২৪-০১-১৯ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - 'রূহানী-সার্জন' তোমাদের ফাস্টক্লাস ওয়ান্ডারফুল জ্ঞান ও যোগে পুষ্ট করেন। তোমরাও এই রূহানী পুষ্টির দ্বারা একে অপরকে পরিপোষণ করতে থাকো"

প্রশ্ন:-

বিশ্বের রাজ্য-ভাগ্য প্রাপ্তির জন্য কোন্ পুরুষার্থ করতে হবে ? কি কি অভ্যাসে অভ্যাসী হতে হবে ?

উত্তর:-

জ্ঞানের তৃতীয় নয়ন দ্বারা দেখার অভ্যাস করো অকাল সিংহাসনে আসীন (অকাল তখত্-নসীন) আত্মা ভাইদেরকে। সকলকে ভাই-ভাই হিসাবে গণ্য করে তাদের জ্ঞান প্রদান কর। সর্বাগ্রে নিজেকে আত্মা ভেবে, তারপর অন্য ভাইদেরও বোঝাও। এই অভ্যাসে অভ্যাসী হতে পারলে বিশ্বের রাজ্য-ভাগ্য পদের প্রাপ্তি ঘটে। এই অভ্যাসের দ্বারা শরীরের ভাব কেটে যাবে ও মায়ার ঝড়-তুফান কিম্বা কোনও বাজে সংকল্প আসবে না। অন্যদেরকেও খুব ভালভাবে জ্ঞানের তীর লাগাতে পারবে।

ওঁম্ শান্তি!

জ্ঞানের তৃতীয় নয়ন প্রদানকারী ঈশ্বরীয় পিতা স্বয়ং বসে ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের বোঝাচ্ছেন - জ্ঞানের এই তৃতীয় নয়ন একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউই প্রদান করতে পারে না। "বাচ্চারা, তোমারা এখন জ্ঞানের সেই তৃতীয় নয়ন পেয়েছো। ফলে তোমরা জানতে পেরেছো, এবার এই দুনিয়ার বদল/পরিবর্তন হতে চলেছে। বেচারা সাধারণ লোকেরা তো এটাও জানে না, এই পরিবর্তন করার মূল কারিগরী কার এবং কিভাবেই বা এর বদল হয় - যেহেতু জ্ঞানের সেই তৃতীয় নয়ন নেই তাদের। *বি.কে.-দের এই তৃতীয় নয়ন থাকার ফলে তোমরা সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তকেও জানো। এটাই জ্ঞানের (স্যাকারিন) নির্যাস। যেমন এক ফোঁটা স্যাকারিনে কত অধিক মাত্রায় মিষ্টি হয়, তেমনি জ্ঞানেরও একটি মাত্র শব্দ "মন্মনাভব"! নিজেকে আত্মা ভেবে পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করা। বাবাও তেমনি তাদের শান্তিধাম আর সুখধামের দিশা দেখান। বাবার আসার উদ্দেশ্যই হলো বাচ্চাদেরকে স্বর্গ-রাজ্যের অবিনাশী উত্তরাধিকার দেওয়া।* বাচ্চাদের এতে কতই না আনন্দ হওয়া উচিত। প্রবাদ আছে - "খুশীর মতন পুষ্টি আর কিছুতেই নেই!" যে সদা হাসি-খুশীর আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারে, তার অন্য কোনও পুষ্টির প্রয়োজন নেই। আগামী ২১-জন্ম আনন্দে থাকার এ এক সুন্দর উপায়। তাই তোমরাও শ্রীমৎ এর আধারে একে অপরকে এই পুষ্টি প্রদান করে ঈশ্বরীয় সেবা করতে থাকো। প্রকৃত খুশী তখনই আসে সঠিকভাবে যখন কাউকে বাবার পরিচয় দিতে পারা যায়। মিষ্টি বাচ্চারাও অবশ্য তাই বলে-"একমাত্র এই অসীমের বাবার দ্বারাই আমরা জীবনমুক্তির পুষ্টি পাই।" সত্যযুগে ভারত থাকে জীবনমুক্ত ও পবিত্র। বাবা বি.কে.দের এত উন্নত পুষ্টি দেন, তাই বলেন- অতীন্দ্রিয় সুখের কথা জানতে হলে গোপ-গোপিনীদের কাছে তা শোনো। এটাই জ্ঞান আর যোগের ফাস্ট-ক্লাস ওয়ান্ডারফুল পুষ্টি, যা এক ও একমাত্র এই রূহানী-সার্জনের কাছেই আছে। অন্য কেউ এই পুষ্টির বিষয়ে জানেই না।



এবার বাবা বলছেন- "মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের জন্য আমি হাতের মুঠোয় উপহার নিয়ে এসেছি। মুক্তি আর জীবনমুক্তির এই উপহার, যা কেবল আমার কাছেই থাকে। প্রতি কল্পেই আমি এসে তোমাদের তা দিয়ে থাকি, পরে রাবণ তা কেড়ে নেয়। অতএব বাচ্চারা খুশীতে তোমাদের আনন্দের পারদ অনেক উঁচুতে চড়া উচিত। তোমরা তো জানো, তোমাদের প্রকৃত বাবা এই একজনই - যিনি প্রকৃত- বাবা, শিক্ষক ও সদগুরু। তোমাদের আবার সাথে করে প্রকৃত ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান। প্রিয়তমের থেকেও প্রিয় এই বাবার থেকেই বিশ্বের রাজ্য-ভাগ্য পাওয়া যায় - এ কোনও সাধারণ ব্যাপার নয়। তাই আনন্দে সদা হর্ষিত থাকা উচিত। "গডলী স্টুডেন্ট লাইফ ইজ দ্য বেস্ট" (ঈশ্বরীয় পাঠন-পাঠনের জীবনটাই যে মজার)! যা কেবল এই সময়কালের জন্যই। এরপর নতুন বিশ্বে তো কেবল খুশী আর আনন্দ। জাগতিক লোকেরা তো তা জানেই না প্রকৃত খুশী কখন পাওয়া যায়। সত্যযুগের ব্যাপারে লোকেদের কোনও জ্ঞানই যে নেই। তাই তারা এখানকার এই খুশীকেই কেবল খুশী ভেবে আনন্দ পালন করে। কিন্তু বর্তমানের এই জরাজীর্ণ পুরোনো দুনিয়ায় খুশী আসবে কোত্থেকে? বাস্তবে লোকেদের তো এখন ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। সত্যি, কি দুঃখ-কষ্টের দুনিয়া এটা।



বাচ্চাদেরকে বাবা কত সহজ দিশা দেখাচ্ছেন-গৃহস্থ ব্যবহারে থেকেই পদ্ম-ফুলের মতন পবিত্র থাকতে বলছেন। চাকুরী, ব্যবসা ইত্যাদি যেভাবেই রোজগার-পাতি করো না কেন, তা করার সাথে সাথে বাবাকেও স্মরণ করবে। প্রেমিক-প্রেমিকা যেমনটা করে থাকে, অর্থাৎ একে অপরকে স্মরণ করতেই থাকে। কিন্তু এই ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়, এখানে তোমরা সব বাচ্চারাই এই একজনেরই এত প্রেমিকা, যা আবার জন্ম-জন্মান্তরের। বাবা কিন্তু তোমাদের প্রেমিকা হন না। কেবল তোমরাই তাকে ডাকতে থাকো। যখন দুঃখকষ্ট বেশী হয়, তখন বেশী করে স্মরণ করতে থাকো। প্রবাদ আছে-"দুঃখে সবাই স্মরণ করে, সুখে করে না কেউ!" এই দুঃখের সময়ে একমাত্র সহায় এই বাবা, যিনি সর্বশক্তিমান। মায়াও দিন-প্রতিদিন তমোগুনের সর্ব-শক্তিমান হতে থাকে। তাই তো বাবা বারবার বাচ্চাদের বলতে থাকেন - "মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা, তোমরা দেহী-অভিমানী হও। নিজেদের আত্মা মনে করে কেবল আমাকেই স্মরণ করতে থাকো আর সাথে সাথে দৈবী-গুণগুলি ধারণ করতে থাকো, তাতে তোমরাও লক্ষ্মী-নারায়ণের মতনই হতে পারবে" । এই পঠন-পাঠনের মুখ্য বিষয়ই হলো স্মরণের যোগ। উচ্চতমেরও উচ্চ এই বাবাকে ভালবেসে স্নেহের সাথে স্মরণ করতে হয়। বাবা যে তোমাদের জন্য নতুন দুনিয়ার রচনা করেন। এবার বাবা বলছেন - "আমার আসার কারণ তোমাদেরকে বিশ্বের মালিক বানানোর উদ্দেশ্যে। অতএব এখন কেবলমাত্র আমাকে স্মরণ করতে থাকো, তবেই তোমাদের অনেক জন্মের পাপ ভষ্ম হয়ে যাবে। লোকেরা আমাকে পতিত-পাবন বাবা বলে ডাকে। সেই বাবাকে তোমরা নিজের করে পেয়েছো, এবার তো অবশ্যই পবিত্র হতেই হবে। বাবা যে দুঃখ হর্তা - সুখ কর্তা। সত্যযুগের অর্থই তো পবিত্র দুনিয়া, সেখানে সবাই সদা খুশীতেই থাকে, অতএব শান্তিধাম আর সুখধামকে সর্বদাই স্মরণে রাখ। বর্তমানের এই সময়কালটা পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ। এই ঈশ্বর পাটনী বাবা তোমার জীবন তরীকে ভব-সাগর পার করে দেবেন। এ কোনও স্থুল তরী (নৌকা) নয়, সমগ্র দুনিয়াটাই এক বিশাল জাহাজ, আর পার করাতে পারেন একমাত্র এই বাবা।"



মিষ্টি বাচ্চারা, একথা জেনে খুব আনন্দিত হওয়া উচিত - আগামীতে তোমাদের জন্য সদাকালের অফুরন্ত খুশী আর আনন্দ। যেহেতু অসীম-বেহদের বাবা স্বয়ং তোমাদের সেই জ্ঞানের পাঠই পড়াচ্ছেন। বাহ্! এমন কথা কেউ কখনও শোনেওনি, পড়েওনি। ভগবান নিজেই তা বলছেন- "আমি স্বয়ং তোমাদের এই রাজযোগ শেখাচ্ছি! অতএব, তোমরা ঈশ্বরীয় বাচ্চারা যে রাজযোগ শিখছো, তা সম্পূর্ণ রীতি-নীতি মেনে শেখা উচিত ও পুরোপুরি ধারণ করা উচিত। জ্ঞানের পাঠও যথার্থ রীতিতে পড়া উচিত। পড়াশোনাতেও সদা নম্বরের ক্রমিক অনুসার আছে। নিজেরটা নিজেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে-আমি উত্তম, মধ্যম নাকি কনিষ্ঠ? নিজেই নিজেরটা বিচার করে দেখো-তুমি কেমন উচ্চ পদের অধিকারী হতে পেরেছো? কতটা ঈশ্বরীয় সেবা করছো? বাবা তো সবসময় তোমাদের বলতে থাকেন -সেবাধারী হয়ে বাবাকে অনুসরণ করো। বাবা নিজেও তো এসেছেন সেবা করতেই। রোজই উনি তা করেন। তাই তো এই শরীর রথের সাহায্য নেন উনি। এনার এই রথ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন এনাকে আধার করে বাবা মুরলী লিখতে থাকেন। যেহেতু তখন ওনার মুখের সাহায্য নিতে পারেন না, তাই তা লিখে দেন। কারণ, বাচ্চাদের যেন মুরলী শোনা বাদ না পড়ে, যেহেতু সেবা নিয়মিত করতেই হবে, এ যে অতি মহান ঈশ্বরীয় সেবা।



এইভাবে বাবা মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চাদের বোঝান-বাচ্চারা, তোমরাও বাবার এই সেবাতে নিজেদেরকে যুক্ত করো "অন গড-ফাদারলী সার্ভিসে"! বিশ্বের মালিক এই পিতা, তিনি স্বয়ং এসেছেন তোমাদেরকে বিশ্বের মালিক করে গড়ে তুলতে। যে খুব ভালরূপে পুরুষার্থ করে, সে 'মহাবীর'। সে সবও লক্ষ্য করা হয়, কে কে এমন মহাবীর যে সম্পূর্ণরূপে বাবার কথা অনুসারে চলছে। বাবার নির্দেশ, নিজেকে আত্মা ভেবে সবাইকে ভাই-ভাই হিসাবে দেখবে। এই স্থুল শরীরকে ভুলে যাও। (ব্রহ্মা) বাবা নিজেও ওনার শরীরকে ভুলে থাকেন । উনি নিজেকে কেবলমাত্র আত্মা স্বরূপেই দেখেন। যদিও এই জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে, শরীর ছাড়া আত্মা কিছু বলতে বা প্রকাশ করতে পারে না। তাই তো আমি এনার শরীরকে আধার বানিয়েছি, অর্থাৎ লোন নিয়েছি। শরীর থাকলে তবেই তো আত্মা এই পাঠ পড়তে পারে। বাবা ওনার মস্তকে অবস্থান করেন। এ হল অকাল সিংহাসন (তখত্) আর তাতে আত্মা হল অকাল মূর্তি । কোনও আত্মাই বড়-ছোট হয় না, বড়-ছোট হয় শরীর। সব আত্মারই নির্দিষ্ট স্থান এই তখত্ অর্থাৎ দুই ভ্রুকুটির মধ্যিখানে। শরীর তো এক একজনের এক এক প্রকারের। এই অকাল তখত্ই পুরুষের শরীরে, নারীর শরীরে কিম্বা কোনও বাচ্চার শরীরে অবস্থান করে। বাবা বসে বাচ্চাদের সবাইকেই একই আধ্যাত্মিক (রূহানী) ড্রিল শেখান। যখনই কারও সাথে কথা বলবে, নিজেকে আত্মা ভেবে। আমি আত্মা অমুক আত্মা ভাইয়ের সাথে কথা বলছি। শিববাবাকে স্মরণে রেখেই শিববাবার বাণী শোনাবে। এই স্মরণের যোগেই আত্মার কালিমা (জং/মরিচা) ভষ্ম হয়। সোনাতে খাদ দিলে যেমন তার মূল্য কমে যায়, তেমনি আত্মাতেও কালিমার প্রলেপ পড়তে পড়তে আজ তোমাদের এমন মূল্যহীন অবস্থা। অতএব পবিত্র তোমাদের হতেই হবে। তোমাদের এখন জ্ঞানের তৃতীয় নয়নের উন্মোচন হয়েছে, সেই নেত্র দ্বারাই ভাইদেরকে দেখবে। ভাই যদি ভাইকে দেখে, কর্ম-ইন্দ্রিয় চঞ্চল হয় না। রাজ্য-ভাগ্যও তো পেতে হবে তোমাদের, বিশ্বের মালিকানা পেতে গেলে এমন তো হতেই হবে। ভাই-ভাই ভাবধারায় সবাইকে জ্ঞান দিতে থাকলে এই অভ্যাসে অভ্যাসী হতে পারবে। প্রকৃত অর্থে তোমরা কিন্তু একে অপরের ভাই।



বাবা যেমন অসীম-অনন্তের উপর থেকে এসেছেন, তোমরাও কিন্তু সেখান থেকেই এসেছ। এখন আবার বাবা আর তাঁর বি.কে.বাচ্চারা একসাথে মিলে সেবাকার্য করছ। এই সেবার করার জন্য বাবা বাচ্চাদেরকে সেই সাহসই জোগাচ্ছেন। মানুষ সাহস দেখালে বাবাও সহায়তা দিতে প্রস্তুত ("হিম্মতে মর্দা - মদতে বাপ") .... । এর অভ্যাস করতে হবে, আমি আত্মা, আমার আত্মা ভাইকে জ্ঞানের পাঠ পড়াচ্ছি। পাঠ পড়ে কিন্তু আত্মাই। একেই বলে আধ্যাত্মিক জ্ঞান, যা কেবলমাত্র এই বাবার থেকেই পাওয়া যায়। কল্পের এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই বাবা স্বয়ং এসে এই জ্ঞান বিতরণ করেন যে, নিজেদেরকে আত্মা স্বরূপে ভাবো। এখানে তোমরা অশরীরী অবস্থাতে এসে শরীর ধারণ করে ৮৪-জন্মের পার্ট ও কর্ম-কর্তব্য পালন করো। এখন আবার ঘরে ফেরার পালা, তাই নিজেকে আত্মা ভেবে অন্যদেরকে ভাই-ভাই দৃষ্টিতে দেখতে হবে। যদিও তা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। নিজের চেষ্টা নিজেকেই করতে হবে, অপরেরটা দেখে কি লাভ? শুরু তো নিজের ঘর থেকেই করতে হয়, অর্থাৎ প্রথমে নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে তারপর অন্য আত্মা-ভাইদের বোঝালে, তীর একেবারে নিশানায় লাগবে। নিজের ভিতর সেই শক্তি সঞ্চয় করতে হবে আগে। কষ্ট করলেই তো কেষ্ট পাবে অর্থাৎ উচ্চ পদাধিকারী হতে পারবে। বাবা তো এসেছেন কর্মের ফল প্রদান করতে, তা পাবার জন্য কষ্ট তো তোমাকেই করতে হবে। অনেক কিছু সহ্যও করতে হবে।



কেউ উল্টো-পাল্টা কিছু বললেও, চুপ থাকবে তোমরা। চুপ থাকলে আর কি বা করবে। তালি তো দু-হাতে বাজে। একা হলে সে কেবল মুখেই তালি বাজাতে পারে, অন্যজন চুপ থাকলে সে নিজে নিজেই চুপ হয়ে যাবে। তালির সাথে তালি বাজলে আওয়াজ বাড়ে। বি.কে.-দের একে অন্যের কল্যাণ করতে হবে। বাবা বাচ্চাদের কে বোঝান - "বাচ্চারা, সর্বদা খুশীতে থাকতে চাইলে 'মন্মনাভব'। নিজেকে আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ কর। ভাই হিসাবে অন্যদেরকেও আত্মা রূপেই দেখো। আত্মারূপী ভাইদেরও এই জ্ঞান শোনাও। যোগ করার সময়ও নিজেকে যেমন আত্মা ভাববে, অন্য ভাইদেরও তেমনি আত্মা হিসাবে দেখার অভ্যাসে অভ্যাসী করাতে পারলে সেটাই হবে উন্নত সেবা। বাবা যেভাবে বোঝান, ঠিক সেই ভাবেই ভাইদেরও বোঝাবে। সব ভাই যেন বাবার এই অবিনাশী উত্তরাধিকার পেতে পারে। এই ঈশ্বরীয় জ্ঞান কল্পে কেবল একবারই বি.ক. ব্রাহ্মণরাই তা পেয়ে থাকে। এখন তোমরা ব্রাহ্মণ হয়েছো, আগামীতে তোমরাই দেবতা হবে। তাই এই মূল্যবান সঙ্গমযুগের সময়কে কিছুতেই নষ্ট হতে দিও না। তা হলে ভব-সাগর পার হবে কি করে! তা তো আর লাফিয়ে পার হওয়া যায় না। এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ সত্যই খুব চমৎকার। অতএব বাচ্চারা, তোমাদের বেশী করে আধ্যাত্মিক-যাত্রার (আত্মিক যাত্রা) অভ্যাসে অভ্যাসী হতে হবে। তাতে তোমরাই লাভবান হবে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া এই শিক্ষা অন্য ভাইদেরও সেভাবেই দিতে হবে।



বাবা নিজে আত্মিক স্বরূপে তোমাদের আত্মাকেই এইসব জ্ঞান দেন। তোমাদেরকে যখন দেখেন, তাও কেবল আত্মাকেই দেখেন। কিন্তু মানুষ যখন অন্য মানুষের সাথে কথা বলে, তখন তো একে অপরের মুখের দিকেই তাকায়। আর তোমরা বি.কে.-রা তা আত্মা স্বরূপে দেখো। যদিও শরীরের দ্বারাই এই জ্ঞান দেওয়া হয়, কিন্তু শরীরের সেই ভাবকে ঝেড়ে ফেলতেই হবে। তোমাদের আত্মাও তা অনুভব করে যে পরম্ আত্মা বাবা, তিনিই আত্মাদেরকে এই জ্ঞান শোনাচ্ছেন। বাবা স্বয়ং তাই বলেন - "আমি তো কেবল আত্মাদেরই দেখি।" আত্মারাও তেমনই বলে - "আমরাও কেবল পরমাত্মা বাবাকেই দেখি। ওঁনার কাছ থেকেই জ্ঞান পেয়ে থাকি।" একেই বলা হয় আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আদান-প্রদান। যা আত্মার সাথে আত্মার লেন-দেন। আত্মাই এই জ্ঞান ধারণ করে - আবার আত্মাই সেই জ্ঞান প্রদান করে। আত্মাই যে শক্তির আধার। তোমার জ্ঞানের আধারে এই জ্ঞানের শক্তিতে ভরপুর হয়ে গেলে, তখন অন্যকে বোঝানোর সাথে সাথে ঝট্ করে তার তীর লেগে যাবে। অভ্যাস করে পরীক্ষা করে দেখো তীর লাগাতে পারছো কিনা। এই নতুন স্বভাবে রপ্ত হতে পারলে শরীরের ভাব থেকে মুক্তি পাবে এবং মায়ার ঝড়-তুফান কম আসবে ও বাজে সংকল্প আসবে না, তেমনি আবার কুদৃষ্টিও আসবে না। তোমরা ৮৪-জন্মের চক্র পুরো করছো, নাটকও এখন অন্তিম লগ্নে। সুতরাং বেশী করে বাবাকে স্মরণ করতে থাকো। এই স্মরণের যোগের দ্বারাই তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হয়ে আগামী সতোপ্রধান দুনিয়ার মালিক হবে। খুবই সহজ পন্থা। বাবা জানেন, বাচ্চাদের এই শিক্ষা দেওয়াটা ওনার কর্ম-কর্তব্যের পার্ট। যা কোনও নতুন ঘটনা নয়। প্রতি ৫-হাজার বছর বাদে-বাদে ওঁনাকে আসতে হয়। উনিও যে এই নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ। তাই তো মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চাদের সামনে বসে এই আত্মিক স্মরণের যাত্রা শেখান আর বলেন - "যেমন তোমার অন্তিম ইচ্ছা - তেমনই হবে তোমার গতি।" বর্তমান সময় কালটা যে অন্তিম মুহূর্তের। বাবাকে স্মরণ করতে পারলে তোমার সদগতি হবেই হবে। বাচ্চারা, এই দেহী-অভিমানী হওয়ার শিক্ষা কল্পে মাত্র একবারই পায়। কত সুন্দর এই জ্ঞানের পাঠ। বাবা যেমন ওয়ান্ডারফুল ওঁনার এই জ্ঞানও তেমনি ওয়ান্ডারফুল। আর কেউ এমন সুন্দর জ্ঞান দিতেই পারে না। এখন আত্মাদের আপন ঘরে ফিরে যাবার পালা। তাই তো বাবা বার-বার বাচ্চাদেরকে বলতে থাকেন-মিষ্ট-মিষ্টি বাচ্চারা, এসবের অভ্যাসে অভ্যাসী হও। নিজেকে আত্মা মনে করে অন্যদেরকেও আত্মা ভেবে জ্ঞান শোনাতে থাকো। জ্ঞানের তৃতীয় নয়ন দ্বারা সবাইকে ভাই-ভাই রূপে দেখতে হবে, এতেই বড় পরিশ্রম । *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. বাবা যেমন ঈশ্বরীয় সেবা করতে বাচ্চাদের কাছে এসেছেন, তেমনই বাবাকে ফলো করে ঈশ্বরীয় সেবা করতে হবে । বাবার ডাইরেকশন অনুসারে চলে নিজে খুশীর পুষ্টিতে পুষ্ট হতে হবে, আর অন্যদেরকেও পুষ্ট করতে হবে।

২. কেউ উল্টো-পাল্টা কথা বললেও চুপ থাকতে হবে। মুখের তালি বাজাবে না । সহনশীল হতে হবে।

বরদান:-

সাইলেন্সকে মাধ্যম করে মায়াকে দূর থেকেই চিনে নিয়ে তাকে ভাগিয়ে মায়াজীত ভব

অন্তিম সময় পর্যন্ত মায়া আসবেই। মায়ার কাজই হলো আসা আর তোমার কাজ তাকে দূরে ভাগিয়ে দেওয়া। মায়া এসে তোমাকে নড়বড়ে করার পরে তাকে ভাগালে, তাতে তো তোমারই সময় নষ্ট হল। তাই সাইলেন্স কে মাধ্যম করে দূর থেকেই তাকে চেনো - এ সেই মায়া। তাকে কাছে ঘেঁসতেই দেবে না। আর যদি ভাবতে থাকো, কি করি - কিভাবে কি করবো, এখনও তো আমি পুরুষার্থী... তবে তো মায়াকে খাতির করে আহ্বান করলে। হয়রান তো তখন হতেই হবে। তাই দূর থেকেই তাকে চিনে নিয়ে ভাগাতে পারলেই মায়াজীত হতে পারবে।

স্লোগান:-

শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের রেখাগুলিকে সামনে নিয়ে এসো, তবে পুরোনো সংস্কারের রেখাগুলি সুপ্ত হয়ে যাবে।