২৩-০৮-১৯ প্রাতঃমুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - স্মরণের যাত্রার দ্বারা-ই তোমাদের উপার্জন সঞ্চিত হয়, ক্ষতির পরিবর্তে লাভ হয় এবং তোমরা বিশ্বের মালিক হয়ে যাও"
প্রশ্ন:-
সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ - এই কথাটির প্রকৃত অর্থ কি ?
উত্তর:-
তোমরা বাচ্চারা যখন সত্যের সঙ্গ অর্থাৎ বাবার সঙ্গ প্রাপ্ত করো, তখন তোমাদের অবস্থার ক্রমোন্নতি শুরু হয়। রাবণের সঙ্গ হলো অসৎ সঙ্গ, এই সঙ্গের দ্বারা তোমাদের অধঃপতন হয়, অর্থাৎ রাবণ তোমাদেরকে ডুবিয়ে দেয়। বাবা তোমাদেরকে উদ্ধার করে পারে নিয়ে যান। তিনি মুহূর্তের মধ্যে এমন সঙ্গ প্রদান করেন, যার দ্বারা তোমাদের গতি-সদগতি হয়ে যায়। এটাই হলো বাবার কামাল। সেইজন্য বাবাকে জাদুকরও বলা হয়।
ওম্ শান্তি।
বাচ্চারা বসে বসে স্মরণ করছিল। এটাকেই স্মরণের যাত্রা বলা হয়। বাবা বলেন, যোগ শব্দটাকে ব্যবহার কোরো না। বাবাকে স্মরণ করো। তিনি হলেন সকল আত্মার পিতা, পরমপিতা, পতিত-পাবন। এই পতিত-পাবনকেই স্মরণ করতে হবে। বাবা বলেন - সকল দৈহিক সম্বন্ধকে ভুলে গিয়ে কেবল বাবাকে স্মরণ করো। বলা হয় - মৃত ব্যক্তির কাছে এই জগৎটাও মৃত। দেহ এবং সকল দৈহিক সম্বন্ধ - যা কিছু চোখে দেখা যায়, সেগুলোকে স্মরণ করা উচিত নয়। কেবল বাবাকে স্মরণ করলেই তোমাদের পাপ ভস্ম হবে। তোমরা আত্মারা জন্ম-জন্মান্তর ধরে পাপ করে এসেছ। এই দুনিয়াটাই হলো পাপ আত্মাদের দুনিয়া। সত্যযুগ হলো পুণ্য আত্মাদের দুনিয়া। কিন্তু সকল পাপ নাশ হয়ে কীভাবে পুণ্য সঞ্চিত হবে ? নিশ্চয়ই বাবাকে স্মরণ করলেই জমা হবে। আত্মার মধ্যে তো মন-বুদ্ধি রয়েছে। সুতরাং বুদ্ধির দ্বারা-ই আত্মাদের স্মরণ করতে হবে। বাবা বলেন - তোমাদের যত মিত্র-আত্মীয় রয়েছে, তাদের সবাইকে ভুলে যাও। ওরা সকলেই একে অপরকে দুঃখ দেয়। প্রথম পাপ হলো ওরা কাম কাটারী চালায়। এরপর দুই নম্বরে ওরা কোন্ পাপ করে ? যে পিতা হলেন সকলের সদগতি-দাতা, যিনি সন্তানদেরকে অসীম সুখ প্রদান করেন অর্থাৎ স্বর্গের মালিক বানান, তাঁকেই সর্বব্যাপী বলে দেয়। এটা হলো পাঠশালা। তোমরা এখানে পড়তে এসেছ। এই লক্ষ্মী-নারায়ণ হলো তোমাদের এইম-অবজেক্ট। অন্য কেউই এইরকম বলতে পারবে না। তোমরা জানো যে এখন আমাদেরকে পবিত্র হয়ে পবিত্র দুনিয়ার মালিক হতে হবে। আমরাই বিশ্বের মালিক ছিলাম। পুরো ৫ হাজার বছর অতিক্রান্ত। দেবী-দেবতারাই তো বিশ্বের মালিক - তাই না ? কত শ্রেষ্ঠ পদ এটা। নিশ্চয়ই বাবা-ই এইরকম বানাবেন। বাবাকেই পরমাত্মা বলা হয়। তাঁর আসল নাম হলো শিব। কিন্তু তাঁর অনেক নাম রেখে দিয়েছে। যেমন বম্বেতে বাবুলনাথের মন্দির রয়েছে। অর্থাৎ যিনি কাঁটার জঙ্গলকে ফুলের বাগানে পরিণত করেন। নয়তো তাঁর আসল নাম একটাই - সেটা হলো শিব। এনার মধ্যে প্রবেশ করার পরেও তাঁর নাম শিব-ই থাকে। তোমাদের এই ব্রহ্মাকে স্মরণ করার দরকার নেই। ইনি তো একজন দেহধারী। তোমাদেরকে বিদেহীকে স্মরণ করতে হবে। তোমরা আত্মারা এখন পতিত হয়ে গেছ। একে পবিত্র বানাতে হবে। মহান আত্মা, পাপ আত্মা ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মহান পরমাত্মা কখনো বলা হয় না। কেউ কখনো নিজেকে ঈশ্বর কিংবা পরমাত্মা বলতে পারে না। মহাত্মা কিংবা পবিত্র আত্মা বলা হয়। সন্ন্যাসীরা সন্ন্যাস করে। তাই ওরা হলো পবিত্র আত্মা। বাবা বুঝিয়েছেন যে ওরাও সকলে পুনর্জন্ম নেয়। সকল দেহধারীকেই অবশ্যই পুনর্জন্ম নিতে হয়। বিকারের দ্বারা জন্ম নেওয়ার পরে যখন ওরা বয়স্ক হয়ে যায় তখন সন্ন্যাস নিয়ে নেয়। দেবতারা এইরকম করে না। ওরা সর্বদাই পবিত্র থাকে। বাবা এখন তোমাদেরকে অসুর থেকে দেবতা বানাচ্ছেন। দিব্যগুন ধারণ করলে তোমরা দৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। দৈব সম্প্রদায়ের মানুষেরা সত্যযুগে থাকে। আসুরিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা কলিযুগে থাকে। এখন এটা হলো সঙ্গমযুগ। এখন তোমরা বাবাকে পেয়েছ। তিনি বলছেন, এখন তোমাদেরকে অবশ্যই দৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। তোমরা তো দৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যেই এখানে এসেছ। যারা দৈব সম্প্রদায়ের, তারা অসীম সুখ ভোগ করে। এই দুনিয়াটাকে বলা হয় হিংস্র দুনিয়া। দেবতারা হলো অহিংস।
বাবা বলছেন - মিষ্টি মিষ্টি আত্মিক সন্তানেরা, তোমরা বাবাকে স্মরণ করো। তোমাদের যত গুরু রয়েছে, ওরা সকলেই দেহধারী। এখন তোমাদেরকে অর্থাৎ আত্মাদেরকে পরমাত্মা পিতাকে স্মরণ করতে হবে। পুণ্য আত্মা হয়ে গেলেই তোমরা সুখ ভোগ করবে। ৮৪ জন্ম পরে তোমরা আবার পাপ আত্মা হয়ে যাবে। এখন তোমরা পুণ্য সঞ্চয় করছ। যোগবলের দ্বারা পাপ নাশ করছ। এই স্মরণের যাত্রার দ্বারা-ই তোমরা বিশ্বের মালিক হও। তোমরাই বিশ্বের মালিক ছিলে - তাই তো? ওরা তারপরে কোথায় গেল? বাবা এইসব বিষয় বোঝাচ্ছেন। তোমরাই ৮৪ জন্ম নিয়েছ, তোমরাই সূর্যবংশী, চন্দ্রবংশী ছিলে। বলা হয় - ভগবান এসে ভক্তির ফল দেন। কোনো দেহধারীকে ভগবান বলা হয় না। তিনি হলেন নিরাকার শিব। যেহেতু শিবরাত্রি পালন করা হয়, সুতরাং তিনি নিশ্চয়ই আসেন। কিন্তু তিনি বলছেন, আমি তোমাদের মতো জন্মগ্রহণ করি না। আমাকে একটা শরীর লোন নিতে হয়। আমার নিজের কোনো শরীর নেই। যদি থাকত, তাহলে তো সেই শরীরের একটা নামও থাকত। ব্রহ্মা তো এনার নাম। ইনি সন্ন্যাস করেছেন। তাই এনার নাম ব্রহ্মা রাখা হয়েছে। তোমরা হলে ব্রহ্মাকুমার এবং কুমারী। নয়তো ব্রহ্মা এলো কোথা থেকে ? ব্রহ্মা হলেন শিবের সন্তান। শিববাবা তাঁর সন্তান ব্রহ্মার মধ্যে প্রবেশ করে তোমাদেরকে জ্ঞান দেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শংকর হলো এনার সন্তান। নিরাকার পিতার সকল সন্তানরাও নিরাকার। আত্মারা এখানে এসে শরীর ধারণ করে ভূমিকা পালন করে। বাবা বলেন, আমি পতিতদেরকে পবিত্র বানানোর জন্যই আসি। আমি এই শরীরটাকে লোন নিই। এগুলো হলো শিব ভগবানুবাচ। কৃষ্ণকে তো ভগবান বলা যাবে না। ভগবান তো অদ্বিতীয়। কৃষ্ণের মহিমা সম্পূর্ণ পৃথক। রাধা-কৃষ্ণ হলো প্রথম দেবতা। ওরাই স্বয়ম্বরের পরে লক্ষ্মী-নারায়ণ হয়ে যায়। কিন্তু এই কথাটা কেউই জানে না। রাধা-কৃষ্ণের ব্যাপারে কেউই কিছু জানে না। ওরা পরবর্তীকালে কোথায় গেল? রাধা-কৃষ্ণই স্বয়ম্বরের পরে লক্ষ্মী-নারায়ণ হয়ে যায়। ওরা দুজন আলাদা মহারাজার সন্তান। ওখানে অপবিত্রতার চিহ্ন মাত্র থাকবে না। কারন ওখানে ৫ বিকার রূপী রাবণ নেই। ওটা হলো রাম রাজ্য। বাবা এখন আত্মাদেরকে বলছেন, আমাকে স্মরণ করলে তোমাদের পাপ নাশ হবে। তোমরাই সতোপ্রধান ছিলে। এখন তমোপ্রধান হয়ে গেছ। ক্ষতি হয়ে গেছে, এখন পুনরায় সঞ্চয় করতে হবে। ভগবানকে সওদাগরও বলা হয়। খুব কমজন-ই তাঁর সাথে সওদা করে। তাঁকে আবার জাদুগরও বলা হয়। সমগ্র দুনিয়ার সদগতি করে দিয়ে তিনি কামাল করে দেন। সকলকে মুক্তি এবং জীবন-মুক্তি প্ৰদান করেন। যেন জাদুর খেলা। কোনো মানুষ কখনো মানুষকে এইসব দিতে পারবে না। তোমরা ৬৩ জন্ম ধরে ভক্তি করে এসেছ। কেউ কি এইরকম ভক্তি করে সদগতি প্রাপ্ত করেছে ? কেউ কি সদগতি দিতে পেরেছে ? হতেই পারে না। একজনও ফেরত যেতে পারে না। অসীম জগতের পিতা এসেই সবাইকে ফেরত নিয়ে যান। কলিযুগে অনেক রাজা রয়েছে। ওখানে তোমরা খুব কমজন রাজত্ব করবে। বাকি আত্মারা মুক্তিতে চলে যাবে। তোমরা ভায়া মুক্তিধাম হয়ে জীবনমুক্তিতে যাও। এই চক্র ক্রমাগত আবর্তিত হয়। এখন তোমরা আত্মারা এই চক্র দর্শন করেছ। রচয়িতা এবং রচনার আদি-মধ্য এবং অন্তিমের জ্ঞান পেয়েছ। তোমরাই এই জ্ঞানের দ্বারা নর থেকে নারায়ণ হয়ে যাও। দেবতাদের রাজধানী স্থাপন হয়ে গেলে আর তোমাদের জ্ঞানের কোনো প্রয়োজন হবে না। ভক্তদেরকে ভগবান অর্ধেক কল্পের জন্য সুখের ফল দেন। তারপর রাবণ রাজ্যে দুঃখ শুরু হয়। ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে থাকে। তোমরা যখন সত্যযুগেও থাকো, তখনও প্রত্যেক দিন একটু একটু করে নীচে নামতে থাকো। তোমরা ১৬ কলা সম্পূর্ণ হয়ে যাও এবং তারপর অধঃপতন শুরু হয়। প্রতি সেকেন্ডে একটু একটু করে অবনতি হতেই থাকে। অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আজ এই জায়গায় এসে পৌঁছেছ। ওখানেও তো এইরকম ভাবেই সময় অতিবাহিত হবে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যাই। তারপর উকুনের মতো ধীরে ধীরে নীচে নামতে হবে।
বাবা বলছেন, আমি সকলকে সদগতি প্রদান করি। কোনো মানুষ কখনো মানুষের সদগতি করতে পারবে না। কারণ তাদের নিজেদের জন্মই তো বিকারের দ্বারা হয়। তাই ওরা নিজেরাই পতিত। বাস্তবে কৃষ্ণকেই প্রকৃতপক্ষে মহাত্মা বলা সম্ভব। দুনিয়ায় যাদেরকে মহাত্মা বলা হয়, তারা তো বিকারের দ্বারা জন্ম নেওয়ার পরে সন্ন্যাস গ্রহণ করে। কিন্তু ওরা হলো দেবতা। দেবতারা সর্বদাই পবিত্র থাকে। ওদের মধ্যে কোনোরূপ বিকার থাকে না। ওই দুনিয়াটাকেই নির্বিকারী দুনিয়া বলা হয়। এই দুনিয়াটাকে বলা হয় বিকারী দুনিয়া। নো পিওরিটি। এদের চালচলন খুবই খারাপ। দেবতাদের চালচলন খুব সুন্দর হয়। সকলে ওদেরকে নমস্কার করে। ওদের চরিত্র ভালো বলেই তো অপবিত্র মানুষরা ওইসব পবিত্র দেবতাদের কাছে মাথা ঠোকে। আজকাল তো লড়াই ঝগড়া কত কিছুই না হচ্ছে। চারিদিকে শুধুই ঝামেলা। এখন থাকার মতো জায়গাটুকুও পাওয়া যায় না। সবাই চায় যে জনসংখ্যা কম হোক। কিন্তু এটা তো বাবার কর্তব্য। সত্যযুগে খুব কম সংখ্যক মানুষ থাকবে। এত শরীর সব আগুনে পুড়ে যাবে এবং বাকি সব আত্মারা নিজের সুইট হোমে ফিরে যাবে। ক্রমানুসারে শাস্তি তো পেতেই হবে। যে সম্পূর্ণ পুরুষার্থ করে বিজয় মালার দানা হয়ে যায়, সে শাস্তির হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। মালা তো কেবল একজনকে নিয়ে হবে না। যিনি ওদেরকে এইরকম বানিয়েছেন, তিনি হলেন মালার ফুল। তারপরে রয়েছে যুগল দানা - এটা প্রবৃত্তি মার্গের নিদর্শন। তাই যুগল দানার মালা বানানো হয়। সিঙ্গল দানার মালা হয় না। সন্ন্যাসীদের কোনো মালা হয় না। ওরা নিবৃত্তি মার্গের পথিক। ওরা কখনো প্রবৃত্তি মার্গের কাউকে জ্ঞান দিতে পারবে না। ওরা পবিত্র হওয়ার জন্য সীমিত কিছু বিষয়ের থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করে। ওরা হলো হঠযোগী। এটা হল রাজযোগ। রাজত্ব প্রাপ্ত করানোর জন্য বাবা তোমাদেরকে এই রাজযোগ শেখাচ্ছেন। বাবা প্রত্যেক ৫ হাজার বছর অন্তর আসেন। অর্ধেক কল্প ধরে তোমরা সুখের দুনিয়ায় রাজত্ব করো। তারপরে রাবণ রাজ্যে তোমরা ধীরে ধীরে দুঃখী হয়ে যাও। এটাকেই সুখ-দুঃখের খেলা বলা হয়। তোমরা পাণ্ডবরা বিজয়ী হও। এখন তোমরা হলে পান্ডা। ঘরে যাওয়ার যাত্রা করাচ্ছ। ওই যাত্রা তো মানুষ জন্ম-জন্মান্তর ধরে করছে। এখন তোমরা ঘরে ফেরার যাত্রা করছ। বাবা এসে সবাইকে মুক্তি-জীবনমুক্তির রাস্তা বলছেন। তোমরা জীবনমুক্তিতে যাবে এবং বাকি সবাই মুক্তিতে চলে যাবে। হাহাকারের পরে জয়জয়কার হবে। এখন এটা হলো কলিযুগের অন্তিম সময়। অনেক বিপদ-আপদ আসবে, চারিদিকে অনেক হাঙ্গামা হবে। সেইরকম সময়ে তোমরা স্মরণের যাত্রাতে থাকতে পারবে না। তাই বাবা বলছেন, এখন বেশি করে স্মরণের যাত্রাতে থাকো যাতে পাপ নাশ হয়ে যায় এবং সঞ্চয়ও হয়। সতোপ্রধান তো হয়ে যাও। বাবা বলছেন, আমি প্রত্যেক কল্পের পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে আসি। এটা অতি অল্প সময় ব্যাপী ব্রাহ্মণদের যুগ। টিকি হলো ব্রাহ্মণদের চিহ্ন। ব্রাহ্মণ, দেবতা, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র - এই চক্র ক্রমাগত আবর্তিত হতে থাকে। ব্রাহ্মণদের বংশ খুব ছোট হয়। বাবা এই ছোট যুগে এসে তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। তোমরা হলে সন্তান, স্টুডেন্ট এবং ফলোয়ার্স। সবই একজনের। এইরকম কোনো মানুষ নেই যিনি একাধারে পিতা, আবার শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষক অর্থাৎ সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তিমের জ্ঞান দেন, আবার সাথে করে নিয়েও যান। কোনো মানুষই এইরকম হতে পারবে না। তোমরাই এখন এইসব কথা বুঝতে পারছ। সত্যযুগেও প্রথমে খুবই ছোট বংশ থাকবে। বাকি আত্মারা সবাই শান্তিধামে চলে যাবে। বাবাকে বলা হয় সকলের সদগতি দাতা। হে পতিত-পাবন পিতা, তুমি এসো - এইরকম ভাবে বাবাকে আহ্বান করা হয়। আবার অপরদিকে বলে দেয় যে কুকুর-বিড়াল, নুড়ি-পাথর সবকিছুতেই পরমাত্মা রয়েছেন। অসীম জগতের পিতার নিন্দা করে। যে পিতা স্বর্গের মালিক বানান, তাঁর নিন্দা করে। এটাকেই রাবণের সঙ্গদোষ বলা হয়। সৎসঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। রাবণ রাজ্য শুরু হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের অধঃপতন শুরু হয়। বাবা এসে তোমাদের অবস্থার উন্নতি করেন। বাবা এসে যখন মানুষ থেকে দেবতা বানান, তখন সকলের কল্যাণ হয়ে যায়। এখন প্রায় সকলেই এখানে আছে। যে কয়েকজন এখনো অবশিষ্ট আছে, তারাও চলে আসবে। যতদিনে নিরাকারী দুনিয়া থেকে সকল আত্মা চলে আসবে, ততদিনে তোমরাও পরীক্ষায় ক্রমানুসারে উত্তীর্ণ হতে থাকবে। এটা হল আধ্যাত্মিক কলেজ। আত্মিক পিতা তাঁর আত্মিক সন্তানদেরকে পড়ানোর জন্য আসেন। রাবণ রাজ্য শুরু হওয়ার পর শরীর ত্যাগ করে অপবিত্র রাজা হয়েছ এবং পবিত্র দেবতাদের কাছে মাথা ঠুকতে শুরু করেছ। আত্মা-ই পতিত অথবা পবিত্র হয়। আত্মা পতিত হয়ে গেলে শরীরটাও পতিত পাওয়া যায়। নিখাদ সোনাতে যদি খাদ মেশানো হয় তবে অলংকারটাও খাদ মিশ্রিত হয়ে যায়। কিন্তু আত্মার মধ্যে থেকে খাদ কিভাবে বেরোবে? এর জন্য যোগ অগ্নি প্রয়োজন। এর দ্বারা-ই তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হবে। আত্মার মধ্যে রূপা, তামা, লোহা ইত্যাদি মিশে গেছে। এগুলো হলো খাদ। আত্মা হলো সত্যিকারের সোনা। এখন অশুদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এই খাদ বের হবে কিভাবে? এর জন্য যোগ অগ্নি প্রয়োজন। তোমরা এখন জ্ঞানচিতাতে বসে আছ। আগে কামচিতাতে বসে ছিলে। বাবা এসে জ্ঞান চিতার ওপরে বসান। কেবল জ্ঞানের সাগর অর্থাৎ বাবা ছাড়া অন্য কেউ জ্ঞান চিতায় বসাতে পারবে না। মানুষ ভক্তিমার্গে কত পূজাপাঠ করে কিন্তু কাউকেই জানে না। এখন তোমরা সবাইকে জেনেছ। যখন তোমরা সবাই দেবতা হয়ে যাও তখন আর কোন পূজা-অর্চনার ব্যাপার থাকবে না। যখন রাবণ রাজ্য শুরু হয়, তখনই ভক্তিও শুরু হয়। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্যসার :-
১. শাস্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিজয় মালার দানা হওয়ার পুরুষার্থ করতে হবে। আধ্যাত্মিক পান্ডা হয়ে সবাইকে শান্তিধাম অর্থাৎ ঘরে যাওয়ার যাত্রা করাতে হবে।
২. স্মরণের যাত্রাকে বাড়াতে বাড়াতে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যেতে হবে। যোগ অগ্নির দ্বারা আত্মাকে সত্যিকারের সোনা অর্থাৎ সতোপ্রধান বানাতে হবে।
বরদান:-
প্রত্যেক কর্মে বাবার সাথে বিভিন্ন সম্বন্ধের দ্বারা স্মৃতি স্বরূপ হয়ে শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান ভব
প্রত্যেক দিনের সকল কর্মে কখনো ভগবানের সখা কিংবা সখী রূপকে, কখনো জীবনসঙ্গী রূপকে, কখনো বিশেষ প্রিয় সন্তান রূপকে, যখন হতাশ হয়ে যাও তখন সর্বশক্তিমান স্বরূপের দ্বারা মাস্টার সর্বশক্তিমানের স্মৃতিকে জাগরিত করলে আন্তরিক খুশি অনুভব করবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই বাবার সঙ্গের অনুভব হবে। তখন সর্বদাই এই ব্রাহ্মণ জীবনকে অমূল্য এবং শ্রেষ্ঠ বলে অনুভব করবে।
স্লোগান:-
ব্রহ্মাবাবার সমান হওয়ার অর্থ সম্পূর্ণতার লক্ষ্যে উপনীত হওয়া।