১৬-০৬-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ১২-১২-৮৪ মধুবন


"বিশেষ আত্মাদের কর্তব্য"

আজ দিলারাম বাবা তাঁর চিত্তানন্দ বাচ্চাদের সাথে মিলিত হতে এসেছেন l সারা বিশ্বে তোমরা বাচ্চারাই সদা আনন্দচিত্ত l বাকি আর সবাই কখনো না কখনো কোনো না কোনো ব্যাপারে মনোদুঃখে দুঃখী l এইরকম হৃদয়-বেদনা হরণকারী দুখঃহর্তা সুখদাতা বাবার সুখস্বরূপ বাচ্চা তোমরা l আর অন্যদের হৃদয় থেকে মর্মান্তিক যন্ত্রণার 'হায় হায়' শব্দ নির্গত হয় l সেক্ষেত্রে, তোমরা চিত্তানন্দ বাচ্চাদের হৃদয় থেকে 'বাহ্ বাহ্' আওয়াজ ধ্বনিত হয় l যেমন স্থূল শরীরের আওয়াজ বিভিন্ন রকমের হয়, একইভাবে আজকের মানব আত্মাদের মনের যন্ত্রণাও অনেক রকম হয় l কখনো দেহের কর্মভোগের যন্ত্রণা, কখনো সম্বন্ধ- সম্পর্কে দুঃখী হওয়ার যন্ত্রণা, কখনো অনেক ধনাগমে বা ধন হ্রাস হয়ে যাওয়া, উভয় ক্ষেত্রেই চিন্তার মানসিক যন্ত্রণা, আবার কখনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে প্রাপ্ত দুঃখের মর্মপীড়া l এইভাবে এক যন্ত্রণা থেকে অনেক যন্ত্রণা জন্মাতে থাকে l সারা বিশ্বই দুঃখ কষ্টে চিৎকার করছে l এমন সময়ে তোমরা সব সুখদায়ী, সুখস্বরূপ বাচ্চার কর্তব্য কি ? জন্ম -জন্মান্তরের দুঃখ-কষ্টের ঋণ থেকে সবাইকে রেহাই দাও l এই পুরানো ঋণ দুঃখ-কষ্টের ব্যাধি হয়ে গেছে l এইরকম সময়ে তোমাদের সকলের কর্তব্য দাতা হয়ে যে আত্মার যে রকম ঋণের ব্যাধি আছে, সেই আত্মাকে যা তার খামতি সেটা প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ কর l যেমন শারীরিক কর্মভোগে দুঃখ-বেদনায় থাকা আত্মা কর্মযোগী হয়ে কর্মযোগ দ্বারা কর্মভোগ সমাপ্ত করতে পারে, এইরকম কর্মযোগী হওয়ার জন্য তাদেরকে শক্তির প্রাপ্তির মহাদান দাও l তাদেরকে এটা বরদান হিসেবে দাও কারণ তারা ঋণগ্রস্ত অর্থাৎ শক্তিহীন, শূন্য l এইরকম আত্মাদের তোমার কর্মযোগের শক্তির ভাগ দাও l তোমাদের জমাখাতা থেকে কিছু না কিছু দিয়ে তাদের হিসেবের খাতায় জমা কর, তবেই তারা ঋণের ব্যাধি থেকে নিস্তার পাবে l এত সময় ধরে বাবার ডিরেক্ট উত্তরাধিকারী হয়ে সর্বশক্তির উত্তরাধিকার হিসেবে যা জমা করেছ, সেই জমাখাতা থেকে উদার চিত্তে দান কর, তবেই তোমরা তাদের মানসিক যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে পারবে l অন্তিম সময় যেমন কাছে চলে আসছে, সেই অনুপাতে সকল আত্মার ভক্তির শক্তিও সমাপ্ত হয়ে যাচ্ছে l দ্বাপরযুগে অন্ততপক্ষে রজঃগুণী আত্মাদের মধ্যে তবুও দান-পুণ্য, ভক্তির শক্তি ছিল, যা তাদের জমাখাতায় সঞ্চিত ছিল l সেইজন্য তাদের আত্মাদের জীবন ধারণের জন্য কিছু না কিছু শান্তির সাধন ছিল, কিন্তু এখন তমোগুণী আত্মারা, এই অল্প সময়ের সাময়িক সুখের আত্মার জীবন ধারণের জন্য সাময়িক সুখের সাধন থেকে তমোগুণী আত্মারা শূন্য হয়ে গেছে অর্থাৎ ভক্তির ফলও খেয়ে ফেলায় তারা খালি হয়ে গেছে l ভক্তি এখন শুধুই নামে মাত্র l ফলদায়ক ভক্তি নেই l ভক্তি-বৃক্ষ এখন পূর্ণরূপে বিস্তার লাভ করেছে l বৃক্ষের রঙ-বেরঙের সৌন্দর্য অবশ্যই আছে, কিন্তু শক্তিহীন হওয়ার কারণে ফল লাভ হয় না l যেভাবে স্থূল বৃক্ষ যখন পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়, পুরোপুরি জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছায়, তখন আর ফলদায়ক হতে পারে না, কিন্তু ছায়া দিতে পারে l ঠিক একইভাবে, ভক্তি-বৃক্ষ তাদের চিত্ত খুশি করার ছায়া অবশ্যই দিচ্ছে l আমরা গুরু করেছি, মুক্তি পেয়ে যাব l তীর্থযাত্রা দান-পুণ্য করেছি, প্রাপ্তিলাভ হবে- অন্তরকে খুশি করার সান্ত্বনার এই ছায়া এখন থেকে গেছে l "যদি এখন না হয়, তবে কোনো না কোনো সময় পেয়েই যাব", বেচারা ভোলা ভক্তরা এই ছায়ায় আরাম করছে, কিন্তু তাদের কোন ফল নেই, সেইজন্য আত্মার জীবন ধারণের হিসেবের খাতা সকলেরই শূন্য l সুতরাং এইরকম সময়ে তোমরা সব ভরপুর আত্মার কর্তব্য হলো তোমাদের নিজেদের জমাখাতার অংশ থেকে এমন আত্মাদের সাহস আর উৎসাহ দাও l তুমি কি জমা করেছ নাকি নিজের জন্য শুধু অর্জন করেছ আর খেয়েছ ? যদি শুধু অর্জন করেছ আর খেয়েছ তো সেটা রাজযোগী হওয়া বলা হবে না l স্বরাজ্য অধিকারী হওয়া বলা হবে না l রাজার ভান্ডার সদা পরিপূর্ণ থাকে l প্রজা প্রতিপালনের দায়িত্ব রাজার ওপরে ন্যস্ত l স্বরাজ্য অধিকারী অর্থাৎ সর্ব খাজানা (ভান্ডার) পরিপূর্ণ l যদি ভান্ডার পরিপূর্ণ না হয় তবে এখনও প্রজা যোগী, রাজযোগী নও l প্রজা শুধু উপার্জন করে আর খায় l বিত্তবান (সাহুকার) প্রজারা যা পুঞ্জীভূত করে, তার থেকে অল্প বিস্তর রেখে দেয়, কিন্তু রাজা ভান্ডারের মালিক l সুতরাং রাজযোগী অর্থাৎ স্বরাজ্য অধিকারী আত্মা, যার কোনও ভান্ডারের জমার খাতা শূন্য হয় না l অতএব, নিজেকে চেক কর, ধনভান্ডার পরিপূর্ণ কিনা ! দাতার বাচ্চারা সবাইকে দিতে চাওয়ার অনুভব কর নাকি নিজেকে নিয়েই মেতে আছ ? স্ব-পালনেই সময় কেটে যায় নাকি অন্যদের ভরণপোষণের জন্য সময় আর ভান্ডার পরিপূর্ণ আছে l এখানে সঙ্গমযুগ থেকে যাদের আধ্যাত্মিক পুষ্টিসাধন কর্মের সংস্কার আছে, তারাই ভবিষ্যৎ প্রজাপালক বিশ্ব রাজন হতে পারে l রাজা বা প্রজা হওয়ার স্ট্যাম্প এখানেই প্রযুক্ত হয় l স্টেটাস সেখানে লাভ হয় l যদি এখানের স্ট্যাম্প প্রযুক্ত না হয় তবে সেখানে স্ট্যাটাস নেই l সঙ্গমযুগ স্ট্যাম্প অফিস l বাবা এবং ব্রাহ্মণ পরিবার দ্বারা স্ট্যাম্প গৃহীত হয় অর্থাৎ লাভ হয় l সুতরাং, যত্ন সহকারে নিজেকে পরীক্ষা কর l তোমার স্টক চেক কর l এমন না হয় সেই সময়ে একটা অপ্রাপ্তি তোমার সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা না করে l যখন স্থূল স্টক জমা করে সমস্ত রেশন সংগৃহীত হয় আর তারপরেও যদি ছোট একটা ম্যাচ বক্স (দেশলাই বাক্স) বাকি থেকে যায় তো মুদিখানার সামগ্রী দিয়ে কি করবে ? তোমাদের অগণিত প্রাপ্তি হওয়া সত্ত্বেও একটা অপ্রাপ্তি প্রবঞ্চণা করতে পারে l একইভাবে, একটা জিনিসের অভাব সম্পন্নতার স্ট্যাম্প মুদ্রণের অধিকার লাভ করার ক্ষেত্রে তোমাদের ভুলপথে চালিত করবে l এটা ভেবোনা, স্মরণের শক্তি তো আমার আছে, সুতরাং যদি একটা গুণের অভাব হয়, সেটা কোন ব্যাপার নয় l স্মরণের শক্তি মহান, নাম্বার ওয়ান সেটা ঠিকই আছে, কিন্তু কোনও একটা গুণের অভাবেও কখনো কোন সময়তে ফুল পাসের পরিবর্তে তোমাদের ফেল করিয়ে দেবে l এটা ছোট ব্যাপার নয় l প্রত্যেকটা গুণের মহত্ত্ব আর সম্বন্ধও এক গভীর হিসেব, বাবা অন্য কোন সময়ে এই বিষয়ে তোমাদের শোনাবেন l



তোমরা সব বিশেষ আত্মার কর্তব্য কি, বাবা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন l বুঝেছ তোমরা ? এই সময় তোমরা রাজধানী দিল্লি থেকে এখানে এসেছ, তাই না ! সেইজন্য রাজ্য অধিকারীদের সম্বন্ধে বাবা তোমাদের বলেছেন l রাজধানীতে মহল তোমাদের এমনিই লাভ হবে না ! শক্তি দানের মাধ্যমে পুষ্টিসাধন করে তোমাদের প্রজা তৈরি করতে হবে l যারা দিল্লি থেকে আগত তারা অবশ্যই প্রবল উদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাই না ! তোমরা রাজধানীতে থাকতে চাও, দূরে তো যেতে চাও না, নয় কি ?



গুজরাট থেকে আগতরা এখনও সাথে আছে l সঙ্গমে মধুবনের সাথে তোমরা আছ, সুতরাং রাজ্যেও একসাথে হবে, তাই না ! সাথে থাকার দৃঢ় সঙ্কল্প করেছ তো? তৃতীয় হলো ইন্দোর l ইন-ডোর অর্থাৎ ঘরবাসী l সুতরাং ইন্দোর জোন থেকে আগতরা রাজ্যের ঘরে থাকবে, তাই না ?

এমনকি এখনও তোমরা বাবার হৃদয়-ঘরে থাক l সুতরাং তোমাদের তিনের কাছাকাছি হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মিল আছে l সদা এইভাবেই এই ভাগ্যের রেখা তৈরি করতে থাক আর এটা প্রসারিত করতে থাক l আচ্ছা -



যারা এইরকম সদা সম্পন্ন-ভাবের কর্তব্য সম্পাদন করে, যারা নিজেদের দাতা-ভাবের শ্রেষ্ঠ সংস্কার দ্বারা সকলের কষ্ট মোচন করে, যারা সদা স্বরাজ্য অধিকারী হয়ে আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে, যারা সকল ঐশ্বর্যে ভান্ডার পরিপূর্ণ করে, মাস্টার দাতা বরদাতা এমন রাজযোগী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*পাটিদের সাথে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার-*

১ ) সবাই নিজেকে সাক্ষীভাবের সীটে স্থিত আত্মা অনুভব কর ? সাক্ষীভাবের এই স্থিতি সবচেয়ে মনোরম আর শ্রেষ্ঠ সীট l এই সীটে বসে সবকিছু করতে দেখতে খুব আনন্দ হয় l যেমন সীট ভালো হলে বসতে আনন্দ পাওয়া যায়, নয় কি ? সীট ভালো না হলে বসে আনন্দ নেই l এই সাক্ষীভাবের সীট সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সীট l এই সীটে সদা থাক তোমরা ? দুনিয়াতেও আজকাল সীটের পিছনে তারা দৌড়াদৌড়ি করছে l তোমরা তো কত ভালো সীট লাভ করেছ l কেউ তোমাদের এই সীট থেকে সরাতে পারবে না l তাদের কত ভয়, আজ সীট আছে কিন্তু কাল না-ও থাকতে পারে l তোমাদের সীট অবিনাশী, নির্ভয়ে বসতে পার l তাহলে, তোমরা সাক্ষীভাবের সীটে সদা থাক ? যারা আপসেট তারা সেট হতে পারে না l সদা এই সীটে সেট থাক l এটা এমনই আরামদায়ক সীট যার ওপরে বসে যা দেখতে চাও, যা অনুভব করতে চাও তা' করতে পার l



২) নিজেদের এই সৃষ্টিতে কোটির মধ্যে কিছুসংখ্যক আর কিছু সংখ্যকের মধ্যে এইরকম বিশেষ আত্মা মনে কর ? বলা হয় যে কোটির মধ্যে কতিপয় মাত্র বাবার হয়, সেই কতিপয়ের মধ্যে আমি আছি ! এই খুশি সদা থাকে ? বিশ্বের অনেক আত্মা বাবাকে পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করছে, সেখানে তোমরা পেয়ে গেছ l বাবার হওয়া অর্থাৎ বাবাকে পাওয়া l দুনিয়া তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছে আর তোমরা তাঁর হয়ে গেছ l ভক্তিমার্গ আর জ্ঞানমার্গের মধ্যে অনেক তারতম্য আছে l জ্ঞান হলো পঠন-পাঠন, ভক্তি পঠন-পাঠন নয় ; এটা সাময়িক সময়ের জন্য আধ্যাত্মিক মনোরঞ্জন l কিন্তু সদাকালের প্রাপ্তির সাধন হলো জ্ঞান l সুতরাং সদা এই স্মৃতিতে থেকে অন্যদেরও সমর্থ বানাও l যা তোমাদের খেয়ালে বা স্বপ্নেও ছিল না, তা' তোমরা প্র্যাকটিক্যালি প্রাপ্ত করেছ l বাবা প্রতিটা কোণ থেকে তাঁর বাচ্চাদের গ্রহণ করে নিজের বানিয়েছেন l অতএব, এই খুশিতে থাক l



৩) সবাই নিজেকে একই বাবার, একই মত অনুসরণকারী একরস স্থিতিতে অর্থাৎ একের গভীরে নিমজ্জিত স্থিতিতে নিরন্তর স্থিত থাকার অনুভব কর ? যখন তোমাদের এক বাবা আছেন, দ্বিতীয় কেউই নেই তখন তোমাদের স্থিতি সহজেই একরস স্থিতি (নিমজ্জমান স্থিতি )হয়ে যায় l এইরকম অনুভব হয় ? যখন দ্বিতীয় কেউই নেই তখন তোমাদের বুদ্ধি কোথায় যাবে ? আর কোথাও যাওয়ার মার্জিনই নেই l শুধুই আছেন এক যিনি *একমেবাদ্বিতীয়ম l* যেখানে দু'চারটে ব্যাপার আছে সেখানে সেই সম্পর্কে তোমাদের জন্য ভাবার কিছু মার্জিন আছে l যখন একটাই রাস্তা আছে, তখন কোথায় যাবে তোমরা ? সুতরাং, এখানে, মার্গ দেখানোর সহজ বিধি - এক বাবার হওয়া, এক মতে থাকা, অবিচল স্থিতি এবং একই পরিবার l সুতরাং *এক* স্মরণে রাখ, তবেই ওয়ান নম্বর হয়ে যাবে l একের হিসেব জানতে হবে, শুধু এটুকুই l যেখানেই থাক, কিন্তু একের স্মরণ থাকলে, তোমরা সদা তাঁর সাথে আছ, দূরে নয় l যেখানে বাবার সাহচর্য আছে সেখানে মায়া সাথে থাকবে, এমন হতেই পারে না l মায়া তখনই আসে যখন তোমরা বাবার থেকে সরে যাও l এমনিতে মায়া আসে না l সরেও যেও না, মায়াও আসবে না ! শুধু একেরই মহত্ত্ব l



*অধর কুমারদের সাথে বাপদাদার সাক্ষাৎকার*

সদা প্রবৃত্তিতে থেকে অলৌকিক প্রবৃত্তিতে থাক তোমরা ? সবাই তোমরা গার্হস্থ্য জীবনের ঊর্ধ্বে থেকে, সদা ট্রাস্টি রূপে নিজেদের অনুভব কর ? ট্রাস্টি অর্থাৎ সদা সুখী আর গৃহস্থ অর্থাৎ সদা দুঃখী, তুমি কে ? সদা সুখী l এখন দুঃখের দুনিয়া তোমরা ছেড়ে দিয়েছ, এর থেকে বার হয়ে গেছ l এখন সঙ্গমযুগী সুখময় দুনিয়াতে আছ l তোমরা অলৌকিক প্রবৃত্তির, লৌকিক প্রবৃত্তির নও l নিজেদের মধ্যেও অলৌকিক বৃত্তি, অলৌকিক দৃষ্টি যেন থাকে !



ট্রাস্টি হওয়ার লক্ষণ সদা স্বতন্ত্র অথচ বাবার অনুরাগী l যদি স্বতন্ত্রতা আর অনুরাগ না থাকে, তবে তোমরা ট্রাস্টিও নও l গার্হস্থ্য জীবন অর্থাৎ বন্ধনযুক্ত জীবন l ট্রাস্টি জীবন নির্বন্ধন জীবন l ট্রাস্টি হওয়াতে সব বন্ধন সহজেই সমাপ্ত হয়ে যায় l বন্ধনমুক্ত হলে সদা সুখী l তাদের কাছে দুঃখের তরঙ্গ আসতেও পারে না l যদি সঙ্কল্পেও থাকে যে আমার ঘর, আমার পরিবার, এটা আমার কাজ, তবে এই স্মৃতিও মায়াকে আহ্বান করে l সুতরাং *আমার* এই শব্দ পরিবর্তন করে *তোমার* করে দাও l যখন বলো, *তোমার* , তখন দুঃখের অবসান ঘটে l *আমার* বলা অর্থাৎ বিভ্রান্ত হওয়া, *তোমার* বলা অর্থাৎ *সুখানুভবে* থাকা l এখন যদি সুখানুভবে না থাক তো কবে থাকবে ! সঙ্গমযুগই আনন্দের যুগ, সেইজন্য সদা উৎফুল্ল থাক l স্বপ্ন আর সঙ্কল্পেও ব্যর্থ হতে দিও না l অর্ধেক কল্প সবকিছু নষ্ট করেছ, নষ্ট করার সময় পার হয়ে গেছে l এখন অর্জনের সময় l যত সমর্থ হবে সেই অনুযায়ী ততই অর্জন করে জমা করতে পারবে l এত জমা কর যা ২১ জন্ম ধরে আরামে খেতে সমর্থ হবে l স্টক যেন এতটাই হয় যাতে অন্যদেরও দিতে পার, কারণ *তোমরা দাতার বাচ্চা l* যত জমা হবে খুশি অবশ্যই ততটাই হবে l



সদা এক বাবা, দ্বিতীয় কেউ নেই - এই একাগ্রতায় মগ্ন থাক l যেখানে একাগ্রতা সেখানে বিঘ্ন থাকতে পারে না l যখন দিন হয় তখন রাত থাকে না, রাতের কালে দিন থাকে না l সুতরাং বিঘ্ন আর অনুরাগের ক্ষেত্রেও একই রকম l একাগ্রতা এমন শক্তিশালী যা বিঘ্নকে ভস্ম করে দেয় l তোমরা এমনই বিঘ্নমুক্ত একাগ্র আত্মা হয়েছ ? যত বড়ই বিঘ্ন হোক, এমনকি মায়া যদি বিঘ্নরূপে আসেও, যারা একাগ্র তারা সেই বিঘ্ন এমনভাবে পরাস্ত করে যেন মাখন থেকে চুল টেনে বার করছে l একাগ্রতাই তোমাদের সর্বপ্রাপ্তির অনুভব করায় l যেখানে বাবা আছেন, সেখানে অবশ্যই প্রাপ্তি আছে l বাবার ধনভান্ডার বাচ্চাদের l



*মাতাদের সাথে:-* তোমরা শক্তিসেনা, তাই না ! মাতারা জগৎ মাতা হয়ে গেছে l এখন আর সীমিত পরিসরের মাতা নয় l সদা নিজেদের জগৎ মাতা মনে কর l সীমিত পরিধির গার্হস্থ্য বন্ধনে তোমরা আটকে পড় না l অসীম জগতের সেবায় সদা খুশি থাক তোমরা l কত শ্রেষ্ঠ পদ বাবা তোমাদের দিয়েছেন l দাসী হওয়া থেকে জতাঁর মাথার মুকুট বানিয়ে দিয়েছেন l *বাহ্ আমার শ্রেষ্ঠ ভাগ্য !* শুধু এই গীত গাইতে থাক l শুধুমাত্র এই একটা কাজ বাবা তোমাদের দিয়েছেন, কারণ মাতারা দিশাহীন হয়ে দীর্ঘকাল এদিকে-ওদিকে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছে l

সুতরাং মাতাদের ক্লান্তি দেখে, বাবা তাদের সেই ক্লান্তি থেকে রেহাই দিতে এসেছেন l ৬৩ জন্মের ক্লান্তি এক জন্মে সমাপ্ত করে দিয়েছেন ? এক সেকেন্ডে সমাপ্ত করে দিয়েছেন l তোমরা বাবার হয়েছ, সুতরাং ক্লান্তির অবসান l মাতা-রা দোলায় দুলতে এবং দোলাতে পছন্দ করে l সেইজন্য বাবা মাতাদের খুশির, অতীন্দ্রিয় সুখের দোলা দিয়েছেন l সেই দোলাতেই দুলতে থাক l তোমরা সদা সুখী এবং সদা স্বামী থাকায় সৌভাগ্যবতী হয়ে গেছ l অমর বাবার অমর বাচ্চা হয়ে গেছ l বাপদাদাও বাচ্চাদের দেখে উৎফুল্ল হন l আচ্ছা l

বরদান:-

সম্পন্নতার দ্বারা সদা সন্তুষ্টতার অনুভব করে সম্পত্তিবান ভব

স্বরাজ্যের সম্পত্তি হলো জ্ঞান, গুণ এবং শক্তি l যারা এই সকল সম্পত্তিতে সম্পন্ন স্বরাজ্য অধিকারী, তারা সদা সন্তুষ্ট l তাদের কোন অপ্রাপ্তির লেশমাত্র নেই l সীমিত পরিসরের সমস্ত ইচ্ছা থেকে অবিদ্যা - একেই বলা হয় সম্পত্তিবান l তারা সদা দাতা হবে, কখনও ভিক্ষুক হবে না l তারা অখন্ড সুখ-শান্তিময় স্বরাজ্যের অধিকারী হয় l যেকোন রকম বিপরীত পরিস্থিতি তাদের অখন্ড শান্তি খন্ডিত করতে পারে না l

স্লোগান:-

যারা জ্ঞান নেত্র দ্বারা ত্রিকাল এবং ত্রিলোক (মূল, সূক্ষ্ম, স্থূল) দেখে, তারা মাস্টার নলেজফুল l