০৩-০৮-১৯ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের অনাদি আত্মীয়তা হলো ভাই-ভাই সম্পর্কের, আর সাকারে তোমাদের সম্পর্ক ভাই-বোনের। অতএব কখনও যেন তোমাদের মধ্যে কুদৃষ্টির প্রভাব না পড়ে"
প্রশ্ন:-
কে হতে পারে বিজয়ী অষ্ট-রত্ন ? তার প্রকৃত মূল্য কতখানি ?
উত্তর:-
যার মনের ভাবনাতে কোনও ক্রিমিনাল ভাব থাকে না, যার দৃষ্টিকোণ সভ্য - সে অষ্ট-রত্নের মধ্যে থাকে, অর্থাৎ কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। তার গুরুত্ব এতই অধিক হয় যে, যেমন কারও গ্রহ দোষের কারণে অষ্ট-রত্নের আংটি পড়ানো হয়, আর ভাবা হয় যে এই অষ্ট-রত্নের আংটি ধারণের ফলেই গ্রহের কুপ্রভাব দূর হয়ে যাবে। তোমাদের এই অষ্ট-রত্ন তৈরির কারিগর খুবই দূরদৃষ্টির বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার কারণে বি কে-দের মধ্যে ভাই-ভাইয়ের সেই স্মৃতি নিরন্তর বজায় থাকে।
ওঁম্ শান্তি!
ঈশ্বরীয় সন্তান বি.কে.-রা, তোমরা তো জানো প্রকৃত অর্থে তোমাদের যা পরিচয় - তা হলো ব্রাহ্মণ। তোমরা ব্রহ্মাকুমার ও ব্রহ্মাকুমারীরা সংখায় অনেক। এতেই বোঝা যায়, তোমরা সবাই দত্তক সন্তান। যেহেতু তোমরা একই ব্রহ্মাবাবার সন্তান। অর্থাৎ তোমাদেরকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। একমাত্র ব্রহ্মাকুমার ও ব্রহ্মাকুমারীরা-ই ব্রহ্মাবাবার দত্তক সন্তান। সন্তান তো অনেক প্রকারেরই হয়, যেমন কেউ হয় প্রজাপিতা ব্রহ্মার আবার কেউ বা পরমপিতা পরমাত্মা শিবের। অতএব এদের নিজেদের মধ্যে অবশ্যই কোনও না কোনও যোগসূত্র থাকবে নিশ্চয়ই। একপক্ষ হলো অসীম-বেহদের বাবার সন্তান আর অপরপক্ষ হলো জাগতিক বাবার সন্তান। অসীম-বেহদের বাবার (নিরাকার) সন্তান হলে তখন তোমাদের নিজেদের মধ্যে হয় ভাই-ভাই সম্পর্ক আর প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তান সাকার হওয়াতে তা হয়- ভাই-বোন সম্পর্কের। ভাই-বোন সম্পর্কের মধ্যে কোনও ক্রিমিনাল সম্পর্ক কখনই হয় না৷ যেমনটা জাগতিক লোকেরা বলে তোমাদের ক্ষেত্রে- ব্রহ্মাকুমারীসে সবাইকে ভাই-বোন বানিয়ে দেয়। যে সম্পর্ক অতি পবিত্রতার, যে সম্পর্কে কোনও কুদৃষ্টি আসতেই পারে না। কেবলমাত্র এই এক জন্মে এই দৃষ্টিতে অভ্যাসী হলে, আগামী ভবিষ্যতের জন্মগুলিতেও কোনও কুদৃষ্টি থাকবে না। এমন নয় যে, তোমাদের সেই আগামী রাজত্বে সেখানে কোনও বর্তমানের মতন ভাই-বোনের সম্পর্ক থাকবে, সেই দুনিয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই তোমরা হবে মহারাজা-মহারাণী। বাচ্চারা, এখন তো তোমরা জেনেছো, বর্তমানে তোমরা অবস্থান করছো পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগে এবং তোমরা সবাই নিজেদের মধ্যে ভাই-বোন। তাই তো তোমাদের নামের সাথে জুড়ে রয়েছে প্রজাপিতা ব্রহ্মার নাম। লোকেরা তো এটাই জানে না, ইনি প্রজাপিতা ব্রহ্মা কিভাবে এবং কখন হলেন। যেহেতু তোমরা এখানে এসে বসে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ো তাই জানতে পেরেছো, প্রকৃত অর্থে তোমরা হলে পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগী বি. কে. ব্রাহ্মণ। তবে একে কিন্তু ধর্মের আখ্যা দেওয়া যাবে না। বি.কে.-দের দ্বারা কেবল কূল-এর স্থাপনা কার্য চলছে। যেহেতু তোমরা বি.কে.-রা প্রকৃত ব্রাহ্মণ কূলের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে তোমরা নিজেদেরকে অবশ্যই ব্রহ্মাকুমার-ব্রহ্মাকুমারী বলে জানাবে। যেহেতু তোমরা সবাই একই প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তান। যা একেবারেই নতুন তথ্য। অনায়াসেই তোমরা নিজেদেরকে বি.কে. বলে পরিচয় দিতে পারো। বাস্তবে তো তোমরা সবাই ভাই-ভাই, যেহেতু একই পরমাত্মা পিতার সন্তান তোমরা। পরমাত্মার ক্ষেত্রে কিন্তু তোমরা তখন দত্তক সন্তান নও।
আমরা অর্থাৎ অবিনাশী আত্মারা সবাই অনাদি পরমাত্মার সন্তান। যিঁনি পরমপিতা পরমাত্মা অর্থাৎ 'সুপ্রিম সোল'! এই সুপ্রিম সোল শব্দটি আর কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। সুপ্রিম বলা হয় যিনি সদাকালের সম্পূর্ণভাবে পবিত্র। অন্য কারও ক্ষেত্রেই এমন সম্পূর্ণ পবিত্র বলা চলে না। আর এই পবিত্রতার ধারণা পাওয়া যায় কেবলমাত্র এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই। বর্তমানে তোমরা সেই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগেই অবস্থান করছো। ঠিক যেমন বলা হয়ে থাকে - কলিযুগ নিবাসী, সত্যযুগ নিবাসী। সত্যযুগ, কলিযুগকে তো অনেকেই জানে, কিন্তু যাদের বুদ্ধি তেমন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, তারা অনায়াসেই তা বুঝতে পারবে যে, কলিযুগ আর সত্যযুগের মধ্যবর্তী সময়কেই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ বলা হয়। কিন্তু অজ্ঞানী শাস্ত্রকারেরা শাস্ত্রে তাকে যুগে যুগে বলে অভিহিত করেছে। তাই বাবা স্বয়ং জানাচ্ছেন - তিনি যুগে যুগে আসেন না মোটেই। বি. কে.-দের বুদ্ধিতে একথা যেন অবশ্যই থাকে - তোমরা পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগের ব্রহ্মাকুমার ও ব্রহ্মাকুমারী। তোমরা না তো সত্যযুগে আর না কলিযুগে অবস্থান করছো। আর এই পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগের পরেই আসে সত্যযুগ। সেই সত্যযুগে যাবার উদ্দেশ্যেই তোমাদের এই পুরুষার্থ করা। যেহেতু, পবিত্রতা ছাড়া সেখানে কেউ যেতেই পারে না। সেই পবিত্র হওয়ার উদ্দেশ্যেই তোমারা এই পুরুষার্থ করে চলেছো। সবাই তো আর পবিত্র হতে পারে না, কেউ কেউ পতিত-ই থেকে যায়। পবিত্রতার দিশায় চলতে চলতে কেউ বা আবার পতনের দিশাতেও চলে যায়। তারপরেই আবার লুকিয়ে লুকিয়ে এসে আবার জ্ঞান-অমৃত পান করে। বাস্তবতার নিয়মে যারা জ্ঞান-অমৃতকে ছেড়ে বিষপান করে, কিছু সময়কাল তাদেরকে এখানে আসতে দেওয়া হয় না। যেমন প্রবাদ আছে যে, যখন অমৃত বিলানো হচ্ছিল, বিকারী অসুরেরা লুকিয়ে সেই স্থানে এসে বসেছিল। তাই তো বলা হয়, ইন্দ্রের সভায় তেমন অপবিত্ররা এসে বসলে তাদেরই সেই অভিশাপ লাগে। এছাড়াও এক কাহিনি আছে, কোনও একজন পরী এক বিকারীকে নিয়ে আসার পর তাকে যখন সেখানে বসায়, তারপর তার কি চরম দুর্দশা হয়েছিল। বিকারীর পতন তো অবসম্ভাবী। এসব অবশ্যই বুঝতে হবে তোমাদের। বিকারীর তো আর উন্নতি হবে না। বরঞ্চ সে পাথর বুদ্ধির নির্বোধে পরিণত হয়। তার মানে এমন নয় যে, মানুষ বস্তু পাথরে বা গাছ-পালায় পরিণত হয়। আসলে সে পাথর বুদ্ধির মতন নির্বোধ হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে আসার অর্থই তো পরশ পাথরের মতন সুবুদ্ধির হওয়া। কিন্তু যেহেতু তারা লুকিয়ে লুকিয়ে বিষ পান করে, তাতেই প্রমাণ হয় যে, তারা পাথর-বুদ্ধির মতন নির্বোধই থেকে যায়। এসব কথা কেবল সামনাসামনি বোঝানো যায়৷ অজ্ঞানী শাস্ত্রকারেরা তো ঘরে বসেই গল্পের আকারে সেসব লিখেই খালাস।
এই ক্লাসের নাম ইন্দ্রসভা। এখানে পোখরাজ পরী ও আরও কত হরেক রকমের পরীদের নাম করা হয়। যেমন স্থূল রত্নরাজির নাম থাকে। তাতেও আবার ক্রমিক নম্বর অনুসারে থাকে। যেমন, কোনোটি খুব ভাল রত্ন, কোনোটি কম ভাল রত্ন, কোনোটির মূল্য খুবই কম, আবার কোনোটির অধিক মূল্য। যেমন নয়টি রত্ন দিয়ে আংটি বানিয়ে তার প্রচারও করা হয়। যদিও সবগুলিই রত্ন। ঠিক তেমন ভাবেই এখানেও এরা বসে আছে। এদের মধ্যে কেউ যেমন হীরে, কেউ বা পান্না, কেউ মানিক, কেউ পোখরাজ - এরাই সব বসে আছে। যদিও তাদের একজনের সাথে অপরজনের তফাৎ রাত-দিনের, একের থেকে - অপরজনের গুরুত্বেরও অনেক পার্থক্য। ঠিক তেমন ভাবে আবার ফুলের উদাহরনও দেওয়া যেতে পারে। ফুলের মধ্যেও তো তেমনি অনেক ভ্যারাইটি থাকে। বাচ্চারা নিজেরাই তা জানে, কে কোন ফুলের মতন। ব্রাহ্মণীরা পাণ্ডা হয়ে আসে এখানে, তাই তারা অবশ্যই খুব ভাল ফুল। কোনও কোনও বি.কে. ছাত্র আবার এমন সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত হয় যে, এই পাঠের খুব সুন্দর ব্যাখ্যাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাবা সেই ব্রাহ্মণী টিচারকে ফুল উপহার না দিয়ে ঐ ছাত্রকেই সেই ফুলের উপহার দেন। যেহেতু শিক্ষিকার থেকেও অনেক বেশী গুণে গুণান্বিত সেই বি.কে.-রা। সেইসব বি.কে.-দের মধ্যে অবশ্যই কোনও প্রকারের বিকার থাকে না। আবার কারও কারও মধ্যে অবগুণও থাকে - ক্রোধের ভুত, লোভের ভুত ইত্যাদি ......! বাবা তা বুঝতে পারেন কে কেমন ফেবারিট (মনের মতন) পাণ্ডা। আর কে দ্বিতীয় শ্রেণির পাণ্ডা। আবার কেউ বা তেমন ফেবারিট নয়। কেউ বা জিজ্ঞাসু। অথচ এমন হলো, যাকে নিয়ে এলো সে হয়ে গেল ফেবারিট। আবার এমনটাও হয়, শিক্ষাদাত্রী টিচার নিজেই স্বয়ং মায়ার খপ্পরে পড়ে বিকারী হয়ে যায়। এমনও হয় যে, অন্যদেরকে পাঁক থেকে উদ্ধার করে নিজেই সেই পাঁকে ফেঁসে মারা যায়। সত্যি মায়া এমনই প্রতাপশালী। বাচ্চারাও তা জানে, এই ক্রিমিনাল দৃষ্টি-ই সবচেয়ে বেশী প্রতারণা করে। যতক্ষণ সেই প্রতারক ক্রিমিনাল দৃষ্টি থাকবে, ততক্ষণ ভাই-বোনের যে সম্পর্কের ব্যবহার শেখানো হয়, তা ফলপ্রসূ হয় না। যেহেতু একবার যে তার ক্রিমিনাল দৃষ্টি হয়ে গেছে। যখন সেই ক্রিমিনাল দৃষ্টি দূর হয়ে পাকাপাকি ভাবে সিভিল দৃষ্টি হয় - তবেই তাকে বলা হয় কর্মাতীত অবস্থা। অতএব নিজেই নিজের দৃষ্টিকে এই ভাবে পরীক্ষা করতে হবে, একত্রে থেকেও যেন একের অন্যের প্রতি বিকারী দৃষ্টি না যায়। যেহেতু এখানে তোমরা প্রকৃত ভাই-বোন। আর তোমাদের মধ্যে অবস্থান করছে জ্ঞানের তরবারি। অতএব পবিত্র থাকার পাক্কা প্রতিজ্ঞা করতে হবে তোমাদের। এতৎ-সত্ত্বেও কেউ কেউ লিখে জানাও - বাবা চেষ্টা তো করে চলেছি, কিন্তু এখনও সেই স্থিতিতে পাক্কা হতে পারিনি। এই নিমিত্তে পুরুষার্থ করেই চলেছি, এমনটা যেন না হয়। একেবারেই সিভিল দৃষ্টি যখন হবে, একমাত্র তখনই তো বিজয় প্রাপ্ত করতে পারবে। অবস্থা এমন হওয়া চাই, মনেও যেন কোনও বিকারী সংকল্প একেবারেই না আসে। যাকে কর্মাতীত অবস্থা বলা যাবে। এটাই যে তোমাদের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য৷
কত সুন্দর মালা হয় তোমাদের। ৮-রত্নের মালা। তোমরা বি.কে.-রা সংখ্যাতে অনেক। এখান থেকেই সূর্যবংশী ও চন্দ্রবংশী রাজত্বের স্থাপনা হয়। সব মিলিয়ে কেবলমাত্র ৮-রত্ন সম্পূর্ণভাবে পাশ ও স্কলারশিপ নিয়ে পাশ করে। সেই ৮-রত্নের মাঝে আবার হীরা অর্থাৎ শিববাবাকে রাখা হয়। যিনি সবাইকে এমন রত্ন করে গড়ে তোলেন। গ্রহের দশাতেও তো ৮-রত্নের আংটি ধারণ করে অনেকে। ভারত ভূ-খণ্ডে বর্তমানে চলছে রাহুর দশা। শুরুতে ছিল বৃহস্পতির দশা। যখন তোমরা ছিলে সত্যযুগী দেবী-দেবতা! সমগ্র বিশ্বে একমাত্র তোমরাই ছিলে সেই রাজ্য-ভাগ্যের অধিকারী। আর এখন তোমাদের চলছে রাহুর দশা। কিন্তু একথা তোমাদের জানা আছে, একদা কেবলমাত্র তোমাদের উপরেই ছিলো বৃহস্পতির দশা। এই বৃহস্পতি-ই আবার বৃক্ষপতি (কল্পবৃক্ষ)। যাকে প্রচলিত কথায় বৃহস্পতি বলা হয়। একদা তোমাদের উপরে সদা কালের জন্য বৃহস্পতির দশাই ছিলো, যখন তোমরা সমগ্র বিশ্বেরই মালিক ছিলে। কিন্তু এখন রাহুর দশা চলার কারণে তোমরা কানা-কড়ি মূল্যের হয়ে গেছো। যা তোমরা নিজেরাই তা বুঝতে পারো অনায়াসেই। এ নিয়ে আর প্রশ্নই উঠবে না তোমাদের। লোকেরা গুরু-গোঁসাইয়ের কাছে যেমন জানতে চায়- পরীক্ষায় কি আমি পাশ হতে পারবো ? এখানেও তেমনি বাবার কাছে অনেকেই জানতে চায়- উত্তীর্ণ হতে পারবে কি না ? বাবাও জানিয়ে দেন, এমন ভাবেই তীব্র পুরুষার্থ অনুসারে চলতে থাকলে, অবশ্যই উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু মায়াও যে প্রবল শক্তিশালী। সে তোমার জীবনে অনেক প্রকারের ঝড়-ঝঞ্ঝা আনবে। যদিও এখন তো কোনওমতে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আগামীতে যদি অনেক বড় ঝড়-ঝঞ্ঝা আসে, তখন ? মনে রাখতে হবে, তোমরা এখন দাঁড়িয়ে আছো যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝ মাঠে। এমন অবস্থায় কি করে বাবা আগাম গ্যারান্টী দিতে পারে ? অনেক আগে যখন (বি.কে.দের) মালা বানানো হতো, যাদেরকে ২ বা ৩ নম্বরে রাখা হতো, তারা বেশীদিন সেই অবস্থানে টিঁকে থাকতে পারতো না। হয়তো বা খুব সুন্দর ফুল থেকে একদম কাঁটাতেই পরিণত হলো। তাই বাবা বলছেন -"ব্রাহ্মণদের মালা আগেভাবে বানানো যায় না। সবাই যে এখন যুদ্ধের ময়দানে রয়েছে। আজ যে ব্রাহ্মণ কাল হয়তো শূদ্র হয়ে গেলো।" বিকারে যাওয়া মানেই শূদ্র হওয়া। ফলে তার উপর রাহুর দশাও বসবে। অথচ বৃহস্পতির দশা প্রাপ্তির জন্য সে পুরুষার্থ করে যাচ্ছিলো, যাকে পড়াচ্ছিলেন স্বয়ং বৃক্ষপতি। কিন্তু সেই ধারায় চলতে চলতে মায়ার এমন চপেটাঘাত লাগলো, আবার সে গিয়ে পড়লো রাহুর দশায়। কেউ বা আবার বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হলো। যেমনটা সর্বত্রই হয়ে থাকে। এক রাজার রাজত্ব থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্য রাজার রাজত্বে শরণ নেয়। তারপর সেখানে যখন দেখে যে, সেই ব্যক্তি সত্যিই কাজের, তখন তাকে শরণ দেয়। আবার এমন বিশ্বাসঘাতকও অনেক দেখা যায়, যারা এ্যারোপ্লেন নিয়ে সে অন্য দেশে চলে যায়। তখন সেই দেশ তাকে শরণ দিয়ে এ্যারোপ্লেনটি ফিরিয়ে দেয়। এ্যারোপ্লেনের তো আর শরণের প্রয়োজন নেই। সেই এ্যারোপ্লেন তো অন্যের সম্পত্তি। তাই যার সম্পত্তি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই মানুটিকে শরণ দেওয়া হয় যে তাদের শ্মরণাপন্ন হয়েছে।
বাচ্চারা, তোমরা এখন বাবার কাছে বাবার স্মরণে এসেছো। তোমরাই বলছো- বাবা আমাদের মান-মর্যাদা রক্ষা করো। যেমন দ্রোপদী চিৎকার করেছিলো- এরা আমার বস্ত্রহরণ করে নগ্ন করে দিচ্ছে, এই পতিত অবস্থা থেকে আমাকে বাঁচাও। সত্যযুগে এমন নগ্নতার কোনও ব্যাপারই নেই। যেহেতু সত্যযুগ সম্পূর্ণ নির্বিকারী। যেমন ছোট শিশুরা নির্বিকারী হয়। সত্যযুগে ঘর-সংসার গৃহস্থালি ব্যবহারে থেকেও সম্পূর্ণ নির্বিকারী থাকে তারা। যদিও স্ত্রী-পুরুষ একত্রেই থাকে, তবুও তারা নির্বিকারী হয়। তাই তো তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয় - "নর থেকে নারায়ণ, নারী থেকে লক্ষ্মী।" সত্যযুগ এমন নির্বিকারী দুনিয়া হওয়ার মূল কারণ হলো - সেখানে রাবণের উপস্থিতি থাকে না। তাই তাকে বলা হয় 'রামরাজ্য'। প্রকৃত অর্থে রাম বলা হয় শিববাবাকেই। রাম নাম জপ করার অর্থ হলো, পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করা। রাম নাম বলার সময় মন ও বুদ্ধিতে সেই নিরাকার ভাবটাই আসে। তাই তো রাম-রাম বলার সময় সীতার নাম উল্লেখ হয় না। তেমনি কৃষ্ণের নাম করার সময়ও রাধার নামের উল্লেখ থাকে না। এখানে তো আছেন এক ও একমাত্র এই বাবা, যিনি স্বয়ং বলছেন - "আত্মারা, তোমরা কেবলমাত্র আমাকেই (পরমাত্মাকে) স্মরণ করবে।" কৃষ্ণকে তো আর পতিত-পাবন বলা যায় না। ছোটকালে রাধা-কৃষ্ণ ভাই-বোন ছিল না। তারা ছিলো পৃথক-পৃথক রাজ্যের। শিশুরা তো শুদ্ধই থাকে। তাই তো বাবা বাচ্চাদেরকে ফুল বলে সম্মোধন করেন। বাচ্চাদের কোনও বিকারী দৃষ্টিও থাকে না। যখন বড় হয়, তখন তাদের দৃষ্টিকোণে পাপ জন্মায়। সেই অর্থে উদাহরণ দেওয়া হয় বালক ও মহাত্মা একই সমান। বরঞ্চ শিশুরা মহাত্মাদের থেকেও উন্নত। যেহেতু মহাত্মারা একথা তো জানে যে, তাদের জন্মটা ভ্রষ্টাচার বিকারের দ্বারা। কিন্তু ছোট বাচ্চারা তো নিজেরা তা জানেই না। বাচ্চারা, বাবার আপন হতে পারলেই অবিনাশী উত্তরাধিকারের পাবেই পাবে। আর এর দ্বারাই তোমরা বি.কে.-রা সমগ্র বিশ্বের রাজধানীর মালিক হও। পূর্ব কল্পের শুরুতেও তোমরাই সেই বিশ্বের মালিক ছিলে। এবারও আবার তা হতে চলেছো। কত অফুরন্ত প্রাপ্তিযোগ তোমাদের। অতএব স্ত্রী-পুরুষ অর্থাৎ ভাই-বোন হয়ে পবিত্র থাকাটা এতে আর অসুবিধা কোথায়। কিছু পরিশ্রম তো করতেই হয়। তবে হ্যাঁ, সবকিছুই হয়ে থাকে পুরুষার্থের ক্রমানুসারে। তোমরা আবারও এখন আছো বৃহস্পতির দশায়। যদিও স্বর্গ-রাজ্যে তো অবশ্যই যাবে, কিন্তু তা এই জ্ঞান পাঠের উপরেই নির্ধারণ হবে কে কেমন উচ্চ পদের অধিকারী হবে বা কে মধ্যম পদের। কেউ হয় ফুলের মতন, আবার কেউ বা ......! তোমাদের পদাধিকার- এটাও অনেকটা ফুলের বাগানের মতনই। অতএব খুব মনোযোগ সহকারে পুরুষার্থ করতে হবে, তেমন সুন্দর ফুল হয়ে ওঠার জন্য। তাই তো বাবা এত ধরনের ফুল নিয়ে আসেন তোমাদেরকে দেখাবার জন্য। যেমন ফুলের বাগানে হরেক প্রকারের ফুল হয়। সত্যযুগ যেমন ফুলের বাগান, তেমনি বর্তমানের এই কলিযুগ হলো কাঁটার জঙ্গল। কাঁটা থেকে ফুল হবার হবার পুরুষার্থই করে চলেছো তোমরা। সুতরাং একে অপরকে কাঁটা বিঁধানোর প্রয়াস থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে পুরুষার্থ করতে থাকো। যে যতটা পুরুষার্থ করতে পারবে, সে ততটা জয়ের মুখ দেখবে। সবকিছুর মূল কথাই হলো কাম-বিকারকে জয় করতে পারলেই জগৎজীত হতে পারবে। অবশ্য এসব কিছুই নির্ভর করছে তোমাদের নিজেদের উপরেই। এর জন্য মুখের ভাষার প্রতিও যথেষ্ট সংযম রাখতে হবে। বৃদ্ধদের কম, বানপ্রস্থ পৌঢ়দের আরও কম, আর বাচ্চাদের জন্য তো খুবই কম।
বাচ্চারা, তোমরা তো জেনেছো সমগ্র বিশ্বের বাদশাহী ও জাগতিক যাবতীয় সবকিছুই একমাত্র তোমরাই পেয়ে থাকো। আর তা পাওয়ার জন্য কেবলমাত্র এই এক জন্মে তোমাদেরকে পবিত্র থাকতে হয়, এতে মুস্কিলের কি আছে ? জাগতিক বাল-ব্রহ্মচারীরা তো জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পবিত্র থাকে। তেমনি যারা পবিত্র থাকতে পারে, বাবাও তাদের জন্য প্রয়াস করেন। সেই বাচ্চারা যারা ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান পায়, তারা অনায়াসেই বেঁচে যায়। যদিও ছোট বাচ্চারা অবোধ হয়। বাইরে স্কুল বা অন্যত্র তাদের সঙ্গী-সাথীর কারণে সেই সংস্কারের স্বভাবে প্রভাবিত হয়ে তেমনই হয়ে যায়। সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস - অসৎ সঙ্গে নরক বাস। তাই তো বাবা বলছেন- বাচ্চারা, আমি তো তোমাদেরকে ভব-সাগর পার করে একেবারে শিবালয়ে নিয়ে যাই, সত্যযুগ অর্থাৎ সম্পূর্ণ নতুন দুনিয়ায়। তখন সেখানে অনেক কম সংখ্যক মনুষ্যই থাকে, যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেবতারা অনেক কম সংখ্যকই তো হয়, যারা সেই স্বর্গ-রাজ্যে বাস করে। অতএব সেই নতুন দুনিয়ায় পৌঁছবার পুরুষার্থে মন দেওয়া উচিত তোমাদের। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা পরমাত্মা ওঁনার আত্মারূপী ঈশ্বরীয় সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. বাবার মনের মতন হওয়ার জন্য গুণবান হতে হবে। ভালো-ভালো গুণগুলিকে ধারণ করে ফুলের মতন পবিত্র-সুন্দর হতে হবে। অবগুণগুলিকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। কাউকেই কাঁটা বিঁধানো চলবে না।
২. সম্পূর্ণভাবে পাশ হওয়ার জন্য কিম্বা স্কলারশিপ নেবার জন্য এমন অবস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে খারাপ কিছুই যেন মনেতে স্থান না পায় - অর্থাৎ সম্পূর্ণ সিভিল দৃষ্টির হয়ে যাওয়া। যাতে বৃহস্পতির দশা সর্বদাই বজায় থাকে।
বরদান:-
নিজ স্বরূপ আর বাবার সত্য-স্বরূপের প্রত্যক্ষতায় সত্যতার শক্তিকে ধারণ করে দিব্যতা সম্পন্ন ভব
যে বাচ্চা নিজের স্ব-স্বরূপকে অথবা বাবার সত্য পরিচয়কে যথার্থ ভাবে জানতে পারে আর সেই স্বরূপের স্মৃতিতে অবস্থান করে, তখন তার মধ্যে সত্যতার শক্তি সঞ্চিত হয়। ফলে তার প্রতিটা সংকল্পই সদা সত্যতা আর দিব্যতা সম্পন্ন হয়। সংকল্প, বাক্য, কর্ম আর সম্বন্ধ-সম্পর্ক সবকিছুতেই দিব্যতার অনুভূতি হয়। ফলে তখন আর সত্যতাকে প্রমাণ করার আবশ্যকতাই থাকে না। আর সত্যতার শক্তি যদি থাকে, সে নিজেই খুশীতে নাচতে থাকবে।
স্লোগান:-
সাকাশ দেবার সেবা করলে নিজের সমস্যাগুলিও খুব সহজেই দূর হয়ে যায়।