১০-১০-১৮ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - নতুন দুনিয়ার জন্য বাবা তোমাদের সম্পূর্ণ নতুন কথা শোনাচ্ছেন। নতুন দিশার শ্রীমৎ দিচ্ছেন যা অন্য সব প্রচলিত মতের থেকে একেবারেই পৃথক, তাই তো এর এত প্রসিদ্ধি"

প্রশ্ন:-

দয়ানিধি বাবা প্রত্যেক বাচ্চাকেই কি বিষয়ে সতর্ক করে উচ্চ-ভাগ্যের অধিকারী করে গড়ে তোলেন?

উত্তর:-

বাবা বলেন- বাচ্চারা, উচ্চ-ভাগ্যের অধিকারী হতে চাইলে সেবার কাজ করো। যদি বিনা সেবায় কেবল খাওয়া ও শোয়া, তবে কিন্তু উচ্চ-ভাগ্য তৈরী হবে না। যেহেতু, সেবা বিনা খাবার খাওয়া অনুচিত, তাই বাবা এই সাবধানী শোনান। সবকিছুই নির্ভর করছে পঠন-পাঠনের উপর। বি.কে. ব্রাহ্মণদের যেমন পড়তে হয়, তেমন পড়াতেও হয় অর্থাৎ প্রকৃত গীতা শোনাতে হয়। যেহেতু বাবা দয়ানিধি তাই প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৃত দিশার প্রতি আলোকপাত করেন।

গীত:-

জিস দিন সে মিলে হম তুম, নয়া দিন লাগে, নয়া রাত লাগে...

ওঁম্ শান্তি!

ঈশ্বরীয় পিতা বোঝাচ্ছেন ঈশ্বরীয় সন্তানদের। বাচ্চারা যখন বেহদের বাবার সামনে বসে তা শোনে, তখন বাবার প্রতিটি কথাই তাদের কাছে নতুন মনে হয়। বাবা নতুন দুনিয়া রচনা করতে চলেছেন। কোনও মনুষ্যই এ ধরণের নতুন কথা শোনাতেই পারে না। এই বাবা যিনি হেভেনলী গড্-ফাদার, সেই অসীম বেহদের বাবাই স্বর্গ-রাজ্যের স্থাপনা করেন। আর নরক-রাজ্যের স্থাপনা করে রাবণ। ৫-বিকার স্ত্রীর আর ৫-বিকার পুরুষের এ নিয়েই রাবণ সম্প্রদায়। এটাও তো নতুন কথা। স্বর্গ-রাজ্যের রচনাকার পরমপিতা পরমাত্মা, যিনি আবার রাম-ও। নরক-রাজ্যের রচনাকার রাবণ, যার কুশপুত্তলিকা বানিয়ে প্রতি বছরই তাকে জ্বালানো হয়। একবার যে জ্বলে ভষ্ম হয়ে যায়, আবারও কি তাকে দেখা যায়? সেই আত্মা তো তখন অন্য শরীর ধারণ করে। তার চেহারা-আকৃতিও বদলে যায়। কিন্তু লোকেরা সেই একই রাবণের কুশপুত্তলিকা বানিয়ে প্রতি বছরই তা জ্বালায়। নিরাকার শিববাবার কোনও আকৃতি-ই নেই। যদিও বাস্তবে রাবণেরও কোনও আকৃতি নেই। রাবণ অর্থাৎ বিকার। বাবা এভাবেই তা বোঝান। লোকেরা ভক্তিমার্গে কি চায়? ভগবান আসেন ভক্তির ফল দিতে ও ভক্তদের রক্ষা করতে। যেহেতু ভক্তি-মার্গে এত দুঃখ-কষ্ট! সুখ তো খুবই অল্প কালের, তাও ক্ষণভঙ্গুর। তাই ভারতবাসীদের খুবই দুঃখের জীবন। যখন কারও বাচ্চা মারা যায়, কেউ ধনসম্পদ খুইয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়, তখন তার জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে খুবই দুঃখের। তাই তো বাবা আসেন, সবাইকে সুখী বানাতে। বাবা এসে নতুন কথা শোনান বাচ্চাদের। বাবা জানান, উনি আসেন স্বর্গ-রাজ্য স্থাপন করতে। যেখানে বিকারের নামগন্ধও থাকে না। স্বর্গ হলো নির্বিকারী রাজ্য আর বর্তমানের এই দুনিয়া বিকারী রাজ্য। বাচ্চারা, তোমরা যদি স্বর্গ-রাজ্য চাও তবে একমাত্র এই বাবা তা স্থাপন করে দিতে পারেন। নরক-রাজ্য স্থাপন করে রাবণ। তাই বাবা বাচ্চাদের কাছে জানতে চাইছেন-তারা কি স্বর্গ-রাজ্যে যেতে চায়? বৈকুণ্ঠ-এর মহারাজা-মহারাণী অর্থাৎ বিশ্বের মালিক হতে চায়? যদিও এসব কথা কোনও বেদ-শাস্ত্র বা পুঁথি পুরাণেও নেই।



বাবা বাচ্চাদের এমন কথাও বলেন না যে, রাম-রাম জপতে থাকো আর মন্দিরে মসজিদে গিয়ে কপাল ঠোকো, তীর্থে তীর্থে গিয়ে ঠেলা-ধাক্কা খাও, কিম্বা কোথাও বসে বসে গীতা-ভাগবৎ ইত্যাদি পড়তে থাকো। না এসবের দরকারই পড়বে না। সত্যযুগে কোনও শাস্ত্রাদিই থাকে না। যতই তোমরা বেদ-শাস্ত্র, পুঁথি-পত্র পড়ো না কেন, যাগ-যজ্ঞ, জপ-তপ, দান-পুণ্য করো না কেন, ভক্তি-মার্গে ঠেলা-ধাক্কা তো খেতেই হবে। যদিও এসবে প্রাপ্তি কিছুই হয় না। যেহেতু ভক্তি-মার্গে কোনও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য যে থাকে না। বাবা এসেছেন বাচ্চাদেরকে স্বর্গ-রাজ্যের মালিক বানাতে। বর্তমানে সবাই নরকবাসী। কিন্তু কারওকে যদি বলো- তুমি নরকবাসী, তখনই সে ক্ষেপে উঠবে। কিন্তু তোমরা বি.কে.-রা তা জানো কলিযুগকে নরক আর সত্যযুগকে স্বর্গ বলা হয়। বাবা তোমাদের জন্য বৈকুণ্ঠ-এর রাজ-ভাগ্য নিয়ে এসেছেন। তাই বাবা বলছেন, এমন সুন্দর স্বর্গ-রাজ্যের মালিক হতে চাইলে তোমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। স্বর্গ-রাজ্যের মূল নিয়মই হলো পবিত্রতা। কোনো কোনো লোক আবার বলে -পবিত্র থাকাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। --আরে, তোমাদের পবিত্র বানানো হচ্ছে তো স্বর্গ-রাজ্যের জন্য। প্রথমে শান্তিধামে গিয়ে, তারপর স্বর্গ-রাজ্যে আসতে হয়। সব ধর্মের লোকেদেরই বাবা বলেন, যেহেতু দেহ-ভাবকে ত্যাগ করে অশরীরী হয়ে যেতে হয় সেখানে তাই দেহের এই অভিমানকে (দেহ ভাব) ঝেড়ে ফেলতে। আমি খ্রিস্টান, আমি বৌদ্ধ -এসব তো দেহের ধর্ম। কিন্তু আত্মা তো সুইট-হোম (শান্তিধাম) নিবাসী।



এবার বাবা বাচ্চাদের কাছে জানতে চাইছেন- বাচ্চারা, তোমরা কি আপন ঘর মুক্তিধামে ফিরে যেতে চাও? যেখানে শান্তিতে থাকতে পারবে। যদি তা চাও তো বলো, কিভাবে ফিরবে সেখানে? তা চাইলে তোমাদের এই পরমাত্মা বাবা আর তোমাদের শান্তিধামকে লাগাতার স্মরণ করতে থাকো, দেহের যাবতীয় ধর্মকে ত্যাগ করে। কে মামা, কে কাকা, বন্ধু-বান্ধব যাবতীয় সম্বন্ধকে ত্যাগ করো। নিজেকে কেবলমাত্র দেহী (আত্মা) ভেবে আমাকে অর্থাৎ পরমাত্মাকে স্মরণ করতে থাকো। এইটুকুই যা পরিশ্রম, আর অন্য কিছু শুনবেই না। এ যাবৎ যা পুঁথি-শাস্ত্র ইত্যাদি পড়াশোনা করেছো, সেসব ভুলে যাও। নতুন দুনিয়াতে যাবার জন্য আমিই তোমাদের নতুন শ্রীমৎ দিচ্ছি। একথা তো প্রচলিতই আছে, ঈশ্বরীয় গতি (দিশা) আর ঈশ্বরীয় শ্রীমৎ জাগতিক সবকিছু থেকেই আলাদা। 'গতি' বলা হয় মুক্তিকে। বাবা এমনই নতুন নতুন কথা শোনান। লোকেরাও তা শুনে বলে যে-এ তো নতুন ধরণের কথা। এর জন্য কোনও পুঁথি-শাস্ত্রের দরকার নেই। যেহেতু এসব যে প্রকৃত গীতারই কথা। কিন্তু অজ্ঞানী-মানুষেরা প্রকৃত গীতার বাণীতেও অনেক মিথ্যা জুড়ে দিয়ে সত্য তথ্যের দফারফা করে রেখেছে। কিন্তু বাবার কোনও গীতা-পুস্তক বা কোনও ধর্ম-পুস্তকেরই প্রয়োজন পড়ে না। পুস্তক লিপিবদ্ধ হয় তো ঘটনা ঘটার অনেক পরে। আমি তো কেবল তোমাদের জ্ঞান দান করি। এমন আন্তরিকতার সাথে আর কেউ-ই বলতে পারে না- "ওহে, আমার হারানিধি বাচ্চারা।" একমাত্র নিরাকার পরমাত্মা বাবাই পারেন তার নিরাকার আত্মাদের (সন্তানদের) এমন আন্তরিকতার সাথে বলতে পারে। আত্মাই কিন্তু তা শোনে শরীর ইন্দ্রিয় কান-এর সাহায্যে। এই সহজ-সরল সত্যটা যা সাধারণ লোকেরা বুঝেই উঠতে পারে না। কিন্তু তোমরা বি.ক.-রা তা পারো, যেহেতু তোমরাই বাবার সেই হারানিধি বাচ্চারা। ভক্তি-মার্গে বা সৎসঙ্গগুলিতে মানুষেরাই মানুষদের শুনিয়ে থাকে, কিন্তু এখানে তো পরমাত্মা স্বয়ং বসে আত্মাদের শোনান। আমরা আত্মারাই আমাদের শ্রবণ (কান) ইন্দ্রিয়ের দ্বারা তা শুনে থাকি। --বাচ্চারা, তোমরা জানো পরমপিতা পরমাত্মা স্বয়ং বসে তোমাদের তা বুঝিয়েও দেন। মানুষেরা তা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়-ভগবান কিভাবে তা বোঝায় এদেরকে! তাদের ধারণা গীতার জ্ঞান কৃষ্ণ-ভগবানই শুনিয়েছে। কিন্তু কৃষ্ণ নিজেই তো দেহধারী ছিলেন। (দেহধারী ভগবান হতে পারেন না) আর এই পরমপিতা পরমাত্মা বাবা তো বিদেহী এবং এই জ্ঞান তিনি বিদেহী আত্মাদেরই শোনান। এমন নতুন কথা শুনে লোকেরা বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে ওঠে। কল্প-পূর্বে যারা এই জ্ঞান শুনেছিলো, এই জ্ঞান তাদের খুবই ভাল লাগবে। তারাই মনোযোগ সহকারে পঠন-পাঠন করবে এবং ওনাদের 'মাম্মা'-'বাবা'বলবে। এখানে অন্ধ-শ্রদ্ধার কোনও ব্যাপার নেই। কিন্তু রীতি তো আছে যে বাচ্চারা মাতা-পিতাকে মাম্মা-বাবা বলবে। এখন তোমাদের কর্তব্য লৌকিক মা-বাবাকে ভুলে গিয়ে পারলৌকিক মা-বাবাকে স্মরণ করা। এই পারলৌকিক মা-বাবাই তোমাদের জ্ঞান-অমৃতের লেন-দেনের পাঠ পড়ান। বলেন- ওহে বাচ্চারা, বিষের লেন-দেন এখন ত্যাগ করো। আমি তোমাদের যেমন যেমন শিক্ষা দিচ্ছি, তোমরাও আবার তা একে অপরকে যদি দাও, তবেই তোমরা স্বর্গ-রাজ্যের অধিকারী হবে। এই জ্ঞান অল্প শুনলেও তোমরা স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু অন্যদের মতন নিজেরাও গড়ে উঠতে না পারলে, সেখানে গিয়ে দাস-দাসী হতে হবে।



দাস-দাসীদের মধ্যেও আবার ক্রমিক থাকে। যারা একটু উন্নত পর্যায়ের তারা পাবে শিশুদের লালন-পালনের দ্বায়িত্ব। ক্লাসে থেকেও যদি মন দিয়ে এই পাঠ না পড়ো, তখন তাকে দাস-দাসী হতে হবে। তেমনি প্রজার ক্ষেত্রেও রয়েছে ক্রমিক অনুসার। যে খুব মনোযোগ সহকারে পঠন-পাঠন করে, সে উচ্চ-পদের অধিকারী হয়। প্রজার মধ্যে ধনীদেরও দাস-দাসী থাকবে। তাই প্রত্যেককেই নিজের নিজের মন-দর্পণে তা দেখে নিতে হবে- আমি কোন পদের উপযুক্ত হয়েছি? আর বাবার কাছে কেউ জানতে চাইলে, তৎক্ষনাৎ বাবা তা বলে দেবেন। বাবা যে সবকিছুই জানেন-বোঝেন। এমন কি তা প্রমাণ করেও দেখিয়ে দেবেন এই কারণে তুমি এই পদ পাবে। যদিও তুমি সমর্পিত বাচ্চা হও না কেন, তারও হিসেব-নিকেশ আছে। সমর্পিত হওয়া সত্ত্বেও যদি কোনও সেবা-কার্য না করো, কেবল খাওয়া-দাওয়ার মধ্যেই থাকো, তবে তা যা দিয়েছো, তা খাওয়া-দাওয়াতেই শেষ হয়ে যায়। যা দিয়েছো - তা খেয়েছো, কিন্তু সেবা কিছুই করলে না, এমন হলে নিম্ন-স্তরের দাস-দাসী হতে হবে। আর যদি সেবা করার সাথে সাথে খাওয়া-দাওয়া করো, তা হলে ঠিকই আছে। আর সেবা বা কাজ কিছুই না করে কেবল খাওয়া-দাওয়াতেই সব শেষ করে দাও, তখন তো অন্যেরও বোঝা হয়ে উঠবে। কেউ কেউ এখানে থেকেই খাওয়া-দাওয়া করে, যা তারা তা দেয়। আবার যে কিছুই দিল না অথচ খুব সুন্দর সেবায় ব্যস্ত থাকে, সে উচ্চ-পদের অধিকারী হয়। যেমন মাম্মা কোনও ধন-সম্পদই দেননি, তবুও কিন্তু অনেক উচ্চ-পদে আসীন হন, যেহেতু উনি মনপ্রাণ দিয়ে সর্বদাই বাবার ঈশ্বরীয় সেবাতেই ব্যস্ত। অনেকের মনে অহংকার থাকে যে-"আমি তো আমার সবকিছুই দিয়েই সমর্পিত হয়েছি।" -- কিন্তু তার বদলে তুমি তো এখানে খাওয়া-দাওয়া করো। সেবা না করে কেবল খাওয়া-দাওয়া করলে তোমাদের সবকিছু তাতেই শেষ হয়ে যায়। প্রবাদ বাক্য আছে না, যে ঘুমিয়ে কাটায় - তার ভাগ্যও তেমনি ঘুমিয়ে থাকে। ৮-ঘন্টা সেবা-কার্য না করে খাওয়া-দাওয়া করলে তা পাপেরই সামিল। যদি কেবল খেতেই থাকো, তবে তো আর জমা কিছুই হবে না খাতায়, তাই সেবা-কার্য করতেই হয়। বাবা তো তোমাদের সবকিছুই জানান, তাই এ বিষয়ে পরে কেউ কিছু বলতেও পারবে না যে বাবা তো তা জানায়নি বা সতর্ক করেনি। ব্রহ্মা বাবাও তো ওনার সবকিছুই দিয়েছেন, তবুও উনি কত সেবা-কার্য করেন। তাই তো ওনার এত উচ্চ-পদ। সমর্পিত হয়ে কেবল বসে বসে খেলে, অথচ সেবা-কার্য করলে না, শ্রীমৎ অনুসারে চললে না - এমন করলে আর কি বা হতে পারবে? -এমন যেন না হয় পরে আবার কেউ বলবে-অবশেষে আমি এই পদ কেন পেলাম? তার জন্য বাবা বোঝাচ্ছেন- সেবাকার্য না করা, বিনামূল্যে খাওয়া-দাওয়া, তার ফল কিন্তু ভুগতে হবে কল্প-কল্পান্তর, -তাই বাবার এই সতর্ক বাণী। তোমাদেরও একথা বুঝতে হবে তোমরা পদ-ভ্রষ্ট হবে কল্প-কল্পান্তরের জন্য। বাবার মনে দয়া আসে, তাই প্রতিটা বিষয়েই এভাবে তোমাদের কাছে আলোকপাত করেণ। সেবা-কার্য না করলে উচ্চ-পদের অধিকারী হতেই পারবে না। আর যে ঘর-গৃহস্থে থেকেও সেবা-কার্য করে সে অবশ্যই অনেক উঁচু-পদ পায়।



সবকিছুই নির্ভর করছে নিজের পড়াশোনা এবং অপরকেও তা পড়ানোর উপরে। যেহেতু তোমরা বি.কে. ব্রাহ্মণ, তোমাদের সম্পর্ক থাকবে কেবল প্রকৃত গীতার সাথে। লোকেরা তো ক্লাসে যায় হাতে ধর্মীয় পুস্তকাদি নিয়ে। কিন্তু হাতে করে কিছুই আনতে হয় না তোমাদেরকে। তোমরাই প্রকৃত ব্রাহ্মণ। এই সত্যটাই জানাতে হবে অন্যদেরকে, তবেই তোমাদের প্রকৃত পুণ্য-অর্জণ হবে এবং অন্যদেরকেও তেমন করে গড়ে তুলতে হবে। এতদিন লোকেরা তো কেবল লোকসানের রাস্তাই দেখিয়েছে, হতাশ হয়ে তাই তো তারা লেখে, "সবকিছুই মিথ্যা"। (জগৎ মিথ্যা) আর এই বাবা সত্য শুনিয়ে সত্য-খণ্ডের মালিক বানায়। এসব যথেষ্ট বোঝার বিষয়। বিশ্বের মালিক হওয়াটা মুখের কথা নয় বা কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়। বুদ্ধিমান বাচ্চারা নানা প্রকারের পরিকল্পনা করতে থাকবে। যেমন সোনার ইটের এমন সুন্দর অট্টালিকা বানাবো, তা এতই সুন্দর বানাবো, তাতে এই করবো, তা করবো, ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমনটা করে থাকে ধনী পরিবারের উঠতি যুবকেরা। তেমনি তোমাদেরও এমনই শখ হওয়া উচিত, আগামীতে রাজকুমার হয়ে এমন সুন্দর অট্টলিকা ইত্যাদি বানাবো ...... । যেমনটা আর কারোরই থাকবে না। এমন ইচ্ছা ও আগ্রহ কেবল তারই আসবে, যে খুব মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করে অপরকেও পড়াবে। তবেই সেখানে তার বাদশাহী থাকবে। অতএব বুদ্ধিতে এমন সংকল্প করতে হবে, আমাকে অনেক বেশী নম্বর পেয়ে পাশ করতেই হবে। এটা এক বিশেষ ধরণের বিশাল স্কুল। এখানে লাখ-লাখ, কোটি-কোটি বিশাল সংখ্যায় আগ্রহীরা আসবে এই পাঠ পড়ার জন্য। যা এখন বাবা বসে বোঝাচ্ছেন বি.কে -দেরকে। ভগবান কেবলমাত্র একজনই, যাকে আমরা মাতা-বলে থাকি। উনি এসে তোমাদের দত্তক নেন। যা অতি গুহ্য রহস্যের কথা। এটা এক নতুন ধরনের স্কুল। নতুন ধরনের পড়া পড়ান নতুন ধরনের শিক্ষক। যিনি কত সুন্দর সহজ-সরল পদ্ধতিতে সবকিছু বুঝিয়ে দেন। কিন্তু, এই জ্ঞান-রত্নে কেবল তারই ঝুলি ভরবে, যে সেই জ্ঞান-রত্নের উপযুক্ত হবে। অর্থাৎ যারা সেভাবে বাবাকে স্মরণ করতে পারবে। মাতা-পিতা তো কখনো তাদের সন্তানকে ভোলে না। তবুও সঙ্গমযুগী বাচ্চারা তাদের বাবাকে ভোলে কি করে? আচ্ছা!



দুনিয়া এখন একটা অস্থিরতার চক্রের মধ্যে দিয়ে চলছে, কিন্তু তোমরা বি.কে.-রা চুপচাপ শান্ত। এই চুপ থাকাতেই শান্তি - আর শন্তিতেই সুখ। তোমরা বি.কে.-রা জানো, মুক্তির পরেই জীবন-মুক্তি। তোমাদের কেবল দুটি শব্দ স্মরণে রাখতে হয়- 'আল্ফ', 'আল্লাহ' আর তার 'বাদশাহী'-কে। কেবলমাত্র 'আল্ফ'-কে স্মরণ করতে পারলেই 'বাদশাহী' পাওয়া যায়। এরপর আর কি বা বাকী থাকে? যা থাকে তা তো কেবল দইয়ের ঘোল। 'অল্ফ'-কে পাওয়া মানে মাখনটাই পেয়ে গেলে। বাকীটা তো ঘোল। এমনই তো - তাই না? তোমরা বি.কে.-রা শান্তিতে বিরাজ করো। চুপচাপ থেকে বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চলো। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এটাই যে, তবুও কোনও কোনও বাচ্চা তাদের বাবা 'আল্ফ'-কে সেভাবে স্মরণ করে না, কেবলই ক্ষণে-ক্ষণে ভুলে যায়, মায়ার ঝড়-তুফানের কারণে। তাই বাবা তাদেরকে বলেন- "মনমনা ভব - মধ্যাজী ভব"! গীতাতেও এই শব্দ-দুটি আছে। তোমরা গীতা পাঠধারীদের কাছে জানতে চাইতে পারো, "মনমনা ভব-মধ্যাজী ভব"-এই শব্দদুটির যথার্থ অর্থ কি? বাবা বলছেন- ওঁনাকে স্মরণ করলেই বাদশাহী প্রাপ্ত হবে। অতএব দেহ সম্বন্ধীয় সব ধর্মকে ত্যাগ করে দেহী (আত্মিক) হয়ে বাবাকে স্মরণ করতে থাকলে, বাদশাহী প্রাপ্ত হয়। পাঞ্জাবিদের গুরু গ্রন্থেও তা আছে-'আল্ফ'-কে জপ (স্মরন) করতে থাকলে, বাদশাহী পাওয়া যায়। সত্যখণ্ড (সত্যযুগের) -এর রাজত্ব পাওয়া যায়। তাই তো জগতের অন্যান্যদের থেকে বি.কে.-রা একেবারেই স্বতন্ত্র। অন্যেরা তাদেরকে এমনটা ভাবতেই পারে না। এই বাবা তোমাদের কত নতুন ধরনের কত কিছু শোনায়। এছাড়া অন্যেরা যা শোনায় সেসব তো পুরোনো কথা-ই। অথচ এটাই যে সহজ-সরল সত্য। 'আল্ফ'-এর আপন হতে পারলে তবেই তো বাদশাহী পাওয়া যাবে। তবুও পুরুষার্থ কিন্তু করতেই হবে। যত বেশী সংখ্যায় অন্যদেরকে নিজের মতন করে গড়ে তোলার সেবা করতে পারবে, তত বেশী ফল প্রাপ্ত হবে। সাধারণ লোকেরা না তো 'অল্ফ'-কে জানে আর না জানে 'বে' (বাদশাহী) -কে। 'বে' মানে বাদশাহীর মাখন। কৃষ্ণের মুখে যে মাখন দেখানো হয়। আর এই বাদশাহী দিতে পারেন একমাত্র তিনি, যিনি স্বর্গ-রাজ্যের স্থাপক। *আচ্ছা!*



মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. সুইট হোম (ঘর) -এ ফিরে যেতে হবে, তাই দেহের সব ধর্ম আর সম্বন্ধগুলিকে ভুলে নিজেকে কেবল দেহী (আত্মা) ভাবতে হবে। একমাত্র এই অভ্যাসেই অভ্যাসী হতে হবে।

২. বাবার যে শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছ, অন্যদেরও তা শিখিয়ে নিজের মতনই গড়ে তুলতে হবে। কমপক্ষে ৮-ঘন্টা সেবা-কার্য অবশ্যই করতে হবে।

বরদান:-

দৃষ্টি দ্বারা শক্তি গ্রহণ করার ক্ষমতা ও শক্তি প্রদান করার ক্ষমতা ধারণকারী মহাদানী, বরদানী প্রতিমূর্তি ভব

অদূর ভবিষ্যতে যখন বাণীর দ্বারা সেবা করার সময় বা পরিস্থিতি আর থাকবে না, তখন বরদানী, মহাদানী দৃষ্টি দ্বারাই শান্তি, শক্তি, প্রেম, সুখ বা আনন্দের শক্তির অনুভব করাতে হবে। যেমন জড় মূর্তির সামনে দাঁড়ালে মনের মধ্যে মূর্তির সৌম্য মুখমণ্ডল থেকে ভাইব্রেশন অনুভূত হয়, নয়ন থেকে দিব্যতার অনুভূতি হয় । তোমরা চৈতন্য রূপে এই সেবা করেছ বলেই তো এইরূপ জড় মূর্তি নির্মিত হয়েছে, সেইজন্য দৃষ্টি দ্বারা শক্তি গ্রহণ এবং শক্তি প্রদানের অভ্যাসী হও, তবেই তুমি মহাদানী, বরদানীর প্রতিমূর্তি হতে পারবে ।

স্লোগান:-

চেহারায় সুখ-শান্তি আর খুশীর ঝলক থাকলে, অনেক আত্মার ভবিষ্যৎকেই শ্রেষ্ঠ বানাতে পারবে।