26.03.2021
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা –
দেহ-অভিমান সবথেকে খারাপ ব্যাধি, এর জন্যই অধঃপতন হয়েছে, তাই এখন দেহী অভিমানী হও”
প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা, কখন
তোমাদের কর্মাতীত হবে ?
উত্তরঃ -
যখন যোগবলের দ্বারা কর্মভোগের ওপর বিজয়ী হবে, সম্পূর্ণ দেহী-অভিমানী হবে। এই দেহের
অভিমানের ব্যাধিটাই সবথেকে খারাপ। এর কারনেই দুনিয়াটা পতিত হয়েছে। দেহী-অভিমানী হলে,
সেই খুশি আর নেশা বজায় থাকবে এবং আচার আচরণও শুধরে যাবে।
গীতঃ-
হে নিশীথের পথিক, তুমি ক্লান্ত হয়েও না…
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চারা পথিক
শব্দের অর্থ জেনেছে। তোমাদের মতো ব্রহ্মার মুখ বংশাবলী ব্রাহ্মণরা ছাড়া অন্য কেউ তো
বোঝাতে পারবে না। তোমরাই দেবী-দেবতা ছিলে। আসলে তো মানুষই ছিলে, তবে তোমাদের চরিত্র
খুব ভালো ছিল। তোমরা সর্বগুণে সম্পন্ন, ১৬ কলা সম্পূর্ণ ছিলে। তোমরা বিশ্বের মালিক
ছিলে। হীরাতুল্য থেকে কিভাবে কড়ি তুল্য হয়ে গেছে, সেই কাহিনী কোনো মানুষ জানে না।
তোমরাও পুরুষার্থের ক্রমানুসারে পরিবর্তিত হয়েছ। তবে তোমরা এখনো দেবতা হয়ে যাওনি।
পুনরায় সেইরকম হচ্ছ। কারোর খুব সামান্য পরিবর্তন হয়েছে, কারোর ৫ শতাংশ হয়েছে, কারোর
আবার ১০ শতাংশ হয়েছে…। চরিত্রের পরিবর্তন হয়। দুনিয়ার মানুষ তো জানেই না যে এই
ভারতেই স্বর্গ ছিল। বলা হয়, যীশুখ্রিস্টের জন্মের ৩ হাজার বছর আগে ভারতে
দেবী-দেবতারা ছিল। তাদের মধ্যে এমন গুণাবলী ছিল, যার কারণে তাদেরকে ভগবান-ভগবতী বলা
হয়। এখন আর সেই গুণ অবশিষ্ট নেই। যে ভারত এতো ধনী ছিল, সেই ভারতের কিভাবে অধঃপতন হল,
সেটা কোনো মানুষের বোধগম্য হয় না। সেটাও বাবা স্বয়ং বসে থেকে বোঝাচ্ছেন। তোমরাও
বোঝাতে পারো। তোমাদের চরিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। বাবা বলছেন – বাচ্চারা, তোমরা যখন
দেবী-দেবতা ছিলে তখন তোমরা আত্ম-অভিমানী ছিলে। তারপর যখন রাবণের রাজত্ব শুরু হলো
তখন দেহ-অভিমানী হয়ে গেলে। দেহ-অভিমানের এই সবথেকে খারাপ রোগে তোমরা আক্রান্ত হয়েছ।
সত্যযুগে তোমরা আত্ম-অভিমানী ছিলে, অনেক সুখী ছিলে। কে তোমাদেরকে ঐরকম বানিয়েছিলেন
? এই কথাটা কেউই জানে না। বাবা এখন বসে থেকে বোঝাচ্ছেন যে তোমাদের অধঃপতন হয়েছে।
নিজের ধর্মকেই ভুলে গেছ। সেই ভারত এখন একেবারে মূল্যহীন হয়ে গেছে। এর মূল কারণ কি ?
দেহের অভিমান। এইভাবেই এই নাটকটা বানানো আছে। মানুষ জানে না যে কিভাবে ভারত এত ধনী
থেকে গরিব হয়ে গেছে। আমরা আদি সনাতন দেবী-দেবতা ছিলাম, তারপর কিভাবে আমরা
ধর্মভ্রষ্ট এবং কর্মভ্রষ্ট হয়ে গেলাম। বাবা বোঝাচ্ছেন, রাবণের রাজত্ব শুরু হওয়ার পর
তোমরা দেহ-অভিমানী হয়েছ, তাই তোমাদের এই হাল হয়েছে। সিঁড়ির ছবিতেও দেখানো আছে যে
কিভাবে অধঃপতন হয়েছে। এইরকম মূল্যহীন হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো দেহের অভিমান। বাবা
স্বয়ং বসে থেকে এইসব বোঝাচ্ছেন। শাস্ত্রে তো কল্পের আয়ুকে লক্ষ বছর বলে দিয়েছে। এখন
খ্রিস্টানরাই সবথেকে বুদ্ধিমান। বলা হয় যীশুখ্রিস্টের জন্মের ৩ হাজার বছর আগে
প্যারাডাইস বা স্বর্গ ছিল। কিন্তু ভারতবাসীরা বুঝতেই পারে না যে ভারতকেই স্বর্গ বা
হেভেন বলা হত। এখন কেউই ভারতের সম্পূর্ণ ইতিহাস-ভূগোল জানে না। কিছু বাচ্চার মধ্যে
সামান্য জ্ঞান থাকলেই দেহের অভিমান এসে যায়। মনে করে, আমার মতো আর কেউ নেই। বাবা
বোঝাচ্ছেন যে কিভাবে ভারতের এত দুর্দশা হলো। বাপু গান্ধীজি বলত – হে পতিতপাবন, তুমি
এসে রাম রাজ্য স্থাপন করো। নিশ্চয়ই আত্মারা আগে কখনো বাবার কাছ থেকে সুখ পেয়েছিল।
সেইজন্যই পতিতপাবনকে স্মরণ করে।
বাবা বোঝাচ্ছেন, আমার যেসব বাচ্চারা শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণ হয়েছে, তারাও সম্পূর্ণ
দেহী-অভিমানী হয়ে থাকে না। মুহূর্তের মধ্যে দেহের অভিমান এসে যায়। এটাই সবথেকে
পুরাতন ব্যাধি যার কারণে আজ এই অবস্থা হয়েছে। দেহী-অভিমানী হয়ে থাকা খুবই পরিশ্রমের
কাজ। যত বেশি দেহী-অভিমানী হয়ে থাকবে, তত বাবাকে স্মরণ করবে। তখন খুব খুশিতে থাকবে।
একটা গান আছে – ব্রহ্মতত্ত্ব নিবাসী পরমেশ্বরের দেখা পাওয়ার ইচ্ছে ছিল…। এখন তাঁকেই
পেয়েছি, তাঁর কাছ থেকে ২১ জন্মের উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। আর কি চাই ! তোমরা কেবল
দেহী-অভিমানী হও আর কেবল আমাকেই ("মামেকম্") স্মরণ করো। ঘর-গৃহস্থে থাকতে চাইলে থাকো।
সমগ্র দুনিয়াটাই এখন দেহের অভিমানে ডুবে আছে। যে ভারত অত মহান ছিল, তার আজ এত
অধঃপতন হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাস-ভূগোল কেউই বলতে পারবে না। কোনো শাস্ত্রে এগুলো লিখিত
নেই। দেবতারা আত্ম-অভিমানী ছিল। তারা জানত যে একটা শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ
করতে হবে। তবে তারা পরমাত্ম-অভিমানী ছিল না। তোমরা যত বেশি বাবাকে স্মরণ করবে,
দেহী-অভিমানী হয়ে থাকবে, ততই মিষ্টি স্বভাবের হবে। দেহের অভিমান আসলেই লড়াই, ঝগড়া
ইত্যাদি বাঁদরের মতো চালচলন প্রকাশ পায়। এগুলো বাবাই বোঝাচ্ছেন। এই বাবাও (ব্রহ্মাবাবা)
বুঝছেন। দেহের অভিমান আসলে বাচ্চারা শিববাবাকে ভুলে যায়। অনেক ভালো ভালো বাচ্চারও
দেহের অভিমান থাকে, দেহী-অভিমানী হয় না। যেকোনো ব্যক্তিকেই তোমরা এই অসীম জগতের
ইতিহাস-ভূগোল বোঝাতে পারো। বরাবর সূর্যবংশের এবং চন্দ্রবংশের রাজধানী ছিল। কেউই
ড্রামার ব্যাপারে কিছু জানে না। ভারতের যে এতো অধঃপতন হয়েছে, এই ডাউন ফলের মূল কারণ
হলো দেহের অভিমান। বাচ্চাদের মধ্যেও দেহ-অভিমান এসে যায়। এটা বুঝতে পারে না যে কে
আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। সর্বদাই মনে করো যে শিববাবা বলছেন। শিববাবাকে স্মরণ না
করলেই দেহের অভিমান এসে যায়। যখন গোটা দুনিয়াই দেহ-অভিমানী হয়ে যায়, তখন বাবা বলেন
– কেবল আমাকেই স্মরণ করো এবং নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। আত্মা এই দেহের দ্বারা
শোনে, অভিনয় করে। বাবা কতো ভালো করে বোঝান। হয়তো খুব সুন্দর বক্তৃতা দিয়ে দাও,
কিন্তু তার সঙ্গে চালচলনও তো শোধরাতে হবে, তাই না ? দেহের অভিমান থাকার জন্যই ফেল
হয়ে যায়। ততটা খুশি কিংবা নেশা থাকে না। তখন তার দ্বারা বড় বড় বিকর্ম হয়ে যায়, যার
ফলে অনেক বড় শাস্তির ভাগিদার হয়ে যায়। দেহের অভিমান থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক
শাস্তি খেতে হয়। বাবা বলছেন, এটা তো ঈশ্বরীয় বিশ্ব সরকার, তাই না ? আমি ঈশ্বর এবং
ধর্মরাজ আমার ডান হাত। তোমরা ভালো কর্ম করলে তার ভালো পরিণাম পাও। খারাপ কর্ম করলে
শাস্তি খাও। গর্ভজেলেও সবাই শাস্তি খায়। এই বিষয়ে একটা গল্পও আছে। এগুলো সব এই
সময়ের কাহিনী। মহিমা তো কেবল বাবার। অন্য কারোর কোনো মহিমা নেই, তাই লেখা হয় –
ত্রিমূর্তি শিব জয়ন্তীর মূল্য হীরেতুল্য। অন্য সবকিছু কড়িতুল্য। কেবল শিববাবা ছাড়া
অন্য কেউই পবিত্র করতে পারবে না। পবিত্র হয়ে যায়, কিন্তু রাবণ আবার পতিত করে দেয়।
এর কারনেই সবাই দেহ-অভিমানী হয়ে গেছে। এখন তোমরা দেহী-অভিমানী হচ্ছ। ২১ জন্ম ধরে এই
দেহী-অভিমানী অবস্থা থাকবে। তাই গান আছে – কেবল একজনেরই বলিহারি। শিববাবা ভারতকে
স্বর্গ বানিয়ে দেন। কিন্তু কেউই জানে না যে শিববাবা কখন আসেন। আগে তাঁর সম্বন্ধীয়
ইতিহাস জানা দরকার। পরমপিতা পরমাত্মাকেই শিব বলা হয়।
তোমরা জানো যে, দেহের অভিমানের জন্যই অধঃপতন হয়। এইরকম হলেই বাবা ওপরে ওঠানোর জন্য
আসেন। উত্থান আর পতন, দিন এবং রাত। জ্ঞান সূর্যের উদয় আর অজ্ঞান অন্ধকারের বিনাশ।
এই দেহের অভিমান হলো সবথেকে বড় অজ্ঞান। আত্মার ব্যাপারে কেউই কিছু জানে না। বলে দেয়
আত্মাই পরমাত্মা। কতোই না পাপ আত্মা হয়ে গেছে, তাই এত অধঃপতন হয়েছে। ৮৪ বার জন্ম
নিতে নিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছে। এইভাবেই খেলাটা বানানো আছে। ওয়ার্ল্ডের এই
হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি কেবল তোমরা বাচ্চারাই জানো, অন্য কেউ জানে না। কিভাবে বিশ্বের
অধঃপতন হয়েছে। ওরা মনে করে যে বিজ্ঞানের দ্বারা অনেক উন্নতি হয়েছে। এটা বুঝতে পারে
না যে দুনিয়া আরো পতিত নরক হয়ে গেছে। প্রচন্ড দেহের অভিমান আছে। বাবা বলছেন, এখন
তোমাদেরকে দেহী-অভিমানী হতে হবে। অনেক ভালো ভালো মহারথী আছে। খুব ভালো ভাবে জ্ঞান
শোনালেও দেহের অভিমান পুরোপুরি যায়নি। দেহের অভিমান থাকার জন্য কারোর কারোর মধ্যে
ক্রোধের অংশ, মোহের অংশ ইত্যাদি কিছু না কিছু আছে। চরিত্র পরিবর্তন হওয়া দরকার।
অত্যন্ত মিষ্টি স্বভাবের হতে হবে। সেইজন্যই বাঘে গরুতে (ছাগলে) একসাথে জল খাওয়ার
উদাহরণ দেওয়া হয়। ওখানে এইরকম কোনো জন্তু জানোয়ার থাকবে না যারা দুঃখ দেবে। খুব
কমজনই এই কথাগুলো বুঝতে পারে। কর্মভোগ শেষ হয়ে কর্মাতীত অবস্থায় আসার জন্য পরিশ্রম
করতে হয়। অনেকেরই দেহের অভিমান এসে যায়। জানেই না যে কে আমাদেরকে এই উপদেশ দিচ্ছেন।
শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা কিভাবে শ্রীমৎ পাওয়া যাবে। শিববাবা বলছেন, এনার মাধ্যম ছাড়া আমি
শ্রীমৎ দেব কিভাবে ? এটাই আমার স্থায়ী রথ। দেহের অভিমানের বশীভূত হয়ে উল্টোপাল্টা
কর্ম করে বেকার নিজের সর্বনাশ করো না। নয়তো এর ফল কি হবে ? খুব কম পদ পাবে।
শিক্ষিতের সামনে অশিক্ষিতরা মাথা নত করবে। অনেকেই বলে যে ভারতের ইতিহাস ভূগোল যতটা
সম্পূর্ণ হওয়া উচিত ছিল, ততটা নেই। ওদেরকে বোঝাতে হবে। তোমরা ছাড়া তো অন্য কেউ
বোঝাতে পারবে না। কিন্তু দেহী-অভিমানী অবস্থা হতে হবে, সে-ই ভালো পদ মর্যাদার
অধিকারী হবে। এখন তো কারোর কর্মাতীত অবস্থা হয়নি। এনাকে (ব্রহ্মাবাবা) অনেক ঝামেলা
সামলাতে হয়। কত বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হয়। যদিও এটা স্মরণে থাকে যে সবকিছু ড্রামা
অনুসারেই হচ্ছে। তবুও বোঝানোর জন্য যুক্তি খাটাতে হয়। তাই বাবা বলেন, তোমরা অনেক
বেশি দেহী-অভিমানী হয়ে থাকার সুযোগ পাও। তোমাদের ওপর কোনো বোঝা নেই। বাবার ওপরে
দায়িত্ব রয়েছে। ইনিই তো হেড (মুখ্য) – প্রজাপিতা ব্রহ্মা। কিন্তু কেউই জানে না যে
এনার মধ্যে শিববাবা বসে আছেন। তোমাদের মধ্যেও খুব কমজনই এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
সুতরাং, ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি তো জানা দরকার। ভারতে কখন স্বর্গ ছিল, তারপর
কোথায় গেল ? কিভাবে অধঃপতন হলো ? এইসব কেউই জানে না। যতক্ষণ তোমরা না বোঝাচ্ছো,
ততক্ষণ কেউই বুঝতে পারবে না। তাই বাবা নির্দেশ দেন। যারা পড়াশুনা করে, তাদের উচিত
স্কুলে এই হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি বোঝানো। অধঃপতনের এই কাহিনী নিয়ে বক্তৃতা করতে হবে।
ভারত একদিন হীরেতুল্য ছিল, তারপর কড়িতুল্য কিভাবে হয়ে গেল ? কত বছর সময় লেগেছে ?
আমরা বুঝিয়ে বলব। এরোপ্লেন থেকে এইরকম হ্যান্ডবিল ফেলতে হবে। যে বোঝাবে, তাকেও খুব
বুদ্ধিমান হতে হবে। গভর্নমেন্ট যদি রাজি থাকে তবে গভর্নমেন্টের হল (সভাগৃহ) বিজ্ঞান
ভবনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। খবরের কাগজেও ছাপাতে হবে। সবাইকে আমন্ত্রণ পত্র (কার্ড)
পাঠাতে হবে। আপনাকে সমগ্র বিশ্বের ইতিহাস-ভূগোল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে বলব।
ওরা নিজে থেকেই আসা যাওয়া করবে। কোনো টাকা পয়সার ব্যাপার নেই। মনে করো, কারোর সাথে
দেখা হলো, সে যদি কিছু দিতে চায়, তবে আমরা সেটা নিতে পারি না। সেবার কাজে লাগানো
যায়, কিন্তু আমরা নিতে পারি না। বাবা বলছেন, আমি তোমাদের থেকে এই দান নিয়ে কি করব
যার বিনিময়ে ভরপুর করে দিতে হবে। আমি পাক্কা ব্যবসায়ী। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন
স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন
নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
দেহ-অভিমানের বশীভূত হয়ে কোনো উল্টোপাল্টা কর্ম করা যাবে না। দেহী-অভিমানী হওয়ার
জন্য সম্পূর্ণ পুরুষার্থ করতে হবে। নিজের চরিত্রকে শোধরাতে হবে।
২ ) অত্যন্ত মিষ্টি এবং শান্ত স্বভাবের হতে হবে। অন্তরে যে ক্রোধ আর মোহ রূপী ভূত
রয়েছে, তাদেরকে বের করে দিতে হবে।
বরদান:-
সময় রূপী শ্রেষ্ঠ সম্পত্তির সার্থক উপযোগ করে সর্বদা সকল ক্ষেত্রে সফলতার
প্রতিমূর্তি ভব
যে সন্তান সময় রূপী
সম্পত্তিকে নিজের অথবা সকলের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করে, তার সকল সম্পত্তি
স্বাভাবিক ভাবেই সঞ্চিত হয়ে যায়। যে সময়ের গুরুত্বকে বুঝতে পেরে তার সার্থক উপযোগ
করে, সে সংকল্পের সম্পত্তি, খুশির সম্পত্তি, শক্তির সম্পত্তি, জ্ঞানের সম্পত্তি,
শ্বাস-প্রশ্বাসের সম্পত্তি… ইত্যাদি সকল প্রকারের সম্পত্তি স্বাভাবিক ভাবেই জমা করে
নেয়। কেবল অবহেলা না করে সময় রূপী সম্পত্তির সার্থক উপযোগ করলেই সর্বদা সকল ক্ষেত্রে
সফলতার প্রতিমূর্তি হয়ে যাবে।
স্লোগান:-
একাগ্রতার দ্বারা সাগরের তলদেশে গিয়ে অনুভব রূপী হীরে-মানিক প্রাপ্ত করাই হলো
অনুভবের প্রতিমূর্তি হওয়া।
মাতেশ্বরীজীর অমূল্য মহাবাক্য :-
১) তমোগুণী মায়ার বিস্তার :- তিনটে শব্দ বলা হয়ে থাকে – সতোগুণী, রজোগুণী আর তমোগুণী।
এদের অর্থ সঠিকভাবে জানা দরকার। মানুষ মনে করে যে এই তিন প্রকার গুন একইসঙ্গে
বিদ্যমান থাকে। কিন্তু বিবেক কি বলে ? তিনটে গুন একইসাথে বিদ্যমান থাকে, নাকি আলাদা
আলাদা যুগে আলাদা আলাদা গুণের ভূমিকা থাকে। বিবেক অবশ্যই বলবে যে এই তিন গুণ কখনোই
একসাথে বিদ্যমান থাকতে পারে না, কারন সত্যযুগে সতোগুণ থাকে, দ্বাপরে রজোগুণ থাকে,
আর কলিযুগে তমোগুণ থাকে। যখন সতোগুণ থাকে তখন তমো কিংবা রজোগুণ থাকে না। সেইরকম যখন
রজোগুণ থাকে, তখন সতোগুণ থাকে না। দুনিয়ার মানুষ তো এমনি এমনি মনে করে যে এই তিন
গুণ একই সঙ্গে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু এটা একেবারে ভুল। ওরা ভাবে, যখন মানুষ সত্যি
কথা বলে, পাপ কর্ম করে না, তখন সে সতোগুণী হয়। কিন্তু বিবেক বলে - আমরা যে সতোগুণের
কথা বলি, সেই সতোগুণের অর্থ সম্পূর্ণ সুখ, অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টির সতোগুণী অবস্থা।
তাই এটা বলা যাবে না যে কোনো ব্যক্তি সত্যি কথা বললে সে সতোগুণী, আর মিথ্যে কথা বললে
সে কলিযুগের তমোগুণী। এইভাবেই দুনিয়া চলে আসছে। আমরা যে সত্যযুগের কথা বলি, তার
অর্থ হলো – সমগ্র দুনিয়ায় সতোগুণী সতোপ্রধান অবস্থা। কোনো সময়ে নিশ্চয়ই এমন সত্যযুগ
ছিল যখন সমগ্র সংসার সতোগুণী ছিল। এখন সেই সত্যযুগ আর নেই। এখন তো এটা কলিযুগের
দুনিয়া, সমগ্র দুনিয়ায় তমোপ্রধানতার রাজত্ব। এই তমোগুণী সময়ে সতোগুণ কোথা থেকে আসবে
! এখন চারিদিকে ঘন অন্ধকার, একেই ব্রহ্মার রাত বলা হয়। সত্যযুগ হলো ব্রহ্মার দিন আর
কলিযুগ হলো ব্রহ্মার রাত। তাই আমরা এই দুটোকে মিশিয়ে দিতে পারি না।
২ ) কলিযুগের অসার সংসার থেকে সত্যযুগের সারযুক্ত দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কর্তব্য কেবল
পরমাত্মাই করেন :- এই কলিযুগের সংসারকে অসার সংসার কেন বলা হয় ? কারণ এই দুনিয়ায়
কোনো সার নেই, অর্থাৎ কোনো বস্তুর মধ্যেই সেই শক্তি নেই, অর্থাৎ সেই
সুখ-শান্তি-পবিত্রতা নেই, যে সুখ-শান্তি-পবিত্রতা একটা সময়ে এই সৃষ্টিতে ছিল। এখন
সেই শক্তি আর নেই, কারন এখন এই সৃষ্টিতে পাঁচ ভূত প্রবেশ করেছে। তাই এই সৃষ্টিকে
ভয়ের সাগর বা কর্মবন্ধনের সাগর বলা হয়। সেইজন্যই মানুষ দুঃখী হয়ে পরমাত্মাকে আহ্বান
করছে – হে পরমাত্মা, আমাদেরকে এই ভব সাগর থেকে মুক্ত করো। এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে
নিশ্চয়ই কোনো ভয়হীন সংসার আছে, যেখানে মানুষ যেতে চায়। তাই এই সংসারকে পাপের সাগর
বলা হয় যাকে অতিক্রম করে মানুষ পূন্য আত্মাদের দুনিয়ায় যেতে চায়। সুতরাং দুনিয়া দুই
প্রকারের – ১) সত্যযুগের সারযুক্ত দুনিয়া, ২) কলিযুগের অসার দুনিয়া। দুই প্রকারের
দুনিয়া এই সৃষ্টিতেই হয়। এখন পরমাত্মা সেই সারযুক্ত দুনিয়া স্থাপন করছেন। আচ্ছা –
ওম্ শান্তি।