07.11.2018       Morning Bengali Murli        Om Shanti      BapDada       Madhuban


"মিষ্টি বাচ্চারা -
যতো তোমরা বাবাকে স্মরণ করবে, ততই তোমাদের বুদ্ধির তালাও খুলতে থাকবে। যে বাচ্চা প্রতি মুহূর্তে বাবাকে স্মরণ করতে ভুলে যায়, সে খুবই আনলাকী-অভাগা বাচ্চা"

প্রশ্নঃ -
খাতায় (পুণ্যের) জমা করার আধার কি ? সবচেয়ে বেশী অর্জন হয় কিসের দ্বারা ?

উত্তরঃ -
খাতায় জমা হয় - দানের ফলে। যত তুমি অন্যদেরকে বাবার পরিচয় দেবে, ততই তোমার আয় বৃদ্ধি হতে থাকবে। মুরলীর দ্বারাই সবচেয়ে বেশী উপার্জন হবে তোমার। এই মুরলী-ই শ্যাম (কুৎসিত) থেকে সুন্দর বানায়। মুরলীতেই জাদু আছে ভগবানের। এই মুরলীর দ্বারাই তুমি ধনীর থেকেও আরও ধনী খুব সম্পত্তিবান হতে পারো।

গীত :-
"হামে উন্ রাহো পর চলনা হ্যায়, যাঁহা গিরনা ঔর সাম্ভলনা হ্যায়।" (তার দিশাতেই চলবো আমরা, যদি হোচটও খাই, সামলে তো নিতে পারব।)

ওঁম্ শান্তি!
ঈশ্বরীয় পিতা ওঁনার বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন - বাচ্চারা, জীবনে চলার পথে যেমন হোঁচট খেয়ে পড়তে হয় তেমনি আবার তা সামলেও উঠতে হয়। প্রতি মুহূর্তে বাবাকে ভুলে যাওয়া যেন পড়ে গিয়ে হোঁচট খাওয়া। আবার তা সামলে ওঠা তখনই, যখন বাবা স্মরণে আসে। মায়া-ই বাবাকে স্মরণ করা ভুলিয়ে দেয়- যদিও তা নতুন কিছু নয়। তা না হলে কেউই এক মুহূর্তও বাবাকে ভুলে থাকতে পারতো না। যেমন স্ত্রী তার পতিকে কখনো ভোলে না। বাগান (সাগাই) হলেই বুদ্ধির যোগ তার সথে যুক্ত হয়ে যায়। তারপর আর ভুলতেই পারে না। কিন্তু পতি তো পতি-ই, তেমনি এই বাবাও তো বাবা-ই। আর এই বাবা- নিরাকার বাবা, যাকে আবার 'সাজন'ও (প্রিয়তম) বলা হয়। আর 'সজনী' (প্রিয়া) বলা হয় তার ভক্তদেরকে। বর্তমান সময়কালে সবাই ভক্ত কিন্তু ভগবান একজনই। ভক্তদেরকে 'সজনী' আর ভগবানকে 'সাজন' অথবা ভক্তদেরকে 'বালক' আর ভগবানকে 'বাবা' বলা হয়। পতিদেরও পতি অথবা সকল পিতাদের পিতা কিন্তু একজনই। প্রত্যেক আত্মার এক ও একমাত্র একই বাবা- যিনি পরমাত্মা। কিন্তু জাগতিক বা লৌকিকে প্রত্যেকেরই নিজের নিজের পৃথক বাবা। একমাত্র এই এক ও একমাত্র পারলৌকিক পরমপিতা সকল আত্মাদেরই বাবা যিনি 'গড্-ফাদার'। যার নাম 'শিববাবা'! কেবল মাত্র গড্-ফাদার, মাউন্ট আবু লিখলেই কি চিঠি পৌঁছে যাবে? নামও তো লিখতে হবে। -তাই না ! ইনি অসীম-বেহদের বাবা। ওঁনার নাম 'শিব'! যেমন 'শিবকাশী' বলা হয়। ওখানে 'শিব'-এর মন্দির আছে। শিব সেখানেও কখনও অবশ্যই গিয়ে থাকবেন। যেমন রামের বেলায় দেখানো হয়, রাম এখানে - ওখানে গিয়েছিলেন, তেমনি গান্ধীর বেলাতেও দেখানো হয় এখানে, ওখানে ........! এতেই তা প্রমাণ হয়। তাই শিববাবার চিত্রও এখানে ওখানে আছে। আচ্ছা, শিববাবা তো নিরাকার। তবে কেন ও ওঁনাকে ফাদার (পিতা) বলা হয়, আর কাউকেই এমন ভাবে সবার ফাদার বলা হয় না ? শিববাবা আবার ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরেরও ফাদার। তাই তো ওঁনার নাম 'শিব'। কাশীতে যেমন ওঁনার মন্দির আছে, তেমনি উজ্জয়িনীতেও শিবের মন্দির আছে। কিন্তু এত মন্দির বানানো হয়েছে কেন, তা কেউ জানে না।

লোকেরা লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজা করে, তারা একথাও বলে, এরাই স্বর্গ-রাজ্যের মালিক ছিল। কিন্তু সেই স্বর্গ-রাজ্য ছিল কখন, কিভাবেই বা তারা সেই স্বর্গ-রাজ্যের মালিক হয়েছিল, তা কেউই জানে না। পূজারী যাকে পূজো করে, তার গুণ ও কর্ম-কর্তব্যকেই যদি না জানে, তবে তো তাকে অন্ধশ্রদ্ধাই বলা হবে, তাই না। তেমনি এখানেও তোমরা ওঁনাকে "বাবা" বলে ডাকো, কিন্তু তাঁর পুরো পরিচয় যদি না জানো ? এমন কি সঠিক ভাবে তোমরা এই (শরীরধারী) মাতা-পিতাকেও জানো না। যেমন লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজারী লক্ষ্মী-নারায়ণকে না জেনেই কেবল পূজোই করে। লোকেরা শিব-মন্দিরে গিয়ে শিবের মহিমাই কীর্তন করে খালি, গানের মাধ্যমেই তারা আবার বলে, তুমিই মোদের মাতা-পিতা .........! কিন্তু তিনি কেমন মাতা-পিতা, কখন তা হয়েছিলেন - এসব কিছুই জানে না তারা। তেমনি ভারতবাসীরাও একেবারেই কিছু বোঝে না। অথচ খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদিরা নিজেদের যীশুখৃষ্টকে বা গৌতমবুদ্ধকে স্মরণ করে। ফট্ করে তাদের জীবন-চরিত, কর্ম-কর্তব্য বলে দেবে। তারা এও বলতে পারে, অমুক সময়ে যিশুখ্রিস্ট এসেছিলেন খ্রিস্টান ধর্ম স্থাপনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভারতবাসীরা যাকে পূজা করে, তারা তাদের বিষয়ে কিছুই জানে না - তিনি প্রকৃত কে? আর না জানে শিবকে, না তো ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকর-কে, এমন কি জগৎ অম্বা ও জগৎ পিতাকেও। লক্ষ্মী-নারায়ণের বিষয়েও কিছু জানেই না, তবুও পূজা করতেই থাকে। যাদের পূজা করে, তাদের জীবন-চরিত, গুণাবলী, কর্ম-কর্তব্য কি -এসব কিছুই জানে না তারা। তাই বাবা স্বয়ং বসে বাচ্চাদের তা বোঝাচ্ছেন - তোমরা বি.কে.-রা যখন স্বর্গ-রাজ্যে ছিলে, তোমাদের আত্মা আর শরীর উভয়ই পবিত্র ছিল, তাই তোমরা রাজত্ব করতে সেই স্বর্গ-রাজ্যে। প্রতি কল্পে তোমরাই সেই রাজত্ব ভোগ করো। তোমরাই পুনঃ পুনঃ জন্ম নিয়ে পুরো ৮৪-জন্ম ভোগ করতে করতে নিজেদের সেই রাজ্য-ভাগ্য খুইয়ে ফেলে দিব্য- সুন্দর থেকে কুৎসিত -শ্যামে পরিণত হও। লোকেরা তো আজকাল নারায়ণকেও কালো কুৎসিত রূপের বানায়। এতেই প্রমাণিত হয়, শৈশবের কৃষ্ণই পরবর্তীতে নারায়ণ হন। কিন্তু লোকেরা এসব কথা একেবারেই বোঝে না।

যাদবকুলের আবিস্কার মিসাইল আর কৌরব ও পাণ্ডবেরা ভাই-ভাই। কৌরবেরা আসুরী-ভাই আর পাণ্ডবেরা দৈবী-ভাই। পূর্বে পাণ্ডবেরাও আসুরী ছিল, বাবা তাদেরকে উন্নত করে দৈবী-কুলের বানিয়েছেন। কিন্তু অবশেষে কি পরিণতি হলো এই দুই প্রকার ভাইয়েদের মধ্যে? পাণ্ডবদের নিশ্চয়তার জয় আর সংশয় বুদ্ধিধারী কৌরবদের বিনাশ। মাম্মা-বাবা যদিও বা তোমাদেরকে সেইসব শুনিয়ে থাকেন, তারাও কিন্তু কৌরব-পাণ্ডবের বিনাশের বিস্তারিত তেমন ভাবে জানেন না। এখানে যারা বাবার শ্রীমৎ অনুসারে চলে না, সেইসব বাচ্চারা সঠিক ভাবে বোঝে না যে, এই বাবাই সেই বাবা যিনি তাদেরকে রাজযোগ শেখাচ্ছেন। তাই তাদের মধ্যেও সেই নিশ্চয়তা আসে না। ফলে তারা দেহ-অভিমানী হবার কারণে, দেহের সম্বন্ধের মিত্র-সম্বন্ধী ইত্যাদিদেরই স্মরণ করতে থাকে। কিন্তু এখানে তো দেহী (নিরাকার) বাবাকেই স্মরণ করতে হয়। যা এক নতুন পদ্ধতি। সাধারণ মানুষেরা তা বুঝে উঠতেই পারে না। তাই তো এখানে তারা সেই মাতা-পিতার সামনে বসে থাকা সত্ত্বেও সঠিক ভাবে জানতে পারে না বাচ্চারা। সত্যি, কি আশ্চর্যের - তাই না? যাদের (অলৌকিক) জন্ম হলো এখানে, তবুও তারা তা জানে না, বাবা যে নিরাকার। তাই তারা স্পষ্ট ভাবে বুঝে উঠতেও পারে না। ফলে বাবার শ্রীমতে চলতে না পেরে আশ্চর্যবৎ ভাগন্তী হয়ে যায়। যার থেকে স্বর্গ-রাজ্যের আগামী ২১-জন্মের অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পাওয়া যায়, তাকেই যদি না জানতে পারে.....! এই বোধ না আসার কারণেই তারা ছেড়ে চলে যায়। আর যারা বাবাকে জানতে পারে - তারা হয় সৌভাগ্যবান। সবার যাবতীয় দুঃখ-কষ্টের মুক্তিদাতা একমাত্র এই বাবা। দুনিয়াটাই এখন কত প্রকারের দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত। যেহেতু বর্তমান দুনিয়াটাই যে ভ্রষ্টাচারী রাজ্য। অবিনাশী ড্রামা অনুসারে ৫-হাজার বর্ষ বাদে এই সৃষ্টি-জগৎ আবারও এমনই ভ্রষ্টাচারী দুনিয়াই হবে। আবার বাবা এসে সত্যযুগী শ্রেষ্ঠাচারী স্বরাজ্য স্থাপন করবেন। তোমরা এখানে এসেছো মনুষ্য থেকে দেবতা হওয়ার লক্ষ্যে। বর্তমান দুনিয়াটা মনুষ্য দুনিয়া। এখানকার মানুষেরা হয় পতিত। দেবতাদের দুনিয়া সত্যযুগ। যেখানে থাকে পবিত্র দেবতারা। যা কেবল তোমাদেরকেই বোঝানো হয়, ফলে তোমরাও ব্রাহ্মণে পরিণত হও। যারা যেমন যেমন স্তরের ব্রাহ্মণ হতে থাকবে, তারা তেমনই বুঝতে থাকবে। সবাই তো আর তেমন ব্রাহ্মণ হবে না। যারাই ব্রাহ্মণ হতে পারবে, তারাই পরবর্তীতে দেবতা হতে পারবে। কিন্তু প্রথমে ব্রাহ্মণ হতে না পারলে দেবতা হওয়া যায় না। অন্তর থেকে বাবা-মাম্মা বলতে পারলেই ব্রাহ্মণ কুলের হওয়া যায়। এরপর যা কিছু প্রাপ্তি তা হয় এই জ্ঞানের পাঠ আর পুরুষার্থের অনুসারে।

এখন আবার নতুন করে রাজ্য স্থাপনার কার্য চলছে। ইব্রাহিম, বুদ্ধ, ইত্যাদিরা কোনও রাজ্য স্থাপন করেন না। যীশুখ্রীষ্টও একাই আসেন। য়ীশুর আত্মা কারও শরীরে প্রবেশ করে খ্রিস্টান ধর্ম স্থাপন করেন, তারপর উপরে থাকা খ্রিস্টান ধর্মের আত্মারা তারাই আসতে থাকে ধীরে ধীরে। খ্রিস্টানদের সব আত্মাই এখন এই দুনিয়ায়। অন্তিমে সবাইকেই ফিরে যেতে হবে। এই বাবা সবার গাইড হয়ে সবাইকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত করেন। এই বাবাই সমগ্র মনুষ্যের মুক্তিদাতা ও গাইড। সব আত্মাকেই উনি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। আত্মারা পতিত হওয়ার কারণে এইভাবে ফিরে যেতে পারে না, যেহেতু নিরাকারী দুনিয়া পবিত্র দুনিয়া। বর্তমানের এই সাকারী সৃষ্টি-জগৎ পতিত হয়ে আছে। কিন্তু তাকে পবিত্র বানাবে কে, যাতে আত্মারা নিরাকারী দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারে? তাই তো লোকেরা ওনাকে ডাকে-"ও গড্-ফাদার এসো। গড্-ফাদারও এসে জানায়, কল্পে মাত্র একবারই আসেন উঁনি। যখন সম্পূর্ন দুনিয়াই ভ্রষ্টাচারী হয়ে ওঠে। কত গোলা-গুলি, কত বোম্-বারুদ, এইসব বানায়, একে অপরকে মারার জন্য। একদিকে যেমন বোম্-টোম্ বানায়, অপরদিকে তার উপর আবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বন্যা, ভূমিকম্প, বজ্রপাত - এত সবে মানুষ তো অসুস্থ হয়েই পড়বে - আবার ধরিত্রীরও তো সারের প্রয়োজন। ময়লা আবর্জনা থেকেই তো সার হয়। সমগ্র সৃষ্টি জগতেই সারের প্রয়োজন এখন, তবেই তো আগামীতে খুব সুন্দর ফসল ফলবে। সত্যযুগে একমাত্র এই ভারত ভূ-খণ্ডই থাকে। বাকী যত ভূ-খণ্ড আছে সবই বিনাশ হয়ে যাবে। তাই তো বাবা এসে এখানেই দৈবী-রাজধানী স্থাপন করেন। যেহেতু বাকী অংশ তো ধ্বংসই হয়ে যাবে। আর তোমরা বি.কে.-রা যাবে স্বর্গ-রাজ্যে। যে স্বর্গ-রাজ্যকে সবাই স্মরণ করে। কিন্তু স্বর্গ-রাজ্যের অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা কাদের ভাগ্যে যায় - তা জানে না কেউ। যেমন কেউ মারা গেলে লোকেরা বলে সে স্বর্গবাসী হলো। আরে, কলিযুগে যে মারা যাবে, সে তো আবারও এই কলিযুগেই পুনঃজন্ম নেবে। এই সামান্য বুদ্ধিটুকুও নেই কারও। অথচ কত বড়-বড় পদবী এদের, 'ডক্টর অফ ফিলোজফী ইত্যাদি কত কিছু। অথচ প্রকৃত বোধ-বুদ্ধিই নেই। এই মনুষ্যরাই একদা মন্দিরে থাকার উপযুক্ত ছিলো। সেই সময়টা ছিল ক্ষীর-সাগর, বর্তমানে যা বিষয়-সাগর। বাবা বাচ্চাদেরকে এসব কথাই বোঝাচ্ছেন। মহামূল্য এই জ্ঞানের পাঠ, তা শেখাবেন তো মানুষদেরকেই, জন্তু-জানোয়ারকে তো আর তা পড়ানো যায় না!

এবার বাবা বোঝাচ্ছেন -পূর্ব নির্ধারিত এই অবিনাশী ড্রামা বহু পূর্ব থেকেই তার চিত্রপট বানানো থাকে। যে যেমন বিত্তবান মানুষ, তার ফার্নিচার তেমনই হয়। গরীবের থাকবে পোঁড়া মাটির পাত্র, আর সম্পত্তিবানের থাকবে কত নানা ধাতুর কত প্রকারের আসবাব। তেমনি তোমরা অর্থাৎ বি.কে.-রাও সত্যযুগে প্রচুর ধন-সম্পত্তির মালিক হয়ে হীরে-জহরৎ-এর মহল-এর মালিক হও। স্বর্গ-রাজ্যে কোনও প্রকারের ময়লা-আবর্জনা থাকে না। কোনও দুর্গন্ধ ইত্যাদিও নেই। এখানে তো কেবল দুর্গন্ধই দুর্গন্ধ। তাই এত প্রকারের ধূপকাঠি ইত্যাদি জ্বালানো হয়। সেখানে প্রাকৃতিক ফুলের কি সুন্দর গন্ধে চারিদিক ভরে থাকে। ধূপকাঠির প্রয়োজনই পড়ে না। তাই তো তাকে স্বর্গ-রাজ্য বলা হয়। বাবা এসেছেন তোমাদেরকে এই জ্ঞানের পাঠ পড়িয়ে সেই স্বর্গ-রাজ্যের মালিক বানাতে। একবার ভেবে দেখো, কত সাধারণ এই বাবা। তবুও এমন বাবাকে স্মরণ করতে ভুলে যাও তোমরা। সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা না থাকলেই এমন ভুল হয়। যাদের থেকে স্বর্গ-রাজ্যের অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পাওয়া যায়, এমন মাতা-পিতাকে ভুলে যাওয়া র্দুভাগ্য ছাড়া আর কি বা হতে পারে। বাবা এসে বাচ্চাদের উচ্চ থেকেও উচ্চতর বানান। এমন মাতা-পিতার নির্দেশিত পথে না চলতে পারলে তাকে ১০০% মোস্ট আনলাকী অভাগাই তো বলবে। এদেরও আবার ক্রমিক আছে। কোথায় জ্ঞানের পাঠ পড়ে জ্ঞান ধারণ করে সমগ্র বিশ্বের মালিক হওয়া, আর কোথায় চাকর-বাকর হওয়া। তা তোমরা নিজেরাই আন্দাজ করতে পারবে, অদ্যাবধি কে কতটা জ্ঞান ধারণ করতে পেরেছো। ধর্ম স্থাপনের জন্য কেবলমাত্র ধর্ম পিতারাই আসে। আর এখানে মাতা-পিতা উভয়েই আছেন, যেহেতু এটা প্রবৃত্তি-মার্গ। পূর্বে যা ছিল পবিত্র প্রবৃত্তি-মার্গ, এখন তা হয়েছে অপবিত্র প্রবৃত্তি-মার্গ। তখন লক্ষ্মী-নারায়ণ যেমন সম্পূর্ণ পবিত্র ছিল, ওনাদের সন্তানসন্ততিও তেমনই পবিত্র ছিল। তোমরা নিজেরাই এখন তা বুঝতে পারবে, কি হতে চলেছো তোমরা? যে মাতা-পিতা তোমাদেরকে এত উচ্চতর বানাতে চলেছেন, তাদেরকে অনুসরণ করা উচিত কি না? এই ভারত-ভূখণ্ডকেই সব দেশের মাতা-পিতা বলা হয়। সত্যযুগে যেমন সবাই পবিত্র ছিল, এখন তেমনি সবাই পতিত। কত সহজ-সুন্দর সরল ভাবে এসব বোঝানো হয়, কিন্তু বাবাকে তেমন ভাবে স্মরণ করতে পারো না বলেই বুদ্ধির তালা বন্ধই থেকে যায়। জ্ঞান শুনতে শুনতে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে, তালা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। জাগতিক স্কুলগুলিতে যেমন ক্রমিক অনুসারেই হয় সবকিছু। কেউ হয় মূর্খ-নির্বোধ পাথর বুদ্ধির আবার কেউ বা হয় জ্ঞানী-বুদ্ধিমান পরশ পাথরের মতন। যারা পাথর বুদ্ধির তাদের বোধে কিছুই ঢোকে না, তাই তারা সারা দিনে ৫-মিনিটও বাবাকে স্মরণ করে না। ৫-মিনিট স্মরণ করলে একটু তো তালা খুলবে। আর অনেক সময় স্মরণ করলে, অনেকটাই তালা খুলবে। সবকিছুই নির্ভর করছে স্মরণের উপর। কোনও কোনও বাচ্চা বাবাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখে-"প্রিয় বাবা" অথবা "প্রিয় দাদা", কিন্তু কেবলমাত্র "প্রিয় দাদা" লিখে পোস্ট করলে চিঠি কি আর সঠিক গন্তব্যে পৌঁছোবে? তাতে তো কারও নামেরও দরকার। এমন দাদা-দাদী তো দুনিয়াতে অনেক আছে। আচ্ছা!

আজ দীপাবলী উৎসব। দীপাবলীতে নতুন হিসেবের খাতা চালু হয়। তোমরা বি.কে.-রাই প্রকৃত ব্রাহ্মণ। জাগতিক ব্রহ্মণেরা ব্যবসায়ীদের নতুন হিসাবের খাতা রাখতে বলেন। তেমনি তেমাদেরও নিজেদের নতুন খাতা রাখা উচিত, নতুন দুনিয়ার জন্য। ভক্তি-মার্গে তোমাদের যে খাতা ছিল, তা তো কেবল লোকসান আর লোকসানের খাতা। এখন তোমরা অসীম বেহদের অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পাচ্ছো, বেহদের সুখ-শান্তিও পাচ্ছো। এসব বোঝাচ্ছেন সেই বেহদের বাবা, আর তা বুঝতে পারে একমাত্র বেহদের সুখ পাওয়া বাচ্চারা। লক্ষ-কোটির মধ্যে কেউ কেউ বাবার সান্নিধ্য আসার সৌভাগ্য লাভ করে। পথে চলতে চলতে পুণ্যার্জনে লোকসান হতে থাকলে, যা জমা হয়েছিল, তাও বাতিল হয়ে যায়। পুণ্য-জমার খাতা তখনই বৃদ্ধি পাবে, যদি তুমি নিজে দান-ধ্যান করো। দান না করলে তোমার পুণ্যার্জন বৃদ্ধিও হয় না। তোমরা যে পুরুষার্থ করো, তাও পুণ্যার্জনের লক্ষ্যেই। কিন্তু তা সফল তখনই হবে, যখন কারওকে কিছু দান-ধ্যান করো, কারও কিছু উপকার হয় তখনই। যেমন, কারওকে যখন বাবার পরিচয় দিলে, তখন তোমার খাতায় পুণ্যার্জন জমা হলো। পরিচয় না দিলে জমা হবে কোত্থেকে! তোমাদের এই রোজগার অনেক বড় অর্জন। মুরলীর জ্ঞানার্জনই তোমাদের প্রকৃত পুণ্যার্জন হয়। কিন্তু এই ধারণা স্পষ্ট হতে হবে এই মুরলী কার? বাচ্চারা, তোমরা তো বুঝেই গেছো যারা এখন 'শ্যাম' হয়ে আছে 'সুন্দর' হবার জন্য তাদের মুরলী শুনতেই হবে। "আহা রে মুরলী, তোর মধ্যে কি এমন জাদু আছে রে।" --যা স্বয়ং ভগবানের জাদু। অর্থাৎ এই মুরলীতেই আছে ভগবানের জাদু। এই জ্ঞান তোমরা কেবল এই সময়কালেই পেয়ে থাকো। এমন কি দেবতারাও এই জ্ঞান পায় না। যেখানে তাদেরই এই জ্ঞান ছিলো না, তবে আর তার পরবর্তীদের তো তা থাকবেই না। বই-পুঁথি, শাস্ত্র-ইত্যাদি এসবের উদ্ভাবন তো অনেক পরে হয়, যদিও তা ভষ্মেই পরিণত হবে। প্রকৃত গীতা খুব কমই আছে। কিন্তু অন্য প্রকারের হাজার ধরণের, লক্ষ-লক্ষ প্রকারের গীতা সারা দুনিয়ায় অনেকই আছে। আর এটাই হলো প্রকৃত গীতার আসল চরিত্র। লোকেদের সেইসব গীতা থেকে এতকিছু ধারণা হবে না, যতটা হবে, গীতার চিত্রগুলি বুঝতে পারলে। আচ্ছা!

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ, ভালবাসা ও সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।

ধারণার জন্যে মুখ্য সারঃ-

১) মনোযোগ সহকারে এই জ্ঞানের পাঠ পড়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান বানাতে হবে। দেবতা হওয়ার লক্ষ্যে পাক্কা ব্রাহ্মণ হতে হবে।

২) দেহী (অশরীরী) বাবাকে স্মরণ করতে গেলে নিজেকেও দেহী-অভিমানী হতে হবে। দেহের ভাবকে ভোলার অভ্যাসে অভ্যাসী হতে হবে।

বরদানঃ-
দিব্য গুণগুলিকে আহ্বানের দ্বারা সর্ব প্রকারের অবগুণগুলিকে আহুতি দিয়ে সন্তষ্ট-আত্মা ভব

দীপাবলীতে যেমন বিশেষ পরিস্কার ও রোজগারের প্রতি লক্ষ্য রাখে, তেমনি তোমারও উচিত সর্ব-প্রকার পরিস্কারের আর রোজগারের লক্ষ্য রেখে সন্তুষ্ট আত্মা হওয়া। সন্তুষ্টতার দ্বারাই সর্ব-প্রকারের দিব্য গুণগুলিকে আহ্বান করতে পারবে। তাতেই স্বতঃসিদ্ধ ভাবে অবগুণগুলির আহুতি হয়ে যাবে। ভিতরের দুর্বলতা, অভাব, এবং যে নির্বলতা ও কোমলতা আছে, সেগুলি সমাপ্ত করে, এখন আবার নতুন খাতা শুরু কর, যাতে নতুন সংস্কারের নব-বস্ত্র ধারণ করে প্রকৃত দীপাবলী উৎসব পালন করতে পারো।

স্লোগানঃ-
ব্রাহ্মণ কুলের দীপক সে-ই হতে পারে যার স্মৃতির জ্যোতি সদাই জাগ্রত থাকে।