২৩-১২-১৮ প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ ১২-০৩-৮৪ মধুবন


রূহানিয়তের সহজ বিধি - সন্তুষ্টতা

আজ বাপদাদা, দূরে হয়েও যে বাচ্চারা কাছে থাকে, চতুর্দিকের সেই সব বাচ্চাদের সন্তুষ্টি, রূহানিয়ত এবং প্রসন্নতার স্মিতহাসি লক্ষ্য করেছেন l রূহানিয়ত অনুভব করতে সন্তুষ্টতা হলো সহজ বিধি, আর প্রসন্নতা সহজ প্রাপ্তি l যাদের সন্তুষ্টি থাকে, সবসময় স্পষ্টতঃ তাদের প্রসন্নস্বরূপ হতে দেখা যায় l সন্তুষ্টি থাকা অর্থাৎ সর্বপ্রাপ্তির প্রতিমূর্তি হওয়া l সন্তুষ্টতা সদা সকল বিশেষত্ব ধারণ করার সহজ বিধি l সন্তুষ্টির ঐশ্বর্য ভান্ডার অন্য সব ঐশ্বর্য ভান্ডারকে স্বতঃই নিজের দিকে আকৃষ্ট করে l সন্তুষ্টতা জ্ঞানের সাবজেক্টের প্রত্যক্ষ প্রমাণ l সন্তুষ্টতা তোমাদের বেফিকর বাদশাহ বানায় l সন্তুষ্টতা সবসময় স্বমানের সীটে সেট থাকার সহজ সাধন l সন্তুষ্টতা প্রতিনিয়ত সহজভাবে তোমাদের মহাদানী, বিশ্ব কল্যাণী, বরদানী বানায় l সন্তুষ্টতা হদের 'আমার তোমার' ভাব থেকে মুক্ত করে স্বদর্শন চক্রধারী বানায় l সন্তুষ্টতা সবসময় নির্বিকল্প, একরসের বিজয়ী আসনের অধিকারী বানায় l বিশ্ব পরিবর্তনের সেবার মুকুটধারী এবং সহজ স্মৃতির তিলকধারী সদা বাবার হৃদয় সিংহাসনাসীন হওয়ায় অধিকারী হতে সম্পন্ন স্বরূপে স্থিত করায় l সন্তুষ্টতা ব্রাহ্মণ জীবনে জীবন দান, ব্রাহ্মণ জীবনের উন্নতির সহজ সাধন l তোমরা যখন নিজের প্রতি এবং পরিবারের প্রতি সন্তুষ্ট হও, তখন পরিবার তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয় l যেকোনো পরিস্থিতির মধ্যে থেকে, অনিশ্চয়তার বায়ুমন্ডল এবং ভাইব্রেশনেও তোমরা সন্তুষ্ট থাকো l এইরকম সন্তুষ্টস্বরূপ, শ্রেষ্ঠ আত্মা, বিজয়ী রত্ন হওয়ার সার্টিফিকেটের অধিকারী হয় l তোমাদের তিনটে সার্টিফিকেট নিতে হবে:-



১) নিজের প্রতি নিজের সন্তুষ্টতা ২) নিজের প্রতি বাবার অবিরত সন্তুষ্টতা ৩) নিজের প্রতি ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তুষ্টতা l

এসবের মাধ্যমে তুমি তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে শ্রেষ্ঠ বানাতে পারো l এখনও সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় আছে l তোমরা সেগুলো নিতে পারো, কিন্তু তোমাদের কাছে বেশি সময় নেই l লেট (দেরি) হয়ে গেছে, তবে টু লেট (অনেক দেরি) হয়নি l সন্তুষ্টতার বিশেষত্ব দিয়ে এখনও সামনে যেতে পারো l এখনও লাস্টে এসেও ফাস্ট তথা ফার্স্ট হওয়ার মার্জিন আছে l পরে, লাস্টের যারা, তারা লাস্টেই থেকে যাবে l তাইতো আজ বাপদাদা এই সব সার্টিফিকেট চেক করছিলেন l তুমি নিজেও তোমার চেক করতে পারো l তোমরা প্রসন্নচিত্ত নাকি প্রশ্নচিত্ত ? তোমরা বিদেশিরা প্রসন্নচিত্ত, সন্তুষ্ট ? যদি তোমাদের সব প্রশ্ন শেষ হয়ে যায় তো তোমরা প্রসন্নচিত্ত হয়েই গেলে l সন্তুষ্টতার সময়ই হলো সঙ্গমযুগ l সন্তুষ্টতার জ্ঞান এই সময়েই তোমাদের থাকে l সেখানে তোমরা সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হওয়ার জ্ঞানের ঊর্ধ্বে থাকবে l এখন সঙ্গমযুগেরই এই ধনভান্ডার l সকল সন্তুষ্ট আত্মারা অন্য সবাইকে সন্তুষ্টির ধনসম্পদ দাও l দাতার বাচ্চা তোমরা মাস্টার দাতা l তোমরা এতটা তো জমা করেছো, তাই না ! তোমরা ফুল স্টক জমা করেছো নাকি কম বেশি মার্জিন রয়ে গেছে ? যদি তোমাদের স্টক কম হয়, তবে বিশ্ব কল্যাণকারী হতে পারবে না, শুধু কল্যাণকারীই হতে পারো l বাবাসমান তো হতে হবে, তাই না ! আচ্ছা !



দেশ বিদেশ থেকে তোমরা সবাই যারা এসেছো, সর্ব খাজানায় পরিপূর্ণ মাস্টার সর্বশক্তিমান হয়ে ফিরে যাচ্ছ, তাই না ! যেহেতু, এখানে তোমরা এসেছো, ফিরতেও হবে l বাবাও এখানে আসেন, তাইতো তাঁকে ফিরেও যেতে হয়, তাই না ! তোমরা বাচ্চারাও এখানে আসো, আর সম্পন্ন হয়ে ফিরেও যাও l তোমরা অন্যদের বাবা সমান বানানোর জন্য ফিরে যাও l নিজেদের ব্রাহ্মণ পরিবারের বৃদ্ধি করার জন্য ফিরে যাও l পিপাসু আত্মাদের পিপাসা মেটাতে ফিরে যাও l এইসব কারণেই তো ফিরে যাচ্ছ, তাই না ! তোমাদের হৃদয়ের ইচ্ছায় বা কোনরকম বন্ধনের কারণে তোমরা ফিরে যাচ্ছ না, বরং কিছু সময়ের জন্য বাবার ডিরেকশন অনুযায়ী সেবার্থে ফিরে যাচ্ছ l এইরকম ভেবেই তো যাচ্ছ, তাই না ! এমন ভেবো না যে তোমরা আমেরিকাবাসী বা অস্ট্রেলিয়ার, না ! বাপদাদা সেবার জন্য তোমাদের নিমিত্ত বানিয়ে সেখানে কিছু সময়ের জন্য পাঠান l বাপদাদা তোমাদের সেখানে পাঠাচ্ছেন, মন থেকে তোমরা সেখানে যাও না l এইরকম কখনো বোলোনা যে "আমার ঘর, আমার দেশ" l না ! বাপদাদা সেবাস্থানে তোমাদের পাঠাচ্ছেন l সবাই তোমরা সদা নির্লিপ্ত (ন্যারে), অথচ বাবার ঘনিষ্ঠ (প্যারে) ! কোনো বন্ধন নেই, এমনকি সেবারও কোনো বন্ধন নেই l বাবা পাঠিয়েছেন, সুতরাং বাবাই জানেন l তোমরা নিমিত্ত হয়েছো, যতক্ষণ যেখানে তিনি নিমিত্ত বানাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিমিত্ত l এইরকম ডবল লাইট তো হয়েছো, তাই না ! পান্ডবরাও নির্লিপ্ত আর খুব কাছের, তাই না ! কোনও বন্ধন নেই এখানে l নির্লিপ্ত অর্থাৎ সম্পূর্ণ পৃথক হওয়াই ঘনিষ্ঠ হওয়া l আচ্ছা -



যারা সদা সন্তুষ্টতার আত্মিকতায় (রূহানিয়তে) থেকে, প্রসন্ন থেকে সদা প্রতিটা সঙ্কল্পে, বোলে, কর্মে সকলকে সন্তুষ্টতার শক্তি যোগায়, হতোদ্যম আত্মাদের ভান্ডারের সম্পদে শক্তিশালী বানায়, সদা বিশ্ব কল্যাণকারী বেহদের বেফিকর সেই বাদশাহদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l



*অব্যক্ত বাপদাদার সাথে দাদীজী তথা দাদী জানকীর সাক্ষাৎকারঃ*



তোমাদের হোলি-হংস হওয়ার রূপ-বসন্তের জুটি ভালো l ইনি (জানকী দাদী) শান্তি দ্বারা অর্থাৎ নৈঃশব্দের প্রতিমূর্তি হয়ে সেবা করা বেশি পছন্দ করেন, সেক্ষেত্রে, এনাকে (দাদীজীকে) তো বলতেই হয় l ইনি যখন ইচ্ছে একান্তে চলে যান l এনার পছন্দ রূপ দ্বারা অর্থাৎ আকারী অবস্থায় সেবা করা l কার্যতঃ, তোমরা সকলেই অল্ রাউন্ড, কিন্তু রূপ-বসন্তের জুড়ি এটাই l বাস্তবে, এই দুই সংস্কারেরই প্রয়োজন, যেখানে তোমাদের উচ্চারিত বোল কাজ করবে না সেখানে রূপ কাজ করবে আর যেখানে রূপ কাজ করতে পারবে না, সেখানে বাণী (বসন্ত হল জ্ঞান) কাজ করবে l সুতরাং এই জুড়িই ভালো l যে জুড়ি বাঁধা হোক, সব ভালো l সেই জুটিও ভালো ছিলো, এই জুটিও ভালো l ( দাদীর জন্য ) ড্রামাতে তিনি গুপ্ত নদী হয়েছেন l ডবল বিদেশিদেরও তাঁর প্রতি অগাধ ভালোবাসা l এটা কোনো ব্যাপার নয় l তোমরা দিদির অন্য রূপ দেখেছো l সবাই কত খুশি হয়েছে দেখে ! মহারথী সকলেই একসাথে l দূরের হয়েও বৃজইন্দ্রা, নির্মলশান্তা সবাই সাথী l শক্তিসকলের সহযোগ খুব ভালো l একে অপরকে সামনে রাখার কারণে তোমরা এগিয়ে যাচ্ছ এবং নিমিত্ত শক্তিসকলকে এগিয়ে রাখার কারণে তোমরা সবাই সামনে এগিয়ে চলেছো l সেবার বৃদ্ধির এটাই কারণ, তোমাদের পরস্পরের পরস্পরকে সামনে এগিয়ে দেওয়া l পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা আছে, ইউনিটি আছে l সবসময় অন্যের বিশেষত্ব বলা, সেবার বৃদ্ধি করা l এই বিধিতেই সর্বদা বৃদ্ধি হয়েছে আর হতে থাকবে l প্রতিনিয়ত বিশেষত্বের দিকে নজর দাও আর বিশেষত্ব কিভাবে দেখতে হয় তা' অন্যদের শেখানো- এটাই সংগঠনের মালার যোগসূত্র l মুক্তো সবই একসঙ্গে সুতোয় গাঁথা হয় l সংগঠনের সূত্র এটাই - বিশেষত্ব ব্যতীত অন্য কোনকিছু সম্বন্ধে না বলা, কারণ মধুবন মহান ভূমি l মহা ভাগ্যও আছে, মহাপাপও আছে l মধুবন থেকে গিয়ে যদি কেউ ব্যর্থ শব্দ বলে তো তার অনেক পাপ জমা হয়ে যায় l সুতরাং, সবসময় বিশেষত্ব দেখার চশমা পরে থাকতে হবে l তখন আর ব্যর্থ কোনকিছু দেখতে পারবে না l উদাহরণস্বরূপ, লাল চশমা দিয়ে লাল ছাড়া আর অন্য কিছু তোমরা দেখতে পাও না ! অতএব, বিশেষত্ব দেখার চশমা সবসময় পরে থাকতে হবে l এমনকি, তোমরা কখনও কিছু দেখলেও সেই ব্যাপারে আলোচনা করবে না l এই ব্যাপারে আলোচনা করা অর্থাৎ লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া তথা নিজেদের ভাগ্য খোয়ানো l কোনরকম দুর্বলতা ইত্যাদি থাকলে সেইসবের দায়ভার বাবার, নিমিত্ত তোমাদের কে বানিয়েছেন ! বাবা ! সুতরাং, যারা নিমিত্ত তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে কিছু বলার অর্থ বাবার ন্যূনতা বলা, সেইজন্য এঁদের জন্য শুভ ভাবনা ছাড়া কখনও আর কিছু বর্ণন করতে পারো না l



বাপদাদা তো তোমরা সব রত্নকে তাঁর নিজের থেকেও শ্রেষ্ঠ দেখেন l তোমরা বাবার অলঙ্কার, তাই না ! সুতরাং, বাবাকে যারা অলঙ্কৃত করে সেই বাচ্চারা তো শ্রেষ্ঠই, তাই না ? বাপদাদা তো বাচ্চাদের মহিমা করে খুশি হন l "বাহ্ আমার অমুক রত্ন ! বাহ্ আমার অমুক রত্ন !" - তিনি অনবরত এই মহিমা করতে থাকেন l বাবা কখনও কারও ভুল-ভ্রান্তি দেখেন না l এমনকি, যখন তিনি ইঙ্গিত দেন, তিনি বিশেষত্ব পূর্বক রিগার্ডের সাথে সেই ইঙ্গিত দেন l তাঁর তো বাবার অথরিটি আছে, তবুও তিনি রিগার্ড দিয়ে তারপরই ইঙ্গিত দেন l বাবার এই বিশেষত্ব সদা বাচ্চাদের থেকে ইমার্জ হতে হবে l ফলো ফাদার করতে হবে তোমাদের, তাই না ?



*বাপদাদার সামনে মুখ্য বোনেরা (দাদীগণ) বসে আছেনঃ* -



জীবনমুক্ত জনকের মহিমাই তোমাদের স্মরণিক, তাই না ! জীবনমুক্ত আর বিদেহী দুটো টাইটেল l (দাদীর জন্য) যাই হোক, ইনি তো মণি ! সন্তুষ্টমণি, মস্তকমণি, সফলতার মণি - কতো মণি ! মণিই মণি ! মণি যতোই লুকিয়ে রাখো, তার চমক কিন্তু কখনোই লুকিয়ে থাকেনা, পঙ্কের মধ্যেও মণি চমকাবে, লাইটের মতো কাজ করবে l অতএব, সেটাই তোমার নাম, সেটাই তোমার কাজ l এনারও (দাদী জানকী) সেই সকল গুণ আছে - দেহ মুক্ত এবং জীবন মুক্ত l তুমি সদাসর্বদা জীবনের খুশির অনুভবের গভীরে থাকো l একেই বলা হয় জীবনমুক্ত l আচ্ছা l



*অব্যক্ত মহাবাক্য - নিরহঙ্কারী (নির্মান) হয়ে বিশ্বের নব-নির্মাণ করো*

সেবায় সহজ আর সদা সাফল্যপ্রাপ্তির মূল আধার হলো - নম্র চিত্ত (নির্মান চিত্ত) হওয়া l নিরহঙ্কারী হওয়াই স্বমান বজায় রাখা আর সবার থেকে মান প্রাপ্ত করার এটাই সহজ সাধন l নম্র হওয়ার অর্থ নতি স্বীকার করা নয়, বরং তোমার নিজের বিশেষত্ব আর ভালোবাসার প্রতি সবাইকে নম্রমুখী করা l উদারতার লক্ষণ নম্রতা l তোমরা যতো নিরহঙ্কারী হবে, ততোই সকলের হৃদয়ে স্বতঃই মহান হবে l নম্রতা তোমাদের সহজে নিরহঙ্কারী বানায় l নম্রতার বীজ আপনা থেকেই মহত্ত্বের ফল প্রাপ্ত করায় l নম্রতা সকলের হৃদয়ের আশীর্বাদ লাভ করার সহজ সাধন l নিরহঙ্কারী হওয়ার বিশেষ লক্ষণ হলো, নম্রতা l বৃত্তি, দৃষ্টি, বাণী, সম্বন্ধ-সম্পর্কে যখন নম্রতার গুণ ধারণ করো, তোমরা তখন মহান হয়ে ওঠো।বৃক্ষের নত হওয়া যেমন অন্যের সেবা করে, সেইরকমই নিরহঙ্কারী হওয়ার অর্থ নতি স্বীকার করাই হলো সেবাধারী হয়ে ওঠা l এই কারণে মহত্ত্ব এবং নম্রতা সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে l যারা নিরহঙ্কারী থাকে, তারা সকলের থেকে মান প্রাপ্ত করে l তোমরা নিরহঙ্কারী হলে অন্যেরা তোমাদের মান দেবে l যারা দাম্ভিক তাদের কেউ মান দেয় না, সবাই তাদের থেকে দূরে সরে যায় l যারা নিরহঙ্কারী হয় তারা সবাইকে সুখ দেয় l যেখানেই তারা যাবে, যা-ই করবে সেইসব সুখদায়ী হবে l তাদের সম্পর্ক-সম্বন্ধে যে-ই আসবে সুখানুভূতি করবে l



সেবাধারীর বিশেষত্ব হলো একদিকে অতি বিনয়ী ওয়ার্ল্ড সার্ভেন্ট, আরেকদিকে জ্ঞানের অথরিটি l তোমরা যতো বিনীত থাকবে, সেই অনুসারে বেপরোয়া বাদশাহ হবে l নিরহঙ্কার আর অথরিটি দুইয়ের ব্যালেন্স বজায় রাখো l বিনয়-নম্র ভাব, নিমিত্ত ভাব, বেহদের ভাব -

এই সবই সফল সেবার বিশেষ আধার l যতখানি স্বমান ততখানিই নম্রতা প্রয়োজন l তোমাদের স্বমানে অভিমান হতে দিও না l এমন মনে কোরো না অন্যেরা ছোট, আর তাদের থেকে তোমরা শ্রেষ্ঠ, তাদের প্রতি কোনরকম বিরূপ মনোভাব পোষণ করা উচিৎ নয় l যেমন আত্মাই হোক, তাদের দয়ার দৃষ্টিতে দেখ, অহমিকার দৃষ্টিতে নয় l অন্যের প্রতি না কোন অভিমান থাকবে, না কোন অমর্যাদা করার বোধ থাকবে l তোমাদের ব্রাহ্মণ জীবনে এখন সেই ধরনের আচার-আচরণ কখনও হতে দিও না l যদি অহমিকা না থাকে, তবে অপমান হলেও অপমানের বোধ হবে না l এমন আত্মারা সদা নির্মান(নম্র), এবং নির্মাণকার্যে বিজি থাকে l যারা নিরহঙ্কারী হয় তারা বিশ্বের নব-নির্মাণ (নবী-করণ) করতে পারে l শুভ ভাবনা বা শুভ কামনার বীজই হলো নিমিত্ত ভাব আর নির্মান ভাব l সীমিত পরিসরের(হদের) মান আশা করার পরিবর্তে বরং নিরহঙ্কারী হও l একগুঁয়েমির লক্ষণ অভব্য আচরণ আর নম্রতার লক্ষণ সভ্যতা l নিরহঙ্কারী হয়ে সকলের প্রতি সভ্য আচরণ তোমাদের সৌজন্য বোধ এবং সত্যবাদিতার ইঙ্গিত দেয় l সাফল্যের নক্ষত্র তোমরা তখনই হবে যখন নিজের সাফল্যের অহমিকা হবে না, এমনকি বর্ণনাও করবে না l তোমরা নিজের গীত গাইবে না, বরং যতোটা তোমরা সফল, ততোটাই নম্রচিত্ত, নির্মাণকারী, নির্মল স্বভাবের হও l অন্যেরা তোমাদের গীত গাইতে পারে, কিন্তু তোমরা শুধুমাত্র সদা বাবার গুণ গাও l এমন নম্রতা নির্মাণকার্য করতে সহজে তোমাদের সমর্থ বানায় l যতোক্ষণ নির্মান অর্থাৎ নিরহঙ্কারী না হবে ততোক্ষণ নির্মাণ করতে পারবে না l ভুল বোঝাবুঝির (মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং) কারণে লোকে মনে করে, যে আত্মারা নম্রচিত্ত থাকার পাঠাভ্যাস করে বা সবাইকে 'হাঁ জী' বলে, মনে হতে পারে তারা পরাজিত, কিন্তু বাস্তবে এমন আত্মারা বিজয়ী l সেই সময় শুধুমাত্র অন্যদের বলার জন্য বা বায়ুমন্ডলের কারণে নিজেদের নিশ্চয়বুদ্ধি বদলে সন্দিগ্ধচিত্ত হয়ো না l দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভেবো না, তোমাদের বিজয় হবে নাকি পরাজয় ! সন্দেহের পরিবর্তে নিজেদের বিশ্বাসে অটল থাকো l তাহলে, আজ যারা তোমাদের পরাভূত বলছে, তারাই কাল 'বাহ্ বাহ্'র (মহিমার) পুষ্প বর্ষণ করবে l সংস্কারে নম্রতা থাকা অর্থাৎ নির্মান হওয়া এবং নির্মাণক্ষম হওয়া উভয়ই মালিক ভাবের লক্ষণ l এর সাথে সাথে যারা এমন আত্মাদের সম্পর্কে আসে, তারা তাদের স্নেহীরূপের সাক্ষাৎ করে এবং তাদের সকলের হৃদয়ের স্নেহভরা আশীর্বাদ অর্থাৎ শুভ ভাবনা সকলের অন্তর থেকে সেই স্নেহী আত্মার প্রতি ধাবিত হয়। অন্যেরা তোমাকে জানুক বা না জানুক, তাদের সাথে তোমার দূরের সম্বন্ধ হোক বা না হোক, কিন্তু যারা দেখবে, তোমার স্নেহ দিয়ে তাদের অনুভূত হতে দাও যে, তুমি তাদেরই l সমস্ত গুণ ধারণে তোমরা যতো সম্পন্ন হও, ততোই তোমরা গুণ রূপী ফলের প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠো, ততোটাই নিরহঙ্কারীও হও l বিনয়-নম্র স্থিতিতে থেকে সকল গুণ প্রত্যক্ষ করো, তখনই বলা হবে নীতিনিষ্ঠ মহান আত্মা l সেবাধারী অর্থাৎ নির্মাণকারী এবং নির্মান (নিরহঙ্কারী ) হওয়া l নম্রতাই সেবার সাফল্যের সাধন l নম্রচিত্ত হলে তোমরা সদা সেবায় হালকা থাকবে l যখন তোমরা নির্মান হও না, মানের ইচ্ছা থাকে, তখন সেটা বোঝা হয়ে যায়। যারা ভারগ্রস্ত তারা সদা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অগ্রসর হয়, তীব্রগতিতে যেতে পারে না l সেইজন্য কোনও ভার অনুভব হলে বুঝবে তোমরা নিরহঙ্কারী হওনি l যেখানে নম্রতা আছে, সেখানে কোনরকম কর্তৃত্ব থাকে না, আত্মিকতা (রূহানিয়ত) থাকবে l বাবা যেমন কতো নম্রচিত্ত হয়ে এখানে আসেন, সেইরকম ফলো ফাদার করো l যদি সেবাতে সামান্যতম কর্তৃত্ব থাকে, সেই সেবা সফল হবে না l ব্রহ্মাবাবা নিজেকে কতো বিনয়াবনত করেছেন, এত বিনীত সেবাধারী হয়েছেন যে বাচ্চাদের পদসেবা করতেও তিনি প্রস্তুত l "বাচ্চারা আমার থেকে এগিয়ে, তারা আমার থেকে ভালো ভাষণ দেয়", তিনি নিজেকে কখনো প্রথমে রাখেননি l সবসময় বাচ্চাদের সামনে রেখেছেন, তাদের প্রথমে যেতে দিয়েছেন এবং তাদের বড় মনে করেছেন l এভাবে তিনি নিজেকে নীচে করেননি বরং বাস্তবে তিনি আরও শ্রেষ্ঠ হয়েছেন l একেই বলা হয় প্রকৃত নম্বর ওয়ান যোগ্য সেবাধারী হওয়া l অন্যদের মান দিয়ে নিজে বিনম্র থাকাই পরোপকার করা l প্রতিনিয়ত দিতে থাকাই সদাকালের জন্য নেওয়া l অল্পকালের বিনাশী মান ত্যাগ করে স্বমানে স্থিত থেকে বিনয়নম্র হয়ে অন্যদের অবিরত সম্মান দিতে থাকো l এই দেওয়াই নেওয়া হয় l অন্যদের সম্মান দেওয়া অর্থাৎ সেই আত্মাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় এনে এগিয়ে দেওয়া l যখন তোমরা তাদের সবসময় উৎসাহ-উদ্দীপনা অর্থাৎ খুশির এবং সহযোগের ভান্ডার দাও, তোমরা সদাকালের জন্য পুণ্যাত্মা হয়ে ওঠো l

বরদান:-

সমস্ত ব্যর্থ সঙ্কল্পকে সমর্থ সঙ্কল্পে পরিবর্তিত করে সহজ যোগী হওয়া সমর্থ আত্মা ভব

কোনো কোনো বাচ্চা ভাবে যে তাদের পার্ট তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না, তারা যোগ লাগাতে এবং অশরীরী হতে অপারগ ; এগুলো ব্যর্থ সঙ্কল্প l এই সব সঙ্কল্প পরিবর্তিত করে সমর্থ সঙ্কল্প করো যে স্মরণ তোমাদের স্বধর্ম l "আমিই প্রতি কল্পের সহজযোগী l আমি যোগী হবো না তো কে হবে" ! কখনো এমন ভেবোনা, 'কি করবো আমার শরীর ঠিকমতো চলছে না, পুরানো এই শরীর অকেজো' l না ! *বাহ্ বাহ্'র* সঙ্কল্প করো, এই অন্তিম শরীরের অলৌকিকতার গীত গাও, তোমরা যোগ্য হয়ে উঠবে l

স্লোগান:-

শুভ ভাবনার শক্তি অন্যদের ব্যর্থ অনুভূতিকেও পরিবর্তন করতে পারে* l