28-03-2021 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 27-11-87 মধুবন


"বেহদের (অসীম জগতের) বৈরাগীই হল সত্যিকারের রাজঋষি"


আজ বাপদাদা সর্ব রাজঋষিদের দরবারকে দেখছেন। সমগ্র কল্পে রাজাদের দরবার অনেকবার বসে, কিন্তু এই রাজঋষিদের দরবার এই সঙ্গমযুগেই কেবল বসে। রাজাও তোমরা আর ঋষিও। এই বিশেষত্ব এই সময়ের এই দরবারের বিষয়েই গাওয়া হয়ে থাকে। এক তরফে রাজত্ব অর্থাৎ সর্ব প্রাপ্তির অধিকারী আর অন্য তরফে ঋষি অর্থাৎ বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তিধারী। এক দিকে সর্ব প্রাপ্তির অধিকারের নেশা আর অন্যদিকে বেহদের বৈরাগ্যের অলৌকিক নেশা। যতখানি শ্রেষ্ঠ ভাগ্য ততখানিই শ্রেষ্ঠ ত্যাগ । দু'য়ের ব্যালেন্স। একেই বলা হয় রাজঋষি । এইরকম রাজঋষি বাচ্চাদের ব্যালেন্স দেখছিলেন বাপদাদা । এই এখনই অধিকারীত্বের নেশা, পর মুহূর্তেই বৈরাগ্য বৃত্তির নেশা - এই প্র্যাকটিসে কতদূর স্থিত থাকতে পারো অর্থাৎ উভয় স্থিতিরই সমান সমান অভ্যাস কতখানি করতে পেরেছো - সেটাই চেক করছিলেন । অভ্যাসের বিষয়ে সব বাচ্চারাই নম্বরক্রমিক। কিন্তু সময়ানুসারে, এই দু'য়ের অভ্যাসকে আরও বেশী বেশী করে বাড়াতে থাকো। বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তির অর্থই হল - বৈরাগ্য অর্থাৎ এড়িয়ে চলা নয়, বরং সর্ব প্রাপ্তি হওয়া সত্ত্বেও জাগতিক আকর্ষণ মনকে বা বুদ্ধিকে আকৃষ্ট করে নেবে না । বেহদ অর্থাৎ আমি হলাম সম্পূর্ণ সম্পন্ন আত্মা, বাবা সম সদা সকল কর্মেন্দ্রিয়ের রাজ্য অধিকারী। এই সূক্ষ্ম শক্তিগুলির, মন - বুদ্ধি - সংস্কার আমার অধিকারে । সংকল্পেও যেন অধীনতা না থাকে। একেই বলা হয় রাজঋষি অর্থাৎ বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তি । এই পুরোনো দেহ বা দেহের পুরানো দুনিয়া বা ব্যক্ত ভাব, বৈভবের ভাব - এই সব কিছুর আকর্ষণ থেকে সদা আর সহজে যে দূরে থাকে।

যেমন সায়েন্সের শক্তি পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়, তেমনই সাইলেন্সের শক্তি এই সব সীমিত জাগতিক আকর্ষণের থেকে দূরে নিয়ে যায়। একে বলা হয় - সম্পূর্ণ সম্পন্ন বাবা সম স্থিতি । তো এইরকম স্থিতির অভ্যাসী হয়েছো ? স্থূল কর্মেন্দ্রিয় - এ তো অত্যন্ত স্থূল বিষয়। কর্মেন্দ্রিয় - জিৎ হওয়া, এ তো তবুও অনেক সহজ। কিন্তু মন - বুদ্ধি - সংস্কার, এই সূক্ষ্ম শক্তিগুলির উপরে বিজয়ী হওয়া - এ হল সূক্ষ্ম অভ্যাস । যে সময়ে যে সংকল্প, যে সংস্কার ইমার্জ (সামনে নিয়ে আসা) করতে চাও, সেই সংকল্পকেই, সেই সংস্কারকেই সহজেই গ্রহণ করতে পারা - একে বলা হয় সূক্ষ্ম শক্তিগুলির উপরে বিজয় অর্থাৎ রাজঋষি স্থিতি । যেমন স্থূল কর্মেন্দ্রিয়গুলিকে তোমরা অর্ডার করো যে, এটা করো কিম্বা এটা ক'রো না । হাত নীচে করো বা উপরে করো বললে উপরেই ওঠে, সেই রকম সংকল্প আর সংস্কার এবং নির্ণয় শক্তিকে অর্ডার করো যে, এখন একাগ্রচিত্ত হয়ে যাও, এক সংকল্পে স্থিত হয়ে যাও। তো রাজার অর্ডার সেই মুহূর্তেই সেইভাবেই মানা - এটা হল রাজ্য অধিকারীর লক্ষণ। এমন নয় যে, তিন চার মিনিটের অভ্যাসের পরে মন সেই অর্ডার মানলো অথবা একাগ্রতার পরিবর্তে চঞ্চলতার পরে একাগ্র হল, একে কী বলবে ? অধিকারী বলবে ? তো এইভাবে চেক করো। কেননা প্রথম থেকেই তোমাদেরকে বলে আসছি যে, অন্তিম সময়ে অন্তিম রেজাল্টের সময় এক সেকেন্ডের একটিই কোশ্চেন হবে। এই সূক্ষ্ম শক্তিগুলির অধিকারী হওয়ার অভ্যাস যদি না থাকবে, অর্থাৎ তোমার মন, রাজার অর্ডার এক সেকেন্ডের এল পরিবর্তে তিন সেকেন্ড পরে মানলো, তবে কি তাকে রাজ্য অধিকারী বলা যাবে নাকি সে এক সেকেন্ডের অন্তিম পেপারে পাশ করবে ? কত মার্কস পাবে ?

অনুরূপ ভাবেই বুদ্ধি অর্থাৎ নির্ণয় শক্তির উপরেও অধিকার থাকবে। অর্থাৎ যে সময়ে যে পরিস্থিতি সেই অনুসারে সেই মুহূর্তেই নির্ণয় নিতে পারা - একে বলা হয় বুদ্ধির উপরে অধিকার। এমন নয় যে, পরিস্থিতি বা সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তারপর নির্ণয় নেওয়ার পরে দেখা গেল যে, এটা না হলে ভালো হত, এই নির্ণয় না নিলেই বেশী ভালো হত। তো সময় মতো আর যথার্থ নির্ণয় হওয়া - রাজ্য অধিকারী আত্মার এটাই হল লক্ষণ । অতএব চেক করো যে, সারাদিনে রাজ্য অধিকারী অর্থাৎ এই সূক্ষ্ম শক্তিগুলিকে অর্ডারে পরিচালনকারী কতদূর হয়েছো ? রোজ নিজের কর্মচারীদের দরবার বসাও। চেক করো যে, স্থূল কর্মেন্দ্রিয়গুলি বা সূক্ষ্ম শক্তিগুলি - এই কর্মচারীরা কন্ট্রোলে আছে কি নেই ? এখন থেকে রাজ্য অধিকারী হওয়ার সংস্কার অনেক জন্মের রাজ্য অধিকারী বানাবে। বুঝতে পেরেছো ? এই ভাবে সংস্কার কখনো ধোঁকা দিয়ে দেয় না তো ? আদি, অনাদি, সংস্কার ; অনাদি শুদ্ধ শ্রেষ্ঠ পবিত্র সংস্কার। সর্ব গুণ স্বরূপ সংস্কার আর আদি দেব আত্মার রাজ্য অধিকারীত্বের সংস্কার হল সর্ব প্রাপ্তি স্বরূপের সংস্কার, সম্পন্ন, সম্পূর্ণতার ন্যাচারাল সংস্কার। তো সংস্কার, শক্তির উপরে রাজ্য অধিকারী অর্থাৎ সদা অনাদি আদি সংস্কার যেন ইমার্জ হয়। ন্যাচারাল সংস্কার হবে। মধ্য অর্থাৎ দ্বাপর থেকে প্রবিষ্ট হওয়া সংস্কার গুলি যেন আকৃষ্ট না করতে পারে। সংস্কার গুলির বশবর্তী হয়ে যেন অসহায় হয়ে যেও না। যেমন তোমরা বল না যে, আমার পুরানো সংস্কার। বাস্তবে অনাদি আর আদি সংস্কারই হল পুরানো। এটা তো মধ্য, দ্বাপর থেকে আসা সংস্কার। তো পুরানো সংস্কার আদির হল নাকি মধ্য'র ? যে কোনো সীমিত জগতের আকর্ষণের সংস্কার যদি আকৃষ্ট করে, তবে সংস্কার গুলির উপরে রাজত্ব করবে কীভাবে ? রাজত্বের মধ্যে একটি শক্তি বা একজন কর্মচারী 'কর্মেন্দ্রিয়'ও যদি অর্ডার মতো না থাকে, তবে তাকে সম্পূর্ণ রাজ্য অধিকারী বলা যাবে কী ? তোমরা সব বাচ্চারা চ্যালেঞ্জ করে থাকো যে, আমরা এক রাজ্য, এক ধর্ম, এক মত স্থাপন করতে চলেছি। এই চ্যালেঞ্জ সকল ব্রহ্মাকুমার আর ব্রহ্মাকুমারী করে থাকো তাই না, তো সেটা কবে স্থাপন হবে ? ভবিষ্যতে স্থাপন হবে ? স্থাপনার নিমিত্ত কারা ? ব্রহ্মা না বিষ্ণু ? ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপনা হয়, তাই না ! যেখানে ব্রহ্মা আছে সেখানে ব্রাহ্মণও সাথে সাথেই আছে। ব্রহ্মার দ্বারা অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের দ্বারা স্থাপনা, সেটা করবে হবে ? সঙ্গমে নাকি সত্যযুগে ? সেখানে তো (প্রজা) পালন হবে (বিষ্ণুর দ্বারা), তাই না ! ব্রহ্মা বা ব্রাহ্মণদের দ্বারা স্থাপনা, এটা এখন হওয়ার। তো প্রথমে স্ব এর রাজ্যে দেখো যে, এক রাজ্য, এক ধর্ম (ধারণা), এক মত আছে ? একটি কর্মেন্দ্রিয়ও যদি মায়ার অন্য মতে চলে, তবে তো এক রাজ্য, এক মত বলা হবে না। তাহলে প্রথমে এটা চেক করো যে, এক রাজ্য, এক ধর্ম স্ব এর রাজত্বে স্থাপন করেছো ? নাকি কখনো মায়া সিংহাসনে বসে যায়, কখনো তুমি বসে যাও ? চ্যালেঞ্জকে প্র্যাকটিক্যালে এনেছো নাকি আনোনি - এটা চেক করো। চাইছো অনাদি সংস্কার ইমার্জ হোক কিন্তু মধ্য'র সংস্কার ইমার্জ হয়ে গেল, এটা তো অধিকারীর সংস্কার হল না।

তো রাজঋষি অর্থাৎ সব কিছুর রাজ্য অধিকারী। রাজ্য অধিকারী সদা আর সহজ তখনই হবে, যখন ঋষি অর্থাৎ বেহদের বৈরাগী বৃত্তির অভ্যাসী হবে। বৈরাগ্য অর্থাৎ আকর্ষণ মুক্ত । সদা বাবার প্রিয়। এই প্রিয় অবস্থাই নির্লিপ্ত (ন্যারা) বানায় । বাবার প্রিয় হয়ে, নির্লিপ্ত হয়ে কার্য ব্যবহারে আসা - একেই বলা হয় বেহদের বৈরাগী । বাবার প্রিয় নাহলে তবে নির্লিপ্তও হতে পারবে না, আসক্তিতে এসে যাবে। বাবার প্রিয় যে হবে, সে আর কোনো ব্যক্তি বা বৈভবের প্রিয় হতে পারে না। সে সদা আকর্ষণ থেকে ঊর্ধ্বে অর্থাৎ নির্লিপ্ত হবে। একেই বলা হয় নির্লেপ স্থিতি ।কোনো প্রকারের সীমিত কিছুর আকর্ষণের লেপ তার মধ্যে লাগে না। রচনা বা সুযোগ সুবিধার উপকরণ গুলিকে নির্লিপ্ত হয়ে ব্যবহার করবে সে। এই রকম বেহদের বৈরাগী, সত্যিকারের রাজঋষি হয়েছো ? এই রকম ভেবো না যে, কেবলমাত্র একটি বা দুটি দুর্বলতাই কেবল রয়ে গেছে। কেবল একটা সূক্ষ্ম শক্তি বা কর্মেন্দ্রিয় কম কন্ট্রোলে রয়েছে, বাকি গুলো ঠিক আছে। কিন্তু যেখানে একটাও দুর্বলতা থাকবে, তো সেটা হল মায়ার গেট। সেটা ছোট গেট হোক বা বড় গেট, কিন্তু গেট তো গেট, যদি খোলা থেকে যায়, তবে মায়াজিৎ জগৎজিৎ কীকরে হতে পারবে ?

একদিকে এক রাজ্য, এক ধর্মের সুবর্ণ দুনিয়ার আহ্বান করছো আবার সাথে সাথে দুর্বলতার অর্থাৎ মায়াকেও আহ্বান করছো, তবে রেজাল্ট কী হবে ? দ্বিধা দ্বন্দ্বে থেকে যাবে। সেইজন্য এটাকে কোনো ছোট বিষয় মনে ক'রো না। সময় তো আছে, করে নেবো। অন্যদের মধ্যেও তো অনেক কিছু এখনও আছে, আমার মধ্যে তো কেবল এই একটা জিনিসই কেবল পড়ে আছে। অন্যদেরকে দেখতে দেখতে নিজেই থেকে যেও না। "সী ব্রহ্মা ফাদার" বলা হয়েছে, "ফলো ফাদার" বলা হয়েছে। সকলের সহযোগী, স্নেহী অবশ্যই হও, গুণগ্রাহী অবশ্যই হও, কিন্তু ফলো ফাদার। ব্রহ্মা বাবার লাস্ট স্টেজ রাজঋষি দেখেছো তোমরা। বাচ্চাদের এত প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও, তাদেরকে সামনে দেখেও অনাসক্ত ভাবকে দেখেছো না ! বেহদের বৈরাগ্য - এই স্থিতিই তোমরা প্র্যাকটিক্যালে দেখেছো। কর্মভোগ থাকা সত্ত্বেও কর্মেন্দ্রিয়ের উপরে অধিকারী হয়ে অর্থাৎ রাজঋষি হয়ে সম্পূর্ণ স্থিতির অনুভব করিয়েছেন । সেইজন্যই বলা হয় - 'ফলো ফাদার' । তো নিজের রাজ্য অধিকারীদেরকে, রাজ্য কারবারীদেরকে সদা দেখতে হবে। কোনো রাজ্য কারবারকারী কখনো ধোঁকা যেন না দিয়ে দেয়। বুঝতে পেরেছো ?

আজ বিভিন্ন স্থান থেকে তোমরা এক স্থানে এসে পৌঁছে গেছো। একেই বলা হয় নদী আর সাগরের মেলা। মেলাতে মিলনও হয় আর জিনিসপত্রও পাওয়া যায়। সেইজন্য সকলে মেলাতে এসে পৌঁছে গেছে। এটা হল নতুন বাচ্চাদের সীজনের লাস্ট গ্রুপ ।পুরানোরাও নতুন বাচ্চাদের সাথে চান্স পেয়ে গেছে প্রকৃতিও এখনও পর্যন্ত খুব সুন্দর ভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। কিন্তু এর অ্যাডভান্টেজ (সুযোগ) নিও না। নইলে প্রকৃতিও কিন্তু খুব চালাক। আচ্ছা।

চতুর্দিকের সদা রাজঋষি বাচ্চাদেরকে, সদা (স্ব) নিজের উপরে রাজত্বকারী সদা বিজয়ী হয়ে নির্বিঘ্ন ভাবে কাজকর্ম পরিচালনকারী রাজ্য অধিকারী বাচ্চাদেরকে, সদা বেহদের বৈরাগ্য বৃত্তিতে থাকা সকল ঋষিকুমার - ঋষিকুমারীদেরকে, সদা বাবার প্রিয় হয়ে অনাসক্ত হয়ে কাজকর্ম সম্পাদনকারী অনাসক্ত আর প্রিয় বাচ্চাদেরকে, সদা ব্রহ্মা বাবাকে ফলো করতে থাকা বিশ্বস্ত (বফাদার) বাচ্চাদেরকে বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার ।

পার্টিদের সাথে অব্যক্ত বাপদাদার সাক্ষাৎকার :

১ ) অনেক বারের বিজয়ী আত্মা, এমন অনুভব করো ? বিজয়ী হওয়া কঠিন লাগে নাকি সহজ ? কেননা যেটা সহজ হয় সেটা সব সময়ই হতে পারে, কঠিন জিনিস সব সময় হওয়া সম্ভব নয়। যে কাজ অনেকবার করা হয়ে থাকে, সেটা স্বতঃতই সহজে হয়ে যায়। কখনো কোনো নতুন কাজ করতে গেলে প্রথমে সেটা কঠিন লাগে, কিন্তু করে ফেললে তখন সেই কঠিন কাজই খুব সহজ মনে হয়। তো তোমরা সবাই কেবল এই একবারের বিজয়ী হও, অনেকবারের বিজয়ী। অনেকবারের বিজয়ী অর্থাৎ সদা সহজে বিজয়ের অনুভবকারী। যে সহজ বিজয়ী, তার প্রতিটি কদমে এমনই অনুভব হবে যে, এই সব কাজ হয়েই আছে, প্রতিটি কদমে বিজয় হয়েই আছে। হবে কি হবে না - এই সংকল্পও উঠতে পারে না। যখন নিশ্চয় আছে যে, আমি অনেকবারের বিজয়ী, তখন বিজয়ী হব কি হব না - এই কোশ্চেনই নেই। নিশ্চয়ের লক্ষণ হল নেশা আর নেশার লক্ষণ হল খুশী । যার নেশা থাকবে, সে সদা খুশীতে থাকবে। জাগতিক বিষয়েও বিজয়ী হলে তখন কত খুশী হয় মনে ! মানুষ যখনই কোনো কিছুতে বিজয় প্রাপ্ত করে, তখন বাজনা বাজানো হয়, তাই না ! যার নিশ্চয় আর নেশা থাকবে, তবে খুশী অবশ্যই হবে। সে খুশীতে সদাই নাচতে থাকবে। শরীরের নৃত্য তো কেউ নাচতে পারে, কেউ পারে না। কিন্তু মনে মনে খুশীতে নাচতে থাকা - এ তো বিছানায় শুয়ে থাকা অসুস্থ মানুষও নাচতে পারে। সে যেমনই হোক না কেন, প্রত্যেকের কাছে এমন নাচ নাচা সহজ। কেননা বিজয়ী হওয়া অর্থাৎ স্বতঃত খুশীর বাজনা বাজা। যখন বাজনা বাজে, তখন পা নিজে থেকেই তাল দিতে শুরু করে দেয়। সে নাচতে না জানলেও সেও বসে বসেই নাচতে থাকবে। পা নড়বে, কাঁধ নড়বে। তাহলে তোমরা সবাই হলে অনেকবারের বিজয়ী - এই খুশীতে সদা এগিয়ে যেতে থাকো। জগতে সকলেরই খুশীর প্রয়োজন। তাদের কাছে যতই সব কিছু থাক, কিন্তু খুশীর প্রাপ্তি নেই। অতএব যে অবিনাশী খুশীর আবশ্যকতা জগতের মানুষের রয়েছে, সেই খুশী সদা বিতরণ করতে থাকো।

২ ) নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে প্রতিটি কদমে শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের অনুভব করতে থাকো কী ? কেননা এই সময় বাবা ভাগ্যবিধাতা হয়ে ভাগ্য প্রদান করতে এসেছেন। ভাগ্যবিধাতা ভাগ্য বিতরণ করছেন। বিতরণ যখন হয়, তখন যে যতটা পারে নিয়ে নিতে পারে। সকলের অধিকার রয়েছে। যা নেবে যত খুশী নিতে পারে। তো এই রকম সময়ে কতখানি ভাগ্য বানিয়েছ, এটা চেক করো। কেননা এখন নয় তো কখনোই নয়। সেইজন্য প্রতিটি কদমে ভাগ্যের রেখা অঙ্কন করবার কলম বাবা সব বাচ্চাদেরকে দিয়েছেন। কলম তোমাদের হাতে আর যত খুশী রেখা আঁকতে থাকো - যত খুশী রেখা অঙ্কন করতে পারো ততই আঁকতে পারো। কত বড় সুযোগ বলতো ! তো সদা এই ভাগ্যবান সময়ের মহত্বকে জেনে এতটাই জমা করতে থাকো তো ? এমন যেন না হয় যে, চাইছিলে তো অনেক, কিন্তু করতে পারলে না, করার তো ছিল অনেক কিন্তু অল্পই পারলে। নিজের জন্য এই অনুশোচনা যেন না থেকে যায়। বুঝছো ? তো সদা ভাগ্যের রেখাকে শ্রেষ্ঠ বানাতে থাকো আর অন্যদেরকেও এই শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের খোঁজ দিতে থাকো। "বাঃ আমার ভাগ্য !" এই খূশীর গীত সদাই গাইতে থাকো।

৩ ) সদা নিজেকে স্বদর্শন - চক্রধারী শ্রেষ্ঠ আত্মা আমরা এমন অনুভব করো ? স্বদর্শন-চক্র অর্থাৎ সদা মায়ার অনেক চক্র থেকে মুক্তকারী। স্বদর্শন-চক্র সব সময়ের জন্য চক্রবর্তী রাজ্য ভাগ্যের অধিকারী বানিয়ে দেয় । এই স্বদর্শন-চক্রের জ্ঞান এই সঙ্গমযুগেই প্রাপ্ত হয়। তোমরা হলে ব্রাহ্মণ আত্মা, সেইজন্য তোমরা হলে স্বদর্শন-চক্রধারী ।ব্রাহ্মণদের (মাথার টিকি) শিখা দেখানো হয়। শিখা অর্থাৎ উঁচু। ব্রাহ্মণ অর্থাৎ সদা শ্রেষ্ঠ কর্ম যে করে। ব্রাহ্মণ অর্থাৎ সদা শ্রেষ্ঠ ধর্মে (ধারণা গুলিতে) থাকা - এই রকম ব্রাহ্মণ তোমরা, তাই তো ? নামধারী ব্রাহ্মণ না, কাজ করে দেখানো ব্রাহ্মণ। কেননা ব্রাহ্মণদের, এখন অন্তিমেও কত নাম ! তোমরা সত্যিকারের ব্রাহ্মণদেরই এই স্মরণিক এখনও পর্যন্ত চলছে। যে কোনো শ্রেষ্ঠ কাজ করার সময় ব্রাহ্মণকেই ডাকা হয়। কেননা ব্রাহ্মণই হল এতখানি শ্রেষ্ঠ । তো কোন্ সময় এতখানি শ্রেষ্ঠ হয়েছো ? এখনই হয়েছো, সেইজন্য এখনও পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ কার্যের স্মরণিক প্রচলিত রয়েছে। প্রতিটি সংকল্প, প্রতিটি বোল, প্রতিটি কর্ম যারা শ্রেষ্ঠ করে থাকে, এমন স্বদর্শন-চক্রধারী শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ তোমরা - সদা এই স্মৃতিতে থাকো। আচ্ছা ।

বরদান:-
নিজের পূজনের স্মৃতিতে থেকে প্রতিটি কর্মকে পূজনীয় বানানো পরমপূজ্য ভব

বাচ্চারা, তোমাদের প্রতিটি শক্তির পূজা দেবী - দেবতার রূপে হয়ে থাকে। সূর্য দেবতা, বায়ু দেবতা, পৃথিবী দেবতা... এই রকমই নির্ভয়তার শক্তির পূজা কালী দেবী রূপে হয়। সম্মুখীন হওয়ার শক্তির পূজা দুর্গার রূপে হয়। সন্তুষ্ট থাকা আর সন্তুষ্ট করার শক্তির পূজা সন্তোষী মাতার রূপে হয়। বাতাসের মতো হাল্কা হওয়ার শক্তির পূজা পবন পুত্রের রূপে হয়। অতএব নিজেকে নিজের এই পূজনের স্মৃতিতে রেখে প্রতিটি কর্মকে পূজনীয় বানাও, তবেই পরমপূজ্য হবে।

স্লোগান:-
জীবনে সন্তুষ্টতা আর সরলতার ভারসাম্য রাখাই হল সব থেকে বড় বিশেষত্ব।