20.01.2021
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
সম্পূর্ণ কল্পে এই সময়ই হলো সর্বোত্তম কল্যাণকারী সঙ্গম যুগ, তোমরা বাচ্চারা
স্যাকারিনকে ( মিষ্টি বাবা) স্মরণ করে সতোপ্রধান হয়ে ওঠো"
প্রশ্নঃ -
নানা রকম
প্রশ্ন (মনে) ওঠার কারণ কী এবং সমাধানই বা কী ?
উত্তরঃ -
যখন তোমরা দেহ-অভিমানে আস তখন সংশয় তৈরি হয় আর সংশয় ওঠা মাত্রই অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি
হয়। বাবা বলেন আমি তোমাদের পতিত থেকে পবিত্র হওয়ার এবং অন্যদেরও পবিত্র করে তোলার
যুক্তি বলে দিয়েছি, এতেই সব প্রশ্ন শেষ হয়ে যাবে।
গীতঃ- —
তোমাকে পেয়ে আমি সারা জগৎ পেয়ে গেছি....
ওম্ শান্তি ।
মিষ্টি-মিষ্টি
আত্মিক বাচ্চারা এই গান শুনেছে । এই যে মিষ্টি-মিষ্টি আত্মিক বাচ্চারা একথা কে বলেন
? নিশ্চয়ই আত্মিক পিতাই একথা বলতে পারেন । মিষ্টি-মিষ্টি আত্মিক বাচ্চারা এখন সামনে
বসে আছে আর বাবা অত্যন্ত স্নেহের সাথে বোঝাচ্ছেন। তোমরা জান আত্মিক পিতা ছাড়া সবাইকে
সুখ-শান্তি দেওয়া বা সবাইকে দুঃখ থেকে মুক্ত করা জগতে আর কোনও মানুষ করতে পারে না,
সেইজন্যই দুঃখে বাবাকে স্মরণ করে থাকে। বাচ্চারা তোমরা সামনে বসে আছ, তোমরা জানো যে
বাবা আমাদের সুখধামের যোগ্য করে তুলছেন। তোমরা সুখধামের মালিক প্রদানকারী বাবার
সামনে বসে আছ। এখন বুঝেছ যে সামনে বসে শোনা আর দূর থেকে শোনার মধ্যে বিস্তর
পার্থক্য। তোমরা মধুবনে মুখোমুখি হয়ে শুনতে আস। মধুবন খুব প্রসিদ্ধ। মধুবনে কৃষ্ণের
চিত্রও আছে কিন্তু কৃষ্ণ তো সেখানে নেই। বাচ্চারা তোমরা জান — এর জন্য প্রচেষ্টা
দরকার। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আত্মা নিশ্চিত করতে হবে। আমি আত্মা বাবার কাছ থেকে
উত্তরাধিকার গ্রহণ করতে চলেছি। সম্পূর্ণ চক্রে একবারই বাবা আসেন। এই সঙ্গম পুরো
কল্পের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর যুগ। এর নামই রাখা হয়েছে পুরুষোত্তম। এটাই সঙ্গম যুগ
যখন মানুষ মাত্রই উত্তম হয়ে ওঠে। এখন তো সমস্ত মানুষের আত্মাই তমোপ্রধান যা
সতোপ্রধান হয়ে ওঠে। সতোপ্রধানকে উত্তম বলা হয়। তমোপ্রধান হওয়ার কারণে মানুষ নীচের
দিকে নেমে যায়, সুতরাং বাবা আত্মাদের সামনে এসে বোঝান। সম্পূর্ণ ভূমিকা আত্মাই পালন
করে, নাকি শরীর! তোমাদের বুদ্ধিতে এসেছে যে প্রকৃতপক্ষে আমরা আত্মারা নিরাকার দুনিয়া
বা শান্তিধামের নিবাসী। এটা কেউ জানেনা, না নিজে বুঝতে পারে। তোমাদের বুদ্ধির তালা
এখন খুলে গেছে। তোমরা বুঝেছ আত্মারা আসলে পরমধাম নিবাসী। ওটা হলো নিরাকার দুনিয়া,
এটা হল সাকার দুনিয়া। এখানে তোমরা সব আত্মারা, অ্যাক্টর্স ভূমিকা পালন করে চলেছ ।
তোমরা জান সর্বপ্রথম আমরা ভূমিকা পালন করতে আসি, তারপর নম্বরানুসারে সবাই আসে।
সমস্ত অ্যাক্টররা একসাথে আসে না। ভিন্ন-ভিন্ন প্রকারের অ্যাক্টরদের অবিরত আসা-যাওয়া
করতে থাকে। সবাই একসাথে তখনই হয় যখন নাটক সম্পূর্ণ হয়। এখন তোমরা পরিচয় পেয়েছ, আমরা
আত্মারা প্রকৃতপক্ষে শান্তিধাম নিবাসী, এখানে আসি ভূমিকা পালন করতে। বাবাও সম্পূর্ণ
সময়ের জন্য ভূমিকা পালন করতে আসেন না। আমরাই ভূমিকা পালন করতে-করতে সতোপ্রধান থেকে
তমোপ্রধান হয়ে যাই । এখন বাচ্চারা সামনে বসে তোমাদের শুনতে আনন্দ হচ্ছে । এতো মজা
তো মুরলী পড়ার সমও হয়না । এখানে সামনে বসে শুনছ যে !
বাচ্চারা তোমরা জেনেছ ভারত দেবী-দেবতাদের স্থান ছিল, এখন আর নেই। চিত্রও দেখে থাক
জানো যে আমরাই ওখানকার নিবাসী ছিলাম — আমরাই প্রথমে দেবতা ছিলাম, নিজের ভূমিকা তো
স্মরণে থাকবে নাকি ভুলে যাবে। বাবা বলেন তোমরা এখানে ভূমিকা পালন করেছ । এটাই ড্রামা।
নতুন দুনিয়া যা আবার পুরানো হয়ে যায়। সর্বপ্রথম যে আত্মারা উপর থেকে আসে ,তারা
গোল্ডেন এজে আসে । এইসব বিষয় এখন তোমাদের বুদ্ধিতে আছে। তোমরা বিশ্বের মালিক
মহারাজা-মহারাণী ছিলে। তোমাদের রাজধানী ছিল। এখন তো রাজধানী নেই। এখন তোমরা শিখছ,
কিভাবে আমরা রাজ্য শাসন করব। সত্যযুগে উজির (উপদেষ্টা, মন্ত্রী) থাকে না। পরামর্শ
দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ওরা তো শ্রীমত দ্বারা শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে।
সেইজন্য অন্যের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যদি কারো পরামর্শ নেয় বোঝা যায় যে
তার বুদ্ধি দুর্বল । এখন যে শ্রীমত পাওয়া যায়, সেটা সত্যযুগেও বহাল থাকে। তোমরা
বুঝেছ সর্বপ্রথম দেবী-দেবতাদের অর্ধকল্প ধরে রাজ্য ছিল। এখন তোমাদের আত্মা রিফ্রেশ
হচ্ছে। এই নলেজ পরমাত্মা ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না।
এখন বাচ্চারা তোমাদের দেহী-অভিমানী হতে হবে। শান্তিধাম( সাইলেন্স ওয়ার্ল্ড) থেকে
তোমরা শব্দের মধ্যে প্রবেশ করেছ । শব্দ ছাড়া কর্ম হতে পারে না। এ বড় বোঝার বিষয়।
বাবার মধ্যে যেমন সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে তেমনি তোমাদের আত্মার মধ্যেও জ্ঞান রয়েছে।
আত্মাই বলে — এক শরীর ত্যাগ করে আমরা সংস্কার অনুসারে অন্য শরীর ধারণ করি।
পুনর্জন্ম অবশ্যই হয়।আত্মা যেমন ভূমিকা পায় ,সেটাই অভিনয় করে থাকে। সংস্কার অনুসারে
জন্ম নিতে থাকে। বারংবার জন্ম নিতে নিতে আত্মার পবিত্রতার ভাগ কম হতে থাকে। পতিত
শব্দটি দ্বাপর থেকে কার্যে পরিণত হয়। কিছু পার্থক্য অবশ্যই হয়। আত্মারা তোমাদের সাথে
এখন শিববাবার বাগদান (বিবাহের সম্বন্ধ) হয়েছে, সুতরাং আত্মা তো ফিমেল হলো না!
শিববাবা বলেন - আমাকে স্মরণ করলে তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। তোমরা শান্তিধামে গিয়ে
তারপর সুখধামে আসবে। সুতরাং বাচ্চাদের জ্ঞান রত্ন দ্বারা ঝুলি পরিপূর্ণ করতে হবে।
কোন রকম সংশয় আসা উচিত নয়, দেহ-অভিমানে এলেই অনেক প্রশ্ন ওঠে । বাবা যে যুক্তি বলে
দেন সেটাও করেনা। প্রধান বিষয়ই হলো আমাকে পতিত থেকে পাবন হতে হবে। অন্য সব বিষয়
ত্যাগ করতে হবে । রাজধানীতে যা কিছু রীতিনীতি এবং ব্যবস্থা ছিল সেগুলোই চলবে। যেমন
মহল তৈরি করেছিল সেরকমই বানাবে। প্রধান বিষয়ই হলো পবিত্রতা। আহ্বান করে হে
পতিত-পাবন....পবিত্র হলেই সুখী হতে পারবে। সবচেয়ে পবিত্র হলো দেবী-দেবতা।
এখন তোমরা ২১ জন্মের জন্য সর্বোত্তম পবিত্র হয়ে ওঠো। একেই বলে সম্পূর্ণ নির্বিকারী
পবিত্রতা। বাবা যে শ্রীমত দেন সেই অনুসারে চলা উচিত। কোনো সংকল্প ওঠানোর প্রয়োজন
নেই । প্রথমে আমরা পতিত থেকে পাবন তো হই ! ডেকে বলে হে পতিত-পাবন...কিন্তু কিছুই
বোঝে না। এটাও জানে না পতিত-পাবন কে ? এটা হলো পতিত দুনিয়া, সত্যযুগ পবিত্র দুনিয়া।
প্রধান বিষয়ই হলো পবিত্র হওয়া, কে পবিত্র করে তুলবে কিছুই জানে না। পতিত-পাবন বলে
ডাকে কিন্তু তাদের বল তোমরা তো পতিত, তবে কিন্তু রেগে যাবে। নিজেকে বিকারগ্রস্ত কেউ-ই
মনে করে না। বলে সবাই তো গৃহস্থ জীবনে ছিল। রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী-নারায়ণের সন্তান
ছিল না ! ওখানে যোগবলের দ্বারা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, এটা ভুলে গেছে। সত্য যুগকে
নির্বিকারী ওয়ার্ল্ড স্বর্গ বলা হয়। ওটা হলো শিবালয়। বাবা বলেন পতিত দুনিয়াতে একজনও
পবিত্র নেই। এই বাবা একজন টিচার এবং সদ্গুরু যিনি সবাইকে সদ্গতি দেন। এখানে তো একজন
গুরু চলে গেলে তার সন্তানকে গদিতে বসিয়ে দেয়। সে কিভাবে সদ্গতি দিতে পারে। সবার
সদ্গতি দাতা একজনই। সত্যযুগে শুধু দেবী-দেবতারা থাকে। বাকি আত্মারা সবাই শান্তিধামে
চলে যাবে, রাবণ রাজ্য থেকে মুক্তি পেয়ে। বাবা সবাইকে পবিত্র করে নিয়ে যান। পাবন থেকে
চট করে কেউ পতিত হয়না। নম্বরানুসারে নীচে নামতে থাকে। সতোপ্রধান থেকে সতো, রজো,যতমো...
তোমাদের বুদ্ধিতে ৮৪ জন্মের চক্র বসে গেছে । তোমরা এখন লাইট হাউস । জ্ঞান দ্বারা এই
চক্রকে জেনেছ যে এটা কিভাবে ঘোরে। এখন তোমাদের আরও সবাইকে পথ বলে দিতে হবে। সবাই হলো
নৌকা তোমরা পাইলট, পথ প্রদর্শক। সবাইকে বলো, তোমরা শান্তিধাম, সুখধামকে স্মরণ করো।
কলিযুগ দুঃখধামকে ভুলে যাও । আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্নেহ স্মরণ আর
সুপ্রভাত। আত্মা রূপী পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
যতক্ষণ জীবিত থাকবে জ্ঞান-অমৃত পান করতে হবে। নিজের ঝুলি জ্ঞান রত্ন দ্বারা ভর্তি
করতে হবে। সংশয়ে এসে কোনও প্রশ্ন যেন না ওঠে ।
২ ) যোগ অগ্নি দ্বারা আত্মা রূপী সীতাকে পবিত্র করে তুলতে হবে। কোনো ব্যপারে
বিস্তারে না গিয়ে দেহী-অভিমানী হওয়ার পুরুষার্থ করতে হবে। শান্তিধাম আর সুখধামকে
স্মরণ করতে হবে।
বরদান:-
দেহী-অভিমানী স্থিতিতে স্থিত হয়ে সদা বিশেষ ভূমিকা পালনকারী সন্তুষ্টমণি ভব
যে বাচ্চারা বিশেষ
ভূমিকা পালনকারী হয় তাদের প্রতিটি কর্ম বিশেষ হয়, কোনো কর্ম সাধারণ হয় না। সাধারণ
আত্মা যে কোন কাজ দেহ-অভিমান নিয়ে করবে আর বিশেষ আত্মা দেহী-অভিমানী হয়ে করবে। যে
দেহী-অভিমানী স্থিতিতে স্থিত থেকে কর্ম করে সে নিজেও সবসময় সন্তুষ্ট থাকে আর
অন্যদেরও সন্তুষ্ট রাখে ।সেইজন্য তাদের সন্তুষ্টমণি বরদান স্বাভাবিকভাবেই প্রাপ্ত
হয়ে যায়।
স্লোগান:-
প্রয়োগকারী আত্মা হয়ে যোগের প্রয়োগ দ্বারা সর্ব খাজানা (সম্পদ) বৃদ্ধি কর ।