১২-১২-১৮ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - এই দুনিয়ায় একমাত্র শিববাবা ছাড়া আর কেহ বা কিছুই নেই তোমার। তাই দেহ-ভাব থেকে মনকে দূরে রেখে নিজেকে 'বেগার'-এর (ভিখারীর) মত নিঃস্ব করে দাও। কারণ বর্তমানের 'বেগার' আগামীর 'প্রিন্স'"

প্রশ্ন:-

কোন্ চিন্তায় মগ্ন থাকলে ড্রামার প্রকৃত জ্ঞানকে জানা যায় না ?

উত্তর:-

আমার কেন এই অসুখ-বিসুখ হলো, তেমনটা না করলে হয়ত এমনটা হতো না, এত বিঘ্ন কেন আসছে ...., বন্ধন এলো কেন .......,- মনে এসব চিন্তা এলে ড্রামার সেই যথার্থ জ্ঞানের সমাপ্তি ঘটে। যেহেতু ড্রামা অনুসারে যা হওয়ার আছে তা তো হবেই, পূর্ব কল্পেও যে এমনটাই হয়েছিল। বর্তমানের এই শরীর তো একেবারে জরাজীর্ণ পুরাতন অবস্থা, তাই এতে তালি-তাপ্পি তো লাগবেই। অতএব এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত নয়।

গীত:-

মোরা তার দিশাতেই চলবো - যদিও বা হোচট খাই, তবুও সামলাতে তো পারবো...

ওঁম্ শান্তি!

ওঁনার নির্দেশিত পথেই চলতে হবে- কোন্ পথে? সে পথ কার নির্দেশিত? বাচ্চারা, তোমরা তো তা জানোই, কার নির্দেশিত পথে চলছো তোমরা। তা অবশ্য আদেশ বলতে পারো, দিশা বলতে পারো অথবা শ্রীমৎ-ও বলতে পারো - ব্যাপারটা একই। এখন কিন্তু কেবল শ্রীমৎ অনুসারেই চলতে হবে। কিন্তু সেই শ্রীমৎ কার? যা জেনেছি -শ্রীমৎ হচ্ছে ভগবত গীতার। তবে তো অবশ্যই শ্রীমতের দিকেই যাবে আমাদের বুদ্ধির যোগ। বাচ্চারা, এখন তোমরা কার স্মরণে বসে আছো? যদি তা শ্রীকৃষ্ণ বলো, তবে তো তাকেই স্মরণ করতে হয়। তোমরা কি শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করো নাকি অন্যকে? নাকি তোমরা স্মরণ করো তাকে, যিনি তোমাদের অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা দিয়ে থাকেন-তাকে? একথাও জেনেছো, তোমরাই আগামীর প্রিন্স। এমনটা মোটেই নয় যে, জন্মালেই লক্ষ্মী-নারায়ণ হবে। চিরকালই তোমরা একমাত্র শিববাবাকেই স্মরণ করে আসছো, যেহেতু শ্রীমৎ একমাত্র ওনারই। আর যারা বলে শ্রীমৎ কৃষ্ণ ভগবান উবাচ, তারা তো কৃষ্ণকেই স্মরণ করবে। কৃষ্ণকে স্মরণ করতে হলে, কোন দুনিয়ায় বসে তাকে স্মরণ করবে? একমাত্র বৈকুন্ঠেই তাকে স্মরণ করা যায়। 'মনমনাভব' এই কথা তো আর কৃষ্ণ বলতে পারে না। তবে 'মধ্যাজী ভব' (বিষ্ণুরূপে) বলতে পারে। আমাকে স্মরণ করো - একথাও বলতে পারে না, যেহেতু সে বৈকুণ্ঠবাসী। দুনিয়ার লোকেরা এসবের কিছুই জানে না। তাই বাবা বলছেন-বাচ্চারা, যাবতীয় শাস্ত্রাদি ভক্তি-মার্গের। গীতাও ধর্ম-শাস্ত্রের অন্তর্গত। চিরকালই এই গীতা শাস্ত্র ভারতের ধর্ম-শাস্ত্র। বাস্তবে এই গীতাই সর্ব শাস্ত্রের মূল শাস্ত্র। কথিতও আছে, এই শ্রীমৎ সর্ব-শাস্ত্রের মাতা স্বরূপ, শিরোমনি গীতা, অর্থাৎ সর্বোত্তম। আবার সবার থেকে উত্তম শিববাবা শ্রী শ্রী, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠতম। কৃষ্ণকে তো আর শ্রী শ্রী বলা যায় না। শ্রী শ্রী কৃষ্ণ বা শ্রী শ্রী রাম - বলা যায় না। তাদেরকে কেবল শ্রী বলা চলে। শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠতম যিনি, তিনি স্বয়ং এসে তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠ করে গড়ে তোলেন। অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠতম তিনি- যিনি ভগবান। শ্রী শ্রী অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠতম। একমাত্র তিনিই অন্যকে শ্রেষ্ট করে গড়ে তুলতে পারেন। তাই তো দেবী-দেবতাদের শ্রেষ্ঠ বলা হয়, যদিও বর্তমানে তাদের অস্তিত্বই নেই। তবে কাদের আজকাল শ্রেষ্ঠ ভাবা হয়? এখনকার নেতাদের কত সন্মান করা হয়৷ কিন্তু তাদের তো আর শ্রী বলা যাবে না। এমন কি মহাত্মা গান্ধীজিকেও শ্রী অক্ষরে ভূষিত করা যায় না। তোমরা বি কে রা এখন উচ্চ থেকেও উচ্চতর পরমাত্মার কাছ থেকে সেই জ্ঞান পাচ্ছো। যিনি সর্বোচ্চ পরমপিতা পরমাত্মা। এছাড়া সবকিছুই ওনারই রচনা। ওনার সেই রচনার মধ্যে আবার সর্বোচ্চে আছে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকর। এখানেও অবশ্য ক্রমিক অনুসারেই আছে। যেমন - সর্বোচ্চে প্রেসিডেন্ট, তারপরে প্রাইম-মিনিস্টার, এরপরে ইউনিয়ন মিনিস্টারেরা...!



বাবা স্বয়ং বাচ্চাদের সামনে বসে সৃষ্টি-চক্রের আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলিকে বোঝাচ্ছেন। এসবেরই রচয়িতা স্বয়ং ভগবান। কিন্তু রচয়িতা শব্দটি শুনলেই লোকেরা জানতে চায়, সৃষ্টি-চক্রের রচনা হয়েছিলো কিভাবে? তাই সাথে একথা বলাও আবশ্যক যে, ত্রিমূর্তি শিব এসবের রচয়িতা। যদিও বাস্তবে রচয়িতার পরিবর্তে রচনা করান বলাটাই যুক্তিসঙ্গত হবে। যেমন ব্রহ্মার দ্বারা দৈবী কুলের স্থাপনা করান। কিন্তু ব্রহ্মার দ্বারা কিসের স্থাপনা করান? -- দৈবী সম্প্রদায়ের। তাই শিববাবা বলছেন- তোমরা বি.কে.-রা এখন ব্রহ্মার (সন্তান) ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়। বাকীরা সবাই আসুরী সম্প্রদায়ের। এখন তোমরা ঈশ্বরীয় সম্প্রদায়ের, আগামীতে হতে চলেছো দৈবী সম্প্রদায়ের। এই ব্রহ্মা বাবার দ্বারাই সকল বেদ শাস্ত্রের সার বোঝানো হয় তোমাদের। অজ্ঞানী মনুষ্যরা খুবই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে আছে, তারা কতই না মাথা ঠোকে জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য। বাবা জানাচ্ছেন, উনি এসে ভারতে সেই সেবা শুরুও করিয়ে দিয়েছেন। যদিও বর্তমানের মানুষেরা খুবই তমোপ্রধান। তাই তো ১০/১২-টা করে সন্তানের জন্ম দেয় তারা। অবশ্য কল্প-বৃক্ষের ঝাড়েরও বৃদ্ধি তো হতে হবে। বৃক্ষের পাতা তো গজাতেই থাকবে। তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কারও পক্ষে সম্ভবপর নয়। একমাত্র সত্যযুগে তা নিয়ন্ত্রনে থাকে। একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান, ব্যস্! যা কেবল তোমরা বি.কে.-রাই বুঝতে পারো। ভবিষ্যতে এমন অনেক কিছুই আসতে থাকবে, যা ধীরে ধীরে বুঝতে থাকবে। তাই তো প্রবাদও আছে, অতীন্দ্রিয় সুখের কথা যদি জানতে চাও, গোপ-গোপীনিদের থেকে তা শোনো। কিন্তু সরাসরি বাবার থেকে শোনার মজাই আলাদা। তখন নিজের কাজকর্মেও যাবারও তেমন আগ্রহ থাকে না।



এখানে তোমাদেরকে ত্রিকালদর্শী করে গড়ে তোলা হয়। ত্রিকালদর্শীকেই স্বদর্শণচক্রধারী বলা হয়। যেমন লোকেরা বলে থাকে, অমুক মহাত্মা ত্রিকালদর্শী ছিলেন। কিন্তু তোমরা বলো, বৈকুন্ঠনাথ রাধা-কৃষ্ণও স্বদর্শণচক্রধারী ছিলেন না এবং বা তিন কালের ত্রিকালদর্শীর জ্ঞানও ছিল না। কৃষ্ণ তো ছিলেন সবার আদরের সত্যযুগের প্রথম প্রিন্স। কিন্তু অজ্ঞানী মানুষেরা তা না জানার কারণে বলে, যেহেতু তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান হিসাবে মানো না, অতএব তুমি নাস্তিক। এছাড়া কত প্রকার বিঘ্নের সৃষ্টিও করে। তাই এই অবিনাশী জ্ঞান-যজ্ঞে এত বিঘ্ন পড়ে। *কন্যাদের-মাতাদের উপরেও কত প্রকারের বিঘ্ন আসে। বান্ধেলি (যারা বন্ধনে রয়েছে ) -দেরও কত কিছু সহ্য করতে হয়। অতএব বুঝতে হবে, ড্রামা অনুসারে এমনই পার্ট তাদের। বিঘ্ন পড়লেও এমন ভাবনা যেন না আসে, তেমনটা না করলে বোধহয় এমনটা হতো না। এমন না করলে হয়ত, জ্বর আসতো না...., এখন আর এসব বলার উপায় নেই। যা কিছুই করছো তা ড্রামা অনুসারেই। যা কল্প-পূর্বেও করেছিলে। তখনও এমনই অসুবিধা হয়েছিলো। শরীর যখন এত পুরানো, তালি-তাপ্পি তো লাগবেই তাতে। অন্তিম সময় পর্যন্ত এর মেরামতি হতে থাকবে। এই পুরোনো শরীরই যে তোমার আত্মার বর্তমান ঘর। আত্মা নিজেও তা বলে, আমিও অনেক পুরোনো হয়েছি। তাই আত্মাতে আর কোনও শক্তিই নেই। আর শক্তির অভাবে দুর্বল ব্যক্তি কেবলই দুঃখ-কষ্টে ভোগে। এই দুর্বলদেরই মায়া বেশী করে দুঃখ-কষ্টে ভোগায়। চিরকালই এই ভারতবাসীদেরই মায়া খুব কমজোর করে দেয়। একদা যেখানে এই ভারতবাসীরাই এত শক্তিধর ছিল, কিন্তু মায়ার কারণে তারাই আজ এত দুর্বল। সেই দুর্বলতাগুলি থেকে মুক্তি ও জয় পেতে চাইলে, মায়াকেই শত্রু ভাবতে হবে। এই ভারতবাসীরাই সর্বাধিক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে। সবার কাছে ঋণগ্রস্তও হয়। যেহেতু এখন পুরানো জরাজীর্ণ অবস্থা। যে একদা সর্ব-খাজানায় সর্বাধিক ধন-সম্পদের অধিকারী ছিল, তারই আজ এমন ভিখারীর মতন দৈন্যদশা। অবশ্য আবার 'বেগার থেকে প্রিন্স' হতে চলেছে। তাই তো বাবা বাচ্চাদের বলছেন, এই শরীরের ভাব থেকে মনকে দূরে রেখে হাল্কা হয়ে যাও। এখানে তোমার নিজস্ব কিছুই নেই, একমাত্র এই অতি আপন একনও একমাত্র শিববাবা ছাড়া আর কেউই তোমার নয়। অতএব তোমাকে এখন সম্পূর্ণরূপে 'বেগার' হতে হবে। এসবের নানা যুক্তিও জানাতে থাকেন বাবা। যেমন জনক রাজার উদাহরণ। অর্থাৎ কর্ম-কর্তব্য করার সাথে সাথে ঘর-গৃহস্থ পরিবারের মধ্যে থেকেও পদ্মফুলের মতন পবিত্র থাকতে থাকতে হবে। যার জন্য দরকার শ্রীমৎ অনুসারে চলা। সবকিছুই সমর্পন করে দিতে হবে। জনক রাজাও ওনার সবকিছুই সমর্পন করেছিলেন, কিন্তু ওনাকে বলা হয়েছিল- "তোমার এইসব রাজ্যপাট তুমিই সামলাও কিন্তু ট্রাস্টি হয়ে। এমনই দৃষ্টান্ত রয়েছে রাজা হরিশ্চন্দ্রের।*



এবার বাবা বোঝাচ্ছেন - বাচ্চারা, বীজ বপন না করলে পদ যে অনেক কমে যাবে তোমাদের। অতএব ফলো ফাদার, অর্থাই যে দাদা (ব্রহ্মাবাবা) বসে আছে তোমাদের সামনে, উনিও শিববাবা আর শিবশক্তিদেরকেই ওনার ট্রাষ্টী বানিয়েছেন। শিববাবা নিজে তো আর এসবের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন না বা সামলাবেন না। কেউ কি আর নিজের প্রতি নিজে সমর্পিত হতে পারে ? তাই তিনি মাতাদেরই কাছেই সমর্পিত হন। উনি তাই মাতাদেরই এগিয়ে রাখেন। বাবাও এসে জ্ঞানের অমৃত কলস মাতাদেরকেই দেন, যাতে তারা মনুষ্যদের দেবতায় রূপান্তরিত করতে পারে। অথচ তা লক্ষ্মীকে দেওয়া হয় না কিন্তু। যেহেতু এই সময়কালটা জগৎ অম্বার। সত্যযুগ এলে তখন তা হবে লক্ষ্মীর। জগৎ অম্বার জন্য কত সুন্দর-সুন্দর গীতও রচিত হয়। লোকেরাও কত মান্য করে ওনাকে। কিভাবে তিনি এত সৌভাগ্যশালী হন? এত ধন-সম্পদ উনি পান কোত্থেকে? তা কি ব্রহ্মার থেকে? নাকি কৃষ্ণের থেকে? -না মোটেই তা নয়। ধন-রত্ন তো পায় জ্ঞান সাগরের থেকে। যদিও এসব খুবই গুপ্ত ব্যাপার। 'ভগবান উবাচ' তো সবার জন্যই। ভগবান তো সবারই। তাই তো সব ধর্মের লোকেদেরই বলা হয়, আমাকে স্মরণ করতে। যদিও এর মধ্যে শিবের পূজারিও অনেক থাকে, কিন্তু বাস্তবে তারা মর্মার্থ জানেই না কিছু। একেই বলে ভক্তি। আচ্ছা, তোমাদের এই জ্ঞানের পাঠ পড়ান কে? অবশ্যই মোস্ট বিলাভেড ফাদার (প্রিয় থেকেও প্রিয়তম যে বাবা) কৃষ্ণের বেলায় কিন্তু এমনটা বলা চলে না। ওনাকে তো সত্যযুগের প্রিন্স বলা হয়। *লোকে যদিও কৃষ্ণকে পূজা-অর্চনা করে, কিন্তু তারা এটাই জানে না যে, কৃষ্ণ সত্যযুগের প্রিন্স হলো কিভাবে? যদিও পূর্বে তোমরাও তা জানতে না। বাচ্চারা, তোমরা এখন জানতে পেরেছো যে, প্রতি কল্পে তোমরা বি.কে.-রাই প্রিন্স-প্রিন্সেস হও। তারপর বড় হলেই তো লক্ষ্মী-নারায়ণের যোগ্য-বরেণ্য হতে পারবে। বর্তমানের এই জ্ঞান তো ভবিষ্যতের জন্যই। যে ফল পাওয়া যায় আগামী ২১-জন্ম ধরে। এমনটা কখনোই বলা যাবে না সেই অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা কৃষ্ণই দিয়ে থাকে। তোমরা তা পাও একমাত্র এই বাবার কাছ থেকেই। শিববাবাই তোমাদের সেই রাজযোগের শিক্ষা দেন। কত হাজার-হাজার ব্রাহ্মণের জন্ম দেন এই ব্রহ্মার মুখ দিয়ে সন্তান হিসাবে গ্রহন করে। কেবলমাত্র তাদেরকেই এই শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়। একমাত্র তোমরা বি.কে.-রাই হলে প্রকৃত ব্রাহ্মণ, কল্পের এই সঙ্গমযুগের আর সৃষ্টির বাকী যা কিছু তা সবই কলিযুগের। লোকেরা নিজেরাও তাই বলে, তারা কলিযুগেই রয়েছে। তোমরা বি.কে.-রা কিন্তু বলে থাকো, সঙ্গমযুগে অবস্থান করছো তোমরা। যা এমনটা অন্য কোথাও বলে না। এই ধরণের নতুন নতুন তথ্যগুলিকে মনে ধারণ করে রাখতে হবে। মুখ্য কথা হলো-বাবা আর ওনার অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সাকে স্মরণে রাখা। পবিত্র হতে না পারলে যোগযুক্ত হতে পারবে না আদৌ। নিয়মও তা নয়, অতএব তেমন ভাল পদের প্রাপ্তিও হয় না। অবশ্য অল্পও যদি যোগযুক্ত হতে পারো স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছবে নিশ্চিত। তাই তো বাবা জানাচ্ছেন, পবিত্র হতে না পরালে ওনার কাছে পৌঁছবে কি প্রকারে! এমন কি তোমরা ঘরে থেকেও তেমন হতে পারলেও স্বর্গ-রাজ্যেও পৌঁছাতে পারবে এবং ভাল পদও পেতে পারো - কিন্তু তখনই যখন তেমন যোগযুক্ত ও পবিত্র হতে পারবে। পবিত্রতা ছাড়া যোগযুক্ত হওয়া যায় না।* মায়া যোগযুক্ত হতে দেয় না। অবশ্য *"সচ্চে দিল পর সাহেব রাজী" হবে। (*শুদ্ধ ও স্বচ্ছ মন থাকলে, ভগবান তার সহায় হয়) আর যারা বিকারে যায়, যদিও তারা বলে যে শিববাবাকে স্মরণ করে -তা কিন্তু কেবল নিজেকে খুশী করার জন্যই বলে। যেহেতু এর প্রথম এবং প্রধান শর্তই হলো পবিত্রতা।



লোকেরা যে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এতকিছু করছে, বলছে সন্তানের জন্ম দেওয়া বন্ধ করো, কিন্তু বর্তমানের এই দুনিয়াটাই যে তমোপ্রধান দুনিয়া। বাবাই এখন সেই বার্থ-কন্ট্রোল করাচ্ছেন। তাই তো তোমরা বি.কে.-রা সবাই কুমার-কুমারী, অর্থাৎ যেখানে বিকারের প্রশ্নই নেই। বিষ বিকারের কারণে কন্যাদের কতো অত্যাচার সহ্য করতে হয় এখানে। তাই এসব থেকে সাবধান হয়ে থাকতে বলেন বাবা। বাবা জানতে চান -এখানে এমন তো কেউ নেই যে মদ্যপান করে? কেউ যদি মিথ্যা বলে তবে কিন্তু ধর্মরাজের কঠিন সাজার সন্মুখীন হতে হবে তার। সত্য ভগবানের সামনে কেবল সত্যই বলা উচিত। যে কোনও কারণেই অথবা ঔষধ সেবনের কারণে কেউ কি অল্প-স্বল্প মদ্যপান করো ? (ক্লাসে কেউ হাত ওঠায় না) এখানে অবশ্যই সত্য বলা উচিত। কোনও প্রকারের ভুল হয়ে গেলেও তা লিখে দেওয়া উচিত-বাবা, আমার দ্বারা এই ভুল হয়ে গেছে, তাই মায়ার চপেটাঘাত খেতে হয়েছে আমাকে। বাবাকে অনেকেই লেখে -আজ আমার মধ্যে ক্রোধের ভুত ভর করেছিল, তাই অমুককে চড় মেরে দিয়েছি। অথচ শ্রীমতে তো আছে কারওকে চড় মারা চলবে না। এই কারণেই দেখানো হয়, কৃষ্ণকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় গাছের গোঁড়ায়। যদিও তা বাস্তব নয়। বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে হয় ভালবেসে স্নেহের সাথে, তাদের মারধোর করা উচিত নয় মোটেই। বরঞ্চ একবেলা তাদের খাবার না দেওয়া, মিষ্টি না দেওয়া - এভাবেই তাদের সংশোধন করাতে হয়। চড় মারা তো ক্রোধের লক্ষন, তাও আবার বাচ্চাদের মতন মহাত্মাদের উপর ক্রোধ করা। ছোট বাচ্চারা তো মহাত্মাদের মতনই হয়ে থাকে, তাই চড়-থাপ্পড় মারাটা উচিত নয় মোটেই। এমন কি গালিগালাজও করতে পারো না। এমন কাজ করা মোটেই উচিত নয় যাতে মনে হয় কোনও বিকর্ম হচ্ছে। তবুও যদি এমন কিছু করে ফেল, তখনই তা লিখে বাবাকে জানাও - বাবা আমার দ্বারা এই এই ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবো না। সাথে সাথে নিজেও যেন অনুতপ্ত হও। সেখানে ধর্মরাজ যখন সাজা দেয় তখনও তো অনুতাপ হয় - ভাবো ভবিষ্যতে আর করবো না। বাবা স্নেহভরেই বলেন-আমার আদরের বাচ্চারা, সুবোধ বাচ্চারা কখনও মিথ্যা বলে না।



প্রতি পদক্ষেপেই বাবার থেকে পরামর্শ নিয়ে চলা উচিত। ভারতকে স্বর্গ-রাজ্য বানাতে গেলে, তোমাদেরও তাতে পয়সা লাগানো উচিত। তোমাদের এক এক পয়সার মূল্য এক এক টুকরো হীরের সমান। এর অর্থ এই নয় যে, কোনও সাধু-সন্ন্যাসীদের তা দান করে পুণ্য করছো। লোকেরা হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি যে বানায়, তাতে কি পায় তারা? -যদি কেউ কলেজ বানিয়ে দেয়, তবে পরবর্তী জন্মে সে খুব বিদ্বান হতে পারে। ধর্মশালা বানিয়ে দিলে বদলে সে মহল পায়। কিন্তু এখানে তো জন্মজন্মান্তরের জন্য বাবার থেকে অসীম বেহদের অপার সুখ পাও তোমরা। পরমায়ুও লাভ করো তোমরা। এত লম্বা আয়ু আর অন্য কোনও ধর্মাবলম্বীরা পায় না। আর *এখন তো সবারই আয়ুষ্কাল খুবই অল্প। অতএব এখন থেকে চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে এই অসীম বেহদের বাবাকে লাগাতার স্মরণ করতে থাকলে তবেই খুব খুশীতে থাকতে পারবে।* কারও তেমন কোনও অসুবিধা থাকলে বাবাকে জানাও। কিন্তু এমন যেন না হয় গরীবতার কারণে বাবা বাবা বলবে আবার এমনও বলবে বাবা আমি তো তোমারই, তাই এখন থেকে আমি তোমার এখানেই থাকবো। তা হলে তো দুনিয়ায় কতই গরীব আছে, তখন তো সবাই বলবে- আমাকেও মধুবনে রাখো, এভাবে তখন তো লাখ-লাখ সংখ্যায় একত্রিত হয়ে যাবে। এ নিয়ম তো আর হতে পারে না। তোমাদেরকে গৃহস্থ ব্যবহারেই থাকতে হবে। সবাইকে তো আর এখানে রাখা যায় না।



কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বানিজ্য যে যাই করো না কেন, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে রোজগারের থেকে সামান্য পয়সা রোজ আলাদা করে রেখে দেবে। আর যে নিতান্তই গরীব, তার উদ্দেশ্যে বাবা বলেন-আচ্ছা তুমি যেখানে এত গরীব, সেক্ষেত্রে তোমাকে কিছু আলাদা করে রাখতে হবে না, জ্ঞানের পাঠকে ভালভাবে বোঝো আর নিজে 'মনমনাভব' হয়ে থাকো। তোমাদের মাম্মা-ও তো কিছু দিতে পারেনি, কিন্তু জ্ঞানের পাঠে খুবই তীক্ষ্ণ তিনি। সেবাও করেন সম্পূর্নরূপে তন-মন দিয়ে। পয়সা-কড়ি এক্ষেত্রে বড় কথা নয়। যখন পারবে তখন ১-টাকা অর্থাৎ ১৬-আানা করেই দেবে। তাতেই তোমার এমন প্রাপ্তি হবে, যেমনটা প্রাপ্তি হবে ধনী ব্যক্তিদের। সর্বাগ্রে নিজের গৃহস্থ-পরিবারের দিকটা সামলাতে হবে যে। দেখতে হবে বাচ্চারা য়েন দুঃখ-কষ্টে না থাকে। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। 'বন্দে মাতরম্' (মাতাদের জানাই বন্দনা), 'সালাম মালেকম্' (প্রভুকে জানাই প্রণাম), জয় জয় জয় হোক্ তোমার ....! ওঁম্ শান্তি!

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. এমন কোনও কর্ম করবে না যাতে পরে তার জন্য অনুতাপ বা অনুশোচনা করতে হয়। মিথ্যা বলবে না। সত্য বাবার সাথে সততার সাথে থাকতে হবে।

২. ভারতকে স্বর্গ-রাজ্য করে গড়ে তোলার জন্য এক-একটি (প্রতিটি) পয়সাকে সফল করতে হবে। ব্রহ্মাবাবার মতন সবকিছু সমর্পণ করে নিজে ট্রাস্টি হয়ে থাকতে হবে।

বরদান:-

নিমিত্ত আত্মাদের নির্দেশের গুরুত্বকে উপলব্ধি করে, পাপ-মুক্ত হয়ে সচেতন আত্মা হও

যে সচেতন বাচ্চা হয়, সে কখনও এমনটা ভাববে না যে, নিমিত্ত আত্মারা যা নির্দেশ দিচ্ছেন, তা বোধহয় কেউ কিছু বলার কারণে ওনারা এমনটা করছেন। নিমিত্ত আত্মাদের প্রতি কখনোই এমন ব্যর্থ সংকল্প আসা উচিত নয়। যদিও বা কেউ তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, যা তোমার কাছে সঠিক মনে হচ্ছে না, তবুও তুমি নিজে তার দ্বায়িত্ব নেবে না, তবেই তুমি নিজে কোনও পাপের ভাগীদার হবে না। যেহেতু বাবা স্বয়ং তাকে নিমিত্ত করেছেন। তার পাপকে তিনি বদলে নেবেন। এসব হল গুপ্ত রহস্য, গুপ্ত মেশিনারীও (কারিগরি) বটে।

স্লোগান:-

প্রকৃত সৎ ব্যক্তি সে, যে প্রভুকে পছন্দ করবে এবং বিশ্বকেও পছন্দ করবে, কিন্তু আরামকে নয় ।