05.01.2021
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমাদের মুখ থেকে কখনোই 'হে ঈশ্বর, হে বাবা' ষএই শব্দ বের হওয়া উচিত নয়, এ হলো
ভক্তিমার্গের অভ্যাস"
প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা,
তোমরা সাদা পোশাক কেন পছন্দ করো ? এ কোন্ বিষয়ের প্রতীক ?
উত্তরঃ -
এখন তোমরা এই পুরানো দুনিয়ার থেকে জীবন্মৃত হয়েছো, তাই তোমাদের সাদা পোশাক পছন্দ ।
এই সাদা পোশাক মৃত্যুকে সিদ্ধ করে । কেউ যখন মারা যায়, তখনও সাদা কাপড় দেওয়া হয়,
বাচ্চারা, তোমরাও এখন সেই জীবন্মৃত হয়েছো ।
ওম্ শান্তি ।
আত্মাদের পিতা
বসে তাঁর আত্মারূপী বাচ্চাদের বোঝান, আত্মিক শব্দটি না বলে কেবল বাবা বললেও ঠিক আছে
। বাবা বসে বাচ্চাদের বোঝান । সবাই তো নিজেদের ভাই - ভাই তো বলেই । তাই বাবা বসে
বাচ্চাদের বোঝান । সবাইকে তো তিনি আর বোঝাবেন না । সবাই তো নিজেদের ভাই - ভাইই বলে
থাকে । গীতাতে লেখা আছে - ভগবান উবাচঃ । এখন ভগবান উবাচঃ কার প্রতি ? সব বাচ্চারাই
হলো ভগবানের । তিনি হলেন বাবা, তাই তাঁর বাচ্চারা সকলেই ভাই - ভাই । ভগবানই
বুঝিয়েছিলেন, রাজযোগ শিখিয়েছিলেন । এখন তোমাদের বুদ্ধির তালা খোলা আছে । দুনিয়াতে
আর কারোরই এই খেয়াল চলতে পারে না । যারা যারা এই খবর পাবে, তারা স্কুলে আসতে থাকবে,
পড়তে থাকবে । তারা মনে করবে - প্রদর্শনী তো দেখেছি, এবার গিয়ে কিছু শুনবো । প্রথম -
প্রথম মুখ্য কথা হলো - জ্ঞানের সাগর, পতিত-পাবন, গীতা জ্ঞান দাতা শিব ভগবান উবাচঃ,
সর্ব প্রথমে ওরা এ যেন জানতে পারে যে, এদের যিনি শেখান অথবা বোঝান তিনি কে ? ওই
সুপ্রীম সোল, জ্ঞানের সাগর হলেন নিরাকার । তিনি তো হলেনই সত্য । সত্য তিনি, তো
সত্যই বলবেন । এরপর এতে আর কোনো প্রশ্ন উঠতেই পারে না । সবার প্রথমে তো এর উপর
বোঝাতে হবে যে, আমাদের পরমপিতা পরমাত্মা, ব্রহ্মার দ্বারা রাজযোগ শেখান । এ হলো
রাজার পদ । যার এটা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, যিনি সকলের বাবা, সেই পারলৌকিক বাবা বসে
বোঝান, তিনিই সবথেকে বড় অথরিটি, তখন দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন উঠতেই পারে না । তিনিই
হলেন পতিত পাবন, তাই যখন তিনি এখানে আসেন, তখন নিশ্চয়ই নিজের সময় মতই আসবেন । তোমরা
দেখোও যে - এ হলো সেই মহাভারতের লড়াই । বিনাশের পরে আবার নির্বিকারী দুনিয়া হতে হবে
। এ হলো বিকারী দুনিয়া । একথা মানুষ জানে না যে, এই ভারতেই নির্বিকারী দুনিয়া ছিলো
। কিছুই বুদ্ধিতে নেই । গডরেজের তালা লেগে গেছে । তার চাবি এক বাবার কাছেই আছে, তাই
তাঁকেই জ্ঞান দাতা, দিব্য চক্ষু বিধাতা বলা হয় । তিনি জ্ঞানের তৃতীয় নয়ন দান করেন
। এ'কথা কেউই জানে না যে, তোমাদের কে পড়ান । তারা মনে করে এই দাদা (ব্রহ্মা বাবা)
পড়ান, তখনই টিকা টিপ্পনী করা শুরু হয় । তাই সবার প্রথমে এই কথাই বুঝিয়ে বলো । এতে
লেখাও আছে - শিব ভগবান উবাচঃ । তিনি তো হলেনই সত্য ।
বাবা বোঝান, আমি হলাম পতিত - পাবন শিব । আমি পরমধাম থেকে এসেছি এই শালগ্রামদের পড়াতে
। বাবা হলেনই নলেজফুল । তিনি এই সৃষ্টির আদি - মধ্য এবং অন্তের রহস্য বুঝিয়ে বলেন ।
তোমরা অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে এখন এই শিক্ষা পাচ্ছো । তিনিই হলেন সৃষ্টির রচয়িতা।
তিনিই এই পতিত সৃষ্টিকে পবিত্র করেন । মানুষ ডাকতেও থাকে যে - হে পতিত - পাবন এসো,
তাই সবার প্রথমে তাঁর পরিচয়ই দিতে হবে । ওই পরমপিতা পরমাত্মার সঙ্গে তোমাদের কি
সম্বন্ধ ? তিনি হলেনই সত্য । তিনি নর থেকে নারায়ণ হওয়ার সত্য জ্ঞান দান করেন ।
বাচ্চারা জানে যে, বাবা হলেন সত্য, বাবাই সত্যখণ্ড তৈরী করেন । তোমরা নর থেকে
নারায়ণ হওয়ার জন্য এখানে আসো । ব্যরিস্টারের কাছে গেলে মনে করবে, আমরা এখানে
ব্যারিস্টার হতে এসেছি । এখন তোমাদের এই নিশ্চয় আছে যে, আমাদের ভগবান পড়ান । কেউ
কেউ এটা নিশ্চিত করে, আবার সংশয় বুদ্ধির হয়ে যায়, তখন তাকে অন্য লোকেরা বলে - তুমি
তো বলতে যে, ভগবান পড়ান, তাহলে ভগবানকে ছেড়ে কেন চলে এসেছো ? সংশয় এলেই ভাগন্তী হয়ে
যায় । তখন কোনো না কোনো বিকর্ম করে ফেলে । ভগবান উবাচঃ হলো - কাম মহাশত্রু, একে জয়
করলেই তোমরা জগৎজিৎ হতে পারবে । যারা পবিত্র হবে, তারাই পবিত্র দুনিয়াতে যেতে পারবে
। এখানে হলো রাজযোগের কথা । তোমরা ওখানে গিয়ে রাজত্ব করবে । বাকি যে আত্মারা আছে,
তারা নিজের - নিজের হিসেব - নিকেশ শোধ করে নিজের ঘরে ফিরে যাবে । এ হলো শেষ সময় ।
এখন বুদ্ধি বলে যে, সত্যযুগের স্থাপনা অবশ্যই হবে । সত্যযুগকেই পবিত্র দুনিয়া বলা
হয় । বাকি সবাই মুক্তিধামে চলে যাবে । ওদের আবার নিজেদের পার্ট রিপিট করতে হবে ।
তোমরাও নিজের পুরুষার্থ করতে থাকো পবিত্র হয়ে পবিত্র দুনিয়ার মালিক হওয়ার জন্য ।
সবাই তো নিজেকে মালিক মনে করবে, তাই না । ওখানে প্রজাও মালিক । এখন যেমন প্রজাও বলে
- আমাদের ভারত । অনেক বড় বড় মানুষ, এমনকি সন্ন্যাসীরাও বলে - আমাদের ভারত । তোমরা
বুঝতে পারো যে, এই সময় ভারতে সবাই নরকবাসী । এখন আমরা স্বর্গবাসী হওয়ার জন্য এই
রাজযোগ শিখছি । সবাই তো আর স্বর্গবাসী হবে না । এই জ্ঞান তোমাদের এখন হয়েছে । ওরা
যা শোনায়, তা হলো শাস্ত্র । ওরা হলো শাস্ত্রের অথরিটি । বাবা বলেন যে, এই
ভক্তিমার্গের বেদ শাস্ত্র ইত্যাদি পড়ে সিঁড়ি নীচে নেমে আসে । এ সবই হলো ভক্তিমার্গ
। বাবা বলেন, যখন ভক্তিমার্গ সম্পূর্ণ হবে, তখনই আমি আসবো । আমাকে এসেই সকল ভক্তদের
ভক্তির ফল প্রদান করতে হয়। মেজরিটি তো হল ভক্তদেরই । সবাই তো ডাকতে থাকে - হে গড
ফাদার । ভক্তদের মুখ থেকে - ও গড ফাদার, হে ভগবান, অবশ্যই বের হবে । এখন ভক্তি আর
জ্ঞানে তো তফাৎ আছে । তোমাদের মুখ থেকে কখনোই হে ঈশ্বর, হে ভগবান, এই শব্দ গুলি বের
হবে না । মানুষের তো অর্ধেক কল্প ধরে এই অভ্যাস হয়ে গেছে । তোমরা জানো যে, তিনি তো
আমাদের বাবা, তোমাদের 'হে বাবা' বলতেই হবে না । বাবার থেকে তো তোমাদের উত্তরাধিকার
নিতে হবে । প্রথমে তো একথা নিশ্চিত যে, আমরা বাবার থেকে উত্তরাধিকার গ্রহণ করি ।
বাবা বাচ্চাদের উত্তরাধিকারী করার অধিকারী করেন । তিনি তো প্রকৃত বাবা, তাই না ।
বাবা জানেন - এরা আমার সন্তান, যাদের আমি জ্ঞান অমৃত পান করিয়ে, জ্ঞান চিতায় বসিয়ে
ঘোর নিদ্রা থেকে জাগিয়ে স্বর্গে নিয়ে যাই । বাবা বুঝিয়েছেন - আত্মারা ওখানে
শান্তিধাম আর সুখধামে থাকে । সুখধামকে নির্বিকারী দুনিয়া বলা হয় । দেবতারা তো
সম্পূর্ণ নির্বিকারী, তাই না । আর শান্তিধাম হলো সুইট হোম । তোমরা এখন জেনে গেছো
যে, ওই শান্তিধাম হলো আমাদের ঘর, আমরা অভিনেতারা শান্তিধাম থেকে এখানে অভিনয় করতে
আসি । আমরা আত্মারা এখানকার অধিবাসী নই । জাগতিক অভিনেতারা এখানকার অধিবাসী । তারা
কেবল ঘরে এসে পোশাক পরিবর্তন করে অভিনয় করে । তোমরা তো বুঝতে পারো যে, আমাদের ঘর হলো
শান্তিধাম, ওখানে আমরা আবার ফিরে যাই । সমস্ত অভিনেতারা যখন স্টেজে এসে যাবে, তখন
বাবা এসে সবাইকে নিয়ে যাবেন, তাই তাঁকে উদ্ধারকর্তা বা গাইডও বলা হয় । দুঃখহর্তা
- সুখকর্তা যখন আছেন, তখন এতো সব মানুষ কোথায় যাবে । তোমরা চিন্তা করে দেখো - পতিত
- পাবনকে ডাকা হয় । কি কারণে ? নিজেদের মৃত্যুর জন্য, কারণ এই দুঃখের দুনিয়ায় থাকতে
চায় না, তাই বাবাকে বলে, ঘরে নিয়ে চলো । এরা সব মুক্তিকেই মানে । ভারতের প্রাচীন
রাজযোগও কতো বিখ্যাত । মানুষ বিদেশেও যায় প্রাচীন রাজযোগ শেখাতে । বাস্তবে হঠযোগীরা
তো রাজযোগ জানে না । তাদের যোগ হলো ভুল, তাই তোমাদের গিয়ে প্রকৃত রাজযোগ শেখাতে হবে
। মানুষ সন্ন্যাসীদের কৌপীন দেখে তাঁদের কতো সম্মান করে । বৌদ্ধ ধর্মের
সন্ন্যাসীদেরও তাঁদের কৌপীন দেখে সম্মান প্রদর্শন করে । সন্ন্যাসীরা তো পরে আসেন ।
বৌদ্ধ ধর্মেও প্রথম দিকে কোনো সন্ন্যাসী ছিলেন না । বৌদ্ধ ধর্মেও যখন পাপ বৃদ্ধি
পায়, তখন সন্ন্যাস ধর্ম স্থাপন হয় । শুরুতে তো ওই আত্মা উপর থেকে আসে । তারপর তাঁর
অনুসরণকারীরা আসে । শুরুতে সন্ন্যাস শিখিয়ে কি করবে ? সন্ন্যাস তো পরে হয় । এও
তারা এখান থেকেই কপি করে । খ্রীস্টানদের মধ্যেও অনেকেই আছে, যারা সন্ন্যাসীদের
সম্মান করে । গেরুয়া পোশাক হলো হঠযোগীদের । তোমাদের তো আর গৃহত্যাগ করতে হবে না, না
আছে তোমাদের সাদা কাপড়ের বন্ধন, কিন্তু সাদা খুবই ভালো । তোমরা ভাট্টিতে থাকলে
তোমাদের এই পোশাকই থাকবে । আজকাল সাদা পোশাক অনেকেই পছন্দ করে । মানুষ মারা গেলেও
সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয় । তোমরাও এখন জীবন্মৃত হয়েছো, তাই সাদা পোশাকই ভালো
।
তাই প্রথমে যে কোনো কাউকে বাবার পরিচয় দান করতে হবে । বাবা দুইজন, একথা বুঝতে সময়
নেয় । প্রদর্শনীতে এতো বুঝতে পারবে না । সত্যযুগে থাকে একজন বাবা । এইসময় তোমাদের
তিনজন বাবা, কেননা ভগবান প্রজাপিতা ব্রহ্মার শরীরে আসেন, তিনিও তো সকলের বাবা ।
লৌকিক বাবাও আছে । আচ্ছা, এখন এই তিন বাবার থেকে বেশী উঁচু উত্তরাধিকার কার ?
নিরাকার বাবা কিভাবে উত্তরাধিকার দেবেন । তিনি এই উত্তরাধিকার দেন ব্রহ্মার দ্বারা
। এই চিত্রের উপর তোমরা খুব ভালোভাবে বোঝাতে পারো । শিববাবা হলেন নিরাকার, আর এই
প্রজাপিতা ব্রহ্মা হলেন আদিদেব, গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার । শিববাবা বলেন, আমাকে
তোমরা গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার বলবে না । আমি হলাম সকলের বাবা । ইনি হলেন
প্রজাপিতা ব্রহ্মা । তোমরা হলে সবাই ভাই - বোন । যদিও স্ত্রী - পুরুষ, তবুও বুদ্ধির
দ্বারা জানো আমরা সবাই ভাই - বোন । আমরা বাবার থেকে উত্তরাধিকার গ্রহণ করি । ভাই -
বোন নিজেদের মধ্যে দোষ - দৃষ্টি রাখতে পারে না । যদি দুইজনের মধ্যে বিকারী দৃষ্টি
আকর্ষণ করে, তখনই নেমে যায় । বাবাকেও ভুলে যায় । বাবা বলেন - তোমরা আমার সন্তান
হয়ে আবার মুখে কালিমা লিপ্ত করে ফেলো। অসীম জগতের বাবা বসে বাচ্চাদের বোঝান ।
তোমাদের এই নেশা চড়ে আছে । তোমরা জানো যে, আমাদের গৃহস্থ জীবনেও থাকতে হবে । লৌকিক
সম্বন্ধীদেরও কর্তব্য পালন করতে হবে নির্লিপ্ত, নিমিত্ত হয়ে । লৌকিক বাবাকে তো
তোমরা বাবাই বলবে, তাই না । তাকে তো তোমরা ভাই বলতে পারো না । সাধারণ ভাবে তোমরা
বাবাকে তো বাবাই বলবে । তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে, ইনি আমাদের লৌকিক বাবা । জ্ঞান তো
আছে, তাই না । এই জ্ঞান বড় বিচিত্র । আজকাল তো বাবার নামও নিয়ে নেয়, কিন্তু ভিজিটর
ইত্যাদি বাইরের লোকের সামনে ভাই বলে দিলে তারা মনে করবে এর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।
এতে অনেক বড় বুদ্ধির প্রয়োজন । তোমাদের জ্ঞান হলো গুপ্ত । তোমাদের সম্বন্ধও গুপ্ত ।
এতে অনেক বুদ্ধির সাথে চলতে হবে, কিন্তু একে অপরকে সম্মান দেওয়া খুব প্রয়োজন ।
লৌকিক জীবনে ডিট্যাচ হয়ে সম্বন্ধে কর্তব্য পালন করতে হবে বুদ্ধির দ্বারা । আমরা
বাবার থেকে উত্তরাধিকার গ্রহণ করছি । বাকি কাকাকে কাকা আর বাবাকে বাবাই বলতে হবে ।
যারা বি.কে হয় নি, তারা এই ভাই - বোন বুঝতে পারবে না । যারা ব্রহ্মাকুমার - কুমারী
হয়েছে, তারাই এই কথা বুঝতে পারবে । বাইরের লোকেরা তো প্রথমে শুনে চমকে যাবে । এতে
বোঝার মতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন । বাবা তোমাদের মতো বাচ্চাদের বিশাল বুদ্ধির
বানান । তোমরা প্রথমে জাগতিক বুদ্ধির ছিলে । এখন এই বুদ্ধি হয়েছে অসীম জগতের । ওই
বাবা হলেন আমাদের অসীম জগতের বাবা । এই সব আত্মারা আমাদের ভাই - বোন । বাকি
সম্বন্ধতে তো বউকে বউ, শাশুড়িকে শাশুড়িই বলবে, বোন তো আর বলবে না, তা সে দু'জনে
একসঙ্গে এলেও । ঘরে থেকেও খুব বুদ্ধির সাথে চলতে হবে । মানুষের কথাকেও ভাবতে হবে ।
না হলে ওরা বলবে এরা পতিকে ভাই, শাশুড়িকে বোন বলে দেয়, এখানে কি শেখানো হয় ! এই
জ্ঞানের কথা তো তোমরাই জানো, আর কেউই জানে না । বলা হয় - তোমার গতি - মতি তোমরাই
জানো । এখন তোমরা যখন তাঁর সন্তান হয়েছো, তখন তোমাদের গতি - মতিও তোমরাই জানো ।
তোমাদের খুব সাবধানে চলতে হয় । কোথাও যেন কেউ বিভ্রান্ত না হয়ে যায় । তাই
বাচ্চারা, প্রদর্শনীতেও তোমাদের সবার প্রথমে এটাই বোঝাতে হবে যে, আমাদের ভগবান পড়ান
। এখন বলো তিনি কে ? নিরাকার শিব, নাকি শ্রীকৃষ্ণ । শিবজয়ন্তীর পরে কৃষ্ণজয়ন্তী আসে,
কেননা বাবা রাজযোগ শেখান । বাচ্চাদের বুদ্ধিতে এই কথা এসেছে । যতক্ষণ শিব পরমাত্মা
আসবেন না, ততক্ষণ শিবজয়ন্তী পালন করা যায় না । যতক্ষণ শিব এসে কৃষ্ণপুরী স্থাপন না
করছে, ততক্ষণ কৃষ্ণজয়ন্তীও কি করে পালন করা যাবে ? কৃষ্ণের জন্ম তো পালন করে কিন্তু
বুঝতেই পারে না । কৃষ্ণ প্রিন্স ছিলেন, তাহলে অবশ্যই সত্যযুগে প্রিন্স ছিলেন, তাই
না । দেবী - দেবতাদের রাজধানী থাকবে । কেবলমাত্র একজন কৃষ্ণ তো আর বাদশাহী পাবে না
। অবশ্যই তো কৃষ্ণপুরী থাকবে, তাই না । বলাও হয় ও হলো কৃষ্ণপুরী, আর এ হলো কংসপুরী
। কংসপুরী শেষ হলেই কৃষ্ণপুরী স্থাপন হবে, তাই না । এ ভারতেই হয় । নতুন দুনিয়াতে
তো এই কংস আদি থাকতেই পারে না । কলিযুগকে কংসপুরী বলা হয় । এখানে তো দেখো কতো
মানুষ । সত্যযুগে অল্পই থাকে । দেবতারা কোনো লড়াই করেন নি । কৃষ্ণপুরী বলো অথবা
বিষ্ণুপুরীই বলো, দৈবী সম্প্রদায়ই বলো অথবা আসুরী সম্প্রদায়, সব এখানেই । বাকি না
দেবতাদের আর অসুরদের লড়াই হয়েছিলো, আর না কৌরব - পাণ্ডবদের লড়াই হয়েছিলো । তোমরা
রাবণকে জয় করো । বাবা বলেন যে, তোমরা এই পাঁচ বিকারকে জয় করো, তাহলেই তোমরা জগৎজিৎ
হয়ে যাবে, এতে কোনো লড়াই করতে হবে না । লড়াইয়ের নাম করলে তো হিংসা হয়ে যাবে ।
রাবণকে জয় করতে হবে কিন্তু তা অহিংসার সঙ্গে । কেবলমাত্র বাবাকে স্মরণ করলে আমাদের
বিকর্ম বিনাশ হয় । এখানে লড়াই ইত্যাদির কোনো কথা নেই । বাবা বলেন যে, তোমরা
তমোপ্রধান হয়ে গেছো, এখন আবার তোমাদের সতোপ্রধান হতে হবে । ভারতের প্রাচীন রাজযোগ
বিখ্যাত । বাবা বলেন যে, তোমরা আমার সঙ্গে বুদ্ধির যোগ লাগাও, তাহলেই তোমাদের পাপ
ভস্ম হবে । বাবা হলেন পতিত -পাবন, তাঁর সঙ্গে বুদ্ধির যোগ লাগাতে হবে, তখনই তোমরা
পতিত থেকে পবিত্র হয়ে যাবে । এখন প্রত্যক্ষ ভাবে তোমরা তাঁর সঙ্গে যোগ লাগাচ্ছো,
এখানে লড়াইয়ের কোনো কথা নেই । যারা খুব ভালোভাবে পড়বে আর বাবার সঙ্গে যোগ লাগাবে,
তারাই বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করবে । আচ্ছা ।
মিষ্টি - মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা - পিতা, বাপদাদার স্মরণের
স্নেহ-সুমন আর ভালোবাসা এবং সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে
জানাচ্ছেন ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
ভাই - ভাইয়ের দৃষ্টির অভ্যাস করে লৌকিক বন্ধন থেকে ডিটাচ হয়ে কর্তব্য পালন করতে হবে
। অনেক বুদ্ধি করে চলতে হবে । একদমই বিকারী দৃষ্টি হওয়া উচিত নয় । এই শেষ সময়
সম্পূর্ণ পবিত্র হতে হবে ।
২ ) বাবার থেকে সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার নেওয়ার জন্য খুব ভালোভাবে পড়তে হবে, আর পতিত -
পাবন বাবার সঙ্গে যোগযুক্ত হয়ে পবিত্র হতে হবে ।
বরদান:-
দুর্বলতাকে ফুলস্টপ দিয়ে নিজের সম্পন্ন স্বরূপকে প্রত্যক্ষ করানো সাক্ষাৎকার মূর্তি
ভব
বিশ্ব তোমাদের কল্প
পূর্বের সম্পন্ন স্বরূপ, পূজ্য স্বরূপের জপ করছে, তাই নিজের সম্পন্ন স্বরূপকে
প্রত্যক্ষভাবে প্রখ্যাত করো । অতীতের দুর্বলতাকে ফুলস্টপ লাগাও, দৃঢ় সঙ্কল্পের
দ্বারা পুরানো স্বভাব - সংস্কারক সমাপ্ত করো, অন্যের দুর্বলতার অনুকরণ ক'রো না,
অপগুণ ধারণ করার বুদ্ধিকে নাশ করো, দিব্যগুণ ধারণকারী সতোপ্রধান বুদ্ধি ধারণ করো,
তখনই সাক্ষাৎকার মূর্তি হতে পারবে ।
স্লোগান:-
নিজের
অনাদি এবং আদি গুণকে স্মৃতিতে রেখে তাকে স্বরূপে আনো ।