15.07.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমাদেরকে সত্যিকারের বৈষ্ণব হতে হবে, সত্যিকারের বৈষ্ণব খাদ্য-সংযমের সাথে সাথে
পবিত্রও থাকে”
প্রশ্নঃ -
কোন্ অপগুণ,
গুণে পরিবর্তন হয়ে গেলে, (জীবনরূপী) নৌকা ওপারে যেতে পারবে ?
উত্তরঃ -
সবথেকে বড় অপগুণ হল - মোহ। মোহের কারণে, না চাইতেও সম্বন্ধীদের কথা মনে পড়ে যায়। (বাঁদরের
মতো) কারো যদি কোনো সম্বন্ধী শরীর ত্যাগ করে, তাহলে ১২ মাস তার কথা মনে করতেই থাকে।
মুখ ঢেকে কান্নাকাটি করে, তাকে মনে পড়ে যায়। এইরকমই যদি বুদ্ধিতে সবসময় বাবার স্মরণ
আসতে থাকে, দিন-রাত তোমরা যদি বাবাকে স্মরণ করো, তবে তোমাদের এই (জীবনরূপী) নৌকা (এই
বিষয়-বৈভবের সাগর) পার হয়ে যাবে। যেরকম লৌকিক সম্বন্ধীদেরকে মনে করতে, সেরকম বাবাকে
স্মরণ করো তো অহো সৌভাগ্য...
ওম্ শান্তি ।
বাবা
প্রত্যেকদিন বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন যে, নিজেকে আত্মা মনে করে বাবার স্মরণে বসে যাও।
আজ তারমধ্যে যুক্ত করছেন - কেবলমাত্র বাবা নয়, অন্যান্য সম্পর্কেও স্মরণ করতে হবে।
মুখ্য কথা হলো এটাই যে - পরম পিতা পরমাত্মা শিব, তাঁকে গডফাদারও বলা হয়, তিনি হলেন
জ্ঞানের সাগর। জ্ঞানের সাগর হওয়ার কারণে তিনি হলেন আমাদের টিচার, তিনি রাজযোগ
শেখান। এসব কথা অজ্ঞানী আত্মাদের বোঝালে, তারা বুঝতে পারবে যে - সত্যই বাবা এনাদেরকে
পড়াচ্ছেন। প্রাক্টিক্যাল কথা এরাই শোনাচ্ছে। তিনি হলেন সকলের বাবা, টিচার আবার
সদ্গতি দাতাও, আবার তাঁকে নলেজ ফুলও বলা যায়। তিনি হলেন বাবা, টিচার, পতিত-পাবন,
জ্ঞান সাগর। প্রথম-প্রথম তো বাবারই মহিমা করতে হবে। তিনি আমাদেরকে পড়াচ্ছেন। আমরা
হলাম ব্রহ্মাকুমার-কুমারী। ব্রহ্মাও হলেন তাঁর রচনা আর এখন হলোই সঙ্গম যুগ।
রাজযোগের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যও আছে। শিব বাবা আমাদেরকে রাজযোগ শেখাচ্ছেন। তাই তিনি
আমাদের টিচারও হয়ে গেলেন। আর এই পড়াশোনা হলই নতুন দুনিয়ার জন্য। এখানে বসে এটাই
স্থির করো যে - আমাকে কি কি বোঝাতে হবে। এটা অন্তরের মধ্যে ধারণা করতে হবে। এটা তো
জানো যে, কারো খুব বেশি ধারণা হয়, আবার কারো কম। এখানেও, যে আত্মা খুব ভালো ভাবে
জ্ঞান ধারণ করে, তার সুনামও অনেক হয়। পদও উচ্চ প্রাপ্ত হয়। সংযমের বিষয়েও বাবা
যুক্তি বলে দেন। তোমরা সম্পূর্ণ বৈষ্ণব হচ্ছ। বৈষ্ণব অর্থাৎ যারা ভেজিটেরিয়ান (শাকাহারী)
হয়। মাংস মদ পান করে না। কিন্তু বিকারে তো যায়। তাহলে বৈষ্ণব হয়ে কি হল ! নিজেকে
বৈষ্ণব কুলের বলে পরিচয় দেয় অর্থাৎ পেঁয়াজ আদি তমোগুণী জিনিস খায় না। বাচ্চারা
তোমরা জানো যে - কোনগুলিকে তমোগুণী জিনিস বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ ভালো মানুষও হয়,
যাদেরকে রিলিজিয়াস মাইন্ডেড বা ভক্ত বলা যায়। সন্ন্যাসীদেরকে বলা হয় পবিত্র আত্মা
আর যে দান আদি করে, তাকে বলা হয় পূণ্য আত্মা। এর দ্বারাও সিদ্ধ হয় যে - আত্মাই
দান-পুণ্য করে, এইজন্য পুণ্যাত্মা, পবিত্র আত্মা বলা যায়। আত্মা কখনো নির্লেপ
থাকেনা। এরকম ভালো ভালো শব্দ মনে রাখতে হবে। সাধুদেরও মহান আত্মা বলা হয়। কিন্তু
মহান পরমাত্মা কখনও বলা যায়না। তাই সর্বব্যাপী বলাও ভুল। ‘সবাই হল আত্মা, জগতে যা
কিছু আছে সকলের মধ্যে আত্মা আছে।’ যারা শিক্ষিত তারা সিদ্ধ করে বলে যে - ‘গাছের
মধ্যেও আত্মা আছে।’ তারা বলে যে ‘৮৪ লক্ষ যোনির মধ্যেও আত্মা আছে। আত্মা না থাকলে
বৃদ্ধি কি করে হবে! মানুষের আত্মা তো জড়পদার্থে যেতে পারেনা।’ শাস্ত্রতে
এইরকম-এইরকম কথা অনেক লিখে দিয়েছে। ‘ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে ধাক্কা দিয়েছে তাই পাথর হয়ে
গেছে।’ এখন বাবা বসে বোঝাচ্ছেন, বাবা বাচ্চাদেরকে বলছেন যে - *দেহের সম্বন্ধকে
ত্যাগ করে নিজেকে আত্মা মনে করো। মামেকম্ স্মরণ করো।* ব্যস, তোমাদের ৮৪ জন্ম এখন
সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হতে হবে। দুঃখ ধাম হল অপবিত্র ধাম।
শান্তিধাম আর সুখ ধাম হলো পবিত্র ধাম। এগুলো তো বুঝতে পারো, তাই না! সুখধামে থাকা
দেবতাদের সামনে গিয়ে সবাই মাথা নত করে। সিদ্ধ হয় যে, ভারতে নতুন দুনিয়াতে পবিত্র
আত্মারাই ছিল। তাঁরা উচ্চপদস্থ ছিলেন। এখন তো সবাই এই গান করে যে - ‘আমার এই
নির্গুণ শরীরে কোনো গুণ নেই।’ আছেও তো সেরকম। কোনো গুণ নেই। মানুষের মধ্যে মোহ অনেক
হয়ে গেছে, যে মারা যায়, তাকেও মনে করতে থাকে। বুদ্ধিতে আছে যে, এটা হল আমার বাচ্চা।
পতি অথবা বাচ্চা মরে গেলে তো তাকে স্মরণ করতে থাকে। স্ত্রী বারো মাস পর্যন্ত খুব
ভালোভাবে তাকে মনে করে, মুখ ঢেকে কান্নাকাটি করে। এরকম মুখ ঢেকে যদি তোমরা বাবাকে
দিনরাত স্মরণ করো, তাহলে তোমাদের জীবন রূপী নৌকা এই বিষয় সাগর থেকে পার হয়ে যাবে।
বাবা বলেন যে - যেরকম পতিকে তোমরা স্মরণ করছ, এইরকম আমাকে স্মরণ করো, তাহলে তোমাদের
বিকর্ম বিনাশ হয়ে যাবে। বাবা যুক্তি বলে দেন - এইভাবে-এইভাবে করো।
লৌকিকের স্থূল ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন নিজেদের দৈনন্দিন চার্ট দেখে, আজ কতটা খরচা
হয়েছে, কতটা লাভ হয়েছে, প্রতিদিনের ব্যালেন্স বের করে। কেউ আবার মাসে মাসে বের করে।
এখানে তো এটি অত্যন্ত জরুরী, বাবা বার-বার বুঝিয়েছেন। বাবা বলছেন যে, বাচ্চারা
তোমরা হলে অত্যন্ত সৌভাগ্যশালী, হাজার ভাগ্যশালী, কোটি কোটি ভাগ্যশালী, পদম, অরব,
খরব ভাগ্যশালী। যে বাচ্চা নিজেকে সৌভাগ্যশালী মনে করে, সে অবশ্যই খুব ভালোভাবে
বাবাকে স্মরণ করতে থাকবে। সে-ই গোলাপ ফুল হবে। এটা তো অতি সংক্ষেপে বোঝানো হয়।
সুগন্ধি ফুল হতে হবে। মুখ্য হলো স্মরণের কথা। সন্ন্যাসীরা ‘যোগ’ - শব্দটি বলে
দিয়েছে। লৌকিক বাবা এরকম বলেন না যে, আমাকে স্মরণ করো বা এরকম কি জিজ্ঞাসা করেন,
যে আমাকে সারাদিন স্মরণ করেছ? বাবা বাচ্চাদেরকে, বাচ্চা বাবাকে স্মরণ করতেই থাকে।
এটাই তো হলো নিয়ম। এখানে জিজ্ঞাসা করতে হয়, কেননা মায়া ভুলিয়ে দেয়। এখানে আসার
সময় মনে থাকে যে, আমরা বাবার কাছে যাচ্ছি, তাই বাবাকে স্মরণ করতে থাকে, এজন্য বাবা
চিত্রও বানিয়ে দেন, তাই সেটাও সাথে থাকে। কাউকে বোঝানোর সময় প্রথমে সর্বদা বাবার
মহিমা দিয়ে শুরু করো। “ইনি হলেন আমাদের বাবা, এমনিতে তো সকলেরই বাবা। সকলের সদ্গতি
দাতা, জ্ঞানের সাগর, নলেজ ফুল। বাবা আমাদেরকে সৃষ্টি চক্রের আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান
প্রদান করেন, যার দ্বারা আমরা ত্রিকালদর্শী হয়ে যাই। এই সৃষ্টিতে কোনও মানুষই
ত্রিকালদর্শী হতে পারে না।” বাবা বলেন যে - এই লক্ষ্মী-নারায়ণও ত্রিকালদর্শী নন।
এঁনারা ত্রিকালদর্শী হয়ে কি করবেন! তোমরাই এখন হচ্ছো আর অন্যদেরকেও বানাচ্ছ। এই
লক্ষ্মী-নারায়ণের মধ্যে যদি জ্ঞান থাকতো, তাহলে তাদের রাজত্ব পরম্পরা ক্রমে চলতো।
মাঝে তো বিনাশ হয়ে যায়, এই জন্য পরম্পরা চলতে পারেনা। তাই বাচ্চাদেরকে এই পড়াকে
খুব ভালো রীতিতে মনন-চিন্তন করতে হবে। তোমাদের উঁচুর থেকেও উঁচু এই জ্ঞান, এই সঙ্গম
যুগেই প্রাপ্ত হয়। তোমরা স্মরণ করো না, দেহ অভিমানে এসে যাও, তাই মায়াও থাপ্পড়
মেরে দেয়। ষোলোকলা সম্পন্ন হলে তবেই বিনাশের জন্য প্রস্তুতি পর্ব শুরু হবে। তারা
বিনাশের জন্য আর তোমরা অবিনাশী পদ-প্রাপ্ত করার জন্য তৈরি হচ্ছো। কৌরব ও পাণ্ডবদের
মধ্যে যুদ্ধ হয়নি, কৌরব আর যাদবদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ড্রামা অনুসারে পাকিস্তানও
আলাদা হয়ে গেল। সেটাও শুরু তখন হয়েছিল যখন তোমাদের জন্ম হয়েছিলো। এখন বাবা
এসেছেন, তো সবকিছু প্র্যাক্টিকাল হবে, তাইনা! এখানের জন্যই বলা হয়েছে যে - রক্তের
নদী প্রবাহিত হবে, তবেই পুনরায় সত্যযুগে ঘি-এর নদী প্রবাহিত হবে। এখনও দেখো লড়াই
করতেই থাকছে। ‘অমুক শহর দাও, না হলে লড়াই করব', ' এখান দিয়ে পাস ক'রো না, এটা হলো
আমাদের রাস্তা’- এখন তারা কি করবে ? স্টিমার কিভাবে যাবে ? পুনরায় তারা আলোচনা করে।
অন্যদের কাছ থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করে। আলোচনার সূত্র যেটাই আসুক না কেন, তারা
নিজেদের মধ্যে লড়াই করেই শেষ হয়ে যাবে।। এখানে তো গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, সেটাও
ড্রামার মধ্যে পূর্ব নির্দিষ্ট আছে।
এখন বাবা বলছেন - মিষ্টি বাচ্চারা, জ্ঞানকে ধারণ করো। এখান থেকে বাইরে গেলে অর্থাৎ
ঘরে যাওয়ার সময় আবার ভুলে যেও না। এখানে তোমরা আসো উপার্জন জমা করার জন্য। ছোট
ছোট বাচ্চাদেরকেও নিয়ে আসো, তাই তাদের বন্ধনেও থাকতে হয়। এখানে তো জ্ঞান সাগরের
কণ্ঠে এসেছ। যতটা উপার্জন করবে, ততটাই ভালো হয়। এই উপার্জনের মধ্যেই লেগে যেতে হবে।
তোমরা এখানে আসোই অবিনাশী জ্ঞানের ঝুলি ভরপুর করতে। এই গানও গাওয়া হয়ে থাকে যে -
‘ভোলানাথ ভরে দাও এই ঝুলি...’। ভক্ত তো শঙ্করের সামনে গিয়ে বলে যে - ঝুলি ভরে দাও।
তারা তো আবার শিব-শঙ্করকে এক মনে করে। ‘শিব-শঙ্কর মহাদেব’ বলে দেয়। তাই মহাদেব বড়
হয়ে যায়। এই রকম ছোট ছোট কথাগুলিও অনেক বোঝার বিষয়।
বাচ্চারা, তোমাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে - এখন তোমরা হলে ব্রাহ্মণ, তোমাদের এখন
জ্ঞানপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই পড়ার দ্বারাই মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসে। চাল-চলনও ভালো
হয়ে যায়। এখন তোমরা পড়াশোনা করছ। যে আত্মা সব থেকে বেশি পড়াশোনা করে আর
অন্যদেরকেও পড়ায়, তাদের আচার-আচরণও খুব সুন্দর হয়। তোমরা বলো যে, সব থেকে ভালো
হল - মাম্মা বাবার আচার-আচরণ। ইনি (ব্রহ্মা) হয়ে গেলেন বড় মাম্মা, যার মধ্যে
প্রবেশ করে বাচ্চাদেরকে রচনা করা হয়। মাতা-পিতা কম্বাইন্ড। এসব হল গুপ্তকথা। যেরকম
তোমরা এখন পড়াশোনা করছো, সেরকম মাম্মাও এখন পড়ছেন। তাঁকেও দত্তক নেওয়া হয়েছে।
জ্ঞানের ধারণামূর্তি হওয়ার জন্য ড্রামা অনুসারে তাঁকে ‘সরস্বতী’ নাম দেওয়া হয়।
ব্রহ্মপুত্র হল সব থেকে বড় নদী। মেলাও হয় - সাগর আর ব্রহ্মপুত্রের। ইনিই হলেন বড়
নদী আবার ইনিই হলেন তোমাদের মা, তাইনা! তোমাদের, মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চাদেরকে কতো
উঁচুতে নিয়ে যান। বাচ্চারা, বাবা শুধু তোমাদেরকেই দেখতে থাকেন। তাঁকে তো আর অন্য
কাউকে স্মরণ করতে হয় না। এঁনার (ব্রহ্মার) আত্মাকেও তো বাবাকে স্মরণ করতে হয়। বাবা
বলছেন - আমরা দুজনে বাচ্চাদেরকে দেখছি। আমি আত্মাকে (ব্রহ্মাকে) তো সাক্ষী হয়ে দেখতে
হয় না, কিন্তু বাবার সঙ্গে আমিও এই ভাবেই দেখি। বাবার সাথেই তো থাকি তাই না! তাঁর
বাচ্চা হওয়ার কারণে তাঁর সাথে সাথে আমিও দেখি। আমি বিশ্বের মালিক হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছি,
যেন আমিই এই সব করছি। আমি দৃষ্টিদান করি। দেহ সহ সব কিছু ভুলতে হয়। তখন বাচ্চা আর
বাবা যেন এক হয়ে যায়। তাই বাবা বোঝাচ্ছেন যে, খুব পুরুষার্থ করো। বরাবর মাম্মা
বাবা সবার থেকে বেশি সেবা করে এসেছেন। ঘরেতেও মা-বাবা অনেক সেবা করেন, তাই না! যাঁরা
সেবা করে তাঁরা অবশ্যই অনেক উঁচুপদ প্রাপ্ত করবে। তাই ফলো করতে হবে, তাই না! যেরকম
বাবা অপকারীদেরও উপকার করতে, এই রকম তোমরাও ‘ফলো ফাদার’ করো। এরও অর্থ বুঝতে হবে।
বাবা বলেন, আমাকে স্মরণ করো আর কারোর কোনও কথা শুনো না। কেউ কিছু বললে শুনেও শুনবে
না। তোমরা হাসতে থাকবে, তাহলে সে আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যাবে। বাবা বলেছেন - কেউ
যদি ক্রোধ করে তাহলে তোমরা তার ওপর ফুল বর্ষণ করো, বলো - তোমরা অপকার করছো, আমরা
উপকার করছি। বাবা নিজে বলছেন যে, সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আমার অপকারী, আমাকে
সর্বব্যাপী বলে কত গালি দেয়, তবুও আমি তো সকলের উপকারী। বাচ্চারা তোমরাও সকলের
উপকার করতে থাকো। তোমরা চিন্তা করো যে - আমরা কি ছিলাম, এখন কি হয়ে গেছি! বিশ্বের
মালিক হতে চলেছি। স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবিনি এসব কথা! অনেকের তো ঘরে বসেই সাক্ষাৎকার
হয়ে যায়। কিন্তু সাক্ষাৎকারের দ্বারা কিছুই হয় না। আস্তে আস্তে বৃক্ষ বৃদ্ধি
প্রাপ্ত হয় । এখন এই নতুন দৈবী বৃক্ষের স্থাপন হচ্ছে, তাইনা! বাচ্চারা জানে যে,
আমাদেরই দৈবী ফুলের বাগিচা তৈরি হচ্ছে। সত্যযুগে দেবতারাই থাকেন। তাঁরাই পুনরায়
এখানে আসেন। চক্র ঘুরতেই থাকে। ৮৪ জন্মও তাঁরাই গ্রহণ করেন। অন্য কোনো আত্মা কোথা
থেকে আসবে ? ড্রামাতে যেসব আত্মাদের পার্ট আছে, তারা কেউই পার্ট থেকে মুক্তি পায়
না। এই চক্রের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে। আত্মার সংখ্যাও কখনো কমে যায় না। ছোট-বড়ও
হয় না।
বাবা বসে মিষ্টি বাচ্চাদের বোঝাচ্ছেন, বলছেন - *“বাচ্চারা সুখদায়ী হও।”* মা বলে না
- “বাচ্চারা, নিজেদের মধ্যে লড়াই ঝগড়া আদি ক'রো না।” অসীম জগতের বাবাও বাচ্চাদেরকে
বলছেন - স্মরণের যাত্রা খুব সহজ। লৌকিক যাত্রা তো জন্ম-জন্মান্তর ধরে অনেক করে এসেছ,
তবুও তো সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকেই নেমে পাপাত্মা হয়ে গেছো। বাবা বলছেন যে - এটা হল
আত্মিক যাত্রা। তোমাদেরকে পুনরায় এই মৃত্যুলোকে আর জন্ম নিতে হবে না। ওই লৌকিক
যাত্রা করে তো পুনরায় তাদেরকে এখানেই ফিরে আসতে হয়। পুনরায় তারা সেই একই রকম
পতিত হয়ে যায়। তোমরা তো এখন জানো যে, আমরা স্বর্গে যাচ্ছি। স্বর্গ ছিল, পুনরায় হবে।
এই চক্রের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। দুনিয়া একটাই, এছাড়া নক্ষত্র আদিতে কোনও দুনিয়া
নেই। বিজ্ঞানীরা উপরে গিয়ে দেখার জন্য মাথার মধ্যে অনেক চাপ নেয়। মাথায় চাপ নিতে
নিতে মৃত্যুও সামনে এসে যায়। এসব হলো বিজ্ঞান। উপরে যাবে তারপর কি হবে। মৃত্যু তো
সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। এক দিকে উপরে গিয়ে খোঁজ করছে, দ্বিতীয় দিকে মৃত্যুর জন্য
বম্বস্ আদি বানাচ্ছে। মানুষের বুদ্ধি দেখো কিরকম হয়ে গেছে! তারা মনে করে যে, এসবের
পিছনে প্রেরক কেউ আছে। তারা নিজেরাই বলে যে - বিশ্বযুদ্ধ অবশ্যই হবে। এটাই হলো সেই
মহাভারতের লড়াই। এখন বাচ্চারা, তোমরা যত যত পুরুষার্থ করবে, ততই তোমাদের কল্যাণ হতে
থাকবে। ভগবানের সন্তান তো আছোই। ভগবান তোমাদেরকে নিজের বাচ্চা বানিয়েছেন, তাই তোমরা
ভগবান-ভগবতী হয়ে যাও। লক্ষ্মী-নারায়ণকে গড-গডেজ বলা হয়, তাইনা! কৃষ্ণকেও ভগবান
রূপে মান্য করে, কিন্তু রাধাকে ততটা মানা হয় না। সরস্বতীর নাম আছে, রাধার নাম নেই।
জ্ঞানামৃতের কলস পুনরায় লক্ষ্মীকে দেওয়া হয়েছে। এটাও ভুল করে দিয়েছে। সরস্বতীরও
অনেক নাম রেখে দিয়েছে। সেসব তো হলো তোমাদেই রূপ। দেবীদেরও পূজা হয়, তো আত্মাদেরও
পূজা হয়। বাবা বাচ্চাদেরকে প্রত্যেকটি কথাটা বোঝাচ্ছেন। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
যেরকম বাবা অপকারীদেরও উপকার করেন, এইরকম ‘ফলো-ফাদার’ করতে হবে। কেউ কিছু বললে, তা
শুনেও না শুনে হাসতে থাকবে। এক বাবার থেকেই শুনতে হবে।
২ ) সুখদায়ী হয়ে সবাইকে সুখ দান করতে হবে, নিজেদের মধ্যে লড়াই-ঝগড়া ক'রো না। জ্ঞানী
হয়ে নিজের বুদ্ধি রূপী ঝুলি অবিনাশী জ্ঞান রত্ন দিয়ে ভরপুর করতে হবে।
বরদান:-
শুদ্ধ
সংকল্পের ব্রত দ্বারা বৃত্তির পরিবর্তন করে বাপ-দাদার হৃদয়-সিংহাসনধারী ভব
ব্যাখ্যা :-
বাপ-দাদার হৃদয় সিংহাসন এতটাই পবিত্র যে এই সিংহাসনের উপর সর্বদা পবিত্র আত্মারাই
অধিষ্ঠিত হতে পারে। যাদের সংকল্পেও অপবিত্রতা বা অমর্যাদা এসে যায় তাদের সিংহাসনে
অধিষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে আরও অধঃপতন হয়ে যায়। এইজন্য প্রথমে শুদ্ধ সংকল্পের ব্রত
দ্বারা নিজের বৃত্তিকে পরিবর্তন করো। বৃত্তি পরিবর্তনের দ্বারা ভবিষ্যতের জীবন রূপী
সৃষ্টি পরিবর্তিত হয়ে যাবে। শুদ্ধ সংকল্প আর দৃঢ় সংকল্পের ব্রত পালনের প্রত্যক্ষফলই
হল - সদাকালের জন্য বাপদাদার হৃদয়-সিংহাসন।
স্লোগান:-
যেখানে
সর্ব শক্তিগুলি সাথে থাকে, সেখানে নির্বিঘ্ন সফলতা আছেই।