19.10.2019
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
দেহী-অভিমানী হওয়ার অভ্যাস করো, এই অভ্যাসের দ্বারা-ই তোমরা পুণ্য আত্মা হতে পারবে"
প্রশ্নঃ -
কোন্ জ্ঞান
থাকার জন্য তোমরা বাচ্চারা সর্বদা হাসিখুশি থাকো ?
উত্তরঃ -
তোমরা জ্ঞান লাভ করেছ যে এই বিশ্ব-নাটক খুবই ওয়ান্ডারফুল (আশ্চর্যজনক) ভাবে নির্মিত,
এই নাটকে প্রত্যেক অ্যাক্টরের (অভিনেতা) অবিনাশী ভূমিকা রয়েছে। সবাই নিজ নিজ ভূমিকা
পালন করছে। এই জন্যই তোমরা সর্বদা হাসিখুশি থাকো।
প্রশ্নঃ -
কোন্ বিশেষ কলা
কেবল বাবার মধ্যেই রয়েছে, অন্য কারোর কাছে নেই ?
উত্তরঃ -
দেহী-অভিমানী বানানোর কলা কেবল বাবার মধ্যেই রয়েছে। কারণ তিনি সর্বদাই দেহী এবং
সুপ্রীম। এই বিশেষ কলা কোনো মানুষের কাছেই নেই।
ওম্ শান্তি ।
বাবা নিজে বসে
থেকে আত্মিক সন্তান অর্থাৎ আত্মাদেরকে বোঝাচ্ছেন। নিজেকে আত্মা অনুভব করা উচিৎ। বাবা
বাচ্চাদেরকে বুঝিয়েছেন যে প্রথমে এইরকম অভ্যাস করো যে আমি আত্মা না কি শরীর। *নিজেকে
আত্মা অনুভব করলেই পরমপিতাকে স্মরণ করতে পারবে। নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব না করলে
অবশ্যই শারীরিক সম্বন্ধ যুক্ত ব্যক্তি এবং ব্যবসার কথা স্মরণে আসবে। তাই প্রথমে
এইরকম অভ্যাস করতে হবে যে আমি একটা আত্মা। তাহলেই আত্মিক পিতাকে স্মরণ করা সম্ভব।*
বাবা শিক্ষা দিচ্ছেন যে নিজেকে শরীর বলে ভেবো না। গোটা কল্পে কেবল একবারই বাবা এই
জ্ঞান দেন। আবার ৫ হাজার বছর পরে এইরকম ভাবে বোঝাবেন। নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করলে
বাবার কথাও স্মরণে আসবে। অর্ধেক কল্প ধরে তোমরা নিজেকে শরীর বলে ভেবেছ। এখন নিজেকে
আত্মা রূপে অনুভব করো। তোমাদের মতো আমিও এক আত্মা। কিন্তু আমি হলাম সুপ্রীম। আমি তো
আত্মা রূপেই থাকি, তাই কোনো দেহ আমার স্মরণে আসে না। এই ঠাকুরদাদা তো শরীরধারী।
কিন্তু ওই পিতা নিরাকার। প্রজাপিতা ব্রহ্মা হলেন সাকার শরীরধারী। শিব-ই হলো
শিববাবার আসল নাম। তিনিও আত্মা, কিন্তু তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থাৎ সুপ্রীম আত্মা।
কেবল এই সময়েই এই শরীরে এসে প্রবেশ করি। তিনি কখনোই দেহ-অভিমানী হন না। সাকার
শরীরধারী মানুষরা দেহ-অভিমানী হয়ে যায়। কিন্তু তিনি তো সর্বদাই নিরাকার। তাই তিনি
এসেই এই অভ্যাস করান। তিনি বলছেন - তোমরা নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। মন দিয়ে বসে
শিক্ষা গ্রহণ করো যে ‛আমি হলাম আত্মা’, ‛আমি হলাম আত্মা’। আমি আত্মা শিববাবার
সন্তান। সবকিছুই তো অভ্যাস করতে হয়। বাবা নুতন কিছু বোঝাচ্ছেন না। *তোমরা যখন নিজেকে
পাকাপাকি ভাবে আত্মা রূপে অনুভব করবে তখন বাবাও পাকাপাকি ভাবে স্মরণে থাকবে।*
দেহ-অভিমান থাকলে বাবাকে স্মরণ করতে পারবে না। অর্ধেক কল্প ধরে তোমাদের শারীরিক
অহংকার থাকে। এখন তোমাদেরকে শেখাচ্ছি যে নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। সত্যযুগে কেউ
এইভাবে শেখাবে না যে নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। শরীরের তো অবশ্যই একটা নাম থাকবে।
নাহলে একে অপরকে ডাকবে কিভাবে। এখানে তোমরা বাবার কাছ থেকে যে উত্তরাধিকার পেয়েছ,
সেটাই ওখানে তোমরা পুরস্কার হিসেবে প্রাপ্ত করবে। একে অপরকে তো নাম ধরেই ডাকবে, তাই
না ? কৃষ্ণও তো শরীরের নাম। নাম না থাকলে তো কাজকর্মই করা যাবে না। এমন না যে
ওখানেও নিজেকে আত্মা অনুভব করার শিক্ষা দেওয়া হবে। ওখানে তো সকলেই আত্ম-অভিমানী
থাকবে। এখন অনেক পাপের বোঝা রয়েছে বলে এখানেই তোমাদেরকে এইরকম অভ্যাস করানো হয়। ধীরে
ধীরে একটু একটু করে পাপ করতে করতে এখন ফুল পাপ আত্মা হয়ে গেছ। অর্ধেক কল্প ধরে তোমরা
যা কিছু করেছ, সেইসব তো অবশ্যই বিনাশ হবে। ধীরে ধীরে কমছে। সত্যযুগে তোমরা
সতোপ্রধান থাকো, তারপর ত্রেতাযুগে সতো অবস্থা প্রাপ্ত করো। উত্তরাধিকার এই সময়েই
পাওয়া যায়। নিজেকে আত্মা অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করলেই উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। এই
সময়েই বাবা দেহী-অভিমানী হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছেন। সত্যযুগে কেউ এইরকম শিক্ষা দেবে না।
নিজ-নিজ নাম অনুসারেই সবকিছু চলবে। এখানে তোমাদের প্রত্যেককে স্মরণের শক্তি দ্বারা
পাপ আত্মা থেকে পুণ্য আত্মা হতে হবে। সত্যযুগে এই শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। এই
শিক্ষা তোমরা ওখানে নিয়ে যাবে না। জ্ঞানও নিয়ে যাবে না, যোগও নিয়ে যাবে না। এখনই
তোমাদেরকে পতিত থেকে পবিত্র হতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে কলা কমতে থাকবে। যেভাবে
চাঁদের কলা কম হতে হতে শেষে কেবল একটা দাগ রয়ে যায়। সংশয় প্রকাশ করো না। কোনো কিছু
বুঝতে না পারলে জিজ্ঞেস করো।
আগে তো নিশ্চিত হও যে, আমি হলাম আত্মা। তোমরা আত্মারাই এখন তমোপ্রধান হয়ে গেছ। আগে
সতোপ্রধান ছিলে, তারপর ধীরে ধীরে কলা কম হয়েছে। *‛আমি হলাম আত্মা’ - এটা সঠিকভাবে
বুঝতে পারোনি বলেই তোমরা বাবাকে ভুলে যাও।* এটা হলো সর্বপ্রথম এবং মুখ্য বিষয়।
আত্ম-অভিমানী হলে বাবা এবং উত্তরাধিকার দুটোই স্মরণে আসবে। আর উত্তরাধিকার স্মরণে
থাকলে পবিত্রও থাকবে, দিব্য গুণ গুলোও ধারণ হবে। এম অবজেক্ট তো সামনেই আছে। এটা হলো
গডলী ইউনিভার্সিটি। এখানে স্বয়ং ভগবান শিক্ষা দেন। তিনিই দেহী-অভিমানী বানাতে পারেন।
অন্য কারোর মধ্যেই এই কলা নেই। এই শিক্ষা কেবল বাবা-ই দেন। ঠাকুরদাদাও এখন
পুরুষার্থ করছেন। বাবা তো কখনোই শরীর ধারণ করেন না। তাই তাঁকে দেহী-অভিমানী হওয়ার
জন্য পুরুষার্থ করতে হয় না। তিনি কেবল এই সময়েই তোমাদেরকে দেহী-অভিমানী বানানোর
জন্য আসেন। কথিত আছে - যার মাথায় মামলার (অনেক দায়িত্ব) বোঝা, সে কিভাবে ঘুমাবে…।
অনেক রকমের ব্যবসার অতিরিক্ত বৃদ্ধি হয়ে গেলে সময় পাওয়া যায় না। যার সময় আছে সে-ই
বাবার কাছে পুরুষার্থ করতে আসে। অনেক নুতন বাচ্চাও আসে। ওরা বুঝতে পারে যে এটা খুব
ভালো জ্ঞান। গীতাতেও লেখা আছে - আমাকে অর্থাৎ পিতাকে স্মরণ করলেই তোমার বিকর্ম
বিনষ্ট হবে। সুতরাং বাবা-ই এইসব বোঝাচ্ছেন। বাবা কাউকে দোষ দিচ্ছেন না। তিনি তো
জানেন যে তোমরা পবিত্র থেকে পতিত অবশ্যই হবে এবং তারপর আমাকেও এসে পতিত থেকে পবিত্র
করতে হবে। এটা তো পূর্বনির্মিত নাটক। তাই কারোর নিন্দা করার প্রশ্নই আসে না। তোমরা
বাচ্চারা এখন জ্ঞানটাকে সঠিকভাবে জেনেছ। অন্য কেউ তো ঈশ্বরকে জানেই না। তাই তারা হলো
অনাথ বা নাস্তিক। বাচ্চারা, বাবা এখন তোমাদেরকে কতই না বিচক্ষণ বানিয়ে দিচ্ছেন।
শিক্ষক রূপে শিক্ষা দিচ্ছেন। কিভাবে এই সৃষ্টিচক্র আবর্তিত হয়, সেই শিক্ষা পেয়ে
তোমরাও শুধরে যাও। যে ভারত এক সময়ে শিবালয় ছিল, সেটাই এখন বেশ্যালয় হয়ে গেছে। তবে
এর জন্য নিন্দা করার দরকার নেই। এটাই তো খেলা। বাবা তো এটাই বোঝাচ্ছেন যে তোমরা
কিভাবে দেবতা থেকে অসুর হয়েছ। 'কেন হয়েছ' - সেটা বলছেন না। বাবা কেবল বাচ্চাদেরকে
নিজের পরিচয় এবং সৃষ্টিচক্র কিভাবে আবর্তিত হয় সেই জ্ঞান দেওয়ার জন্যই এসেছেন।
মানুষরাই তো এই জ্ঞান জানবে। তোমরা এখন এই জ্ঞান জেনে দেবতা হয়ে যাচ্ছ। এটা হলো
মানুষ থেকে দেবতা বানানোর শিক্ষা। স্বয়ং বাবা বসে থেকে শেখান। এখানে সকলেই মানুষ।
দেবতাদের পক্ষে তো এই দুনিয়ায় আসা সম্ভব নয় যে তারা শিক্ষক হয়ে শিক্ষা দেবে। শিক্ষক
শিববাবাকে দেখো যে তিনি কীভাবে পড়ানোর জন্য আসেন। গায়ন করে যে পরমপিতা পরমাত্মাকে
কোনো রথ নিতে হয়। কিন্তু তিনি কোন্ রথ নেন সেটা সঠিকভাবে লেখা নেই। ত্রিমূর্তির
ছবির রহস্যও কেউ বোঝে না। পরমপিতা হলেন পরম আত্মা। তিনি তাঁর প্ৰকৃত পরিচয় তো
অবশ্যই দেবেন। এটা কোনো অহংকার নয়। বুঝতে পারে না বলে অনেকে বলে দেয় যে এনার মধ্যে
অহংকার রয়েছে। ব্রহ্মা তো কখনও বলে না যে আমি পরমাত্মা। এইগুলো বোঝার বিষয়। এটা তো
বাবার মহাবাক্য যে সকল আত্মার পিতা এক। এনাকে তো ঠাকুরদাদা বলা হয়। ইনি হলেন
ভাগ্যবান রথ। যেহেতু ব্রাহ্মণদেরকে প্রয়োজন, তাই এনার নাম ব্রহ্মা রাখা হয়েছে। আদি
দেব প্রজাপিতা ব্রহ্মা। প্রজাদের পিতা। কিন্তু প্রজা কারা ? *যেহেতু প্রজাপিতা
ব্রহ্মা শরীরধারী, তাই তিনিই সবাইকে দত্তক নিয়েছেন। বাচ্চাদেরকে শিববাবা বোঝাচ্ছেন
যে আমি কখনও দত্তক নিই না। তোমরা সকল আত্মারা তো সর্বদাই আমার সন্তান। আমি তোমাদেরকে
সৃষ্টি করি না। আমি তোমাদের অর্থাৎ সকল আত্মার অনাদি পিতা।* বাবা কত ভালো করে
বোঝাচ্ছেন। কিন্তু সবকিছু বোঝানোর পরেও নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করতে বলছেন। তোমরা
সমগ্র পুরাতন দুনিয়ার থেকে সন্ন্যাস করো। বুদ্ধি দ্বারা জেনেছ যে এই দুনিয়া থেকে
সবাই ফেরত যাবে। এমন নয় যে সন্ন্যাস গ্রহণ করে জঙ্গলে চলে যেতে হবে। সমগ্র দুনিয়ার
থেকে সন্ন্যাস করে ঘরে ফিরে যাব। তাই কেবল বাবা ব্যতীত অন্য কিছুই যেন স্মরণে না আসে।
যেহেতু ৬০ বছরের অধিক আয়ু হয়ে গেছে, তাই বাণীর থেকে ওপরে বানপ্রস্থতে যাওয়ার
পুরুষার্থ করতে হবে। এই সময়েই প্ৰকৃত বানপ্রস্থে যাওয়া হয়। ভক্তিমার্গে তো কেউ
বানপ্রস্থের ব্যাপারে জানবেও না। বানপ্রস্থ কথার সঠিক অর্থই বলতে পারবে না। বাণীর
থেকে ওপরে মানে মূলবতন। ওখানে যখন আত্মারা নিবাস করে তখন সকলে বাণপ্রস্থ অবস্থায়
থাকে। সবাইকে এখন ঘরে ফিরতে হবে।
শাস্ত্রে দেখানো হয়েছে যে আত্মা দুই ভ্রুর মাঝে অবস্থিত ঝলমলে এক তারা। অনেকে মনে
করে আত্মা বুড়ো আঙুলের ছাপের মতো আকৃতি বিশিষ্ট। ঐরকম আকৃতিকেই স্মরণ করতে থাকে।
তারার মতো বিন্দুকে কীভাবে স্মরণ করবে ? কীভাবেই বা পূজা করবে ? বাবা বোঝাচ্ছেন যে
তোমরা যখন দেহ-অভিমানের বশে এসে যাও, তখন পূজারী হয়ে যাও। তখন থেকে ভক্তি করা আরম্ভ
হয়। ওটাকে ভক্তিমার্গ বলা হয়। জ্ঞানমার্গ সম্পূর্ণ আলাদা। *যেভাবে দিন এবং রাত্রি
কখনো একসঙ্গে হয় না, সেইরকম জ্ঞান এবং ভক্তিও কখনো একসঙ্গে হয় না।* সুখের সময়কে দিন
বলা হয় আর দুঃখ অর্থাৎ ভক্তিকে রাত্রি বলা হয়। প্রজাপিতা ব্রহ্মার দিন এবং রাত্রির
কথা বলা হয়। প্রজা এবং ব্রহ্মা নিশ্চয়ই একসঙ্গেই থাকবে। তোমরা বুঝেছ যে আমরা
ব্রাহ্মণরাই অর্ধেক কল্প ধরে সুখ ভোগ করি এবং তারপর অর্ধেক কল্প দুঃখ ভোগ করি। এটা
তো বুদ্ধি দ্বারা বোঝার বিষয়। এটাও জানো যে সবাই তো বাবাকে স্মরণ করতে পারবে না
কিন্তু তা সত্ত্বেও বাবা স্বয়ং বোঝাচ্ছেন যে নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে আমাকে
স্মরণ করলে তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। সবাইকে এই বার্তা দিতে হবে। সেবা করতে হবে। যে
সেবা করে না তাকে ফুল বলা যাবে না। বাগানের মালিক যখন বাগানে আসে তখন তো সে ফুল-ই
দেখতে চায়। ফুল অর্থাৎ যারা সার্ভিসেবল, অনেকের কল্যাণ করে। যার মধ্যে দেহ-অভিমান
রয়েছে, সে নিজেও বুঝতে পারে যে আমি তো ফুলের মতো নয়। বাবার সম্মুখে তো ভালো ভালো
ফুল বসে আছে। ওদের দিকে বাবার নজর যাবে। তখন সুন্দরভাবে নৃত্য করবে। স্কুলের টিচার
তো জানে যে কে নম্বর ওয়ান, কে দুই নম্বর, কে তিন। সেইরকম, সেবাধারী বাচ্চাদের দিকেই
বাবার অ্যটেনশন যাবে। ওরাই বাবার অন্তরে জায়গা করে নেবে। যাদের দ্বারা ডিস-সার্ভিস
হয়ে যায় তারা মোটেও বাবার অন্তরে (মনে) স্থান পাবে না। যে মুখ্য বিষয়টা বাবা সবার
আগে বোঝান সেটা হলো নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করলেই বাবাকে স্মরণ করতে পারবে।
দেহ-অভিমান থাকলে বাবাকে স্মরণ করতে পারবে না। শারীরিক সম্বন্ধযুক্ত ব্যক্তি কিংবা
ব্যবসার দিকেই বুদ্ধি চলে যাবে। দেহী-অভিমানী হলে কেবল পারলৌকিক পিতার কথাই স্মরণে
আসবে। বাবাকে তো খুব ভালোবাসার সহিত স্মরণ করতে হবে। নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করার
জন্য তো পরিশ্রম করতে হবে। একান্তবাসী হতে হবে। কারন এই সাত দিনের কোর্সটা খুবই
কঠিন। কারোর কথা যেন মনে না আসে। কাউকে পত্র লেখাও যাবে না। তোমরা শুরুর দিকে এইরকম
ভাট্টি করেছিলে। এখানে তো সবাইকে রাখা যাবে না। তাই বলা হয় ঘরে বসে প্র্যাকটিস করো।
ভক্তরাও ভক্তি করার জন্য আলাদা স্থান তৈরি করে। সেখানে বসে মালা জপ করে। এই স্মরণের
যাত্রার জন্যও একান্ত প্রয়োজন। কেবল বাবাকেই স্মরণ করতে হবে। এর জন্য মুখে কিছু
উচ্চারণও করতে হবে না। স্মরণের অভ্যাস করার জন্য সময় দিতে হবে। তোমরা জানো যে লৌকিক
পিতা হলেন সীমিত বিষয়ের রচয়িতা। ইনি হলেন অসীম জগতের রচয়িতা। প্রজাপিতা ব্রহ্মাও
অসীম জগতের। তিনি বাচ্চাদেরকে দত্তক নেন। শিববাবা দত্তক নেন না। সবাই তো সর্বদাই
তাঁর সন্তান। তোমরা বলো যে আমরা হলাম শিববাবার অনাদি সন্তান। ব্রহ্মা তোমাদেরকে
দত্তক নিয়েছেন। প্রতিটা বিষয় ভালো করে বুঝতে হবে। বাবা প্রতিদিন বাচ্চাদেরকে
বোঝাচ্ছেন। অনেকে বলে বাবার কথা স্মরণে থাকে না। বাবা বলেন, এর জন্য তো একটু সময়
বার করতে হবে। অনেকে এমন রয়েছে যারা একটুও সময় বার করতে পারে না। বুদ্ধিতে অনেক
কাজের কথা ঘুরতে থাকে। তারা কীভাবে স্মরণের যাত্রা করবে ? বাবা বোঝাচ্ছেন - আসল কথা
হলো নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে আমাকে অর্থাৎ পিতাকে স্মরণ করলেই তোমরা পবিত্র হয়ে
যাবে। *আমি হলাম আত্মা, শিববাবার সন্তান - এটাই হলো মন্মনা ভব।* এর জন্য পরিশ্রম
করতে হবে। আশীর্বাদের কোনো প্রশ্নই নেই। এটা তো পড়াশুনা। এক্ষেত্রে আশীর্বাদ কিংবা
কৃপা করার প্রশ্নই আসে না। আমি কি কখনো তোমাদের মাথায় হাত রাখি ? তোমরা জানো যে আমরা
অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার নিচ্ছি। অমর ভব, আয়ুষ্মান ভব… এর মধ্যেই সব
বিষয় রয়েছে। তোমরা পূর্ণ আয়ু পেয়ে যাও। ওখানে কখনো অকালে মৃত্যু হবে না। ওই
উত্তরাধিকার তো কোনো সাধু-সন্ত দিতে পারবে না। ওরা তো বলে পুত্রবান ভব। মানুষ ভাবে
যে ওনার কৃপাতেই বুঝি সন্তান হয়েছে। যার সন্তান হয়নি সে তখন তার কাছে গিয়ে শিষ্য হবে।
এই জ্ঞান তো কেবল একবার পাওয়া যায়। এটা হলো অব্যাভিচারী জ্ঞান। অর্ধেক কল্প ধরে এর
ফল পাওয়া যায়। তারপর অজ্ঞানের সময় আসে। ভক্তি হলো অজ্ঞান। প্রত্যেকটা বিষয়কে খুব
ভালো করে বোঝানো হয়। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন
স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন
নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
এখন বানপ্রস্থ অবস্থা, তাই বুদ্ধি দ্বারা সবকিছু থেকে সন্ন্যাস নিয়ে কেবল বাবাকে
স্মরণ করতে হবে। একান্তে বসে অভ্যাস করতে হবে যে আমি আত্মা…আমি আত্মা।
২ ) সার্ভিসেবল ফুল হতে হবে। দেহ-অভিমানের বশীভূত হয়ে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়,
যাতে ডিস-সার্ভিস হয়ে যায়। অনেকের কল্যাণ করার নিমিত্ত হতে হবে। স্মরণ করার জন্য
অবশ্যই কিছুটা সময় বার করতে হবে।
বরদান:-
পবিত্রতার বরদানকে নিজ সংস্কার বানিয়ে পবিত্র জীবন বানাতে সক্ষম পরিশ্রম-মুক্ত ভব
অনেক বাচ্চাকে পবিত্র
থাকার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। এর দ্বারা-ই প্রমাণিত হয় যে, তারা বরদাতা বাবার কাছ
থেকে জন্মগত বরদান নেয়নি। বরদানকে ফলপ্রসূ করার জন্য পরিশ্রম করতে হয় না। প্রত্যেক
ব্রাহ্মণ আত্মাই জন্মের পর প্রথম বরদান পেয়েছে - “পবিত্র ভব, যোগী ভব।” যেভাবে
জন্মগত সংস্কার খুব কড়া হয়, সেইরকম পবিত্রতা হলো ব্রাহ্মণ জীবনের আদি সংস্কার,
নিজস্ব সংস্কার। এই স্মৃতির দ্বারা জীবনকে পবিত্র বানাও। পরিশ্রম থেকে মুক্ত হয়ে
যাও।
স্লোগান:-
যার মধ্যে সেবার শুদ্ধ ভাবনা রয়েছে, সে-ই প্ৰকৃত ট্রাস্টি।