২৫-১০-১৮ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা - এই পড়াশুনা অত্যন্ত সহজ এবং সস্তা। কে কেমন পদ পাবে সেটা কেবল পড়াশুনার ওপরেই নির্ভর করে, গরিব কিংবা বড়লোকের ওপরে নয়। তাই পড়াশুনার ওপরেই পুরো মনোযোগ দাও”
প্রশ্ন:-
একজন জ্ঞানী আত্মার প্রাথমিক লক্ষণ কি?
উত্তর:-
সে সকলের সাথেই খুব মিষ্টি ব্যবহার করবে। কারোর সাথে বন্ধুত্ব আছে, কারোর সাথে শত্রুতা আছে - এটা কোনো জ্ঞানী আত্মার লক্ষণ নয়। বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বাবার শ্রীমৎ হল - ‘খুব মিষ্টি স্বভাবের হও’। প্র্যাক্টিস করো যে আমি আত্মা এই শরীরটাকে চালাচ্ছি, এখন ঘরে যেতে হবে।
গীত:-
তু প্যায়ার কা সাগর হ্যায়* … (তুমি হলে প্রেমের সাগর)
ওম্ শান্তি।
বাচ্চারা কার মহিমা শুনল? নিরাকার বেহদের বাবার। তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানের সাগর। তাঁকেই সর্বোত্তম পিতা বলা হয়। পরম শিক্ষক অর্থাৎ জ্ঞানের সাগরও বলা হয়। এখন তোমরা বুঝতে পারছ যে এইসব আমাদের বাবার মহিমা। তাঁর দ্বারা আমাদের অর্থাৎ বাচ্চাদেরও ঐরকম অবস্থা হবে। তিনি হলেন সর্বোত্তম পিতা, কোনো সাধু-সন্ন্যাসী নন। বেহদের বাবা হলেন নিরাকার পরমপিতা পরমাত্মা। তোমাদের মতো বাচ্চাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে ইনি হলেন আমাদের বেহদের মাতা-পিতা, স্বামী ইত্যাদি সবকিছু। কিন্তু তা সত্ত্বেও সর্বদা এই নেশা থাকে না। প্রতি মুহূর্তে ভুলে যাও। ইনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবথেকে মিষ্টি বাবা, যাঁকে সবাই অর্ধেক কল্প ধরে স্মরণ করে এসেছে। লক্ষ্মী-নারায়ণকেও এত স্মরণ করেনি। ভক্তের ভগবান তো একজনই, তিনি হলেন নিরাকার। তাঁকেই সবাই স্মরণ করে। হয়তো কেউ লক্ষ্মী-নারায়ণকে, কেউ গণেশ ইত্যাদিকে মানে, কিন্তু মুখে সবাই ‘হে ভগবান’-শব্দই উচ্চারণ করে। আত্মারা তাঁকেই স্মরণ করে। দুনিয়ার ভক্তরা হয়তো পার্থিব জিনিসকে স্মরণ করে, কিন্তু তারা এতই পিতাব্রতা যে নিজের বাবাকেও অবশ্যই স্মরণ করে। দুঃখের সময়ে ঝট করে তাদের মুখ থেকে ‘হে পরমাত্মা’-কথাটাই বেরিয়ে আসে। এটা অবশ্যই জানে যে পরমাত্মা হলেন নিরাকার, কিন্তু তাঁর মহত্ত্ব জানে না। এখন তোমরা তাঁর মহত্ত্ব জেনেছ, তিনি আমাদের সম্মুখে এসেছেন। তিনি হলেন স্বর্গের রচয়িতা। আমাদেরকে সম্মুখে বসে পড়াচ্ছেন। এই পড়াশুনা কেবল এক রকমের-ই। দুনিয়ার পড়াশুনা অনেক রকমের হয়। কারোর যদি পড়াশুনা করতে ইচ্ছে না করে তাহলে সে পড়াশুনা ছেড়ে দেয়। এখানে এই পড়াশুনাতে কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। ওই গভর্নমেন্টও গরিবদেরকে ফ্রি-তে পড়ায়। এখানে তো এই পড়াশুনা সম্পূর্ণ নিঃশুল্ক, কোনো ফিজ নেই। বাবাকে গরিব নওয়াজ (দীননাথ) বলা হয়। এখানে গরিবরাই পড়ে। এই পড়াশুনা খুবই সহজ এবং সস্তা। দুনিয়াতে যেমন মানুষ আগে ইনসিওর করে নেয়, তোমরাও এখানে সেইরকম ইনসিওর করছ। তোমরা বলো- বাবা, তুমি আমাদেরকে স্বর্গে ২১ জন্মের জন্য উত্তরাধিকার দেবে। ভক্তিমার্গে এইরকম বলা হয় না যে, হে ভগবান, আমাদেরকে ২১ জন্মের উত্তরাধিকার দাও। এখন তোমরা এটা জেনেছ যে আমরা ডাইরেক্ট নিজেকে ইনসিওর করছি। সর্বদা এটাই বলা হয় যে ঈশ্বরই সকল কর্মের ফল দেন। সবাইকেই ঈশ্বর বলে দেয়। সাধু-সন্ত কিংবা যে ঋদ্ধি-সিদ্ধি করে, তাদের সবাইকেই ভগবান-ই সবকিছু দেন। আত্মা বলে, ঈশ্বর-ই হলেন দাতা। কেউ যদি দান-পুণ্য করে, তাহলে সেই কর্মের ফলও ঈশ্বরই দেন। এই পড়াশুনাতে কোনো খরচ নেই। বাবা বুঝিয়েছেন, গরিবদের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ ইনসিওর হয়। ধনী ব্যক্তি এক লক্ষ টাকা দিয়ে সেবা করলে সে তার পরিবর্তে এক লক্ষই পাবে। কোনো গরিব ব্যক্তি যদি এক পয়সার সেবা, আর কোনো ধনী ব্যক্তি যদি ৫ হাজার টাকা দিয়ে সেবা করে, তাহলে তাদের সমান প্রাপ্তি হবে। গরিবদের জন্য এটা খুবই সহজ। কোনো ফিজ লাগেনা। গরিব অথবা ধনী সবাই বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার পাওয়ার দাবিদার। পড়াশুনার ওপরেই সব নির্ভর করছে। কোনো গরিব ব্যক্তি যদি ভালো পড়াশুনা করে, তাহলে তার পদ একজন ধনী ব্যক্তির থেকেও উঁচু হয়ে যায়। পড়াশুনার দ্বারা-ই উপার্জন হচ্ছে। খুব সহজ এবং সস্তা পড়াশুনা। কেবল এই মনুষ্যসৃষ্টি রূপী বৃক্ষের আদি মধ্য এবং অন্তিমকে জানতে হবে। এটা কোনো মানুষ জানে না। কারোর পক্ষেই ত্রিকালদর্শী হওয়া সম্ভব নয়। সবাই বলে, ঈশ্বর অন্তহীন। মনুষ্য সৃষ্টিরূপী বৃক্ষের বীজ হলেন পরমাত্মা। এটা হল উল্টো বৃক্ষ। কিন্তু ওরা বলে যে, আমরা যথাযথ ভাবে জানি না। বাবা, অর্থাৎ যিনি নলেজফুল, তিনিই সকল জ্ঞান শোনান। সবকিছু পড়াশুনার ওপরেই নির্ভর করছে। তোমরা পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে সবকিছু জেনেছ। তোমরা হলে মাস্টার জ্ঞানের সাগর। সবাই এক রকম হতে পারে না। কেউ বড় নদী, কেউ ছোট নদী। সবাই নিজের পুরুষার্থ অনুসারে পড়াশুনা করছে। তোমরা বাচ্চারা জানো যে ইনি আমাদের বেহদের বাবা। তাঁর সন্তান হওয়ার পরে, তাঁর শ্রীমৎ অনুসরণ করেই চলতে হবে। কারোর কারোর ক্ষেত্রে বলা হয়- এ তো বেচারা অন্যকিছুর বশীভূত। মায়ার দ্বারা বশীভূত হয়ে উল্টোপাল্টা মত চালায়। এটা তো শ্রীমৎ ভগবানুবাচ, যার দ্বারা সর্বশ্রেষ্ঠ দেবী-দেবতা হওয়া যায়। সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার পরই শিববাবার সাথে মিলন করতে যাওয়া উচিত। বাবা বুঝতে পারেন যে এই বাচ্চা যথাযথ নিশ্চিত হয়নি। *এটা সকলেই বুঝতে পারে যে, আত্মার পিতা তো একজনই। কিন্তু তিনি যে এই শরীরের মধ্যে এসে উত্তরাধিকার দিচ্ছেন - এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া খুব কঠিন।* যখন এটা কারোর বুদ্ধিতে ধারণ হবে এবং সে সেটা লিখে দেবে, তখন সেই লেখাটা বাবার কাছে নিয়ে আসতে হবে। তখনই বোঝা যাবে যে এই বাচ্চা ঠিকঠাক বুঝেছে। এতদিন আমরা যতকিছু বুঝেছি সব ভুল। ঈশ্বর সর্বব্যাপী নন। তিনি তো বেহদের বাবা। বরাবর ভারত প্রতি কল্পের সঙ্গমযুগে বেহদের বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার পায়। লিখতে হবে - সঙ্গমযুগের এই সময়েই পেয়েছিলাম এবং এখন পুনরায় পাচ্ছি। বাবা বরাবর সঙ্গমযুগেই আসেন এবং বি.কে.-দের দ্বারা স্বর্গের রচনা করেন। যখন কেউ কিছু লিখে দেবে তখন তাকে সেই বিষয়ের ওপরে বোঝাতে হবে - তুমি কার কাছে এসেছ, কি নিতে এসেছ? ঈশ্বরের রূপ তো নিরাকার। তাঁর রূপকে জানে না বলে ব্রহ্মতত্ত্বকেই ঈশ্বর বলে দেয়। বাচ্চাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে তিনি হলেন বিন্দুর মতো। এটা কারোর বুদ্ধিতেই আসবে না যে পরমাত্মা আসলে একটা বিন্দু। আত্মার উদ্দেশ্যে বলা হয় - ভ্রূকুটির মাঝে চমকায় এক অদ্ভুত নক্ষত্র। আত্মাও খুব ছোট। তাই বিচার করতে হবে যে, কে এই ভূমিকা পালন করে। এত ছোট আত্মার মধ্যে কত পার্ট ভরা আছে। কেউ যদি এইসব ব্যাপারে খুব গভীরে বুঝতে চায়, তাহলেই তাকে এইসব বোঝাতে হবে। তোমরা অর্থাৎ আত্মারা বলছ যে আমরা ৮৪ বার জন্ম নিয়েছি। সেই সমস্ত পার্ট এই ছোট বিন্দুরূপ আত্মার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। সেটাকে পুনরায় ওপরে ওঠাতে হবে। এই কথাটা শুনেই মানুষ আশ্চর্য হয়ে যাবে। কেউই এই বিষয়টা বুঝতে পারে না। আমাদের ৮৪ জন্ম হুবুহু রিপিট হয়। এই নাটক পূর্ব-নির্মিত। কিভাবে আত্মার মধ্যে পার্ট ভরা আছে সেটা শুনে মানুষ আশ্চর্য হয়ে যাবে। আমি আত্মা বলছি যে আমি একটা শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারন করি। আমাদের এই পার্ট আত্মার মধ্যেই নিহিত আছে এবং সেটা ড্রামা অনুসারে রিপিট হয়। যাদের বুদ্ধি দুর্বল, তারা এইসব বিষয় বুঝতে পারবে না। এটাই মনে রাখতে হবে যে আমরাই ৮৪ জন্ম নিয়ে অভিনয় করি, শরীর ধারণ করি। এই বিষয়টা সর্বদা মনে থাকলেই বলা যাবে যে, সে ত্রিকালদর্শী হয়েছে এবং অন্যকেও ত্রিকালদর্শী বানানোর পুরুষার্থ করছে। বোঝানোর জন্যেও বাচ্চাদের মধ্যে সাহস থাকতে হবে। অন্ধের লাঠি হয়ে ঘুম ভাঙিয়ে সজাগ করতে হবে। জাগো হে সজনী সকল, এখন নুতন দুনিয়া স্থাপন হচ্ছে। পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ হচ্ছে। তোমরা কি ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শঙ্করের নাম শোনোনি? ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপন হয়। এরা সবাই ব্রহ্মাকুমার এবং কুমারী। ব্রহ্মা একা তো করবেন না। প্রজাপিতার সাথে অবশ্যই ব্রহ্মাকুমার-কুমারীরাও থাকবে। যিনি এদেরকে শিক্ষা দেন, অর্থাৎ এদের বাবাও নিশ্চয়ই কেউ আছেন। এনাকে (ব্রহ্মাকে) তো জ্ঞানের সাগর বলা যাবে না। যদিও ব্রহ্মার হাতেই শাস্ত্র দেখানো হয়, কিন্তু পরমপিতা পরমাত্মা-ই এনার মধ্যে এসে এনার দ্বারা সকল বেদ-শাস্ত্রের সারকথা শোনান। ব্রহ্মা এইসব সারকথা শোনায় না। তিনি কার কাছে শিখেছেন? তার নিশ্চয়ই কোনো বাবা কিংবা গুরু রয়েছে। প্রজাপিতা তো অবশ্যই মানুষ-ই হবেন এবং তিনি এই দুনিয়াতেই থাকবেন। তিনি প্রজাদের রচনা করেন। তাকে ক্রিয়েটার, জ্ঞানের সাগর কিংবা নলেজফুল বলা যাবে না। পরমপিতা পরমাত্মা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর। তিনি এসে প্রজাপিতা ব্রহ্মার দ্বারা পড়ান। ইনি (ব্রহ্মা) হলেন জ্ঞানের কলসি। কে কতটা ধারণ করে তার ওপরেই সব নির্ভর করে। ইনসিওর করবে কি করবে না সেটা তোমার ব্যাপার। বাবা তো খুব ভালোভাবেই ইনসিওর করছেন। ভক্তিমার্গ এবং জ্ঞানমার্গ উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ইনসিওরেন্স ম্যাগনেট। ভক্তিমার্গে সকল আত্মা বাবাকে স্মরণ করে এবং বলে - বাবা, তুমি এসে আমাদেরকে দুঃখ থেকে মুক্ত কর। বাবা উত্তরাধিকার দেন। হয় শান্তিধাম, নয়তো সুখধামে পাঠিয়ে দেন। যে এই কল্পে শান্তির উত্তরাধিকার পাবে, সে প্রতি কল্পেই এইরকম শান্তির উত্তরাধিকার নেবে। তোমরা এখন সুখের উত্তরাধিকার নেওয়ার জন্য পুরুষার্থ করছ। এর জন্য পড়তে হবে এবং পড়াতেও হবে। বাবা যেমন সবথেকে মিষ্টি, তাঁর রচনাও সেইরকম সবথেকে মিষ্টি। স্বর্গ কতই না মিষ্টি! সবার মুখেই স্বর্গের নাম উচ্চারিত হয়। কেউ মারা গেলে বলে যে, সে স্বর্গবাসী হয়েছে। তাহলে এতদিন নিশ্চয়ই নরকে ছিল। এখন স্বর্গে গেছে। তারা মোটেও যায় না, কিন্তু তবুও এইরকম বলে। তোমরা তখন লিখবে- তাহলে এতদিন নিশ্চয়ই নরকে ছিল। এটা তো নরক, তাহলে ওদেরকে এখানে ডেকে এনে খাওয়ানোর চেষ্টা কেন করো? আত্মাদেরকে অর্থাৎ মৃত ব্যক্তিদেরকে আহ্বান করে। তোমরা এখন সকল আত্মার পিতাকে আহ্বান করছ। সকল আত্মার পিতা এখন তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন। তোমরা হলে গুপ্তসেনা, শিবশক্তি। শিববাবা তো নিরাকার। তোমরা শক্তিসেনারা হলে তাঁর সন্তান। আত্মার মধ্যে শক্তির সঞ্চার হয়। দুনিয়ার মানুষ শারীরিক শক্তির প্রদর্শন করে, আর তোমরা আত্মিক শক্তির প্রদর্শন করো। তোমাদের শক্তি হল যোগবল। যোগের দ্বারা তোমরা আত্মারা পবিত্র এবং শক্তিশালী হও। তোমাদের মধ্যে মাম্মার জ্ঞানের তলোয়ার সবথেকে ধারালো। এটা কোনো স্থূল খড়্গ কিংবা তলোয়ারের বিষয় নয়। আত্মা নিজেও জানে যে আমার মধ্যে জ্ঞানের শঙ্খধ্বনি করার ভালো ক্ষমতা রয়েছে, আমি শঙ্খধ্বনি করতে পারি। কেউ কেউ আবার বলে যে আমি শঙ্খধ্বনি করতে পারি না। বাবা বলেন, যারা জ্ঞানের শঙ্খধ্বনি করে, তারা আমার খুব প্রিয়। জ্ঞানের দ্বারা-ই তো আমার পরিচয় দেবে, তাই না? বেহদের বাবাকে স্মরণ করো - এটাও তো জ্ঞান দেওয়া, তাই না? কেবল বাবাকেই স্মরণ করতে হবে। মুখে কিছু বলার দরকার নেই। অন্তরে এটা বুঝতে হবে যে বাবা আমাদেরকে জ্ঞান দিচ্ছেন। বাবা বলছেন, তোমাদেরকে এখন ফিরে যেতে হবে। আমাকে স্মরণ করলেই বিকর্ম বিনাশ হবে। ভগবানুবাচ হল - মন্মনা হল। তাহলে তিনি নিশ্চয়ই নিরাকার। সাকার রূপধারী কিভাবে বলবে যে আমাকে স্মরণ করো? যিনি নিরাকার, তিনিই বলেন - হে আত্মারা, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি হলাম তোমাদের পিতা। আমাকে স্মরণ করলে অন্তিমে মতি এবং গতি হয়ে যাবে। কৃষ্ণ কখনো এইভাবে বলতে পারবে না। সে তো একজন মানুষ ছিল। তোমরা আত্মারা এই শরীরের দ্বারা সকল জীবাত্মাদেরকে বাবাকে স্মরণ করতে বলছ। বাবাও আত্মাদেরকে বলছেন, মন্মনা ভব। তোমাদেরকে অর্থাৎ আত্মাদেরকে তো আমার কাছে আসতেই হবে। তাই দেহী-অভিমানী হতে হবে। *আমি আত্মা এই শরীরকে চালনা করছি - এইটা ভালোভাবে অভ্যাস করতে হবে।* এখন আমাকে বাবার কাছে ফেরৎ যেতে হবে। বাবা বলেন - চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে আমাকে স্মরণ করো। যে অশান্তি করে, সে নিজের পদকেই ভ্রষ্ট করে। খুব মিষ্টি স্বভাবের হতে হবে। একটা গান আছে - কতই না মিষ্টি, কতই না প্রিয়, ভোলা ভগবান শিব। তোমরা তাঁর সন্তান। তাই তোমরাও ভোলাভালা। তোমরা সবাইকে ফার্স্টক্লাস রাস্তা বলছো যে বাবাকে স্মরণ করলেই স্বর্গের মালিক হয়ে যাবে। অন্য কেউ এইরকম চুক্তি করবে না। তাই বাবাকে অনেক স্মরণ করতে হবে। যাঁর কাছ থেকে এত সুখ পাওয়া যায়, তাঁকেই স্মরণ করা হয়। বলা হয় - হে পতিতপাবন, তুমি এসো। আত্মারা পতিত হয়ে গেছে এবং তার সঙ্গে শরীরও পতিত হয়ে গেছে। আত্মা এবং শরীর উভয়ই পতিত হয়ে গেছে। ওরা তো বলে যে আত্মা নির্লেপ, কখনো পতিত হয় না। কিন্তু না, কেবল পরমপিতা পরমাত্মার মধ্যেই কখনো খাদ পড়ে না। বাকি সবার মধ্যে অবশ্যই খাদ পড়বে। প্রত্যেককেই সতো, রজো এবং তমো অবস্থাতে আসতেই হবে। এইসব পয়েন্ট ধারণ করে খুব মিষ্টি স্বভাবের হতে হবে। এমন যেন না হয় যে কারোর সাথে বন্ধুত্ব আছে, আর কারোর সাথে শত্রুতা আছে। দেহ-অভিমানের বশীভূত হয়ে এখানেই বসে বসে সেবা গ্রহণ করা একেবারেই ঠিক নয়। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি রুহানী বাচ্চাদের প্রতি রুহানী বাপদাদার স্মরণ, ভালোবাসা এবং সুপ্রভাত। রুহানী বাবার রুহানী বাচ্চাদেরকে নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. জ্ঞান মন্থন করে ত্রিকালদর্শী হতে হবে এবং অন্যকেও সেইরকম বানাতে হবে। অন্ধের লাঠি হয়ে তাদেরকে অজ্ঞান নিদ্রা থেকে জাগিয়ে সজাগ করতে হবে।
২. ২১ জন্মের জন্য নিজের সবকিছু ইনসিওর করতে হবে এবং সাথে সাথে জ্ঞানের শঙ্খধ্বনিও করতে হবে।
বরদান:-
আপসেট না হয়ে আনন্দ সহকারে হিসাবপত্র মিটিয়ে নিতে সক্ষম নিশ্চিন্ত আত্মা হও
যদি কেউ কোনো কথা বলে দেয়, তাহলে ঝট করে আপসেট হয়ে যেও না। আগে নিশ্চিত হও অথবা ভেরিফাই করো যে সে কোন ভাবনা থেকে এই কথাটা বলেছে। যদি তোমার কোনো ভুল না থাকে, তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যাও। এটা যেন সর্বদা স্মৃতিতে থাকে যে ব্রাহ্মণ আত্মাদের দ্বারা এখানেই সব হিসাবপত্র মিটে যাবে। ধর্মরাজপুরী থেকে বাঁচার জন্য ব্রাহ্মণরাই কোনো না কোনো ভাবে নিমিত্ত হয়ে যায়। তাই ঘাবড়ে যেও না। আনন্দ সহকারে হিসাবপত্র মিটিয়ে নাও। এতে তোমার উন্নতিই হবে।
স্লোগান:-
“বাবা-ই হলেন সংসার”- এইটা সর্বদা স্মৃতিতে রাখাকেই সহজযোগ বলা হয়।