19-12-2018 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - সদা উপযুক্ত যোগ্য পাত্রকেই দান দেবে। অযথা সময়ের অপচয় করবে না। প্রত্যেকের নাড়ীর হাবভাবের সঙ্কেতেই বুঝতে পারবে, জ্ঞানের পাঠ শোনার সময় তার মনোবৃত্তি কোন্ দিকে"

প্রশ্ন:-

বাচ্চারা, পবিত্র দুনিয়ায় পৌঁছবার জন্য তোমাদের খুব কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, কি সেই কঠিন সতর্কতা ?

উত্তর:-

গৃহস্থ ব্যবহারে, কর্ম-কর্তব্যের মধ্যে থেকেও সতর্কতার সাথে পবিত্র থাকা- যা খুবই কঠিন কাজ। বি.কে.-দের এই ত্যাগ যা বেহদের পুরোনো দুনিয়ার সবকিছুকেই ত্যাগ করা। তোমাদের এক চোখে 'সুইট-হোম', দ্বিতীয়ে 'সুইট-রাজধানী’- অর্থাৎ এই পুরোনো দুনিয়াকে দেখেও তা নজরে স্থান না দেওয়া - এটাই সবচেয়ে বড় সতর্কতা। এই সতর্কতা থাকলেই পবিত্র দুনিয়ায় পৌঁছতে পারবে।

গীত:-

 ধৈর্য ধর্ রে মন আমার - সুখের দিন এবার এলো বলে।

ওম্ শান্তি ।

এমন গীত শুনলেই আনন্দে বাচ্চাদের খুশীর পারদ অবশ্যই চড়তে থাকবে, দুনিয়াটা যে কেবল দুঃখে ভরা। মনুষ্য মাত্রই নাস্তিক, তারা তো প্রকৃত বাবাকেই জানে না। তোমরা এখন সেই নাস্তিক অবস্থা থেকে আস্তিক হচ্ছো। বাচ্চারা, তাই তোমরা এখন জানতে পারছো, তোমাদের সুখের দিন এই এলো বলে। যেখানেই যাও না কেন, নিজের পরিচয় জানিয়ে, একথাও ব্যাখ্যা করবে - কেন তোমাদেরকে ব্রহ্মাকুমার-ব্রহ্মাকুমারী বলা হয়। ব্রহ্মা প্রজাপিতা, যিনি শিবের সন্তান। নিরাকার শিব- যিনি উচ্চতমেরও উচ্চে -ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শংকর-ও যার সন্তান। বিষ্ণু আর শংকরকে কিন্তু প্রজাপিতা বলা হয় না। প্রজাপিতা ব্রহ্মা এই (স্থুল) দুনিয়ার। এই পয়েন্ট-এর ধারণাকে কিন্তু মনে গেঁথে রাখতে হবে। লক্ষ্মী-নারায়ণ, রাধা-কৃষ্ণকেও প্রজাপিতা বলা হয় না। প্রজাপিতা হিসাবে জগৎ-বিখ্যাত একমাত্র ব্রহ্মা, যা প্রজাপিতার সাকার রূপ। স্বর্গ-রাজ্যের রচয়িতা পরমপিতা পরমাত্মা শিব স্বয়ং। ব্রহ্মা স্বর্গের রচয়িতা নন। নিরাকার পরমাত্মা স্বয়ং এসে ব্রহ্মার দ্বারা সেই স্বর্গের রচনা করান। তোমরা সবাই এত সংখ্যায় বি.কে.-রা সবাই ওনারই সন্তান। আত্মারা সবাই (নিরাকার, পরমাত্মা) পরমপিতা শিবেরই সন্তান। এভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝানোটা খুব সহজ পদ্ধতি। তার সাথে এটাও জানাতে হবে উনি স্বয়ং আমাদেরকে রাজযোগের শিক্ষা দেন। ব্রহ্মার দ্বারাই তিনি সৃষ্টি-জগতের আদি-মধ্য-অন্তের রহস্যগুলিকে বোঝান। তাই সেসব কথা ব্রহ্মাই আগে শোনেন। তারপরেই শোনেন জগদম্বা। এরপর শোনো তোমরা বি.কে.-রা। একথাও তো প্রচলিত আছে, একজন কুমারী কন্যা তার কর্মের দ্বারা ২১-কুলকে উদ্ধার করতে পারে এবং ২১-জন্ম তাদের সুখ দিতে পারে। তেমনি বি.কে.-রাও পরমপিতা পরমাত্মার কাছ থেকেও আগামী ২১-জন্ম, অর্থাৎ সত্যযুগ ও ত্রেতাতে সুখের আশীর্বাদী-বর্সা পেতে পারে। চিরকালই সত্যযুগ ও ত্রেতাতে ভারতবাসীরা সুখী থাকে, যেহেতু তখন ভারত থাকে সম্পূর্ন পবিত্র। উনি হলেন বাবা এবং ইনি হলেন দাদা। অথচ যার অধীনে এত অনেক সংখ্যায় বাচ্চা, তার কিন্তু কোনও চিন্তাই নেই। যেহেতু শিববাবাই যে বি.কে.দেরকে রাজযোগের শিক্ষা দেন, যদিও তা ব্রহ্মাবাবার দ্বারা, অর্থাৎ যে অসীম-বেহদের বাবার থেকে আমরা অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পেয়ে থাকি। বর্তমান সময়ে সমগ্র দুনিয়াই পতিত হয়ে আছে। আর তা পবিত্র করতে পারেন একমাত্র এই বাবা-ই। একমাত্র সদগুরু-ই পারেন পুরোনো দুনিয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে স্বর্গ-রাজ্যের রচনা রচাতে। একমাত্র উনিই যে সবার সদগতিদাতা।

নতুন দুনিয়া হলো লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্য। এই ভারত ভূ-খণ্ডেই একদা দেবী-দেবতাদের রাজ্য ছিল। কল্পের শুরুতে যারা জন্ম নেয় অর্থাৎ এই দেবী-দেবতারাই ৮৪-জন্ম নিতে পারে, এরপরেই জানাতে হবে বর্ণ-প্রথার বিষয়ে। তাই আগেই তাদের কাছ থেকে কিছু সময় চেয়ে নেবে। বলবে- এইসব কথাগুলোকে খুব ভালভাবে মন দিয়ে শ্রবণ করতে। বুদ্ধিকে বিপথে চালিত যেন না করে। দাদা বা ভাই (ভাই-জী) হোক বা দিদি বা বোন(বহিন-জী), বাস্তবে তোমরা সবাই সেই একই শিববাবার সন্তান। প্রজাপিতা ব্রহ্মা হলেন সর্ব-কুলের সর্বজ্যেষ্ঠ। তোমরা বি.কে.-রা ব্রহ্মা মুখ-বংশাবলী ব্রাহ্মণরা, ওনার থেকেই অধিকারীর আশীর্বাদী-বর্সা পাও। যোগবলের দ্বারাই সমগ্র বিশ্বের রাজ্য-ভাগ্য লাভ কর, বাহুবলের দ্বারা নয় মোটেই। বি.কে.-রা তাদের নিজের ঘর-পরিবার ছাড়ে না, নিজেদের ঘরেই থাকে। এই ঈশ্বরীয় বিদ্যালয় মনুষ্য থেকে দেবতায় পরিবর্তন করার স্কুল। যা কোনও মনুষ্যের দ্বারা সম্ভব নয়। যেহেতু বর্তমানের দুনিয়াটা এখন পতিত হয়ে আছে। জলের গঙ্গা নদী তো আর পতিত-পাবনী নয়। তবুও লোকেরা বার-বার সেখানেই স্নান করে, অথচ পবিত্র হয় না কেউ। রাবণের উদাহরণটাও ঠিক তেমনই। বার-বার তাকে জ্বালানো সত্ত্বেও, সে কিন্তু মরে না। এই রাবণের পোস্টারও সাথে করে নিয়ে যাওয়া উচিত। কোনও বড় জায়গায় যাবার সময় সাথে করে ফটোগুলির এ্যলবামও নিয়ে যাবে। তাদের বোঝাবে- দেখো, সবাই তার সন্তান। সবাই একই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ - পবিত্র থাকার। এই বি.কে.-রা সবাই বাস্তবে ব্রহ্মাবাবার সন্তান। প্রজাপিতা ব্রহ্মা যে কুলের সর্ব-জ্যেষ্ঠ। বাস্তবে এখন আমরা সবাই ব্রহ্মাকুমার ও ব্রহ্মাকুমারী। যদিও তোমরাও তাই, কিন্তু তোমরা এখনও নিজেদের প্রকৃত পরিচয়টাই তো জানতে পারোনি। বর্তমান দুনিয়ায় এখন কেউই আর প্রকৃত ব্রাহ্মণ নয়। প্রকৃত ব্রাহ্মণ একমাত্র আমরা বি.কে.-রা। তাই আগামীতে রাজ্য-ভাগ্যও আমরাই লাভ করবো। তারপরে এই ব্রাহ্মণ-কুলই বংশানুক্রমিক চলতে থাকবে। ব্রাহ্মণেরাই শীর্ষে অবস্থান করে। একথা তো তোমাদের বোঝানোই হয়েছে, কৃষ্ণ আদৌ ভগবান নয়। উনিও পুরো ৮৪-জন্মের চক্রে আসেন। ৮৪-জন্ম পুরো হলেই দেবতা হবার যোগ্য বিবেচিত হয়। কিন্তু দেবতা বানাবে কে? -তা অবশ্যই এই (শিব)বাবাই তা বানান। তোমরা বি.কে.-রাও তার থেকে সেই রাজযোগেরই শিক্ষা নিচ্ছো। ওনারই মহিমা 'এক ওঁকার'! উনিই আবার সেই 'নিরাকার', 'নিরহংকারী'! সেই ওঁনাকেই এসে ওঁনার কর্ম-কর্তব্যের সেবা করতে হয়, এই পতিত দুনিয়াতেই, পতিত শরীরেই আসেন তিনি। (পূর্বের মতন) গীতার কাহিনী আবারও পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তখনও মহাভারী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। মশার ঝাঁকের মতন সবারই মৃত্যু হয়েছিল। এখন আবার সেই সময় উপস্থিত -একথা জানাচ্ছেন স্বয়ং পরমপিতা পরমাত্মা শিববাবা। তিনিই আবার (নতুন দুনিয়ার) রচয়িতাও বটে। সেই স্বর্গ-রাজ্য ছিল লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্য।

এই সৃষ্টি-জগৎ-কে সতোপ্রধান বানানো, যা একমাত্র এই বাবার কর্ম-কর্তব্য। আমরা তাকেই বাবা-বাবা বলে ডাকতে থাকি। আর তাই ওনাকে আসতেই হয়। যার স্মরণে এই 'শিবরাত্রি'! এর মর্মার্থকেও যথার্থ রূপে বুঝিয়ে বলতে হবে। তাই এসব পয়েন্ট নোট করে তা ধারণও করতে হবে তোমাদের। পয়েন্টগুলি বুদ্ধিতে যেন থাকে। কন্যাদের বুদ্ধি খুব ভাল। তাই তো কুমারীদের পা-ধোয়ানো হয়। যদিও কুমার-কুমারী উভয়েরাই পবিত্র৷ তবুও কুমারীদের নাম কেন নেওয়া হয়? কন্যারা ২১-কুল উদ্ধার করে বলে, তোমাদের মানসম্মান বজায় থাকে। বি.কে.-রা ভারতবাসীদের জন্যই এই ঈশ্বরীয় সেবায় ব্যস্ত। এদের গুরু ও সাহায্যকারী যে স্বয়ং পরমপিতা পরমাত্মা শিববাবা। যোগবলের দ্বারা ওনার থেকেই এরা সেই শক্তি সঞ্চয় করে। যার ফল স্বরূপ গ্যারান্টীসহ আগামী ২১-জন্ম বি.কে.-রা 'এভারহেল্দী' হতে পারে। কলিযুগে তো সবাই রুগী, আয়ুও সবার কম। (বোঝার বিষয়) কিভাবে সত্যযুগে তাদের আয়ু এত বেড়ে যায়? --রাজযোগের দ্বারাই এত লম্বা আয়ুর অধিকারী হওয়া যায়। সেখানে অকালে কারও মৃত্যুও ঘটে না। এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করে। বর্তমানের এই মনুষ্য শরীর তো অতি পুরোনো। অতএব কেবলমাত্র শিববাবার স্মরণে থেকে, এই দেহ সহিত দেহের সর্ব সম্বন্ধকে ভুলে যেতে হবে। বুদ্ধিকে কেবল অসীম-বেহদের সাথে যুক্ত রাখতে হবে, বাকী সবকিছুই ত্যাগ করতে হবে। বুদ্ধির যোগ রাখতে হবে ঈশ্বরীয় তীর্থ-যাত্রায়। লোকেরা তো কায়িক- জাগতিক তীর্থ-যাত্রাই শেখায়। কিন্তু বুদ্ধির তীর্থ-যাত্রা একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউ নেই শেখানোর। এই রাজযোগ যারা শিখতে পারবে, একমাত্র তারাই স্বর্গ-রাজ্যে পৌঁছাতে পারবে। এখন আবার সবকিছুরই উপর-নীচ, ওলট-পালট করা হচ্ছে। আমরা বি.কে.-রা শিববাবার সন্তান, তাই শিববাবার আশীর্বাদী-বর্সা আমরাই পেয়ে থাকি। এই দাদা-ও (ব্রহ্মাবাবা) সেই শিববাবার কাছ থেকেই আশীর্বাদী-বর্সা নেন। তোমরাও সেই অসীম-বেহদের বাবার থেকে আশীর্বাদী-বর্সা নেবে তো এসো। আমাদের এই ঈশ্বরীয় পাঠশালা এক বিশাল হাসপাতালও বটে, যার ফলে ২১-জন্মে কখনই আমরা রুগী হই না। ভারতের প্রকৃত সেবা তো আমরাই করি, তাই তো আমাদের শিব-শক্তি সেনা বলা হয়।

বাবা এবার বলছেন- বাচ্চারা, স্মরণের যোগবল দ্বারা নিজেদের বিকর্মগুলিকে বিনাশ করতে পারলেই আত্মা শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং জ্ঞানকেও সহজেই ধারণ করে তোমরা চক্রবর্তী রাজাও হতে পারবে। পবিত্র হতে পারলেই তো লক্ষ্মী বা নারায়ণের সাথে বিবাহের উপযুক্ত হতে পারবে। এখানেই সর্ব-গুণ সম্পন্ন, সম্পূর্ণ নির্বিকারী না হতে পারলে লক্ষ্মী বা নারায়ণের সাথে বিয়ে হবে কি প্রকারে? তাই তো বলা হয়, নিজের মন-আয়নায় নিজেকে দেখো, লক্ষ্মী-নারায়ণের উপযুক্ত হয়েছো কি না? সম্পূর্ণ রূপে নষ্টমোহ না হতে পারলে লক্ষ্মীর উপযুক্ত তো হতেই পারবে না, তখন তো কেবল প্রজাই হতে হবে। শিববাবাকেও পরমধাম থেকে আসতে হয়, কর্ম-কর্তব্যের জন্য। এই পতিত দুনিয়ায় আসেন তোমাদের পবিত্র বানিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। এখানে অনেক প্রকারের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বি.কে.-দের এক দৃষ্টিতে থাকে 'সুইট-হোম' এবং অপর দৃষ্টিতে থাকে 'সুইট-রাজধানী'! আমাদের এই ত্যাগ-ব্রত সমগ্র দুনিয়ার জন্য। ঘর-সংসারে থেকেও পদ্ম ফুলের মতন পবিত্র থাকতে হয়। যেমন বুড়ো লোকেরা ভাবে-এখন তাদের বানপ্রস্থ অবস্থা, তাই মুক্তিধামে যাবার উদ্দেশ্যে তারা পুরুষার্থ করে। কিন্তু আসলে তো এখন সবারই সেই বাণপ্রস্থ অবস্থা। সবারই অধিকার আছে বাবার থেকে আশীর্বাদী-বর্সা পেয়ে এই দুঃখধামকে ভুলে যাওয়ার। এটাই হলো বুদ্ধির প্রকৃত ত্যাগ। আমাদের উচিত এই পুরোনো দুনিয়াকে বুদ্ধি থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুন দুনিয়ার কথা চিন্তা করা। অন্তিম সময়কালে মনে যেমন ভাব আসবে, তেমনই গতি হবে তোমার। তোমাদের এই ঈশ্বরীয় পাঠশালা হলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় 'গড-ফাদারলী ইউনিভার্সিটি'! ভগবান উবাচ- আমি রাজযোগ শিখিয়ে মনুষ্য থেকে দেবতায় পরিবর্তন করি-এমন ভাবেই লোকেদের বোঝাতে হবে। তাদেরকে বলবে, বি.কে.-রা যা যা বলছে, একটু শান্ত হয়ে বসে মন দিয়ে তা যেন শোনে। মাঝখানে প্রশ্ন করলে সেই ধারার প্রবাহ অন্যদিকে চলে যায়। সমগ্র সৃষ্টি চক্রের রহস্যই আপনাদেরকে জানানো হবে। যেমন- বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই অবিনাশী ড্রামায় শিববাবার কি পার্ট আছে, লক্ষ্মী-নারায়ণই বা কে, -সবারই (গুণ-কর্তব্য) জীবন কাহিনী শোনাবো তোমাদের। অবশ্য প্রত্যেকরই নাড়ীর অবস্থাটা আন্দাজ করে নিতে হবে আগে। সেই সময় তার মনোবৃত্তির অবস্থাটাও বুঝে নিতে হবে, বুঝতে হবে তাদের মন অন্যদিকে নেই তো, এদিক-ওদিকে দেখছে না তো, আগ্রহভরে তা শুনছে তো? যেমন এখানে বাবাও তা লক্ষ্য করেন, সরসরি সামনা-সামনি শুনতে শুনতে বি.কে.রা আবেগে ঝুমতে থাকে। যেহেতু এই পাঠ হলো জ্ঞান-ড্যান্স। জাগতিক স্কুলের ক্লাস তো অনেক ছোট আকারের হয়, তাই টিচার ছাত্রদের প্রতি ভালভাবে লক্ষ্য রাখতে পারে, ক্রমিক অনুসারে বসাতেও পারে। কিন্তু এখানে তোমরা বি.কে.-রা এত অধিক সংখ্যায় হওয়াতে ক্রমিক অনুসারে বসানো যায় না। আর তাই লক্ষ্য রাখতে হয় কারও বুদ্ধি এদিক ওদিক যাচ্ছে না তো? কেউ হাসাহাসি করছে না তো? সবারই খুশীর পারদ চড়ছে তো? মনোযোগ দিয়ে শুনছে তো? কেন না দান সর্বদা সৎ-পাত্রেই করা উচিত। বেকার সময়ের অপচয় করা উচিত নয়। অবশ্য নাড়ীর আভাস বোঝার ক্ষমতা থাকা দরকার। বাইরের লোকেরা তো ভয়ই পায় - এমন কি এখানকার সিন্ধী লোকেরাও মনে করে, না জানি বি.কে.-রা এমন কি জাদু-টোনা করে দেবে, তাই তারা সামনা-সামনি তাকায়ও না।

শিববাবা এবার বোঝাচ্ছেন - একমাত্র তোমরা বি.কে. ব্রাহ্মণেরাই ত্রিকালদর্শী। তাই বর্ণের রহস্যটাও বুঝতে পারো। 'হাম সো'-এর অর্থকেও বোঝাতে হবে। আমি আত্মা, আবার আমিই পরমাত্মা এমন কথা বলাটা খুব বড় ভুল। কেউ বা আবার ব্রহ্ম তত্ত্বকেই মানে। তারা বলে "অহম্ ব্রহ্মাস্মি!" মায়া আসলে ৫-বিকার। আমরাও ব্রহ্মতত্ত্বকে মানি। কিন্তু ব্রহ্ম তো মহা-তত্ত্ব, যা আত্মাদের নিবাস স্থান। যেমন হিন্দুস্থানে বসবাসকারীরা নিজেদের ধর্মকে হিন্দু বলে থাকে। তেমনি ব্রহ্মতত্ত্ব-এ বাস করে বলেই নিজেদেরকে ব্রহ্ম বলে। আর বাবার মহিমা- সে তো আলাদা। উনি সর্বগুণ সম্পন্ন, ১৬-কলা সম্পূর্ণ....... যে মহিমা দেবতাদের ক্ষেত্রেও করা হয়। আত্মার মহিমাও তখন হয়, যতক্ষণ সে শরীরে অবস্থান করে। এই আত্মাই পতিত বা পবিত্র হয়। অতএব আত্মাকে নির্লেপ বলা চলে না। (কর্মফল অনুযায়ী) এত ক্ষুদ্র এই আত্মাতেই ৮৪-জন্মের কর্ম-কর্তব্যের পার্ট খোঁদিত থাকে। তবে আর কি প্রকারেই বা তাকে নির্লেপ বলবো?

এই অশান্ত দুনিয়ায় বাবা এসেছেন শান্তি স্থাপন করতে। বাচ্চারা, তোমরা তবে বাবাকে কোন পুরুস্কারে পুরস্কৃত করবে? উনি তো তোমাদের পুরস্কৃত করছেন আগামী ২১-জন্মের জন্য স্বর্গ-রাজ্যের রাজধানী দিয়ে। কিন্তু তোমরা কি দিচ্ছো বাবাকে? যে যতটা পুরস্কার দাও, তা আবার তোমরা নিয়েও নাও। বাবাকে প্রথমে পুরস্কৃত করেছেন এই ব্রহ্মাবাবা। কিন্তু আসল দাতা তো শিববাবা। রাজারা কোনও উপহার স্বহস্তে গ্রহন করেন না। যেহেতু রাজা মানে অন্নদাতা। আবার সাধারণ মনুষ্যকেও দাতা বলা চলে না। যদিও তোমরা সাধু-সন্ন্যাসীদের হাতে কিছু দিয়ে থাকো, কিন্তু তার পরিবর্তে ফল প্রদান করেন এই শিববাবাই। তাই তো প্রবাদও আছে- সবকিছুই ঈশ্বরের দেওয়া, আবার নেবার হলে ঈশ্বরই তা নিয়ে নেন। তাই যদি হয়, তবে যখন কোনও প্রিয় ব্যক্তি মারা যায়, তখন আবার কাঁদো কেন? প্রকৃত কথা হলো, উনি কিছুই নেন না আবার দেনও না। তা করেন লৌকিক মাতা-পিতা, যেমন জন্ম দেন। তাই তাদের কেউ মারা গেলে তার জন্যই দুঃখ হয়। আর যদি তা ঈশ্বরেরই দেওয়া, ঈশ্বর তা নিয়ে নিলে তবে আবার দুঃখ কেন হবে? তাই বাবা বলছেন- উনি তো সুখ-দুখের বাইরে। আর এই দাদা (ব্রহ্মা) তো নিজের সবকিছুই দিয়ে দিয়েছেন, তাই তিনি 'ফুল প্রাইজ' পান। কন্যাদের কাছে তো তেমন কিছুই থাকে না দেবার জন্য। যদি তাদের মা-বাবা কিছু দেয়, তবেই তো কিছু দিতে পারে শিববাবাকে। যেমন মাম্মা গরীব ছিল, কিন্তু জ্ঞানে কত এগিয়ে ছিল সে, কত তীক্ষ্ণ ছিল তার জ্ঞান। যেহেতু তন-মন-ধন দিয়ে সেবা তার। তোমরা একথাও জানো যে, তোমরা সুখধামে পৌঁছবে ভায়া শান্তিধাম হয়ে। যতক্ষণ না পর্যন্ত বাবার কাছে যেতে পারছো, ততক্ষণ প্রিয়'র ঘরে (শ্বশুরবাড়ি) যাবে কি করে? এখন তো তোমরা প্রিয়'র ঘরেই বসে আছো। এরপর প্রথমে যেতে হবে বাবার ঘরে, তারপর সেখান থেকে আসবে শ্বশুর বাড়িতে। বর্তমানের দুনিয়াটা একটা শোক বাটিকা, সত্যযুগ হলো অশোক বাটিকা। *আচ্ছা!*

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১) বর্তমানের এই বাণপ্রস্থ অবস্থায় 'সুইট হোম' আর 'সুইট রাজধানী' ছাড়া বুদ্ধিতে যেন অন্য কিছুই আর স্মরণে না আসে। অন্যান্য সবকিছুই ভুলে যেতে হবে। সম্পূর্ন রূপে নষ্টমোহ হতে হবে।

২) বুদ্ধির যোগ দ্বারা বেহদের ত্যাগ করে রুহানী যাত্রা করতে হবে। শ্রীমৎ অনুসারে পবিত্র হয়ে ভারতের প্রকৃত সেবা করতে হবে।
 

বরদান:-

মনের খুশীর দ্বারা অসুস্থতাকে দূরে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে 'এভারহেল্দী' ভব

প্রবাদ আছে যে- 'মনে আনন্দ তো জগৎ আনন্দময়'! মনে অসুখ থাকলে শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আর মন ভাল থাকলে রোগের অনুভবই হয় না। শরীর যতই অসুস্থ হোক না কেন, তবুও মনে আনন্দ থাকে, যেহেতু তোমার কাছে যে খুব সুন্দর খুশীর খোরাক আছে। এই খোরাকে রোগ-ভোগও পালিয়ে যায়, রোগকেই ভুলে যায় লোকেরা। অতএব যার মনে খুশী, দুনিয়াটাও তার কাছে ততই আনন্দের। জীবনে খুশী থাকলে, এভারহেল্দীই থাকে সে।

স্লোগান:-

সময়ের মহত্বকে জানতে পারলে, সর্ব-খাজানা সম্পন্ন হতে পারবে।