11.05.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা --
তোমরা এই নেত্র দ্বারা যা কিছু দেখছো, সে সবই পুরানো দুনিয়ার সামগ্রী, এর বিনাশ হয়ে
যাবে, তাই মন থেকে এই দুঃখধামকে ভুলে যাও"
প্রশ্নঃ -
মানুষ বাবার
উপর কোন্ দোষ আরোপ করেছে কিন্তু এই দোষ কারোর-ই নয় ?
উত্তরঃ -
এত বড় যে বিনাশ হয়, মানুষ মনে করে তা ঈশ্বরই করান, দুঃখও তিনি দেন, সুখও তিনি দেন।
এ অত্যন্ত বড় দোষারোপ করা হয়েছে। বাবা বলেন -- বাচ্চারা, আমি সদা সুখ প্রদান করি,
আমি কাউকে দুঃখ দিতে পারি না। বিনাশ যদি আমি করাই তাহলে সমস্ত পাপ আমার উপর এসে পড়বে,
এসবই ড্রামানুসারে হয়, আমি করাই না।
গীতঃ-
রাতের পথিক হয়ো
না ক্লান্ত/ভোরের ঠিকানা নয়তো দূরে.....
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চাদের
শেখানোর জন্য অত্যন্ত ভালো ভালো অনেক গান রয়েছে। সেসমস্ত গানের অর্থ বের করতে পারলে
তোমরা (জ্ঞানকে) বলতে অর্থাৎ বাণীর মাধ্যমে প্রচার করতে সক্ষম হবে। বাচ্চাদের
বুদ্ধিতে একথা রয়েছে যে, আমরা সকলেই এখন দিনের যাত্রায় রয়েছি, রাতের যাত্রা
সম্পূর্ণ হয়েছে। ভক্তিমার্গ হলোই রাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা। অন্ধকারে ধাক্কা খেতে হয়।
আধাকল্প রাতের যাত্রা করে নিম্নে অবতরণ করেছো। এখন এসেছো দিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা
করতে। তোমরা এই যাত্রা একবারই করো। তোমরা জানো যে, স্মরণের যাত্রার দ্বারাই আমরা
তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হয়ে পুনরায় সতোপ্রধান সত্যযুগের মালিক হয়ে যাও।
সতোপ্রধান হলে সত্যযুগের মালিক, তমোপ্রধান হলে কলিযুগের মালিক হয়ে যাবে। ওইটিকে বলা
হয় স্বর্গ, একে বলা হয় নরক। বাচ্চারা, এখন তোমরা বাবাকে স্মরণ করো। বাবার কাছ থেকে
সুখই পাওয়া যায়। যারা আর কিছু বলতে পারে না তারা যেন শুধু এটাই স্মরণে রাখে যে --
শান্তিধাম আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের ঘর, সুখধাম হলো স্বর্গের রাজত্ব আর এখন এ হলো
দুঃখধাম, রাবণ-রাজ্য। এখন বাবা বলেন যে, এই দুঃখধামকে ভুলে যাও। যদিও এখানে থাকো
কিন্তু বুদ্ধিতে যেন একথা থাকে যে, এই নেত্র দ্বারা যাকিছু দেখছো তা সবই
রাবণ-রাজ্যের। এইসমস্ত শরীরকে যে দেখছো, সেসমস্তও পুরানো দুনিয়ার সামগ্রী। এই সমস্ত
সামগ্রী এই যজ্ঞতে স্বাহা অর্থাৎ অর্পিত হয়ে যাবে। ওখানে ওই পতিত ব্রাহ্মণেরা যজ্ঞ
রচনা করে আর তাতে যব-তিল ইত্যাদি সামগ্রী স্বাহা করে। এখানে তো বিনাশ হবে। সর্বোচ্চ
হলেন পিতা, পরে ব্রহ্মা আর বিষ্ণু। শঙ্করের বড় কোনো ভূমিকা নেই। বিনাশ তো হতেই হবে।
বাবা বিনাশ এমনভাবে করান যাতে কারোর উপর কোন পাপ না চড়ে। যদি বলা হয় যে, ঈশ্বর
বিনাশ করান তবে তো তাঁর উপর দোষ পড়বে, তাই এসব ড্রামায় নির্ধারিত রয়েছে। এ হলো অসীম
জগতের ড্রামা, যা কেউ জানে না। রচয়িতা আর রচনাকে কেউ জানে না। না জানার কারণে অনাথ
হয়ে গেছে। তাদের কোনো নাথ(ধনী) নেই। কোনো ঘরে যদি পিতা না থাকে আর পরস্পর লড়াই-ঝগড়া
করে তখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তোমাদের ঘরে কোনো গুরুজন(ধনী) নেই কী ? এখন তো
কোটি-কোটি মানুষ। এদের কোনো নাথ বা প্রভু নেই। দেশে-দেশে লড়াই হতে থাকে। একই ঘরে
বাচ্চা বাবার সঙ্গে, পুরুষ স্ত্রী-র সঙ্গে লড়াই করতে থাকে। দুঃখধামে অশান্তিই থাকে।
এমনভাবে বলবে না, যেকোনো দুঃখই পিতারূপী ঈশ্বর রচনা করেন। মানুষ মনে করে, দুঃখ-সুখ
বাবাই দেন কিন্তু বাবা কখনো দুঃখ দিতে পারেন না। ওঁনাকে বলা-ই হয় সুখদাতা তাহলে
দুঃখ দেবেন কীভাবে ? বাবা বলেন, আমি তোমাদের অত্যন্ত সুখী করে দিই। এক হলো নিজেকে
আত্মা মনে করো। আত্মা হলো অবিনাশী, শরীর বিনাশী। আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের বসবাসের
স্থান হলো পরমধাম, যাকে শান্তিধামও বলা হয়। এই শব্দটি সঠিক। স্বর্গকে পরমধাম বলা
যাবে না। পরম অর্থাৎ পরলোকেরও ঊর্ধ্বে। স্বর্গ তো এখানে থাকে। মূলবতন অর্থাৎ পরমধাম
হলো অসীমেরও ওপারে, যেখানে আমরা অর্থাৎ আত্মারা থাকি। তোমরা এখানে সুখ-দুঃখের ভূমিকা
পালন করো। এই যে বলা হয়, অমুকে স্বর্গে গমন করেছে। এ হলো সর্বৈব ভুল বা মিথ্যা।
স্বর্গ তো এখানে নেই। এখন এ হলো কলিযুগ। এইসময় তোমরা হলে সঙ্গমযুগীয়, আর বাকি সকলেই
হলো কলিযুগীয়। একই ঘরে বাবা কলিযুগীয় তো বাচ্চা সঙ্গমযুগীয়। স্ত্রী সঙ্গমযুগীয়,
পুরুষ কলিযুগীয়....কত তফাৎ রয়ে যায়। স্ত্রী জ্ঞান নেয়, পুরুষ জ্ঞান নেয় না, তখন একে
অপরকে সাথ দেয় না। ঘরে মনোমালিন্য হয়। স্ত্রী সম্পূর্ণরূপে ফুল হয়ে যায় আর সে কাঁটা
ছিল আর কাঁটাই রয়ে যায়। একই ঘরে বাচ্চা জানে আমি সঙ্গমযুগীয় পুরুষোত্তম পবিত্র দেবতা
হতে চলেছি, বাবা বলে -- বিবাহ করো, নিজের সর্বনাশ করে নরকবাসী হও। আধ্যাত্মিক পিতা
এখন বলেন -- বাছা, পবিত্র হও। এখনকার পবিত্রতা ২১ জন্ম পর্যন্ত চলবে। এই
রাবণ-রাজ্যই সমাপ্ত হয়ে যাবে। যার সঙ্গে শত্রুতা হয় তার কুশপুত্তলিকা (এফিজি) দাহ
করে, তাই না! তাহলে শত্রুর প্রতি কত ঘৃণা আসা উচিত। কিন্তু একথা কারোর জানা নেই যে,
রাবণ কে ? অনেক খরচ করে। মানুষকে দাহ করার জন্য এত খরচ করতে হয় না। স্বর্গে তো এমন
কোন কথা নেই।ওখানে তো বিদ্যুৎ সংযোগ করা অর্থাৎ বৈদ্যুতিক চুল্লিতে রাখা হয় আর সব
শেষ। ওখানে এমন চিন্তা থাকে না যে, এই মাটি পরে কার্যে আসবে। ওখানকার রীতি-রেওয়াজই
এমন যে, কোনো কষ্ট বা ক্লান্তির সেখানে কোনো কথা থাকে না। এত সুখ থাকে। তাই বাবা
এখন বোঝান -- "মামেকম্ (একমাত্র আমাকেই) স্মরণ করার পুরুষার্থ করো" । স্মরণের
উদ্দেশ্যেই এই যুদ্ধ। বাবা বাচ্চাদেরকে বোঝাতে থাকেন -- মিষ্টি বাচ্চারা, নিজেদেরকে
সতর্ক প্রহরায় রাখো। মায়া যেন কখনো নাক-কান কেটে নিয়ে না যায় কারণ সে তো শত্রু, তাই
না! তোমরা বাবাকে স্মরণ করো আর মায়া ঝড়ে উড়িয়ে দেয় তাই বাবা বলেন, প্রত্যেকেরই
সারাদিনের চার্ট লেখা উচিত যে, কতটা সময় বাবাকে স্মরণ করেছি। কোথায়-কোথায় মন চলে
গেছে। ডায়রীতে নোট করো যে, কতখানি সময় বাবাকে স্মরণ করেছো ? নিজেদের যাচাই করা উচিত,
তাহলে মায়াও দেখবে যে এ তো অত্যন্ত সাহসী(বাহাদুর), নিজের উপর ভালভাবে অ্যাটেনশন
রাখে। সম্পূর্ণরূপে সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চারা, বাবা এসে এখন তোমাদের পরিচয় দেন।
তিনি বলেন যে, অবশ্যই ঘর-পরিবার সামলাও শুধু বাবাকে স্মরণ করো। এরা সেইসব
সন্ন্যাসীদের মতন নয়। তারা (সন্ন্যাসী) ভিক্ষাবৃত্তির উপর জীবনধারণ করে তথাপি কর্ম
তো করতেই হবে, তাই না! তোমরা তাদেরকেও (সন্ন্যাসী) বলতে পারো যে, তোমরা হলে হঠযোগী,
ঈশ্বর একজনই যিনি রাজযোগ শেখান। বাচ্চারা, তোমরা এখন সঙ্গমে রয়েছো। এই সঙ্গমযুগকেই
স্মরণ করতে হবে। আমরা এখন সঙ্গমযুগে সর্বোত্তম দেবতায় পরিনত হই। আমরাই উত্তম পুরুষ
অর্থাৎ পূজ্য দেবতা ছিলাম। এখন নীচ হয়ে গেছি। তোমরা কোনো কর্মেরই নও। আমরা এখন কী
হতে চলেছি, মানুষ যেসময় ব্যারিস্টারি ইত্যাদি পড়ে, সেইসময় কোনো পদমর্যাদা পাওয়া যায়
না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পদমর্যাদা টুপি পাওয়া যাবে। তখন গিয়ে গভর্নমেন্টের
চাকরী করবে। তোমরা এখন জেনেছ যে, সর্বোচ্চ ভগবান আমাদের পড়ান, তাহলে অবশ্যই উচ্চপদও
দেবেন। এ হলো এইম অবজেক্ট। এখন বাবা বলেন, মামেকম্ স্মরণ করো, আমি যা, যেমন তা
বুঝিয়ে দিয়েছি। আত্মাদের পিতা অর্থাৎ 'আমি বিন্দু-স্বরূপ', আমার মধ্যেই সমগ্র জ্ঞান
নিহিত রয়েছে, তোমাদেরও কি পূর্বে একথা জানা ছিল যে, আত্মা বিন্দু-স্বরূপ, না জানা
ছিল না। এরমধ্যেই (আত্মা) ৮৪ জন্মের সমস্ত অবিনাশী পার্ট নির্ধারিত করা রয়েছে। যীশু
খ্রীস্ট তাঁর ভূমিকা পালন করে চলে গেছেন, পুনরায় তিনি অবশ্যই আসবেন, তাই না!
খ্রীস্টধর্মাবলম্বীরাও সকলেই ফিরে যাবে। এমনকি খ্রাইস্টের আত্মাও এখন তমোপ্রধান হয়ে
গেছে। যেসকল উচ্চ থেকে উচ্চতম ধর্মস্থাপকেরা রয়েছেন তারাও এখন তমোপ্রধান।
ইনিও(ব্রহ্মা) বলেন যে, অনেক জন্মের অন্তিমলগ্নে তমোপ্রধান হয়েছি, এখন পুনরায়
সতোপ্রধান হতে চলেছি। তত্বতম্ অর্থাৎ তোমরাই হলে তারা, যারা পূজ্য থেকে পূজারী হয়েছো।
তোমরা জানো, আমরা এখন ব্রাহ্মণ হয়েছি দেবতা হওয়ার জন্য। বিরাটরূপের চিত্রের অর্থ
কেউ জানে না। বাচ্চারা, এখন তোমরা জেনেছো যে, আত্মা যখন সুইট হোমে থাকে তখন পবিত্র
থাকে। এখানে এসে অপবিত্র হয়েছে। তখন বলে যে -- হে পতিত-পাবন এসে আমাদের পবিত্র করো
তবেই তো আমরা নিজ-ঘর মুক্তিধামে যাবো। এই পয়েন্টও (বুদ্ধিতে) ধারণ করার জন্যই।
মানুষ জানে না মুক্তি-জীবনমুক্তিধাম কাকে বলা হয়। মুক্তিধাম-কে শান্তিধাম বলা হয়।
জীবনমুক্তিধাম-কে সুখধাম বলা হয়। এখানকার বন্ধন হলো দুঃখের। জীবনমুক্তিকে বলা হয়
সুখ-সম্বন্ধ বা সম্পর্ক। এখন দুঃখের বন্ধন দূর হয়ে যাবে। আমরা পুরুষার্থ করি উচ্চপদ
লাভ করার জন্য। তাহলে এমন নেশা থাকা উচিত। শ্রীমতানুসারে আমরা এখন নিজেদের
রাজ্য-ভাগ্য স্থাপন করছি। জগদম্বা প্রথম স্থানাধিকারী হন। আমরাও ওঁনাকে ফলো করবো।
যে বাচ্চারা এখন মাতা-পিতার হৃদয়ে আসীন হয়, তারাই ভবিষ্যতে রাজসিংহাসনের অধিকারী হবে।
*হৃদয়ে তারাই বিরাজ করে যারা দিন-রাত সেবায় ব্যস্ত থাকে। সকলকে খবর দিতে হবে যে,
বাবাকে স্মরণ করো। পয়সা-কড়ি কিছুই নেওয়ার নেই। ওরা(অজ্ঞানী) মনে করে, এরা রাখী
বাঁধতে এসেছে এদের কিছু দিতে হবে। তোমরা বলো যে আমাদের আর কিছুই চাই না শুধু তোমরা
৫ বিকারকে দান করে দাও। এই দান গ্রহণ করার জন্যই আমরা এসেছি, তাই পবিত্রতার রাখী
পড়াই। বাবাকে স্মরণ করো, পবিত্র হও তবেই এমন (দেবতা) হবে।* এখন তোমাদের মধ্যে কোনো
কলা নেই। সকলের উপরেই গ্রহণ লেগেছে। তোমরা হলে ব্রাহ্মণ, তাই না! যেখানেই যাও -- বলো,
(বিকারের) দান করো তবেই গ্রহণ-মুক্ত হবে। পবিত্র হও। বিকারে কখনো যেও না। বাবাকে
স্মরণ করলে বিকর্ম বিনাশ হবে আর তোমরা ফুলে পরিণত হয়ে যাবে। তোমরাই ফুল ছিলে, পরে
কাঁটা হয়েছো। ৮৪ জন্ম নিতে-নিতে অধঃপতনে গেছো। এখন ফিরে যেতে হবে। বাবা
এঁনার(ব্রহ্মা) দ্বারা ডায়রেক্শন দিচ্ছেন। তিনি হলেন সর্বোচ্চ ভগবান। ওঁনার শরীর
নেই। আচ্ছা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকরের শরীর আছে কী ? তোমরা বলবে, হ্যাঁ, সূক্ষ্ম শরীর
আছে। কিন্তু তা মানুষের দ্বারা সৃষ্ট তো নয়। সমগ্র খেলা এখানেই। সূক্ষ্মলোকে নাটক
হবে কীভাবে ? তেমনই মূললোকেও (মূলবতন) সূর্য-চন্দ্র তো নেই, তবে নাটক কীভাবে হবে ?
এ হলো অতি বড় ব্রহ্মান্ড। পুনর্জন্মও এখানেই হয়। সূক্ষ্মলোকে হয় না। এখন তোমাদের
বুদ্ধিতে অসীম জগতের সমগ্র খেলাই বিরাজ করছে। এখন তোমরা জানতে পেরেছো যে -- আমরা যে
দেবী-দেবতা ছিলাম কীভাবে সেখান থেকে বাম-মার্গে চলে এসেছি। *বাম-মার্গ বিকারীমার্গকে
বলা হয়*। আধাকল্প আমরা পবিত্র ছিলাম, এই হার-জীতের খেলা আমাদেরই। ভারত অবিনাশী খন্ড।
এর কখনও বিনাশ হয় না। যখন আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম ছিল তখন অন্যান্য কোনো ধর্ম
ছিল না। তোমাদের এই কথাগুলোকে তারাই মান্যতা দেবে যারা কল্প-পূর্বেও মান্যতা
দিয়েছিল। ৫ হাজার বছরের পুরানো কোনো জিনিস হয় না। সত্যযুগে পুনরায় তোমরা প্রথমে
গিয়ে নিজেদের মহল তৈরী করবে। এমন নয় যে, সোনার দ্বারকা সমুদ্রের নীচে কোথাও রয়েছে
তা বেরিয়ে আসবে। দেখানো হয়েছে, সাগরের থেকে দেবতারা রত্নের থলি ভরে-ভরে দিত। *বাচ্চারা,
বাস্তবে জ্ঞান-সাগর পিতা তোমাদের জ্ঞান-রত্নের থলি ভরে-ভরে দিচ্ছেন। দেখানো হয়েছে,
শঙ্কর পার্বতীকে কথা শুনিয়েছিল। জ্ঞান-রত্নের দ্বারা ঝুলি পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল।
শঙ্করের উদ্দেশ্যে বলা হয় -- ভাঙ্গ-ধুতরা পান করতো, আবার তার সম্মুখে গিয়েই বলে ঝুলি
ভরে দিতে, বলে আমাদের ধন প্রদান করো। তাহলে দেখো শঙ্করেরও কত গ্লানি করেছে।
সর্বাপেক্ষা অধিক গ্লানি করে আমার ।* এও এক খেলা, যা পুনরায় ঘটবে। এই নাটককে কেউ
জানেই না। আমি এসে আদি থেকে অন্তের সমগ্র রহস্য বোঝাই। এও জানো যে,সর্বোচ্চ হলেন
পিতা। *বিষ্ণু তথা ব্রহ্মা, ব্রহ্মা তথা বিষ্ণু কিভাবে হয় -- তা কেউই বুঝতে পারেনা।*
বাচ্চারা, এখন তোমরা এইজন্যই পুরুষার্থ করো যে, আমরা গিয়ে বিষ্ণুকুলের হবো।
বিষ্ণুপুরীর মালিক হওয়ার জন্য তোমরা ব্রাহ্মণ হয়েছো। তোমাদের হৃদয়ে একথা রয়েছে যে
-- আমরা অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা শ্রীমতানুসারে নিজেদের জন্য সূর্যবংশীয়-চন্দ্রবংশীয়
রাজধানী স্থাপন করছি। এরমধ্যে লড়াই ইত্যাদির কোনো কথা নেই। দেবতা আর অসুরের লড়াই
কখনও হয় না। দেবতারা থাকে সত্যযুগে। সেখানে লড়াই হবে কিভাবে ? তোমরা ব্রাহ্মণেরা
যোগবলের দ্বারা বিশ্বের মালিক হও। বাহুবলীরা বিনাশপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। তোমরা
সাইলেন্সের শক্তির দ্বারা সাইন্সের উপর বিজয়প্রাপ্ত করো। এখন তোমাদের আত্ম-অভিমানী
হতে হবে। আমরা হলাম আত্মা, আমাদের নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। আত্মারা অতি তীক্ষ্ণ
অর্থাৎ দ্রুতগতিসম্পন্ন। এখন এমন এরোপ্লেন বেরিয়েছে যা এক ঘন্টায় কোথা থেকে কোথায়
চলে যায়। এখন আত্মা তো তার থেকেও দ্রুতগামী । এক চুটকিতে অর্থাৎ অতি দ্রুত আত্মা
কোথা থেকে কোথায় গিয়ে জন্ম নেয়। কেউ-কেউ বিদেশে গিয়েও জন্ম নেয়। আত্মাই হলো
সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী রকেট। এরমধ্যে মেশিনাদির কোনো কথা নেই। শরীর পরিত্যাগ করা আর
পালিয়ে চলে যাওয়া। বাচ্চারা, এখন তোমাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে, আমাদের ঘরে ফিরে যেতে
হবে, অপবিত্র আত্মা তো যেতে পারে না। তোমরা পবিত্র হয়েই যাবে, বাকিরা তো সকলেই
সাজাভোগ করে যাবে। তারা অত্যন্ত শাস্তিভোগ করে। ওখানে(স্বর্গে) গর্ভ-মহলে আরাম করে
থাকে। বাচ্চারা সাক্ষাৎকার করেছে। কৃষ্ণের জন্ম কিভাবে হয়, অপবিত্রতার কোনো কথাই
নেই। যেমন সম্পূর্ণ আলোকিত হয়ে যায়। এখন তোমরা বৈকুন্ঠের মালিক হতে চলেছো তাহলে
পুরুষার্থও তেমনই করা উচিত। *ভোজন শুদ্ধ, পবিত্র হওয়া উচিত। সর্বাপেক্ষা ভালো হল
ডাল-ভাত। ঋষিকেশে, সন্ন্যাসীরা একটি জানালা দিয়ে খাবার নেয়, তারপর চলে যায়, হ্যাঁ,
এক-একজন এক-একধরণের হয়। আচ্ছা।
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সতর্ক প্রহরায় রাখতে হবে। মায়ার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে।
সত্যি করেই স্মরণের চার্ট রাখতে হবে।
২) মাতা-পিতাকে ফলো
করে হৃদয়-সিংহাসনে আসীন হতে হবে। দিন-রাত সার্ভিসে তৎপর হতে হবে। সকলকে সমাচার দিতে
হবে যে, বাবাকে স্মরণ করো। ৫ বিকারকে দান করে দাও তবেই (মায়ার) গ্রহণ-মুক্ত হবে।
বরদান:-
বাবার
স্মরণ দ্বারা অসন্তোষের পরিস্থিতিতে সদা সুখ বা সন্তুষ্টতার অনুভূতি প্রদানকারী
মহাবীর ভব
যারা সদা বাবার স্মরণে
থাকে, তারা প্রতিটি পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকে। কারণ জ্ঞানের শক্তির দ্বারা (আধারে)
পাহাড়-প্রমাণ পরিস্থিতিও সরিষার দানার মতন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুভূত হয়। রাই অর্থাৎ
কিছুই নয়। যদি পরিস্থিতি অসন্তুষ্টতার থাকেও, দুঃখের কোনো ঘটনাও ঘটে, তথাপি দুঃখের
পরিস্থিতিতেও যেন সুখের স্থিতি বজায় থাকে । তবেই বলা হবে মহাবীর। যাকিছুই হয়ে যাক্,
এ নতুন কিছুই নয়(নাথিং নিউ), এর সঙ্গে-সঙ্গে বাবাকে স্মরণের দ্বারা যদি সদা একরস
স্থিতিতে থাকতে পারা যায়, তাহলে পুনরায় দুঃখ, অশান্তির ঢেউও আসতে পারবে না।
স্লোগান:-
নিজের
দৈবী-স্বরূপ যেন সদা স্মৃতিতে থাকে, তাহলে কারোর-ই ব্যর্থ-দৃষ্টি পড়তে পারবে না।