"কর্মাতীত স্থিতির গুহ্য পরিভাষা"
আজ বিদেহী বাপদাদা বিদেহী স্থিতিতে স্থিত তাঁর শ্রেষ্ঠ বাচ্চাদের দেখছেন l প্রত্যেক ব্রাহ্মণ আত্মা বিদেহী হওয়ার বা কর্মাতীত হওয়ার শ্রেষ্ঠ লক্ষ্যকে নিয়ে সম্পূৰ্ণ স্টেজের কাছাকাছি চলে আসছে l সুতরাং আজ বাপদাদা বাচ্চাদের কর্মাতীত বিদেহী স্থিতির নৈকট্য দেখছিলেন যে কে কে কতো নিকটবর্তী হয়েছে, 'ফলো ব্রহ্মা বাবা' কতটা করেছে বা করছে ! সবারই লক্ষ্য বাবার নিকটবর্তী হওয়ার আর তাঁর সমান হওয়ার l কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি তা' করতে নম্বর-ক্রম হয়ে যায় l এই দেহে থেকে বিদেহী অর্থাৎ কর্মাতীত হওয়ার বাস্তব এক্সাম্পল (উদাহরণ) ব্রহ্মাবাবাকে দেখেছ l তাহলে কর্মাতীত হওয়ার বিশেষত্ব কী ? যতক্ষণ এই দেহে আছ, কর্মেন্দ্রিয়ের সাথে এই কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা (পার্ট) পালন করছ, ততক্ষণ কর্ম ব্যতীত এক সেকেন্ডও থাকতে পার না l কর্মাতীত অর্থাৎ কর্ম করাকালীন কর্মের বন্ধন থেকে ঊর্ধ্বে l এক হলো বন্ধন, আরেক হলো সম্বন্ধ l কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্মের সম্বন্ধে আসা আলাদা ব্যাপার, কর্মের বন্ধনে বেঁধে যাওয়া সেটা আলাদা ব্যাপার l কর্মবন্ধন তোমাদেরকে কর্মের সীমিত ফলের বশীভূত বানায় l বশীভূত শব্দ যেকোনো কারও বশে হওয়াই প্রমাণ করে l যারা বশ হয় তারা ভূতের সমান এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়, কর্তব্যজ্ঞানহীন হয়ে যায় l যেমন অশুদ্ধ আত্মা যখন ভূত হয়ে প্রবেশ হয় তখন মনুষ্য আত্মার কী অবস্থা হয় ? পরবশ হয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে এদিকে ওদিকে ঘুরতে থাকে l এইভাবে কর্মের বশীভূত অর্থাৎ কর্মের বিনাশী ফলের ইচ্ছার বশীভূত যদি হয় তাহলে কর্মও বন্ধনে বেঁধে বুদ্ধি দ্বারা ভুল পথে ঘোরাতে থাকে l একে বলা হয় কর্মবন্ধন, যা নিজেকেও হয়রান করে আর অন্যকেও নাকাল করে l কর্মাতীত অর্থাৎ কর্মের বশ হওয়া নয়, বরং মালিক হয়ে, অথরিটি হয়ে কর্মেন্দ্রিয়ের সম্বন্ধে আসে, বিনাশী কামনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্ম করায় l কর্ম যেন আত্মা-মালিককে নিজের অধীন না করে, কিন্তু আত্মা যেন অধিকারী হয়ে কর্ম করাতে থাকে l কর্মেন্দ্রিয় নিজের আকর্ষণে আকৃষ্ট করে অর্থাৎ তখন তোমরা কর্মের বশীভূত হও, অধীন হও, বন্ধনে বেঁধে যাও l কর্মাতীত অর্থাৎ এর ঊর্ধ্বে হওয়া অর্থাৎ পৃথক হওয়া l চোখের কাজ দেখা, কিন্তু দেখার এই কর্ম কে করায় ? চোখ কর্ম করে আর আত্মা কর্ম করায় l সুতরাং আত্মা, যে কর্মেন্দ্রিয়ের দ্বারা কর্ম করায়, সে যদি নিজেই কর্মেন্দ্রিয়ের বশ হয়ে যায় - তাকে বলে কর্মবন্ধন l করানোর মালিক
হয়ে যদি কর্ম করাও তাহলে সেটা বলা হবে কর্ম-সম্বন্ধে আসা l কর্মাতীত আত্মা সম্বন্ধে আসে, কিন্তু কর্মবন্ধনে থাকে না l কখনো কখনো তোমরা বলো না যে বলতে চাইনি কিন্তু বলে ফেলেছি, করতে চাইনি কিন্তু করে ফেলেছি l একে বলা হয়ে থাকে কর্মের বন্ধনে বশীভূত আত্মা l এইরকম আত্মা কর্মাতীত স্থিতির কাছে বলবে নাকি দূরে বলবে ?
কর্মাতীত অর্থাৎ দেহ, দেহের সম্বন্ধ, পদার্থ, লৌকিক বা অলৌকিক উভয় সম্বন্ধের বন্ধনের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ স্বতন্ত্র l যদিও 'সম্বন্ধ' শব্দ ব্যবহৃত হয় দেহের সম্বন্ধে, দেহের বন্ধু-পরিজনের সম্বন্ধে, কিন্তু যদি দেহে বা সম্বন্ধে কোনও অধীনতা থাকে তাহলে সম্বন্ধও বন্ধন তৈরি হয়ে যায় l সম্বন্ধ শব্দ স্বতন্ত্র অথচ প্রিয় অনুভব করায় l আজকের সকল আত্মাদের সম্বন্ধ বন্ধনের রূপে রূপান্তরিত হয়েছে l যখন সম্বন্ধ, বন্ধনের রূপ ধারণ করে নেয়, তখন বন্ধন সবসময় নিজেকে কোনো না কোনো প্রকারে মনঃকষ্ট, শোক, অভিমান ইত্যাদি মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকে, দুঃখের তরঙ্গ অনুভব করাবে, নিরানন্দ অনুভব করাবে l বিনাশী প্রাপ্তি হলেও অল্পকালের জন্য তারা প্রাপ্তির সুখ অনুভব করবে l সুখের সাথে সাথে এই মুহূর্তে প্রাপ্তিস্বরূপের অনুভব হবে, পরমুহূর্তে প্রাপ্তি হওয়া সত্ত্বেও অপ্রাপ্ত স্থিতির অনুভব হবে l পরিপূর্ণ হয়েও নিজেকে খালি-খালি অনুভব করবে l সবকিছু থাকা সত্ত্বেও অনুভব করতে থাকবে 'আরও কিছু চাই' আর যেখানে 'চাই-চাই' থাকবে সেখানে কখনও সন্তুষ্টতা থাকবে না l মনও সদা খুশি থাকবে, তনও খুশি থাকবে, অন্যরাও খুশি থাকবে - তা' সবসময় হতে পারে না l কোনো না কোনও বিষয়ে না চাইতেও নিজের প্রতি অথবা অন্যের প্রতি নারাজ হতে থাকবে, নারাজ হওয়া অর্থাৎ রহস্য না বোঝা, অধিকারী হয়ে কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্ম করানোর রহস্য বোঝেনি l সুতরাং নারাজই তো হবে, তাই না ! কর্মাতীত কখনো নারাজ হবে না, কারণ তারা কর্ম-সম্বন্ধ এবং কর্ম-বন্ধনের রহস্য জানে l কর্ম করো, কিন্তু বশীভূত হয়ে নয়, অধিকারী মালিক হয়ে করো l কর্মাতীত অর্থাৎ নিজের অতীত কর্মের হিসেব-নিকেশের বন্ধন থেকেও মুক্ত l এমনকি, তা' অতীত কর্মের হিসেব-নিকেশের ফলস্বরূপ তনের রোগ হোক, বা মনের সংস্কারের সাথে অন্য আত্মাদের সংস্কার-সমূহের দ্বারা সংঘর্ষ, কিন্তু যে কর্মাতীত, কর্মভোগের বশ না হয়ে মালিক হয়ে সে'সব চুকিয়ে দেবে l কর্মযোগী হয়ে কর্মভোগ চুকানো, কর্মাতীত হওয়ার লক্ষণ l যোগের দ্বারা কর্মভোগ হাসতে হাসতে শূলকে কাঁটায় পরিণত ক'রে ভস্ম করা অর্থাৎ কর্মভোগ সমাপ্ত করা l ব্যাধির আকার যেন না হয় ! যে ব্যাধির রূপ ধারণ করে নেয়, সে নিজে সদা ব্যাধিরই বর্ণন করতে থাকবে l মনে মনেও বর্ণন করবে আর মুখেও বর্ণন করবে l দ্বিতীয় বিষয় হলো, ব্যাধির রূপ হওয়ার কারণে নিজেও জ্ঞান-ধনের দৈন্যদশায় অধোগামী হবে আর অন্যকেও উদ্বেগের মধ্যে ফেলবে l সে চিৎকার করবে আর কর্মাতীত বাগ মানিয়ে নেবে l কারও সামান্য ব্যথা-বেদনা হলেই খুব চিৎকার করে আর কারও বেশি ব্যথা হওয়া সত্ত্বেও বাগ মানিয়ে নেয় l যারা কর্মাতীত স্থিতির, তারা দেহের মালিক হওয়ার কারণে কর্মভোগেও স্বতন্ত্র হওয়ায় অভ্যস্ত l মাঝে মাঝে অশরীরি স্থিতির অনুভব তাকে অসুস্থতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় l যেমন, সায়েন্সের সাধন দ্বারা বেহুঁশ করা হয়, সেইজন্য ব্যথা থাকলেও সেটা বিস্মৃত থাকে, ব্যথা ফীল করে না, কারণ ওষুধের নেশা থাকে তথা আচ্ছন্নতা থাকে l সুতরাং যারা কর্মাতীত অবস্থায় আছে তারা অশরীরি হওয়ায় অভ্যস্ত ব'লে মাঝে মাঝে এই অধ্যাত্ম ইঞ্জেকশন লাগে l সেইজন্য সে অনুভব করে শূল কাঁটা হয়ে গেছে l আরেকটা বিষয় - ফলো ফাদার হওয়ার কারণে বিশেষ আজ্ঞাকারী হওয়ার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বাবার থেকে হৃদয়ের বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয় l
এক, অশরীরি হওয়ার নিজ অভ্যাস, দুই, আজ্ঞাকারী হওয়ার প্রত্যক্ষ ফলরূপ বাবার আশীর্বাদ সেই অসুস্থতা অর্থাৎ কর্মভোগকে শূল থেকে কাঁটায় বদলে দেয় l কর্মাতীত শ্রেষ্ঠ আত্মা কর্মভোগকে কর্মযোগের স্থিতিতে পরিবর্তন করে দেবে l তাহলে, তোমাদের এইরকম অনুভব হয় নাকি অনেক বড় বিষয় ব'লে মনে করো ? সহজ নাকি কঠিন ? ছোট বিষয়কে বড় ক'রে বানানো অথবা বড় বিষয়কে ছোট বানানো - এটা নিজের স্থিতির উপরে l অধোগামী হওয়া অথবা নিজস্ব অধিকারীভাবের মর্যাদা বজায় রাখা, তোমার নিজের উপরে নির্ভর করে l 'কী হয়ে গেল' ! অথবা, 'যা হয়েছে ভালো হয়েছে' এই মনোভাবনা তোমার উপরে নির্ভর করে l এই নিশ্চয় খারাপকেও ভালোতে পরিবর্তন করতে পারে, কেননা, হিসেব-নিকেশ চুকে যাওয়ার কারণে কিংবা প্র্যাকটিক্যাল পেপার সময় সময়ে ড্রামা অনুসারে হওয়ার কারণে কিছু বিষয় ভালোরূপে তোমাদের সামনে আসবে এবং কখনো কখনো ভালোরূপ হওয়া সত্ত্বেও বাহ্যিকরূপ হবে ক্ষতিকর বা যেটাকে তোমরা বলো - যেভাবে হলো সেটা ঠিক হয়নি l
পরিস্থিতি আসবে, এখনো পর্যন্ত সেইভাবেই পরিস্থিতি এসেছে আর আসতেও থাকবে l কিন্তু লোকসানের পর্দার অন্তরালে লাভ লুকিয়ে থাকে l বাইরের পর্দা লোকসানের প্রতীয়মান হয়, যদি অল্প কিছু সময়ের জন্য ধৈর্যবৎ, সহনশীল স্থিতির দ্বারা অন্তর্মুখী হয়ে দেখ, তাহলে বাইরের পর্দার অন্তরালে যা লুকিয়ে আছে, সেটাই তোমাদের দৃশ্যগোচরে আসবে, আপাত দৃষ্টিতে যা দেখা যায় সেটা তোমরা দেখেও দেখবে না l তোমরা যে হোলিহংস, তাই না ? যখন সেই সকল হংস কাঁকর আর রত্নকে আলাদা করতে পারে, তখন হোলিহংস লুকানো লাভ নিয়ে নেবে, লোকসানের মধ্যে লাভ ঠিকই খুঁজে নেবে l বুঝেছ ? তোমরা তাড়াতাড়ি ঘাবড়ে যাও, তাই না ! এতে কী হয় ? যে ভালো ভাবনা ভাবতে পারতে, তা' ঘাবড়ে যাওয়ার কারণে বদলে যায় l সুতরাং ঘাবড়ে যেও না l কর্মকে দেখে কর্মের বন্ধনে আটকে যেও না l কী হয়ে গেল ! কীভাবে হয়ে গেল ! এইরকম তো হওয়া উচিত নয় ! আমার সাথেই কেন হয় ! বোধহয় আমার ভাগ্যই এইরকম - এই সব রশিতে ক্রমশঃ বেঁধে যেতে থাকো l তোমাদের এই সঙ্কল্পই রশি (রজ্জু)l সেইজন্য কর্মের বন্ধনে আটকে যাও l ব্যর্থ সঙ্কল্পই কর্মবন্ধনের সূক্ষ্ম রশি l কর্মাতীত আত্মা বলবে - যা কিছু হয় তা' ভালো, আমিও ভালো, বাবাও ভালো, ড্রামাও ভালো l এই সবই বন্ধন কাটতে কাঁচির কাজ করে l বন্ধন কেটে গেলে তো কর্মাতীত হয়ে গেলে, তাই না ! কল্যাণকারী বাবার বাচ্চা হওয়ার কারণে সঙ্গমযুগের প্রতিটা সেকেন্ড কল্যাণকারী l প্রতি সেকেন্ডে তোমাদের কারবার হওয়া উচিত কল্যাণ করা, সেবা মাত্রই কল্যাণ করা l ব্রাহ্মণের অক্যুপেশনই বিশ্ব-পরিবর্তক, বিশ্ব-কল্যাণী l এইরকম নিশ্চয়বুদ্ধি আত্মাদের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত নিশ্চিতরূপে কল্যাণকারী l বুঝেছ ?
কর্মাতীতের পরিভাষা এখন তো অনেক আছে l যেমন, কর্মের গতি গভীর ; কর্মাতীত স্থিতির পরিভাষাও অতি মহান, আর কর্মাতীত হওয়া আবশ্যক l কর্মাতীত না হয়ে বাবার সাথে ফিরেও যেতে পারবে না l বাবার সাথে কারা যাবে ? যারা সমান হবে l ব্রহ্মাবাবাকে দেখেছ - কীভাবে তিনি কর্মাতীত স্থিতি প্রাপ্ত করেছেন ? কর্মাতীত হওয়ার জন্য তাঁকে ফলো করা অর্থাৎ বাবার সাথে ফিরে যাওয়ার যোগ্য হওয়া l আজ বাবা এটুকুই শুনিয়েছেন, এখন শুধু এটা চেকিং করো, পরে তিনি আবার তোমাদের বলবেন l
যারা, সর্ব অধিকারী স্থিতিতে স্থিত থাকে, কর্মবন্ধনকে কর্মের সম্বন্ধে পরিবর্তন করে, কর্মভোগকে কর্মযোগের স্থিতি দ্বারা শূলকে কাঁটায় পরিণত করে, প্রতি মুহূর্তে কল্যাণ করে, সদা ব্রহ্মাবাবা সমান কর্মাতীত স্থিতির কাছাকাছি অনুভব করে, এমন বিশেষ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
'অব্যক্ত বাপদাদার পাটিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারঃ-'
১) সদা নিজেকে শক্তিশালী বাবার শক্তিশালী বাচ্চা অনুভব করো ? কখনো শক্তিশালী, কখনো দুর্বল - এইরকম নয় তো ? শক্তিশালী অর্থাৎ সদা বিজয়ী l যে শক্তিশালী তার কখনো পরাজয় হতে পারে না l স্বপ্নেও তাদের পরাজয় হবে না l স্বপ্ন, সঙ্কল্প আর কর্ম সবকিছুতে সদা বিজয়ী - একেই বলে শক্তিশালী l তোমরা কি এইরকম শক্তিশালী ? কেননা, যে আজকের বিজয়ী, বহুকাল ধরে সে-ই বিজয়মালায় গায়ন-পূজন যোগ্য হয় l যদি বহুকালের বিজয়ী নও, শক্তিশালী নও, তাহলে বহুকালের গায়ন-পূজন যোগ্য হতে পারো না l যারা সদা আর বহুকালের বিজয়ী, তারাই বহু সময় বিজয়মালায় গায়ন-পূজনে আসে আর যারা কখনো কখনো বিজয়ী হয়, তারা কখনো কখনো অর্থাৎ ১৬ হাজারের মালায় আসবে l সুতরাং হিসেব বহুকালের আর সবসময়ের l ১৬ হাজারের মালা সব মন্দিরে হয় না, মাত্র কোথাও কোথাওই হয় l
২) সবাই নিজেকে এই বিশাল ড্রামাতে পার্টধারী আত্মা মনে করো ? তোমাদের সকলের হিরো পার্ট l হিরো পার্টধারী হয়েছ ? কারণ যিঁনি উঁচুতম থেকেও উঁচু বাবা, তিনি জিরো - তাঁর সাথে তোমরা পার্ট তথা ভূমিকা পালন করছ l তোমরাও জিরো অর্থাৎ বিন্দু l কিন্তু তোমরা শরীরধারী আর বাবা সদা জিরো l সুতরাং, জিরোর সাথে ভূমিকা পালনকারী তোমরা হিরো অ্যাক্টর - এই স্মৃতি থাকলে সদাই যথার্থ পার্ট পালন করবে, আপনা থেকেই তোমাদের অ্যাটেনশন। চলে যাবে l যেমন সীমিত পরিসরের ড্রামাতেও হিরো পার্টধারীর কতো অ্যাটেনশন থাকে ! সবচাইতে বড় হিরো পার্ট তোমাদের ! সদা এই নেশা আর খুশিতে থাকো - বাঃ, আমার হিরো পার্ট, যা সারা বিশ্বের আত্মারা বারবার শাবাশ-শাবাশ করে ! দ্বাপর থেকে এই যে কীর্তন অর্থাৎ গুণ বর্ণনা করা হয়, তা' তোমাদের এই সময়ের হিরো পার্টেরই স্মৃতিচিহ্ন l কতো সুন্দর স্মরণিক তৈরি হয়েছে ! তোমরা স্বয়ং হিরো হয়েছ, তবেই তো পরবর্তীতে এখনও পর্যন্ত তোমাদের গায়ন চলছে l অন্তিম জন্মেও নিজেদের গায়ন শুনছ l গোপীবল্লভেরও গায়ন আছে, তো তাঁর বাল-সখাদেরও গায়ন আছে, গোপিনীদেরও গায়ন আছে l শিবরূপে বাবার গায়ন আছে তো বাচ্চাদের গায়ন আছে শক্তিরূপে ! সুতরাং সদা হিরো পার্ট পালনকারী শ্রেষ্ঠ আত্মা তোমরা - এই স্মৃতি বজায় রেখে খুশির সাথে এগিয়ে চলো l
*কুমারদের সাথে -* ১) তোমরা তো সহজযোগী কুমার, তাই না ? নিরন্তর যোগী কুমার, কর্মযোগী কুমার, কেননা কুমার নিজেকে যতটা অগ্রচালিত করতে চায় ততটাই এগিয়ে যেতে পারে l কেন ? তারা নির্বন্ধন, তাদের কোনো বোঝা নেই আর দায়িত্ব নেই, সেইজন্য তারা হালকা l হালকা হওয়ার কারণে যত উঁচুতে যেতে চায় যেতে পারে l নিরন্তর যোগী, সহজ যোগী হওয়াই উঁচু স্থিতি, এটাই উঁচুতে যাওয়া l এইরকম যারা উঁচু স্থিতিতে থাকে তাদের বলা হয়- 'বিজয়ী কুমার l' তোমরা বিজয়ী, নাকি কখনো হার, কখনো জিত - এই খেলা খেল না তো ? যদি কখনো হার, কখনো জিতের সংস্কার থাকে তাহলে একরস স্থিতির অনুভব হবে না l একের ভালোবাসায় মগ্ন হওয়ার অনুভব হবে না l
২) সদা সর্বকর্মে যারা চমৎকারিত্ব দেখায়, তোমরা সেই কুমার, তাই না ? কোনও কর্ম সাধারণ হতে দিও না, চমৎকার হোক l যেমন, বাবার মহিমা করো, বাবার সর্বোত্তম গুণ গাও, ঠিক সে'রকমই কুমার তোমরা অর্থাৎ সর্বকর্মে যারা চমৎকারিত্ব দেখায় l কখনো একরকম তো কখনো আরেক রকম, তেমন নয় l তোমরা সে'রকম নও, কোথাও কিছু আকর্ষণ করবে আর সেখানে আকৃষ্ট হয়ে যাবে l গড়াগড়ি খাওয়া ঘটি নও তোমরা l কখনো কোথাও গড়িয়ে পড়ছ তো কখনো আর কোথাও l এইরকম নয় l সর্বোত্তম হও l অবিনাশী, অবিনাশীই বানায় - যারা এমন চ্যালেঞ্জ করে, তাদের মতো হও l এইরকম চমৎকার করে দেখাও যে প্রত্যেক কুমার চলতে-ফিরতে ফরিস্তা, দূর থেকেই ফরিস্তা ভাবের অনুভব হবে l বাণীর দ্বারা সেবার প্রোগ্রাম তো অনেক বানিয়েছ, সেটা তো করবেই, কিন্তু লোকে প্রত্যক্ষ প্রুফ চায় l প্রত্যক্ষ প্রমাণ, সবচাইতে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ l প্রত্যক্ষ প্রমাণ যদি অনেক হয়, তাহলে সেবা সহজে হয়ে যাবে l ফরিস্তাভাবের যদি সেবা করো, তাহলে পরিশ্রম কম সফলতা বেশি হবে l শুধু বাণী দ্বারা সেবা ক'র না, বরং মন, বাণী আর কর্ম এই তিনের সেবা একসঙ্গে হোক, একেই বলে, 'চমৎকার' ! আচ্ছা !
*বিদায়কালে-* চতুর্দিকের তীব্র পুরুষার্থী, সদা সেবাধারী, সদা ডবল লাইট হয়ে অন্যদেরও যারা ডবল লাইট বানিয়ে সফলতা অধিকারের সাথে প্রাপ্ত করে, সদা বাবা সমান সামনে এগিয়ে চলে এবং অন্যকেও অগ্রচালিত করে, এইরকম ভাবে সদা উৎসাহ-উদ্দীপনায় থাকে, এমন শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, স্নেহী বাচ্চাদের বাপদাদার গভীর হৃদয়ের অনেক অনেক স্মরণ-স্নেহ আর গুড মর্নিং l