১৩-০২-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - সদা বাবাকে স্মরণ করার চিন্তা আর জ্ঞানের বিচার সাগর মন্থন করতে থাকলে নতুন নতুন পয়েন্ট যেমন পেতে থাকবে, তেমনি আনন্দেও থাকতে পারবে"
প্রশ্ন:-
ড্রামাতে সব চাইতে উল্লেখযোগ্য আশ্চর্য ঘটনাটি কার এবং কেন ?
উত্তর:-
(১) ড্রামার উল্ল্যেখযোগ্য কামালটি শিববাবার। মুহূর্ত মাত্র সময়ের মধ্যেই তোমাকে পরী বানাতে পারেন। উনি এমন উন্নত জ্ঞানের পাঠ পড়ান, যার ফলে তোমরা (বি.কে.-রা) মনুষ্য থেকে দেবতা হতে পার। একমাত্র এই বাবা ছাড়া এমন চমৎকার জ্ঞানের শিক্ষা সমগ্র দুনিয়াতে আর কেউই দিতে পারে না। (২) জ্ঞানের তৃতীয় নেত্রের উন্মোচন ঘটিয়ে, অন্ধকার থেকে আলোর দিশায় আনা, আর চতুর্দিকের ঠোকর খাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া- তা একমাত্র এই বাবারই কাজ। ওঁনার মতন এমন চমৎকার আশ্চর্যজনক কার্য (কামাল) আর কেউই যে করতে পারে না।
ওঁম্ শান্তি!
ঈশ্বরীয় পিতা প্রতিদিন বাচ্চাদের বোঝাতে থাকেন আর বাচ্চারাও নিজেদেরকে আত্মা ভেবে বাবার থেকে শুনতে থাকে। বাবা যেমন গুপ্ত, এই জ্ঞানও তেমনি গুপ্ত। লোকেদের বোধে তো আসেই না যে- আত্মা কি, পরমপিতা পরমাত্মাই বা কি! কিন্তু বি.কে.-দের তাতে পাক্কা অভ্যাসে অভ্যাসী হওরা উচিত যে, প্রকৃত অর্থে আমরা হলাম আত্মা। (পরমআত্মা) বাবা স্বয়ং আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের এই জ্ঞানের পাঠ শোনাচ্ছেন। মন ও বুদ্ধিতে এই ধারণা ধারণ করে যাবতীয় কর্ম-কর্তব্য করে যেতে হবে। এ ভাবেই চাকরী-বাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি যার যা কিছু করার তা করতে হবে। কেউ যখন তোমাকে ডাকে, তখন তো তোমার নাম ধরেই ডাকবে। তোমার নাম-রূপ আছে বলেই তো তুমি কথা বলতে পার, অনেক কিছু করতেও পার। তবুও এই ধারণায় পাকা থাকতে হবে যে, প্রকৃত অর্থে তুমি আত্মা। তোমার যা মহিমা তা কিন্তু সেই নিরাকার আত্মারই মহিমা। আর সাকার দেবতার মহিমার কথাই যদি ভাবো, তার কৃতিত্বও এই বাবারই। তাদেরকে এমন সুন্দর মহিমান্বিত করে গড়ে তুলেছেন তিনিই। তারা নিশ্চয়ই মহিমার উপযুক্ত ছিল বলেই তেমনটি হয়েছে। আবারও বাবা এখন তেমনই মহিমার উপযুক্ত করে গড়ে তুলছেন সেইসব নিরাকার আত্মাদেরকেই। যেহেতু মহিমা যা কিছু তা তো নিরাকার আত্মারই। সেই হিসাবেই তো বিচার করা হয়। এই নিরাকার বাবাও কত সেবা করেন, যে কারণে ওঁনার এত মহিমা। সর্ব বিষয়েই সমর্থ তিনি। তাই সবকিছুই করেন তিনি। কিন্তু সেই তুলনায় তোমরা কত কম মহিমা কর তাঁর। যদিও উনি মহিমার সাগর। মুসলমানেরাও বলে, আল্লাহ্ মিঞাঁই যাবতীয় নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ তিনি দেন কাদের ? অবশ্যই বাচ্চাদেরকেই তো নির্দেশ দেবেন, যারা মনুষ্য থেকে দেবতা হতে চলেছে। তেমনি এই আল্লাহ্ মিঞাঁও কাউকে না কাউকে সেই নির্দেশ অবশ্যই দেবেন। আসলে তা বোঝানো হয় তোমাদেরকেই। লোকেরা কিন্তু এসব কিছুই বোঝে না। যদিও তোমরা বি.কে.-রা তা বুঝতে পারছ। কিন্তু এই জ্ঞান যে পরে গুপ্ত হয়ে যায়। বৌদ্ধরা, খ্রিস্টানরাও এমনই বলে থাকে। কিন্তু কি সেই মূল নির্দেশ, তা জানে না তারা। বাবা কিন্তু তোমাদেরকে 'অল্ফ্' আর 'বে'-র বিষয়ে তা ব্যাখ্যা করে বোঝান। আত্মার কিন্তু তার এই পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করতে ভুলে যাওয়া উচিত নয় মোটেই। আত্মা যেমন অবিনাশী, স্মরণের যোগও তেমনই অবিনাশী। আবার এই পরমাত্মা বাবাও অবিনাশী। মুসলিমরা বলে থাকে, আল্লাহ্ মিঞাঁ এসব কথা বলেছেন। কিন্তু কে তিনি, কি বলেছিলেন - এসব কিছুই সঠিক জানে না তারা। নুঁড়ি-পাথরের মধ্যেও আল্লাহ্ মিঞাঁ -এই ধারণার জন্যই তারা কিছুই জানতে পারে না। ঠিক যেমন ভক্তি-মার্গে প্রার্থনা করা হয়।
বাচ্চারা, তোমরা তো জেনেছ, যে কোনও আত্মাই আসুক না কেন, তাকে অবশ্যই সতো-রজো-তমো-তে আসতেই হবে। ক্রাইস্ট, বৌদ্ধ যে যখনই আসুক না কেন, তাদের পিছনেই তাদের অনুসরণকারীরাও নামতে থাকে। এখানে ওঠার কোনও নিয়ম নেই। পরে বাবা এসে একসাথে সবাইকে উপরে ওঠান। সবারই সদগতিদাতা যে এই একমাত্র বাবা। সদগতি করতে আর কেউই আসে না। এবার ভাবো, ক্রাইস্ট এসে কাকে বোঝাবে ? এ কথার মর্মার্থ বোঝার জন্য অবশ্য তেমন বুদ্ধিধারীর প্রয়োজন। এই বিষয়ে নতুন-নতুন যুক্তি ভাবতে হবে। ভাবনা-চিন্তার পরিশ্রম করতে হবে, তবেই তো জ্ঞান-রত্ন বেরোবে। তাই তো বাবা বলেন- বিচার সাগর মন্থন করে পয়েন্টগুলি লিখে রাখ। তারপর তা পড়ে দেখবে, সেখানে কি কি বাদ গেছে। বাবার যা পার্ট, তা তো চলতেই থাকবে। কল্প-পূর্বেও বাবা এই জ্ঞান শুনিয়েছিলেন। বাচ্চারা, তোমরা তো জানো, যারা ধর্ম স্থাপন করতে আসে তাদের ধর্মের অনুগামীদের তাদের পিছনে পিছনেই নেমে আসতে হয়। তাই তারা কিভাবেই বা এই জ্ঞানের পাঠ পড়াবে? কল্প-চক্রের গতি যে তখন কেবল নিম্নমুখীই থাকে। প্রথম অর্ধ-কল্পে সুখ, পরের অর্ধ-কল্পে দুঃখ। এই অবিনাশী নাটক রচিত হয়েছে এমনই, যা অতি সূক্ষ্ম ভাবে। অতএব তার বিচার সাগরও মন্থন করা উচিত। ধর্ম-স্থাপকেরা কারও সদগতি করতে আসে না। তারা আসে কেবল নিজ নিজ ধর্ম স্থাপনের উদ্দেশ্যে। জ্ঞানের সাগর তো কেবলমাত্র এই একজনই (বাবা), আর কারও মধ্যে পূর্ণ জ্ঞান নেই। ড্রামাতে যে সুখ-দুঃখের খেলা, তা সবারই জন্য। যেখানে দুঃখের থেকে সুখের ভাগটাই বেশী। ড্রামাতে তোমাদের পার্টই সবার চাইতে সুখের। যেহেতু, বাবা তো আর দুঃখ স্থাপন করেন না। উনি সবাইকে কেবল সুখই প্রদান করেন, যাতে বিশ্বে প্রকৃত শান্তি স্থাপিত হয়। কিন্তু বর্তমানের এই দুঃখধাম দুনিয়ায় শান্তি আসবে কোত্থেকে? শান্তি তখনই পাওয়া যাবে যখন তোমরা পৌঁছবে সেই শান্তিধামে।
বাবা বসে বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন- "একথা কখনও ভোলা উচিত নয় যে, তোমরা বাবারই সাথে আছো। বাবা এসেছেন বাচ্চাদেরকে আসুরী স্বভাব থেকে দেবতা সংস্কারে পরিবর্তন করাতে। এই দেবতারাই সদগতি পায়, বাকীরা তখন মূল-বতনেই থাকে। ড্রামার সবচাইতে আশ্চর্যজনক পার্ট হল অসীমের (বেহদের) এই বাবার। যিনি তোমাদেরকে পরী বানান। এই জ্ঞানের পাঠের দ্বারাই তোমরা পরীজাদা হও। ভক্তি-মার্গের লোকেরা এসবের কিছুই বোঝে না, তারা কেবল মালা জপতেই ব্যস্ত। কেউ স্মরণ করছে হনুমানকে, আবার কেউ বা অন্য কাউকে- কিন্তু ওদের স্মরণ করলে কি বা লাভ হবে? বাবা বলেছেন 'মহারথী', তারা মহারথী বলতে হাতীর উপরে আরোহী দেখিয়ে দিয়েছে । এসবই বাবা-ই বুঝিয়ে বলেন। কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি কোথাও গেলে, সেখানে তাকে বিশেষ জাঁকজমক সহকারে অভ্যর্থনা করা হয়। কিন্তু তোমরা অন্যদের তেমন অভ্যর্থনা জানাবে না। যেহেতু তোমরা তো জানো, কল্প-বৃক্ষ ঝাড়ের মূল সহিত গোটা বৃক্ষের এখন খুবই জরাজীর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত অবস্থা। সবই এখন বিষের উৎপাদন । অতএব তোমাদের মনে এই ভাব আসা দরকার যে, সত্যযুগে কিন্তু বিষের নামগন্ধও নেই। বাবা বলেন, আমি তোমাদেরকে পদ্মাপদমপতি (ধন-সম্পদে অতি ধনী) বানাই। সুদামাও পদ্মাপদমপতি হয়েছিল না ! সব নিজের জন্যই করছো।
। এই জ্ঞান পাঠের দ্বারা তোমরা কত উন্নত স্তরে পৌঁছাও। লোকে কত গীতা পাঠ করে, গীতা শোনে, ইনিও (ব্রহ্মা) যথেষ্ট পড়তেন, কিন্তু যখন থেকে বাবা স্বয়ং বসে তা শোনাতে শুরু করলেন - তখন তিনিও খুব আশ্চর্যান্বিত হলেন। বাবার এই গীতা পাঠ শুনে ওনারও সদগতি হল। অথচ মনুষ বসে বসে এই গীতাকেই কি না কি বানিয়ে দিয়েছে। তারা বলে দিল আল্লাহ্ মিঞাঁ এমনই বলেছেন। অথচ তারা তো এসবের বোঝেই না কিছু - এই আল্লাহ্ কে? দেবী-দেবতা ধর্মের লোকেরাই যেখানে ভগবানকে জানে না, আর এর পরের যারা, তারা আর কি বা জানবে। সর্ব-শাস্ত্রের শিরোমণি গীতাতেই তারা মিথ্যা সব কথা ঢুকিয়েছে, তেমনি অন্যান্য শাস্ত্রেও আরও কি না কি করে রেখেছে ! বাবা বাচ্চাদেরকে যা কিছুই শোনাচ্ছেন, বর্তমানে তা প্রায় লোপ হয়ে গেছে। কিন্তু বাবার থেকে তা শুনে এখন আবার তোমরা দেবতা হতে চলেছ। পুরানো দুনিয়ার হিসেব-নিকেশ যার যা আছে তা তো সবাইকেই মিটিয়ে দিতেই হবে। তবেই তো আত্মা পবিত্র হতে পারবে। তোমরা বি.কে.-রাই সর্বাগ্রে সেখানে যাও আবার সবার আগে তোমারাই আসো এই দুনিয়ায়। অন্যেরা তখন সাজা ভোগ করতে থাকে, তাদের কৃতকর্মের হিসােব-নিকেশ মেটাতে। এসব বিষয়ের মধ্যে বেশী না যাওয়াই ভাল। শুরুতে প্রথমে তাদের নিশ্চয় করাও, সবার সদগতিদাতা এই বাবা। একাধারে তিনি যেমনি বাবা, টিচার তেমনি আবার সদগুরুও তিনি । তিনি হলেন অশরীরী। ওঁনার আত্মা সমস্ত জ্ঞানে পরিপূর্ণ। একমাত্র উনিই জ্ঞানের সাগর ও সুখেরও সাগর। সত্যি, কত উচ্চ মহিমা ওনার। উনিও কিন্তু আত্মা-ই। সেই আত্মা এসেই এনার শরীরে প্রবেশ করে। একমাত্র পরমপিতা পরমাত্মা ছাড়া অন্য কোনও আত্মার এমন উন্নত মহিমা হয় না। লোকেরা তো শরীরধারীদের মহিমা করে। কিন্তু ইনি হলেন সুপ্রিম-আত্মা। শরীর ছাড়া আত্মার এই মহিমা একমাত্র এই নিরাকার বাবা ছাড়া আর কারও হয় না।
সংস্কার, জ্ঞান ইত্যাদি যা কিছু তা ধারণ করে আত্মা। বাবার মধ্যে কত অফুরন্ত জ্ঞানের সংস্কারে পরিপূর্ণ। তাই তো উনি প্রেমের সাগর, জ্ঞানের সাগর,....এমন মহিমা কি কোনও সাধারণ আত্মার হতে পারে? তাই কোনও মানুষেরই এমন মহিমা হতে পারে না। এমন কি পুরুষোত্তম কৃষ্ণেরও নয়। যদিও সে কল্পের প্রথম প্রিন্স। একমাত্র এই বাবার মধ্যেই সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকে, উনি এসে যা বাচ্চাদেরকে অবিনাশী উত্তরাধিকার বিতরণ করেন। সেই কারণেই ওঁনার মহিমা কীর্তিত হয়। নিরাকার শিবের জন্ম হীরে তুল্য তাই- "শিব-জয়ন্তী"! ধর্ম স্থাপকেরা যে আসে, এসে কি করে তারা ? যখন যীশুখৃষ্ট এসেছিল, তখন কোনও খ্রিস্টান ছিল না। অতএব জ্ঞান প্রদানের প্রশ্নই নেই। যীশু কেবল এটুকুবলতো- "ভাল ব্যবহার রেখো।" এমন তো অনেক মানুষই বলে থাকে। কিন্তু সদগতি তো আর মানুষ মানুষকে করে দিতে পারে না। তা তারা নিজেরাই তাদের যার যার নিজের নিজের পার্ট অনুসারেই তা করে। সবাইকেই সতো, রজো, তমো-তে আসতেই হয়। খ্রিস্টানেরা আসার পরেই তো তাদের চার্চ (গির্জা) তৈরি হবে, যখন তারা সংখ্যায় অনেক হবে। যখন থেকে ভক্তি শুরু হয়, তখন থেকে চার্চ বানানো শুরু। তা নির্মাণের জন্য প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আর সেই কারণেই বাবা মনুষ্য সৃষ্টির কল্প-ঝাড়কে সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন। জাগতিক বৃক্ষের আয়ু তো আর লক্ষ-লক্ষ বছর হয় না। তাতে কোনো হিসাবও মেলানো যায় না। তাই বাবা বলছেন- বাচ্চারা, তোমরা কত বুদ্ধিহীন হয়ে পড়েছিলে। এখন এই জ্ঞানের পাঠ পড়ে পড়ে তোমরা যথেষ্ট জ্ঞানীও হয়েছ। ওখানে গিয়ে রাজত্ব করবার পূর্বেই, এখান থেকেই তোমরা উপযুক্ত ও তৈরী হয়ে যাও। অন্যেরা যখন আসে, তা একা একা। ধীরে ধীরে তারা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কল্পবৃক্ষের ভিত্ দেবী-দেবতা, যার থেকে বের হয় প্রধান তিনটি শাখা। এরপর তার ছোট-ছোট মঠ ও প্রশাখার সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে তারা বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের মহিমাও বৃদ্ধি পেতে থাকে । যদিও তাতে লাভের লাভ কিছুই হয় না। সবাইকেই নিম্নগতির নিয়মে নেমে আসতেই হয়। এই সব জ্ঞান তোমরা এখন জানছ । তাই তো এই জ্ঞান-দাতাকে বলা হয় "গড ইজ নলেজফুল।" কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান কাকে বলে- সেটাই কারও জানা নেই। তোমরা এখন সেই প্রকৃত জ্ঞানের পাঠই পড়ছ এখানে। আর সেই পাঠ পড়াবার জন্য কোনও ভাগ্যশালীর রথকেই (দেহকে) আধার করতে হয় বাবাকে। যখন বাবা সেই সাধারণ তনকে (দেহকে) আধার বানান, তখন তা হয়ে যায় ভাগ্যশালী রথ (ভাগীরথ)! সত্যযুগের সবাই পদ্মাপদম্ ভাগ্যশালী। তোমাদের এখন জ্ঞানের তৃতীয় নয়নের উন্মোচন ঘটেছে। যার ফলে তোমরা লক্ষ্মী-নারায়ণের মতনও তৈরি হতে পার। সমগ্র কল্পে কেবল একবারই এই জ্ঞান পাওয়া যায়। ভক্তি-মার্গে তো কেবল ধাক্কাধাক্কিই খেতে হয়। অর্থাৎ অন্ধকার। আর জ্ঞান হল দিন, অর্থাৎ আলো। দিনে ধাক্কা খাওয়ার ব্যাপার নেই। বাবা বলছেন- এটা খুবই ভাল, যদি নিজেদের ঘরেই গীতা পাঠশালা খোলো। অনেকে আবার নিজে চালাতে পারবে না ভেবে, অন্যকে সেই গীতা পাঠশালার জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়। এটাও খুব ভাল।
এই পাঠশালার স্থান বেশ শান্ত পরিবেশের (সাইলেন্স) হওয়া উচিত। যেহেতু অতি উন্নত থেকে উন্নততর জ্ঞান ও যোগের পাঠ পড়ানো হয় সেখানে। যেখানে শান্তিতে বসে তোমরা পরমাত্মাকে স্মরণ করবে। এবার যে শান্তিধামে পৌঁছাতে হবে, তাই যত বেশী সম্ভব প্রেম পূর্বক বাবাকে স্মরণ করা উচিত। সত্যযুগে ২১-জন্মের সুখ ও শান্তি দুটোই পাও তোমরা। একমাত্র অসীমের (বেহদের) বাবা-ই এই অসীমের অবিনাশী উত্তরাধিকার দিতে পারেন। অতএব এমন বাবাকে তো অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। বি.কে.দের মধ্যে যেন কোনও প্রকারের অহংকার ভাব না আসে - তবে কিন্তু পতন অনিবার্য। বি.কে.-দের খুব ধৈর্যশীল থাকা উচিত। কারও প্রতি কোনও প্রকারের দৈহিক বল প্রয়োগ করা উচিত নয়। দেহ-অভিমানও দৈহিক বল। খুবই মিষ্ট-স্বভাবের হতে হবে। দেবতাদের স্বভাব যেমন মিষ্ট। তাই তো সবার কাছেই তারা এত আকর্ষনীয়। তোমাদেরকেও বাবা ঠিক তেমন করেই গড়ে তুলছেন। সুতরাং এমন বাবাকে কত অধিক মাত্রায় স্মরণ করা উচিত। এই কথা সদা মনে রেখে বাচ্চাদের কত খুশীতে থাকা উচিত। বি.কে.-দের এই নিশ্চয়তা অবশ্যই হয়েছে, তোমাদের এই শরীর ত্যাগের পর তোমরাই লক্ষ্মী-নারায়ণের মতন হবে। তোমাদের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই থাকবে এই চিত্র। জাগতিক পাঠের টিচারেরা দেহধারী। কিন্তু এখানে তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন নিরাকার বাবা স্বয়ং। অর্থাৎ পরম্-আত্মা পড়াচ্ছেন আত্মাদেরকে। একথা ভাবলেই তো মনে কত খুশীর সঞ্চার হয়। তাই তো এনার (ব্রহ্মার) এই পাঠের নেশার ঘোরে উনিই হন ব্রহ্মা থেকে বিষ্ণু, তেমনি আবার বিষ্ণু থেকে ব্রহ্মা। কিন্তু, এমন অদ্ভুত কথা শুনে তা ধারণ করে তোমরাও অন্যদেরকে শোনাতে পারো। বাবা তোমাদের সবাইকে সমগ্র বিশ্বের মালিক বানিয়ে দেন, যা ওঁনার কর্ম-কর্তব্য। কিন্তু নিজেদেরকেই তা বুঝতে হবে, কে কেমন রাজ্য-ভাগ্য পদের উপযুক্ত হয়েছ। *বাবার কর্তব্য বাচ্চাদের উন্নতি ঘটানো। উনি কিন্তু সবাইকেই বিশ্বের মালিক করে গড়ে তোলেন। কোনও মালিকত্বই উনি নিজে নেন না। তাই বাবা স্বয়ং বসে এনার (ব্রহ্মার) মুখ দ্বারা এই জ্ঞানের পাঠ শোনান। লোকেরা তা আকাশবাণী বলে থাকে। যদিও তার মর্মার্থ কিছুই বোঝে না তারা। প্রকৃত আকাশবাণী তো এই মুরলী শ্রবণ*। যেখানে নিরাকার পরমাত্মা উপর থেকে এসে এই গোমুখের মাধ্যমে তা শুনিয়ে থাকেন। যেহেতু এনার মুখের দ্বারাই সেই বাণী নির্গত হয়।
সত্যি, বি.কে.বাচ্চারা কত মিষ্ট-স্বভাবের। আব্দার করে কখনও বলে, বাবা আজ টোলী খাওয়াও। বাবা বলেন-"আচ্ছা বাচ্চারা, তোমরা অনেক টোলী পাবে।" কিছু সুবোধ বাচ্চা বলে- বাবা, আমরা বাচ্চারাও তোমার একান্তই অনুগত (ভৃত্য)! বাচ্চাদের এই কথা শুনে বাবাও খুব খুশী হন- এমন বাচ্চাদের দেখে৷ বাচ্চারা, তোমরা তো জান, তোমাদের হাতে সময় আর খুব অল্পই আছে। এই যে এতসব বোম্ব বানানো হচ্ছে, তা কি তারা এমনিতেই ফেলে দেবে? যেমনটা কল্প-পূর্বে ঘটেছিল, তারই পুনরাবৃত্তি হবে আবার। অথচ লোকেরা ভাবে, বিশ্বে শান্তি স্থাপন হবে। কিন্তু তেমনটি তো হওয়ার নয়। বিশ্বে প্রকৃত শান্তি স্থাপন তো একমাত্র তোমরাই কর। তাই কেবল তোমরাই বিশ্বের রাজ্য-ভাগ্য বাদশাহীর প্রাইজ পেয়ে থাক। আর তা দেওয়ার মালিক তোমাদের এই বাবা। যোগবলের দ্বারাই তোমরা সমগ্র বিশ্বের বাদশাহী পেয়ে থাক। আর শারীরিক বলের দ্বারা হয় বিশ্বের বিনাশ। সাইলেন্সের শক্তি দ্বারাই তোমরা সেই বিজয় প্রাপ্ত কর। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন, স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. নিজেকে খুব ধৈর্যশীল অবস্থায় রাখতে হবে। বাবাকে অনুসরণ করতে হবে। কোনও কারণেই অহংকার করা চলবে না। দেবতাদের মতন মিষ্ট স্বভাবের হতে হবে।
২. সদা হাসি-খুশী থাকার জন্য জ্ঞানের এই পাঠকে মন্থন করতে থাকবে। মন্থনেরও বিচার-সাগর মন্থন করবে। ভগবানের সন্তান যেমন আমরা, তেমনি আবার ওঁনার একান্ত অনুগত ভৃত্যও বটে - এই স্মৃতির স্মৃতিতে সদা সেবার প্রতি তৎপর থাকবে।
বরদান:-
প্রতিটি মুহূর্তকেই অন্তিম মুহূর্ত ভেবে সদা অলৌকিক (রুহানী) আনন্দে থাকা বিশেষ আত্মা ভব
সঙ্গমযুগ হল অলৌকিক (রুহানী) আনন্দে থাকার যুগ। তাই প্রতিটি মুহূর্তেই অলৌকিক আনন্দের অনুভব করতে থাক। কখনও কোনও পরিস্থিতিতে বা কোনও পরীক্ষাতেই বিভ্রান্ত হবে না। বর্তমান সময়টাই যে অকালমৃত্যুর সময়। যদি সামান্য সময়ও আনন্দের পরিবর্তে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো, তবে সেই সময়টাই তোমার অন্তিম সময় এসে গেল, -"যেমন অন্তিম মতি, তেমনই তোমার গতি" এমনটাই হবে তখন। তাই তো 'এভার রেডী'-র এই পাঠ পড়ানো হয় তোমাদের। এমন ধোকা মাত্র একটা সেকেন্ডেরও হতে পারে। তাই নিজেকে বিশেষ আত্মা ভেবে প্রতিটা সংকল্প, বোল আর কর্ম করতে থাকবে এবং নিজেকে সদা অলৌকিক (রুহানী) আনন্দে রাখবে।
স্লোগান:-
অচল (অবিচলিত) হতে চাইলে ব্যর্থ আর অশুভ-কে সমাপ্ত করো।