06.05.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
নিজেকে দেখো, আমি ফুল হতে পেরেছি ? দেহ-অহংকারে এসে কাঁটা তো হইনি? বাবা এসেছেন
তোমাদেরকে কাঁটা থেকে ফুল বানাতে”
প্রশ্নঃ -
কোন্
নিশ্চয়ের আধারে বাবার সাথে অটুট ভালোবাসা থাকতে পারে ?
উত্তরঃ -
প্রথমে নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করো, তাহলে বাবার সাথে ভালোবাসা থাকবে। এটাও অটুট
নিশ্চয় চাই যে, নিরাকার বাবা এই ভাগীরথের মধ্যে বিরাজিত হয়ে আছেন। তিনি আমাদেরকে
এঁনার দ্বারা পড়াচ্ছেন। যখন এই নিশ্চয় ভেঙে যায় তখন ভালোবাসাও কম হয়ে যায়।
ওম্ শান্তি ।
কাঁটা থেকে
ফুল প্রস্তুতকারী ভগবানুবাচ অথবা বাগানের মালি ভগবানুবাচ। বাচ্চারা জানে যে, আমরা
এখানে কাঁটা থেকে ফুল হওয়ার জন্য এসেছি। প্রত্যেকেই এটা বোঝে যে, আমরা প্রথমে কাঁটা
ছিলাম। এখন ফুল তৈরি হচ্ছি। বাবার মহিমা তো অনেকেই অনেকভাবে করে, পতিত-পাবন এসো।
তিনি হলেন মাঝি, বাগানের মালি, পাপ কাটেশ্বর। অনেক নাম-ই বলে থাকে, কিন্তু তাঁর
মূর্তি তো সব জায়গায় একই রকম হয়। তার মহিমা গাইতে থাকে যে, জ্ঞানের সাগর, সুখের
সাগর... এখন তোমরা জানো যে, আমরা এই এক বাবার পাশে বসে আছি। কাঁটা রূপী মানুষ থেকে
এখন আমরা ফুল রূপী দেবতা হতে এসেছি। এটা হলো আমাদের এইম অবজেক্ট। এখন প্রত্যেককে
নিজেদেরকে দেখতে হবে যে, আমাদের মধ্যে দৈবী গুন আছে? আমি কি সর্ব্বগুণসম্পন্ন হতে
পেরেছি? আগে তো দেবতাদের মহিমা গুণকীর্তন করতাম, নিজেদেরকে কাঁটা মনে করতাম। আমাদের
নির্গুণ শরীরে কোনো গুণ নেই... কেননা ৫ বিকার আছে। দেহ-অভিমানও হল খুব তেজী অভিমান
। নিজেকে আত্মা মনে করো, তাহলে বাবার সাথে অনেক ভালোবাসা থাকবে। এখন তোমরা জানো যে
নিরাকার বাবা এই রথের মধ্যে বিরাজিত আছেন। এটা নিশ্চয় করতে-করতেও পুনরায় নিশ্চয়
ভেঙে যায়। তোমরা বলেও থাকো যে আমরা এসেছি শিব বাবার কাছে। যিনি এই ভাগীরথ প্রজাপিতা
ব্রহ্মার শরীরে আছেন, আমাদের সকল আত্মাদের বাবা হলেন এক শিব বাবা, তিনি এই রথের
মধ্যে বিরাজিত আছেন। এটা খুব পাকাপাকিভাবে নিশ্চয় চাই, কারণ এতেই মায়া সংশয় নিয়ে
আসে। কন্যা পতির সাথে বিবাহ করে, মনে করে যে, তার থেকে অনেক সুখ প্রাপ্ত হবে, কিন্তু
প্রকৃত সুখ সে পায় না, সংসারে গিয়ে সে অপবিত্র হয়ে যায়। যখন কুমারী ছিল তখন মা
বাবা আদি সবাই তার কাছে মাথা নত করতো, কেননা সে পবিত্র ছিল। এখন অপবিত্র হয়েছে আর
সে সকলের সামনে গিয়ে মাথা নত করা শুরু করে দিয়েছে। আজকে সবাই তার সামনে মাথা নত
করছে, কালকে সে সকলের কাছে গিয়ে মাথা নত করবে।
এখন বাচ্চারা, তোমরা সঙ্গমযুগে পুরুষোত্তম হচ্ছো। কাল কোথায় থাকবে ? আজকের এই
ঘর-ঘাট এসব কেমন আছে ? কত নোংরা হয়ে গেছে! এটাকে বলাই হয় বেশ্যালয়। এখানে সবাই
বিষের দ্বারা জন্মগ্রহণ করে। তোমরাই শিবালয়ে ছিলে, আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে খুব
সুখী ছিলে। সেখানে দুঃখের কোনো নাম গন্ধ ছিল না। এখন পুনরায় এইরকম হওয়ার জন্য
এসেছো। সাধারণ মানুষ শিবালয়কে জানেই না। স্বর্গকে বলা হয় শিবালয়। শিববাবা
স্বর্গের স্থাপনা করেন। ‘বাবা’ তো সবাই বলে, কিন্তু জিজ্ঞাসা করো ফাদার কোথায় আছেন?
তখন বলে দেয়, তিনি হলেন সর্বব্যাপী। কুকুর-বিড়াল, কচ্ছপ-মৎস সকলের মধ্যেই ভগবান
আছেন, বলে দেয়, তাহলে কত পার্থক্য হয়ে গেল। বাবা বলেন যে, তোমরা পুরুষোত্তম ছিলে,
পুনরায় ৮৪ জন্ম ভোগ করে তোমরা কি হয়ে গেছো ? নরকবাসী হয়ে গেছো, এই জন্য সবাই গান
করে যে, হে পতিতপাবন এসো। এখন বাবা পবিত্র বানাতে এসেছেন। তিনি বলেন, এই অন্তিম
জন্মে বিষপান করা ছেড়ে দাও। তবুও কেউ বুঝতে চায় না। সকল আত্মাদের বাবা এখন বলছেন
যে - পবিত্র হও। সবাই বলেও যে, বাবা, আত্মাদের প্রথমে শিববাবা স্মরণে আসে, তারপর এই
ব্রহ্মাবাবা। নিরাকারে শিববাবা আর সাকারে এই ব্রহ্মাবাবা। সুপ্রিম আত্মা এই পতিত
আত্মাদেরকে বসে বোঝাচ্ছেন। তোমরাই প্রথমে পবিত্র ছিলে। বাবার সাথেই ছিলে, পুনরায়
তোমরা এখানে এসে অভিনয় করছো। এই সৃষ্টিচক্রকে ভালোভাবে বুঝে নাও। এখন আমরা সত্যযুগে
নতুন দুনিয়াতে যাচ্ছি। তোমাদের এই আশা ছিল যে, আমরা স্বর্গে যাবো। তোমরা এটাও বলে
ছিলে যে, কৃষ্ণের মতো যেন সন্তান হয়। এখন আমি এসেছি তোমাদেরকে সেই রকম তৈরি করতে।
সেখানে সন্তান হবেই কৃষ্ণের মতো। সতোপ্রধান ফুল তাইনা। এখন তোমরা কৃষ্ণপুরীতে
যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছো। তোমরা তো স্বর্গের মালিক হবে। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করো,
আমি ফুল তৈরি হয়েছি? কোথাও দেহ-অহংকারে এসে কাঁটা তো হচ্ছি না? সাধারণ মানুষ
নিজেদেরকে আত্মা মনে করার পরিবর্তে দেহ ভেবে নেয়। আত্মাকে ভুলে যাওয়ার কারণে
বাবাকেও ভুলে গেছে। বাবাকে বাবার দ্বারাই জানার কারণে বাবার থেকে অবিনাশী
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়। অসীম জগতের বাবার থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার তো সবাই
প্রাপ্ত করতে পারে। এমন একজনও থাকবে না, যে এই অবিনাশী উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত
থাকবে। বাবা-ই এসে সবাইকে পাবন তৈরি করে নির্বাণধামে নিয়ে যান। তারা তো বলে দেয়
যে - জ্যোতি জ্যোতিতে সমায়িত হয়ে যায়। ব্রহ্মে লীন হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কোনো
জ্ঞান থাকেনা। তোমার এখন জেনেছো যে, আমরা কার কাছে এসেছি ? এটা কোনো সাধারণ মানুষের
সৎসঙ্গ নয়। আত্মারা, পরমাত্মার থেকে আলাদা হয়েছিলো, এখন পুনরায় তাঁর সঙ্গ
প্রাপ্ত হয়েছে। এটাই হলো সত্যিকারের সৎসঙ্গ, যেটা ৫ হাজার বছরে একই বার হয়।
সত্যযুগ ত্রেতাতে তো কোনো সৎসঙ্গ আদি হয় না। ভক্তিমার্গে তো অনেক-অনেক সৎসঙ্গ হয়।
এখন বাস্তবে সৎ তো হলেন এক বাবা। এখন তোমরা তাঁর সঙ্গে বসে আছো। এটাও যেন স্মরণে
থাকে যে, আমরা হলাম গডলী স্টুডেন্ট অর্থাৎ ঈশ্বরীয় ছাত্র। ভগবান আমাদেরকে
পড়াচ্ছেন, এটাই আমাদের পরম সৌভাগ্য।
আমাদের বাবা এখানেই আছেন, তিনি হলেন আমাদের বাবা, শিক্ষক আবার সদ্গুরু। তিনটি
সম্বন্ধেই এখন অভিনয় করছেন। বাচ্চাদেরকে নিজের আপন করে নেন। বাবা বলছেন যে,
স্মরণের দ্বারাই বিকর্ম বিনাশ হয়। বাবাকে স্মরণ করলেই পাপ কেটে যায়। তারপর তোমরা
লাইটের মুকুট প্রাপ্ত করো। এটাও হল একটা নিদর্শন। তা বলে এটা নয় যে, লাইট দেখা যাবে।
এটা হল পবিত্রতার নিদর্শন। এই জ্ঞান আর কেউই প্রাপ্ত করতে পারে না। এই জ্ঞানের দাতা
তো হলেন এক বাবা। তিনি তো হলেন জ্ঞানের সাগর। বাবা বলছেন যে, আমি হলাম মনুষ্য
সৃষ্টির বীজ স্বরূপ। এটা হলো উল্টো বৃক্ষ। এটা হল কল্পবৃক্ষ তাই না। প্রথমে দৈবী
ফুলের বৃক্ষ ছিল। এখন কাঁটার জঙ্গল হয়ে গেছে কেননা ৫ বিকার এসে গেছে। প্রথমে মুখ্য
হলো দেহ-অভিমান। সেখানে দেহ-অভিমান থাকে না। এটাই মনে থাকে যে, আমরা হলাম আত্মা।
সেখানে কেউ পরমাত্মা বাবাকে জানবে না। আমরা হলাম আত্মা, ব্যস। দ্বিতীয় কোনো জ্ঞান
থাকবে না। (সর্পের নিদর্শন) এখন তোমাদেরকে এটা বোঝানো হয়েছে যে, জন্ম-জন্মান্তরের
পুরানো নষ্ট হয়ে যাওয়া এই দেহরূপী খোলস এখন তোমাদেরকে ত্যাগ করতে হবে। এখন আত্মা
আর শরীর দুটোই হল পতিত। আত্মা পবিত্র হয়ে গেলে পুনরায় এই শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে।
আত্মারা সবাই পরমধামে চলে যাবে। এই জ্ঞান এখন তোমাদের কাছেই আছে যে, এই নাটক
সম্পূর্ণ হতে চলেছে। এখন আমাদেরকে বাবার কাছে যেতে হবে, এইজন্য ঘরকে স্মরণ করতে হবে।
এই দেহকে ছেড়ে দিতে হবে, শরীর সমাপ্ত হয়ে গেলে তো দুনিয়াও শেষ হয়ে যাবে। পুনরায়
নতুন ঘরে যাবো, নতুন সম্বন্ধ হয়ে যাবে। তারা তো পুনরায় পুনর্জন্ম এখানেই নিতে থাকে।
তোমাদেরকে তো পুনর্জন্ম নিতে হবে ফুলের দুনিয়াতে। দেবতাদেরকে পবিত্র বলা হয়। তোমরা
জেনেছো যে, আমরাই ফুল ছিলাম, পুনরায় কাঁটা হয়ে গেছি, পুনরায় ফুলের দুনিয়াতে যেতে
হবে। পরবর্তীকালে তোমাদের অনেক সাক্ষাৎকার হবে। সেগুলি হলো সব খেলা। মীরা ধ্যানে
গিয়ে কৃষ্ণের সাথে রাস করতো, তার কাছে কোনো জ্ঞান ছিল না। মীরা কোনো বৈকুণ্ঠ আদিতে
যেতে পারবে না। এখানেই কোথাও আছে। এই ব্রাহ্মণ কুলের হলে তো এখানে এসে জ্ঞান নেবে।
এমন নয় যে, রাস করেছে তো বৈকুন্ঠে চলে গেছে। এরকম তো অনেকেই কৃষ্ণের সাথে রাস
করেছিলো। ধ্যানে গিয়ে দেখে আসতো, তারপর গিয়ে বিকারী হয়ে গেছে। গাওয়া হয় না,যে,
পুরুষার্থ করলে বৈকুন্ঠ রস চাখতে পারবে আর পড়ে গেলে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে....
বাবা ভীতি প্রদান করছেন যে - তোমরা বৈকুণ্ঠের মালিক হতে পারো যদি জ্ঞান আর যোগ শেখো
তো। বাবাকে ছেড়ে দিলে একদম বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়বে। আশ্চর্য ভাবে বাবার হয়, বাবার
শ্রীমত শোনে, সবাইকে শোনায়, পুনরায় চলে যায়। অহো মায়া, কত গভীর ক্ষত করে দেয়।
এখন বাবার শ্রীমতে চলে তোমরা দেবতা হচ্ছো। আত্মা আর শরীর দুটোই শ্রেষ্ঠ চাই, তাই
না। দেবতার জন্ম কোনো বিকারের দ্বারা হয় না। সেটা হলোই নির্বিকারী দুনিয়া। সেখানে
৫ বিকার থাকেনা। শিববাবা স্বর্গ রচনা করেন। এখন হলো নরক। এখন তোমরা পুনরায়
স্বর্গবাসী হওয়ার জন্য এসেছো। যে খুব ভালো রীতি পড়ে, সেই স্বর্গে যাবে। তোমরা
পুনরায় পড়ছো, কল্প কল্প পড়তেই থাকবে। এই সৃষ্টি চক্রের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।
এটাই হলো দৈবনির্দিষ্ট ড্রামা, এই ড্রামার চক্র থেকে কেউ মুক্ত হতে পারে না। যা কিছু
দেখছো, এই যে মাছি উড়ে যাচ্ছে, কল্প পরেও এখান দিয়ে এই মাছিটি উড়ে যাবে। এটা
বোঝার জন্য বিশাল বুদ্ধি চাই। এই শুটিং হতেই থাকবে। এটা হল কর্মক্ষেত্র। পরমধাম থেকে
তোমরা এখানে এসেছো অভিনয় করার জন্য।
এখন এই পড়াশোনাতে তো কেউ খুব সতর্ক হয়ে যায়, কেউ আবার এখনও পড়ছে। কেউ
পড়তে-পড়তে পুরানোদের থেকেও এগিয়ে যায়। জ্ঞান সাগর তো সবাইকেই সমানভাবে পড়াতে
থাকেন। বাবার হলেই বিশ্বের অবিনাশী উত্তরাধিকার তোমাদের হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ,
তোমাদের আত্মা এখন পতিত হয়ে গেছে, তাকে পাবন অবশ্যই বানাতে হবে, তার জন্য সহজের
থেকেও সহজ পদ্ধতি হল - অসীম জগতের বাবাকে স্মরণ করতে থাকো তো তোমরা এইরকম হয়ে যাবে।
বাচ্চারা তোমাদেরকে এই পুরানো দুনিয়া থেকে বৈরাগ্য বৃত্তি আনতে হবে। বাকি
মুক্তিধাম, জীবন মুক্তিধাম তো আছেই। আর কাউকেই আমরা স্মরণ করি না এক শিববাবাকে ছাড়া।
ভোরবেলা উঠে অভ্যাস করতে হবে যে, আমি অশরীরী এসেছি, অশরীরী হয়ে যেতে হবে। তাহলে কোনো
দেহধারীকে আমরা কেন স্মরণ করবো ? ভোরবেলা অমৃতবেলায় উঠে নিজের সাথে এরকম এইরকম কথা
বলতে হবে। ভোরবেলাকে অমৃতবেলা বলা হয়। জ্ঞানামৃত জ্ঞান সাগরের কাছেই আছে। তাই
জ্ঞান সাগর বলছেন যে, ভোরবেলার সময় খুব ভালো। অমৃতবেলায় উঠে খুব প্রেমসহিত বাবাকে
স্মরণ করো - বাবা, তুমি ৫ হাজার বছর পর আমাদের সঙ্গে মিলিত হতে এসেছো। এখন বাবা
বলছেন যে, আমাকে স্মরণ করো, তবে পাপ নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রীমতে চলতে হবে। সতোপ্রধান
অবশ্যই হতে হবে। বাবাকে স্মরণ করার অভ্যাস পড়ে গেলে তো খুশিতে বসেই থাকবে। শরীরের
ভান কেটে যাবে। পুনরায় এই দেহের ভানও আসবে না। অনেক খুশিতে থাকবে। তোমরা যখন পবিত্র
ছিলে তখন খুব খুশিতে ছিলে। তোমাদের বুদ্ধিতে এই সমস্ত জ্ঞান রাখতে হবে। প্রথম-প্রথম
যে আসবে, তাকে অবশ্যই ৮৪ জন্ম নিতে হবে। পুনরায় চন্দ্রবংশী কিছু কম, ইসলামী তার
থেকেও কম। নম্বরের ক্রমানুসারে বৃক্ষ বৃদ্ধি হতে থাকে তাই না। মুখ্য হলো দৈবী ধর্ম,
তারপর তার থেকে তিন ধর্ম নির্গত হয়। তারপর তো আরো ডালপালা বেরিয়ে আসে। এখন তোমরা
ড্রামাকে জেনে গেছো। এই ড্রামা উকুনের মতো খুব খুব ধীরে ধীরে চলতে থাকে। সেকেন্ড
প্রতি সেকেন্ডে টিক-টিক করে চলতে থাকে। এই জন্য গাওয়া হয় যে, সেকেন্ডে জীবন্মুক্তি।
আত্মা নিজের বাবাকে স্মরণ করে। বাবা, আমরা হলাম আপনার সন্তান। আমাদের তো এখন স্বর্গে
থাকার কথা, তাহলে কেন এই নরকে পড়ে আছি। বাবা তো স্বর্গের স্থাপনা করেন তাহলে এখন
নরকে কেন আছি। বাবা বোঝাচ্ছেন যে, তোমরা স্বর্গে ছিলে, ৮৪ জন্ম নিতে নিতে তোমরা সব
ভুলে গিয়েছিলে। এখন পুনরায় আমার শ্রীমতে চলো। বাবার স্মরণেই বিকর্ম বিনাশ হবে
কেননা আত্মার মধ্যেই সমস্ত পাপ জমা থাকে। শরীর হলো আত্মার বিভূষণ। আত্মা পবিত্র হলে
শরীরও পবিত্র প্রাপ্ত হবে। তোমরা জানো যে, আমরা স্বর্গে ছিলাম, এখন পুনরায় বাবা
এসেছেন, তো বাবার থেকে সম্পূর্ণ অবিনাশী উত্তরাধিকার নিতে হবে তাই না। ৫ বিকারকে
ত্যাগ করতে হবে। দেহ-অভিমান ছাড়তে হবে। কাজ-কর্ম করতেও বাবাকে স্মরণ করতে থাকো।
আত্মা নিজের প্রেমিককে অর্ধেক কল্প ধরে স্মরণ করে এসেছে। এখন সেই প্রেমিক তোমাদের
সম্মুখে এসে গেছেন। তিনি বলছেন যে, তোমরা কাম চিতাতে বসে কালো হয়ে গেছো। এখন আমি
সুন্দর বানাতে এসেছি। তার জন্য হল এই যোগ অগ্নি। জ্ঞানকে চিতা বলা যাবেনা। যোগ হল
চিতা। স্মরণের চিতায় বসলে বিকর্ম বিনাশ হবে। জ্ঞানকে তো নলেজ বলা হয়। বাবা তোমাদেরকে
সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান শোনাচ্ছেন। উঁচুর থেকেও উঁচু হলেন বাবা। পুনরায়
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকর, পুনরায় সূর্যবংশী-চন্দ্রবংশী, পুনরায় অন্যান্য ধর্মের স্থান
আছে। বৃক্ষ কত বড় হয়ে যায়। এখন এই বৃক্ষের মূল কান্ড নেই। এই জন্য (কলকাতার)
বটবৃক্ষের উদাহরণ দেওয়া হয়। দেবী-দেবতা ধর্ম প্রায়ঃলোপ হয়ে গেছে। ধর্মভ্রষ্ট,
কর্মভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাচ্চারা তোমরা শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ কর্ম করছো।
নিজের দৃষ্টিকে সিভিল বানাচ্ছো। তোমরা এখন কোনো ভ্রষ্ট-কর্ম করোনা। কোনো কুদৃষ্টি
যেন না যায়। নিজেকে দেখো - আমি লক্ষ্মীকে বরণ করার যোগ্য হয়েছি ? আমি নিজেকে আত্মা
মনে করে বাবাকে স্মরণ করছি ? দৈনন্দিন চার্ট দেখো। সারাদিনে দেহ-অভিমানে এসে কোনো
বিকর্ম তো করিনি ? নাহলে তো একশত গুণ হয়ে যাবে। মায়া চার্ট রাখতেও দেয়না। ২-৪ দিন
লিখে তারপর ছেড়ে দেয়। বাবাও উদ্বিগ্ন থাকেন, তাই না। দয়া হয় - বাচ্চারা আমাকে স্মরণ
করলে তো পাপ কেটে যাবে। এতেই পরিশ্রম আছে। এথেকে নিজেকে অব্যাহত রেখো না। জ্ঞান তো
হলো খুব সহজ। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
অমৃতবেলায় উঠে বাবার সাথে মিষ্টি মিষ্টি বার্তালাপ করতে হবে। অশরীরী হওয়ার অভ্যাস
করতে হবে। এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে যে, বাবার স্মরণ ছাড়া অন্য কিছু যেন মনে না আসে।
২) নিজের দৃষ্টিকে
খুব শুদ্ধ পবিত্র বানাতে হবে। দৈবী ফুলের বাগান তৈরি হচ্ছে এই জন্য ফুল হওয়ার
সম্পূর্ণ পুরুষার্থ করতে হবে। কাঁটা হবে না।
বরদান:-
প্রত্যেক সংকল্প, সময়, বৃত্তি আর কর্মের দ্বারা সেবা করে নিরন্তর সেবাধারী ভব
যেরকম বাবা আমাদের
কাছে খুব প্রিয়, বাবা ছাড়া যেন জীবন নেই, এইরকমই সেবা ছাড়াও জীবন বৃথা। নিরন্তর
যোগীর সাথে-সাথে নিরন্তর সেবাধারী হও। শোয়ার সময়ও সেবা হবে। শোয়ার সময় যদি কেউ
তোমাদেরকে দেখে তো, তোমাদের চেহারার দ্বারা শান্তি, আনন্দের ভাইব্রেশন অনুভব করবে।
প্রত্যেক কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা বাবাকে স্মরণ করার স্মৃতি দেওয়ার সেবা করতে থাকো।
নিজের শক্তিশালী বৃত্তি দ্বারা ভাইব্রেশন ছড়িয়ে দাও, কর্ম দ্বারা *কর্মযোগী ভব* -র
বরদান দিতে থাকো, প্রত্যেক কদমে পদমগুণ উপার্জন জমা করতে থাকো, তখন বলা যাবে
নিরন্তর সেবাধারী অর্থাৎ সার্ভিসেবল্।
স্লোগান:-
নিজের
আত্মিক ব্যক্তিত্বকে স্মৃতিতে রাখো তো মায়াজীত হয়ে যাবে।