24.06.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“আত্মারা, তোমরা যখন
স্বচ্ছ হবে, তখন এই সংসারও সুখদায়ী হবে, দুঃখের কারণ হল - ৫ বিকারের বশীভূত হয়ে কৃত
কর্ম”(মাতেশ্বরী জির অমূল্য মহাবাক্য)"
গীতঃ-
দৃষ্টি যেটা
জানতে পারেনা, হৃদয় সেটা অনুভাব করতে পারে...
নিজের অসীম জগতের
বাবার মহিমা শুনেছ! কোনও সাধারণ মানুষের এইরকম মহিমা করা হয় না। এই মহিমা কেবলমাত্র
এক শিববাবারই করা হয়, যিনি এই মহিমার অধিকারী, কেননা তাঁর মহিমা তাঁর কর্তব্য
অনুসারে গাওয়া হয়ে থাকে। তাঁর কর্তব্য হল সকল মনুষ্যাত্মাদের থেকে মহান, কেননা সকল
মনুষ্যাত্মাদের জন্যই তাঁর এই কর্তব্য। তাই তিনি হলেন সবথেকে শ্রেষ্ঠ, তাই না! কেননা
সকলের জন্য সকলের গতি সদ্গতি দাতা হলেন এই এক শিববাবা। এইরকম বলা যাবেনা যে, অল্প
কয়েকজনের গতি সদ্গতি করেছেন। তিনি হলেন সকলের গতি সদ্গতি দাতা। তাই তিনি সকলের
কর্তৃত্ব হয়ে গেলেন, তাই না! সেই রকমই সাধারণভাবে দেখা যায় যে, কারো মহিমা তখনই
করা হয়, যখন সে কোনও কর্তব্য পালন করে। যারা কিছু না কিছু অল্প-বিস্তর এমন কাজ
করেছেন, তাদেরই দেখো, মহিমা হয়েছে। তাই বাবার মহিমা হলো যে, তিনি হলেন উঁচুর থেকেও
উঁচু, তো অবশ্যই তিনি এখানে এসে মহান কর্তব্য পালন করছেন আর সেটাও আমাদের জন্য,
মনুষ্য সৃষ্টির জন্য মহান উঁচু কর্তব্য পালন করছেন, কেননা কেবলমাত্র তাঁকেই এই
সৃষ্টির দুঃখ হর্তা-সুখকর্তা বলা যায়। তাই তিনি এসে মনুষ্য সৃষ্টিকে উঁচু (শ্রেষ্ঠ)
বানাচ্ছেন। প্রকৃতি সহ সকলের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কোন্ যুক্তির
আধারে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে? সেটাই বসে বোঝাচ্ছেন, কেননা এরকম নয় যে প্রথমে
মনুষ্যাত্মা, আত্মার মধ্যে পরিবর্তন এলে, আত্মার শক্তির দ্বারা, নিজের কর্মের
শক্তির দ্বারা পুনরায় এইসব প্রকৃতির তত্ত্ব আদির উপরেও সেই আত্মার শক্তি কার্যকরী
হয়। কিন্তু সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা তো তিনিই হলেন, তাই না! এইজন্য সৃষ্টিকর্তা হলেন
তিনি, কিন্তু কিভাবে তিনি সৃষ্টি করেন? যতক্ষণ না মনুষ্যাত্মা উঁচু (শ্রেষ্ঠ) হয়,
ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মার আধারে শরীর, প্রকৃতির পাঁচ তত্ত্ব আদি এইসব নম্বরের
ক্রমানুসারে শক্তি প্রাপ্ত করতে থাকে, তার দ্বারাই পুনরায় সমগ্র সৃষ্টি সুজলা-সুফলা,
শস্য-শ্যামলা, সুখদায়ী হয়ে ওঠে।
তাই মনুষ্যসৃষ্টিকে সুখদায়ী প্রস্তুতকারী বাবা-ই জানেন যে, মনুষ্য সৃষ্টি সুখদায়ী
কিভাবে হবে? যতক্ষণ না পর্যন্ত আত্মারা স্বচ্ছ না হতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংসার
সুখদায়ী হতে পারবে না। এজন্য তিনি এসে প্রথমে প্রথমে আত্মাদেরকেই স্বচ্ছ বানাচ্ছেন।
এখন আত্মার উপর অপবিত্রতার (অস্বচ্ছতা) আস্তরণ পড়েছে। প্রথমে এই অপবিত্রতার আস্তরণকে
দূর করতে হবে। পুনরায় আত্মার শক্তির দ্বারা ও অন্যান্য জিনিসের দ্বারা আত্মার
তমোপ্রধানতা পরিবর্তিত হয়ে সতোপ্রধান হয়ে যায়, তখন বলা যায় - সবাই সুবর্ণ যুগে আসে,
তাে এই তত্ত্ব আদি সবই সুবর্ণ যুগের স্থিতিতে আসে। কিন্তু প্রথমে আত্মার স্থিতির
পরিবর্তন হয়। তাই আত্মাদের পরিবর্তন কর্তা অর্থাৎ আত্মাদেরকে স্বচ্ছ পবিত্র
প্রস্তুতকারী কর্তৃত্ব তিনিই হয়ে গেলেন। তোমরা দেখছো তো যে, দুনিয়া কিভাবে পরিবর্তন
হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে তো নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে হবে, নিজেকেই যদি পরিবর্তন করতে না
পারো তাহলে দুনিয়ার কিভাবে পরিবর্তন হবে, এইজন্য প্রত্যেকদিন নিজেকে যাচাই করো।
যেরকম ব্যবসায়ীরা দিনের শেষে হিসাবের খাতা দেখে, যে আজ কত জমা হয়েছে? সবাই নিজের
হিসাব রাখে। তাই এইরকম নিজেদেরও দৈনন্দিন চার্ট রাখতে হবে, আর দিনের শেষে দেখতে হবে
যে সারাদিনে আমার পুরুষার্থে কতটা উন্নতি হয়েছে, কতটা সময় নষ্ট হয়েছে? যদি ব্যর্থ
কারণে অধিক সময় নষ্ট হয়ে যায় তবে পরের দিনের জন্য অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এইরকম ভাবে
নিজের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করে পুনরায় পুরুষার্থে উন্নতি করতে করতে আমাদের লক্ষ্য
এবং উদ্দেশ্যকে আমরা প্রাপ্ত করতে পারবো। তো এইরকম নিজের প্রতি সতর্ক থেকে নিজের
পরিবর্তনকে অনুভাব করতে হবে। এইরকম নয় যে, আমি তো দেবতা হবোই, শেষের দিকে ঠিক তৈরী
হয়ে যাবো, এখন যেমন আছি, ঠিকই আছি.....। না। এখন থেকেই নিজের মধ্যে সেই দেবত্ব
সংস্কার তৈরী করতে হবে। এখনও পর্যন্ত যে পাঁচ বিকারের বশীভূত সংস্কার চলে আসছে, এখন
দেখতে হবে যে ওই বিকারগুলি থেকে আমি মুক্ত হতে পারছি? আমার মধ্যে যে ক্রোধ আদি ছিলো,
সেসব থেকে কি মুক্ত হতে পারছি? লোভ বা মোহ আদি যা কিছু ছিলো, সেই সব পুরানো বিকারী
সংস্কারগুলির পরিবর্তন হচ্ছে? যদি পরিবর্তন হয় বা মুক্ত হয়, তবে স্বীকার করো যে আমি
পরিবর্তিত হচ্ছি। আর যদি না হয় তবে বুঝে নাও যে, এখনও আমি পরিবর্তন হতে পারিনি। তাই
নিজের পরিবর্তন হওয়ার পার্থক্য অনুভাব করতে হবে, নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।
এমন নয় যে, সারাদিন ব্যর্থের খাতাই জমা হতে থাকছে, আর ভাবছো যে, ছোটো-খাটো কিছু
দান-পূণ্য করলেই হয়ে যাবে, ব্যস। না, তা হয় না। আমাদের যে কর্মের খাতা প্রতি নিয়ত
লিপিবদ্ধ হচ্ছে, সেখানেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সারাদিনে আমরা যা কিছু করে চলেছি,
সেখানে কোনো বিকারের বশীভূত হয়ে নিজের বিকর্মের খাতা তো বানিয়ে ফেলছি না ? এক্ষেত্রে
নিজেকেই নিজেকে রক্ষা করতে হবে। এই সবকিছু দৈনন্দিন চার্টে রাখতে হবে আর শুতে
যাওয়ার আগে ১০-১৫ মিনিট নিজেকে দেখতে হবে যে, সারাদিন আমার কিভাবে কাটলো? কেউ কেউ
তো খাতাতে লেখে, কেননা পূর্ব জন্মের কৃত পাপ কর্মের বোঝাও মাথার উপর আছে, সেগুলিকেও
সমাপ্ত করতে হবে, তার জন্য বাবার নির্দেশ হল - “আমাকে স্মরণ করো”, তো সেক্ষেত্রেও
কতটা সময় আমি বাবাকে স্মরণ করেছি ? কেননা, এই চার্ট রাখার কারনে পরের দিনের জন্য
সাবধান থাকবে। এইরকম সাবধান থাকতে থাকতে পুনরায় সাবধান হয়ে যাবে, তারপর আমাদের কর্ম
ভালো হতে থাকবে আর পুনরায় এইরকম কোনো পাপ কর্ম হবে না। তো পাপ কর্ম করা থেকেই তো
নিজেকে রক্ষা করতে হবে, তাই না! এই বিকার-ই আমাদেরকে পতিত বানিয়ে দিয়েছে। বিকারের
কারণেই আমরা দুঃখী হয়ে গেছি। এখন আমাদেরকে এই দুঃখ থেকে মুক্ত হতে হবে, এটাই হল
মুখ্য বিষয়। ভক্তিতেও পরমাত্মাকে আমরা ডেকে এসেছি, স্মরন করেছি, যাকিছু পূজা-অর্চনা
বা পুরুষার্থ করেছি, সেসব কি কারণে করে এসেছি ? সুখ আর শান্তি লাভের জন্যই তো করে
এসেছি, তাই না! তো সেই সুখ-শান্তি প্রাপ্ত করার জন্যই এই প্র্যাক্টিক্যাল
প্র্যাক্টিস এখন করানো হচ্ছে। এই কলেজে প্র্যাক্টিক্যাল ভাবে ক্লাস হয়, এইভাবে
প্র্যাক্টিস করতে থাকলেই আমরা স্বচ্ছ অথবা পবিত্র হতে থাকবো। আদি সনাতন পবিত্র
প্রবৃত্তির যে লক্ষ্য আমাদের আছে, তা আমরা প্রাপ্ত করতে পারবো। যেরকম কেউ ডাক্তার
হওয়ার জন্য ডাক্তারী কলেজে যায়, সেখানে ডাক্তারী প্র্যাক্টিস করতে করতে ডাক্তার হতে
থাকে। ঠিক এইরকমই আমরাও এই কলেজে এই পড়াশোনার দ্বারা অথবা এই প্র্যক্টিসের দ্বারা
এই বিকার গুলি থেকে অথবা পাপকর্মগুলি থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছ হতে থাকবো। স্বচ্ছতার
ডিগ্রি কি? দেবতা।
এই দেবতারাও তো মহিমান্বিত হয়েছেন, তাই না! তাঁদের মহিমা হল - সর্বগুণ সম্পন্ন,
ষোলোকলা সম্পূর্ণ, সম্পূর্ণ নির্বিকারী... তো তাঁরা এইরকম কিভাবে হয়েছেন? এই রকম তো
নয় যে, আমি হয়েই আছি, তাও নয়। আমাদেরকেই এখন এইরকম হতে হবে, কেননা আমরাই পতিত হয়ে
গেছি। এরকমও নয় যে, দেবতাদের জন্য আলাদা কোনো দুনিয়া আছে। আমাদেরকেই মানুষ থেকে
দেবতা হতে হবে। সেই দেবতারাই পতিত হয়ে গিয়েছিলো, এখন পুনরায় দেবতা হওয়ার পুরুষার্থ
করছে। কিন্তু পুরুষার্থ করার কলা বাবা শেখাচ্ছেন। এখন তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক
স্থাপন করতে হবে। এখন বাবা এসে আমাদেরকে আলোর প্রকাশ দিয়েছেন, পুনরায় তোমরা আমার
হয়েছ, এখন আমার হয়ে তোমরা কিভাবে থাকবে? যেরকম লৌকিকে বাবা বাচ্চাদের সাথে,
বাচ্চারাও বাবার সাথে থাকে। সেইরকম তোমরাও তন-মন-ধন সবকিছু সমর্পণ করে আমার হয়ে থাকো।
কিভাবে থাকবে! তার আদর্শ (প্রমাণ) হলেন এই (ব্রহ্মাবাবা), যাঁর শরীরে আমি আসি, তিনি
তাঁর তন-মন-ধন সবকিছু সমর্পণ করে আমার হয়ে গেছেন। এইরকম ফলো ফাদার করো। এতে আর কিছু
জিজ্ঞাসা করার বা হতাশা হওয়ার কোনো কথাই নেই। এটা হল সোজাসাপ্টা কথা। তাই এখন
পুরুষার্থ করতে থাকো। এরকমও নয় যে, অধিক শুনতে থাকো, আর অল্প কিছু ধারণ করতে থাকো।
না। অল্প শোনো, অধিক ধারণা করো। যেটা শুনছো সেটা প্র্যাক্টিক্যালে কিভাবে নিয়ে আসবে
তারজন্য নিজের উপর পুরো খেয়াল রাখো। নিজের প্র্যাক্টিসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকো।
এরকমও নয় যে - শুনতে থাকছো তো কেবল শুনতেই থাকছো...। না। আজ যেটা শুনলে সেটা যদি
কেউ প্র্যাক্টিসে নিয়ে আসে, ব্যস আমি আজ থেকে সেই স্থিতিতেই স্থিত থাকবো। বিকারের
বশীভূত হয়ে এমন কোনো কাজ করবো না আর নিজের জন্য একটা এইরকম দৈনন্দিন কার্যসূচি
বানাবো, নিজের এইরকম চার্ট রাখবো। এইরকম ভাবে যদি কেউ জ্ঞানকে প্র্যাক্টিক্যাল
প্র্যাক্টিসে নিয়ে আসে তাহলে তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। তো এখন যা
কিছু বললাম, সেগুলি প্র্যাক্টিক্যালে নিয়ে এসো। যেটা বলো, যেটা শোনো, সেটা এখন করে
দেখাও। ব্যস। দ্বিতীয় আর কোনও কথা নেই। শুধু জ্ঞানকে কর্মে রূপ দেওয়ার উপর জোর দাও।
বুঝেছো। যেরকম বাবা আর দাদা দুজনকেই ভালোভাবে জানো, তাই না! এইরকমভাবে এখন ফলো করো।
এইভাবে যারা বাবাকে ফলো করে, সেই সুপুত্র বাচ্চাদের প্রতি অথবা মিষ্টি মিষ্টি
বাচ্চাদের প্রতি স্মরণের স্নেহ-সুমন এবং সুপ্রভাত।
দ্বিতীয় মুরলী
:- ১৯৫৭
গীত :-
এই দেখো আমার
ছোট একটি সংসার...।
এই গানে কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে ? কেননা এই সঙ্গমের সময়েই এই ব্রাহ্মণ কুলের এ হল
ছোট সংসার। এটা আমাদের কোন পরিবার সেটাও নম্বরের ক্রম অনুযায়ী তোমরা বলতে পারবে।
আমরা হলাম পরমপিতা পরমাত্মা শিবের পৌত্র (নাতি), ব্রহ্মা-সরস্বতীর মুখ নিঃসৃত
সন্তান আর বিষ্ণু শংকর হল আমাদের কাকা-জ্যেঠা, আর আমরা সবাই হলাম ভাই-বোন। এই হল
আমাদের ছোট সংসার। এর বাইরে আর অন্যকোনো সম্বন্ধ থাকতে পারে না। এইসময়ের জন্য
এটাকেই বলা হয় সম্বন্ধ। দেখো আমাদের সম্বন্ধ কত বড় অথোরিটির সাথে আছে! আমাদের দাদু
হলেন শিব, তাঁর নামের অনেক মহত্ত্ব আছে, তিনি হলেন সমগ্র মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ।
সকল আত্মাদের কল্যাণকারী হওয়ার কারনে তাঁকে বলা হয় হর হর ভোলানাথ শিব মহাদেব। তিনি
হলেন সমগ্র সৃষ্টির দুঃখ হর্তা, সুখ কর্তা, তাঁর থেকে আমরা সুখ-শান্তি-পবিত্রতার বড়
অধিকার প্রাপ্ত করি, সেই শান্তিতে আমাদের কর্মবন্ধনের কোনও হিসেব-নিকেশ থাকেনা।
কিন্তু এই দুটি বস্তু (সুখ-শান্তি) পবিত্রতার আধারেই প্রাপ্ত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত
পিতার লালন-পালনের সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে পিতার থেকে সার্টিফিকেট না প্রাপ্ত হয়,
ততক্ষণ পর্যন্ত সেই অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয় না। দেখো ব্রহ্মাবাবার উপর কত
বড় দায়িত্ব - নোংরা ৫ বিকারে অপরিচ্ছন্ন অপবিত্র আত্মাদেরকে ফুল বানাচ্ছেন, যে
অলৌকিক কাজের পুরস্কার হিসেবে পুনরায় সত্যযুগের প্রথম নম্বরের শ্রীকৃষ্ণের পদ
প্রাপ্ত হয়। এখন দেখো সেই পিতার সাথে তোমাদের কিরকম সম্বন্ধ আছে! তাই কতটা
নিশ্চিন্ত আর খুশীতে থাকতে হবে। এখন প্রতেকে হৃদয় থেকে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো - আমি
কি পূর্ণ রীতিতে তাঁর হতে পেরেছি?
চিন্তা করতে হবে যে, যখন পরমাত্মা বাবা এসে গেছেন তো তাঁর থেকে আমরা কিভাবে
সম্পূর্ণ অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করবো ? স্টুডেন্টদের কাজই হল সম্পূর্ণ
পুরুষার্থ করে স্কলারশিপ নেওয়া, তাহলে আমরা প্রথম নম্বরের লটারী কেন জিততে পারবো
না! সেটাই হল বিজয় মালার দানাতে আসা। আবার অনেকেই আছে যারা দুইপ্রকারের লাড্ডু হাতে
নিয়ে বসে আছে, এখানকারও লৌকিক সুখও গ্রহণ করছে আবার সেখানেও বৈকুন্ঠতে কিছু না কিছু
সুখ নিয়ে নিচ্ছে। এইরকম বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন আত্মাদেরকে মধ্যম আর কনিষ্ঠ পুরুষার্থী
বলা হয়, না কি সর্বোত্তম পুরুষার্থী ? যখন বাবা দেওয়ার সময় কৃপণতা করেন না, তখন
গ্রাহক আত্মারা কেন করবে? তাই তো গুরু নানক বলেছেন - পরমাত্মা তো হলেন দাতা,
শক্তিবান, কিন্তু আত্মাদের নেওয়ার মধ্যে শক্তি নেই, কথিত আছে যে - দাতা দান করার
সময় ক্লান্ত হন না কিন্তু গ্রহীতা গ্রহণ করার সময় ক্লান্ত হয়ে পরে। তোমাদের এটাও মনে
হয় যে, আমি কেন চাইবো না যে আমিও এই পদ প্রাপ্ত করি, দেখো, বাবা কত পুরুষার্থ করেন,
তবুও মায়া অনেক বিঘ্ন দেয়, কেন? এখন মায়ার রাজ্য সমাপ্ত হতে চলেছে। এখন মায়ার
ছলনাময়ী মধুরতা সম্পুর্ণরূপে প্রকাশ পায়, তখনই পরমাত্মা আসেন। তাঁর মধ্যেই সব রস
সমায়িত আছে, তাঁর থেকেই সমস্ত সম্বন্ধের রসনা প্রাপ্ত হয়, তবেই তো “ত্বমেব মাতাশ্চ
পিতা....”আদি এই মহিমা সেই পরমাত্মার প্রতি গাওয়া হয়, তার সাথে সাথে এই সময়েরও মহিমা
গাওয়া হয়, যখন আমরা তাঁর সাথে এইরকম সম্বন্ধ রচনা করি।
তাই পরমাত্মার সাথে এতটাই সম্পূর্ণ সম্বন্ধ জুড়তে হবে যেন ২১ জন্মের জন্য সুখ
প্রাপ্ত হয়ে যায়, এটাই হল পুরুষার্থের সিদ্ধি। কিন্তু ২১ জন্মের নাম শুনে ঠান্ডা হয়ে
যেও না। এইরকমও চিন্তা করো না যে, ২১ জন্মের জন্য এই সময় এত পুরুষার্থ করছি, তথাপি
২১ জন্মের পরে পুনরায় পতিত হতেই হয়, তাহলে সিদ্ধি কোথায় হল? কিন্তু ড্রামার মধ্যে
আত্মাদের জন্য যতখানি সর্বোত্তম সিদ্ধি প্রাপ্ত হওয়ার আছে, ততটাই তো প্রাপ্ত হবে,
তাই না! বাবা এসে আমাদেরকে সম্পূর্ণ স্থিতিতে পৌঁছে দিচ্ছেন, কিন্তু আমরা বাচ্চারা
বাবাকে ভুলে গেলে তো অবশ্যই নিচে পরে যাবো, এতে বাবার কোনও দোষ নেই। এখন দুর্বলতা
যদি থেকে থাকে, সেটা আমাদের বাচ্চাদের মধ্যেই আছে। সত্যযুগ - ত্রেতার সম্পূর্ণ সুখ
এই জন্মের পুরুষার্থের উপর আধারিত, তাই কেনই না সম্পূর্ণ পুরুষার্থ করে নিজের
সর্বোত্তম পার্টে অভিনয় করি! কেনই না পুরুষার্থ করে সেই অবিনাশী উত্তরাধিকার
প্রাপ্ত করি! মানুষ সুখের জন্যই সর্বদা পুরুষার্থ করতে থাকে, সুখ-দুঃখ থেকে পৃথক
হওয়ার জন্য কেউ পুরুষার্থ করে না, সেটা তো ড্রামার অন্তে পরমাত্মা এসে সকল
আত্মাদেরকে শাস্তি দিয়ে পবিত্র করে পার্ট থেকে মুক্ত করে দেন। এটা তো হল পরমাত্মার
কাজ, তিনি নিজের কর্তব্য সময় অনুসারে নিজেই এসে বলেন। তাই যখন আত্মাদেরকে পুনরায়
অভিনয় করতে আসতেই হবে, তো কেনই বা সর্বোত্তম চরিত্রাভিনয় করবো না।
আচ্ছা - মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চাদের প্রতি মায়ের স্মরণের স্নেহ-সুমন। ওম্ শান্তি।
বরদান:-
“বাবা”- শব্দের স্মৃতি দ্বারা কারণকে নিবারণে পরিবর্তন করে সদা অচল অটল ভব
ব্যাখ্যা :- যেকোনো
ধরণের চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতিই হোক না কেন, ‘বাবা’ - বললেই অচল হয়ে যাবে। যখন
পরিস্থিতির চিন্তনে মগ্ন হয়ে যাও, তখন অসম্ভব অনুভাব হয়। আর যদি কারণের চিন্তা না
করে নিবারণের চিন্তা করতে থাকো, তখন কারণই নিবারণ হয়ে যায়, কেননা মাস্টার
সর্বশক্তিমান ব্রাহ্মণদের সামনে পরিস্থিতি পিঁপড়ের সমানও নয়। শুধু, কী হল - কেন হল,
এইসব চিন্তা না করে, যাকিছু হয়েছে, তাতেই কল্যাণ সমায়িত আছে, সেবা সমায়িত আছে...
যদিও বিপরীত পরিস্থিতির রূপে আসে কিন্তু তার মধ্যেই সেবা সমায়িত আছে - এই রূপে দেখলে
সর্বদা অচল-অটল থাকবে।
স্লোগান:-
এক
বাবার প্রভাবে থাকা আত্মা অন্য কোনও আত্মার প্রভাবে আসতে পারে না।