১৬-১২-১৮ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ০৯-০৩-৮৪ মধুবন


পরিবর্তনকে অবিনাশী বানাও

বাপদাদা সব চাতক বাচ্চাদের দেখছেন l প্রত্যেকেরই প্রবল আগ্রহ থাকে শোনার, মিলনের এবং স্বরূপ হওয়ার জন্য l শোনায় তোমরা সকলেই নাম্বার ওয়ান চাতক l মিলনের ক্ষেত্রে নম্বর অনুযায়ী এবং হওয়ার ক্ষেত্রে তোমরা তোমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সমান হও l কিন্তু সব শ্রেষ্ঠ আত্মারা, ব্রাহ্মণ আত্মারা অবশ্য তিনেই চাতক l নাম্বার ওয়ান চাতক সদা সহজে বাবা সমান মাস্টার মুরলিধর, মাস্টার সর্বশক্তিমান হয়ে যায়। শোনা অর্থাৎ মুরলিধর হওয়া l মিলন অর্থাৎ সঙ্গের রঙে, তাঁরই সমান সকল শক্তিতে সকল গুণে রঙিন হয়ে যাওয়া l হওয়া অর্থাৎ তোমাদের সঙ্কল্পে, উচ্চারিত বোলে এবং কর্মে বাবার প্রতিটা পদক্ষেপ অনুসরণ করে সাক্ষাৎ বাবাসম হওয়া l বাচ্চারা, তোমাদের সঙ্কল্পে বাবার অনুরূপ সঙ্কল্প অনুভব হতে হবে l তোমার উচ্চারিত বোল এবং কর্ম দিয়ে সবাইকে এই অনুভব করাও, যেমন বাবা, তেমন বাচ্চা l একেই বলা হয়ে থাকে সমান হওয়া, নাম্বার ওয়ান চাতক হওয়া l চেক করো, তিনের মধ্যে থেকে তুমি কে ! সব বাচ্চাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরা সঙ্কল্প বাপদাদার কাছে পৌঁছায় l সাহস আর দৃঢ়তার সাথে করা তোমাদের সঙ্কল্প খুব ভালো l সঙ্কল্পরূপী বীজ শক্তিশালী, কিন্তু গুণ ধারণের ধরণী (বুদ্ধিরূপী পাত্র ), জ্ঞানের গঙ্গাজল, স্মরণের রোদ বা তাপ এবং নিজের প্রতি প্রতিনিয়ত অ্যাটেনশন দেওয়ার বিষয় যখন এসে যায়, তা'তে কখনো কখনো তোমরা অসতর্ক হয়ে যাও l যখন একটা বিষয়তেও কোনকিছু অভাব থেকে যায় সঙ্কল্পরূপী বীজ সবসময়ের ফলদায়ী হয় না l অল্প সময়ের জন্য এক সীজন বা দু'সীজনের জন্য ফল দেবে l সদাসর্বদার ফল দেবে না l তখন তোমরা ভাবো, বীজ তো শক্তিশালী ছিল, দৃঢ় সঙ্কল্প করেছিলে, সবকিছু স্পষ্ট ছিলো, তবুও জানিনা কি হয়ে গেল ! ছ'মাস তো তোমাদের প্রবল উত্সাহ ছিলো, তারপর চলতে চলতে কি হলো তোমরা জানলে না ! সুতরাং, পূর্বে যে বিষয়ে তোমাদের শোনানো হয়েছিলো, সেই বিষয়ে সদা অ্যাটেনশন দাও l



দ্বিতীয়তঃ, খুব তুচ্ছ ব্যাপারে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো l বিভ্রান্তির কারণে তোমরা ছোট বিষয়কে অনেক বড়ো করে ফেল l থাকে পিঁপড়ে আর তোমরা সেটাকে হাতী বানাও l এই কারণে কোনো ব্যালেন্স থাকে না l ব্যালেন্স না থাকার জন্য তোমরা তোমাদের জীবনে ভারী হয়ে যাও l হয় তোমরা নেশায় একেবারে উঁচুতে উঠে যাও, অথবা তুচ্ছ একটা ছোট কাঁকড় তোমাদের নিচে নামিয়ে আনে l নলেজফুল হয়ে সেটা সেকেন্ডে সরানোর পরিবর্তে কিভাবে মাঝখানে কাঁকড় চলে এলো, তোমরা রুদ্ধগতি হয়ে গেলে, নিচে এসে গেছ, এটা ঘটে গেল... এইসব ভাবতে শুরু করে দাও ! তুমি অসুস্থ হয়েছো, তোমার জ্বর হয়েছে, ব্যাথা করছে ! যদি এটাই ভাবতে থাকো বা বলতে থাকো তো তোমার দশা (হাল) কি হবে ? সুতরাং তুচ্ছ ঘটনা বা ব্যাপারগুলো এখন শেষ করো, সরিয়ে দাও আর ওড়ো l ঘটে গেল, এসে গেল, এই ধরণের সঙ্কল্পে দুর্বল হয়ও না l ওষুধ নাও আর স্বাস্থ্যবান হও l কখনো কখনো বাচ্চাদের মুখ দেখে বাপদাদা ভাবেন, একটু আগেই তোমরা কি ছিলে, আর এখন কি হয়েছো ! এরা কি তোমরাই নাকি অন্য কিছু হয়ে গেছ ! তাড়াতাড়ি তোমাদের নীচে-ওপরে হওয়ায় কি হয় ? মাথা ভারী হয়ে যায় l স্থূলভাবেও যদি ওপর-নিচ করতে থাকো তো মাথা ঘুরছে এমন বোধ হয়, তাই না ! সুতরাং, এই সংস্কার পরিবর্তন করো l এমন ভেবো না, তোমাদের অভ্যাসই এইরকম l দেশের কারণে বা বায়ুমন্ডলের কারণে, তোমাদের জন্মের সংস্কার বা তোমাদের নেচারের কারণেই এইরকম ঘটে, এই ধরণের বিশ্বাস তোমাদের কমজোর বানায় l তোমাদের জন্ম পরিবর্তিত হয়েছে, সুতরাং সংস্কারেরও পরিবর্তন করো l যেহেতু তোমরা বিশ্ব পরিবর্তক, তাহলে তো স্ব-পরিবর্তক আগে থেকেই হয়েছো, তাই না ! নিজেদের আদি-অনাদি স্বভাব-সংস্কারকে জানো, সেগুলোই তোমাদের প্রকৃত সংস্কার l অন্য সবই নকল l "আমার সংস্কার, আমার নেচার" ইত্যাদি মায়ার বশীভূত হওয়ার নেচার, তোমরা সব শ্রেষ্ঠ আত্মাদের আদি-অনাদি নেচার এগুলো নয় l সেইজন্য আবারও একবার বাবা তোমাদের এই সব বিষয়ে অ্যাটেনশন আকর্ষণ করছেন l রিভাইস করাচ্ছেন l এই পরিবর্তনকে অবিনাশী বানাও l



তোমাদের অনেক বিশেষত্ব আছে l স্নেহে তোমরা নম্বর ওয়ান, সেবার উদ্যমে নম্বর ওয়ান l স্থূলভাবে দূরে থেকেও তোমরা কাছের হয়েছো l তোমাদের ক্যাচিং পাওয়ার, সেটাও খুব ভালো l উপলব্ধির শক্তিও অতি তীব্র l খুশির দোলাতেও তোমরা দুলছো l "বাহ্ বাবা, বাহ্ পরিবার, বাহ্ ড্রামা" - এই গীতও তোমরা ভালো গাও l দৃঢ়তার বিশেষত্ব, সেটাও খুব ভালো l চেনাজানার ক্ষেত্রে তোমাদের বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ l তোমরা হারানিধি সকলে বাবার এবং পরিবারের খুব স্নেহভাজন l মধুবনের শোভা তোমরা, তোমাদের উজ্জ্বল দীপ্তি এখানে নিয়ে এসেছো l ভ্যারাইটি শাখা মিলে তোমাদের এক চন্দন বৃক্ষ হওয়ার এক্জাম্পেলও খুব ভালো l কতো বিশেষত্ব তোমাদের ! বিশেষত্ব অনেক, আর কমজোরি একটা l সুতরাং, একটা জিনিসকে শেষ করে দেওয়া তো অনেক সহজ, তাই না ! তোমাদের সব সমস্যা এখন সমাপ্ত হয়ে গেছে, তাই না ! বুঝেছো তোমরা !



যেমন আন্তরিকতার সাথে, স্বচ্ছ হৃদয়ে তোমরা বলো, তেমনই, সততা আর স্বচ্ছতার সাথে হৃদয়ের সবকিছু বার করে ফেলতেও তোমাদের এক নম্বর হওয়া উচিৎ l বাবা যদি বিশেষত্বের মালা বানান তো অনেক বড়ো হয়ে যাবে l সে যাই হোক, বাপদাদা তোমাদের অভিনন্দন জানান l শতকরা নিরানব্বই ভাগ তোমরা পরিবর্তন তো করেই নিয়েছো, শতকরা এক ভাগ বাকি আছে l সেটাও পরিবর্তন হয়েই আছে l বুঝেছো তোমরা ! তোমরা এত ভালো যে 'না' শব্দকে 'হ্যাঁ'-তে পরিবর্তন করেছো l এটাও একটা বিশেষত্ব, তাই না ! তোমরা খুব ভালো উত্তরও দাও l বাবা যদি তোমাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি শক্তিশালী, বিজয়ী ? তোমরা বলো, আগে থেকেই ! এটাও তো পরিবর্তনের তীব্র শক্তি, তাই না ! শুধু পিঁপড়ে আর ইঁদুরের থেকে ভীত হওয়ার সংস্কার থাকে l মহাবীর হয়ে পিঁপড়েকে পায়ের তলায় দমন করো আর ইঁদুরের ওপরে সওয়ার হও l গণেশ হও l এখন থেকে বিঘ্ন-বিনাশক হয়ে অর্থাৎ গণেশ হয়ে ইঁদুরের ওপর সওয়ারি করা শুরু করে দাও l ইঁদুরকে ভয় পেয়ো না l ইঁদুর তোমাদের শক্তি খন্ডন করে l সহন শক্তি আর তোমাদের সরল প্রকৃতি নাশ করে l স্নেহের বিনাশ ঘটায় l কাটে তোমাদের, তাই না ! আর পিপীলিকা সোজা মাথায় চলে যায় l টেনশনে তোমাদের বেহুঁশ করে দেয় l সেই সময় তোমরা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ো, তাই না ! আচ্ছা !



যারা সদা মহাবীর হয়ে শক্তিশালী স্থিতিতে স্থিত, যারা প্রতি পদে বাবার সাথে চলে, প্রকৃত জীবনসাথী, যারা তাদের সঙ্কল্পে, উচ্চারিত বোলে এবং কর্মে তাঁর প্রতি পদক্ষেপে পা মিলিয়ে চলে, যারা তাদের বিশেষত্বকে সামনে রেখে সমস্ত রকম দুর্বলতাকে সদাকালের জন্য বিদায় জানায়, যারা সঙ্কল্পরূপী বীজকে নিরন্তর ফলদায়ী বানায়, প্রতি মুহূর্তে বেহদের প্রত্যক্ষ ফল খায় এবং যারা সর্বপ্রাপ্তির দোলায় দোলে, এইরকম সদা সমর্থ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*ফ্রান্স গ্রুপের সাথে* :-

সবাই তোমরা বহুবার বাবার সাথে মিলিত হয়েছো, আর আবারও একবার তাঁর সাথে মিলিত হচ্ছো, কারণ কল্পপূর্বে তোমরা বাবার সাথে মিলিত হয়েছিলে, আর তাই এখন মিলিত হচ্ছো l যে আত্মারা কল্পপূর্বে বাবার হয়েছিলো, তারাই আবারও একবার তাদের অধিকার নিতে এখানে এসেছে l কিছুই নতুন মনে হয় না, তাই না ! মনে মনে তোমাদের বিগত পরিচিতি অনুভব হচ্ছে, তোমরা বাবার সাথে বহুবার মিলিত হয়েছো ! খুব চেনাজানা ঘর মনে হচ্ছে ! যখন অন্তরঙ্গ কারও সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তো সেই আপনজনকে দেখে তোমরা খুশি হও l তোমরা এখন বুঝেছো তোমাদের আগের যে সম্বন্ধ ছিলো, সেটা স্বার্থের ছিলো, আসল ছিল না l কিন্তু তোমরা এখন তোমাদের পরিবারে, সুইট হোমে পৌঁছে গেছ l বাপদাদাও তোমাদের এই বলে স্বাগত জানান, "ভালো হয়েছে, তোমরা এসেছো" l



দৃঢ়তা সাফল্য নিয়ে আসে l যখন তোমরা বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে ভাবো যে 'কিছু হবে, কি হবে না' সেখানে সাফল্য নেই l যেখানে দৃঢ়তা সেখানে সফলতা আগে থেকেই হয়ে আছে l সেবায় তোমরা নিরুৎসাহ হয়ো না, অবিনাশী বাবার অবিনাশী কার্য, সুতরাং সফলতাও অবিনাশী হবে l সেবার ফল হবে না, এমন হতেই পারে না l কিছু সেই সময়েই হয়, আর কিছু অল্প সময় পরে l সুতরাং, কখনও ওইরকম সঙ্কল্প কোরোনা l সদা এইরকম ভাবো, সেবা হতেই হবে l



*জাপান গ্রুপের সাথে* :- বাবার থেকে তোমাদের সর্ব-খাজানার প্রাপ্তিলাভ হচ্ছে ? ভরপুর আত্মা হওয়ার অনুভব করো ? এক জন্ম নয়, বরং ২১ জন্ম এই ঐশ্বর্য-ভান্ডার চলতে থাকবে l আজকের দুনিয়ায় যতোই কেউ ধনবান হোক না কেন, যে সম্পদের ভান্ডার তোমাদের কাছে আছে তা' কারও কাছে নেই l তাহলে, প্রকৃত ভি .আই. পি. কে ? তোমরাই তো, তাই না ? তাদের পোজিশন আজ আছে, কাল নেই, কিন্তু তোমাদের এই ঈশ্বরীয় পোজিশন কেউ কেড়ে নিতে পারবে না l তোমরা বাচ্চারা বাবার ঘরের শোভা l ফুল দিয়ে যেমন ঘর সাজানো হয়ে থাকে, ঠিক তেমনই তোমরা বাবার ঘরের অলঙ্করণ l সুতরাং, 'আমি বাবার ঘরের শোভা' এইরকম ভেবে সদা শ্রেষ্ঠ স্থিতিতে স্থিত থাকো l দুর্বলতার বিষয়গুলো কখনো মনে কোরো না l অতীত বিষয়ের ভাবনা আরও অনেক বেশি দুর্বল করে দেবে l পাস্ট ভাবলে শেষে কান্নাই আসবে, সেইজন্য পাস্ট অর্থাৎ ফিনিশ l বাবার স্মরণ শক্তিশালী বানিয়ে দেয় l শক্তিশালী আত্মাদের মেহনতও ভালোবাসায় পরিবর্তিত হয়। জ্ঞানের খাজানা তোমরা অন্যদের যতো দেবে ততোই বৃদ্ধি পাবে l সাহস আর প্রবল উৎসাহের সাথে সদা উন্নতি করে অগ্রসর হও l আচ্ছা !



*অব্যক্ত মহাবাক্যঃ* - *"ইচ্ছামাত্রম্ অবিদ্যা হও*



ব্রাহ্মণের অন্তিম সম্পূৰ্ণ স্বরূপ বা স্থিতির বর্ণনা - ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা অর্থাৎ সবরকম ইচ্ছা সম্বন্ধে অজ্ঞানতা l যখন তোমাদের এইরকম স্থিতি তৈরি হবে তখন জয়জয়কার ধ্বনি আর হাহাকারের কান্না শোনা যাবে l এইজন্য তোমাদের তৃপ্ত আত্মা হতে হবে l তোমরা যতো তৃপ্ত হবে ততোই ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা হবে l যেমন, বাপদাদা তাঁর কোনও রকম কর্মের ফলের ইচ্ছা রাখেন না l তোমাদের প্রতিটা বোলে এবং কর্মে সদাসর্বদা পিতার স্মৃতি থাকার কারণে ফলের ইচ্ছার সঙ্কল্প মাত্র থাকে না, এইরকমভাবে ফলো ফাদার করো।বাচ্চারা, কখনো কাঁচা ফলের ইচ্ছা রেখোনা l ফলের জন্য সূক্ষ্ম ইচ্ছাও যদি থাকে, তাহলে যেমন করবে তার তেমন ফল খাবে, তখন ফলস্বরূপ কিভাবে দেখা যাবে ! এইজন্য ফলের ইচ্ছা ছেড়ে *ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা হও l*

যেমন, অশেষ (অপার) দুঃখের লিস্ট আছে, তেমনই বিভিন্নরকমের ইচ্ছা বা রেসপন্সের জন্য কিছু সূক্ষ্ম সঙ্কল্প আছে, যে কারণে তোমাদের নিষ্কাম বৃত্তি থাকেনা l এমনকি, পুরুষার্থের প্রালব্ধের নলেজ জানার পরেও এটার প্রতি তোমাদের অ্যাটাচমেন্ট থাকা উচিৎ নয় l যখন কেউ তোমাদের মহিমা করে আর তার প্রতি তোমরা বিশেষ মনোযোগ দাও, সেটাও সূক্ষ্মভাবে ফল স্বীকার করা হয় l একটা শ্রেষ্ঠ কর্ম করার পরিপ্রেক্ষিতে তোমরা শতগুন সম্পন্ন ফল লাভ করতে পারবে, কিন্তু তোমাদেরকে অল্পকালের সীমিত 'ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা' হতে হবে l ইচ্ছা সমস্ত ভালো কর্ম সমাপ্ত করে দেয়, ইচ্ছা স্বচ্ছতাকে ধ্বংস করে এবং স্বচ্ছ থাকার পরিবর্তে চিন্তাপ্রবন করে তোলে l অতএব, তোমাদের এই ইচ্ছার বোধ থেকে অবিদ্যা হতে হবে l



তোমরা বাবাকে দেখেছো, বাবা কিভাবে সেবার জন্য তাঁর নিজের সময় দিয়েছেন l নিজে নির্মান হয়ে বাচ্চাদের মান দিয়েছেন l তিনি সবসময় বাচ্চাদের সামনে রেখেছেন l সবকিছু নিজে করা সত্ত্বেও তিনি বাচ্চাদের নামে মহিমা করতেন l তিনি যে কাজ করতেন সেটার জন্য তাঁর নাম মহিমান্বিত হওয়ার যেকোনো প্রাপ্তি তিনি ত্যাগ করেছিলেন l বাচ্চাদের মালিক হিসেবে রেখেছেন আর নিজেকে তাদের সেবাধারী l মালিক হিসেবে মান - উচ্চ সম্মান, নাম সব তিনি পরিত্যাগ করেছিলেন l কখনো নিজের নাম মহিমান্বিত করেননি, বরং সবসময়ই বলেছেন, 'আমার বাচ্চারা' ! সুতরাং, বাবা যেমন নিজের নামের গৌরব, প্রতিপত্তি, উচ্চ সম্মান সব ত্যাগ করেছেন, সেইরকমভাবে তোমরা ফলো ফাদার করো l যদি তোমরা এখন কিছু সেবা করলে আর তখনই তার ফল নিয়ে নিলে তো জমা কিছুই হলোনা, এটা যেন যত্র আয়, তত্র ব্যয় অর্থাৎ উপার্জন হওয়া মাত্র খেয়ে ফেলা l তা'তে কোনও উইল পাওয়ার থাকেনা l ভিতর থেকে তারা কমজোর হয়, শক্তিশালী হয়না, বরং অভ্যন্তরে খালিভাবের বোধ হয় l যখন এই ব্যাপারটা সমাপ্ত হয়ে যাবে, তখন তোমাদের নিরাকার, নিরহঙ্কার, নির্বিকার স্থিতি নিজে থেকেই তৈরি হয়ে যাবে l তোমরা বাচ্চারা সকল কামনা থেকে যতো আলাদা থাকবে, ততই তোমাদের সব কামনা সহজে পূরণ হবে l ফেসিলিটি চেয়ো না, বরং দাতা হয়ে তোমাদের যা আছে দাও l যেকোনো সেবার জন্য বা তোমাদের স্যালভেশনের আধারে স্ব-উন্নতি বা সেবার অল্পকালের সফলতা তোমাদের অবশ্যই প্রাপ্ত হবে, আজ হয়তো তোমরা মহান হলে, কিন্তু কাল মহিমান্বিত হওয়ার পিপাসু আত্মা হয়ে যাবে এবং সদা কোনো না কোনো প্রাপ্তির ইচ্ছা হবে l



কখনো ন্যায্য বিচারের প্রত্যাশী হয়োনা l কোনকিছুর অভিলাষী, নিজেকে তৃপ্ত আত্মা অনুভব করতে পারে না। মহাদানীর, কখনোই ভিক্ষুর মতো এক নয়া পয়সাও নেওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে না l 'এর পরিবর্তন হওয়া উচিৎ বা এর কিছু করা উচিৎ, সহযোগিতা করা উচিৎ, বা আরও এগিয়ে যাওয়া উচিৎ' - এইরকম সহযোগের আকাঙ্ক্ষায় পরবশ, শক্তিহীন হওয়া অর্থাৎ ভিখারী আত্মার মতো চাওয়া-পাওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে না ! যদি তোমার পরিবারের কোনো সহযোগী ভাই বা বোন অবুঝ অথবা শিশুসুলভ জিদের কারণে স্বল্পকালীন বস্তুকে সদাকালের প্রাপ্তি মনে করে অথবা অল্পকালের প্রাপ্তি নাম, যশ, প্রতিপত্তি চায়, তবে তাদেরকে সম্মান দিয়ে নিজে নির্মান হও, এই দেওয়াই সদাকালের নেওয়া l অন্যদের সুবিধা-সুযোগ (স্যালভেশন) দেওয়ার আগে, তাদের থেকে সুবিধা-সুযোগ নেবে এমন যেন কখনো সঙ্কল্পেও না আসে l এই অল্পকালের চাওয়া-পাওয়া থেকে ভিখারী (বেগার ) হয়ে যাও l যতক্ষণ পর্যন্ত পুরানো দুনিয়ায় তোমাদের সামান্যতমও আগ্রহ বা প্রত্যাশা আছে, ততক্ষণ জগৎ-সংসার অসার (মিথ্যা ) এটা তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমাদের বুদ্ধি এটা অনুভব করতে পারে না যে এরা আগে থেকেই সবাই মৃত, ততক্ষণ এই মিথ্যা জগৎ-সংসার থেকে কিছু প্রাপ্তির ইচ্ছা হতে পারে ! কিন্তু যারা একের রসে হারিয়ে যায়, তারা একরস স্থিতিতে স্থিত হয়ে যায় l মৃতদেহের থেকে তারা কোনকিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা রাখে না।



বিভিন্নরকম কামনা কোনকিছুর সম্মুখীন হওয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন উৎপন্ন করে l যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের এই কামনা থাকে যে তোমার নাম মহিমাযুক্ত হোক, তুমি অমুক, তোমার রায় কেন নেওয়া হয়নি, কেন তোমার মতামতের মূল্য দেওয়া হয়নি, ততক্ষণ সেবায় বিঘ্ন উৎপন্ন হবে l সেইজন্য মানের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে তোমার স্বমানে স্থিত হলে তখন মান ছায়ার মতো তোমায় অনুসরণ করবে l



অনেক বাচ্চা খুব ভালো পুরুষার্থী, কিন্তু কেউ কেউ ভালো পুরুষার্থ করার পরে তারা তাদের প্রালব্ধ এখন এখানে ভোগ করার ইচ্ছা রাখে l তোমাদের এখনই ফলভোগ করার এই ইচ্ছা জমা করা থেকে তোমাদের নিরস্ত করে, সেইজন্য প্রালব্ধের ইচ্ছা সমাপ্ত ক'রে শুধু ভালোভাবে পুরুষার্থ করো l 'ইচ্ছা'র পরিবর্তে 'ভালো' স্মরণে রাখো l



তোমাদের 'ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা' হওয়ার স্থিতির আধার হলো, সমস্ত ভক্ত আত্মাদের সর্বপ্রাপ্তি করানো l তোমরা যখন নিজেরা 'ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা' হয়ে যাও, শুধুমাত্র তখনই তোমরা অন্য আত্মাদের সকল ইচ্ছা পূরণ করতে পারো l নিজের জন্য কোনও ইচ্ছা রেখোনা, কিন্তু অন্য আত্মাদের ইচ্ছা পূরণ করার বিষয়ে ভাবো তবে নিজেই সম্পন্ন হয়ে যাবে l এখন বিশ্বের আত্মাদের অনেক রকমের ইচ্ছা অর্থাৎ কামনা পূরণ করার দৃঢ় সঙ্কল্প ধারণ করো l অন্যের ইচ্ছা পূরণ করা অর্থাৎ নিজেকে 'ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা' বানানো l যেমন দেওয়ার অর্থ নেওয়া হয়, সেইরকমই অন্যের ইচ্ছা পূরণ করা অর্থাৎ নিজেকে সম্পন্ন বানানো l সদা এই লক্ষ্য রাখো, আমাদের, সবার কামনা পূর্ণকারী মূর্তি হতে হবে l আচ্ছা !

বরদান:-

বিপরীত পরিস্থিতিকে সাইড সীন মনে করে স্মৃতিস্বরূপ সমর্থ আত্মা ভব

স্মৃতিস্বরূপ আত্মা সমর্থ হওয়ার কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে খেলা মনে করে l যতো বড়ই পরিস্থিতি হোক, সমর্থ আত্মাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তায় সেই সব সাইড সীন l লোকে অর্থ খরচ করেও সাইড সীন দেখতে যায় l সুতরাং স্মৃতিস্বরূপ সমর্থ আত্মাদের জন্য বিপরীত পরিস্থিতিই বলো, পেপার বা বিঘ্ন বলো, সেই সবই সাইড সীন l আর স্মৃতিতে আছে, তোমরা তোমাদের লক্ষ্য-পথের সেই সাইড সীন অগণিত বার পার করেছো, নাথিং নিউ l

স্লোগান:-

অন্যকে কারেকশন করার পরিবর্তে বাবার সাথে কানেকশন জুড়ে নাও, তাহলে বরদানের অনুভূতি হতে থাকবে* l