20.09.2019 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - বাবা তোমাদেরকে আন্তরিক ভাবে ‛আমার সন্তান' বলে সম্বোধন করেন, তাই তোমরা এখানে প্রবৃত্তি মার্গের মতো ভালোবাসা অনুভব করো যেটা কোনো দেহধারী গুরু দিতে পারবে না"

প্রশ্নঃ -
যেসকল বাচ্চার বুদ্ধিতে জ্ঞান ধারণ হয়েছে অর্থাৎ যারা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন তাদের লক্ষণ কেমন হবে ?

উত্তরঃ -
ওদের মধ্যে অন্যকে জ্ঞান শোনানোর খুব শখ থাকবে। ওদের বুদ্ধি মিত্র-আত্মীয়দের দিকে ধাবিত হবে না। যারা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন তারা পড়ার সময়ে কখনো হাই তুলবে না এবং স্কুলে কখনো চোখ বন্ধ করে বসবে না। যেসব বাচ্চারা এখানে পাগলের মতো বসে থাকে তাদের বুদ্ধি অন্য দিকে চলে যায়, ওরা জ্ঞানটাকে সঠিক ভাবে বোঝে না এবং ওদের কাছে তো বাবাকে স্মরণ করা খুবই কঠিন কাজ।

ওম্ শান্তি ।
এটা হলো বাবা এবং বাচ্চাদের মেলা (মিলন)। এটা কোনো গুরুর সাথে তার চেলা বা শিষ্যদের মিলন নয়। দুনিয়ার গুরুরা মনে করে যে, এরা আমার শিষ্য অথবা ফলোয়ার্স বা জিজ্ঞাসু (উত্তর সন্ধানী)। এটা তো ছোট নজরে দেখা হয়ে গেল। তখন সবাইকে সেই দৃষ্টিতেই দেখে। আত্মাকে দেখে না। গুরুরাও শরীরকেই দেখে আর তার চেলারাও দেহ-অভিমানী হয়ে বসে থাকে। তাকে নিজের গুরু বলে মনে করে এবং সেই দৃষ্টিতেই দেখে। গুরুকে খুব সম্মান করে। কিন্তু তার সাথে এখানে বিস্তর ফারাক। এখানে তো বাবা স্বয়ং বাচ্চাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি জানেন যে, এই বাচ্চাদেরকে জ্ঞান যোগ শেখাতে হবে। কিভাবে এই সৃষ্টি চক্র আবর্তিত হয় এবং অসীম জগতের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি সব এই বাচ্চাদেরকে বোঝাতে হবে। ওইসব গুরুদের মনে বাচ্চাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা থাকে না। বাবার অন্তরে তো বাচ্চাদের জন্য অনেক ভালবাসা রয়েছে এবং বাচ্চাদের অন্তরেও বাবার প্রতি ভালোবাসা রয়েছে। তোমরা জানো যে, বাবা আমাদেরকে সৃষ্টিচক্রের জ্ঞান শোনান। ওরা কি শেখায় ? অর্ধেক কল্প ধরে ভক্তিমার্গের ক্রিয়াদি করে, গায়ত্রী মন্ত্র শেখায়। এখানে তো স্বয়ং পিতা অবতরিত হয়ে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। আমরা তো বাবাকে একেবারেই জানতাম না, সর্বব্যাপী বলে দিতাম। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে পরমাত্মা কোথায় থাকেন, তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেবে যে তিনি তো সর্বব্যাপী। তোমাদের কাছে যখন মানুষ আসে তখন তারা প্রশ্ন করে যে, এখানে কি শেখানো হয় ? তাদেরকে বলো যে - আমরা রাজযোগ শেখাই যার দ্বারা আপনি মানুষ থেকে দেবতা অর্থাৎ রাজা হতে পারবেন । অন্য কোনো সৎসঙ্গে এইরকম বলবে না যে, আমরা দেবতা হওয়ার শিক্ষা দিই। দেবতারা সত্যযুগে থাকে। কলিযুগে তো মানুষরা আছে। আমরা এখন আপনাকে সমগ্র সৃষ্টিচক্রের রহস্য বোঝাব, যার দ্বারা আপনি চক্রবর্তী রাজা হয়ে যাবেন এবং তারপর আপনাকে পবিত্র হওয়ার জন্য খুব ভালো উপায় বলা হবে। এইরকম উপায় কেউ কখনো বুঝতেও পারবে না। এই উপায়টা হলো সহজ রাজযোগ। বাবা হলেন পতিত পাবন। যেহেতু তিনি সর্বশক্তিমান, তাই তাঁকে স্মরণ করলেই পাপ নাশ হবে। কারণ এটা হলো যোগ-অগ্নি। সুতরাং এখানে নুতন বিষয় শেখানো হয়।

এটা হলো জ্ঞানমার্গ। কেবল বাবা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর। জ্ঞান আর ভক্তি দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। জ্ঞান দেওয়ার জন্য স্বয়ং বাবাকেই আসতে হয়। কারণ তিনিই হলেন জ্ঞানের সাগর। তিনি নিজে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন যে, আমি হলাম সকলের পিতা, আমি ব্রহ্মার দ্বারা সমগ্র সৃষ্টিকে পবিত্র বানাই। সত্যযুগ হলো পবিত্র দুনিয়া। কলিযুগ হলো পতিত দুনিয়া। এটা হলো সত্যযুগের আদি এবং কলিযুগের অন্তিমের মধ্যবর্তী সময় বা সঙ্গমযুগ। এটাকে লিপ-যুগ বলা হয়। এই যুগে আমরা জাম্প (লাফ) দিই। কোথায় ? পুরাতন দুনিয়া থেকে নুতন দুনিয়াতে জাম্প দিই। গোটা দুনিয়া ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসেছে। এখন আমরা পুরাতন দুনিয়া থেকে নুতন দুনিয়ায় লাফ দিচ্ছি। সরাসরি উপরে পৌঁছে যাচ্ছি। পুরাতন দুনিয়াকে ত্যাগ করে আমরা নুতন দুনিয়াতে যাচ্ছি। এটা হল অসীম জগতের কথা। সীমাহীন এই পুরাতন দুনিয়াতে অনেক মানুষ রয়েছে। নুতন দুনিয়াতে তো খুব কম মানুষ থাকবে। ওটাকেই স্বর্গ বলা হয়। ওখানে সকলেই পবিত্র থাকে। কলিযুগে তো সকলেই অপবিত্র। রাবণ অপবিত্র বানিয়ে দেয়। সবাইকেই বোঝানো হয় যে, আমরা এখন রাবণ রাজ্য বা পুরাতন দুনিয়াতে রয়েছি। আসলে আমরা রাম-রাজ্যে ছিলাম, যেটাকে স্বর্গ বলা হয়। তারপর কিভাবে আমরা ৮৪ বার জন্ম গ্রহণ করে অধঃপতিত হয়েছি, সেটা আমরা আপনাকে বোঝাব। যে ভালো বিচক্ষণ ব্যক্তি হবে, সে তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে। যার বুদ্ধিতে ধারণ হবে না সে পাগলের মতো এদিকে ওদিকে দেখতে থাকবে। মনোযোগ দিয়ে শুনবে না। এদেরকে পাগলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সন্ন্যাসীরাও যখন কথা শোনায় তখন যদি কেউ ঢুলতে থাকে কিংবা অন্যদিকে মন দেয় তখন তাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করা হয় যে কি শোনানো হল ? বাবাও সবাইকে দেখেন। কোনো পাগল এখানে বসে নেই তো ? যারা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন বাচ্চা, তারা কখনো পড়ার সময়ে হাই তুলবে না। স্কুলে তো চোখ বন্ধ করে বসার কোনো নিয়ম থাকে না। জ্ঞানটাকে একটুও বোঝে না। ওদের জন্য তো বাবাকে স্মরণ করা খুব কঠিন কাজ। তাই পাপ নাশ কিভাবে হবে ? তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন বাচ্চারা ভালোভাবে জ্ঞান ধারণ করে অন্যকেও শোনাবে। জ্ঞান যদি সঠিকভাবে না থাকে, তাহলে মিত্র-আত্মীয়দের দিকে বুদ্ধি ধাবিত হবে। এখানে তো স্বয়ং বাবা বলছেন যে, অন্য সবকিছু ভুলে যেতে হবে। অন্তিম সময়ে যেন কোনোকিছুই স্মরণে না আসে। বাবা তো কয়েকজন সন্ন্যাসীকে দেখেছেন যারা একেবারে ব্রহ্মজ্ঞানী। ভোরবেলা উঠে ব্রহ্ম মহাতত্ত্বকে স্মরণ করতে করতে শরীর ত্যাগ করে। তখন তার থেকে অনেক শান্তির তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। কিন্তু ওরা তো ব্রহ্মে লীন হয় না। পুনরায় কোনো মাতৃগর্ভে জন্ম নিতে হয়।

বাবা বুঝিয়েছেন, *বাস্তবে তো কৃষ্ণকেই মহাত্মা বলা যাবে*। মানুষ তো কোনো অর্থ না বুঝে এমনিই যাহোক বলে দেয়। বাবা বোঝাচ্ছেন যে কৃষ্ণ হলো সম্পূর্ণ নির্বিকারী। কিন্তু তাঁকে সন্ন্যাসী বলা হয় না, দেবতা বলা হয়। সন্ন্যাসী বলা হবে না কি দেবতা বলা হবে সেটা প্রকৃত অর্থের ওপর নির্ভর করে। কৃষ্ণ কিভাবে দেবতা হয়েছিল ? সন্ন্যাসী থেকে দেবতা হয়েছিল। অসীম জগতের থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিল এবং নুতন দুনিয়াতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ওই সন্ন্যাসীরা তো সীমিত কিছু বিষয় থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করে। অসীম জগতের থেকে সন্ন্যাস করা ওদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই সীমিত জগতের মধ্যেই পুনরায় বিকারের দ্বারা জন্ম নিতে হয়। ওরা অসীম জগতের মালিক হতে পারবে না, রাজা-রানী হবে না। ওদের ধর্মটাই আলাদা। সন্ন্যাসী ধর্ম আর দেবী-দেবতা ধর্ম এক নয়। বাবা বলেন, আমি অধর্মের বিনাশ করে দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করছি। বিকারগুলোকেও তো অধর্ম বলা যাবে। তাই বাবা বলছেন যে এই সবকিছু বিনাশ করে এক আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করার জন্য আমাকেই আসতে হয়। ভারতে যখন সত্যযুগ ছিল তখন একটাই ধর্ম ছিল। সেই ধর্মটাই অধর্মে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এখন তোমরা পুনরায় আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করছ। যে যত বেশি পুরুষার্থ করবে, সে তত উঁচু পদ পাবে। *নিজেকে আত্মারূপে অনুভব করতে হবে। ঘর গৃহস্থে থেকেও উঠতে বসতে যত বেশি সম্ভব অভ্যাস করে এটা রপ্ত করো।* যেমন ভক্তরা ভোরবেলা উঠে নিরিবিলি স্থানে বসে মালা জপ করে, সেইরকম তোমরাও সারাদিনের হিসাব চেক করো। অমুক সময়ে এতক্ষণ স্মরণ করেছি, সারাদিনে এতক্ষণ স্মরণ করেছি। তাহলে টোটাল (মোট) কতক্ষন স্মরণ করছি। ওরা তো ভোরবেলা উঠে মালা জপ করে। হয়তো কেউই সত্যিকারের ভক্ত নয়, বুদ্ধি বাইরে কোথাও না কোথাও ঘুরতে থাকে। এখন তোমরা বুঝে গেছ যে, ভক্তি করে কোনো লাভ নেই। এটা হলো জ্ঞানমার্গ। এতে অনেক লাভ। এখন তোমরা ক্রমোন্নতি করছ। প্রতি মুহূর্তে বাবা বলতে থাকেন - "মন্মনা ভব" । গীতাতেও এটা আছে, কিন্তু এর অর্থ কেউই বলতে পারবে না। ওদের কাছে কোনো উত্তর নেই। বাস্তবে এর অর্থ তো লেখাও আছে যে, নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে, সকল দৈহিক ধর্মকে পরিত্যাগ করে কেবল আমাকে স্মরণ করো। এটা হলো ভগবানুবাচ। কিন্তু ওদের বুদ্ধিতে রয়েছে কৃষ্ণই ভগবান। কৃষ্ণ তো দেহধারণ করে। অর্থাৎ পুনর্জন্ম নেয়। তাই তাকে কিভাবে ভগবান বলা যাবে ? সুতরাং সন্তানের প্রতি বাবার যেরকম দৃষ্টি থাকে, সন্ন্যাসী কিংবা অন্য কোনো গুরুর দৃষ্টি সেইরকম হতেই পারে না। হয়তো গান্ধীজীকে বাপুজী বলা হত কিন্তু সেক্ষেত্রেও যে পিতা এবং সন্তানের সম্বন্ধ ছিল, সেটা বলা যাবে না। সেও তো একজন সাকার ব্যক্তি ছিল। তোমাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে, নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। এনার মধ্যে যে পিতা বসে আছেন, তিনি হলেন অসীম জগতের বাপুজী। লৌকিক এবং পারলৌকিক উভয় পিতার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। কিন্তু বাপুজীর কাছ থেকে তো কিছুই পাওয়া যায়নি। ঠিক আছে, হয়তো ভারতের রাজধানী ফেরৎ পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু এটাকে তো উত্তরাধিকার বলা যাবে না। সুখের প্রাপ্তি হওয়া উচিত।

উত্তরাধিকার দুই প্রকারের হয় - এক) সীমিত বা শারীরিক পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার, দুই) অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার। ব্রহ্মার কাছ থেকে কোনো উত্তরাধিকার পাওয়া যায় না। ইনি হলেন সকল সকল প্রজার পিতা। এনাকে গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার বলা হয়। ইনি নিজেই বলছেন যে আমার কাছ থেকে তোমরা কোনো উত্তরাধিকার পাবে না। যখন ইনিও বলছেন যে আমার কাছ থেকেও কোনো উত্তরাধিকার পাওয়া যাবে না, তাহলে ঐ বাপুজী-র কাছ থেকে কি কোনো উত্তরাধিকার পাওয়া যাবে ? কিছুই পাওয়া যাবে না। ইংরেজরা তো চলে গেছে। কিন্তু এখন কি পরিস্থিতি ? দারিদ্র, হরতাল, পিকেটিং, স্ট্রাইক ইত্যাদি তো লেগেই থাকে। কত মারামারি, ঝগড়াঝাটি হয়। কাউকেই ভয় পায় না। বড় বড় অফিসারদেরকেও মেরে ফেলে। সুখের পরিবর্তে আরও দুঃখ এসেছে। সুতরাং এখানে অসীম জগতের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। বাবা বলেন - আগে এটা ভালো ভাবে রপ্ত করো যে, আমি আত্মা, শরীর নয়। বাবা আমাদেরকে দত্তক নিয়েছেন। আমরা হলাম দত্তক নেওয়া সন্তান। তোমাদেরকে বোঝানো হয় যে, বাবা অর্থাৎ জ্ঞানের সাগর এসেছেন এবং তিনি সৃষ্টিচক্রের রহস্য বোঝাচ্ছেন। অন্য কেউ এটা বোঝাতে পারবে না। বাবা বলছেন, দেহ সহ সকল দৈহিক ধর্মকে ভুলে কেবল আমাকে স্মরণ করো। সতোপ্রধান তো অবশ্যই হতে হবে। তোমরা এটাও জানো যে পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। নুতন দুনিয়াতে খুব কম জন থাকবে। কোথায় এত কোটি আত্মা আর কোথায় নয় লক্ষ। বাকি এতজন কোথায় যাবে ? তোমাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে, আমরা আত্মারা সবাই ওপরে ছিলাম। তারপর এখানে যে যার ভূমিকা পালন করতে এসেছি। আত্মাকেই অভিনেতা বলা হয়। এই শরীরের দ্বারা আত্মা অভিনয় করে। আত্মার তো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন। আত্মা অতি সূক্ষ্ম। *বাস্তবে ৮৪ লক্ষ জন্ম হয় না। প্রত্যেকেই যদি ৮৪ লক্ষ জন্ম নেয়, তবে ভূমিকা রিপিট হবে কিভাবে ? কিছুই তো মনে থাকবে না। স্মৃতির বাইরে চলে যাবে।* ৮৪ টা জন্মই তোমরা মনে রাখতে পার না, ভুলে যাও। বাচ্চারা, এখন বাবাকে স্মরণ করে তোমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। এই যোগ অগ্নির দ্বারা-ই বিকর্মের বিনাশ হবে। এটাও নিশ্চিত যে, আমরা প্রতি কল্পেই অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে অসীম জগতের উত্তরাধিকার নিয়ে থাকি। এখন পুনরায় স্বর্গবাসী হওয়ার জন্য বাবা বলছেন - কেবল আমাকেই স্মরণ করো। কারণ আমিই হলাম পতিত-পাবন। তোমরাই তো বাবাকে ব্যাকুল হয়ে ডেকেছিলে। তাই বাবা এখন পবিত্র বানানোর জন্য এসেছেন। দেবতারা পবিত্র হয় আর মানুষ পতিত হয়। পবিত্র হওয়ার পরে শান্তিধামে যেতে হবে। তোমরা শান্তিধামে যেতে চাও, নাকি সুখধামে আসতে চাও ? সন্ন্যাসীরা তো বলে যে, সুখ আসলে কাক-বিষ্ঠা সম, তাই আমরা শান্তি পেতে চাই। ওরা কখনো সত্যযুগে আসবে না। সত্যযুগে তো প্রবৃত্তি মার্গের ধর্ম থাকবে। দেবতারা নির্বিকারী ছিল। তারাই পুনর্জন্ম নিতে নিতে পতিত হয়ে গেছে। এখন বাবা বলছেন নির্বিকারী হতে হবে। যদি স্বর্গে যেতে চাও, তাহলে আমাকে স্মরণ করলে তোমাদের পাপ নাশ হয়ে তোমরা পুণ্য আত্মা হয়ে যাবে এবং তারপর শান্তিধামে ও সুখধামে চলে যাবে। ওখানে শান্তিও ছিল, সুখও ছিল। এখন এটা হলো দুঃখধাম। এখন বাবা এসে সুখধাম স্থাপন করে দুঃখধামের বিনাশ করছেন। চিত্র তো সামনেই রয়েছে। ওদেরকে জিজ্ঞেস করো যে, আপনারা এখন কোথায় রয়েছেন ? এটা হলো কলিযুগের অন্তিম সময়। বিনাশ অতি নিকটে। খুব ছোট টুকরো অবশিষ্ট থাকবে। ওখানে তো এত বড় ভূখন্ড থাকবে না। বাবা-ই বসে থেকে এইসব বিশ্বের ইতিহাস-ভূগোল বোঝাচ্ছেন। এটা হল পাঠশালা। ভগবানুবাচ হল - আগে বাবার পরিচয় দিতে হয়। এখন কলিযুগ। এরপর সত্যযুগে যেতে হবে। ওখানে তো কেবল সুখ আর সুখ থাকবে। কেবল একজনকে স্মরণ করলে সেটাকে অব্যাভিচারী স্মরণ বলা হয়। শরীরটাকেও ভুলে যেতে হবে। *শান্তিধাম থেকে এসেছি এবং শান্তিধামেই ফিরে যাব*। ওখানে কোনো পতিত আত্মা যেতে পারবে না। বাবাকে স্মরণ করতে করতে পবিত্র হয়ে তোমরা মুক্তিধামে চলে যাবে। এইসব বিষয়গুলো ভালোভাবে বসে বোঝাতে হয়। আগে তো এত চিত্র ছিল না। ছবি ছাড়াই সংক্ষেপে বোঝানো হত। এই পাঠশালাতে শিক্ষালাভ করে মানুষ থেকে দেবতা হতে হবে। এই জ্ঞান আসলে নতুন দুনিয়ার জন্য। এই জ্ঞান তো স্বয়ং বাবা-ই দেবেন, তাই না ? বাচ্চাদের ওপরে বাবার দৃষ্টি থাকে। তিনি আমাদেরকে অর্থাৎ আত্মাদেরকে পড়ান। তোমরাও অন্যদেরকে বোঝাও যে, অসীম জগতের পিতা আমাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, তাঁর নাম হলো শিববাবা। কেবল অসীম জগতের পিতা বললেও সংশয় প্রকাশ করবে। কারণ এখন চারিদিকে অনেক বাবা হয়ে গেছে। মিউনিসিপ্যালিটির মেয়রকেও পিতা বলা হয়। বাবা বলছেন, আমি এর (ব্রহ্মা) মধ্যেই আসি এবং আমার নাম হলো শিব। আমি এই রথের দ্বারা-ই তোমাদেরকে জ্ঞান শোনাই। একে আমি দত্তক নিয়েছি এবং নাম রেখেছি প্রজাপিতা ব্রহ্মা। ব্রহ্মাও আমার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার পায়। আচ্ছা!

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) এখন পুরাতন দুনিয়া থেকে নুতন দুনিয়াতে জাম্প (লাফ) দেওয়ার সময়। তাই এই পুরাতন দুনিয়ার প্রতি সম্পূর্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ করতে হবে। একে বুদ্ধির দ্বারা ভুলতে হবে।

২ ) পড়াশুনার প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। স্কুলে চোখ বন্ধ করে বসে থাকার নিয়ম নেই। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পড়ার সময়ে বুদ্ধি এদিকে ওদিকে ধাবিত না হয় এবং হাই না ওঠে। শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যেন সেটা ধারণ হয়ে যায়।

বরদান:-
সময় অনুসারে নিজেকে চেক এবং চেঞ্জ করে সর্বদা বিজয়ী আত্মা ভব

যে সত্যিকারের রাজযোগী, সে কোনো পরিস্থিতিতেই বিচলিত হবে না - এই রীতিতে সময় অনুসারে নিজেকে চেক করো এবং চেক করার পরে চেঞ্জ করে নাও। কেবল চেক করলে তো হতাশ হয়ে যাবে। ভাববে যে আমার মধ্যে এইরকম দুর্বলতা রয়েছে, কি জানি ঠিক হবে না কি। তাই চেক করো এবং চেঞ্জ করো। কারণ যে সময় অনুসারে কর্তব্য পালন করে, সে সর্বদাই বিজয়ী হয়। সুতরাং সর্বদা বিজয়ী শ্রেষ্ঠ আত্মা হয়ে তীব্র পুরুষার্থের দ্বারা নম্বর ওয়ানে চলে এসো।

স্লোগান:-
মন-বুদ্ধিকে কন্ট্রোল করার অভ্যাস থাকলেই এক সেকেন্ডে বিদেহী হতে পারবে।