি পড়ান তিনিই তোমাদের পিতা।
তোমরা জানো যে, সর্বোচ্চ পিতা নীচে নেমে এসে (এই ধরিত্রীতে) রাজযোগ শেখান। তোমরা সঙ্গমে রয়েছো, যখন কলিযুগী পুরানো দুনিয়া সমাপ্তির পথে। বাবা এর হিসেবও বলে দিয়েছেন, আমি আসি ব্রহ্মার শরীরে। মানুষ জানে না যে, ব্রহ্মা কে ? শুধু শুনেছে প্রজাপিতা ব্রহ্মা। তোমরা তো ব্রহ্মার প্রজা, তাই না, সেইজন্য নিজেদের বি.কে. বল। বাস্তবে যখন তোমরা নিরাকার আত্মা তখন শিববাবার সন্তান শিব-বংশীয়, পুনরায় সাকারীরূপে যখন প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তান তখন পরস্পরের ভাই-বোন তখন অন্য আর কোন সম্বন্ধ নেই। এইসময় তোমরা সেই কলিযুগীয় সম্বন্ধকে ভুলে যাও কারণ তাতে বন্ধন রয়েছে। তোমরা চলে যাও নতুন দুনিয়ায়। ব্রাহ্মণদের কেশ-শিখা (টিকি) থাকে। কেশ-শিখা হলো ব্রাহ্মণদের প্রতীক বা চিহ্ন। এটাই হলো তোমাদের অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের কুল। ওরা হলো কলিযুগী ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণরা বেশীরভাগই পান্ডা হয়। একপ্রকারের ব্রাহ্মণ ভোগ অর্পণ (পুজো) করে, আরেকপ্রকারের ব্রাহ্মণ গীতা পাঠ করে শোনায়। তোমরা অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা এখন এই গীতা শোনাও। ওরাও গীতা পাঠ করে শোনায়, তোমরাও গীতা শোনাও, দেখ কত পার্থক্য! তোমরা বল যে, কৃষ্ণকে ভগবান বলা যায় না। কৃষ্ণকে তো দেবতা বলা হয়। ওঁনার মধ্যে দৈব-গুণ রয়েছে। ওঁনাকে তো এই (স্থূল) চোখের দ্বারা দেখতে পারা যায়। শিবের মন্দিরে দেখবে যে, শিবের নিজস্ব শরীর নেই। তিনি হলেন পরম আত্মা অর্থাৎ পরমাত্মা। ঈশ্বর, প্রভু, ভগবান ইত্যাদি শব্দের কোন অর্থ হয় না। পরমাত্মাই সুপ্রীম আত্মা। তোমরা সুপ্রীম নও। তোমাদের আত্মা আর সেই আত্মার মধ্যে পার্থক্য দেখ কত। তোমরা অর্থাৎ আত্মারা এখন পরমাত্মার কাছ থেকে শিখছ। উনি কারোর কাছ থেকে শেখেন নি। উনি তো পিতা, তাই না। সেই পরমপিতা পরমাত্মাকে তোমরা পিতাও বল, শিক্ষকও বল আর গুরুও বল। হলেন কিন্তু তিনি একই। আর কোন আত্মা বাবা, টিচার, গুরু হতে পারে না। পরমাত্মা একজনই, ওঁনাকে বলা হয় সুপ্রীম। প্রত্যেকেরই প্রথমে পিতার প্রয়োজন, তারপর টিচার চাই, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হয় গুরুর। বাবাও বলেন -- আমি তোমাদের বাবাও হই, টিচারও হই আর পরে আমিই তোমাদের সদ্গতিদাতা সত্গুরু হই। সদ্গতি প্রদান করা গুরু হলেন একজনই। বাকি গুরু তো হয় অনেক। বাবা বলেন, আমি তোমাদের সকলকে সদ্গতি প্রদান করি, তোমরা সকলেই সত্যযুগে যাবে, বাকিরা সকলে চলে যাবে শান্তিধামে, যাকে পরমধাম বলা হয়। সত্যযুগে আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম ছিল। বাকি আর কোন ধর্ম থাকে না আর সব আত্মারা চলে যায় মুক্তিধামে। সদ্গতি বলা হয় সত্যযুগকে, (নিজ) ভূমিকা পালন করতে-করতে পরে দুর্গতিতে চলে আসে। তোমরাই সদ্গতি থেকে পুনরায় দুর্গতিতে আসো। তোমরাই ৮৪ জন্ম নাও। সেইসময় যেমন রাজা-রানী তেমনই প্রজা হবে। ৯ লক্ষ প্রথমে আসবে। ৮৪ জন্ম তো ৯ লক্ষই(দেবী-দেবতা) নেবে, তাই না। পুনরায় অন্যরা আসতে থাকবে -- এভাবেই হিসাব করা হয়, যা বাবা বোঝান। সকলেই ৮৪ জন্ম নেয় না, সর্বপ্রথম যারা আসে তারাই ৮৪ জন্ম নেয় তারপর থেকে (জন্মের সংখ্যা) হ্রাস পেতে থাকে। অধিকতম ৮৪ জন্ম, এসব কথা আর কোন মানুষ জানে না। বাবা-ই বসে বোঝান। গীতায় ভগবানুবাচ রয়েছে। এখন তোমরা বুঝে গেছ -- আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম কৃষ্ণ রচনা করেনি। এ তো বাবা-ই স্থাপন করেন। কৃষ্ণের আত্মা ৮৪ জন্মের শেষে এই জ্ঞান শুনেছে, যিনি পরে প্রথম স্থানে চলে আসেন। এ বোঝার মতন বিষয়। প্রত্যহ পড়তে হবে, তোমরা হলে ভগবানের স্টুডেন্ট। ভগবানুবাচ তো, তাই না। আমি তোমাদের রাজার-রাজা বানিয়ে দিই। এ হলো পুরানো দুনিয়া, নতুন দুনিয়া মানে সত্যযুগ। এখন হলো কলিযুগ। বাবা এসে কলিযুগী পতিত থেকে সত্যযুগী দেবতায় পরিণত করেন, তাই কলিযুগী মানুষ ডাকে -- বাবা, এসে আমাদের পবিত্র কর। কলিযুগীয় পতিত থেকে সত্যযুগীয় পবিত্র বানাও। পার্থক্য দেখ কত। কলিযুগে অপার দুঃখ। বাচ্চার জন্ম হয়েছে, সুখ প্রাপ্ত করেছে, কাল মারা গেলে তখন দুঃখী হয়ে যাবে। সারাজীবন কত দুঃখ পায় এটা হলো দুঃখের দুনিয়া। এখন বাবা সুখের দুনিয়া স্থাপন করছেন। তোমাদের স্বর্গবাসী দেবতায় পরিনত করেন। এখন তোমরা পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে রয়েছ। সর্বোত্তম পুরুষ বা নারী হও। তোমরা এখানে আসোই এমন লক্ষ্মী-নারায়ণ হওয়ার জন্য। স্টুডেন্ট টিচারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে কারণ তারা মনে এনার সাহায্যেই আমরা পড়াশোনা করে অমুক হব। এখানে তোমরা যোগসূত্র স্থাপন কর পরমপিতা পরমাত্মা শিবের সঙ্গে, যিনি তোমাদের দেবতায় পরিনত করেন। তিনি বলেন, আমাকে অর্থাৎ নিজের পিতাকে স্মরণ কর, তোমরা যাঁর শালিগ্রাম-রূপী সন্তান। তিনিই নলেজফুল তাই নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে বাবাকে স্মরণ কর। বাবা তোমাদের সত্যিকারের গীতা শোনান কিন্তু তিনি স্বয়ং পড়েন নি। তিনি বলেন, আমি কারোর সন্তান নই, কারোর কাছে পড়িনি। আমার কোন গুরু নেই। বাচ্চারা, আমি তোমাদের পিতা, শিক্ষক, গুরু। ওঁনাকেই বলা হয় পরম আত্মা। সমগ্র এই সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তকে তিনি জানেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি না শোনাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আদি, মধ্য, অন্তকে জানতে পারো না। এই চক্রকে জানার ফলে তোমরা চক্রবর্তী রাজা হয়ে যাও। তোমাদের এই বাবা (ব্রহ্মা) পড়ান না, এঁনার মধ্যে শিববাবা প্রবেশ করে আত্মাদের পড়ায়। এ তো নতুন কথা, তাই না। এ সঙ্গমযুগেই হয়। পুরানো দুনিয়া সমাপ্ত হয়ে যাবে, কারোর সবকিছু মাটিতে চাপা পড়ে যাবে, কারোর ধন সম্পদ রাজা নিয়ে নেবে । বাবা বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেকের কল্যাণার্থে, পুনরায় দেবতা বানানোর জন্য এমন পাঠশালা, মিউজিয়াম খোলো। যেখানে অনেকে এসে সুখের উত্তরাধিকার (বর্সা) প্রাপ্ত করবে। এখন তো রাবণ-রাজ্য, তাই না। রাম-রাজ্যে ছিল সুখ, রাবণ-রাজ্যে দুঃখ কারণ সকলেই বিকারী হয়ে গেছে। ওটা হলোই নির্বিকারী দুনিয়া। এই লক্ষ্মী-নারায়ণ ইত্যাদিদেরও তো সন্তান থাকে, তাই না। কিন্তু ওখানে হলো যোগবল। বাবা তোমাদের যোগবল শেখান। যোগবলের দ্বারা তোমরা বিশ্বের মালিক হয়ে যাও, বাহুবলের দ্বারা কেউ (বিশ্বের) মালিক হতে পারে না। আইন একথা বলে না। বাচ্চারা, তোমরা স্মরণের শক্তি দ্বারা সমগ্র বিশ্বের রাজত্ব নিচ্ছ। এই পড়া কত উচ্চ। বাবা বলেন -- সর্বপ্রথমে পবিত্রতার প্রতিজ্ঞা কর। পবিত্র হলেই তোমরা পবিত্র দুনিয়ার মালিক হয়ে যাবে। *আচ্ছা!*
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. কলিযুগী সম্বন্ধ, যা কিনা এই সময় বন্ধন, সেসব ভুলে নিজেকে সঙ্গমযুগী ব্রাহ্মণ মনে করতে হবে। সত্যিকারের গীতা শুনতে এবং শোনাতে হবে।
২. পুরানো দুনিয়া সমাপ্ত হয়ে যাবে, তাই নিজের সর্বকিছু সফল করে নিতে হবে। অনেকের কল্যাণার্থে, মানুষকে দেবতা বানানোর জন্য এমন পাঠশালা বা মিউজিয়াম খুলতে হবে।
বরদান:-
দৃঢ় সঙ্কল্পের অগ্নি-শলাকার(দেশলাই কাঠি) দ্বারা আত্মা-রূপী বোমার আতশবাজি প্রজ্জ্বলিত করা সদা বিজয়ী ভব
আজকাল আতশবাজির মধ্যে বোমাও(শব্দবাজি) বানানো হয়ে থাকে। কিন্তু তোমরা দৃঢ় সঙ্কল্পের দেশলাই কাঠির দ্বারা আত্মা-রূপী বোমার আতশবাজি জ্বালাও, যাতে পুরানো সবকিছু (শরীর সম্বন্ধীয়) সমাপ্ত হয়ে যায়। অজ্ঞান লোকেরা আতশবাজির পিছনে পয়সা নষ্ট করে, আর তোমরা তোমাদের উপার্জন জমা কর। ওইসব হলো আতশবাজি আর তোমাদের হলো উড়তীকলার (হাওয়াই) বাজি। তাতে তোমরা বিজয়ী হয়ে যাও। তাই দ্বিগুণ লাভ কর। জ্বালাতেও থাকো, উপার্জনও কর -- এই বিধি গ্রহণ কর।
স্লোগান:-
কোনো বিশেষকার্যে সহায়তা প্রদান করাই হলো আশীর্ব্বাদ বা শুভকামনা প্রাপ্ত করে ঊর্ধ্বে ওঠা (উন্নতির শিখরে)।