02.01.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা --
তোমাদের নজর শরীরের দিকে যাওয়া উচিত নয়, নিজেকে আত্মা নিশ্চয় কর, শরীরকে দেখো
না"
প্রশ্নঃ -
প্রত্যেক
ব্রাহ্মণ বাচ্চাদের কোন্ দুটি বিষয়ের উপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে ?
উত্তরঃ -
১) পঠন-পাঠনের
উপর ২) দৈবী-গুণের উপর। অনেক বাচ্চাদের মধ্যে রাগের অংশমাত্রও থাকে না, অনেকে তো
আবার ক্রোধের বশে অনেক লড়াই-ঝগড়া করে। বাচ্চাদের মনে রাখা উচিত যে, আমাদের দৈবী-গুণ
ধারণ করে দেবতা হতে হবে। কখনো ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বার্তালাপ করা উচিত নয়। বাবা
বলেন, কোনো বাচ্চার মধ্যে যদি ক্রোধ থাকে, তবে সে ভূতনাথ-ভূতনাথিনী। এমন ভূতের
বশীভূতদের সঙ্গে তোমাদের কথা বলা উচিত নয়।
গীতঃ-
'ভাগ্য জাগিয়ে
এসেছি..... (তকদির জগাকর আয়ী হু)'
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চারা গান
শুনেছে। আর কোনো সৎসঙ্গে কখনো রেকর্ডের দ্বারা বোঝানো হয় না। ওখানে শাস্ত্র শোনানো
হয়। যেমন গুরুদ্বারে গ্রন্থসাহেব থেকে দুটি বচন নিয়ে, পরে আবার কথা পাঠকারীরা বসে
তার বিশ্লেষণ করে। রেকর্ডের উপর কেউ বোঝাবে, তেমন কোথাও কেউ নেই। এখন বাবা বোঝান
যে, এইসব গান হল ভক্তিমার্গের। বাচ্চাদের বোঝানো হয়েছে যে, জ্ঞান পৃথক জিনিস যা
একমাত্র নিরাকার শিবের থেকে পাওয়া যেতে পারে। এ হলো আধ্যাত্মিক জ্ঞান। জ্ঞান তো
অনেক প্রকারের হয়, তাই না। কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে, এই গালিচা কিভাবে বানানো
হয়েছে। এ বিষয়ে তোমার জ্ঞান আছে কি ? প্রত্যেক জিনিসেরই তো জ্ঞান থাকে ? এ হলো
পার্থিব জগতের কথা। বাচ্চারা জানে যে, আমাদের আত্মাদের আধ্যাত্মিক পিতা হলেন
অদ্বিতীয়, তাঁর রূপ দেখা যায় না। সেই নিরাকারের চিত্রও শালিগ্রামের মতন। তাকেই
পরমাত্মা বলা হয়। তাঁকেই বলা হয় নিরাকার। মানুষের মত তাঁর আকার নেই। অবশ্যই
প্রত্যেক বস্তুর আকার রয়েছে। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম আকৃতি
হলো আত্মার। আত্মাকে স্বাভাবিকই বলবে। আত্মা অত্যন্ত ক্ষুদ্র যা এই (স্থূল) নেত্রের
দ্বারা দেখতে পাওয়া যায় না। বাচ্চারা, তোমরা দিব্যদৃষ্টি পেয়েছ, যার ফলে সব
সাক্ষাৎকার কর। যা পাস্ট হয়ে গেছে তাকেই দিব্যদৃষ্টির দ্বারা দেখা যায়। প্রথম
নম্বরে তো ইনি পাস্ট হয়ে গেছেন। এখন যদি আসে তারও সাক্ষাৎকার হয়। এ অতি সূক্ষ্ম। এর
দ্বারাই বুঝতে পারা যায় যে, পরমপিতা পরমাত্মা ব্যতীত আত্মার জ্ঞান আর কেউ দিতে পারে
না। মানুষ, যেমন আত্মাকে যথার্থভাবে জানে না, তেমনই পরমাত্মাকেও যথার্থভাবে জানতে
পারেনা। দুনিয়ায় মানুষের অনেক মত রয়েছে। কেউ বলে, আত্মা পরমাত্মায় বিলীন হয়ে
যায়, কেউ আবার কি-কি সব বলে। বাচ্চারা, এখন তোমরা জেনেছ তাও আবার পুরুষার্থের
নম্বরের ক্রমানুসারে, সকলের বুদ্ধিতে একইরকমভাবে (জ্ঞান) বসতে পারে না।
প্রতিমুহূর্তে বুদ্ধিতেও বসাতে হবে। আমরা আত্মা, আত্মাদেরই ৮৪ জন্মের ভূমিকা(পার্ট)
পালন করতে হয়। এখন বাবা বলেন, নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে আমাকে অর্থাৎ পরমপিতাকে জানো
এবং স্মরণ কর। বাবা বলেন, বাচ্চারা আমি এঁনার মধ্যে প্রবেশ করে তোমাদের নলেজ দিই।
বাচ্চারা, তোমরা নিজেদেরকে আত্মা মনে করোনা তাই তোমাদের নজর এই শরীরের ওপর চলে যায়।
বাস্তবতঃ তোমাদের এর দ্বারা কোন কার্যসিদ্ধি হয়না। উনি হলেন সকলের সদ্গতি দাতা
শিববাবা। ওঁনার মতানুসারেই আমরা সকলকে সুখ প্রদান করি। এঁনারও অহংকার আসে না যে আমি
সকলকে সুখ প্রদান করি। যে বাবাকে পুরোপুরি স্মরণ করে না তার অবগুণও নিষ্কাশিত হয়
না। নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করে না। মানুষ তো না আত্মাকে জানে, না পরমাত্মাকে জানে।
সর্বব্যাপীর জ্ঞানও ভারতবাসীরাই ছড়িয়েছে। তোমাদের মধ্যেও যারা সেবাধারী বাচ্চা
তারাই বুঝতে পারে, বাকি সব এতটা বুঝতে পারেনা। যদি বাবার সম্পূর্ণ পরিচয় বাচ্চাদের
কাছে থাকে তাহলে বাবাকে স্মরণ করবে, নিজেদের মধ্যে দৈবী-গুণ ধারণ করবে।
বাচ্চারা, শিববাবা তোমাদের বোঝান। এ হলো নতুন কথা। ব্রাহ্মণও অবশ্যই চাই। প্রজাপিতা
ব্রহ্মার সন্তান কখন হয় ? এই দুনিয়ায় কারোর জানা নেই। ব্রাহ্মণ তো অগণিত রয়েছে।
কিন্তু তারা হলো (মাতৃ) গর্ভজাত। তারা কেউ মুখ-বংশজাত ব্রহ্মার সন্তান নয়। ব্রহ্মার
সন্তানরা তো ঈশ্বরপিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার (বর্সা) পায়। তোমরা এখন উত্তরাধিকার
প্রাপ্ত করছ, তাই না। তোমরা ব্রাহ্মণরা হলে আলাদা আর তারাও আলাদা। তোমরা ব্রাহ্মণরা
হও সঙ্গমে, তারা হয় দ্বাপর-কলিযুগ থেকে। এই সঙ্গমযুগী ব্রাহ্মণরাই আলাদা। প্রজাপিতা
ব্রহ্মার অগণিত সন্তান রয়েছে। অবশ্যই পার্থিব জগতের পিতাকেও ব্রহ্মা বলবে কারন
সন্তানের জন্ম দেয়। এটা হলো শরীর-সম্বন্ধীয় কথা। এই বাবা(শিব) বলেন, সকল আত্মারা
আমার সন্তান। তোমরা হলে মিষ্টি মিষ্টি আধ্যাত্বিক সন্তান। এ কথা কাউকে বোঝানো সহজ।
শিববাবার নিজস্ব শরীর নেই। শিব-জয়ন্তী পালন করা হয় কিন্তু ওঁনার শরীর তো দেখতে
পাওয়া যায় না। বাকি আর সকলের শরীর রয়েছে। সব আত্মাদের নিজ-নিজ শরীর আছে। শরীরের
নামকরণ হয়, পরমাত্মার নিজস্ব শরীরই নেই তাই ওঁনাকে পরম আত্মা বলা হয়। ওঁনার
আত্মার নামই হলো শিব। তাঁর (নামের) কোনো পরিবর্তন নেই । শরীর যখন বদল হয়ে যায় তখন
নামও বদলে যায়। শিববাবা বলেন, আমি সদা নিরাকার পরমাত্মাই থাকি। ড্রামার প্ল্যান
অনুসারে এখন এই শরীর ধারণ করেছি। সন্ন্যাসীদের নামও বদলে যায়। গুরুর (শিষ্য) হয়ে
গেলেও নাম পরিবর্তন হয়। তোমাদেরও নাম পরিবর্তিত হতো। নাম বদল করে কতদিন পর্যন্ত
থাকবে, কত পালিয়ে গেছে। যারা সেই সময় ছিল তাদের নাম রাখা হয়েছিল, এখন আর নাম রাখা
হয় না। এখন কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। মায়া অনেককে পরাজিত করেছে তাই পালিয়ে গেছে।
তাই বাবা এখন কারোর নাম বদল করেন না। কাকে রাখবো, কাকে রাখবো না, তারও ঠিক নেই।
সকলেই বলে যে -- বাবা, আমরা তোমার হয়ে গেছি কিন্তু যথার্থভাবে আমার হয় কি, না হয়
না। অনেকেই আছে যারা উত্তরাধিকারের রহস্য জানেনা। বাবার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে
কিন্তু উত্তরাধিকারী নয়। বিজয়মালায় আসতে পারে না। অনেক ভালো ভালো বাচ্চারা মনে করে
যে, আমরা তো উত্তরাধিকারী। কিন্তু বাবা জানে, এরা উত্তরাধিকারী নয়। উত্তরাধিকারী
হওয়ার জন্য ভগবানকেও নিজের উত্তরাধিকারী বানাতে হয়, এই রহস্য বোঝনোও মুশকিল। বাবা
বোঝান যে, উত্তরাধিকারী কাকে বলে। ভগবানকে যদি কেউ উত্তরাধিকারী বানায় তখন তাকেও
উত্তরাধিকার দিতে হবে। তখন বাবাও আবার উত্তরাধিকারী বানাবেন। উত্তরাধিকার তো গরিবরা
ব্যতীত কোন ধনবান দিতে পারেনা। অতি অল্পসংখ্যার মালা তৈরি হয়। যদি কেউ বাবাকে
জিজ্ঞাসা করে তখন বাবা বলতে পারেন যে, তোমরা উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য হয়েছ কি
হওনি। একথা এই বাবাও বলতে পারেন। বোঝার মতো এ অতি সামান্য কথা। উত্তরাধিকারী হওয়ার
জন্য অত্যন্ত বুদ্ধির দরকার। তারা দেখেও যে, লক্ষীনারায়ণ বিশ্বের মালিক ছিল কিন্তু
তারা এই উত্তরাধিকার কিভাবে প্রাপ্ত করেছিল ? একথা কেউ জানে না। এখন তোমাদের এইম
অবজেক্ট সম্মুখে রয়েছে। তোমাদের এমন হতে হবে। বাচ্চারা বলে, আমরা সূর্যবংশীয়
লক্ষীনারায়ণ হবো, চন্দ্রবংশীয় রাম-সীতা হবো না। শাস্ত্র রাম-সীতার নিন্দা করা
হয়েছে। লক্ষ্মী-নারায়ণের কখনো নিন্দা শোনা যাবে না। শিববাবার, কৃষ্ণেরও নিন্দা হয়।
বাবা বলেন, বাচ্চারা আমি তোমাদের কত উচ্চ থেকে উচ্চতর বানাই। বাচ্চারা আমার থেকেও
তীক্ষ্ণ হয়ে যায়। কেউ লক্ষ্মীনারায়ণের নিন্দা করবে না। অবশ্যই কৃষ্ণের আত্মাও তো
তিনি কিন্তু না জানার কারণে নিন্দা করেছে। অত্যন্ত খুশিতে লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দির
তৈরি করে। বাস্তবে তৈরি করা উচিত রাধাকৃষ্ণের কারণ তারা সতোপ্রধান। এঁনারা হলেন
তাদেরই(রাধা-কৃষ্ণ) যুবাবস্থা তাই ওঁনাদের সতো বলা হয়। এঁরা ছোট তাই সতোপ্রধান বলা
হবে। শিশুরা মহাত্মা-সম হয়। যেমন ছোট বাচ্চাদের বিকারাদির বিষয় জানা নেই তেমনই
ওখানে বড়দেরও জানা নেই যে বিকার কি জিনিস।
এই ৫ ভূত ওখানে হয়ই না। তাই বিকারের কথা যেমন জানা থাকেনা। এই সময় হলোই রাত।
কাম-বিকারের প্রচেষ্টাও রাতেই হয়। দেবতারা থাকে দিনে, তাই কাম-বিকারের প্রচেষ্টাও
তাঁরা করে না। কোন বিকর্ম হয়ই না। এখন রাত্রিতে সকলেই বিকারী। তোমরা জানো যে, দিন
শুরু হলেই আমাদের সব বিকার বিতাড়িত হবে। তখন জানা থাকবেনা যে, বিকার কি জিনিস। এ
হলো রাবণের বিকারী-গুণ। এ হলো বিকারী দুনিয়া। নির্বিকারী দুনিয়ায় বিকারের কোনো কথাই
থাকবে না। তাকে বলা হবে ঈশ্বরীয় রাজ্য। এখন হলো আসুরী রাজ্য। একথা কারোরই জানা নেই।
তোমরা সবকিছু জানো কিন্তু পুরুষার্থের নম্বরের ক্রমানুসারে। অসংখ্য বাচ্চা আছে। কোনো
মানুষ বুঝতে পারে না যে, এইসমস্ত বি. কে.-রা কার সন্তান।
সকলেই স্মরণ করে শিব বাবাকে, ব্রহ্মাকে নয়। তিনি স্বয়ং বলেন শিব বাবাকে স্মরণ করো
যার দ্বারা বিকর্ম বিনাশ হবে আর কাউকে স্মরণ করলে বিনাশ হবে না। গীতাতেও বলা রয়েছে
যে, মামেকম্ (একমাত্র আমাকেই) স্মরণ কর। কৃষ্ণ তো (একথা) বলতে পারেনা। উত্তরাধিকার
প্রাপ্ত হয় নিরাকার পিতার কাছ থেকে। যখন নিজেকে আত্মা মনে করে তখনই নিরাকার পিতা-কে
স্মরণ করে। 'আমি আত্মা'-- প্রথমে পাকাপাকিভাবে এই নিশ্চয় করতে হবে। পরমাত্মা আমার
পিতা, তিনি বলেন আমাকে স্মরণ করো তবেই আমি তোমাদেরকে উত্তরাধিকার দেবো। আমি সকলকে
সুখ প্রদান করি। আমি সকল আত্মাকে শান্তিধামে নিয়ে যাই। যারা কল্প পূর্বে বাবার থেকে
উত্তরাধিকার নিয়েছিল তারাই এসে উত্তরাধিকার নেবে, ব্রাহ্মণ হবে। ব্রাহ্মণদের
মধ্যেও কিছু বাচ্চা পাকা অর্থাৎ নিশ্চয়ই বুদ্ধি সম্পন্ন হয়। সত্যিকারের
বাচ্চাও(মাতেলে) হবে, সৎ-বাচ্চাও (সৌতেলে) হবে। আমরা নিরাকার শিববাবার বংশজ। আমরা
জানি, বংশ কিভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এখন ব্রাহ্মণ হয় পরে আমাদের ফিরে যেতে হবে।
সব আত্মাকেই শরীর পরিত্যাগ করে ফিরে যেতে হবে। পাণ্ডব এবং কৌরব দু'পক্ষকেই শরীর
পরিত্যাগ করতে হবে। তোমরা এই জ্ঞানের সংস্কার নিয়ে যাও পুনরায় সেইভাবেই তোমরা
ফললাভ(প্রালব্ধ) কর। এই ড্রামা পূর্বনির্ধারিত পরে জ্ঞানের পাঠ সমাপ্ত হয়ে যায়।
তোমরা ৮৪ জন্ম পরে পুনরায় এই জ্ঞানপ্রাপ্ত করেছ। এরপরে এই জ্ঞান প্রায় লুপ্ত হয়ে
যায়। তোমরা প্রালব্ধ অর্থাৎ ফল ভোগ করো। ওখানে আর কোন ধর্মাবলম্বীদের চিত্রাদি থাকে
না। ভক্তি মার্গেও তোমাদের চিত্র থাকে। সত্যযুগে কারো চিত্রাদি থাকে না। তোমাদের
অলরাউন্ড চিত্র ভক্তি মার্গে থাকে। তোমাদের রাজ্যে আর কারোও চিত্র থাকে না
শুধুমাত্র দেবী দেবতাদেরই থাকে। এতেই তোমরা বোঝ যে, সেখানে আদি সনাতন দেবী দেবতারাই
রয়েছে। পরে সৃষ্টি বাড়তে থাকে। বাচ্চারা, তোমাদের এই জ্ঞান স্মরণ করে অতীন্দ্রিয়
সুখে থাকতে হবে। অনেক পয়েন্টস্ রয়েছে। কিন্তু বাবা জানেন, মায়া প্রতিমুহূর্তে
ভুলিয়ে দেয়। তাই একথা স্মরণে রাখা উচিত যে শিববাবা আমাদের পড়াচ্ছেন। তিনি হলেন
সর্বোচ্চ। আমাদের এখন ঘরে ফিরে যেতে হবে। কত সহজ কথা। স্মরণই হলো সবকিছুর আধার।
আমাদের দেবতা হতে হবে। দৈবী-গুণ ধারণ করতে হবে। ৫ বিকার হলো ভূত। কাম-বিকারের ভূত,
ক্রোধের ভূত, দেহ অভিমানের ভূতও হয়। হ্যাঁ, কারোর মধ্যে ভূত অধিকমাত্রায় থাকে,
কারোর মধ্যে কম। তোমরা অর্থাৎ ব্রাহ্মণ বাচ্চারা জানো যে, এই পাঁচটি হল বড় ভূত।
প্রথম স্থানে রয়েছে কাম-বিকারের ভূত, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রোধের ভূত। কেউ যখন
খুব রুক্ষভাবে বলে তখন বাবা বলেন, এ হলো ক্রোধী। এই ভূত নিষ্কাশিত হয়ে যাওয়া উচিত।
কিন্তু ভূত নিষ্কাশন করা অত্যন্ত কঠিন। ক্রোধ পরস্পরকে দুঃখ দেয়। মোহে অনেকের দুঃখ
হয় না। যার মোহ রয়েছে তারই দুঃখ হবে, তাই বাবা বোঝান যে, এই ভূতেদের বিতাড়িত কর।
প্রত্যেক বাচ্চাকে বিশেষভাবে পড়াশুনা এবং দৈবী-গুণের উপর অ্যাটেনশন দিতে হবে। অনেক
বাচ্চাদের মধ্যে তো ক্রোধের অংশমাত্রও থাকে না, কেউ আবার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে
অত্যন্ত লড়াই-ঝগড়া করে। বাচ্চাদের খেয়াল রাখা উচিত যে, আমাদের দৈবী-গুণ ধারণ করে
দেবতা হতে হবে। কখনো ক্রোধের বশে কথা বলা উচিত নয়। কেউ ক্রোধ করলে তখন বুঝবে যে,
এর মধ্যে ক্রোধের ভূত রয়েছে। সে যেন ভূতনাথ-ভূতনাথিনী হয়ে যায়, এমন ভূতেদের সঙ্গে
কখনো কথা বলা উচিত নয়। একজন ক্রোধের বশে কথা বললে তখন অন্যের মধ্যেও যদি সেই ভূত
চলে আসে তখন ভূতেরা পরস্পরের মধ্যে লড়াই করতে থাকবে। 'ভূতনাথিনী' শব্দটি অত্যন্ত
খারাপ(ছি-ছি)। ভূত যেন প্রবেশ না করে তাই মানুষ দূরে সরে যায়। ভূতের সামনে
দাঁড়ানোও উচিত নয়, তা নাহলে (ভূত) প্রবেশ করে যাবে। বাবা এসে আসুরী-গুণ নিষ্কাশিত
করে দৈবী-গুণ ধারণ করায়। বাবা বলেন, আমি এসেছি দৈবী-গুণ ধারণ করিয়ে দেবতা বানাতে।
বাচ্চারা জানে যে, আমরা দৈবী-গুণ ধারণ করছি। দেবতাদের চিত্রও সম্মুখে রয়েছে। বাবা
বুঝিয়েছেন যে, ক্রোধীদের থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরে যাও। নিজেকে বাঁচানোর যুক্তি চাই।
আমাদের মধ্যে যেন ক্রোধ চলে না আসে তা নাহলে শতগুণ পাপ চড়ে যাবে। বাবা বাচ্চাদেরকে
কত ভালো যুক্তি দেন। বাচ্চারাও বোঝে যে, বাবা হুবহু কল্প- পূর্বের মতো বোঝায়,
পুরুষার্থের নম্বরের ক্রমানুসারে হবে। নিজেদের ওপরেও কৃপা করতে হবে, অন্যদেরও কৃপা
করতে হবে। অনেকে নিজেদের ওপর কৃপা করে না, অন্যদেরকে করে, তখন তারা উপরে চড়ে বসে আর
নিজে সেখানেই থেকে যায়। স্বয়ং বিকারের উপর বিজয়লাভ করে না, অন্যকে বোঝায়, আর তারা
বিজয় প্রাপ্ত করে নেয়। এমন আশ্চর্যও হয়। *আচ্ছা!*
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
জ্ঞানের কথা স্মরণ করে অতীন্দ্রিয় সুখে থাকতে হবে। কারও সঙ্গে রুক্ষভাবে কথা বলা
উচিত নয়। কেউ ক্রোধের বশে কথা বললে তার থেকে দূরে সরে যেতে হবে।
২ ) ভগবানের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য, প্রথমে তাঁকে নিজের উত্তরাধিকারী বানাতে হবে।
বুদ্ধিমান হয়ে নিজের সবকিছু বাবার কাছে সমর্পণ করে আসক্তি বিদূরিত করতে হবে। নিজের
উপর নিজেকেই কৃপা করতে হবে।
বরদান:-
একরস স্থিতি দ্বারা সদা এক পিতারই অনুসরণকারী প্রসন্নচিত্ত ভব
ব্যাখা :- বাচ্চারা,
তোমাদের জন্য ব্রহ্মাবাবার জীবন হলো অ্যাক্যুরেট কম্পিউটার। যেমন, আজকাল কম্পিউটার
দ্বারা প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞাসা করা হয়, তেমন মনে যখনই কোন প্রশ্ন ওঠে
তখন কী, কেন-র পরিবর্তে ব্রহ্মাবাবার জীবন-রূপী কম্পিউটারের দ্বারা দেখো। তাতে কী
আর কীভাবে-র প্রশ্ন বদলে যাবে। প্রশ্নচিত্ত-র পরিবর্তে প্রসন্নচিত্ত হয়ে যাবে।
প্রসন্নচিত্ত অর্থাৎ একরস স্থিতি-তে থেকে অদ্বিতীয় পিতার অনুসরণকারী।
স্লোগান:-
আত্মিক শক্তির ভিত্তিতে সদা সুস্থ থাকার অনুভব কর।
অব্যক্ত স্থিতির
অনুভব করার জন্য বিশেষ হোম-ওয়ার্ক
যদি কোনো সাধারণ কর্মও করো তবুও যেন মধ্যে-মধ্যে অব্যক্ত স্থিতি তৈরীর প্রতি
অ্যাটেনশন থাকে।যেকোনো কার্য করার সময় সর্বদা বাপদাদাকে নিজের সাথী মনে করে দ্বিগুণ
শক্তি দ্বারা কার্য কর তাহলে স্মৃতি অত্যন্ত সহজ থাকবে। স্থূল কাজ-কর্মের(ব্যবসা)
প্রোগ্রাম বানানোর সময় বুদ্ধির প্রোগ্রামও সেট করে নাও তবেই সময়ের সাশ্রয় হয়ে যাবে।