৩১-১০-১৮ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদের যার যার নিজের রথ(শরীর) আছে। আমি (শিববাবা) নিরাকার। কল্পে একবার আমারও রথের প্রয়োজন, তাই আমি অনুভাবী বৃদ্ধ ব্রহ্মার রথ ধার নিয়ে তাকেই আধার বানাই"
প্রশ্ন:-
কোন্ নিশ্চয়তার আধারে শরীরের এই দেহ ভাবকে অতি সহজেই ভোলা যায় ?
উত্তর:-
বাচ্চারা, তোমরা তো নিশ্চয়তার সঙ্গেই বলো- বাবা, আমরা তোমার। অর্থাৎ বাবার আপন হওয়া মানেই শরীরের ভাবকে ভুলে থাকা। যেমন ভাবে শিববাবা স্বয়ং এই ব্রহ্মার রথে আসেন এবং চলেও যান - বাচ্চারা, তোমরাও তেমনি নিজের রথে আসা-যাওয়ার অভ্যাসে অভ্যাসী হও। অশরীরী হবার অভ্যাস কর। যাতে তাতে যেন কোনও অসুবিধা অনুভব না হয়। নিজেকে নিরাকারী আত্মা মনে করে নিরাকার বাবাকে স্মরণ করো।
গীত:-
ওঁম্ নমঃ শিবায়ঃ...
ওঁম্ শান্তি!
ব্রহ্মার রথের মাধ্যমেই শিববাবা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে বলছেন - "বাচ্চারা, বাবা তো তোমাদের কাছেই তা জানতে চান, যেহেতু আমার নিজের কোনও রথ নেই তাই। অথচ রথের আবশ্যকতাও আছে। তোমাদের অর্থাৎ প্রত্যেক আত্মারই তো নিজ-নিজ রথ রয়েছে। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরেরও সূক্ষ্ম শরীর আছে। লক্ষ্মী-নারায়ণ প্রভৃতি সব আত্মাদেরই শরীর রূপী রথ থাকে। যাকে অশ্ব-ও (ঘোড়া) বলা হয়। যদিও বাস্তবে তারা মানুষ-ই। মানুষদেরই তো কিছু বোঝানো সম্ভব। পশুদের কথা পশুরাই বুঝতে পারে। এই দুনিয়াটা মনুষ্য সৃষ্টি-জগৎ, তাই মনুষ্য সৃষ্টির বাবা, তোমাদের অর্থাৎ মনুষ্যের সামনে বসেই সেসব বোঝাচ্ছেন। অর্থাৎ মনুষ্যের মধ্যে যে আত্মা থাকে তাকেই বোঝাচ্ছেন। তিনি সরাসরি জানতে চান- তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদের প্রত্যেকেরই নিজ-নিজ শরীর আছে- তাই তো ? প্রত্যেক আত্মাই যেমন শরীর গ্রহন করে তেমনই আবার শরীর ত্যাগও করে। লোকেরা বলে আত্মা ৮৪-লক্ষ বার জন্ম নেয়। যা একেবারেই ভুল। যেখানে মাত্র ৮৪-জন্ম নিতে গিয়েই ক্লান্তিতে তোমরা এত হাঁফিয়ে ওঠো, কত যে হয়রানি হয়, সেখানে ৮৪-লক্ষ জন্মের কথা তো ভাবাই যায় না। এসব লোকেদের গাল-গপ্পো মাত্র। তাই তো এভাবে ব্যাখ্যা করে বাবা বোঝাচ্ছেন, আত্মাদের যার যার নিজস্ব রথ থাকে। এদিকে বাবারও তো রথের প্রয়োজন। য়েহেতু একমাত্র বাবা-ই আত্মাদের অসীম-বেহদের পিতা। তাই তো আত্মারা বাবার উদ্দেশ্যে এমন করে গীত গায়- "ওগো পতিত-পাবন, জ্ঞানের সাগর ....!" আর কারওকেই এমন পতিত-পাবন বলা যায় না। এমন কি লক্ষ্মী-নারায়ণ বা অন্য কারওকেই তা বলা যায় না। পতিত সৃষ্টিকে পাবন (পবিত্র) বানাতে পারেন যিনি, অর্থাৎ পবিত্র সৃষ্টি স্বর্গের রচয়িতা, পরমপিতা পরমাত্মা ছাড়া আর কেউ যা করতে পারেন না। পারেন এক ও একমাত্র তিনি, যিনি পরম-পিতা।
বাবা জানেন, তোমাদের মধ্যেও ক্রমিকানুসারে নির্বোধ পাথর বুদ্ধির বাচ্চারা এখন বুদ্ধিমান পারস বুদ্ধিধারীতে পরিণত হচ্ছ। বাইরের লোকেরা এসবের কিছুই বুঝতে পারবে না। তাই তো বাবা এমন ব্যাখ্যা করে বোঝাচ্ছেন, কেন ওঁনারও রথের প্রয়োজন। ওঁনার মতন পতিত-পাবনকেও এই পতিত দুনিয়ায় আসতেই হয়। *কোথাও যখন প্লেগ রোগের মহামারী শুরু হয়, ডাক্তারকে তো সেই প্লেগ-রোগীর কাছে যেতেই হয়। বাবা বলছেন - তেমনি অর্দ্ধ-কল্প ধরে তোমরাও ৫-বিকারের রোগী হয়ে আছো, তাই তো মানুষের এত দুঃখ-কষ্ট। এই ৫-বিকারের কারণে আজ তোমরা একেবারেই পতিত হয়ে পড়েছো। আর তাই তো পতিত-পাবন বাবাকে এই পতিত দুনিয়ায় আসতেই হয়*। পতিতদের ভ্রষ্টচারী বলা হয়, আর পাবনদের বলা হয় শ্রেষ্ঠচারী। পূর্বে এই ভারত যখন পবিত্র ছিল - তা ছিল শ্রেষ্ঠাচারী। তখন ছিল লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজত্বকাল। যার কত মহিমা- সর্বগুণ সম্পন্ন। সবাই সর্বসুখ সম্পন্ন। যা মাত্র কিছু কাল আগের কথা। বাবা আরও জানাচ্ছেন - তিনি যখন আসবেনই, তবে তা কিভাবেই বা আসবেন আর কার শরীরকেই বা আধার বানাবেন? সর্বাগ্রে ওনার প্রয়োজন একজন প্রজাপিতা। সূক্ষ্মবতনবাসী প্রজাপিতাকে তো আর এখানে আনা যাবে না, তিনি তো ফরিস্তারূপী। তাই তাকে পতিত দুনিয়ায় আনাটা খুব অন্যায়। সেও আবার বলবে- আমি এমন কি দোষ করলাম, (এই পতিত দুনিয়ায় আসতে হলো) ? বাবা বাচ্চাদেরকে এমনই মনোরম ভাবে ব্যাখ্যা করে শোনান সবকিছুই। এসবের মর্মার্থ বুঝতে পারবে তারাই, যারা বাবাকে আপন করে নিয়েছে। অর্থাৎ যে প্রতি নিয়তই বাবাকে স্মরণ করে চলেছে।
বাবা জানাচ্ছেন - উনি তখনই আসেন, যখন এই ধরিত্রী পাপে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সত্যি, কলিযুগে লোকেরা কত পাপ করে। তাই তো বাবা বাচ্চাদেরকেই জিজ্ঞেস করেন- "বাচ্চারা, তোমরাই বলো, আমি যে আসবো, কার শরীরকেই বা আধার বানাবো? যেখানে আমার প্রয়োজন বৃদ্ধ কোনও অনুভবী রথের। আমি যে রথে অবস্থান করছি, তিনি তো একদা অনেক গুরুর সংস্পর্শে ছিলেন, যথেষ্ট শাস্ত্রাদিও পড়াশোনা করেছেন। যথেষ্টই শিক্ষিতও তিনি। এখানে অর্জুনের কথা বলা হচ্ছে না কিন্তু। কারণ আমার কোনও অর্জুন বা কৃষ্ণের রথের প্রয়োজন নেই। আমার তো দরকার ব্রহ্মার রথ। যাকে প্রজাপিতাও বলা হয়। কৃষ্ণকে তো আর প্রজাপিতা বলা যাবে না। তাই বাবার প্রয়োজন ব্রহ্মার রথ, যিনি ব্রাহ্মণ প্রজা রচনা করেন। এই ব্রাহ্মণেরাই কুলশ্রেষ্ঠ-সর্বোত্তম। বিরাট রূপের চিত্রে তা দেখানো হয়েছে। দেবতা, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র - কিন্তু ব্রাহ্মণ তবে গেল কোথায়? এটাই লোকেদের জানা নেই। উচ্চ থেকেও উচ্চতর ব্রাহ্মণেরাই টিকিধারী চূড়ামণি। পূর্বে, এই টিকি দেখেই বোঝা যেত ইনি ব্রাহ্মণ। *কিন্তু প্রকৃত টিকিধারী তো তোমরা বি.কে.-রাই। তোমরাই রাজঋষি। (সূক্ষ্মরূপে) যাদের রয়েছে বিশাল টিকি। আর ঋষি বলা যায় তাদেরকেই যারা পবিত্র। তোমরা বি.কে.-রা একদিকে যেমন রাজযোগী আবার রাজঋষিও বটে। তেমাদের এই তপস্যা (স্বর্গ-রাজ্যের) রাজত্ব পাবার লক্ষ্যে। জাগতিক সন্ন্যাসীরা হঠযোগের তপস্যা করে মুক্তির লক্ষ্যে। তেমরা বি.কে.-রা তপস্যা করো জীবন-মুক্তির লক্ষ্যে। রাজত্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যে রাজযোগের তপস্যা করো। তাই তো তোমাদের অপর নাম শিবশক্তি।* শিববাবা তোমাদের পুনরায় দেহ-দান করেন দেহ-ধারণের জন্য। তোমরা আবারও এই ভারত ভূ-খণ্ডেই জন্মগ্রহণ করো। জন্ম তো নিয়েইছো- তাই না? যদিও অনেকেই এমন ভাবে জন্ম নিয়েছে, কিন্তু তারা এমনটা মনে করেই না যে তারা শিববাবার কাছ থেকেই এই জন্ম পেয়েছে, তাই তারা শিববাবার আপনও হয় না। কিন্তু নিজেকে তেমনটা ভাবতে পারলে এই দেহের ভাব একেবারেই শেষ হয়ে যায়। যেমন নিরাকার শিববাবা এই রথে অবস্থান করে আছেন, তেমনি তোমরাও নিজেদেরকে নিরাকার আত্মা ভাবতে শেখো। তাই বাবা বার-বার বলছেন- বাচ্চারা আমাকে স্মরণ করো। তোমাদের যে এখন ঘরে ফেরার পালা। পূর্বে এই তোমরাই তো অশরীরী ছিলে, এরপরে দেবী-দেবতার শরীর ধারণ করেছিলে, তারপরে ক্ষত্রিয় শরীর, এরপরে বৈশ্য শরীর, তারপরে শূদ্র শরীর ধারণ করেছো। আবার সেই অশরীরী ভাবে এসো। তোমরা তো এই নিরাকার অর্থাৎ আমাকেই বলো- "বাবা, আমরা তো তোমার সন্তান, আমরা ফিরে যেতে চাই আপন ঘরে।" সেখানে দেহ তো আর যাবে না। ওহে আত্মারা, এখন কেবলই আমাকে আর সুইট হোমকে স্মরণ করতে থাকো। আমিই তোমাদের প্রকৃত পিতা। লোকেরা যখন বিলেত থেকে ফিরে আসে তখন বলে, আগে চলো নিজের ঘর সুইট হোম ভারত ভূ-খণ্ডে। যেখানে জন্ম নিয়েছি সেখানেই ফিরে যাই। এমনকি মানুষ মারা গেলেও, যেখানে সে জন্ম নিয়েছিল, সেখানেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বিশ্বাস সেই দেহ ভারতের মাটিতেই জন্ম যেখানে, যেখানকার মাটিতেই তাকে ছেড়ে আসা উচিত।
এবার বাবা জানাচ্ছেন- ওঁনারও জন্ম এই ভারতেই। লোকেরা তা 'শিব-জয়ন্তী' হিসাবে পালন করে। যদিও ওঁনাকে আরও অনেক নামেই ডাকা হয়ে থাকে, কেউ বলে 'হর হর মহাদেব'-অর্থাৎ সবার দুঃখ হরণ বা মোচনকারী, যদিও তা সেই বাবাকেই। বাবা আর শংকর কিন্তু এক নয়। ব্রহ্মা এখন সেবায় ব্যস্ত। আর যে স্থাপনা ও পালনা উভয় কার্য করে সে হচ্ছে 'বিষ্ণু'! তার দুই রূপ। কিন্তু শিববারার প্রয়োজন প্রজাপিতা ব্রহ্মাকে। সেই আদি দেবের মন্দিরও আছে। কিন্তু এই আদি দেব তবে কার সন্তান? তা কি তোমরা বলতে পারবে? এই দিলওয়ারা মন্দিরের ট্রাস্টীরা, তারাও তা জানে না, এই আদি দেব কে? তার পিতা-ই বা কে? --আদি দেব হলো প্রজাপিতা ব্রহ্মা। আর ওনার পিতা শিব। এই ব্রহ্মা জগৎ পিতা আর জগৎমাতা জগদম্বার স্মরণেও মন্দির আছে। এই আদি দেব ব্রহ্মার রথেই বাবা অধিষ্ঠান হয়ে আত্মাদের জ্ঞানের পাঠ পড়ান। আর এই নিরিবিলি ছায়াকুঞ্জে বসে তা শোনে বাচ্চারা। সবার জন্য তো আর মন্দির হবে না। এর মধ্যে মুখ্য হলো ১০৮-এর মালা, তাই ১০৮-টি ছায়াকুঞ্জের কুটির বানানো হয়। এই ১০৮-এরই যত পূজার্চনা হয়। অতএব মুখ্য হলেন শিববাবা, তারপরেই ব্রহ্মা-সরস্বতী যুগল। শিববাবা হলেন মালার লকেটের ফুল, যার স্থান সর্বোচ্চে। ওনার নিজের শরীর নেই। কিন্তু ব্রহ্মা-সরস্বতীর নিজস্ব শরীর আছে। মালা তো শরীরধারীরাই পড়বে। পূজো কিন্তু সবাই মালাকেই করবে। পূজা সম্পূর্ন করে তারপর সেই শিববাবাকেই প্রণাম করবে, মাথা ঠুকবে, ইত্যাদি। যেহেতু উনিই তো সবাইকে পতিত থেকে পবিত্র বানান - তাই পূজা হয় ওনারই। লোকেরা তো বসে বসে মালা হাতে রাম-রাম জপতে থাকে। অথচ পরমপিতা পরমাত্মার নাম কারও জানা নেই। শিববাবাই হলেন মুখ্য, তারপর প্রজাপিতা ব্রহ্মা আর সরস্বতী, এনারাও মুখ্য। এরপর ব্রহ্মাকুমার-কুমারীরা। যে যেমন পুরুষার্থ করে তাদের স্থান হয় সেই অনুসারে। পরবর্তীতে তোমরা সব কিছুই প্রত্যক্ষ করতে থাকবে। অন্তিম সময়কালে তোমরা এখানে এসেই থাকবে। যারা পাক্কা যোগী হবে, কেবল তারাই থাকতে পারবে। আর ভোগীরা সামান্য আওয়াজেই প্রাণত্যাগ করবে। যেমন কারও অপারেশন হচ্ছে দেখলেই অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। দেশ ভাগের সময় কত অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অথচ লোকেরা তো গাল-গপ্পো করে যে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড়াই শান্তিতেই রাজ্যের অধিকার পাওয়া গেছে।
এই দুনিয়াটাই এখন মিথ্যা মায়ার জগৎ ......! সত্য বাবা এখন তোমাদের সামনে বসে তোমাদেরকে সত্য কাহিনী শোনাচ্ছেন। রথের দরকার আছেই বাবার। উনি যত বড় প্রেমিক, প্রমিকাও তো তেমনই চাই। সরস্বতী তো ব্রহ্মার মুখ-বংশাবলী। সে কিন্তু ব্রহ্মার যুগল নয়, সরস্বতী আসলে ব্রহ্মার কন্যা। তবে কেন তাকে জগৎ অম্বা বলা হয়? যেহেতু ব্রহ্মা হলেন পুরুষাকার, তাই মাতাদের দেখা-শোনার জন্য ওনাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু ব্রহ্মার মুখ বংশাবলী, তাই সরস্বতী ব্রহ্মার কন্যা। মাম্মা কত যুবতী আর ব্রহ্মা তো বৃদ্ধ। যুবতী সরস্বতী বৃদ্ধ ব্রহ্মার স্ত্রী হিসাবে মোটেই শোভনীয় নয়। তাই তাকে সহ-ধর্মিনী বলা চলে না মোটেই। এবার নিশ্চয় তোমরা তা বুঝতে পেরেছো। শিববাবা জানাচ্ছেন, নানা কারণে এই বৃদ্ধ ব্রহ্মার শরীরকে আধার বানাতে হয়। এমন ধার তো অনেকেই নেয়। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ব্রাহ্মণকে যখন খাওয়ানো হয়, তখন সেই আত্মা এসে ব্রাহ্মণের শরীরকে আধার বানায়। আত্মা তখন তার সেই শরীর ছেড়ে সেখানে আসে নাকি? -- না, মোটেই তা নয়। সেই রীতি-নীতি তোমাদের বোঝাবার উদ্দেশ্যে তা বলা হয়ে থাকে, সাক্ষাৎকার যা হবার, তা হয় পূর্বনির্ধারিত ড্রামার চিত্রনাট্য অনুসারেই। আত্মাকে এখানে ডাকা হয়, কিন্তু এমনটা মোটেই সম্ভব নয় যে আত্মা সেই শরীর ছেড়ে এখানে আসবে। বাবার এই রথ 'নন্দীগণ' যা ষাঁড়কে দেখানো হয়। তা না হলে শিবের মন্দিরে ষাঁড় দেখাবে কেন? সূক্ষ্মবতনে শংকরের কাছে ষাঁড় আসবেই বা কি ভাবে? সূক্ষ্মবতন তো ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকর যা যুগল রূপে দেখানো হয়। অর্থাৎ প্রবৃত্তি-মার্গকে দেখানো হয়। কিন্তু সেখানে কোনও পশু আসবে কোত্থেকে? লোকেদের বুদ্ধি-সুদ্ধি ঠিকঠাক কাজ করে না, তাই যা মনে আসে তাই বলতে থাকে। যার ফলে যেমন হয় সময়ের অপচয় তমনি হয় এনার্জির অপচয়। এখন তোমরাই বলো, একদা তোমরাই সেই পবিত্র দেবতা ছিলে, তারপর পুনঃ পুনঃ জন্ম নিতে নিতে পতিত হয়ে পুজারীতে পরিণত হয়েছো। যারা একদা পূজ্য ছিল, তারাই এখন পুজারী। ভগবান কিন্তু এমন পূজ্য থেকে পুজারী হন না। ওনাকে ৮৪-জন্ম-চক্রে আসতেই হয় না। মায়া লোকেদের একদম নির্বোধ বানিয়ে পাথর বুদ্ধির করে দেয়। "হাম সো"-এর অর্থ এমনটা মোটেই নয় যে, আমি আত্মা অর্থাৎ পরমাত্মার মতনই। মোটেই তা নয়। আমি অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, পরবর্তীতে দেবতা। আত্মাদের পুনঃজন্মে আসতেই হয়। কি সুন্দর সহজ-সরল ব্যাখ্যা এটা। তাই বাবা এবার জানাচ্ছেন, উনি যে শরীরে প্রবেশ করেন, তিনি অনেক গুরুর সংস্পর্শে থাকেন, বহুবিধ শাস্ত্রাদি অধ্যায়ন করেন, জন্মচক্রের ৮৪-জন্মও পুরো করেন। যদিও সে নিজে তা জানে না। আমি তোমাদের সাথে সাথে তাকেও এসব জানাচ্ছি। তাকে অর্থাৎ এই ব্রহ্মাকে। আমি তো আর সর্বদাই এই রথে আসীন থাকতে পারি না। আমার যা কিছু বলার, তা ব্রহ্মার মুখ বংশাবলী ব্রাহ্মণদেরই বলে থাকি। আর এই কারণেই রথের প্রয়োজন। বাচ্চারা, তোমরা যখনই আমাকে স্মরণ করো, আমিও তখনই এসে হাজির হই। আমাকেও যে আমার কর্ম-কর্তব্য পালন করতে হয়। অতএব শ্রী শ্রী মত অনুসারে ভারতকে পবিত্র বানাতেই হবে। নরকবাসীদের শ্রী শ্রী উপাধিতে ভূষিত করা খুবই গর্হিত অন্যায়। পূর্বে তো এই শ্রী উপাধি ছিলই না। কিন্তু এখন সবাইকে শ্রী অর্থাৎ (নকল) শ্রেষ্ঠ বনানো হচ্ছে। শ্রী শ্রী তো একমাত্র শিববাবা। এরপর সূক্ষ্মবতনবাসী ব্রহ্মা-বিষ্ণু- শংকর, তারপরে শ্রী লক্ষ্মী-নারায়ণ। এসব কথা ভালমতন বুঝতে হবে। খুবই মজার এই জ্ঞান। তবুও কেউ কেউ পড়তে-পড়তেই রফু-চক্কর হয়ে চলেও যায়। মায়া বাবার হাত ছাড়িয়ে দেয়। দোকানও ক্রমিক অনুসারে থাকে। যেমন বড় দোকানে খুব ভাল ভাল সেলসম্যান থাকে। ছোট দোকানগুলিতে তেমন থাকে না। তাই বড় দোকানেই যাওয়া উচিত, যেখানে মহারথীরা থাকে। মাতাদের হাতে যথেষ্ট সময় থাকে। পুরুষদের তো চাকরী-বাকরী, ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্ত মাতারা খাবার বানাবার পরেই ফ্রী হয়ে যায়। কিন্তু পুরুষেরা নানাভাবে তোমাদের বন্ধনে বেঁধে বাঁধার সৃষ্টি করে। তারা মাতাদেরকে ব্রহ্মাকুমারীদের কাছে যাওয়া বন্ধ করতে চায়, যেহেতু তারা শুনেছে সেখানে গেলে (কাম বিকারের) বিষ বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই বাধাদান।
শিববাবা এমনই পিছলে যাওয়ার জিনিস যে মুহূর্তে-মুহূর্তে তাঁকে ভুলে যাও ! বাবা কিন্তু খুবই সহজ-সরল দিশা দেখিয়ে বলেন-"আমাকে স্মরণ করলেই তোমাদের সব পাপ ভষ্ম হয়ে যাবে, তবেই হাল্কা হয়ে আমার কাছে আসতে পারবে। আর আমাকে স্মরণ করতে না পারলে, তোমাদের পাপ ভষ্ম হবে না আর সাথেও নিয়ে যেতে পারবো না। তখন এখানে পড়ে-পড়ে কেবল সাজাই ভোগ করতে হবে। ভক্তি-মার্গে এতদিন কেবলই ঘোল খেয়ে এসেছো। মাখন খেয়েছিলে সত্যযুগ আর ত্রেতাতে। শেষে তো কেবল ঘোলই পড়ে থাকে। ঘোলের প্রথম দিকটায় তবুও কিছুটা ভাল ঘোল পাওয়া যায়, শেষের দিকে তো কেবল জলের ভাগই বেশী। সত্যযুগ ও ত্রেতাতে এত ঘি-দুধ, যেন ঘি-দুধের নদী বইতে থাকে। আর এখন দেখো, ঘি কত মহার্ঘ্য। *আচ্ছা!*
মাতা-পিতা, বাপদাদার মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা ও সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. রাজঋষি হয়ে তপস্যা করতে হবে। পূজনীয়ের মালাতে স্থান পাবার জন্য বাবার মতন সেবা করতে হবে। পাক্কা যোগী হতে হবে।
২. জ্ঞান খুবই মজার, তাই তা আনন্দ সহযোগে পাঠ করতে হবে, কোনও প্রকারের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যেন না আসে।
বরদান:-
বরদানের দিব্য পালনা দ্বারা সহজ আর শ্রেষ্ঠ জীবনের অনুভব করে সদা সৌভাগ্যবান ভব
সঙ্গমযুগে বাপদাদা সকল বাচ্চাদেরকেই তিনটি সম্বন্ধে পালন করেন। বাবার সম্বন্ধে আশীর্বাদী-বর্সার স্মৃতির দ্বারা পালন, শিক্ষকের সম্বন্ধে পড়াশোনার পালন আর সদগুরুর সম্বন্ধে বরদানের অনুভূতির পালন .......যা একই সময়ে সবাই পায়। এই দিব্য পালনা দ্বারা সহজ আর শ্রেষ্ঠ জীবনের অনুভব করতে থাকো। এগুলির সাহায্যে পরিশ্রম আর মুস্কিল শব্দের অবসান ঘটাতে পারলে তবেই বলা যাবে সৌভাগ্যবান।
স্লোগান:-
বাবার সাথে-সাথে অন্য সব আত্মারও স্নেহী হওয়াটাই হল প্রকৃত সদ্ভাবনা।