02-02-2020 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
18-11-85 মধুবন
ভগবানের ভাগ্যবান বাচ্চাদের লক্ষণ
বাপদাদা সব বাচ্চাদের ললাটভাগে ভাগ্যরেখা দেখছেন l প্রত্যেক বাচ্চার ললাটে ভাগ্যের
রেখা অঙ্কিত, কিন্তু কোন বাচ্চার রেখা স্পষ্ট আর কোন কোন বাচ্চার রেখা স্পষ্ট নয়,
যখন থেকে তোমরা ভগবান-বাবার হয়েছ, ভগবান অর্থাৎ ভাগ্যবিধাতা l ভগবান অর্থাৎ দাতা
বিধাতা, সেইজন্য বাচ্চা হওয়ায় ভাগ্যের অধিকার অর্থাৎ অবিনাশী উত্তরাধিকার সব
বাচ্চার প্রাপ্ত হয়, কিন্তু সেই উত্তরাধিকার জীবনে ধারণ করা, সেবার উপযোগী করে তা'
শ্রেষ্ঠ এবং স্বচ্ছ বানাতে তোমরা নম্বর অনুক্রমিক হও, কারণ এই ভাগ্য যত নিজের জন্য
এবং সেবার জন্য কার্যে প্রয়োগ কর ততই বাড়ে অর্থাৎ রেখা স্পষ্ট হয় l বাবা এক এবং তিনি
সবাইকে একরকমই দেন l বাবা নম্বর অনুক্রমে অর্থাৎ বাচ্চাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ভাগ্য
বিতরণ করেন না, কিন্তু যারা ভাগ্য গঠন করবে অর্থাৎ যারা ভাগ্যবান হবে তারা এত বড়
ভাগ্য প্রাপ্ত করার ক্ষেত্রে যথাশক্তি হওয়ার কারণে নম্বরানুক্রমে হয়ে যায়, সেইজন্য
কারও রেখা স্পষ্ট, আর কারও রেখা স্পষ্ট নয় l যে বাচ্চাদের রেখা স্পষ্ট তারা নিজেরাও
সর্বকর্মে নিজেদের ভাগ্যবান অনুভব করে, সেইসঙ্গে তাদের চেহারা আর আচার-আচরণ দ্বারা
অন্যদেরও ভাগ্য অনুভূত হয় l আরও অনেকে এমন ভাগ্যবান বাচ্চাদের দেখে ভাবে আর বলে যে
এই আত্মারা খুব ভাগ্যবান, এদের ভাগ্য সদা শ্রেষ্ঠ l নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা কর,
সর্বকর্মে নিজেকে কি ভগবানের বাচ্চা ভাগ্যবান অনুভব করি ? ভাগ্য তোমার অবিনাশী
উত্তরাধিকার, এই উত্তরাধিকার কখনও প্রাপ্ত হবে না, এমন তো হতেই পারে না l ভাগ্যকে
অবিনাশী উত্তরাধিকার রূপে অনুভব কর, নাকি পরিশ্রম করতে হয় ? উত্তরাধিকার সহজে
প্রাপ্ত হয়, পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না l জাগতিক স্তরেও বাবার ধন সম্পত্তি তথা
উত্তরাধিকার নিজে থেকেই বাচ্চার প্রাপ্ত হয় l আর তুরীয় আনন্দ থাকে যে বাবার
উত্তরাধিকার সে লাভ করেছে l তোমাদের এমন ভাগ্যে তুরীয় অবস্থার আনন্দ আছে, নাকি কখনো
চড়ে, আবার কখনো পড়ে ? যখন উত্তরাধিকার অবিনাশী তো কতো তুরীয়ানন্দে থাকা উচিত ! এক
জন্ম তো শুধু নয়, অনেক জন্মের জন্মসিদ্ধ অধিকারের ভাগ্য l কতো আনন্দোছ্বলতার সাথে
বর্ণন করো l ভাগ্যের ঝলকানি সদা প্রত্যক্ষরূপে অন্যদেরও দেখতে দাও l দ্যুতি এবং
আধ্যাত্মিক নেশা এই দুইই আছে তোমাদের ? মার্জরূপে আছে নাকি ইমার্জ রূপে আছে ?
ভাগ্যবান আত্মাদের লক্ষণ হল তারা- হয় সদা কোলে লালিত-পালিত হয়, নয় গালিচায় হাঁটে,
বা দোলায় দোলে, কাদামাটিতে কখনও পা রাখে না আর পা কখনও ময়লা হয় না l তারা গালিচায়
হাঁটে আর তোমরা বুদ্ধিরূপী পা ভূমিতে রাখার পরিবর্তে সদা ফরিস্তা-দুনিয়ায় রাখো l এই
পুরানো ধূলামলিন দুনিয়ায় তোমাদের পা রাখ না অর্থাৎ তোমাদের বুদ্ধি মলিন হতে দাও না
l ভাগ্যবান মাটির খেলনা দিয়ে খেলে না l সদা রত্ন দ্বারা খেলা করে l ভাগ্যবান সদা
সম্পন্ন থাকে, সেইজন্য 'ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যা' স্থিতিতে থাকে l ভাগ্যবান আত্মা সদা
মহাদানী পুণ্য আত্মা হয়ে অন্যেরও ভাগ্য তৈরি করতে থাকে l ভাগ্যবান আত্মার সদা মুকুট,
সিংহাসন এবং তিলক থাকে l ভাগ্যবান আত্মা যতখানি ত্যাগ করে ততখানিই সে ভাগ্য অধিকারী
হয় l *ত্যাগ ভাগ্যের লক্ষণ l* ত্যাগ তোমার ভাগ্যকে সুস্পষ্ট করে l ভাগ্যবান আত্মা,
সদা ভগবান সমান নিরাকারী, নির্বিকারী এবং নিরহঙ্কারী l এমন আত্মারা এই তিন গুণসমূহে
পরিপূর্ণ l এই সব লক্ষণ নিজের মধ্যে অনুভব কর ? ভগবানের লিস্টে তো আছই, তাই না !
কিন্তু তুমি যথাশক্তি নাকি সর্বশক্তিমান ? তুমি মাস্টার, তাই নয় কি ? বাবার মহিমায়
কখনও বলা হয় না যে তিনি যথাশক্তি বা তিনি নম্বরানুক্রমিক ; তোমরা বলো, তিনি সদা
সর্বশক্তিমান l যদি তোমরা মাস্টার সর্বশক্তিমান তাহলে কেন যথাশক্তি হও ? তোমরা সদা
শক্তিমান l যথা শব্দের পরিবর্তন করে সদা শক্তিমান হও আর বানাও l বুঝেছ !
কোন্ জোন এসেছে ? বরদান ভূমিতে পৌঁছে সবাই বরদানে ঝুলি পূর্ণ করছ, তাই না ! বরদান
ভূমির প্রত্যেক চরিত্র, কর্ম বিশেষ বরদানে পরিপূর্ণ l যজ্ঞভূমিতে এসে তুমি সবজিই
কাটো বা শস্য পরিষ্কার কর, সেটাও যজ্ঞ সেবার বরদানে পূর্ণ l যেমন, মানুষ
তীর্থযাত্রায় গিয়ে মন্দির সাফ-সুতরো করাও পুণ্য মনে করে l এই মহাতীর্থ বা বরদান
ভূমির প্রতিটা কর্মে প্রতিটা পদক্ষেপে শুধুই বরদান ভরা আছে l কতো ঝুলি তোমরা পূর্ণ
করেছ ? সম্পূর্ণরূপে ঝুলি পরিপূর্ণ করে ফিরে যাবে নাকি যথাশক্তিমাত্র ? যে যেখান
থেকেই এসেছ, মেলা উদযাপন করতে এসেছ l মধুবনে একটাও সঙ্কল্প বা এক সেকেন্ডও ব্যর্থ
হতে দিও না l সমর্থ হওয়ার এই অভ্যাস নিজ-স্থানেও সহযোগ দেবে l পঠন-পাঠন আর পরিবার -
পাঠেরও লাভ নাও আর পরিবারেরও বিশেষ অনুভব কর l বুঝেছ !
বাপদাদা সব জোনের সবাইকে সদা বরদানী, মহাদানী হওয়ার অভিনন্দন জানাচ্ছেন l লোকজনের
উৎসব শেষ হয়েছে কিন্তু তোমাদের উৎসব সদা উৎসাহে ভরা l সদাই বড়দিন, সেইজন্য
প্রতিদিনই অভিনন্দন আর অভিনন্দন l মহারাষ্ট্র সদা মহান হয়ে অন্যকে মহান তৈরি করার
বরদানে ঝুলি পূর্ণ করে l যারা কর্ণাটক থেকে তারা সদা হর্ষান্বিত মুখে নিজেও সদা
হাসিখুশি থাকে এবং অন্যদেরও সদা হর্ষিত বানায় l সদা ঝুলি পূর্ণ করতে থাক l তোমরা
যারা ইউ. পি'র তারা কি করবে ? সদা শীতল নদীসম শীতলতার বরদান দিয়ে শীতলাদেবী হয়ে
অন্যদের শীতলা দেবী বানাও l শীতলতা দিয়ে সদা সকলের সবরকম দুঃখ দূর কর l এইভাবে
বরদানে ঝুলি পরিপূর্ণ কর l আচ্ছা !
সদা শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের স্পষ্ট সেবাধারী, সদা বাবা সমান সর্বশক্তিসম্পন্ন, সম্পূর্ণ
স্থিতিতে স্থিত থাকে, সদা ঈশ্বরীয় ঝলক আর ভাগ্যের আধ্যাত্মিক নেশা বজায় রাখে,
সর্বকর্ম দ্বারা ভাগ্যবান হয়ে ভাগ্যের অবিনাশী উত্তরাধিকার নিতে অন্যদের সমর্থ
বানায়, এমন মাস্টার ভগবান শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর
নমস্কার l
বড় দাদীদের সঙ্গে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার
আদি থেকে এখন পর্যন্ত যারা প্রতিটা কার্যে একসাথে চলে আসছে, তাদের বিশেষত্ব এই -
ব্রহ্মাবাবা যেমন প্রতি পদে অনুভাবী হয়ে অনুভবের অথরিটি দ্বারা বিশ্ব-রাজ্যের অথরিটি
নেন, ঠিক তেমনই বহুকাল যাবৎ তোমাদের সকলের সবরকমের অনুভবের অথরিটির কারণে অনেক
কালের রাজ্য-অথরিটিতেও তোমরা সাথী হবে l যারা আদি থেকে সঙ্কল্প করেছে যে তাদের
যেখানে বসানো হবে, যেভাবে চালানো হবে সেই অনুযায়ী চলেই তারা বাবার সঙ্গে ফিরে যাবে
l সুতরাং একসঙ্গে যাওয়ার প্রথম প্রতিজ্ঞা বাপদাদাকে পূরণ করতেই হবে l ব্রহ্মা
বাবারও সাথে তোমরা থাকতে যাচ্ছ l রাজ্য পরিচালনেও সাথে থাকবে, ভক্তিতেও সাথে থাকবে
l এই সময় তোমাদের বুদ্ধি যতখানি তাঁর সঙ্গে থাকে, সেই অনুযায়ী রাজত্বেও সদা তাঁর
সাথে থাকবে l যদি এখন অল্পদূরে হও তো কোনও জন্মে দূরের হয়ে যাবে, কোন জন্মে কাছের
হবে l কিন্তু যাদের বুদ্ধি সদা বাবার সাথে থাকে তারা ওখানেও তাঁর সাথে থাকবে l
সাকারে তো তোমরা সবাই ১৪ বছর সাথে থেকেছ, সঙ্গমযুগের ১৪ বছর অনেক বছরের সমান হয়ে
গেছে ! সঙ্গমযুগের এত দীর্ঘ সময় সাকার রূপে থেকেছ, এও অনেক বড় ভাগ্য ! তারপর আবার
বুদ্ধি দ্বারা সাথে আছ, ঘরেও সাথে হবে আর রাজ্য শাসনেও সাথে হবে l যদিও বা সিংহাসনে
স্বল্পসংখ্যকই বসে, তবুও রয়্যাল ফ্যামিলির কাছের সম্বন্ধে, সারাদিনের দিনচর্যায় সাথে
থেকে তারা তাদের পার্ট অবশ্যই পালন করে l তাইতো আদি থেকে বাবার সঙ্গে থাকার
প্রতিজ্ঞা সারা কল্পই চলতে থাকবে l ভক্তিতেও তোমরা দীর্ঘ সময় একসাথে থাকবে l এই
শেষের জন্মে কেউ কেউ অল্পদুর, কেউ কেউ কাছের, কিন্তু তাও সারা কল্প ধরে কোন না কোনও
রূপে তোমরা বাবার সাথে থাকবে l তোমরা এমন প্রতিজ্ঞাই করেছিলে, তাই না ? তাহলে, কোন
নজরে সবাই তোমাদের দেখবে ! বাবার রূপে ! ভক্তিতে একেই তারা বলে থাকে- 'এরা সবাই
ঈশ্বরের রূপ l' কারণ তোমরা বাবা সমান তৈরি হও, তাই না ! তোমাদের রূপের মধ্যেই বাবা
প্রতীয়মান হন এবং এই কারণে তারা বলে, তোমরা বাবার রূপ l যারা বাবার সাথে থাকে তাদের
এটাই বিশেষত্ব হবে যে তোমাদের দেখে বাবাকে স্মরণ করবে, তাদের স্মরণ করবে না, কিন্তু
বাবাকে স্মরণ করবে l তাদের থেকে বাবার চরিত্র, বাবার দৃষ্টি, বাবার কর্ম সব অনুভব
হবে l তারা নিজেরা দৃশ্যগোচর হবে না l কিন্তু তাদের দ্বারা বাবার কর্ম বা দৃষ্টি
অনুভব হবে l এটাই অনন্য তথা সমান বাচ্চাদের বিশেষত্ব l তোমরা সবাই তো এইরকমই, তাই
না ! অন্যেরা তোমাতে আটকে পড়ে না তো ! তারা এমন বলে না তো যে 'অমুকে খুব ভালো', না
! বাবা এনাকে খুব ভালো তৈরি করেছেন l বাবার দৃষ্টি, বাবার লালন-পালন এনাদের
মাধ্যমেই লাভ হয় l বাবার মহাবাক্য এনাদের থেকেই শুনতে পাই l এটাই তাঁদের বিশেষত্ব l
একে বলা হয়, প্রিয় হয়েও স্বতন্ত্র l সবার প্রিয় হলেও কিন্তু অন্যদের বন্ধনজালে
আটকাও না l বাবার পরিবর্তে যেন তোমাদের স্মরণ না করে, বাবার শক্তি নিতে, বাবার
মহাবাক্য শুনতে যেন তোমাদের স্মরণ করে l একে বলে, 'প্রিয় অথচ স্বতন্ত্র হওয়া l'
এইরকমই গ্রুপ, তাই না ! কিছু তো বিশেষত্ব হবে, নয় কি ! সাকারের লালন-পালন যে লাভ
করেছ - বিশেষত্ব তো হবেই, হবে না ? তারা তোমাদের কাছে এলে কি জিজ্ঞাসা করবে, বাবা
কি করতেন, কীভাবে চলতেন..... এটাই তো স্মরণে আসবে, তাই না ! তোমরা এইরকম বিশেষ আত্মা
l একে বলে, ডিভাইন ইউনিটি l ডিভাইনের স্মৃতি জাগিয়ে তোমরা তাদের ডিভাইন তৈরি কর, আর
সেই কারণে 'ডিভাইন ইউনিটি l' ৫০ বছর তোমরা অবিনাশী থেকেছ, সুতরাং অবিনাশী হওয়ার
জন্য অভিনন্দন l অনেকে এসেছে, অনেকে পরিক্রমণে গেছে, কিন্তু তোমরা তো অনাদি অবিনাশী
হয়ে গেছ l অনাদি স্বরূপেও বাবার সাথে, আবার আদিতেও তোমরা বাবার সাথে l যদি বাবার
সাথে সূক্ষ্ম বতনে থাক, তবে সেবা কীভাবে করবে ! তোমরা সামান্য আরাম তো কর, কিন্তু
বাবার আরামেরও আবশ্যকতা নেই l এর থেকেও বাপদাদা বিমুক্ত হয়েছেন l আব্যক্তের আরামের
আবশ্যকতা নেই, ব্যক্ত অর্থাৎ সাকার রূপে আরামের আবশ্যকতা আছে l যদি তোমরা এইরকম হয়ে
যাও, তাহলে সব কাজ শেষ হয়ে যায় l তবুও দেখ যখন কোনও সেবার চান্স থাকে তখন তোমরা বাবা
সমান শ্রান্তিরহিত (অক্লান্ত) হয়ে যাও l তারপরে তোমরা ক্লান্ত হও না l আচ্ছা !
দাদীজীর সাথে : (৩০-০৩-৮৫)
শৈশব থেকেই বাবা তোমাকে মুকুটধারী বানিয়েছেন l আসার সাথে সাথেই বাবা সেবার
দায়িত্বের মুকুট পরিয়েছেন তোমায় এবং সময় সময়ে যে পার্টই অভিনীত হয়েছে অর্থাৎ যে
ভূমিকাই পালিত হয়েছে, এমনকি তা' বেগারি পার্টই হোক বা মহা আনন্দের পার্ট, ড্রামা
অনুসারে সব পরিস্থিতিতে সব পার্টে দায়িত্বের মুকুট তুমি ধারণ করে এসেছ, সেইজন্য
অব্যক্ত পার্টেও নিমিত্ত মুকুটধারী হয়ে গেছ l সুতরাং তোমার এই বিশেষ পার্ট আদি
থেকেই l সদা দায়িত্বশীল l বাবা যেমন দায়বদ্ধ, দায়িত্বের মুকুটধারী হওয়ার বিশেষ
পার্ট তোমার, অন্তেও তিনি তাঁর দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে যে মুকুট, তিলক সবকিছু দিয়ে
গেছেন, সেইজন্য তোমার স্মরণিক যেটা হবে তা'তে অবশ্যই মুকুট থাকবে l যেমন, কৃষ্ণকে
শৈশব থেকেই মুকুট সহ দেখানো হয়, সেইজন্য স্মরণিকেও তারা মুকুটধারী শৈশবরূপ পূজা করে
l আর অন্যান্য সকলে সাথী, কিন্তু তোমরা মুকুটধারী l
সাহচর্যের দায়িত্ব তো সবাই পালন করে, কিন্তু সমান রূপে সাহচর্যের দায়িত্ব পালন করছে,
এর মধ্যে তারতম্য আছে l
পাটিদের সাথে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার
কুমারদের প্রতি
- কুমার অর্থাৎ নির্বন্ধন l সবচেয়ে বড় বন্ধন মনে ব্যর্থ সঙ্কল্পের l এর থেকেও
নির্বন্ধন হও l কখনো কখনো এই বন্ধন তোমাদের বেঁধে ফেলে না তো ? কারণ সঙ্কল্প শক্তি
প্রতি পদে উপার্জনের আধার l স্মরণের যাত্রা কোন আধারে কর ? সঙ্কল্প শক্তির আধারেই
তো বাবার কাছে পৌঁছাও, তাই না ! অশরীরী হয়ে যাও l তাইতো মনের শক্তি বিশেষ l ব্যর্থ
সঙ্কল্প মনের শক্তি দুর্বল করে দেয়, সুতরাং এই বন্ধন থেকে মুক্ত থাক l কুমার অর্থাৎ
সদা তীব্র পুরুষার্থী, কারণ যে নির্বন্ধন হবে সে স্বতঃই তীব্রগতি হবে l যাদের বোঝা
আছে তারা ধীরগতি হবে l সময় অনুসারে, এখন পুরুষার্থের সময় উত্তীর্ণ হয়েছে l এখন
তীব্র পুরুষার্থী হয়ে তোমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে l
২) কুমার, তোমরা ব্যর্থের পুরানো খাতা সমাপ্ত করেছ ? নতুন খাতা শক্তিশালী খাতা l
পুরানো খাতা ব্যর্থ l সুতরাং পুরানো হিসেব সব সমাপ্ত হয়েছে l কার্যতঃ, ব্যবহারিক
জীবনেও দেখ কখনো পুরানো খাতা রাখা হয় না, পুরানো হিসেব সমাপ্ত করে এগিয়ে যায় আর
নতুন খাতা বাড়াতে থাকে l সেইরকম এখানেও, পুরানো খাতা সমাপ্ত করে প্রতি পদে সদা
সবচেয়ে নতুনতম, শক্তিশালী (সমর্থ) হও l প্রতিটা সঙ্কল্প শক্তিশালী হতে দাও l যেমন
বাবা, তেমন বাচ্চা l বাবা শক্তিশালী আর সেইজন্য বাচ্চারাও ফলো ফাদার করে সমর্থ হয়ে
যায় l
মাতাদের সাথে -
মাতা-রা কোন্ এক গুণে বিশেষভাবে অনুভাবী ? সেই বিশেষ গুণ কি ? (ত্যাগ, সহনশীলতা )
আর কোনও গুণ আছে ? মাতারা দয়াবতী হয় l অসীম জগতের মাতারা, তোমাদের অসীম জগতের
আত্মাদের প্রতি দয়া অনুভূত হয় ? কি কর, যখন দয়া অনুভব হয় ? যারা সহৃদয় হয় তারা সেবা
ব্যতীত থাকতে পারে না l যখন সদয় হও তখন অনেক আত্মার আপনা থেকেই কল্যাণ হয়েই যায়,
সেইজন্য মাতাদের কল্যাণীও বলা হয় l কল্যাণী অর্থাৎ যে অন্যের কল্যাণ করে l যেমন,
বাবাকে বিশ্ব কল্যাণকারী বলা হয় ঠিক সেইরকমই তোমরা সব মাতাকে বাবা সমান কল্যাণকারী
হওয়ার বিশেষ টাইটেল দেওয়া হয়েছে l এমন উদ্যম আছে তোমাদের ? কি থেকে তোমরা কী হয়েছ !
স্ব-পরিবর্তনের সাথে অন্যদের জন্যও তোমরা উৎসাহ-উদ্দীপনা অনুভব কর l সীমিত পরিসরের
আর অসীম জগতের সেবার ব্যালেন্স আছে তোমাদের ? সেই সেবার দ্বারা তো তোমাদের
হিসেব-নিকেশ চুকে যায়, আর অন্য সেবা হদের l তোমরা অসীম জগতের সেবাধারী l সেবার
উৎসাহ-উদ্দীপনা নিজের মধ্যে যত হবে ততই সফলতা হবে l
২) মাতা-রা নিজেদের ত্যাগ আর তপস্যা দ্বারা বিশ্ব-কল্যাণের নিমিত্ত হয়েছ l মাতাদের
মধ্যে ত্যাগ আর তপস্যার বিশেষত্ব আছে l এই দুই বিশেষত্বের সাথে সেবার নিমিত্ত হয়ে
অন্যদেরও বাবার বানানোয় বিজি থাক ? সঙ্গমযুগী ব্রাহ্মণের কাজই সেবা করা l ব্রাহ্মণ
সেবা ব্যতিরেকে থাকতে পারে না l যেমন নামধারী ব্রাহ্মণ জমায়েতে কথা-কাহিনী অবশ্যই
শোনাবে, সেইরকম এখানেও কথা-কাহিনী বলা অর্থাৎ সেবা করা l সুতরাং জগন্মাতা হয়ে জগতের
জন্য ভাবো l অসীম জগতের বাচ্চাদের জন্য ভাবো l শুধু ঘরে বসে থেকো না, অসীম জগতের
সেবাধারী হয়ে সদা সামনে এগিয়ে চলো l সীমিত পরিসরে তোমরা ৬৩ জন্ম অতিবাহিত করেছ ;
এখন অসীম জগতের সেবায় অগ্রচালিত হও l
বিদায়কালে সব বাচ্চার প্রতি স্মরণ-স্নেহ
চতুর্দিকের স্নেহী সহযোগী বাচ্চারা বাপদাদার বিশেষ স্নেহ-সম্পন্ন স্মরণ স্বীকার কর
l আজ বাপদাদা সব বাচ্চাকে সদা নির্বিঘ্ন হয়ে, বিঘ্ন-বিনাশক হয়ে বিশ্বকে নির্বিঘ্ন
বানানোর কার্যের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছেন l প্রত্যেক বাচ্চা এই শ্রেষ্ঠ সঙ্কল্প করে,
সেবায় সদা এগিয়ে যেতে, এই শ্রেষ্ঠ সঙ্কল্প সেবায় সদা এগিয়ে যেতে তাদের সমর্থ বানায়
এবং এইরকমই করতে থাকবে l সেবার সাথে সাথে স্ব-উন্নতি আর সেবার উন্নতির ব্যালেন্স
রেখে এগিয়ে চলো, তাহলে বাপদাদা এবং সকল আত্মা দ্বারা যাদের নিমিত্ত হও, তাদের
হৃদয়ের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হতে থাকবে l সুতরাং সদা ব্যালেন্স দ্বারা প্রতিনিয়ত ব্লেসিং
নিয়ে অগ্রচালিত হও l স্ব-উন্নতি এবং সেবার উন্নতি একসাথে হলে সদা সহজে সফলতার
প্রতিমূর্তি হয়ে যাবে l সবাই যেন নিজের নিজের নামে বিশেষ স্মরণ-স্নেহ স্বীকার করে l
আচ্ছা ! ওম্ শান্তি l
বরদান:-
সবাইকে খোশ-খবর শুনিয়ে খুশির খাজানায় পরিপূর্ণ
ভান্ডার ভব
সদা নিজের এই স্বরূপ সামনে রাখ যে তোমরা খুশির
খাজানায় পরিপূর্ণ ভান্ডার l অগণিত আর অবিনাশী যে ভান্ডারই তোমরা লাভ করেছ সেই
সমুদায় ভান্ডার স্মৃতিতে নিয়ে এসো l এই সমগ্র ভান্ডার স্মৃতিতে আনীত হলে খুশি হবে
আর যেখানে খুশি থাকে সেখানে সদাকালের জন্য দুঃখ দূর হয়ে যায় l সমগ্র খাজানার
স্মৃতিতে আত্মাও খুশি থাকে আর অন্যদেরও সুসংবাদ শোনায় l
স্লোগান:-
যোগ্য হতে হলে, কর্ম আর যোগের ব্যালেন্স রাখ l