১২-১০-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - বাবার সাথে মাত্র একবার দৃষ্টির মিলনেই সমগ্র বিশ্বের মানুষেরাই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, তাই তো বলা হয় পরমাত্মা বাবার দৃষ্টিতে আত্মার কি অপার আনন্দ.... "

প্রশ্ন:-

বাচ্চারা, তোমাদের মনে খুশীর ঢোলক বাজতে থাকা উচিত - কিন্তু কেন ?

উত্তর:-

যেহেতু তোমরা জানো, বাবা এসেছেন সবাইকে সাথে করে নিয়ে যেতে। এবার তোমরা তোমাদের অতি আপন বাবার সাথে আপন ঘরেই ফিরে যাবে। হাহাকারের পরেই হবে জয়জয়কার। বাবার একটিবারের দৃষ্টিতেই সমগ্র বিশ্বের মুক্তি ও জীবনমুক্তির অবিনাশী উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। ফলে সমগ্র বিশ্বই তখন আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।

ওঁম্ শান্তি!

আত্মাদের পিতা এখানে বসে ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছেন। বাচ্চারা, তোমরা তো জানো- তৃতীয় নেত্রেরও অস্তিত্ব আছে। বাবা তো সমগ্র দুনিয়ার আত্মাদেরকেই অবিনাশী উত্তরাধিকার দিতে আসেন। বাবার হৃদয়ে তো সবার জন্যই সেই উত্তরাধিকারের কথা স্মরণে থাকে। যেমন লৌকিক পিতার হৃদয়েও তার সন্তানের জন্য উত্তরাধিকারের কথা স্মরণে থাকে, কিভাবে সে তার সন্তানকে তা দেবে। আর তার যদি কোনো সন্তান না থাকে, তখন সে বিভ্রান্ত হয়ে ভাবে কাকে তা দেওয়া যায় ! তখন সে দত্তক নেয়। আর এখানে তো স্বয়ং বাবা প্রত্যক্ষ বসে আছেন, যিনি লক্ষ্য রাখেন সমগ্র বিশ্বের যত আত্মা আছে, সবার প্রতিই। বাবা চান সবাইকেই সবাইকে সেই উত্তরাধিকার দিতে। যদিও এইখানে বসে আছেন উনি, দৃষ্টি কিন্তু সমগ্র বিশ্বের প্রতি আর সমগ্র বিশ্বের আত্মাধারী মানুষদের প্রতি- কিভাবে সমগ্র দুনিয়াকে অপার আনন্দে রাখা যায়। এই কারণেই বাবা বোঝাচ্ছেন- বর্তমানের এই সময়টা হলো পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ। তোমরাও জেনেছো, বাবা এসেছেন সবাইকে শান্তিধাম আর সুখধামে নিয়ে যারার জন্য। যাতে সবাই অপার আনন্দে থাকতে পারে। অবিনাশী ড্রামার চিত্রনাট্য অনুসারে এইভাবেই কল্প-কল্প ধরে যেন বাচ্চারা অপার আনন্দেই থাকতে পারে। বাবা ওঁনার সব সন্তানকেই যে মনে রাখে। তা বাচ্চা যেখানেই থাকুক না কেন, বাবার দৃষ্টি তো থাকবেই বাচ্চার প্রতি। তবুও প্রত্যেক বাচ্চাই এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ে না। এদিকে ড্রামার চিত্রপট অনুসারে সবাইকেই যে ঘরে ফিরে যেতে হবে, তবেই তো ড্রামা সম্পূর্ণ হবে। অল্প সময় পরেই নিজেরাই তা বুঝতে পারবে, বিনাশ যে প্রায় দোরগোড়ায়। তারপর আবার নতুন দুনিয়ার স্থাপন হবে। যেহেতু আত্মা চৈতন্য সত্ত্বা, তাই বুদ্ধিতে তা আসবেই আসবে যে, এখন যখন বাবা এসেই পড়েছেন, স্বর্গ-রাজ্য তো স্থাপন হবেই হবে। আর আমরা আত্মারা শান্তিধাম চলে যাব । যদিও প্রত্যেকরই গতি হবে আর সেই সাথে বি.কে.-দের হবে সদগতি। আর সেই উদ্দেশ্যই বাবা এসেছেন বি.কে.-রা যেন স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছাতে পারে। তবেই তো তোমাদের জয়জয়কার হবে। যেখানে বর্তমান দুনিয়ায় কেবলই হাহাকার অবস্থা। যেখানে-সেখানে আকালের দৃশ্য, কোথাও চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কোথাও বা ভূমিকম্প। এইসব কারণে হাজারে-হাজারে মৃত্যুও ঘটছে। যদিও এভাবেই তো মৃত্যু হওয়ারই আছে। কিন্তু সত্যযুগে এমন কিছু হয় না। বাবা সম্যক জানেন, উনি এলেই সমগ্র বিশ্ব আবারও হাহাকার থেকে মুক্ত হয়ে জয়জয়কার হয়ে উঠবে। বাবার এই আগমন হয় এই ভারত ভূ-খণ্ডেই। সমগ্র বিশ্বের তুলনায় ভারত যেন তখন ছোট্ট একটি গ্রাম। অর্থাৎ অসীম জগতের তুলনায় বাবার কাছে ভারত যেন ছোট্ট একটি গ্রাম। সত্যযুগও তেমনি অসীমের সমগ্র বিশ্বের তুলনায় ছোট্ট একটি গ্রামের মতনই হবে। অথচ এখন তার কতই না বিস্তার। বাবার স্মৃতিতে কিন্তু সবকিছুই আছে। যিনি এই ব্রহ্মার শরীরের সাহায্য নিয়ে বি.কে.-দেরকে বোঝাচ্ছেন এসব। বাচ্চারাও তাদের পুরুষার্থ সেই ধারায় করে চলেছে, যেমনটা করে আসছে কল্প-কল্প ধরে। এই বাবা সেই কল্পবৃক্ষের বীজ স্বরূপ। পৃথিবীতে যেসব বৃক্ষ, তা তো জাগতিক বৃক্ষ। কিন্তু ঊর্ধ্বে তো বিমূর্ত (বিদেহী) বৃক্ষ। একমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই তা জানো, কিভাবে থাকে সেই বৃক্ষের অবস্থান। লোকেরা তা বুঝেই উঠতে পারবে না। বুদ্ধিমান আর নির্বোধের মধ্যে এটাই হলো তফাৎ। একমাত্র সুবুদ্ধিসম্পন্নরাই সেই স্বর্গ-রাজ্যে রাজত্ব করতো, যে রাজ্যকে বলা হতো সত্যভূমি বা সত্যযুগ - অর্থাৎ স্বর্গরাজ্য।



বাচ্চারা, তোমাদের মনে এখন খুশীর জোয়ার বইতে থাকা উচিত। যেখানে বাবা স্বয়ং এখন এসেই গেছেন, এবার তো এই পুরোনো দুনিয়ার পরিবর্তন হবেই হবে। যে যত বেশী করে পুরুষার্থ করবে, সে তত উচ্চ পদের অধিকারী হতে পারবে। বাবা স্বয়ং যে তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন এখন। তোমাদের এমন স্কুলের আরও অনেক বৃদ্ধিও পেতে থাকবে। শীঘ্রই তা অনেক সংখ্যায় পরিণত হবে। যদিও সবার স্কুল একই স্থানে হবে না। তা হলে এত সংখ্যায় বি.কে. থাকবেই বা কোথায় ? বাচ্চারা, একথা যেন অবশ্যই স্মরণে থাকে তোমাদের, তোমরা এবার সুখধামবাসী হতে চলেছো। ঠিক যেমন কেউ ৮-১০ বছরের জন্য বিদেশে গিয়ে বসবাস করে আবার সে তার স্বদেশ ভারতে ফিরে আসে। ভারত গরীব দেশ হওয়ায় বিদেশীরা তেমন সুখভোগ করতে পারে না এখানে। তেমনি বর্তমানের এই ধরাধামে তোমরাও প্রকৃত সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছো। এখন অবশ্য তোমরা বুঝতে পারছো, তোমরা যে উন্নত পঠন-পাঠন করছো, তার দ্বারাই তোমরা দেবতা হয়ে স্বর্গ-রাজ্যের মালিক হতে পারবে। সেখানে তো অপার সুখ। তাই সবাই সেই সুখধামকেই স্মরণ করে। দুঃখধামের অজ-পাড়াগাঁ অর্থাৎ এই কলিযুগকে স্মরণ করবে না মোটেই, এখানে যে কেবল দুঃখ আর দুঃখ। রাবণের রাজ্য এই পতিত দুনিয়ায় আজ অপরম্অপার দুঃখই দুঃখ। পরিবর্তনের আগামীতে আবার অপরম্অপার সুখ আর সুখ। তোমরাই যোগবলের দ্বারা সেই অপার সুখের দুনিয়ার স্থাপন করছো। এই যোগ হলো রাজযোগ। বাবা স্বয়ং তা জানাচ্ছেন- এই যোগের দ্বারাই বি.কে.-দেরকে রাজার-ও রাজা করে গড়ে তুলবেন উনি। অতএব এমন উন্নত করে গড়ে তোলার টিচারকে কত মনোযোগ সহকারে স্মরণ করা উচিত --তাই না! টিচারের সাহায্য ছাড়া ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার, ইত্যাদি কিছুই যে হওয়া যায় না। যদিও এমন ধারার কথা একেবারে নতুন কথা যে, আত্মার সাথে আত্মার পিতা পরমাত্মার মিলন যোগই প্রকৃত যোগ। যারা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বহুকাল -কিন্তু তা কত সময় ধরে ? বাবা স্বয়ং তা ব্যাখ্যাসহ বোঝান তোমাদের। লোকেরা তো তা লক্ষ-কোটি বছর বলে। কিন্তু বাবা জানাচ্ছেন- তা সঠিক নয়, এই বিচ্ছেদ ৫-হাজার বছর পূর্বের। যে বাচ্চারা প্রথম দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল বাবার থেকে, ৫-হাজার বছর বাদে তারাই আবার সর্বাগ্রে এসে মিলিত হচ্ছে বাবার সাথে।



বাচ্চারা, তোমাদের অবশ্যই খুব তীব্র পুরুষার্থী হতে হবে। বাবা ওঁনার মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চা’দের দিয়ে কোনও কষ্টের কাজ করান না। উনি কেবল বলেন, নিজেদেরকে আত্মা অনুভব করতে। জীব আত্মা (জীবাত্মা) বলা হয়, তাই না ! আত্মা অবিনাশী আর জীব বিনাশী। এই আত্মাই এক শরীর ত্যাগ করে অন্য কোনও নতুন শরীর গ্রহন করে। আত্মা কখনই পুরোনো হয় না। সত্যি কি আশ্চর্যের কথা। তোমাদেরকে যিনি পড়ান তিনি যেমন ওয়ান্ডারফুল, তোমাদের পঠন-পাঠনও তেমনই ওয়ান্ডারফুল। যদিও সবাই তা স্মরণে রাখতে পারে না, অনেকেই তা ভুলে যায়। আগের জন্মে কে কি পড়েছিল, তা কি কারও স্মরণে থাকে ? কিন্তু এই পঠন-পাঠন এমনই যে, এখন তোমরা যা কিছু পড়ছো, জানছো, শিখছো তার রেজাল্ট অর্থাৎ ফল পাবে নতুন দুনিয়ায় গিয়ে। যা কেবল বি.কে.-রাই তা জানে। অতএব তোমাদের অবশ্যই তা মনে রাখতে হবে- বর্তমান সময়কালটা পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ, এর পরেই তোমাদের অবস্থান হবে নতুন দুনিয়াতে। এই কথা সঠিকভাবে স্মরণে থাকলে বাবা-ও স্মরণে থাকবে। তাই তো স্মরণের যোগে থাকার জন্য বাবা কতই না উপায় জানান। একাধারে ইনি যেমন বাবা, অন্যদিকে তিনিই আবার টিচার এবং সদগুরুও তিনিই। তাই তিন রূপেই ওনাকে স্মরণ করবে। স্মরণের যোগে যোগযুক্ত হবার কি সুন্দর যুক্তি দেন বাবা। কিন্তু মায়া-ই সেসব ভুলিয়ে দেয় তোমাদের। বাবা এই নতুন দুনিয়া স্থাপন করাচ্ছেন, এবং উনিই তোমাদের জানাচ্ছেন- তোমরা সর্বদাই স্মরণে রাখবে বর্তমান এই সময়কালটাই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ। তবুও কেন যে তোমরা তা স্মরণে রাখতে পারো না। স্মরণে যোগযুক্ত থাকার জন্য এমন কতই তো যুক্তি বলছেন তোমাদের। তার সাথে সাথে এই সতর্ক-বার্তাও জানিয়ে দিচ্ছেন- মায়া কিন্তু খুবই পাওয়ারফুল। মুহূর্তে মুহূর্তে তোমাদেরকে ভুলিয়ে দেবে এবং দেহ-অভিমানী বানিয়ে দেবে। তাই যতক্ষণ সময় পাবে, ততক্ষণই স্মরণ করতেে থাকবে বাবাকে। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে দেহ-ভাবকে ভুলে থেকে নিজেকে দেহী-ভাবে অর্থাৎ আত্মিক স্থিতিতে থাকবে। ব্যস্ এইটুকুই যা পরিশ্রম। এর তুলনায় জ্ঞানের পাঠ অনেক সহজ। বাচ্চারা, তোমরা সবাই বলো যে, স্মরণে যোগযুক্ত হয়ে বেশীক্ষন টিকে থাকতে পারো না। যখনই তোমরা বাবাকে স্মরণ করতে থাকো, তখনই মায়া তার আকর্ষণ শক্তি দ্বারা তোমাদেরকে তার দিকে টানতে থাকে। অবিনাশী নাটকের এই খেলার চিত্রনাট্য তো এর উপরেই রচিত। তোমরা নিজেরাও তা জানো, তোমাদের বুদ্ধির যোগ ও জ্ঞানের এই পাঠ যা কেবলমাত্র বাবার সাথেই থাকার কথা, তবুও তা ভুলে যাও। অথচ তা ভোলা উচিত নয় মোটেই। বাস্তবে ক্লাসে এইসব চিত্রাদির দরকার পড়ে না। তবুও পঠন-পাঠনের সময় সামনে কিছু তো থাকা দরকার। কত প্রকারেরই চিত্র বানানো হয়।



বাচ্চারা, পাণ্ডব গভর্নমেন্টের প্ল্যান-প্রোগ্রাম কেমন, তা লক্ষ্য করো। যেমন জাগতিক অন্যসব গভর্নমেন্টেরও অনেক প্ল্যান-প্রোগ্রাম থাকে। একমাত্র বি.কে.-রাই বুঝতে পারে নতুন দুনিয়ায় কেবল ভারত ভূ-খণ্ডেরেই অস্তিত্ব থাকে। যেহেতু নতুন সেই দুনিয়া হয় ছোট আকারের। তখন সমগ্র বিশ্বের মালিক হয় এই ভারত ভূখণ্ড। দুনিয়ার সবকিছুই তখন থাকে নতুন। দুনিয়া কিন্তু এই একটাই অর্থাৎ এই দুনিয়াই। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকায় পার্টধারীরাও একই। এইভাবেই কল্প-চক্রের পটচিত্র ঘুরতেই থাকে। তোমরা তা হিসেব মিলিয়ে দেখতেও পারো, কত সেকেন্ড, কত মিনিট, কত ঘন্টা, কত দিন, কত বছর সম্পূর্ণ করে চিত্রনাট্য সেই একই অবস্থানে আবার ফিরে আসে। এই হিসেব মিলাতে মিলাতে দেখবে তা পুরো ৫-হাজার বছর হয়েছে। সেই একই সীন-সীনারী, একই ধরনের খেলা-ধূলা, একই অবস্থানে ফিরে আসে। এবার ভাবো, কত বিশাল অসীমের এই কল্প-বৃক্ষ। যার পাতা ও ডালপালা গুনেও শেষ করা যায় না। এই বৃক্ষের গোড়া অর্থাৎ ফাউন্ডেশনই হলো দেবী-দেবতা ধর্ম ! পরে এর থেকে তিনটি প্রধান শাখা অর্থাৎ মুখ্য ধর্মের উৎপত্তি হয়। অবশ্য ডাল-পাতার মতন অনেক কিছুই বেরিয়ে আসে সেই মুখ্য ধর্মগুলির সাথে। কারও সাধ্যের মধ্যে নেই এতগুলো সব গুনে হিসেব করবে। বর্তমানে তো সবগুলি ধর্মেরই অনেক অনেক বিস্তার হয়েই চলেছে। এই সব মিলেই অসীমের এই বিশাল কল্প-বৃক্ষ। কিন্তু এরপর আর কোনও ধর্মের অস্তিত্বই থাকবে না। যদিও এখন সেই বৃক্ষই দাঁড়িয়েই আছে, কিন্তু তার ফাউন্ডেশন অর্থাৎ আদি মূল কাণ্ডটাই যে নেই। ঠিক যেন কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদাহরণ। এমন ওয়ান্ডারফুল বৃক্ষ কেবল একটাই আছে। বাবা এর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছেন উদাহরণস্বরূপ তোমাদেরকে ড্রামার প্লট বোঝাবার জন্য। গাছ আছে অথচ তার ফাউন্ডেশন মূলটাই নেই। এটাই বোঝার ব্যাপার। এইভাবেই বাবা তোমাদেরকে কত বুঝদার করে গড়ে তোলেন। তেমনি দেবতা ধর্মেরও ফাউন্ডেশন আজ আর নেই। পরিবর্তিত সামান্য যা আছে, তা যেন আটা মাখার সময় যেটুকু নুন দেওয়া হয় তেমনই। যার চিহ্ন প্রায় লোপ হয়ে গেছে, সামান্য একটু অবশিষ্ট আছে। অতএব বাচ্চারা, এই সমস্ত জ্ঞান তোমাদের বুদ্ধিতে অবশ্যই ধারণ করা উচিত। তোমাদের এই বাবা যে জ্ঞানের সাগর, তাই ওনার বুদ্ধিতে এসব জ্ঞান ধারণ করা আছে। বাবা সেই জ্ঞানগুলিই জানিয়ে তোমাদেরও ওঁনার সমান জ্ঞানী করে গড়ে তুলতে চাইছেন। অসীমের এই কল্প-বৃক্ষ উলটানো অবস্থায় থাকে, আর বাবা হলেন সেই বৃক্ষের বীজরূপ। এটাই অসীম জগতের এ এক আশ্চর্য ড্রামা। অতএব তোমাদের বুদ্ধির যোগ এখন সেই উপরের অসীম জগতেই থাকা উচিত। যেহেতু এখন তোমরা অবগত হয়েছো বাবা আর ওনার রচনাকে। যদিও অনেক কিছুই লেখা আছে শাস্ত্রগুলিতে, কিন্তু ঋষি মুনিরা সেসব জানবেই বা কি প্রকারে ? একজনও যদি তা জানতো, তবে তো পরম্পরায় তা চলেই আসতো। তবে আর এই বিশেষ জ্ঞানের পাঠ পড়ানোর জন্য বাবাকে আসতে হতো না। তাতেই সবার সদগতি হয়ে যেত। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই ড্রামা থেকে মাঝপথে কেউ ছেড়ে ফিরে যেতে পারে না। নাটক সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ভূমিকা পালনকারীরা সবাই তাদের নিজ নিজ কর্ম-কর্তব্যের ভূমিকা চালিয়েই যেতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাবা এসে হাজির হন। এরপর আত্মাদের সবার ভূমিকা সম্পূর্ণ করে সবাই এই দুনিয়াকে একেবারে খালি করে বাবার সাথেই যাবে আপন গৃহে বরযাত্রীর মতন হয়ে। তার পূর্বে তো আর সেখানে গিয়ে বসে থাকবে না। এইভাবেই বাচ্চাদেরকে সামনে বসিয়ে যুক্তিযুক্ত নানান জ্ঞানের পাঠ পড়ান এই বাবা। কিভাবেই বা বিশ্বের এই সৃষ্টি-চক্র বারংবার পুনরাবৃত্তি ঘটে। সত্যযুগ, ত্রেতা, দ্বাপর, কলিযুগ - তারপর পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ। সঙ্গমযুগের আলোচনা তো করে লোকেরা, কিন্তু ঠিক কোন সময়কালটা যে সঙ্গমযুগ, তারই প্রকৃত ধারণা নেই কারও।



বাচ্চারা, এখন তো তোমাদের সম্যক ধারণা হয়েছে - যুগ চারটি। আর বর্তমান সময়কালটা হলো লিপিয়ার যুগ, যাকে "মিডগেট" অর্থাৎ বামনযুগ বা ছোটযুগ বলা হয়। কৃষ্ণকে সেই বামনযুগেই দেখানো হয়। এটাই হলো বিশেষ জ্ঞান। ভক্তি-মার্গে এই জ্ঞানকেই বিকৃত করে কি থেকে কি বানিয়েছে ! এইভাবেই সমস্ত জ্ঞানকেই জট পাকিয়ে রেখেছে। আর তা সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারে একমাত্র এই বাবা। প্রাচীন রাজযোগ শেখার জন্য এখান থেকে বিদেশে যায় লোকেরা। এটাই তো ঘটনা - তাই না ! প্রাচীন অর্থাৎ শুরুর আদি। সেই সহজ রাজযোগ শেখাবার জন্যই তো বাবার আগমন এখানে। সুতরাং কত মনোযোগ দেওয়া উচিত। তেমনি তোমরা বি.কে.-রাও এই দুনিয়াতে স্বর্গ-রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে কতই না মনোযোগ দিচ্ছো। তোমরা আত্মাধারীরা সেই স্মরণের যোগেই যে যোগযুক্ত থাকো। বাবা আরও জানাচ্ছেন- এই বিশেষ জ্ঞানের শিক্ষা আবারও আমিই এসে দেবো তোমাদেরকে, যা এখন তোমাদেরকে শোনাচ্ছি। নতুন দুনিয়া স্থাপনের উদ্দেশ্যে এটাই নতুন জ্ঞান। এই বিশেষ জ্ঞান বুদ্ধিতে ধারণ করলে মনে খুশীর জোয়ার বইতে থাকে। এদিকে আর খুব অল্প সময়ই অবশিষ্ট আছে। তারপরেই তো আপন ঘরে ফেরার পালা। একদিকে যেমন খুশীর জোয়ার অন্যদিকে আবার মনে হয় যে, এমন মিষ্টি বাবাকে বাচ্চারা দেখতে পাবে আবার অন্য কল্পের সঙ্গমযুগে। একমাত্র এই বাবা-ই যে বাচ্চাদের জন্য এত সুখের বন্দোবস্ত করেন। বাবা স্বয়ং আসেন বাচ্চাদের শান্তিধাম ও সুখধামে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই তো যখন তোমরা শান্তিধাম আর সুখধামকে স্মরণ করো, সেইসঙ্গে বাবাও যে স্মরণে এসে যায়। অতএব এখন এই দুঃখধামকে একেবারেই ভুলে যাও। এটাই অসীমের বাবার অসীমের উপদেশ। এই পুরোনো দুনিয়ার আকর্ষণ ঝেড়ে ফেলতে পারলে অবশ্যই খুশী আসবে। তবেই তো তার বদলে সুখধামে পৌঁছোতে পারবে। এই পদ্ধতিতেই তো ধীরে ধীরে সতোপ্রধান অবস্থায় পৌঁছে যাবে। কল্প-কল্প ধরে যারা এমন হয়ে এসেছে আবারও তারাই তা হবে। এই কারণেই সে খুশীর জোয়ারে ভাসতে থাকবে। তখন অনায়াসেই সে তার এই পুরনো শরীর ত্যাগ করতে পারবে। পরবর্তীতে নতুন শরীর গ্রহন করে সতোপ্রধান দুনিয়ায় আসবে। যদিও তখন এই বিশেষ জ্ঞানের অবলুপ্তি ঘটবে। কত সহজ-সরল এই কথা। রাতে শোবার সময় এইসব কথাগুলিকে স্মরণ করলে খুশীর জোয়ারে ভাসতে থাকবে। মনে হবে আমি তো এমনই হতে চলেছি। নিজেই নিজেকে পরীক্ষা করো- সারাদিন আমি তো কোনও দুষ্কর্ম করিনি ? ৫-বিকারের মধ্যে কোনও বিকারের বশবর্তী হয়ে কোনও দুষ্কর্ম তো করিনি ? কোনও প্রকার লোভের বশবর্তী তো হইনি ? এইভাবে নিজেকেই নিজের চেকিং করতে হবে। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. যোগবলের দ্বারাই অপার সুখের দুনিয়া স্থাপন করতে হবে। পুরোনো এই দুঃখের দুনিয়াকে ভুলে যেতে হবে। মনে এই খুশী যেন থাকে, আমি সত্য-খণ্ডের মালিক হতে চলেছি এবার।

২. রোজই নিজের চেকিং নিজেকেই করতে হবে- সারাদিনের মধ্যে কোনও বিকারের বশবর্তী হইনি তো আমি ? কোনও দুষ্কর্ম করিনি তো আমি ? কোনও প্রকার লোভের বশবর্তী হইনি তো আমি ?

বরদান:-

সদা এক ও একমাত্র বাবার স্নেহের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে সহযোগী ও সহজযোগী আত্মা ভব

বাবার প্রতি অতি ভালবাসার প্রিয় বাচ্চারা, তারাই স্নেহী আত্মা হয়ে সদা বাবার শ্রেষ্ঠ কার্যে সহযোগী হয়। যে যত বেশী সহযোগী হয়, সে তত সুন্দর সহজযোগী হতে পারে। সে হয় বাবার স্নেহের সাগরে নিমজ্জিত সহযোগী আত্মা, সে কখনই মায়ার সহযোগী হয় না। তার প্রতিটি সংকল্পে কেবল বাবা আর সেবা বিরাজ করে। তাই ঘুমের সময় তাদের খুব আরামেই নিদ্রা হয়, যার ফলস্বরূপ শান্তি আর শক্তির প্রাপ্তিও হয়। তাদের সেই নিদ্রা যেন নিদ্রা নয়, মনে হয় যেন, অনেককিছু উপার্জন করার আনন্দে খুশীতে গা এলিয়ে শুয়ে আছ। এমনই বিশাল পরিবর্তন আসে তাদের।

স্লোগান:-

প্রেমের অশ্রু হৃদয়ের মণিকোঠায় মুক্তো হয়ে যায়।