30-12-2018 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 02-04-84 মধুবন


বিন্দুর মহত্ত্ব

আজ, ভাগ্যবিধাতা বাবা তাঁর ভাগ্যবান বাচ্চাদের সাথে মিলিত হতে এসেছেন l ভাগ্যবিধাতা বাবা সব বাচ্চাকে তাদের ভাগ্য বানানোর অতি সহজ বিধি শেখাচ্ছেন, শুধু বিন্দুর হিসেব জানো l বিন্দুর হিসেব সবচেয়ে সহজ l বিন্দুর মহত্ত্বকে জেনে মহান হও l সবচেয়ে সহজ আর মহত্ত্বপূর্ণ বিন্দুর হিসেব তোমরা সবাই ভালোভাবে অবগত হয়েছো, তাই না ! বিন্দু বলো আর বিন্দু হয়ে ওঠো l বিন্দু হয়ে বিন্দুরূপ বাবাকে স্মরণ করো l তোমরা বিন্দু ছিলে, এখন বিন্দু স্থিতিতে স্থিত হয়ে বিন্দু বাবা সমান হয়ে তাঁর সাথে মিলনোৎসব পালন করো l এই যুগ মিলন উদযাপনের, বলা হয় উড়তি কলার যুগ l ব্রাহ্মণ জীবনই মিলনের আর পালনের জন্য l এই বিধিতে সবসময় কর্ম করাকালীন কর্মের যেকোন বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার কর্মাতীত স্থিতির অনুভব করো l তোমরা কর্মের কোনো বন্ধনে প্রবেশ করোনা, কিন্তু বাবার সাথে সর্বসম্বন্ধে জুড়ে থাকো l করাবনহার বাবা তোমাদের নিমিত্ত বানিয়ে সবকিছু করাচ্ছেন l তাইতো তোমরা সাক্ষীদ্রষ্টা হয়ে গেছ আর সেইজন্য এই সম্বন্ধের স্মৃতি তোমাদের বন্ধনমুক্ত বানায় l যখন তোমরা এই সম্বন্ধে সবকিছু করো তো কোনো বন্ধন হয়না, কিন্তু আমি করেছি - এটা যখন তোমরা ভাবো তখন সম্বন্ধ ভুলে যাও আর বন্ধন তৈরি করে ফেল ! সঙ্গমযুগ বন্ধনমুক্তির, বাবার সাথে সর্বসম্বন্ধে থাকার এবং জীবনমুক্ত হওয়ার স্থিতি অনুভবের যুগ l অতএব, চেক করো, সর্বসম্বন্ধের দায়িত্ব পালন করছো নাকি বন্ধনে প্রবেশ করছো ? সম্বন্ধে স্নেহের কারণে প্রাপ্তি, সেক্ষেত্রে বন্ধনে রেষারেষি অর্থাৎ বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেই টেনশনের কারণ দুঃখ আর অশান্তির উত্থান-পতন, সুতরাং বাবা যখন তোমাদের বিন্দুর সহজ হিসেব শিখিয়ে দিয়েছেন তো দেহের বন্ধনও সমাপ্ত হয়েছে l দেহ তোমাদের নয় l তোমরা এই দেহ বাবাকে দিয়ে দিয়েছো, কাজেই তা' বাবার l তোমাদের প্রাথমিক বন্ধন "আমার শরীর" বা "আমার দেহ" এটা সমাপ্ত হয়েছে l তোমরা কি বলবে, আমার দেহ ? এখন সেই অধিকার আছে তোমাদের? দিয়ে দেওয়া জিনিসের ওপর তোমাদের অধিকার কিভাবে থাকতে পারে ? দিয়ে দিয়েছো নাকি নিজের বলে রেখে দিয়েছো? তোমরা বলছো 'তোমার' কিন্তু বিশ্বাস করো সেইসব তোমাদের, এইরকম তো নয়, তাই না !

যখন বলো 'তোমার' তো আমিত্ব বোধের বন্ধন সমাপ্ত হয়ে যায় l এই হদের আমিত্বই মোহডোর l ডোর বলো, শেকল বলো বা রস্যি, এইসব তোমাদের বন্ধনে বাঁধে l যখন বলো, সবকিছু তোমার, একটা সম্বন্ধ গড়ে তোলো, বন্ধন ছিন্ন হয়ে সম্বন্ধ তৈরি হয় l যে কোনরকম বন্ধন, সেটা দেহের, স্বভাবের, সংস্কারের কিম্বা মনের বশ্যতা ...এই বন্ধন প্রমাণ করে সদাসর্বদা বাবার সঙ্গে তোমাদের সর্বসম্বন্ধে কিছু ঘাটতি আছে l কোনো কোনো বাচ্চা বাবার সঙ্গে সর্বসম্বন্ধে থেকে সবসময় বন্ধনমুক্ত থাকে, আর কিছু বাচ্চা সময় অনুযায়ী নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যে সম্বন্ধ জুড়ে নেয়, এই কারণে ব্রাহ্মণ জীবনের অতুলনীয় রূহানী আনন্দ লাভ করতে বঞ্চিত থেকে যায় l না নিজেরা নিজেদের সাথে সন্তুষ্ট আর না অন্যদের থেকে সন্তুষ্টির আশীর্বাদ নিতে সমর্থ l ব্রাহ্মণ জীবন, শ্রেষ্ঠ সম্বন্ধের জীবন, বাবার থেকে এবং সমগ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের থেকে আশীর্বাদ প্রাপ্তির জীবন l আশীর্বাদ অর্থাৎ শুভ ভাবনা এবং শুভ কামনা l তোমরা সব ব্রাহ্মণের জন্ম বাপদাদার আশীর্বাদ এবং বরদানের আধারেই হয়েছে l বাবা বলেছেন, তোমরা ভাগ্যবান, শ্রেষ্ঠ, বিশেষ আত্মা, এই স্মৃতিরূপী আশীর্বাদ এবং বরদান তথা শুভ ভাবনা এবং শুভ কামনা থেকে তোমরা সব ব্রাহ্মণের নতুন জীবন, নতুন জন্ম হয়েছে l সদা অবিরত আশীর্বাদ নিতে থাকো l এটাই সঙ্গমযুগের বিশেষত্ব l যেমনই হোক, এই সবের আধার হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সম্বন্ধ l সম্বন্ধ 'আমিত্ব' ভাবের শেকল, বন্ধন এক সেকেন্ডে সমাপ্ত করে দেয় l সম্বন্ধের প্রথম স্বরূপ সেই একটাই বিষয় - বাবাও বিন্দু, আমি বিন্দু এবং আত্মা সকলেও বিন্দু l সুতরাং, বিন্দুরই হিসেব হলো, তাই না ! বিন্দুতেই জ্ঞানসিন্ধু সমাহিত l দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ীও বিন্দু ১০ কে ১০০ বানায়, ১০০কে ১০০০ বানায় l সংখ্যা বাড়াতে বিন্দু (শূন্য) বাড়িয়ে যাও l তাহলে মহত্ত্ব কার হলো ? বিন্দুর হলো, তাই না! একইভাবে, ব্রাহ্মণ জীবনে সর্বপ্রাপ্তির আধার বিন্দু l

অজ্ঞরাও বিন্দু সহজে বুঝতে পারে, তাই না ! কেউ যতোই ব্যস্ত হোক, অসুস্থ হোক, অথবা তার বুদ্ধি দুর্বল হোক, তবুও বিন্দুর হিসেব সবাই জানতে পারে l মাতারাও হিসেবে চালাকচতুর, তাই না ! সুতরাং বিন্দুর হিসেব সবসময় স্মরণে থাকতে হবে l আচ্ছা !

বিভিন্ন সব জায়গা থেকে তোমরা সুইট হোমে পৌঁছে গেছ l বাপদাদাও সব বাচ্চাকে ভাগ্য বানানোর জন্য অভিনন্দিত করেন l নিজের ঘরে এসেছে সবাই l নিজের এই ঘর দাতার ঘর l তোমাদের নিজের ঘর, আত্মা আর শরীরকে আরাম দেওয়ার ঘর l তোমরা বিশ্রাম এবং আরাম লাভ করছো, তাই না ! তোমাদের ডবল প্রাপ্তি হয়েছে l আরাম বিশ্রামও পাও, রামকেও পাও l তাহলে ডবল প্রাপ্তি তো হয়েই গেল, তাই না ! বাচ্চারা বাবার ঘরের অলঙ্কার l ঘরে অলঙ্করণ বাচ্চাদের বাপদাদা দেখছেন l আচ্ছা !

একের সাথে সম্বন্ধযুক্ত হয়ে যারা সদা বন্ধনমুক্ত, কর্মাতীত স্থিতি অনুভব করে, সদা বিন্দুর মহত্ত্ব জেনে মহান হয়, যারা সকল আত্মার থেকে সন্তুষ্টতার শুভ ভাবনা, শুভ কামনার আশীর্বাদ লাভ করে এবং এমন আশীর্বাদ অন্যদের দেয়, সদা নিজেকে সাক্ষী মনে ক'রে নিমিত্ত ভাব থেকে কর্ম করে, যারা এইরকম সদা অনুপম রূহানী আনন্দ অনুভব করে, সদা আনন্দের জীবনে থাকে, ভার সমাপ্তকারী এমন সদা ভাগ্যবান আত্মাদের ভাগ্যবিধাতা বাবার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l

দাদীদের সাথে :- সময় অতি দ্রুতগতিতে বয়ে যাচ্ছে l সময় যেমন তীব্রগতিতে চলে যাচ্ছে, সেইরকম সকল ব্রাহ্মণ আত্মা তীব্রগতিতে ওড়ে l তোমরা এত হালকা ডবল লাইট হয়েছো ? এখন বিশেষ সেবা অন্যদের ওড়ানোর l এইভাবে অন্যদের ওড়াতে পারছো তোমরা ? কোন বিধিতে সবাইকে ওড়াতে যাচ্ছ? ক্লাস শুনতে শুনতে তারা ক্লাস সঞ্চালনকারী হয়ে উঠেছে l যে বিষয় তুমি শুরু করবে তার আগে সেই বিষয়ের পয়েন্টস্ সবার কাছে হবে l সুতরাং, কোন বিধিতে তুমি অন্যদের ওড়াবে, সেটার প্ল্যান বানিয়েছো ? এখন প্রয়োজন হালকা বানানোর বিধি l এই বোঝাই তোমাদের উত্থান-পতন ঘটায়। কারও এক রকমের বোঝা তো কারও আরেক রকমের l এমনকি তোমার নিজের সংস্কারের বোঝাই হোক, বা সংগঠনের, কোনও বোঝা তোমাকে উড়তে দেবে না l যেমন, খেলনা, সেটা যখন ওড়াও, তখন কি হয় ? এটা ওপরে যায় তারপর নীচে নেমে আসে l অবশ্যই ওড়ে কিন্তু এটা সবসময় উড়তে পারে না l যখন সব ব্রাহ্মণ আত্মা উড়তে পারবে তখন অন্য আত্মাদের উড়িয়ে বাবার কাছে পৌঁছাতে তাদেরকে সমর্থ বানাবে l এখন অন্যদের ওড়ানোর এবং নিজেদের ওড়ার বিধি ব্যতীত আর কোনো বিধি নেই l ওড়ার গতিই বিধি l সম্পন্ন হতে আর কতো কাজ বাকি আর কতো সময় আছে তোমাদের ?

প্রথমে, এখন কমপক্ষে ন'লক্ষ ব্রাহ্মণ প্রয়োজন l বাস্তবে সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু যখন তুমি সমগ্র বিশ্ব শাসন করবে, তখন কমপক্ষে ন'লাখ তো হতে হবে l সময়ানুসারে, শ্রেষ্ঠ বিধি প্রয়োজন l শ্রেষ্ঠ বিধি হলোই অন্যকে ওড়ানোর বিধি l সেই প্ল্যান বানাও l ছোট ছোট সংগঠন প্রস্তুত করো l অব্যক্ত পার্টও তো কতো বছর হয়ে গেল l সাকার থেকে এবং অব্যক্ত থেকে পালনা নেওয়া, সেও কতো সময় হয়ে গেল ! এখন তো কিছু নবীনত্ব করতে হবে, তাই না ! প্ল্যান বানাও l এখন ওড়ার আর নীচে আসার চক্র সম্পূর্ণ হয়েছে l ৮৪ জন্ম, ৮৪'র চক্র গাওয়া হয়েছে l ৮৪'তে (১৯৮৪) যখন এই চক্র সম্পূর্ণ হবে তখন স্বদর্শন চক্র দূর থেকে আত্মাদের কাছে আনবে l স্মরণিক হিসেবে তারা কি দেখিয়েছে ? এক জায়গায় বসে স্বদর্শন চক্র পাঠিয়েছে আর সেই স্বদর্শন নিজেই আত্মাদের কাছে নিয়ে এসেছে l নিজে যায় না, শুধু চক্র ঘোরায় l অতএব, যখন শুধু চক্র সম্পূর্ণ হবে তখনই স্ব-দর্শন চক্র ঘোরাতে পারবে l সুতরাং, এখন ৮৪ তেই এই বিধি প্রয়োগ করো যাতে হদের সব চক্র সমাপ্ত হয়ে যায়, এইরকমই তো ভেবেছো, তাই না ? আচ্ছা !

টিচারদের সাথে :- টিচার্স সব অবস্থাতেই উড়তি কলায় থাকে l নিমিত্ত হওয়াই উড়তি কলার সাধন l সুতরাং নিমিত্ত হওয়া অর্থাৎ ড্রামা অনুযায়ী উড়তি কলার সাধন তোমরা খুঁজে পেয়েছো l এই বিধি ব্যবহারে সদা সফলতা প্রাপ্তকারী তোমরা শ্রেষ্ঠ আত্মা l নিমিত্ত হওয়াই লিফ্ট l সুতরাং, লিফ্ট দ্বারা সেকেন্ডে যারা কোনও স্থানে পৌঁছায় তারা উড়তি কলার l তোমরা চড়তি কলার নও, তোমরা দ্বিধাগ্রস্ত নও, বরং যারা দ্বিধান্বিত তাদের উদ্ধারকারী l তোমরা অগ্নিতাপে আক্রান্ত হওনা, বরং তোমরা অগ্নি প্রশমিত করো l সুতরাং নিমিত্ত হওয়ার বিধিতে সাফল্য প্রাপ্ত করো l টিচারের অর্থ নিমিত্ত হওয়ার অনুভূতি l এই নিমিত্ত ভাবই সর্বফলের প্রাপ্তি নিজে থেকেই করায় l

অব্যক্ত মহাবাক্য - কর্মবন্ধন মুক্ত কর্মাতীত, বিদেহী হও

বিদেহী বা কর্মাতীত স্থিতির অনুভব করার জন্য হদের আমিত্ব বোধের দেহ-অভিমান থেকে মুক্ত হও l লৌকিক এবং অলৌকিক, কর্ম এবং সম্বন্ধ উভয় ক্ষেত্রেই স্বার্থভাব থেকে মুক্ত হও l বিগত জন্মের কর্মের হিসেব-নিকেশ বা বর্তমান পুরুষার্থের দুর্বলতার কারণে কোনও ব্যর্থ স্বভাব-সংস্কারের বশবর্তী হওয়া থেকে মুক্ত হও l যদি সেবার, সংগঠনের বা প্রকৃতির বিপরীত পরিস্থিতি তোমাদের স্ব-স্থিতি বা শ্রেষ্ঠ স্থিতি নড়বড়ে করে দেয়, তবে এটাও বন্ধনমুক্ত স্থিতি নয়, এই বন্ধন থেকেও মুক্ত হও l পুরানো দুনিয়ায় পুরানো অন্তিম শরীরের কোনরকম ব্যাধি যেন নিজের শ্রেষ্ঠ স্থিতিকে ওঠা-পড়ার মধ্যে না আনতে পারে; এর থেকেও মুক্ত হও l রোগ-জ্বালার উপস্থিতি, সেতো ভবিতব্য কিন্তু স্থিতি নড়বড়ে হয়ে যাওয়া, সেটা বন্ধনযুক্ত হওয়ার লক্ষণ l স্ব-চিন্তন, জ্ঞান চিন্তন, শুভচিন্তক হওয়ার পরিবর্তে তোমাদের শরীরের ব্যাধির যে চিন্তন চলতে থাকে, তা' থেকে মুক্ত হও, একেই বলা হয় কর্মাতীত স্থিতি l

কর্মযোগী হয়ে কর্মের বন্ধন থেকে সদা নির্লিপ্ত আর সদা বাবার ঘনিষ্ঠ হও - এটাই কর্মাতীত বিদেহী স্থিতি l কর্মাতীত-এর অর্থ এই নয় যে কর্মের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া l কর্মের নির্লিপ্ততা নয়, বরং কর্মের যেকোন রকম বন্ধনে জড়িয়ে পড়া থেকে বিযুক্ত হও l যতো বড় কাজই হোক, তখন মনে হবে কাজ করছো না বরং একটা খেলা খেলছো তোমরা l যতো বড়ো বিপরীত পরিস্থিতিই আসুক না কেন, যদি কোনো আত্মা হিসেব-নিকেশ চুকাতে তোমাদের সম্মুখীন হয়, এমনকি কর্মভোগ অবিরত শরীরের মাধ্যমে তোমাদের সামনে উপস্থিত হয়, তখন হদের যেকোনো রকম আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত থাকাই বিদেহী স্থিতি l যতক্ষণ এই দেহ আছে, কর্মেন্দ্রিয়ের সাথে এই কর্মক্ষেত্রে নিজের পার্ট প্লে করছো, ততক্ষণ বিনা কর্মে এক সেকেন্ডও থাকতে পারবে না, কিন্তু কর্ম করাকালীন কর্মবন্ধনের ঊর্ধ্বে থাকাই হলো কর্মাতীত বিদেহী অবস্থা l সুতরাং, কর্মেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কর্মের সম্বন্ধে আসতে হবে, কিন্তু কর্মের কোনও বন্ধনে জড়িয়ে যেও না l কর্মের বিনাশী ফলের ইচ্ছার বশীভূত হ'য়ো না l কর্মাতীত অর্থাৎ কর্মের বশবর্তী হওয়া নয়, বরং মালিক হয়ে তথা অথরিটি হয়ে তোমার কর্মেন্দ্রিয়ের সাথে সম্বন্ধে থাকা, বিনাশী আকাঙ্ক্ষা থেকে উদাসীন হয়ে কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্ম করাও l তুমি আত্মা, মালিক, অবশ্যই কর্মাধীন হবেনা, বরং অধিকারী হয়ে কর্ম করাতে থাকো l কর্ম করানোর মালিক হয়ে কর্ম করাতে হবে l একেই বলে, কর্মের সম্বন্ধে আসা l কর্মাতীত আত্মার সম্বন্ধ থাকে, কিন্তু বন্ধন নয় l

কর্মাতীত অর্থাৎ দেহ, দেহের সম্বন্ধ, পদার্থ, লৌকিক এবং অলৌকিক উভয় সম্বন্ধ আর বন্ধনের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ নির্লিপ্তি l যদিও সম্বন্ধ শব্দ ব্যবহৃত হয়, কিন্তু দেহের সম্বন্ধ এবং দেহ সম্বন্ধীয় সম্বন্ধের যদি অধীনতা থাকে তবে সম্বন্ধও বন্ধন হয়ে যায় l কর্মাতীত অবস্থায় কর্ম সম্বন্ধ এবং কর্ম বন্ধনের রহস্য জানার কারণে তোমরা সদা সবরকম পরিস্থিতিতে খুশি থাকবে, কখনো অখুশি হবেনা l এমন আত্মারা নিজের বিগত জন্মের হিসেব-নিকেশের বন্ধন থেকেও মুক্ত হবে l এমনকি, যদি বিগত জন্মের হিসেব-নিকেশের ফলস্বরূপ দেহের অসুস্থতাই হোক কিম্বা অন্য আত্মাদের সংস্কারের সাথে নিজ মনের সংস্কারের দ্বন্দ্ব, কর্মাতীত আত্মা কর্মভোগের বশবর্তী না হয়ে মালিক হয়ে হিসেব চুকিয়ে দেবে l কর্মযোগী হয়ে কর্মভোগ চুকিয়ে দেওয়াই কর্মাতীত হওয়ার লক্ষণ l যোগের দ্বারা কর্মভোগ সহাস্যে শূল হওয়ার মতো বিষয়কে কাঁটায় পরিণত করে ভস্ম করবে অর্থাৎ কর্মভোগ সমাপ্ত করবে l তোমাদের কর্মযোগের স্থিতি দ্বারা কর্মভোগের পরিবর্তন করাই কর্মাতীত স্থিতি l ব্যর্থ সঙ্কল্পই কর্মবন্ধনের সূক্ষ্ম রস্যি l কর্মাতীত আত্মা খারাপের মধ্যেও ভালোত্বের অনুভব করবে l এমন আত্মা বলবে, যা কিছু হয় তা' ভালোর জন্যই হয় l আমিও ভালো, বাবাও ভালো, ড্রামাও ভালো l বন্ধন কাটতে এই সঙ্কল্প কাঁচির মতো কাজ করে l বন্ধন যখন কেটে যাবে, তুমি কর্মাতীত হয়ে যাবে l

বিদেহী স্থিতিতে অনুভব করার জন্য ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা হও l হদের ইচ্ছামুক্ত এমন আত্মাই বাবা সমান সকলের সব ইচ্ছা পূরণ করা 'কামধেনু' হবে l বাবার সব ভান্ডার যেমন ধনদৌলতে সদা পরিপূর্ণ, অপ্রাপ্তির কোনো লেশমাত্র থাকে না, তেমন একইভাবে বাবা সমান সর্ব খাজানায় সদা ভরপুর হও l সৃষ্টি চক্রে তোমরা পার্ট প্লে করাকালীন দুঃখের অনেক চক্র থেকে মুক্ত থাকাই জীবনমুক্ত স্থিতি l এইরকম স্থিতির অনুভব করার জন্য অধিকারী হয়ে, মালিক হয়ে সকল কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্ম পরিচালনকারী হও l কর্মে আসো আর তারপরে কর্ম সম্পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে নির্লিপ্ত হয়ে যাও - এটাই বিদেহী স্থিতির অভ্যাস l

বরদানঃ-
আমিত্ব বোধকে 'তোমার' ভাবে পরিবর্তন করে উড়তি কলার অনুভবকারী ডবল লাইট ভব

এই বিনাশী তন আর ধন, পুরানো মন তোমার নয়, সেইসব তুমি বাবাকে দিয়ে দিয়েছো l তোমাদের প্রথম সঙ্কল্প ছিলো, সবকিছু তোমার, এতে বাবার কোনও সুবিধা নেই, কিন্তু সুবিধা তোমাদের, কারণ তোমাদের 'আমার' বলাতে তোমরা বন্ধনে আটকা পড়ে যাও আর 'তোমার' বলায় নির্লিপ্ত হও l 'আমার' বলায় বোঝা বহনকারী হও, সেক্ষেত্রে 'তোমার' বলাতে ডবল লাইট, ট্রাস্টি হয়ে যাও l যতোক্ষণ না কেউ হালকা হয়, সে উঁচু স্থিতিতে পৌঁছাতে পারে না l যারা হালকা থাকে, তারাই উড়তি কলা দ্বারা আনন্দের অনুভূতি করে l হাল্কা থাকাতেই আনন্দ l

স্লোগানঃ-
শক্তিশালী আত্মা কোনও ব্যক্তি বা প্রকৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয় না l