০৮-১০-১৮ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -- সর্বদা খুশীতে তখনই থাকতে পারবে যখন সম্পূর্ণ নিশ্চয় হবে যে আমরা ভগবানুবাচ-ই শুনছি, স্বয়ং ভগবান আমাদের পড়াচ্ছেন"
প্রশ্ন:-
ড্রামা অনুযায়ী এই সময়ে সবাই কি প্ল্যান করে আর কিসের জন্যে প্রস্তুতি নেয় ?
উত্তর:-
এই সময় সবাই প্ল্যান করে এত বছরে এতখানি আনাজ বা ফসল উৎপাদন করব। নতুন দিল্লী, নতুন ভারত হবে। কিন্তু প্রস্তুতি নেয় মৃত্যুর জন্যে। সম্পূর্ণ দুনিয়ার গলায় মৃত্যুর হার পরানো আছে। কথায় আছে না - মানুষ চায় একরকম, হয় আরেক রকম .... বাবার এক রকম প্ল্যান, মানুষের প্ল্যান অন্য রকম ।
গীত:-
কেউ যেন আমায় আপন করে হাসতে দিল শিখিয়ে
ওম্ শান্তি।
নিরাকার ভগবানুবাচ ব্রহ্মা তন দ্বারা। এই প্রথম কথাটি পাকা করে নিতে হবে যে এখানে কোনো মানুষ পড়ায় না, নিরাকার ভগবান পড়ান। ওঁনাকে সর্বদা পরমপিতা পরমাত্মা শিব বলা হয়। বেনারসে শিবের মন্দিরও আছে তাইনা ! সর্ব প্ৰথমে আত্মার এই নিশ্চয় হওয়া উচিত যে বেহদের বাবা আমাদের পড়ান। যতক্ষণ এই নিশ্চয় নেই ততক্ষণ মানুষ কোনো কাজের নয়। কড়ি তুল্য। বাবাকে জানলে হীরে তুল্য হয়। কড়ি তুল্য ও হীরে তুল্য ভারতের মানুষ হয়। বাবা এসে মানুষ থেকে দেবতায় পরিণত করেন। প্ৰথমে যতক্ষণ এই নিশ্চয় নেই যে ভগবান পড়াচ্ছেন, ততক্ষণ তারা এই কলেজে বসেও কিছুই বোঝেনা। তাদের খুশীর পারদ ঊর্ধ্বে ওঠেনা। তিনি হলেন আমাদের মোস্ট বিলাভেদ পিতা, যাঁকে ভক্তিমার্গে ডাকা হয়েছিল যে - পরমাত্মা, দয়া করুন। এই কথা আত্মা বলে, *মানুষ তো বোঝেনা যে লৌকিক পিতা থাকা সত্বেও আমরা কোন্ পিতাকে স্মরণ করি* ? আত্মা মুখে বলে ইনি আমাদের লৌকিক পিতা, ইনি আমাদের পারলৌকিক পিতা। তোমরা এখন দেহী-অভিমানী হয়েছ, বাদবাকি সকল মানুষই হল দেহ-অভিমানী। তারা আত্মা, পরমাত্মার বিষয়ে কিছু জানে না। আমরা আত্মারা ঐ পরমপিতা পরমাত্মার সন্তান - এই জ্ঞান কারো নেই। বাবা প্ৰথমে নিশ্চয় করান ভগবানুবাচ, "আমি তোমাদের রাজ যোগ শেখাই। তোমরা দেহ সহ দেহের যা সম্বন্ধ আছে, সেসব ভুলে নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে আমি পিতা আমাকে স্মরণ করো" । কোনো মানুষ বা কৃষ্ণ ইত্যাদি এমন বলতে পারেনা। এ হলই মিথ্যা মায়া, মিথ্যা কায়া, মিথ্যা হল সব সংসার। একথাও সত্য নয়। সত্যখন্ডে আবার একটিও মিথ্যা হয়না। এই লক্ষ্মী-নারায়ণ সত্যখণ্ডের মালিক ছিলেন, পূজ্য ছিলেন। এখন ভারতবাসী ধর্ম ভ্রষ্ট, কর্ম ভ্রষ্ট হয়েছে তাই নাম-ই হল ভ্রষ্টাচারী ভারত। শ্রেষ্ঠাচারী ভারত হয় সত্যযুগে। সেখানে সবাই সর্বদা হাসি মুখে থাকে, কোনো অসুখ কোনো রুগী থাকেনা । এখানে যদিও বলে অমুক স্বর্গে গেছে। কিন্তু কেউ জানেনা। এই সময়ের রাজ্য হল মৃগ তৃষ্ণার মতন। একটি হরিণের কাহিনী আছে না - জল ভেবে ভিতরে গেল আর পাঁকে আটকে গেল। অর্থাৎ এই সময় হল পাঁকের রাজ্য। যত শৃঙ্গার করা হয় ততই পতন হয়। বলতে থাকে ভারতে আনাজ বেশি হবে, এই হবে সেই হবে .... । কিছুই হয়না। একেই বলা হয় - মানুষ চায় এক, হয় আরেক। বাবা বলেন এ কোনো রাজ্য নয়। রাজ্য তো তাকে বলা হবে যেখানে রাজা রানী থাকবে। এটা তো হল প্রজাদের প্রজার উপরে রাজত্ব । এই হল ইরিলিজিয়াস, আনরাইটিআস রাজ্য। ভারতে তো আদি সনাতন দেবী-দেবতাদের রাজ্য ছিল। এখন তো ধর্ম ভ্রষ্ট, কর্ম ভ্রষ্ট হয়েছে। এমন আর কোনো দেশ নেই যে নিজের ধর্মকে জানেনা। বলাও হয় রিলিজন ইজ মাইট অর্থাৎ ধর্ম হল শক্তি। দেবতাদের তো সম্পূর্ণ বিশ্বে রাজত্ত্ব ছিল, এখন তো একেবারেই কাঙাল হয়েছে। বাইরে দেশের কত সাহায্য নিতে হয়। তাদের হল বাহুবলের সাহায্য , তোমাদের হল যোগবলের সাহায্য। তোমরা বাচ্চারা জানো মোস্ট বিলাভেড হলেন বাবা যাঁর দ্বারা আমরা ২১ জন্মের জন্যে সদা সুখের বর্সা প্রাপ্ত করি। সেখানে কখনও দুঃখের , কান্নার কথাই নেই। কখনও অকালে মৃত্যু হয়না। আজকালকার মতন একসাথে ৪-৫ টি সন্তান জন্মও হয়না, একদিকে দেখো খাদ্যের অভাব, বলে বার্থ কন্ট্রোল করো। মানুষ চায় কিছু .... । বোঝে নিউ দিল্লী, নতুন রাজ্য। কিন্তু কিছুই নেই। মৃত্যু স্বরূপ হার রয়েছে সবার গলায় । মৃত্যুর পুরো ব্যবস্থা করছে। যথাযথভাবে ৫ হাজার বছর পূর্বের মতন এই হল সেই মহাভারত লড়াই। বাবা বলেন এইটি তো কোনো রাজ্য নয়, এই হল মৃগতৃষ্ণার মতন। দ্রৌপদীর দৃষ্টান্তও দেওয়া হয়। তোমরা সবাই হলে দ্রৌপদী। তোমাদের জন্যে বাবার আদেশ হল এই বিকার গুলিকে পরাজিত করো। আমরা প্রতিজ্ঞা করি - আমরা সদা পবিত্র থেকে ভারতকে পবিত্র করব। এই পুরুষ জন পবিত্র থাকতে দেয়না। অনেক গুপ্ত গোপীকারা আহবান করে বলে যে এরা আমাদের ওপর অত্যাচার করে।
তোমরা জানো এই কাম মহাশত্রু তো হল মানুষকে আদি, মধ্য, অন্ত দুঃখ প্রদানকারী। বাবা বলেন তোমাদের এই বিকারকে পরাজিত করতে হবে। গীতায়ও আছে ভগবানুবাচ , কাম হল মহাশত্রু। কিন্তু মানুষ বোঝেনা। বাবা বলেন পবিত্র হও তাহলে তোমরা রাজার রাজা হবে। এবারে বল, রাজার রাজা হবে নাকি পতিত হবে ? এই একটি শেষ জন্ম বাবা বলেন আমার জন্যে পবিত্র হও। অপবিত্র দুনিয়ার বিনাশ, পবিত্র দুনিয়ার স্থাপনা হয়ে যাবে। অর্ধকল্প তোমরা বিষ পান করে এত দুঃখ দেখেছ, তোমরা এক জন্ম এইসব ছাড়তে পারছো না ? এখন পুরানো দুনিয়ার বিনাশ এবং নতুন দুনিয়ার স্থাপনা হচ্ছে। এতে যারা পবিত্র হবে আর পবিত্রে পরিণত করবে তারা-ই উচ্চ পদ মর্যাদা প্রাপ্ত করবে। এই হল রাজ যোগ। তোমরা বলো আমরা হলাম ব্রহ্মাকুমার - কুমারী অর্থাৎ আমরা হলাম যথাযথভাবে প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তানও। ব্রহ্মা হলেন শিবের সন্তান, তোমাদের বর্সা প্রদান করেন শিব। এই হল ইনকরপরিয়াল গড ফাদারলি ইউনিভার্সিটি। তিনি হলেন হেভেন স্থাপনকারী, বর্সা প্রদানকারী শিব। তিনি-ই গড ফাদার ব্লিসফুল, নলেজফুল পিতা বসে পড়ান। কিন্তু যখন দেহ অভিমান থাকবেনা তখন বুদ্ধিতে বসবে। ভাগ্যে না থাকলে ধারণা হবেনা। যথাযথভাবে তোমরা হলে জগৎ পিতার সন্তান। ব্রহ্মাকুমার- কুমারীরা রাজ যোগ শিখছে। তোমাদেরই বিশাল স্মরণিকা স্থাপিত আছে। কত সুন্দর মন্দির আছে ! সেসবের অর্থ তোমরা বাচ্চারা ছাড়া আর কেউ জানেনা। পূজো করে, মাথা নোয়ায়, সব টাকা খরচ করে। এখন একেবারেই কড়ি তুল্য হয়েছে। খাদ্য বস্তু নেই। এখন বলে সন্তান জন্ম দর কমাও। এই বিষয়ে মানুষের শক্তি নেই যে বলতে পারে কাম হল মহাশত্রু। এতো যত বলা হবে জন্ম দর কম করো ততই বেশি সংখ্যায় জন্ম হবে। কারো শক্তি চলবেনা।
বাচ্চারা সর্বপ্রথম তোমাদের এ কথা বোঝাতে হবে যে এ হল গড ফাদারলি ইউনিভার্সিটি, ভগবান হলেন এক। এই একটিই চক্র যা ঘুরতে থাকে। এইসবই হল বোঝার বিষয় । মিত্র-আত্মীয় স্বজন ইত্যাদিদেরও এই রূহানী যাত্রার রহস্য বোঝাতে হবে। দৈহিক যাত্রা তো জন্ম জন্মান্তর করেছ, এই রূহানী যাত্রা একবার-ই হয়। সবাইকে ফিরে যেতে হবে। কোনো পতিত এখানে থাকবেনা। এখন বিনাশের সময়। এত যে কোটি কোটি মানুষ আছে , এরা সবাই সত্যযুগে থাকবেনা, সেখানে সংখ্যা খুবই অল্প হবে। সবাইকে ফিরে যেতে হবে। বাবা এসেছেন নিয়ে যেতে - যতক্ষণ ই কথা বুঝবেনা ততক্ষণ সুইট হোম এবং সুখধাম স্মরণে আসবেনা। স্মরণ করা তো খুবই সহজ। বাবা বলেন সুইট হোম চলো। আমি ছাড়া তোমাদের কেউ নিয়ে যেতে পারবেনা। আমি হলাম কালের কাল। কত ভালোভাবে বোঝানো হয়। কিন্তু আশ্চর্য যে এত বছর থাকার পরেও ধারণা হয়না। কেউ তো খুব তীব্র বুদ্ধি হয়ে যায়, কেউ কিছুই বোঝেনা। এর মানে এই নয় যে পুরনোদের এমন অবস্থা তো আমাদের কি হবে ? না, স্কুলে সবাই কি আর এক নম্বর হয়। এখানেও নম্বর অনুযায়ী আছে। সবাইকে বোঝাতে হবে - বেহদের বাবার কাছে বর্সা প্রাপ্তির এই হল সময়। ২১ জন্মের জন্যে সদা সুখের বর্সা পেতে হবে। কত ব্রহ্মাকুমার- কুমারীরা পুরুষার্থ করছে। নম্বর অনুযায়ী তো হয়।
তোমরা জানো পতিত-পাবন হলেন একমাত্র পিতা। বাকি সবাই হল পতিত। বাবা বলেন সবার সদগতি দাতা হলেন এক, তিনি স্বর্গের স্থাপনা করেন। তারপরে শুধু ভারত-ই থাকবে , বাকি সব বিনাশ হয়ে যাবে। মানুষের বুদ্ধিতে এইটুকু কথা থাকে না। বাবা বলেন - বাচ্চারা, আমার সহযোগী হও তো আমি তোমাদের স্বর্গের মালিক করব। মানুষের সাহস থাকলে ঈশ্বর সাহায্য করেন (হিম্মতে মর্দা, মদদে খুদা)। গায়ন তো করে ঈশ্বরীয় সেবাধারী (খুদাই খিদমতগার)। বাস্তবে তারা হল দৈহিক স্যালভেশন আর্মি। তোমরা হলে সত্য প্রকৃত রূহানী স্যালভেশন আর্মি । ভারতের নৌকা যে ডুবে রয়েছে তার উদ্ধারকর্তা হলে তোমরা ভারত মাতা শক্তি অবতার। তোমরা হলে গুপ্ত সেনা। শিববাবা হলেন গুপ্ত তাই ওঁনার সেনাও হল গুপ্ত। শিব শক্তি, পাণ্ডব সেনা। এই হল সত্য নারায়ণের প্রকৃত ব্রতকথা , বাকি সব গুলি হল মিথ্যা কথা কাহিনী তাই বলা হয় সী নো ইভিল, হিয়ার নো ইভিল, আমি যা বোঝাই তাই শোনো।
এ হল বেহদের বিরাট স্কুল। এই ইউনিভার্সিটির জন্যে এই বাড়ী তৈরি হয়েছে, পরে এখানে এসে বাচ্চারা থাকবে। যারা যোগযুক্ত হবে তারা এসে থাকবে। এই চোখ দিয়ে বিনাশ দেখবে। যে স্থাপনা ও বিনাশের সাক্ষাৎকার তোমরা এখন দিব্য দৃষ্টি দ্বারা করছ পরে তো তোমরা এই চোখ নিয়ে স্বর্গে বসে থাকবে। এর জন্যে বিশাল বুদ্ধির প্রয়োজন। যত বাবাকে স্মরণ করবে তত বুদ্ধির তালা খুলতে থাকবে। যদি বিকার গ্রস্ত হবে তাহলে তালা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুল ছেড়ে দিলে তো জ্ঞান বুদ্ধি থেকে একদম বেরিয়ে যাবে। পতিত হলে আর ধারণা হবেনা। পরিশ্রম আছে। এই হল কলেজ- বিশ্বের মালিক হওয়ার। এই ব্রহ্মাকুমার - কুমারীরা হল শিববাবার নাতি-নাতনি। এরা এখন ভারতকে স্বর্গে পরিণত করছে। এই হল রূহানী সোশ্যাল ওয়ার্কর্স যারা দুনিয়াকে পবিত্র করছে। মুখ্য হল পবিত্রতা। শ্রেষ্ঠাচারী দুনিয়া ছিল, এখন হয়েছে ভ্রষ্টাচারী। এই চক্র ঘুরতেই থাকে। এই দৈবী বৃক্ষের (ঝড়ের) কলম( স্যাপলিং) লাগছে যার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হবে। আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদেরকে মাতা পিতা বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ ও গুডমর্নিং। রূহানী বাবার রূহানী বাচ্চাদের নমস্কার।
ধারণার জন্যে মুখ্য সার :-
১. সত্যিকারের রূহানী স্যালভেশন আর্মি (উদ্ধার সেনা) হয়ে ভারতকে বিকার থেকে স্যালভেজ অর্থাৎ মুক্ত করতে হবে। বাবার সহযোগী হয়ে রূহানী সোশ্যাল সেবা করতে হবে।
২. এক বাবার কা থেকেই সত্য কথা শুনতে হবে। হিয়ার নো ইভিল, সী নো ইভিল .... এই চোখ দিয়ে আগামাদিনের সীন দেখার জন্যে যোগযুক্ত হতে হবে।
বরদান:-
সরল সংস্কারের দ্বারা ভালো, খারাপের আকর্ষণ থেকে ঊর্ধ্বে থাকতে পারা সদা হর্ষিতমূর্ত ভব
নিজের সংস্কার গুলিকে এমন ইজি (সরল) বানাও যাতে প্রতিটি কাজ সরলভাবে হতে থাকবে। যদি সংস্কার টাইট হয় তাহলে সারকামস্ট্যান্স বা পরিস্থিতিও টাইট হয়ে যায়, সম্বন্ধ সম্পর্কে যারা আসে তারাও টাইট ব্যবহার করে। টাইট অর্থাৎ টানাটানির মধ্যে থাকে যারা তাই সরল সংস্কারের দ্বারা ড্রামার প্রতিটি সীন দেখে ভালো খারাপের আকর্ষণ থেকে দূরে থাকো, না ভালো না-ই খারাপ কিছুই যেন আকৃষ্ট না করে - তবেই হর্ষিত থাকতে পারবে।
স্লোগান:-
যে সর্ব প্রাপ্তিতে সম্পন্ন হয় সে-ই হল ইচ্ছা মাত্রম অবিদ্যা ।