20-12-2020 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 20-03-87 মধুবন


"স্নেহ' এবং 'সত্যতার' অথরিটির ব্যালেন্স"


আজ সত্য (প্রকৃত) পিতা, সত্য শিক্ষক এবং সদ্গুরু তাঁর সত্যতার শক্তিশালী সত্য বাচ্চাদের সাথে মিলিত হতে এসেছেন । সবচেয়ে বড়র থেকেও বড় শক্তি বা অথরিটি হল সত্যতারই। সৎ কথাটির অর্থ দুটি। এক হল - সৎ অর্থাৎ সত্য। দ্বিতীয়টি হল - সৎ অর্থাৎ অবিনাশী। উভয় অর্থেই সত্যতার শক্তি সব থেকে বড়। বাবাকে বলা হয় সত্য বাবা। বাবা তো অনেক আছে, কিন্তু সত্য পিতা একজনই। সত্য শিক্ষক, সদ্গুরু একজনই। সত্যকেই পরমাত্মা বলা হয় অর্থাৎ পরম আত্মার বিশেষত্ব সত্য অর্থাৎ সৎ। তোমাদের একটা গানও আছে না - "সত্য শিব হ্যায়...."। দুনিয়াতেও বলা হয় - "সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্" । তার সাথে সাথে পরমাত্মার উদ্দেশ্যে বলা হয় - "সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ" । তোমাদের অর্থাৎ আত্মাকেও বলা হয় "সৎ-চিৎ-আনন্দ"। অতএব 'সৎ' শব্দটির অনেক মহিমা রয়েছে। আর কখনো যখন কোনও কার্যে অথরিটির সাথে বলতে হয়, তো বলা হয় - আমি সৎ। সেইজন্যই অথরিটির সাথে বলছি। সত্যের জন্য বলা হয় - "সত্যের নৌকা হেলবে দুলবে, কিন্তু ডুববে না" । তোমরাও বলে থাকো - "সত্য যেখানে আত্মা নাচবে সেখানে"। সত্যিকারের অর্থাৎ সত্যতার শক্তি সম্পন্ন যে, সে সদাই নাচতে থাকবে, কখনোই ম্রিয়মান থাকবে না, বিভ্রান্ত হবে না, ঘাবড়াবে না, দুর্বল হবে না। সত্যতার শক্তি যার মধ্যে রয়েছে, সে সর্বদা খুশিতে নাচতে থাকবে । সে শক্তিশালী হবে, তার মধ্যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার শক্তি থাকবে, সেইজন্য ঘাবড়াবে না। সত্যতাকে সোনার সমান ধরা হয়, অসত্যকে মাটি। ভক্তিতেও যে পরম-আত্মার প্রতি তার মনকে নিযুক্ত করে রাখে, তাদেরকে সন্ন্যাসী বলা হয়, তারা সত্যের সঙ্গ করে। আর লাস্টে যখন আত্মা শরীর ত্যাগ করে তখনও বলা হয় - সত্যের নাম সঙ্গে আছে। তো সত্য হল অবিনাশী, সৎ মানে সত্য। সত্যতার শক্তি হল মহান শক্তি। বর্তমান সময়ে মেজরিটি মানুষ তোমাদেরকে দেখে কী বলে - এদের মধ্যে সত্যতা রয়েছে, তবেই এতকাল ধরে বৃদ্ধি হয়েই চলেছে। সত্যতা কখনোই নড়চড় হয় না, অচল হয় । সত্যতা হল বৃদ্ধি প্রাপ্ত করবার বিধি। সত্যতার শক্তির দ্বারা তোমরা সত্যযুগের নির্মাণ করে থাকো, তোমরা নিজেরাও সত্য-নারায়ণ, সত্য-লক্ষ্মী হয়ে ওঠো। এ হল সত্য জ্ঞান, সত্য বাবার জ্ঞান । সেইজন্য তিনি হলেন এই দুনিয়ার থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং প্রিয়।

তো আজ বাপদাদা সকল বাচ্চাদেরকে দেখছিলেন যে, বাচ্চারা এই সত্য জ্ঞানের সত্যতার অথরিটিকে কতটা ধারণ করেছে ? সত্যতা সব আত্মাকেই আকৃষ্ট করে। এই দুনিয়া যতই মিথ্যা খন্ড হোক অর্থাৎ সবের মধ্যে যতই মিথ্যা পাওয়া যাক না কেন, তবুও সত্যতার শক্তি যাদের মধ্যে রয়েছে, তারাই বিজয়ী হয়। সত্যতার প্রাপ্তি হল খুশি আর নির্ভয়তা। সত্যি যারা বলে তারা সর্বদা নির্ভীক হয়। তাদের কখনো ভয় থাকবে না। যে সত্য হবে না তার মনে অবশ্যই ভয় থাকবে। তো তোমরা হলে সততার দ্বারা শক্তিশালী শ্রেষ্ঠ আত্মা । সত্য জ্ঞান, সত্য বাবা, সত্য প্রাপ্তি, সত্য স্মরণ, সত্য গুণ, সত্য শক্তি গুলির সর্ব প্রাপ্তি রয়েছে। তো এতখানি অথরিটির নেশা থাকে ? বাণীতে থাকবে স্নেহ আর থাকবে নম্রতা - এই দুটিই হল অথরিটির চিহ্ন। যেমন তোমরা বৃক্ষের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকো, বৃক্ষে যখন সম্পূর্ণ ফলের অথরিটি এসে যায় তখন বৃক্ষ (ফলের ভারে) ঝুঁকে যায় অর্থাৎ নির্মান (নিরহংকারী) হওয়ার সেবা করে। এই রকম অথরিটি সম্পন্ন বাচ্চারা যত বড় অথরিটি, ততই নির্মান আর সকলের স্নেহী হবে। কিন্তু সত্যতার অথরিটি সম্পন্নরা নির্-অহংকারী হয়ে থাকে। অতএব অথরিটিও থাকবে, নেশাও থাকবে আর নির্-অহংকারী হবে - একেই বলা হয় সত্য জ্ঞানের প্রত্যক্ষ স্বরূপ।

এই মিথ্যা খন্ডের ভিতরে যেমন ব্রহ্মা বাবা, সত্যতার অথরিটির প্রত্যক্ষ সাকার স্বরূপ তোমরা দেখেছো, তাই না ! ওঁনার অথরিটির বোল কখনোই অহংকারের আভাস দেবে না। মুরলী যখন শোনো, কতখানি অথরিটির এই বোল মুরলী ! কখনোই অহমিকার (অভিমান) নয় । অথরিটির বোল-এ স্নেহ সমায়িত হয়ে আছে, নিরহংকার রয়েছে। সেইজন্য অথরিটির বোল প্রিয় অনুভূত হয়। কেবল প্রিয় নয়, প্রভাবশালীও অনুভূত হয়। ফলো ফাদার হল যে। সেবায়, কর্মে ফলো ব্রহ্মা বাবা, কেননা সাকারী দুনিয়াতে সাকার 'এক্জাম্পল', 'স্যাম্পল' তিনি। যেমন ব্রহ্মা বাবার কর্মে, সেবাতে, চেহারায়, প্রতিটি আচরণের দ্বারা চলতে-ফিরতে অথরিটির স্বরূপ দেখছো, এই রূপ যারা ফলো ফাদার করে, তাদের মধ্যেও নির্মাণ ভাব আর মহানতা - দুটোই একসাথে দেখতে যেন পাওয়া যায়। এমন নয় যে, কেবল স্নেহ দেখতে পাওয়া যাবে আর অথরিটি হাওয়া হয়ে যাবে অথবা অথরিটি দেখা যাচ্ছে কিন্তু স্নেহ হাওয়া হয়ে গেল। যেমন ব্রহ্মা বাবাকে দেখছো বা মুরলী শুনছো, এ'সবই হল প্রত্যক্ষ প্রমাণ। তো বাচ্চারা-বাচ্চারা বলবেন কিন্তু অথরিটিও দেখাবেন। স্নেহের সাথে বাচ্চারা'ও বলবেন অথরিটির সাথে শিক্ষাও দেবেন। সত্য জ্ঞানকে প্রত্যক্ষও করাবেন কিন্তু বাচ্চারা-বাচ্চারা বলে নতুন জ্ঞানকে সবিস্তারে স্পষ্টও করে দেবেন। একেই বলা হয় স্নেহ আর সত্যতার অথরিটির ব্যালেন্স (ভারসাম্য)। তো বর্তমান সময়ে সেবাতে এই ব্যালেন্সকে আন্ডারলাইন করো।

ধরণী বানানোর জন্য স্থাপনা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। বিদেশের ধরনীও এখন অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে গেছে। যদিও ৫০ বছর পূর্ণ হয়নি, কিন্তু তৈরী হয়ে থাকা উপাদানের মধ্যেই এসেছো, সেই কারণে শুরুর ৫০ বছর আর এখনকার ৫ বছর এক সমান। ডবল বিদেশীরা সবাই বলে - আমরা হলাম লাস্ট তথা ফাস্ট তথা ফার্স্ট। তো সময়ের দিক থেকে ফাস্ট তথা ফার্স্ট হবে, তাই তো ? নির্ভয়তার অথরিটি অবশ্যই রাখবে। এক'ই বাবার সত্য জ্ঞান এটি আর এই নতুন জ্ঞানের দ্বারাই নতুন দুনিয়া স্থাপিত হয় - এই অথরিটি আর নেশা স্বরূপে যেন প্রত্যক্ষ হয় (ইমার্জ)। ৫০ বছর তো মার্জ (গুপ্ত) ছিল। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, যারাই আসবে তাদেরকে প্রথমেই নতুন জ্ঞানের নতুন কথা গুলিকে শুনিয়ে কনফিউজড করে দেবে। এই ভাব যেন না থাকে। ধরনী, নাড়ি, সময় এই সবকে দেখে জ্ঞান দেওয়া - এটাই হল নলেজফুলের লক্ষণ । আত্মার ইচ্ছাকে দেখো, নাড়িকে দেখো, ধরনী তৈরী করো কিন্তু ভিতরে সত্যতার নির্ভয়তার শক্তি অবশ্যই যেন থাকে। লোকে কী বলবে - এই ভয় যেন না থাকে। নির্ভয় হয়ে ধরনী তবেই ধরনী প্রস্তুত করো। কোনো কোনো বাচ্চা মনে করে - এই জ্ঞান তো হল নতুন, অনেকেই বুঝতেই পারবে না। কিন্তু যারা বোঝে না তাদেরকেই তো বোঝাতে হবে। এটা অবশ্যই যে - যেমন ব্যক্তি সেইরূপ রূপরেখা তৈরী করতে হয়, অথচ ব্যক্তির প্রভাবেও এসে যেও না যেন। নিজের সত্য জ্ঞানের অথরিটির দ্বারা ব্যক্তিকে পরিবর্তন করতেই হবে - এই লক্ষ্যকে ভুলবেন না।

এখনও পর্যন্ত যা কিছু করেছো ঠিকই ছিল। করতেও হত। আবশ্যক ছিল। কেননা ধরনী প্রস্তত করার ছিল। কিন্তু কতদিন ধরে ধরনী তৈরী করবে ? আর কত সময় চাই ? ওষুধও যখন দেওয়া হয় আগেই কড়া ডোজের দেওয়া হয় না, প্রথমে হাল্কা ডোজের দেওয়া হয়। কিন্তু কড়া ডোজের দিলেই না, হাল্কা হাল্কাই দিয়ে যাচ্ছো - এটা ক'রো না। কোনো দুর্বল ব্যক্তিকে যদি হাই পাওয়ারের ওষুধ দিয়ে দেওয়া হল সেটাও তো রঙ্। পরীক্ষণ করবার শক্তিও চাই। তবে তোমাদের সত্য নতুন জ্ঞানের অথরিটিও অবশ্যই থাকা চাই। তোমাদের সূক্ষ্ম অথরিটির বৃত্তিই তাদের বৃত্তি গুলির পরিবর্তন করাবে।এটাই তখন ধরনী হবে। আর এই বিশেষ সেবা করে যখন মধুবন পর্যন্ত পৌঁছাবে, তখন কমপক্ষে তারা যেন অন্তত বুঝতে পারে। এই ধরনীতে তাদেরও ধরনী তৈরী হয়ে যাবে। যত বড় বন্ধা জমিই হোক, যে কোনো ধর্মেরই হোক, যত বড় পজিশনেরই হোক, এই ধরনীতে তারাও নরম হয়ে যায় আর নরম ধরনী হওয়ার কারণে তাতে যে বীজই ছড়ানো হোক, তার ফল সহজেই নির্গত হবে। কেবল ভয় পাবে না, নির্ভয় অবশ্যই হও। যুক্তির সাহায্য জ্ঞান প্রদান করো। এমন যেন না হয় যে, লোকেরা অনুযোগ করছে যে, এই রকম স্থানে তো আমি পৌঁছালাম, কিন্তু এটা তো জানতে পারলাম না যে পরমাত্মার জ্ঞান কী ! পরমাত্মার ভূমিতে এসে পরম-আত্মার প্রত্যক্ষতার বার্তা অবশ্যই যেন তারা নিয়ে যায়। লক্ষ্য অথরিটির হতে হবে।

আজকালকার সময়ের হিসেবেও নতুনত্বের মহত্ব রয়েছে। তা সে যদি উল্টো ফ্যাশন হয়, তাও মানুষ তাকে ফলো করে। আগেকার আর্ট (পেইন্টিং) দেখো কতো সুন্দর ! এখনকার আর্ট তো তার কাছে যেন কেবল কতগুলো লাইন। মানুষ মর্ডান আর্ট পছন্দ করে। মানুষ সব সময়ই নতুনত্বকে পছন্দ করে আর নতুনত্ব স্বভাবই সকলকে আকৃষ্ট করে। সেইজন্য নতুনত্ব, সত্যতা, মহানতা - এর নেশা অবশ্যই রাখো। তারপর সময় আর ব্যক্তিকে দেখে সেবা করো। এই লক্ষ্য অবশ্যই রাখো যে, নতুন দুনিয়ার নতুন জ্ঞানকে অবশ্যই প্রত্যক্ষ করাতে হবে। এখন স্নেহ আর শান্তি প্রত্যক্ষ হয়েছে। বাবার প্রেমের সাগরের স্বরূপ, শান্তির সাগরের স্বরূপ প্রত্যক্ষ করিয়েছো, কিন্তু জ্ঞান স্বরূপ আত্মা আর জ্ঞানের সাগর হলেন বাবা, এই নতুন জ্ঞানকে কোন্ উপায়ে প্রদান করবে, তার প্ল্যান্স এখন কম বানানো হয়েছে। সেই সময়ও আসবে যখন সকলের মুখ থেকে এই আওয়াজ নির্গত হবে, এটাই হল নতুন দুনিয়ার নতুন জ্ঞান। এখন কেবল খুব ভালো খুব ভালো বলে, কিন্তু নতুন জ্ঞান - এ'কথা বলে না। স্মরণের সাবজেক্ট' কে ভালো প্রত্যক্ষ করিয়েছো, সেইজন্য ধরনী ভালো তৈরী হয়ে গেছে আর ধরনী তৈরী করা - এই প্রাথমিক কার্যও অবশ্যই জরুরী। যা কিছু করেছো, সে সবই খুব ভালো আর অনেক করেছো।তন-মন-ধন নিয়োজিত করে করেছো। তার জন্য বাপদাদা অভিনন্দনও জানাচ্ছেন ।

প্রথমে যখন বিদেশে গিয়েছিলে তো তখন এই ত্রিমূর্তির চিত্রের উপরে বোঝানো কত কঠিন মনে হত তোমাদের ! এখন ত্রিমূর্তির চিত্রের উপরেই মানুষ আকৃষ্ট হয়। এই সিঁড়ির চিত্র ভারতের কাহিনী, তোমরা বোঝাতে। কিন্তু বিদেশে এই চিত্রের প্রতিই মানুষ আকৃষ্ট হয। তো যেমন তারা প্ল্যান বানিয়েছিল যে এই নতুন বিষয়টিকে তারা কোন্ পদ্ধতিতে শোনাবে, তো এখনও ইনভেনশন (আবিস্কার) করো। এটা ভেবো না যে, এটা তো করতেই হবে। না। বাপদাদার লক্ষ্য কেবল এটাই যে, নবীনত্বের মহানতার শক্তিকে ধারণ করো। একে ভুলো না। দুনিয়াকে বোঝাতে হবে, দুনিয়া কী বলবে তাতে ঘাবড়িও না। নিজের উপায় বের করো (ইভেন্ট)। কেননা ইনভেন্টর তো তোমরা বাচ্চারাই, তাই না ! সেবার প্ল্যান তো বাচ্চারাই জানে। যেমন লক্ষ্য রাখবে তেমন খুব ভালো ভাবে প্ল্যান তৈরী হতে থাকবে আর সফলতা তো তোমাদের জন্মগত অধিকারই। সেইজন্য নবীনত্বকে প্রত্যক্ষ করাও।জ্ঞানের যা কিছু গুহ্য বিষয় গুলি আছে, সেগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার বিধি তোমাদের কাছে খুব ভালোই আছে এবং স্পষ্টীকরণও। এক একটি পয়েন্টকে যুক্তিপূর্ণ ভাবে (লজিক্যালি) স্পষ্ট করে দিতে সক্ষম তোমরা। তোমাদের অথরিটিতে ( শক্তি, ইত্যাদি) সম্পন্ন তোমরা। কোনোরূপ মনোময় বা কল্পনার কথাই তো নয়। একেবারেই যথার্থ। অনুভবের। অনুভবের অথরিটি, নলেজের অথরিটি, সত্যতার অথরিটি.... কত কত অথরিটি রয়েছে তোমাদের ! তো অথরিটি এবং স্নেহ - দুটোকে একসাথে কাজে লাগাও।

বাপদাদা এইজন্য খুশী যে, পরিশ্রমের দ্বারা সেবা করতে করতে এতখানি বৃদ্ধি করিয়েছো আর আরো করতে থাকবে, তা দেশেই হোক কিম্বা বিদেশে। দেশেও ব্যক্তি আর নাড়ি দেখে সেবা করাতে সফলতা। বিদেশেও এই বিধিতেই সফলতা। প্রথমে সম্পর্কে নিয়ে আসো তোমরা - এই ভাবে ধরনী তৈরী হয়। সম্পর্কে আনার পরে তারপর সম্বন্ধে নিয়ে আসো, কেবল সম্পর্কে এনেই ছেড়ে দিও না। সম্বন্ধে এনে তাদেরকে বুদ্ধির দ্বারা সমর্পিত করাও - এটাই হল লাস্ট স্টেজ। সম্পর্কে আনাও আবশ্যক, তারপর সম্বন্ধে নিয়ে আসতে হবে। সম্বন্ধে আসতে আসতে যেন সমর্পণ বুদ্ধি হয়ে যায় যে, "যা যা বাবা বলছেন, সেটাই সত্য"। এরপরে মনে আর কোনো প্রশ্ন উঠবে না। যেটা বাবা বলছেন সেটাই ঠিক। কেননা অনুভব হয়ে গেলে তখন কোশ্চেন সমাপ্ত হয়ে যায় । একেই বলা হয় "সমর্পণ বুদ্ধি", যার দ্বারা সব কিছু স্পষ্ট অনুভব হয় । লক্ষ্য এটাই রাখো যে, সমর্পণ বুদ্ধি পর্যন্ত অবশ্যই আনতে হবে। তখনই বলা হবে মাইক প্রস্তুত হয়েছে। মাইক কী আওয়াজ করবে ? কেবল এই জ্ঞান খুব ভালো, তার ? না। এটা একেবারে নতুন জ্ঞান, এটা নতুন দুনিয়া মনে হবে - এই আওয়াজ নির্গত হবে। তবেই তো কুম্ভকর্ণ জাগবে, তাই না ! নইলে তো কেবল চোখ মেলছে - খুব ভালো খুব ভালো বলে আবার ঘুম এসে যাচ্ছে। সেইজন্য যেমন নিজে বালক তথা মালিক হয়ে গেছো না ! এই রকম বানাও। তারা হল বেচারা, তাদেরকে কেবল সাধারণ প্রজা পর্যন্ত নিয়ে এসো না, রাজ্য অধিকারী বানাও। তার জন্য প্ল্যান বানাও - এমন বিধিতে করো যাতে কনফিউজডও না হয় আবার সমর্পণ বুদ্ধিও হয়ে যায়। নতুনত্বও মনে হয়, ঝামেলা বলেও অনুভব না করে। স্নেহ আর নবীনত্বের অথরিটি মনে হয় যেন।

এখনও পর্যন্ত যে রেজাল্ট রয়েছে, সেবার বিধি, ব্রাহ্মণদের বৃদ্ধি হয়েছে, সে সবই খুব ভালো হয়েছে । কেননা প্রথমে বীজকে গুপ্ত রেখেছো, সেটাও আবশ্যক ছিল। বীজকে গুপ্ত রাখতে হয়, বাইরে রাখলে ফল প্রদান করবে না। মাটির ভিতরে বীজকে রাখতে হয়, তবে ভিতরেই না থেকে যায়। বাইরে প্রত্যক্ষ হবে, ফল স্বরূপ হয়ে উঠবে - এটা হল পরবর্তী স্টেজ। বুঝতে পেরেছো ? লক্ষ্য রাখো - নতুন কিছু করতে হবে। এইরূপ নয় যে এই বছরেই হয়ে যাবে, কিন্তু লক্ষ্য বীজকে বাইরে প্রত্যক্ষ করাবে। এমনও নয় যে, সোজা গিয়ে ভাষণ করতে শুরু করতে দিলে। প্রথমে সত্যতার শক্তির আভাস দেওয়ার ভাষণ করতে হবে। "অবশেষে সেই দিন এলো" - এটা সকলের মুখ থেকে নির্গত হবে। তোমরা যেমন ড্রামাতে দেখাও না যে, সকল ধর্ম মিলে একসাথে বলছে - আমরা এক, এক-এর আমরা। এটা তো ড্রামাতে দেখাও, এটাই প্র্যাকটিক্যালে স্টেজে সব ধর্মের লোকেরা মিলে এক সুরে বলবে। বাবা হলেন এক, একটাই জ্ঞান, একটাই লক্ষ্য, একটাই গৃহ সকলের, এটাই - এখন এই আওয়াজ চাই। এইরূপ দৃশ্য যখন অসীম জগতের স্টেজে দৃশ্যমান হবে, তখনই প্রত্যক্ষতার পতাকা উত্তোলিত হবে আর এই পতাকার নীচে সবাই এই গীত গাইবে। সকলের মুখ থেকে একটা শব্দই উচ্চারিত হবে - "বাবা আমাদের" । তখনই বলা হবে প্রত্যক্ষ রূপে শিব রাত্রি পালিত হল। অন্ধকারের অবসান হয়ে গোল্ডেন মর্নিং এর দৃশ্যাবলি দেখা দেবে। একেই বলা হয় - আজ আর কালকের খেলা। আজ অন্ধকার, কাল গোল্ডেন মর্নিং। এটাই হল লাস্ট পর্দা। বুঝেছো ?

এছাড়া যে যে প্ল্যান বানিয়েছো, সবই খুব ভালো। প্রতিটি স্থানের ধরনী অনুসারে প্ল্যান বানাতেই হয়। ধরনী অনুযায়ী বিধিতে যদি কোনো পরিবর্তনও করতে হয়, কোনো অসুবিধা নেই। লাস্টে সবাইকে তৈরী করে মধুবন ধরনীতে ছাপ (স্ট্যাম্প) অবশ্যই লাগাতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন বর্গকে (উইঙ্) তৈরী করে স্ট্যাম্প (ছাপ) অবশ্যই লাগাতে হবে। পাসপোর্টের (বিদেশ যাত্রার অনুমতি পত্র) উপরেও স্ট্যাম্প না লাগানো হলে যেতে দেবে না। তো স্ট্যাম্প এখানে মধুবন থেকেই লাগবে।

এরা তো সকলে হলোই স্যারেন্ডার (সমর্পিত) । এরা যদি স্যারেন্ডার না হতো, তবে সেবার নিমিত্ত কীভাবে হতো ? স্যারেন্ডার বলেই ব্রহ্মাকুমার/ব্রহ্মাকুমারী হয়ে সেবার নিমিত্ত হয়েছো। দেশে কিম্বা বিদেশে কোনো খ্রিশ্চান-কুমারী বা বৌদ্ধ-কুমারী হয়ে তো সেবা তো কর না ? বি. কে. হয়ে সেবা করো, তাই না ! তো স্যারেন্ডার ব্রাহ্মণদের লিস্টে সবাই আছো। এখন অন্যদেরকেও বানাতে হবে। মরজীবা হয়ে গেছো। ব্রাহ্মণ হয়ে গেছো। বাচ্চারা বলে - 'আমার বাবা', তো বাবা বলেন - তোমার (তেরা) হয়ে গেছি। অতএব স্যারেন্ডার হয়ে গেলে না ! প্রবৃত্তিতে থাকো কিম্বা সেন্টারে, অন্তর থেকে যে-ই বলেছে 'আমার বাবা', তো বাবা আপন করে নিয়েছেন। এ হল অন্তরের সওদা। মুখের স্থূল সওদা নয়, এ হল হৃদয়ের। স্যারেন্ডার মানে শ্রীমতের অধীনে থাকা। সমস্ত সভা স্যারেন্ডার, তাই তো ? সেইজন্য ফটোও তো তোলা হল, তাই না ! এখন ছবিতে যখন চলে এসেছো তখন তো আর বদলানো যাবে না। পরমাত্ম-গৃহে চিত্র থেকে যাওয়া, এ তো কম ভাগ্য নয় ! এ তো স্থূল ফটো নয়, স্বয়ং বাবার হৃদয়ে ছবি তোলা হয়ে গেল ! আচ্ছা।

সর্ব সত্যতার অথরিটি সম্পন্ন শ্রেষ্ঠ আত্মাদেরকে, সর্ব নবীনত্ব এবং মহানতাকে প্রত্যক্ষ করাতে সমর্থ সত্যিকারের সেবাধারী বাচ্চাদেরকে, সর্ব স্নেহ এবং অথরিটির ব্যালেন্স রেখে, প্রতিটি পদক্ষেপে বাবার দ্বারা ব্লেসিংস (আশীর্বাদ) নেওয়ার অধিকারী শ্রেষ্ঠ আত্মাদেরকে, সকল সত্য অর্থাৎ অবিনাশী বালক তথা মালিকদেরকে বিশ্ব-রচয়িতা সত্য বাবা, সত্য শিক্ষক, সত্য গুরর স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার ।

বরদান:-
মনের মৌনতার দ্বারা সেবার নতুন নতুন ইনভেনশন বের করা সিদ্ধি স্বরূপ ভব।

প্রথম প্রথম যেমন মৌন ব্রত রেখেছিলে তো সবাই ফ্রি হয়ে গেছিলে। সময় বেঁচে গিয়েছিল। সেই রকমই এখন মনের মৌনতা রাখো, যাতে ব্যর্থ সংকল্প আসতেই না পারে। যেমন মুখ থেকে আওয়াজ না নির্গত হয়, তেমনই ব্যর্থ সংকল্প যাতে না আসে - এটাই হল মনের মৌনতা। তাহলে সময়ের সাশ্রয় হবে। এই মনের মৌনতার দ্বারা সেবার এমন এমন সব ইনভেনশন নির্গত হবে, যাতে সাধন কম আর সিদ্ধি অধিক হবে। যেমন সায়েন্সের সাধন সেকেন্ডে বিধিকে প্রাপ্ত করায়, ঠিক তেমনই এই সাইলেন্সের সাধনের দ্বারা সেকেন্ডে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে।

স্লোগান:-
যে নিজে সমর্পিত স্থিতিতে থাকে - সকলের সহযোগও তাদের সামনে সমর্পিত হয়ে যায় ।


সূচনাঃ- আজ মাসের তৃতীয় রবিবার, সব রাজযোগী তপস্বী ভাই-বোনেরা সন্ধ্যা ৬:৩০ থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত, বিশেষ যোগ অভ্যাসের সময় নিজের লাইট মাইট স্বরূপে স্থিত হয়ে ভ্রূকুটির মাঝখানে বাপদাদার আহ্বান করুন আর চতুর্দিকে লাইট মাইটের কিরণ ছড়িয়ে দেওয়ার সেবা করুন।