14.04.2021 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - অন্তর্মুখী হয়ে জ্ঞান রূপ অবস্থায় থেকে এই মহাবাক্যকে ধারণ করো, তখনই নিজের এবং অন্য আত্মাদের কল্যাণ করতে পারবে, নিজের মন বা হৃদয় রূপী মন্দিরকে ঈশ্বরীয় গুণ রূপী মূর্তির দ্বারা সাজাও, আর পবিত্র সঙ্কল্পের সুগন্ধ ছড়িয়ে দাও"

প্রশ্নঃ -
সর্বোত্তম প্রকৃত সেবা কি ? যথার্থ সেবার সূক্ষ্ম আর অতি সূক্ষ্ম রহস্য কি ?

উত্তরঃ -
কারোর যখন কোনো ভুল হয়, তখন তাদের সাবধান করার সাথে সাথে সূক্ষ্ম ভাবে নিজের যোগ শক্তি তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের অশুদ্ধ সঙ্কল্পকে ভস্ম করা, এটাই হলো সর্বোত্তম প্রকৃত সেবা । এর সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া, যাতে মনেও যেন কোনো অশুদ্ধ সঙ্কল্প উৎপন্ন না হয় । এতে নিজেও সাবধান থেকো আর অন্যের প্রতিও এমন দিব্য সেবা করো, এটাই হল সেবার সূক্ষ্ম এবং অতি সূক্ষ্ম রহস্য ।

ওম্ শান্তি ।
প্রত্যেক পুরুষার্থী বাচ্চাকে প্রথমে অবশ্যই অন্তর্মুখী অবস্থা ধারণ করতে হবে । এই অন্তর্মুখীতাতে অনেক কল্যাণ নিহিত আছে, এই অবস্থা থেকেই অচল, স্থির, ধৈর্য, নির্মাণচিত্ত ইত্যাদি দৈবী গুণের ধারণা হতে পারে অথবা সম্পূর্ণ জ্ঞানময় অবস্থা প্রাপ্ত হতে পারে । অন্তর্মুখী না হওয়ার কারণে সেই সম্পূর্ণ জ্ঞান রূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয় না, কেননা যে মহাবাক্য সামনে শোনে, তা গভীরতায় গিয়ে গ্রহণ করে না, কেবল সেই মহাবাক্য শুনে রিপিট করে দেয়, ফলে সেই মহাবাক্য বাক্য হয়ে যায় । জ্ঞান রূপ অবস্থায় থেকে যে মহাবাক্য না শোনে, সেই মহাবাক্যের উপর মায়ার ছায়া পড়ে যায় । এখন এই মায়ার অশুদ্ধ ভাইব্রেশনে ভরপুর মহাবাক্য শুনে তা রিপিট করাতে নিজের সঙ্গে অন্যের কল্যাণ হওয়ার পরিবর্তে অকল্যাণ হয়ে যায়, তাই হে বাচ্চারা, তোমরা অন্তর্মুখী হয়ে যাও ।

তোমাদের এই মন হল মন্দিরের মতো । মন্দির থেকে যেমন সর্বদা সুগন্ধ আসে, তেমনই মন মন্দির যখন পবিত্র হয়, তখন সঙ্কল্পও পবিত্রই ইমার্জ হয় । মন্দিরে যেমন পবিত্র দেবী - দেবতার চিত্রই রাখা হয়, নাকি দৈত্যদের । তেমনই তোমরা বাচ্চারা তোমাদের মন বা হৃদয় রূপী মন্দিরকে সর্ব ঈশ্বরীয় গুণের মূর্তিতে সাজিয়ে দাও, সেই গুণ হলো - নির্মোহ, নির্লোভ, নির্ভয়, ধৈর্যবৎ, নিরহংকার ইত্যাদি, কেননা এইসব তোমাদেরই দিব্য লক্ষণ । বাচ্চারা, তোমাদের মন মন্দিরকে উজ্জ্বল অর্থাৎ সম্পূর্ণ শুদ্ধ বানাতে হবে । মন মন্দির যখন শুদ্ধ বা উজ্জ্বল হবে তখনই নিজের উজ্জ্বল, প্রিয় বৈকুণ্ঠ দেশে যেতে পারবে । তাই এখন নিজের মনকে উজ্জ্বল বানানোর প্রচেষ্টা করতে হবে তথা মন সহ বিকারী কর্মেন্দ্রিয়কে বশ করতে হবে। কিন্তু তা কেবল নিজের নয়, অন্যের প্রতিও এই দিব্য সেবা করতে হবে ।

বাস্তবে সেবার অর্থ অতি সূক্ষ্ম এবং মিহি। এমন নয় যে কারোর ভুল দেখে কেবলমাত্র সাবধান করা, সেবা শুধু এই পর্যন্তই । তা কিন্তু নয়, বরং সূক্ষ্ম ভাবে তাদেরকে নিজের যোগের শক্তি পৌঁছে দিয়ে, তাদের অশুদ্ধ সঙ্কল্প ভস্ম করে দিতে হবে, এটাই হলো সর্বোত্তম প্রকৃত সেবা। আর এর সাথে সাথে নিজের প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে । কেবলমাত্র বাণী বা কর্ম পর্যন্তই নয়, মনেও যদি কোনো অশুদ্ধ সঙ্কল্পের উৎপত্তি হয়, তাহলে সেই ভাইব্রেশন অন্যদের কাছে গিয়ে সূক্ষ্মভাবেও তাদের অকল্যাণ করে, যার বোঝা নিজের উপর আসে, আর সেই বোঝা-ই বন্ধনে পরিণত হয়। তাই হে বাচ্চারা, তোমরা সাবধান থাকো, আর অন্যদের প্রতিও এমন দিব্য সেবা করো, এটাই হলো তোমাদের মতো সেবাধারী বাচ্চাদের অলৌকিক কর্তব্য । এমন সেবা যারা করে, তাদের তখন নিজের প্রতি কোনো পৃথক সেবা করতে হয় না । মনে করো, যদি কখনো কোনো ভুল অসাবধানতা বশতঃ হয়েও যায়, তাহলে তাকে নিজের বুদ্ধিযোগের বলের দ্বারা চির কালের জন্য ঠিক করে দিতে হবে । এমন তীব্র পুরুষার্থী সামান্য ইশারা পেলেই শীঘ্রই তা অনুভব করে পরিবর্তন করে নেয় আর ভবিষ্যতের জন্য খুব ভালোভাবে সাবধান হয়ে চলে। এটাই হলো বিশাল বুদ্ধি বাচ্চাদের কর্তব্য ।

হে আমার প্রাণেরা, পরমাত্মার দ্বারা রচিত এই অবিনাশী জ্ঞান যজ্ঞের প্রতি নিজের তন, মন এবং ধনকে সম্পূর্ণ ভাবে স্বাহা করার রহস্য অতি মিহি (সূক্ষ্ম) । যে মুহূর্তে তোমরা বলো যে, আমি তন, মন এবং ধন সহ যজ্ঞতে স্বাহা অর্থাৎ অর্পণ হয়ে মৃত হয়ে গেছি, সেই মুহূর্ত থেকে আর নিজের বলে কিছুই থাকে না । এতেও প্রথমে তন এবং মনকে সম্পূর্ণ ভাবে সেবাতে নিয়োজিত করতে হবে । সবকিছুই যখন যজ্ঞ বা পরমাত্মার জন্য, তখন নিজের জন্য আর কিছুই থাকতে পারে না, ধনও ব্যর্থ নষ্ট করতে পারো না । মনও অশুদ্ধ সঙ্কল্প - বিকল্পের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে না, কেননা তা পরমাত্মাকে অর্পণ করে দিয়েছো । এখন পরমাত্মা তো হলোই শুদ্ধ শান্ত স্বরূপ । এই কারণে অশুদ্ধ সঙ্কল্প শীঘ্রই শান্ত হয়ে যায় । মন যদি মায়ার হাতে সমর্পণ করে দাও, মায়ার বিভিন্ন রূপ থাকার কারণে অনেক প্রকারের বিকল্প উৎপন্ন করিয়ে মন রূপী ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে যায় । এখনো যদি কোনো বাচ্চার সঙ্কল্প বা বিকল্প আসে, তাহলে বোঝা উচিত যে, এখনও পর্যন্ত মন পূর্ণতঃ স্বাহা হয়নি, অর্থাৎ ঈশ্বরীয় মন তৈরী হয়নি, তাই হে সর্বত্যাগী বাচ্চারা, এই গুহ্য রহস্যকে বুঝে কর্ম করাকালীন সাক্ষী হয়ে নিজেকে দেখে খুব সাবধানের সঙ্গে চলতে হবে ।

স্বয়ং গোপী বল্লভ তাঁর প্রিয় তোমাদের মতো গোপ - গোপিনীদের বোঝাচ্ছেন যে - তোমাদের প্রত্যেকের বাস্তবিক প্রকৃত প্রেম কি ! হে প্রাণী, তোমাদের একে অপরের প্রেম ভরা সাবধানবাণীকে স্বীকার করতে হবে, কেননা যত প্রিয় ফুল ততই শ্রেষ্ঠ পালন । ফুলকে মূল্যবান তৈরী করার কারণে মালিকে কাঁটার আঘাত দিয়ে পার হতে হয় । তেমনই তোমাদেরও কেউ যখন সাবধান করে, তখন বুঝতে হবে যে, সে আমার পালনা করেছে অর্থাৎ আমার সেবা করেছে । সেই সেবা বা পালনের সম্মান দিতে হবে, এই হলো সম্পূর্ণ হওয়ার যুক্তি । এ হলো জ্ঞান সহ আন্তরিক প্রকৃত প্রেম । এই দিব্য প্রেমে একে অপরের প্রতি খুব সম্মান থাকার প্রয়োজন । প্রতিটি বিষয়ে প্রথমে নিজেকে সাবধান করতে হবে, এই হলো নির্মাণ চিত্ত অতি মধুর অবস্থা । এমন প্রেম পূর্বক চললে তোমাদের এখানেই সত্যযুগের তুল্য সুন্দর দিনের আন্তরিক অনুভব হবে । ওখানে তো এই প্রেম স্বাভাবিকভাবে থাকে, কিন্তু সঙ্গমের এই অতি মিষ্টি সময়ে একে অপরের জন্য সেবা করার এ হলো অতি মিষ্টি রমণীয় প্রেম, এই শুদ্ধ প্রেমের মহিমাই জগতে করা হয়েছে ।

তোমাদের মতো প্রত্যেক চৈতন্য ফুলদের সর্বদা হর্ষিত মুখ হয়ে থাকা চাই, কেননা নিশ্চয় বুদ্ধি হওয়ার কারণে তোমাদের শিরা - উপশিরাতে সম্পূর্ণ ঈশ্বরীয় শক্তি মিশে রয়েছে । এমন আকর্ষণ শক্তি দিব্য চমৎকার রূপের অবশ্যই বহিপ্রকাশ করে । ছোটো নির্দোষ বাচ্চা যেমন শুদ্ধ পবিত্র হওয়ার কারণে সর্বদা হাসতে থাকে, আর নিজের সুন্দর চরিত্রের জন্য সবাইকে আকর্ষণ করে । তেমনই তোমাদের প্রত্যেকেরই এমন ঈশ্বরীয় সুন্দর জীবন হওয়া উচিত, এরজন্য তোমাদের যে কোনো উপায়েই নিজের আসুরিক স্বভাবের উপর জয় প্রাপ্ত করতে হবে । কাউকে যখন দেখবে যে, এ ক্রোধ বিকারের বশীভূত হয়ে আমার সামনে এসেছে, তখন তার সামনে জ্ঞান রূপ হয়ে বাচ্চা সুলভ মিষ্টি রীতির সঙ্গে হাসতে থাকো, তখন সে নিজে থেকেই শান্ত চিত্ত হয়ে যাবে অর্থাৎ বিস্মৃতি স্বরূপ থেকে স্মৃতি স্বরূপে এসে যাবে । যদিও সে বুঝতেও না পারে, কিন্তু তোমরা সূক্ষ্ম রীতিতে তাদেরকে জয় করে মালিক হয়ে যাও, এই হলো মালিক আর বালক ভাবের সর্বোচ্চ শিরোমণি বিধি ।

ঈশ্বর যেমন সম্পূর্ণ জ্ঞান রূপ, তেমনই সম্পূর্ণ প্রেম রূপও । ঈশ্বরের মধ্যে দুই গুণই বিলীন হয়ে আছে, তবুও প্রথম হলো জ্ঞান, আর দ্বিতীয় প্রেম । কেউ যদি প্রথমে জ্ঞান রূপ না হয়ে কেবল প্রেম রূপ হয়ে যায়, তাহলে সেই প্রেম অশুদ্ধ খাতায় নিয়ে যায়, তাই প্রেমকে মার্জ করে প্রথমে জ্ঞান রূপ হয়ে তারপর ভিন্ন - ভিন্ন রূপে আসা মায়াকে জয় করে পরে প্রেম রূপ হতে হবে । জ্ঞান ছাড়া যদি প্রেমে আসো তাহলে কোথাও বিচলিতও হয়ে যাবে । যেমন কেউ জ্ঞান রূপ হওয়া ছাড়া ধ্যানে যায়, তখন কোনো কোনো বার মায়াতে আটকে যায়, তাই বাবা বলেন, হে বাচ্চারা, এই ধ্যানও এক সুতোর শৃঙ্খল, কিন্তু জ্ঞান রূপ হয়ে পরে ধ্যান করলে অতি আনন্দের অনুভব হয় । তাই প্রথমে হলো জ্ঞান, তারপর ধ্যান । ধ্যানিষ্ট অবস্থা থেকে জ্ঞানিষ্ট অবস্থা শ্রেষ্ঠ । তাই হে বাচ্চারা, প্রথমে জ্ঞান রূপ হয়ে তারপর প্রেম ইমার্জ করতে হবে । জ্ঞান ছাড়া প্রেম এই পুরুষার্থী জীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে ।

সাক্ষীভাবের অবস্থা অতি মিষ্টি, রমণীয় এবং সুন্দর । এই অবস্থার উপরই ভবিষ্যৎ জীবনের সবকিছুই নির্ভর করে । যেমন কারোর কাছে যদি কোনো শারীরিক ভোগ আসে, সেই সময় যদি সে সাক্ষী, সুখ স্বরূপ অবস্থায় উপস্থিত থেকে তা ভোগ করে তাহলে অতীত কর্মের ভোগকেও শোধ করতে পারে, এর সাথে সাথে ভবিষ্যতের জন্যও সুখের হিসাব তৈরী করে । তাই এই সাক্ষীভাবের সুখ রূপ অবস্থা অতীত এবং ভবিষ্যৎ এই দুইয়েরই যোগ রাখে । তাই এই রহস্যকে বুঝতে পারলে কেউই এমন বলবে না যে, আমার এই সুন্দর সময় কেবল শোধ করাতেই চলে গেলো । তা নয়, এই সুন্দর সময় হলো পুরুষার্থের সময়, যেই সময় দুই কার্যই সম্পূর্ণ রীতিতে সিদ্ধ হয় । এমন দুই কার্যকে সিদ্ধ করা পুরুষার্থীই সুখ আর আনন্দের অনুভবে থাকে ।

বাচ্চারা, ভ্যারাইটি এই বিরাট ড্রামার প্রতিটি বিষয়ে তোমাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিত থাকা উচিত, কেননা এই বানানো ড্রামা সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য । দেখো, এই ড্রামা প্রত্যেক জীব - প্রাণীর থেকে তার পার্ট সম্পূর্ণ ভাবে করিয়ে নেয় । যদিও কেউ ভুল হয়, তাও সেই ভুল পার্টও পূর্ণ রীতিতে করে । এও ড্রামাতে লিপিবদ্ধ আছে । যখন ভুল এবং ঠিক দুইই প্ল্যানে লিপিবদ্ধ আছে, তখন কোনো বিষয়ে সংশয় আসা, এ কোনো জ্ঞান নয়, কেননা প্রত্যেক অভিনেতাই তার নিজের নিজের অভিনয় করে চলেছে । বায়োস্কোপে যেমন অনেক ভিন্ন - ভিন্ন নাম - রূপধারী অভিনেতা নিজের নিজের অভিনয় করে, তাই তাদের কারোর প্রতি ঘৃণা বা কাউকে দেখে আনন্দিত হলে, এমন হয় না । এটা জানা থাকে যে, এ এক খেলা, যাতে প্রত্যেকেই নিজের ভালো বা মন্দ পার্ট পেয়েছে । তেমনই এই অনাদি বানানো বায়োস্কোপকেও সাক্ষী হয়ে একরস অবস্থায় হর্ষিত মুখ হয়ে দেখতে হবে । সংগঠনে এই পয়েন্ট খুব ভালোভাবে ধারণ করতে হবে । একে অপরকে ঈশ্বরীয় রূপে দেখতে হবে, অনুভবের জ্ঞানে সর্ব ঈশ্বরীয় গুণের ধারণা করতে হবে । নিজের লক্ষ্য স্বরূপের স্মৃতিতে শান্তচিত্ত, নির্মাণচিত্ত, ধৈর্যবৎ, মিষ্টতাপূর্ণ, শীতলতা ইত্যাদি সর্ব দৈবী গুণ ইমার্জ করতে হবে ।

ধৈর্যবৎ অবস্থা ধারণ করার মুখ্য ফাউণ্ডেশন হলো - ওয়েট এন্ড সি । এ আমার প্রিয় বাচ্চারা, ওয়েট অর্থাৎ ধৈর্য ধরা, সি অর্থাৎ দেখা । নিজের হৃদয়ের গভীরে প্রথমে ধৈর্যবৎ গুণ ধারণ করে তারপর বাইরে থেকে এই বিরাট ড্রামাকে সাক্ষী হয়ে দেখতে হবে । যতক্ষণ না কোনো রহস্য শোনার সময় নিকটে আসে, ততক্ষণ এই ধৈর্যের গুণ ধারণ করতে হবে । সময় আসলে সেই ধৈর্যতার গুণের সঙ্গে রহস্য শুনলে কখনোই বিচলিত হবে না । তাই হে পুরুষার্থী প্রাণী, তিষ্ঠ, আর সামনে এগিয়ে রহস্য দেখতে থাকো । এই ধৈর্যবৎ অবস্থার দ্বারা সমস্ত কর্তব্য সম্পূর্ণ রূপে সিদ্ধ (সফল) হয় । এই গুণ নিশ্চয়ের সাথে যুক্ত হয়ে আছে । এমন নিশ্চয়বুদ্ধি, সাক্ষীদ্রষ্টা হয়ে প্রতিটি খেলাকে আনন্দিত চেহারায় দেখে আন্তরিক ধৈর্য এবং অটলচিত্ত থাকে, এই হলো জ্ঞানের পরিপক্ক অবস্থা, যা অন্তিমে সম্পূর্ণতার সময় প্রত্যক্ষভাবে থাকে, তাই দীর্ঘ সময় ধরে এই সাক্ষীভাবের অবস্থায় স্থির থাকার পরিশ্রম করতে হবে ।

নাটকে যেমন অভিনেতাকে তার পার্ট পূর্ণ রূপে অভিনয় করার জন্য আগে থেকেই রিহার্সাল দিতে হয়, তেমনই তোমাদের মতো প্রিয় ফুলদেরও আগত ভারী পরীক্ষাকে যোগবলের দ্বারা পাস করার জন্য পূর্ব হতেই রিহার্সাল অবশ্যই করতে হবে , কিন্তু দীর্ঘকালের পুরুষার্থ যদি না করা হয়, তাহলে সেই সময় ঘাবড়ে যাওয়ার কারণে ফেল করে যাবে, তাই প্রথমে নিজের ঈশ্বরীয় ফাউণ্ডেশন পাকা করে দৈবীগুণধারী হয়ে যেতে হবে ।

জ্ঞান স্বরূপ স্থিতিতে স্থির থাকলে শীঘ্রই জ্ঞান রূপ অবস্থা হয়ে যায় । 'জ্ঞানী তু আত্মা' বাচ্চারা যখন একত্রিত হয়ে মুরলী শোনে, তখন চারিদিকে শান্তির বায়ুমণ্ডল তৈরী হয়, কেননা তারা যে মহাবাক্যই শোনে তাতেই আন্তরিক গভীরতায় চলে যায় । এই ডীপে (গভীরতায়) যাওয়ার কারণে তাদের আন্তরিক শান্তির মিষ্টি অনুভব হয় । তখন আর এরজন্য বসে বিশেষ কোনো পরিশ্রম করার প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু জ্ঞানের অবস্থায় স্থিত থাকলে এই গুণ অনায়াসেই এসে যায় । বাচ্চারা, তোমরা যখন ভোরবেলা উঠে একান্তে বসো তখন শুদ্ধ বিচার রূপী ঢেউ উৎপন্ন হয়, সেই সময় খুবই উপরাম (ঊর্ধ্ব ) অবস্থার প্রয়োজন । এরপর নিজের শুদ্ধ সঙ্কল্পে স্থিত হলে অন্য সব সঙ্কল্প নিজে থেকেই শান্ত হয়ে যাবে, আর মন দৃঢ়চেতা হয়ে যাবে, কেননা মনকে বশ করার জন্যও কোনো শক্তির তো অবশ্যই প্রয়োজন, তাই প্রথমে নিজের লক্ষ্য স্বরূপের শুদ্ধ সঙ্কল্প ধারণ করো । আন্তরিক বুদ্ধিযোগ যখন উচিত মতো হবে, তখন শীঘ্রই তোমাদের নিঃসঙ্কল্প অবস্থা হয়ে যাবে । আচ্ছা ।

মিষ্টি - মিষ্টি হারানিধি, জ্ঞান গুলজারী, জ্ঞান নক্ষত্রদের প্রতি মাতা - পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) নিজ লক্ষ্য স্বরূপের স্মৃতিতে শান্ত চিত্ত, নির্মাণ চিত্ত, ধৈর্যবৎ, মিষ্টতাপূর্ণ, শীতলতা ইত্যাদি সর্ব দৈবী গুণ ধারণ করতে হবে ।

২ ) নিশ্চয়বুদ্ধি, সাক্ষীদ্রষ্টা হয়ে আনন্দিত চেহারায় এই খেলাকে দেখে আন্তরিক ধৈর্য এবং অটলচিত্ত থাকতে হবে । দীর্ঘ সময়ের জন্য এই সাক্ষীভাবের অবস্থায় স্থিত থাকার পরিশ্রম করতে হবে ।

বরদান:-
স্নেহ এবং শক্তি রূপের ভারসাম্যের দ্বারা সেবাকারী সফলতামূর্তি ভব

এক চোখে যেমন বাবার স্নেহ আর অন্য চোখে বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত কর্তব্য অর্থাৎ সেবার স্মৃতিতে থাকতে হবে, এমন স্নেহী মূর্তের সঙ্গে সঙ্গে এখন শক্তি রূপও হও । স্নেহের সঙ্গে সঙ্গে শব্দতে যেন এমন ধার থাকে যা কারোর হৃদয়ও বিদ্ধ হয়ে যায় । মা যেমন বাচ্চাদের যে কোনো শব্দেই শিক্ষা দিক না কেন, মায়ের স্নেহের কারণে সেই শব্দ তেজ বা কটু অনুভব হয় না । তেমনই জ্ঞানের যে সব সত্য কথা আছে, তা স্পষ্ট শব্দে বলো - কিন্তু সেই শব্দতে যদি স্নেহ মিশে থাকে তাহলে তা সফলতামূর্ত হয়ে যাবে ।

স্লোগান:-
সর্বশক্তিমান বাবাকে যদি সাথী বানিয়ে নাও তাহলে অনুতাপ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে ।