০৬-১০-১৮ প্রাত: মুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - দেহ সহিত সবকিছু ভুলে এক বাবাকে স্মরণ করো তাহলেই বলা হবে প্রকৃত সন্তান, এই পুরানো দুনিয়া থেকে এখন তোমাদের বুদ্ধি সরে যাওয়া উচিত

প্রশ্ন:-

বাবার জ্ঞান কোন্ বাচ্চাদের বুদ্ধিতে সহজেই বসে যায় ?

উত্তর:-

যারা গরীব বাচ্চা, যাদের মোহ নাশ হয়েছে, যাদের বুদ্ধি বিশাল, তাদের বুদ্ধিতে সমস্ত জ্ঞান সহজেই বসে যায় l বাকি যাদের বুদ্ধিতে থাকে - আমার ধন, আমার পতি -----তারা এই জ্ঞান ধারণ করে উঁচু পদ পেতে পারে না l বাবার হওয়ার পরেও লৌকিক সম্বন্ধকে স্মরণ করার অর্থ - কাঁচা বন্ধন(বাবার সাথে Engagement), তাদের নামমাত্র (Stepchildren) সন্তান বলা হয় l

গীত:-

তোমার পথেই আমার মরণ, তোমার পথেই আমার জীবন

ওম্ শান্তি l

মিষ্টি - মিষ্টি বাচ্চারা গানের অর্থ তো নিজেরাই বুঝেছে l এখন তোমাদের বেঁচে থেকেই এসে বাবার হতে হবে, আর পুরানো দুনিয়া যাকে চরম নরক বলা হয়, তাকে ভুলতেও হবে আবার ছাড়তেও হবে l এই চরম নরককে ভুলে স্বর্গকে স্মরণ করতে হবে l নিজেকে আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ করতে হবে l পুরানো দুনিয়া বুদ্ধি থেকে সরে যাওয়া উচিত l এর জন্যই পুরুষার্থের প্রয়োজন l এ হলো জন্ম - জন্মান্তরের কর্মবন্ধন l এক জন্মের নয়, জন্ম - জন্মান্তরের কর্ম বন্ধন l কতো পাপ, কার কার সঙ্গে করেছি, সে সব জন্ম নিয়ে ভোগ করতে হয় l তাই এই কর্মবন্ধনের দুনিয়াকে ভুলে যেতে হবে l এ হলো ছি - ছি দুনিয়া, পুরানো শরীর, এর থেকে মোহ দূর করতে হবে l গরীবদের মোহ সহজেই দূর হয়ে যায় কিন্তু বিত্তবানদের মোহ খুব মুশকিলের সঙ্গেই দূর হয় l তারা মনে করে, আমরা এই স্বর্গেই সুখী আছি, গরীবরা দুঃখে আছে l এমনিতে তো সম্পূর্ণ ভারতই গরীব, কিন্তু এদের মধ্যেও প্রকৃত যারা গরীব তারা চট্ করে এই জ্ঞান ধারণ করে l তাদের জন্যই বাবা আসেন l গরীবরা অনেক বেশী আশীর্বাদী বর্সা পায় l সব সেন্টারে দেখো, বিত্তবানরা খুব মুশকিলেই টিকতে পারে l গরীব ঘরের স্ত্রীরাই এখানে আসে l ধনবানরা তো তাদের পতির থেকে সুখ পায়, তাই তাদের পতির থেকে তাদের বুদ্ধিযোগ ছিন্ন হয় না l গরীবরাই বেশীরভাগ এই জ্ঞান ধারণ করে l বাবা হলেন গরীবের ভগবান l যেই বাবাকে সকলে স্মরণ করে l ড্রামা অনুসারে কিন্তু ভক্ত ভগবানকে জানে না l ভগবান তো হলেনই ভক্তের রক্ষক l ভক্তির ফল এবং সদ্গতি দেন একমাত্র বাবা l বাচ্চারা, তোমরা এখন বাবার কাছে জ্ঞানের কথা শুনছো l এই জ্ঞান সেই বাচ্চাদের বুদ্ধিতেই বসে, যাদের বুদ্ধি বিশাল, এবং যাদের মোহ নষ্ট হয়েছে l যাদের বুদ্ধিতে - আমার পতি, আমার ধন ইত্যাদি থাকে, তারা উঁচু পদ পেতে পারে না l তারাই পদ প্রাপ্তি করে, যারা রচয়িতা এবং রচনার পরিচয় প্রদান করে l বাবাকে না চিনলে অবিনাশী বর্সা কিভাবে পাবে ? সাজনকে শুধুমাত্র সাজন বললে কোনো লাভ নেই l না জানলে, চিনলে সাজনের সঙ্গে কিভাবে বন্ধন হতে পারে ? কন্যাদের যখন বিবাহ ঠিক হয়, তখন তাকে পাত্রের চিত্র দেখানো হয় l অমুকের সন্তান, সে এই কাজ করে l আগে দেখানো হতো না, এমনিতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো l তাও পাত্র কী করে তা তো বলাই হতো l এখানে কোনো কোনো বাচ্চা বাবাকে বা তাদের সাজনকে জানেই না, তাহলে বিবাহ বন্ধন কিভাবে হবে ? তা হয় পুরুষার্থের নম্বর অনুসারেই l কারোর বাবার সাথে বন্ধন আবার কাঁচা l পারলৌকিক সাজনকে স্মরণ করেই না, লৌকিক সাজন আর সম্বন্ধীদের মনে করতে থাকে, তাহলে এ হয়ে গেলো কাঁচা বন্ধন l তাদের নামমাত্র সন্তান বলা হয় l পাকা বা দৃঢ়দের তো প্রকৃত সন্তান বলা হয় l এই প্রকৃত সন্তান খুবই অল্প l ভাট্টিতে এতো আসে, কিন্তু তাদের মধ্যে কতো কাঁচা সন্তান বের হয় l নিজের সাজনকে তারা চেনেই না l পারদ যেমন হাতের উপরে স্থির হতে পারে না, তেমনি স্মরণও ততটাই কঠিন l মানুষ প্রতি মুহূর্তে ভুলে যায় l ২৫ - ৩০ বছর ধরে যারা আছে, তারাও সম্পূর্ণ স্মরণ করতে পারে না l তোমরা জানো যে পারলৌকিক সাজন ২১ জন্মের জন্য স্বর্গের মহারাজা - মহারাণী বানান l তিনি এই সৃষ্টির আদি - মধ্য এবং অন্তকে জানেন l সজনীদের এতো বোঝানো হয় তবুও বুদ্ধিতে বসে না l বুদ্ধি পুরানো দুনিয়ার বন্ধনে ঘুরতে থাকে l তারা বুঝতেও পারে না যে, আমরা বন্ধনে আছি l সম্বন্ধ তো একজনের সাথেই হওয়া চাই l বাকি সবই হলো বন্ধন l বাচ্চাদের বোঝানো হয় যে - একজনের সাথেই সম্বন্ধ রাখো, তিনিই তোমাদের এই সৃষ্টির আদি - মধ্য এবং অন্তের শিক্ষা দেন l



তোমরা জানো যে - অর্ধেক কল্প হলো জ্ঞান কান্ড আর অর্ধেক কল্প ভক্তি কান্ড l জ্ঞান কাণ্ডে তো ২১ জন্মের অবিনাশী বর্সা পাওয়া যায় l সেখানে হলো সতোপ্রধান, তারপর সতোপ্রধান থেকে নিচে সতো, তারপর সতোর থেকে নিচে রজোতে আসতে হবে l এখন সতো সম্পূর্ণ হয়ে গেলে জ্ঞান কান্ড সম্পূর্ণ হয়ে যায় l দ্বাপর যুগ থেকে ভক্তি শুরু হয় l সেখানেও প্রথমে সতোপ্রধান ভক্তি হয় l এরপর ভক্তিও সতো - রজো - তমোতে আসে l ব্যভিচারী হওয়ার কারণে ভক্তিও নামতে থাকে l এখন এই কথা জানা বা কাউকে বোঝানো খুবই সহজ l বাচ্চারা তোমাদের এই চূড়ান্ত নরকের থেকে সম্বন্ধ ত্যাগ করে একের সাথেই রাখা উচিত l এক বাবার সাথেই সম্বন্ধ রাখার অভ্যাস করো l বাবাকে স্মরণ করলেই তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হবে l গরীবরা খুব ভালো পরিশ্রম করে l তাই গরীবদের বাহবা l বাবাও গরীবদের প্রতি বলিহারি(সমর্পিত) যান l শুরুতে কতো গোপ ছিলো , কত মাতা ছিলো l তাদের কতো চলে গেছে বাকি অল্প আছে l মায়েরাও অল্প l হ্যাঁ, কোনো কোনো ধনী ব্যক্তি আবার ঘরেও রয়ে গেছে l যেমন কুইন মাদার, দেবী প্রমুখ l তোমাদের এখন মূল বিষয় বোঝাতে হবে যে, যে ভগবানকে সবাই সবাই স্মরণ করে তার পরিচয় কি ? পতিত - পাবন বাবা, যিনি রাজযোগ শিখিয়ে নর থেকে নারায়ণ বানান, তাকে যদি না জানো তাহলে তোমরা পাপ করতে থাকবে, বাবাকে গালিও দিতে থাকবে l সম্মেলন তো অনেকই হতে থাকে l সেখানে বোঝানোর জন্য খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কাউকে দরকার l তাদের বোঝানো দরকার যে, তোমরা বেদের মহিমা জানো, কিন্তু এতে তো কোনো লাভ হয় না l লাভ তো এক বাবার থেকেই হয়, যাঁকে আমরা জানি কিন্তু তোমরা জানো না l এসো আমরা তোমাদের বোঝাচ্ছি l বাবাকে না চিনলে কিভাবে অবিনাশী বর্সার অধিকারী হবে ? বাবার এই অবিনাশী বর্সা হলো মুক্তি - জীবনমুক্তি, গতি - সদ্গতি l এই অক্ষর বাবাই শোনান l বাচ্চারা, তোমাদের স্মরণে রাখা উচিত l আর কোনো জিনিসে এমন লাভ নেই l বাবাকে আর এই রচনার আদি - মধ্য এবং অন্তকে জানতে হবে l এতেও অর্ধেক কল্প ভক্তি কান্ড, অর্ধেক কল্প সদ্গতি, জ্ঞান কান্ড l যদিও সম্মেলন করে তবুও নিজেরাই দ্বিধায় রয়েছে l কিছুই বুঝতে পারে না l তোমাদের সবাইকে বাবার পরিচয় দিতে হবে l যখন অনেকেই পরিচয় পেয়ে যাবে , তখনই বলা হবে বাহাদুরি l ইনি তো সম্পূর্ণ সৃষ্টির আদি - মধ্য এবং অন্তের রহস্য চিত্র সহিত বলেন । মায়েদের খুব নেশা থাকা উচিত । পুরুষ সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকে আর নির্দেশ দেন বাবা । মায়েদের বা কন্যাদেরই সব করতে হবে । আজকাল কন্যা এবং মায়েদের মহিমা অনেক বেশী । গভর্নর, প্রাইম মিনিস্টারও মেয়েরা হচ্ছে । একদিকে সেই মায়েরা, আর একদিকে তোমরা, পান্ডবদের মায়েরা । তাদেরই আনন্দ অনেক বেশী কারণ রাজ্য তাদেরই । তোমরা তো তিন পা পৃথিবীও পাও না ।



বাচ্চারা, বাবা তোমাদের অনেক রহস্যের কথা বুঝিয়ে বলেন । তোমরা এখন স্বর্গের অবিনাশী বর্সা পাচ্ছো । সাজন তোমাদের সাজান, সাজিয়ে মহারানী বানান । এমন সাজনের সঙ্গে বুদ্ধিযোগ না রাখা, এ মস্তবড় ভুল । বাচ্চাদের তো অনেক বোঝানো হয় । তোমরা কেবল জ্ঞান আর ভক্তির কনট্রাস্ট বলো । ভারতেই এই গায়ন আছে যে --- দুঃখে সবাই স্মরণ করে, সুখে কেউ করে না । সুখে কেন স্মরণ করবে ? এখন সেই নতুন দুনিয়া স্থাপন হচ্ছে । তারজন্য সুখের সেই অবিনাশী বর্সা সম্পূর্ণ নেওয়া উচিত । মাতাপিতা জানেন যে প্রত্যেকে কতটা উপযুক্ত । মৃত্যু যখন নিকটে আসবে তখন বলা হবে যে, তোমরা সম্পূর্ণ পুরুষার্থ করো নি, তাই তোমাদের এমন অবস্থা । এও বলবেন যে তোমরা কি ধরনের প্রজা হবে, কেমন দাস - দাসী হবে, সব বলবেন । আচ্ছা ।



কোনো কোনো বাচ্চা মনে করে যে, আজ আমি খুব সুন্দর মুরলী পড়েছি, কিন্তু না, এ তো শিববাবাই এসে সাহায্য করেন । অহংকার হওয়া কখনোই উচিত নয় । যা তোমরা শোনাও তা তো তোমাদের বাবাই শেখান । বাবা না থাকলে তোমরা কিভাবে মুরলী বলবে । মুরলীধরের সন্তানদের মুরলীধরই হওয়া উচিত, না হলে উঁচু পদ পেতে পারবে না । যদিও কিছু না কিছু লাভ হয়েই যায়, কেউ যদি সেন্টার খোলে তাহলে অনেক আশীর্বাদ পায় ।এত সময় তোমরা পড়া করেছো, তাই নিজেরাই সেন্টার খুলে সেবা করতে হবে । নিজে শিখলে কি অন্যদের শেখাতে পারবে না ? ব্রহ্মাকুমারীদের চায়, তাই বাবা বুঝতে পারে যে, সম্ভবত এদের মধ্যে এতটা জ্ঞান নেই । বাকি, এখানে এসে কি করে ? বাবা তো বোঝান -- বাদল এলো, তোমরা রিফ্রেশ হয়ে গেলে অন্য কোথাও বর্ষণের জন্য । না হলে পদ কি করে পাবে ? মাম্মা - বাবা বলো তো সিংহাসনের অধিকারী হয়ে দেখাও । এও কারোর অহংকার আসা উচিত নয় যে আমি বাবাকে দিয়েছি । তোমরা কিছুই দাও না, বাবা তোমাদের কড়ি দেওয়ার থেকে মুক্ত করে হীরে দিয়ে দেন । আচ্ছা ।



মিষ্টি - মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা - পিতা, বাপদাদার স্মরণ - ভালোবাসা এবং সুপ্রভাত । রুহানী বাবার রুহানী বাচ্চাদের নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

১. একের সঙ্গে সর্ব সম্বন্ধ রেখে বুদ্ধিযোগ অনেক বন্ধন থেকে মুক্ত করতে হবে । একের সাথেই পাকা সম্বন্ধের চুক্তি করতে হবে । বুদ্ধিযোগে বিভ্রান্ত হবে না ।

২. বাবার সমান মুরলীধর হতে হবে, আমি ভালো মুরলী পড়ি -- এই অহংকার যেন না হয় । বাদল ভরে নিয়ে বর্ষণ করতে হবে । পড়া পড়ে সেন্টার খুলতে হবে ।

বরদান:-

পৃথক(ন্যারা) থাকার অভ্যাসের দ্বারা পাস উইথ অনার হয়ে ব্রহ্মা বাবার সমান ভব

ব্রহ্মাবাবা যেমন সাকার জীবনে কর্মাতীত হওয়ার আগে পৃথক আর প্রিয় থাকার অভ্যাস প্রত্যক্ষ অনুভব করিয়েছিলেন । সেবা বা কোনো কর্ম ত্যাগ করেন নি কিন্তু পৃথক হয়ে সেবা করতেন । এই পৃথক ভাব(নির্মোহী) প্রতি কর্মে সহজ সফলতার অনুভব করায় । তাই সেবার বিস্তার যতই বাড়াও কিন্তু বিস্তারে গিয়ে সারের স্থিতির অভ্যাস যেন কম না হয়, তখনই ডবল লাইট হয়ে কর্মাতীত স্থিতিকে প্রাপ্ত করে ডবল মুকুটধারী, ব্রহ্মা বাবার সমান পাস উইথ অনার হতে পারবে ।

স্লোগান:-

নিজেকে এমন শক্তি স্তম্ভ বানাও যে অনেকেরই নতুন জীবন প্রাপ্ত করাবার শক্তি যেন প্রাপ্ত হয় ।