১৯-০৫-১৯ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ২৮-১১-৮৪ মধুবন
সঙ্কল্প ফলপ্রসূ করার সহজ বিধি
আজ বিশ্ব রচয়িতা, বিশ্ব কল্যাণকারী বাবা, সকল বিশেষ বাচ্চাকে নজর দেওয়ার জন্য বিশ্ব পরিক্রমণে বেরিয়েছেন। তিনি জ্ঞানী আত্মাদেরও দেখেছেন, স্নেহী-সহযোগী বাচ্চাদেরও দেখেছেন। ভক্ত বাচ্চাদেরও দেখেছেন, আবার অজ্ঞানী বাচ্চাদেরও দেখেছেন। তিনি এটাও দেখেছেন, কিভাবে পরস্পর ভিন্ন আত্মারা তাদের নিজ নিজ মানসিক ভাবের মধ্যে নিমগ্ন রয়েছে। কেউ কেউ সযত্নে নির্দিষ্ট কার্য করায় মগ্ন, আর কেউ কিছু ভাঙার কার্যে মগ্ন, আবার কেউ মেরামতির কার্যে মগ্ন, যেমনই হোক, সবাই যে মগ্ন সেটা সুস্পষ্ট l সবার মনে সঙ্কল্প এটাই ছিল, কিছু পাই, কিছু নিই, কিছু প্রাপ্তি হবে, এই লক্ষ্যে প্রত্যেকে নিজ নিজ কার্যে যুক্ত হয়ে আছে l যদিও তাদের সীমিত পরিসরের প্রাপ্তি, তবুও সবদিকে বাবা দেখেছেন, সকলেরই এই ইচ্ছা আর লক্ষ্য ছিল, যদি কিছু পাওয়া যায় বা কিছু যদি হওয়া যায় ! এর মধ্যে, বাবা ব্রাহ্মণ বাচ্চাদের বিশেষভাবে দেখেছেন l দেশেই হোক বা বিদেশে, প্রত্যেক বাচ্চার মধ্যে বাবা এই এক সঙ্কল্প দেখেছেন, এখন কিছু করি ! অসীম জগতের কার্যে বিশেষ কিছু করে দেখাই ! নিজের মধ্যেও বিশেষত্ব ধারণ করে বিশেষ আত্মা হয়ে উঠি ! বাবা এইরকম প্রবল আগ্রহ মেজরিটি বাচ্চাদের মধ্যে দেখেছেন l প্রত্যেকের পুরুষার্থে এবং সেইসঙ্গে সময়ের বাতাবরণে উৎসাহ-উদ্দীপনার বীজ সবার মধ্যে বাবা প্রত্যক্ষ রূপে দেখেছেন l এই প্রবল আগ্রহের বীজকে তৈরি করতে বারবার অ্যাটেনশনের জল দিতে হবে এবং চেকিং করতে হবে অর্থাৎ সদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এতে বিধিরূপী রোদ দিয়ে যেতে হবে, এতে তোমরা নম্বরানুক্রমে হয়ে যাও l কিভাবে বীজ বোনা হয় তা' সবাই জানে, কিন্তু পালন করে তাকে ফলস্বরূপ বানানোর ক্ষেত্রে ভিন্নতা এসে যায় l
বাপদাদা অমৃতবেলা থেকে শুরু করে সারাদিন তোমরা সব বাচ্চার এই খেলা বা একমনা হওয়ার পুরুষার্থ দেখেন l তোমরা প্রত্যেকে নিজের জন্য এবং সেবার জন্য প্রবল আগ্রহের সবচেয়ে ভালো সঙ্কল্প কর, এখন থেকে এই করব, এইভাবে করব, অবশ্যই করব l সবাইকে করে দেখাব - এমনই সব শ্রেষ্ঠ সঙ্কল্পের বীজ তোমরা বুনতে থাক l বাপদাদার সঙ্গে তোমাদের মনখোলা ও অন্তরঙ্গ কথোপকথনেও তোমরা খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলো l কিন্তু যখন সেই সঙ্কল্পকে অর্থাৎ বীজকে প্র্যাকটিক্যাল রূপে ভেতরে নিয়ে আস, তখন কি হয় ? কোনো না কোনো বিষয়ে বৃদ্ধির বিধিতে অথবা ফলস্বরূপ তৈরি করার বিশেষত্বে তোমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী নম্বরানুক্রমে হয়ে যাও l যে কোনও সঙ্কল্পরূপী বীজকে ফলপ্রদ বানানোর সহজ সাধন একটাই, তা' হলো-*"সদা বীজরূপ বাবার থেকে সবসময় সর্বশক্তির বলে সেই বীজকে পূর্ণ করা l"* বীজরূপ দ্বারা তোমাদের সঙ্কল্প রূপী বীজ নিজে থেকে এবং সহজভাবে বিকশিত হয়ে ফলদায়ী হয়ে যাবে l যতই হোক, বীজের সাথে নিরন্তর কানেকশন না থাকার কারণে, অন্য আত্মাদের অথবা সাধনকে বৃদ্ধির বিধি বানিয়ে ফেল l তারপরে, এই কারণে আমি এইরকম করি, ওইরকম করি, এর মতোই করি - এই বিস্তারে সময় আর পরিশ্রম বেশি ব্যয় করে ফেল, কেননা তোমরা যেকোন আত্মাকে বা সুযোগ-সুবিধাকেই নিজেদের আধার বানিয়ে নাও l সাগর আর সূর্যের থেকে জল রোদ নেওয়ার পরিবর্তে অন্য সব সাধনের জল দিলে এবং অন্য আত্মাদেরকে নিজেদের সহায় ভেবে সকাশ দিলে বীজ ফলদায়ী হতে পারে না, সেইজন্য পরিশ্রম করার পরে, তোমার সময় দেওয়ার পরেও যখন প্রত্যক্ষ ফলের প্রাপ্তি হয় না, তখন চলতে চলতে তোমাদের উৎসাহ কম হয়ে যায় এবং নিজের প্রতি, সাথীদের প্রতি ও সেবার প্রতি তোমরা নিরাশ হয়ে যাও l কখনো খুশি, কখনো বিষণ্নতা, উভয় তরঙ্গ ব্রাহ্মণ জীবনের তরীকে কখনো দোলায় কখনো ভালোভাবে চালায় l আজকাল তোমরা কিছু কিছু বাচ্চার জীবনের গতিবিধিতে এটাই পরিলক্ষিত হয় l অগ্রসর হচ্ছ, গৃহীত কর্মাদির দায়িত্বভার পালন করছ, কিন্তু যেমন হওয়া উচিৎ সেইরকম অনুভব করতে না পারার কারণে খুশি থাকা সত্ত্বেও খুশিতে যে নৃত্যরত হবে, তেমন হচ্ছে না l চলনশীল কিন্তু তীব্রগতির ভাব নেই l তোমরা সন্তুষ্ট - শ্রেষ্ঠ জীবনপ্রাপ্ত হয়েছ, বাবার হয়েছ, সেবাধারী হয়েছ, দুঃখ-দুর্দশার দুনিয়া থেকে সরে গেছ l যতই হোক, সন্তুষ্টির মধ্যে অসন্তুষ্টির তরঙ্গ কখনো কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধেই উৎপন্ন হয় এবং কেন হয় বোধাতীত হলেও তার উদ্ভব হয়, কেননা জ্ঞান সহজ, স্মরণ সহজ, কিন্তু সম্বন্ধ-সম্পর্কে স্বতন্ত্র থেকেও প্রিয় হয়ে দায়িত্ব পালন কখনো সহজ, কখনো কঠিন হয়ে যায় l
ব্রাহ্মণ পরিবার এবং সেবার প্রবৃত্তি, একে বলা হয় সম্বন্ধ-সম্পর্ক l এতে কোন না কোন বিষয়ে যেমন অনুভব হওয়া উচিৎ, তোমাদের সেইরকম অনুভব হয় না l এর কারণ উভয় তরঙ্গের উপস্থিতি l এখন, যেহেতু সময় সমাসন্ন, সেইজন্য পুরুষার্থের গতি সময়ানুসারে তোমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না l এখন সময় বিঘ্ন বিনাশক হয়ে বিশ্বের বিঘ্নের মধ্যে থাকা দুঃখী আত্মাদের সুখ-স্বস্তির অনুভূতি করানো l বহুকাল ধরে যাদের বিঘ্নহীন স্থিতি ছিল, তারা বিঘ্ন বিনাশকের গৃহীত কাজ করতে পারে l এখনো পর্যন্ত যদি নিজের জীবনে বিঘ্নের উপস্থিতি দূর করতে বিজি থাকবে, তা'তেই শক্তি প্রয়োগ করবে, তবে অন্যকে শক্তি দেওয়ার নিমিত্ত কিভাবে হবে ! নির্বিঘ্ন হয়ে শক্তির স্টক জমা কর, তখনই শক্তিরূপ হয়ে বিঘ্ন বিনাশকের কার্য করতে পারবে l বুঝেছ তোমরা !
বাবা দু'টো বিশেষ ব্যাপার দেখেছেন l অজ্ঞানী বাচ্চারা ভারতে সীট নিতে অথবা অন্য কাউকে সীট পাইয়ে দিতে সাহায্য করতে ব্যস্ত l দিনরাত তাদের স্বপ্নের মধ্যেও সীটই নজরে আসে এবং ব্রাহ্মণ বাচ্চারা নিজেদের সেট করাতে ব্যস্ত l তোমরা সীট পেয়েই গেছ কিন্তু নিজেরা সেট হচ্ছ l বিদেশে তারা নিজেদের বানানো বিনাশকারী শক্তির থেকে রক্ষা পাওয়ার বিধি খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে আছে l মেজরিটির জীবন, জীবন নয়, বরং কোশ্চেন মার্ক হয়ে গেছে l যারা অজ্ঞানী তারা তাদের রক্ষার সাধন খুঁজে বেড়াচ্ছে, আর জ্ঞানী বাচ্চারা প্রত্যক্ষতার পতাকা উত্তোলনে যুক্ত হয়ে আছে ! বিশ্বের মানুষের অবস্থা এইরকম - আমাদের এখন সঙ্কটাবস্থা থেকে রক্ষা কর ! বিভিন্ন রকম সঙ্কটের মধ্যে লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো আত্মাদের শান্তির ঠিকানা দাও l আচ্ছা l
যারা সদা সম্পন্ন স্থিতির সীটে সেট থাকে, নিজের এবং বিশ্বের বিঘ্ন-বিনাশক, বীজরূপ বাবার সঙ্গে সম্বন্ধে থেকে সদা শ্রেষ্ঠ সঙ্কল্প রূপী বীজকে ফলপ্রদ বানিয়ে প্রত্যক্ষ ফল ভক্ষণকারী হয়ে সদা সন্তুষ্ট থাকে, সন্তুষ্টমণি সেই বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ এবং নমস্কার l
*হোস্টেলের কুমারীদের সাথে বাপদাদার সাক্ষাৎকারঃ-*
*১)* নিজেদের ভাগ্য দেখে উৎফুল্ল তো হও, তাই না ? ভুলপথে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছ l লোকসানের পরিবর্তে যাতে অর্জন হয়, তোমরা সেই জীবন বানিয়েছ l লৌকিক জীবন বিনা জ্ঞানে শুধুই লোকসান আর জ্ঞানী জীবনে প্রতিটা সেকেন্ডে শুধুমাত্র অর্জন, অর্জন ছাড়া কিছু নেই l যাই হোক না কেন, সব ব্রাহ্মণই সৌভাগ্যবান, তাহলেও কিন্তু কুমারীরা ডবল ভাগ্যবান l তাছাড়া, কুমারী জীবনে ব্রহ্মাকুমারী হওয়া, ব্রাহ্মণ হওয়া এটি মহান l এটা কোনো ক্ষুদ্র বিষয় নয়; অনেক বড় ব্যাপার ! এমন নেশা থাকে কি হয়ে গেছি ! সাধারণ কুমারী থেকে শক্তিরূপ হয়ে গেছি ! মায়া বিনাশকারী শক্তি তোমরা, তাই না ! মায়াতে ভীত নও তোমরা, বরং মায়ার বিনাশকারী l দুর্বল নও, বাহাদুর (সাহসী) l তোমরা ছোট-খাটো ব্যাপারে তো ভীত হও না, তাই না ? সদা তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি মনে রাখলে, ছোট ছোট ব্যাপারগুলো কিছুই বোধ হবে না l তোমরা কি তোমাদের সম্পূৰ্ণ জীবনের সওদা করেছ, নাকি যে সময় পর্যন্ত হোস্টেলে আছ, ততো অবধি সওদা করেছ ? কখনও শ্রেষ্ঠ জীবন থেকে সাধারণ জীবনে কেউই জেনেবুঝে যেতে পারে না l যদি লাখপতিকে গরীব হতে বলো, সে কি গরীব হবে ? সার্কমস্ট্যান্সের কারণে কেউ যদি হয়েও যায়, তবুও তার ভালো লাগবে না l সুতরাং, এই জীবন স্বরাজ্য অধিকারী জীবন l এই জীবন থেকে তোমরা সাধারণ জীবনে যেতে পার না l সুতরাং, এখন বোধশক্তিসম্পন্ন হয়ে অনুভব করছ, নাকি একে অপরের সঙ্গতে চলছ ? নিজের বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছ ? নিজের বিবেকের জাজমেন্টে এই জীবন বানিয়েছ, তাই না! নাকি মা-বাবা বলেছে, সেইজন্য চলে এসেছ ? আচ্ছা !
*২)* কুমারীরা নিজেদের উৎসর্গ (অফার)করেছ ? যেখানে তোমাদের পাঠানো হবে সেখানে তোমরা যাবে ? পাকা সওদা করেছ নাকি কাঁচা ? পাকা সওদা হলে, 'যেখানেই বসাতে হয় বসাও, যা করানোর করাও', মানসিকভাবে এইরকম প্রস্তুত হয়েছ তোমরা? যদি কোনও বন্ধন থাকে তো পাকা সওদা হয়নি l যদি নিজে প্রস্তুত থাক তবে কেউই তোমায় বাধা দিতে পারে না l একটা ছাগকে বেঁধে যে কোন জায়গায় রাখা যায়, কিন্তু সিংহকে কেউ বাঁধতে পারে না l সুতরাং, সিংহী কিভাবে কারো বন্ধনে আসতে পারে ! তারা জঙ্গলে বাস করেও মুক্ত l তাহলে তোমরা কে ? সিংহী ? সিংহী অর্থাৎ যে রণভূমিতে আসে l যখন তোমাদের *এক বল, এক ভরসা* থাকে, যখন তোমরা সব বাচ্চার সাহস থাকে, তখন বাবা সহায় হন l যত কঠিন বন্ধনই হোক না কেন, সাহসের আধারে সেই কঠিন বন্ধনও সহজে ছিন্ন হয়ে যায় l যেমন দেখানো হয়, জেলের তালাও খুলে গেল তো তোমার বন্ধনও ছিন্ন হলো l অতএব, এইরকম হও l যদি সামান্য বন্ধনও থাকে, তবে সেটা যোগ অগ্নিতে ভস্ম করে দাও l ভস্ম হয়ে গেলে নাম-চিহ্নের লেশমাত্র থাকবে না l ভাঙলে, তবুও তা' গিঁট দিয়ে বাঁধা যেতে পারে, সেইজন্য ভেঙে দিও না বরং যদি ভস্ম করে দাও তবে সদাসর্বদার জন্য মুক্ত হয়ে যাবে l আচ্ছা -
*বাছাই করা অব্যক্ত মহাবাক্য*
*সরলচিত্ত হও, তবেই সফলতা অর্জন করতে থাকবে*
ব্রাহ্মণের মুখ্য সংস্কার হলো, সর্বস্ব ত্যাগী l ত্যাগের মাধ্যমেই জীবনে সরলতা এবং সহনশীলতার গুণ তোমরা বিকশিত করতে পার l যার মধ্যে সরলতা, সহনশীলতা থাকে, তারা অন্যদেরও অবশ্যই আকর্ষণ করবে এবং একে অপরের স্নেহী হতে পারবে l যে নিজে সরলচিত্ত থাকে সে অন্যকেও সরলচিত্ত বানাতে পারে l সরলচিত্ত হওয়া অর্থাৎ যা তুমি শোন, দেখ বা কর, সেই সব সার-যুক্ত হওয়া প্রয়োজন এবং সবকিছুর সার অংশ একমাত্র তখনই নিতে পারবে, আর যে কথা বা কর্ম নিজে করবে তা' সার-পূর্ণ হতে দাও l
যারা নিজেরা সরল পুরুষার্থী তারা অন্যদেরও সরল পুরুষার্থী বানাতে সমর্থ হয় l সরল পুরুষার্থীরা সব বিষয়ে অলরাউন্ডার হবে l তাদের মধ্যে কোনরকম খামতি দৃশ্যগোচর হবে না l কোনও ব্যাপারে তাদের সাহসের অভাব হবে না l তারা কখনও বলবে না যে কোনকিছু করতে তারা অপারগ l এই *এক সরলতার গুণে সব বিষয়ে স্যাম্পল হয়ে পাস উইথ অনার হতে সমর্থ হয় l* তোমরা সাকার বাবাকে দেখেছ, তিনি যতখানি নলেজফুল ততখানিই সরল স্বভাব l একেই বলা হয় শৈশবের সংস্কার, প্রবীণের সাথে প্রবীণ, শিশুর সাথে শিশু হওয়া l এইভাবে ফলো ফাদার করে সরলচিত্ত হও l
অন্যদের সংস্কার সরল বানানোর সাধন হলো, *"হাঁ জী"* বলা অর্থাৎ সম্মতিজ্ঞাপক শব্দ বলা l যখন তোমরা এখানে *হাঁ জী* বলবে তখন ওখানে সত্যযুগে তোমাদের প্রজাও হাঁ জী বলবে l যদি এখানেই *না জী* *না জী* বলো তো ওখানেও প্রজারা দূর থেকেই নমস্কার জানাবে l সুতরাং *না* শব্দকে সরিয়ে দিতে হবে l সবকিছুতে আগে হাঁ জী l এতে সরল হওয়ার সংস্কার বিকশিত হবে l সফলতার প্রতিমূর্তি হওয়ার জন্য সরলতা এবং সহনশীলতা, এই মুখ্য গুণ ধারণ কর l যখন ধৈর্যশীল কোন মানুষ ভেবেচিন্তে কাজ করে তখনই সফলতা প্রাপ্ত হয় l একইভাবে, যারা সরল স্বভাবের তারা সহনশীল হয়, যদি কারও কঠোর সংস্কার থাকে, তাকে তারা নিজেদের সহনশীলতার শক্তি দিয়ে শীতল বানাতে পারে, কঠিন কার্যকে সহজ বানাতে সমর্থ হয় l
তোমাদের স্মারকচিহ্ন রূপে দেবতাদের যে ছবি বানানো হয়, সেখানে চেহারাতে অবশ্যই সারল্য দেখানো হয় l এই বিশেষ গুণ তারা প্রদর্শন করে l ফিচার্সে (আকৃতিতে) তারা সরলতা দেখায়, যেটাকে তোমরা বলো ভোলাভালা l যে যত সহজ পুরুষার্থী হবে সে মন্সাতেও সরল, বচন এবং কর্মেও সরল হবে, একেই বলা হয় ফরিস্তা l সরলতার গুণ ধারণের সাথে অন্তর্লীন করার শক্তি এবং সহন করার শক্তিও অবশ্যই প্রয়োজন l যদি অন্তর্লীন করার আর সহন করার শক্তি না থাকে তবে সরল ভাব অতিমাত্রায় নিস্পৃহতার রূপ ধারণ করে নেয় এবং কখনো কখনো সরলবিশ্বাস প্রচুর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় l অতএব এমন সরলচিত্ত হ'য়ো না l
সরলতার গুণের কারণে বাবাকেও ভোলানাথ বলা হয়, কিন্তু ভোলানাথ হওয়ার সাথে সাথে তিনি আলমাইটি অথরিটিও l শুধু ভোলানাথ নন l সুতরাং, তোমাদেরও সরলতার গুণ ধারণ করা প্রয়োজন, কিন্তু সবসময় তোমাদের শক্তিস্বরূপও স্মরণে রেখ l যদি শক্তিরূপ ভুলে শুধু ভোলা হয়ে যাও, তবে মায়ার গোলায় তোমরা বিদ্ধ হবে l অতএব, এমন শক্তিস্বরূপ হও যাতে মায়া তোমাদের প্রতিরোধ করার আগে নমস্কার করে ! তোমাদের খুবই সতর্ক, মনোযোগী আর দক্ষ হতে হবে l ব্রাহ্মণ জীবনে এমন বিশেষত্ব সম্পন্ন হও, যাতে তোমাদের স্বভাব সদা সরল হয়, বোলও সরল হয় এবং প্রতিটা কর্মও সরলতা সম্পন্ন হয় l সদা *একের মতে, একের সঙ্গে সর্ব সম্বন্ধ, একের সঙ্গে সর্বপ্রাপ্তি করাকালীন সদা একের গভীরে নিমজ্জিত থাকার সহজ অভ্যাসী হও l* সদা খুশিতে থাক আর খুশির ভান্ডার বিলিয়ে দাও l
সরলতার গুণ জীবনে আনার জন্য বর্তমান সময়ে শুধু একটা বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, তোমাদের স্থিতি যেন স্তুতির ওপরে নির্ভর করে না হয় l যদি তোমাদের স্থিতি স্তুতির ওপরে নির্ভর করে, তবে যে কর্ম তোমরা কর, তার ফলের ইচ্ছা বা লোভ হবে l যদি তোমাদের স্তুতি হয় তো স্থিতিও ভালো থাকে, আর যদি নিন্দা হয় তো নির্ধনের অর্থাৎ অনাথের মতো হয়ে যাও l তখন তোমরা নিজেদের স্টেজ ছেড়ে দাও আর ধনীকে অর্থাৎ নিধিনাথকে ভুলে যাও l সুতরাং প্রশংসিত হওয়ার কথা কখনো ভেবনা l স্তুতির ওপর ভিত্তি করে তোমাদের স্থিতি রেখনা, একমাত্র তখনই তোমাকে বলা যাবে সরলচিত্ত l সরলতাকে নিজের স্বভাব বানিয়ে নিলে গুটিয়ে নেওয়ার শক্তি তোমরা সহজে বিকশিত করতে পারবে l যে সরল স্বভাবের হবে সে সবার স্নেহী হবে, এবং সকলের থেকে তারা অবশ্যই সহযোগ লাভ করবে l সেইজন্য তারা সব ব্যাপারে সহজে মুখোমুখি হতে এবং সবকিছু গুটিয়ে নিতে পারে l তোমরা যত সরলমতি হবে, মায়াও তোমাদের ততই কম প্রতিরোধ করবে l আর তখন তোমরা সকলের প্রিয় হয়ে যাবে l
যারা সরলপ্রকৃতি হয়, তাদের ব্যর্থ সঙ্কল্প এত থাকে না l তাদের সময়ও ব্যর্থ যায় না l ব্যর্থ সঙ্কল্প না থাকার কারণে তাদের বুদ্ধি বিশাল এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন (দূরাদেশী) হয়, সেইজন্য তাদের সামনে কোনও সমস্যা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না l যত সরলতা থাকবে স্বচ্ছতাও ততটাই হবে l স্বচ্ছমণি সবাইকে আকৃষ্ট করে l স্বচ্ছতা অর্থাৎ সুস্পষ্টতা এবং সততা তখনই আসবে যখন তোমরা নিজের স্বভাব সরলভাবে গড়ে তুলবে l যারা সরল স্বভাবের তারা বহুরূপী হতে পারে l কোনো নরম জিনিসকে যে কোন ছাঁচে ঢালা যায় l তোমরা গোল্ড হয়েছ, কিন্তু এখন গোল্ডকে অগ্নিতে গলাও যাতে মোল্ডও হতে পার অর্থাৎ ছাঁচে ঢালা যায় l এই মোল্ড হওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকার কারণে সার্ভিসের সফলতায় ঘাটতি থেকে যায় l নিজের বা অন্যের অতীতের দিকে যদি না দেখ, তবে সরলচিত্ত হয়ে যাবে l যারা সরলচিত্ত হয়, তাদের মধ্যে মধুরতার গুণ প্রত্যক্ষ করা যায় l তাদের চোখে-মুখে এবং আচার-আচরণে মাধুর্য প্রত্যক্ষভাবে দৃশ্যগোচর হয় l যারা যত স্পষ্ট অর্থাৎ সহজবোধ্য হয়, তারা তত সরল এবং শ্রেষ্ঠ হয় l স্পষ্টতা শ্রেষ্ঠ স্থিতির কাছে নিয়ে আসে এবং স্পষ্টতা যত হয় সেই অনুপাতে সফলতাও হয় এবং সমতাও থাকে l স্পষ্টতা, সরলতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব তখন বাবা সমান করে তোলে l
বরদান:-
যেকোন পরিস্থিতিতে ফুলস্টপ লাগিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে সকলের থেকে আশীর্বাদ লাভ করার পাত্র ভব
যেকোন পরিস্থিতিতে তোমরা ফুল স্টপ তখনই লাগাতে পার, যখন বিন্দুস্বরূপ বাবা আর বিন্দুস্বরূপ আত্মার স্মৃতি থাকবে, আর কন্ট্রোলিং পাওয়ার থাকবে l যে বাচ্চারা যে কোনও পরিস্থিতিতে নিজেকে পরিবর্তন করে নিজেকেই প্রথমে ফুলস্টপ লাগানোর অফার করে, তারা আশীর্বাদ লাভের যোগ্য হয় l তারা নিজেরা নিজেদের থেকে আশীর্বাদ লাভ করে অর্থাৎ তাদের খুশির প্রাপ্তি হয়, বাবার থেকে এবং ব্রাহ্মণ পরিবার থেকেও আশীর্বাদ প্রাপ্ত হতে থাকে l
স্লোগান:-
যে সঙ্কল্পই কর তা'তে মাঝে মাঝে দৃঢ়তার সিলমোহর লাগালে বিজয়ী হয়ে যাবে l