06.11.2020
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা,
তোমাদের বুদ্ধিতে যখন ভালোভাবে জ্ঞান ধারণ হয়ে যায়, তখন কোন্ ভয় কেটে যায় ?
উত্তরঃ -
ভক্তিমার্গে যেমন ভয় পায় যে গুরু অভিশাপ না দিয়ে দেয়, এই জ্ঞানমার্গে এসে জ্ঞান
ধারণ করার পরে সেই ভয় চলে যায়। কারণ জ্ঞানমার্গে কেউ অভিশাপ দিতে পারে না। রাবণ
অভিশাপ দেয়। বাবা তো উত্তরাধিকার দেন। যারা ঋদ্ধি-সিদ্ধি করে, তারাই দুঃখ দেওয়ার
জন্য এবং নাজেহাল করার জন্য এইরকম কাজ করে। জ্ঞানমার্গে তোমরা বাচ্চারা সবাইকে সুখ
দাও।
ওম্ শান্তি ।
আত্মাদের পিতা
স্বয়ং বসে থেকে মিষ্টি মিষ্টি আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন। সবার আগে তোমরা হলে
আত্মা। এই বিষয়ে পুরো নিশ্চিত থাকতে হবে। বাচ্চারা জানে যে, আমরা পরমধাম থেকে আসি
এবং তারপর এখানে শরীর ধারণ করে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করি। আত্মাই বিভিন্ন ভূমিকা
পালন করে। কিন্তু মানুষ ভাবে যে শরীরটাই ভূমিকা পালন করে। এটাই হলো সবথেকে বড়ো ভুল,
যার জন্য কেউই আত্মার ব্যাপারে জানে না। আমরা আত্মারাই এই আগমন-গমনের চক্রে
আসা-যাওয়া করি - এই বিষয়টা ভুলে যাওয়ার জন্যই বাবাকে এসে আত্ম-অভিমানী বানাতে হয়।
এই কথাটাও কেউ জানে না। বাবা-ই বোঝান যে কিভাবে আত্মা অভিনয় করে। মানুষের ক্ষেত্রে
সর্বাধিক ৮৪ জন্ম এবং সর্বনিম্ন একটা কিংবা দুটো জন্ম হতে পারে। আত্মা অবশ্যই
পুনর্জন্ম নেয়। তাই এর দ্বারাই বোঝা যায় - যারা অনেকগুলো জন্ম নেয়, তাদেরকে অনেকবার
পুনর্জন্ম নিতে হয়। যারা কম জন্ম নেয়, তারা কম পুনর্জন্ম নেয়। যেমন নাটকে কারোর শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত ভূমিকা থাকে, আবার কারোর অল্প একটু ভূমিকা থাকে। এইসব কথা কোনো
মানুষ জানে না। আত্মা তো নিজেকেই জানে না। তাহলে নিজের বাবাকে কিভাবে জানবে। এগুলো
সব আত্মার বিষয়। তিনি হলেন আত্মাদের পিতা। কৃষ্ণ তো আত্মাদের পিতা নয়। কৃষ্ণকে
নিরাকার বলা যাবে না। তাকে সবাই শরীরধারী বলেই জানে। প্রত্যেক শরীরেই আত্মা রয়েছে।
প্রত্যেক আত্মার মধ্যেই পার্ট ভরা আছে। পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে তোমরা এইসব বিষয়
বোঝাতে পারো। তোমরা বাচ্চারা এখন জেনেছো যে আমরা কিভাবে ৮৪ জন্ম নিই। এমন নয় যে
আত্মাই পরমাত্মা। না, বাবা বুঝিয়েছেন - আমরা আত্মারাই প্রথমে দেবতা হই। এখন পতিত এবং
তমোপ্রধান হয়ে গেছি। এরপর আবার পবিত্র, সতোপ্রধান হতে হবে। যখন এই দুনিয়া পুরাতন হয়ে
যায়, তখনই বাবা আসেন। বাবা এসে পুরাতন থেকে নতুন করেন। নুতন দুনিয়া স্থাপন করেন।
নতুন দুনিয়ায় তো আদি সনাতন দেবী দেবতা ধর্মই থাকে। তাদের উদ্দেশ্যেই বলা হয় যে ওরাই
আগে কলিযুগে শূদ্র ছিল। এখন প্রজাপিতা ব্রহ্মার মুখ বংশাবলী ব্রাহ্মণ হয়েছ।
ব্রাহ্মণ বংশে এসেছ। ব্রাহ্মণ বংশের রাজত্ব থাকে না। তারা কখনো রাজত্ব করে না। এখন
ভারতে ব্রাহ্মণদেরও রাজত্ব নেই, শূদ্রদেরও রাজত্ব নেই। এরা কেউই রাজত্ব করে না।
ওদের ক্ষেত্রে তাও প্রজাদের ওপরে প্রজাদের রাজত্ব থাকে। কিন্তু তোমাদের মতো
ব্রাহ্মণদের কোনো রাজত্ব নেই। তোমরা হলে স্টুডেন্ট, পড়াশুনা করছ। তোমাদেরকেই বাবা
বোঝাচ্ছেন যে এই ৮৪ জন্মের চক্র কিভাবে আবর্তিত হয়। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলির পরে
সঙ্গমযুগ আসে। অন্য কোনো যুগের মহিমা এই সঙ্গমযুগের মতো নয়। এটা হলো পুরুষোত্তম
সঙ্গমযুগ। সত্যযুগ থেকে ত্রেতাযুগে আসলে তো দুই কলা কম হয়ে যায়। তাই ওই যুগের আর কি
মহিমা করবে। অধঃপতনের জন্য কি মহিমা করা হয় ? কলিযুগকে বলা হয় পুরাতন দুনিয়া। এখন
নতুন দুনিয়া স্থাপন হবে। যেখানে দেবী-দেবতাদের রাজত্ব থাকে। ওরা পুরুষোত্তম ছিল।
তারপর কলা কম হতে হতে শূদ্র এবং কনিষ্ঠ বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে গেছে। ওদেরকে প্রস্তর
বুদ্ধি সম্পন্নও বলা হয়। বুদ্ধি এতটাই পাথর হয়ে যায় যে যাদের পূজা করে তাদের
জীবনকাহিনীও জানে না। বাচ্চারা যদি বাবার জীবনকাহিনী না জানে, তাহলে উত্তরাধিকার
পাবে কিভাবে ? এখন তোমরা বাচ্চারা বাবার জীবন কাহিনী জেনেছ। তাঁর কাছ থেকে তোমরা
উত্তরাধিকার পাচ্ছ। তোমরা অসীম জগতের পিতাকে স্মরণ করছ। বলা হয় - ‛তুমি হলে মাতা
পিতা, আমরা তোমার বালক…’। তাহলে নিশ্চয়ই তিনি এখানে আসেন। তাই তো তাঁর কাছ থেকে
অসীম সুখ পাওয়া যায়। বাবা বলছেন - বাচ্চারা, আমি স্বয়ং এসেছি এবং তোমাদেরকে অসীম
সুখ দিচ্ছি। এইসব জ্ঞান বাচ্চাদের বুদ্ধিতে ভালোভাবে থাকতে হবে। তাহলেই তোমরা
স্ব-দর্শন চক্রধারী হয়ে যাও। তোমরা এখন জ্ঞানরূপী ত্রিনয়ন পেয়েছ। তোমরা জানো যে
আমরাই দেবতা হই। এখন শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণ হয়েছি। কলিযুগের ব্রাহ্মণরাও অবশ্যই রয়েছে।
ওই ব্রাহ্মণরা জানে না যে আমাদের এই ধর্ম বা বংশ কবে স্থাপন করা হয়েছিল। কারণ ওরা
তো কলিযুগের ব্রাহ্মণ। তোমরা এখন ডাইরেক্ট প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তান হয়েছ এবং
সর্বোত্তম কুলে রয়েছ। স্বয়ং বাবা বসে থেকে তোমাদেরকে শিক্ষাদান, লালন পালন এবং
সুসজ্জিত করার সেবা করছেন। তোমরাও ঈশ্বরীয় সেবায় নিযুক্ত আছ। গড ফাদার বলছেন - আমি
সকল বাচ্চার সেবা করার জন্যই এসেছি। বাচ্চাদেরকে সুখের রাস্তা বলে দিচ্ছি। বাবা
বলছেন, এখন ঘরে চলো। মানুষ তো মুক্তি পাওয়ার জন্যই ভক্তি করে। তাহলে নিশ্চয়ই জীবনে
বন্ধন রয়েছে। বাবা এসে এইসব দুঃখ থেকে মুক্তি দিচ্ছেন। তোমরা বাচ্চারা জানো যে এখন
সবাই ত্রাহি-ত্রাহি করবে। হাহাকারের পরে জয়জয়কার হবে। এখন তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে কতোই না হাহাকার করবে। ইউরোপবাসী যাদব সম্প্রদায়ও রয়েছে।
বাবা বুঝিয়েছেন যে ইউরোপবাসীদের যাদব বলা হয়। দেখানো হয়েছে যে পেট থেকে মুষল
বেরিয়েছে, অভিশাপ দিয়েছে। কিন্তু এখানে অভিশাপ দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। এটা তো
ড্রামা। বাবা উত্তরাধিকার দেন আর রাবণ অভিশাপ দেয়। এটা একটা খেলা যেটা বানানোই আছে।
অভিশাপ তো মানুষ দেয়। অনেকে থাকে যারা আবার সেই অভিশাপকে খন্ডন করতে পারে। দুনিয়ার
গুরুদেরকে মানুষ তাই ভয় পায় যে কোনো অভিশাপ না দিয়ে দেয়। বাস্তবে এই জ্ঞানমার্গে তো
কেউ কোনো অভিশাপ দিতে পারে না। জ্ঞানমার্গে এবং ভক্তিমার্গে অভিশাপ দেওয়ার কোনো
ব্যাপার নেই। তবে যারা ঋদ্ধি-সিদ্ধির বিদ্যা শেখে, তারা অভিশাপ দেয়। ওরা মানুষকে
খুব দুঃখ দেয়, অনেক রোজগারও করে। কিন্তু যারা প্রকৃত ভক্ত, তারা এইরকম করে না। বাবা
বুঝিয়েছেন - সঙ্গম শব্দের সঙ্গে পুরুষোত্তম শব্দটা অবশ্যই লেখো। তার সঙ্গে
ত্রিমূর্তি এবং প্রজাপিতা শব্দ দুটোও লিখতে হবে। কারণ অনেকের নামই ব্রহ্মা রেখে দেয়।
প্রজাপিতা শব্দটা লিখলে বুঝতে পারবে যে ইনি হলেন শরীরধারী প্রজাপিতা। কেবল ব্রহ্মা
লিখলে মানুষ সূক্ষ্মবতন নিবাসী ব্রহ্মার কথা ভাবে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শঙ্করকেই ভগবান
বলে দেয়। প্রজাপিতা বললে বোঝাতে পারবে যে প্রজাপিতা তো এখানেই রয়েছেন। তিনি কিভাবে
সূক্ষ্মবতনে থাকবেন। দেখানো হয়েছে যে ব্রহ্মার নাভি থেকে বিষ্ণু বেরিয়ে এসেছে। তোমরা
বাচ্চারা এখন সঠিক জ্ঞান পেয়েছ। নাভি ইত্যাদির কোনো ব্যাপার নেই। কিভাবে ব্রহ্মাই
বিষ্ণু হন এবং বিষ্ণুই ব্রহ্মা হন, সেই পুরো চক্রের জ্ঞান তোমরা এই ছবি দেখিয়ে
বোঝাতে পারো। ছবি ছাড়া বোঝাতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়। ব্রহ্মাই বিষ্ণু হন আবার
বিষ্ণুই ব্রহ্মা হন। লক্ষ্মী - নারায়ণ ৮৪ বার জন্ম নেওয়ার পরে ব্রহ্মা - সরস্বতী হন।
যখন ভাট্টি শুরু হয়েছিল, তখন প্রথম থেকেই বাবা নাম দিয়েছিলেন। তারপর অনেকেই চলে গেছে।
তাই বাবা বুঝিয়েছেন, ব্রাহ্মণদের কোনো মালা হয় না, কারণ ব্রাহ্মণরা তো পুরুষার্থ
করছে। অবস্থা কখনো ভালো হয়, কখনো খারাপ হয়। কখনো আবার গ্রহের দশা লেগে যায়। বাবা তো
জহুরী ছিলেন। কিভাবে মোতি দিয়ে মালা বানানো হয়, সেই বিষয়ে তাঁর অনুভব রয়েছে।
ব্রাহ্মণদের মালা অন্তিমে তৈরি হয়। আমরা ব্রাহ্মণরাই দিব্যগুণ ধারণ করে দেবতা হই।
তারপর আবার সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। নয়তো ৮৪ জন্ম কিভাবে নেব। ৮৪ জন্মের হিসাব থেকেই
এটা বোঝা যায়। তোমাদের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে অন্য ধর্মাবলম্বীরা আসে। মালা
বানানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। খুব যত্ন করে মোতিগুলোকে টেবিলের ওপরে রাখা হয়
যাতে একটুও নড়াচড়া না করে। তারপর সূঁচ দিয়ে গাঁথা হয়। যদি ঠিকঠাক না হয়, তাহলে আবার
সেটা খুলতে হয়। এটা তো অনেক বড় মালা। তোমরা বাচ্চারা জানো যে আমরা নতুন দুনিয়ার
জন্য পড়াশুনা করছি। বাবা বুঝিয়েছেন, স্লোগানে লেখো - এখানে এসে বুঝে যান যে আমরা
কিভাবে শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণ থেকে দেবতা হই। এই চক্রকে জানতে পারলেই
আপনি চক্রবর্তী রাজা হয়ে যাবেন। স্বর্গের মালিক হয়ে যাবেন। এইরকম স্লোগান বানিয়ে
বাচ্চাদেরকে শেখাতে হবে। বাবা অনেক রকমের উপায় বলে দিচ্ছেন। বাস্তবে তোমরাই হলে
মূল্যবান। তোমরাই হিরো - হিরোইনের ভূমিকায় অভিনয় করো। তোমরাই হীরেতুল্য হয়ে যাও,
আবার তোমরাই ৮৪ জন্মের চক্র পরিক্রমা করে কড়িতুল্য হয়ে যাও। এখন তোমরা হীরের মতো
জন্ম পেয়েছ। তাহলে কড়ির পেছনে ছুটছো কেন ? এমন তো নয় যে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হবে। বাবা
বলছেন - ঘর গৃহস্থে থেকেও কমল ফুলের মতো পবিত্র থাকো এবং সৃষ্টিচক্রের জ্ঞান জেনে
দিব্যগুণ ধারণ করো। তাহলেই তোমরা হীরের মতো হয়ে যাবে। ৫ হাজার বছর আগে সত্যিসত্যিই
ভারত হীরেতুল্য ছিল। এটাই হলো তোমাদের এম অবজেক্ট। লক্ষ্মী - নারায়ণের এই ছবিকে খুব
গুরুত্ব দিতে হবে। বাচ্চারা, তোমাদেরকে প্রদর্শনী এবং মিউজিয়ামে অনেক সেবা করতে হবে।
উড়ন্ত পন্থায় সেবা না করলে প্রজা বানাবে কিভাবে ? এই জ্ঞান তো অনেকেই শোনে। কিন্তু
খুব কমজনেই ভালো পদ পায়। তাদের জন্যই বলা হয় কোটির মধ্যে কয়েকজন। অল্প কয়েকজনই
স্কলারশিপ পায়। একটা স্কুলে ৪০ - ৫০ জন বাচ্চার মধ্যে হয়তো একজন স্কলারশিপ পায়। যারা
যারা বেশি নম্বর পায়, তাদেরকেই দেওয়া হয়। এখানেও ঐরকম হয়। অনেকেই বেশি নম্বরের মধ্যে
আছে। ৮ মুখ্যরত্নের মধ্যেও ক্রম রয়েছে। সবার আগে ওরাই রাজ সিংহাসনে বসবে। তারপর ধীরে
ধীরে কলা কম হবে। লক্ষ্মী নারায়ণের ছবি হলো মুখ্য। ওদের রাজধানী থাকবে। কিন্তু ছবিতে
কেবল ওঁদেরকেই দেখানো হয়েছে। এখানে তোমরা জেনেছো যে চিত্র (শরীর) ক্রমাগত বদলে যায়।
তাই ছবি রেখে কি লাভ ! নাম, রূপ, দেশ, কাল সবকিছুই বদলে যায়। আত্মাদের পিতা স্বয়ং
বসে থেকে মিষ্টি মিষ্টি আত্মা রূপী সন্তানদেরকে বোঝাচ্ছেন। আগের কল্পেও বাবা
বুঝিয়েছিলেন। এমন নয় যে কৃষ্ণ গোপ-গোপীদেরকে শুনিয়েছিলেন। কৃষ্ণের সঙ্গে গোপ, গোপী
থাকে না এবং তাদেরকে কোনো জ্ঞানও শোনানো হয় না। সে তো সত্যযুগের রাজকুমার। ওখানে
কিভাবে রাজযোগ শেখাবে অথবা পতিতদেরকে পবিত্র করবে ? তোমরা এখন নিজের বাবাকে স্মরণ
করো। বাবা তোমাদের শিক্ষকও হন। স্টুডেন্টরা কখনোই টিচারকে ভুলে যায় না। সন্তানও
বাবাকে ভুলতে পারে না। গুরুকেও কেউ ভোলে না। বাবা তো জন্ম থেকেই থাকে। ৫ বছর পর থেকে
শিক্ষককে পাওয়া যায়। তারপর বাণপ্রস্থ অবস্থায় গুরু পাওয়া যায়। জন্ম থেকে গুরু করে
তো কোনো লাভ নেই। গুরুর কাছে দীক্ষা নেওয়ার পরের দিনই মারা যায়। সেক্ষেত্রে গুরু কি
করবে ? গান গাইতে থাকে - সদ্গুরু ছাড়া গতি নেই। কিন্তু মানুষ সদ্গুরু না বলে কেবল
গুরু বলে দেয়। দুনিয়ায় অনেক গুরু রয়েছে। বাবা বলছেন - বাচ্চারা, তোমাদের কোনো গুরু
করার প্রয়োজন নেই, তোমরা কারোর কাছে কিছু চাইবে না। বলা হয়, চাওয়ার থেকে মরে যাওয়া
ভালো। সবাই ভাবে, আমি কিভাবে পরের জন্মেও আমার সম্পত্তি ট্রান্সফার করব। ওরা
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দান - পূণ্য করলে তার প্রতিদানে এই পুরাতন দুনিয়াতেই ক্ষণিকের
জন্য কিছু পেয়ে যায়। এখানে তোমরা নতুন দুনিয়ায় ২১ জন্মের জন্য ট্রান্সফার করে নাও।
তন, মন, ধনকে প্রভুর নিকটে সমর্পন করতে হয়। কিন্তু তিনি যখন এই দুনিয়ায় আসেন, তখনই
সমর্পন করা যায়। তবে প্রভুকে জানে না বলে সবাই গুরুকেই সেই স্থানে বসিয়ে দেয়।
সম্পত্তিও গুরুর নিকটে অর্পন করে দেয়। কোনো উত্তরাধিকারী না থাকলে সবকিছুই গুরুকে
দিয়ে দেয়। কিন্তু আজকাল তো ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেও কেউ দান করে না। বাবা বোঝাচ্ছেন, আমি
হলাম দীনবন্ধু। তাই আমি ভারতেই আসি। এসে তোমাদেরকে বিশ্বের মালিক বানিয়ে দিই।
ডাইরেক্ট আর ইন্ডাইরেক্ট-এর মধ্যে অনেক পার্থক্য। ওরা তো কিছুই জানে না। কেবল বলে
দেয় যে আমি ঈশ্বরকে অর্পণ করেছি। সবাই অবোধ। বাচ্চারা, তোমাদেরকে এখন বোঝানো হয়েছে,
তাই তোমরা অবোধ থেকে বুদ্ধিমান হয়েছ। তোমাদের বুদ্ধিতে এই জ্ঞান আছে যে বাবা কামাল
করে দেন। অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে নিশ্চয়ই সীমাহীন উত্তরাধিকার পাওয়া যাবে। কেবল
এই দাদার মাধ্যমেই তোমরা বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার নাও। দাদাও ওনার কাছ থেকেই
উত্তরাধিকার নিচ্ছেন। উত্তরাধিকার কেবল একজনই দেন। তাঁকেই স্মরণ করতে হবে। বাবা
বলেন - বাচ্চারা, আমি এনার অনেক জন্মের অন্তিমে এসে প্রবেশ করি এবং পবিত্র বানাই।
তারপর ইনি এইরকম ফরিস্তা হয়ে যান। ব্যাচ দেখিয়েও তোমরা খুব ভালোভাবে সেবা করতে পারো।
তোমাদের এই ব্যাচগুলোর অর্থ রয়েছে। এই ছবিগুলো তো জীবনদায়ী। কেউই এগুলোর মূল্য বোঝে
না। বাবা সবসময় বড় জিনিস পছন্দ করেন যাতে দূর থেকেই কেউ পড়তে পারে। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা ওঁনার আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
বাবার কাছ থেকে সীমাহীন উত্তরাধিকার নেওয়ার জন্য নিজের তন, মন, ধন ডাইরেক্ট ঈশ্বরের
কাছে অর্পণ করে বুদ্ধিমান হতে হবে। নিজের সবকিছু ২১ জন্মের জন্য ট্রান্সফার করে নিতে
হবে।
২ ) বাবা যেমন শিক্ষাদান, লালন পালন এবং সুসজ্জিত করার সেবা করেন, সেইরকম বাবার
সমান সেবা করতে হবে। জীবনের বন্ধন থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে মুক্ত জীবনে নিয়ে যেতে হবে।
বরদান:-
সকল
সম্পত্তির সাশ্রয়ের বাজেট বানিয়ে সূক্ষ্ম পুরুষার্থী ভব
যেমন লৌকিক পরিবারে
সাশ্রয় না করলে ঠিকমতো চলা যায় না, সেইরকম নিমিত্ত বাচ্চা যদি সাশ্রয় না করে তাহলে
সেন্টারও সঠিকভাবে চলতে পারে না। ওটা হলো সীমিত পরিবার, আর এটা হচ্ছে সীমাহীন
পরিবার। সুতরাং নিরীক্ষণ করে দেখতে হবে যে সংকল্প, বাণী এবং শক্তিগুলোর মধ্যে কি-কি
এক্সট্রা খরচ করছি ? যে, সকল সম্পত্তির সাশ্রয়ের বাজেট বানিয়ে, সেই অনুসারে এগিয়ে
যায়, তাকেই সূক্ষ্ম পুরুষার্থী বলা হয়। তার সংকল্প, বাণী, কর্ম এবং জ্ঞানের কোনো
শক্তিরই অপচয় হয় না।
স্লোগান:-
স্নেহের সম্পত্তিতে বিত্তশালী হয়ে সবাইকে স্নেহ দাও আর স্নেহ নাও।