02.05.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
এখন তোমরা সঙ্গমযুগে রয়েছ, তোমাদেরকে এই পুরাতন দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে
হবে, কারণ এবার এই পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ হবে”
প্রশ্নঃ -
কোন্
বিশেষত্বের জন্য সঙ্গমযুগ সমগ্র কল্পের থেকে আলাদা ?
উত্তরঃ -
সঙ্গমযুগের বিশেষত্ব হলো - এখানে পড়াশুনা করো, আর ভবিষ্যতে গিয়ে তার ফল পাও। সমগ্র
কল্পে আর কখনো এইরকম পড়াশুনা করা হয় না যার ফল পরের জন্মে পাওয়া যায়। এখন তোমরা
বাচ্চারা এই মৃত্যুপুরীতে পড়াশুনা করছ অমরপুরীর জন্য। অন্য কেউ এইরকম পরের জন্মের
জন্য পড়াশুনা করে না।
গীতঃ-
দূর দেশবাসী…
ওম্ শান্তি ।
কে দূর দেশবাসী
? কেউই এটা জানে না। ওঁনার কি নিজের দেশ নেই যে তিনি পরের দেশে এসেছেন ? তিনি কখনোই
নিজের দেশে আসেন না। এই রাবণের রাজত্ব হলো পরের দেশ। শিববাবা কি তাঁর নিজের দেশে
আসেন না ? আচ্ছা, এই রাবণের পরদেশ কোন্ দেশকে বলা হয় ? আর নিজের দেশ-ই বা কোনটা ?
শিববাবার নিজের দেশ কোনটা, আর পরদেশ কোনটা ? বাবা যদি পরের দেশেই আসেন, তাহলে তাঁর
নিজের দেশ কোনটা ? নিজের দেশ স্থাপন করতে তিনি আসেন কিন্তু তিনি কি তাঁর নিজের দেশে
আসেন ? (কেউ কেউ উত্তর দিয়েছে) আচ্ছা, এই বিষয়টা নিয়ে সকলে বিচার সাগর মন্থন করবে ?
*এই বিষয়টা ভালো করে বুঝতে হবে।* মুখে ‛রাবণের দেশ, পরের দেশ’ বলে দেওয়া তো খুবই
সহজ। রাম রাজত্বে কখনোই রাবণ আসে না। কিন্তু বাবাকে রাবণের দেশে আসতে হয় কারণ এই
রাবণের রাজত্বকে চেঞ্জ করার প্রয়োজন হয়। এটা হলো সঙ্গমযুগ। তিনি সত্যযুগেও আসেন না
আর কলিযুগেও আসেন না। কেবল সঙ্গমযুগেই আসেন। তাই এটা যেমন রামের দেশ, সেইরকম
রাবণেরও দেশ। এই পাড় রামের আর ওই পাড় রাবণের। এটা হলো সঙ্গম। তোমরা বাচ্চারা এখন এই
সঙ্গমে রয়েছ। এই দিকেও নেই, ওই দিকেও নেই। নিজেকে এই সঙ্গমযুগ-বাসী বলে বুঝতে হবে।
ওই পাড়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই। বুদ্ধির দ্বারা পুরাতন দুনিয়ার সঙ্গে সকল
সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। থাকতে তো এখানেই হবে। কিন্তু বুদ্ধির দ্বারা জেনেছো যে এই
গোটা পুরাতন দুনিয়াটাই বিনষ্ট হয়ে যাবে। আত্মা-রা বলছে - এখন আমি সঙ্গমযুগ-বাসী।
বাবা এসে গেছেন। তাঁকে মাঝিও বলা হয়। এখন আমরা যাত্রা করছি। কিভাবে ? যোগের দ্বারা।
*যোগের জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন, আবার জ্ঞানের জন্যেও যোগের প্রয়োজন।* যোগের ক্ষেত্রে
বোঝানো হয় - নিজেকে আত্মা অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করো। এটাও তো জ্ঞান, তাই না ? বাবা
শ্রীমৎ দিতে এসেছেন। তিনি বলছেন - নিজেকে আত্মা অনুভব করো। আত্মা-ই ৮৪ বার জন্ম
গ্রহণ করে। বাচ্চাদেরকেই বাবা বিস্তারিত ভাবে বোঝান। এখন এই রাবণের রাজত্বের বিনাশ
আসন্ন। এখানে রয়েছে কর্ম-বন্ধন, আর ওখানে (স্বর্গে) রয়েছে কর্ম-সম্বন্ধ। বন্ধন
মানেই দুঃখ, সম্বন্ধ মানেই সুখ। এখন এই কর্ম-বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। বুদ্ধিতে রয়েছে
যে আমরা এখন ব্রাহ্মণ সম্বন্ধে আছি, এরপরে দেবতা সম্বন্ধে যাব। ব্রাহ্মণ সম্বন্ধে
এই একটাই জন্ম হয়। এরপর ৮ এবং ১২ জন্ম ধরে দেবতা সম্বন্ধে থাকব। বুদ্ধিতে এই জ্ঞান
আছে বলে তোমরা এই কলিযুগের পতিত কর্ম-বন্ধনের একপ্রকার গ্লানি করো। এই দুনিয়ার
কর্ম-বন্ধনের মধ্যে এখন আর থাকতে হবে না। তোমরা বুঝেছ যে এগুলো সব আসুরিক
কর্ম-বন্ধন। আমরা গুপ্ত ভাবে একটা যাত্রা করছি। বাবা আমাদের এই যাত্রা শিখিয়েছেন।
এরপর এই কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কর্মাতীত হয়ে যাবে। এই কর্ম-বন্ধন গুলো তো এবার
অবশ্যই ছিন্ন হবে। পবিত্র হয়ে সৃষ্টিচক্রকে বুঝে চক্রবর্তী রাজা হওয়ার জন্য আমরা
বাবাকে স্মরণ করছি। পড়াশুনা তো করছি, কিন্তু এর একটা এম অবজেক্ট অথবা প্রাপ্তি তো
অবশ্যই থাকবে। তোমরা জানো যে অসীম জগতের পিতা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন। ৫ হাজার বছর
আগেও তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যাদেরকে আগের কল্পে পড়িয়েছিলেন, তাদেরকেই এখন
পড়াবেন। ধীরে ধীরে আসতে থাকবে, বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সবাই তো আর সত্যযুগে আসবে না।
বাকিরা সকলে বাড়ি ফিরে যাবে। এই পাড়ে নরক, আর ওই পাড়ে স্বর্গ। জাগতিক পড়াশুনাতে ওরা
জানে যে আমরা এখানে পড়ছি এবং এখানেই ফল পাব। কিন্তু এখানে আমরা সঙ্গমযুগে পড়ছি আর
নুতন দুনিয়াতে গিয়ে এর ফল পাব। এটা তো নুতন কথা। দুনিয়ায় কেউই এইরকম বলবে না যে এর
প্রাপ্তি তোমরা পরের জন্মে পাবে। এই জন্মেই আগামী জন্মের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হওয়ার
ঘটনা কেবল এই সঙ্গমযুগেই ঘটে। বাবাও এই সঙ্গমযুগেই আসেন। তোমরা উত্তম পুরুষ হওয়ার
জন্য পড়াশুনা করছ। কেবল এই একবার-ই ভগবান এসে অমরপুরীর জন্য শিক্ষা দেন। এটা হলো
কলিযুগ বা মৃত্যুপুরী। আমরা সত্যযুগের জন্য অর্থাৎ নরকবাসী থেকে স্বর্গবাসী হওয়ার
জন্য পড়াশুনা করছি। এটা অন্যের দেশ। ওটা আমাদের দেশ। আমাদের ওই দেশে বাবাকে আসার
দরকার হয় না। ওই দেশ কেবল বাচ্চাদের জন্যই, ওখানে সত্যযুগে রাবণের আগমন হয় না। রাবণ
উধাও হয়ে যায়। পুনরায় দ্বাপরযুগে আসে। তাই বাবাও উধাও হয়ে যান। সত্যযুগে ওঁনাকে কেউ
জানবে না। তাই স্মরণ করার প্রশ্নই ওঠে না। যখন সুখদায়ী উপার্জন শেষ হয়ে যায়, তখন
পুনরায় রাবণের রাজত্ব শুরু হয়। ওটা হলো পরের দেশ। এখন তোমরা জানো যে আমরা সঙ্গমযুগে
রয়েছি, আমরাই পথ প্রদর্শক পিতাকে পেয়েছি। বাকি সবাই তো ধাক্কা খাচ্ছে। যারা খুব
ক্লান্ত হয়ে গেছে, যারা আগের কল্পেও এই রাস্তায় চলেছিল, তারা আসতে থাকবে। তোমরা
পান্ডারা সবাইকে রাস্তা বলে দিচ্ছ। এটা হলো আধ্যাত্মিক যাত্রার রাস্তা। সোজা সুখধামে
পৌঁছে যাবে। তোমরা পান্ডারা হলে পাণ্ডব সম্প্রদায়। কিন্তু পাণ্ডবদের রাজত্ব বলা যাবে
না। রাজত্ব পাণ্ডবদেরও নয়, আর কৌরবদেরও নয়। কেউই মুকুটধারী নয়। ভক্তিতে তো সবাইকেই
মুকুট দিয়ে দিয়েছে। যদি দেওয়াও হয়, কৌরবদেরকে তো লাইটের মুকুট দেওয়া যাবে না।
পাণ্ডবদেরকেও লাইটের মুকুট দেওয়া যাবে না। কারণ ওরা পুরুষার্থী। চলতে চলতে যদি পড়ে
যায় তবে কিভাবে মুকুট দেওয়া সম্ভব ? তাই এইসব অলঙ্কার বিষ্ণুকে দেওয়া হয়েছে কারণ
তিনি হলেন পবিত্র। সত্যযুগে সবাই পবিত্র এবং সম্পূর্ণ নির্বিকার হবে, পবিত্রতার
লাইটের মুকুট থাকবে। এখন তো কেউই পবিত্র নয়। সন্ন্যাসীরা বলে যে ওরা পবিত্র। কিন্তু
দুনিয়াটাই তো অপবিত্র। এই বিকারগ্রস্থ দুনিয়াতেই তো জন্ম নেয়। এটা হলো রাবণের পতিত
দুনিয়া। সত্যযুগ হলো পবিত্র রাজ্য বা নুতন দুনিয়া। বাচ্চারা, তোমাদেরকে এখন বাগানের
মালিক বাবা এসে কাঁটা থেকে ফুল বানাচ্ছেন। তিনি একাধারে পতিত-পাবন, মাঝি এবং
বাগানের মালিক। বাগানের মালিক এসেছেন কাঁটার জঙ্গলে। তোমাদের চিফ কমান্ডার তো একজনই।
*শঙ্করকে কি যাদবদের কমান্ডার বলা যাবে ? সে তো আসলে বিনাশ করে না। সময় হলে এমনিই
লড়াই লেগে যায়। মানুষ বলে শঙ্করের প্রেরণার দ্বারা মুষল ইত্যাদি তৈরি হয়। বসে বসে
যতসব গল্প-কথা বানিয়েছে।* পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ তো অবশ্যই হবে। বাড়ি পুরাতন হয়ে গেলে
এমনিই পড়ে যায়। মানুষ মারা যায়। এই পুরাতন দুনিয়াও বিনষ্ট হবে। সকলে চাপা পড়ে মারা
যাবে। অনেকের ডুবে মৃত্যু হবে। কেউ আবার মানসিক আঘাত পেয়ে মারা যাবে। বোমা জাতীয়
অস্ত্র থেকে নির্গত বিষাক্ত বায়ুও অনেককে মেরে ফেলবে। বাচ্চাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে
এখন অবশ্যই বিনাশ হবে। আমরা ওই পাড়ে যাচ্ছি। কলিযুগের সমাপ্তির পর অবশ্যই সত্যযুগের
স্থাপন হবে। তারপর অর্ধেক কল্প আর কোনো লড়াই হবে না। এখন বাবা এসেছেন পুরুষার্থ
করানোর জন্য। এটাই শেষ সুযোগ। দেরি করলে এরপর হয়তো হঠাৎ একদিন মারা যাবে। মৃত্যু অতি
নিকটে। মানুষ তো বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই মারা যাচ্ছে। মারা যাওয়ার আগে তো
স্মরণের যাত্রা করে নাও। বাচ্চারা, এখন তোমাদেরকে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই বাবা বলছেন -
ঘরকে স্মরণ করো। এর দ্বারাই অন্তিমে সুমতি এবং গতি (মুক্তি) হয়ে যাবে, ঘরে চলে যাবে।
কিন্তু কেবল ঘরকে স্মরণ করলে পাপ নাশ হবে না। বাবাকে স্মরণ করলেই পাপ নাশ হবে এবং
তোমরা ঘরে চলে যাবে। তাই বাবাকে স্মরণ করো। *নিজের চার্ট লিখলে বুঝতে পারবে যে আমি
সারাদিনে কি কি করেছি ?* ৫-৬ বছর বয়স থেকে কি কি করেছি … সেইসব তো অবশ্যই মনে থাকে।
এমন নয় যে সারাদিন ধরে লিখতে হবে। মনে রাখতে হবে। বাগানে বসে বাবাকে স্মরণ করেছি,
দোকানে যখন খদ্দের ছিল না তখন স্মরণ করছি। এইসব মনে রাখতে হবে। লিখে রাখতে চাইলে তো
সঙ্গে ডায়রী রাখতে হবে। আসল কথা হলো আমরা কিভাবে তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হব,
পবিত্র দুনিয়ার মালিক হব। বাবা এসে এই নলেজ দিচ্ছেন। বাবা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর।
তোমরা সকলেই বলো - বাবা, আমি তো তোমারই, সর্বদা তোমারই ছিলাম। ভুল করে দেহ-অভিমানী
হয়ে গেছিলাম। এখন তুমি বলে দিয়েছো, তাই পুনরায় দেহী- অভিমানী হচ্ছি। সত্যযুগে তো
আমরা দেহী-অভিমানী ছিলাম, খুশি হয়ে একটা শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করতাম।
বাচ্চারা, তোমাদেরকে এই সমস্ত জ্ঞান ধারণ করতে হবে এবং অন্যকে বোঝানোর যোগ্যও হতে
হবে। তাহলেই অনেকের কল্যাণ হবে। বাবা জানেন যে পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে সবাই সেবার
যোগ্য হচ্ছে। আচ্ছা, যদি কাউকে কল্পবৃক্ষের জ্ঞান বোঝাতে না পারো, তবে এটা তো সবাইকে
বলো যে তুমি নিজেকে আত্মা অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করো। এটা তো খুবই সহজ। বাবা নিজেই
বলছেন, আমাকে স্মরণ করলেই বিকর্মের বিনাশ হবে। তোমরা ব্রাহ্মণরা ছাড়া আর অন্য কোনো
মানুষ এইরকম বলতে পারবে না। অন্য কেউ আত্মাকেও জানে না, পরমাত্মাকেও জানে না। সরাসরি
কাউকে বলে দিলে তীর লাগবে না। ভগবানের প্ৰকৃত রূপকে জানতে হবে। এরা সবাই হলো নাটকের
অভিনেতা। প্রত্যেক আত্মা-ই তার শরীরের সাহায্যে অভিনয় করে। একটা শরীর ত্যাগ করার পর
আবার অন্য শরীর ধারণ করে ভূমিকা পালন করে। ওই অভিনেতারাও কাপড় বদলে ভিন্ন ভিন্ন
ভূমিকায় অভিনয় করে। তোমরাও সেইরকম শরীর পরিবর্তন করো। ওরা কিছু সময়ের জন্য কোনো
মহিলা কিংবা পুরুষের পোশাক পরে। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরুষের পোশাক পরলে সারা জীবন সে
পুরুষ থাকবে। ওটা সীমাবদ্ধ নাটক, এটা সীমাহীন নাটক। বাবার সর্বপ্রথম এবং মুখ্য
উপদেশ হলো - আমাকে স্মরণ করো। ‛যোগ’ কথাটাও ব্যবহার করো না। কারণ মানুষ অনেক রকমের
যোগ শেখে। ওগুলো সব ভক্তিমার্গের। বাবা এখন বলছেন, আমাকে এবং ঘরকে স্মরণ করলেই তুমি
ঘরে চলে যাবে। এনার মধ্যে এসে শিববাবা শিক্ষা দেন। বাবাকে স্মরণ করতে করতে তোমরা
পবিত্র হয়ে যাবে। তখন আত্মা উড়তে পারবে। যতবেশি স্মরণ করবে, সেবা করবে, তত ভালো পদ
পাবে। স্মরণের বিষয়েই অনেক বিঘ্ন আসে। পবিত্র না হলে, ধর্মরাজ-পুরীতে শাস্তি খেতে
হবে। তখন অসম্মানিত হবে এবং পদ মর্যাদাও কমে যাবে। অন্তিমে সব সাক্ষাৎকার হবে।
কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকবে না। *তোমাদের সাক্ষাৎকার হবে - তোমাদেরকে অনেক
বুঝিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা তাও স্মরণ করোনি। তাই পাপের বোঝা থেকে গেছে। এখন শাস্তি
খাও। তখন আর পড়াশুনা করার সুযোগ থাকবে না। আফসোস করবে - হায়! আমি কত বড় ভুল করেছি,
অযথা সময় নষ্ট করেছি। কিন্তু শাস্তি তো তখন খেতেই হবে। কিছুই করার থাকবে না। যদি
ফেল করে যাও তবে সেটাই রয়ে যাবে। তারপর আর পড়াশুনা করার প্রশ্নই আসে না। ওই
পড়াশুনাতে তো ফেল করার পর পুনরায় পড়াশুনা করে। কিন্তু এখানে তো পড়াশুনা-ই সমাপ্ত হয়ে
যায়। অন্তিম সময়ে যাতে প্রায়শ্চিত্ত করতে না হয়, তার জন্য বাবা নির্দেশ দিচ্ছেন -
বাচ্চারা, ভালো করে পড়াশুনা করো। পরনিন্দা, পরচর্চা করে নিজের সময় অপচয় করো না।
নাহলে অনেক প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। মায়া অনেক উল্টোপাল্টা কাজ করিয়ে নেয়।* হয়তো
কোনোদিনও চুরি করোনি, সেটাও মায়া করিয়ে নেবে। পরে মনে হবে যে মায়া তো আমাকে বোকা
বানিয়ে দিয়েছে। আগে অন্তরে সঙ্কল্প আসবে যে অমুক জিনিসটা নেব ? ঠিক ভুলের বিচার
করার বুদ্ধিতো তোমরা পেয়েছ। এই জিনিসটা নেওয়া অনুচিৎ হবে। না নেওয়াটাই ঠিক হবে।
তাহলে এখন কি করতে হবে ? পবিত্র থাকা তো অতি উত্তম। সঙ্গদোষে এসে অবহেলা করা উচিত
নয়। আমরা তো ভাই-বোন। তাহলে নাম-রূপে ফেঁসে যাও কেন ? দেহ-অভিমানের বশীভূত হওয়া
উচিত নয়। কিন্তু মায়াও অতি বলবান, কুকর্ম করার সঙ্কল্প নিয়ে আসে। বাবা বলছেন,
তোমাদের এখন কুকর্ম করা উচিত নয়। এইভাবে লড়াই হয়। তারপর হয়তো এক সময়ে পড়ে যায়।
তারপর আর তাদের সুবুদ্ধি হয় না। আমাদেরকে এখন ভালো কর্ম করতে হবে। অন্ধের লাঠি হতে
হবে। এটা হলো সবথেকে ভালো কাজ। শরীর নির্বাহের জন্য তো সময় রয়েছে। রাত্রে ঘুমাতেও
হবে। আত্মা ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুমিয়ে যায়। শরীরও বিশ্রাম করে। তাই শরীর নির্বাহ এবং
বিশ্রাম করার জন্য তো সময় দিতে হয়। বাকি সময়ে আমার সেবাতে লেগে যাও। স্মরণের চার্ট
রাখো। লিখতে আরম্ভ করে, কিন্তু চলতে চলতে ফেল হয়ে যায়। বাবাকে স্মরণ না করলে, সেবা
না করলে খারাপ কাজ হতেই থাকবে। আচ্ছা ! মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি
মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার
আত্মা রূপী সন্তানদের জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
পরনিন্দা-পরচর্চা করে নিজের সময় অপচয় ক'রো না। খেয়াল রাখতে হবে যাতে মায়া কোনো
উল্টোপাল্টা কাজ না করিয়ে নেয়। সঙ্গদোষে এসে অসচেতন হওয়া যাবে না। দেহ-অভিমানের বশে
এসে কারোর নাম-রূপে ফেঁসে যাওয়া যাবে না।
২) পরমধাম ঘরকে স্মরণ
করার সাথে সাথে বাবাকেও স্মরণ করতে হবে। স্মরণের চার্ট লেখার ডায়রী রাখতে হবে। নোট
করতে হবে - সারাদিনে আমি কি কি করেছি ? কতক্ষণ বাবাকে স্মরণ করছি।
বরদান:-
উদারতা-র
বিশেষত্ব দ্বারা নিজেকে এবং সবাইকে উদ্ধার করে আধার এবং উদ্ধারের প্রতিমূর্তি ভব
উদারতা মানে, যে
সর্বদাই সকল কাজে অকৃপণ এবং বড় মনের পরিচয় দেয়। নিজের গুণের দ্বারা অন্যকে গুণী
বানাতে সহযোগী হওয়া, শক্তি কিংবা কোনো বিশেষত্ব ভরে দিয়ে সহযোগী হওয়া। অর্থাৎ, উদার
আত্মার বিশেষত্ব হলো মহাদানী এবং অকৃপণ হওয়া। এইরকম বিশেষ আত্মারাই আধার এবং
উদ্ধারের প্রতিমূর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সফলতার বরদান প্রাপ্ত করে। কারণ সেবাতে আধার
স্বরূপ হওয়ার অর্থ নিজেকে এবং সকলকে উদ্ধারের নিমিত্ত হয়ে যাওয়া।
স্লোগান:-
“তুমি
এবং বাবা” - দুজনে এমনভাবে কম্বাইন্ড থাকো যাতে তৃতীয় কেউ আলাদা করতে না পারে।