26-12-2018 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - কল্যাণকারী বাবা এখনই তোমাদের এমন সুন্দর পদ্ধতিতে কল্যাণ করে দেন, যাতে আর কখনই কাঁদতে না হয়। ক্রন্দন করা তো অকল্যানের চিহ্ন কিম্বা তা দেহ-অভিমানের লক্ষণ"

প্রশ্ন:-

কি এমন নিশ্চিত ভবিষ্যৎকে জেনে নিজেকে সদা নিশ্চিন্ত রাখতে হয় ?

উত্তর:-

তোমরা অবগত আছো যে, অচিরেই এই পুরোনো দুনিয়ার বিনাশ অবশ্যই হবে। যদিও শান্তির লক্ষ্যে লেকেরা প্রয়াস করছে, কিন্তু মানুষ চায় এক আর হয় অন্য কিছু ...! যতই চেষ্টা করুক না কেন, ভবিতব্যকে কেউ আটকাতে পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি যা হওয়ার তা তো হবেই। কিন্তু বি.কে.-দের মধ্যে এই নেশা আছে যে, ঈশ্বর স্বয়ং তোমাকে তার কোলে স্থান দিয়েছেন, সাক্ষ্যাৎকারও করিয়েছেন, আর বিনাশ তো বাস্তবে হবেই হবে, অতএব নিজেকে সর্বদা নিশ্চিন্তে থাকতে হবে।

ওম্ শান্তি ।

বর্তমান বিশ্বে মানুষের মন-বুদ্ধি কেবলমাত্র ভক্তি-মার্গের মহিমাই করে, যেহেতু বর্তমান সময়কালটা ভক্তি-মার্গের। কিন্তু এখানে ভক্তি-মার্গের কোনও মহিমা হয় না। এখানে কেবলই এক বাবার মহিমা। এমন বাবার মহিমা যে করতেই হয়, যেহেতু এই বাবার থেকেই তো এত উচ্চ অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পাওয়া যায়। ভক্তি-মার্গে কিন্তু সে সুখ নাই। ভক্তি-মার্গে থেকেও তো স্মরণ করতে হয় সেই স্বর্গ-রাজ্যকেই। মানুষ মারা গেলে বলা হয় স্বর্গবাসী হয়েছে। তবে তো এতে তাদের খুশী হওয়াই উচিত, এরপর স্বর্গে জন্ম হলে তো আর রোদন করবার মতন অবস্থাই আসবে না। কিন্তু বাস্তবে তা মোটেই সত্য নয় মৃত্যুর পরে স্বর্গে যায়। আর তা যায় না বলেই তো পরিজনেরা রোদন করতে থাকে। কিন্তু এই রোদন যারা করে, তাদের কল্যান তবে কিভাবে হতে পারে? রোদন করা অর্থাৎ দুঃখের চিহ্ন। দুঃখ-কষ্টেই তো লোকেরা রোদন করে- তাই না? জন্ম নেবার সাথে সাথেই বাচ্চারা রোদন করতে থাকে, যেহেতু তারা কষ্ট অনুভব করে। দুঃখ-কষ্ট না থাকলে তারা তো হাসি-খুশীতেই থাকতো। রোদন আসার নেপথ্যের কারণ, কোনও না কোনও অকল্যাণ অবশ্যই তাতে আছে। সত্যযুগে কোনও অকল্যাণ হয় না, তাই সেখানে যেমন রোদনের কোনও ব্যাপারই নেই, তেমনি কারও কোনও অকল্যানও হয় না। এখানে ব্যাবসা-বাণিজ্যে কখনও কখনও লোকসান হয়ে থাকে, কখনও বা অন্নের সংস্থান হয় না, ফলে তারা খুবই দুঃখী হয়। দুঃখের কারণে কান্নাকাটিও করে। আর তখন ভগবানকে ডাকতে থাকে, উনি এসে যেন সবার কল্যাণ করেন। ভগবান যদি সর্বব্যাপীই হবেন, তবে তারা কাকে বলে-কল্যাণ করো? পরমপিতা পরমাত্মাকে সর্বব্যাপী ভাবাটা খুবই বড় ভুল। বাবা তো সবার কল্যাণকারী। একমাত্র তিনিই কল্যাণকারী, একমাত্র তিনিই অবশ্যই সবার কল্যাণ করবেন। বাচ্চারা, তোমরা তো জানো, কল্যাণকারী পরমপিতা পরমাত্মা সর্বদা সবার কল্যাণই করেন। এখন দেখার, পরমপিতা পরমাত্মা কবে আসবেন বিশ্বের কল্যাণ করতে? বিশ্বের কল্যাণের নিমিত্তে আর কেউই যে নেই। তবুও লোকেরা কি করে বলে যে বাবা সর্বব্যাপী? এ যে খুব বড় ভুল। সেই বাবা এখন স্বয়ং নিজের পরিচয় জানিয়ে বলছেন-"মনমনাভব",(*তোমার মনকে আমার ভাবনার সাথে যুক্ত করো) একমাত্র এতেই সব কল্যাণ নিহিত আছে। সত্যযুগ আর ত্রেতাতে কোনও পরিস্থিতিতেই কারও কোনও অকল্যাণ হয় না। ত্রেতাতে, রামরাজ্যে সেখানে বাঘ আর বাছুর একত্রে একই ঘাটে জলপান করে। যদিও রাম-সীতার সেই রাজ্যের তেমন স্তুতি করা যায় না, যেহেতু তখন তাদের কলা (শক্তি ও গুণাবলী) দুই ডিগ্রি কম হয়ে যাওয়াতে অল্প হলেও কিছু না কিছু সুখের মাত্রা কম হয়ে যায়। স্বর্গ-রাজ্য আমাদের সবারই পছন্দের, যেহেতু তা বাবা স্থাপন করেন। তাই তার থেকে পুরো আশীর্বাদী-বর্সা পাওয়াটাই সবচেয়ে ভাল। উচ্চতমেরও উচ্চে যিনি অর্থাৎ বাবা, তার থেকে আশীর্বাদী-বর্সা পেয়ে আমরাও বাবার অনুসারী হয়ে জগতের কল্যাণ করবো। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কল্যাণ কল্যাণ নিজেকেই করতে হয়, অবশ্য তা বাবার শ্রীমৎ অনুযায়ী।

এবার বাবা বোঝাচ্ছেন - একদিকে যেমন আসুরী সম্প্রদায়, অপরদিকে দৈবী সম্প্রদায়। বর্তমান দুনিয়াটা যেমন রাবণ-রাজ্য, অপরদিকে বাবা স্থাপন করে চলেছেন দৈবী-সম্প্রদায়কে। এর অর্থ একথা নয় যে, এখনই দৈবী-সম্প্রদায় আছে এখানে। আসুরী-সম্প্রদায়কেই দৈবী-সম্প্রদায়ে রূপান্তরিতের কাজ চলছে। দৈবী-সম্প্রদায় বলা হয়, যারা সত্যযুগের। এই আসুরী সম্প্রদায়কেই (যোগের বল ও গুণের শক্তি দ্বারা) ভবিষ্যতের দৈবী-সম্প্রদায়ে রূপান্তরিত করেন। যারা বর্তমানে প্রকৃত ব্রাহ্মণ-সম্প্রদায়ের, তারাই ধীরে ধীরে দৈবী-সম্প্রদায়ের হতে যাচ্ছে। গুরু নানাকও তা বলে গেছেন- "মনুষ্য থেকেই দেবত্বের প্রাপ্তি ঘটে ........", কিন্তু কোন্ ধরণের মনুষ্য, যারা দেবত্ব লাভ করে? লোকেরা তো অবিনাশী ড্রামার আদি-মধ্য-অন্তের কিছুই জানে না। সৃষ্টির আদিতে যারা লক্ষ্মী-নারায়ণ হয় তারা খুবই শ্রেষ্টাচারী। তারাও পর্যন্ত আদি-মধ্য-অন্তকে জানে না। যেহেতু তখন তারা আর ত্রিকালদর্শী নয়। দেবতা হবার পূর্বে অবশ্যই তারা ত্রিকালদর্শী ছিলেন, এবং স্ব-দর্শন চক্রধারীও ছিলেন। তাই তো ওনাদের এমন উচ্চ রাজ্য-ভাগ্যের পদ প্রাপ্তি হয়েছে। কিন্তু লোকেরা বিষ্ণুর হাতে সেই স্ব-দর্শনচক্র দেখায়। যুক্তি দিয়ে একথা তাদেরকে বোঝাতে হবে, স্ব-দর্শন চক্রধারী কেবল প্রকৃত ব্রাহ্মণেরাই। লোকেরাও তাতে আশ্চর্য হয়ে যাবে। লোকেরা তো কৃষ্ণের হাতেও তা দেখায় আবার বিষ্ণুর হাতেও দেখায়। তারা তো এটাও জানে না যে, বিষ্ণুরই দুই রূপ লক্ষ্মী আর নারায়ণ। বাচ্চারা, বি.কে. হবার আগে তোমরাও অবশ্য তা জানতে না।

*জগতে যা কিছুই ঘটুক না কেন, লোকেরা বলে- এমন তো হওয়ারই ছিল। যা ঘটবার তাকে কেউ আটকাতে পারে না। এটাই তো ড্রমার মূল কথা। অতএব তাদেরকে সর্বাগ্রে বাবার পরিচয় কিম্বা ড্রামার রহস্যকে বোঝাতে হবে। তা করতে হবে কিন্তু বাবাকে স্মরণ করতে করতে। বাবার পরিচয়ও সেভাবেই জানাতে হবে। বলতে হবে, ইনি হলেন অসীম-বেহদের বাবা, যিনি শিববাবা নামেই খ্যাত। যদিও তিনিই রুদ্র, কিন্তু শিববাবা নামেই পরিচিত তিনি। সেই বাবা স্বয়ং বোঝাচ্ছেন, যেখানে যেখানে ওঁনার ভক্তরা আছে, সেখানে গিয়ে তাদেরকে বোঝাতে।* খবরের কাগজে বেরিয়েছিল, হিমালয় পর্বতের বয়স লক্ষ লক্ষ বছর। কিন্তু হিমালয় পর্বতের আয়ু এভাবে কি নির্ণয় করা যায়? পর্বত তো সদাকালের। তা কখনও লুপ্তও হয় না। এই ভারত ভূ-খণ্ডও তেমনি অবিনাশী। তাই এরও রচনা কাল কেউ বলতে পারে না। ঠিক একই প্রকারে হিমালয়ের ক্ষেত্রেও কেউ বলতে পারে না, হিমালয় পর্বতের অস্তিত্ব কবে থেকে। হিমালয় পর্বতের আয়ুস্কাল গননা করা আদৌ সম্ভব নয়। তেমনি এটাও বলা সম্ভব নয়, আকাশ বা সমুদ্রের বয়স কত। কেউ যদি হিমালয়ের বয়স নির্ণয় করতে পারে, তবে সে সমুদ্রের বয়সও বলে দিতে পারবে। কেউই তা জানে না। বাবার থেকে আশীর্বাদী-বর্সা নেওয়ার জন্যই তো তোমাদের এখানে আসা। আর একমাত্র এটাই হলো ঈশ্বরীয় পরিবার।

বাচ্চারা, তোমরা তো জানো, বাবার একান্ত আপন হতে পারলেই স্বর্গ-রাজ্যের মালিক হওয়া যায়। তা কেবল এক জনক রাজার কথাই নয়। জীবন-মুক্তিতে আর রাম-রাজ্যে তো অনেকেই যাবে। যদিও সবারই জীবন-মুক্তি হবে। কিন্তু তোমাদের পুরুষার্থ তো সেকেণ্ড মাত্র সময়ে মুক্তি ও জীবন-মুক্তি পাওয়ার জন্য। তোমরা যেমন বাবার বাচ্চা হয়েছো, তেমনি তোমরা আবার মাম্মা-বাবাও বলো। সুতরাং জীবন-মুক্তি তো তোমরা পাবেই পাবে-তাই না? কিন্তু একথা তোমাদের বুঝতে হবে, প্রজা তো সংখ্যাতে অনেক হবে। দিন-প্রতিদিন তোমাদের প্রভাবে অনেকেই প্রভাবিত হচ্ছে। এই প্রকৃত ধর্মের স্থাপনা করা খুবই কষ্টসাধ্য। তাছাড়াও ধর্ম-স্থাপকেরা তো উপর থেকে এসে তাদের নিজ ধর্মের স্থাপনা করেন। তাদের অনুসারীরাও তাদের পিছনে পিছনে উপর থেকে আসতে থাকে। কিন্তু এখানে তোমাদের প্রত্যেককেই রাজ্য-ভাগ্য পাবার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হয়। বাচ্চাদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই তো বাবার কর্তব্য। মায়া সবাইকে স্বর্গ-রাজ্যের অনুপযুক্ত করে দিয়েছে এখন। এমন কি যে বাচ্চারা একদা মুক্তি ও জীবন-মুক্তির উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠেছিল তাদেরকেও। ৫-তত্ত্বও এখন অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। যদিও তা আবার উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন এই বাবা-ই। বর্তমানে তোমাদের এক এক সেকেন্ডের পুরুষার্থ এমন ভাবে চলছে, মনে করবে তার ঠিক তেমনটি পুরুষার্থই চলছিল পূর্ব কল্পেও। যেমন কেউ আশ্চর্যবৎ ভাগন্তী হয়ে যায়, বাবার সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বাবাকে বিদায় জানায় ....ইত্যাদি। এসব তোমরা দেখতেই থাকবে। তোমরা একথা তো জানোই, বিনাশ এখন প্রায় দোরগোড়ায়। ড্রামা অনুসারে সবাইকেই নিজ নিজ অভিনয় করে যেতে হবে। মানুষ চায় একরকম - আর হয় অন্যরকম .......! মানুষ তো শান্তি চায়, কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে, তা কেবল তোমরাই জানো। তোমাদের অনেকেরই তার সাক্ষ্যাৎকারও হয়েছে। বিনাশ যাতে না হয় এরজন্য লোকেরা যতই মাথা ঠুকুক না কেন, কিন্তু যা হবার তা তো হবেই। ভূমিকম্প, প্রকৃতিক বিপর্যয় এসব তো হবেই, তাকে তারা আর কি করেই বা আটকাবে? তখন তারাই বলবে, এসব যা কিছু হচ্ছে তা ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই। তোমাদের মধ্যেও খুব অল্প সংখ্যকই আছো, যাদের মধ্যে সেই ঘোর আছে, অর্থাৎ যারা সর্বক্ষণই বাবাকে স্মরণ করতে থাকে। সবাই তো আর পরিপূর্ণ হয় না। তোমরা জানো, যা হবার তাকে রোখা যায় না। এমন হবে- খাবার জন্য মানুষের অন্ন নেই, থাকার জন্য বাসস্থান নেই, এমন কি তিন-পা (এক গজ) জমি পর্যন্ত নেই।

এটা তোমাদের ঈশ্বরীয় পরিবার-এখানে আছে মাতা, পিতা আর বাচ্চারা। বাবা বি.কে.-দের জানাচ্ছেন, একমাত্র বাচ্চাদের সামনেই উনি প্রত্যক্ষ হয়ে বাচ্চাদের শিক্ষা দেন। বি.কে. বাচ্চারাও তেমনই বলে-"আমরা বাবার মত অনুসারেই চলি।" তখন বাবা বলেন-"আমি স্বয়ং বাচ্চাদের সামনে হাজির হয়ে আমার মত দেই, যা কেবল বাচ্চারাই উপলব্ধি করে। আর যদি তা উপলব্ধিতে না আসে তবে ছাড়ো সেসব কথা। লড়াই-ঝগড়ার কোনও প্রয়োজন নাই। আমি যে বাবা, তা তো আমি স্বয়ং সে পরিচয় দেই। তাই তো জানাচ্ছি-আমাকে স্মরণ করলেই তোমাদের বিকর্মগুলির বিনাশ হবে আর স্ব-দর্শন চক্রকে স্মরণ করলে চক্রবর্তী রাজা হতে পারবে। "মন্মনা ভবঃ, মধ্যাজী ভবঃ-এর অর্থই এটা।" বাবার পরিচয়ও এভাবে দাও, যাতে ক্রিয়েটর আর তার ক্রিয়েশনের রহস্যও সহজেই বুঝতে পারে। এটাই মূল ও মুখ্য কথা। গীতারও প্রধান ভুল এটাই। বাবা বলছেন-যেহেতু একমাত্র আমিই কল্যাণকারী, তাই আমাকেই এসে তোমাদের কল্যাণ করতে হয়। শাস্ত্রের মাধ্যমে তো আর কারও কল্যাণ হয় না। প্রথমে এটাই বোঝাতে হবে যে, ভগবান একমাত্র একজনই। যদিও তোমরা তাকেই স্মরণ করো, অথচ তাকে জানোই না। বাবাকে স্মরণ করতে হলে, প্রথমে তো তার পরিচয় জানতে হবে। উনি থাকেন কোথায়, এখানে আসেন কি না ? বাবা যখন তিনি, তবে তো অধিকারের আশীর্বাদী-বর্সাও তিনিই দেবেন। কিন্তু তা কি এখানকার জন্য, না কি সেখানকার জন্য? বাবা যখন, তবে তো তিনি বাচ্চাদের সামনা-সামনিও হবেন। লোকেরা তো তার উদ্দেশ্যেই শিবরাত্রি-ব্রত পালন করে। শিবের অর্থ সুপ্রিম ফাদার, (পরমাত্মা)। যিনি সব আত্মাদেরই (পরম) পিতা। উনিই ক্রিয়েটর (রচয়িতা)। উনিই আবার নতুন করে জ্ঞান দান করেন। সৃষ্টি-চক্রের আদি-মধ্য ও অন্তকে একমাত্র উনিই জানেন। উনিই উচ্চতমেরও উচ্চ অর্থাৎ সর্বোচ্চ টিচার, যিনি রাজযোগের শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যকে দেবতা করে গড়ে তুলতে পারেন। কোনও মনুষ্য রাজযোগ শেখাতে পারে না। সেই বাবা স্বয়ং বি.কে.-দের এই রাজযোগ শেখান, যা পরে বি.কে.-রা অন্যদের শেখায়।

গীতার প্রারম্ভে এবং অন্তিমে 'মন্মনা ভবঃ' আর 'মধ্যাজী ভবঃ' -বলা আছে। বাচ্চারা, তোমাদের বুদ্ধিতে কল্প-বৃক্ষের ঝাড় আর ড্রামার জ্ঞান তো আছে। এগুলিও সবিস্তারে বোঝাতে হবে। কিন্তু অন্তিম পরিনতির ফল সেই একই কথা- 'বাবা আর ওঁনার আশীর্বাদী-বর্সাকে স্মরণ করতে হবে।' এখানেও সেই একই কথা। তবেই তোমরা বিশ্বের মালিক হতে পারবে। বিশ্বের কল্যাণকারী পরমাত্মাই বিশ্বের মালিক বানাতে পারে। উনি যখন বানাবেন, তখন তো স্বর্গ-রাজ্যের মালিকই বানাবেন, নরকের মালিক তো আর বানাবেন না। দুনিয়ার লোকেরা এটাও তো জানে না যে, নরকের রচয়িতা রাবণ আর স্বর্গ-রাজ্যের রচয়িতা এই বাবা। তাই বাবা এখন জানাচ্ছেন, মৃত্যু তো তোমাদের দেরগোড়ায়। সবারই যে এখন বানপ্রস্থ অবস্থা। তাই উনি স্বয়ং এসেছেন ওনার সাথে বাচ্চাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তাই বাবা বলছেন, ওনাকে স্মরণ করতে, যাতে বিকর্মগুলির বিনাশ হয়ে যায়। তাতে আত্মার কালিমাগুলি ধুয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবেই উনি তোমাদেরকে সেই স্বর্গ-রাজ্যে পাঠাতে পারবেন। নিজে নিশ্চয়বুদ্ধি হয়ে তারপর সবাইকেই একথা বোঝাতে হবে, তোতার মতন বুলি আওড়ানোর ব্যাপার নয় এটা। যে শিশ্চয়-বুদ্ধির হতে পারে, তার আর দেহ-অভিমান আসে না, ফলে তার আর রোদনের প্রশ্নই নেই। এই দেহ-অভিমানই মানুষকে নোংরা বানায়। বাচ্চারা, অতএব তোমাদের দেহী-অভিমানী হতেই হবে। শরীর নির্বাহের জন্য অর্থ উপার্জনের জন্য কর্ম তো করতেই হবে। জাগতিক সন্ন্যাসীরা তো 'কর্ম-সন্ন্যাস' নিয়ে সন্ন্যাসী হয়। কিন্তু এখানে তোমাদের গৃহস্থ-পরিবারে থাকতে হয়, বাচ্চা-কাচ্চাও সামলাতে হয়। সঠিক ভাবে প্রকৃত বাবাকে আর চক্রকে জানতে পারলে, তা খুবই সহজ হয়ে যায়।

বাবার এত অনেক সন্তান। এদের মধ্যে যেমন সুপুত্রেরা আছে, তেমনি আছে কুপুত্রেরাও। এরাই বাবার নাম বদনাম করে। এদের কারণে বাবার মুখ ঢাকতেও হয়। তাই বাবা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন-আমার মুখ কালো করো না যেন। বাচ্চা যখন হয়েইছো, তবে আবার কেন আমার মুখ কালো করাও, কুলকে কলঙ্কিত কেন করো। পূর্বে কাম-চিতায় বসে বসে তোমরা নিজেরা তো কালো হয়েইছো, এখন কি আবার জ্বলে পুড়ে মরবে? তাই সামান্যতম ইচ্ছাও আসা উচিত নয়। জাগতিক সন্ন্যসীরা তাদের অনুসারীদের এমন কথা কিন্তু বলে না। তারা তো আর সংসারের বাস্তব জগতের সাথে যুক্ত থাকে না। এই বাবা সকলকেই প্রকৃত সত্যটাকে জানান। তাই বাবা বলছেন- বাচ্চারা, তোমরা অবশ্যই আমাকে সেভাবেই স্মরণ করবে , আর তোমরাও তো সেই গ্যারান্টী দাও, "বাবা আমরা তোমার মত অনুসারে চলেই স্বর্গ-রাজ্যে অধিকারী হবোই হবো।" তখন বাবা আবার বলেন- "বাচ্চারা, তবে কেন তোমরা বিষয়-সম্পত্তির পাপের গাড্ডায় পড়ায় কথা ভাবো? কন্যারা, তোমাদের এমন ভাবে মুরলী পাঠ করতে হবে, যাতে তা শুনে সবাই একবাক্যে বলে উঠবে-"বাঃ, এমন সুন্দর জ্ঞানের কথা পূর্বে কখনও শুনিনি আমারা।" সাথে চিত্র নিয়ে গিয়ে মন্দিরের প্রধানকেও বোঝাতে হবে। ত্রিমূর্তির ঝাড় (কল্পবৃক্ষ) যা প্রকৃত অর্থে দিলওয়ারা মন্দিরেরই চিত্র। একেবারে শীর্ষে যা আছে তা দৈবী ঝাড়। তারপরেই বোঝাতে হবে সেই ঝাড় যা পূর্বেও অনেকবার এমনটাই হয়েছে। এমন সেবা যে বাচ্চা করে দেখাতে পারবে, বাবাও তার মহিমা করবে। এমনই একজন কামাল করে দেখিয়েছে। (অর্থাৎ বাবা রমেশ ভাই-জীর মহিমা করছেন।) বিহঙ্গ-মার্গের সেবায়, যা খুবই সুন্দর পদ্ধতিতে, অনেক ভাল ভাল চিত্রের দ্বারা সে খুব সুন্দর সুন্দর প্রদর্শণী করে অনেককে নিমন্ত্রণও দিতো। এই বিহঙ্গ-মার্গের সেবা, যা অতি অল্প সময়ে খুব দ্রুত সেবা করা যায়। এখানেও এমন প্রদর্শনী করা উচিত।

এবার, দিল্লীতে যে ধর্মীয় সম্মেলন করা হয়, সেখানে একতার কথাই বলা হয়। অথচ যার কোনও মানেই হয় না। বাবা তো কেবল একজনই আর বাকীরা সবাই তো ভাই-বোন। অতএব প্রশ্ন- আশীর্বাদী-বর্সা তো সেই একমাত্র বাবার থেকেই নিতে হবে সবাইকে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে সবাই মিলেমিশে ক্ষীরখণ্ড হয়ে থাকবেই বা কিভাবে, -যা অবশ্যই সবারই বোঝার বিষয়। প্রদর্শনীর বৃদ্ধির ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে ভাবনা-চিন্তা করে তা স্থির করতে হবে। আর যে সেবা-কার্য করবে না, তার নিজেরই তো লজ্জা পাওয়া উচিত। যেমন ১০-জন নতুন এলো, কিন্তু পুরোনোদের ৮-১০ জন মরেই গেলো, তবে আর তাতে কি বা লাভ হলো? *আচ্ছা !*

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা ও বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওঁনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১) শরীর নির্বাহের জন্য কর্ম করার সাথে সাথে দেহী-অভিমানী হওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কোনও পরিস্থিতিতেই রোদন করা বা দেহ-অভিমানে আসা চলবে না।

২) শ্রীমৎ অনুসারে চলে নিজের ও অপরের কল্যাণ করতে হবে। সুপুত্র হয়ে বাবার নামকে উজ্জ্বল করতে হবে।
 

বরদান:-

শীতলা-দেবী হয়ে সব কর্মেন্দ্রিয়গুলিকে শীতল ও শান্ত বানিয়ে স্বরাজ্য অধিকারী হও

যে স্বরাজ্য অধিকারী বাচ্চা হতে পারে, তাকে কোনও ইন্দ্রিয়ই ধোঁকা দিতে পারে না। আর যখন এই ধোঁকা দেবার চঞ্চলতা সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন সে নিজেই শীতলা দেবী হয়ে যায় আর সব কর্মেন্দ্রিয়গুলিও শীতল হয়ে যায়। এমন শীতলা দেবীর মধ্যে কখনও ক্রোধের সঞ্চার হয় না। কেউ কেউ বলে, যদিও তাদের ক্রোধ নেই, কিন্তু কর্তৃত্ব-ভাব তো রাখতেই হয়। কর্তৃত্ব-ভাবও তো ক্রোধেরই অংশ। আর যেখানে অংশ মাত্রও থাকে, সেখান থেকেই তো বংশ বিস্তার হয়। তোমরা বি.কে.-রা শীতলা-দেবী আর শীতল-দেব, তাই স্বপ্নেও যেন ক্রোধ আর কর্তৃত্ব-ভাবের সংস্কার ফুঁটে না ওঠে।

স্লোগান:-

আজ্ঞাকারী বাচ্চারা স্বতঃ-ই আশীর্বাদের পাত্র, তাই তাদের আর আশীর্বাদ চাইবার প্রয়োজন পড়ে না।