16-02-2020 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
25-11-85 মধুবন
নিশ্চয় বুদ্ধি বিজয়ী রত্নরাজির লক্ষণ
আজ বাপদাদা তার নিশ্চয় বুদ্ধি বিজয়ী সব রত্নমালা দেখছিলেন l সব বাচ্চাই নিজেকে মনে
করে যে নিশ্চয় বুদ্ধিতে আমি পরিপক্ক l তোমাদের মধ্যে এমন কমই আছে যে নিজেকে
নিশ্চয়বুদ্ধি বলে স্বীকার করে না l যাকেই জিজ্ঞাসা করা হবে, সে এটাই বলবে নিশ্চয় যদি
না থাকত তবে ব্রহ্মাকুমার, ব্রহ্মাকুমারী কীভাবে হতাম ! নিশ্চয়ের প্রশ্নে সকলেই বলে
- হ্যাঁ, আমার নিশ্চয় আছে l সব নিশ্চয়বুদ্ধি এখানে বসে আছে, এইরকম বলবে, তাই না ?
তা' নাহলে, যারা মনে করে যে এখনও তাদের নিশ্চয় হচ্ছে, তারা হাত উঠাও l সকলেই তোমরা
নিশ্চয়বুদ্ধি l আচ্ছা সকলেরই যখন দৃঢ় প্রত্যয় আছে তাহলে বিজয়মালায় নম্বর কেন থাকে ?
নিশ্চয়ে তোমাদের সবার একই জবাব, তাই না ! তাহলে নম্বর কেন ? কোথায় অষ্ট রত্ন, কোথায়
একশ' রত্ন আর কোথায় ষোল হাজার ! এই অষ্ট, একশ' ষোল হাজারে হওয়াতেই তারতম্য ঘটে যায়
l এর কারণ কি ? অষ্ট দেবের পূজন- গায়ন আর ষোল হাজারের মালার গায়ন-পূজনে কতো প্রভেদ
! তোমাদের নিশ্চয় আছে যে বাবা সেই একই আর তোমরাও বাবারই, তাহলে এই তারতম্য কেন ?
তোমাদের নিশ্চয়বুদ্ধিতে কি পার্সেন্টেজ হতে পারে ? নিশ্চয়ে যদি পার্সেন্টেজ হয়, তবে
তা' নিশ্চয় বলা যাবে ? আট রত্ন যারা তারাও নিশ্চয়বুদ্ধি, যারা ষোল হাজারে তারাও
নিশ্চয়বুদ্ধি, এটাই তো বলবে তোমরা, নয় কি ?
নিশ্চয়বুদ্ধির লক্ষণ বিজয়, সেইজন্য গায়ন আছে *নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ন্তী* l সুতরাং
নিশ্চয় অর্থাৎ অবশ্যই বিজয়ী l কখনো বিজয়ী হবে আর কখনো হবে না, এটা হতেই পারে না l
সার্কমস্ট্যান্স যেমনই হোক, কিন্তু নিশ্চয়বুদ্ধি বাচ্চারা সবরকম সার্কমস্ট্যান্সে
নিজের স্বস্থিতির শক্তি দ্বারা সদা বিজয় অনুভব করবে, যারা বিজয়ী রত্ন অর্থাৎ যারা
বিজয় মালার দানা হয়েছে, গলার মালা হয়েছে, মায়ার কাছে কখনও তাদের পরাজয় হয় না l
দুনিয়ার লোকে বা ব্রাহ্মণ পরিবারের সাথে কম বা বেশি সম্পর্কিত লোকজন তাদেরকে দেখে
যদি কিছু ভাবে বা বলে যে তারা পরাজিত হয়েছে, সেটা পরাজয় নয় জিত। কারণ কখনো কখনো
দেখায় এবং করার মধ্যে মিস্ আন্ডারস্ট্যান্ডিংও হয়ে যায় l যে আত্মারা নম্রচিত্ত,
নিরহঙ্কারী এবং যারা সদা হাঁ জী'র পাঠ পড়ে অর্থাৎ সদা প্রস্তুত,
মিস্আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য কখনো কখনো সেই আত্মাদের পরাজিত মনে হতে পারে,
অন্যদের কাছে হার হিসেবে প্রতীয়মান হবে, কিন্তু বাস্তবে, সেটা তাদের বিজয় l শুধু
সেই সময় অন্যদের মতামতে বা বায়ুমন্ডলের কারণে নিজেদের নিশ্চয়বুদ্ধিকে পরিবর্তন করে
সংশয় রাখতে শুরু কোরো না l 'জানিনা এটা জয় না পরাজয় !' এই সংশয় না রেখে নিজের
নিশ্চয়ে অটল থাক l সুতরাং অন্যেরা আজ যেটা হার বলছে, কাল বাঃ ! বাঃ এর পুষ্প অর্পণ
করবে l
বিজয়ী আত্মার মনে এবং তাদের কর্মে কখনো দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থা উৎপন্ন হবে না, তারা
রাইট অথবা রং কিনা ! অন্যদের মতামত অন্য ব্যাপার l কেউ বলবে তুমি রাইট আর কেউ বলবে
তুমি রং, কিন্তু তোমার মনে দৃঢ় প্রত্যয় থাকতে হবে যে তুমি বিজয়ী l বাবার প্রতি
নিশ্চয়ের সাথে সাথে নিজের প্রতিও নিজের নিশ্চয় থাকা আবশ্যক l নিশ্চয়বুদ্ধি অর্থাৎ
বিজয়ীর মন অর্থাৎ সঙ্কল্প শক্তি সদা স্বচ্ছ হওয়ার কারণে নিজের প্রতি এবং অন্যের
প্রতি হ্যাঁ না'য়ের নির্ণয় করা সহজ হবে, আর সত্য ও স্পষ্ট হবে l সেইজন্য 'আমি জানিনা'
এইরকম কোনও দ্বিধা থাকবে না l নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ী রত্নের লক্ষণ - সত্য নির্ণয় হওয়ার
কারণে তাদের মনে সামান্যও এলোমেলো ভাব উদ্ভব হবে না, সদা আনন্দ হবে l খুশির তরঙ্গ
বইবে l সার্কমস্ট্যান্স যতই অগ্নিসম হোক, কিন্তু তার জন্য অগ্নিপরীক্ষা এমন আত্মাকে
বিজয়ের খুশি অনুভব করাবে কারণ পরীক্ষায় সে বিজয়ী হবে, তাই না ! জাগতিক নিয়মে কোনও
বিষয়ে এখনও কেউ যখন বিজয় প্রাপ্ত হয়, খুশিতে তারা সেটা উদযাপন করে, হাসে, নাচে,
করতালি দিয়ে সেই জয়কে সমর্থন জানায় l এইসব খুশির লক্ষণ l নিশ্চয়বুদ্ধি কখনও কোনও
কার্যে নিজেকে একা অনুভব করবে না l এমনকি, সবাই যদি একদিকে হয়, তো অন্যদিকে সে একা,
মেজরিটি যতই অন্যদিকে হোক আর বিজয়ী রত্ন একা একদিকে, তবুও সে নিজেকে একা মনে করবে
না, বরং সে ভাববে বাবা তার সাথে আছেন, সেইজন্য অক্ষৌহিণী সেনাও বাবার সামনে কিছুই
নয় l যেখানে বাবা আছেন সেখানে সমগ্র পৃথিবী বাবার মধ্যে বিদ্যমান l বীজের মধ্যেই
সম্পূৰ্ণ বৃক্ষ তার সমাহিত রয়েছে l *নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ী আত্মা সদাসর্বদা নিজে আশ্রয়ে
থাকার উপলব্ধি করবে l আশ্রয় দাতা আমার সাথে, এমনই ন্যাচারাল অনুভব করে l এমন নয় যে
যখন সমস্যা আসবে সেই সময় বাবার সামনে বলবে, 'বাবা তুমি তো আমার সাথে আছ, তাই না !
তুমিই আমার সহায়, তাই না বাবা ! তুমি তো শুধুই আমার l' স্বার্থান্বেষীর সহায়তা তিনি
নেবেন না l ''তুমি তো আমারই, তুমি তো এই, তাই না .."* - এইসবের অর্থ কি ? এটা কি
নিশ্চয় ! তারপরে বাবাকেও তোমরা স্মরণ করিয়ে দিতে থাক, তুমি আমার সহায় l নিশ্চয়বুদ্ধি
কখনও এইরকম সঙ্কল্প করতে পারে না l তাদের মনে সামান্যও সহায়হীনতা বা একাকীত্বের
সঙ্কল্পমাত্র অনুভব হবে না l নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ী হওয়ার কারণে খুশিতে সদা নাচতে থাকবে
l কখনও উদাসীনতা বা অল্পকালের সীমিত পরিসরের বৈরাগ্য-তরঙ্গে তারা বাহিত হয় না l
অনেক সময় যখন মায়ার শক্তিশালী আক্রমণ চলে, তখন অল্পকালের বৈরাগ্য আসতেও পারে, কিন্তু
সেই বৈরাগ্য সীমিত পরিসরের l অসীম জগতের বৈরাগ্য সদাসর্বদার হয় না l বাধ্যবাধকতায়
বৈরাগ্য-বৃত্তি উৎপন্ন হয়, সেইজন্য সেই সময় তোমরা বলো, " এর থেকে বরং ভালো এটা ছেড়ে
দিই l এতে আমি অনাগ্রহ বোধ করছি l" সেবাও ছেড়ে দিতে হবে, এটাও ছেড়ে দিতে হবে l
বৈরাগ্য আসে, কিন্তু তা' অসীম-বৈরাগ্য হয় না l বিজয়ী রত্ন সদা পরাজয়ের মধ্যেও জয়,
জয়ের মধ্যেও জয় অনুভব করবে l সীমিত পরিসরের বৈরাগ্য থাকা অর্থাৎ একপাশে সরে থাকা l
তারা আখ্যা দেবে বৈরাগ্য, কিন্তু কার্যতঃ সেটা একপাশে পদক্ষেপ করা l সুতরাং বিজয়ী
রত্ন কোনও কার্য থেকে, সমস্যা থেকে, ব্যক্তি থেকে সরে যাবে না l বরং সর্বকর্ম করে,
সবকিছুর মোকাবিলা করে, সহযোগী হয়ে বেহদ-বৈরাগ্য বৃত্তিতে থাকবে, যা সদাকালের জন্য
হবে l নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ী কখনো নিজের বিজয়ের বর্ণন করবে না l তারা কখনো অন্যদের
অভিযোগ করবে না l দেখেছ তো আমিই ঠিক ছিলাম, তাই না ? এইভাবে অনুযোগ করা বা এই
সম্পর্কে বলা হল খালিভাবের লক্ষণ l খালি জিনিস বেশি ঢকঢক করে, (শূন্য কলসির আওয়াজ
বেশি) তাই নয় কি ! ভরা জিনিস বেশি নড়াচড়া করে না l বিজয়ী সদা অন্যদেরও সাহস বাড়াবে
l কাউকে নিচু করার চেষ্টা করবে না, কারণ বিজয়ী রত্ন বাবা সমান মাস্টার আশ্রয়-দাতা l
নিচে থেকে উঁচুতে ওঠায় l নিশ্চয়বুদ্ধি ব্যর্থ থেকে সদা দূরে থাকে, সেইগুলো ব্যর্থ
সঙ্কল্পই হোক, বোল অথবা কর্ম হোক l ব্যর্থ থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ বিজয়ী l ব্যর্থের
কারণেই কখনো হার, কখনো জিত হয় l ব্যর্থ সমাপ্ত হলে পরাজয়ও সমাপ্ত l সমস্ত ব্যর্থের
সমাপ্তি বিজয়ী রত্ন হওয়ার লক্ষণ l এখন এটা চেক কর, নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ী রত্ন হওয়ার
সব লক্ষণ কি আমার অনুভব হয় ? তোমরা তো বলেছিলে যে তোমরা নিশ্চয়বুদ্ধি, তোমরা সত্য
বলো l যতই হোক, নিশ্চয়বুদ্ধি এক তো হয় জানা, স্বীকৃত হওয়া এই পর্যন্ত, আরেক হয় তার
সাথে জীবনযাপন করা l তোমরা সবাই স্বীকার কর যে তোমরা ভগবানকে পেয়ে গেছ l ভগবানের হয়ে
গেছ l স্বীকার করা বা জানা একই ব্যাপার l কিন্তু নিশ্চয়ের সাথে চলার ক্ষেত্রে তোমরা
নম্বরানুক্রমিক হয়ে যাও l এটা জানার বা স্বীকার করার বিষয়ে তোমরা ঠিক, কিন্তু তৃতীয়
স্টেজ হলো জেনে এবং স্বীকৃত হয়ে জীবনে চলা l প্রতিটা পদে নিশ্চয়ের বা বিজয়ের
প্রত্যক্ষ লক্ষণগুলো প্রতীয়মান হতে দাও l এতে প্রভেদ থাকার কারণে তোমরা নম্বর
অনুক্রমে হয়ে যাও l বুঝেছ - নম্বর কেন হয়েছে !
একেই বলা হয়ে থাকে, নষ্টমোহ l নষ্টমোহ হওয়ার পরিভাষা অতি গুহ্য l বাবা এই ব্যাপারে
তোমাদের অন্য কোন সময় বলবেন l নিশ্চয়বুদ্ধি নষ্টমোহ হওয়ার সোপান l আচ্ছা - আজ
দ্বিতীয় গ্রুপ এসেছে l ঘরের বালকই মালিক, সুতরাং ঘরের মালিক নিজের ঘরে এসেছে,
এইরকমই তো বলবে, তাই না ! ঘরে এসেছ, নাকি ঘর থেকে এসেছ ? যদি সেটাকেই ঘর মনে কর,
তাহলে মমত্ববোধ আসবে l কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে তা' টেম্পোরারি সেবাস্থান l সবার ঘর তো
মধুবন, তাই না ! আত্মিক সম্বন্ধে পরমধাম l ব্রাহ্মণ হওয়ার সুবাদে মধুবন l যখন তোমরা
বলোই যে তোমাদের হেড অফিস মাউন্ট আবুতে, তাহলে যেখানে থাক সেটা কি ? সেটা অফিস, তাই
না ! সেইজন্যই তো হেড অফিস বলো l তাহলে তোমরা ঘর থেকে আসনি, বরং ঘরে এসেছ l অফিস
থেকে যে কোনও সময় কাউকে চেঞ্জ করতে পার, ঘর থেকে কাউকে বের করতে পার না l অফিস তো
বদল করতেই পার l যদি ঘর মনে কর তো আমিত্ব ভাব থাকবে l যখন সেন্টারকে তোমাদের ঘর
বানিয়ে ফেল তখন আমিত্বভাব আসে l সেন্টার মনে করলে আমিত্বভাব থাকে না l ঘর হয়ে গেলে,
আরামের স্থান হয়ে যায় আর তখন আমিত্বভাব আসে l অতএব, তোমরা নিজের ঘর থেকে এসেছ l
প্রবাদ আছে, নিজের ঘর দাতার দ্বার l এই গায়ন কোন স্থানের জন্য ? বাস্তবে, দাতার
দ্বার নিজের ঘর তো মধুবন, তাই না ! নিজের ঘরে অর্থাৎ দাতার ঘরে এসেছ l ঘর বলো বা
দ্বার বলো, ব্যাপার তো একই l নিজের ঘরে আসলে আরাম হয়, নয় কি ! মনের আরাম, তনের আরাম,
ধনের ক্ষেত্রেও আরাম l অর্থ উপার্জন করতে তোমাদের কোথাও যেতে হয় না l এমনকি, তোমরা
খাবার বানানো থেকেও আরাম পেয়ে যাও, নয়তো সেটা তোমাদের নিজেদের বানাতে হতো, আর তখনই
খেতে পারতে l তোমরা তৈরি খাবার প্লেটে পাও l এখানে তো তোমরা ঠাকুর হয়ে যাও l যেমন
ঠাকুরের মন্দিরে ঘন্টা বাজানো হয় না ? ঠাকুরকে জাগাতে, শোয়াতে তারা ঘন্টা বাজায় l
যখন তারা ভোগ উৎসর্গ করে তখনও ঘন্টা বাজাবে ! তোমাদেরও তো ঘন্টা বাজে, তাই না !
আজকাল এটা ফ্যাশনেবল আর তাই রেকর্ড বাজে l রেকর্ড বাজতে তোমরা ঘুমাতে যাও, রেকর্ড
বাজতে ওঠো, তাহলে তো তোমরা ঠাকুরই হলে, তাই নয় কি ? এখান থেকেই আবার ভক্তিমার্গে কপি
করে l এখানেও তিন চারবার ভোগার্পণ হয় l তারা চৈতন্য ঠাকুরদের ভোর চারটে থেকে ভোগ
অর্পণ করতে শুরু করে l অমৃতবেলা থেকে ভোগ শুরু হয় l চৈতন্য স্বরূপে ভগবান বাচ্চাদের
সেবা করছেন l ভগবানের সেবা তো সবাই করে, কিন্তু এখানে ভগবান সেবা করেন l তিনি কার
সেবা করেন ? চৈতন্য ঠাকুর গণের l এই নিশ্চয় সদাই তোমাদের খুশিতে দোলাবে l বুঝেছ -
সব জোন থেকে আগত সবাই প্রিয় l যখন যে জোন আসে, সেই সময় তারা প্রিয় l তোমরা প্রিয় তো
বটেই, কিন্তু শুধুমাত্র বাবার প্রিয় হও l মায়ার প্রিয় হ'য়োনা l মায়ার প্রিয় যদি হয়ে
যাও তো তখন আবার অনেক খেলা খেলতে থাক l তোমরা যারাই এসেছ, ভাগ্যবান এসেছ ভগবানের
কাছে l আচ্ছা !
যারা সদা সকল সঙ্কল্পে নিশ্চয়বুদ্ধি বিজয়ী রত্ন, সদা ভগবান এবং ভাগ্যের
স্মৃতিস্বরূপ আত্মাদের, যারা সদা হার এবং জিত উভয়তেই বিজয় অনুভব করে, সদা আশ্রয় দেয়,
সেই মাস্টার আশ্রয় দাতা আত্মাদের, যারা সদা নিজেকে বাবার আশ্রয়ে অনুভব করে, সেই
শ্রেষ্ঠ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
পাটিদের সাথে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার
১ ) সবাই তোমরা একের অনুরাগে মগ্ন শ্রেষ্ঠ আত্মা ? সাধারণ নও তো ! সদা শ্রেষ্ঠ
আত্মারা যে কর্মই করবে তা' শ্রেষ্ঠ হবে l যেহেতু তোমাদের জন্মই শ্রেষ্ঠ তখন কর্ম
সাধারণ কীভাবে হবে ! যখন তোমাদের জন্ম পরিবর্তন হয় তখন কর্মও পরিবর্তন হয় l নাম,
রূপ, দেশ, কর্ম সব পরিবর্তন হয়ে যায় l সুতরাং সদা নব জন্ম, নব জন্মের নবীনত্বের
উৎসাহ-উদ্দীপনায় থাক তোমরা l যারা কখনো কখনো থাকে রাজ্যও তাদের কখনো কখনো প্রাপ্ত
হবে l
যে আত্মারা নিমিত্ত হয়েছে তারা নিমিত্ত হওয়ার ফল নিরন্তর লাভ করে l আর যে আত্মারা
ফল খায় তারা শক্তিশালী হয় l এই প্রত্যক্ষ ফল শ্রেষ্ঠ যুগের ফল l এই যুগের ফল যারা
খায় তারা সদা শক্তিশালী হবে l এইরকম শক্তিশালী আত্মারা বিপরীত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
সহজেই বিজয় লাভ করে l পরিস্থিতি নিচে হবে আর তারা ওপরে l তারা যেমন শ্রীকৃষ্ণের
প্রতিকৃতিতে দেখায় তিনি সাপকেও জিতেছেন l সাপের মাথায় পা রেখে নেচেছেন l বাস্তবে,
এটা তোমাদের স্মরণিক l যতই বিষাক্ত নাগ হোক না কেন, তোমরা তার ওপরেও বিজয় প্রাপ্ত
করে নাচ কর l এই শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী স্মৃতি সবাইকে সমর্থ করে তুলবে l আর যেখানে
সামর্থ্য আছে সেখানে ব্যর্থ সমাপ্ত হয়ে যায় l তোমরা সর্বশক্তিমান বাবার সঙ্গে আছ,
এই স্মৃতির বরদান নিয়ে সদা অগ্রচালিত হও l
২ ) সবাই তোমরা অমর বাবার আমার আত্মা, তাই না ! অমর হয়ে গেছ না ? যখন শরীর ছাড় তখনও
অমর, কেন ? কারণ এখান থেকে তোমরা ভাগ্য বানিয়ে যাও l শূন্য হাতে যাও না, সেইজন্য
সেটা মরণ নয় l পরিপূর্ণ হয়ে বিদায় নেওয়া l মৃত্যু অর্থাৎ খালি হাতে যাওয়া l
পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ বস্ত্র পরিবর্তন করা l তাহলে, তোমরা অমর হয়ে গেছ, তাই না
! *অমর ভব'র* বরদান তোমরা লাভ করেছ, এতে তোমরা মৃত্যুর বশীভূত হও না l তোমরা জানো
যে বিদায় নিতে হবে আর ফিরেও আসতে হবে, সেইজন্যই অমরত্ব l অমরকথা শুনতে শুনতে অমর হয়ে
গেছ l প্রতিদিন ভালোবেসেই তো কথা শোন, তাই না ! বাবা অমরকথা শুনিয়ে অমর হওয়ার বরদান
দেন l ব্যস্, শুধু এই খুশি বজায় রেখে অমর হও, ঐশ্বর্যপূর্ণ অর্থাৎ সাফল্যপূর্ণ হও l
শূন্য ছিলে, ভরপুর হয়ে গেছ l এমন ভরপুর হয়ে গেছ যে অনেক জন্ম খালি হতে পারবে না l
৩ ) সবাই তোমরা স্মরণের যাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছ, তাই না ! এই রূহানী যাত্রা সদাই
সুখদায়ী অনুভব করাবে l এই যাত্রার মাধ্যমে সর্বদার জন্য অন্য সব যাত্রা পূর্ণ হয়ে
যায় l যদি রূহানী যাত্রা করছ, তবে সব যাত্রা হয়ে গেছে আর কোনও যাত্রা করার
আবশ্যকতাই থাকে না, কেননা এটা তো মহান যাত্রা, তাই না ! মহান যাত্রার মধ্যেই সব
যাত্রা অন্তর্ভুক্ত l প্রথমদিকে দিকভ্রষ্ট হয়ে তীর্থযাত্রায় যেতে, এখন রূহানী যাত্রা
দ্বারা ঠিকানায় পৌঁছে গেছ l এখন মনেরও ঠিকানা খুঁজে পেয়েছ, আর তাই তনেরও ঠিকানা
খুঁজে পেয়েছ l এক যাত্রাতেই অন্য অনেক রকম ভাবে পথ ভুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে l সুতরাং,
সদাসর্বদা এই স্মৃতি বজায় রাখ যে তোমরা রূহানী যাত্রী, এতে সদা উপ-রম থাকবে,
স্বতন্ত্র থাকবে, নির্মোহ থাকবে l কারও প্রতি মোহ হবে না l যাত্রীর কারও প্রতি মোহ
জন্মায় না l এইরকম স্থিতি সদা থাকতে দাও l
বিদায়ের সময়- বাপদাদা দেশ-বিদেশের সব বাচ্চাদের দেখে খুশি হন, কারণ সব বাচ্চাই
সহযোগী l সহযোগী বাচ্চাদের বাপদাদা সদা হৃদয় সিংহাসনাসীন হিসেবে স্মরণ করেন l সব
নিশ্চয়বুদ্ধি আত্মা বাবার প্রিয়, কারণ সবাই কণ্ঠহার হয়ে গেছ l আচ্ছা - সব বাচ্চা
সার্ভিস-বৃদ্ধি খুব ভালো ভাবে করছে l আচ্ছা l
বরদান:-
প্রকৃত সেবা দ্বারা অবিনাশী, অলৌকিক খুশির
সাগর-তরঙ্গে তরঙ্গিত খুশীর সৌভাগ্যবান (খুশনসিব ) আত্মা ভব
যে বাচ্চারা সেবাতে বাপদাদা এবং নিমিত্ত বড়দের
স্নেহাশিস প্রাপ্ত করে, তারা অন্তর্মনে অলৌকিক, আত্মিক খুশির অনুভব করে l সেবার
দ্বারা তারা আন্তরিক খুশি, আধ্যাত্ম আনন্দ, অসীম জগতের প্রাপ্তির অনুভব করে সদা
খুশির সাগরে তরঙ্গিত হতে থাকে l প্রকৃত সেবা সকলের স্নেহ, সকলের অবিনাশী সম্মান এবং
খুশির আশীর্বাদ প্রাপ্তিতে সৌভাগ্যবান হওয়ার শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের অনুভব করায় l যারা সদা
খুশি থাকে, তারাই খুশীর সৌভাগ্যের অধিকারী l
স্লোগান:-
সদা উৎফুল্ল এবং আকর্ষণ মূর্ত হওয়ার জন্য সন্তুষ্টমণি
হও l
সূচনা :- আজ তৃতীয় রবিবার,
অন্তর্রাষ্ট্রীয় যোগ দিবস, সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত সব ভাই বোন
সংগঠিতভাবে একত্রিত হয়ে যোগ অভ্যাসে এই সঙ্কল্প করুন, আমি আত্মা দ্বারা পবিত্রতার
কিরণ নিঃসৃত হয়ে সারা বিশ্বকে পবিত্র তৈরি করে তুলছে l আমি মাস্টার পতিত-পাবনী আত্মা
l