15.04.2020 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের এই জন্ম খুবই অমূল্য, এই জন্মেই তোমাদের মানুষ থেকে দেবতা হওয়ার জন্য পবিত্র হওয়ার পুরুষার্থ করতে হবে"

প্রশ্নঃ -
ঈশ্বরীয় সন্তান নামপ্রাপ্ত বাচ্চাদের মূখ্য ধারণা কি হবে ?

উত্তরঃ -
তারা নিজেদের মধ্যে খুবই ক্ষীরখণ্ড হয়ে থাকবে । কখনোই নুনজল হবে না । দেহ -অভিমানী মানুষ যারা, তারা উল্টোপাল্টা কথা বলে, লড়াই -ঝগড়া করতে থাকে । বাচ্চারা, তোমাদের মধ্যে এই অভ্যাস থাকতে পারে না । তোমাদের এখানে দৈবীগুণ ধারণ করতে হবে, কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করতে হবে ।

ওম্ শান্তি ।
সর্ব প্রথমে বাবা বাচ্চাদের বলেন, দেহী -অভিমানী ভব । নিজেকে আত্মা মনে করো । গীতা ইত্যাদিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সে সবই হলো ভক্তিমার্গের শাস্ত্র । বাবা বলেন, আমি হলাম জ্ঞানের সাগর । বাচ্চারা, আমি তোমাদের জ্ঞান শোনাই । তিনি কোন জ্ঞান শোনান ? তিনি এই সৃষ্টির অথবা ড্রামার আদি -মধ্য এবং অন্তের জ্ঞান শোনান । এ হলো ঈশ্বরীয় পাঠ । হিস্ট্রি আর জিওগ্রাফি আছে তো, তাই না । ভক্তিমার্গে কেউ হিস্ট্রি -জিওগ্রাফি পড়ে না । তারা এর নামই নেবে না । সাধু -সন্ত আদি বসে শাস্ত্র পাঠ করে । এই বাবা তো আর কোনো শাস্ত্র পাঠ করে শোনান না । তিনি এই পড়া পড়িয়ে তোমাদের মানুষ থেকে দেবতা বানান । তোমরা এখানে মানুষ থেকে দেবতা হতেই আসো । যদিও ওরাও মানুষ আর তোমরাও মানুষ, কিন্তু মানুষ বাবাকেই ডাকে যে, হে পতিত পাবন এসো । তোমরা তো একথা জানো যে, দেবতারা হলেন পবিত্র । বাকি তো সমস্ত মানুষ অপবিত্র, তারা তো দেবতাদের নমন করে । তারা দেবতাদের পবিত্র আর নিজেদের পতিত মনে করে, কিন্তু দেবতারা পবিত্র কিভাবে হলেন, তাঁদের পবিত্র কে বানালো -এ কোনো মানুষ মাত্রেই জানে না । বাবা তাই বোঝান -নিজেকে আত্মা জ্ঞান করে বাবাকে স্মরণ করা -এতেই যত পরিশ্রম । তোমাদের দেহ -অভিমান থাকা উচিত নয় । আত্মা হলো অবিনাশী, সংস্কারও আত্মার মধ্যেই থাকে । আত্মাই ভালো এবং খারাপ সংস্কার নিয়ে যায়, তাই বাবা এখন বলেন, তোমরা দেহী -অভিমানী হও । নিজের আত্মাকেও কেউ জানে না । রাবণ রাজ্য যখন শুরু হয় তখনই অন্ধকারের মার্গ শুরু হয় । মানুষ দেহ -অভিমানী হয়ে যায় ।

বাবা বসে তোমাদের বোঝান - বাচ্চারা, তোমরা এখানে কার কাছে এসেছো ? এনার কাছে নয় । আমি এনার মধ্যে প্রবেশ করেছি । এনার অনেক জন্মেরও অন্তিম জন্মে এ হলো পতিত জন্ম । অনেক জন্ম কি ? সেও আমি তোমাদের বলেছি, অর্ধেক কল্প হলো পবিত্র জন্ম, আর অর্ধেক কল্প হলো পতিত জন্ম । তাই ইনিও এখন পতিত হয়ে গেছেন । ব্রহ্মা নিজেকে দেবতা বা ঈশ্বর বলেন না । মানুষ মনে করে, প্রজাপিতা ব্রহ্মা দেবতা ছিলেন, তাই তারা বলে, ব্রহ্মা দেবতায়ে নমঃ । বাবা বোঝান যে, ব্রহ্মা, যিনি পতিত ছিলেন, তিনি অনেক জন্মের অন্তে আবার পবিত্র হয়ে দেবতা হন । তোমরা হলে বি.কে । তোমরাও ব্রাহ্মণ, আর এই ব্রহ্মাও ব্রাহ্মণ । এনাকে কে দেবতা বলেন ? ব্রহ্মাকে ব্রাহ্মণ বলা হয়, না কি দেবতা ? ইনি যখন পবিত্র হন, তাও তখনও ব্রহ্মাকে দেবতা বলা হবে না । যতক্ষণ না বিষ্ণু (লক্ষ্মী -নারায়ণ ) হন, ততক্ষণ দেবতা বলা হবে না । তোমরা হলে ব্রাহ্মণ - ব্রাহ্মণী । তোমাদের প্রথমে শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণ, তারপর ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা বানাই । তোমাদের এই জন্মকে অমূল্য হীরে তুল্য জন্ম বলা হয় । যদিও কর্ম ভোগ তো হতেই থাকে । তাই বাবা এখন বলছেন, নিজেকে আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ করতে থাকো । এই অভ্যাস হলেই তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হবে । নিজেকে দেহধারী মনে করলে বিকর্ম বিনাশ হবে না । আত্মা ব্রাহ্মণ নয়, শরীর সাথে থাকলেই তখন ব্রাহ্মণ তারপর দেবতা --- শূদ্র ইত্যাদি হয় । তাই এখন বাবাকে স্মরণ করারই পরিশ্রম । এ সহজযোগও । বাবা বলেন, এ সহজের থেকেও সহজ । কারোর কারোর তো শক্তও লাগে । তারা প্রতি মুহূর্তে দেহ বোধে এসে বাবাকেও ভুলে যায় । দেহী-অভিমানী হওয়াতে সময়ও তো লাগে । এমন হতেই পারে না যে, এখনই তুমি একরস হয়ে গেলে আর বাবার স্মরণ স্থায়ীভাবে টিকে গেলো । তা নয় । তোমরা কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত হলে তখন তোমাদের শরীরও থাকবে না । পবিত্র আত্মা হালকা হয়ে একদম শরীরকে ছেড়ে দেয় । পবিত্র আত্মার সঙ্গে অপবিত্র শরীর থাকে না । এমন নয় যে, এই দাদা কোনো পারে পৌঁছে গেছে । ইনিও বলেন -স্মরণের খুব পরিশ্রম । দেহ অভিমানে থাকলে উল্টোপাল্টা কথাবার্তা, লড়াই ঝগড়া ইত্যাদি চলতে থাকে । আমরা আত্মারা সব ভাই -ভাই, তাই আত্মাদের মধ্যে কিছু হতে পারে না । দেহ অভিমানের জন্যই এই দ্বিধা এসে যায় । বাচ্চারা, এখন তোমাদের দেহী -অভিমানী হতে হবে । দেবতারা যেমন ক্ষীরখণ্ড, তেমনই তোমাদেরও নিজেদের মধ্যে খুবই ক্ষীরখণ্ড হয়ে থাকা উচিত । তোমাদের কখনো নুনজল হওয়া উচিত নয় । যারা দেহ -অভিমানী মানুষ, তারা উল্টোপাল্টা কথাবার্তা, লড়াই -ঝগড়া করতে থাকে । বাচ্চারা, তোমাদের মধ্যে এই অভ্যাস হতে পারে না । তোমাদের তো এখানে দেবতা হওয়ার জন্য দৈবীগুণ ধারণ করতে হবে । কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করতে হবে । তোমরা জানো যে, এই শরীর, এই দুনিয়া পুরানো এবং তমোপ্রধান । পুরানো জিনিস, পুরানো সম্বন্ধে ঘৃণা করতে হয় । দেহ অভিমান ত্যাগ করে নিজেকে আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ করতে হবে তাহলেই পাপ বিনাশ হবে । অনেক বাচ্চাই এই স্মরণের যাত্রায় ফেল করে যায় । জ্ঞান অনুভব করাতে খুবই তীক্ষ্ণ হয় কিন্তু এই স্মরণের পরিশ্রম খুব বেশী । এ হলো বড় পরীক্ষা । অর্ধেক কল্পের পুরানো ভক্তই এ বুঝতে পারে । ভক্তিতে যারা পিছনে থাকে তারা এ তো বুঝতে পারে না ।

বাবা এই শরীরে এসে বলেন, আমি প্রতি পাঁচ হাজার বছর অন্তর আসি । আমার এই ড্রামাতে পার্ট আছে এবং আমি একবারই আসি । এ হলো সেই সঙ্গম যুগ । লড়াইও সামনে উপস্থিত । এই নাটক হলো পাঁচ হাজার বছরের । কলিযুগের আয়ু যদি আরো চল্লিশ হাজার বছর হয়, তাহলে না জানি কি হবে ! ওরা তো বলে, ভগবানও যদি আসে, তাহলেও আমরা শাস্ত্রের বলা পথ ছাড়বো না । তারা এও জানে না যে, চল্লিশ হাজার বছর পরে কোন ভগবান আসবেন ? কেউ মনে করে, কৃষ্ণ ভগবান আসবেন । নিকট ভবিষ্যতে তোমাদের নাম উজ্জ্বল হবে কিন্তু সেই অবস্থাও হওয়া চাই । তোমাদের পরস্পরের মধ্যে খুবই প্রেমের সম্পর্ক থাকা উচিত । তোমরা তো ঈশ্বরীয় সন্তান, তাই না । তোমরা ঈশ্বরের সাহায্যকারী, এমন মহিমাও আছে । তোমরা বলো যে, আমরা পতিতকে পবিত্র করার জন্য বাবার সহযোগী । বাবা, আমরা কল্পে -কল্পে আত্ম - অভিমানী হয়ে আপনার শ্রীমতে চলে যোগবলের দ্বারা নিজেদের বিকর্ম বিনাশ করি । যোগবল হলো সাইলেন্সের শক্তি । সাইলেন্সের শক্তি আর সায়েন্সের শক্তির মধ্যে রাত দিনের তফাৎ । ভবিষ্যতে তোমাদের অনেক সাক্ষাৎকার হতে থাকবে । শুরুর দিকেও কতো বাচ্চা সাক্ষাৎকার করেছে, অভিনয় করেছে । আজ আর তারা নেই । মায়া তাদের গিলে ফেলেছে । যোগে না থাকতে পারলে মায়া খেয়ে ফেলে । যদিও বাচ্চারা জানে যে, ভগবান আমাদের পড়ান, তাহলে নিয়মমতো পড়া উচিত । না হলে, খুবই কম পদ পাবে । সাজাও অনেক ভোগ করবে । এমন গায়নও তো আছে --- আমি জন্ম -জন্মান্তরের পাপী । সত্যযুগে তো রাবণ রাজ্যই থাকে না, তাহলে বিকারের নামও সেখানে কিভাবে আসতে পারে ? সে হলো সম্পূর্ণ নির্বিকারী রাজ্য । সে হলো রাম রাজ্য আর এ রাবণ রাজ্য । এই সময় সকলেই তমোপ্রধান । প্রত্যেক বাচ্চাকেই নিজেদের স্থিতির পর্যবেক্ষণ করা দরকার যে, আমরা বাবার স্মরণে কতো সময় থাকতে পারি ? দৈবী গুণ কতটা ধারণ করেছি ? মূখ্য বিষয় হলো, নিজেদের ভিতরে দেখতে হবে, আমাদের মধ্যে কোনো অপগুণ তো নেই ? আমাদের খাওয়া দাওয়া কেমন ? সারাদিনে কোনো ফালতু কথা বা মিথ্যা কথা বলি না তো ? অনেকসময় শরীর নির্বাহের কারণেও তো মিথ্যা বলে ফেলতে হয়, তাই না । তখন মানুষ মনে করে, দানপুণ্য করলে এই পাপ খণ্ডন হয়ে যাবে । ভালো কাজ করলে অবশ্যই পরিবর্তে ভালো ফল পাওয়া যায় । কেউ যদি হাসপাতাল তৈরী করে তাহলে পরের জন্মে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় । কলেজ তৈরী করে দিলে ভালো পড়াশোনা হবে, কিন্তু পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি ? তার জন্য তারা আবার গঙ্গাস্নান করতে যায় । বাকি যে ধন দান করে, তা দ্বিতীয় জন্মে পেয়ে যায় । তাতে পাপ মুক্ত হওয়ার কোনো কথা থাকে না । সে হলো ধনের লেনদেন, ঈশ্বরের জন্য দিয়েছে, ঈশ্বর আবার অল্পকালের জন্য ফেরত দিয়ে দিয়েছে । এখানে তো তোমাদের পবিত্র হতে হবে, বাবার স্মরণ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই । পবিত্র মানুষ পতিত দুনিয়াতে থাকবেই না । ওরা ঈশ্বরের জন্য ইনডায়রেক্ট করে । ঈশ্বর তো এখন বলেন --আমি তোমাদের সম্মুখে এসেছি পবিত্র বানানোর জন্য । আমি তো দাতা, তোমরা আমাকে দাও, তখন আমি তার পরিবর্তে তোমাদের দিয়ে থাকি । আমি নিজের কাছে কিছুই রাখি না । বাচ্চারা, তোমাদের জন্যই এই বাড়ী ইত্যাদি বানানো হয়েছে । সন্ন্যাসীরা তো নিজেদের জন্য বড় বড় মহল ইত্যাদি বানায় । এখানে তো শিববাবা নিজের জন্য কিছুই বানান না । তিনি বলেন, এর পরিবর্তে তোমরা নতুন দুনিয়াতে ২১ জন্মের জন্য প্রাপ্ত করবে, কেননা তোমরা সম্মুখ লেনদেন করো । তোমরা যে অর্থ দান করো তা তোমাদেরই কাজে লাগে । ভক্তিমার্গেও আমি দাতা আর এখানেও আমি দাতা । ওখানে হলো অপ্রত্যক্ষ আর এখানে প্রত্যক্ষ । বাবা তো বলে দেন, যা কিছুই আছে তা দিয়ে তোমরা সেন্টার খোলো । অনেকের কল্যাণ করো । আমিও তো সেন্টার খুলি, তাই না । বাচ্চাদের দেওয়া, তা দিয়ে আমি বাচ্চাদেরই সাহায্য করি । আমি তো নিজের সঙ্গে অর্থ নিয়েই আসি না । আমি তো এসে এনার মধ্যে প্রবেশ করি, এঁর দ্বারাই কর্তব্য করাই । আমি তো স্বর্গে আসি না । এ সবকিছুই তোমাদের জন্য, আমি তো অভোক্তা । আমি কিছুই গ্রহণ করি না । আমি এমনও বলি না যে, তোমরা আমার পায়ে পড়ো । বাচ্চারা, আমি তো তোমাদের অতি অনুগত সেবক । তোমরা এও জানো যে - সেই হলো আমাদের মাতা পিতা..... আমাদের সবকিছুই । তাও তিনি নিরাকার । তোমরা কোনো গুরুকে কখনোই ত্বমেব মাতা -পিতা বলবে না । গুরুকে গুরু আর টিচারকে টিচার বলবে । এনাকেই তোমরা মাতা -পিতা বলো । বাবা বলেন, আমি কল্পে -কল্পে একইবার আসি । তোমরাই ১২ মাস পরে জয়ন্তী পালন করো, কিন্তু শিববাবা কখন এলেন, কি করলেন, এ কেউই জানে না । ব্রহ্মা -বিষ্ণু এবং শঙ্করের কর্তব্যের খবরও কেউ জানে না কেননা উপরে শিবের চিত্র উড়িয়ে দিয়েছে । না হলে, শিববাবা তো হলেন করন -করাবনহার । তিনি ব্রহ্মার দ্বারা সব করান । এও বাচ্চারা, তোমরাই জানো যে, তিনি কিভাবে এসে প্রবেশ করে সব করে দেখান । তিনি তোমাদেরও বলেন, তোমরাও এমনভাবে করো । এক তো খুব ভালোভাবে পড়ো । বাবাকে স্মরণ করো, দৈবী গুণ ধারণ করো । এনার আত্মাও যেভাবে করেন । ইনিও বলেন, আমি বাবাকে স্মরন করি । বাবাও এনার সঙ্গেই থাকেন । তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে, আমরা নতুন দুনিয়ার মালিক হবো । তাই আমাদের চাল -চলন, খাওয়াদাওয়া আদি সবই পরিবর্তন করতে হবে । বিকারকে আমাদের ত্যাগ করতে হবে । আমাদের তো অবশ্যই শুধরাতে হবে । যত শুধরাতে থাকবে, তারপর ধীরে ধীরে শরীর ত্যাগ করবে এবং উচ্চ কুলে জন্ম নেবে । এই কুলেরও আবার নম্বরের ক্রমানুসার হয় । এখানেও খুব ভালো ভালো বংশ হয় । ৪ - ৫ ভাই সবাই একসাথে থাকে, কোনরকম ঝগড়া আদি হয় না । বাচ্চারা, এখন তোমরা জানো, আমরা অমরলোকে যাচ্ছি, যেখানে কোনো কাল গ্রাস করতে পারে না । ভয়ের কোনো কথাই থাকে না । এখানে তো দিনে -দিনে ভয় বাড়তে থাকবে । তোমরা বাইরে বের হতে পারবে না । তোমরা এও জানো যে, এখানে কোটিতে কয়েকজন এই পাঠ গ্রহণ করবে । কেউ তো খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে, লিখেও রাখে, এরা খুবই ভালো । এমন বাচ্চাও অবশ্যই আসবে । রাজধানী তো স্থাপন হতে হবে, তাই না । আর অল্প সময়ই বাকি আছে ।

বাবা সেইসব পুরুষার্থী বাচ্চাদের খুবই মহিমা করেন, যারা এই স্মরণের যাত্রায় তীক্ষ্ণ দৌড় লাগাবে । এই স্মরণের কথাই হলো মুখ্য । এতেই পুরানো হিসেব নিকেশ শোধ হয় । কোনো কোনো বাচ্চা বাবাকে লেখে যে -- বাবা, আমি রোজ এতো ঘণ্টা স্মরণ করি, বাবাও তখন মনে করেন, এ খুব ভালো পুরুষার্থী । পুরুষার্থ তো করতেই হবে, তাই না, তাই বাবা বলেন, নিজেদের মধ্যে কখনোই লড়াই ঝগড়া করা উচিত নয় । এ তো পশুদের কাজ । লড়াই ঝগড়া, এ হলো দেহ বোধের পরিচয় । এতে বাবার নাম বদনাম করে দেবে । বাবার জন্যই এমন কথা বলা হয় যে, সদগুরুর নিন্দক টিকতে পারে না । সাধুরা এ কথা নিজেদের জন্য বলে দিয়েছে । তাই মায়েরা তাঁদের খুব ভয় পায় যে, তারা অভিশাপ না দিয়ে দেয় । তোমরা এখন জানো যে, আমরা মানুষ থেকে দেবতা হচ্ছি । এখন আমরা প্রকৃত অমর কথা শুনছি । তোমরা বলো, আমরা এই পাঠশালাতে আসি শ্রী লক্ষ্মী -নারায়ণের পদ প্রাপ্তির জন্য, আর কোথাও এমন কথা বলে না । এখন আমরা নিজেদের ঘরে ফিরে যাবো । এখানে স্মরণের পুরুষার্থই হলো মুখ্য । অর্ধেক কল্প আমরা স্মরণ করি নি । এখন এই এক জন্মেই আমাদের স্মরণ করতে হবে । এই হলো পরিশ্রম । তোমাদের বাবাকে স্মরণ করতে হবে, দৈবী গুণ ধারণ করতে হবে, কোনো পাপ কর্ম করলে শত গুন দণ্ড ভোগ করতে হবে । তোমাদের পুরুষার্থ করতে হবে, নিজের উন্নতি করতে হবে । আত্মাই তো শরীরের দ্বারা পড়ে ব্যরিস্টার বা সার্জন আদি তৈরী হয়, তাই না । এই লক্ষ্মী-নারায়ণ পদ তো খুবই উঁচু, তাই না । অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের অনেক সাক্ষাৎকার হবে । তোমরা তো সর্বোত্তম ব্রাহ্মণ কুল ভূষণ, স্বদর্শন চক্রধারী । পূর্ব কল্পেও আমি তোমাদের এই জ্ঞান শুনিয়েছিলাম । আবারও আমি সেই জ্ঞান শোনাচ্ছি । তোমরা এই জ্ঞান শুনে পদ প্রাপ্তি করো । এরপর এই জ্ঞান আবার প্রায় লোপ হয়ে যায় । বাকি এইসব শাস্ত্র ইত্যাদি সবই ভক্তিমার্গের । আচ্ছা ।

মিষ্টি - মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা -পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদের জানাচ্ছেন নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১) নিজের ভিতরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে - আমি বাবার স্মরণে কতো সময় থাকি ? দৈবী গুণ কতো পর্যন্ত ধারণ করেছি ? আমার মধ্যে কোনো অপগুণ নেই তো ? আমার খাওয়া দাওয়া, আচার-আচরণ রাজকীয় তো ? আমি অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলি না তো ? মিথ্যা কথা বলি না তো ?

২) স্মরণের চার্ট বৃদ্ধি করার জন্য অভ্যাস করতে হবে --আমরা সব আত্মারা ভাই-ভাই । দেহ ভাব থেকে দূরে থাকতে হবে । নিজের একরস স্থিতি মজবুত করতে হবে এবং এরজন্য সময় দিতে হবে ।

বরদান:-
বাবার সমান স্থিতির দ্বারা সময়কে নিকটে আনা তুমিও আমার মতো(ততত্বম্ ) এর বরদানী ভব

আমিত্ব ভাবকে দূর করা অর্থাৎ বাবার সমান স্থিতিতে স্থির হয়ে সময়কে নিকটে আনা । যেখানে নিজের দেহতে বা নিজের কোনো বস্তুতে আমিত্ব ভাব থাকে, সেখানে সমান ভাবে অনুপাত থাকে, অনুপাত অর্থাৎ ত্রুটি, এমন ত্রুটির যারা, তারা কখনোই ত্রুটিহীন হতে পারে না । ত্রুটিহীন হওয়ার জন্য বাবার প্রেমে সদা মগ্ন থাকো । সদা প্রেমে মগ্ন থাকলে সহজেই অন্যদেরও নিজের সমান এবং বাবার সমান করতে পারবে । বাপদাদা নিজের প্রিয় এবং প্রেমমগ্ন বাচ্চাদের সদা 'তুমিও আমার মতো' (তৎ ত্বম ) এর বরদান প্রদান করেন ।

স্লোগান:-
একে অপরের চিন্তনকে সম্মান জানাও, তাহলে নিজের রেকর্ড ভালো হয়ে যাবে ।