28-06-2020 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
18-02-86 মধুবন
*"নিরন্তর সেবাধারী তথা নিরন্তর যোগী হও"*
আজ জ্ঞান সাগর বাবা তাঁর জ্ঞান গঙ্গাদের দেখছেন, জ্ঞান সাগর থেকে বেরিয়ে জ্ঞান
গঙ্গাসমূহ কীভাবে এবং কোথায় অন্যদের পবিত্র করে এই সময় সাগর আর গঙ্গার মিলন উদযাপন
করছে । এই মেলা গঙ্গা আর সাগরের, যে মেলায় চারিদিকের গঙ্গাসমূহ পৌঁছে গেছে ।
বাপদাদাও জ্ঞান গঙ্গাদের দেখে উৎফুল্ল হন । প্রত্যেক গঙ্গার অন্তরে এই দৃঢ় নিশ্চয়
আর নেশা আছে যে পতিত দুনিয়া, পতিত আত্মাদের পবিত্র বানাতেই হবে । এই নেশা আর
নিশ্চয়ের সাথে সেবার প্রতিটা ক্ষেত্রে তোমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছ l তোমাদের মনে এই
উৎসাহ আছে যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন হোক l জ্ঞান গঙ্গাসমূহ
জ্ঞান সাগর বাবার সমান বিশ্ব কল্যাণী, বরদানী এবং মহাদানী সদয় আত্মা, সেইজন্য
আত্মাদের দুঃখ, অশান্তির আওয়াজ অনুভব ক'রে তোমাদের মনে আত্মাদের দুঃখ অশান্তি
পরিবর্তন করার সেবা তীব্রগতিতে করার উৎসাহ বাড়তে থাকে l দুঃখী আত্মাদের হৃদয়ের
আওয়াজ শুনে তোমাদের দয়া হয়, তাই না ! তোমাদের স্নেহবোধ হয় যে তারা যেন সবাই সুখী হয়
l বিশ্বকে সুখের কিরণ, শান্তির কিরণ, শক্তির কিরণ দেওয়ার নিমিত্ত হয়েছ l আদি থেকে
এখনো পর্যন্ত জ্ঞান গঙ্গাসমূহের সেবা কতখানি পরিবর্তন করার নিমিত্ত হয়েছে, আজ বাবা
সেটাই দেখছিলেন l এখনো অল্প সময়ে অনেক আত্মাদের সেবা করতে হবে l ৫০ বছরের মধ্যে দেশে
বিদেশে সেবার ফাউন্ডেশন তো যথাস্থানে ভালো স্থাপনা করেছ l সেবাস্থান চারিদিকে
স্থাপন করেছ l আওয়াজ ছড়িয়ে দেওয়ার সাধন বিভিন্নভাবে আপন করেছ l এও ঠিকই করেছ l
দেশ-বিদেশে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে থাকা বাচ্চাদের সংগঠনও তৈরি হয়েছে আর তৈরি হতেও থাকবে l
এখন আর তোমাদের কি করার আছে ? কারণ এখন বিধিও জেনে গেছ তোমরা l অনেক রকম সাধনও
একত্রিত করেছ আর করেও যাচ্ছ l স্ব-স্থিতি, স্ব-উন্নতি তার প্রতিও অ্যাটেনশন দিচ্ছ
আর অন্যদেরও সেই বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করছ l আর কি বাকী থাকল ? যেমন শুরুতে সব আদি
রত্নরাজি উৎসাহ-উদ্দীপনায় তন-মন-ধন, সময়-সম্বন্ধ, দিন-রাত বাবার কাছে নিবেদন করেছে
অর্থাৎ বাবার সামনে সমর্পণ করেছে, যে সমর্পণের উৎসাহ-উদ্দীপনার ফলস্বরূপ সেবায়
শক্তিশালী স্থিতির প্রত্যক্ষ রূপ দেখেছ তোমরা l যে সময়ে সেবার আরম্ভ করেছেন, সেই
সময়ের আরম্ভে আর স্থাপনার আরম্ভে উভয় সময়েই এই বিশেষত্ব দেখেছ l আদিতে ব্রহ্মাবাবাকে
তাঁর চলনভঙ্গীতে সাধারণ দেখতে নাকি কৃষ্ণরূপে দেখতে ? সাধারণ দেখলেও সাধারণ দেখাত
না, এই অনুভব তোমাদের আছে, তাই না ! তিনি দাদা, এটা ভাবতে ? চলতে-ফিরতে কৃষ্ণই
অনুভব করতে, তিনি যখন পদচারণা করতেন তাঁকে কৃষ্ণই অনুভব করতে, এইরকম করেছ না ? আদিতে
ব্রহ্মা বাবার মধ্যে এই বিশেষত্ব দেখেছ, অনুভব করেছ এবং সেবার আদিতে তোমরা যে যখনই
যেখানে গেছ, সবাই তোমাদের দেবী হিসেবেই অনুভব করেছে, সবাইকে বলতে শুনেছ তোমরা, "দেবী
এসেছেন", সবার মুখ থেকে এই বোলই বের হতো - 'এনারা অলৌকিক ব্যক্তি l' এইরকম অনুভব
করেছ না তোমরা ? এই দেবীদের ভাবনা সবাইকে আকৃষ্ট ক'রে সেবার বৃদ্ধির নিমিত্ত হয়েছে
l সুতরাং শুরুতে স্বতন্ত্রতার বিশেষত্ব ছিল l সেবার আদিতেও স্বতন্ত্রতার আর দেবী
ভাবের বিশেষত্ব ছিল l এখন অন্তে সেই জাঁকজমক আর ঝলক প্রত্যক্ষ রূপে অনুভব করবে, তখন
প্রত্যক্ষতার কাড়া বাজবে l এখন অবশিষ্ট অল্প সময়ে তারা তোমাদের নিরন্তর যোগী,
নিরন্তর সেবাধারী, নিরন্তর সাক্ষাৎকার স্বরূপ, নিরন্তর সাক্ষাৎ বাবার মতো অনুভব করবে
l তোমরা এই বিধিতে সফলতা প্রাপ্ত করবে l তোমরা গোল্ডেন জুবিলি উদযাপন করেছ অর্থাৎ
গোল্ডেন দুনিয়ার সাক্ষাৎকার স্বরূপ পর্যন্ত পৌঁছেছ l যেমন, গোল্ডেন জুবিলি উদযাপনের
দৃশ্যে সাক্ষাৎ দেবী অনুভব করেছে, যারা বসেছিল (দেবীসাজে ) তারাও, যারা দর্শকাসনে
বসে দেখছিল তারাও l সুতরাং এখন তোমাদের চলনভঙ্গীতে সেবায় এই অনুভব করাতে থাক l এটাই
গোল্ডেন জুবিলি উদযাপন l সবাই গোল্ডেন জুবিলি উদযাপন করেছ নাকি দেখেছ ? কি বলবে ?
তোমাদের সকলেরই গোল্ডেন জুবিলি হয়েছে, তাই না ? নাকি কারও সিলভার হয়েছে, কারও তামার
হয়েছে ? সবার গোল্ডেন জুবিলি হয়েছে l গোল্ডেন জুবিলি উদযাপন অর্থাৎ নিরন্তর গোল্ডেন
স্থিতির হওয়া l এখন ঘুরতে-ফিরতে এই অনুভবে চলো - ' আমি ফরিস্তা তথা দেবতা l'
অন্যদেরও তোমাদের এই শক্তিশালী স্মৃতি দ্বারা তোমাদের ফরিস্তা রূপ বা দেবী-দেবতা
রূপই প্রতীয়মান হবে l গোল্ডেন জুবিলি উদযাপন করা অর্থাৎ এখন সময়, সঙ্কল্প সেবায়
অর্পণ কর l এখন এই সমর্পণ সমারোহ পালন কর l নিজের তুচ্ছ বিষয়ে, তনের ব্যাপারে, মনের
ব্যাপারে, সাধনের ক্ষেত্রে, সম্বন্ধে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সময় আর সঙ্কল্প ব্যয়
ক'রনা l সেবায় নিয়োজিত করা অর্থাৎ স্ব উন্নতির গিফ্ট স্বতঃই প্রাপ্ত হওয়া l এখন
নিজের জন্য যে সময় খরচ করছ সেই সময়ের পরিবর্তন কর l যেমন শ্বাস, ভক্তরা প্রতি শ্বাসে
নাম জপ করার অনুশীলনের চেষ্টা করে l এইরকম প্রতি শ্বাসে সেবার আন্তরিক ইচ্ছা যেন
থাকে l সেবায় যেন মগ্নতা থাকে l বিধাতা হও, বরদাতা হও l নিরন্তর মহাদানী হও l
চার-ছ'ঘন্টার সেবাধারী নয়, এখন বিশ্ব কল্যাণকারী হওয়ার স্টেজে আছ l প্রতিটা মুহূর্ত
বিশ্ব কল্যাণের জন্য সমর্পণ করো l বিশ্ব কল্যাণে স্ব-কল্যাণ সমাহিত হয়ে আছে l যখন
সঙ্কল্প আর সেকেন্ড সেবায় বিজি থাকবে, ফুরসৎ হবে না, মায়ারও তোমাদের কাছে আসার ফুরসৎ
হবে না l সমস্যা সমাধান রূপে পরিবর্তন হয়ে যাবে l সমাধান স্বরূপ শ্রেষ্ঠ আত্মাদের
কাছে সমস্যা আসার সাহস থাকে না l যেমন শুরুতে সেবায় দেখেছ তোমাদের দেবী রূপ, শক্তি
রূপের কারণে যারা পতিত দৃষ্টি নিয়ে এসেছে তারাও পরিবর্তিত হয়ে পবিত্র হওয়ার জন্য
পড়ুয়া হয়ে যায় l ঠিক যেমন পতিত পরিবর্তন হয়ে তোমাদের সামনে আসে, সেইরকমভাবে সমস্যা
তোমাদের সামনে এলে তোমাদের সমাধান স্বরূপ হয়ে যেতে হবে l এখন নিজেদের সংস্কার
পরিবর্তনে সময় ব্যয় ক'রনা l বিশ্ব কল্যাণের শ্রেষ্ঠ ভাবনা থেকে শ্রেষ্ঠ কামনার
সংস্কার ইমার্জ করো l এই শ্রেষ্ঠ সংস্কার পরিবর্তনে সময় অপচয় ক'রনা l এই শ্রেষ্ঠ
সংস্কারের সামনে সীমিত পরিসরের সংস্কার নিজে থেকেই সমাপ্ত হয়ে যাবে l এখন যুদ্ধে
সময়ের অপচয় ক'রনা l বিজয়ী ভাবের সংস্কার ইমার্জ করো l শত্রু বিজয়ী সংস্কারের সামনে
নিজেই ভস্ম হয়ে যাবে, সেইজন্য বলা হয়েছে তন-মন-ধন নিরন্তর সেবায় সমর্পণ করো l হয়
মন্সায় করো, বচনে করো, নতুবা কর্মে করো, কিন্তু সেবা ব্যতীত অন্য কোনও পরিস্থিতিতে
থেকো না l দান কর, বরদান দাও, স্ব-এর উপর যে কোনও গ্রহণ নিজে থেকেই সমাপ্ত হয়ে যাবে
l অবিনাশী লঙ্গর শুরু করো কারণ সময় কম অথচ আত্মাদের, বায়ুমন্ডলের, প্রকৃতির,
ভূত-প্রেত আত্মাদের সবার সেবা করতে হবে l লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো আত্মাদেরও
ঠিকানা দিতে হবে l মুক্তিধামে তো তাদের পাঠাবে, তাই না ! তাদের ঘর তো দেবে, দেবে না
! সুতরাং এখন কত সেবা করতে হবে ! সংখ্যায় আত্মারা কতো ! সব আত্মাকে মুক্তি বা
জীবনমুক্তি দিতেই হবে l সবকিছু সেবায় নিয়োজিত করো, আর শ্রেষ্ঠ মেওয়া খুব খাও l
পরিশ্রমের মেওয়া খেও না l সেবার মেওয়া এমনই যে পরিশ্রম থেকে তোমাদের রেহাই দেবে l
রেজাল্টে বাপদাদা দেখেছেন বহু সংখ্যক তাদের পুরুষার্থে নিজেদের সংস্কার পরিবর্তনে
অধিক সময় ব্যয় করে l হয় তারা ৫০ বছর ধরে এখানে আছে অথবা শুধু একমাস, কিন্তু আদি থেকে
এখনো পর্যন্ত যে মূল রূপ থেকে সংস্কার পরিবর্তন করতে হবে তা' একই আছে l আর সেই মূল
সংস্কার বিভিন্নভাবে সমস্যা হয়ে আসে l উদাহরণস্বরূপ, ধরো কারও বুদ্ধির অভিমানের
সংস্কার আছে, কারও ঘৃণা ভাবের সংস্কার আছে, অথবা কারও নিরুৎসাহিত হওয়ার সংস্কার আছে,
সেই একই সংস্কার কিন্তু আদি থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ইমার্জ হতে থাকে l হয়
৫০ বছর সময় নিয়েছে, আর না হয় এক বছর l এটাই মূল সংস্কার যা সময় সময়ে বিভিন্ন রূপে
সমস্যা হয়ে আসে, তা'তে অনেক সময় ও শক্তি খরচ করেছ l এখন দাতা, বিধাতা, বরদাতার
শক্তিশালী সংস্কার ইমার্জ হতে দাও l তাহলে এই মহাসংস্কার দুর্বল সংস্কারকে নিজে
থেকেই সমাপ্ত করবে l এখন সংস্কারকে মারার জন্য সময় ব্যয় ক'রনা l সেবার ফল দ্বারা,
সেই ফলের শক্তি থেকে সেগুলো আপনা থেকেই মরে যাবে l যেমন, তোমরা অনুভব করেছ, যখন
তোমরা সেবায় ভালো স্থিতিতে বিজি থাক, তখন সেবার খুশিতে সেই সময় পর্যন্ত সব সমস্যা
নিজে থেকেই দমিত হয়, কারণ সমস্যা সম্পর্কে ভাববার তোমাদের সময়ই নেই l প্রতি সেকেন্ড,
প্রতিটা সঙ্কল্প সেবায় যদি বিজি থাক তবে সমস্যার লঙ্গর (ক্রমাগত উদ্ভূত সমস্যার
লাইন) উঠে যাবে এবং তোমরা সরে যাবে l যখন তোমরা অন্যদের রাস্তা দেখানোর, বাবার
ভান্ডার দেওয়ার নিমিত্ত সহায় হও, তখন দুর্বলতা আপনা থেকেই সরে যাবে l বুঝেছ - এখন
কি করতে হবে ? এখন অসীম জগতের ভাবনা ভাবো, আর অসীম জগতের কার্য সম্বন্ধে ভাবো l হয়
দৃষ্টি দ্বারা দাও, নয় বৃত্তি দ্বারা দাও, নয়তো বাণী দ্বারা দাও, নতুবা ভাইব্রেশন
দ্বারা দাও, কিন্তু দিতেই হবে l যেমনই হোক, ভক্তিতে এই নিয়ম আছে যে কোনও বস্তুর
অভাব থাকলে বলা হয় বিশেষভাবে সেই বস্তু দান করতে l দান করলে, সেই দেওয়া প্রাপ্তিরূপ
হয়ে যায় l বুঝেছ, গোল্ডেন জুবিলি কি ! শুধু পালন করেছ এইরকম ভেবোনা l সেবার ৫০ বছর
পূর্ণ হয়েছে, এখন নতুন পথ নাও l ছোট-বড় কেউ একদিনের কেউ বা ৫০ বছরের, তোমাদের সবাইকে
সমাধানস্বরূপ হতে হবে l বুঝেছ - কি করতে হবে ! যতই হোক, ৫০ বছর পর জীবন পরিবর্তন হয়
l গোল্ডেন জুবিলি অর্থাৎ পরিবর্তন জুবিলি, সম্পন্ন হওয়ার জুবিলি l আচ্ছা
সদা বিশ্ব কল্যাণকারী, যারা সদা শক্তিশালী থাকে, সদা বরদানী, মহাদানী স্থিতিতে থাকে,
সদা অন্যের জন্য সমাধান স্বরূপ হয়ে সহজে নিজেদের সমস্যা সমাপ্ত করে, সব সময় প্রতিটা
সঙ্কল্প সেবায় সমর্পণ করে - এইরকম রিয়েল গোল্ড বিশেষ আত্মাদের, বাবা সমান শ্রেষ্ঠ
আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l
*গোল্ডেন জুবিলির আদি রত্নদের সঙ্গে বাপদাদার
সাক্ষাৎকার*
তোমাদের এই বিশেষ খুশি থাকে যে আদি থেকে তোমরা সব আত্মার বাবার সাথে থাকার এবং তাঁর
সাথী হওয়ার উভয়ই বিশেষ পার্ট আছে ? তোমরা তাঁর সাথেও থাক আবার যে পর্যন্ত জীবন সেই
পর্যন্ত স্থিতিতেও বাবা সমান সাথী হয়ে থাকতে হবে l সুতরাং সাথে থাকা এবং সাথী হওয়া,
এই বিশেষ বরদান আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত তোমাদের প্রাপ্ত হয়েই আছে l স্নেহের দ্বারা
তোমাদের জন্ম হয়েছে, প্রথমে তো তোমাদের জ্ঞান ছিল না, তাই না ! স্নেহের সাথেই জন্ম
হয়েছে, সেই স্নেহ সবাইকে দেওয়ার বিশেষ নিমিত্ত তোমরা l যারাই তোমাদের সামনে আসবে
তোমাদের মাধ্যমে তাদেরকে বাবার স্নেহের বিশেষ অনুভব হতে দাও l তোমাদের মধ্যে বাবার
চিত্র আর তোমাদের আচার-আচরণে বাবার চরিত্র পরিস্ফুট হতে দাও l যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে
বাবার চরিত্র কি, তখন তোমাদের আচরণে সেই দৈবী চরিত্র প্রতীয়মান হতে দাও l কারণ স্বয়ং
বাবার চরিত্র তোমরা নিজেরা দেখেছ আর সাথে সাথে সেই চরিত্র অনুসরণকারী আত্মা তোমরা l
দৈবী চরিত্র যা হয়েছে তা' একাকী বাবার চরিত্র নয়, গোপী বল্লভ আর গোপিকাদের চরিত্র l
বাবা বাচ্চাদের সাথেই সব কর্ম করেছেন, একলা করেননি l সবসময় বাচ্চাদের সামনে রেখেছেন
l সুতরাং, তোমাদের সামনে রাখাই ছিল তাঁর চরিত্র l এইরকম চরিত্র তোমরা সব বিশেষ
আত্মার দ্বারা প্রতীয়মান হতে দাও l 'আমি সামনে থাকব' এই সঙ্কল্প বাবা কখনও করেননি l
এক্ষেত্রেও সদা ত্যাগী থেকেছেন আর সবাইকে সামনে রেখেছেন, তাইতো এই ত্যাগের ফল হিসেবে
প্রথম ফল তিনিই লাভ করেছেন l সব বিষয়ে ব্রহ্মাবাবা নম্বর ওয়ান হয়েছেন l কেন হয়েছেন
? অন্যদের তাঁর সামনে রাখার এই ত্যাগ ভাবের মধ্য দিয়েই তিনি নম্বর ওয়ান হয়েছেন এবং
এইভাবে তিনি সামনে এগিয়ে গেছেন l সম্বন্ধের ত্যাগ, বৈভবের ত্যাগ কোনও বড় বিষয় নয় l
কিন্তু সব কাজে, সঙ্কল্পেও অন্যদের সামনে রাখার ভাবনার এই ত্যাগ ছিল শ্রেষ্ঠ ত্যাগ
l একে বলা হয়ে থাকে আমিত্ববোধের সমাপ্তি ঘটানো l আমিত্ব ভাবকে নষ্ট করা l সুতরাং
যারা ডাইরেক্ট প্রতিপালিত হয়েছে তাদের মধ্যে বিশেষ শক্তি আছে l ডাইরেক্ট
লালন-পালনের শক্তি কম নয় l অন্যদের লালন-পালনে সেই পরিপালন প্রত্যক্ষ করাও l যতই
হোক, তোমরা বিশেষ l অনেক বিষয়ে তোমরা বিশেষ l শুরু থেকে বাবার সঙ্গে পার্ট প্লে করা,
এটা কোনও কম বিশেষত্ব নয় l বিশেষত্ব তো অনেক কিন্তু এখন তোমরা সব বিশেষ আত্মাকে
বিশেষ দানও করতে হবে l জ্ঞান দান তো সবাই করে, কিন্তু তোমাদের নিজস্ব বিশেষত্বের
দান করতে হবে l বাবার বিশেষত্বই তোমাদের বিশেষত্ব l সুতরাং সেই বিশেষত্ব দান করো l
যারা বিশেষত্বের মহাদানী, তারা সবসময়ই মহান থাকে l হয় পূজ্য ভাবে, নতুবা পূজারী ভাবে,
সারা কল্প মহান থাকে l যেমন দেখেছ ব্রহ্মাবাবাকে, অন্তেও কলিযুগী দুনিয়ার
পরিপ্রেক্ষিতেও তিনি মহান থেকেছেন, তাই না ? সুতরাং, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন
মহাদানী মহান থাকেন l আচ্ছা - প্রত্যেকে তোমাদের সবাইকে দেখে খুশি হয়েছে, তো খুশি
দিয়েছ তো ! খুব ভালো ভাবে উদযাপন করেছ, সবাইকে খুশি করেছ আর খুশি হয়েছ l বাপদাদা
বিশেষ আত্মাদের বিশেষ কার্যে উৎফুল্ল হন l স্নেহের মালা তো তৈরি আছে, তাই না !
পুরুষার্থের মালা, সম্পূর্ণ হওয়ার মালা সময় সময়ে প্রত্যক্ষ হচ্ছে l
যে যতটা সম্পূর্ণ ফরিস্তা হিসেবে অনুভব করে, তাতে বোঝা যায় যে সেই দানা মালায় গাঁথা
হয়ে যায় l সুতরাং তারা সময় সময়ে প্রত্যক্ষ হতে থাকে l কিন্তু স্নেহের মালা মজবুত
তো, তাই না ! স্নেহের মালার মোতি সদাসর্বদা অমর, অবিনাশী l স্নেহের বিষয়ে তো তোমরা
সবাই পাস মার্কস নেবে l যাই হোক, সমাধান স্বরূপের মালা এখন প্রস্তুত হতে হবে l
সম্পূর্ণ হওয়া অর্থাৎ সমাধান স্বরূপ l যেমন তোমরা দেখেছ কীভাবে কেউ সমস্যা নিয়ে
ব্রহ্মাবাবার কাছে গিয়েও ভুলে যেত l কি নিয়ে তারা আসত আর কি নিয়ে ফিরত ! তোমরা সেটা
অনুভব করেছ, তাই না ! সমস্যার ব্যাপারে তাদের বলার সাহস হতো না, কারণ সম্পূর্ণ
স্থিতির সামনে সমস্যা যেন তাদের শৈশবের খেলা অনুভব হতো, সেইজন্য সমস্যা সমাপ্ত হয়ে
যেত l একেই বলে সমাধান স্বরূপ হওয়া l যদি তোমরা প্রত্যেকে সমাধান স্বরূপ হও, সমস্যা
তাহলে কোথায় যাবে ! অর্ধেক কল্পের জন্য তখন বিদায় সমারোহ উদযাপন হয়ে যাবে l এখন তো
বিশ্বের সমস্যার সমাধানই পরিবর্তন l তাহলে কীসের গোল্ডেন জুবিলি উদযাপন করেছ ?
মোল্ড হওয়ার জুবিলি ! যারা মোল্ড হয় তারা যে রূপে ইচ্ছা নিজেদের সেই রূপে নিয়ে আসতে
পারে অর্থাৎ যে কোনও পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে l মোল্ড হওয়া অর্থাৎ
সবার প্রিয় হওয়া l যেমনই হোক, সবার নজর নিমিত্ত যারা তাদের উপরেই থাকে l আচ্ছা !
বরদান:-
শ্রেষ্ঠত্বের আধারে নৈকট্য দ্বারা কল্পের শ্রেষ্ঠ
প্রালব্ধ বানিয়ে বিশেষ পার্টধারী ভব*
এই মরজীবা জীবনে শ্রেষ্ঠত্বের আধার হলো দুটো বিষয়,
১) সদা পরোপকারী থাকা l ২) বাল-ব্রহ্মচারী থাকা l যে বাচ্চারা এই দুই বিষয়ে শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত অখন্ড থেকেছে, কোনরকম পবিত্রতা অর্থাৎ স্বচ্ছতা বারবার খন্ডিত হয়নি
তথা বিশ্ব ও ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্য যে উপকারী, এমন বিশেষ পার্টধারী সদা বাপদাদার
কাছে থাকে এবং তাদের প্রালব্ধ সারা কল্পের জন্য শ্রেষ্ঠ হয়ে যায় l
স্লোগান:-
যখন সঙ্কল্প ব্যর্থ হয় তখন অন্য সব ভান্ডারও ব্যর্থ
হয়ে যায় l