২৪-১০-১৮ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - প্রভাত কালে মন ও বুদ্ধির সহযোগে এই বাবাকে স্মরণ করো এবং তার সাথে ভারতকে দৈবী-রাজস্থান গড়ার সেবা কর"

প্রশ্ন:-

সূর্যবংশী রাজধানীতে আসার প্রাইজ কিসের আধারে পাওয়া যায় ?

উত্তর:-

সূর্যবংশী রাজধানীর প্রাইজ পেতে চাইলে পুরোপুরি বাবার সাহায্যকারী হও আর শ্রীমৎ অনুসারে চলতে থাকো। এর জন্য আশীর্বাদ চাইবে না, বরং যোগবলের দ্বারা আত্মাকে পবিত্র বানাবার পুরুষার্থ করতে হবে। দেহ সহ দেহের সব সম্বন্ধকে ত্যাগ করে এক ও একমাত্র অতি প্রিয় থেকেও প্রিয়তম(মোস্ট বিলাভড) বাবাকে তেমন ভাবে স্মরণ করলেই সূর্যবংশী রাজধানীর প্রাইজ পেয়ে যাবে। তার মধ্যেই - শান্তি, পবিত্রতা, সৌভাগ্য...সবকিছুই আছে ।

গীত:-

অবশেষে আজ এলো সেদিন !

ওঁম্ শান্তি!

বাচ্চারা, এই ওঁম্ শান্তি শব্দের যথার্থ ভাবার্থ তোমাদের মন-বুদ্ধিতে অবশ্যই থাকে। বাবা যা কিছু বোঝান, তা একমাত্র বি.কে.-রা ছাড়া জগতের অন্যান্যরা তার মর্মার্থ বুঝতেই পারে না। অন্যেরা তা এমন বোধ করবে যেন হঠাৎ করে কেউ যদি মেডিকেল কলেজের ক্লাসে বসে পড়া শুনলেও তা যেমন কিছুই বুঝে উঠতে পারবে না - ঠিক তেমনই। আবার এমন কোনও সৎসঙ্গ নেই যেখানে মানুষেরা বসে তা শুনলে, তার কিছুই বুঝতে পারবে না। সেখানে তো পুঁথি-শাস্ত্র ইত্যাদি শোনানো হয়। কিন্তু তোমাদের এই ঈশ্বরীয় বিদ্যালয় হলো উচ্চ থেকেও অতি উচ্চতর কলেজ। যদিও তা নতুন কিছু নয়। সে দিনই ফিরে এসেছে আবার, যখন পরমাত্মা বাবা স্বয়ং বসে ওনার আত্মাধারী বাচ্চাদেরকে রাজযোগ শেখাচ্ছেন। ভারতে কোনও রাজা-বাদশাহের শাসন নেই এখন। তোমরা এই রাজযোগের দ্বারা রাজাদেরও রাজা হও, অর্থাৎ তোমরা জানো যে, যারা বিকারী রাজা, তাদেরই রাজা হচ্ছো তোমরা। তোমাদের বুদ্ধিতে তো আছেই, যে যেমন কর্ম করে, বুদ্ধি তাই ধারণ করে। তোমরা হলে যোদ্ধা। আত্মারা পরমাত্মা বাবার সাথে যোগযুক্ত হয়েই ভারতকে পবিত্র বানায়। সৃষ্টি চক্রের আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান ধারণ করে সেই আত্মারাই চক্রবর্তী রাজা হতে চলেছে। এই সত্যটা বুদ্ধিতে ধারণ করতে হবে। যেহেতু তোমরা এখন এক বিশেষ যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে আছো। জয় নিশ্চিত তোমাদের। যা পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে আছে। বাস্তবে তোমরা বি.কে.-রাই এই ভারতকে আবার দ্বিমুকুটের রাজস্থান বানাও। বাবা চিত্রগুলির উপরেই খুব সুন্দর রীতিতে এগুলি বুঝিয়ে বলতে থাকেন। *একমাত্র বি.কে.-রাই তাদের ৮৪-জন্ম পুরো করে এই সময়ে আপন ঘরে ফিরে যায়। এরপর সত্যযুগের শুরুতে তারাই এসে রাজত্ব করে।*



লোকেদের জানার আগ্রহ হয়, এই যে এত অনেক সংখ্যায় ব্রহ্মাকুমার ও ব্রহ্মাকুমারীরা আছে - এখানে তারা কি করে? ব্রহ্মাকুমারীসের এই সংস্থাটি আসলে কি এবং কেন? বি.কে.-রা তৎক্ষণাৎ উত্তর দেয়- "আমরা বি.কে.-রাই এই ভারতকে আবার দেব-দেবীদের দৈবী-রাজস্থান করে গড়ে তুলি বাবার শ্রীমৎ অনুসারে। মানুষ তো 'শ্রী' শব্দটির যথার্থ ভাবার্থই জানে না। কিন্তু তোমরা বি.কে.-রা জানো 'শ্রী-শ্রী' একমাত্র এই শিববাবা। ওঁনার জন্যই (রুদ্র) মালা গাঁথা হয়। এত সব রচনা কার ? -- এ সবের রচনাকার এই বাবা। সূর্য-বংশী ও চন্দ্র-বংশীর হবে যারা তাদের সবারই যে মালা হবে সেটাই শিববাবার রুদ্র মালা। যদিও লোকেরা তাদের রচয়িতাকে জানতে পারে, কিন্তু তার পেশা, কর্ম-কর্তব্যগুলি জানে না আদৌ। উনি কখন কিভাবে এসে এই পুরানো দুনিয়াকে আবার নতুন করে গড়ে তোলেন - এটাই কারও বুদ্ধিতে আসে না। যেহেতু লোকেরা ভাবে কলিযুগ এখনও অনেক বর্ষ ধরে চলতে থাকবে। কিন্তু বাচ্চারা, তোমরা এখন তা জানো, যেহেতু তোমরাই দৈবী-রাজস্থান গড়ে তোলার নিমিত্ত হয়েছ। কল্পচক্রের নিয়মানুসারে কল্পের শুরুতে গঠিত হয় দৈবী-রাজস্থান, তারপরে হয় ক্ষত্রিয়-রাজস্থান। অর্থাৎ শুরুতে রাজত্ব করবে সূর্য-বংশী কুলের যারা, তারপর ক্ষত্রিয় কুলের যারা। অতএব তোমাদের হতে হবে চক্রবর্তী রাজা-রাণী, তাই বুদ্ধিতেও সর্বদা চক্র ঘোরাতে হবে - তাই না? তোমরাও অন্যদেরকে এইসব চিত্রগুলি দিয়ে খুব ভাল ভাবেই বোঝাতে পারবে। যে লক্ষ্মী-নারায়ণেরা প্রথমে হন সূর্য-বংশী কুলের পরবর্তীতে তারাই হন রাম-সীতার ক্ষত্রিয় কুলের। পরে বৈশ্য ও অবশেষে পতিত কুলের শূদ্র বংশীতে আসে তারাই। এভাবে পূজ্যরাই পূজারি হয়। এক মুকুটধারী রাজাদের চিত্রও বানাতে হবে। তবে সেই এক্সিবিশন খুব সুন্দর লাগবে। বুঝতেই পারছো ড্রামা অনুসারে সেবার জন্য এই এক্সজিবিশনের প্রয়োজনীয়তা কতটা, তবেই তো সবার বুদ্ধিতে তা খেলবে। চিত্র দ্বারা সহজেই বোঝানো যায়-কিভাবে নতুন দুনিয়ার স্থাপনা কার্য চলছে। বাচ্চাদেরও খুশির পারদ তাতে চড়তে থাকবে। সত্যযুগে সবার মধ্যেই আত্মা সম্বন্ধে জ্ঞান থাকে। তাই তারা যখন বুড়ো হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্মরণে আসে যে, এই পুরনো শরীর ত্যাগ করে এবার নতুন শরীর ধারণ করতে হবে। এই খেয়াল একেবারে শেষের দিকেই আসে। এছাড়া অন্য সময়ে তারা খুব খুশী ও মজাতেই থাকে। অবশ্য প্রথমদিকে সে জ্ঞান থাকে না।



জ্ঞানের শুরুতে বাচ্চাদের বোঝানো হয়, এই যে পরম পিতা পরমাত্মা - এনার কোনও নাম, রূপ, দেশ, কাল কিছুই জানা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাবা স্বয়ং এসে নিজের পরিচয় দেন, যে পরিচয় আবার খুবই গম্ভীর। ওঁনার প্রথম পরিচয় লিঙ্গ রূপেই করানো হয়। তাই রুদ্র যজ্ঞ রচনার সময় মাটির লিঙ্গ রূপ বানানো হয়। এতদিন যাবৎ যা পূজিত হয়ে আসছে। বাবা নিজেই তা প্রথমে বলেননি যে প্রকৃত অর্থে উঁনি 'বিন্দু'-রূপ। যেহেতু বিন্দু-রূপ বললে তোমরা তা বুঝতে পারবে না বলে। যেটা যখন বলার, তা তখনই বলতে হয়। তাতে কিন্তু এমনটা যেন বলবে না যে-শুরুতেই তা বলা হয়নি কেন, যা এখন বলা হচ্ছে। আসলে যা কিছুই হচ্ছে তা সবই পূর্ব নির্ধারিত ড্রামার চিত্রপট অনুসারেই হচ্ছে। এই ধরণের এক্সিবিজিশনের মাধ্যমে সেবা কার্য অনেক গুণ বাড়ে। কোনও কিছুর আবিস্কার হলে ক্রমে-ক্রমে তা খুব বৃদ্ধি হতেই থাকে। এ বিষয়ে বাবা মোটর গাড়ীর উদাহরণ দেন। শুরুতে আবিস্কার করতে প্রচুর শ্রম দিতে হয়, তারপর বড়-বড় কারখানায় কয়েক মিনিটেই তা তৈরি হয়ে যায়। সত্যি বিজ্ঞানের আজ কত বিস্তার।



বাচ্চারা, ভারত কত বিশাল দেশ, সমগ্র দুনিয়াটা আরও কত বড়। (বিনাশের) পরে তা অনেক ছোটো আকারের হয়ে যাবে। খুব ভালভাবে একথা তোমদের বুদ্ধিতে গেঁথে রাখো। যারা সেবাধারী বাচ্চা, কেবল তাদেরই তা স্মরণে থাকবে। অন্যদের তো খাওয়া-দাওয়া, ঝগড়া-ঝাঁটি, গাল-গপ্পোতেই সময় নষ্ট হয়ে যাবে। একমাত্র তোমরা বি.কে.রাই জানো, এই ভারত ভূ-খণ্ডেই আবার দৈবী-রাজস্থান স্থাপিত হতে চলেছে। 'কিংডম' (রাজত্ব) শব্দটি সঠিক নয়। যেখানে ভারত দৈবী-রাজস্থান হতে চলেছে। বর্তমানে যা আসুরী-রাজস্থান, অর্থাৎ রাবণ-রাজ্য। প্রত্যেকের মধ্যেই ৫-বিকারের প্রভাব আছে। এই যে এত কোটি-কোটি আত্মাধারী এরা সবাই অ্যাক্টর্স। আত্মারা যে যার নির্দিষ্ট সময় অনুসারে এখানে আসে আবার চলেও যায়। আগামীতেও আবার নিজ-নিজ কর্ম-কর্তব্যের নির্দিষ্ট পার্ট-এর পুনরাবৃত্তি করতে হয় নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী। ড্রামার এই পটচিত্র সেকেণ্ড বাই সেকেণ্ড নির্দিষ্ট গতিতে হুবহু পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। কল্প-পূর্বে যে যেমন পার্ট করেছিল, এখনও সে তেমনই করবে। -এগুলি সব বুদ্ধিতে রাখতে হবে। ব্যবসা-বানিজ্য, কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকলে কিছুটা অসুবিধা হয় অবশ্য তাই বাবা বলছেন- খুব ভোরে উঠে ওঁনাকে স্মরণ করতে। গীতেও আছে - "খুব ভোরে ওঠো রে তন - রামকে স্মরণ করো রে মন।" বাবা এও জানাচ্ছেন, আর অন্য কিছুকে যেন স্মরণ করবে না। প্রভাত বেলায় কেবলমাত্র এই বাবাকেই স্মরণ করবে।



বাবা স্বয়ং বাচ্চাদের সম্মুখে বসে বলছেন - ভক্তি-মার্গে কত প্রচার হয়। সত্যযুগ ও ত্রেতায় তা নেই। তাই তো বাবা তোমাদের বোঝাচ্ছেন - ওহে আত্মারা, তোমরা নিজেদের মন-বুদ্ধি সহযোগে খুব ভোরে এই বাবাকে স্মরণ করো। যে ভক্তরা রাত জাগে, নিশ্চয় কিছু না কিছু স্মরণ করে তারা। এখানকার সেই রীতি-নীতিই ভক্তি-মার্গেও চলে আসছে। আজ থেকে কত আগে এই ভারত দৈবী-রাজস্থান ছিল, যা পরবর্তীতে ক্ষত্রিয়-রাজস্থান হয়ে তারপর বৈশ্য-রাজস্থান হয়। দিন-প্রতিদিন তমোপ্রধান হয় অর্থাৎ অবনতিতে যায়। মুখ্য হলো চক্রের ধারণা। এই চক্রকে সঠিক ভাবে জানলে তোমরা চক্রবর্তী রাজা হতে পারো। তোমাদের অবস্থান এখন কলিযুগে। এরপরেই আসছে সত্যযুগ। কল্প-চক্রের পরিবর্তন কিভাবে হয়, তা তোমরা জানো। আবার এও জানো যে আগামীতে তোমরাই যাবে সত্যযুগের রাজধানীতে। সত্যি কত সহজ তোমাদের জন্য। চিত্রের শীর্ষে যেমন ত্রিমূর্তি শিব আছেন, আবার চক্রও আছে। উপরের সেই অংশে আবার লক্ষ্মী-নারায়ণের চিত্রও আছে৷ এই চিত্রকে সামনে রাখলে, সবাইকে তা সহজ রীতিতে বোঝাতে পারবে। এই ভারত ভূ-খণ্ডই একদা দৈবী-রাজস্থান ছিল, এখন আর নেই। এমন কি একমুকুট-ধারীরাও আর নেই। এই চিত্র দেখিয়েই বোঝানো উচিত। খুবই মুল্যবান এই চিত্র। কত ওয়ান্ডারফুল চিত্র, তেমনি ওয়ান্ডারফুল ভাবে বোঝাতে হবে। ৩০" ইঞ্চি বাই ৪০" ইঞ্চির কল্পবৃক্ষের পোস্টারে যেটায় ত্রিমূর্তির ছবিও আছে, সেই পোস্টার সবার নিজের ঘরে রাখা উচিত। কোনও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এলে এই চিত্র দেখিয়ে তাকে বোঝানো উচিত। এটাই ওর্য়াল্ডের প্রকৃত ইতিহাস-ভূগোল। প্রত্যেক বি.কে. বাচ্চাদের কাছে অবশ্যই তা থাকা উচিত। তার সাথে সুন্দর-সুন্দর গীতও রাখা উচিত। যেমন- "অবশেষে সেই দিন এলো আজ"- যেহেতু আসল বাবা যে এখন এসেছেন। যিনি স্বয়ং বি.কে দের রাজযোগ শেখাচ্ছেন। চিত্র যে নিতে চাইবে, তাকেই দিতে পারো। গরীবরা যেন তা বিনা পয়সায় পায়। কিন্তু সেভাবে বোঝাবার মতন বোধবুদ্ধি থাকতে হবে অবশ্যই। এ যে অবিনাশী জ্ঞান-রত্নের ভাণ্ডার। মহাদানীর বাচ্চা, তোমরাও যে দানী। তোমাদের মতন এমন জ্ঞান-রত্নের দান করা আর কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। জ্ঞান-রত্ন দানের মতন মহান দান আর কিছুই নেই। অতএব তোমরা এই দান করতেই থাকো। যে আসুক না কেন, তোমরা এসব ব্যাখ্যা করে বোঝাবে। দু-একজনকে দেখে আরও অনেকে আসতে থাকবে। এই চিত্রগুলি খুবই মুল্যবান, অমূল্য সম্পদ। যেমন তোমরাও অমূল্য। সামান্য কানাকড়ি থেকে তোমরা হীরে-তুল্য মুল্যবান হয়ে ওঠো। বিলেতে গিয়ে সেখানে যদি কেউ এই চিত্রকে বোঝাতে পারে, তবে তো তা এক বিশেষ চমৎকার হয়ে যাবে।



এতদিন ধরে জাগতিক সন্ন্যাসীরা বলে আসছে যে, আমরা ভারতবাসীদের যোগ শেখাই। প্রত্যেকেই যে যার নিজের ধর্মের গুণগান গায়, মহিমা করে। বৌদ্ধরা এইভাবে কতজনকে প্রভাবিত করে বৌদ্ধ বানিয়েছে। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কি বা হয়েছে- কিছুই না। আর তোমরা বাঁদর স্বভাবের মানুষকেও মন্দিরের পূজ্যের উপযুক্ত করে গড়ে তোলো। এই ভারতই পূর্বে সম্পূর্ণ নির্বিকারী ছিল। তখনকার ভারত ছিল কত স্বচ্ছ উজ্জ্বল, যা এখন কদাকার কুৎসিত হয়ে গেছে। এখন কত অধিক সংখ্যায় মানুষ এখানে। সত্যযুগে থাকবে অনেক কম সংখ্যায়। সঙ্গম-যুগে বাবা এসে রাজযোগ শিখিয়ে নতুন দুনিয়ার স্থাপনা করান। কিন্তু কেবল সেই বাচ্চাদেরকেই তা শেখান, যারা গত কল্পেও তা শিখে ছিল। স্থাপনা কার্য তো হতেই হবে। বাচ্চারা প্রথমে যদিও রাবণের কাছে হেরে যায়, কিন্তু পরে তারাই আবার অতি সহজেই সেই রাবণকেই হারিয়ে দেয়। তাই তো বাচ্চাদেরও উচিত, বড় বড় চিত্রে বড় বড় অক্ষরে এসব লিখে বোঝানো উচিত- কোন সময় থেকে দুর্গতির ভক্তি-মার্গের সূচনা হয়, আর যখন সেই দুর্গতির চরম অবস্থা হয়, তখন বাবা আসেন তাদের সদগতি করতে।



এবার বাবা বলছেন, কাউকে ভক্তি করতে বারণ করবে না কখনো। বরঞ্চ বাবার পরিচয় দিয়ে তাকে বোঝাতে হবে। তাতেই তীর বিঁধে যাবে। তোমরা এর ভাবার্থ জানো, মহাভারতের লড়াই কেন বলা হয়? এই রুদ্রযজ্ঞ অনেক বড় যজ্ঞ। এই যজ্ঞ থেকেই সেই লড়াইয়ের শিখা প্রজ্জ্বলিত হয়। যেহেতু এই পুরোনো দুনিয়ার বিনাশ যে হতেই হবে। যা কেবল তোমাদের বুদ্ধিতেই তা বুঝতে পারবে। এত লোকেরা তো পিস্ অর্থাৎ শান্তির পুরস্কারে ভূষিত হয়। কিন্তু শান্তি হয় কোথায়? বাস্তবে শান্তি স্থাপন করতে পারেন এক ও একমাত্র এই বাবা। যার সহযোগী তোমরা বি.কে.-রা। পিস্ প্রাইজ তো তোমাদেরই প্রাপ্য। যেহেতু বাবা তো আর পুরস্কার নেন না। উনি কেবল পুরস্কার দিয়েই থাকেন। তোমাদেরকেও পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে পুরস্কৃত করে থাকেন। তোমরা কত অসংখ্য বাচ্চা ওনার। *এই সময়ে তোমরা পবিত্রতা, শান্তি ও সৌভাগ্য স্থাপন করছো। এগুলিই সবচাইতে মূল্যবান প্রাইজ। তোমরা এও জানো, যে তেমন পুরুষার্থ ও পরিশ্রম করতে হয় সূর্য-বংশী রাজধানীর প্রাইজ পাবার জন্য। বাবা তো কেবল শ্রীমৎ দেন। কিন্তু এমন ব্যাপার নেই যে, বাবার থেকে আশীর্বাদ চাইতে পারো। ছাত্রদের তো কেবল উপদেশ দেওয়া হয়। যে বাবাকে যেমন স্মরণ করবে তার তেমন বিকর্ম বিনাশ হবে। একমাত্র যোগবলের শক্তি দ্বারাই তোমার আত্মা পবিত্র হতে পারে। প্রকৃত অর্থে তোমরা সবাই 'সীতা'! অগ্নি-পরীক্ষায় পার হতে হয় তোমাদের- হয় তা যোগবলের শক্তির দ্বারা পার হতে পারো নয়তো আগুনে পুড়ে মরতে হবে। অতএব দেহ সহিত দেহের সর্ব সম্বন্ধকে ত্যাগ করে এক ও একমাত্র প্রিয় থেকেও প্রিয়তম বাবাকে লাগাতার স্মরণ করতে হবে। যদিও তা নিরন্তর থাকাটা শুরুতে একটু কঠিন মনে হবে, অভ্যাসে অভ্যাসী হতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। যোগকেই অগ্নি বলা হয়। প্রাচীন ভারতের যোগ আর জ্ঞানের খ্যাতি তো আছেই। যেহেতু 'গীতা'-ই হলো সর্ব শাস্ত্রের শিরোমণী 'মা'। সেই গীতাতেই রাজযোগের উল্লেখ আছে। কিন্তু অজ্ঞানী পণ্ডিত ও শাস্ত্রকারেরা 'রাজ' শব্দটিকেই বাদ দিয়ে কেবলমাত্র যোগ শব্দটিকেই ব্যাবহার করেছে। এক ও একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউ-ই এমন জোরের সাথে বলতে পারবে না- "এই রাজযোগের দ্বারা তোমাদেরকে আমি রাজার-ও রাজা বানাব।*



বাচ্চারা, তোমরা সেই শিববাবার সন্মুখেই বসে আছো এখন। তোমরা এও জানো যে মূল অর্থে তোমরা আত্মারা পরমধাম নিবাসী আর এখানে এসে এই স্থুল শরীর ধারণ করো যে যার কর্ম-কর্তব্যের পার্ট প্লে করার জন্য। শিববাবা পুনর্জন্মের চক্রে আসেন না। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরকেও পুনর্জন্ম নিতে হয় না। বাবা জানাচ্ছেন, ওনার আসার উদ্দেশ্যই হলো পতিতদের পবিত্র বানানো। তাই তো সবাই এভাবে স্মরণ করে ওনাকে, বলে- "পতিত-পাবন এসো।" এটাই প্রকৃত সত্য কথা। বাবা জানাচ্ছেন, উনি তোমাদের পবিত্র বানিয়ে দেবী-দেবতায় পরিণত করেন। অতএব তোমাদের মধ্যেও তেমন আনন্দের ঘোর আসা উচিত। বাবা এনার শরীরকে আধার করে তোমাদের এসব শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বি.কে.-দের এই সুন্দর ফুলের বাগানের মালী বাবা। সেই বাবার হাত ধরেছো তোমরা। সমস্ত বুদ্ধিই আছে যার কাছে। এই বাবা তোমাদের বিষয় সাগর পার করে ভবসাগরের পারে ক্ষীরসাগরে পৌঁছে দেন। যেখানে কোনও প্রকারের বিষের নামগন্ধও নেই। তাই তো সেই জগৎকে নিষ্পাপ-নির্বিকারী দুনিয়া বলা হয়। একদা এই ভারতই সম্পূর্ণ নির্বিকারী ভারত ছিল, যা এখন বিকারী ভারতে পরিণত। কল্পের যে পটচিত্র, তা তো ভারতের জন্যই। ভারতবাসীদেরই সেই অনুসারে জন্ম-চক্রে আসতে হয়। অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্পূর্ণ চক্রে আসতে হয় না। যেহেতু তারা পরে আসে। খুবই আশ্চর্যজনক এই সৃষ্টি-চক্র। অতএব এসব বুদ্ধিতে ধারণ করে উৎফুল্ল থাকতে হবে। চিত্রগুলির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিতে হবে। সেবার দ্বারা নিজেকে প্রমাণ করো। বি.কে.-দের নাম ছড়িয়ে পড়বে, যদি বিলেতেও এই চিত্রগুলির প্রদর্শন হতে পারে। তরিৎ গতির বিহঙ্গ-মার্গের সেবাও হবে তাতে। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. অবিনাশী জ্ঞান-রত্নের যে ভাণ্ডার পেয়েছ, তা দানের জন্য। নিজের অমূল্য সময়কে খাওয়া-দাওয়া, ঝগড়া-ঝাঁটিতে যেন ব্যর্থ-ব্যয় করে দিও না।

২. কানাকড়ির তুল্য মানুষদেরও হীরের মতন করে গড়ে তোলার সেবা করতে হবে। বাবার আশীর্বাদ বা কৃপা চাইবে না। কেবলমাত্র ওনার নির্দেশ অনুসারেই চলতে থাকবে।

বরদান:-

বাবাকে সামনে রেখে ঈর্ষা রূপী পাপের হাত থেকে বেঁচে চলতে পারা বিশেষ আত্মা ভব

ব্রাহ্মণ আত্মারা সবাই একই রকমের হওয়াতে ঈর্ষার উৎপন্ন হয়। এই ঈর্ষার কারণেই তাদের সংস্কারে দ্বন্দ্ব আসে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে ভাবতে হবে যে, যেখানে আমিও একই রকমের হয়েছি কোনও বিশেষ কার্যের নিমিত্ত, তবে তাকেও সেই নিমিত্ত করলো কে? বাবাকে সামনে এনে প্রত্যক্ষ করো, দেখবে ঈর্ষারূপী মায়া পালিয়ে যাবে। যদি কারও কোনও কথা ভাল না লাগে, তবে তা শুভ ভাবনা দিয়ে উড়িয়ে দাও, কিন্তু ঈর্ষার বশে নয়। নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করো কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। তবেই বিশেষ আত্মা হতে পারবে।

স্লোগান:-

নিজেকে এমন বানাও, বাবাকে নিজের সাথী বানিয়ে, মায়ার খেলাকে যেন সাক্ষী রূপে দেখতে পারো।