31-01-2021 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
25-10-87 মধুবন
"চার বিষয়ে স্বতন্ত্র হও"
আজ বাপদাদা কমল-আসনধারী তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বাচ্চাদের দেখছেন l
কমল-আসন ব্রাহ্মণ আত্মাদের শ্রেষ্ঠ স্থিতির লক্ষণ l আসন হলো স্থিত হওয়ার (বসার)
সাধন l ব্রাহ্মণ আত্মারা কমল-স্থিতিতে স্থিত থাকে, সেইজন্য তাদের বলা হয় কমল-আসনধারী
l যেমন, ব্রাহ্মণ যে সেই দেবতা হয়, ঠিক সেইরকমই আসনধারী যে সেই সিংহাসনধারী হয়, যত
সময়ের জন্য তোমরা বহুকাল অথবা অল্পকালের কমল-আসনধারী হও ততটাই বহুকাল কিংবা অল্পকাল
রাজ-সিংহাসনের অধিকারী হও l কমল-আসন বিশেষভাবে ব্রহ্মাবাবা সমান পরম উৎকৃষ্ট তথা অতি
স্বতন্ত্র ও অতি প্রিয় স্থিতির সিম্বল (চিহ্ন) l তোমরা ব্রাহ্মণ বাচ্চারা ফলো ফাদার
করো, অতএব, বাবা সমান কমল-আসনধারী হও l অতি স্বতন্ত্র হওয়ার লক্ষণ - যে বাবা আর
পরিবারের সকলের অতি প্রিয় হবে l স্বতন্ত্র ভাব অর্থাৎ সবকিছু থেকে পৃথকীকৃত l
(১) নিজের দেহভাব থেকে বিচ্ছিন্ন l যেমন সাধারণ পার্থিব আত্মাদের চলতে-ফিরতে, সকল
কর্মাদি করতে করতে সদা আর স্বততোই দেহের ভাব থাকেই, তাদের পরিশ্রম করতে হয় না যে 'আমি
দেহ', না চাইতেও সহজ স্মৃতি থেকেই যায় l ঠিক তেমনই কমল-আসনধারী ব্রাহ্মণ আত্মারাও
এই দেহভাব থেকে যেন স্বতঃই বিচ্ছিন্ন থাকে, যেমন অ-জ্ঞানী আত্ম-অভিমান থেকে
বিচ্ছিন্ন থাকে l তোমরা স্বভাবতোই আত্ম-অভিমানী, শরীরের ভাব যেন তার নিজের দিকে
আকর্ষণ না করে l ব্রহ্মাবাবাকে যেমন দেখেছ, চলতে ফিরতে ফরিস্তা-রূপ বা দেবতা-রূপ
আপনা থেকেই স্মৃতিতে থেকেছে l এইরকম ন্যাচারাল দেহী-অভিমানী স্থিতি যেন সদা থাকে -
একে বলে দেহভাব থেকে পৃথক l দেহভাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরমাত্ম-প্রিয় হয়ে যাওয়া l
(২) এই দেহের সর্ব সম্বন্ধ থেকে তোমার দৃষ্টি, বৃত্তি, কৃতি দ্বারা পৃথক থাকা l
দেহের সম্বন্ধ দেখেও স্বতঃই আত্মিক, দেহী সম্বন্ধ যেন স্মৃতিতে থাকে, সেইজন্য
দীপাবলীর পরে ভ্রাতৃ- দ্বিতীয়া পালন করেছ, তাই না !
যখন ঝলমলে নক্ষত্র অথবা প্রদীপ্ত অবিনাশী দীপক হয়ে জ্বলে ওঠো, তখন ভাই-ভাইয়ের
সম্বন্ধ গড়ে ওঠে l আত্মা সম্পর্কে ভাই-ভাইয়ের সম্বন্ধ আর সাকার ব্রহ্মাবংশী
ব্রাহ্মণ হওয়ার সুবাদে ভাই-বোনের শ্রেষ্ঠ শুদ্ধ সম্বন্ধ স্বতঃই স্মৃতিতে থাকে l
সুতরাং বিচ্ছিন্ন ভাব অর্থাৎ দেহ আর দেহের সম্বন্ধ থেকে পৃথক l
(৩) দেহের বিনাশী পদার্থেও বিচ্ছিন্ন ভাব l যদি কোনো পদার্থ কোনও কর্মেন্দ্রিয়কে
বিচলিত করে অর্থাৎ আসক্তি ভাব উৎপন্ন হয় তাহলে সেই পৃথকভাব থাকে না l সম্বন্ধ থেকে
স্বতন্ত্র হওয়া তবুও সহজ, কিন্তু সর্ব পদার্থের প্রতি আসক্তি থেকে আলাদা - অনাসক্ত
হওয়ায় রয়্যাল রূপের আসক্তি থেকে যায় l তোমাদের তো বলা হয়েছিল, তাই না যে আসক্তির
স্পষ্ট রূপই হলো ইচ্ছা l এই ইচ্ছার সূক্ষ্ম ও গভীর রূপ হলো ভালো লাগা l ইচ্ছা নেই
কিন্তু ভালো লাগে, এই গভীর রূপ ভালো লাগার পরিবর্তে ইচ্ছা'র রূপও নিতে পারে l সুতরাং
এটা ভালোভাবে চেক করো, এই পদার্থ অর্থাৎ অল্পকালের সুখের সাধন আকর্ষণ করছে না তো ?
যে কোনও সাধন সময়মতো প্রাপ্ত না হলে তাহলে সহজ সাধনা অর্থাৎ সহজযোগের স্থিতি নড়বড়ে
হয় না তো ? কোনও সাধনের বশ বা অভ্যাসে বিবশ (নিশ্চেষ্ট ) হও না তো ? কারণ এই সমুদয়
পদার্থ সাধন অর্থাৎ প্রকৃতির সুবিধা-সুযোগ l তোমরা তো প্রকৃতিজিত অর্থাৎ প্রকৃতির
আধারের ঊর্ধ্বে স্বতন্ত্র কমল-আসনধারী ব্রাহ্মণ l মায়াজিতের সাথে সাথে তোমরা
প্রকৃতিজিত হয়ে ওঠো l যেইমাত্র তোমরা মায়াজিত হও, তখনই মায়া বারবার ভিন্ন ভিন্ন রূপে
ট্রায়াল করে যে 'আমার সাথী মায়াজিত হয়ে যাচ্ছে', সেইজন্য বিভিন্ন ধরনের পেপার নেয় l
প্রকৃতির পেপার হলো, সাধনের দ্বারা তোমাদের সবাইকে অস্থিরতার মধ্যে নিয়ে আসা l যেমন,
জল l সে'রকম কোনো বড় পেপার এখনো আসেনি l কিন্তু জল দ্বারা তৈরি সাধন, অগ্নি দ্বারা
তৈরি সাধন, প্রকৃতির এইরকম প্রত্যেক তত্ত্ব দ্বারা তৈরি সাধন মনুষ্যাত্মার জীবনের
অল্পকালের সুখের সাধন l সুতরাং এই সব তত্ত্ব পেপার নেবে l এখন তো শুধু জলের ঘাটতি
হয়েছে, কিন্তু জলে তৈরি পদার্থ যখন প্রাপ্ত হবে না, প্রকৃত পেপার সেই সময় হবে l
প্রকৃতি দ্বারা এই পেপারও সময় অনুসারে অবশ্যই আসবে, সেইজন্য দেহের পদার্থের আসক্তি
বা আধার থেকেও নিরাধার অনাসক্ত হতে হবে l এখন তো সব সাধন সহজলব্ধ, কোনও কিছুর অভাব
নেই l কিন্তু যে সমস্ত সাধন উপলব্ধ হয়, সেই সমস্ত সাধনকে ব্যবহারে নিয়ে আসতে যোগের
স্থিতি নড়বড়ে হতে দিও না l যোগী হয়ে প্রয়োগ করতে হবে, একে বলে, স্বতন্ত্র হওয়া l
যখন কোনভাবেই কোনকিছু তোমার নেই, তখন সেটাকে স্বতন্ত্র হওয়া বলা যাবে না l সবকিছু
থাকতে নিমিত্ত মাত্র, অনাসক্ত রূপে প্রয়োগ করতে হবে, তোমার ইচ্ছা বা তোমার পছন্দ
হওয়ার কারণে ইউজ ক'র না - এই চেকিং অবশ্যই করো l যেখানে যেখানে কিছু ইচ্ছা থাকবে,
সেখানে তুমি যতই পরিশ্রম করো না কেন ইচ্ছা তোমাকে ভালো হতে দেবে না l পেপারের সময়
পরিশ্রম করাতেই সময় পার হয়ে যাবে l তুমি সাধনায় থাকার প্রবল চেষ্টা করবে আর সাধন
নিজের দিকে আকর্ষণ করবে l তুমি যুদ্ধ করে, পরিশ্রম করে সাধনের আকর্ষণ সমাপ্ত করার
যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকবে, তখন যুদ্ধের দড়ি টানাটানিতেই পেপারের সময় পার হয়ে যাবে
l সুতরাং তখন রেজাল্ট কী হবে ? যে সাধন তোমরা ব্যবহার করেছ তা' সহজ যোগী থেকে
তোমাদের নড়বড়ে করে দিয়েছে, তাই না ! প্রকৃতির পেপার তো এখন তীব্র গতিতে আসতে চলেছে,
সেইজন্য প্রথম থেকেই সমস্ত পদার্থের বিশেষ আধার - খাবার, পানীয়, বস্ত্র, চলাফেরা,
থাকা ও সম্পর্কে আসা - এই সবকিছুর চেকিং করো, কোনও বিষয় সূক্ষ্মভাবে বিঘ্নরূপ হয়ে
ওঠে না তো ? এটা এখন থেকে ট্রায়াল (পরীক্ষা) করো l যে সময় পেপার আসবে সেই সময়
ট্রায়াল করতে শুরু ক'র না, তখন তো অসফল (ফেল) হওয়ার মার্জিন হবে l
যোগ-স্থিতি অর্থাৎ ব্যবহারে এসেও স্বতন্ত্র স্থিতি l সহজ যোগের সাধনা সাধনের ঊর্ধ্বে
অর্থাৎ প্রকৃতির উপরে যেন বিজয়ী হয় l এইরকম হতে দিও না যে সেটা ব্যতিরেকে তোমরা চলতে
অপারগ, সেইজন্য স্থিতি নড়বড়ে হয়ে গেছে... একে স্বতন্ত্র জীবন বলা যাবে না l এমন
সফলতা প্রাপ্ত করো যা তোমাদের স্থিতি দ্বারা যেন অপ্রাপ্তিও প্রাপ্তির অনুভব করায় l
যেমন স্থাপনের শুরুতে তাদের কোনকিছুর প্রতি আসক্তি আছে কিনা, সেটার ট্রায়ালের মাঝে
জেনেবুঝে প্রোগ্রাম রাখা হতো l যেমন, ১৫ দিন শুধু তাদের বাজরার রুটি আর ঘোল খেতে
দেওয়া হয়েছে l গম থাকা সত্ত্বেও তাদের এই ট্রায়াল করানো হয়েছে l যেকোন ধরণের
অসুস্থকেও ১৫ দিন এই ভোজন খেতে হয়েছে l কেউই অসুস্থ হয়নি l হাঁপের রোগীও সুস্থ হয়ে
গেছে, তাই না ! তাদের এই নেশা ছিল যে বাপদাদা এই প্রোগ্রাম দিয়েছেন l যখন ভক্তিতে
বলা হয় 'বিষও অমৃত হয়ে গেছে', আর এ তো ঘোল ছিল ! নিশ্চয় আর নেশা সব পরিস্থিতিতে
বিজয়ী তৈরি করে দেয় l সুতরাং এইরকম পেপারও আসবে - শুকনো রুটিও খেতে হবে l এখন তো সব
সাধন আছে l তোমরা বলবে - দাঁত যথেষ্ট শক্ত নয়, হজম হয় না l কিন্তু সেই সময় কী করবে
? যখন নিশ্চয়, নেশা, যোগের সিদ্ধির শক্তি থাকে তখন শুকনো রুটিও নরম রুটির মতো কাজ
করবে, হতাশ করবে না l তোমরা সিদ্ধিস্বরূপের মর্যাদায় যদি থাকো তাহলে কোনকিছুই
তোমাদের নাকাল করতে পারবে না l যখন হঠযোগীদের সামনে বাঘ বিড়াল হয়ে যায়, সাপ খেলনা
হয়ে যায়, তাহলে তোমরা সহজ যোগী, সিদ্ধিস্বরূপ আত্মাদের জন্য এই সব কোনকিছুই বড়
ব্যাপার নয় l আছে যখন আরামে ইউজ করো, কিন্তু যথার্থ সময়ে তোমরা প্রতারিত হবে না -
এটা চেক করো l পরিস্থিতি তোমাদের স্থিতিকে যেন নীচে নামিয়ে না আনতে পারে l দেহের
সম্বন্ধ থেকে পৃথক হওয়া সহজ কিন্তু দেহের পদার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন হ'তে অনেক বেশি
অ্যাটেনশনের (ধ্যান ) প্রয়োজন l
(৪) পুরানো স্বভাব, সংস্কার থেকে স্বতন্ত্র হতে হবে l পুরানো দেহের স্বভাব আর
সংস্কারও খুব কঠিন l মায়াজিত হওয়ার ক্ষেত্রে এটাই বড় বিঘ্নরূপ হয়ে যায় l অনেক সময়
বাপদাদা দেখেন যে পুরানো স্বভাব, সংস্কার রূপী সাপ সমাপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু তার
চিহ্ন থেকে যায়, যা সময়তে বারংবার প্রতারণা করে l এই কঠিন স্বভাব আর সংস্কার কখনো
কখনো এতটাই মায়ার বশীভূত করে দেয় যে তোমরা ভুলকে ভুল (রং-কে রং) বলে বুঝতে পারো না
l তোমাদের 'উপলব্ধি শক্তি' সমাপ্ত হয়ে যায় l এর থেকে পৃথক হওয়ার চেকিংও ভালোভাবে করা
প্রয়োজন l যখন উপলব্ধি-শক্তি সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন তোমার একটা মিথ্যাকে ন্যায়সঙ্গত
প্রমাণ করতে হাজার মিথ্যা বলতে হয় l এমনই পরবশ হয়ে যাও তোমরা ! নিজেকে সত্য প্রমাণ
করা - এটাও তোমার পুরানো সংস্কারের বশীভূত হওয়ার লক্ষণ l এক হলো, কোন বিষয়কে
যথার্থরূপে স্পষ্ট করা, আরেক হলো জিদবশতঃ নিজেকে সঠিক প্রতিপন্ন করা l সুতরাং যারা
জেদ এর দ্বারা নিজেকে সঠিক প্রমাণ করে, তারা কখনো সিদ্ধিস্বরূপ হতে পারে না l এটাও
চেক করো কোনও পুরানো স্বভাব, সংস্কারের লেশমাত্র কোথাও লুকিয়ে নেই তো ? বুঝেছ ?
এই চার বিষয়েই যে স্বতন্ত্র তাকে বলা হবে বাবার প্রিয়, পরিবারের প্রিয় l এইরকম
কমল-আসনধারী হয়েছ ? একেই বলে, 'ফলো ফাদার' l ব্রহ্মাবাবাও কমল-আসনধারী হয়েছেন,
তারপরই বাবার নম্বর ওয়ান প্রিয় হন, ব্রাহ্মণদের প্রিয় হন, হয় তা' ব্যক্ত রূপে অথবা
অব্যক্ত রূপে l এখনও প্রত্যেক ব্রাহ্মণ আত্মার হৃদয় থেকে কি বের হয় ? আমাদের
ব্রহ্মাবাবা l তোমরা এইরকম অনুভব ক'র না যে সাকার রূপে তোমরা তাঁকে দেখনি ! কিন্তু
তোমরা তাঁকে চোখে দেখনি, হৃদয়ে দেখেছ, বুদ্ধির দিব্য নেত্র দ্বারা দেখেছ, অনুভব
করেছ সেইজন্য হৃদয় থেকে বলো, "আমার ব্রহ্মাবাবা l" এই লক্ষণ প্রিয় ভাবের l চারিদকের
সবকিছু থেকে স্বতন্ত্র ভাব বিশ্বের প্রিয় করে তুলেছে l সুতরাং এইরকম ভাবে সবকিছু
থেকে পৃথক আর সকলের প্রিয় হও l বুঝেছ ?
গুজরাট কাছে, ফলো করার ক্ষেত্রেও তারা কাছে l স্থান আর স্থিতি উভয়তঃ কাছে হওয়া - এটা
বিশেষত্ব l বাপদাদা তো সদা বাচ্চাদের দেখে উৎফুল্ল হন l আচ্ছা l
চারিদিকের কমল-আসনধারী, স্বতন্ত্র ও বাবার প্রিয় বাচ্চাদের, সদা মায়াজিত,
প্রকৃতিজিত বিশেষ আত্মাদের, যারা সদা ফলো ফাদার করে, নিষ্ঠাবান বাচ্চাদের স্নেহ
সম্পন্ন স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
মধুবনে আগত সেবাধারী ভাই-বোনেদের সাথে অব্যক্ত
বাপদাদার সাক্ষাৎকারঃ -
(১) যত সময় অবধি মধুবনে সেবা করেছ, ততো সময় নিরন্তর যোগের অনুভব করেছ ? যোগ-বিচ্ছেদ
হয়নি তো ? মধুবনে সেবাধারী হওয়া অর্থাৎ নিরন্তর যোগী, সহজ যোগীর অনুভাবী হওয়া l এই
অল্প সময়ের স্মরণ সদা স্মরণে থাকবে, তাই না ! যখনই কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, মন
থেকে মধুবনে পৌঁছে যেও l তাহলে মধুবন নিবাসী হওয়ায় পরিস্থিতি বা সমস্যা শেষ হয়ে যাবে
আর তোমরা সহজ যোগী হয়ে যাবে l সদাসর্বদা নিজের এই অনুভবকে সাথে রাখো l তবে অনুভব
স্মরণ করলে তোমরা শক্তি পাবে l সেবার মেওয়া অবিনাশী l আচ্ছা l এই চান্স লাভ করা কম
ব্যাপার নয়, অনেক বড় চান্স পেয়েছ তোমরা l
সেবাধারী অর্থাৎ সদা বাবা সমান নিমিত্ত হওয়া, নিরহঙ্কার থাকা l নিরহঙ্কারিতাই
সফলতার সবচাইতে শ্রেষ্ঠ সাধন l যে কোনও সেবায় নম্রতা ভাব ও নিমিত্ত ভাব সফলতার সাধন
l অতএব, এই বিশেষত্বের সাথে সেবা করেছ ? এমন সেবাতেই সফলতা আর সদা মনে আনন্দের
তরঙ্গ l সঙ্গমযুগের উৎসাহ-আনন্দ উদযাপন করেছ, সেইজন্য সেবা, সেবা বলে তোমাদের মনে
হয়নি l যেমন, যখন কেউ মল্লযুদ্ধ করে, সে তখন নিজের আনন্দ-উদ্দীপনার সাথে খেলা মনে
করে খেলে l এর মধ্যে ক্লান্তি বা ব্যথা থাকে না, কারণ নিজের মনোরঞ্জনের জন্য আনন্দ
উপভোগ করার জন্য খেলে l ঠিক এইভাবেই যদি প্রকৃত সেবাধারীর বিশেষত্ব দ্বারা সেবা করো,
তবে কখনও ক্লান্ত হবে না l বুঝেছ ? সদা এইরকমই মনে হবে যেন সেবা নয়, বরং খেলা করছ l
সুতরাং যে সেবার জন্যই তোমাদের বলা হোক, তোমরা এই দুই বিশেষত্ব দ্বারা সফলতা লাভ
করতে থাকো l এতে সদা সফলতা-স্বরূপ হয়ে যাবে l আচ্ছা l
(২) প্রকৃত তপস্যা সদাসর্বদার জন্য তোমাদের প্রকৃত সোনা বানায় l যার মধ্যে সামান্য
এতটুকুও মিক্স (মিশ্রণ) নেই l তপস্যা সদা প্রত্যেককে এমন যোগ্য বানিয়ে তোলে যে
গার্হস্থ্য জীবনেও তোমরা সফল আর প্রালব্ধ প্রাপ্ত করতেও সফল l এমন তপস্বী হয়েছ তোমরা
? যারা তপস্যা করে তাদের রাজযোগী বলা হয় l সুতরাং তোমরা সবাই রাজযোগী l কখনো কোনও
পরিস্থিতিতে বিচলিত হও না তো ? সুতরাং সদা নিজেকে এই রীতিতে চেক করো আর চেক করার পরে
নিজেকে চেঞ্জ করো l শুধু চেক করে হয়তো হতাশ হতে পারো, হয়তো বা ভাববে যে আমার মধ্যে
এই খামতি আছে, এটাও আছে, জানিনা, ঠিক হবে কি না ! সেইজন্য চেকও করো আর চেক করার সাথে
চেঞ্জও করো l আর দেখো, দুর্বল হয়ে গেলে, সময়ও চলে গেল। কিন্ত সময়ে যারা কর্তব্য
পালন করে তাদের সদা বিজয় হয় l তাহলে তোমরা সবাই সদা বিজয়ী, শ্রেষ্ঠ আত্মা হয়েছ ?
সবাই শ্রেষ্ঠ নাকি নম্বর অনুক্রমে রয়েছ ? যদি তোমাদের নম্বর জিজ্ঞাসা করা হয় যে কতো
নম্বরে আছ, তো সবাই তোমরা বলবে নম্বর ওয়ান l কিন্তু সেই নম্বর কতো হবে ? এক নাকি
অনেক ? ফার্স্ট নম্বর তো সবাই হবে না, কিন্তু ফার্স্ট ডিভিশনে তোমরা আসতে পারো l
ফার্স্ট নম্বর শুধুই এক হবে, কিন্তু ফার্স্ট ডিভিশনে অনেকে আসবে, সেইজন্য ফার্স্ট
নম্বর হতে পারো l রাজ-সিংহাসনে একজন বসবে কিন্তু আরও তো সাথী থাকবে, তাই না ! সুতরাং
রয়্যাল ফ্যামিলিতে আসাও রাজ্য অধিকারী হওয়া l অতএব, ফার্স্ট ডিভিশন অর্থাৎ নম্বর
ওয়ানে আসার পুরুষার্থ করো l এখনও পর্যন্ত দুই-তিনের সীট ব্যতীত কোনো সীট ফিক্স হয়নি
l এখন যে যত পুরুষার্থ করতে চাও করতে পারো l বাপদাদা তোমাদের বলেছিলেন, তাই না যে
এখন লেট হয়েছে, কিন্তু 'টু লেট' হয়নি l সেইজন্য সকলেরই এগিয়ে যাওয়ার চান্স আছে l
প্রত্যেকের চান্স আছে উইন (জয়লাভ) করে নম্বর ওয়ানে আসার l সুতরাং সদা উৎসাহ-উদ্দীপনা
যেন থাকে l এইরকম হতে দিও না, ঠিক আছে কেউ নম্বর ওয়ান হতেই পারে, আমি দু'নম্বরেই
ঠিক আছি l একে বলে দুর্বল পুরুষার্থ l তোমরা সবাই তো তীব্র পুরুষার্থী, তাই না ?
আচ্ছা l
বরদান:-
বিচক্ষণ হয়ে সেই সঙ্গে তিন প্রকারের সেবা করে
সফলতা-মূর্ত ভব
বর্তমান সময় অনুসারে মন্সা, বচন আর কর্ম দ্বারা তিন
প্রকারের সেবা একসাথে হওয়া প্রয়োজন l বাণী আর কর্মের দ্বারা সেবা করার সাথে সাথে
শুভ সঙ্কল্প এবং শ্রেষ্ঠ বৃত্তি দ্বারা মন্সা সেবা করতে থাকো, তখনই তোমরা তার ফল
লাভ করবে, কারণ বাণীতে শক্তি তখনই আসে যখন মন্সা শক্তিশালী হয়, নয়তো যারা শুধু কথার
কথা বলে সেই পন্ডিতের মতো হয়ে যায়, কারণ তারা তোতার মতো পড়ে রিপিট করে l জ্ঞানী
অর্থাৎ বিচক্ষণ, একই সঙ্গে তিন রকমের সেবা করে আর সফলতার বরদান প্রাপ্ত করে নেয় l
স্লোগান:-
নিজের বোল, কর্ম আর দৃষ্টি দ্বারা শান্তি, শক্তি ও খুশির অনুভব করানোই মহান
আত্মাদের মহত্ত্ব l