ওম্ শান্তি । বাচ্চারা কি বললো এবং কাকে আহবান করলো ? হে জ্ঞান সাগর অথবা হে জ্ঞান সূর্য বাবা...ভগবানকে বাবা বলা হয়, তাইনা । ভগবান পিতা এবং তোমরা সবাই তাঁর সন্তান। বাচ্চারা বলে আমরা অন্ধকারে আছি। তুমি আমাদের আলোর জগতে নিয়ে চলো। বাবা বললে প্রমাণিত হয় পিতাকে আহ্বান করছে। 'বাবা' শব্দটি বললে ভালোবাসা অনুভব হয় কারণ পিতার কাছে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়। শুধুমাত্র ঈশ্বর বা প্রভু বললে পিতার উত্তরাধিকারের অনুভূতি থাকে না। বাবা বললে অবিনাশী উত্তরাধিকার স্মরণে এসে যায়। তোমরা আহ্বান কর বাবা আমরা অন্ধকারে আছি, তুমি এখন পুনরায় জ্ঞানের দ্বারা আমাদের দীপ প্রজ্বলিত করো, কারণ আত্মাদের প্রদীপ নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। মানুষ মারা গেলে ১২ দিন প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। একজন ঘী ঢালার জন্য বসেই থাকে যাতে প্রদীপ নিভে না যায়। বাবা বোঝান - তোমরা ভারতবাসী আলোয় অর্থাৎ দিনের বেলায় ছিলে। এখন রাতের বেলায় আছো। ১২ ঘন্টা দিন, ১২ ঘন্টা রাত। ওটা হল জাগতিক কথা। এ হল অসীম জগতের দিন এবং অসীম জগতের রাত, যাকে বলা হয় ব্রহ্মার দিন - সত্যযুগ ত্রেতা, ব্রহ্মার রাত - দ্বাপর কলিযুগ। রাতে অন্ধকার থাকে। মানুষ হোঁচট খেয়ে থাকে। ভগবানকে খুঁজে পেতে চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু পরমাত্মাকে পায় না। পরমাত্মাকে পাওয়ার জন্য ভক্তি করে। দ্বাপর থেকে ভক্তি শুরু হয় অর্থাৎ রাবণ রাজ্য শুরু হয়। বিজয়া দশমীর একটি কাহিনী বানিয়েছে। কাহিনী সর্বদা মনোরম বানায়, যেমন বাইস্কোপ, নাটক ইত্যাদি বানায়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল সত্য। পরমাত্মা বাচ্চাদের রাজযোগ শিখিয়েছেন, রাজত্ব দিয়েছেন। তারপরে ভক্তিমার্গে বসে সেইসব কাহিনী বানিয়েছে। ব্যাসদেব গীতা রচনা করেন অর্থাৎ কাহিনী বানিয়েছেন। সত্য কথা তো তোমরা এখন বাবার দ্বারা শুনছো। সর্বদা বাবা-বাবা বলা উচিত। পরমাত্মা হলেন আমাদের পিতা, নতুন দুনিয়ার রচয়িতা। সুতরাং তাঁর কাছে আমাদের অবশ্যই স্বর্গের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হওয়া উচিত । এখন তো ৮৪ জন্ম ভোগ করে আমরা নরকে পড়ে আছি। বাবা বোঝান বাচ্চারা, তোমরা ভারতবাসী সূর্যবংশী, চন্দ্রবংশী ছিলে, বিশ্বের মালিক ছিলে, দ্বিতীয় কোনও ধর্ম ছিল না, তাকেই স্বর্গ অথবা কৃষ্ণপুরী বলা হয়। এখানে আছে কংস পুরী। বাপদাদা স্মরণ করিয়ে দেন, লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্য ছিল। বাবা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর, শান্তির সাগর পতিত-পাবন, গঙ্গা নদী নয়। সব ব্রাইডদের একমাত্র ব্রাইডগ্রূম হলেন ভগবান - এই কথা মানুষ জানেনা, তাই জিজ্ঞাসা করা হয় - আত্মার পিতা কে ? তখন কনফিউজড হয়। বলে আমরা জানি না। আরে আত্মা, তুমি নিজের পিতাকে জানো না ? বলে গড ফাদার, তখন জিজ্ঞাসা করা হয় - তাঁর নাম-রূপ কি ? গডকে চেনো ? তখন বলে দেয় সর্বব্যাপী। আরে বাচ্চাদের পিতা কখনও সর্বব্যাপী হয় কি ? রাবণের অসুরিক মতে চলে এমন বোধহীন হয়ে পড়েছে। দেহ-অভিমান হল এক নম্বর । নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে না। বলে আমি অমুক। সে তো হল শরীরের কথা। আসলে নিজেকে জানে না । আমি জজ, আমি অমুক.... 'আমি আমি' বলতে থাকে, কিন্তু সেই কথা তো ভুল। আমি ও আমার এই দুটি জিনিস আছে। আত্মা হল অবিনাশী, শরীর হল বিনাশী। নাম শরীরের থাকে। আত্মার কোনো নাম থাকে না। বাবা বলেন - আমার নাম শিব। শিব জয়ন্তীও পালন হয়। এবারে নিরাকারের জয়ন্তী কীভাবে পালন করা হয় ? তিনি কার মধ্যে আসেন, সে কথা কেউ জানে না। সব আত্মাদের নাম হল আত্মা। পরমাত্মার নাম হল শিব। বাকি সব হল শালগ্রাম। আত্মারা হল সন্তান। এক শিব সব আত্মাদের পিতা। তিনি হলেন অসীম জগতের পিতা। তাঁকেই সবাই আহ্বান করে যে এসে আমাদের পবিত্র করো। আমরা দুঃখে আছি। আত্মা প্রার্থনা করে, দুঃখে সব বাচ্চারা স্মরণ করে এবং পরে এই বাচ্চারাই সুখে বাস করে তখন কেউ স্মরণ করে না। দুঃখী করেছে রাবণ।
বাবা বোঝান - এই রাবণ হল তোমাদের পুরানো শত্রু। এও ড্রামার খেলা হল পূর্ব নির্দিষ্ট । সুতরাং এখন সবাই অন্ধকারে আছে, তাই আহবান করে - হে জ্ঞান সূর্য এসো, আমাদের আলোর জগতে নিয়ে চলো। ভারত যখন সুখধাম ছিল তখন কেউ এমন করে ডাকে না। কোনও অপ্রাপ্ত বস্তু ছিল না। এখানে তো আর্তনাদ করে, হে শান্তি দেব। বাবা এসে বোঝান - শান্তি তো হল তোমাদের স্বধর্ম। গলার মালা। আত্মা হল শান্তিধাম নিবাসী। শান্তিধাম থেকে সুখধামে যায়। সেখানে তো সর্বত্রই সুখ। তোমাদেরকে আর্তনাদ করতে হয় না। দুঃখের সময়ে চিৎকার করে - দয়া করো, দুঃখহরণ কর্তা সুখপ্রদান কর্তা বাবা এসো। শিববাবা, মিষ্টি বাবা পুনরায় এসো। নিশ্চয়ই আসেন তবে তো শিবজয়ন্তী পালন করা হয়। শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বর্গের প্রিন্স। তারও জয়ন্তী পালন করা হয়। কিন্তু কৃষ্ণ কবে এসেছিল, সে কথা কেউ জানে না। রাধে-কৃষ্ণ স্বয়ংবরের পরে লক্ষ্মী-নারায়ণ হয়। এই কথা কেউ জানেনা। মানুষ প্রার্থনা করে - ও গড ফাদার.... আচ্ছা, তাঁর নাম-রূপ কি, তখন বলে নাম-রূপ বিহীন। আরে, তোমরা বলো গড ফাদার তারপরে নাম-রূপ বিহীন বলে দাও। আকাশ হল শূন্য, তারও নাম আকাশ। তোমরা বলছো আমরা বাবার নাম-রূপের বিষয়ে জানি না, আচ্ছা, নিজেকে কি জানো? হ্যাঁ, আমরা আত্মা। আচ্ছা, আত্মার নাম-রূপ বলো কি । তখন বলে আত্মাই পরমাত্মা। আত্মা নাম-রূপ বিহীন তো হতে পারে না। আত্মা একটি বিন্দু নক্ষত্র স্বরূপ। ভ্রুকুটির মাঝখানে অবস্থিত, যে সূক্ষ্ম আত্মায় ৮৪ জন্মের পার্ট ভরা আছে। এই কথাটি বুঝতে হবে। তাই ৭ দিনের ভাট্টির গায়ন করা হয়েছে। দ্বাপর থেকে রাবণ রাজ্য আরম্ভ হয়েছে তখন থেকে বিকার প্রবেশ করেছে। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমেছে। এখন সবার উপরে গ্রহণ লেগেছে, শ্যাম বর্ণ হয়েছে তাই আহবান করে হে জ্ঞান সূর্য এসো। এসে আমাদের আলোয় নিয়ে চলো। জ্ঞান অঞ্জন সদগুরু দিয়েছেন, অজ্ঞান অন্ধকারের বিনাশ হয়েছে ....বুদ্ধিতে আসেন বাবা। এমন নয় জ্ঞান অঞ্জন গুরু প্রদান করেন .... গুরু তো অনেক আছে, তাদের জ্ঞান কোথায় আছে। তাদের গায়ন হয় না। জ্ঞান-সাগর, পতিত-পাবন, সর্বের সদগতি দাতা হলেন একমাত্র বাবা। তাহলে অন্য কেউ জ্ঞান কীভাবে দেবে। সাধুরা বলে ভগবানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার অনেক পথ আছে। শাস্ত্র পাঠ করা, যজ্ঞ, তপ ইত্যাদি করা - এই সব হল ভগবানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পথ কিন্তু পতিত কীভাবে পুনরায় পবিত্র দুনিয়ায় যাবে। বাবা বলেন - আমি নিজে আসি। ভগবান তো মাত্র একজন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শঙ্কর হলেন দেবতা, তাদেরকে ভগবান বলবে না। তাদের পিতাও হলেন শিব। প্রজাপিতা ব্রহ্মা তো এখানেই থাকবে তাইনা। প্রজা এখানে আছে। নামও লেখা আছে প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী ইনস্টিটিউশন। অর্থাৎ সবাই বাচ্চা। অনেক বি. কে. রা আছে। শিবের কাছে অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়, ব্রহ্মার কাছে নয়। উত্তরাধিকার ঠাকুরদাদার কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়। ব্রহ্মার দ্বারা বসে স্বর্গে যাওয়ার উপযুক্ত করেন। ব্রহ্মার দ্বারা বাচ্চাদের দত্তক নেন। বাচ্চারাও বলে বাবা, আমরা তোমার আপন হয়েছি, তোমার কাছে অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করি। ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপনা হয় বিষ্ণুপুরীর। শিববাবা রাজযোগ শেখান। শ্রীমৎ বা শ্রেষ্ঠতম হল ভগবানের গীতা। ভগবান হলেন একমাত্র নিরাকার। বাবা বোঝান - তোমরা বাচ্চারা ৮৪ জন্ম নিয়েছো। আত্মা পরমাত্মা পৃথক রয়েছে বহুকাল.... বহুকাল থেকে আলাদা তো ভারতবাসীই ছিল। দ্বিতীয় কোনও ধর্ম ছিল না। তারাই সর্ব প্রথমে পৃথক হয়েছে। বাবার থেকে পৃথক হয়ে এখানে পার্ট প্লে করতে এসেছে। বাবা বলেন - হে আত্মারা, আমি তোমাদের পিতা, এখন আমাকে স্মরণ করো। এই হল স্মরণের যাত্রা বা যোগ অগ্নি। তোমাদের মাথায় যে পাপের বোঝা আছে, তা এই যোগ অগ্নি দ্বারা ভস্ম হবে। হে মিষ্টি বাচ্চারা, তোমরা গোল্ডেন এজ থেকে আয়রন এজে এসেছো। এখন আমাকে স্মরণ করো। এই কাজ তো বুদ্ধির তাইনা। দেহ সহ দেহের সব সম্বন্ধ ত্যাগ করে মামেকম্ স্মরণ করো। তোমরা হলে আত্মা তাইনা। এই হল তোমাদের শরীর। আমি, আমি আত্মা-ই বলে । তোমাদেরকে রাবণ পতিত বানিয়েছে। এই খেলা টি পূর্ব রচিত। পবিত্র ভারত ও পতিত ভারত। যখন পতিতে পরিণত হয় তখন বাবাকে আহবান করে। রামরাজ্য চাই। যদিও তারা বলে, কিন্তু অর্থ জানে না। জ্ঞান দাতা জ্ঞান সাগর পিতা হলেন একজনই। বাবা এসে সেকেন্ডে অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রদান করেন। এখন তোমরা বাবার আপন হয়েছো। বাবার কাছে সূর্যবংশী, চন্দ্রবংশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করতে। তারপরে সত্যযুগ, ত্রেতায় তোমরা অমর হয়ে যাও। সেখানে এমন বলবে না অমুকে মারা গেছে। সত্যযুগে অকালে মৃত্যু হয় না। তোমরা কালের উপরে জয় লাভ কর। দুঃখের নাম চিহ্ন থাকে না। তারই নাম সুখধাম। বাবা বলেন আমি তো তোমাদের স্বর্গের বাদশাহী প্রদান করি। সেখানে তো অসীম বৈভব থাকে। ভক্তিমার্গে মন্দির বানানো হয়েছে সেই সময়ও অনেক ধন ছিল। ভারত কি ছিল! বাকি অন্য সব আত্মারা নিরাকারী দুনিয়ায় ছিল। বাচ্চারা এখন জেনেছে - উঁচু থেকে উঁচু বাবা এখন স্বর্গের স্থাপনা করছেন। উঁচু থেকে উঁচু হলেন শিববাবা, তারপরে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শঙ্কর সূক্ষ্মলোকবাসী। তারপরে এই দুনিয়া।
জ্ঞানের দ্বারাই বাচ্চারা তোমাদের সদগতি হয়। গায়নও করা হয় - জ্ঞান, ভক্তি এবং বৈরাগ্য। পুরানো দুনিয়ার প্রতি বৈরাগ্য আসে, কারণ সত্যযুগের বাদশাহী প্রাপ্ত হয়। এখন বাবা বলেন - বাচ্চারা, মামেকম্ স্মরণ করো। আমাকে স্মরণ করতে করতে তোমরা আমার কাছে এসে যাবে। আচ্ছা ।
মিষ্টি - মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা - পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
*ধারণার জন্যে মুখ্য সারঃ-*
১ ) পাপের বোঝা যা মাথার উপরে আছে তাকে যোগ অগ্নির দ্বারা ভস্ম করতে হবে। বুদ্ধির দ্বারা দেহ সহ দেহের সব সম্বন্ধকে ত্যাগ করে একমাত্র বাবাকে স্মরণ করতে হবে।
২ ) আহ্বান করা বা আর্তনাদ করার পরিবর্তে নিজের শান্ত স্বধর্মে স্থিত থাকতে হবে, শান্তি হল গলার হার। দেহ-অভিমানে এসে "আমি" ও "আমার" শব্দ বলবে না, নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করতে হবে।