24.12.2019 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের নিজেদের আত্মা রূপী দীপকের দেখাশোনা নিজেদেরকেই করতে হবে, মায়ার তুফান থেকে বাঁচার জন্য জ্ঞান-যোগের ঘৃত অবশ্যই চাই"

প্রশ্নঃ -
কী এমন পুরুষার্থ করলে গুপ্ত বাবার থেকে গুপ্ত আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয় ?

উত্তরঃ -
অন্তর্মুখী অর্থাৎ চুপ থেকে বাবাকে স্মরণ করো, তো গুপ্ত আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে যাবে। স্মরণে থাকাকালীন শরীর ছাড়লে তো খুবই ভালো, এতে কোন কষ্ট হয় না। স্মরণের সাথে সাথে জ্ঞান-যোগের সেবাও করতে হবে, আর তা যদি করতে না পারো, তবে কর্মের দ্বারা (কর্মণা সেবা) সেবা করো। অনেককে সুখ প্রদান করলে তো আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেই। কথাবার্তা এবং ব্যবহারের মধ্যে সম্পূর্ণ পবিত্রতা চাই।

গীতঃ-
দুর্বলের সঙ্গে লড়াই বলবানের.....

ওম্ শান্তি ।
বাবা বুঝিয়েছেন যে, যখনই তোমরা এইরকম গীত শুনবে, তখন প্রত্যেকেই এর উপরে বিচার সাগর মন্থন করবে। তোমরা বাচ্চারা জানো যে, যখন কেউ মারা যায়, তখন সেই আত্মার উদ্দেশ্যে ১২ দিনের জন্য প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।তোমরাও এখন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ এবং নিজেদের আত্মারূপী প্রদীপের জ্যোতিকে সর্বদা দীপ্তমান রাখতে পুরুষার্থ করছো। এই পুরুষার্থ তারাই করবে যারা যপমালার সুত্রে আসবে। প্রজারা এই যপমালার সুত্রে আসতে পারবে না। বিজয় মালাতে প্রথমে আসার জন্য তোমরা এখন পুরুষার্থ করছো। কখনও যেন মায়ারূপী বিড়াল তুফান লাগিয়ে কুকর্ম না করিয়ে দেয়, যার ফলস্বরূপ আত্মারূপী প্রদীপ নিভে যায়। এখন এতে জ্ঞান আর যোগ এই দুই শক্তি চাই। যোগের সাথে জ্ঞানও জরুরী। প্রত্যেককে নিজেদের দীপকের দেখাশোনা করতে হবে। অন্তসময় পর্যন্ত পুরুষার্থ চলতেই থাকবে। প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে তো খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে - কখনো যেন আত্মার জ্যোতি কম না হয়ে যায়, নিভে না যায়। এইজন্য যোগ আর জ্ঞানের ঘৃত প্রত্যেকদিন ঢালতে হবে। যোগবলের শক্তি নেই তো দৌড়াতেও পারবে না। পিছনে থেকে যাবে। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করা হয়, যদি কোনো ছাত্র কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো না হয়, সে তখন অন্যান্য বিষয়ের উপর বিশেষ মনোযোগ দেয়। এখানেও একইরকম। স্থুল সেবার বিষয়ও খুব ভালো। অনেকের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। কোনো কোনো বাচ্চা জ্ঞানদানের সেবা করে। দিন দিন সেবার বৃদ্ধি হতে থাকে। কোনো কোনো ধনী ব্যক্তির ৬-৮ টি দোকানও থাকে। সব দোকানে একইরকম বেচাকেনা চলেনা। কোনো দোকানে কম গ্রাহক সংখ্যা আবার কোনো দোকানে বেশী। তোমাদেরও একদিন সেই সময় আসবে, যখন রাতে ঘুমানোর সময় পাবেনা। সবাই জেনে যাবে যে জ্ঞানের সাগর বাবা এসেছেন জ্ঞানরত্ন দিয়ে আমাদের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে ভরপুর করতে। সেই সময় অনেক বাচ্চার আগমন হবে। সে কথা আর জিজ্ঞেস করোনা। যখন কোনো দোকানে খুব কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়, সাধারণ ক্রেতারা পরস্পরকে তা শোনায়। তোমরা বাচ্চারা জানো যে, এই রাজযোগের শিক্ষা খুবই সহজবোধ্য। যখন প্রত্যেকে এ বিষয়ে জেনে যাবে যে, এখানে জ্ঞানরত্ন পাওয়া যায়, তখন তারা আসতেই থাকবে। যোগ এবং জ্ঞানযুক্ত সেবা চলতেই থাকে। যদি তুমি যোগ কিংবা জ্ঞানযুক্ত সেবা করতে অক্ষম হও, তবে তুমি কর্মের দ্বারা সেবা করেও নম্বর নিতে পারো। অনেকের থেকে তুমি আশীর্বাদ প্রাপ্ত করবে। তোমরা সবাইকে সুখ প্রদান করতে পারো। এটি হল খুব সস্তা খনি। এটি হল অবিনাশী হীরা রত্নের খনি। তারা ৮ রত্নের মালা বানায় এবং পূজাও করে, কিন্তু তারা এটা জানেনা যে, কাদেরকে এই মালার দানা রূপে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

তোমরা বাচ্চারাই জানো যে, কিভাবে আমরা পূজ্য থেকে পূজারী হয়েছি। এই জ্ঞান হল অত্যন্ত বিস্ময়কর, যেটা পৃথিবীতে আর কেউই জানেনা। এখন তোমরা হলে ভাগ্যশালী নক্ষত্র । বাচ্চাদেরই দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, আমরাই স্বর্গের মালিক ছিলাম, এখন নরকের মালিক হয়ে গেছি, স্বর্গের মালিক হবো তো পুনর্জন্মও সেখানেই নেবো। এখন আমরা পুনরায় স্বর্গের মালিক হচ্ছি। শুধুমাত্র তোমাদের ব্রাহ্মণদেরই এই সঙ্গম যুগের জ্ঞান আছে। বাকি সমগ্র পৃথিবীতে হল কলিযুগ। সমস্ত যুগই হল ভিন্ন-ভিন্ন। যখন তোমরা সুবর্ণ যুগে হবে, তোমরা পুনর্জন্ম সুবর্ণ যুগেই নেবে। এখন তোমরা আছো সঙ্গম যুগে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এখন শরীর ত্যাগ করে তবে সংস্কার অনুসার এখানেই এসে জন্মগ্রহণ করবে। তোমরা হলে সঙ্গম যুগের ব্রাহ্মণ। ঐ শূদ্ররা হল কলিযুগের। কেবলমাত্র সঙ্গম যুগেই তোমরা এই জ্ঞান প্রাপ্ত করো। তোমরা ব্রহ্মাকুমার ব্রহ্মাকুমারীরা হলে জ্ঞান গঙ্গা, বাস্তবে এখন সঙ্গম যুগে আছো। এখন তোমাদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। দোকান সামলাতে হবে। জ্ঞান-যোগের ধারণা না হলে তো দোকান সামলাতে পারবে না। সেবার প্রত্যয়র্পণ তো বাবা-ই দেবেন। যখন কোনো মহাযজ্ঞ রচনা করা হয়, তো বিভিন্ন ধরনের ব্রাহ্মণরা সেখানে যান। তাঁদের মধ্যে কারোর দক্ষিণা বেশি, কারোর কম হয়। এখন পরমপিতা পরমাত্মা এই রুদ্র জ্ঞানযজ্ঞ রচনা করেছেন। আমরাই হলাম ব্রাহ্মণ এবং আমাদের সেবাই হল মানুষকে দেবতা বানানো। আর অন্য কোনো যজ্ঞে কেউ বলবে না যে আমি মনুষ্য থেকে দেবতা হয়েছি। এখন এটাকে রুদ্র জ্ঞানযজ্ঞ অথবা পাঠশালাও বলা হয়ে থাকে। জ্ঞান এবং যোগের দ্বারাই প্রত্যেক বাচ্চা দেবী-দেবতা পদ প্রাপ্ত করে। বাবা পরামর্শও দেন যে, তোমরা পরমধাম থেকে বাবার সাথে এসেছো। তোমরা বলো যে, আমরা হলাম পরমধাম নিবাসী। এই সময় আমরা বাবার শ্রীমতানুসারে স্বর্গের স্থাপনা করছি। যে স্থাপনা করবে, সে অবশ্যই মালিক হবে। তোমরা জানো যে, এই পৃথিবীতে আমরা হলাম অতিভাগ্যশালী, জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান চন্দ্রমা আর জ্ঞান তারা। রচয়িতা হলেন জ্ঞানের সাগর। ঐ সূর্য, চন্দ্র, তারা হল স্থুলাকার বিশিষ্ট। তাদের সাথেই আমাদের তুলনা করা হয়েছে। সেই অনুসারে আমরাও আবার জ্ঞান সূর্য , জ্ঞান চন্দ্রমা আর জ্ঞান তারা হলাম। আমাদেরকে এইরকম তৈরী করেছেন - জ্ঞানের সাগর। নাম তো আছে তাইনা। জ্ঞান সূর্য অথবা জ্ঞান সাগরের আমরা হলাম বাচ্চা। তিনি তো এখানকার নিবাসী নন। বাবা বলেন যে, আমি আসি তোমাদেরকে নিজের সমান তৈরী করতে। জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান তারা তোমাদেরকে এখানেই হতে হবে। তোমরা বুঝে গেছো যে আমরাই ভবিষ্যতে পুনরায় এখানেই স্বর্গের মালিক হবো। সবকিছুই নির্ভর করছে পুরুষার্থের উপর। আমরা হলাম মায়ার উপর বিজয় প্রাপ্তকারী যোদ্ধা। তারা তো মনকে বশ করার জন্য হঠযোগ আদি করে। তোমরা তো হঠযোগ আদি করোনা। বাবা বলেন যে, তোমাদেরকে কোন পরিশ্রম আদি করার দরকার নেই, শুধু বলছি যে, তোমাদেরকে আমার কাছে আসতে হবে তাই আমাকে স্মরণ করো। আমি তোমাদের বাচ্চাদের নিতে এসেছি। এইরকম আর অন্য কোনো ব্যক্তি বলতে পারেনা। হয়তো নিজেদেরকে ঈশ্বর বলে পরিচয় দেয় কিন্তু নিজেদেরকে পথপ্রদর্শক রূপে পরিচয় দিতে পারেনা। বাবা বলেন যে, আমিই হলাম প্রধান পথপ্রদর্শক, মহাকাল। সত্যবান সাবিত্রী সত্যবানের গল্প আছে না! তার ভালবাসা ছিলো ব্যক্তি (শরীর) কেন্দ্রিক। তাই তিনি দুঃখী হয়েছিলেন। তোমরা তো সদা খুশীতে থাকো। আমি তোমাদের আত্মাদেরকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো, তোমরা কখনো দুঃখী হবেনা। তোমরা এখন জেনে গেছো যে, আমাদের বাবা এসেছেন আমাদেরকে সুইট হোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাকে মুক্তিধাম, নির্বাণধাম বলা হয়। বলেন যে, আমি সমস্ত কালেরও কাল আছি। সে তো একটি আত্মাকে নিয়ে যায়, আমি তো হলাম অনেক বড়ো কাল। ৫ হাজার বছর আগেও আমি পথপ্রদর্শক হয়ে সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রেমিক প্রেমিকাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন, তো তাঁকে স্মরণ তো করতেই হবে, তাই না!

তোমরা জেনে গেছো যে, এখন আমরা পড়াশোনা করছি, পুনরায় এখানেই আসবো। প্রথমে তোমরা সুইট হোমে ফিরে যাবে তারপর তোমরা পুনরায় নিচে নেমে আসবে। তোমরা বাচ্চারা হলে স্বর্গের তারা। পূর্বে তোমরা নরকের তারা ছিলে। তোমরা বাচ্চারাই হলে তারা; নম্বরক্রমে পুরুষার্থ অনুসারে তোমাদেরকেই ভাগ্যশালী তারা বলা হয়। তোমরা ঠাকুরদাদার সম্পত্তি গ্রহণ করছো। এটি হলো একটি খুব শক্তিশালী খনি। এই খনি একবারের জন্যই উন্মুক্ত হয়। সেখানে তো অনেক রকমের ভিন্ন ভিন্ন খনি থাকে যেগুলি সর্বদা উন্মুক্ত অবস্থাতেই থাকে। যদি তোমরা সেগুলিকে খুঁজতে থাকো, তোমরা অনেক খুঁজে পেয়ে যাবে। এখানে তো কেবলমাত্র একটি বারের জন্য একটাই খনি প্রাপ্ত হয়, তাও আবার অবিনাশী জ্ঞান রত্নের। সেখানে তো পুস্তক অনেক আছে, কিন্তু তাদেরকে রত্ন বলা যায়না। বাবাকেই জ্ঞানের সাগর বলা হয়। এটি হল অবিনাশী জ্ঞানরত্নের নিরাকারী খনি। এই রত্ন দিয়েই আমরা আমাদের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে ভরপুর করি। তোমাদের বাচ্চাদের তো খুশিতে থাকা চাই। প্রত্যেকেরই যেন এই আধ্যাত্মিক নেশা থাকে। কোনো দোকান যদি খুব ভালো চলে তো তার নামও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এখানে প্রজাও বানাচ্ছ তো উত্তরাধিকারীও বানাচ্ছ। এখানেই তোমরা তোমাদের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে রত্ন দিয়ে ভরপুর করে পুনরায় অন্যদের দান করো। পরমপিতা পরমাত্মা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর, যিনি জ্ঞান রত্ন দিয়ে আমাদের বুদ্ধি পাত্রকে ভরপুর করে দেন। বাকি ওই সমুদ্র নয় যেটা দেখানো হয়েছে যে রত্নের থালা ভরপুর করে দেবতাদের প্রদান করে। ওই সাগর থেকে তো তোমরা কোনো রত্ন প্রাপ্ত করতে পারো না। এখানে জ্ঞানরত্নের কথা বলা হচ্ছে। ড্রামা অনুসারে পুনরায় তোমাদের রত্নের খনি গুলি প্রাপ্ত হয়। সেখানে তো অনেক হিরে জহরের রত্ন থাকবে, যার দ্বারা পুনরায় ভক্তি মার্গে মন্দির তৈরি করবে। ভূমিকম্প হওয়ার কারণে সবকিছুই ভূপৃষ্ঠের অন্দরে চলে যাবে। সেখানে মহল আদি তো অনেক তৈরি হয়, কেবল একটাই নয়। এখানেও তো রাজাদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা হয়। তোমরা জানো যে কল্প প্রথমে যেরকম মহল আদি তৈরি হয়েছিল, সেই রকমই পুনরায় হবে। সেখানে তো খুব সহজেই মহল আদি তৈরি হয়ে যাবে। বিজ্ঞান অনেক কাজে আসবে। কিন্তু সেখানে 'সায়েন্স' এই শব্দটি থাকবে না। 'সায়েন্স'- কে হিন্দি (বা বাংলায়) 'বিজ্ঞান' বলা হয়। আজকাল তো "বিজ্ঞান ভবন"-ও নাম রেখে দেয়। এই শব্দটির সাথে জ্ঞানের মিল পাওয়া যায়। জ্ঞান আর যোগকে 'বিজ্ঞান' বলা হয়। জ্ঞান থেকে রত্ন প্রাপ্ত হয়, এবং যোগের দ্বারা আমরা চির-সুস্থ থাকতে পারি। এটা হল জ্ঞান এবং যোগের অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা, যার দ্বারা পুনরায় বৈকুণ্ঠে বড় বড় ভবন তৈরি হয়। এখন আমরা এই সমস্ত জ্ঞান রপ্ত করেছি। তোমরা জেনে গেছো যে, এখন তোমরাই ভারতকে স্বর্গ বানাচ্ছো। তোমাদের এই দেহের সাথে কোনো মমত্ব যেন না থাকে। তুমি আত্মা এই শরীরকে ছেড়ে স্বর্গে গিয়ে নতুন শরীর ধারণ করবে, সেখানেও এই বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান থাকবে যে, একটি পুরানো শরীর ছেড়ে নতুন নেওয়া হবে। সেখানে কোন দুঃখ বা শোক আদি থাকবেনা। নতুন শরীর নিলে তো ভালই হয়। বাবা আমাদেরকে একইরকম তৈরি করছেন, যেরকম কল্পের আগেও তৈরি করেছিলেন। আমরা এখন মানুষ থেকে দেবতা তৈরি হচ্ছি। একইরকমভাবে কল্পপূর্বেও যেমন অনেক ধর্ম ছিল, এখনও তেমনই আছে। গীতাতে এসব কিছুই লেখা নেই। বলা হয় যে, ব্রহ্মার দ্বারাই আদি সনাতন ধর্মের স্থাপনা হয়েছিল। অনেক ধর্মের বিনাশ কিভাবে হয় সেটাও তোমরা এখন বুঝে গেছো। এখন স্থাপনার কার্য চলছে। বাবা আসেন তখনই, যখন দেবী-দেবতা ধর্ম সম্পূর্ণ ভাবে লোপ পেয়ে যায়। পুনরায় পরম্পরা কিভাবে চলবে? এ তো খুবই সহজ বিষয়। বিনাশ কিসের হয়েছিল? অনেক ধর্মের। তো এখন অনেক ধর্ম আছে, তাইনা! এই সময় হল অন্তসময়। এই সমস্ত জ্ঞান তোমাদের বুদ্ধির মধ্যে থাকা চাই। এরকম তো নয় যে, শিববাবাই সবকিছু বোঝাচ্ছেন ; এই বাবা কি কিছুই বলছেন না? এঁনারও পার্ট আছে। শ্রীমৎ ব্রহ্মার গাওয়া হয়, কৃষ্ণের জন্য তো শ্রীমৎ বলা হয় না। সেখানে তো সবকিছুই সুন্দর হয়। সেখানে তো তাঁর মতের কোন প্রয়োজনই নেই। এখানে তো তোমরা ব্রহ্মা বাবারও মত প্রাপ্ত করছো। সেখানে তো যেমন রাজা-রানী, তেমনই প্রজা, সকলেরই শ্রেষ্ঠ মত হবে। নিশ্চয়ই পূর্বে কেউ তাদের এই জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। দেবতারা হলেন শ্রীমতাবলম্বী। শ্রীমতের দ্বারাই স্বর্গ রচনা হয়। অসুরের মত থেকে নরক রচিত হয়। শ্রীমৎ হলো শিবের। এসমস্ত কথা সহজেই বোধগম্য হয়। শিববাবার এইসব হলো দোকান। আমরা বাচ্চারা সেগুলিকে পরিচালনা করি। যে বাচ্চা ভালোভাবে দোকানকে পরিচালনা করে তার নাম হয়। যে রকম ভাবে লৌকিক দোকানের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু সেই ব্যবসা তো কোন ধনী ব্যক্তিই করতে পারে। ব্যবসা তো সবাই করতে পারে। ছোট বাচ্চাও জ্ঞান আর যোগের ব্যবসা করতে পারে। শান্তি আর সুখধাম, ব্যস, বুদ্ধিতে এগুলি স্মরণ করতে হবে। তারা তো রাম রাম বলে। এখানে চুপ থেকে স্মরণ করতে হয়। কিছু বলতে হয়না। শিবপুরী, বিষ্ণুপুরী হল খুব সহজ কথা। সুইট হোম, সুইট রাজধানী স্মরণে আছে? তারা তো স্থুল মন্ত্র প্রদান করে। এখানে হল সূক্ষ্ম মন্ত্র। অতি সূক্ষ্ম স্মরণ। কেবলমাত্র এই স্মরণ করলেই আমরা স্বর্গের মালিক হয়ে যাবো। যপ আদি কিছু করতে হয় না। কেবলমাত্র স্মরণ করতে হয়। শব্দ কিছু করতে হয় না। গুপ্ত বাবার থেকে গুপ্ত আশীর্বাদ চুপ থেকে অন্তর্মুখী হলে তবেই আমরা প্রাপ্ত করতে পারি। এইরকমই স্মরণে থাকাকালীন শরীর ছেড়ে দিলে তো খুবই ভালো ব্যাপার। কোনো পরিশ্রম হয় না। যাদের স্মরণ হয় না তারা অভ্যাস করো। সবাইকে বলো যে বাবা বলেছেন, "আমাকে স্মরণ করো তাহলেই অন্তিম কালে যেমন মতি, সেটাই গতি হয়ে যাবে। স্মরণের দ্বারাই বিকর্ম বিনাশ হয় আর আমি স্বর্গে পাঠিয়ে দেবো। বুদ্ধিযোগ শিববাবার সাথে লাগানো তো খুব সহজ। এখানে তো সব প্রকারের সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। যদি তুমি সম্পূর্ণ পবিত্র (সতোপ্রধান) হতে চাও, তবে তোমাদের ব্যবহার অত্যন্ত পবিত্র এবং তোমার শব্দ এবং সবকিছুই পবিত্র হতে হবে। তার মানে এটাই হলো যে নিজের সাথে নিজে কথা বলা। যখন তুমি তোমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবে তুমি অবশ্যই ভালোবাসার সঙ্গে কথা বলো। একটি গান আছে না, "ও প্রীতম, সর্বদা অমূল্য শব্দই বলো...."

তোমরা হলে রূপ-বসন্ত। আত্মা হলো রূপ। বাবা হলেন জ্ঞানের সাগর, তাই তিনি অবশ্যই এসে জ্ঞান শোনাবেন। তিনি বলেন যে, আমি একবারই এসে শরীর ধারণ করি। এটা কম জাদু নয়। বাবাও হলেন রূপ বসন্ত। কিন্তু নিরাকার তো কথা বলতে পারে না। এইজন্য শরীর ধারণ করতে হয়। কিন্তু তিনি পুনর্জন্মে আসেন না। আত্মারা তো পুনর্জন্ম গ্রহণ করে। তোমরা বাচ্চারা বাবার ওপর সমর্পিত হয়ে যাও। তাই বাবা বলেন যে, পুনরায় কারো সাথে মমত্ব রেখো না। নিজের বলে কিছু মনে করো না। মমত্ব সমাপ্ত করার জন্য বাবা যুক্তি বলে দেন। প্রতি কদমে বাবার সঙ্গে রায় নিতে হবে। মায়া এইরকমই আছে, যে আঘাত করে। এটা একদম বক্সিংয়ের মত। অনেক আঘাত খেয়েও পুনরায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লিখতে থাকে বাবা মায়া থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়েছে, মুখ কালো করে দিয়েছে। যেন মনে হয় চারতলা থেকে পড়ে গেছি। ক্রোধ করলে তো তিনতলা থেকে পড়ে যাবে। এটা হল অনেক বোঝার বিষয়। এখন দেখো, বাচ্চারা টেপ-রেকর্ডিং মেশিনের জন্য প্রার্থনা করে। বাবা টেপ-রেকর্ডিং মেশিন দাও, তাহলে আমরা ভালোভাবে মুরলী শুনতে পাবো। এটারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেকে শুনলে তো অনেকেরই বুদ্ধির দরজা খুলে যাবে। অনেকের কল্যাণ হবে। যখন কোনো ব্যক্তি কলেজ খোলে, তো পরবর্তী জন্মে তার অনেক বিদ্যা প্রাপ্ত হয়। বাবা বলেন, টেপ-রেকর্ডার মেশিন ক্রয় করো, তো অনেকেই এর থেকে লাভান্বিত হয়ে যাবে। আচ্ছা!

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) সতোপ্রধান হওয়ার জন্য নিজের উপর খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। নিজের খাদ্য-পানীয়, বাণী এবং ব্যবহার সবকিছুতেই পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। বাবার সমান রূপ-বসন্ত হতে হবে।

২) অবিনাশী জ্ঞান রত্নের খনি থেকে নিজের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে ভরপুর করে অপার খুশিতে থাকতে হবে আর অন্যদেরকেও এই রত্নের দান দিতে হবে।

বরদান:-
মন বুদ্ধিকে আদেশ অনুসারে বিধিপূর্বক কার্যে প্রয়োগ করে নিরন্তর যোগী ভব

নিরন্তর যোগী অর্থাৎ স্বরাজ্য অধিকারী হওয়ার বিশেষ সাধন হলো মন আর বুদ্ধি। মন্ত্রই হল *মন্মনাভব*-র। যোগকে বুদ্ধিযোগ বলা হয়। তাই যদি এই বিশেষ আধার স্তম্ভ, নিজের অধিকারে থাকে অর্থাৎ আদেশ প্রমাণ বিধিপূর্বক কার্য করে। যে সংকল্প যখন করতে চাও, তখনই সেই সংকল্প করতে পারো, যেখানে বুদ্ধিকে লাগাতে চাও, সেখানেই লাগাতে পারো। বুদ্ধি রাজাকে ভ্রাম্যমান করবে না। বিধিপূর্বক কার্য করো, তো বলবে নিরন্তর যোগী।
 

স্লোগান:-
মাস্টার বিশ্ব শিক্ষক হও, সময়কে শিক্ষক বানিও না।