06-12-2020 প্রাতঃ মুরলি "অব্যক্ত বাপদাদা" ওম্ শান্তি 20-02-87 মধুবন


"স্মরণ, পবিত্রতা আর প্রকৃত সেবাধারীর তিন রেখা"

আজ সকলের স্নেহী, বিশ্ব-সেবাধারী বাবা তাঁর নিজের সদা-সেবাধারী বাচ্চাদের সাথে মিলিত হতে এসেছেন l সেবাধারী বাপদাদার তাঁর নিজসম সেবাধারী বাচ্চারা সদা প্রিয় l আজ সমস্ত সেবাধারী বাচ্চার ললাটভাগে বাবা বিশেষ তিন রেখা দেখছেন l প্রত্যেকের ললাট ত্রিমূর্তি তিলক সমান ঝলমল করছে l এই তিন রেখা কিসের লক্ষণ ? এই তিন রকম তিলক দ্বারা প্রত্যেক বাচ্চার বর্তমান রেজাল্ট দেখছেন l এক, সম্পূর্ণ যোগী জীবনের রেখা l দুই, পবিত্রতার রেখা l তিন, প্রকৃত সেবাধারীর রেখা l তিন রেখার মধ্যে সব বাচ্চার রেজাল্ট দেখছেন l স্মরণের রেখা সকলেরই ঝলমল করছে, কিন্তু নম্বর অনুক্রমে l কারও রেখা আদি থেকে এখনও পর্যন্ত অব্যভিচারী অর্থাৎ সদা একের ভালোবাসায় মগ্ন l দ্বিতীয়তঃ, সদা কি অটুট থেকেছে ? সদা সরলরেখা অর্থাৎ ডাইরেক্ট বাবার সঙ্গে সদাসর্বদা সর্ব সম্বন্ধের প্রীতি থেকেছে নাকি কোনও নিমিত্ত আত্মাদের দ্বারা বাবার সঙ্গে সম্বন্ধ জুড়ে নেওয়ার অনুভাবী ? বাবার ডাইরেক্ট ভরসা আছে নাকি কোনও আত্মার ভরসায় বাবার ভরসা অনুভব করো ? এক, যারা সরলরেখায় চলে, দুই, যারা মাঝে মধ্যে সামান্য বাঁকা রেখায় চলে l এটা স্মরণের রেখার বিশেষত্ব l

আরেক হলো সম্পূর্ণ পবিত্রতার সীমা বা রেখা l এতেও নম্বর অনুক্রম আছে l এক হলো, যেইমাত্র ব্রাহ্মণ জীবন নিলে, তোমরা ব্রাহ্মণ জীবনের, বিশেষতঃ বাবার বরদান প্রাপ্ত করে সদা সহজভাবে এই বরদান জীবনে অনুভব কর l তাদের রেখা এখনও পর্যন্ত সোজা l দুই, ব্রাহ্মণ জীবনের এই বরদান অধিকার রূপে অনুভব করে না, কখনো সহজে, কখনো কঠিন পরিশ্রমের সাথে, কখনো পুরুষার্থের দ্বারা আপন করে l তাদের রেখা সদা সোজা আর ঝলমলে থাকে না l বাস্তবে, স্মরণ বা সেবার সফলতার আধার - পবিত্রতা l শুধু ব্রহ্মচারী হওয়া পবিত্রতা নয়, বরং পবিত্রতার সম্পূৰ্ণ রূপ - ব্রহ্মচারী হওয়ার সাথে সাথে ব্রহ্মাচারী হওয়া l ব্রহ্মাচারী অর্থাৎ ব্রহ্মার আচরণ পালনকারী, যাকে বলে, ফলো ফাদার, কারণ ব্রহ্মা বাবাকে ফলো করতে হবে l স্থিতিতে শিববাবার সমান হতে হবে, কিন্তু আচরণ এবং কর্মে ব্রহ্মা বাবাকে ফলো করতে হবে l প্রতি পদে ব্রহ্মচারী হও l ব্রহ্মচর্যের ব্রত সদা সঙ্কল্পে এবং সপ্নেও পালন করবে l পবিত্রতার অর্থ - সদা বাবাকে কম্প্যানিয়ন (সাথী) বানাও আর সদা বাবার কম্পানীতে থাকো l তাঁকে তোমাদের কম্প্যানিয়ন বানিয়েছ ? 'বাবা আমার' এই উপলব্ধিও আবশ্যক, সবসময় বাবার কম্পানীও থাকা কিন্তু আবশ্যক l একেই বলে, সম্পূর্ণ পবিত্রতা l সংগঠনের কম্পানী, পরিবারের স্নেহের মর্যাদা, সেই সব আলাদা বিষয়, সেটাও আবশ্যক, কিন্তু বাবার কারণেই এই সংগঠনের স্নেহের কম্পানী - এটা ভুলো না l পরিবারের ভালোবাসা আছে, কিন্তু কার পরিবার ? বাবার পরিবার l বাবা যদি না হ'তেন তাহলে পরিবার কোথা থেকে আসত ? পরিবারের ভালোবাসা, পরিবারের সংগঠন খুব ভালো, কিন্তু পরিবারের বীজকে ভুলে যেও না l বাবাকে ভুলে পরিবারকেই তোমরা কম্পানী বানিয়ে দাও l যদি তোমরা মাঝে মাঝেই বাবাকে ছেড়ে দাও, তাহলে তো জায়গা খালি হয়ে গেল, সেখানে তখন মায়া প্রবেশ করবে, সেইজন্য সবার সঙ্গে স্নেহতে থেকে, স্নেহের আদান-প্রদানে সংগঠনকে ভুলো না l একে বলে, পবিত্রতা l বুদ্ধিতে অর্থাৎ বুঝে-শুনে চলাতে তোমরা তো সজাগ আছ, তাই না !

কোনো কোনো বাচ্চার সম্পূর্ণ পবিত্রতার স্থিতিতে এগিয়ে যেতে পরিশ্রম বোধ হয়, সেইজন্য মাঝে মধ্যে কাউকে কম্প্যানিয়ন বানানোর সঙ্কল্প আসে ; তাদের মনে এই সঙ্কল্পও আসে অন্য কম্পানী থাকাও আবশ্যক l সন্ন্যাসী তো হতে হবে না, কিন্তু আত্মাদের কম্পানীতে থেকে বাবার কম্পানী ভুলে যেয়োনা l নয়তো, সময়কালে সেই আত্মার কম্পানী স্মরণে আসবে আর বাবাকে ভুলে যাবে l সুতরাং সময়কালে ভুলপথে চালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কারণ সাকার শরীরধারীর ভরসায় অভ্যস্ত হলে অব্যক্ত বাবা এবং নিরাকার বাবাকে পরে মনে পড়বে, আগে শরীরধারী স্মরণে আসবে l যদি কোনো সময় আগে সাকারের ভরসা স্মরণে আসে, তাহলে নম্বর ওয়ান সে হয়ে গেল আর বাবা দ্বিতীয় নম্বরে l যদি কেউ বাবাকে দ্বিতীয় নম্বরে রাখ তাহলে সে কি পদ পাবে ? নম্বর ওয়ান নাকি টু ? শুধু সহযোগ নেওয়া, স্নেহী থাকা সে'সব আলাদা ব্যাপার, কিন্তু সহায় বানানো আলাদা ব্যাপার l এই বিষয়টা অতি গুহ্য l যথার্থ রীতিতে তা' জানতে হবে l কোনও কোনও সংগঠনে স্নেহী হওয়ার পরিবর্তে তোমরা আলগা-আলগা থাকো, ভয় পাও, কি জানি যদি ফেঁসে যাই, তার চেয়ে বরং দূরে থাকাই ঠিক হবে l কিন্তু না ! ২১ জন্মও প্রবৃত্তিতে, পরিবারে থাকতে হবে, তাই না ! সুতরাং যদি ভয়ের কারণে সরে থাকো, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও তাহলে তা' কর্ম-সন্ন্যাসীর সংস্কার হয়ে যায় l কর্মযোগী হতে হবে, কর্ম-সন্ন্যাসী নয় l সংগঠনে থাকতে হবে, স্নেহী হতে হবে, কিন্তু বুদ্ধিতে ভরসা থাকবে শুধুমাত্র এক বাবা, দ্বিতীয় কেউ নয় l বুদ্ধিকে কোনও আত্মার সঙ্গ, গুণ বা বিশেষত্ব আকৃষ্ট করবে না, সেটাকেই বলে পবিত্রতা l

পবিত্রতার ক্ষেত্রে পরিশ্রম মনে হলে তা' এটাই প্রমাণ করে তোমরা বরদাতা বাবার থেকে জন্মের বরদান নাওনি l বরদানে পরিশ্রম হয় না l প্রত্যেক ব্রাহ্মণ আত্মার ব্রাহ্মণ জন্মের প্রথম বরদান - "পবিত্র ভব, যোগী ভব"-র বরদান প্রাপ্ত হয়েছে l সুতরাং নিজেকে জিজ্ঞাসা কর, 'আমি কি পবিত্রতার বরদান-প্রাপ্ত, নাকি পরিশ্রম দ্বারা পবিত্রতাকে আপন করি ? মনে রেখো, এটা তোমাদের ব্রাহ্মণ জন্ম l শুধু জীবন পরিবর্তন নয়, বরং ব্রাহ্মণ জন্মের আধারে জীবনের পরিবর্তন l জন্মের সংস্কার অনেক সহজ আর নিজে থেকেই হয় l নিজেদের মধ্যেও তো বলো যে জন্ম থেকেই আমার এইরকম সংস্কার l ব্রাহ্মণ জন্মের সংস্কারই হলো, "যোগী ভব পবিত্র ভব l" এটা বরদানও আবার তোমাদের নিজস্ব মূল সংস্কার l জীবনে দু'টো জিনিসই আবশ্যক l এক - কম্প্যানিয়ন, দুই - কম্পানী, সেইজন্য ত্রিকালদর্শী বাবা সবার আবশ্যকতা জেনে তোমাদের সবচাইতে ভালো কম্প্যানিয়ন হয়েছেন এবং ভালো কম্পানী দিয়েছেন l ডবল বিদেশি বাচ্চাদের দুইই চাই l সেইজন্য বাপদাদা ব্রাহ্মণ জন্ম হতেই কম্প্যানিয়নের অনুভব করিয়েছেন আর সনাথ (চির সধবা) বানিয়েছেন l জন্মের সাথে সাথেই কম্প্যানিয়ন পেয়ে গেছ, তাই না ? কম্প্যানিয়ন পেয়ে গেছ নাকি খুঁজে বেড়াচ্ছ ? সুতরাং পবিত্রতা নিজস্ব মূল সংস্কার রূপে অনুভব কর, যাকে বলে শ্রেষ্ঠ রেখা l ফাউন্ডেশন পাকাপোক্ত, তাই না ?

তৃতীয় রেখা প্রকৃত সেবাধারীর l সেবাধারীর এই রেখা সবার ললাটে l সেবা ব্যতীত থাকতেও পারো না l সেবা ব্রাহ্মণ জীবনকে সদা নির্বিঘ্ন বানানোরও সাধন আর সেবাতেই বিঘ্নের পেপার বেশি আসে l নির্বিঘ্ন সেবাধারীকে প্রকৃত সেবাধারী বলা হয় l বিঘ্ন আসাও ড্রামাতে স্থিরীকৃত হয়ে আছে l সে'সব আসছেই আর আসতেও থাকবে, কারণ এই বিঘ্ন কিংবা পেপার অনুভাবী বানায় l এটাকে বিঘ্ন না মনে করে, অনুভবের উন্নতি হচ্ছে - এই ভাবনাতে দেখ, তবেই উন্নতির সিঁড়ি অনুভব হবে l এর থেকে আরও এগিয়ে যেতে হবে, সেবা অর্থাৎ সংগঠনের সব আত্মার থেকে আশীর্বাদ পাওয়ার অনুভব করা l সেবার কার্যে সবার থেকে আশীর্বাদ প্রাপ্তি এক সাধন, এই বিধিতে, এই বৃত্তিতে যদি দেখ তাহলে সদা নিজেকে এমন অনুভব করবে যেন অনুভবের অথরিটি আরও এগিয়ে যাচ্ছে l বিঘ্নকে বিঘ্ন মনে ক'রনা আর বিঘ্নরূপে নিমিত্ত হওয়া আত্মাকে বিঘ্নকারী আত্মা মনে ক'রনা, বরং অনুভাবী বানানোর শিক্ষক মনে কর l যখন তোমার নিন্দাকারীকে মিত্র বলো, তখন বিঘ্ন পাস করিয়ে যে তোমায় অনুভাবী বানালো সে তো শিক্ষকই হলো, তাই না ! সে তো পাঠই পড়িয়েছে, পড়ায়নি ! যেমন, আজকাল রোগ নিরাময় করতে ডক্টরস এক্সারসাইজ (ব্যায়াম) করায়, তখন প্রাথমিক ভাবে এক্সারসাইজ করতে ব্যথা হয়, কিন্তু সেই ব্যাথা সবসময়ের জন্য ব্যথাহীন বানানোর নিমিত্ত হয়, যে এই ভাবে বুঝে-শুনে চলে না, সে মর্মপীড়ায় আর্তনাদ ক'রে বলে, এতো আরও ব্যথা দিয়ে দিলো, অথচ এই ব্যথার মধ্যেই ওষুধ লুকিয়ে আছে l একইভাবে, হতে পারে রূপ বিঘ্নের, তোমার নজরে বিঘ্নকারী আত্মা রূপে আসতেই পারে, কিন্তু সবসময়ের জন্য বিঘ্নকে পার করানোর নিমিত্ত, অচল বানানোর নিমিত্ত সে-ই হয়, সেইজন্য সদা নির্বিঘ্ন সেবাধারীকে বলা হয় প্রকৃত সেবাধারী l এইরকম যাদের শ্রেষ্ঠ রেখা থাকে তাদের প্রকৃত সেবাধারী বলা হয়ে থাকে l

সেবায় সদাসর্বদা স্বচ্ছ বুদ্ধি, স্বচ্ছ বৃত্তি আর স্বচ্ছ কর্ম সফলতার সহজ আধার l যেকোন সেবার কার্য যখন আরম্ভ করো তখন প্রথমে চেক করো, বুদ্ধিতে কোনও আত্মার প্রতি স্বচ্ছতার পরিবর্তে যদি অতীত বিষয়ের এতটুকুও স্মৃতি থাকে এবং সেই বৃত্তি, দৃষ্টি দ্বারা তাকে দেখ, তার সাথে কথা বলো, তাহলে সেবাতে যে স্বচ্ছতার সাথে তোমার সম্পূৰ্ণ সফল হওয়া উচিত, তা' হবে না l অতীত বিষয়কে এবং বৃত্তি ইত্যাদি সবকিছু সমাপ্ত করাই স্বচ্ছতা l অতীত হওয়া কোনকিছু সম্বন্ধে সঙ্কল্প করাও কিন্তু কিছু পার্সেন্টেজে সামান্য পাপ l সঙ্কল্পও সৃষ্টি বানিয়ে ফেলে l বর্ণন করা তো আরও বড় ব্যাপার, কারণ সঙ্কল্প করলেও পুরানো সঙ্কল্পের স্মৃতি সৃষ্টি অথবা বায়ুমন্ডলকেও সেইরকমই তৈরি করে l তারপরে বলে - "আমি যা বলেছিলাম, সেটাই হয়েছে, হয়েছে তো !" কিন্তু হলো কেন ? তোমার দুর্বলতা, ব্যর্থ সঙ্কল্প এই ব্যর্থ বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি করেছে l সুতরাং সদা প্রকৃত সেবাধারী অর্থাৎ যে পুরানো ভাইব্রেশন সমাপ্ত করে l যেমন বৈজ্ঞানিক অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রকে ধ্বংস করে, এক বিমান দ্বারা অন্য বিমানকে চুরমার করে দেয় l যুদ্ধে একে অপরকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেয়, তাই না ! সুতরাং তোমাদের শুদ্ধ ভাইব্রেশন পারে শুদ্ধ ভাইব্রেশনকে ইমার্জ করে ব্যর্থ ভাইব্রেশন সমাপ্ত করতে l সঙ্কল্প, সঙ্কল্পকে সমাপ্ত করতে পারে l যদি তোমার সঙ্কল্প পাওয়ারফুল (শক্তিশালী) হয়, তাহলে শক্তিশালী সঙ্কল্প ব্যর্থকে অবশ্যই শেষ করবে l বুঝেছ ? সেবাতে প্রথমে স্বচ্ছতা অর্থাৎ পবিত্রতার শক্তি প্রয়োজন l বাবা এই তিন রেখা ঝলমল করতে দেখছেন l

সেবার অনেক বিশেষত্বের বিষয়ে তোমরা শুনেছও l সেই সব বিষয়ের সার - নিঃস্বার্থ, নির্বিকল্প স্থিতি দ্বারা সেবা করা সফলতার আধার l এই সেবাতেই তোমরা নিজেরাও সন্তুষ্ট আর উৎফুল্ল থাক আর অন্যেরাও সন্তুষ্ট থাকে l সেবা ব্যতীত সংগঠন হতে পারে না l সংগঠনে বিভিন্ন বিষয়, বিভিন্ন বিচার, বিভিন্ন উপায়, সাধন ইত্যাদি হবেই l কিন্তু পরিস্থিতি এলেও, বিভিন্ন সাধনের ব্যাপারে শুনেও অনেককে এক বাবার স্মরণে সংযুক্ত করে তুমি নিজে সদা একরস স্থিতিতে থাকো l কখনও বৈচিত্র্যের মধ্যে দিশাহারা হয়োনা - 'এখন কি করি ! অনেক মতামত এখন ! কাকে মানবো আর কাকে না মানবো !' যদি নিঃস্বার্থ, নির্বিকল্প ভাব দ্বারা নির্ণয় কর, তাহলে কখনো কারও কিছু ব্যর্থ সঙ্কল্প আসবে না, কারণ সেবা ব্যতীত কেউ থাকতে পারে না, স্মরণ ছাড়াও কেউ থাকতে পারে না l সেইজন্য নিরন্তর সেবা বাড়িয়ে যাও l নিজেকেও স্নেহ, সহযোগ আর নিঃস্বার্থ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাও l বুঝেছ ?

বাপদাদা খুশি, কেননা দেশ-বিদেশে ছোট-বড় সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে সেবার প্রমাণ দিয়েছে l বিদেশের সেবারও সফলতাপূর্বক কার্য সম্পন্ন হয়েছে আর দেশেও সবার সহযোগে সর্বকার্য সম্পন্ন হয়েছে, সফল হয়েছে l বাপদাদা বাচ্চাদের সেবার একাগ্রতা দেখে উৎফুল্ল হন l বাবাকে প্রত্যক্ষ করানোর ক্ষেত্রে সবার লক্ষ্য ভালো ছিল আর বাবার স্নেহে পরিশ্রমকে ভালোবাসায় বদলে কার্যের প্রত্যক্ষ ফল দেখিয়েছে l বাচ্চারা সবাই বিশেষ সেবার নিমিত্তে এসেছে l বাপদাদাও তোমাদের মহিমা গান "বাঃ বাচ্চারা ! বাঃ" l সবাই খুব ভালো করেছে l এটা হয়নি যে কেউ করেছে কেউ করেনি l ছোট স্থানই হোক বা বড় স্থান, যারা ছোট স্থানের তারা কম কিছু করেনি, সেইজন্য সবার শ্রেষ্ঠ ভাবনা আর শ্রেষ্ঠ কামনা দ্বারা কার্য ভালো হয়েছে আর সদা ভালো হবে l সময়ও অনেক নিয়েছ, অনেক সঙ্কল্পও কার্যকর করেছ, প্ল্যান যখন বানিয়েছ, সেই সঙ্কল্প তো তোমাদের ছিলই, তাই না ! শারীরিক শক্তিও লাগিয়েছ, ধনের শক্তিও লাগিয়েছ, সংগঠনের শক্তিও লাগিয়েছ l সর্বশক্তির আহুতি দ্বারা সেবার যজ্ঞ উভয় ক্ষেত্রেই (দেশ ও বিদেশ) সফল হয়েছে l খুব ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে l তোমরা ঠিক করেছ কি করনি সেই প্রশ্নই নেই l সবসময়ই ঠিক থাকে আর ঠিক থাকবেও l তা' মাল্টি মিলিয়ন পীসের দায়িত্ব পালনই হোক বা গোল্ডেন জুবিলির, সব কার্যই সুন্দর ছিল l যে বিধিতে করেছ, সেই বিধিও ঠিক l কোথাও কোথাও জিনিসের ভ্যাল্যু বাড়ানোর জন্য সেই জিনিস পর্দার আড়ালে রাখা হয়, পর্দা ভ্যাল্যুকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং পর্দার অন্তরালে কি আছে দেখার কৌতূহল উদ্রেক হয় - 'পর্দার মধ্যে তো অবশ্যই কিছু থাকবে !' কিন্তু এই পর্দাই প্রত্যক্ষতার পর্দা হয়ে যাবে l এখন তোমরা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছ l ক্ষেত্রভূমিতে যখন বীজ বপন করা হয় তখন সেটা মাটির নীচে লুকিয়ে (পুঁতে) বপন করা হয় l বীজকে বাইরের দিকে রাখে না, ভিতরে লুকিয়ে রাখা হয় l আর ফল বা বৃক্ষ গুপ্ত বীজেরই স্বরূপ প্রত্যক্ষ হয় l সুতরাং এখন বীজ বপন করেছ এবং বৃক্ষ নিজে থেকেই বাইরে স্টেজে আসতে থাকবে l

খুশিতে সবাই তোমরা নাচছ, তাই না ! "বাঃ বাবা" তো তোমরা বলো, কিন্তু বাহ্ সেবাও বলো l আচ্ছা l বাপদাদা সব সমাচার শুনেছেন l এই সেবা দ্বারা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তি-বর্গের সংগঠনের যে সেবা হয়েছে, সেটা চতুর্দিকে একই সময়ে একই আওয়াজ জোরদার হওয়ার বা ছড়ানোর সাধন হিসেবে ভালো l ভবিষ্যতেও যে প্রোগ্রামই করো, দেশে বিদেশে চারিদিকে একই সময়ে একই ধরনের সেবা করো, তারপরে আবার সেবার ফলস্বরূপ সংগঠিতভাবে মধুবনে হোক l চারিদিকে একই তরঙ্গের কারণে সবার মধ্যে উদ্যম-উৎসাহও থাকে আর চারিদিকে আধ্যাত্মিক রেস হয়, রীস (প্রতিযোগিতা) নয়। সবার মধ্যে কে সবচাইতে বেশি সেবার প্রমাণ দেবে l সুতরাং এই উদ্দীপনার সাথে চারিদিকে নাম মহিমান্বিত হয় l অতএব, যেকোন বর্গের (উইংস ) গ্রুপ বানাও, কিন্তু সারা বছর চারিদিকে একই রূপরেখায় সেবার প্রতি যেন অ্যাটেনশন থাকে l তাহলে সেই আত্মাদেরও চারিদিকের সংগঠন দেখে উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগে আর এগিয়ে যাওয়ার চান্স থাকে l নিরন্তর প্ল্যান বানাও আর সেই বিধিতে এগিয়ে চলো l প্রথমে তোমাদের নিজের নিজের এরিয়াতে ওই বর্গের সেবা করে ছোট ছোট সংগঠন রূপে প্রোগ্রাম করতে থাকো আর সেই ছোট সংগঠন থেকে যারা বিশেষ আত্মা তাদেরকে এই বড় সংগঠনের জন্য তৈরি করো l কিন্তু আশপাশের প্রতিটা সেন্টার সবাই মিলে করো কারণ কেউ কেউ এখানে আসতে পারে না, সেইজন্য ওখানে সংগঠনের যে প্রোগ্রাম হয়, সেখান থেকেও তাদের লাভ হয় l সুতরাং প্রথমে ছোট ছোট স্নেহ-মিলন করো, তারপরে সমগ্র জোন মিলে সংগঠন করো, তারপরে মধুবনে বড় সংগঠন হোক l তাহলে মধুবনে আসার আগে থেকেই তারা অনুভাবী হয়ে আসবে l কিন্তু দেশ-বিদেশে একই বর্গের জন্য একই টপিক হোক l এইরকম টপিকসও হোক যাতে দু'-চার বর্গের জন্যও প্রাসঙ্গিক হতে পারে l যদি টপিক বিশাল হয়, তবে বিভিন্ন পেশার দু'-তিন বর্গও সেই টপিকে অংশগ্রহণ করতে পারে l সুতরাং এখন দেশ-বিদেশে ধর্ম সত্ত্বা, রাজ্য সত্ত্বা এবং সাইন্সের সত্ত্বা এই সমস্ত ক্ষেত্র থেকে তিন ধরণের স্যাম্পল প্রস্তুত করো l আচ্ছা l

পবিত্রতার বরদানের অধিকারী সব আত্মাকে,সদা একরস, নিরন্তর যোগী জীবনের অনুভাবী আত্মাদের, সদা প্রতিটা সঙ্কল্পে, প্রতিটা মুহূর্তে প্রকৃত সেবাধারী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের বিশ্ব-স্নেহী, বিশ্ব-সেবাধারী বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার l

*বরদানঃ-*

কম্বাইন্ড স্বরূপের স্মৃতির দ্বারা নির্ভুল হয়ে নিরন্তর যোগী ভব

যে বাচ্চারা নিজেকে বাবার সঙ্গে কম্বাইন্ড অনুভব করে, তাদের নিরন্তর যোগী ভব-র বরদান আপনা থেকেই প্রাপ্ত হয় l কারণ তারা যেখানেই থাকে মিলন মেলা হতে থাকে l তাদের যতই কেউ ভুলানোর চেষ্টা করুক, তবুও তারা যথার্থ হয় l এইরকম নির্ভুল বাচ্চা যারা বাবার অতি প্রিয়, তারাই নিরন্তর যোগী, কারণ ভালোবাসার লক্ষণ হলো - স্বতঃ স্মরণ l তাদের সঙ্কল্প রূপী নখও অর্থাৎ সামান্যতম অংশও মায়া টলাতে পারে না l

*স্লোগানঃ-*

কারণ শোনানোর পরিবর্তে তার নিবারণ করো, তবেই আশীর্বাদের অধিকারী হয়ে যাবে l