21-03-2021 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
22-11-87 মধুবন
"সহায়-সাগর থেকে পদমগুন সহায়তা নেওয়ার বিধি"
আজ বাপদাদা চারিদিকে নিজের সাহসী বাচ্চাদের দেখছেন l শুরু
থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক ব্রাহ্মণ আত্মা মানসিক দৃঢ়তার আধারে বাপদাদার সহায়তার
পাত্র হয়েছে এবং 'সাহসী বাচ্চা, সহায় বাবা' - এই বরদান অনুসারে পুরুষার্থে নম্বর
অনুক্রমে তারা এগিয়ে যাচ্ছে l বাচ্চাদের এক কদমের সাহস আর বাবার পদম্ কদমের সহায়তা
প্রত্যেক বাচ্চার প্রাপ্ত হয়, কারণ বাপদাদার এটা প্রতিজ্ঞা বলো, বা অবিনাশী
উত্তরাধিকার, তা' সকল বাচ্চার জন্য এবং এই শ্রেষ্ঠ সহজ প্রাপ্তির কারণেই ৬৩ জন্মের
নির্বল আত্মারা বলবান হয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে l ব্রাহ্মণ জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই
কোন সাহসিকতা তোমরা প্রথম ধারণ করেছ ? প্রথমে ছিল আত্মপ্রত্যয় (হিম্মত), তোমরা
অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছ, পবিত্রতার বিশেষত্ব ধারণ করেছ l মনোবল (হিম্মত) দ্বারা
দৃঢ় সঙ্কল্প করেছ, আমাদের পবিত্র হতেই হবে, আর বাবা তোমাদের পদমগুন সহায়তা প্রদান
করেছেন - তোমরা আত্মারা ছিলে অনাদি-আদি পবিত্র, অনেকবার পবিত্র হয়েছ আর হতেও থাকবে
l কোনও নতুন ব্যাপার নয় l অনেকবারের শ্রেষ্ঠ স্থিতিকে আরও একবার শুধু রিপিট করছ l
এখনও তোমরা সব পবিত্র আত্মার ভক্তরা তোমাদের জড়-চিত্রের সামনে পবিত্রতার শক্তি চাইতে
থাকে, তোমাদের পবিত্রতার গীত গাইতে থাকে l সেইসঙ্গে তোমাদের পবিত্রতার লক্ষণ হিসেবে
তারা তোমাদের প্রত্যেক পূজ্য আত্মার উপরে এক লাইটের তাজ তথা জ্যোতির্বলয় দেখায় !
এইরকম স্মৃতি দ্বারা তিনি তোমাদের শক্তিশালী বানিয়েছেন অর্থাৎ বাবার সহায়তায় তোমরা
নির্বল থেকে বলবান হয়েছ l এত বলবান হয়েছ যে বিশ্বের সামনে এই চ্যালেঞ্জ করার
নিমিত্ত হয়েছ, আমরা বিশ্বকে অবশ্যই পবিত্র বানিয়ে দেখাব ! নির্বল থেকে এত বলবান
হয়েছ যে দ্বাপরের ঋষি-মুনি মহান আত্মারা যে বিষয়কে সবসময় খন্ডিত করেছে যে
প্রবৃত্তিতে থেকে পবিত্র থাকা অসম্ভব এবং আজকালকার সময় অনুসারে স্বয়ং নিজেদের জন্যও
কঠিন মনে করে, সেখানে তোমরা তাদের সামনে স্বাভাবিকভাবেই (ন্যাচারাল ভাবে) বর্ণন করো
যে এতো আত্মার অনাদি, আদি নিজরূপ, এর মধ্যে কঠিন কী আছে ! একেই বলে, সাহসী বাচ্চা,
বাবা সহায় l অসম্ভব, সহজ অনুভব হয়েছে এবং হচ্ছে l তারা যতই অসম্ভব বলে, ততই তোমরা
অতি সহজ বলো l সুতরাং বাবা নলেজের শক্তির সহায়তা আর স্মরণ দ্বারা আত্মার পবিত্র
স্থিতির অনুভূতির শক্তির সহায়তা প্রদান করে তোমাদের পরিবর্তন করে নিয়েছেন l এটাই
আত্মপ্রত্যয়, (হিম্মত) প্রথম কদম এবং বাবার পদমগুন সহায়তা l
সে'রকমভাবে, মায়াজিত হওয়ার ক্ষেত্রেও, যতই মায়া আঘাত করতে আসুক, আদি থেকে এখনো
ভিন্ন ভিন্ন রূপে আসছে, কখনো রয়্যাল রূপে আসে, কখনো খ্যাতির রূপে আসে, কখনো আসে
গুপ্ত রূপে আর কখনো আর্টিফিশিয়াল ঈশ্বরীয় রূপে আসে l ৬৩ জন্ম মায়ার সাথী হয়ে থেকেছ
l এইরকম জবরদস্ত সাথীকে ছেড়ে দেওয়াও কঠিন হয়, সেইজন্য বিভিন্ন রূপে সেও জোরজার ঝটকা
দেয় আর এখানে তোমরা জোরদার l এত আঘাত হওয়া সত্ত্বেও যারা সাহসী বাচ্চা, বাবার
পদমগুন সহায়তা নেওয়ার যোগ্য পাত্র, তারা এই সহায়তার কারণে মায়ার আঘাতকে চ্যালেঞ্জ
করে বলে, তোমার কাজ আসা আর আমাদের কাজ বিজয় প্রাপ্ত করা l যেকোন আঘাতকেই তোমরা খেলা
মনে করো, মায়ার ব্যাঘ্ররূপকে তোমরা পিঁপড়ে মনে করো l কারণ তোমরা জানো যে এটা মায়ার
রাজ্য এখন সমাপ্ত হতে চলেছে আর অনেকবারের আমরা বিজয়ী আত্মাদের বিজয় শতকরা একশ' ভাগ
নিশ্চিত, সেইজন্য এই 'নিশ্চিত'-এর নেশা বাবার থেকে পদমগুন সহায়তার অধিকার প্রাপ্ত
করায় l সুতরাং যেখানে সাহসী বাচ্চা সর্বশক্তিমান বাবা সহায়, সেখানে অসম্ভবকে সম্ভব
করা কিম্বা মায়াকে, বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করা কোনও বড় বিষয় নয় l এইরকমই তো মনে করো,
তাই না ?
বাপদাদা এই রেজাল্ট দেখছিলেন যে আদি থেকে এখন পর্যন্ত সব বাচ্চা আত্মবিশ্বাসের (হিম্মত)
আধারে সহায়তা নেওয়ার সুযোগ্য হয়ে, সহজ পুরুষার্থী হয়ে কতখানি এগিয়েছে, কতদূর পৌঁছেছে
! তাহলে কী দেখেছেন ? বাবার সহায়তা অর্থাৎ দাতার উপহার, বরদাতার বরদান তো সাগরের
সমান l কিন্তু সাগরের থেকে নিয়ে কিছু বাচ্চা তো সাগর সমান ভরপুর হয়ে অন্যদেরও
সে'রকম বানাচ্ছে, অথচ অন্য কিছু বাচ্চা সহায়তা নেওয়ার বিধি না জানার কারণে সহায়তা
নেওয়ার বদলে কখনো কখনো নিজেদের পরিশ্রমে তীব্রগতি হওয়ার খেলায় আর কখনো কখনো
নিরুৎসাহিত হওয়ায় সংশয়াপন্ন হয়ে যাচ্ছে l অন্য কিছু বাচ্চা কখনো সহায়তা নেয় আর কখনো
তাদের পরিশ্রমে থাকতে হয় ! বহু সময়ই তারা সহায়তা নেয়, কিন্তু কোথাও কোথাও অমনোযোগী
হওয়ার কারণে সহায়তা নেওয়ার বিধি তারা নিজেদের প্রয়োজনের সময় ভুলে যায় এবং মনোবল
বজায় রাখার পরিবর্তে বেখেয়ালে অভিমান বশে ভাবে যে তারা তো সদাই পবিত্র, বাবা তাদের
সহায়তা করবেন না তো কা'কে করবেন, বাবা বেঁধে আছেন ! এই অভিমানের কারণে আত্মপ্রত্যয়
দ্বারা সহায়তা নেওয়ার বিধি তারা ভুলে যায় l অযথা গর্বিত হওয়ার অভিমান এবং নিজের
প্রতি অ্যাটেনশন না দেওয়ার অভিমান সাহায্য নেওয়া থেকে তাদের বঞ্চিত করে দেয় l মনে
করে, তারা অনেক যোগ লাগিয়েছে, এখন তারা 'জ্ঞানী তু আত্মাও হয়ে গেছে, যোগী তু আত্মাও
হয়ে গেছে, সুপরিচিত সেবাধারীও হয়ে গেছে, সেন্টার্স ইনচার্জও হয়ে গেছে, সেবার
রাজধানীও তৈরি হয়ে গেছে, প্রকৃতিও সেবা যোগ্য হয়েছে, তারা আরামে জীবন কাটাচ্ছে l'
এগুলো সবই অ্যাটেনশন রাখায় অমনোযোগী ভাব l অতএব, যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাক, ততদিন
পর্যন্ত পঠন-পাঠন এবং সম্পূৰ্ণ হওয়ার অ্যাটেনশন এবং অসীম জগতের বৈরাগ্য বৃত্তির
ক্ষেত্রে তোমাদের যে অ্যাটেনশন দিতে হবে, তা' তোমরা ভুলে যাও l ব্রহ্মা বাবাকে তোমরা
দেখেছ, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁর অন্তিম, সম্পূৰ্ণ কর্মাতীত স্থিতিতে পৌঁছেছেন, তিনি
নিজের প্রতি এবং সেবাতে, অসীম জগতের বৈরাগ্য বৃত্তিতে স্টুডেন্ট লাইফের রীতিতে
অ্যাটেনশন দিয়ে নিমিত্ত হয়ে দেখিয়েছেন, সেইজন্য আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কঠিন কর্ম
সম্পাদনের সাহস বজায় রেখেছেন, সাহস দেওয়ার নিমিত্ত হয়েছেন l সুতরাং তিনি বাবার
সহায়তার নম্বর ওয়ান পাত্র হয়ে নম্বর ওয়ান প্রাপ্তি-লব্ধ হয়েছেন l ভবিষ্যৎ নিশ্চিত
হওয়া সত্ত্বেও অমনোযোগী হননি l সদা নিজের তীব্র পুরুষার্থের অনুভব অন্ত পর্যন্ত
বাচ্চাদের শুনিয়ে গেছেন l সহায়-সাগরে এমনভাবে সমাহিত হয়েছেন যে এখনও অব্যক্ত রূপে
বাবা সমান তিনি সব বাচ্চার সহায়ক l একেই বলে, এক কদমের সাহস আর পদমগুন সহায়তার
যোগ্য হওয়া l
তাইতো বাপদাদা দেখছিলেন যে কোনো কোনো বাচ্চা সহায়তার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সহায়তা
থেকে বঞ্চিত থেকে যায়, কেন ? এর কারণ বাবা শুনিয়েছেন, মানসিক শক্তির বিধি ভুলে
যাওয়ার কারণে অভিমান হয়, অর্থাৎ অমনোযোগ আর নিজের উপরে অ্যাটেনশনের অভাব l বিধি
যথার্থ না হ'লে বরদান থেকে তোমরা বঞ্চিত হয়ে যাও l সাগরের বাচ্চা হয়েও ছোট ছোট
জলাশয়ে পরিণত হও l জলাশয়ে জল যেমন বদ্ধ হয়ে থাকে, ঠিক সে'রকমই তারা তাদের
পুরুষার্থের মাঝেই নিশ্চল হয়ে যায়, সেইজন্য কখনো পরিশ্রম, আর কখনো খেয়াল-খুশিতে থাকে
l আজ যদি খুব আনন্দে আছে, তো কাল দেখ ছোট পাথর সরানোর কারণে পরিশ্রমে লেগে আছে l
পাহাড়ও নয়, ছোট পাথর ! হচ্ছে মহাবীর পাণ্ডব সেনা, অথচ ছোট কাঁকর-পাথরও পাহাড় হয়ে
যায় l সেই পরিশ্রমেই লেগে যায় l তারপরে খুব হাসায় l যদি কেউ তাদের বলে এতো খুব ছোট
কাঁকর, তাহলে হাসির কথা কী বলে ? 'তুমি কী বুঝবে ! তোমার সামনে এলে তবে তো বুঝবে !
বাবাকে বলে - আপনি তো নিজেই নিরাকার, আপনিই বা কী বুঝবেন !ব্রহ্মা বাবাকেও বলে,
আপনার তো বাবার লিফ্ট আছে, আপনি কী জানবেন !' খুব ভালো ভালো কথা বলে l কিন্তু এর
কারণ একটা ছোট ভুল l সাহসী বাচ্চা, বাবা সহায় - এর গূঢ়ার্থকে ভুলে যায় l ড্রামাতে
কর্মের এ এক গুহ্য গতি l সাহসী বাচ্চার ঈশ্বর সহায় l যদি তা' বিধি নিয়মে না হতো
তাহলে সবাই বিশ্বের প্রথম রাজা হয়ে যেত l একই সময়ে সবাই সিংহাসনে বসবে কি ? নম্বর
অনুক্রমে হওয়ার নিয়ম এই বিধির কারণেই হয় l নয়তো, সবাই বাবাকে অভিযোগ করবে
ব্রহ্মাকেই কেন প্রথম নম্বর বানিয়েছেন, আমাকেও তো বানাতে পারতেন ! সেইজন্য ঈশ্বরীয়
এই বিধান ড্রামা অনুসারে হয়েছে l নিমিত্ত মাত্র এই বিধান আগে থেকেই লেখা হয়ে আছে যে
এক কদম মানসিক ইচ্ছার তথা আত্মিক ইচ্ছার, আর পদ্ম কদম সহায়তার l সহায়-সাগর হওয়া
সত্ত্বেও বিধানকর্তার এই বিধি ড্রামা অনুসারে লিপিবদ্ধ হয়েছে l সুতরাং যতটা সম্ভব
আত্মবিশ্বাস বজায় রাখো আর সহায়তা নাও l এতে বাবা কোনো অভাব রাখেন না l তা' সে এক
বছরের বাচ্চা হোক,বা পঞ্চাশ বছরের হোক, সারেন্ডার (সমর্পিত) হোক, বা গৃহস্থ হোক -
অধিকার সমান l যতই হোক, বিধির দ্বারা প্রাপ্তি l সুতরাং ঈশ্বরীয় বিধান বুঝেছ তোমরা,
তাই না ?
তোমাদের মনোবল খুব ভালোভাবে বজায় রেখেছ l এখান পর্যন্ত পৌঁছানোর ইচ্ছাশক্তিও জাগিয়ে
রেখেছ, তবেই তো এখানে পৌঁছেছ, তাই না ! বাবার হয়েছ, এক্ষেত্রেও মনোবল কায়েম রেখেছ,
তবেই হয়েছ l সদা আত্মপ্রত্যয়ের বিধিতে সহায়তার পাত্র হয়ে চলা আর কখনো কখনো বিধি
দ্বারা সিদ্ধিপ্রাপ্ত করা - এতে ফারাক হয়ে যায় l সদা প্রতি কদমে সাহসিকতার সাথে
সহায়তার যোগ্য হয়ে নম্বর ওয়ান হওয়ার লক্ষ্য প্রাপ্ত করো l ব্রহ্মা একা নম্বর ওয়ান
হবেন, কিন্তু ফার্স্ট ডিভিশনে তো সংখ্যা অনেক, সেইজন্য বাবা নম্বর ওয়ান বলেন l
বুঝেছ ? ফার্স্ট ডিভিশনে তোমরা তো আসতে পারো, পারো না ? একেই বলে, নম্বর ওয়ানে আসা
l অন্য কোনো সময়ে বাবা বাচ্চাদের অমনোযোগী হওয়ার কার্যকলাপ (লীলা) সম্বন্ধে বলবেন l
খুব ভালোই লীলা করে ! বাপদাদা তো সদা বাচ্চাদের লীলা দেখতে থাকেন l কখনো তীব্র
পুরুষার্থের দিব্য লীলাও দেখেন কখনো অমনোযোগীর কৌতুকপ্রদ লীলাও দেখেন l আচ্ছা l
যারা কর্ণাটক থেকে তাদের বিশেষত্ব কি ? প্রতিটা জোনের নিজ নিজ বিশেষত্ব আছে l
কর্ণাটক থেকে আগত তোমাদের নিজেদের খুব ভালো ভাষা আছে - ভাবনার ভাষায় তোমরা সজাগ l
এমনিতে তো হিন্দি কম বুঝতে পারে, কিন্তু কর্ণাটকের বিশেষত্ব ভাবনার ভাষায় তারা
নম্বর ওয়ান, সেইজন্য ভাবনার ফল সদা লাভ করো, তোমরা অন্য কিছু হয়তো বলো না, কিন্তু
সদা বাবা বাবা বলতে থাকো l ভাবনার এই শ্রেষ্ঠ ভাষা তোমরা জানো l ধরিত্রীই তো ভাবনার,
তাই না ! আচ্ছা l
চারিদিকের অসমসাহসী বাচ্চাদের, সদা বাবার সহায়তা প্রাপ্তকারী যোগ্য আত্মাদের, সদা
কর্তব্য-নির্দেশ (বিধান) জেনে বিধি দ্বারা সিদ্ধি প্রাপ্তকারী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, সদা
ব্রহ্মা বাবা সমান অন্ত পর্যন্ত পঠন-পাঠন আর পুরুষার্থের বিধিতে চলে, বাবা সমান
শ্রেষ্ঠ, মহান বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
পাটিদের সাথে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার
১) নিজেদের ডবল লাইট ফরিস্তা অনুভব করো ? ডবল লাইট স্থিতি ফরিস্তা ভাবের স্থিতি l
ফরিস্তা অর্থাৎ লাইট l যখন বাবার হয়ে গেছ তো সমস্ত বোঝা বাবাকেই তো দিয়ে দিয়েছ, তাই
না ? যখন বোঝা দেওয়া হয়ে গেছে তখন তো ফরিস্তা হয়েই গেছ l বাবা এসেছেনই বোঝা সমাপ্ত
করার জন্য l তাহলে বাবা যখন বোঝা সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা সবাই বোঝা সমাপ্ত করেছ,
তাইনা ? কোনো ছোট পুঁটলি লুকিয়ে রাখনি তো ? সবকিছু দিয়ে দিয়েছ, নাকি সময় সময়ের জন্য
একটু একটু রেখে দিয়েছ ? পুরানো সংস্কার অল্প অল্প আছে, নাকি সেটা শেষ হয়ে গেছে ?
পুরানো স্বভাব কিম্বা পুরানো সংস্কার, এও তো ভান্ডার, তাই না ! এটাও দিয়ে দিয়েছ ?
যদি সামান্যও থেকে থাকে তাহলে উপর থেকে নিচে নিয়ে আসবে, ফরিস্তা হয়ে উড়তি কলার
অনুভব করতে দেবে না l কখনো উঁচুতে তো কখনো নিচে এসে যাবে, সেইজন্য বাপদাদা বলেন, সব
দিয়ে দাও l এই প্রপার্টি রাবণের, তাই না ! রাবণের প্রপার্টি নিজের কাছে রাখলে দুঃখই
পাবে l ফরিস্তা অর্থাৎ রাবণের প্রপার্টি সামান্যতমও না থাকা, পুরানো স্বভাব-সংস্কার
তো ঝাঁপিয়ে পড়ে, পড়ে না ? তোমরা তো এটাই বলো যে এইরকম হোক আমি চাইনি, কিন্তু হয়ে
গেছে ! করে নাও, নাকি হয়ে যায় ! সুতরাং এর থেকেই প্রমাণ হয় যে ছোট-খাটো পুরানো
পুঁটলি নিজের কাছে রেখে দিয়েছ l ছাইপাঁশের পুঁটলি ! সুতরাং সদাসর্বদার জন্য ফরিস্তা
হওয়াই ব্রাহ্মণ জীবন l পাস্ট শেষ হয়ে গেছে, পুরানো হিসেব ভস্ম করে দিয়েছ l এখন নতুন
বিষয়, নতুন হিসেব l যদি একটুও পুরানো ঋণ থাকে তাহলে সদাই মায়ার ব্যাধি লাগতে থাকবে,
কারণ ঋণগ্রস্তকে ব্যাধিগ্রস্ত বলা হয়ে থাকে l অতএব, সমস্ত হিসেব সমাপ্ত করো l নতুন
জীবন যখন প্রাপ্ত হয়েছে তখন পুরানো সব সমাপ্ত l
২) সদা 'বাহ্ বাহ্'র গীত গাও তোমরা, তাই না ? 'হায় হায়'-এর গীত সমাপ্ত হয়ে গেছে আর
মন থেকে তোমরা 'বাহ্ বাহ্'র গীত গেয়ে যাও l
যে কোনো শ্রেষ্ঠ কর্ম যখন করো, তখন মন থেকে কী বের হয় ? বাহ্ আমার শ্রেষ্ঠ কর্ম !
অথবা বাহ্ তোমাকে, যে আমায় তুমি শ্রেষ্ঠ কর্ম করতে শিখিয়েছ ! কিম্বা বাহ্ শ্রেষ্ঠ
সময়, শ্রেষ্ঠ কর্ম করতে আমায় সমর্থ বানিয়েছ ! তাহলে তোমরা সদা 'বাহ্ বাহ্'র গীত
গাইয়ে আত্মা, তাই না ? কখনো ভুল করেও 'হায়' শব্দ বের করা উচিত নয় l কাল 'হায়
হায়'-এর গীত গাইতে আর আজ 'বাহ্ বাহ্'র গীত গাও l এতই তফাৎ হয়ে গেছে ! এই শক্তি কার
? বাবার নাকি ড্রামার ? (বাবার) বাবাও তো ড্রামার কারণে এসেছেন, তাই না ! সুতরাং
ড্রামাও শক্তিশালী l যদি ড্রামাতে পার্ট না থাকত, তবে বাবা কী করতেন ! বাবাও
শক্তিশালী আর ড্রামাও শক্তিশালী l সুতরাং উভয়ের গীত গাইতে থাকো - বাহ্ ড্রামা বাহ্
! যা তোমাদের স্বপ্নেও ছিল না, সেটাই বাস্তবে হয়ে গেছে l ঘরে বসেই সব পেয়ে গেছ l ঘরে
বসে এত ভাগ্যপ্রাপ্তি হওয়া - একেই বলে ডায়মন্ড লটারী l
৩) সঙ্গমযুগী স্বরাজ্য অধিকারী আত্মা হয়েছ ? সব কর্মেন্দ্রিয়ের উপরে আপন শাসন কায়েম
আছে ? কোনও কর্মেন্দ্রিয় প্রতারণা করে না তো ? কখনো সঙ্কল্পেও পরাজয় হয় না তো ? কখনো
ব্যর্থ সঙ্কল্প চলে ? 'স্বরাজ্য অধিকারী আত্মা'- এই নেশা আর নিশ্চয়ের সাথে সদা
শক্তিশালী হয়ে মায়াজিত তথা জগৎজিত হয়ে যাও l স্বরাজ্য অধিকারী আত্মারা সহজ যোগী,
নিরন্তর যোগী হতে পারে l স্বরাজ্য অধিকারীর নেশা আর নিশ্চয়ের সাথে অগ্রচালিত হও l
মাতারা মোহ থেকে মুক্ত হয়েছ নাকি মোহ আছে ? পাণ্ডবদের কখনো ক্রোধের লেশমাত্র
উত্তেজনা হয় ? কখনো কেউ সামান্য বিচলিত করার যদি চেষ্টা করে, তোমাদের ক্রোধ আসবে ?
সেবার চান্স যদি সামান্য কম পাও, আর অন্যরা বেশি পায়, তাহলে বোনের প্রতি সামান্য
হলেও কি
রাগ আসবে - 'ইনি কি করছেন ?' খেয়াল রেখো, পেপার আসবে কারণ সামান্যও দেহ-অভিমান যদি
আসে তখন উত্তেজনা বা ক্রোধ সহজেই এসে যায়, সেইজন্য সদা স্বরাজ্য অধিকারী অর্থাৎ
সদাই নিরাহঙ্কারী, সদাই নম্র সেবাধারী হও l মোহ-বন্ধনও শেষ l আচ্ছা l
বরদান:-
বাবা সমান নিজের প্রতিটা বোল ও কর্মের স্মরণিক বানিয়ে
হৃদয়-সিংহাসনাসীন তথা রাজ্য-সিংহাসনাসীন ভব
ঠিক যেমন বাবার থেকে যে বোলই বের হয় তা' স্মরণিক হয়ে
যায়, সে'রকমই যে বাবা সমান সে যে বোলই বলে সেটা সবার হৃদয়ে সমাহিত হয়ে যায় অর্থাৎ
স্মারকচিহ্ন থেকে যায় l সে যে আত্মার প্রতি সঙ্কল্প করে সেটা সেই আত্মার হৃদয়
স্পর্শ করে l তার বলা দু'টো কথাও হৃদয়কে আশ্বস্ত করে, তার সাথে নৈকট্যের অনুভব হয়,
সেইজন্য তাকে সবাই আপন মনে করে l এইরকম সমান বাচ্চাই হৃদয়- সিংহাসনাসীন তথা
রাজ্য-সিংহাসনাসীন হয় l
স্লোগান:-
নিজের উড়তি কলার দ্বারা সব সমস্যাকে বিনা বাধায় অতিক্রম করে উড়ন্ত বিহঙ্গ হও l