১১-১০-১৮ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


“মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা পার-লৌকিক (বেহদ) পিতাকে স্মরণ করো, এর মধ্যেই জ্ঞান-ভক্তি-বৈরাগ্য তিনটে বিষয়ই নিহিত রয়েছে, এ হল একেবারে নুতন পাঠ"

প্রশ্ন:-

সঙ্গমযুগে জ্ঞান এবং যোগের সাথে সাথে ভক্তিও করা হয় - কিভাবে?

উত্তর:-

বাস্তবে যোগকে ভক্তিও বলা যায়। কারণ তোমরা কেবল অব্যভিচারী (একজনকেই) স্মরণ করো। তোমাদের এই স্মরণ জ্ঞানযুক্ত হওয়ার জন্য একে যোগ বলা হয়। দ্বাপরযুগ থেকে কেবল ভক্তি করা হয়, কোনো জ্ঞান থাকে না, তাই ওই ভক্তিকে যোগ বলা যাবে না। ওখানে কোনো এইম অবজেক্ট থাকে না। এখন তোমরা জ্ঞান প্রাপ্ত করছ, তার সাথে যোগও করছ এবং এই অসীম সৃষ্টির ওপরে তোমাদের বৈরাগ্যও রয়েছে।

গীত:-

কিসী নে অপনা বনা কে…

ওম্ শান্তি।

বেহদের (সীমাহীন) বাবা বোঝাচ্ছেন - শাস্ত্র অধ্যয়ন করা আসলে কোনও পড়া নয়। কারণ ওখানে কোনো এইম অবজেক্ট নেই। শাস্ত্র থেকে দুনিয়ার বিষয়ে কিছু জানা যায় না। আমেরিকা কোথায় আছে, কে আবিষ্কার করেছিল - এইসব কথা শাস্ত্রতে লেখা নেই। বলা হয় অমুক ব্যক্তি আবিষ্কার করেছিল। থাকার জন্য অন্য জায়গা খুঁজতে গেছিল। জনসংখ্যা অনেক হয়ে যাওয়াতে থাকার জন্য অন্য জায়গার প্রয়োজন ছিল। ওইগুলো সবাই বইতে পড়েছে, ঐগুলোকে এডুকেশন বলা হয়। তোমাদের ক্ষেত্রে এডুকেশন হল এইগুলো। একে আশ্রম অথবা ইনস্টিটিউট অথবা ইউনিভার্সিটি বলতে পারো। এর মধ্যে সবকিছুই রয়েছে। দুনিয়ার পড়াশুনার মানচিত্রগুলো আলাদা। শাস্ত্র থেকে জ্ঞানের আলো পাওয়া যায় না। পড়াশুনা করলে জ্ঞানের আলো পাওয়া যায়। তোমরাও পড়াশুনা করছ। বৈকুণ্ঠ কাকে বলা হয়? এটা না আছে দুনিয়ার পড়াশুনাতে, আর না আছে কোনো শাস্ত্রে। এসব হল নুতন জ্ঞান যেগুলো কেবল বাবা-ই বলেন । মানুষ তো বলে দেয় যে স্বর্গ-নরক সব এখানেই। বাবা এসেই বোঝান যে স্বর্গ-নরক কাকে বলা হয়? এইসব বিষয় না আছে শাস্ত্রে, না আছে এডুকেশনে। তাই নুতন কথা হওয়াতে মানুষ সংশয় প্রকাশ করে। বলে- এইরকম কথা তো কখনো শুনিনি, এগুলো একেবারে নুতন এবং ওয়ান্ডারফুল বিষয় যেগুলো কেউ কখনো বলেনি। এইগুলো সত্যিই নুতন কথা। দুনিয়ার কোনো শিক্ষাবিদ বা সন্ন্যাসী এইসব বলতে পারবে না। তাই পরমপিতা পরমাত্মাকে বলা হয় জ্ঞানের সাগর। তিনি এই সীমাহীন (বেহদের) সৃষ্টির ইতিহাস-ভূগোল বোঝান এবং বিস্তারিতভাবে স্বর্গ-নরকের জ্ঞান দেন। এইগুলো সব হল নুতন কথা। এই পড়াশুনার মধ্যে সবকিছুই রয়েছে - জ্ঞানও আছে, যোগও আছে, পড়াশুনাও আছে আর ভক্তিও আছে। যোগকে ভক্তিও বলতে পারো, কারণ একজনের সাথে যোগ করাকে স্মরণ করা বলা হয়। ভক্তরাও স্মরণ করে, পূজা করে, গান করে। কিন্তু ওই ভক্তিকে যোগ করা বলা যাবে না। যেমন মীরা কৃষ্ণের সাথে যোগ লাগাত, তাঁকে স্মরণ করত। ওটা হল ভক্তি। তার বুদ্ধিতে কোনো এইম অবজেক্ট ছিল না। কিন্তু এটাকে তোমরা জ্ঞানও বলতে পারো, আবার ভক্তিও বলতে পারো। এখানে যোগ করা হয় অর্থাৎ কেবল একজনকেই স্মরণ করা হয়। সত্যযুগে তো জ্ঞান-ভক্তি কিছুই থাকবে না। সঙ্গমযুগে জ্ঞান এবং ভক্তি দুটোই আছে। দ্বাপরযুগ থেকে কেবল ভক্তি করা হয়েছে। কাউকে স্মরণ করাকে ভক্তি করা বলা হয়। এখানে জ্ঞান, যোগ এবং ভক্তি তিনটেই আছে। সবকিছু বুঝতে পারা যায়। ওরা কেবল ভক্ত, তত্ত্বের সাথে যোগ করে। কিন্তু ওরা অনেকের সাথে যোগ করে, তাই ওরা হল ভক্ত। তোমাদের যোগ হল অব্যভিচারী। এখানে স্বয়ং জ্ঞানের সাগর বসে থেকে শিক্ষা দেন। তাঁর সাথেই যোগ লাগাতে হয়। দুনিয়ার মানুষ তো আত্মাকেই জানে না। আমরা জানি। পরমপিতা পরমাত্মা বাবার সঙ্গে বুদ্ধির দ্বারা যুক্ত হলে আমরা বাবার কাছে চলে যাব। ওরা তো হনুমানকে স্মরণ করে এবং হয়তো সাক্ষাৎকারও হয়ে যায়। ওটা হল ব্যভিচারী। এটা হল অব্যভিচারী যোগ। কেবল বাবা-কেই স্মরণ করতে হবে। তাই এক্ষেত্রে জ্ঞান-ভক্তি-বৈরাগ্য একসাথেই আছে। কিন্তু ওদের ক্ষেত্রে এইগুলো সব আলাদা আলাদা। ভক্তি আলাদা বিষয়, জ্ঞান বলতে কেবল শাস্ত্রের জ্ঞান আর বৈরাগ্য কেবল সীমিত বিষয়ের ওপর। এখানে তো সবকিছুই সীমাহীন। আমরা সেই অসীমের পিতাকে জেনেছি এবং তাঁকেই স্মরণ করি। *ওরাও হয়তো শিবকে স্মরণ করে, কিন্তু তাতে বিকর্ম বিনাশ হবে না। কারণ ওরা তাঁর অক্যুপেশন জানে না। ওদের কাছে বিকর্ম বিনাশ করার জ্ঞানটাই নেই।* এখানে তো বাবাকে স্মরণ করলে বিকর্ম বিনাশ হয়। দুনিয়াতে কাশী-কলবটের প্রচলন আছে। সেক্ষেত্রেও ওদের বিকর্ম বিনাশ হয়। কারণ ওরা কষ্ট ভোগ করে। কিন্তু তাই বলে তোমাদের মতো এইরকম ধীরে ধীরে কর্মাতীত হয়ে যায় না। ওদের বিকর্মগুলো তো শাস্তির দ্বারা বিনষ্ট হয়, ক্ষমা করা হয় না। সুতরাং এটা হল পড়াশুনা, জ্ঞান এবং যোগ। এর মধ্যে সবকিছুই রয়েছে। কেবল বাবা-ই সবকিছু শেখান। এটাকে আশ্রম কিংবা ইনস্টিটিউট বলা হয়। খুব সুন্দর ভাবে লেখা আছে। আগে ‘ওম্ মন্ডলী’-নামটা ভুল ছিল। এখন বোধবুদ্ধি হয়েছে। এই নামটা খুব সুন্দর। যেকোনো ব্যক্তিকে বোঝানো যাবে যে তুমিও ব্রহ্মাকুমার। বাবা হলেন সকলের রচয়িতা। তিনি সবার আগে সুক্ষ্মবতন রচনা করেন। ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং শঙ্কর হল সুক্ষ্মবতনবাসী। নুতন সৃষ্টির রচনা করার জন্য প্রজাপিতা ব্রহ্মাকে অবশ্যই প্রয়োজন। সূক্ষ্মবতনবাসী ব্রহ্মা তো এখানে আসতে পারবে না। তিনি হলেন সম্পূর্ণ অব্যক্ত। কিন্তু এখানে তো সাকার ব্রহ্মাকে প্রয়োজন। তিনি কোথা থেকে আসবেন? মানুষ তো এই কথাগুলোই বুঝতে পারে না। ছবিতেও দেখানো হয়েছে যে ব্রহ্মার দ্বারা ব্রাহ্মণের জন্ম হয়েছে। কিন্তু ব্রহ্মা এলেন কোথা থেকে? দত্তক নেওয়া হয়। যেমন কোনো রাজা যদি নিঃসন্তান হয়, তাহলে সে কাউকে দত্তক নেয়। (শিব) বাবাও এনাকে দত্তক নেন এবং তাঁর নাম রাখেন - ‘প্রজাপিতা ব্রহ্মা’। ওপরে (সূক্ষ্মবতনে) যে ব্রহ্মা আছে, সে তো নীচে আসতে পারবে না। নীচে যিনি আছেন, তাঁকেই ওপরে যেতে হবে। উনি হলেন অব্যক্ত, আর ইনি হলেন ব্যক্ত। এই রহস্যটাকে খুব ভালো করে বুঝতে হবে। কারণ এটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে। বলে - দাদাকে কখনো ব্রহ্মা, কখনো ভগবান, কখনো কৃষ্ণ বলা হয়। কিন্তু এনাকে (ব্রহ্মা বাবা) তো ভগবান বলা যাবে না। তবে কৃষ্ণ কিংবা ব্রহ্মা বলা যাবে কারণ কৃষ্ণ তো শ্যামবর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং রাত্রিবেলা বলা হবে ব্রহ্মা এবং দিনের বেলা বলা হবে কৃষ্ণ। এখন এটা হল কৃষ্ণের আত্মার অন্তিম জন্ম এবং শ্রীকৃষ্ণ হল একেবারে আদি জন্ম। এই কথাগুলো স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। রাধা-কৃষ্ণ বা লক্ষ্মী-নারায়ণের ৮৪ জন্মের কথাও বলতে হবে। ওদেরকেই এখানে দত্তক নেওয়া হয়েছে। এইভাবে ব্রহ্মার দিন এবং ব্রহ্মার রাত হয়। এটাই হল লক্ষ্মী-নারায়ণের দিন এবং রাত। ওদের সমগ্র বংশের ক্ষেত্রেও এটাই হয়।



তোমরা এখন ব্রাহ্মণ বংশে আছ। এরপর দেবতা বংশে যাবে। তাই ব্রহ্মাকুমার-কুমারীদের ক্ষেত্রেও দিন এবং রাত্রি হয়, তাই না? এইগুলো সব হল বোঝার বিষয়। ছবিতেও স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে নিচে অন্তিম জন্মে তপস্যা করছে। তাহলে ব্রহ্মা এলেন কোথা থেকে? কিভাবে তাঁর জন্ম হল? ব্রহ্মাকে দত্তক নেওয়া হয়। যেভাবে রাজারা দত্তক নেন এবং তারপর তাকে রাজকুমার বলা হয়। তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় - অমুক জায়গার রাজকুমার। আগে তো সে রাজকুমার ছিল না। রাজা দত্তক নেওয়ার পরেই রাজকুমার নাম রাখা হয়েছে। এইরকম রীতি অনেক দিন ধরে প্রচলিত আছে। এইসব বিষয় বাচ্চাদের বুদ্ধিতে আসা উচিত। দুনিয়ার মানুষ জানে না যে বাবা কিভাবে পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ এবং নুতন দুনিয়া স্থাপন করেন। তোমাদের মতো বাচ্চাদের কাছেই এই জ্ঞানের আলোক রয়েছে। তোমাদের মধ্যেও আবার বিভিন্ন ক্রম রয়েছে। ভবিষ্যতে ছোটো ছোটো কন্যারাও অনেক ক্ষুরধার হয়ে যাবে। কারণ তারা হল কুমারী। শাস্ত্রেও লেখা আছে যে কুমারীদের দ্বারা তীর মারা হয়েছিল। কুমারীরাই সবথেকে বেশি চমৎকার করে দেখিয়েছে। মাম্মাও কুমারী। তিনি সকলের থেকে আগে এগিয়ে গেছেন। বলা হয় ‘ডটার শোজ মাদার’। মা তো কারোর সাথে বসে কথা বলবেন না। কারণ ইনি হলেন গুপ্ত মা। মাম্মাকে দেখতে পাওয়া যায়। তাই তোমাদের মতো শক্তিসেনা অর্থাৎ বাচ্চাদের কাজ হল মা-কে প্রত্যক্ষ করা। অনেক ভালো ভালো কন্যা আছে যাদের পুরুষার্থ খুব ভালো হচ্ছে। কৌরব সম্প্রদায়ের মধ্যেও যারা মহারথী, তাদের নাম করা হয়। এখানেও মহারথীদের নাম করা হয়। শিববাবা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর নিবাসস্থান সবথেকে ওপরে। বাস্তবে আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের নিবাসস্থানও ওপরে। মানুষ তো কিছু না জেনে কেবল মহিমা করে। আমরা আত্মারাও হলাম ওই লোকের নিবাসী। কিন্তু আমাদেরকে জনম-মরণের চক্রে এসে অভিনয় করতে হয়। উনি (পরমাত্মা) জনম-মরণের চক্রে আসেন না। উনিও অভিনয় করেন, কিন্তু কিভাবে করেন সেটা তোমরাই জানো। তোমরা বাচ্চারা এখন বুঝেছ যে এটা হল শিববাবার রথ। অশ্ব বা ঘোড়াও রয়েছে। তবে ঐরকম কোনো ঘোড়ার গাড়ি নেই। এইরকম ভুলগুলো ড্রামা অনুসারেই হয়েছে। অর্ধেক কল্প ধরে এইরকম ভ্রান্ত রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে আমরা একেবারে হারিয়ে যাই। এখন জ্ঞানের আলোক পেয়ে আমরা বিচক্ষণ হয়ে গেছি। আমরা জানি যে এই পুরাতন দুনিয়া বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমাদেরকে নির্মোহী হতে হবে। পদ্মফুলের মতো ঘর-গৃহস্থে থেকেও নির্মোহী হওয়ার পুরুষার্থ করতে হবে। সকলের সাথেই সম্পর্ক পালন করতে হবে এবং সবার সাথেই থাকতে হবে। যেভাবে আগের কল্পে হয়েছিল, সেইভাবে এই ভাট্টিটাও হওয়ার ছিল। এখন তো বলা হয় যে ঘর-গৃহস্থে থেকেই পরিশ্রম কর। এখানে তো বাড়ি-ঘর ত্যাগ করার কোনো প্রশ্নই আসেনা। আমিও তো ঘরেই রয়েছি, তাই না? এতজন সন্তান, তার মধ্যে লৌকিক সন্তানও ছিল। কিছুই ত্যাগ করিনি। সন্ন্যাসীরা তো জঙ্গলে চলে যায়। আমি তো শহরেই বসে আছি। সুতরাং ওদের প্রতিও কর্তব্য করতে হবে। লৌকিক বাবাও রচনা করে এবং উপার্জন করে সন্তানদের উত্তরাধিকার দেয়। সবার আগে কাম বিকারের উত্তরাধিকার দেয়। তারপর এইসব থেকে মুক্ত করে নির্বিকারী বানানো কেবল পারলৌকিক বাবার কর্তব্য। কোথাও সন্তান তার মা-বাবাকে জ্ঞান দেয়, আবার কোথাও বাবা তার সন্তানদের জ্ঞান দেয়। এটা হল রাজযোগ, ওটা হল হঠযোগ। পরমাত্মার কাছ থেকেই আত্মা জ্ঞানলাভ করে। আমি (ব্রহ্মা) রাজাদের রাজা ছিলাম। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। গায়ন আছে - আজ যে রাজা, কাল সে ফকির। বাচ্চারা জানে, আমরা যারা সূর্যবংশী ছিলাম, তারা এখন শূদ্রবংশী হয়ে গেছি। এটাও বুঝতে হবে যে - নরক এবং স্বর্গ আলাদা। মানুষ এটা জানে না। তোমাদের মধ্যেও অনেক বাচ্চা কিছুই জানে না। তাদের ভাগ্যেই নেই। তাই ওরা আর কি পুরুষার্থ করবে? কারোর ভাগ্যে কিছুই নেই, আবার কারোর ভাগ্যে সবকিছু আছে। ভাগ্যই পুরুষার্থ করিয়ে নেয়। ভাগ্যে না থাকলে কিভাবে পুরুষার্থ করবে? স্কুল তো একটাই। সবাই পড়াশুনা করছে। কোনো বাচ্চা অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পরে পড়ে যায়, আবার কেউ চলতে চলতে মরে যায়। অনেকেই জন্ম নেয় আবার মরেও যায়। এটা খুব ওয়ান্ডারফুল জ্ঞান। জ্ঞান তো খুবই সহজ। কিন্তু কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করার জন্যই পরিশ্রম করতে হয়। বিকর্ম বিনাশ হলেই উড়তে পারবে। ধ্যানের থেকে জ্ঞান অনেক ভালো। ধ্যানে অনেক মায়াবী বিঘ্ন আসে। তাই ধ্যানের থেকে জ্ঞান ভালো। কিন্তু তাই বলে এমন নয় যে যোগের থেকেও জ্ঞান ভালো। এটা তো ধ্যানের জন্য বলা হয়। যারা ধ্যানে যেত, তারা আজকে নেই। যোগের দ্বারা উপার্জন হয়, বিকর্ম বিনাশ হয়। ধ্যানের দ্বারা কোনো উপার্জন হয় না। যোগ এবং জ্ঞানের দ্বারাই উপার্জন হয়। জ্ঞান এবং যোগ ছাড়া স্বাস্থ্যবান এবং সম্পত্তিবান হতে পারবে না। তখন এইরকম ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস হয়ে যায়। এটা ঠিক নয়। ধ্যানে অনেক লোকসান হয়। জ্ঞান তো এক সেকেন্ডের ব্যাপার। কিন্তু যোগ মোটেও এক সেকেন্ডের ব্যাপার নয়। যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন যোগ করতে হবে। জ্ঞান তো খুবই সহজ। কিন্তু এভার হেলদী, নিরোগী হওয়ার জন্যই পরিশ্রম করতে হয়। সকালে উঠে যোগ করতে বসলেও অনেক বাধা আসে। জ্ঞানের বিভিন্ন পয়েন্ট মনে করলেও বুদ্ধি যেখানে সেখানে চলে যায়। যে সবার আগে আছে, তার কাছেই তো সবথেকে বেশি তুফান আসবে, তাই না? শিববাবার কাছে তো কোনো তুফান আসবে না। বাবা সর্বদা বোঝান যে তুফান তো অনেক আসবে। যত স্মরণে থাকার চেষ্টা করবে, তত বেশি তুফান আসবে। কিন্তু সেগুলোকে ভয় পেলে চলবে না। স্থিরভাবে স্মরণ করতে হবে। অন্তিমে এমন অবস্থা হবে যে তুফান একটুও টলাতে পারবে না। এটা হল আত্মিক দৌড়। শিববাবাকে স্মরণ করতে থাকো। এই কথাটাই বুঝতে হবে এবং ধারণ করতে হবে। ধন দান না করলে ধারণাও হবে না। পুরুষার্থ করতে হবে। খুব সহজেই কাউকে দুই বাবার কথা বোঝানো যায়। এটাও তোমরা জানো যে বাবা ২১ জন্মের উত্তরাধিকার দেন। তোমরা বলো যে লক্ষ্মী-নারায়ণও বাবার কাছ থেকে ২১ জন্মের উত্তরাধিকার পেয়েছিল। বাবা-ই ওদেরকে রাজযোগ শিখিয়েছিলেন। অন্য কেউ এইভাবে বলতে পারবে না যে ভগবান ওদেরকে এই উত্তরাধিকার দিয়েছেন। দুনিয়ার মানুষ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুশি থাকে। তোমরা কোন বিষয় নিয়ে খুশিতে আছ, সেটা তো কেউই জানে না। দুনিয়ার মানুষ তো অল্প সময়ের জন্য ক্ষণভঙ্গুর খুশি নিয়েই আনন্দ করতে থাকে। তোমরাই হলে সত্যিকারের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়। তোমরাই হলে জ্ঞানী এবং যোগী। অন্য কেউ তোমাদের এই অতীন্দ্রিয় সুখের খুশির ব্যাপারে জানতে পারবে না। ওরা তো কত খাটাখাটনি করে। চাঁদে যাওয়ার চেষ্টা করছে। খুব কঠিন পরিশ্রম করে। কিন্তু ওদের সকল পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে। তোমরা কোনোরকম কষ্ট না করে এমন জায়গায় যাওয়ার পুরুষার্থ করছ যেখানে অন্য কেউ যেতে পারবে না। তোমরা সব কিছুর থেকে উঁচু পরমধামে চলে যাও। আচ্ছা!



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি রুহানী বাচ্চাদের প্রতি রুহানী বাপদাদার স্মরণ, ভালোবাসা এবং সুপ্রভাত। রুহানী বাবার রুহানী বাচ্চাদেরকে নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. ঘর-গৃহস্থে থেকে নির্মোহী হতে হবে। সকলের প্ৰতি কর্তব্য পালন করে পদ্মফুলের মতো থাকতে হবে।

২. জ্ঞান ধারণ করার জন্য অবশ্যই জ্ঞান ধনের দান করতে হবে। জ্ঞান এবং যোগের দ্বারা নিজ উপার্জন সঞ্চয় করতে হবে। ধ্যান অথবা সাক্ষাৎকারের কোনো ইচ্ছা রাখা উচিত নয়।

বরদান:-

শান্তির শক্তি দ্বারা সঞ্চয়ের পরিমাণকে বাড়িয়ে শ্রেষ্ঠ পদের অধিকারী হও

যেমন বর্তমান সময়ে সায়েন্সের শক্তির খুব প্রভাব রয়েছে এবং সেগুলো অল্পকালের বিভিন্ন প্রাপ্তিও করাচ্ছে। এইরকম সাইলেন্সের শক্তি দ্বারা সঞ্চয়ের পরিমাণকে বাড়াও। বাবার দিব্য দৃষ্টির দ্বারা নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করো। তাহলে প্রয়োজনের সময়ে সেই সঞ্চিত শক্তি অন্যকে দিতে পারবে। যে দৃষ্টির মাহাত্ম্য জেনে সাইলেন্সের শক্তিকে জমা করে নেয়, সে-ই শ্রেষ্ঠ পদের অধিকারী হয়। তার চেহারা থেকে আত্মিক খুশির ঝলক দেখা যায়।

স্লোগান:-

যেখানে অ্যাটেনশন স্বাভাবিকভাবে থাকে, সেখানে কোনো প্রকার টেনশন আসতে পারে না।