২১-১১-১৮ : প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - পবিত্র হয়ে গতি-সদগতির উপযুক্ত হয়ে ওঠো। পতিত আত্মারা গতি-সদগতি পায় না। অসীম-বেহদের বাবা তোমাদের বেহদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন"
প্রশ্ন:-
কাকে পিতাব্রতা বলা যাবে ? -- তার প্রধান লক্ষণগুলি শোনাও ?
উত্তর:-
পিতাব্রতা তাকেই বলা যাবে, যে সম্পূর্ণরূপে বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চলে, অশরীরী হওয়ার অভ্যাস করে, অব্যাভিচারী স্মরণের যোগে থাকে -- এমন সুপুত্র বাচ্চা বাবার প্রতিটি বাক্যই ধারণা করতে পারে। তার চিন্তা-ভাবনা সর্বদাই সেবার প্রতি থাকে। ফলে তার বুদ্ধির আধার (পাত্র) পবিত্র হয়ে যায়। আর কখনই সে বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না।
গীত:-
হৃদয়ের ধন্যবাদ জানাই তোমাকে - আমার যাবতীয় দায়িত্ব....
ওঁম্ শান্তি!
বাচ্চারা ধন্যবাদ জানায় সেই হিসেবেই, যার যার নিজের পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে। সবাই একই প্রকারে ধন্যবাদ জানায় না। যে তেমন নিশ্চয় বুদ্ধির হবে, ও মনপ্রাণ দিয়ে বাবার সেবা করবে, কেবল সে প্রেম পূর্বক হাজির হবে। সে হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাবে বাবাকে। সেই বাচ্চা বলবে-"বাবা সত্যি কি অলৌকিক দক্ষতা আপনার, আমরা এসবের কিছুই জানতাম না আগে। আমাদের কোনও যোগ্যতাই ছিল না-আপনার সাথে মিলিত হবার।" --তা ঠিকই বটে, মায়া সবাইকে অযোগ্য বানিয়েছে। লোকেরা তো জানেই না, স্বর্গ-রাজ্যের উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন কে, আর নরকে টেনে আনে কে? -কিন্তু তারা একথা অবশ্যই জানে, গতি আর সদগতির উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারেন একমাত্র এই বাবা। উনি ছাড়া আর কেউ যে নেই। লোকেরা নিজেরাই তো তা বলে-"আমরা পতিত, এই দুনিয়াও পতিত।" এমন কি সাধু-সন্ন্যাসীরাও কেউ সঠিক রীতিতে বাবাকে জানে না। তাই বাবা স্বয়ং এখন নিজের পরিচয় জানাচ্ছেন আপন বাচ্চাদেরকে। (অবিনাশী নাটকের) নিয়মানুসারে বাবা এসে স্বয়ং ওনার পরিচয় দেবেন। আর বাবাকে এখানে এসেই বাচ্চাদেরকে পবিত্র বানিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হয়। সেখানে (পরমধামে) বসেই যদি পবিত্র বানানো যেত, তবে তো সেখানে বসেই তা করতেন, তবে কি আর তোমরা এত বিশাল সংখ্যক অযোগ্য বাচ্চা হতে?
বাচ্চারা, তোমাদের মধ্যেও পুরুষার্থের ক্রমানুসারে নিশ্চয়বুদ্ধির হও। সঠিক ভাবে বাবার পরিচয় কিভাবে দিতে হবে, তার জন্যও তেমন বুদ্ধির দরকার হয়। শিবায় নমঃ -একথা অবশ্যই বলতে হবে। একমাত্র উনি সবার মাতা ও পিতা, অর্থাৎ যিনি সর্বোচ্চ। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকর এনারা তো রচনা। নিশ্চয় কোনও না কোনও পিতা এদের রচনা করেছেন, যার জন্য আবার মায়েরও প্রয়োজন। সবারই 'গড-ফাদার' যিনি, তিনি নিশ্চয় একজনই হবেন। নিরাকারকেই 'গড' বলা হয়। রচনাকার চিরকালই এই একজন। তাই, শুরুতে পরিচয় জানাবে সেই 'আল্ফ'-এর। কিভাবে তা যুক্তিযুক্ত পরিচয় দিতে পারবে, তা খুব ভালভাবে নিজেকেই বুঝে নিতে হবে। ভগবান যিনি জ্ঞানের সাগর, উনি স্বয়ং এসে রাজযোগ শেখান। কিন্তু সেই ভগবান আসলে কে? তাই সর্বাগ্রে 'আল্ফ'-এর পরিচয় দিতে হবে। বাবা (পরমাত্মা) যেমন নিরাকার, আত্মাও তেমনি নিরাকার। সেই নিরাকার বাবা এসেই বি.কে. বাচ্চাদের অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিয়েও বোঝাতে হবে। তা না হলে, রাজাদেরও রাজা হবে কিভাবে? সত্যযুগী রাজ্য কে স্থাপন করেছিল? স্বর্গ-রাজ্যের রচয়িতা কে? তিনি নিশ্চয়ই 'হেভেনলী গড-ফাদার'-ই হবেন। প্রকৃত অর্থে তিনি নিরাকারই হবেন নিশ্চয়। তাই শুরুতেই বাবার পরিচয় জানানো উচিত। কৃষ্ণ আর ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরকে কিন্তু পিতা বা ফাদার বলা যায় না। তারাও তো কারও রচনা। যখন সেই সূক্ষ্মবতনে সূক্ষ্মবতন-বাসীদেরও রচা হয়, তখন সেখানে ভগবান স্থুল-বতন-বাসীদের কি করেই বা রচনা করবেন।
*লোকেরা যে বলে দেবতায় নমঃ, আসলে তা হলো 'শিবায় নমঃ'- এটাই মূল ও প্রধান কথা। কিন্তু প্রদর্শনীতে তো আর বারে-বারে একই কথা বোঝাতে যাবে না। তাই প্রত্যেককেই খুব সুন্দর রীতিতে তা বোঝাতে হবে। তাদের মধ্যে যেন সেই নিশ্চয়তা আসে। যে আসুক, শুরুতেই তাকে বলবে-"ভিতরে এসো, প্রথমে তোমাদেরকে বাবার সাক্ষ্যাৎকার করাই। এই বাবার কাছ থেকেই অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পাওয়া যায়। গীতাতেও আছে, এই বাবা-ই কিন্তু রাজযোগ শিখিয়েছিলেন, তা মোটেই কৃষ্ণ নয়। এই বাবা, গীতা-জ্ঞানের প্রকৃত ভগবান। যা মূল ও প্রধান কথা। কৃষ্ণ কিন্তু 'ভগবান উবাচ' নয়। আসলে তা 'রুদ্র ভগবান উবাচ', বা 'সোমনাথ ভগবান উবাচ', কিম্বা 'শিব ভগবান উবাচ' - ভাবার্থে তো এমনই বলা হয়ে থাকে।* প্রত্যেক মানুষেরই তাদের নিজেদের জীবন কাহিনী ভিন্ন-ভিন্ন। একের সাথে অন্যের (হুবহু) কোনও মিল নেই। তাই যে কেউ আসুক না কেন, শুরুতে এই কথাগুলি বোঝাতে হবে তাদের। আসল কথা হলো কত সুন্দর ভাবে তোমরা তা বোঝাতে পারছো। পরমপিতা পরমাত্মার অকুপেশন (কর্ম-কর্তব্য) গুলি কি কি আর বাচ্চাদের কি কি। উনি হলেন হেভেনলী গড-ফাদার আর ওনার বাচ্চারা হেভেনলী প্রিন্স-প্রিন্সেস! এটা স্পষ্ট করে বোঝাতে হবে। *গীতা হলো সর্বশাস্ত্রের শিরোমনি। গীতার আধারেই যাবতীয় শাস্ত্র রচিত হয়েছে। তাই সর্ব-শাস্ত্রের মা 'শিরোমনি ভগবৎ গীতা'।* লোকেরা জানতে চায়, তোমরা বি.কে.-রা কি শাস্ত্র, বেদ ইত্যাদিকে মান্যতা দাও? আরে, প্রত্যেকেই তো নিজের ধর্মের শাস্ত্রকে মান্যতা তো দেবে। কিন্তু তা বলে সব ধর্মের শাস্ত্রকে তো আর নিজের ধর্মের বলে মানবে না। *হ্যাঁ, শাস্ত্র তো অনেক প্রকারেরই আছে, কিন্তু শাস্ত্রের জ্ঞানের চাইতে মুখ্য বিষয় হলো বাবাকে চেনা-জানা। যার থেকে অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পাওয়া যায়। যা শাস্ত্র থেকে তো আর পাওয়া যাবে না। এই অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা একমাত্র বাবার থেকেই পাওয়া যায়।* বাবা যে জ্ঞান দেন, যে অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা দেন, সেই পুস্তক বানানো আছে বি.কে.-দের জন্য। প্রথমেই গীতার প্রসঙ্গ ওঠাতে হবে। গীতার প্রকৃত ভগবান কে? যার মধ্যে রাজযোগের কথা লেখা আছে। এই রাজযোগের দ্বারাই নতুন দুনিয়া রচিত হয়। ভগবান এসে তো আর কারওকে পতিত বানান না। উনি তো পবিত্র মহারাজা করে গড়ে তোলেন বাচ্চাদেরকে।
শুরুতেই বাবার পরিচয় দিয়ে তাদেরকে দিয়ে লেখাও-বাবার প্রতি আমার এইরূপ নিশ্চয়তা হয়েছে, এই বাবা-ই আমার প্রকৃত বাবা। 'শিবায় নমঃ' বিষয়টাও বোঝাতে হবে শুরুতেই। তুমিই মোদের মাতা-পিতা......এই মহিমাও ঐ বাবারই। ভগবানকে তো এখানে আসতেই হয়, ভক্তদেরকে তাদের ভক্তির ফল দিতে। এখন তোমরা বুঝতে পারছো-ভক্তির ফল ব্যাপারটা কি! অর্থাৎ যে অনেক ভক্তি করেছে, সে ফল পাবে৷ এসব কোনও শাস্ত্র-পুঁথিতে নেই। তোমাদের মধ্যেও তার ধারণা ততটাই হয়, যার যার পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে। আর তাই তো তোমাদের একই কথা বার-বার বোঝানো হয়। তোমাদের মাতা-পিতাও কিন্তু এই একই বেহদের বাবা। যদিও জগৎ অম্বা ও জগৎ পিতার ব্যাপারটাও আছে। লোকেরা যাদের জানে 'এ্যাদম্ আর ইভ্' হিসাবে। তারা 'ইভ্-কেই মাদার বলে। সঠিক কেউই জানে না - 'ইভ্' আসলে কে? বাবা বসে সেগুলিই তো বোঝান। তবে হ্যাঁ, ফট্ করে কেউ তা বুঝতে পারবে না। পড়াশোনাতেও তো সময় লাগে। পড়তে-পড়তে তবেই তো কেউ ব্যারিস্টার হয়। তাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অবশ্যই তেমনই রাখতে হবে। আর দেবতা হতে চাইলে শুরুতেই সঠিক ভাবে বাবার পরিচয় জানতে হবে ও জানাতে হবে। অথচ লোকেরা বলে থাকে, তুমিই আমাদের মাতা-পিতা ...... এছাড়াও তো বলে, হে পতিত-পাবন এসো। তবে, পতিত দুনিয়া আর পাবন (পবিত্র) দুনিয়া কাকে বলে? কলিযুগ কি এখনও আরও ৪০-হাজার বর্ষ পর্যন্ত চলবে? আচ্ছা, পবিত্র বানাবার কারিগর তো এই একজনই যিনি বাবা, তাই না! স্বর্গ-রাজ্য স্থাপন করেন সেই 'গড্-ফাদার'-ই। কৃষ্ণ তো আর তা পারবে না। সেও তো ওনার থেকেই সেই অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা নেয়। এই কৃষ্ণ স্বর্গ-রাজ্যের প্রথম রাজকুমার আর শিববাবা স্বর্গ-রাজ্যের রচয়িতা। এসব খুব স্পষ্ট ভাবে বড়-বড় হরফে লেখা উচিত, তবেই বোঝাতে সহজ হবে তোমাদের। লোকেরাও রচয়িতা আর রচনার তফাৎটা বুঝতে পারবে। এই রচনাকারই একমাত্র নলেজফুল, যিনি রাজযোগের শিক্ষা দেন। যদিও উনি নিজে কোনও রাজা নন, কিন্তু উনি এই রাজযোগ শিখিয়েই তোমাদেরকে রাজারও রাজা বানান। যেহেতু এই রাজযোগ শেখাচ্ছেন স্বয়ং ভগবান, তাই কৃষ্ণও (ওঁনার থেকে) সেই রাজ্য-ভাগ্য লাভ করে। পরে কৃষ্ণ নিজেই তা খুইয়েও ফেলে, যা আবারও উনিই তা পান। চিত্রের মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে তা বোঝানো যেতে পারে। অবশ্য এর জন্য সেই দক্ষ বাবার প্রয়োজন যার এমন অকুপেশন। (শাস্ত্রে) বাবার নামের বদলে শ্রীকৃষ্ণের নাম ঢুকিয়ে দেওয়াতেই হীরেতুল্য ভারত এখন কানা-কড়ি তুল্যের হয়ে গেছে। শিববাবাকে প্রকৃত রূপে জানতে পারলে আবার সেই ভারতই হীরে তুল্য হয়ে যায়। কিন্তু তা সম্ভব তখনই, যখন তোমাদের বুদ্ধিতে পাকাপাকিভাবে ধারণা হবে যে, এই শিববাবাই তোমাদের প্রকৃত বাবা। বাবা শুরুতে এই দুনিয়াকে রচনা করেন স্বর্গ-রাজ্য হিসাবে। যা এখন অতি পুরেনো দুনিয়ায় পর্যবেশিত। গীতাতেও রাজযোগের উল্ল্যেখ আছে। বিলেতের সাহেবরাও রাজযোগ শিখতে আগ্রহী। গীতা পড়েই তারা তা জেনেছে। আর তোমরা এখন তা জানছো। তাই তোমরাও প্রয়াস করে চলেছো অন্যদেরকেও তা জানাতে- প্রকৃত বাবা কে? মোটেই তিনি সর্বব্যাপী নন। তিনি যদি সর্বব্যাপীই হবেন, তবে তোমাদের রাজযোগ শেখাবেন কিভাবে? এই ভুলের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। আর যে সেবার প্রতি তৎপর, তার সে খেয়াল অবশ্যই থাকবে। আর তোমাদের ধারণাও তত পাকা হবে, ফলে সর্বদাই বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চলবে, অশরীরীভাবে থাকবে। মনমনাভব ভাব থেকে পবিত্রতা আর পিতাব্রতা অর্থাৎ বাবার সুপুত্র বাচ্চাও হতে পারবে।
*আদেশের সুরে বাবা এবার বাচ্চাদের বলছেন, যত বেশী সম্ভব স্মরণের যোগ বাড়াতে হবে ধীরে ধীরে। কিন্তু দেহ-অভিমান ভাবে এলে স্মরণের যোগ হবেই না, ফলে বুদ্ধিও পবিত্র হবে না। যেমন প্রবাদ আছে "বাঘিনীর দুধ কেবল সোনার পাত্রেই রাখা যায়।" তেমনি স্বচ্ছ মনেরও প্রয়োজন পিতাব্রতা পাত্রের। অব্যাভিচারী পিতাব্রতা বি.কে.-র সংখ্যা যথেষ্ট কম। তোমাদের মধ্যেও অনেকেই তা একেবারেই জানে না। তারা যেন একেবারে ছোট বাচ্চা। যদিও তারা এখানে বসেই ক্লাস করে, কিন্তু কিছুই যেন বোঝে না তারা।* ঠিক যেন অবুঝ বাচ্চাকে শিশু অবস্থাতেই বিয়ে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেকটা তেমনই। আগে অভিভাবক বাচ্চাকে কোলে বসিয়েই বিয়ে করিয়ে দিতো। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অপরের বন্ধুর মতন। ফলে তাদের মধ্যে যথেষ্ট প্রেম-প্রীতিও জন্মাতো। তাই তো তাড়াতাড়ি বিয়ের এই রীতি গড়ে উঠেছিল সমাজে। বিয়ের বাগদান হবার পরও তারা সেসব কিছুই বুঝতো না। এখন তোমরা মাম্মা-বাবার আপন হয়েছো, তাই ওনাদের থেকেই আশীর্বাদী-বর্সা নিতে হবে তোমাদের। অথচ লোকেরা এসবের কিছুই জানে না, সত্যি কি আশ্চর্যের। এখানে ৫-৬ বছর থাকার পরেও এই বাবাকে অর্থাৎ পতিকে ডিভোর্সও দেয় কেউ কেউ। যেহেতু মায়া তাদের জ্বালাতন করতে থাকে।
এবার বাবা বলছেন- তবে শুরুতেই তোমরা শোনাবে, "শিবায় নমঃ!" ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরেরও রচয়িতা এই বাবা। এই বাবা অর্থাৎ শিববাবাই হলেন জ্ঞানের সাগর। এরপরে তবে কি করবে? এই ত্রিমূর্তির পাশে যে জায়গা খালি পড়ে আছে, সেখানে লিখবে-শিববাবা আর কৃষ্ণ, এই দুজনের কর্ম-কর্তব্য ও গুণাবলির তফাৎগুলি। এই বিষয়গুলি ভালভাবে বিশ্লেষণ করলেই তাদের ভাগ্যের প্রথম দরজা খুলে যাবে। তার পরের পঠন-পাঠন, সে তো ভবিষ্যতের জন্য। এমন রীতিতে শিক্ষা-পদ্ধতি আর কোথাও হয় না। কোনও শাস্ত্রের মাধ্যমে এমন অনুভব হয় না। বাচ্চারা, তোমরা জানো, এই পাঠ আগামীতে সত্যযুগ ইত্যাদি স্থাপনার জন্য। স্কুলের পাঠ সম্পূর্ণ হলে তবেই তো ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। তারপর সেখানে গিয়ে রাজত্ব করবে। কিন্তু যারা জাগতিক গীতা শোনায়, তারা এসবের মর্মার্থ বোঝাতে পারবে না কিছুই। যেহেতু, সর্বাগ্রে তো বাবাকে জানতে হবে এবং তার আশীর্বাদী-বর্সাও যে পেতে হবে। যেখানে একমাত্র এই বাবা হলেন ত্রিকালদর্শী। দুনিয়ার অন্য কোনও মনুষ্যই ত্রিকালদর্শী হতে পারে না। বাস্তবে পূর্বে যারা (বি.কে.-রা) পূজ্য ছিল - তারাই এখন পূজারী। ভক্তিও তোমরাই বেশী করেছো। লোকেরা তো এখনও সেসব জানতেই পারেনি। যিনি সবচাইতে বেশী ভক্তি করেছেন, উনিই নম্বর ওয়ান- ব্রহ্মা, তারপর ব্রহ্মা মুখ-বংশাবলী বি.কে. ব্রাহ্মণেরা। অর্থাৎ সাধারণ নিয়মেই একদা যে ছিল পূজ্য, আজ সেই পূজারী। যে এক নম্বরের পূজ্য থাকে, পরবর্তীতে সে এক নম্বরের পূজারী হয়। আবার সে প্রথম নম্বরের পূজ্য হবে। ভক্তির ফলও প্রথমে পাবেন উনিই। এই বি.কে.- ব্রাহ্মণেরাই পঠন-পাঠনের সাহায্যে আবারও দেবতার পদ অধিকার করে। যদিও এসব তথ্য কোথাও লিখিত আকারে নেই। ভীষ্ম পিতামহও তা কেবল তখনই জানতে পেরেছিলেন, যখন কেউ ওনাকে জ্ঞানের বাণ মেরেছিলেন। আর তখন নিশ্চয়ই অনুভব করেছিলেন, এই জ্ঞান বাণের শক্তিকে, যা এখনও চর্চিত হয়। যিনি এদের শিক্ষা দেন, এতে নিশ্চয় তেমন কোনও শক্তি আছে, যা অবশ্যই শিক্ষনীয়।
বাবা ওঁনার আপন বাচ্চাদেরকে অবলোকন করে বলছেন-বাচ্চারা, তোমরা তো আমার একান্ত আপন। শিববাবা এই ব্রহ্মাবাবার মাধ্যমেই সবকিছু দেখে থাকেন। যেমন, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে খাওয়ানো হয়, তখন সেই আত্মা সেখানে এসে দেখে -কে কে আছে সেই স্থানে। সেই পিণ্ড যে খায়, তখন তার চোখ-মুখ, হাব-ভাব ইত্যাদি সেই মৃত ব্যাক্তির মতনই হয়ে যায়। যেহেতু অল্প সময়ের জন্য সেই আত্মা ঐ ব্যক্তির শরীরকে আশ্রয় করে। এসব কেবল ভারতেই হয়। প্রাচীন ভারতের সর্বপ্রথম প্রধান গণ্য-মান্য হন রাধা-কৃ্ষ্ণ। তাদের জন্মদাত্রীরাও তাদের মতন উচ্চ-স্তরের গণ্য হন না। যেহেতু তারা একটু কম নম্বর পেয়েই পাস করে বলে। তাই মহিমা শুরু হয় কৃষ্ণ থেকেই। রাধা ও কৃষ্ণ দুজন নিজেদের পৃথক পৃথক রাজ্যের রাজধানীতে জন্ম নেন। তাদের মা-বাবার চাইতে বাচ্চাদের নামই অনেক বেশী বিখ্যাত হয় দুনিয়ায়। সত্যি কি চমৎকার লাগে শুনতে। মনের ভিতরে খুশীর ফল্গু বইতে থাকে। বাবা জানাচ্ছেন, উনি আসেন সাধারণ এক শরীরকে আধার করে, যার মাধ্যমে (যজ্ঞের) এতসব খরচা-পাতি চলতে থাকে। মাতাদের বড়-বড় গ্রুপকেও সামলাতে হয় ওনাকেই। যদিও ভাণ্ডারা তো শিববাবারই। যিনি ভোলা ভাণ্ডারী আবার অবিনাশী জ্ঞান রত্নের একমাত্র অধিকারী এবং অসংখ্য দত্তক সন্তানেরও। যাদের দেখাশোনা, লালন-পালনও ওনাকেই করতে হয়। তোমরা বাচ্চারা তো তা জানোই।
প্রথমে যখনই কারওকে বোঝাতে যাবে, শুরুতেই বলবে, "শিব ভগবান উবাচ-যিনি সবার রচয়িতা।" তারপর বলবে-"কৃষ্ণ-কে কোনও যুক্তিতেই জ্ঞানের সাগর, 'গড্-ফাদার' বলা যায় না।" এগুলি এত স্পষ্টভাবে লিখতে হবে, কেউ তা পড়লে যেন সেসব বুদ্ধিতে তার বসে যায়। যদিও সঠিক ধারণায় তা বুঝতে আবার কারও বা দু-তিন বছর সময় লেগে যায়। এদিকে আবার ভগবানকে আসতে হয়, ভক্তদেরকে তাদের ভক্তির ফল দেবার জন্য। ব্রহ্মার দ্বারা এই (রুদ্র) যজ্ঞ রচেন শিববাবা। বাবা স্বয়ং এসে বি কে.ব্রাহ্মণদের জ্ঞানের পাঠ পড়িয়ে ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা তুল্য করে গড়ে তোলেন। আবার তোমাদের পতনের চক্করে নীচে আসতে হয়। এগুলি খুব সুন্দর ভাবে বিশ্লষণ করে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে, সৌভাগ্যবান শ্রীকৃষ্ণই যিনি 'হেভেনলী প্রিন্স' (স্বর্গ-রাজ্যের প্রথম রাজকুমার), কিন্তু 'হেভেনলী গড্-ফাদার' সে মোটেই নয়। আসলে, সর্বব্যাপী এই জ্ঞান ও ধারণা থেকেই সবকিছু এমন তমোপ্রধান হয়ে গেছে। যিনি তোমাদের স্বর্গ-রাজ্যের রাজত্ব দিলেন, তাকেই তোমরা ভুলে গেলে। এইভাবে প্রতি কল্পেই বাবা বাচ্চাদেরকে রাজ্য-ভাগ্যের অধিকার সঁপে দেন, আর তোমরা বাচ্চারা আবারও সেই বাবাকেই ভুলে যাও। সত্যি, কি বিস্ময়কর লাগে, তাই না! অতএব সারাদিন এই খুশীতেই আনন্দে থাকা উচিত, বাবা তোমাদেরকে সমগ্র বিশ্বের মালিক বানাচ্ছেন। *আচ্ছা!*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা ও সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওঁনার একান্ত আপন ঈশ্বরীয় সন্তানদের।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. অব্যভিচারী পিতাব্রতা হয়ে থাকতে হবে। স্মরণের যোগকে বাড়িয়ে বুদ্ধিকে পবিত্র বানাতে হবে।
২. যুক্তিযুক্ত ভাবে বাবার পরিচয় দেবার বিধি খুঁজে বের করতে হবে। বিচার সাগর মন্থন করে 'অল্ফ'-কে প্রমাণ (সিদ্ধ) করতে হবে। নিশ্চয় বুদ্ধির হয়ে সেবা করতে হবে।
বরদান:-
অমনোযোগিতা মুক্ত হয়ে স্বউন্নতির যথার্থ চশমা পড়ে উদাহরণ স্বরূপ হও
যে বাচ্চা নিজেকে কেবল বড় মনের দৃষ্টিতেই চেক্ করে, তার চশমা হয় অমনোযোগিতার। তার দৃষ্টিকোণে কেবল এটাই আসে যে, যতটা করেছি - অনেকটাই। আমি এই-এই আত্মাদের থেকে অনেক ভাল, অল্প-বিস্তর কম তো অনেক নামীদামিদের মধ্যেও থাকে। কিন্তু যে প্রকৃত হৃদয় দিয়ে নিজেকে চেকিং করে, তার চশমা যথার্থ স্বউন্নতির হবার কারণে, কেবল বাবা আর নিজেকেই দেখে, অন্যেরা কে কি করছে-তার প্রতি নজর যায় না। আমাকে বদলাতে হবে, কেবল এই নেশাতেই থাকে, ফলে সে অন্যের জন্য উদাহরণ স্বরূপ হয়ে যায়।
স্লোগান:-
হদের (জগতের) সর্ব বংশকে শেষ করতে পারলে, তবেই তো বেহদের (অসীমের) রাজ্য-ভাগ্যের নেশা থাকবে।