১৭-১০-১৮ প্রাতঃমুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - গৃহস্থ ব্যবহারে থেকে পরিবারের সবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্ম-কর্তব্য পালন করতে হবে। কারও প্রতি ঘৃণার ভাব যেন না আসে। নিজেকে পদ্ম ফুলের মতন অবশ্যই পবিত্র রাখতে হবে"
প্রশ্ন:-
তোমাদের জয়ঢাক কখন বাজবে? কিভাবেই বা তোমাদের জয়জয়কার হবে?
উত্তর:-
অন্তিম সময়ে যখন মায়ার গ্রহের দশা তোমাদের উপর আর প্রভাব ফেলতে পারবে না, সর্বদাই সব লাইন ক্লিয়ার থাকবে, তখনই তোমাদের জয়জয়কার হয়ে চতুর্দিকে বিজয়ের জয়ঢাক বাজবে। বাচ্চারা, এখনও তোমাদের উপর গ্রহের দশা লাগে। কত প্রকারের বিঘ্নও আসতে থাকে। সেবার জন্য পৃথিবীর তিন-পা জমিও পাওয়া মুস্কিল হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু, এমন সময়ও আসবে যখন তোমরা বি.কে.-রাই সমগ্র বিশ্বের মালিক হবে।
গীত:-
ধৈর্য ধর রে মন, সুখের দিন এল বলে...
ওঁম্ শান্তি!
বাচ্চারা তাদের পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে ধারণা করতে পারে বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের পুরোনো এই অবিনাশী নাটক যে এখন অন্তিম পর্যায়ে। এই দুঃখ-কষ্টের দিন আর অল্প সময়ই বাকী আছে, তারপর কেবলই সুখ আর সুখ। সেই সুখের আভাস পাবে তখনই তো বুঝতে পারবে এটা যে দুঃখধাম। সুখধাম আর দুঃখধামের মধ্যে কত আকাশ-পাতাল তফাৎ। তোমরা বি.কে.-রা যে পুরুষার্থ করছ তা সুখ পাবার লক্ষ্যে। তোমরা এও বুঝতে পারছো, দুঃখের এই চলতে থাকা পুরোনো নাটক এখন প্রায় শেষের মুখে। তাই সুখের লক্ষ্যে এখন তোমরা বাপদাদার শ্রীমৎ অনুসারেই চলছো। যা অন্যদেরও সহজ-সরল ভাবে বোঝাতে পারবে। পরমপিতা পরমাত্মার সাথে আত্মাদের এখন আপন ঘরে ফিরে যাবার সময় হয়েছে। তাই তো বাবা স্বয়ং এসেছেন বাচ্চাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। পরম-পবিত্র বাবার বাচ্চারা, গৃহস্থ ব্যবহারে থেকেও পদ্মফুলের মতন পবিত্র থাকতে হবে তোমাদের। পরিবারের সব দায়িত্ব ও কর্ম-কর্তব্যও পালন করতে হবে। আর তা না পারলে তোমরাও যে জাগতিক সাধু-সন্ন্যাসীদের মতনই হয়ে যাবে। যেহেতু তারা কোনও দায়-দায়িত্ব ও কর্ম-কর্তব্য পালন করে না! তাই তারা নিবৃত্তি-মার্গের হঠযোগী। সেই সন্ন্যাসীরা যে যোগ শেখায় তা লহঠযোগ। আর তোমরা বি.কে.-রা এখানে শেখো, তা হল রাজযোগ, যা স্বয়ং ভগবান শেখান। ভারতের মূল ধর্ম-শাস্ত্র হল 'গীতা'। অন্যদের ধর্মশাস্ত্রের সাথে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জাগতিক সন্ন্যাসীরা প্রবৃত্তি-মার্গের হয় না। তাদের যোগ হলো হঠযোগ। তাদের কাজ হলো ঘর-সংসার ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে বসে থাকা। জন্ম-জন্মান্তর ধরে পরম্পরায় তারা এমনই করে। কিন্তু তোমরা গৃহস্থ ব্যবহারে থেকে একবার সন্ন্যাস নিলে, পরবর্তীতে ২১-জন্ম তার প্রালব্ধ ভোগ কর। ঘর-গৃহস্থ ত্যাগ করে হঠ-যোগীদের এই দুনিয়ার হদের সন্ন্যাস - আর তোমাদের অর্থাৎ রাজযোগীদের বেহদের সন্ন্যাস। তাই তো রাজযোগীদের এত প্রসিদ্ধি দুনিয়া জুড়ে। আর যিনি এই রাজযোগ শেখান, অর্থাৎ ভগবান, তিনি অবশ্যই উচ্চ থেকেও অতি উচ্চ-অর্থাৎ সর্ব্বোচ্চ ভগবান। শ্রীকৃষ্ণকে কিন্তু ভগবান বলা চলে না। একমাত্র তিনিই অসীম বেহদের নিরাকার বাবা। বেহদের বাদশাহী একমাত্র উনিই বিলোতে পারেন।
এখানে গৃহস্থ ব্যবহারকে ঘৃণা করা হয় না। তাই তো বাবা জানাচ্ছেন- তোমরা এই অন্তিম জন্মে গৃহস্থ ব্যবহারে থেকেও পবিত্র হচ্ছ। কোনও সাধু-সন্ন্যাসী পতিত-পাবন হয় না। তারা নিজেরাই তো "হে পতিত-পাবন" বলে পতিত-পাবনের উদ্দেশ্যে কীর্তন করতে থাকে। তারাও সেই পবিত্র দুনিয়ায় যেতে চায় বলে ওঁনাকেই স্মরণ করে। কিন্তু তারা এটা জানে না যে সে দুনিয়া এক পৃথক ধরণের দুনিয়া। যেহেতু তারা গৃহস্থ ব্যবহারে থাকে না তাই তারা দেবতাদেরও মান্যতা দেয় না। তারা কখনও কাউকে রাজযোগও শেখাতে পারে না। তেমনি এই বাবাও হঠযোগ শেখাতে পারেন না। যার মর্মার্থ বুঝে নিতে হবে তোমাদের। দিল্লীতে এখন ওর্য়াল্ড কনফারেন্স চলছে, তাদেরকে এসব বোঝানো উচিত। কাগজে লিখে সবাইকে তা বিলি করা উচিত। মুখে বোঝাতে গেলে মতভেদ হতে পারে, তাই কাগজে লিখে দিলে তারা বুঝতে পারবে বি.কে.-দের প্রকৃত উদ্দেশ্যটা কি! তোমরা এখন বুঝতে পেরেছো, তোমরা উচ্চস্তরীয় ব্রাহ্মণ কুলের। অতএব শূদ্র-কুলের মেম্বার তো তোমরা হবে না, তাছাড়া বিকারী কুলে তোমরা নিজেদের নাম রেজিস্টার করাবেই বা কেন? তাই তোমরা তাদেরকে নিষেধ করবে। তোমরা বি.কে.-রা হলে আস্তিক আর ওরা হলো নাস্তিক। ওরা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আর তোমরা বি কে.-রা ঈশ্বরের স্মরণে থেকে ঈশ্বরের সাথে যোগযুক্ত হও। উভয়ের মধ্যে এমনই মতভেদ। নাস্তিক তাদেরকেই বলা হয়, যারা পরমপিতা বাবাকেই জানে না। বাবা স্বয়ং এসে আপন বাচ্চাদের আস্তিক বানান। বাবার প্রকৃত সন্তান হলে বাবা তাকে অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সাও দেন। যা খুব গভীর রহস্যের ব্যাপার। শুরুতেই বুদ্ধিতে ধারণা ধারণ করতে হবে যে, গীতার ভগবান পরমপিতা পরমাত্মা। উনিই আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করেন। ভারতের মুখ্য ধর্ম হলো দেবী-দেবতা ধর্ম। (আদিতে) ভারত খণ্ডেরও তো কোনও একটা ধর্মের প্রয়োজন। ভারতীয়রা এখন নিজেদের প্রকৃত ধর্মকেই ভুলে গেছে। তোমরা তবুও জান যে, ড্রামার চিত্রনাট্য অনুযায়ী ভারতবাসীরা নিজেদের ধর্মকে তো ভুলেই যাবে, তবেই তো আবার বাবা এসে নতুন করে তা স্থাপন করবেন। এমনটা না ঘটার থাকলে বাবা আসবেন বা কি প্রকারে? বাবা স্বয়ং তা বলেন - যখন যখন দেবী-দেবতা ধর্ম প্রায় লোপ পায়, তখনই ওঁনাকে আসতে হয়। তাই এর (প্রায়) লোপ তো হতেই হবে। যেমন প্রবাদ বাক্য আছে, বলদের এক পা ভেঙ্গে গেলেও বাকী তিন পায়ে তো সে দাঁড়িয়েই থাকে। তেমনি প্রধান ধর্মও চারটি। পুরোনো দেবী-দেবতা ধর্মের পা-টাই যে এখন ভেঙে আছে। অর্থাৎ এই ধর্ম এখন প্রায় লুপ্তই হয়ে গেছে। তাই তো পুরোনো বট-বৃক্ষের উদাহরণ দেওয়া হয় - যার প্রধান মূলটাই এখন পঁচে গেছে, কিন্তু ডাল-পালা নিয়ে তবুও সেই পুরোনো বট-বৃক্ষ দাঁড়িয়েই আছে। তেমনি এক্ষেত্রেও প্রধান মূল-কাণ্ডরূপী ধর্ম-বৃক্ষের দেবী-দেবতা ধর্মের অস্তিত্ব আজ আর নেই। অথচ সমগ্র দুনিয়াতে কত হাজার হাজার ধর্ম, তাদের কত মত, কত পথ, কত মঠ ইত্যাদি কত কি আছে। বাচ্চারা, যেহেতু তোমরা জ্ঞানের পাঠ পড়ছো, তাই এখন এই ড্রামার রহস্যকেও জেনেছ। কল্প-বৃক্ষও এখন অনেক পুরোনো হয়েছে। তাছাড়া কলিযুগের পরে সত্যযুগ যে আগত প্রায়। কল্পচক্রও তার নিজের নিয়মে ঘুরে চলেছে। তোমাদের বুদ্ধিতেও তা ধারণ করতে হবে, ড্রামা যে প্রায় শেষের মুখে, আপন ঘরে ফিরতে হবে এখন। তাই চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে একথা স্মরণে রাখবে- ঘরে ফেরার পালা এবার। এটাই প্রকৃত "মনমনাভব-মধ্যাজী ভব"-র মূল অর্থ।
বড় কোনও সভাতে ভাষণ করতে হলে সর্বাগ্রে এটাই বোঝাতে হবে যে, পরমপিতা পরমাত্মা বার বার বলছেন- বাচ্চারা, দেহ সহ দেহের সর্ব ধর্মকে ত্যাগ করে নিজেকে আত্মা মনে করে পরমাত্মা বাবাকে স্মরণ করতে থাকলে সকল পাপ ভষ্ম হতে থাকবে। যে কারণে স্বয়ং পরমাত্মা তোমাদের রাজযোগ শেখাচ্ছেন। গৃহস্থ ব্যবহারে থেকেও পদ্মফুলের মতন পবিত্র থেকে বাবাকে স্মরণ করতে থাকো। পবিত্র হয়ে এই জ্ঞান ধারণ করো। আত্মারা এখন খুবই দুর্গতিতে। সত্যযুগের দেবতারা থাকে সদ্গতিতে। যা বাবা এসে তাদের সেই সদগতি করেন। অর্থাৎ আত্মারা হয়ে ওঠে সর্বগুণ সম্পন্ন, ১৬-কলা সম্পূর্ণ ........ এটাই সদগতির লক্ষণ। কিন্তু এমনটা করেন কে? এই বাবা। আর ওঁনার লক্ষ্যণগুলি কি কি? উনি হলেন জ্ঞানের সাগর, আনন্দের সাগর। যার মহিমা জগতের অন্যদের থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র । অন্যদের যা থাকেই না। সব আত্মাধারীরাই এই একই পরমাত্মার সন্তান। যদিও তারা আবার প্রজাপিতা ব্রহ্মারও সন্তান। যাদের দ্বারা এই নতুন রচনা রচিত হচ্ছে। যদিও এক হিসাবে সবাই প্রজাপিতার প্রজা (সন্তান), কিন্তু অন্যেরা তো তা জানেই না। ব্রাহ্মণেরাই সবচেয়ে উচ্চ বর্ণের। ভারতেই এই ধরণের বর্ণের প্রচলন আছে। পুরো ৮৪-জন্ম পেতে গেলে তাকে এই ব্রাহ্মণ ধর্মে আসতেই হবে। আর এই ব্রাহ্মণ ধর্মের অবস্থান একমাত্র কল্পের এই সঙ্গম যুগেই।
বাচ্চারা, এখানে এখন তোমরা আছো সুইট সাইলেন্স হোমে। এই সাইলেন্স হোমই সবচেয়ে ভাল। যেহেতু শান্তির হার গলায় পড়ে আছো। যদিও সবাই চায় শান্তির ঘরে যেতে, কিন্তু তাদের সেই রাস্তা বানিয়ে দেবে কে? একমাত্র শান্তির সাগর ছাড়া আর কেউ তা বানাতেই জানে না। কত সুন্দর এই পদবী -শান্তির সাগর, জ্ঞানের সাগর ! শ্রীকৃষ্ণ তো কেবল স্বর্গ-রাজ্যের রাজকুমার। কিন্তু বাবা হলেন মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ। দুজনের মধ্যে রাত-দিনের তফাৎ। কৃষ্ণকে কিন্তু সৃষ্টির বীজরূপ বলা যায় না। সর্বব্যাপী বলাতেই প্রমাণিত হয়ে যায়, তাদের মধ্যে প্রকৃত জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব। বাবার নিজস্ব স্বতন্ত্র মহিমা আছে। তিনি সর্বকালের পুজ্য। ওঁনাকে কখনই পুজারী হতে হয় না। কিন্তু, অনন্তের আকাশ থেকে প্রথমদিকে যারা আসে কেবল তারাই পুজ্য থেকে পুজারী হয়। এমন তো কত শত পয়েন্টই বোঝানো হয় তোমাদের। এসব জানতে ও বুঝতে এক্সজিবিশন দেখতেও আসে কত লোক, কিন্তু কয়েক কোটির মধ্যে কেউ কেউ তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারে। যেহেতু তা অতি উন্নত মার্গের দিশা। বিবিধ প্রকারের বিষয় থাকে বিভিন্ন প্রকারের প্রজাদের জন্য। আবার সেই লক্ষ-লক্ষ-এর মধ্যে মালার যোগ্য পুঁতির-দানা খুব অল্পই গড়ে ওঠে। নারদের উদাহরণ ধরা যেতে পারে- তাকে বলা হয়েছিল, লক্ষ্মীর পতি হবার উপযুক্ত তুমি হয়েছো কি না, তা তুমি তোমার মন-দর্পণে উঁকি দিয়ে দেখে নাও। প্রজা তো হরেক রকমই হয়, কিন্তু রাজা তো হবে রাজারই মতন। এক-এক রাজার তো লক্ষ-লক্ষ প্রজা থাকে। সুতরাং তোমাদেরও তেমনি উচ্চস্তরীয় পুরুষার্থ করতে হবে। রাজাদের মধ্যেও আবার ছোট-রাজা, বড়-রাজা এমনটাও থাকে। পূর্বে এই ভারত ভূ-খণ্ডেই অনেক সংখ্যায় রাজা ছিল। এমন কি সত্যযুগেও অনেক মহারাজা থাকে। সেই সত্যযুগ থেকেই তা চলে আসছে। মহারাজাদের প্রচুর পরিমাণে ধন-সম্পত্তি থাকে। কিন্তু রাজাদের থাকে কম। এই ঈশ্বরীয় বিশ্ব-বিদ্যালয়ে লক্ষ্মী-নারায়ণ হবার জ্ঞান পাওয়া যায়। তবে তার জন্য সঠিক পুরুষার্থে চলতে হবে। যদি তোমাকে জানতে চাওয়া হয়, লক্ষ্মী-নারায়ণের পদ পাবে, না কি রাম সীতার? তখন তো ঝটপট উত্তর দাও- "লক্ষ্মী-নারায়ণের পদই পাবে।" আর তার জন্য মাম্মা-বাবা উভয়ের থেকেই যে অবিনাশী আশীর্বাদী-বর্সা পেতে হবে তোমাদের। সত্যি, কি ওয়াণ্ডারফুল ব্যাপার এটা। এমনটি আর কোথাও লেখা নেই, আর না আছে কোনো শাস্ত্র-পুঁথিতে। তোমাদের বুদ্ধির তালা এখন খুলে গেছে। বাবাও বোঝাচ্ছেন, তোমরা চলতে-ফিরতে কেবল এমনটাই মনে করো, তোমরা যেন এক-একজন নাটকের অ্যাক্টরর্স। এবার আপন ঘরে ফিরতে হবে। এই কথাটাই স্মরণে থাকা মানে "মনমনাভব-মধ্যাজী ভব!" আর তাই তো বাবা মুহুর্মুহু তোমাদের তা স্মরণ করাচ্ছেন। উনি যে তোমাদের নিয়ে যেতে এসেছেন। তোমাদের এই যাত্রা যে ঈশ্বরীয় তীর্থযাত্রা। যে যাত্রা একমাত্র এই বাবা ছাড়া আর কেউ করাতে পারে না।
ভারতের মহিমাও চারদিকে করতে হবে। এই ভারতই সর্ব তীর্থের শ্রেষ্ঠ-তীর্থভূমি। সবার দুঃখ-হর্তা ও সুখ-কর্তা, সবার সদগতি-দাতা একমাত্র এই বাবা। বাবার জন্মস্থান আবার এই ভারতেই। সবারই মুক্তিদাতা এই বাবা। ওঁনার স্মরণেই ভারতে অনেক বড়-বড় তীর্থস্থানও আছে। যদিও ভারতবাসীরা সেগুলিকে শিব মন্দির বলেই জানে, কিন্তু প্রকৃত শিবকেই যে জানে না তারা। অথচ (মহাত্মা) গান্ধীকে জানে, তাদের ধারণা উনি খুবই ভাল লোক ছিলেন, তাই তার স্মরণে বেদীতে ফুল-মালা এসব দিয়ে শ্রদ্ধাও জানায়। এতে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচও হয়। যেহেতু এখন তাদেরই সরকার, তাই যা চাইবে তাই করতে পারে। আর এই বাবা গুপ্ত থেকে তোমাদের সামনে বসে গুপ্ত-ধর্মের স্থাপনা করছেন। সেই রাজ্য অন্য সব রাজ্যের চাইতে একেবারেই পৃথক সত্ত্বার অর্থাৎ স্বতন্ত্র। এই ভারতেই শুরুতে দেবতাদের রাজ্য ছিল। শাস্ত্রে দেখানো হয় অসুর আর দেবতাদের মধ্যে লড়াই-ঝগড়া, বাস্তবে কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি মোটেই। প্রকৃত অর্থে আমাদের এই সংসার জগৎ ময়দানে যুদ্ধ -জয় পেতে হয় মায়ার সাথে। আর মায়াকে জয় করতে পারলে সর্বশক্তিমান অবশ্যই তাকে বিজয়মালায় ভূষিত করেন। কৃষ্ণকে সর্বশক্তিমান বলা যায় না। এই বাবা-ই রাবণ-রাজ্যের কবল থেকে মুক্ত করে রাম-রাজ্যের স্থাপনা করান। কিন্তু তা জাগতিক দৃশ্যের স্থুল লড়াই নয়। এখন যদি দুনিয়ার দিকে স্থুল দৃষ্টিতে তাকাও তবে দেখবে, খ্রিস্টানরাই দুনিয়ার সর্বশক্তিমান। তারা চাইলে সমগ্র দুনিয়াকেই জিততে পারে, কিন্তু আবার এমন নিয়মও নেই যে কেবল ওরাই সমগ্র বিশ্বের মালিক হবে। আর সেই রহস্য কেবল তোমরা বি.কে.-রাই জানো। যেহেতু খ্রিস্টানরা এখন সবচেয়ে ক্ষমতাবান, তবুও অন্য ধর্মের লোকেদের থেকে তাদের জনসংখ্যা এখনও যথেষ্ট কম, যেহেতু তাদের আগমন ঘটেছে অনেক পরে। যদিও তিন ধর্মের মধ্যে তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী, এবং দুনিয়ার প্রায় সবকিছুই তাদের করায়াত্ব। এসবই পূর্ব নির্ধারিত ঘটনাক্রম ঘটে চলেছে অবিনাশী নাটকের চিত্রপট অনুযায়ী। সেই অনুসারে তোমরাও আবার তোমাদের রাজধানী পাবে। যেমন প্রবাদ বাক্য আছে না, দুই বিড়াল নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় ব্যস্ত, আর মাখনটুকু খেয়ে নিল তৃতীয়জন। তেমনি অপরেরা যখন যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যস্ত থাকবে, তখন সেই মাখন পাবে ভারতবাসীরাই। যদিও এটা অতি সাধারণ কথা, কিন্তু এর মর্মার্থ খুবই মহৎ। সত্যি, মানুষেরা কতই নির্বোধ। অভিনয়কারী হওয়া সত্ত্বেও তারা ড্রামার কাহিনীকে বুঝতেই পারে না। এতই অবোধ তারা। তবুও গরীবেরা ড্রামাকে বুঝতে পারে। কিন্তু ধনীরা বোঝার চেষ্টাও করে না। তাই তো পতিত-পাবন বাবাকে "গরীব-নিবাজ"-অর্থাৎ দীনের বন্ধু। (দীনবন্ধু-কৃপাসিন্ধু) তিনি স্বয়ং বাস্তবে এখন এই ড্রামাতে ওনার নিজস্ব কর্ম-কর্তব্যে ব্যস্ত। বড়-বড় সভাগুলিতে এভাবেই বোঝাতে হবে তোমাদের। বাবার অন্তরাত্মা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ড্রামা যেমন যেমন শেষের পর্যায়ে যেতে থাকবে, তেমনি ধীরে-ধীরে বাহ্ বাহ্ ধ্বনিতে চতুর্দিক মুখরিত করতে থাকবে লোকেরা। এখনও বাচ্চারা গ্রহের প্রকোপ ভোগ করে। যেহেতু তাদের দিশা তেমন স্পষ্ট নয়। বিঘ্ন তো আসতেই থাকবে, তাও হয় ড্রামার চিত্রনাট্য অনুসারে। অতএব যে যেমন পুরুষার্থ করবে - সে ততই উচ্চ-পদের অধিকারী হতে পারবে। পাণ্ডবেরা যেমন পৃথিবীতে মাত্র তিন-পদ ভূমিও পায়নি- তা তো সঙ্গমযুগেরই (বর্তমান সময়েরই) ঘটনা। কিন্তু তারপরের ঘটনাক্রম মানুষের আর মনে নাই যে,- বাস্তবে সেই পাণ্ডবেরাই বিশ্বের মালিক হয়েছিল। এখন তোমরা বি.কে.-রা তা বুঝতে পারছো। তাই তোমাদের কোনও আফসোস হয় না। কল্প-পূর্বেও তো এমনই ঘটেছিলো। তাই ড্রামার শৃঙ্খলে নিজেকে শৃঙ্খলিত করা উচিত। তা থেকে যেন ছিটকে না যাও। নাটক যে এখন অন্তিম পর্যায়ে, তোমাদেরও পৌঁছতে হবে সুখধাম। অতএব এমন ভাবে এই জ্ঞানের পাঠ পড়তে হবে, যাতে উচ্চ থেকে উচ্চ পদের অধিকারী হতে পারো। *আচ্ছা !*
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। ঈশ্বরীয় পিতা নমন জানাচ্ছেন ওনার ঈশ্বরীয় সন্তানদের।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১. চলা-ফেরার মধ্যেও অ্যাক্টর ভাবতে হবে নিজেকে। ড্রামার শৃঙ্খলাবিধিতে নিজেকে অচল রাখতে হবে। বুদ্ধিকে সজাগ রাখতে হবে, এবার ঘরে ফিরে যেতে হবে, সেই দিশাতেই যেন এগিয়ে চলি।
২. সদ্গতির সর্ব লক্ষণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। সর্বগুণ সম্পন্ন, ১৬-কলা সম্পূর্ণ হতে হবে।
বরদান:-
সহযোগের শুভ ভাবনা দ্বারা ঈশ্বরীয় বায়ুমণ্ডল তৈরী করতে পারা মাস্টার দাতা ভব
যেভাবে প্রকৃতি নিজের বায়ুমণ্ডলের প্রভাব অনুভব করায়, কখনও গরম, কখনও ঠাণ্ডা...... তেমনি তুমিও প্রকৃতিজীৎ সদা সহযোগী, সহজযোগী আত্মারা নিজের শুভ ভাবনার দ্বারা ঈশ্বরীয় বায়ুমণ্ডল তৈরীতে সহযোগী হও। সে এমন বা এমন করে-এসব ভাববে না। যেমনই বায়ুমণ্ডল হোক্, ব্যাক্তি হোক্, সহযোগ তাকে দিতেই হবে। দাতার বাচ্চা সদা দিতেই থাকে। তা সে মন্সা দ্বারাই সহযোগী হও, কিম্বা বচনের দ্বারা, অথবা সম্বন্ধ-সম্পর্কের দ্বারা, কিন্তু অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে সহযোগী হবার।
স্লোগান:-
ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যার স্থিতি দ্বারা সবার ইচ্ছাগুলিকে পূর্ণ করাই নিজেকে কামধেনু বানানো।